উস্তাদ আবু আনওয়ার আল হিন্দীতথ্য প্রযুক্তি ও যুদ্ধকৌশলবই ও রিসালাহবাংলাদেশহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

এ দ্বীন তাত্ত্বিকতার না, এ মানহাজ নিস্ক্রিয়তার মানহাজ না

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
ইন্নালহামদালিল্লাহ ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি সাল্লাম তাসলিমান কাসীরা
‘আম্মা বা’আদ

মালিকুল মুলক রাব্বুল ‘আলামীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –

“মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল? তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক। আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” (সূরা সফ, ৬১: ২-৪)

তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [আত তাওবাহ, ১৬]

আপনি কি সেসব লোককে দেখেননি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক? অতঃপর যখন তাদের প্রতি ক্বিতালের নির্দেশ দেয়া হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর ক্বিতাল ফরজ করলে! আমাদেরকে কেন আরও কিছুকাল অবকাশ দান করলে না। ( হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখিরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না। [আন-নিসা, ৭৭]

গত বেশ কয়েক বছরে তাওহীদ ও জিহাদের দাওয়াহ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে বেশ অনেকটুকুই ছড়িয়ে পড়েছে। যে প্রজন্মের আগে সময় কাটতো জাহিলিয়্যাহর বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে, আজ তাদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশের কাছে এসব কিছু ছাপিয়ে জিহাদের ডাক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যারা আগে নিজেদের সালাত নিয়েই চিন্তা করতো না, আজ উম্মাহর রক্তের নদী দেখে তাদের হৃদয় প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।। কুফফার ও তাওয়াগীত যতোই জিহাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যতোই জিহাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে, যতই জিহাদের ডাককে চাপা দিতে চাইছে ততোই এ ডাক আরো ছড়িয়ে পড়ছে। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য তাঁর স্বীয় কাজে প্রবল থাকেন যদিও অধিকাংশ লোকেরাই তা জানেন না।

তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। [আত তাওবাহ, ৩২]

তবে চিরাচরিত সত্য হল একটি কাজ যখন শুরু হয় তখন মান নিয়ন্ত্রন করা যতোটুকু সহজ হয়, কাজের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে তা আর অতোটা সহজ থাকে না। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে এটা সাধারন ভাবে সত্য। এ কথা অনলাইন দাওয়াহ ও দা’ঈদের ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা যদি অনলাইনে জিহাদের দাওয়াহ এবং দা’ঈদের দিকে তাকাই তাহলে এ সত্যের প্রমান পাওয়া যায়। যে মানহাজের দাওয়াহ আমরা করছি, যে মানহাজের অনুসরন আমরা করছি তার শর্ত, বৈশিষ্ট্য এবং দাবিগুলো সম্পর্কে দেখা যায় অনেক ভাই-ই ওয়াকিবহাল নন।

যেমন, আজকাল একটি কথা খুব বেশি শোনা যায় আর তা হল “মানহাজের ভাই” বা “অমুক আমাদের মানহাজের”। এধরনের কথা দ্বারা বোঝানো হয় উদ্দিষ্ট ব্যক্তি জিহাদের মানহাজের অনুসারী। মুসলিম হিসেবে আমাদের মুসলিম পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকাই যথেষ্ট। ‘আমভাবে এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই, এক মুসলিমের সম্পদ, রক্ত, সম্মানকে তার মুসলিম ভাই হেফাযত করবে। পরিচয় হিসেবে এটাই যথেষ্ট হওয়া উচিত। সেখানে আলাদা করে “মানহাজের ভাই” বা এধরনের শব্দাবলীর প্রয়োগ কতোটা যৌক্তিক সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ, তার উপর এ ধরনের শব্দাবলী ব্যবহৃত হয় সম্পূর্ণ বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন ভাবে। খোজ নিলে দেখা যায় যাকে বা যাদেরকে “মানহাজের ভাই” বলা হচ্ছে তিনি না কোন জিহাদী তানযীমের সাথে যুক্ত, আর না সক্রিয়ভাবে কোন ধরনের জিহাদী কর্মকান্ডের সাথে। এবং এই ভাইদের বিশাল একটা অংশকে যখন জিহাদের কাজের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়িয়ে যান। বিশেষ করে যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে সেলিব্রিটি হিসেবে এবং “জিহাদী সেলিব্রিটি, মানহাজের ভাই” হিসেবে পরিচিত তাদের জন্য এটা প্রায় ১০০% ক্ষেত্রে সত্য। তাহলে এ কোন মানহাজের কথা হচ্ছে? যারা এরকম বলে থাকেন তাদের মধ্যে প্রচলিত ধারনাটা হল যে ব্যক্তি জিহাদ সমর্থন করে, কিংবা তানযীম আল-ক্বা’ইদাকে সমর্থন করে। যারা জিহাদ সমর্থন করেন, যারা ৯/১১ সমর্থন করেন, শাতেম মারা সমর্থন করেন, জিহাদ করা উচিত সমর্থন করেন তারা হল “মানহাজের ভাই”, তারা হল আমাদের “মানহাজের”। কিন্তু আসলে কি মানহাজ বলতে এটাকেই বোঝানো হয়, মানহাজ বলতে কি নিছক কোন তাত্ত্বিক ও নিষ্ক্রিয় সমর্থনের মনোভাবকে বোঝানো হয়? আর এটা কি বৈশ্বিক জিহাদ তথা তানযীম আল-ক্বা’ইদার মানহাজ?

মানহাজ বলতে আসলে কি বোঝানো হয়? নাতিদীর্ঘ অ্যাকাডেমিক আলোচনায় না গিয়ে সাধারন ভাবে বলা যায় মানহাজ হল কর্মপদ্ধতি। যদিও মানহাজের সবচেয়ে প্রচলিত সংজ্ঞা হলঃ মানহাজ হল ‘ইলম, গ্রহন, বিশ্লেষন ও বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি, তথাপি একথা সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত মানহাজের পরিধি শুধুমাত্র ‘ইলম অর্জন ও বাস্তবায়নের মধ্যে সীমিত না, বরং তা আরো ব্যাপক। আধুনিক সময়ে মানহাজের সর্বাধিক প্রচলিত অর্থ হল দ্বীন কায়েমের জন্য কর্মপদ্ধতি। যেমন ধরুন, কেউ যদি বলে দ্বীন কায়েমের পন্থা হল দাওয়াত ও তাযকিয়্যাহ এবং এ বিশ্বাসের উপর কাজ করে, তবে তার মানহাজ হল দাওয়াহ ও তাযকিয়্যাহর মানহাজ। যেমন তাবলীগ জামাত। কেউ যদি বলে দ্বীন প্রতিষ্ঠার উপায় হল ইসলামী সমাজ বিনির্মান ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া, এবং সে এই তত্ত্বের উপর আমল করে তবে এটা তার মানহাজ। যেমন – জামায়াতে ইসলামী বা ইখওয়ানুল মুসলিমীন। কেউ যদি মনে করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ হল আথারী আক্বীদার দাওয়াহ দেওয়া, এবং সে এই বিশ্বাসের উপর কাজ করে তবে তার সেটাই তার মানহাজ, যেমন শায়খ আলবানীর সালাফি দাওয়াহ। কেউ যদি মনে করে উম্মাহর উত্তরনের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল তারবিয়্যাহ, তাসফিয়াহ, তা’লীম, দাওয়াহ, এবং সে এই বিশ্বাসের উপর ‘আমল করে তবে সেটাই তার মানহাজ।

এখানে লক্ষনীয় হল মানহাজ সরাসরি আমলের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। মানহাজ বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত। নিছক সমর্থন বা সহমর্মিতার সাথে না। একারনে শুধুমাত্র সমর্থনের সাথে মানহাজের যোগসূত্র খোজা হাস্যকর। নির্দিষ্ট কোন একটি আদর্শ ধারন ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি মানহাজের অনুসরন সম্ভব। তবে জিহাদের ক্ষেত্রে যখন এটা বলা হয় তখন এটা আরো বেশি গুরুতর একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কারন জিহাদ হল একটি ইবাদাত, যা আমাদের সময় একটি ফরয ইবাদাত। ইবাদাতের ক্ষেত্রে সমর্থনের কোন ধারনা সাহাবায়ে কেরামদের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত দ্বীন ইসলামে কখনই ছিল না। কোন সুস্থ মস্তিকের দ্বীনের বুঝ সম্পন্ন ব্যক্তিকে আপনি কখনো বলতে দেখবেন না, “আমি মাগরিবের তিন রাকাত সালাত” সমর্থন করি। নিজে আদায় করি না।“ তার চেয়েও বড় কথা হল এই ব্যাক্তিকে কেউ কখনো আমার “নামাজী ভাই” বলে কিন্তু সম্বোধন করবে না, আর নাই বা সে নামাজী হিসেবে স্বীকৃতি পাবার যোগ্য হবে শার’ঈ দৃষ্টিকন থেকে কিংবা সাধারন মানবিক বিচার-বিবেচনার দৃষ্টিকোণ থেকে, যতোক্ষন না সে ফরয সালাত আদায় না করছে। একইভাবে কেউ কিন্তু কখনো বলে না “আমি রামাদ্বানের সিয়াম সমর্থন করি, ফরয মনে করি, যারা সিয়াম পালন করছে তাদের সমর্থন করি, তারা খুব ভালো কাজ করছে, তবে আমি নিজে সিয়াম পালন করি না।“ সম্ভবত এখানে একটু ভুল করলাম। দুঃখজনক ভাবে আমাদের সময়ে কিছু যিন্দিক এবং নামধারী “সেক্যুলার” মুসলিম বাংলাদেশে আছে যারা এমন কথা বলে। তবে শার’ঈ ভাবে এ ধরনের কথার কোন ভিত্তি নেই, এবং ফারয আমল থেকে বিনা ওজরে বিরত থাকার কারনে এই ব্যক্তি ফাসিক্ব বলে গন্য হবে। এই দ্বীন তাত্ত্বিকতার দ্বীন না, দ্বীনের আবশ্যক বিষয়ে সমর্থনের জায়গা আল্লাহ আমাদেরকে দেননি। ইবাদাতের বিষয়গুলো আমাদের সমর্থন সাপেক্ষ নয়, বরং এগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক হল শোনার ও মানার। আপনি জেনেছেন ফযরের দুই রাকাত সালাত ফরয এখন আপনি বাধ্য এই দুই রাকাত সালাত আদায় করতে। আপনি যদি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর অবাধ্যতা করলেন এবং আপনার এ অবস্থানের কোন শার’ঈ যৌক্তিকতা বা জাস্টিফিকেশান নেই। এখানে আপনি সমর্থনের কথা বলে পার পাবেন না।

