উম্মাহর প্রতি জামা’আতুল মুজাহিদিনের সাম্প্রতিক বার্তা ও একটি বিশ্লেষণ
ইন্নাল হামদালিল্লাহ ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহি ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লাম তাসলীমান কাসীরা।
‘আম্মা বা’আদ।
২৭/৬/২০১৬ তারিখে, জামা’আতুল মুজাহিদীন নামক ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ করা হয় “জামা’আতুল মুজাহিদিনের পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি বিবৃতি” – শীর্ষক একটি বিবৃতি। ইতিমধ্যে সালাউদ্দীনের ঘোড়া পেজের অ্যাডমিন ভাইরা ফোরামে এটি নিয়ে পোষ্টও দিয়েছেন এ বিবৃতিতে জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবির পক্ষ থেকে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
[ফোরাম পোষ্টের লিঙ্ক- http://bit.ly/297aWIb
জামা’আতুল মুজাহিদিন ফেসবুক পেজের লিঙ্ক- http://bit.ly/292e3ye]
সার্বিকভাবে এ বক্তব্যটি একটি অফিশিয়াল বক্তব্য বলেই মনে হচ্ছে, এবং অন্যরকম মনে করার কোন কারন এখনো পাওয়া যায় নি। বিশেষ করে এ বক্তব্য এমন কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে যা ইতিপূর্বে প্রকাশ করা হয় নি এবং শুধুমাত্র জামা’আতুল মুজাহিদিনের উচ্চপদস্থ সদস্যদেরই জানার কথা। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং এ ভূমির জিহাদী আন্দোলনের দৃষ্টিকোন থেকে, এবং বিশেষ ভাবে একটি জিহাদী তানযীম হিসেবে জেএমবির বর্তমানে অবস্থা বিবেচনায় এ বিবৃতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বিবৃতিতে উঠে আসা বেশ কিছু বিষয়ের আলোকে। এ কারনে এ বিবৃতির মূল বক্তব্য এবং তদসংশ্লিষ্ট কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা সম্মানিত ভাইদের সামনে তুলে ধরছি।
বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে একটি পিডিএফ ফাইল আকারে। ১৮ পৃষ্ঠার এ বিবৃতিতে ৬টি মূল বিষয় উঠে এসেছে।
১) জামা’আতুল মুজাহিদিনের গঠনের ইতিহাস
২) জামা’আতুল মুজাহিদিনের বর্তমান নেতৃত্ব
৩) এ অঞ্চলের মুসলিমদের প্রতি আহবান
৪) মুজাহিদিনের প্রতি বার্তা
৫) বিশ্ব মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের প্রতি বার্তা
৬) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে এখনো বর্তমান জামা’আতুল মুজাহিদিনের সকল হামলার বিবরন ও দায় স্বীকার
প্রথমে আমি সংক্ষিপ্তাকারে এ এ অংশগুলোর বিবরন তুলে ধরছি।
১) জামা’আতুল মুজাহিদিনের গঠনের ইতিহাসঃ
এ অংশে মূলত ১৯৯৮ সালে শায়খ আবদূর রাহমান রাহিমাহুল্লাহর নেতৃত্বে জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ গঠনের ইতিহাস তুলে দজরা হয়েছে। একই সাথে সৈয়দ আহমদ শরীফ রাহিমাহুল্লাহর গঠিত ব্রিটিশ বিরোধী মুজাহিদিন জামা’আ, জামায়েতে মুজাহিদিনের সিলসিলাতেই জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) গড়ে উঠেছে বলে দাবি করা হয়েছে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের ভূমিতে তানজীম “আল-কায়েদাতুল জিহাদের” আলোকে সহীহ-আক্বীদাহ মানহাজের ভিত্তিতে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে শাইখ আব্দুর রাহমান ইবন আব্দুল্লাহ ইবন ফজল (রহঃ) এর নেতৃত্বে একটি জিহাদী তানযীম প্রতিষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য এ বক্তব্য শায়খ আবদুর রাহমান রাহিমাহুল্লাহ শাহাদাতের আগে তার জবানবন্দীতে যা উল্লেখ করেছেন তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। [দেখুনঃ শায়খ রহমানের জবানবন্দী – http://forum.projanmo.com/topic2400.html, ১৭/৮/২০০৭ এ প্রথম আলোতে প্রকাশিত রিপোর্ট। ]
