জিহাদী মিডিয়ার গুরুত্ব-শাইখ আবু কাতাদাহ (হাফি:)
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসূল (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের উপর।
আমাদের শায়েখ, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আবু ক্বাতাদা, আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন ও আপনাকে সত্যের উপর অবিচল রাখুন। প্রিয় শায়েখ, শামের যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে আমাদের কিছু ভাই আছেন যারা মিডিয়াতে কাজ করেন। তারা আপনার নিকট কিছু প্রশ্ন করেছেন ও তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন। আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন।
প্রশ্নসমূহঃ প্রিয় শায়েখ, আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন আর আপনার উপর সদয় দৃষ্টি রাখুন। আসসালামুআলাইকুম।
(১) এডিটিং (সম্পাদনা), ডিজাইনিং (বিন্যাস ও পরিকল্পনা) ইত্যাদি এর মত মিডিয়ার কাজ যা ঘরে বসে করা হয় তার পুরস্কার কি আল্লাহর রাস্তায় মুরাবিতের (যিনি যুদ্ধে পাহারারত) পুরস্কার সমতুল্য? আর এখানে যা বোঝানো হচ্ছে তা হল, রিবাতের মর্যাদা বর্ণনাকারী হাদিসসমূহ; যেমনঃ “আল্লাহর রাস্তায় একদিনের রিবাত হাযারে আসওয়াদের পাশে ক্বিয়ামুল লাইল অপেক্ষা উত্তম”। আর তাকে যদি এ অবস্থায় হত্যা করা হয় তবে কিয়ামত পর্যন্ত তার আমলনামায় সওয়াব লিখা হবে?
(২) কোন ভাই যদি মিডিয়ার কাজের প্রস্তুতিতে অবহেলা করে তাহলে সে কি গোনাহগার হবে? আর তার অবহেলার কারণে জিহাদবিরোধী মিডিয়া ও তাদের ছাড়া অন্যান্য চরমপন্থী মিডিয়াগুলো কর্তৃত্ব লাভ করে। তাই, এই অবহেলার ফলে বেশ কিছু ভাই এসব ভ্রান্ত চরমপন্থার দিকে আকৃষ্ট হয়, সুতরাং অনেক ভাইই মিডিয়া ও সক্রিয় সামরিক উন্নতির মত ক্ষেত্র থেকে দূরে থাকেন এ কারণে তাদের প্রত্যেকেই কি গোনাহগার হবেন?
শায়েখ, আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন, উত্তরে বলেনঃ
আপনাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
আল্লাহর রাস্তায় নিয়োজিত আমার ভাইয়েরা! জেনে রেখো, ইসলাম ও জাতিসমূহের ইতিহাসে জিহাদ ও কিতালের কাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ সমূহের একটি হচ্ছে মিডিয়ার কাজ। টিকে থাকা ও বিজয়ের ক্ষেত্রে এটা হল সমগ্র কাজের অর্ধেক তুল্য। রাসূল (সাঃ) হাসান (রাঃ) কে উৎসাহিত করেন যেন তিনি মুশরিকদেরকে বিদ্রূপাত্মক বর্ণনার দ্বারা আক্রমণ করেন, কারণ তার এ কাজ তীর নিক্ষেপের চেয়ে অধিক ধ্বংসাত্বক ফল বয়ে আনবে। মুসলিম (রহঃ) তার সহীহাইনে বর্ণনা করেন যে, আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সাঃ) বলেনঃ “কুরাইশ কাফিরদের বিরুদ্ধে বিদ্রূপাত্মক বর্ণনা করো, কারণ তা (বিদ্রূপাত্মক বর্ণনা) তীরের জখম থেকেও অধিক মারাত্মক”।
