জিহাদে অংশগ্রহণ ও সহায়তার ৩৯ টি উপায় – শাইখ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস সালিম
জিহাদে অংশগ্রহণ ও সহায়তার ৩৯ টি উপায়
শাইখ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস সালিম
https://archive.org/details/39WaysToServeAndParticipateInJihadbangla
https://www.mediafire.com/file/u3zg8e1btky7ika/jihader_39_ti_poth.pdf/file
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম
(‘ইসা আল-‘আশীন)
১৯/৫/১৪২৪ হিজরী
জিহাদে
অংশগ্রহণ এবং
সহায়তার ৩৯টি
উপায়
আত–তিবইয়ান পাবলিকেসন্স
التبيان
সূচিপত্র
১. জিহাদের জন্য নিয়্যত করাঃ… 9
২. খালিছভাবে আল্লাহর নিকট শাহাদাত কামনা করাঃ… 13
৪. নিজের সম্পদ দ্বারা জিহাদ করাঃ… 18
৫. যারা জিহাদে যাচ্ছে তাদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করাঃ… 20
৬. মুজাহিদীনগণ তাদের যে সকল পরিবারবর্গকে রেখে গেছেন তাদের দেখাশোনা করাঃ… 21
৭. শহীদের পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করাঃ… 23
৮. আহত এবং কারারুদ্ধ মুজাহিদীনদের পরিবারের দেখাশুনা করাঃ… 25
৯. মুজাহিদীনদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করাঃ… 26
১০. তাদেরকে যাকাত প্রদান করাঃ… 29
১১. আহতদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করাঃ… 32
১৩. মুজাহিদীনদের অনুপ্রেরণা দান করা এবং তাঁদেরকে (জিহাদ) চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করাঃ… 35
১৪. মুজাহিদীনদের পক্ষে কথা বলা এবং তাদের সমর্থন দেয়াঃ… 36
১৫. মুনাফিক এবং বিশ্বাস ঘাতকদের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে দেয়াঃ… 40
১৬. মানুষদেরকে জিহাদের দিকে ডাকা এবং উদ্বুদ্ধ করাঃ… 42
১৭. মুসলিম এবং মুজাহিদীনদেরকে পরামর্শ দেয়াঃ… 42
১৮. মুজাহিদীনদের গোপন বিষয়গুলো গোপন রাখা যাতে করে তা থেকে শত্রুরা উপকৃত হতে না পারেঃ 44
২০. সঙ্কট কালীন দু’আ (কুনুত আন-নাওয়াযিল): 46
২১. জিহাদের সংবাদ সংগ্রহ করা এবং তা প্রচার করাঃ… 49
২২. তাঁদের প্রকাশিত বই ও প্রকাশনা ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করাঃ… 51
২৩. এরূপ ফাতাওয়া দেয়া যা তাঁদের সাহায্য করবেঃ… 52
২৫. শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করাঃ… 55
২৬. অস্ত্র দ্বারা প্রশিক্ষণ নেয়া এবং গুলি চালনা করতে শেখাঃ… 59
২৭. সাঁতার কাটতে এবং ঘোড়ায় চড়তে শেখাঃ… 60
২৮. প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান অর্জন করাঃ… 61
২৯. জিহাদের ফিকহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাঃ… 61
৩০. মুজাহিদীনদের আশ্রয় দেয়া এবং তাদের সম্মান করাঃ… 62
৩১. কাফিরদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা এবং তাদের ঘৃণা করাঃ… 64
৩২. বন্দীদের মুক্ত করার চেষ্টা বৃদ্ধি করাঃ… 64
৩৩. বন্দীদের সংবাদ প্রচার করা এবং তাদের বিষয়ে সচেতন থাকাঃ… 66
৩৫. কাফিরদের বিরুদ্ধাচরণ করাঃ… 68
৩৬. সন্তানদের জিহাদ ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের ভালোবাসার মানসিকতা দিয়ে গড়ে তোলাঃ… 69
৩৮. শত্রুদের পণ্যসামগ্রী বর্জন করাঃ… 72
৩৯. যারা যুদ্ধ করে (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) (হারবিইয়্যিন), তাদের থেকে কর্মী নিযুক্ত কর নাঃ… 79
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাঁর বান্দাদের উপর জিহাদকে ফরজ করেছেন এবং তাদেরকে পৃথিবীর উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার এবং কাফিরদের উপর কর্তৃত্ব দানের ওয়াদা করেছেন। এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর সর্বোত্তম বান্দার উপর, যিনি সত্যিকার অর্থেই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছেন যতক্ষণ না নির্ধারিত বিষয় (মৃত্যু) এসে পরেছে। আল্লাহ যেন তাঁর উপর এবং তাঁর পরিবারের এবং তাঁর প্রকৃত ও খাঁটি সাহাবীগণের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করেন। আমীন।
অতঃপর
আমার সম্মানিত ভাইয়েরা! আমরা এক চরম দুর্দশার এবং বিশৃঙ্খলার সময় পার করছি, যা ইতিহাসে ইতিপূর্বে কখনও ঘটেনি, যেখানে ভেদাভেদ-মতানৈক্য হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক নিয়ম এবং দুর্দশা ছড়িয়ে পড়েছে চতুর্দিকে এবং যেখানে পুরো পৃথিবী হয়ে পড়েছে এক সংঘাতের মঞ্চ। যারা দ্বীনের উপর সুদৃঢ় ও স্থির থাকতে চায় এবং যারা জিহ্বা ও অস্ত্র দিয়ে তাদের দ্বীনকে সুরক্ষা করতে চায় তাদেরকে দ্বীন থেকে বের করার জন্যে পায়তারা চালাচ্ছে,… সমগ্র পৃথিবী বিভিন্ন উপায়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে, প্রকৃতপক্ষে জিহাদের বিরুদ্ধে এবং এর বিরুদ্ধে মুসলিমদেরও ব্যবহারকরছে।
আজ ইসলামকে আক্রমণ করা হচ্ছে সম্মিলিত ভাবে। কাফির জাতি এবং তাদের সাহায্যকারীরা (আউলিয়ারা) পৃথিবীর প্রত্যেক দিক থেকে এসে একত্রিত হয়েছে আত্-তা‘ইফাহ আল-মানসূরাহ [1] এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার, যারা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে কুফর ও কাফিরদের বিরুদ্ধে বিরামহীন ও কঠোর এক সুস্পষ্ট ও তীব্র জিহাদের দামামা – যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর আদেশ এসে যায়। আর তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না বিশ্বাসঘাতক দ্বারা বা পরাজিত মুসলিমদের দ্বারা অথবা তাদের দ্বারা যারা এই তুচ্ছ পার্থীব জগতের মোহে মত্ত। কাফির ও মুরতাদ অথবা পথভ্রষ্ট
