শাইখ সামী আল উরাইদি ও শাইখ আবু জুলাইবিব আল উরদুনি সহ আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট চার নেতৃত্বকে গ্রেফতার করেছে তাহরির আশ শাম!
গতকাল সিরিয়ার ইদলিব থেকে শামের জিহাদিদের সবচে’ বড় জোট হাইয়াত তাহরির আশ শামের স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট চার শাইখ ও নেতৃত্বকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। সুত্র জানায় তাহরির আশ শামের নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতারকৃত নেতৃত্বদের বাড়িঘরসহ সিরিয়ায় অবস্থানরত শাইখ আবু মুসআব যারকাবির নায়েব বা ডেপুটি শাইখ আবুল কাসসাম উরদুনির বাসাও তসনস করে দিয়েছে। যদিও টুইটার ও টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের অনেকে শাইখ কাসসামকে গ্রেফতারীর নিউজ জানাচ্ছিল, কিন্তু সর্বশেষ জানা গেছে শাইখ আবুল কাসসাম নিরাপদে আছেন। গ্রেফতারকৃতদের মাঝে আরও রয়েছেন শাইখ আবু হুমাম আস সুরি ও শাইখ আব্দুল করিম আল মিসরি। তাহরির আশ শাম এক বিবৃতিতে গ্রেফতারকৃতদের ফিতনা ও ফাসাদের মুল আখ্যায়িত করে তাঁদের তাহরির এর শরিয়াহ আদালতে পেশ করা হবে জানিয়েছে।
(উল্লেখ শাইখ সামি আল উরাইদি হচ্ছেন জাবহাতুন নুসরাহ সাবেক প্রধান শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ ও মুফতি, ১৯৭৩ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণকারী এই আলেম ২০০১ সালে জামেয়া জর্ডান থেকে হাদিস এর উপর পড়াশোনা করেন এবং হাদিসের উপর পিএইচডি করেন একই প্রতিষ্ঠান থেকে। তিনি আন নুসরাহ ফ্রন্টের ২য় প্রধান নেতৃত্ব ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত সিরিয়ান জিহাদি সমরকৌশলবিদ শাইখ আবু মুসআব দ্বারা খুবই অনুপ্রাণিত ছিলেন। আফগানিস্তানে আল কায়েদার প্রখ্যাত জিহাদি সমরকৌশলবিদদের সাথে থেকে তিনি জিহাদ করেছিলেন, অতঃপর আল কায়েদার হয়ে ইরাকে লড়াই করেন এবং জাবহাতুন নুসরাহর প্রধান ছয় প্রতিষ্ঠাতাদের একজনও তিনি । তাঁর দক্ষতা ও মেহনতের ফলে আন নুসরাহ সিরিয়াতে শক্ত অবস্থান করে নিতে সহায়ক হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা। তিনি জিহাদ ও মুজাহিদদের নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি লিখেছেন। আধুনিক জিহাদের কর্মকৌশল নিয়ে তাঁর কিতাব ও ভিডিও মজলিসগুলো বিশ্বব্যাপী জিহাদিদের মাঝে প্রভাব ফেলেছিল। আল কায়েদা প্রধান ডক্টর আইমান আয যাওয়াহিরি তাঁর লিখিত “ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” নামক একটি বইতে ভুমিকাও লিখেছেন।
শাইখ আবু জুলাইবিব হলেন জাবহাতুন নুসরাহ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি ইরাকি আল কায়েদার একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব ছিলেন। এবং তিনি সিরিয়ার দার’আ প্রদেশের জাবহাতুন নুসরাহর সামরিক প্রধানও ছিলেন, কিন্তু তাহরির আশ শাম গঠন হওয়ার আগে এক ইস্যুতে তাঁকে পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল)
উল্লেখ্য সিরিয়ার অন্যতম শক্তিশালী জোট ছিল আল কায়েদার অঙ্গসংগঠন জাবহাতুন নুসরাহ। জানা যায় ২০১৬ সালে আল কায়েদা নেতৃবৃন্দের অনুমতি ছাড়াই নুসরাহ আল কায়েদা ত্যাগ করে। কিন্তু আল কায়েদা সিরিয়ার জিহাদকে রক্ষার স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকে।
এদিকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও সিরিয়ায় অবস্থানরত আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট শাইখদের সাথে পরামর্শ ছাড়াই তাহরির আশ শাম গঠন করা হয়। এরপর শাইখ সামি আল উরাইদি, শাইখ আবু জুলাইবিব সহ অনেক নেতৃবৃন্দ তাহরির আশ শাম ছেড়ে বেড়িয়ে যান।
বেশ কয়েক মাস ধরেই শামে অবস্থিত শায়খ সামি আল উরাইদির মতো আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ও উমারাহ এবং তাহরির আশ শামের নেতৃবৃন্দের মাঝে বিবাদ স্পষ্ট হয়ে উঠে। এবং এর জের ধরেই শাইখ সামি আল উরাইদি সহ অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ধারনা।
