আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (AQIS)আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশননির্বাচিতবাংলা প্রকাশনা

কাবুল ‘উলামা সম্মেলনে’ আমীরুল মুমিনীন শাইখুল হাদীস মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদাহ হাফিযাহুল্লাহ’র ‘বক্তব্যের তরজমা’ আলিমদের প্রতি নসিহাহ || আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন

مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdaws

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:

ترجمة خطبة” امير المؤمنين شيخ الحديث مولوي هبة الله آخند زاده في “مؤتمر العلماء” بقابول
نصائح للعلماء

কাবুল ‘উলামা সম্মেলনে’
আমীরুল মুমিনীন শাইখুল হাদীস মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদাহ হাফিযাহুল্লাহ’র ‘বক্তব্যের তরজমা’

আলিমদের প্রতি নসিহাহ

Kabul ‘Ulama Conference’
Amirul Momineen Shaykhul Hadith Mawlawi Hibatullah Akhundzada Hafijahullah’s ‘Translation of The Speech’

Advise to the Ulama

 

 

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

লিংক-১ : https://justpaste.it/alimder_proti_nasihah
লিংক-২ : https://mediagram.me/2c7be0b2743c7dda
লিংক-৩ : https://noteshare.id/ETn8Wpz
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20230613051635/https://justpaste.it/alimder_proti_nasihah
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20230613051743/https://mediagram.me/2c7be0b2743c7dda
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20230613051911/https://noteshare.id/ETn8Wpz

 

روابط بي دي اب
PDF (673 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৬৭৩ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/3bxd3fFXFejm7oC
লিংক-২ : https://archive.org/download/alimder-proti-nasihah/Ulama%20Sombelon%20-%20Saikh%20Haibatullah%20-%20Kabul.pdf
লিংক-৩ : https://jmp.sh/VL9xD0ay
লিংক-৪ : https://watasimubillah.files.wordpress.com/2023/06/ulama-sombelon-saikh-haibatullah-kabul.pdf
লিংক-৫ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qya5d901f941af4a9195fee1f9555cda3c
লিংক-৬ : https://drive.internxt.com/sh/file/6b9b9d82-1545-469e-afc1-8c6d0cb9a43b/9d2c3a0fdf2b34db06e434f75a762a49e276b89c9a1963b8c35186cff2c1eb85
লিংক-৭ : https://f005.backblazeb2.com/file/AlimderProtiNasihah/Ulama+Sombelon+-+Saikh+Haibatullah+-+Kabul.pdf
লিংক-৮ : https://www.mediafire.com/file/9vkv0s27bdgmeoi/Ulama_Sombelon_-_Saikh_Haibatullah_-_Kabul.pdf/file
লিংক-৯ : https://mega.nz/file/Ezl2UIZZ#3Nv_xbbhcT07kQ4eBosGeZhdClSk7XNv5sysnaJ8U_Y

 

روابط ورد
Word (749 KB)
ওয়ার্ড [৭৪৯ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/RRRNqZxCeiE8xLf
লিংক-২ : https://archive.org/download/alimder-proti-nasihah/Ulama%20Sombelon%20-%20Saikh%20Haibatullah%20-%20Kabul.docx
লিংক-৩ : https://jmp.sh/2Ix7ft0O
লিংক-৪ : https://watasimubillah.files.wordpress.com/2023/06/ulama-sombelon-saikh-haibatullah-kabul.docx
লিংক-৫ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qyf88ba5be0d7e4faabaa3a16f4b1e5477
লিংক-৬ : https://drive.internxt.com/sh/file/07e7f2b7-b2ee-4f63-a13c-3178822c5d06/b7680a3416aedaa8d44a2aa8605114ad1f89c6c1472b0dadab2bb8489cb0e0f9
লিংক-৭ : https://f005.backblazeb2.com/file/AlimderProtiNasihah/Ulama+Sombelon+-+Saikh+Haibatullah+-+Kabul.docx
লিংক-৮ : https://www.mediafire.com/file/9ac1x972ko1v9m1/Ulama_Sombelon_-_Saikh_Haibatullah_-_Kabul.docx/file
লিংক-৯ : https://mega.nz/file/Mn8UBapL#q8JOmmDmTh7xnU5dQwdRg17BzJLxT8BtUYtaFz07qBo

 

روابط الغلاف- ١
Book Front Cover [267 KB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [২৬৭ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/giGCC2s9wGHbkjL
লিংক-২ : https://archive.org/download/alimder-proti-nasihah/alimder-proti-nasihah-fron-cover.jpg
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qyec92959903d1488580ccfa612e05a910
লিংক-৪ : https://watasimubillah.files.wordpress.com/2023/06/alimder-proti-nasihah-front-cover.jpg
লিংক-৫ : https://jmp.sh/EDppepa0
লিংক-৬ : https://drive.internxt.com/sh/file/15eab066-3bcd-41c5-97dd-2149bc7909fa/f5f9622ca3722ea06f84859b9b013dee28598460b05b233de9aa5855cf429850
লিংক-৭ : https://f005.backblazeb2.com/file/AlimderProtiNasihah/alimder-proti-nasihah-front-cover.jpg
লিংক-৮ : https://www.mediafire.com/view/i16ivlzpc91vs3v/alimder-proti-nasihah-fron-cover.jpg/file
লিংক-৯ : https://mega.nz/file/Vq0UVZaR#TRUGcXNfJK-ruKdhZr65lVu7fFnLe7uaiLk5qwxbXZ8

 

روابط الغلاف- ٢
Book Back Cover [1.1 MB]
বুক ব্যাক কভার ডাউনলোড করুন [১.১ মেগাবাইট]

লিংক-১ :  https://archive.gnews.to/index.php/s/bgHHFfiw3kjfCDQ
লিংক-২ : https://archive.org/download/alimder-proti-nasihah/alimder-proti-nasihah-back-cover.jpg
লিংক-৩ : https://jmp.sh/C8h5aRKA
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qyb3a5593c4c134b099057f364f9ec6b93
লিংক-৫ : https://watasimubillah.files.wordpress.com/2023/06/alimder-proti-nasihah-back-cover.jpg
লিংক-৬ : https://drive.internxt.com/sh/file/8e0b5c58-40f1-4d0d-b5d9-920870be8b04/41a92d712d2e72778af1ada02b205e63fa95a26028d2c9849302c77a163cb4b8
লিংক-৭ : https://f005.backblazeb2.com/file/AlimderProtiNasihah/alimder-proti-nasihah-back-cover.jpg
লিংক-৮ : https://www.mediafire.com/view/384k7fh8ammg3rs/alimder-proti-nasihah-back-cover.jpg/file
লিংক-৯ : https://mega.nz/file/43cj1azI#50eg3Ir6VvKCfSf3FEIGXuxAHFs-GYv5KaVa74TGCa0

 

روابط الغلاف- ٣
Banner [1.6 MB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৬ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/gdZGszH6pyxrT8T
লিংক-২ : https://archive.org/download/alimder-proti-nasihah/alimder-proti-nasihah-Banner.jpg
লিংক-৩ : https://jmp.sh/VIN7b6oA
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qye31ee1f1b8fa46f4879a7a869ef9d9af
লিংক-৫ : https://watasimubillah.files.wordpress.com/2023/06/alimder-proti-nasihah-banner.jpg
লিংক-৬ : https://drive.internxt.com/sh/file/1cf7628d-5744-425a-a5bc-8370fb08d384/b3b864bcb634eb7dc633b0e88a40a1d7626fd85e5a897fd859b49426d7d6b328
লিংক-৭ : https://f005.backblazeb2.com/file/AlimderProtiNasihah/alimder-proti-nasihah-Banner.jpg
লিংক-৮ : https://www.mediafire.com/view/kqacp8upkxm71go/alimder-proti-nasihah-Banner.jpg/file
লিংক-৯ : https://mega.nz/file/drMnRZ4Q#I1_rFfv6VY9SSxzUXW_QBC8BJppVQ3JeWgTVFhFDXrs

 

=============

 

 

কাবুল ‘উলামা সম্মেলনে’

আমীরুল মুমিনীন শাইখুল হাদীস মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদাহ হাফিযাহুল্লাহ’র ‘বক্তব্যের তরজমা’

আলিমদের প্রতি নসিহাহ

অনুবাদ

আল ফিরদাউস অনুবাদ টিম

 

  • প্রথম প্রকাশ

জিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরি

জুন, ২০২৩ ইংরেজি

 

  • স্বত্ব

সকল মুসলিমের জন্য সংরক্ষিত

 

  • মূল্য

বিনামূল্যে বিতরণের জন্য

 

এই বইয়ের স্বত্ব সকল মুসলিমের জন্য সংরক্ষিত। পুরো বই, বা কিছু অংশ অনলাইনে (পিডিএফ, ডক অথবা ইপাব সহ যে কোন উপায়ে) এবং অফলাইনে (প্রিন্ট অথবা ফটোকপি ইত্যাদি যে কোন উপায়ে) প্রকাশ করা, সংরক্ষণ করা অথবা বিক্রি করার অনুমতি রয়েছে। আমাদের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে শর্ত হল, কোন অবস্থাতেই বইয়ে কোন প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন করা যাবে না।

  • কর্তৃপক্ষ

 

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। সালাম তাঁর নির্বাচিত বান্দাদের প্রতি।

أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَٱلَّذِينَ جَـٰهَدُوا۟ فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلْمُحْسِنِينَ

অর্থঃ “যারা আমার পথে জিহাদ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।” (সূরা আনকাবূত ২৯:৬৯)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“দীন হচ্ছে নাসীহাহ”। সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম জিজ্ঞাসা করলেন, “কার প্রতি নাসীহাহ, হে আল্লাহর রাসূল?” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, “আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, মুসলিমদের নেতৃস্থানীয়দের প্রতি এবং সাধারণ মুসলিমদের প্রতি।” [মুসলিম]

আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর সম্মানিত রাসূল সত্য বলেছেন। আমরা এরই সাক্ষ্য দেই এবং এরই শুকরিয়া আদায় করি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলারই জন্য।

প্রিয় প্রবীণগণ, সম্মানিত শাইখ ও তাঁর প্রতিনিধিবৃন্দ, উলামায়ে কেরাম, মহান মুজাহিদীন, ইসলামী ইমারতের ধর্মভীরু এবং আন্তরিক নেতৃবৃন্দ ও মাসউলগণ, আফগানিস্তানের মহান মুসলিম জনগণের মধ্য থেকে যাঁরা উপস্থিত আছেন –

আপনাদের সকলের প্রতি আমার সালাম, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

প্রিয় উপস্থিতি,

অন্য যে কোনো কিছুর পূর্বে, আমি উপস্থিত উলামায়ে কেরাম, মুজাহিদীন ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমদেরকে এই বিজয় ও সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই বিজয় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক বড় এক নেয়ামত, যা তিনি খাসভাবে আফগানদেরকে এবং সাধারণভাবে সমগ্র পৃথিবীর মুসলিমদেরকে দান করেছেন। আমাদের এই বিজয় অর্জনের কারিগর- মুজাহিদীন ও এই জাতির শহীদ্গণ। তারা নিজেদেরকে কুরবান করেছেন। আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি, তিনি যেন তাঁদের কুরবানীগুলো কবুল করেন। জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ মাকাম তাঁদেরকে দান করেন। মুজাহিদীন এবং আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের সমস্ত কষ্ট-ক্লেশ, ব্যথা-বেদনা কবুল করে নেন।

২০ বছরের এই দীর্ঘ জিহাদে আফগানিস্তানের মানুষ যে কুরবানী পেশ করেছেন তা তুলনাহীন। যাঁরা মুজাহিদদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন এবং তাঁদের এই আপ্রাণ সংগ্রাম যেন সফল হয় তা নিশ্চিত করেছেন- তাঁদের প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তাআলা আপনাদের ত্যাগ ও কুরবানীগুলো কবুল করুন।

প্রথমত, আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে ফরিয়াদ করি তিনি যেন শহীদদের রেখে যাওয়া ইয়াতীম সন্তানদের যত্ন নেয়া এবং রক্ষা করার কাজে আমাদেরকে সাহায্য করেন।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহ তাআলা ইসলামী ইমারতকে, গাজী মুজাহিদীন এবং মুখলিস মুসলিমদেরকে এই শিশুদের যথাযথ লালন-পালন করার সামর্থ্য দান করুন। এই ২০ বছরের জিহাদে যাঁরা ইয়াতীম হয়েছে, যাঁরা স্বামী-হারা হয়েছেন এবং অঙ্গহানির কারণে যাঁদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, আল্লাহ জাল্লা জালালুহু তাঁদের ত্যাগগুলো কবুল করুন, আমীন।

তৃতীয়ত, তাদেরকে উত্তমরূপে সেবা করার সক্ষমতা আমাদেরকে দান করুন। তাঁদের কুরবানীর জন্য তাঁদের শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক আমাদেরকে দিন। যাঁরা একবারের জন্য হলেও নামাযের পরে মুজাহিদদের জন্য দোয়া করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে কবুল করুন এবং তাঁদের উপর রহম করুন। পৃথিবীর যেখান থেকেই হোক, যাঁরা আমাদের জিহাদকে সমর্থন জুগিয়েছেন – তা হতে পারে আমাদের পক্ষে কথা বলার মাধ্যমে, আমাদের জন্য দোয়া করার মাধ্যমে কিংবা আমাদের প্রতি উত্তম আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে – আল্লাহ জাল্লা জালালুহু তাঁদের এই জিহাদ কবুল করুন। এই জিহাদকে বদরের জিহাদের সমান করে দিন। আমরা তাঁদের সকলকে শুকরিয়া জানাই ও তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

সকলেই উল্লেখযোগ্য একটি উন্নয়নের কথা স্বীকার করবেন যে, আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আমাদেরকে উত্তম নিরাপত্তার সাথে রেখেছেন। সম্প্রতি আফগানিস্তানের পাকতিকা ও খোস্ত অঞ্চল ভূমিকম্পের মতো কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ক্ষতিগ্রস্তদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমাদের সকলকে তাঁদের সহযোগী ও সহমর্মী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আপনাদের দোয়ায় ও সহযোগিতায় তাঁদেরকে ভুলবেন না। আপনাদের খাদ্য সামগ্রী থেকে তাদের জন্য বরাদ্দ রাখবেন। অর্ধেক তাঁদেরকে দিবেন, বাকি অর্ধেক নিজের জন্য রাখবেন।

প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা,

উপস্থিত শাইখগণ অত্যন্ত চমৎকার কথা ও নসীহত পেশ করে গিয়েছেন। আফগান জিহাদের সাফল্য শুধু আফগানদের জন্য সম্মান ও গৌরবের বিষয় নয়, বরং এটা সকল মুসলিমের জন্যই গর্বের বিষয়। রমাযানের শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলিমগণ ও উলামায়ে কেরাম আমাকে মুবারকবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, “হে শাইখ, রমাযান মুবারাক”। সকলেই এই বিষয়ে খুশি যে আফগানিস্তানে মুজাহিদীন ও ইসলামের অনুসারী জনগণের বিজয় হয়েছে। এর দ্বারা বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের ইসলামী মূল্যবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করছেন, দীনের নিয়ম-কানুনগুলো জানছেন। তাঁরা জেনে নিয়েছেন যে, ইসলামের ছায়াতলে প্রত্যেকেই তাঁর অধিকার বুঝে পায়। সকলে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে জীবনযাপন করে। এসবকিছুই জিহাদ-শরীয়তের খায়ের এবং রব্বুল আলামীনের দয়ার নেয়ামত- এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যখন মুসলিমদের একের সাথে অপরের দেখা হয় তখন তাঁরা বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম’, অর্থাৎ ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক’। মুসলিমদের মাঝে পরস্পর দেখা হলে সবার প্রথমে একে অপরের জন্য শান্তির দোয়া করা থেকে প্রকাশ হয় যে ইসলাম মিল-মহব্বতের একটি দীন।

একজন মুসলিমের ঈমানের জ্ঞান তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন তার জিহবা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন, আমরা যেন আমাদের জিহবা ও হাত দ্বারা মুসলিমদের, মুসলিমদের মাল-সম্পদের এবং তাঁদের সম্মানের কোনো ক্ষতি না করি।

ইসলাম মুসলিমদেরকে এই শিক্ষাই দেয়। তাই যখন ইসলামের স্লোগান ধারণকারী কোনো দল বিজয় অর্জন করে তখন মানুষের আনন্দ বাঁধভাঙা হয়। এই স্লোগানধারীরা বলে ‘আমরা জিহাদ করবো যেন ইসলাম এবং ঈমানের সাক্ষ্য সবার উপরে থাকে’। এই স্লোগান অনন্য সম্মানের এক স্লোগান। তাই যখন এই স্লোগানের ধারক মুজাহিদরা বিজয় ও সফলতা অর্জন করেন, তখন মানুষ আনন্দিত হয়। তাঁরা আশা করেন যে, এই স্লোগানের উপর আমল করা হবে।

মৌলিকভাবে জিহাদ হচ্ছে – মানুষ নিহত হওয়া আর ভূমিসমূহ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হওয়া। ২০টি বছর ধরে আফগানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। অনেক মানুষ নিহত হওয়ার সাক্ষী আমরা। সুখের বিষয় তো এটিই যে, সবশেষে এমন একটি সরকার গঠিত হয়েছে যারা ইসলামের আনুগত্য করবে। আল্লাহ পাক এই জিহাদকে সফলতা দিয়েছেন। ফলে জনগণও আজ আনন্দিত। তাঁরা আশায় আছেন- ইসলামী শরীয়তের যে স্লোগান ও প্রতিশ্রুতি মু্জাহিদগণ দিতেন, তার বাস্তবায়নও তাঁরা করবেন।

এখনই সময় সেই স্লোগানের উপর আমল করার। সকলেই অপেক্ষায় আছে যে ইসলাম পূর্ণরূপে কায়েম হবে এবং সেই স্লোগানগুলো আমলে পরিণত হবে। বিশ্বের তথাকথিত ইসলামী দেশগুলোর রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন যে, যখন একটি দল ক্ষমতায় থাকে তখন অপর দল তাদের বিরোধিতা করে এবং ইসলামী স্লোগান ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলে। যখন তারা ক্ষমতায় আসে, তারা তখন এমনভাবে সরকার পরিচালনা করে যাতে শুধু তাদেরই স্বার্থসিদ্ধি হয় আর তাদের অহংবোধ বৃদ্ধি পায়। তারা মুসলিমদের বিষয়-আশয় আমলে নেয় না, মুসলিমদের স্বার্থে কোনো নীতি নির্ধারণ করে না।

সারা পৃথিবীতে জাহিলিয়াতের অবস্থায় থাকা মানুষেরা এখন এই অপেক্ষায় আছে যে, জিহাদে সফলতা অর্জনের পর আমরা আমাদের স্লোগানগুলো বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগী হবো। এটা আফগানিস্তান সহ সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদেরই মনের আশা। সর্বোপরি এটা তাদেরও আশা যারা শরীয়াহর বাস্তবায়ন দেখার জন্য এই জিহাদে নিজেদের সন্তান এবং ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন। আমার নিজের মাসুম সন্তানের রক্ত ও রূহ এই পথেই গেছে। সে আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর নিকট বড়ই প্রিয় ছিলো।