বিদ‘আতীদের মধ্য হতে যারা তাদের বিরোধিতা করে তাদের দ্বারা এরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এবং এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই যে, আজকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে জিহাদ। সত্যিকার অর্থে এটা একটি বাধ্যতামূলক কাজ যা আল্লাহ্ আমাদের উপর ফরজ করেছেন। মুসলিমদের জন্য আল্লাহর উপর ঈমান আনার পর জিহাদ করা এবং মুসলিম ভূমিতে প্রবেশকারী ও দখলদারদের উৎখাত করার চেয়ে আর বড় কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
যদি তুমি কোন ভূমিতে ইসলাম অনুসন্ধান কর
তাহলে তুমি একে একটি পাখির ন্যায় দেখবে,
যার ডানাগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।
আজকে মুসলিম উম্মাহর জন্য জিহাদ ছাড়া আর কোন পথ নেই। কারণ একের পর এক মুসলিমদের ভূমি শত্রুরা দখল করে নিচ্ছে। মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
وَلَن تَرْضٰى عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصٰرٰى حَتّٰى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدٰى ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَآءَهُم بَعْدَ الَّذِى جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِىٍّ وَلَا نَصِيرٍ
“…তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন হতে ফিরিয়ে না নেয়, যদি তারা সক্ষম হয়…।”[2]
সুতরাং মুসলিমদের জন্য আজ জিহাদ এবং অস্ত্রের ভাষা ছাড়া আর কোন উপায় নেই । আল্লাহর কসম করে আমাকে বলুন, আক্রমণকারী শত্রুদের ব্যাপারে, যারা মুসলিমদের ভূমিসমূহ দখল করেছে, সম্মান নষ্ট করেছে, শিশুদের ইয়াতীম ও মহিলাদের বিধবা করেছে এবং দেশে দেশে ইসলামের উপর আঘাত হেনেছে … এত সব কিছুর পরও, এ শত্রুদের ব্যাপারে কি কোন রূপ সন্দেহ আছে, যে তাদের সাথে সমঝোতা করার একমাত্র উপায় হলো শক্তি ও প্রতিশোধের ভাষা? সুতরাং লোহার মোকাবেলা করতে হবে লোহা দিয়ে এবং শক্তির মোকাবেলা করতে হবে শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে। কোরআন ও সুন্নাহ্ থেকে আমাদের জন্য এটা প্রতিষ্ঠিত- এবং বাস্তবতাও এটার পক্ষে সাক্ষ্য ও সমর্থন করে যে, যারা সমঝোতা এবং শান্তি(চুক্তি) চায়- তারা সুষ্পষ্ট ক্ষতি, অপমানজনক পরাজয়, আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের গোলামী করা এবং ত্বাগুতদের আনুগত্য ছাড়া কিছুই পায় না। আপনাদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে তাদের ব্যাপারে যারা মুসলিম নামধারী বিশ্বাসঘাতক শাসকদের কাছে এসব খোঁজে; তারা আমাদের মধ্য হতে নয় এবং আমরাও তাদের মধ্য হতে নই। বরং তারা আমাদের প্রধান শত্রু, কারণ তাদের মাধ্যমে কাফিররা আমাদের সাথে যুদ্ধ করছে এবং তাদের প্রতারণা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের অধিকার বলপূর্বক কেড়ে নিচ্ছে। কিভাবে এর ব্যতিক্রম হবে, যখন আল্লাহ ﷻ তাঁর কিতাবে বলেছেন এবং আমাদের জানিয়েছেন যে, তারা আমাদের সাথে একটি নিদির্ষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছে এবং তা হল, “…যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন হতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে যদি তারা সামর্থ্য হয়…।”
“সর্বোচ্চ জিহাদ ছাড়া কোন সমাধান নেই।
বিশ্ব শান্তি আমাদেরকে আর সন্তুষ্ট করে না।
শত্রুর জন্য কোন শান্তি নেই।”
এটা একটি নীতিমালা এবং বিশ্বাস প্রত্যেক মুসলিমদের হৃদয়ে রয়েছে। যেহেতু জিহাদ উম্মাহর একমাত্র উপায়, প্রয়োজনীয় এবং আদেশকৃত ফরজ, এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমি আমার এক ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করেছি- কিছু উপায় সম্পর্কে লিখতে যাতে করে প্রত্যেকে জিহাদে অংশগ্রহন করতে পারে এবং মুজাহিদীনদেরকে সাহায্য করতে পারে এবং জিহাদের ট্রেনকে ক্ষমতাশালী করতে পারে যা দ্রুতবেগে ছুটে চলছে ত্বাগুতদের চরম দাম্ভিকতাকে চূর্নবিচূর্ণ করার জন্য।
আমরা এই প্রবন্ধের শিরোনাম দিয়েছি, “জিহাদের অংশগ্রহণ এবং সহায়তার ৩৯টি উপায়।”
হে আল্লাহ! আমাদেরকে হিদায়াত, সাহায্য এবং সুদৃঢ়তা দান করুন এবং একে মানুষের কাছে গ্রহণীয় এবং উপকারী করে দিন।
–মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-’আশীন);
১৯/০৫/১৪২৪ হিজরী।
১. জিহাদের জন্য নিয়্যত করাঃ
জিহাদের জন্য অন্তরে নিয়্যত থাকা; অন্তরের খাঁটি নিয়্যত একজনকে জিহাদের জন্য সাড়া দিতে উদ্বুদ্ধ করে। যখনই জিহাদের আহ্বানকারীরা আহ্বান করবে, “হে আল্লাহর সৈনিক! (ঘোড়ার পিঠে) জিন পরাও” তখনই সেই মানুষটি জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্যে ঝাঁপিয়ে পরবে, যখনই তাকে আহবান করা হয় তখনই সে বেরিয়ে পরে এবং যখনই ভাইদের জন্য সাহায্য চাওয়া হয় তখনই সাহয্যের জন্য এগিয়ে আসে। যেমনটি রসূল ﷺ বলেছেন “… এবং যদি তোমাদেরকে সামনে অগ্রসর হতে বলা হয় তবে সামনে অগ্রসর হও।”
যদি সেই ব্যক্তি নিয়্যত করে জিহাদে যাওয়ার জন্য এবং সে যেতে বা তা করতে ব্যর্থ হয় সে তখন এ কারণে ব্যথিত হয় যেরূপ আল্লাহ্ ﷻ সাহাবীদের সম্পর্কে বলেছেন যারা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হয়েছিলঃ
﴿ وَلَا عَلَى ٱلَّذِينَ إِذَا مَآ أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَآ أَجِدُ مَآ أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا۟ وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ ٱلدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا۟ مَا يُنفِقُونَ
“আর তাদেরও কোন অপরাধ নেই যারা আপনার কাছে এসেছিল যেন আপনি তাদের বাহন দেন। আপনি বলেছিলেন, আমার কাছে এমন কোন বাহন নেই যার উপর তোমাদের সওয়ার করাবো। তখন তারা ফিরে গেল আর তাদের চোখ দিয়ে
অশ্রু বিগলিত হচ্ছিল এ দুঃখে যে, তারা এমন কিছু পাচ্ছে না যা ব্যয় করতে পারে।”[3]