এখন চিন্তা করুন জিহাদের কথা। সালাফদের, সকল মাযহাবের ইমামদের অবস্থান অনুযায়ী বর্তমানের জিহাদ ফারযুল আইন। অর্থাৎ বর্তমানে জিহাদ প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয যেভাবে ব্যক্তির উপর ফযরের দুই রাকাত সালাত ফরয। [বিস্তারিত জানতে দেখুন, “মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা” শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম]। একই সাথে শাহ আব্দুল আযীযের বিখ্যাত ফাতাওয়া, যা এখনো রদ করা কিংবা অপবনোদন করা এখনো সম্ভব হয়নি অনুযায়ী হিন্দুস্তান দারুল হারব, যেখানে জিহাদ ফরয। এবং যেসব “জিহাদ সমর্থক মানহাজের ভাই” আছেন তারাও জিহাদ যে ফারযুল আইন তা স্বীকার করেন। তাহলে প্রশ্ন হল কেউ যদি এটা স্বীকার করে তবে তার করণীয় কি? অবশ্যই তার জন্য আবশ্যক এই ফরয কাজে শামিল হওয়া। এখানে মাঝামাঝি কোন কিছু নেই। দ্বীনের যেকোন ফরয বিধান সম্পর্কে ব্যক্তি অবগত হওয়া মাত্র তার উপর ওই বিধান ফরয। অর্থাৎ সে বাধ্য তখন তা পালন করতে। এখানে নিছক সমর্থনের কোন সু্যোগ নেই। আর মুসলিম মাত্রই জিহাদ সমর্থন করে, শাহবাগী ফরিদউদ্দীন মাসউদও জিহাদ সমর্থন করে, কারন জিহাদ অস্বীকার করা কুফর। সমস্যাটা জিহাদ সমর্থন নিয়ে কখনোই ছিল না, যে ‘আলিমরা সালাহ আদ-দ্বীনকে বলেছিল ক্রুসেডারদের সাথে মিত্রতা করতে তারাও কিন্তু জিহাদ সমর্থন করতেন।

কিন্তু তারা কি সমর্থন করতে না? তারা কিসের বিপক্ষে ছিলেন? তাদের সমস্যাটা কি নিয়ে ছিল? তাদের সমস্যা ওই মূহুর্তে জিহাদ করা নিয়ে। তাদের সমস্যা ছিল তাত্ত্বিকভাবে যা দ্বীনের ফরয বিধান হিসেবে স্বীকার তারা করছেন তার উপর সঠিক ভাবে আমল করা নিয়ে। নিজে জিহাদ করা নিয়ে। যতোক্ষন জিহাদ একটি দূরবর্তী, তাত্ত্বিক বিষয় থাকে ততোক্ষন সবাই এর পক্ষেই কথা বলে। কিন্তু যখনই তাগুতের সামনে আজ, এখন, এখানে জিহাদ করার কথা আসে, তখন সমস্যাটা ব্যাপক ভাবে দেখা দেয়। দুঃখজনক ভাবে এই হাজার বছর পুরনো ব্যাধি এখনো প্রবল বিক্রমে বিদ্যমান, এবং আজ শুধুমাত্র উলামায়ে সু’রাই এ ব্যাধিতে আক্রান্ত না।

এতো গেল ফরয জিহাদের কথা, আর জিহাদের মানহাজ অর্থাৎ দ্বীন কায়েমের পদ্ধতি হিসেবে জিহাদকে বেছে নেওয়া এবং তার অনুসরন করার অর্থ কি? এ ব্যাপারে আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন-

“সুতরাং, এই মানহাজ, যা আমাদের সামনে সুবাহের ন্যায় স্বচ্ছ, তা কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শারী‘আহ্-এর দালীলে পাওয়া যায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে, তবে আল্লাহ্ অপর এক ক্বওম নিয়ে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফফারদের প্রতি অতি কঠোর, তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, আর আল্লাহ্ প্রাচুর্যদানকারী, সর্বজ্ঞ।‘[আল-মাইদাহঃ৫৪]

সুতরাং, এই আয়াতটি আমরা যে অবস্থার মধ্যে আছি সেই সম্পর্কে বলছেঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে,…”
যখন রিদ্দাহ্/দ্বীন-ত্যাগ সংঘটিত হয়, তখন মানুষকে দ্বীন ইসলামে ফিরিয়ে আনার জন্য কি কি গুণাবলীর প্রয়োজন? তো এখানে ৬টি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার কথা থেকে শুরু করেঃ

“…যাদেরকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফফারদের প্রতি অতি কঠোর,…”। সুতরাং, এই গুণাবলী অর্জন করা আমাদের জন্য খুবই জরুরীঃ

[১] আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি একান্ত ভালোবাসা
[২] ঈমানদারদের প্রতি বিনয় ও সহানুভূতি
[৩] কল্যাণের সাথে সাহায্য করা এবং তা করা সর্বোত্তম পদ্ধতিতে
[৪] কুফফারদের প্রতি কঠোরতা, আর এটা ইসলামের সবচাইতে শক্তিশালী বন্ধনঃ আল-ওয়ালা’ ওয়াল-বারা’ (আনুগত্য এবং সম্পর্কচ্ছেদ)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আমরা ঈমানদারদের সাথে আনুগত্য ও কর্তব্যপরায়ণতার সম্পর্ক স্থাপন করি, এবং আমরা কুফফারদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি, আর তাদের সাথে খুব কঠোর আচরণ করি ।
[৫,৬] এরপর ৫ম এবং ৬ষ্ঠ গুণাবলী হলঃ “…তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না…”।

আর, মানুষদেরকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনার জন্য, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করা – এ বৈশিষ্ট্য দু’টির গুরুত্ব অত্যাধিক।
সুতরাং, যারা এমন মনে করে যে, মানুষকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব (এই গুণাবলী অর্জন ব্যতীত) এবং একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যখন কিনা ইসলামের ছায়া পৃথিবীর বুক থেকে অপসারিত হয়েছে, তবে এমন মানুষেরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেন নি । কারণ এই আয়াতটি সম্পূর্নরূপে স্বচ্ছ এবং স্পষ্টত প্রতীয়মান একটি আয়াত ।

[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া ]

অতঃপর শায়খ উসামা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিমোক্ত হাদীসটি উল্লেখ ও প্রাসঙ্গিক আলোচনার পর বলেন –

“আর আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করছি, যা আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন, আর তা হলঃ শ্রবন, আনুগত্য, জিহাদ, হিজরাহ এবং জামা‘আহ।”
[ইমাম আহমাদ ও ইমাম আত-তিরমিযির দ্বারা বর্ণিত]

এখানে বিষয়টি হল, প্রথম পাঁচটি বিষয় যা হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ, এগুলোকে অপর পাঁচটি বিষয় ব্যতীত মানবজাতির জন্য একটি শাসনব্যবস্থা বা কর্মপদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় । একইভাবে একজন ব্যক্তির পক্ষে কমপক্ষে এবং অন্তরের দিক দিয়ে মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়, যখন সে মানবরচিত বিধানের দ্বারা শাসন করে এবং পৃথিবীতে ইসলামের কর্তৃত্ব থাকে না। আর আমরা যদি এই পাঁচটি বিষয়কে মনযোগ দিয়ে দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন গোত্রের প্রতি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দা’ওয়াহ্*-এর বাস্তবতার সাথে এই পাঁচটি বিষয় সম্পূর্নরূপে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দৃঢ়সমর্থকঃ

আর আমরা যখন আল্লাহর কিতাব এবং আল্লাহর রসূলের ﷺ সুন্নাহর অনুসরণের চেষ্টা করি, তখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, ইসলামিক স্টেইটের প্রতিষ্ঠা এবং দ্বীনের সম্প্রসারণের পদ্ধতি হিসেবে এগুলোর কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছেঃ

[১] একটি জামা‘আহ্
[২] আদেশ শোনা
[৩] আনুগত্য করা
[৪] হিজরাহ করা
[৫] জিহাদ করা

সুতরাং, যারা হিজরাহ করার এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ত্যাগ স্বীকার ব্যতীত ইসলামের জন্য কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে এরূপ মানুষেরা মুহাম্মাদের ﷺ মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর যদি তারা বুঝে থাকে, তবে তারা এর উপর ‘আমল করেনি, বরং তারা অন্যান্য ধরনের আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের দ্বারা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখছে। সুতরাং, এরূপ মানুষেরা এ সকল বড় ‘ইবাদাতসমূহের ভারী ফলাফল থেকে পলায়ন করছে, কারণ নিশ্চয়ই জিহাদ একটি কষ্টকর ‘আমল, যা আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, এখন পর্যন্ত যা বলা হয়েছে, তা থেকে এটা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, জামা‘আহ্ ও জিহাদের গুরুত্ব অত্যাধিক।“
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]

সুতরাং, কিছু সুনির্দিষ্ট গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্য এ মানহাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। শায়খ উসামা বিন লাদিনের ভাষায় একজন ব্যক্তি তখন এ মানহাজের অনুসরনকারী হবে যখন সে মানহাজের আবশ্যক শর্তাবলীর উপর আমল করবে। অর্থাৎ সে জামা’আবদ্ধ হবে, শুনবে ও মানবে, হিজরাহ ও জিহাদ করবে। অর্থাৎ মানহাজের বিষয়টি আমলের সাথে সম্পর্কিত কোন একটি মনোভাব ধারন করার সাথে না, এবং এটাই স্বাভাবিক। এবং শায়খ উসামা বিল লাদিনের রাহিমাহুল্লাহর কথা থেকে স্পষ্ট যে এ মানহাজ সমর্থনের মানহাজ না, বরং এ মানহাজ হল জামা’আবদ্ধ হওয়া, শোনা ও মানা, হিজরাহ ও জিহাদের মানহাজ। এবং এখানে জামা’আবদ্ধ হবার উল্লেখ দেখে অস্বস্তি বোধ করার কিছু নেই, কারন জিহাদ মূলত একটি জামা’আবদ্ধ ইবাদাত। [আমরা এক্ষেত্রে জামা’আবদ্ধ হওয়া বলতে একটি খাস মুক্বাতীল জামা’আকে বোঝাচ্ছি, এবং নিজেদের জামা’আর ব্যাপারে ‘আম অর্থ প্রয়োগ করে নিজেদের জামা’আহকেই খাওয়ারিজদের মতো মুসলিমদের একমাত্র বৈধ জামা’আ মনে করি না]