আল্লাহ কুরআনে পাকে বলেছেন, তিনি আমাদের মধ্য থেকে শুধু মর্যাদাবানদেরকেই গ্রহণ করেন এবং তাঁদেরকেই শাহাদাতের নেয়ামত দিয়ে থাকেন। এ সব কিছুই হয়েছে একটি স্লোগানের জন্য- ‘ইসলাম কায়েম হবে, তথা শরীয়াহ বাস্তবায়িত হবে’। আমানিয়াত প্রতিষ্ঠিত হবে। এখন সময় এসেছে এই প্রত্যেকটা বিষয় বাস্তবায়নের।

‘আমানিয়াত’ শব্দটি মূলগতভাবে ইসলামের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের অর্থকেও অন্তর্ভুক্ত করে। এর বাস্তবায়ন অবশ্যই করতে হবে এবং এ পথে বাধাদানকারী যেকোনো বিষয়কে নির্মূল করতে হবে। ২০ বছর আগে কেউ যদি ইসলাম তথা শরীয়ত নিয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করতো তাহলে হয় তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হতো, নয়তো তাকে প্রহার এবং অত্যাচার করা হতো। এই জিহাদের ফলস্বরূপ প্রথমত আমরা যা পেয়েছি তা হলো, আমরা এখন মুক্তভাবে মানুষকে অন্য সব ইলাহ ছেড়ে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার দিকে ডাকতে পারি। শরীয়াহর দাওয়াত দিতে পারি।

দ্বিতীয়ত, এই জিহাদ ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার পথে বাধা-বিপত্তিগুলোকেও সরিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এই জমিনে আল্লাহর আইনসমূহ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনোরকম গড়িমসি করা আমাদের উচিত হবে না।

মনে রাখবেন, এই পৃথিবীর কাফিরেরা আমাদের বিরুদ্ধে ভূমি জয়ের উদ্দেশ্যে কিংবা অর্থ-সম্পদ অর্জনের জন্য যুদ্ধ করেনি। এগুলো তাদের মূল লক্ষ্য নয়। তাদের যুদ্ধ প্রথমত, আমাদের আকীদার বিরুদ্ধে। বিশ্বকে আমরা যে দর্শন থেকে দেখি তার বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয়ত, তারা যুদ্ধ করেছে যাতে তারা আমাদেরকে থামিয়ে দিতে পারে। যাতে জিহাদ ও শরীয়াহর স্লোগান নীরব হয়ে যায়। সেই যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। সেই যুদ্ধ আজও চলমান এবং ইয়াওমুল কিয়ামাহ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলতেই থাকবে। এ বিষয়টি আপনারা সবসময় মনে রাখবেন।

আমি এই ভূমিতে তাদেরকে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে দিবো না। তারাও আমার ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা মেনে নিবে না। এই লড়াই আমার মৃত্যুতেও শেষ হবে না। আমার স্থানে আরেকজন আসবেন এবং তিনিও তাদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়ে যাবেন। তাঁর পরে আরেকজন, তাঁর পরে আরেকজন… এভাবে চলতেই থাকবে। তাদের আর আমার মধ্যে কখনোই শান্তি বিরাজ করেনি আর কখনও সম্ভবও নয়। সূরা কাফিরুনে এবং অন্যান্য সূরাতে এই বাস্তবতা আমাদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে।

‘শরীয়াহ’ শব্দটি অত্যন্ত মিষ্টি এবং মর্যাদার একটি শব্দ। কিন্তু এই শব্দটি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অবশ্যই যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করতে হবে এবং আপনি যেখানেই যান না কেন, আপনার কাফনের কাপড়টি প্রস্তুত রাখতে হবে।

মনে রাখবেন, আপনি যদি ইসলাম কায়েম করতে চান, তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা নিজ থেকে আত্মসমর্পণ করে আপনাকে আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে দিবে না। এখনও শরীয়াহর প্রায়োগিক বিধানগুলো, যেমনঃ কিসাস (চোখের বদলে চোখ), হুদুদ (ইসলামে নির্ধারিত শাস্তিসমূহ) বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা যদি এখন এগুলো প্রয়োগ শুরু করি, কাফিরেরা অবশ্যই প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তবে আমাদের আল্লাহ আছেন, যিনি আমাদের সাহায্যকারী। আর তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করাই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে সে ব্যাপারে পৃথিবীর অন্যরা কী বললো, আমরা সেটা গ্রহণ করি না। আমরা আল্লাহকেই সন্তুষ্ট করবো, আর তাঁর কাছেই সাহায্য চাইবো। তিনিই সেই সত্তা যিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বাহিনীকে আফগানিস্তানের মাটিতে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছেন এবং তাদেরকে এখান থেকে পালাতে বাধ্য করেছেন।

কাতারে চুক্তির সময় এটা দৃশ্যত বোঝা গেছে যে, কিছু শর্তের ভিত্তিতে আমেরিকানরা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে। আমিও নিশ্চিত ছিলাম যে তারা যাবে। তবে যাদেরকে আমেরিকা পিছনে রেখে গেলো তাদের ব্যাপারে আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো। ভাবছিলাম আমেরিকা তার বরাবরের নীতি অনুসরণ করে পিছনে এক যুদ্ধ রেখে যাচ্ছে যেটাতে আফগানরা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য হবে। মার্কিনীরা চলে যাবার পরে আমাদেরকে আফগানদের সাথেই যুদ্ধ করতে হবে, আফগানদেরকেই হত্যা করতে হবে – এই চিন্তাটি আমার জন্য প্রচণ্ড এক বোঝা ছিলো। তবে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমনভাবে সাহায্য করলেন যে আমেরিকানরা যাওয়ার আগেই এই সমস্যাটি মিটে গেলো। আলহামদুলিল্লাহ।

মনে রাখবেন, আফগানিস্তানের মুসলিমদের হত্যা করা কখনোই আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। মুসলিমদের কতল করাকে যদি আমরা আমাদের লক্ষ্য বানাই, তাহলে কিসাস অনুযায়ী আমাদের জানও নিয়ে নেয়া হবে। যদি একজন আফগান মুসলিমও আমাদের সামরিক অপারেশনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে সেটা এ কারণেই হয়েছে যে আমরা কাফিরদেরকে পুরোপুরি সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আমরা এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলাম যেখানে সাধারণ মুসলিমরা পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে জীবনযাপন করতে পারবে।

যদি এমন হয়ে থাকে যে হামলার মুহূর্তে কিছু আফগান কাফিরদের একেবারে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো, তবুও আমি বলতে পারি সেই আফগানদেরকে হত্যা করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। সেই আফগানরাই বরং কাফিরদের চারপাশে অবস্থান করে নিজেদেরকে তাদের জন্য মানব-ঢালে পরিণত করেছিলো।

কাফিররা যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেলো তখনও আমাদের নীতি এটাই যে, আফগানদেরকে হত্যা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে তারা আমাদের আফগান জাতিরই অংশ এবং আমাদের সম্মানের পাত্র। কিন্তু কাফিরদেরকে আমরা সম্মান করি না।

যখন আমরা জানলাম যে কাফিররা চলে যাচ্ছে, তখন আমরা আফগানদের উপর চাপ প্রয়োগ করেছি যেন তারা তাদের অস্ত্র ছেড়ে আত্মসমর্পণ করে। আমরা তাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করেছি, যদিও অনেক অপরাধেই তাদের অংশগ্রহণ ছিলো। তারা ট্যাংকের পিছনে আমাদের মুজাহিদদের শরীর ছেঁচড়িয়ে নিতো, মুজাহিদদের মাথার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিতো। আরও অনেক অকথ্য অপরাধ তারা করেছে যার নজির ইতিহাসের পাতায় নেই। তারা এসব অপরাধ করতো এমন লোকদের উপর যাঁরা ছিলেন কুরআনের হাফেজ, মাদরাসার ছাত্র, মানুষের কাছে সম্মানিত বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গ। মাদরাসার ছাত্ররা যদি আল্লাহর ওলী না হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহর ওলী আর কে?

তাদের পুরো সময়টাই কাটে তাদের রবের স্মরণে! তারা আল্লাহর স্মরণকারী এই ওলীদের উপর দিয়ে ট্যাংক চালিয়ে দিয়েছে, তারপরও আমরা ছেড়ে দিয়েছি। যদি ইসলামী আইন এই বিষয়গুলোতে ক্ষমা করার অনুমতি দেয়, তবে আমি ক্ষমা করে দিবো।

আমি আলেমদের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি। তাঁদেরকে জানিয়েছি যে, ট্যাংকের নিচে পিষ্ট হওয়া ঐ মানুষগুলোর ব্যক্তিগত হক আমি ক্ষমা করিনি। এই সাধারণ ক্ষমায় শুধু ইসলামী আইনে তাদের প্রাপ্য শাস্তি ক্ষমা করা হয়েছে। আমি উলামাদের কাছ থেকে এই ফাতওয়াই নিয়েছি এবং এখনও এই ফাতওয়ার উপরেই আছি।

এখানকার মুজাহিদদের জিহাদ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদই ছিলো। যদি কখনও আমার কাছে প্রমাণ হয়ে থাকতো যে এই জিহাদ আল্লাহর রাস্তায় হচ্ছে না, অথবা এখনও যদি এমন প্রমাণ হয় তাহলে আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা করতে পারি, আমি একটি দিন কিংবা একটি রাতও তালেবানের সাথে কাটাবো না। আমি একজন মুসলিম, আমারও আখিরাতের চিন্তা আছে। আমি হৃদয়ে ইসলামী চিন্তাধারা লালন করি। সুতরাং আমি সেই দলের সঙ্গেই সময় দিবো যাদের সাথে চললে আখিরাতে তা আমার কাজে আসবে।