সুতরাং এটা তখনই হয় যখন জিহাদে অংশগ্রহন করার বিশুদ্ধ নিয়্যত অন্তরে থাকে। যে দুঃখ ও অনুতাপ সে অনুভব করে তা হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে না পারার কারণে। পক্ষান্তরে যখন জিহাদে অংশগ্রহনের পথ বন্ধ হয়ে যায় অথবা সে জিহাদের যাওয়ার যোগ্য নয়, সে ব্যক্তি এরূপ বলে ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে জিহাদের আবশ্যকতা থেকে রক্ষা করেছেন।’ সে আসলে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে জিহাদকে ঘৃণা করে এবং সে তা চায় না; সে মুনাফিকদের মত যারা জিহাদকে ঘৃণা করে এবং তারা (জিহাদের জন্য) অগ্রসর হয় ঘৃণা নিয়ে। যদি তারা সম্মুখে অগ্রসরও হয়, তারা সেনাবাহিনীকে নিরুৎসাহিত করে এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে
সাথে পলায়ন করে। আল্লাহর শপথ! উভয়ের মাঝে কি পরিষ্কার পার্থক্য যে, একদল জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে এবং কিতাল করতে অপারগ হলে ব্যথিত হৃদয়ে কাঁদে এবং অপরজন যুদ্ধে না যাওয়ার অযুহাত বা কারণ খুঁজে পেলে নিজের আনন্দ ও খুশি লুকিয়ে রাখে; আল্লাহ্ তা’য়ালা গোপনীয় ও অন্তরে লুকায়িত সব কিছুর খবরই জানেন। জিহাদে যাওয়ার নিয়্যত মানুষের মুনাফিকীর বৈশিষ্ট্যকে মুছে ফেলে যেরূপ ‘সহীহ্ মুসলিম’-এ আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ না করে মৃত্যু বরণ করে অথবা জিহাদ করার নিয়্যত না রেখে মৃত্যু বরণ করে তখন সে মুনাফিকীর একটি শাখার উপর মৃত্যু বরণ করে।”
শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়াহ্ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “…ছোট মুনাফিকী (নিফাক) হলো কাজের মাধ্যমে মুনাফিকী। উদাহরণস্বরূপ, কোন ব্যক্তি যখন কথা বলে মিথ্যা বলে অথবা ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে অথবা আমানত রাখলে খিয়ানত করে অথবা যখন ঝগড়া করে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে… আর জিহাদ ত্যাগ করা এর অন্তর্ভূক্ত কারণ এটা মুনাফিকদের একটি বৈশিষ্ট্য। রসূল ﷺ বলেছেন, “যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ না করে মৃত্যু বরণ করে অথবা জিহাদ করার নিয়্যত না রেখে মৃত্যু বরণ করে তখন সে মুনাফিকীর একটি শাখার উপর মৃত্যু বরণ করে।” এবং আল্লাহ্ সূরা ‘বারা’আ’(আত-তাওবা) নাযিল করেছেন যা ‘উম্মোচণকারী’ (আল-ফাদিহাহ) হিসাবেও পরিচিত, কারণ তা
মুনাফিকদের মুখোশ উম্মোচন করে দেয়। সুতরাং আল্লাহ্ এ সূরায় মুনাফিকদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন, এবং তাদের কাপুরুষতা এবং জিহাদ পরিত্যাগের বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাদের কৃপণতা ও সম্পদের প্রতি তাদের মোহের বর্ণনা দিযেছেন। তাদের দু’টি মারাত্মক ব্যাধি হল কাপুরুষতা ও কৃপণতা। আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ ءَامَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجٰهَدُوا بِأَمْوٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ اللَّهِ ۚ أُولٰٓئِكَ هُمُ الصّٰدِقُونَ
“প্রকৃত মু’মিন তো তারাই, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি, অতঃপর কখনও সন্দেহ করেনি এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে জিহাদ করেছে, তারাই সত্যবাদী লোক।”[4]
সুতরাং তিনি ঈমানদারদের সংজ্ঞা তাঁর উপর ঈমান আনা ও জিহাদ করার মাঝে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। আল্লাহ্ ﷻ আরও বলেছেনঃ
إِنَّمَا يَسْتَـْٔذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِى رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ * إِنَّمَا يَسْتَـْٔذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِى رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ
“যারা আল্লাহে ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে, তারা নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করার ব্যাপারে আপনার কাছে অব্যহতি লাভের অনুমতি প্রার্থনা করে না। এবং আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সম্বন্ধে ভাল জানেন। আপনার কাছে অব্যহতির অনুমতি প্রার্থনা করে কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান আনে না এবং যাদের চিত্ত সংশয়যুক্ত। ফলে তারা তো আপন সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।”[5]
আল্লাহ্ আমাদের জানাচ্ছেন যে ঈমানদাররা কখনও রসূলের কাছে জিহাদ থেকে অব্যহতি লাভের জন্য অনুরোধ করেনি বরং যারা ঈমানদার নয় তারাই এরূপ প্রার্থণা করেছিল। সুতরাং তার ব্যাপারে কী হবে, যে এটা (জিহাদ) আল্লাহর রসূল ﷺ -এর অনুমতি ছাড়াই বর্জন করে?” [6]
অতএব, হে আমার মুসলিম ভাইয়েরা! সাবধান হও! সাবধান হও! মুনাফিক হওয়া থেকে অথবা নিফাকী নিয়ে মৃত্যু বরণ করা থেকে। যারা নিজেরা জিহাদ করেনা অথবা মুজাহিদীনদের ভৎর্সনা করে অথবা তাদের উপর বিভিন্ন রকম নিন্দা করে; যেমনঃ তারা খুবই অসহিষ্ণু, উপদেশ গ্রহণ করে না, তাদেরকে আমরা বলবঃ
“হে তুমি যে আমাদের যুবকদের জিহাদের বিরুদ্ধে ভৎর্সনা কর, তোমার অপবাদ এবং বর্জনকে ফিরিয়ে রাখ
যে জান্নাতের বাগান ও এর উপাদান সমূহ কামনা করে এবং নিরবচ্ছিন্ন সাহাবাদের পথে চলছে সে কি অপবাদ যোগ্য?
যে এ জীবন এবং এর সারশূন্যতা পরিত্যাগ করেছে এবং উত্তপ্ত দৃঢ় সংকল্প নিয়ে গিয়েছে এবং সামনে এগিয়ে গিয়েছে সেকি অপবাদ যোগ্য?
যে তার জীবন আল্লাহর জন্য সোপর্দ করেছে, যার মাধ্যমে খুঁজেছে ফিরদাউস-সর্বোত্তম গন্তব্যস্থল, সে কি অপবাদ যোগ্য?
সুতরাং তোমার ভৎর্সনা হতে জিহাদ ও মুজাহিদীনদের রেহাই দাও
সাবধান হও! মুনাফিকীর বর্ণনার ব্যাপারে, সাবধান হও!