তাই তিনি ইবনে রাওয়াহাকে পাঠান তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রূপাত্মক বর্ণনা করতে। তখন তিনি একটি ব্যাঙ্গ রচনা করেন যা তাঁর কাছে ভালো লাগেনি। তারপর তিনি (সাঃ) কাব বিন মালিককে একই কাজের জন্য বলেন কিন্তু সেটাও তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তখন তিনি হাসান বিন সাবিতের কাছে কাউকে পাঠান। হাসান বিন সাবিত তাঁর কাছে এসে বলেনঃ আপনি এখন সেই সিংহকে ডেকেছেন যে তার লেজ দিয়ে শত্রুকে আঘাত করে। তারপর তিনি বলতে লাগলেনঃ যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি আমার জিহ্বা দ্বারা তাদেরকে এমনভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করবো যেমনভাবে চামড়া বিদীর্ণ করা হয়।
সে কারণে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেনঃ তাড়াহুড়া করোনা; তোমাদের জন্য আমার বংশ সম্পর্কে আবু বকরকে (রাঃ) একটি পার্থক্য নির্ণয় করতে দাও কারণ তাদের ও আমার বংশ একই। আর আবু বকর কুরাইশদের বংশ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে। তারপর হাসান তার নিকট (আবু বকর) আসেন ও অনুসন্ধান করার পর (রাসুল সাঃ এর বংশ সম্পর্কে) রাসুল সাঃ এর নিকট আসেন ও বলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! তিনি আপনার বংশ ও কুরাইশদের বংশে একটি পার্থক্য নিরূপণ করেছেন।
যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি তাদের থেকে আপনার নামকে এমনভাবে পৃথক করে আনবো যেমনভাবে ময়দা থেকে চুলকে পৃথক করা হয়। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল সাঃ কে হাসানকে বলতে শুনেছিঃ “যতক্ষণ তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুল সাঃ এর পক্ষে থাক ততক্ষণ নিশ্চয়ই রুহুল কুদুস (পবিত্র ফেরেশতা) তোমাদের সাহায্য করতে থাকবে”। আর তিনি (আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল সাঃ কে হাসানকে বলতে শুনেছিঃ হাসান তাদের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ রচনা করেছে ও মুসলমানদের তৃপ্তি দান করেছে আর কাফিরদের নীরব করেছে।
আর তিনি (সাঃ) উহুদ যুদ্ধের পর উমর আল ফারুক (রাঃ) কে আবু সুফিয়ানের কথার জবাব দিতে নির্দেশ দেন ও জবাবে কি বলবেন তাও শিখিয়ে দেন। বারা ইবনে আযিব এর রেওয়ায়েতে বুখারি তার সহিহাইনে বর্ণনা করেন যেঃ “আমরা সেদিন (উহুদ যুদ্ধের দিন) মুশরিকদের সামনাসামনি হলাম এবং রাসুল সাঃ একটি তীরন্দাজ বাহিনীকে উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করলেন ও আব্দুল্লাহকে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করলেন”। আর তিনি বললেনঃ”……আবু সুফিয়ান একটি উঁচু স্থানে অবতরণ করে বলে, “লোকদের সাথে কি মুহাম্মদ উপস্থিত?”