তাহলে কিভাবে একজন ব্যক্তি যে এ কাজগুলো উপযুক্ত ওজর ছাড়া ছেড়ে দেয়, কিন্তু বলে সে এ মানহাজের সমর্থন করে তাকে “মানহাজের ভাই” বলা যেতে পারে? শার’ঈ বিচারে, মানহাজের অর্থগত বিচারের এবং বর্তমান সময়ে যারা জিহাদের মানহাজকে আল্লাহর ইচ্ছায় পুনরুজ্জীবিত করেছেন তাদের বিবৃত মাপকাঠির আলোকে, কোন বিবেচনাতেই তো এরকম একজন ব্যক্তিকে – সে যতোই অন্তরঙ্গ বন্ধু বা শ্রদ্ধাভাজন দ্বীনি ভাই হোন না কেন – এই মানহাজের অনুসারী বলা যায় না। সমর্থনের কোন মানহাজ এ দ্বীনের মধ্যে নেই। এ দ্বীন তো মাদ্রিদ-বার্সেলোনার এল ক্লাসিকো না, বা ভারত-পাকিস্তান খেলা না, যে জার্সি পরে সমর্থন করলেই হয়ে গেল। এটাতো এমন হয়ে গেল যেন কেউ বলছে “আমি প্রাউড নন-প্র্যাক্টিসিং মুসলিম” আর তারপর আরেকজন এসে বললো “হ্যা উনি সাচ্চা মুসলিম”! দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এরকম কথার, এরকম অবস্থানের কোন ভিত্তি কি আদৌ আছে?

বরং শায়খ উসামা তো যথার্থই বলেছেন এ মানহাজ কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেমনি ভাবে প্রতিটি মানহাজের কিছু সুনিদিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা গুনাবলী যার। যার আদর্শ ও আমলে যে মানহাজের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে তিনি সে মানহাজের। এতো নিছক মৌখিক দাবির বিষয় নয়। যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশে ইসলামের জন্য, দ্বীনের সুরক্ষার জন্য, খেদমতের জন্য, প্রতিষ্ঠার জন্য উম্মাহর জন্য, হাক্বুল্লাহ ও হাক্বুল ইবাদের দিকে তাকিয়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজটি করা উচিত, আপনি কোন কাজটি করবেন? জবাবে কেউ যদি বলেন বাংলাদেশে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইমান ও আমলের মেহনত তাহলে সেটা তার মানহাজ – যদি কেউ বলেন বাংলাদেশে কাজ আক্বিদা সাহীহ করা, শিরক-বিদ’আ দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে দূর করা তবে সেটা তার মানহাজ – যদি কেউ বলেন ক্রিটিকাল থিংকিং করা, শারীয়াহ নিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করা, ইসলামের সংস্কার করা, তবে সেটাই তার মানহাজ – যদি কেউ বলে বাংলাদেশে কাজ ইসলামী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, সমাজ সেবা করা, তবে সেটাই তার মানহাজ – কারো উত্তর যদি হয় বাংলাদেশে কাজ হল ‘ইলম চর্চা, তাজউয়ীদ শেখা, আরবী শেখা ও শেখানো তবে সেটাই তার মানহাজ – যদি কেউ বলে বাংলাদেশে কাজ হল মিডিয়া সেল তৈরি করে মিডিয়া দাওয়াহ করা তবে সেটাই তার মানহাজ। কিন্তু এর কোনটি তাওহীদ ওয়াল হাদীদের, দাওয়াহ ওয়াল জিহাদের মানহাজ না। কারন উপরোক্ত মানহাজের উপর আমলকারীরা এ কাজগুলো করেন কিন্তু তারা জিহাদ করেন না। শুধুমাত্র মুক্বাতীল জামা’আর সদস্যদের মধ্যেই ক্বিতালের এ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, একারনে ক্বিতালের এ ফারযিয়্যাত একমাত্র মুক্বাতীল জামা’আর সদস্যরাই পালন করছেন অন্যান্য কাজগুলো করার পাশাপাশি। এবং এজন্য জরুরী নয় যে জামা’আর সকল সদস্যই ক্বিতাল করুক, বরং মুক্বাতীল জামা’আর সদস্য হিসেবে যে ভাই মিডিয়ার কাজ করছেন তিনি ক্বিতালের সহায়ক ও সম্পূরক হিসেবেই তাই করছেন। তিনি ক্বিতাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মিডিয়ার কাজ করছেন না। একই কথা সে দা’ঈ ভাইয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যিনি আল্লাহর ইবাদাত ও তাগুত বর্জনের প্রতি দাওয়াহ দিচ্ছেন, এবং ব্যাক্তি যাতে এ নীতির উপর আমল করতে পারে, যাতে করে ব্যাক্তি মিল্লাতু ইব্রাহীমের উপর চলতে পারে সে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন, এ নীতির উপর ভিত্তি করে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করছে এমন জামা’আর সাথে তিনি নিজে আবদ্ধ হয়েছেন এবং অন্যকে আহবান করছেন। অন্যদিকে উপরোক্ত মানহাজ সমূহের উপর আমলকারীর নিজেরা জিহাদের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় থাকেন, এবং অন্যদেরকেও নিষ্ক্রিয় হবার শিক্ষা দেন, আর তাদের সক্রিয়তা থাকে শুধু নিষ্ক্রিয় সমর্থনের ক্ষেত্রে। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বুআতা ইল্লাহ বিল্লাহ।

উহুদের দিন যারা যুদ্ধে যায় নি তারা জিহাদ সমর্থন করতো কি করতো না, তা নিয়ে কিন্তু সৃষ্টি জগতের কারো আগ্রহ নেই। খন্দকের দিনগুলোতে কে জিহাদ সমর্থন করে আর কে করে না এ হিসাব কিন্তু করা হয় নি। তাবুকের সময় যারা পেছনে বসে ছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ কি জিহাদ সমর্থন করতো কি না – সে বিষয় ক্বুর’আনের কোন আয়াতই নাযিল হয় নি। পরিমাপ করা হয়েছে আমল। যারা মু’মিন তাদের বিশ্বাসের প্রমান তারা কাজের মাধ্যমেই দিয়েছে। আর যারা ওজরবিহীন ভাবে হাত গুটিয়ে বসে থেকেছে তাদের সমর্থন থাকা বা না থাকা গুরুত্ব পায় নি। গুরুত্ব পেয়েছে ফরয ইবাদাতের ব্যাপারে তাদের নিস্ক্রিয়তা, যার ভিত্তিতে তাদের মুনাফিক বল আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং ক্বুর’আনে বিভিন্ন জায়গায় কড়া ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে। এ দ্বীন নিষ্ক্রিয়তার দ্বীন না। ইমান থেকে শুরু করে জিহাদ, এ দ্বীনের কোন কিছুই মুখে বুলি আউড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না বরং প্রতিটি বিষয়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে দিতে আমরা বাধ্য। অর্থাৎ আমল করতে আমরা আদিষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –

তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [আত তাওবাহ, ১৬]

আমরা কি মনে করছি আল্লাহর দ্বীনের বিধিবিধানগুলো ঠুনকো কিছু যখন চাইলাম মানলাম যখন চাইলাম সমর্থনসাপেক্ষে ছেড়ে দিলাম? এমন বিভ্রান্তি থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। প্রকৃতপক্ষে এধরনের ব্যক্তির অবস্থান তাই, যে অবস্থা ফরয ত্যাগ কারীর হয়, আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দি শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন-

“…অন্তরগুলো আজ কেবলই দোদুল্যমান এবং যাদের উপর আল্লাহ দয়া করেছেন তারা ব্যতীত সকলেই আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করার বদলে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুবকদের বুঝতে হবে যে, জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন নেতৃত্বে বড় আকারের ঘাটতি রয়েছে, আর আমাদের এরূপ মানুষদের কথাকে সেভাবেই উল্লেখ করতে হবে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ব্যতীত জিহাদ না করে বসে রয়েছে, তবে তার অবস্থার বর্ণনা কুরআনে খুবই পরিষ্কার এবং অবশ্যম্ভাবীঃ আর তা হল “ফিসক্ব”। “আর যদি তারা বের হবার ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো, কিন্তু আল্লাহ তাদের বের হওয়াকে অপছন্দ করলেন, আর তাই তাদেরকে বলা হলঃ ‘বসে থাকো তোমরা, যারা বসে থাকে তদের সাথে।’”[সূরা আত-তাওবাহঃ৪৬] [মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]

কোন মুসলিম ভাইয়ের মন কষ্ট দেওয়া, কাউকে ছোট করা আমাদের উদ্দেশ্য না। মুসলিম ভাই হিসেবে প্রতিটি ভাই আমাদের কাছে প্রিয়, আল্লাহ হেদায়েত করুন তাদেরকে এবং আমাদেরকে, আল্লাহ আর রাহমানুর রাহীম একত্রিত করে দিন আমাদের জান্নাতে। মুসলিম ভাই পরিচয়টাই যথেষ্ট, এর বেশি আর কোন পরিচয় নিস্প্রয়োজন। কিন্তু যদি মানহাজের ভাই বলতেই হয় তবে হেলাফেলার সাথে কাউকে বলা সম্ভব না। রক্ত, রিমান্ড,জেল, যুলুমের, বুলেট, ফাসির পথ, আর নিস্তরঙ্গ নিষ্ক্রিয় সমর্থনের পথ এক না। আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের কারনে ঘর ছাড়া আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না আল্লাহর দ্বীনের জন্য দুনিয়াকে তালাক দিয়ে দেওয়া আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না দিনের পর দিন রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে সুযোগের অপেক্ষায় আল্লাহর শত্রু ও আমাদের শত্রুদের শিকারী বাঘের মতো অনুসরন করতে থাকা মুজাহিদিনের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের কারাগারে বন্ধী আমাদের ভাইদের কথা, আমরা ভুলে যেতে পারি না ঠিক এ কথাগুলো লেখার সময় মুরতাদীনের হাতে রিমান্ডে বন্দী আমাদের ভাইদের কথা; ইয়া আল্লাহ আপনি আপনার এ বান্দাদের হেফাযতকারী হয়ে যান, আপনি তাদের কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন, আমরা ভুলে যেতে পারি না তাগুতের হাতে নিহত আমাদের ভাইয়ের কথা যার রক্তের বদলা নেওয়া আমাদের উপর আজ ওয়াজিব, রাহিমাহুল্লাহু ওয়া তা’আলা। এ ভাইরা কোন নির্দিষ্ট ক, খ, গ, তানযীমের হওয়া আবশ্যক না, বরং আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করতে গিয়ে আহলুস সুন্নাহর অন্তভুক্ত এরকম যতো ভাই আছে, পৃথিবীর যেকোন কোণাতে, তারা সকলেই আমাদের মানহাজের ভাই, এরাই আমাদের রক্তের ভাই। এদের রক্তই আমাদের রক্ত, এদের কষ্টই আমাদের কষ্ট, এদের অশ্রুই আমাদের অশ্রু – হে আল্লাহ আপনি আপনার দুর্বল বান্দাদের প্রচেষ্টা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি ছাড়া আমাদের আর কোন সহায় নেই। এসব কিছু ভুলে গিয়ে এসব ত্যাগ তিতিক্ষাকে ভুলে গিয়ে লাইক-কমেন্ট দিয়ে অ্যাক্টিভ থাকা, সাপ্তাহিক হালাকা আর নিষ্ক্রিয় সমর্থনকে আমরা এক করে ফেলতে পারি না। নিশ্চয় প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলটির মত নয়। নিশ্চয় যে সমুদ্রে ঝড় নেই সে সমুদ্র আমাদের নয়।

আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই হিযবিয়্যাহ থেকে, স্বীয় স্বার্থের কারনে মুসলিমের অন্তরে আঘাত করা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার হাক্বের উপরে তাঁর সৃষ্টির হাক্বকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই “পাছে লোকে কি বলে” এ চিন্তায় হাক্ব প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, মুজাহিদিনের হাক্বের উপরে মুজাহিদিনের সাথে ওয়ালার উপরে, মুজাহিদিনের বক্তব্যকে তুলে ধরার উপরে, বসে থাকা ব্যক্তিত্বদের স্থান দিতে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, মুহাজির ওয়াল আনসারদের অধিকার বিস্মৃত হওয়া থেকে, আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই তাগুতের কারাগারী বন্দী আমাদের শুয়ুখ ও ভাইদের কথা ভুলে যাওয়া থেকে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই তাঁর দ্বীনের ফারযিয়্যাতের কথা নিছক কসমেটিক ঐক্যের অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়া থেকে। আর অতিকঠোরতার অভিযোগ উত্থাপনকারীদের প্রতি জবাব হিসেবে আল ইমাম আল মুজাদ্দি শায়খ উসামা বিন লাদিনের রাহিমাহুল্লাহ এ উক্তিটিই যথেষ্ট–

“যদি একজন ব্যক্তি জিহাদ না করে বসে থাকে এবং রাস্তা থেকে কাঁটা বা তার সদৃশ কোন বাঁধা সড়ানোর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে, যেটি কিনা ঈমানেরই একটি প্রশাখা, যখন কিনা অপরদিকে জিহাদ ব্যক্তিগতভাবে ফারদ কর্তব্যে পরিণত হয়েছে, তখন তার সেই কর্মের ব্যাপারে এরূপ বলা হবে না যেঃ “আল্লাহ যেন তাকে উত্তম পুরস্কার দান করেন,” বরং, আমাদের দ্বীনের মাঝে সে একটি ফাসিক্ব ব্যক্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্*”-কে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দ্বীনকে সাহায্য করার ফারদ/ (বাধ্যতামূলক) কর্তব্য থেকে পলায়ন করেছে।

সুতরাং, এই প্রধান বিষয়টির ব্যাপারে সচেতন থাকা অতি জরুরী বিষয় যেটির কিছু ব্যতিক্রম স্থান ব্যতীত প্রায় সমগ্র মুসলিম ভূখন্ডেই অনুপস্থিতি আজ সকলের চোখের সামনে সম্পূর্ন স্বচ্ছ।”
[মানহাজের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা, আস সাহাব মিডিয়া]

———————–
ইনশা আল্লাহ চলবে

 

সংশয়ের জবাবঃ

এ পর্যায়ে কেউ বলতে করতে পারেন, যেসব “জিহাদ সমর্থক মানহাজের ভাই”-রা বাংলাদেশে জিহাদের কাজে শরীক হচ্ছেন না তারা হয়তো গ্রহনযোগ্য ওজরের কারনে এ কাজে আসতে পারছেন। কিংবা তাদের হয়তো কোন সংশয় আছে, কিংবা ইজতিহাদী কোন বিষয় আছে, যে কারনে তারা কাজ থেকে বিরত আছেন।

অবশ্যই শারীয়াহসম্মত ওজর যদি কোন ভাইয়ের থাকে তবে সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু আসলে কি এটাই কারন? বাস্তবতা কি বলে? বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় যেসব ভাই জিহাদ ফারযুল আইন এসত্য স্বীকার করার দাবি করেন, বৈশ্বিক জিহাদকে সমর্থনের দাবি করেন, এবং জিহাদ মানহাজের অনুসরনের দাবি করেন তাদের পক্ষ থেকে নিমোক্ত ওজর/”ইজতিহাদ” সমূহ পেশ করা হয়ঃ

১) কোন জামা’আর সাথে জিহাদ করবো? বাংলাদেশে কি উপযুক্ত জামা’আ আছে যারা সঠিক ভাবে জিহাদ করছে?
২) কোন আক্বীদার ভিত্তিতে জিহাদ হবে? আক্বীদার মতো মৌলিক বিষয় ঠিক না করে কিভাবে জিহাদ হতে পারে?
৩) জিহাদ করবো তবে বাংলাদেশে না, হিজরত করে। হিজরত করার আগ পর্যন্ত অন্যান্য ভাবে দ্বীনের খেদমত করতে চাই
৪) জিহাদ ফারযুল আইন, তবে ভৌগলিক, সামাজিক, জনগণের মানসিকতা ইত্যাদির বিচারে বাংলাদেশে জিহাদ হবে না, বাংলাদেশে বড়জোর স্মল সেল টেরোরিযম বা মিডিয়ার কাজ চলতে পারে
৫) জিহাদ ফারযুল আইন কিন্তু বাংলাদেশের জিহাদ ফরয না। বাংলাদেশে জিহাদ করবো না আগে প্রয়োজন আরো ‘ইলম চর্চা, আরো তারবীয়াহ, মানুষের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি আগে এগুলো ঠিক করতে হবে।
৬) জিহাদ ফারযুল আইন, কিন্তু লেখালেখি (বা অন্য কোন অজুহাত) করার সুবাদের আমার একটা পরিচিতি আছে। অনেক মানুষ আমাকে চেনে, এ অবস্থায় আমি কিভাবে জিহাদের কাজে শামিল হতে পারবো? এ কাজ তো গোপনে করতে হবে
৭) জিহাদ করবো কিন্তু যথেষ্ট জানি না আরো একটু ‘ইলম অর্জনের পর জিহাদে শামিল হবো/আমার ইমান দুর্বল, দুর্বল ইমান নিয়ে কিভাবে জিহাদে শামিল হব?

আমরা চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ একে একে এসব ওজর/”ইজতিহাদের”মৌলিক কাঠামোগত দুর্বলতা তুলে ধরতে।

১) কোন জামা’আর সাথে জিহাদ করবো? বাংলাদেশে কি উপযুক্ত জামা’আ আছে যারা সঠিক ভাবে জিহাদ করছে?

এ প্রশ্নটি বহুল উচ্চারিত এবং একই সাথে যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ। জিহাদের মতো একটি ইবাদাত কোন জামা’আর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে করা হবে তা অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত যা নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের আন্তরিকতার সাথে গভীর ভাবে চিন্তা করা উচিত। তবে একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে জিহাদের ফরয হবার হুকুমটি এ প্রশ্নটির উত্তরের উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ কোন দেশে যদি জিহাফ ফরয হয় এবং এমন একটিমাত্র মুসলিম জামা’আ থাকে যারা জিহাদ করছে তবে সে জামা’আর মধ্যে ভুল-ত্রুটি থাকলেও তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েই জিহাদ করতে হবে। জামা’আর মধ্যে থাকা ভুলত্রুটির জন্য জিহাদ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যেমন ধরুন একজন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহনের পর জানতে পারলো জুমু’আর সালাত ফরয। এখন দেখা গেল সে যেখানে থাকে সেটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হবার কারনে সেখানে কোন মাসজিদ নেই। সবচেয়ে কাছাকাছি মাসজিদ হল দুই গ্রাম পরে। আবার সে মাসজিদের ইমামের তাজউয়ীদ পুরোপুরি সঠিক না, ক্বুর’আনের খুব বেশি অংশ তার হিফয করা নেই, মুসল্লীদেরও ‘ইলম-আমলের অবস্থা ভালো না। কিন্তু সেখানে জুমু’আর সালাত আদাইয়ের ফরয হুকুমটা আদায় হচ্ছে। এখন এ কমতি গুলোর জন্য এ নওমুসলিম ব্যক্তি এ জামাতের সাথে ফরয দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে পারে? অবশ্যই না, বরং এই নওমুসলিমের জন্য ফরয হল এই জামাতের সাথেই জুমু’আর সালাত আদায় করা, এবং পাশপাশি সাধ্যমত জামাতের ‘ইলম-আমলের অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করা। আর যদি এ জামাতের অবস্থা এতোই খারাপ হয়, তারা যদি দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে এমনভাবে গোমরাহ হয় যে এদের সাথে ইবাদাত করা যাচ্ছেই না, তাহলে ওই ব্যক্তিকে নিজের একটি জামাত বানাতে হবে। কিন্তু ফরয ইবাদাত ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