যে যুদ্ধ করে না অথবা যুদ্ধের ইচ্ছা পোষণ করে না এবং মৃত্যু বরণ করে, বরন করল এক শোচনীয় মৃত্যু।
নিশ্চয়ই আমাদের সম্মান রয়েছে জিহাদের রাস্তায় এবং এটা পরিত্যাগ করে আমরা আজ লাঞ্চিত এবং যাপন করেছি এক হীন জীবন।”
২. খালিছভাবে আল্লাহর নিকট শাহাদাত কামনা করাঃ
আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করতে হবে সততা, একনিষ্ঠতা এবং আন্তরিকতার সাথে। কারণ যে ইখলাছের (সততার) সাথে আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন, এমনকি যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যু বরণ করে; যেমনটি সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, আনাস বিন মালিক রা. বলেছেন যে, রসূল ﷺ বলেছেন, “যে ইখলাছের সাথে শাহাদাহর আকাঙ্খা করে, তাকে তা দেয়া হয়, যদিও সে তা অর্জন করেনি।” অন্য একটি বর্ণনায় আছে, “…আল্লাহ্ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন এমনকি যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যু বরণ করে।”
শাইখ আব্দুলাহ্ আয্যাম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “এ হাদীস দু’টির অর্থ হলো এই, যদি কেউ আল্লাহর কাছে ইখলাছের সাথে শাহাদাত চায় তাকে শহীদের পুরষ্কার দেয়া হয় যদিও সে নিজ বিছানায় (মৃত্যু বরণ করে)…।”
শাইখ আব্দুল্লাহ্ আয্যাম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) আরও বলেছেন, “…কিন্তু সততা বা নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের কামনা করার অর্থ হলো যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া।
আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
وَإِنْ أَحَدٌ مِّنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ٱسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّىٰ يَسْمَعَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ ثُمَّ أَبْلِغْهُ مَأْمَنَهُۥۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْلَمُونَ
“তারা বাহির হতে চাইলে (জিহাদের জন্য) নিশ্চয়ই তারা ইহার জন্য প্রস্তুতি নিত…।” [7]
যেহেতু আফগানিস্তানের জিহাদের ১০ বছর গত হয়েছে, এবং যখন সেখানে যাওয়ার রাস্তা নিরাপদ, নিশ্চিত এবং সীমানাসমূহ খোলা ছিল তথাপি যে পেশওয়ারের দিকে (জিহাদের জন্য) যায়নি, তার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, সে কি এটা ভেবে বসে আছে যে, সে ইখলাসের সাথে শাহাদাতের আকাঙ্খা করেছে? আপনারা কি দেখেননি সেই বেদুইনকে যে রসূল -কে বলেছিল, “আমি কি আপনাকে অনুসরণ করব এবং এখানে আঘাত প্রাপ্ত হব যাতে করে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি, এই বলে সে নিজ গর্দানে ইশারা করে?”
বেদুইনটি পরবর্তীতে গর্দানের যে অংশে সে ইশারা করেছিল সেখানে আঘাত প্রাপ্ত হয়। রসূল ﷺ বলেছিলেন, “সে আল্লাহর প্রতি সত্যবাদী ছিল, আল্লাহও তার প্রতি সত্যবাদী ছিলেন।”
শাহাদাতের সত্যিকারের আকাঙ্খা হলো এ রকম যে, তা কোন ব্যক্তিকে বিক্ষোভ বা যুদ্ধের ঝনঝনানির কাছে নিয়ে যায়। এই শাহাদাহ হচ্ছে তাদের বিপরীত যারা দ্বীনকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে হেয়ালিপনা করে অথবা অলস অবস্থায় বসে আছে এবং জিহাদের আহবানকারির আহবানে যারা সাড়া দিচ্ছে না। বরং তাদের (যাদের শাহাদার আকাঙ্খা আছে) জিহ্বা পুনরাবৃত্তি করে বলে,
“আমার রব! তোমার সাহায্যে আত্মাসমূহ জান্নাতে যায়, সুতরাং হে আমার ইলাহ, আমার রক্ত জিহাদে বহিয়ে দিন।
যেহেতু আমার পাপসমূহ আমাকে ছেয়ে ফেলেছে এবং আর কিছুই নেই শাহাদাহ্ ছাড়া যা সেগুলোকে পারে মুছে দিতে।
আমার রব! আমার রব! আমি শাহাদাত খুঁজে বেড়াই সুতরাং আপনার গুণাবলীর গুণে আমার অনুরোধটি গ্রাহ্য করুণ হে দয়াময়।”
সুতরাং আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হও এবং একনিষ্ঠ হয়ে যাও যেন তিনি তোমাকে তাঁর রাস্তায় শাহাদাহ্ দান করেন- শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে না যেয়ে জিহাদে যাওয়ার সংকল্পকে সুদৃঢ় কর, এবং জেনে রাখ যে, একনিষ্ঠ শাহাদাহ্ প্রার্থণাকারী হল সেই ব্যক্তি যে শাহাদাহ অর্জনের জন্য সম্ভাব্য সকল স্থান খুঁজে বেড়ায় এবং অনবরত তা অন্বেষন করে। সে এমন ব্যক্তি নয় যে ঘুমিয়ে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত শাহাদাহ্ তার কাছে এসে ধরা দেয়।
“তুমি সাফল্য কামনা কর, কিন্তু সে পথে চল না!
নিশ্চয়ই, কোন শুষ্ক মাটির উপর কোন জাহাজ চলতে পারে না।”
৩. নিজে জিহাদে যাওয়াঃ
নিজে থেকেই আল্লাহর পথে জিহাদে যাওয়া এবং এক্ষেত্রে আলসেমী বা দেরী না করা, কারণ জিহাদ ছেড়ে পিছনে পড়ে থাকা হল পরকালের উপরে দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সর্বোৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে প্রশংসনীয় পন্থা এবং এর শ্রেষ্ঠত্ব কারো কাছে গোপন নয়। ইহার শ্রেষ্ঠত্বের কথা কুরআন এবং সুন্নাহ এ উল্লেখ রয়েছে; স্বশরীরে জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং শহীদের ও শাহাদাতের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অনেক আয়াত রয়েছে যার পর্যালোচনা এই লেখনীকে আরো দীর্ঘ করে দিবে। কুরআনে সত্তরটির বেশী আয়াত রয়েছে জিহাদের উপর এবং সুন্নাহ্-এ হাদীসের আলিমগণ তাদের লেখার মধ্যে জিহাদ, এর নিয়ম এবং শ্রেষ্ঠত্বকে বিভিন্ন অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করেছেন।
যখন ‘জিহাদ’ শব্দটি উল্লেখ করা হয় তখন তা ক্বিতাল [8]-কেও বুঝায়।
ইবন রুশদ বলেছেন, “…যখন ‘জিহাদ’ শব্দটি উল্লেখিত হয়, এর অর্থ দাড়ায় স্বশরীরে তলোয়ার দিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আত্মসমর্পণ করে অথবা অপমানিত অবস্থায় নিজ হাতে জিযিয়া প্রদান করে…।”
সুতরাং কেউ এই শব্দ দ্বারা সাধারণ ভাবে এটা বুঝাতে পারবে না যে, এর অর্থ হল নফস্ -এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা (জিহাদ আন-নাফ্স) অথবা জিহ্বা দ্বারা জিহাদ করা অথবা কলম দ্বারা জিহাদ করা অথবা আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকা (দাওয়াহ্)। এটা সত্যি যে এই কাজগুলো হল ভাল আমল এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য কিন্তু ইসলামিক পরিভাষায় ‘জিহাদ’ দ্বারা এই অর্থগুলোকে বুঝায় না যদি না বিশেষ ভাবে সেই গুলোর উল্লেখ করা হয়।
সবচেয়ে ভাল আমলগুলোর একটি হলো ‘জিহাদ’। রসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল “মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?” তিনি ﷺ বললেন, “একজন ঈমানদার যে নিজের সম্পদ ও জান দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, “এরপর কে?” তিনি ﷺ বললেন, “পাহাড়ী উপত্যকায় বসবাসকারী ঈমানদার যে আল্লাহকে ভয় করে এবং তার অনিষ্ট থেকে মানুষকে রক্ষা করে।” [9]