রাসুল সাঃ বলেন, “তার কথার উত্তর দিওনা”। আবু সুফিয়ান আবার বললো, “লোকদের সাথে কি আবু কুহাফার ছেলে উপস্থিত?” রাসুল সাঃ বলেন, “তার কথার উত্তর দিওনা”। আবু সুফিয়ান আবার বললো, “লোকদের সাথে কি আল খাত্তাবের ছেলে উপস্থিত?” রাসুল সাঃ বলেন, “তার কথার উত্তর দিওনা”। আবু সুফিয়ান তখন বললো, “ঐ লোকগুলো মারা গিয়েছে, কারণ তারা যদি বেঁচে থাকতো তবে কথার জবাব দিত”। সেই মুহুর্তে উমর (রাঃ) আর থেমে থাকতে পারলেননা। তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহর দুশমন! তুমি মিথ্যা বলেছ, আল্লাহ তা টিকিয়ে দিয়েছেন যা তোমাকে মনোকষ্ট দিবে”। আবু সুফিয়ান বললো, “হুবাল সুউচ্চ হয়েছে”।
তখন রাসুল (সাঃ) বলেনঃ “তার কথার উত্তর দাও”। তারা জিজ্ঞেস করলেনঃ “আমরা কি উত্তর দিব?” তিনি জবাবে বললেনঃ “বল, আল্লাহ তা’আলা সর্বাধিক সুউচ্চ ও গৌরবান্বিত”। আবু সুফিয়ান বললো, আমাদের জন্য রয়েছে উযযা (মূর্তি) আর তোমাদের কোন উযযা নেই”। রাসুল (সাঃ) বলেনঃ “তার কথার উত্তর দাও”। তারা জিজ্ঞেস করলেনঃ “আমরা কি উত্তর দিব?” তিনি জবাবে বললেনঃ “বল, আল্লাহ আমাদের অভিভাবক আর তোমাদের কোন অভিভাবক নেই”। আবু সুফিয়ান বললো, “ আজকের দিন হল বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ নেবার দিন। আর যুদ্ধে বিজয় আসে পর্যায়ক্রমে। তোমরা তোমাদের কিছু নিহত লোককে বিকৃত অবস্থায় পাবে, কিন্তু না আমি তাদের এর আদেশ দিয়েছি আর না আমি এর জন্য দুঃখিত”।
বাস্তবিকই একজন নেতার কাঁধে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল, বল প্রয়োগ করে হলেও এমন ব্যক্তিকে নিয়োজিত করা যে তার বক্তৃতার মাধ্যমে সত্যের সমর্থন করবে তেমনিভাবে যেমনভাবে একজন যোদ্ধা তার রাইফেল দ্বারা সত্য প্রতিষ্ঠা করে। আর জিহাদ যদি এই মূল্যবান কাজ করা থেকে মুক্ত থাকত তবে না আমরা আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে পারতাম আর না আমরা যুবকদের জিহাদের কাজে নিয়োজিত করতে পারতাম যারা যুদ্ধক্ষেত্রগুলো পূর্ণ করতো।
মূলত এটা একটি ফরয কাজ যা সংখ্যার যথেষ্টতার উপর নির্ভর করে। জিহাদে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যদি এর প্রতি অবহেলা করেন, তাহলে কোন ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই গোনাহগার হবেন। এটা জিহাদ ও কিতালের সমতুল্য আর এটা জিহাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আরবরা সফরের সময় একজন গায়ককে ভাড়া করতো আর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ও তা করেছেন। আর তাই তিনি বলেছেনঃ “হে আনজাশা, কাঁচের পাত্র (অর্থাৎ মহিলা) দ্বারা ধীরে চালাও (উটগুলোকে)”। আনাস বিন মালিকের রেওয়ায়েতে বুখারি বর্ণনা করেন যেঃ “আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এক সফরে ছিলেন। তার সাথে আনজাশা নামে এক কালো কৃতদাস ছিল আর সে গুন গুন করছিল (গান গাচ্ছিল)। তাই রাসুল সাঃ তাকে বলেনঃ “হে আনজাশা! সতর্ক হও, কাঁচের পাত্র (অর্থাৎ মহিলা) বহনকারী উটগুলোকে ধীরে চালাও”।
তাই যদি মানুষ ও পশুর ভ্রমণের সময় তাদেরকে শক্তি যোগায় এমন গান প্রয়োজন হয় তবে জিহাদের জন্য কি তা প্রয়োজন নয় যা তার অন্তরে শক্তি যোগায়। যেমন খবর ও দৃশ্যপট ছড়ানো যার মাধ্যমে অন্তরে মজবুতি আসে আর আত্মাসমূহ আরও সুদৃঢ় হয়?