যদি পৃথিবীর বুকে তালেবানের চেয়ে অধিক ধর্মপ্রাণ ও মুখলিস কোনো দল আমার চোখে পড়ে, আমি তালেবান ছেড়ে সেই দলেই যোগ দিবো। কিন্তু এমন একটি দল আমার নজরে পড়েনি। তাদের ন্যায়নিষ্ঠ ও দীনদার হওয়ার একটি আলামত এই যে, যখন সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা হয়ে গেলো, তখন বিনা বিরোধিতায় তারা এটা বাস্তবায়ন করেছে এবং এখনও তা বহাল আছে। বিষয়টি এরও প্রমাণ বহন করে যে, আফগানদেরকে হত্যা করা কখনোই আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো না। যদি আমাদের দ্বারা তারা কেউ নিহত হয়ে থাকে তাহলে তা কেবল ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং সকলের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ কায়েমের স্বার্থেই হয়েছে। এর আরও একটি উচ্চতর লক্ষ্য ছিলো – মানুষের সামাজিক সমন্বয় বজায়ে রাখার জন্য আল্লাহ জাল্লা জালালুহু যে হদসমূহ দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করা।

সমাজে আজ আবার শান্তি ও ঐক্য ফিরে এসেছে, যা আমাদের জিহাদের অন্যতম একটি লক্ষ্য ছিলো। দেশের মূল চালিকা শক্তি, এর মন্ত্রণালয়, প্রশাসন, দপ্তরসমূহ প্রধানত মুজাহিদীন, উলামায়ে কেরাম ও দীনদার ব্যক্তিদেরকে নিয়েই গঠন করা হয়েছে। ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাজে বসবাসকারীদের জন্য যেমন জরুরি, তেমনি দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ফলে প্রশাসন থেকে দুর্নীতি, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, গোত্রপ্রীতি, অঞ্চলপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি – এগুলো দূর হয় এবং সরকার ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

তো সমাজে যদি সম্প্রীতি না থাকে এবং ঐ খারাপ জিনিসগুলো রয়ে যায়, তাহলে এই সরকার মুসলিমদের কল্যাণকামী কোনো সরকার হতে পারবে না। সেটা বরং এমন এক সরকার হবে যেখানে অল্প কিছু লোকের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার হবে। তারা কিছুদিনের জন্য দেশ চালাবে, লুটতরাজ করবে তারপর অন্যকিছু অর্জনের উদ্দেশ্যে অন্য কোথাও চলে যাবে। সুতরাং সরকারের মধ্যেও ঐক্য ও সম্প্রীতি ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত মুসলিমদের স্বার্থের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তাই তাদের বিষয়গুলোকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। ব্যক্তিগত খায়েশ চরিতার্থ করা যাবে না। যেমন নিজের ছেলে, ভাই কিংবা আত্মীয়দেরকে সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে কার্যালয়ের মধ্যে নিজের জন্য একটা ঘরোয়া পরিবেশ কায়েম করা যাবে না। আগের জাহেল এবং তাবেদার সরকারগুলোর ক্ষেত্রে এমনটাই হয়ে এসেছে। তাদের পরস্পরের মধ্যে কোনো মিল-মহব্বত ছিলো না।

আপনি যদি দেশে সম্প্রীতি এবং নিরবচ্ছিন্ন একটি স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে চান, তবে প্রথমত, আপনার নফসের চাহিদাগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে শরীয়াহর অনুগামী করতে হবে। সর্বোপরি নিজের উপর, নিজের অফিসে, নিজের বাড়িতে শরীয়াহ কায়েম করতে হবে। যদি আপনার নিজের শরীরে, আপনার ঘরে-দপ্তরে, ইসলামের অনুশাসন না মানা হয়, তাহলে কীভাবে আপনি পুরো রাষ্ট্রে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করবেন?

তখন আপনার শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার দাবি নিঃসন্দেহে একটি মিথ্যা দাবি হিসেবেই গণ্য হবে। কাজ আপনার নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হবে। প্রথমত, আপনি অন্তরে গেঁথে নিবেন যে -“ইসলামের বিধি-বিধানগুলো কাট-ছাঁট করে আমার জীবনের উপযোগী না করে বরং আমার জীবনকেই ইসলামের বিধানের অনুগামী করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ইসলামী আইনের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে এবং নিজের জীবনকে সেই অনুযায়ী সাজাতে হবে।”

দেখুন, শরীয়াহ কী বলে?

আপনি যখন প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, “আপনি কি অমুককে তাজির (কাজী কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি দেয়া) করবেন? অমুককে কি জেল দিবেন? তমুককে কি চাবুকের ঘায়ের শাস্তি দিবেন?”

প্রথমত, এসব কিছুর পূর্বে আগে তাকে সঠিকভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে যে কে আসলে কারাদণ্ড পাওয়ার উপযুক্ত? কাকে তিরস্কার করে ছেড়ে দেয়া যাবে আর কার দিকে ভ্রুকুটি করলেই কাজ হবে।

দ্বিতীয়ত, ইসলামে শাস্তি দেয়ার যে স্তর এবং পর্যায়সমূহ রয়েছে সেগুলো তার কাছে সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকতে হবে।

ইসলামী শাসন ব্যবস্থার একেকজন আলেম এই উম্মাহর তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত। সকলে আপনাদের কাছেই তাদের অধিকারগুলো পাওয়ার দাবি রাখবে, তারা পুরুষ অথবা নারী, নবীন কিংবা প্রবীণ, ইয়াতীম অথবা স্বামী-হারা – যে-ই হোক। মনে রাখবেন, আমরা যদি শুধু নিজেদের কথাই ভাবি আর ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়গুলোর খেয়াল রাখি, তাহলে এই সামাজিক ঐক্য ও নিরাপত্তা আমাদেরকে হারাতে হবে।

আগের জাহিলিয়াতের অনুগামী সরকারগুলোর ক্ষেত্রে (কারজাই, ঘানির আমলে), তাদের খাহেশাত তাদের উপর রাজত্ব করেছে। ফলস্বরূপ সমাজে কোনো একতা ছিলো না। মুজাহিদদের স্লোগানগুলোর মধ্যে এটিও একটি ছিলো যে, ‘শরীয়াহ এসে গেছে, খাহেশাত বিদায় নিয়েছে এবং সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’।

দেশে এখন একতা ও শান্তি পুনরুদ্ধারের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সততা, আদল-ইনসাফ এবং ইহসানের এই সামাজিক ঐক্যের সাথে যদি শরীয়াহ থাকে তাহলেই এটা দীর্ঘস্থায়ী হবে।

নফসানিয়তের ব্যাপারে বলবো – আপনাদের নিজেদের উপরস্থদের আনুগত্যের মাধ্যমে এটাকে নির্মূল করা সম্ভব। মেয়রের অধীনস্থগণ মেয়রকে মেনে চলবেন, মেয়র হবেন তাদের কাছে আমীরুল মুমিনীনের মতো। মেয়র মেনে চলবেন গভর্নরকে, গভর্নর মানবেন মন্ত্রী মহোদয়কে এবং এভাবে আগাতে থাকবে। স্বার্থপরতা আর নফসানিয়ত থেকে মুক্ত হওয়ার এটাই পথ। কিন্তু আমরা যদি আমাদের নফসের কথা শুনি আর বলি, “আমি এখন ক্ষমতার অধিকারী হয়েছি, আমার আর কাউকে দরকার নেই” তাহলে ঐক্য সম্ভব হবে না। একজন যদি অন্যজনের বিষয়ে নাক গলাতে শুরু করি, আরেকজনের ব্যাপারে অভিযোগ করতে থাকি, অন্যজনকে হিংসার পাত্র বানাই কিংবা দুনিয়াবি বিষয়ে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই, মতানৈক্য করতে থাকি, বিরোধিতা করতে থাকি তবে আমাদের এসব পদক্ষেপের কারণে ঐক্য অথবা নিরাপত্তা কোনোটাই আমাদের হাতে ধরা দিবে না।

সর্বদা মনে রাখবেন – শরীয়াহ দুইটি দলের মাধ্যমে আসবে। একটি হলো ক্ষমতাসীন শাসকবর্গ, আর আরেকটি হলো উলামায়ে কেরাম। শরীয়াহ কেবল তখনই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে যখন এই দুটি দলের মধ্যে একতা থাকবে। আলেমগণ শাসকদেরকে এবং মুজাহিদীনকে শরীয়তের আদব-আখলাক এবং ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা শিখাবেন। সেটা কড়া সুরেও হতে পারে কিংবা নাসীহতের আদলেও হতে পারে। উলামায়ে কেরাম মুজাহিদদেরকে পথচ্যুত হওয়া থেকে রক্ষা করবেন, মেহনতের অপচয় থেকে রক্ষা করবেন।

শাসকগণ উলামায়ে কেরামের সাথে কোনোভাবেই অহংকার দেখাবেন না। যদি আমীরগণ ভাবতে থাকেন যে, তাদের আলেমদের কোনো প্রয়োজন নেই – তবে তারা ভুল করবেন। তারা যদি আলেমদের জন্য দরজা বন্ধ করে দেন, সরকারি কাজের ব্যস্ততার অজুহাত দেখানো শুরু করেন, উলামায়ে কেরাম যদি দীর্ঘ অপেক্ষার পরও উমারার সাথে সাক্ষাৎ না করতে পারেন, নেতারা যদি আলেমদেরকে সময় না দেন তবে প্রশাসন এবং উলামায়ে কেরামের মধ্যে ফাটল তৈরি হবে। এমন হলে শরীয়াহ কায়েম করা সম্ভব হবে না।