তিনি ﷺ আরও বলেছেন, “নিশ্চয়ই, জান্নাতে একশত স্তর আছে যা আল্লাহ্ মুজাহিদীনদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন; প্রতিটি স্তরের মধ্যকার ব্যবধান হল আকাশ ও জমিনের ব্যবধানের ন্যায়, সুতরাং যদি তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থণা কর, তবে জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্য প্রার্থণা কর, কারণ সেটি হল জান্নাতের সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ স্তর, এবং এর উপর পরম করুণাময়ের আরশ এবং এ থেকে জান্নাতের নদীগুলো প্রবাহিত হয়।” [10]
তিনি ﷺ বলেছেন, “যার পা সমূহ আল্লাহর পথে (জিহাদে) ধূলিপূর্ণ হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন”[11]
তিনি ﷺ আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় উটের পিঠে যুদ্ধ করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় এবং নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়ার জন্য প্রার্থণা করে এবং অতঃপর মৃত্যু বরণ করে কিংবা নিহত হয়, তবে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আহত হয় বা আঘাত প্রাপ্ত হয়, পুনরুত্থানের দিবসে সেটি (আহত স্থান) জ্বলজ্বল করবে, সেটার রং হবে জাফরানের রঙের ন্যায় এবং এর ঘ্রাণ হবে মিশকের ঘ্রাণের ন্যায় এবং যার একটি যন্ত্রণাপূর্ণ ক্ষত রয়েছে যা থেকে রক্ত ক্ষরণ হয় আল্লাহর পথে প্রাপ্ত আঘাতের কারণে, তবে সে শহীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য সূচক প্রতীক লাভ করবে।”[12]
“জেনে রাখ যে, শ্রেষ্ঠতম কাজ হল কাফির ও পথভ্রষ্ঠ মানুষদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা এবংএটি আমার দয়ালু রবের নিকট সবচেয়ে প্রিয় যা আল-বুখারী হতে বর্ণিত
এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতে প্রস্তূত করে রেখেছেন সেখানকার অধিবাসীর জন্য হাজার হাজার স্তর
যেগুলোর মধ্যকার ব্যবধান হল আসমান ও জমীনের ব্যবধানের সমান।
এবং যে নিজের পা গুলো জিহাদে ধূলো-মলিন করল সে আমার রবের দ্বারা স্তব্ধ করা শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে,
এবং যে উটনীর পিঠে থেকে যুদ্ধ করে যুদ্ধের ঢাল স্বরূপ বা পশ্চাদভাগের রক্ষাকারী হিসেবে সে তার জন্যে জান্নাতের প্রতিদান ও পুরষ্কার অবধারিত করে নিয়েছে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শুধু আল্লাহর জন্য।
এবং শ্রেষ্ঠ জীবন হল নির্জন পার্বত্য উপত্ত্যকার অথবা তলোওয়ার এবং তীরের ছায়ার জীবন।
জিহাদের দ্বারা শত্রুরা ভীত হয় এবং বর্শার অগ্রভাগ দ্বারা পতাকা উত্তোলিত হয়
এবং মহৎ গুনের মূল হচ্ছে জিহাদ এবং কেউই তা পরিত্যাগ করে না যার ভাল বিচার শক্তি রয়েছে।
যে ব্যক্তি কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া পিছনে থেকে যায় সে কখনই ঐ ব্যক্তির সমান নয়, যে বিপদের ডাকে সাড়া দিয়ে সামনের দিকে ছুটে যায়,
অথবা যে দিনের বেলায় সিয়াম পালন করে এবং সারা রাত সালাতে দাঁড়িয়ে কাটায়। এই মানোন্নয়ন এবং অনুরাগ সাথে থাকে স্মরণ এবং পাঠের গ্রন্থ (আল-কুরআন)
এবং এরপর সেই দাসদের আর কোন পছন্দ নেই, কোন রকম হৃদয়ের প্রকম্পন অথবা সন্দেহ ব্যতিত আত্মসমর্পন করা ছাড়া
এবং জিহাদের পতাকা সামনে এগিয়ে যাবে যে স্থান থেকেই তুমি দাঁড়িয়ে যাও না কেন? সুতরাং এর সাথে লেগে থাক।
যুদ্ধ ও লড়াইয়ের মাঝে সুখ খুঁজে নাও এবং তুমি পুরষ্কার ও সফলতা লাভ করবে। এবং নিরুৎসাহকারী অথবা ছদ্দবেশী ইবাদাতকারী অথবা আলিমগণের কথার দ্বারা নিবৃত্ত হয়ে যেও না।
এবং স্মরণ কর সৌভাগ্যবান আলিমগণের সতর্কবাণীকে (আব্দুল্লাহ্ ইবন আল-মুবারাক, আল-ফুদাইল ইবন আইয়্যাদ) এবং তুমি বুঝতে পারবে যৌক্তিকতার ব্যপ্তি।”
৪. নিজের সম্পদ দ্বারা জিহাদ করাঃ
সম্পদ দ্বারা জিহাদ করার অর্থ হল তা আল্লাহর পথে মুজাহিদীনদের জন্য এবং জিহাদ করার জন্যে যা কিছুর প্রয়োজন তার জন্যে ব্যয় করা। শাইখ ইউসূফ আল-উয়াঈরী (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “কুরআনে জিহাদের আয়াতগুলোতে প্রায়শই সম্পদ দ্বারা জিহাদ করার কথা পুনরাবৃত্তি হয়েছে এবং স্বশরীরে জিহাদ করার আগে সম্পদের জিহাদ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কোনো ভাবেই এর অর্থ এই দাঁড়ায় না যে এটার (সম্পদের জিহাদ) মর্যাদা বেশী! বরং এটা এই ভাবে বর্ণনা করার কারণ হল সম্পদের জিহাদ হল এমন এক জিহাদ যার দ্বারা পুরো উম্মাহ অংশগ্রহন করতে পারে। মানুষের পর্যাপ্ততা তখনই হয়ে যায় যখন উম্মাহর মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক (জিহাদের জন্য) সামনে এগিয়ে আসে। কিন্তু মুজাহিদীনের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ পাওয়া যাবে না, যদি না পুরো উম্মাহ্ এ দায়িত্ব কাঁধে তুলে না নেয় এবং জিহাদের নিয়ন্ত্রক মুজাহিদীনদের জন্য তাদের সম্পদ ব্যয় না করে। সুতরাং সমাজে যারা নিজেদের জান দ্বারা জিহাদ করে তাদের তুলনায় সম্পদের মাধ্যমে যারা জিহাদ করে তারা সংখ্যায় অনেক বেশি হয়। এজন্য জিহাদের আয়াতগুলোতে প্রথমে সম্পদের মাধ্যমে জিহাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে কারণ উম্মাহর এ অংশের (পুরুষ এবং নারী, যুবক এবং বড়, অল্প বয়স্ক এবং বৃদ্ধ) বিশালতার কথা চিন্তা করে। আল্লাহ্ -ই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সম্পদের জিহাদের ক্ষেত্রে মু’মিনদের জন্য জরুরী নয় যে অনেক বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হবে। বরং, সে সেই পরিমাণ ব্যয় করে যার দ্বারা সে মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করতে পারে। কারণ সম্পদের জিহাদ যদি ফারদ-উল-আইন [13]হয়ে যায়, তবে লক্ষ্য হল নিজেকে সেই বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত করা যা তোমার কাঁধে বোঝাস্বরূপ ঝুলে আছে এবং সে পরিমাণ ব্যয় করা যা তোমাকে মহিমান্বিত আল্লাহর সম্মুখে দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত করবে বলে তুমি বিশ্বাস কর; যদিও তা পরিমাণে খুব অল্পও হয়। যেহেতু রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “এক দিরহাম একশ হাজার দিরহামের চেয়ে বেশী (পুরষ্কারের ক্ষেত্রে)।” সুতরাং তাকে ﷺ প্রশ্ন করা হলো, “হে আল্লাহর রসূল! এটা কিভাবে সম্ভব?” তিনি ﷺ বললেন, “এক ব্যক্তি যার দু’টি দিরহাম আছে আর সে তা থেকে একটি নেয় ও দান (সাদকা) করে দেয়, এবং অপর ব্যক্তি যার অনেক সম্পদ রয়েছে এবং সে তার বিশাল সম্পত্তি থেকে একশ হাজার দিরহাম নেয় এবং সাদাকা করে দেয়।” [14]
