আরব বিশ্বউপমহাদেশনির্বাচিতবাংলাদেশসংবাদসম্পাদকীয়

তুরস্কের উপর আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধ ও গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার দিবাস্বপ্নের বাস্তবতা!

About the author

About the author

খালিদ মুন্তাসির,  অনুবাদক, লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক।

সাম্প্রতিক সময়ে অতি আবেগতাড়িত মুসলিমদের মাঝে তুরস্ক একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। মুসলিমদের মাঝে কেউ কেউ তুরস্কের শাসককে মুসলিম জাহানের খলিফা হিসেবে কল্পনা করতেও শুরু করেছিলেন! কিন্তু, প্রকৃত বাস্তবতা হলো- তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ ঐ শাসক কখনো মুসলিমদের খলিফা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। কোন কোন রাজনৈতিক দল তুরস্ককেই নিজ দেশের মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

কেননা, তুরস্ক প্রধান ইসলামী লেবেল লাগিয়ে মুসলিমজাতিকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টায় কুফফার জাতির সহযোগী! ন্যাটো জোটের পক্ষ হয়ে আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারতকে ধ্বংস করতে তুরস্ক কুফফার জাতিকে সাহায্য করেছে। সোমালিয়ায় মুসলিমদের উপর আাগ্রাসন চালাতে সেনা সাহায্যসহ, বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক। রাশিয়ার সাথে চুক্তির ভিত্তিতে সিরিয়াতে মুসলিমদের উপর আরো এক অত্যাচারী শাসক নিযুক্তের প্রচেষ্টায় লিপ্ত তুরস্ক। সিরিয়ার পবিত্র জিহাদকে ধ্বংস করে মুজাহিদগণকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে রাশিয়ার সাথে করা চুক্তি বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ছিল তাদের অসীম সখ্যতা! কিন্তু, এই তুরস্ক কুফফার জাতির কাছ থেকে কী পেল?? কেবল এক সন্ত্রাসী যাজককে গ্রেফতার করাতেই যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিল!!! বন্ধুত্বের অবসান ঘটে গেল! অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে তুরস্ককে ধ্বংস করে দিতে চাইলো! তুরস্কের উন্নতি মুখ ধুবড়ে পড়লো!

বন্ধু, কেবল একটি ইস্যুতেই শত্রুতে পরিণত হলো! নিজ স্বার্থে বিন্দু পরিমাণ আঘাতও সহ্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র! অথচ, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের বন্ধুত্ব বহু পুরোনো, অনেক ঘনিষ্ঠ! যাইহোক, তুরস্কের উপর আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধে তুরস্ক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে, সেই বিষয়ে আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার আলোচনার মূখ্য বিষয় হলো গণতন্ত্র বা পশ্চিমানীতির ভেতরে থেকে যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার দিবাস্বপ্নে বিভোর তাদেরকে নিয়ে।

তুরস্কের কথা নিয়ে আসার কারণ হলো- তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধি রাষ্ট্র, এমনটাই ভাবনা অনেকের। আর, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নাকি ‘খলিফা’ হওয়ার যোগ্যতাও রাখে! এসকল কিছু বিষয় বিবেচনা করেই তুরস্কের বিষয়টি সামনে এনেছি। তুরস্কের কথা নিয়ে আসার আরেকটি প্রধান কারণ হলো- যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য কুফফার রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বার্থে বিন্দুমাত্র আঘাতও সহ্য করে না এবং নামমাত্র মুসলিমকেও তারা সহ্য করতে পারে না; এই বিষয়টি আপনাদের সামনে সুস্পষ্ট করার জন্য। মূল আলোচনায় আসা যেতে পারে এখন-

যারা গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখেন তাদের ধারণা হলো- রাষ্ট্রের ক্ষমতা যখন হাতে চলে আসবে, তখন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যাবে অতি সহজে! এই ধারণাকে আমি পুরোপুরি ভুল বলছি না, তবে গণতন্ত্র বা পশ্চিমানীতির ভেতরে থেকে দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে টিকিয়ে রাখা কস্মিনকালেও সম্ভবপর নয়। কথা হলো- গণতন্ত্রের এই নীতি ইসলামে ‘কুফর’ হিসেবে বিবেচিত! তারপরও যদি কেউ মনে করে যে গণতন্ত্র দিয়ে ইসলাম কায়েম করে ফেলবে, এটা হবে এক ধরণের জাহালত। যাইহোক,

আলোচনার সুবিধার্থে ধরে নিলাম- গণতন্ত্রের মাধ্যমে কোনো রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা হলো। অতঃপর, ইসলামী বিধি-নিষেধ কার্যকর করা হলো দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে, সংবিধান হলো আল-কুরআন, অর্থনীতিতে ইসলামী নীতি চালু করা হলো, সুদকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হলো, এক কথায়- সর্বত্র ইসলামের বিধান চালু করা হলো। পাশাপাশি, বহির্বিশ্বের কুফুরী বিধান দিয়ে পরিচালিত রাষ্ট্রগুলোর সাথেও সম্পর্ক রাখা হলো। আর, বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্ক ব্যতীত গণতন্ত্রের রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখা অসম্ভব! কিন্তু, যখন দেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হয়ে যাবে, তখন বিশ্বের কুফফার রাষ্ট্রগুলো নিশ্চুপে তা মেনে নিয়ে আপনার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে, তা কল্পনার বাইরে।

আপনি সুদী লেনদেন বন্ধ করে দিয়ে কুফফার রাষ্ট্রগুলোর হৃদয়রাজ্যে আগুন ধরিয়ে দিবেন, আর আপনাকে তারা ‘জামাই-আদর’ করবে, এটা কল্পনা করাও মহা বোকামি! এক কথায়- তারা আপনার গণতান্ত্রিক ইসলামিক রাষ্ট্র(?!)-কে মেনে নিবে না, উল্টো এই রাষ্ট্র ধ্বংসের সকল প্রচেষ্টায় লিপ্ত হবে। সামরিক হামলা, অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ ইত্যাদি হলো তাদের প্রচেষ্টার কিছু প্রকার। তাদের আরো কিছু চক্রান্তের মাঝে রয়েছে- মুমিনের ইমান নষ্ট করে ফেলা, অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো ইত্যাদি।

অতএব, কথিত গণতান্ত্রিক ইসলামিক রাষ্ট্র কায়েমের চিন্তা করা, সর্বদা কল্পনাতেই ঘুরপাক খাবে! কখনো বাস্তবায়িত হতে পারবে না। আর, যদি আপনি মনে করেন- ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে একটি সুদীর্ঘ সময় পর ধীরে ধীরে পশ্চিমানীতির ভেতরে থেকে ইসলাম কায়েম করবেন; তাহলে তা কেবল দীর্ঘায়িতই হবে, কখনো বাস্তবায়নের মুখ দেখবে না। যখনই আপনি পশ্চিমানীতির বাইরে চলে যাবেন, আপনার রাষ্ট্র হয়ে যাবে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র! আপনার উপর চালানো হবে বিমানহামলা, অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে আপনাকে নিঃশেষ করে ফেলা হবে।

সর্বশেষ কথা হলো, গণতন্ত্র বা পশ্চিমানীতির ভেতরে থেকে কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাই সম্ভব না, যদি কেউ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তারপক্ষে, পশ্চিমানীতির ভেতরে থেকে ইসলাম কায়েম রাখা সম্ভবপর হবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × five =

Back to top button