আমিরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহইতিহাস- ঐতিহ্যখোরাসান (আফগানিস্তান)বই ও রিসালাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

“তিনিই ছিলেন তোমার যুগের শ্রেষ্ঠ নেতা” আমীরুল মুমিনীন মোল্লা উমর রহ. এর স্মরণে…

“তিনিই ছিলেন তোমার যুগের শ্রেষ্ঠ নেতা”
আমীরুল মুমিনীন মোল্লা উমর রহ. এর স্মরণে…


তা ছিল এক বিস্ময়কর দৃশ্য:
কুফুরী শক্তি নিজের সকল বাহিনী সহ আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে একজন মুসলিমকে তাদের কাছে অর্পণ করার দাবী জানাচ্ছিল! চিন্তিত হয়ে পড়লেন উলামা-মাশায়েখগণ; নিজেদের মাথায় হাত রেখে বসে ভাবছিলেন- কী করার আছে এখন! নিজেদের আমীরকে এই বিষয়টিই তারা বুঝাতে চাচ্ছেন, আপনি এই যুদ্ধ সহ্য করতে পারবেন না। যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে শরয়ী শাসন ব্যবস্থা আর ইমারতের সবই জমিনের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হবে। কিছুটা নরম আচরণ করুন! তাদের মোকাবিলা করার মতো সময় এখনো হয়নি। তারা (আমেরিকা) এক ব্যক্তির ইস্যু তুলে সব কিছু ধুলোয় মিশিয়ে দিবে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী আমরা এটাই বুঝতে পারছি, আপনি তাঁকে (উসামা রহ. কে) কুফফারদের হাওলা করে দিবেন।

কিন্তু ঐ মরদে মুমিন উলামাদের কাছে একটি কথাই জানতে চেয়েছিলেন, উসামাকে কাফেরদের কাছে হাওলা করার ব্যাপারে আমাকে একটি শরয়ী দলীল দিন! তবেই আমি আপনাদের কথার ওপর ফায়সালা দিয়ে দিবো।

তাঁর এই কথা শুনে ক্রন্দন শুরু করলেন উপস্থিত উলামায়ে কেরাম! তাঁর এমন দৃঢ়তা দেখে বলতে লাগলেন- আল্লাহর কসম! উনি সাহাবায়ে কেরামের যুগের মানুষ। আর তারা ফিরে আসলেন নিজেদের মত থেকে, একমত হলেন মোল্লা উমর রহ. এর সিদ্ধান্তে।

অতঃপর দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে- এই পাহাড়সম দৃঢ় ব্যক্তির ঐ ফায়সালার পর এমন এক যুগ শুরু হয়েছিল; যেখানে জমিন তাদের জন্যে সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, আসমান ও জমিন হতে আগুনের বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগল তাদের ওপর। যেই লোকগুলো শুরুতে উনার সাথে থাকার দাবী করেছিল; তারাও পরিবর্তন করে নিল নিজেদের গন্তব্য আর কাফেরদের একান্ত সাহায্য-সহযোগিতাকারী হয়ে গেল!

কিন্তু তিনি? তিনি তো ছিলেন আল্লাহর বন্ধু। যিনি আপন সীনা উচুঁ করে বেপরোয়াভাবে কাফেরদের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। সকল বন্ধুরা ছেড়ে যাক! জিজ্ঞেসও না করুক কোনো দয়াবান ব্যক্তি! আমার আল্লাহই আমার জন্যে যথেষ্ট। আমাকে জগতের কেউ কিছু জিজ্ঞেস না করুক!