আল্লাহর শপথ! সাদাকা কখনই তার পরিমানের উপর ভিত্তি করে গ্রাহ্য হয় না, বরং এটি গ্রাহ্য হয় অবস্থার উপর ভিত্তি করে, যেমনটি আল্লাহর রসূল ﷺ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “কোন দানটি সর্বশ্রেষ্ঠ?” তিনি ﷺ বলেছেন, “সেই দান যা এমন ব্যক্তির প্রচেষ্টার মাধ্যমে আসে যার কাছে খুব সামান্যই (সম্পদ) রয়েছে।” [15]অর্থাৎ সে ব্যক্তির সাদাকা যার কাছে খুব বেশী সম্পদ নেই এবং ঐ সম্পদ তার ভীষন প্রয়োজন। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং দান কর যতটুকু তুমি দান করার ক্ষমতা রাখ, শুধু একবার নয় বরং জিহাদের জন্য তোমার আয়ের একটি অংশ নিয়মিত ভাবে সাদাকা কর এই ভেবে যে জিহাদ চলছে এবং মুজাহিদীনদের অর্থের প্রয়োজন।”
৫. যারা জিহাদে যাচ্ছে তাদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করাঃ
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা এবং মুজাহিদীনদের সাহায্য করার অন্যতম একটি মাধ্যম হল জিহাদে যাবার জন্য মুজাহিদীনদের প্রস্তুত করা এবং এর মর্যাদার ব্যাপারে অসংখ্য সহীহ্ হাদীসে রসূল ﷺ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।
“যে ব্যক্তি একজন মুজাহিদকে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদ করার জন্য) বেরিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত করে, প্রকৃতপক্ষে সেও জিহাদ করল এবং যে ব্যক্তি মুজাহিদীনদের পরিবারকে ভালোভাবে দেখাশোনা করে যাদেরকে সে ছেড়ে গিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সেও জিহাদ করল।” [16]
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের জন্য কোন মুজাহিদকে প্রস্তুত করল সে ব্যক্তি তার (মুজাহিদের) সমান পুরষ্কার পাবে কোন প্রকার হ্রাস (মুজাহিদের পুরুষ্কার একটুকুও কমবে না) ছাড়াই।” [17]
এটা কোন ব্যক্তির (যেমন অন্ধ, খোঁড়া) জন্য এক বিশাল সুযোগ যদি তাকে জিহাদ যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয় কারণ তার সুযোগ রয়েছে কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য প্রস্তুত করার এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার প্রতিদান লাভ করার। এতে কোন সন্দেহ নেই যে এটি হল শ্রেয় এবং মহৎ কাজের দরজাগুলোর মধ্যে একটি শক্তিশালী দরজা এবং সবচেয়ে উত্তম ক্ষেত্র যেখানে কারও সাদাকা এবং যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। আরো বলা যায়, এটি আল্লাহর রাস্তায় (ফি সাবিলিল্লাহ্) থাকার একটি মাধ্যম।
এটা নারীদের জন্যও একটি সুযোগ যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হতে পারছেন না কারণ এটা তার সামর্থ্যরে মধ্যে রয়েছে যে সে তার সম্পদ, গহনা এবং অন্যান্য যা কিছু আছে তা ব্যয় করে মুজাহিদদের প্রস্তুত করার মাধ্যমে এই অসামান্য পুরষ্কারের অংশীদার হওয়ার। ইসলামের প্রাথমিক যুগ ও পরবর্তী অন্যান্য যুগের নারীরা এক অসামান্য দায়িত্ব পালন করেছিল এবং আমরা এখানে বীর শহীদ কমান্ডার আবু জাফর আল-ইয়ামেনির (আল্লাহ তাঁর উপর রহমত বর্ষন করুন) বোনের ঘটনা উল্লেখ না করে পারলাম না যা তার জীবনীতে (Qoqaz.com ওয়েবসাইটে) উল্লেখ করা হয়েছে, “সে তার সব সোনা বিক্রি করে দিয়েছিলেন এবং তা থেকে প্রাপ্ত সমস্ত সম্পত্তি দিয়ে তাকে (আবু জাফর) (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত করেছিলেন।”
সুতরাং এই ধরনের নারীরা আজ কোথায়? আবার (এই ধরনের) পুরুষেরাও কোথায়?
অনুরূপভাবে, এক্ষেত্রে তাদের জন্যও সুযোগ রয়েছে যাদের নিজেদের সম্পদ দিয়ে সাহায্য করার ক্ষমতা নেই, কিন্তু সে অন্যদের কাছ থেকে তাদেরকে (মুজাহিদীনদের) দেওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে মুজাহিদদেরকে প্রস্তুত করতে পারে। রসূল ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজে সাহায্য করল, সে ঐ ব্যক্তির মত যে কাজটি সম্পাদন করল।”
৬. মুজাহিদীনগণ তাদের যে সকল পরিবারবর্গকে রেখে গেছেন তাদের দেখাশোনা করাঃ
তাদের প্রয়োজন ও বিষয়াদির দেখাশোনা করার ব্যাপারে পূর্বে উল্লেখিত হাদিসটির অবশিষ্ট অংশ আবারও বর্ণনা করছি, যেখানে রসূল ﷺবলেছেন, “…যে ব্যক্তি মুজাহিদীনদের রেখে যাওয়া পরিবারবর্গের ভালোভাবে দেখাশুনা করল, প্রকৃতপক্ষে, সে জিহাদ করল।”
তার এই মহৎ ও প্রশংসনীয় কাজের সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তা হল রসূল ﷺ-এর কথা, “যে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির পরিবারকে সুন্দরভাবে দেখাশুনা করল যে বেরিয়ে পড়েছে (জিহাদের জন্য), তবে ঐ ব্যক্তির পুরষ্কারের অর্ধেক সে পাবে।” [18]
মুজাহিদদের পরিবারের যত্ন নেওয়া, তাদের দেখাশুনা করা, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং তাদের চাহিদা পূরণ করা হল মুজাহিদদের অধিকার ঐ সকল লোকদের উপর যারা তাদের পরিবারের মত একই স্থানে বসবাস করছে, যেরূপ রসূল ﷺ-এর হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, “যারা (জিহাদে না গিয়ে) পিছনে পড়ে থাকে ঐ সকল লোকদের জন্য মুজাহিদীনদের স্ত্রীগণ এইরূপ নিষিদ্ধ যে রূপ তাদের মায়েরা তাদের জন্য নিষিদ্ধ। যারা পিছনে পড়ে থাকে, তাদের মধ্য থেকে যাকে মুজাহিদীনদের পরিবারের দেখাশুনা করার জন্য বিশ্বাস করা হয় এবং সে সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করে, তাকে বিচারের দিবসে মুজাহিদীনদের সামনে আনা হবে এবং বলা হবে যে ‘সে তোমার পরিবারের ব্যাপারে তোমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে, সুতরাং তুমি তার ভাল কাজগুলো থেকে যা ইচ্ছা নিয়ে নিতে পার।’ সুতরাং সে তার ইচ্ছে মত তার ভাল কাজ গুলো (আমলনামা) নিয়ে নিবে। সুতরাং তুমি কি মনে কর (এরপর তার ভাল আমলগুলি থেকে আর কি অবশিষ্ট থাকবে)?” [19]
তাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্কবাণী সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে যে জিহাদ করে না, অথবা কোন মুজাহিদকে প্রস্তুত করে না অথবা মুজাহিদদের ছেড়ে যাওয়া পরিবারের দেখাশুনা করে না। সুতরাং যদি মুসলিমরা জিহাদের সময়ে এই তিনটি বিষয়ের একটিও পালন না করে, তখন তারা আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়ে যায় যেরূপ রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি জিহাদ করে না, অথবা কোন মুজাহিদকে প্রস্তুত করে না, অথবা মুজাহিদদের ছেড়ে যাওয়া পরিবারবর্গকে সুষ্ঠুভাবে দেখাশুনা করেনা, তাহলে পুনরুত্থান দিবসের পূর্বে আল্লাহ্ তাকে আকস্মিক বিপর্যয় দ্বারা আঘাত করবেন।” [20]
শাইখ আবু বাসীর বলেছেন, “সুতরাং মু’মিনদের জন্য এটি বৈধ নয় যে সে এই তিনটির বাইরে অন্য কিছু করবে; হয় সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে অথবা সে মুজাহিদদের ছেড়ে যাওয়া পরিবারবর্গের সুষ্ঠু দেখাশুনা করবে, অথবা সে মুজাহিদদেরকে আল্লাহর পথে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করবে এবং যদি সে এই তিনটির মধ্যে একটিও না করে, তবে সে যেন পুনরুত্থান দিবসের পূর্বে তার পথে কোন আকস্মিক বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষা করে, যেই বিপর্যয়ের ব্যপ্তি এবং প্রকৃতি সম্পর্কে আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ অবহিত নয়!”
