জঙ্গিবাদ বিষয়ক গবেষক নিঝুম মজুমদারের প্রশ্ন
প্রশ্নকারীঃ নিঝুম মজুমদার, জংগীবাদ গবেষক। (www.facebook.com/nijhoom.majumdar)
প্রশ্নঃ রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত কিংবা ডিপ্লোমেটিক স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত কেন নিরীহ সেই দেশের মানুষের উপর বর্তাবে? আমেরিকা ও বৃটেন কিংবা পশ্চিমা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বা আক্রমোনের বিপক্ষে ছিলো ও আছে। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হয় ক্ষমতা ও অর্থভিত্তিক চিন্তার লাভ লোকশানের উপর একই স্ট্র্যাটেজিও এই ইসলামী
#উত্তর –
প্রথমতঃ আমাদের, অর্থাৎ জঙ্গিদের জন্য মূল গাইডিং কম্পাস হল ইসলামী শারীয়াহ। ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক – সকল ক্ষেত্রেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, অ্যাপ্রোচ এবং চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রিত হয় শুধুমাত্র শারীয়াহ দ্বারা। আমরা পরাজিত মানসিকতার ‘মডারেট” মুসলিম, কিংবা নামধারী সেক্যুলার মুসলিমদের মতো ইসলামের দাবি করে, পশ্চিমা চিন্তাধারার কাঠামোতে ইসলাম খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করি না। একারনে এ প্রশ্নের, সব প্রশ্নের ক্ষেত্রেই আমরা প্রথমে দেখি ইসলামের অবস্থান কি।
.
শরীয়াহ অনুযায়ী কোন সম্প্রদায় যদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তবে, তবে মুসলিমদের অধিকার আছে সে সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবার। এ বিষয়টি ইন্টুয়িটিভ এবং মোটামুটি পরিমান মস্তিষ্ক আছে এমন সব লোকই ব্যাখ্যা ছাড়াই এ বিষয়টি অনুধাবন করে। তবে যে জায়গাতে অনেক ক্ষেত্রে কনফিউশান দেখা দেয় তা হল, যদি কোন কাফির সম্প্রদায় আমাদের উপর আফগানিস্তানে, কিংবা ইরাকে অথবা সিরিয়াতে আক্রমন করে তবে কি তাদের উপর শুধুমাত্র ইরাকে, সিরিয়াতে কিংবা আফগানিস্তানে আক্রমনের বৈধতা শরীয়াহ দেয়?
.
উত্তর হল না। বরং আক্রমনকারী যেভাবে আমাদেরকে আমাদের ভূখন্ডে আক্রমন করেছে তেমনি তাদেরকেও তাদের ভূখন্ডে আক্রমন করা জায়েজ এবং উপযুক্ত। একইভাবে আক্রমনকারী সম্প্রদায় যদি মুসলিমদের উপর সীমালঙ্ঘন করে তবে, একই পরিমানে তাদের বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন করা বৈধ। যদি কাফিরদের বিমান মুসলিমদের শহরের উপর এসে ঘুমন্ত মুসলিমদের উপর বোমা ফেলে এবং এতে নিহত হয় নারীপুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ, তবে অবশ্যই মুসলিমদের অধিকার আছে কাফিরদের শহরে গিয়ে কাফিরদের নারী-শিশু-বৃদ্ধদের হামলার নিশানা বানানোর। যদি কাফিররা, বিশেষ করে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট সারা পৃথিবী জুড়ে ইচ্ছেমতো যখন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা মুসলিম নাগরিকদের উপর আক্রমন করে, খোড়া অজুহাত দেখিয়ে, তবে মুসলিমদের অধিকার আছে বিশ্বের যেকোন জায়গায়, যখন ইচ্ছা কাফিরদের, বিশেষ করে ন্যাটো জোটের অন্তর্ভুক্ত কাফিরদের দেশের নাগরিকদের উপর হামলা করার।
.
