উত্তম আখলাক – শাইখ খালেদ বিন আ: রাহমান আল-হুসাইনান
ইসলাম যে বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদান করেছে তার মধ্যে হচ্ছে: উত্তম আখলাক। অনেক মানুষ থেকেই তুমি উত্তম আখলাক শব্দটা শুনে থাকবে। কিন্তু যদি জানতে চাও ইহা সম্পর্কে তুমি কি জান ? উত্তম আখলাক কাকে বলে ? তার বৈশিষ্ঠসমূহ কি ও তার দায়িত্ব সমূহই বা কি ? অধিকাংশ মানুষকেই পাবে ইহা সম্পর্কে কিছুই জানে না।
আল্লাহর নবী আলাইহিস সালাম আমাদেরকে উত্তম আখলাকের দিকে উদ্ভুদ্ব করেছেন; যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: অধিকাংশ মানুষ কি কারণে জান্নাতে যাবে ? তিঁনি বললেন: আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাকওয়া ও হুসনে খুলুক। এখানে আল্লাহ তায়ালার প্রতি তাকওয়া এটা তোমার ও আল্লাহ তায়ালার মাঝে, এবং উত্তম আখলাক তোমার ও বান্দার মাঝে।
নবী আলাইহিস সালাম বলেন: নিশ্চয় প্রত্যেক ব্যক্তি হুসনে খুলুকের মাধ্যমে সর্বদা সালাত আদায়কারী রোজাদারের মর্যাদা পেয়ে যাবে। চিন্তা করুন এখানে একজন ব্যক্তি সর্বদা সালাত আদায়কারী রোজাদার ও অপর ব্যক্তি উত্তম আখলাকেরঅধিকারী। যার কাছে উত্তম আখলাক আছে সে সর্বক্ষন সালাত আদায়কারী রোজাদারের মর্যাদা ও সম্মান পেয়ে যাচ্ছে।
নবী আলাইহিস সালাম বলেন: কিয়ামতের দিন বান্দার মিযানে সবচেয়ে ভারি হবে উত্তম আখলাক।
হুসনে খূলুক কাকে বলে ? এই হালাকায় আমরা ইহা নিয়েই আলোচনা করব। একজন মুসলিম কিভাবে ইহা চিনবে অথবা কিভাবে সে নিজেকে যাচাই করবে। কি ভাবে সে বুজতে পারবে তার কাছে উত্তম আখলাক আছে অথবা নেই ?
হাসান বাসরী রা: উত্তম আখলাকের ব্যখ্যায় তিনটি শব্দবলেছেন:
كف الأذىকষ্ট না দেয়া অর্থাৎ মানুষকে তুমি কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে। এর মানে কি ? অর্থাৎ মুখে অথবা কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেয়া। মানুষকে জিহ্বার মাধ্যমে কষ্ট দিবে না। সুতরাং তুমি বিরত থাকবে অন্যদেরকে গালী দেয়, কুটুক্তি করা, অপমানিত করা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা থেকে। এই জন্যই নবী আলাইহিস সালাম একবার কে সত্যিকারে মুসলিম ও কাকে আল্লাহ তায়ালা ভালবাসেন তা বর্ননা দিতে গিয়ে বলেছেন:
সেই সত্যিকারের মুসলিম যার হাত ও যবান থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। সুতরাং যার কছে যবানের আয়ত্ব নেই; মানুষ তার কথার মাধ্যমে কষ্ট পায়। সে অন্যদেরকে গালী দেয়, কুটুক্তি ও অভিসম্পাত করে। অনেক মানুষ আছে যারা অন্যের গীবত-সমালোচনা ও অভিশাপ দিতে থাকে। আমরা এই ব্যক্তিকে বলব তোমার নিকট উত্তম আখলাকের ঘাটতি আছে। কেন ? কারণ মুখের মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাক নি।