বরং সালাফদের মধ্যে, তাবেয়ী ও তাবে-তাব’ঈনদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন যারা খারেজি নেতার অধীনে রাওয়াফিদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। যখন তাদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “কেন আপনারা জাহান্নামের কুকুরদের অধীনে জিহাদ করছেন?”, তখন তাদের জবাব ছিল, “আমরা ইসলামের শত্রুদের অধীনের আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছি।“ [বিস্তারিত জানতে দেখুন, “খাওয়ারিজ ও জিহাদঃ, শায়খ আবু হামযা আল-মাসরি ফাকাল্লাহু আসরাহ]। খাওয়ারিজরা আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত না, তথাপি সালাফদের অবস্থান ছিল ফরয জিহাদ আদায় করতে হবে, দরকার হলে খাওয়ারিজের অধীনে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদের সময় ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগের যে ফাতাওয়াতে আফগানিস্তানের জিহাদে অংশগ্রহন প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্র ও ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়, যে ফাতাওয়াতে সাক্ষর করেছিলেন শায়খ বিন বায, আল-ফাওযান সহ আরো অনেক আলেম, সেখানেও কোন নির্দিষ্ট জামা’আর কথা বলা হয় নি, জিহাদে যোগদান আবশ্যক এ হুকুম তুলে ধরা হয়েছিল। যদিও এ সময় আফগানিস্তানে জিহাদরত জামা’আগুলোর মধ্যে এমন জামা’আ ছিল যারা কট্টর বেরলভী আক্বিদা পোষণ করতো, ছিল শি’আ আহমাদ শাহ মাসুদের দল, ছিল ইউরোপ, অ্যামেরিকা দ্বারা সরাসরি সমর্থিত ও অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত দল। কিন্তু এগুলোর কিছু জিহাদ ফরয হওয়া এবং জিহাদে যোগদান করার (কোন একটি জামা’আতের সাথে সম্পৃক্ত হবার মাধ্যমে, যদি সে জামা’আর ভুলও থাকে) ফাতাওয়ার উপর প্রভাব ফেলেনি। [বিস্তারিত দেখুন, রাবেতা আল আলাম আল ইসলামীর ১৪০৮ হিজরির ফাতাওয়া। পিডিএফের ৩৭ নম্বর পৃষ্ঠা http://bit.ly/28Ih3AS ]

বর্তমানে সময়েও শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি হাফিযাহুল্লাহ, শায়খ আবু ক্বাতাদা হাফিযাহুল্লাহসহ অনেক মুজাহিদ ‘আলিম, জামাতুল বাগদাদীকে খাওয়ারিজ কিংবা খাওয়ারিজের চাইত নিকৃষ্ট বললেও, ইরাকে রাওয়াফিদের বিরুদ্ধে তারা জামাতুল বাগদাদীকে সাহায্য করতে বলেছেন, প্রয়োজনে ইরাকে রাওয়াফিদের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য তাদের সাথে যোগ দিতেও বলেছেন (যদি কোন সুন্নী মুজাহিদ দল বা ত্বইফা খুজে না পাওয়া যায়]। একইভাবে হাকীম আল-উম্মাহ শায়খ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ স্পষ্ট ভাবে বলেছেন জামাতুল বাগদাদীর পাহাড়সম ভুল থাকা সত্ত্বেও ক্রুসেডার-যায়নিস্ট, নুসাইরী, রাওয়াফিদের বিরুদ্ধে তিনি তাদের সমর্থন করেন, এবং সহযোগিতা করতে প্রস্তুত কারন এ বিষয়টি (এ কুফফারদের বিরুদ্ধে জিহাদ) অনেক বেশি ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় [“ইসলামী বসন্ত”, আস সাহাব]।

এ ব্যাপারে শায়খ আল-‘আল্লামা সুলাইমান বিন নাসিল আল-‘উলওয়ানের একটি ক্বওল বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করবে ইন শা আল্লাহ। শায়খ সুলাইমান আল ‘উলওয়ান বলেন – যদি কোন কাফির রামাদ্বানের কোন এক দিনে ইসলাম গ্রহন করে, তবে ঐ মূহুর্ত থেকে তাকে সিয়াম পালন করতে হবে, তবে (ঐ) রামাদ্বানের পূর্ববর্তী রোযাগুলো তাকে পালন করতে হবে না, কারন এর আগে তার উপর রোযা বাধ্যতামূলক ছিল না।

অর্থাৎ যদি আজ যুহরের সময় একজন মুশরিক ইসলাম গ্রহন করে, তবে ঐ মূহুর্ত থেকে তার উপর ইসলামের সকল ফরয বিধান আবশ্যক হয়ে যাবে। সুতরাং শাহাদাহ উচ্চারনের পর থেকেই তাকে রোযা পালন করতে হবে এবং মাগরিব আগ পর্যন্ত পানাহার তার জন্য হারাম হবে। আর সে যদি আজ ইসলাম গ্রহনের পর রোযা না রাখে, এবং আজ মারা যায় তবে সে এ ফরয ইবাদাত ছেড়ে দেবার জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। সুতরাং ফরয ইবাদাতের সম্পর্কে অবহিত হওয়া মাত্র সে ইবাদাত ব্যক্তির উপর আবশ্যক হবে (যদি না গ্রহনযোগ্য ওজর থাকে)। একই কথা ফরয জিহাদ, ফরয সালাত, ফরয যাকাত, ফরয হাজ্জ্বের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এবার আসা যাক বাংলাদেশে এ মূহুর্তে যোগ দেবার জন্য কোন কোন জামা’আ আছে, সে প্রশ্নে। এ মূহুর্তে বাংলাদেশের অপারেশানাল আছে এমন তিনটি জামা’আ হল আনসার আল ইসলাম [AQIS], জামাতুল বাগদাদী বা “আইএস” [জেএমবির একটি অংশ তাদের বা’ইয়াহ দিয়েছে], এবং জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি [সালাউদ্দীন গ্রুপ বা মূল জেএমবি]। এর মধ্যে প্রথম দুটি হল বৈশ্বিক জিহাদের সাথে যুক্ত থাকা দুটি প্রধান জামা’আর সাথে সরাসরি সংযুক্ত শাখা। বর্তমান বিশ্বে যত জিহাদী তানযীম আছে তার ৯০% এর বেশি এ দুটি জামা’আর যেকোন একটির সাথে বাইয়াহবদ্ধ বা সংযুক্ত। যারা বৈশ্বিক জিহাদকে সমর্থন দেন তারা সকলেই এ দুটি জামা’আর যেকোন একটিকে হাক্ব মনে করেন, অনেকে দুটি জামা’আকেই হাক্ব মনে করেন। মোট কথা এ দুটি জামা’আর [আল-ক্বা’ইদা ও জামাতুল বাগদাদী/”আইএস”] কমপক্ষে একটি জামা’আ যে বিশ্বব্যাপী সঠিক পদ্ধতিতে জিহাদ করে, এ দুটি জামা’আর যেকোন একটি জামা’আ যোগদান করার মত উপযুক্ত জামা’আ সেটি সকল “জিহাদ সমর্থক”-রাই স্বীকার করেন। সিরিয়াতে, কিংবা আফগানিস্তানে গেলে এ দুটী জামা’আর যেকোন একটিতে জিহাদ করার ইচ্ছার কথাই এ ভাইরা বলে থাকেন। সুতরাং এক্ষেত্রে উত্তর খুব সোজা, যেহেতু আপনি এদুটো দলের কোন একটাকে হাক্ব জামা’আ বলে মনে করেন, এবং বিশ্বজুড়ে তাদের জিহাদকে সমর্থন করেন, তাদের মানহাজকে সঠিক মনে করেন অতএব তাদের শাখা যেহেতু এ মূহুর্তে এ ভূখণ্ডে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, অতএব আপনি এ দুটোর মাঝে যে জামা’আকে হাক্বের অধিকতর নিকটবর্তী মনে করেন সেটাতে যোগ দিন।

খুব সহজ সমাধান। সমস্যা হল এ সহজ সমাধান তাদের সামনে উত্থাপন করা হলে অনেক ভাই এ প্রশ্নটি করেন তা হল আনসার আল ইসলাম কি আসলেই আল-ক্বাইদার শাখা? বাংলাদেশে “আইএসের” নামে যে কাজ হচ্ছে এগুলো কি আসলেই “আইএস”-এর লোকজন করছে? যদিও এ ফোরামের ভাইদের কাছে এ প্রশ্নগুলো হাস্যকর মনে হতে পারে তবুও ব্যাপকভাবে “মানহাজের ভাই”-দের কাছ থেকে এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হবার কারনে, এ প্রশ্নগুলোর দালীল প্রমান সহ জবাব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। আসুন দেখা যাক, এ দলগুলো কি আসলেই আল-ক্বাইদা বা জামাতুল বাগদাদীর সাথে সম্পৃক্ত কি না।

আনসার আল ইসলাম কি আসলেই আল-ক্বাইদা, আনসার কি আসলেই AQIS?

প্রমানে যাবার আগে প্রথমে আমরা একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। আমরা কিভাবে জানি ৯/১১ এর হামলা আল-ক্বাইদা করেছিল? আমরা কি এটা বুশের কথার ভিত্তিতে বিশ্বাস করি? কিংবা মার্কিন মিডিয়া বা মার্কিন কংগ্রেসের দাবির ভিত্তিতে? না আমরা বিশ্বাস করি, আল-ক্বাইদার দায় স্বীকার এবং তাদের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত তথ্য প্রমানের কারনে। যেমন আমরা জানি শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ থেকে শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহ, শায়খ আবু নাসীর আল উহায়শী রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল লিব্বি রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল লিব্বী রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ ইউসুফ আল-উয়ায়রী রাহিমাহুল্লাহ সহ তানযীম ক্বাইদাতুল জিহাদে উমারাহ ও ‘আলিমগণ অসংখ্যবার একথা স্বীকার করেছেন যে ৯/১১ এর হামলা তারাই করেছেন। বিশেষভাবে আস-সাহাব মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত শায়খ উসামার বক্তব্য এবং এ বরকতময় হামলায় অংশগ্রহনকারী ভাইদের জবানবন্দীর মাধ্যমে সুনিশ্চিত ভাবে আমরা জেনেছি তানযীম ক্বাইদাতুল জিহাদই এ হামলা করেছে।

আচ্ছা শায়খ আবু মুস’আব আল-যারক্বাউয়ীর রাহিমাহুল্লাহ জামা’আ তাওহীদ ওয়াল জিহাদ, যে শায়ক উসামাকে বাইয়াহ দেয়ার মাধ্যমে আল-ক্বাইদা ইন ইরাকে-AQI পরিণত হয়েছিল এ তথ্য আমরা কিভাবে জানি? আমরা এটা জানি আল-ক্বাইদা ইন ইরাক এবং মূল আল-ক্বাইদার অফিশিয়াল মিডিয়া বক্তব্যের মাধ্যমে। একই ভাবে চিন্তা করুন শায়খ আনওয়ার আল-আওলাকী যে AQAP এর সদস্য এটা আমরা কিসের ভিত্তিতে বিশ্বাস করি? ওবামার কথার ভিত্তিতে কি? না, এটা আমরা বিশ্বাস করি AQAP এর অফিশিয়াল মিডিয়া আল-মালাহীমের মাধ্যমে প্রকাশিত শায়খ আওলাকীর বক্তব্য, AQAP এর অফিশিয়াল ম্যাগাযিন ইন্সপায়ারে তার লিখিত বক্তব্য ইত্যাদির মাধ্যমে। এ একই কথা জাবহাত আল-নুসরা, AQIM, আল-শাবাব, আল মুরাবিতুন [শায়খ মুখতার বেল মুখতার] – সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। উভয় দিকের অফিশিয়াল বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের দাবির সত্যতা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হচ্ছি।

