জঙ্গির সাথে কথোপকথনপ্রবন্ধ-নিবন্ধ

জঙ্গিরা শাস্তি দেয়ার কে?

চট্টগ্রামের_মেয়র মহিউদ্দিন প্রশ্ন করেছেনঃ আল্লাহ’র রাসুল (সা) কে অবমাননা করে থাকলে সেটার বিচার আল্লাহ্‌ করবেন। জঙ্গিরা শাস্তি দেয়ার কে?

#উত্তরঃ

মেয়র মহিউদ্দিন এবং উনার সমগোত্রীয় ব্যক্তিদের কাছে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই,

“আপনারা কেন চুরি, ডাকাতি, হত্যা ইত্যাদির বিচার করার জন্য এতবড় বিচারবিভাগ রেখেছেন?

ছেড়ে আপনারা নিজেরা কেন তাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করলেন?

শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বিচার কেন আপনারা নিজেরা করলেন?

আল্লাহ্‌ তা’আলার রাসুল (সা)’র অবমাননার শাস্তি দেয়া যায় না অথচ শেখ হাসিনাকে অবমাননার শাস্তি দেয়া যায় কিভাবে?

তখন কেন ”বিচার আল্লাহ্‌ করবেন” এজাতীয় কথা সামনে আসলো না??”

বাস্তবতা হচ্ছে, এধরণের লোকদের কাছে আল্লাহ’র রাসুল (সা) এর কোনো মূল্য নেই দেখেই এধরণের প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসা হয়। অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকলে এধরণের জঘন্য যুক্তি কেউ পেশ করতে পারে না।

কেননা, আল্লাহ্‌’র রাসুল (সা) বলেন, “” ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ পরিপূর্ন ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন পর্যন্ত আমি তার কাছে বেশি প্রিয় হব তার মাতাপিতা , সন্তান-সন্ততি, মানুষ ও সবকিছুর চেয়ে।” (বুখরী শরীফ)

মূলতঃ গণতান্ত্রিক দলগুলোই হচ্ছে এদেশের সর্বনিকৃষ্ট ধর্মব্যবসায়ী। এদেশের সাধারণ মুসলমানের সেন্টিমেন্টকে নিয়ে এরা প্রতিনিয়ত তামাশা করে চলেছে। অথচ, এদেশের সরলমনা মানুষগুলো তা ধরতে পারছে না। আল্লাহ্‌ তা’আলা সহজ করুন।

মুসলিম হিসেবে আমাদের আবশ্যক দায়িত্ব হল প্রতিটি বিষয়ে একমাত্র শারীয়াহ এবং একমাত্র শারীয়াহ ভিত্তিতে করনীয় ঠিক করা। মুসলিম হবার আবশ্যক শর্ত যেকোন ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) এর সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহন করা।

কোন মানুষের বানানো আদর্শ বা আইনের ভিত্তিতে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করার ইখতিয়ার আল্লাহ আমাদের দেন নি।
.
মহান আল্লাহ দ্বীন ইসলামকে একটি পূর্নাঙ্গ জীবন-বিধান হিসেবে নাযিল করেছেন। এ দ্বীনে যেমন নামাযের পড়ার নিয়ম কি হবে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ নির্ধারিত করা আছে, তেমনি ভাবে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কি হবে তাও নির্ধারিত করা আছে। যেমন চুরির শাস্তি হাত কাঁটা।
যিনার শাস্তি অবিবাহিতের জন্য দোররা, এবং বিবাহিতের জন্য রযম। তেমনি ভাবে দ্বীন ইসলামে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –কে অবমাননার শাস্তি হত্যা।

চার মাযহাবের ইমাম এ ব্যাপারে একমত। এবং সমগ্র উম্মাহর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুসলিমদের এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত রয়েছে।
.
এমনকি একজন ইমাম বলেছেন কোন ব্যক্তি যদি বলে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জামার বোতাম ময়লা, যদি এতোটুকু সমালোচনা কেউ করে তবে তাকে হত্যা করা উচিৎ। সুতরাং অবমাননা করলে হত্যা করা হবে এটাই স্বাভাবিক। অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড হওয়া সম্পর্কে অসংখ্য দলীল আছে যার মধ্যে শুধু একটি এখানে দেওয়া হল –


من سب نبيًّا فاقتلوه ومن سب أصحابى فاضربوه
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর। আর যে সাহাবীকে গালি দেয়, তাকে প্রহার কর। {জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জমউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২}
.

বিস্তারিত দেখুন – http://bit.ly/29RRU7d
.
চুরি বা রযমের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে যেমন “বিচার আল্লাহ করবেন” এমনটা বলা যৌক্তিক না তেমনি ভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অবমাননাকারীর ক্ষেত্রেই “বিচার আল্লাহ করবেন” এটা বলা যৌক্তিক না।
.
পাশাপাশি সাধারণ বুদ্ধি বিবেচনাগত অবস্থান থেকেও দেখা যায়, কেউ যদি আপনার জমি দখল করে নেয়, “বিচার আল্লাহ করবেন” বলে আপনি হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। মা-কে ছেলের সামনে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় তাহলে ছেলে “বিচার আল্লাহ করবেন” বলে কাপুরুষের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে না।

তাহলে নিজের জীবন, ধন-সম্পদ ও পরিবারের চাইতেও অধিক প্রিয় মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাঃ) অবমাননা করা হবে আর মুসলিমরা “আল্লাহ বিচার করবেন” এ বলে, শারীয়াহর বিধানের সরাসরি অবাধ্যতা করে হাত গুঁটিয়ে বসে থাকবে এটা কখনোই যৌক্তিক হতে পারে না।
.
পরিশেষে শেষ করছি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি উক্তি দিয়ে যা তিনি সে অন্ধ সাহাবীর কাজের প্রশংসা করে বলেছিলেন যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তিকারিণী বনী খাতমার নারীকে হত্যা করেছিলেন –

“এটি (অবমাননকারীকে হত্যা করা) এমন একটি বিষয় যা নিয়ে দুটো ছাগলও ঝগড়া করবে না।” [আল ওয়াকিদি এটি বর্ননা করেছেন] .
আমরা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাঃ এর অনুসারী। গান্ধীর অনুসারী না।

আল্লাহ আমাদের রাসূলুল্লাহর সাঃ যোগ্য অনুসারী হবার তাউফীক দান করুন।

এ ভূমির সকল অবমাননাকারী ও কটুক্তিকারী নির্মূল করার তাউফীক দান করুন।

আল্লাহুম্মা আমীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 3 =

Back to top button