অতঃপর তিনি প্রাণোৎসর্গকারী আপন কিছু সাথীদের সঙ্গে নিলেন আর সীমিত অস্ত্র হাতেই মোকাবিলা শুরু করলেন দুনিয়ার কথিত সুপার পাওয়ার শক্তিগুলোর। এমনই ছিল আহলে ঈমানদের অবস্থা।

অপরদিকেও কিছু লোক ছিল; যারা ইসলামকে পশ্চাতে ফেলে অবস্থার পরিবর্তণ দেখে নিজেদের জাহাজও কাফেরদের কাতারে নিয়ে দাঁড় করাল। আর তারা বলতে লাগল- বাতাস যখন তীব্র হয়, তখন নিজের মাথা বাঁচানো দরকার; যাতে নিজের মাথা বাতাসে উড়ে না যায়! ইসলামের না’রা লাগানো এ সকল ব্যক্তি উল্টো ইসলামের নাম জপে, সেই ব্যক্তিদের জন্যে জমিন সংকীর্ণ করে দিতে লেগে গেল আর ডলারের প্রবাহিত নদীতে খুব ভালোভাবেই পরিস্কার করতে লাগল নিজেদের হাত। তারা গোলামিতে এত এত প্রমোশন পাচ্ছিল যে, তাদের মুনিবরাও খুশিতে বাগ বাগ হয়ে যাচ্ছিল। তারা কুফুরীর দালালির ক্ষেত্রে এমন স্থানে পৌঁছে গেল যে, ভাই তো আছেই বরং বোনকেও বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ হাত ছাড়া করেনি।

কিন্তু দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে, ঐ মরদে মুমিন হেরেও জিতে গেছেন এবং যুগের ফেরাউন জিতেও হেরে গেছে। সময় বয়ে চলেছে। যুগের নিত্য নতুন ঘটনা অবস্থাকে কোথায় থেকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে!
দুই সপ্তাহের ভেতর ঐ মরদে মুমিনকে হত্যার দাবীদাররা দূরবীন লাগিয়ে উম্মাহর এই বাহাদুরকে খুঁজছিল; ওরা ভেবেছিল- তিনি নিরাপত্তা ভিক্ষা করে ঐ সকল পাগল মাস্তানদের থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে নিবেন।

নিশ্চয় তিনিই তোমার যমানার শ্রেষ্ঠ নেতা। যিনি তোমাকে বর্তমান (পরাশক্তি) থেকে বিমুখ করিয়ে দিয়েছেন। এই বিষয়টি খুবই চিন্তার বিষয়- যারা এই বীর মুজাহিদের দৃঢ়তাকে ‘বোকামি’ বলেছিল; আজ তারা তাদের পরিণতিতে পৌঁছেছে।
তিনি তো (মোল্লা উমর) শরীয়তের হুকুম প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব আদায় করেছেন এবং অবশেষে ইসলামের ঝান্ডা উচুঁ করেই ছেড়েছেন। ভবিষ্যৎ দুনিয়াও তার গায়রতকে সালাম পেশ করতে থাকবে- তিনি নিজের সব কিছু কুরবান করে দিয়েছেন; তবুও এক মুসলিমকে কাফেরদের হাওলা না করে ‘বাইয়াতে রেদওয়ান’কে জিন্দা করে দেখিয়েছেন।

অপরদিকে তথাকথিত ‘হেকমত’ এর আড়ালে লুকায়িত আত্মমর্যাদাহীন লোক; যাদের কাজকে হেকমত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ মনে করা হতো! এখন তা ‘পাগলামি’ হিসাবেই স্পষ্ট হচ্ছে। তারা আজ সেই আহমকির প্রায়শ্চিত্ত বহুত ক্ষতির মাধ্যমে আদায় করছে।

এই মরদে মুমিন আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু এ শিক্ষাই দিয়ে গেছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে- সফলতা শুধুই আল্লাহর বিধান পুরা করার মাঝেই নিহিত। চাই পুরো দুনিয়া বিরোধী হোক! কিন্তু আল্লাহ সাথে থাকলে কোনো পরওয়া নেই।
যদি উদ্দেশ্য হাসিলে মনযিল পর্যন্ত পৌঁছা যায়; তাহলে তো কামিয়াব। আর যদি মনযিলে পৌঁছার আগেই রাস্তায় প্রাণ আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে হয়; তাহলেও কামিয়াব।

…al-balagh 1438 |2017| issue 4…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 2 =

Back to top button