আফগান জিহাদে তালেবানের যে কর্তব্য ছিলো, তা তাঁরা যথেষ্ট সাহসিকতার সাথেই পূরণ করেছেন। তাঁরা বহু কুরবানী পেশ করেছেন, ফিদায়ী অভিযানে অংশ নিয়েছেন, নিজেদের রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠিন মোকাবিলা করেছেন। আল্লাহ জাল্লা জালালুহু তাদের সমস্ত মেহনত কবুল করে নিন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের তাজা রক্তের মাধ্যমেই আমাদেরকে বিজয়ের নেয়ামত দিয়েছেন।

এখন সময় এসেছে শরীয়াহ আইন বাস্তবায়নের। তালেবান জানে না এটা কীভাবে করতে হবে। এটার জ্ঞান রাখেন উলামায়ে কেরাম। যেহেতু ইসলামী হুকুম-আহকামের ইলম তাঁদের কাছে রয়েছে। সময় এসেছে আলেমগণ সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবার। তাঁরা প্রশাসনের সাথে এমন ইতায়াতের সাথে থাকবেন যেন তা অন্যদের জন্য শিক্ষার উপকরণ হয়ে থাকে।

শুধু আফগানরাই নয়, বরং সারা পৃথিবীর মুসলিমগণ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আপনাদের প্রথম দায়িত্ব – আপনারা ইলমি, আখলাকি, সমস্ত বিষয়েই তাদের অভিভাবক হবেন। দ্বিতীয়ত, তাদেরকে উপদেশ দিবেন। তৃতীয়ত, কী করতে হবে, কী করা যাবে না তাও সততার সঙ্গে বলে দিবেন। সর্বোপরি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন।

আপনাদের দায়িত্ব শুধু আফগানিস্তানে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং আফগানিস্তানের উলামায়ে কেরামকে শরীয়াহর নির্দেশনায় পুরো বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই আদালতে, মন্ত্রণালয়ে, প্রদেশ এবং জেলা সদর দপ্তরে – সর্বত্র আলেমদেরকে উপস্থিত থাকতে হবে। আমি অবশ্যই এখানে এবং অন্যান্য সম্মেলনে উপস্থিত উলামায়ে কেরামদেরকে নিয়ে একটি দল গঠন করবো। যেখানে তাঁদেরকে প্রয়োজন হবে, সেখানেই তাঁদেরকে প্রেরণ করবো। আপনারা কি তখন ওজর অনুসন্ধান করবেন নাকি আমার আদেশ মেনে নিবেন?

(উপস্থিত আলেমরা বললেন – “আমরা মেনে নিবো”)।

দেখুন, আপনাদেরকে আপনাদের মুখের কথার মূল্য রাখতে হবে। আপনারা আমার আনুগত্য করবেন, আমিও আপনাদের কথা মেনে চলবো। আর যদি আপনারা আমার শরীয়ত সম্মত আদেশ-নির্দেশনাগুলো মেনে না নেন, তাহলে আপনাদেরকে জেনে রাখতে হবে যে, আমি কেবল নামকাওয়াস্তে আমীর হতে আসিনি। আমি প্রচলিত কোনো রাজনৈতিক নেতা নই, প্রেসিডেন্টও নই। আমি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে দাঁড়ানো কোনো প্রার্থী নই কিংবা এমন প্রতারক নেতা নই যে নিজের নাম প্রচার করার স্বার্থে কিংবা বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাওয়ার জন্য জনগণের কাছে মিথ্যা কথা বলবো। যদি আপনারা আমাকে আপনাদের আমীর বলেন, তাহলে আমীরের আনুগত্যের মতো করেই আমার আনুগত্য করবেন। আমি যদি আপনাদেরকে কোথাও যেতে বলি, যাবেন।

আমি একজন মৌলভী  সাহেবকে কান্দাহার থেকে কাবুলে যাওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তিনি ওজর পেশ করলেন যে, তিনি এবং তাঁর কন্যা অসুস্থ। আমি তাঁকে আমার সাথে বসতে বললাম। পরে তাঁর কাছে একটি শরঈ ফাতওয়া জানতে চাইলাম যে, “যদি আমি কোথাও গিয়ে কোনো কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য কাউকে নির্বাচন করি, তাহলে তাঁর এহেন ওজর গ্রহণযোগ্য হবে কি?” খানিক নীরবতার পর তিনি জানালেন, “না, তার ওজর ধর্তব্য হবে না”। তারপর আমি তাঁকে বললাম, “যদি তা ধর্তব্য না হয়, তাহলে আপনি সেখানে যাবেন।” পরেরদিন সকালে তিনি সেখানে চলে গেলেন। তিনি হয়তো এখন কাবুলেই আছেন।

একইভাবে, আমি আপনাদের কাছেও সেই ফাতাওয়াটির উপর আমলই চাইছি। যদি উলামা ও শাসকগণ এভাবে ঐক্যবদ্ধ না থাকেন, তাহলে আর কী বলার আছে!

মনে রাখবেন, শরীয়াহ তো কেবল তখনই আসবে যখন উলামায়ে কেরাম সহযাত্রী হবেন এবং নেতৃত্ব দিবেন। আর আমরা যারা আওয়াম তথা সাধারণ আছি, আমরা তাঁদের কার্যনির্বাহী বাহিনী হবো। এটাই আমাদের জিহাদ।

দ্বিতীয় স্মরণীয় বিষয় – তাঁরা সিদ্ধান্ত দিবেন, আমরা সেগুলো কার্যকর করবো। আমরা যদি তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ না করি, কিংবা লোকেরা যেভাবে নিজের বন্ধু অথবা নিজ গোত্রের কারও জেলের হুকুম হলে আদালতে তদবির করে থাকে, যেভাবে ক্ষমতাশালী কারও কারাদণ্ড হলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার জন্য বিচারকের কাছে অনুরোধ করতে থাকে, সেভাবে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে বাঁধা সৃষ্টি করি, তাহলে চলবে না। সর্বদা এসমস্ত কার্যক্রম পরিহার করাকে নিজেদের দায়িত্ব বলে  মনে করবেন।

পূর্ব উল্লেখিত নেতিবাচক পরিস্থিতিতে আমি পড়তে চাই না। বিচারকের পদে যারা থাকবেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমার তো সেই বিচার পছন্দ হয় যা কাজী শুরাইহ রহিমাহুল্লাহ করেছিলেন। আলী রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এক ইহুদীকে সাথে নিয়ে কাজী সাহেবের কাছে বিচার নিয়ে গেলেন। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর দাবী ছিল, সেই ইহুদী তাঁর বর্ম চুরি করেছে। ফায়সালা তৎকালীন আমীরুল মুমিনীন আলী রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর বিপক্ষে গিয়েছিলো।

আমাকেও আদালতে ডাকা হবে, আর আমিও একইভাবে পরীক্ষিত হতে চাই, সেটা বলছি না। কিন্তু কখনও যদি আমাকে কিংবা আমার প্রশাসনের কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, আমি সেই ইনসাফের বিচারই দেখতে চাই। এটাই আমার লক্ষ্য। আল্লাহ জাল্লা জালালুহু এমন ইনসাফই যেন আমাদের দান করেন। এমনটাই বিচারকদের থেকে কামনা করছি।

ইনসাফ একটি সরকারের দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি। কোনো প্রশাসনই স্বৈরাচারী হয়ে টিকে থাকতে পারে না। মনে রাখবেন, একজন নিরপরাধ মানুষকে যখন বন্দী করা হয় অথবা বিনা অপরাধে তাঁকে প্রহার করা হয়, নির্যাতন করা হয়, তখন তাঁর দোয়া আর আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। তাঁর বদদোয়া আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর কাছে কবুল হওয়ার জন্য এক ঘণ্টা পার হতে হবে না, বরং এক মুহূর্তেই সেটা কবুল হয়ে যাবে আর এই পুরো ইমারাহ ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইনসাফ ও সততার আমানত রক্ষা করতে না পারলে আল্লাহর আমাদেরকে কোনো প্রয়োজন নেই। সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ বিচারই টিকে থাকার পথ দেখাতে পারে। আর ইনসাফ যদি না থাকে; যদি স্বেচ্ছাচার, স্বার্থপরতা, খুন-খারাবি, প্রতিশোধপরায়ণতা, আইন বহির্ভূত হত্যা – এসব ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এই দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। জমিনে ফিতনা-ফাসাদ এবং বিপর্যয় বিস্তৃত হবে। তাই বেইনসাফি করে টিকে থাকা যাবে না – এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।

এই অন্যায়-অবিচার কেবল একভাবেই থামানো যেতে পারে; সেটা হলো উলামায়ে কেরাম ইনসাফপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিবেন আর প্রশাসন সঠিকভাবে সেই সিদ্ধান্ত কাজে পরিণত করবে। পূর্বের প্রবৃত্তির অনুগামী, জালেম, দুর্নীতিবাজ, স্বার্থপর, স্বজন ও গোত্রপ্রীতির দোষে দুষ্ট বিজাতির তাবেদার প্রশাসনগুলো যাদের সহায়-সম্পত্তি অল্প থাকতো তাদেরকে শাস্তি দিতো বা লজ্জা দিতো। আর ১০০ বিঘা জমির মালিককে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হতো। এধরণের বিচার হতে পারবে না। আগের জাহেল ও তাবেদার সরকারগুলোর আমলে রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের গভীর পর্যন্ত ক্ষমতাধরদের হাত থাকতো আর তারা বেপরোয়া হয়ে ঘুরে বেড়াতো।