যেমন কাফিররা যদি মুসলিমদের কোন শহরের উপর বোমা ফেলে, তখন তাতে করে শুধু মাত্র মুসলিম যোদ্ধারা মারা যায় না, মারা যায়, সাধারণ মুসলিম জনগণও। যেমন আফগানিস্তানে তালেবান মুজাহিদিন এর নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে যখন আমেরিকা বোমা ফেলে, কিংবা সিরিয়াতে, কিংবা মালিতে, কিংবা ইয়েমেনে একিউএপি এর নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে – কাফিররা যখন বোমা ফেলে তখন সেটাতে শুধুমাত্র “জঙ্গিরা” মারা যায় না। যদিও পিন পয়েন্ট টার্গেট করার সক্ষমতা কাফিরদের আছে, সে প্রযুক্তি তাদের আছে। একইভাবে কাফিররা যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন এর ফলে যে দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে শুধুমাত্র তার ক্ষমতাসীনরা দুর্বলই হয় না, ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ জনগণ। যেমন ৯০-এর দশকে ইরাকের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় অভুক্ত থেকে মারা গিয়েছিল ১০ লক্ষ শিশু। একইভাবে আফগানিস্তানে ডক্টরস উইতআউট বর্ডারস (MSF) এর হাসপাতালে অ্যামেরিকার বোমা হামলা, সিরিয়াতে MSF –এর হাসপাতালে রাশিয়ার বোমা হামলা, এগুলো আন্তর্জাতিক আইন নামক কাল্পনিক বস্তুর অধীনেই যুদ্ধাপরাধ, তথাপি, অ্যামেরিকা এবং পশ্চিম এ নিয়মগুলো মেনে চলা দরকার মনে করে না।
.
এরকম অসংখ্য উদাহরণ দ্বারা স্পষ্ট সামরিক-বেসামরিকের এ পার্থক্য কাফিররা করে না কিন্তু তার এবং তাদের আদর্শিক জারজ সন্তানেরা আশা করে, যে নীতির অনুসরণ তারা মুসলিমদের হত্যা করার সময় অনুসরণ করে না, সে নীতির অনুসরণ মুসলিমরা করুক!! মুসলিমরা সম্মানিত, আদর্শিক ও সত্যবাদী জাতি। কিন্তু মুসলিমরা নির্বোধ না। যদি কাফিররা আমাদের জনগণকে কোন বাছবিচার ছাড়া হত্যা করা নিজেদের জন্য বৈধ পরিগনিত করে নেয়, যদি তারা আমাদের নারী ও শিশুদের হত্যা করে, যদি তারা যুদ্ধের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে তবে তাদেরকে একই ভাবে হামলা করা হবে, যেভাবে তারা হত্যা করে, সেভাবে তাদের হত্যা করা হবে, যেভাবে তারা বন্দী করে সেভাবে তাদের বন্দী করা হবে এবং আমরা সীমালঙ্ঘনকারী হবো না। কারন আগ্রাসনকারীর আগ্রাসনের জবাব দেয়া সীমালঙ্ঘন না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
.
সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সকল সীমালঙ্ঘনের (হুরুমাত) জন্য রয়েছে ক্বিসাসের নীতি। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা তাদের উপর সীমালঙ্ঘন কর, যেমন সীমালঙ্ঘন তারা করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা মুত্তাক্বী, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। [আল-বাকারা, ১৯৪]
.
এ ব্যাপারে বিখ্যাত আলিম শায়েখ সালেহ আল উসাইমীনের বক্তব্য দেখুন –
https://www.youtube.com/watch?v=bPVpv_afBHA
.
অতএব প্রথমত শারীয়াহগত অবস্থান থেকে সীমালঙ্ঘনকারী কাফির ক্বওমকে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়াহ বৈধ। ইটালি আফগানিস্তান এবং বর্তমানে ইরাক-সিরিয়াতে ন্যাটো ও অ্যামেরিকান জোটের সদস্য অর্থাৎ তারা সেসব যুদ্ধরত কাফিরের অন্তর্ভুক্ত যারা মুসলিম বেসামরিক লোকদের, নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করেছে এবং করছে। একইভাবে জাপান বর্তমানে ইরাক ও সিরিয়াতে অ্যামেরিকান জোটের অন্তর্ভুক্ত না হলেও আফগানিস্তানে ন্যাটো জোটের সদস্য ছিল, অর্থাৎ আফগানিস্তানের লাখ লাখ নারী-শিশু-বৃদ্ধদের হত্যায় তারা যুক্ত ছিল। আর অ্যামেরিকা ভারতের ব্যাপারে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। সুতরাং এসব দেশের নাগরিক হারবী কুফফার, বা যুদ্ধরত কাফির যাদের সকলের রক্ত শারীয়াহ অনুযায়ী সর্বাবস্থায় হালাল।
.