সুতরাং যিনি যোদ্ধাদের উৎসাহিত ও সমর্থন করেন আর তাদের খবর মুসলমান জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেন যা শুনে তারা আনন্দিত হয় তার পুরস্কারের চেয়ে আর বড় কী পুরস্কার হতে পারে! সত্যিকার অর্থেই মুজাহিদরা তাদের কর্ম ও জ্ঞান দিয়ে যে সকল কাজ করেন তার অনেক সত্যই হারিয়ে যাবে আর তাদের প্রচেষ্টা অদৃশ্য হয়ে যাবে যদি না তাদের পিছনে একদল সত্যবাদী বাহিনী থাকতো যারা তাদের ব্যাপারে লিখেন ও তাদের সমর্থন করেন। আর আল্লাহর কসম! আমি যদি বলি যে, ময়দানের অনেক মুজাহিদদের থেকে ঐ লোকগুলো বেশি পুরস্কার পাবে তবে না তা অতিরঞ্জন হবে বা না আমি গোনাহগার হব।
মূলত আমাদের অনেক প্রচেষ্টাই বৃথা চলে যাবে ও অন্যদের দ্বারা চুরি হয়ে যাবে যদি না আমাদের মিডিয়া বাহিনী থাকে যারা সেগুলো নথিভুক্ত করবে এবং সত্য ও নিশ্চয়তার সাথে তা ছড়িয়ে দেবে।
আর আমাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হয় তার ব্যাপারে শক্ত জবাব ও এসব তথ্য মানুষকে জানানো ছাড়া তা নির্মূল করা সম্ভব হবেনা।
আর সত্যিকারেই ভ্রান্ত, উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন কুফফার মিডিয়ার শক্তি দ্বারা ইসলামের অনেক যুবকই আমাদের থেকে দূরে সরে যাবে।
আর আমরা তাদের কত জনের খালিস দোয়া থেকেই না বঞ্চিত হবো শুধুমাত্র তারা আমাদের খবর না জানার কারণে!
আর অনেক আত্মাই উদ্ভুদ্ধ ও তৃপ্ত হবে যদি মানুষ তাদের খবরে আনন্দিত হয়। আর তাদের অন্তর আরো ত্যাগ, প্রচেষ্টা ও উৎসর্গের জন্য জেগে উঠবে। যখন তারা জানবে যে তাদের প্রচেষ্টাকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে আর সত্যবাদী মুজাহিদদের দ্বারা তা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন তাদের আত্মাগুলো শ্রম দিতে, ব্যয় করতে ও সামনে আগাতে উদ্ভুদ্ধ হবে।
বাস্তবতা হল, মিডিয়া যুদ্ধে অলসতা অস্ত্র যুদ্ধে অলসতার চেয়ে ভয়ানক। আর মিডিয়া যুদ্ধের ভুল অস্ত্র যুদ্ধে ভুলের চেয়ে ভয়ানক খারাপ ফলাফল বয়ে আনবে।
আল্লাহর কসম, রাত জেগে যে এ কাজ করে সে অবশ্যই তার সমান যে কিনা রাত জেগে সম্মুখ যুদ্ধে ও যুদ্ধ ক্ষেত্রে তার ভাইদের পাহারা দেয়। আর তার পুরস্কার এর মতই হবে। আর যে সকল আলেমগণ রাত জেগে শরিয়াহ ও দ্বীন সম্পর্কিত কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন সে তার সমান পুরস্কার পাবে। আর সে যদি সচেতনতার সাথে ও আন্তরিকভাবে এ কাজ করতে করতে পুরস্কারের আশা নিয়ে মারা যায়, তবে অবশ্যই তাকে উঠানো হবে তার ভাইদের সাথে যারা মারা গিয়েছিল বোমাবর্ষণে।
আর এমন ব্যক্তির চোখতো সেই চোখের মত যে চোখ মহান আল্লাহর পথে পাহারা দেয়।
আর আমি জিহাদের নেতৃবৃন্দের নিকট উপদেশ হিসেবে বলি যে, যদি কোন ভাইকে এসব কাজে সক্ষম হিসেবে পাওয়া যায়, কিন্তু সে তা উৎকর্ষ ও দক্ষতার সাথে করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাকে লড়াইয়ে যেতে বাঁধা দিন, তাকে নিজের খেয়ার খুশির অনুসরণ করতে বাঁধা দিন, কারণ সে যদি এমন কোন কাজ পরিত্যাগ করে যাতে সে দক্ষ এবং তা জিহাদকে লাভবান করে, এবং এমন কাজে যেতে চায় যেখানে তার চেয়ে অন্যরা দক্ষ, তাহলে তা হচ্ছে নিজ খেয়াল খুশির অনুসরণ করা, এটা দ্বীনের জন্য জিহাদ করা নয়।
আর আল্লাহ যেন সবাইকে সেই দিকেই ধাবিত করেন যা তিনি পছন্দ করেন ও যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।
আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, সবকিছুর প্রতিপালক।
সম্পাদনায়ঃ আবু মাহমুদ আল ফিলিস্তিনি