পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মুসলিম নির্যাতনের কাহিনী অনেক দীর্ঘ। গোরক্ষকদের হাতে অত্যাচারিত স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় । সেই নির্যাতনেরই একটি অপকৌশল হিসেবে সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে একটি নতুন চক্রান্ত করেছে গোপূজারীরা। সেখানে এন আর সি ( ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স বা বৈধ নাগরিক তালিকা ) নামে একটি তালিকা তারা তথা-কথিত সুপ্রিম কোর্টের আদেশে তৈরি করতে যাচ্ছে, যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশিত হবে।
আসাম রাজ্যে কয়েক লক্ষ মুসলিমের বসবাস। আশংকা করা হয়, এ ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো ঐ রাজ্যের লক্ষ্ লক্ষ মুসলিমকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে আসাম থেকে বের করে দেওয়া । এরই পরিপ্রেক্ষিতে, দিল্লিতে এ সপ্তাহে একটি সেমিনার আয়োজন করেছিল দিল্লি অ্যাকশন কমিটি ফর আসাম। সেই সভাতে বক্তব্য রাখেন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের প্রবীণ নেতা মাওলানা আরশাদ মাদানী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন যে, “চারশো বছর ধরে যারা বংশপরম্পরায় আসামে বসবাস করছে, তাদের আপনি বাংলাদেশি বলে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন, তা আমরা কিছুতেই হতে দেব না। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, তাহলে আগুন জ্বলে যাবে। ভারতীয় নয় বলে দিয়ে এই মুসলিমদের যদি আপনি বের করার চেষ্টা করেন, তাহলে তো বলব আসামের বিজেপি সরকার এটাকেও আর একটা মায়ানমার বানানোর চেষ্টা করছে।” তার এতটুকু বক্তব্যে যেন ঐ গোপূজারীদের মাথায় রক্ত ওঠে যায়।যার কারণে, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে আরশাদ মাদানীর বিরুদ্ধে সে রাজ্যে একের পর এক এফআইআর দায়ের করছে তারা , আসাম পুলিশও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করছে। আসামে বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের যে তালিকা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে, তার সূত্র ধরেই আরশাদ মাদানি এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু রাজ্যের ইসলামবিদ্বেষী মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে দিয়েছে, যারাই এই তালিকা প্রকাশের বিরোধিতা করবেন আসামে তাদের শত্রু বলে গণ্য করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার কতিপয় মুসলিমনেতাও নিজেদেরকে বাঁচানোর প্রয়াসে আরশাদ মাদানীর বক্তব্য নিয়ে সাবধানী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। রাজ্যে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় দল এআইডিইউএফ-এর যেমন দাবি, “তার (আরশাদ মাদানী) বক্তব্যকে বিকৃত করা হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের কথায়, “আরশাদ মাদানির বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমার সন্দেহ, উর্দুতে দেওয়া তার বক্তব্য মিডিয়ার সবাই বোঝেনি, তিনি কিন্তু শান্তি বজায় রাখার কথাই বলেছিলেন। উনি শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেটা অনেকে বুঝতে পারেনি।”
দলের সিনিয়র নেতা আবদুল খালেক বলছেন, “মাদানি সাহেবের বক্তব্য বলে মিডিয়ায় যা প্রচার হয়েছে, তা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি একটা স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের সন্তান, তার মুখে এ ধরনের কথা মানায় না।”
সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেছেন, “তবে আসামের মুসলিমদের ভাগ্য তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে, তাদের কোনো মাদানির প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।” মুসলিমদের সাথে হিন্দুদের বন্ধুত্ব যে শুধু মুসলিম মারার একটি কৌশল তা বুঝা যায় আসামের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে। আসামে দীর্ঘকাল মুসলিমদের সমর্থন পেয়ে আসছিল কংগ্রেস । তবে আজ মুসলিমদের সাথে দূরত্ব বাড়াতে তারা কালক্ষেপণ করছে না। সুতরাং, সাবধান হও তোমরাও! আজ যারা নিজেদের পেট বাঁচানোর জন্য হিন্দুদের ভয়ে লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে ঠেলে দিতে চাচ্ছ এক অজানা গন্তব্যে, আর জন্ম দিতে চাচ্ছ আরেকটি আরাকানের। মনে রেখো, ইমানের সাথে কুফরের শত্রুতা চিরকালের। আজ যতই খোশআমদেদ জানাক, একসময় তারা ঠিকই ঐ খোশআমদেদের বিনিময় তোমাদের থেকে আদায় করবে। তাই সময় থাকতেই অস্ত্র ধর, মুসলিমবিশ্ব রক্ষা কর।
إنا لله وإنا إليه راجعون
ইয়া আল্লাহ! মুসলিম বিশ্বকে হেফাজত করুন।
হে মুসলিম! জেগে উঠ। নইলে রক্ষা নেই।