২) জামা’আতুল মুজাহিদিনের বর্তমান নেতৃত্বঃ
এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তার শাহাদাতের আগ পর্যন্ত জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন শায়খ আবদুর রাহমান রাহিমাহুল্লাহ। তিনি গ্রেফতার হবার পর ২০০৬ এ ভারপ্রাপ্ত আমীর হন শায়খ সাইদুর রাহমান বিন আবদুল মাতীন হাফিযাহুল্লাহ (শায়খ এখন বন্দী আছেন), এবং শায়খ আবদুর রাহমানের রাহিমাহুল্লাহ শাহাদাতের পর শায়খ সাইদুর রাহমান স্থায়ী আমীরের দায়িত্ব গ্রহন করেন। ২০১০ সালে শায়খ সাইদুর রাহমান গ্রেফতার হবার পর জামা’আতুল মুজাহিদিনের মধ্যে সাময়িক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এবং এ সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যেই ২০১৩ সালের ২৩ শে ত্রিশালে হামলা চালিয়ে মুক্ত করা হয় প্রতিষ্ঠাতা শুরা সদস্য শায়খ সালাউদ্দিন হাফিযাহুল্লাহ, শায়খ হাফেয মাহমুদ (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ মিজান হাফিযাহুল্লাহ। ঐদিনই ত্বগুত বাহিনীর গুলিতে নিহত হন শায়খ হাফেয মাহমুদ রাহিমাহুল্লাহ। এ ঘটনার পর শায়খ সাইদুর রাহমান সহ কারাবন্দী সকল জেএমবি সদস্য আমীর হিসেবে শায়খ সালাউদ্দীনের কাছে বাইয়াহ প্রদান করে।
৩) এ অঞ্চলের মুসলিমদের প্রতি আহবানঃ
এ অংশে এ অঞ্চলের মুসলিমদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে কুফরী শাসনব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলে, দ্বীন ইসলামকে আকড়ে ধরতে। নাস্তিক-মুরতাদ-শাতেমে রাসূলদের বিরুদ্ধে উন্মুক্ত তরবারী নিয়ে মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের ভূমিকায় অবতীর্ন হতে। এ অঞ্চলের মুসলিমদের আহবান করে হয়েছে আনসার ও মুজাহিদে পরিণত হতে। এবং ত্বগুতের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে পূর্বসূরীদের অনুসৃত পথে নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে এ ভূমিকে ইসলামী খিলাফাহর অংশ পরিণত করতে মুজাহিদিন প্রস্তুত আছে। পরিশেষে জামা’আতুল মুজাহিদিনের ভাইদের জন্য দু’আর দরখাস্ত করা হয়েছে।
৪) মুজাহিদিনের প্রতি বার্তাঃ
এ অংশে বলা হয়েছে
৫) বিশ্ব মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের প্রতি বার্তাঃ
এ অংশে বলা হয়েছে –
৬) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে এখনো বর্তমান জামা’আতুল মুজাহিদিনের সকল হামলার বিবরন ও দায় স্বীকারঃ
এ অংশে গত ১৮ বছরে জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন অপারেশানের বিবরন দেওয়া হয়েছে ও দায় স্বীকার করা হয়েছে। যার মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর রাসূলের ﷺ অবমাননাকারী হুমায়ুন আজাদ, আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর রাসূলের ﷺ অবমাননাকারী মুরতাদ প্রফেসর ইউনুস, আল্লাহর রাসূলের ﷺ অবমাননাকারী হোমিও ডাক্তার মনিরুজ্জামান, মুসলিমদের মধ্যে রিদ্দার ফিতনা ছড়ানো ক্রিষ্টান মিশনারী, বিভিন্ন এনজিও, ভন্ড নবী দাবিদার, যিন্দিক, এবং সর্বহারাদের বিরুদ্ধে অভিযান, এবং ত্রিশালের দুঃসাহসিক অভিযান। এছাড়া প্রথমবারের মত গোপিবাগে নিজেকে ইমাম মাহদীর সেনাপতি দাবিকারী যিন্দিক লুতফর রহমান ও তার খাদেমদের হত্যাকান্ড (২০১৩), যিন্দিক নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যাকান্ড (২০১৪), পিডিবির সাবেক চেয়ারমযান যিন্দিক খিযির খান হত্যাকান্ড (২০১৫), কাশিমপুরের কারাগারের সামনেই কারারক্ষী সার্জেন্ট ইন্সট্রাকটার রুস্তম হাওলাদার হত্যাকান্ড (২০১৬), এবং রাজশাহীর থানোতে ভন্ড নবী দাবিদার শহীদুল্লাহ হত্যাকান্ডের (২০১৬) দায় স্বীকার করা হয়েছে। এ অংশে উঠে আসা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, উল্লেখিত হামলা ছাড়া ২০১৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অন্য কোন হামলাতে তারা জড়িত ছিলেন বলেও এ বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে
[IMG] https://s32.postimg.org/3x5jckyx1/JS_5.jpg [/IMG]প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ
বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে জামা’আতুল মুজাহিদিনের এ বক্তব্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে এমন কিছু বিষয় উঠে এসেছে যা বাংলাদেশের চলমান জিহাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাবার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বক্তব্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে উঠে এসেছে তা নিচে উল্লেখ করা হল –
১) জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের বর্তমান আমীর শায়খ সালাউদ্দীন হাফিযাহুল্লাহ। শায়খ সাইদুর রাহমান সহ জামা’আতুল মুজাহিদিনের শীর্ষ স্থানীয় বন্দী নেতারা এবং ত্রিশালের অভিযানের বাস্তবায়নের সাথে যুক্ত থাকা “ব্রিগেডটি” –সকলেই শায়খ সালাউদ্দীনের কাছেই বাইয়াতবদ্ধ।
এ থেকে প্রথমত বোঝা যায় জামা’আতুল মুজাহিদিন আল হায়াত মিডিয়া সেন্টার থেকে প্রকাশিত জামাতুল বাগদাদীর দাবিক্ব ১৪ সংখ্যায় উল্লেখিত “শায়খ আবু ইব্রাহীম হানিফ”-এর কাছে বাইয়াহ প্রদান করেনি। আবু ইব্রাহিম হানিফকে দাবিক্বে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশে “খালিফাহর সেনাদের আমীর হিসেবে”। এ বিবৃতি অনুযায়ী জামা’আতুল মুজাহিদিন এ আমীরকে বাইয়াহ দেয় নি। এছাড়া বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে “জামা’তুল মুজাহিদিনের সকল মুজাহিদ শায়খ সালাউদ্দীন হাফিযাহুল্লাহর কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে তার হাতে বাইয়াহ প্রদান করেন।“ অর্থাৎ শুধুমাত্র শায়খ সালাউদ্দীনের কাছে বাইয়াহ প্রদানকারীরাই এ বিবৃতি অনুসারে জেএমবির সদস্য হিসেবে গন্য হবে।
এ কথাটি গুরুত্বপূর্ণ কারন এ থেকে বোঝা যায় জেএমবির মূল অংশ আইএস এর সাথে যুক্ত হয় নি, এবং যারা আমির হিসেবে শায়খ সালাউদ্দিনের পরিবর্তে আবু ইব্রাহীম হানিফকে গ্রহন করেছে তাদেরকে জেএমবি নিজেদের সদস্য বলে স্বীকার করে না।
২) এ বিবৃতি থেকে এও প্রমানিত হয় শায়খ সালাউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন মূল জেএমবি জামাতুল বাগদাদীকে বাইয়াহ দেয় নি, এবং এখনো পর্যন্ত তারা এ আবু বাকর আল-বাগদাদীকে বাইয়াহ দেওয়াহ ওয়াজিব বলে মনে করে না। কারন বিবৃতির কোন অংশে আবু বাকর আল-বাগদাদীর কিংবা তার জামা’আর কথা উল্লেখ করা হয় নি। পাশাপাশি স্পষ্ট করা হয়েছে জামা’আতুল মুজাহিদিন একটি স্বতন্ত্র মুজাহিদিন জামা’আ হিসেবে কাজ করছে, এবং এ জামা’আ তার সূচনার সময় গড়ে উঠেছিল তানজীম ক্বা’ইদাতুল জিহাদের আক্বীদা-মানহাজের আলোকে। এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারন অনেককেই দাবি করতে দেখা যায় সম্পূর্ণ জেএমবি জামাতুল বাগদাদীকে বাইয়াহ প্রদান করেছে। কিন্তু এ বিবৃতি অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে জেএমবির মূল অংশটিই বাগদাদীকে বাইয়াহ দেয় নি।