আমাকে কেউ কেউ জানিয়েছেন যে কাবুলে এক দুর্বৃত্ত উন্মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করে, আর তার পিছনে গাড়ির বহর থাকে। আমি তাঁদেরকে বলেছি, “আপনারা যদি তাকে পাকড়াও করতে না পারেন, তাহলে আমিই করবো!”। এই সন্ত্রাসীটা এখনও বুলেটপ্রুফ গাড়ির বাহিনী নিয়ে হাটে-মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে – ব্যাপারটা আফগান জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সেই একই সন্ত্রাসী যে কিনা বিগতকালেও আমাদের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিতো, সে বর্তমানে ইসলামী ইমারতের ভূমিতে আমাদের উপরে খবরদারি করে বেড়াচ্ছে, দম্ভ আর ঔদ্ধত্যের সাথে চলছে ফিরছে! এটা মেনে নেয়া যায় না। এখন থেকে আপনাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এরকম স্বেচ্ছাচারীদের হাতে ক্ষমতা দেয়া যাবে না। তাদের দম্ভ-ঔদ্ধত্যের উপর লাগাম পরাতে হবে । শত-সহস্র শহীদের রক্তস্নাত এই পবিত্র ভূমিতে এসব খারাপ লোকের পা ফেলতে দেয়াও উচিত না। এদেরকে সেই সুযোগটুকুও আপনারা দিবেন না।

আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর ইচ্ছায় আমাদের ভূমিতে এখন ঐক্য ও নিরাপত্তার একটি পরিবেশ বিরাজ করছে।

“ফিতনা ঘুমিয়ে আছে, আল্লাহর লানত তার উপর, যে তাকে জাগিয়ে তোলে”।

অভ্যন্তরীণ অনৈক্যের ফিতনা এখন ঘুমন্ত অবস্থায় আছে, এখানে তার বদলে এখন ঐক্য ও সম্প্রীতির আবেহায়াত বিরাজমান। যারা এই ফিতনাকে আবার জাগিয়ে তুলতে চায়, এই জাতিকে যারা যুদ্ধ আর রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে ধ্বংস করতে চায়, তাদের উপর আল্লাহ লানত দিন। এ সমস্ত দুর্নীতিবাজ আর স্বৈরাচারী লোকদেরকে আপনাদের মাঝে স্থান দিবেন না। এরা আপনাদের মাঝে অনুপ্রবেশ করে কেবল দুর্নীতিই ছড়াতে চায়।

আপনারা মাশোয়ারা নিবেন আলেমদের থেকে, নীতিবান এবং বোধসম্পন্ন লোকদের থেকে, ঐসব খারাপ লোকদের থেকে নয়। এইসব দুশ্চরিত্র লোকদেরকে কোনো সম্মান দেখাবেন না, এদেরকে বাড়তে দিবেন না। আজকাল এদেরকে নানাভাবে সম্মান দেখানো হচ্ছে, এদের তোষামোদি করা হচ্ছে। কিছু পূর্বে শাইখ যেমন বলে গেলেন, অনুতপ্ত হওয়া এক জিনিস আর ক্ষমা করা ভিন্ন জিনিস। হ্যাঁ, আমি তাদেরকে সাধারণভাবে ক্ষমা করেছি। কোনো মুজাহিদ যদি তাদেরকে নতুন কোনো অপরাধ ব্যতীত পূর্বের অপকর্মের কারণে আক্রমণ করে, আমি আদালতে তাকে বিচারের মুখোমুখি করবো। কীসের ভিত্তিতে তাদের বিচার করতে হবে কিংবা সাজা দিতে হবে, বিচারকদেরকে আমি সেই নীতিমালা দিয়ে রেখেছি।

যাই হোক, সাধারণ ক্ষমার অর্থ হচ্ছে আমরা তোমাদেরকে অতীতের অপরাধগুলোর দায়ে পাকড়াও করবো না, হত্যা করবো না। এর মানে এই নয় যে, আমরা তোমাদেরকে আমাদের পাশে বসিয়ে দেবো অথবা তোমাদেরকে আমাদের উপর দায়িত্বশীলের পদে বসাবো। তেমন করলে তা এই ইয়াতীমদের, এই পিতাদের এবং আমাদের সহযোদ্ধাদের অন্তর কষ্ট পাবে। উপরন্তু, নানান ভাবে এদেরকে শুধরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফলাফল আসে নি। বিভিন্ন উপায়ে পরীক্ষা করেও দেখা হয়েছে। তাই এদের ব্যপারে সতর্ক থাকবেন।

উলামায়ে কেরামকে আমরা বলবো, আল্লাহ আপনাদের মেহনত কবুল করুন, আপনারা আমাদেরকে নাসীহাহ দিবেন। “দীন হচ্ছে উত্তম উপদেশ”। কাজেই শাসকদেরকে আপনারা উপদেশ দিবেন। আমাদের যেটা অনুরোধ থাকবে তা হলো, যখন আমাদেরকে উপদেশ দিবেন, তা যেন এমন পদ্ধতিতে হয় যা প্রকৃত অর্থে কার্যকরী হবে। একটা ধরন হলো যে উপদেশগুলো জনসম্মুখে সরকারের কর্মকর্তাদেরকে করা হয় – এগুলো সমালোচনা কিংবা অভিযোগের আদলে হতে পারে। তবে আওয়ামের সামনে এই মন্তব্যগুলো করা ক্ষতিকর কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। “যে ব্যক্তি লোকের সামনে তার ভাইকে উপদেশ দিলো, সে তাকে অপমান করলো, যে গোপনে তাকে উপদেশ দিলো, সে তার ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করলো।”

মনে রাখবেন- আপনি সামাজিক মাধ্যমে এসে হাত নেড়ে নেড়ে বললেন, “আমীরুল মুমিনীন, আপনি অমুক কাজটি কেন করলেন না? তমুক কাজটি কেন করলেন? সেটা তো শরীয়তের খেলাফ”- এটা আমার প্রতি উপদেশ হলো না। উপদেশ হতো যদি আমি আর আপনি সামনাসামনি বসতাম। তখনই আপনি সত্যিকার অর্থে আমাকে উপদেশ দিতে পারতেন। সোশাল মিডিয়ায় আপনি যখন কথা বলেন তখন আপনি পুরো পৃথিবীর সামনে কথা বলছেন; সেখানে আপনি উপদেশ দিলে তা ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি ফেলবে। এগুলো আপনারা মনে রাখবেন।

এরকম করলে সরকারের অবস্থান দুর্বল হবে এবং সন্দেহের বীজ রোপিত হবে। উলামা এবং ইমারাহ এর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হবে। মনে হবে, আলিমগণ ইমারাহকে আক্রমণ করছেন।

মনে রাখবেন – আমরা পরামর্শ গ্রহণে সদাপ্রস্তুত। আপনারা জানবেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আপনি যদি আমীরকে উপদেশ দিতে চান, তাহলে তার হাত ধরে তাকে লোক সমাগম থেকে পৃথক করে আনুন। তারপর আপনার যা বলার তাকে বলুন। এরপর আমীর যদি কোনো বিষয়ে আনুগত্য করা থেকে আপনাকে অব্যাহতি দেন, তাহলে আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে পারেন। কিন্তু তিনি যদি আপনার কথা গ্রহণ না করেন, তাহলে আপনাকে সবর করতে হবে।

আপনারা জানেন, হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ মদীনাতুল মুনাওয়ারার গভর্নর ছিলো। এই উম্মাহর একজন শাসক ছিলো। তিরমিযীতে বর্ণিত আছে যে, সে প্রায় ১, ২০, ০০০ সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনকে হত্যা করেছে, যাঁরা তার বিরোধিতা করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। হযরত আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু, যিনি ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম এবং তাঁর সবচেয়ে পুরোনো সাহাবীদের একজন, সেই সময় মদীনাতে ছিলেন। তিনি একবার আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের কাছে গেলেন এবং কেবল এটুকু বললেন যে, “হাজ্জাজ মানুষের প্রতি কঠোরতা করছে!!”

হাজ্জাজ ১, ২০, ০০০ সাহাবী ও তাবেঈকে শহীদ করে দিয়েছে, এতকিছুর পর আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু শুধু বললেন যে সে “কঠোরতা করছে”। আসলে ফিতনা যেন ছড়াতে না পারে, সাহাবীগণ তা খেয়াল রাখতেন। তাঁরা হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠাননি। তাঁরা ভেবেছেন যে এখন পর্যন্ত তাঁর শাসনকালে সব মিলিয়ে ১, ২০, ০০০ মানুষ নিহত হয়েছে, কিন্তু এখন যদি আমরা আওয়াজ তুলি, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি, নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হই, তাহলে এমন হতে পারে যে প্রত্যেক দিন ১, ২০, ০০০ এর চেয়ে বেশি লোক শহীদ হয়ে যাবে।

যদি এমন মুহূর্ত আসে যখন আপনারা আমার আদেশ মানতে চাচ্ছেন না, এরূপ পরিস্থিতিতে প্রথম করণীয় পদক্ষেপ হল, আপনারা সবর করুন। দ্বিতীয়ত, আমাদের বিরুদ্ধে চলে যাবেন না। বিরোধিতা যদি শুরু হয়, তাহলে এর ফিতনা জনগণের মাঝেও ছড়িয়ে পড়বে। যে ক্ষতির আশঙ্কা আপনারা করছিলেন তা এখন হয়তো সামান্য হতে পারে, কিন্তু পরিস্থিতি সেরকম হলে, তা আরও বড় আকার ধারণ করবে।

আমাদের বরং উচিত হবে পরস্পরকে নাসীহাহ করা। বিশেষত, উলামায়ে কেরাম আমীর-উমারাকে উপদেশ-পরামর্শ দিবেন। শাসকদেরও উচিত পরস্পরকে হকের দিকে আহ্বান করা, একে অপরকে সবরের তাগিদ দেয়া। তাদেরকেও নিজেদের মধ্যে দীনি মুযাকারার আয়োজন করতে হবে, যাতে তারা করণীয় নির্ধারণ করতে পারেন। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুর না তুলে তাদেরকে বরং সবাই মিলে একটি দেহ হতে হবে। অভ্যন্তরীণ বিবাদ-কলহ, এগুলো রাষ্ট্র কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়।