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের স্ট্র্যাটিজি নিয়ে চিন্তাভাবনা থেকে ঐ সমস্ত লোকদের বিরত থাকা উচিৎ যারা মনে করে যুদ্ধ হল সরকারের ছত্রছায়ায় শাহবাগে স্লোগানবাজী করা, যারা মনে করে বিপ্লব হল শাহবাগে গিয়ে বিরিয়ানী খাওয়া। যুদ্ধের কৌশলের আলোচনা থেকে ঐসব লোকদের বিরত থাকা উচিৎ যারা না কোনদিন যুদ্ধের ময়দানে থেকেছে আর না-ই-বা যুদ্ধের ময়দানে যাবার ইচ্ছা তাদের আছে। যেসকল ছাপোষা-গৃহী-বাঙ্গালের জীবনের উদ্দেশ্য হল ভালোয় ভালোয় নির্বিঘ্নে জীবন কাটিয়ে দেয়া আর মাঝেমধ্যে বিরিয়ানী খাওয়া-ফেইসবুকে প্রোফাইল পিকচার বদলানো আর স্লোগানবাজীর পার্ট-টাইম “বিপ্লব” করা – তাদের উচিৎ যুদ্ধ কৌশল সংক্রান্ত আলোচনা থেকে বিরত থাকা। অন্ধের কাছ থেকে মানুষ বৃষ্টির সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনতে চায় না।
.
যুদ্ধরত পশ্চিমা দেশ ও তাদের নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে মুজাহিদিন নেতৃবৃন্দের অবস্থান হল, তাদেরকে বিশ্বময় আঘাত করা। এর মাধ্যমে মুসলিম মানসে কাফির শক্তিগুলোর তথাকথিত অজেয় রূপকে ধ্বংস করে দেয়া, বিশ্বময় আগ্রাসী কাফির রাষ্ট্রগুলোকে হামলার মাধ্যমে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা, পশ্চিমা দেশগুলোর ভেতরে অভ্যন্তরীন চাপ সৃষ্টি করা, কারণ কাফিররা মুসলিম বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করতে চাইলেও, এজন্য নিজেদের লোকজন মারা যাবে এটা তারা মানতে চায় না। তাই বিশ্বজুড়ে যখন আগ্রাসী পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো হামলার সম্মুখীন হয় তখন তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংহতি (social cohesion) চাপের মুখে পড়ে। পাশপাশি পশ্চিমাদের উপর আক্রমন তাদের নিবৃত্তকরণের (deterrent) কাজ করে, যেমন মাদ্রিদ বম্বিং এর কারণে স্পেন বাধ্য হয়েছিল ইরাক যুদ্ধ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে। তবে আর্ম চেয়ার থিওরিস্ট যাদের বিপ্লব পাঠচক্র, বিরিয়ানি চক্র, লীগের লেজূরবৃত্তি আর প্রোফাইল পিকচার বদলানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ তারা এ সূক্ষ বিষয়সমূহ অনুধাবনের সক্ষমতা রাখে না।
.
পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক শিশুরা যতোই টিটকারি দেবার চেষ্টা করুক না কেন বাস্তবতা হল – বিগত কয়েক বছরের ক্রমাগত ও ক্রমবর্ধমান হামলাতেই তাদের “মুক্তিযুদ্ধের চেৎনার শক্তি”-র সরকারের দিশেহারা হবার অবস্থা হয়েছে। যদিও আক্রমন হিসেবে এগুলো এমন কোন বৃহদাকারের হামলা ছিল না। যদিও খেলো করা চেষ্টা করুক না কেন, বলা যায় আওয়ামী ও চেতনাৎসিদের হাটু কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে, গলা শুকিয়ে গেছে। চাপাতি ক্যাম্পেইনে যেমন মুরতাদের দল দেশ ছেড়ে পালানোর কাফেলা শুরু হয়েছিল, তেমনি সাম্প্রতিক কিছু আক্রমনের পর লীগার এবং লীগের দালালরা অস্থির হয়ে উঠেছে, যার ফলাফল হল শান্তিবাদী জাকির নায়েকের অহিংস ব্যাখ্যার মধ্যেও তারা এখন জঙ্গিবাদ খুঁজে পেয়েছে। ভীত সন্ত্রস্থ প্রতিপক্ষের হঠকারী প্রতিক্রিয়ার টেক্সটবুক এক্স্যাম্পল হিসেবে এ পদক্ষেপ স্মরনীয় হয়ে থাকবে। ইতিমধ্যে কাফির রাষ্ট্রগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক, কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে হা-হুতাশ শুরু হয়ে গেছে।
.