৩) ২০১৫ থেকে এখনো (২০১৬ এর জুন) পর্যন্ত যতগুলো হামলাতে জেএমবিকে দায়ী করা হয়েছে তার তিনটি ছাড়া বাকি সবগুলোর দায় তারা অস্বীকার করেছেন। বাংলাদেশের মুরতাদ পুলিশ বাহিনী দাবি অনুযায়ী ২০১৫ তে সিযার তাভেলার হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত থেকে বাংলাদেশে যে হামলাগুলোর দায় “আইএস” স্বীকার করেছে তার একটি ছাড়া (সিযার তাভেলা) বাকি সবগুলোর জন্য দায়ী জেএমবি। মুরতাদ বাহিনীর এ দাবি স্পষ্ট ভাবে এ বিবৃতিতে অস্বীকার করা হয়েছে। একই সাথে আবারো এর মাধ্যমে পরোক্ষ ভাবে বলা হয়েছে, যে হামলাগুলোর দায় “আইএস” স্বীকার করেছে সেগুলোর সাথে জেএমবি যুক্ত না।
৪) এ বিবৃতিতে বিশ্ব মুজাহিদিন নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের অন্যান্য অংশে একটি স্বতন্ত্র জিহাদী জামা’আ হিসেবে সাধ্যমত জামা’আতুল মুজাহিদিন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কিছু প্রমানও এ বক্তব্য উঠে এসেছে, যেমন – পিডিবির সাবেক চেয়ারমযান যিন্দিক খিযির খান হত্যাকান্ড (২০১৫), কাশিমপুরের কারাগারের সামনেই কারারক্ষী সার্জেন্ট ইন্সট্রাকটার রুস্তম হাওলাদার হত্যাকান্ড (২০১৬), এবং রাজশাহীর থানোতে ভন্ড নবী দাবিদার শহীদুল্লাহ হত্যাকান্ড (২০১৬)। এসবগুলোই সংগঠিত হয়েছে জামাতুল বাগদাদীর খিলাফাহ ঘোষণা এবং হাকীম আল উম্মাহ শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিযাহুল্লাহ কতৃক ভারতীয় উপমহাদেশে আল-ক্বায়েদার শাখা (AQIS) ঘোষণার পর। জেএমবির কিছু হামলার টাইমিং এর ক্ষেত্রে কৌশলগত কারনে মতপার্থক্য থাকলেও, নিঃসন্দেহে আল্লাহর ইচ্ছায় ভন্ড নবী দাবিদার এবং কাশিমপুর কারাগারের সার্জেন্ট ইন্সট্রাকর রস্তমের উপর সফল অভিযান অত্যন্ত উত্তম হামলা হয়েছে, যা মুমিনদের চক্ষুসমূহকে শীতল করেছে।
৫) মুজাহিদিনের প্রতি তাদের বক্তব্য থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে –
“মুসলিম উম্মাহর সিংহ মুজাহিদিন ভাইদের প্রতি এই বার্তাই দিতে চাই, শত জুলুম-নির্যাতন সত্ত্বেও আমরা আমাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। সমূলে ধ্বংসও হইনি।এ ভূমিতে আবারো মায়াজ ও মুয়াওয়াজ’র তরবারি শাণিত হচ্ছে…আমরা উম্মাহ থকে বিচ্ছিন্ন নই এবং কখনও নিজেদের এরকম ভাবিনি। নিশ্চয় আমরা আপনাদের থেকে, আপনারা আমাদের থেকে। আমাদের ভাল কাজগুলো যেন উম্মাহর ইমারাতের এক একটি ইট হিসেবে কাজ করে সেই কর্মপরিকল্পনা সাধ্যমতো পূর্বেও ছিল এবং এখনো আছে ইনশা-আল্লাহ।“
১) আপাতভাবে এ কথা থেকে প্রতীয়মান হয় জেএমবি পুনরায় সংগঠিত হয়ে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকট, এবং তার প্রস্তুতি তারা গ্রহন করছেন।
২) আপাতভাবে প্রতীয়মান হয় তারা অন্যান্য মুজাহিদিন জামা’আর সাথে সহযোগিতা এবং সাহায্যের নীতি গ্রহনে ইচ্ছুক, নিজেদেরকেই একমাত্র মুসলিম জামা’আ কিংবা জিহাদী জামা’আ বা হাক্ক জামা;আহ হিসেবে তারা দাবি করেন না, যেমনটা জামাতুল বাগদাদী করে থাকে।
এ দুটি বিষয়ই অত্যন্ত উত্তম, এবং আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে দু’আ করি তিনি যেন সকল মুওয়াহিদিন ও মুজাহিদিনকে হেফাযত করেন, তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং তাদের বিজয় দান করেন।