“মুসলিমদের সুলতান হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে আল্লাহর ছায়া। যে সুলতানকে অপমান করলো, সে আল্লাহকে অপমান করলো।”

এই ইমারাহ একটি ইসলামী সালতানাত। সুলতানের অধীনে যাঁরা দায়িত্বশীল আছেন, তাঁরা সকলে শরঈ আমীর। তাঁদেরকে কদর করতে হবে, সম্মান করতে হবে। এসব নীতি পালনে সর্বদা সততা বজায় রাখতে হবে।

অন্য সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে দুশমনেরা আমাদেরকে ভিন্ন পথে আক্রমণের চেষ্টা করছে। তারা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা তাদের সকল বাহিনীকে পরাজিত করেছি। এখন কেবল আমরাই আছি, যারা তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশন চালাতে পারি, উল্টোটা নয়। আলহামদুলিল্লাহ্‌, কাফিরদের আর একটি বাহিনীও নেই যারা আফগানিস্তানের মাটিতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে। একারণে তারা এখন মতানৈক্যের বীজ বপনের পরিকল্পনা করবে আর আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াবে।

তারা চেষ্টায় থাকবে যেন সরকার এবং জনগণের মধ্যে ফাটল তৈরি করা যায়। তাই তারা এমন এমন বিষয় তুলে আনবে যেগুলো মতবিরোধের কারণ হয়। তারা প্রশাসনের কাঠামোর মধ্য থেকেই এমন লোক তৈরি করার চেষ্টা করবে যারা পরস্পরকে আক্রমণ করবে, যাতে বিদ্যমান কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষের অবস্থা তৈরি হয়। আর এই সংঘর্ষের চূড়ান্ত পরিণতি হলো, ইমারাহ তার অস্তিত্ব হারাবে। কিন্তু আমরা সকলে যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, উলামা, ইমারাহ ও জনগণের মধ্যকার ফাটলগুলো যদি মিলিয়ে দেই এবং যারা এই ফাটলগুলো বড় করতে চায় তাদেরকে যদি নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসি, তাহলে ইমারাহ টিকে থাকবে।

ইদানিং রাষ্ট্রবিরোধী প্রোপাগান্ডা তৈরির বিভিন্ন চেষ্টা চলছে। এরা ইমারাহকে নিচ ও জঘন্য সব নামে সম্বোধন করে। কেন তারা এগুলো করে? এটা তো অত্যন্ত কাপুরুষোচিত একটা কাজ। এসব বিষয়ে তারা কিছু প্রকাশনাও বের করেছে। এই দেশ আমার, সরকার আমার, আমি সম্পূর্ণ স্বাধীন! আমি খুব বেশি ওয়াকিবহাল একজন ব্যক্তি না হতে পারি, রাষ্ট্র পরিচালনা বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণে না জানতে পারি, কিন্তু আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখছি, কেমন হলে আপনারা খুশি থাকবেন? আমি আমার নিজস্ব মতামত অনুযায়ী ফায়সালা করলে নাকি অন্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী ফায়সালা করলে?

(উপস্থিত জনতাঃ আপনার নিজস্ব মতামত অনুযায়ী)

আজকে আফগানিস্তান স্বাধীন এবং এই দেশ স্বতন্ত্র ধ্যান-ধারণা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এটা আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর দেয়া অনেক বড় এক নেয়ামত। এই দেশ এখন অন্যদের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলছে না। এই দেশ মুক্ত এবং স্বাধীন না হলে, উন্নতির মুখ কখনোই দেখতে পারবে না। আজকের বিশ্ব চাইছে না যে আফগানিস্তান ও তার সরকার নিজ বিচার-বিবেচনা (তথা ইসলামী শরীয়তের) অনুযায়ী চলুক।  তারা চায় আফগানিস্তান তাদের পথ অনুসরণ করুক তথা প্রবৃত্তির অনুসরণে জাহালতের জুলুমাতে লিপ্ত হোক!

তারা আমাদেরকে অযাচিত পরামর্শ দেয়, বলে, “আপনারা এমন এমন করুন। কেন আপনারা এমন করবেন না?”। “আরে আমি, আমার সরকার, আমার দেশ কী করবো না করবো, তাতে তোমাদের কী আসে যায়? তোমরা নাক গলাচ্ছো কেন? আমি তো তোমাদের আদেশের পাত্র নই আর ওগুলো আমি মেনেও নিবো না। তোমাদের সাথে চলতে গিয়ে যদি শরীয়াহর মধ্যে ছাড় দিতে হয়, আমি তোমাদের সাথে এক পা-ও আগাবো না, তোমাদের সাথে কোনো সংলাপে যাবো না, কোনো লেনদেনও করবো না”।

তোমরা এই দেশে এসে MOAB (Mother of all bombs) ব্যবহার করেছো। তোমরা যদি এরপরে নিউক্লিয়ার বোমা অথবা তোমাদের অস্ত্রাগারে যা বাকি আছে সবই যদি ব্যবহার করতে চাও, করতে পারো। আমরা তো ঈমানের সাক্ষ্য দিয়েছি, পড়েছি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। আমাদের সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহর তাআলার সাথে। আমরা আল্লাহকেই আমাদের জীবন-মৃত্যুর মালিক মানি, তোমাদেরকে নয়। পৃথিবীর কোনো বাহিনীর কাছে আমরা নতি স্বীকার করবো না। আমাদের আত্মসমর্পণ কেবল আল্লাহর কাছে। আমরা কখনও যদি কোনো বাহিনীর আনুগত্য মেনে নিই, তা আল্লাহ তাআলার হিদায়াতের ভিত্তিতেই হবে। এর অন্যথা কিছু আমাদের থেকে কেউ আশা করো না।

আমার ভাবনাগুলো আপনাদের সামনে বললাম। তারা এখন পৃথিবীর নানান প্রান্তে আমাকে নিয়ে নানান কথা বলবে। আমাকে বশ্যতা স্বীকার করাতে চাইবে। কক্ষনো না! সকল নিউক্লিয়ার বোমা একত্র করে মারলেও তারা এটা করতে পারবে না;

 মৃত্যু তো আমাদের এমনিতেও হবে। হামযা রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন শহীদ হয়ে গেলেন, তার দেহ থেকে কলিজা বের করে আনা হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেছিলেন, “যদি তাঁর বোন দুশ্চিন্তা না করতো, আমি তাঁকে দাফন করতাম না। তাঁকে আমি এই অবস্থায় যুদ্ধের মাঠেই রেখে যেতাম, যতক্ষণ না হাশরের দিন তাকে এই ছিন্ন-ভিন্ন অবস্থা থেকে, নেকড়ে আর পাখিদের পেট থেকে তার অংশগুলো এনে আবার এক করা হবে।”

আমরাও আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর জন্য, তাঁর দীনের জন্য উৎসর্গিত হওয়ার ক্ষেত্রে এমন নমুনাই দেখাতে চাই। আমাদেরকে তোমরা থামিয়ে দিতে পারবে না, আমাদের মর্যাদা শুধু আরও উঁচুই করতে পারবে। শাহাদাত আমাদের জন্য অসম্মানেরও নয়, পরাজয়েরও নয়। বরং শাহাদাতই আমাদের সফলতা। তোমাদের নিউক্লিয়ার বোমাগুলো যদি আমাদের উপর ব্যবহার করো, এখানকার সবকিছুকে যদি ছাইয়ে পরিণত করে ফেলো, তারপরও আল্লাহর সাথে আমাদের ওয়াদা তো এই যে, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করবে এমন কোনো বিষয়ে আমরা তোমাদের অনুগামী হবো না। আমরা তোমাদের আদেশের তাবেদার নই।

[উপস্থিতিঃ তাকবীর, আল্লাহু আকবার]

আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আমাদেরকে স্বাধীনতা ও মুক্তির এক অনন্য নেয়ামত দান করেছেন। এমন স্বাধীনতার স্বাদ আমরা আফগানরা বহু শতাব্দী ধরে পাইনি। আমাদের তো শুধু এই জন্যই আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা উচিত যে, তিনি গত ১০ মাস ধরে আমাদেরকে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করতে দিয়েছেন। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, আল্লাহ তাআলা গত ১০ মাসে মুজাহিদীন এবং আলেমদের মাধ্যমেই এই পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ও ঐক্যের পরিবেশ কায়েম করেছেন। এটুকুই তো মুজাহিদীনের জন্য অনেক বড় রহমত এবং সম্মানের বিষয় যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দিয়ে এই কাজ নিয়েছেন। তবে আমরা যদি চাই যে এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হোক, তাহলে আমাদের সকলকে এক এবং অবিভক্ত থাকতে হবে।

আমার সম্মানিত মুসলিম ভাইয়েরা,

নেতৃত্ব আমাদের উলামায়ে কেরামের হাতে। তাঁরা পুরো সমাজকে তাঁদের ছাঁচে গড়ে নিবেন। তাঁরা ইলমে, অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আনবেন। আর অর্থনীতির ব্যাপারে বলতে হয়, একটি বিকাশমান অর্থনীতির জন্য পূর্বশর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা। আল্লাহ পাক যখন আমাদেরকে নিরাপত্তার নেয়ামত দিয়ে দিবেন, আমাদের অর্থনীতির চাকা নিজে নিজেই ঘুরতে শুরু করবে। মনে রাখবেন, আর্থিক উন্নতি তখনই সাধিত হবে, যখন দেশের সব মানুষ হাতে হাত রেখে চলবে।