একথা পরিষ্কার যে যদি এই ধারা বজায় রাখা হয় তবে ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক চিন্তার যে লাভ লোকশানের যে গালভরা চিন্তার কথা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পাতি বুদ্ধিজীবীরা আওড়ান এবং নিজেদের বুদ্ধিমান ভাবেন, সেটার সম্পূর্ণ ভাবে ভরাডুবি হবে। যদি কিছু হামলার জন্য গার্মেন্টস শিল্প, জাইকা, বৈদেশিক বিনিয়োগ, পর্যটন শিল্প অনিশ্চয়তাতে পড়ে যায়, যদি বিদেশী হ্যান্ডলারদের তিন দিনের সফরে আসতে হয়, যদি ইসরাইলের কাছে হিন্দুদের চিঠি লিখতে হয়, ইন্ডিয়া থেকে বোমা বিশেষজ্ঞ দল আনতে হয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহায়তা নিতে হয়, যদি পাঁচজন ছেলেকে (বাচ্চা ছেলে??) মোকাবেলার জন্য র্যা ব-পুলিশ-ডিবি-এসবি-সিআইডি-বিজিবি-নেভির কয়েক হাজার অপদার্থের দশ ঘন্টা সময় লাগে, তাহলে যখন পুরুষদের সম্মুখিন হবে এ অপোগন্ডরা তখন তাদের অবস্থা কি হবে? মেসেজটা পরিষ্কার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিদেশী কুফফার ও তাদের এদেশী এজেন্ট ও ইসলামবিরোধীদের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষমতা এ সরকারের নেই। আর নাই বা আছে বিরোধিদলের, সুশীল সমাজের, শাহবাগের, কিংবা অন্য কোন লবি কিংবা গোষ্ঠীর। অতএব কৌতুক করার চক্ষুলজ্জা উদ্রেককারী হাস্যকর প্রচেষ্টা পাতি-বুদ্ধিজীবীরা চালিয়ে যেতে পারে বটে, কিন্তু সেটা দিয়ে নিজেদের বুঝ দেয়াই শুধু হবে। বাস্তবতার মোকাবেলা করা হবে না।
.
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আদর্শিক ময়দানে ইতিমধ্যেই জঙ্গিদের বিজয় হয়েছে। এনএসইউ থেকে শুরু করে মাদ্রাসা, ঢাকা ভার্সিটি থেকে শুরু করে পাঠশালা সকল ক্ষেত্রে সকল পর্যায়ে জঙ্গিরা ব্যাপকভাবে বিজয়ী। না উচ্চবিত্তের সন্তানকে আর নাই বা গরীব-দুখী খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানকে – কাউকেই আর চেতনার ট্যাবলেট খাওয়ানো যাচ্ছে না। বরং সর্বসস্তরের তরুণরা চেতনা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বস্তুবাদ, ভোগবাদ, উপযোগবাদকে প্রত্যাহ্যা করে বেছে নিচ্ছে ইসলামকে। আর তাই প্রতিদিনই তরুণরা কেন জঙ্গিবাদে ঝুকছে তা নিয়ে লিখতে লিখতে বুদ্ধিব্যবসায়ীয়রা গলদঘর্ম হচ্ছে। সব মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক থেকে ছাপা , সব কিছু সরকার, শাহবাগী এবং সুশীল বুদ্ধিব্যবসায়রীদের হস্তগত হবার পরও, জঙ্গিদের হাতে বলতে গেলে কোন মিডিয়া না থাকার পরও আদর্শিক ময়দানে এরকম বেদম পরাজয় শাহবাগী-সেকুলাঙ্গারদের জন্য আসলেই লজ্জার বিষয়। স্রোতের বিপরতে জঙ্গিবাদ এখন স্রোতে পরিণত হয়েছে। ভাসিয়ে নিয়ে আচ্ছে শাহবাগী-সেকু্যলার-সুশীল-চেতনাচিন্তার আবর্জনা। আর এ স্রোত মোকাবেলা করার নুন্যতম সক্ষমতা, প্রস্তুতি, যোগ্যতা প্রশ্নকারী কিংবা তার সমগোত্রীয়দের নেই। হাস্যরসের মর্মান্তিক ভাবে ব্যার্থ প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজ ক্লাবের সদস্যদের মনোরঞ্জন হয়তো তারা করতে পারবে। কিন্তু নতুন ভাবে তাদের “আদর্শে” উজ্জীবিত কাউকে তারা করতে পারবেন না। অন্যদিকে আল্লাহর ইচ্ছায় জঙ্গিবাদের এ আদর্শের প্রচার ও প্রসার বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে শুধু বৃদ্ধিই পেতে থাকবে। আর তাত্ত্বিকদের এটা মনে রাখা উইত, জঙ্গিবাদের আদর্শ নিষ্ক্রিয় কথক তৈরি করে না, কর্মী তৈরি করে।
.