৭. শহীদের পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করাঃ
এর মধ্যে তাদের বিধবা স্ত্রীদের সাহায্য করা এবং তাদের সন্তানাদি ও আত্মীয় স্বজনের পরিচর্যা করা অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে জিহাদকে সহায়তা প্রদান করতে চাও এবং তাদেরকেও সহায়তা প্রদান করতে চাও যারা তোমাদের স্থলে জিহাদ সম্পাদন করেছে, তবে তোমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে শহীদের পরিবারকে ভরণ-পোষণ দাও, যেভাবে রসূল ﷺ মু’তার যুদ্ধে জাফর বিন আবি তালিবের শাহাদাতের কথা জানতে পেরে তার পরিবারের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন এবং তার নিজের পরিবারকে বলেছিলেন, “জাফরের পরিবারের জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত কর, কারণ যে (বিষাদ) ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।” [21]
ইবনে কাসীর (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন), রসূল ﷺ ও জাফর রা.-এর সন্তানদের কাহিনীটি আহমাদে বর্ণিত হাদীসের সাথে উল্লেখ করেছেন যেখানে আসমা বিনত উমাইস বলেছেন, “যখন জাফর রা. এবং তার সঙ্গীরা শাহাদাত বরণ করেন, তখন আল্লাহর রসূল ﷺ আমার ঘরে আসেন। ইতিমধ্যে আমি পশুর কিছু কাঁচা চামড়া পাকা করছিলাম, আটার খামীর তৈরী করছিলাম, এবং আমার বাচ্চাদের গোসল করিয়েছিলাম এবং সেগুলো ঘষেমেঝে পরিষ্কার করছিলাম (চামড়াগুলো)।” আল্লাহর রসূল ﷺ বললেন, “জাফরের সন্তানদের আমার কাছে নিয়ে আস।”
আমি যখন তাদেরকে তার কাছে নিয়ে আসলাম তখন তিনি তাদের ঘ্রান নিলেন এবং তাঁর দু’চোখ অশ্রু শিক্ত হয়ে পড়ল তখন আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল আমার পিতা এবং মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! কিসে আপনাকে কাঁদালো? আপনার কাছে কি জাফরের এবং তাঁর সঙ্গীদের কোন সংবাদ পৌঁছেছে?” তিনি ﷺ বললেন, “হ্যাঁ, তারা আজ শাহাদাত বরণ করেছে।” সুতরাং আমি উঠলাম এবং চিৎকার করে অন্য নারীদের কাছে ছুটে গেলাম, ফলে আল্লাহর রসূল ﷺ তার পরিবারকে বললেন, “জাফরের পরিবারকে উপেক্ষা কর না। তাদের জন্য কিছু খাবার তৈরী কর কেননা তারা তার শোকে আছন্ন।”
সুতরাং আসুন, আমরা আল্লাহর রসূল ﷺ-কে উৎকৃষ্ট উদাহরণ রূপে নেই এবং শহীদদের পরিবার, বিধবা স্ত্রী এবং সন্তানদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেই এবং তাদের সাহায্য করি। তাঁদের সন্তানদের সাহায্য করতে হবে এবং সমস্ত খারাপ ও ক্ষতিকর জিনিস থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে, যদি সে পুনরায় বিয়ে করতে চায় তবে তার বিধবা স্ত্রীকে একজন উপযুক্ত ব্যক্তির (যে ভরণ-পোষণ করতে পারবে) সাথে বিয়ে দিতে হবে, যেরূপ জাফর রা.-এর বিধবা স্ত্রী আসমা বিনত উমাইসকে রা., যার কথা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্ধারিত সময় (ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর) অতিক্রম হওয়ার পর আবু বকর আস-সিদ্দীক রা. সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং, এগুলো সবগুলোই হল আমাদের উপর শহীদের হক্ক বা অধিকার এবং এগুলো অনেক সহজ কাজ যেগুলোর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে অসামান্য পুরস্কার। এই শহীদগণ তাদের জীবন ও আত্মাকে উৎসর্গ করেছেন এই দ্বীনকে সাহায্য করতে এবং আল্লাহর কালিমাকে উঁচু করে তুলে ধরতে। সুতরাং কমপক্ষে যা আমরা তাদের জন্য করতে পারি তা হল তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের পরিবার, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। এর ফলে হয়ত আল্লাহ্ আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে দিবেন এবং আমাদেরকে শহীদদের দলে অন্তর্ভূক্ত হতে সুযোগ দিবেন।
৮. আহত এবং কারারুদ্ধ মুজাহিদীনদের পরিবারের দেখাশুনা করাঃ
জিহাদ-কে সহায়তা করা ও মুজাহিদীনদের সাহায্য করার পদ্ধতি সমূহের মধ্যে আরেকটি হল তাদের মধ্যকার কারারুদ্ধ এবং আহত মুজাহিদীনদের পরিবারের ভরণ-পোষণ করা,কারণ তারা নিজেরা তা (ভরণ-পোষণ) করার জন্য উপস্থিত নেই এবং তাদের পরিবারের সাহায্য
প্রয়োজন। সুতরাং তাদেরকে একা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং তাদের দেখাশুনা করা এবং তাদের বিষয়াদির খবরা-খবর নেয়া বাধ্যতামূলক, কারণ তাদের অবস্থাও ঠিক মুজাহিদ ও শহীদদের পরিবারের মত। কারাবন্দীদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত কারণ (কারাবন্দী) সন্তানের জন্য তাদের মানসিক যন্ত্রণা অনেক বেশী হয়। যখনই তারা তাকে (কারাবন্দী সন্তানকে) স্মরণ করে তখনই তাদের দুঃখ ও তাদের (কারাবন্দী) সন্তানের নিয়তি (ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে) জানার আকাঙ্খা বারবার পুনরুজ্জীবিত হয়। সুতরাং এটা খুবই জরুরী যে তাদেরকে সবর করতে ও ইসতিকামাত (অটল) থাকার জন্য বলা এবং আমরাও এই সংকটময় মূহূর্তে তাদের পাশে আছি তা জানিয়ে দেয়া। দেখা যায় যে, কারাবন্দী কিছু ভাইদের স্ত্রীরা যখন আশে-পাশের সমাজের চাপের সম্মুখীন হয়, তখন কিছু মূর্খরা তাদের স্বামীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করার মাধ্যমে তাদের উত্যক্ত করে এবং তাদের সুযোগের অপব্যবহার করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে এটা তেমন ব্যক্তির দ্বারাই সংঘটিত হয় যার কোন চরিত্র বা নৈতিকতা নেই। তাই কারাবন্দী ভাইদের স্ত্রীদের পাশে সাহায্যকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং অবলম্বন বা সমর্থনকারী হিসেবে এবং ধৈর্য্য ধরার সাহস দানকারী হিসেবে দাঁড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প নেই। এবং আল্লাহ্ তাঁর দাসকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকবেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকবে।