সর্বোপরি আপাতবিচারে জামা’আতুল মুজাহিদিনের এ বক্তব্যটি যথেষ্ট ইতিবাচক । যে সমস্ত উসুলের কথা এ বক্তব্য উঠে এসেছে, আলহামদুলিল্লাহ সেগুলোর সাথে আমাদের কোন মতবিরোধ নেই। কিছু কিছু অপারেশানের ক্ষেত্রে কৌশলগত মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে মৌলিক উসুলগত কোন তফাৎ নেই। জামা’আতুল মুজাহিদিনের ভাইদের অভিনন্দন জানাই এ বক্তব্যের জন্য এবং কাশিমপুরে তাদের সাম্প্রতিক বরকতময় হামলার জন্য। একই সাথে আমরা আশা করি শায়খ আবদুর রাহমানের রাহিমাহুল্লাহ যোগ্য ছাত্ররা খাওয়ারিজের ফিতনা থেকে বেঁচে থাকবেন, যে ফিতনাতে পতিত হয়েছে অনেক আন্তরিক মুজাহিদিন জামা’আ। এবং দু’আ করি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদেরকে গুলুহ থেকে রক্ষা করেন। আমরা আমাদের সকল মুজাহিদিন ভাইকে আল্লাহর জন্যই ভালোবাসি। বিশেষ করে এ ভূমিতে জিহাদের জাগরন ঘটাতে জামা’তুল মুজাহিদিনের ভাইদের অবদান এবং রক্তের দাবি অনস্বীকার্য, আল্লাহ যেন কবুল করেন তাদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের পক্ষ থেকে। আল্লাহ যেন আমাদের সামর্থ্য দেন এ রক্তের, সকল মুজাহিদিনের রক্তের, মুজাহিদিনের উপর কৃত অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে, আলাহ যেন আমাদের সামর্থ্য দান করেন সকল বন্দী মুজাহিদ ভাইয়ের দাবি আদায় করার – এবং সাফল্য শুধুমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই।
আশা করি গ্লোবাল জিহাদের কৌশল ও ধারা অনুযায়ী এ ভূখণ্ডে এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে জামা’আতুল মুজাহিদিনের ভাইরা কাজ চালিয়ে যাবেন। আমরা আল্লাহর সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে দুয়া করি ভারতীয় উপমহাদশের সকল মুজাহিদিনের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদের কাফেলা এগিয়ে নিয়ে যাবার, গাযওয়াতুল হিন্দের বাহিনী প্রস্তুত করার প্রেক্ষাপট যেন তিনি তৈরি করে দেন। ভাইদের প্রতি আন্তরিক নাসীহাহ হবে ভাইরা যেন সার্বিক ভাবে মিডিয়া প্রচারনার দিকটিতে জোর দেন, এবং বিশেষ ভাবে এ বক্তব্যটি প্রচারের দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। ভাইরা ফেসবুকের পাশাপাশি টুইটার ব্যবহার করলে উত্তম হবে ইনশা আল্লাহ এবং বাংলার পাশাপাশি যদি তারা ইংরেজিতেও পরবর্তীতে বক্তব্য প্রকাশ করেন তবে তা প্রচারনার ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি ভাইরা যদি একটি অফিশিয়াল মিডিয়া চ্যানেলের নামে ব্লগ, টুইটার অ্যাকাউন্ট ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন তবে ইনশা আল্লাহ মিডিয়ার কাজটি আরো গোছানো ও আনুষ্ঠানিক রূপ পাবে। শায়খ উসামা, শায়খ আইমান, শায়খ আবু মুস’আব সুরী, শায়খ আবু বাসীর নাসির আল উহায়শী, শায়খ আনওয়ার আল-আওলাকী, শায়খ আবু বাকর নাজী, শায়খ আবু ক্বাতাদা, শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসি সহ গ্লোবাল জিহাদের উলামা ও উমারাহগত বারবার গ্লোবাল জিহাদের ক্ষেত্রে মিডিয়ার গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরেছেন অতএব, সম্মানিত ভাইরা এ দিকটিতে গাফেলতির কোন সু্যোগ নেই।
পরিশেষে অভিনন্দন জানাই জামা’তুল মুজাহিদিনের ভাইদের, এবং তাদের প্রতি এই উক্তিরই পুনরাবৃত্তি করি –
“…আমরা উম্মাহ থকে বিচ্ছিন্ন নই এবং কখনও নিজেদের এরকম ভাবিনি। নিশ্চয় আমরা আপনাদের থেকে, আপনারা আমাদের থেকে। আমাদের ভাল কাজগুলো যেন উম্মাহর ইমারাতের এক একটি ইট হিসেবে কাজ করে সেই কর্মপরিকল্পনা সাধ্যমতো পূর্বেও ছিল এবং এখনো আছে ইনশা-আল্লাহ।“
সকল প্রশংসা জগৎ সমূহের অধিপতি আল্লাহর, সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর ﷺ উপর, তার ﷺ পরিবারের উপর এবং তার ﷺ সাহাবাগণের উপর।
আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহ্ আমাদের উপমহাদেশের মুজাহিদ্বীনদের শক্তি বারিয়ে দিন আমীন।