বিশেষ করে আস-সাহাব মিডিয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে। কারন এটি হল আল-ক্বাইদার সর্বপ্রথম অফিশিয়াল মিডিয়া যেখান থেকে শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ, এবং শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহর বক্তব্য প্রকাশিত হয়। সুতরাং আস-সাহাব মিডিয়া থেকে যখন কোন বক্তব্য প্রকাশিত হবে, তখন সেটা আল-ক্বাইদার বক্তব্য হিসেবেই আমরা গ্রহন করি। আর যদি আস-সাহাব মিডিয়াকে আমরা অবিশ্বাস করি, তাহলে ৯/১১ যে আসলেই আল-ক্বাইদা করেছে, শায়খ উসামা যে আসলেই আল-ক্বাইদার আমীর, উনি যে আসলেই আমীরুল মু’মীনীন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমার রাহিমাহুল্লাহকে বাইয়াহ দিয়েছেন, মিশরের জামাহ ইসলামিয়্যাহর বিভিন্ন নেতা যেমন শায়খ মুহাম্মাদ হাসান খালিল আল-হাকীম রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ আহমেদ রেফা’ই তাহা রাহিমাহুল্লাহ যে আল-ক্বাইদাতে যোগ দিয়েছেন এরকম অসংখ্য তথ্য আমাদের তখন অস্বীকার করতে হবে। অফিশিয়াল মিডিয়াকে যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে শারলি এবদোর আক্রমন যে আল-ক্বাইদা করেছে, প্যারিস ও ব্রাসেলসের আক্রমন যে জামাতুল বাগদাদী করেছে এ প্রত্যাকটি বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

যদি AQIS এর প্রসঙ্গ আসে, তাহলে প্রশ্ন হবে AQIS যে আসলেই আল-ক্বাইদার শাখা এর প্রমান কি? এর প্রমান হল শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরির বক্তব্য যা প্রকাশিত হয়েছে আস সাহাবের মাধ্যমে যেখানে তিনি আল-ক্বাইদার নতুন একটি উপমহাদেশীয় শাখার ঘোষণা দিয়েছেন যার নাম Jamā‘at Qā‘idat al-Jihād fī Shibh al-Qārrah al-Hindīyah বা AQIS. শায়খ আসীম উমার হাফিযাহুল্লাহ যে এ শাখার আমীর, উস্তাদ আহমেদ ফারুক রাহিমাহুল্লাহ যে এ শাখার প্রথম নায়েবে আমীর এটা আমরা কিভাবে জানি। একই উত্তর আস সাহাব মিডিয়ার বিভিন্ন রিলিযের মাধ্যমে এ তথ্যগুলো আমরা জানতে পেরেছি।

তাহলে এখন দেখা যাক আনসার আল ইসলামের ব্যাপারে কি তথ্য-প্রমান পাওয়া যায়।

১। From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down/ ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশঃ এ ধূলো মিটবার নয় – আস সাহাব
২০১৫ সালের মে-র ২ তারিখ আস সাহাব মিডিয়া কতৃক প্রকাশিত From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down, শীর্ষক বক্তব্যে আল-ক্বাইদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার আমীর শায়খ আসীম উমার হাফিযাহুল্লাহ সরাসরি বাংলাদেশে সংঘটিত আহমেদ হায়দার রাজীব (থাবা বাবা), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যিন্দীক একেএম শফিউল ইসলাম, মুক্তমনার অভিজিৎ রায়, এবং ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা দায় স্বীকার করেন। [দেখুন, From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down, আস সাহাব মিডিয়া উপমহাদেশ, https://www.youtube.com/watch?v=3EC-j6_rnsI ৫.৫১-৬০৫ মিনিট, আন্তার্জাতিক জিহাদী ফোরাম আল-ফিদাতে আপলোড করা একই ভিডিওর কথা উল্লেখ করেছে জিহাদোলজি নামক, কাউন্টার টেরোরিযম ওয়েবসাইটটি – http://bit.ly/28OKcgJ

আবার এ একই ভিডিওতে শায়খ আসিম উমার হাফিযাহুল্লাহ বাংলাদেশী একজন মুজাহিদিনের নাম উল্লেখ করেছেন যিনি বাংলাদেশ থেকে হিজরাহ করে খুরাসানে যান এবং সেখানে আল-ক্বাইদাতে যোগদান করেন, এবং অতঃপর শাহাদাত বরন করেন। [দেখুন, From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down, আস সাহাব মিডিয়া উপমহাদেশ, https://www.youtube.com/watch?v=3EC-j6_rnsI ৬.২৮-৬.৪০ মিনিট]। পরবর্তীতে বাংলাদেশে খুরাসানে হিজরত করা মুজাহিদিনকে নিয়ে আস সাহাব মিডিয়া থেকে বের হয় বাংলা ভিডিও “আমাদের মারকায”, এবং “জীবনের সাফল্য” [জীবনের সাফল্য ভিডিওটির কথা জাবহাত আল-নুসরার .আল-রিসালাহ” ম্যাগাযিনের ২য় সংখ্যার ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়, এবং ২০১৫ সালের বাছাইকৃত শীর্ষ মুজাহিদিন ভিডিওর মধ্যে একটি বলে অভিহিত করা হয়।]

অর্থাৎ আল ক্বাইদার অফিশিয়াল মিডিয়া আস-সাহাবের মাধ্যমে প্রকাশিত বার্তায় AQIS এর আমীর নিজের মুখে দায় স্বীকার করে বলেছেন আনসার আল ইসলামের হামলাগুলো আল-ক্বাইদার মুজাহিদীন করেছেন। একই সাথে শায়খ আসীম উমার এটাও বলছেন শুধু যে বাংলাদেশে শুধু আল –ক্বাইদার মুজাহিদিন কাজ করছেন তাই না, বরং বাংলাদেশ থেকে মুজাহিদিনকে খুরাসানেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে/হয়েছে। অতএব এর মাধ্যেম প্রমানিত হয় আনসার আল ইসলাম আল-ক্বাইদার বিশেষ করে AQIS এর একটি শাখা, আনসার আল ইসলামের মুজাহিদিন আল-ক্বাইদার মুজাহিদিন এবং এ কথার সাক্ষী AQIS এর আমীর শায়খ আসিম উমার হাফিযাহুল্লাহ।

২) আল হাদীদ নিউয রিপোর্ট – আস সাহাব মিডিয়া
২০১৬ সালের ৮-ই মার্চ আস-সাহাব মিডিয়া থেকে প্রকাশিত হয় AQIS এর আল-হাদীদ নিউয রিপোর্ট। তিনটি অংশে বিভক্ত ও রিপোর্টে তুলে ধরা হয় গত প্রায় তিন বছরে AQIS এর বিভিন্ন হামলার বর্ণনা, এবং কোন কোন শ্রেণীর টার্গেটকে AQIS প্রাধান্য দিচ্ছে তার বিশ্লেষণ। একই সাথে এ ভিডিউতে তুলে হরা হয় পাকিস্তানের মুজাহিদিনে সাথে মুরতাদ পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর যুদ্ধের বাস্তবতা ও সামরিক-কৌশলগত বিশেষণ

তিনটি পর্বের লিঙ্ক [আন-নাসর মিডিয়া কতৃক বাংলা সাবটাইটেলকৃত] – http://bit.ly/28LnhR0

আল হাদীদ নিউয বুলেটিনের তৃতীয় পর্বের শুরুতে AQIS কোন কোন শ্রেণীর টার্গেটের উপর উপমহাদেশ ব্যাপী হামলা করেছে তার আলোচনায়, শাতেমে রাসূলদের নিয়ে হামলার বর্ণনায় শায়খ আসীম উমার হাফিযাহুল্লাহর From France To Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down এর একটি ক্লিপ দেখানো হয় [লিঙ্ক ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে]। ভিডিওটির ২.৩০ মিনিট থেকে শায়খ আসীম উমারের বক্তব্য শুরু হয় এবং ৩:০৮ মিনিটের দিকে বাংলাদেশের হামলার ব্যাপারে শায়খের দায় স্বীকারের অংশটি দেখানো হয়।
[দেখুন আন নাসর মিডিয়া কতৃক বাংলা সাবটাইটেলকৃত “আল হাদীদ নিউয রিপোর্ট” তৃতীয় পর্ব, আস সাহাব মিডিয়া – https://www.youtube.com/watch?v=3ZHX6attiFM,]

একই ভিডিওর ৪:৫৬ মিনিট থেকে আবারো থাবা বাবা, শফিউল ইসলাম, অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর বাবুর উপর আনসার আল ইসলামের হামলাগুলোর কথা উল্লেখ করে এগুলোকে সরাসরি আল-ক্বাইদা উপমহাদেশের বা AQIS এর মুজাহিদিনের বরকতময় হামলা বলে উল্লেখ করা হয়। একই ভিডিওর ৬:৩৯ মিনিট থেকে ৬:৪৭ মিনিট পর্যন্ত ওয়াশিকুর রাহমান বাবুর হত্যাকারী আনসার আল ইসলামের মুজাহিদীন ভাই আরিফুল ও যিকরুল্লাহকে দেখিয়ে আল-ক্বাইদা উপমহাদেশের বীর মুজাহিদীন বলে উল্লেখ করা হয় – আল্লাহ আমাদের এই দুই বীর সিংহের কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন।
[দেখুন আন নাসর মিডিয়া কতৃক বাংলা সাবটাইটেলকৃত “আল হাদীদ নিউয রিপোর্ট” তৃতীয় পর্ব, আস সাহাব মিডিয়া – https://www.youtube.com/watch?v=3ZHX6attiFM,]

দেখা যাচ্ছে আস সাহাব থেকে প্রকাশিত AQIS এর শায়খ আসিম উমারের হাফিযাহুল্লাহ “From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down” ভিডিওটির মতোই, আস সাহাব থেকে প্রকাশিত AQIS এর ভিডিও “আল-হাদীদ নিউয রিপোর্ট” – এও আনসার আল ইসলামের হামলাগুলোকে AQIS এর হামলা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং আনসার আল ইসলামের মুহাজিদিনকে AQIS এর মুজাহিদিন বলে গর্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর।