অথবা কাজের মাধ্যমে কষ্ট; যেমন: অন্যের হক্ব বা অধিকারের ক্ষেত্রে সীমালঙ্গন করা, অন্যায় ভাবে রক্ত প্রবাহিত করা, জ্বিনা, চুরি, মানুষকে প্রহার করা। এই সবগুলোই কাজই অন্যকে কষ্ট দেয়ার অন্তভূক্ত।
সুতরাং উত্তম আখলাকের ব্যখ্যা: প্রথমত কথা ও কাজে কষ্ট দেয় থেকে বিরত থাকা।
দ্বিতীয়ত হুসনে খূলুকের আলামত থেকে: ভাল কাজ করা; অর্থাৎ মানুষের জন্য ভাল কিছু করা। ইহা হতে পারে মাল-সম্পদের মাধ্যমে অথবা শারীরিক চেষ্টার মাধ্যমে অথবা এমন কি তা হতে পারে তোমার কথার মধ্যেও। সুতরাং তুমি মানুষকে সাহায্য করবে, তাদের প্রতি ভাল আচরণ করবে, তাদেরকে মুক্ত করবে ও মানুষে প্রয়োজন পূরা করার চেষ্টা করবে। উদাহারণ সরূপ যদি তুমি দেখ রাস্তায় কোন ব্যক্তির গাড়ী নস্ট হয়ে গেছে তাহলে তুমিও থাম এবং তাকে সাহায্য কর। ইহা উত্তম আখলাক; কেননা তুমি অন্যের জন্য ভাল কিছু করার চেষ্টা করেছ। সুতরাং যে মানুষের ভাল কিছু করার চেষ্টা করে না তার কাছে উত্তম আখলাকের ঘাটতি রয়েছে।
তৃতীয় বিষয় হাসান বাসরী যে আলামতসমূহ উল্লেখ্য করেছেন: চেহারাকে প্রশস্ত রাখা অর্থাৎ মুচকি হাসা। তুমি মানুষের সামনে সর্বদা মুচকি হাসবে। যে অন্যদের সামনে মুচকি হাসে নবী আলাইহিস সালাম তার কাজটাকে সাদাকা হিসেবে উল্ল্যেখ করেছেন।
কোন ভাল কাজকেই ছোট করে দেখবে না যদিও ইহা হাসি মুখে তোমার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতই হোক না কেন।
কিছূ মানুষ আছে যারা কখনো অন্যের সামনে হাসে না। তাকে চেহারাকে সর্বদা ফিরাতে হয় ও হাসাতে হয়। সে ধারণা করে ইহা তার পরহেজগারী, ইবাদাত-বন্দেগী, তাক্বওয়া, দ্বীনদারি ও তাকে সংঙ্গ দেয়ার গুরুত্বের উপর প্রমান বহন করে। সর্বদা তকে মানুষের সামনে পেশ করা হয় যেন সে একটা রেশমে জাড়ানো মুক্তা !!! আমরা বলব এই ব্যক্তির উত্তম আখলাকের মধ্যে ঘাটতি আছে। মুচকি হাসি অর্থাৎ উপরের ঠোটকে একটু উপরে তোলা ও নিচের ঠোটকে একটু ছড়িয়ে রাখা ইহা তোমার থেকে কিছুই নিবে না।
“মানুষের মহাব্বতকে বেধে দেয়া হয়েছে তার সাথেই যার চেহারায় মুচকি হাসি থাকে” সুবহানাল্লাহ !!! সবাই তাকে ভালবাসে, তাকে পেয়ে নিশ্চিন্ত হয় ও তার কথায় প্রশান্তি লাভ করে। অন্য দিকে মানুষ *যদি সুন্দর হয় অর্থাৎ সাদা ও পরিস্কার, সুন্দর চোখ এবং সুন্দর নাক ইত্যাদির অধিকারী হয় কিন্তু মানুষের সামনে মুচকি হসে না, কেউ তাকে পচ্ছন্দ করবে না, তার কাছে গিয়ে নিশ্চিন্ত হবে না, এবং তার কাছে নিজের প্রয়োজনীয় কাথা বলবে না এবং তার কাছে নিজের গোপন বিষয় সমূহ প্রকাশ করবে না।
সুতরাং হে প্রিয় দ্বীনি ভাইরা ! উত্তম আখলাকের তিনটা আলামাহ রয়েছে যার মাধ্যমে নিজেকে চিনতে পারবে: কষ্ট না দেয়া, অন্যের জন্য ভাল কাজ করা, মুচকি হাসা।
আল্লাহ তায়ালার কাছে দুয়া করছি; যাতে তিনি আমাদেরকে ও আপনাদেরকে উত্তম আখলাকে সজ্জিত করে দেন। আমীন।