শাইখ যাওয়াহিরি সাম্প্রতিক এক বার্তায় বলেছেন-
“কিছু লোক চিৎকার করে বলে, আমাদের উপর আমেরিকাকে চাপিয়ে দিবেন না! কেমন যেন তারা অজ্ঞ যে পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে আমেরিকা আমাদের উপর চেপে বসে আছে, আমাদের উপর হিংস্রতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার পূর্বে ব্রিটিশরা, ফ্রান্সিসরা ও রুশরা উসমানী সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারকে পরস্পর বণ্টন করে নিয়েছে। কেন ব্রিটিশরা জাবালে তারেক থেকে ভারত উপমহাদেশ পর্যন্ত ইসলামের ভূমিগুলোর উপর দখলদারিত্ব কায়েম করেছিল? কেন রুশরা মুসলমানদের কাফকাজ ও মধ্য এশিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছিল? কেন চীন পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলমানদের উপর দখলদারিত্ব কায়েম করেছে? কেন ফ্রান্সিসরা শাম ও মাগরিবুল ইসলাম (মরক্কো ও আফ্রিকান আরও কিছু মুসলিম ভুমি) এর উপর দখলদারিত্ব চালিয়েছিল? কেন আমেরিকা ইসরাইলকে পরিপূর্ণ সমর্থন ও সাহায্য করছে যে, ইসরাইল ইসলামী বিশ্বের মধ্যভাগে জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসে আছে এবং সেখানের খনিজ সম্পদকে লুণ্ঠন করছে?
তাহলে আল কায়েদা কি তাদের উপর চেপে বসেছিল? আল কায়েদা কি তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল? তাদেরকে কি ভয় দেখিয়েছিল??
শামে (সিরিয়াতে) কারা তাদের ইতর লোকজন বরং সৈন্যদের দ্বারা বাড়িঘর ধ্বংস করেছে, বোমা বর্ষণ করেছে, হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে? কারা সেখানে নোংরা বিভাজনের খেলা খেলেছে? কারা মুজাহিদদের উত্তম লোকদের উপর বোমা করেছে? আল কায়েদা-ই কি সেখানে আমেরিকাকে চেপে ধরেছে? টেনে এনেছে?
আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহে আল কায়েদা-ই শামে আমাদের অধিবাসীদের জিহাদের প্রথম দিন থেকেই সমর্থন করেছে, রিবাত ও জিহাদের শামে প্রত্যেক মুজাহিদের জন্য তাঁরা তাদের হাতকে প্রশস্ত করেছেন, তাঁদের বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন!”
ধারণা করা হয়, হাকিমুল উম্মাহ শাইখ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরির হাফিযাহুল্লাহ’র এ কথাগুলো তাহরির আশ-শামকে ইঙ্গিত করেই বলা।
শাইখের এই বার্তার প্রেক্ষিতে একদিকে তাহরির আশ শামের শরিয়াহ বোর্ডের সদস্য আবু আব্দুল্লাহ আশ শামীসহ অন্যান্যরা এবং অন্য দিকে শাইখ ডঃ সামি আল উরাইদি, শাইখ আবু জুলাইবাব সহ অন্যান্য বক্তব্য –পাল্টা বক্তব্য দেয়া শুরু করলে বিরোধটা সামনে চলে আসে। এই বিরোধের সুত্র ধরেই তাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে এরও অনেক আগে প্রায় এক বছর পূর্বে, বৈশ্বিক জিহাদিদের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসি সর্বপ্রথম জনসম্মুখে বলেন – আন-নুসরার, জাবহাতু ফাতহিশ শামে পরিণত হবার সিদ্ধান্ত হাকিমুল উম্মাহ শায়খ ডঃ সমর্থিত ছিলো না।
জানা যায় কিছুদিন পূর্বে তাহরির আশ শাম ও আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে লক্ষ্য করে শাইখ আবু কাতাদাহ ও শাইখ মাকদিসির নেতৃত্বে উলামাদের একটি বোর্ড সন্ধির আহবান জানিয়েছিল, তবে তাহরির কৌশলে পাশ কাটিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য তাহরির এর অনেক নেতৃবৃন্দসহ সিরিয়া ও সিরিয়ার বাহিরের অসংখ্য উলামা, উমারাহ ও জিহাদি নেতৃত্ব নিঃশর্তে গ্রেফতারকৃত শাইখদের মুক্ত করে দিতে আহবান জানিয়েছেন এবং তাহরিরকে উম্মাহর আলেমদের কাছে আসার আহবান করেছেন, যাদের মাঝে তাহরির অনেক সামরিক, প্রশাসনিক ও শরিয়াহ বিভাগের সদস্যও রয়েছেন। তাঁরা এই কাজটিকে খুবই বাড়াবাড়ি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
সংবাদ সংশ্লিষ্ট ছবি-