৩) GIMF
GIMF বা Global Islamic Media Front হল আল-ক্বাইদার সাথে সম্পর্কিত একটি মিডিয়া যা আল-ক্বাইদার বিভিন্ন শাখার বক্তবগুলোকে ইংলিশ, জার্মান সহ অন্যান্য বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে থাকে। GIMF এর সূচনা হয় GIM [Global Islamic Media] নামের একটি ইয়াহু গ্রুপ থেকে। ২০০৩ সালের মার্চে GIM এর মাধ্যমে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় যেখানে স্পেনে হামলার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। ৩ মাস পর মাদ্রিদে বোমা হামলা ঘটে। তখন থেকেই আল-ক্বাইদার বিভিন্ন বক্তব্যের অনুবাদ GIM এর মাধ্যমে প্রকাশিত হতো, এবং আস সাহাব ছাড়া GIM/GIMF আল ক্বাইদার বক্তব্যের একমাত্র গ্রহনযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত হতো। এমনকি আল-ক্বাইদার নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকেও সে সময় বলা হয়েছিল যেকোন বক্তব্য, বই, কৌশলগত পর্যালোচনা ইত্যাদি বৈধ/অফিশিয়াল হিসেবে বিবেচিত হবার জন্য GIM এর মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া বাধ্যতামূলক। পরবর্তীতে GIM পরিণত হয় GIMF এ। বিভিন্ন প্রকাশন ও রিলিযের সত্যায়ন শুরু থেকেই GIMF এর কাজের একটি। বর্তমানেও আল শাবাব, আনসার আদ-দ্বীন (মালি), AQIM, তুর্কিস্তানী ইসলামী পার্টি ইত্যাদি আল-ক্বাইদা শাখার বিভিন্ন অপারেশানের এবং বিবৃতির অনুবাদ প্রকাশ হয় GIMF থেকে। এমনকি শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহর সাম্প্রতিক বেশ কিছু বিবৃতির [“Killing of Mujahideen by the Al-Saud Regime”, “Sham A Trust Upon Your Necks, “The Sun of Victory Shines from Nusantara”, “Let’s Unite for the Liberation of Al-Quds ইত্যাদি ] ইংরেজী,জার্মান, উর্দু, এবং ইন্দোনেশীয় ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ হয়েছে GIMF থেকেই।

এ GIMF এর মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু হামলার ব্যাপারে বার্তা অন্যান্য ভাষায় অনুদিত হয়েছ।

একটি উদাহরনের লিঙ্ক এখানে দেওয়া হল। নিলয় চৌধুরী নীলের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আনসার আল ইসলামের বিবৃতির আরবী অনুবাদ – https://dawahilallah.in/archive/index.php/t-423.html
GIMF এ বক্তব্যটি আরবী ও ইংরেজীতেও অনুবাদ করে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ডেড হয়ে যাবার কারন তার লিঙ্ক দেওয়া গেল না।

১৮/৮/২০১৫ এ GIMF ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ” Refuting News About the Role of Anṣār Allah Bangla Team In the Assassination of the Blasphemer Blogger Niloy Chowdhury Neel in Bangladesh” শীর্ষক যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম একটি মিডিয়া টিম মাত্র তবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং GIMF এর পক্ষ থেকে এ বিবৃতিতে ব্লগার নিলয় চৌধুরী নিল হত্যার জন্য AQIS এর বাংলাদেশ শাখার মুজাহিদিনের প্রশংসা করা হয়।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর GIMF এর একটি বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের মিডিয়াটি GIMF এর সাথে মার্জ (Merge) করেছে বা একীভূত হয়ে গেছে, যা এখন থেকে GBT [GIMF Bangla Team] নামে পরিচিত হবে। এখন থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে কোন আলাদা মিডিয়া আর থাকবে না, বাংলাতে যে বিবৃতি তা বের হবে GBT এর মাধ্যমে। [দেখুন“The Creation of the GIMF Bangla Team Following the Merger of the Anṣār Allah Bangla Team” – http://bit.ly/28JcJSK]

২০১৫ সালে জাগৃতি ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে আনসার আল ইসলামের হামলার ব্যাপারে GIMF/GBT এর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয় বাংলা ভিডিও “চার্লি হেব্দ থেকে জাগৃতি/From Charlie Hebdo to Jagriti” [ https://justpaste.it/GBT-1]

২০১৬ এর জানুয়ারীতে GBT এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয় ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন বরকতময় হামলার ইনফোগ্রাফিক যেখানে থাবা বাবা থেকে শুরু করে জাগৃতি পর্যন্ত প্রতিটি হামলা উল্লেখ করা হয়
[দেখুনঃ http://i.imgur.com/VXGsFJx.jpg ইংরেজি, http://i.imgur.com/w70M2WP.jpg বাংলা]

২০১৬ এর মে-তে ঢাকায় সমকামীতার প্রচারক ও প্রসারক অ্যামেরিকান এজেন্ট জুলহাজ মান্নানের উপর বরকতময় হামলার কারনে আনসার আল ইসলামকে অভিনন্দন জানানো হয় GIMF এর অফিশিয়াল টুইটার থেকে। টুইটার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ডেড হবার কারনে লিঙ্ক দেওয়া গেল না, তবে দাওয়াহইলাল্লাহ ফোরামে GIMF এর অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোষ্টের লিঙ্ক দেওয়া হল – http://bit.ly/28MuNOQ। এ বার্তাতে আনসার আল ইসলামকে সুনির্দিষ্ট ভাবে AQIS এর বাংলাদেশ শাখা বলে উল্লেখ করা হয় [GIMF Bangla Team (GBT) Congratulates the Blessed Operation by Ansar Al-Islam Bangladesh (AQIS, Bangladesh branch)]

উল্লেখ্য দাওয়াহইলাল্লাহ ফোরাম ছাড়া আর মাত্র দুটি ফোরামে GIMF এর অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট আছে, এবং এ ফোরাম দুটো হল https://alfidaa.info/vb এবং https://shamikh1.info/vb

এ ব্যাপারে অফিশিয়াল মেসেজটি পড়ুন – http://bit.ly/28KLiFv

আবার এ GIMF থেকেই আস-সাহাব মিডিয়া থেকে প্রকাশিত AQIS এর বিভিন্ন ভিডিও ইংরেজী সাবটাইটেল সহ রিলিয করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল “The Jihadi Memories” নামের সিরিযটি।

GIMF এর এধরনের আরো বিবৃতি খুজতে পারেন এখানে- http://bit.ly/28MRVuM

সুতরাং দেখা যাচ্ছে আনসার আল ইসলামের মুজাহিদিনের খবর প্রচার করছে, এবং সুনির্দিষ্টভাবে আনসার আল ইসলামকে AQIS এর শাখা হিসেবে আখ্যায়িত করছে AQIS সহ আল-ক্বাইদার বিভিন্ন শাখার এবং আল-ক্বাইদার সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন মুজাহিদিন জামা’আর জন্য বিভিন্ন ভাষাতে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রচারের কাজ করা GIMF – যা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আল-ক্বাইদার মুজাহিদিনের খবর প্রচার করে আসছে, যা ছিল এক সময় ইন্টারনেটে আল-ক্বাইদার বার্তা প্রকাশের একমাত্র অফিশিয়াল মাধ্যম, এবং যাকে খোদ আল-ক্বাইদার পক্ষ থেকে ভেরিফাই করা হয়েছে বা তাযকিয়্যাহ দেওয়া হয়েছে।

৪) ইন্সপায়ার ম্যাগাযিন সংখ্যা ১৪
২০১৫ এর সেপটেম্বরের ৯ তারিখে আল মালাহীম মিডিয়া থেকে প্রকাশিত হয় AQAP [Al Qa’idah in the Arabian Peninsula]-এর ইন্সপায়ার ম্যাগাযিনের ১৪ তম সংখ্য। গুপ্তহত্যা নিয়ে তৈরি এ সংখ্যার ২৫ তম পৃষ্ঠায় শাতেমে রাসূলদের উপর বিশ্বব্যাপি হামলার একটি টাইমলাইন তুলে ধরা হয়, যেখানে শার্লি এবদোর হামলা ২০০৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ১০ দশটি হামলার কথা তুলে ধরা হয়। এ টাইমলাইনে স্থান পায় আনসার আল ইসলামের ৪টি হামলা [অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, নিলয় নীল, অনন্ত বিজয়]। এ টাইমলাইনে স্থান পাওয়া দশটি হামলার মধ্যে দুটি হামলার ক্ষেত্রে হামলাকারীর নাম উল্লেখ করা হয় [মুহাম্মাদ বুয়েইরি, আমির আব্দুর রশীদ চিমা]। এছাড়া শার্লি এবদো সহ বাকি আটটি হামলার ক্ষেত্রে কোন/ব্যক্তি বা সংগঠনের কথা উল্লেখ করা হয় নি। অবশিষ্ট এ আটটি হামলার মধ্যে বাংলাদেশের চারটি হামলা বাদ দিয়ে বাকি চারটি হামলার দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখা এগুলোর প্রতিটি করা হয়েছিল সরাসরি আল-ক্বাইদার কোন একটি শাখার তত্ত্বাবধানে [শার্লি এবদো, কার্ট ওয়েস্টারগার্ড], অথবা আল-ক্বাইদার নির্দেশনা অনুযায়ী কোন সেলের মাধ্যমে [লারস ভিলকস]। অর্থাৎ যে হামলাগুলোর সাথে আল-ক্বাইদা যুক্ত না সেগুলোর ক্ষেত্রে হামলাকারীদের নাম এ টাইমলাইনে উল্লেখ করা হয়ছে, আর যে হামলাগুলোর সাথে আল-ক্বাইদা জড়িত সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন ব্যযাক্তি বা সংগঠনের নাম আলাদা করে উল্লেখ করা হয় নি। অর্থাৎ এ টাইমলাইনে শারলি এবদো এবদো বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের হামলাগুলোকে একই ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