বাঙলা বুদ্ধিব্যবসায়ীর চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী প্রশ্নকারী যা জানেন না তা নিয়ে একটা মন্তব্য করে ক্রেডিট নেয়া এবং নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। মুজাহিদিন নেতৃত্বের আদর্শ কি? অবস্থান কি? সেটা না জেনেও তিনি ফট করে বলে বসেছেন জংগীদের মূল মাথাদের চিন্তাভাবনা কি। যেন তিনি খুব জানেন জঙ্গিদের মূল মাথারা কি চিন্তা করেন। এ ধরনের ডিলিউশনাল, নার্সিসিস্টিক, আমি কি হনু রে – জাতীয় অসুস্থায় ভোগা পাতি-বুদ্ধিজীবিদের অবগতির জন্য বৈশ্বিক জিহাদের আমীর হাকীমুল উম্মাহ শায়েখ ডঃ আইমান আয যাওয়াহিরীর হাফিযাহুল্লাহ – এর একটি বক্তব্যের অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরা হল, যা মূলত ইতিপুর্বে আমরা যা আলোচনা করেছি তারই সারসংক্ষেপ।
.
শায়খ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন –
.
“তোমরা অ্যামেরিকার জনগণেরা হয়তো যুক্তি দেখাবে যে উপরের কোন কিছু দিয়েই বেসামরিক জনগণের উপর হামলার বৈধতা প্রমাণিত হয় না। তোমরা বলতে পারো বেসামরিক নাগরিকেরা যে অপরাধে সরাসরি অংশগ্রহন করে নি তার কারনে তাদের হামলা করা বৈধ হতে পারে না। কিন্তু এসব যুক্তি তোমরা নিজেরাই যেসব বুলি ক্রমাগত আওড়াতে থাকো তার সাথে সাঘর্ষিক। তোমরা বলো তোমাদের দেশ হল স্বাধীনতার দেশ, তোমরা হলে বিশ্বে মুক্তি ও স্বাধীনতার পতাকাবাহী। সুতরাং অ্যামেরিকার জনগণ নেতাদের ঘোষিত পলিসির সাথে নিজেদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে স্বেচ্ছায় স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক নেতাদের সরকারের চালানোর জন্য নির্বাচিত করে। একইভাবে অ্যামেরিকার জনগনে দশকের পর দশক ধরে অ্যামেরিকাকতৃক ইস্রাইলকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া এবং ফিলিস্তীনের দখলদারিত্বের ব্যাপারেও একমত পোষণ করে। অন্যদিকে অ্যামেরিকার জনগণ যদি চাইতো তবে তারা তাদের সরকার ও নেতাদের এসব পলিসি প্রত্যাখ্যা করতে পারতো…এসব কারনে রাষ্ট্র হিসেবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকার অপরাধে অ্যামেরিকান নাগরিকদের কোন ভূমিকা নেই এমন দাবি করা হাস্যকর। আল্লাহ আমাদের জন্য ক্বিসাস বাধ্যতামূলক করেছেন। সুতরাং যদি কেউ আমাদের আক্রমন করে, আমাদের শহর ও গ্রামগুলোকে ধ্বংস করে, আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে, আমাদের সম্পদ লুট করে আমাদের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে তবে তাদের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা, তাদের শহর ও গ্রামগুলোকে হামলার নিশানা বানানো, তাদের অর্থনীতি ধ্বংস করা আমাদের (আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত) অধিকার।“