স্মরণীয় বিষয়, বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভর করে থাকা উচিত হবে না। তারা আমাদের দারিদ্র্য দূর করতে পারবে না। আমাদের অর্থনীতিও ঠিক করে দিতে পারবে না। মনে রাখবেন, আমাদেরই সততা ও নিষ্ঠাপূর্ণ মেহনত আমাদের অর্থনীতির সমস্যা সমাধান করতে পারে। এটিই আমাদেরকে পরনির্ভরশীলতা এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করে আল্লাহর ইচ্ছায় স্বাধীন করতে পারে। এজন্য ব্যবসায়ীদের উচিত হবে নিজে থেকে এগিয়ে আসা। নিজের দেশে বিনিয়োগ করে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া।

তাঁরা কীসের ভয় করছেন? তাঁরা তো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন। দেশের বাজেটের একটা অংশ তাঁরাই দিতে পারেন। আপনারা কি কাফিরদের জন্য অপেক্ষা করছেন যে তারা আপনাদের রাস্তাঘাট বানিয়ে দিবে, আপনাদের দেশ গড়ে দিবে? আপনারা এক হয়ে চলুন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করুন। একেকজন ৫০০০ করে দিন এবং নিজেরা মিলে ছোটো ছোটো কোম্পানি তৈরি করুন। ইনশাআল্লাহ দেশটা চোখের নিমিষে দাঁড়িয়ে যাবে। ব্যবসায়ীদেরকে দেশে ফিরতে হবে।

যারা বিদেশে থেকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের প্রতি আমাদের বক্তব্য হলো –

মনে রাখবেন ফিতনা নির্মূল হয়ে গেছে। যুদ্ধের আগুনও নেভানো হয়েছে। এই আগুন আবার জ্বালানোর চেষ্টা করবেন না। এমনটা করলে, পুরো আফগানিস্তানবাসী আপনাদের বিপক্ষে চলে যাবে।

আমরা আপনাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। নিজের দেশে ফিরে আসুন। রাতের ঘুম দেশের মাটিতে ঘুমান। নিজের দেশে যে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবেন, কাফিরদের দেশে তা কক্ষনো সম্ভব নয়। অতএব নিজের জন্য এই অপমানের জীবন কেন বেছে নিচ্ছেন?

সেখানে আপনাদের কোনো সম্মান নেই। আপনাদের সন্তানদের, পরিবারেরও কোনো মর্যাদা নেই। নিজের দেশে ফিরে আসুন, আমরা আপনাদেরকে পাকড়াও করবো না। তবে এখানে যখন আসবেন, তখন কোনো অপকর্ম কিংবা ষড়যন্ত্র করতে পারবেন না। নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারবেন না। এমন হলে জনগণের স্বার্থেই আপনাদের শাস্তি পেতে হবে। এ বিষয়টি মাথায় রাখবেন।

আমাদের যে স্লোগান ছিলো, সেটা ইসলামী স্লোগান। যারা আমাদের অনেক বড় বড় ক্ষতি করেছে, তাদেরকে আমরা মাফ করে দিয়েছি। তারা যদিও আমাদেরকে হত্যা করেছে, আমরা প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার নিয়ত রাখি না। এই জাতির কোনো মুসলিমকে বা অন্য কোনো নাগরিককে আমরা জুলুম করবো? কখনও না।

আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি বলবো

তাদের এই ভয়ে থাকার দরকার নেই যে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোন দুরভিসন্ধি আছে। শান্তি ও নিরাপত্তার আরেক নাম ইসলাম। আমরাও শান্তি চাই, নিরাপত্তা চাই, স্বস্তির একটি জীবন চাই। আমরা একটি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চাই, এটুকুই, এ বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার। আমরা অন্যদের কথা অথবা আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী চলতে চাই না, স্বাধীনভাবে নিজেদের মতো ইসলামী শরীয়তের আলোকে চলতে চাই। তাই কেউ যদি আমাদের সাথে কোনো চুক্তি করতে চায়, কিংবা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চায়, তারা নির্ভয়ে তা করতে পারে। আমাদের কথার নড়চড় হবে না ইনশা আল্লাহ।

আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন নয় যে আমরা অন্য কারও হাতের পুতুল। এমন হবে না যে, আমরা কোনো সন্ধি করবো আবার তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবো। আমরা তৃতীয় কোনো পক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নই। আমরা স্বাধীন একটি জাতি, আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আমাদেরকে এভাবেই বহাল রাখুন, আমীন।

পুরো জাতির প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে

যেসব বিষয়ে শুধু মতানৈক্যই হয়, সেগুলো এখন থেকে ছেড়ে দিন। মানুষ অকারণে ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে একে অন্যকে অপমান করা শুরু করে। তিলকে তাল বানিয়ে ফেলে। আমরা এরূপ আচরণ পরিহার করার বিষয়ে সচেতন থাকবো।

দ্বিতীয় অনুরোধ – আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো হতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অনেক বড় একটি সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের জন্য উচিত হবে এই সুযোগকে কাজে লাগানো। এই সুযোগকে হেলায় হারানো ঠিক হবে না। সামান্য কারণে এই ইসলামী সরকারকে হারানো উচিত হবে না।

বিবিধ মতানৈক্যকালীন করণীয় পদক্ষেপ হবে – আমরা প্রয়োজনে আলোচনায় বসবো। ঐকমত্যে পৌঁছবো এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মেহনত করবো। এসব বিষয় সর্বদা মনে রাখবো ইনশা আল্লাহ ।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। আসলে আমরা তো প্রকৃত শাসক নই, আমরা সবাই এখানে আলেম। আমাদের প্রকৃত শাসনকর্তা তো হলেন আল্লাহ তাআলা। আমরা জিম্মাদার ও খাদেম। আদল-ইনসাফের শাশ্বত এই দীনের ধারক ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্বশীল। আমাদের শরীয়াহ, কুরআন, সুন্নাহ, ফিকহে হানাফি, এগুলো সবই পূর্ণাঙ্গ এবং পর্যাপ্ত। আদালতে বিভিন্ন বিষয়ে আমরা যে সিদ্ধান্তেই আসি, সেগুলো আসলে পূর্বসূরিদের সিদ্ধান্তসমূহেরই পুনরাবৃত্তি। আমরা যা হতে পারি, তা হলো শরীয়াহর খাদেম। এই শরীয়াহকে আল্লাহ তাআলা আফগানিস্তানে কায়েম রাখুন।

আমি আপনাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি না, ভাইয়েরা। আমি তো বরং আপনাদের পরামর্শ কামনা করছি। আজকের সম্মেলন- উলামায়ে কেরামের সম্মেলন। আল্লাহ জাল্লা জালালুহু এই সম্মেলনকে আমাদের মাগফিরাতের উসীলা বানিয়ে দিন। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি তিনি যেন আফগানিস্তানের জমিনে এই আলেমদের বরকতে শরীয়াহ ও ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে দেন।

উলামায়ে কেরাম আমাকে জানিয়েছিলেন যে তারা বিভিন্ন প্রদেশে ইমারাহর প্রতি সমর্থন জানিয়ে উলামা সম্মেলন করবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সেই কাফিরদেরকে দেখিয়ে দেয়া, যারা বলে আলেমরা এই ইমারাহর পক্ষে নেই। তাঁরা বলেছেন যে তাঁরা বাইআত দিতে চান। এটা ইমারাহর প্রতি তাঁদের মুহাব্বতেরই বহিঃপ্রকাশ। প্রত্যেক মুসলমানই আসলে ইমারাহকে মুহাব্বত করে। অখুশি তো হবে কাফিররা, যারা অন্তরে ভিন্ন উদ্দেশ্য লালন করে।

আমি আলেমগণের প্রস্তাবটি শুরার কাছে পেশ করেছিলাম। তাঁরা জানিয়েছেন যে তাঁরাও চাচ্ছিলেন, এরকম সম্মেলন আয়োজন হোক। কিন্তু আশঙ্কা ছিলো যে আয়োজনে অব্যবস্থাপনা হতে পারে; নিরাপত্তা জনিত কিছু উদ্বেগও ছিলো। তো আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা পূর্ণ মনোযোগ নিরাপত্তার দিকে দিবো, আর সম্মেলনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব উলামারাই নিবেন।

আমি আলেমগণের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সম্মেলনটি কান্দাহারে করা যায় কিনা। তাঁরা বললেন যে, “না, আমরা কাবুলেই এটা করতে চাই।” আমি বললাম, “ঠিক আছে, কাবুলেই হোক”। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন যে, ‘আপনি কি করবেন’? আমি বললাম যে, ‘এ বিষয়ে তো প্রাথমিক প্রস্তাবনায় কিছু নেই’। তারা জোর করলেন “না, আপনাকে উপস্থিত থাকতেই হবে।” আমি বললাম, “ঠিক আছে”।

আমি এখানে শুধু উলামায়ে কেরামের খাতিরেই এসেছি। এই উলামা সম্মেলনে আমি সফর করে এসেছি কেবল এই জন্য যে, আল্লাহ তাআলার কাছে এর নেকি হাসিল করবো। সাওয়াব অর্জনের নিয়তেই আমি আজকে এই মজলিসে অংশগ্রহণ করলাম। আমি তাঁদেরকে বলেছি যে, এই সম্মেলন যদি বাদাখখানেও আয়োজন করা হয়, আমি যাবো, নূরীস্তানে হলেও যাবো, আর যদি কাবুলে আয়োজন করা হয়, আমি সেখানেও যাবো। যেখানেই হোক, উলামায়ে কেরামের জন্য আমি যাবো এবং মজলিসে উপস্থিত থাকবো। আল্লাহ তাআলার অনেক বড় রহমত যে, এখানে আমার অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে।

আলেমগণের বক্তব্যের প্রতি আপনাদের সজাগ শ্রবণ ও মনোযোগকে আল্লাহ জাল্লা জালালুহু কবুল করুন। আপনাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।

ওয়া আখিরু দাওয়ানা আনিল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন।

*********

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
In your dua remember your brothers of
Al Firdaws Media Foundation

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − nine =

Back to top button