উপরোক্ত অফিশিয়াল রিলিয সমূহের আলোকে সুস্পষ্টভাবে প্রমান হয় AQIS এর পক্ষ থেকে একাধিকবার আনসার আল ইসলামকে আল-ক্বাইদার শাখা হিসেবে দাবি করা হয়েছে, খোদ AQIS এর আমীর আনসার আল ইসলামের মুজাহিদিনকে, “’আল-ক্বাইদার মুজাহিদিন” বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী আল-ক্বাইদার অনলাইন প্রচারনার কাজ করা GIMF এর পক্ষ থেকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে আনসার আল ইসলাম হল AQIS এর বাংলাদেশ শাখা। এমনকি AQAP এর ইন্সপায়ার ম্যাগাযিন ও জাবহাত আল-নুসরার আর রিসালাহ ম্যাগাযিনেও ও তথ্য পরোক্ষ ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। অন্যদিকে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকেও তাদের একাধিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে তারা আল-ক্বাইদা উপমহাদেশের বাংলাদেশ শাখা। অর্থাৎ আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে এবং AQIS এর পক্ষ থেকে একই দাবি করা হয়েছে। সুতরাং মুজাহিদিন মিডিয়ার ব্যাপারে সাধারন পর্যায়ের ধারনা রাখেন এমন ব্যাক্তিদের জন্যও এ সত্য দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে আনসার আল ইসলাম, AQIS এর বাংলাদেশ শাখা, এবং আনসার, আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ কতৃক প্রতিষ্ঠিত তানযীম ক্বাইদাতুল জিহাদের একটি অংশ।

আর এ দাবিকে অস্বীকার করা হয়েছে কোন উৎস থেকে? যেখানে আল-ক্বাইদার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আনসার আল ইসলাম আল-ক্বাইদার শাখা, সেখানে বাংলাদেশের তাগুতের বিভিন্ন বাহীনি কতৃক এবং বাংলাদেশের মিডিয়া এ কথাকে অস্বীকার করেছে। এখন প্রশ্ন হল যেসব “মানহাজের ভাই জিহাদ সমর্থক” নিজেরা বিশ্বাস করছেন এবং আত্ববিশ্বাসের সাথে অপরকে বলছেন তারা কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলছেন? তারা কি মুসলিমদের কথার উপরে, মুজাহিদিনের অফিশিয়াল রিলিযের উপরে মুরতাদ বাহিনী ও বাংলাদেশের মিডিয়ার কথাকে স্থান দিচ্ছেন? নাকি তারা অফিশিয়াল মিডিয়া বলে যে আদৌ কিছু আছে তা সম্পর্কে জানেন না? অথচ এ বক্তব্য, বিবৃতি, প্রকাশনা গুলো অনালাইনে অ্যাভেইলেবল ১/২ ঘন্টা সময় নিয়ে একটু মনযোগ দিয়ে খুজলেই এ তথ্যগুলো অতি সহজে সত্যায়ন করা সম্ভব। নাকি তারা অফিশিয়াল মিডিয়া সম্পর্কে জানেন কিন্তু তা খুজে দেখার পরিশ্রমটুকু করার সময় তারা পাননি, আর তাই না জেনেই , জানার চেষ্টা ছাড়াই “অমুক ভাই” বা .তমুক ভাই”-এর কাছ থেকে শোনা কথার ভিত্তিতে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে “বিশেষজ্ঞ” মতামত প্রদান করছেন? যদি এর যেকোন একটি করা হয়, তবে কি তারা তথ্য সত্যায়নের যে মূলনীতি শরীয়াহতে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার অনুসরন করছেন?

বাংলাদেশে “আইএস” এর নামে যে হামলাগুলোর দায় স্বীকার করা হচ্ছে এগুলো কি আসলে “আইএস” করছে?

আনসার আল ইসলামের ব্যাপারে আমরা যে মূলনীতিগুলো উল্লেখ করেছি তার আলোকে দেখা যায়, ইতিমধ্যে ‘আল-হায়াত মিডিয়া সেন্টার” থেকে প্রকাশিত “আইএস”-এর অফিশিয়াল ইংরেজী ম্যাগাযিন “দাবিক্ব”-এ একাধিকবার বাংলাদেশে চালানো হামলার ব্যাপারে দায় স্বীকার করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে যারা “আইএস” এর ব্যানারে কাজ করছে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনটি প্রমান এখানে তুলে ধরা হল।

১) দাবিক্ব ১২ – নভেম্বর ১৮, ২০১৫ তে প্রকাশিত “Just Terror” নামক এ সংখ্যাটিতে উপস্থাপন করা “The Revival of Jiahd in Bengal” নামের একটি আর্টিকেল। এ আর্টিকেলে হোশি কুনিও, সিযার তাভেলা এবং হোসেনী দালানে রাওয়াফিদের তাজিয়া মিছিলের উপর হামলার দায়স্বীকার করে বলা হয়, “খিলাফাহর অধীনস্ত” দুটি সেল “ক্রুসেডার সিযার তাভেল” ও “জাপানী নাগরিক হোশি কুনিও” –এর উপর হামলা চালায়। একইভাবে হোসেনী দালানের হামলারা ব্যাপারে বলা হয় “খিলাফাহর সৈন্যরা” এ হামলা চালায়। এ আর্টিকেলটিতে শায়খ আবদূর রাহমানের রাহিমাহুল্লাহ ও “তার ছাত্রদের” কথা প্রশংসার সাথে আলোচনা করা হয়, যা উদ্দেশ্য ছিল মূল জেএমবির (সালাউদ্দীন গ্রুপ) কাছ থেকে বা’ইয়াহ পাওয়া।

২) দাবিক্ব ১৪ – ১৩ই এপ্রিল ২০১৬ তে প্রকাশিত “ইখওয়ানুল মুরতাদ্দীন’ নামক সংখ্যায় “আইএস” –এর বাংলাদেশের আমীর আবু ইব্রাহীম আল হানিফের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়, যেখানে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে “আইএস” এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য উদ্দেশ্যসহ দীর্ঘ আলোচনা তুলে ধরা হয়। একই সাথে এ সংখ্যাতে আবু জানদাল আল-বাঙ্গালী নামে একজন বাংলাদেশী মুজাহিরের কথা তুলে ধরা হয়, যিনি উত্তর সিরিয়াতে “আইএস” এর হয়ে লড়াই করার সময় মৃত্যুবরন করেন। আমরা আশা করি যদিও জামা’আ হিসেবে জামাতুল বাগদাদী একটি খাওয়ারিজ জামা’আ তথাপি এ বাংলাদেশী মুহাজিরের নেক নিয়্যাতের ভিত্তিতে এবং তিনি যদি মুওয়াহিদিন ও মুজাহিদিন হত্যায় অংশগ্রহন না করে থাকেন তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করবেন।

৩) আমাক্ব – এখন পর্যন্ত “আইএসের” নামে যতোগুলো হামলারা দায় স্বীকার করা হয়েছে, তার সবই হয়েছে আমাক্ব (Amaq) নিউয এজেন্সীর মাধ্যমে। সাধারনভাবে জামাতুল বাগদাদীর মিডিয়া নীতি হল সব অপারেশানের খবর প্রথমে আমাক্বের মাধ্যমে স্বীকার করা, এবং তারপর অন্যান্য অফিশিয়াল প্রকাশনার মাধ্যমে স্বীকার করা। এজন্য প্যারিস, ব্রাসেলস এবং মিশরীয় বিমান হামলা প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বপ্রথম আমাক্ব নিউয এজেন্সীর মাধ্যমে দায় স্বীকার করা হয়।

অতএব দেখা যাচ্ছে আনসার আল ইসলামের মতো বাংলাদেশের “আইএসের” ক্ষেত্রেও দুই দিক থেকেই একই দাবি করা হচ্ছে, এবং দাবি অস্বীকার করা হচ্ছে মুরতাদ বাহিনী ও বাংলাদেশের মিডিয়া পক্ষ থেকে। সুতরাং এ বিষয়টি পরিষ্কার যে আল-ক্বাইদা এবং জামাতুল বাগদাদী উভয় জামাতের কাজ সক্রিয়ভাবে এখন বাংলাদেশে চলছে। সুতরাং বৈশ্বিক জিহাদকে সমর্থনকারী [যেহেতু এ দুটি জামা’আর অধীনেই বর্তমানে বিশ্বের ৯০% এর বেশি জিহাদী তানযীম কাজ করছে] এবং জিহাদকে ফারযুল আইন বলে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য ঘরে বসে থাকার আর কোন অজুহাত থাকে না। কারন যেকোন বিচারে (আপনি আল-ক্বাইদাকে হাক্ব মনে করুন, কিংবা জামাতুল বাগদাদী/”আইএস” কে) হাক্ব জামা’আ এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান আছে, আর এটা স্বীকৃতি খোদ আল-ক্বাইদা ও “আইএস”-ই দিচ্ছে।

আমার সম্মানিত মুসলিম ভাইয়েরা! দ্বীনের ফরয একটি বিধানের ব্যাপারে, ফারযুল আইন আমলের ব্যাপারে, হাক্ব জামা’আকে খুজে বের করার ব্যাপারে, ফরয পালনের জন্য এ জামা’আর সাথে আবদ্ধ হবার ব্যাপারে – এতোগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক প্রশ্নের ব্যাপারে সঠিক তথ্য সঠিক পদ্ধতিতে জানার প্রচেষ্টা ছাড়া এরকম অবস্থান নেওয়া, তা প্রচার করা এবং এ অবস্থানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া কিভাবে মানবিক বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শারীয়াহগত – কোন দিকে যৌক্তিক বা Justifiable হতে পারে?
সুবহান’আল্লাহ্, “তোমাদের কি হল? তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?” [আল-ক্বালাম, ৩৬]

উত্থাপিত সংশয়ের মাঝে প্রথমটির গুরুত্ব বিবেচনায় এ উত্তরটি আলাদা ভাবে একটি জাস্টপেইস্ট.ইট ফাইলে সংকলিত করা হয়েছে। সম্মানিত ভাইরা এটি প্রচার করার সময় এ লিঙ্কটি ব্যবহার করতে পারেন, যদি ফোরামের লিঙ্ক শেয়ার করা সম্ভব না হয়। একই সাথে এ লেখাট, বিশেষ করে “১) কোন জামা’আর সাথে জিহাদ করবো? বাংলাদেশে কি উপযুক্ত জামা’আ আছে যারা সঠিক ভাবে জিহাদ করছে? ” -এ প্রশ্নের উত্তরটি সাধ্যমত ফেসবুকে এবং অন্যত্র নোট/স্ট্যাটাস/পোষ্ট করার জন্য অনুরোধ করবো। যাতে করে যাদের মধ্যে আসলে সংশয় কাজ করছে তারা সত্য অনুধাবন করতে পারেন আল্লাহর ইচ্ছায়, এবং যারা সংশয়বাদী তাদের যেন কোন অজুহাত না থাকে।

জাস্টপেইস্ট.ইট লিঙ্ক- https://justpaste.it/Ansar_AQ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − sixteen =

Back to top button