৯. মুজাহিদীনদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করাঃ
এতে কোন সন্দেহ নেই যে জিহাদের চালিকা শক্তি হল অর্থ যার মাধ্যমে জিহাদ এবং মুজাহিদীনরা সবচেয়ে বেশী উপকৃত হয়। উম্মাহর মধ্যে একদল লোক অথবা পুরো উম্মাহ্ অর্থ সংগ্রহ করে যুদ্ধে অবস্থানরত অগ্রগামী মুজাহিদীনদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর জিহাদে এই অর্থের প্রভাব কারও কাছেই অজানা নয়। এটাই বিশ্বের সকল কাফিরদেরকে হতভম্ব করে দিয়েছে যেহেতু তারা চেষ্টা করে আসছিল মুজাহিদীনদের অর্থের উৎসগুলোকে বন্ধ করতে এবং তাঁদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে যাঁরা তাঁদের (মুজাহিদীনদের) সহযোগিতা করছে। তা সত্ত্বেও মুজাহিদীনরা তাঁদের পথের উপর অবিচল; কারণ “… তাঁরা তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না যারা তাঁদের বিরোধিতা করে অথবা বিশ্বাসঘাতকতা করে।”
যখন জিহাদের ডাক দেয়া হয় এবং অন্যদেরকে এই (জিহাদের) জন্য ব্যয় করতে উৎসাহিত করা হয় তার মানে এই নয় যে, এটি একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান যা প্রত্যেক মানুষের কাছে দানের বাক্স পাঠাবে অর্থ সংগ্রহ করার জন্য। কারণ এটি হল একটি কার্যক্ষেত্র যা প্রথমত (আল্লাহর পর) স্বয়ং এর উপরই নির্ভর করে। যখন তা সৎকর্মশীলদের দান গ্রহন করে, তার পূর্বেই দাওয়াহ ও জিহাদের ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যাপারে তাদের সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ তাদের সহানুভূতি ও সদাচরণ মাধ্যমে। সুতরাং এটা আপোষ করার জন্য তারা নিজেকে নিচে নামায় না যা তার ঈমানকে কলঙ্কিত ও তাদের জিহাদকে বাধাগ্রস্থ করবে। এর মাধ্যমে তারা রসূলুল্লাহ্ ﷺ যেভাবে সাহাবাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার জন্য উৎসাহ দিতেন তার উদাহরণকে অনুসরণ করছে এবং এই বরকতপূর্ণ দান দ্বারা মুজাহিদদের প্রস্তুত করছে।
সম্মিলিত ভাবে দায়িত্ব পালন করা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে সহযোগিতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত দেখা যায় মু’মিনদের মধ্যে যারা রসুল ﷺ এর সকল যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতেন। এর উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হল তাবুকের যুদ্ধ, যেখানে মুসলিমরা ছূটে আসে (আল্লাহর রাস্তায় দান করার জন্য) এবং তারা সম্পদ ও সাদাকা প্রদান করে এবং অগ্রগামী নারী ও পুরুষগণ তাতে অংশ গ্রহণ করেন।
মুজাহিদীনদের জন্য এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে যে সে তার সন্তানদের গড়ে তুলবে পুনরুজ্জীবিত ইসলামিক ঐক্যের উপর যা মুসলিমদের জন্য মুক্ত হস্তে দান, সাহায্য ও ত্যাগ করা, আল্লাহর কালিমাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন উৎসর্গ করা এবং সেই কাজে প্রতিযোগিতা করতে শিখায়। নিশ্চয়ই, এটি হল প্রকৃত প্রতিপালনের শিক্ষাদীক্ষা; এই শিক্ষাদীক্ষা হচ্ছে সততা ও ন্যায়পরায়ণতাতে বৈশিষ্ট্যময়। এমন কোন মুসলিম নেই, যাদেরকে এই জিহাদের পরিবেশে লালন-পালন করে পর্যাপ্ত শিক্ষা-দীক্ষা দেয়া হয়েছে, অথচ সে সঞ্চয়কৃত শেষ সম্বলটুকু ব্যয় করতে কার্পণ্য করবে এবং সে তার মুজাহিদ ভাইয়ের সাহায্য ও সহযোগিতার আহবানে সাড়া দিতে দ্বিধাগ্রস্তহবে।
“হে আমার মুসলিম ভাই, নিশ্চয়ই ন্যায়পরায়ণতা হল এমন কিছু যা পুনরুত্থান দিবসে তোমাকে আনন্দিত করবে।
সুতরাং নিজেকে নিয়োজিত কর যা কিছু উত্তম ও প্রতিযোগিতা কর ত্যাগের ক্ষেত্রে যে জন্য বিচার দিবসে, আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করবেন।”
শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি (আল্লাহ্ তার প্রতি অনুগ্রহ করুন) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তির কাছে ব্যয় করার মত কোন অর্থ বা সম্পদ নেই, তার উচিৎ যাদের সম্পদ রয়েছে সেই সব নারী, শিশু বা বিশেষ কোন ব্যক্তি বা নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে থেকে অর্থ সংগ্রহ করা। এবং যে ব্যক্তি অর্থ সংগ্রহ করতেও অপারগ, তার পক্ষে অন্তত এতটুকু তো সম্ভব যে সে অন্যদেরকে অর্থ দিয়ে জিহাদ করার উৎসাহ দেবে এবং মুসলিমদের অনুরোধ করবে যখন তাদেরকে দান করার জন্য আহবান করা হয় তখন যেন তারা সম্পদের ব্যাপারে কৃপণতা না করে ।”
মুজাহিদীনদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার বিভিন্ন প্রকার পন্থা আছে যার সবগুলো এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়, কিন্তু তোমার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল অর্থ সংগ্রহের দৃঢ় সংকল্প। যদি এটা তোমার কাছে সত্যিকার অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং যদি তুমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হও তবে তা করার জন্য অগণিত ও অসংখ্য পথ তোমার সামনে পাবে। তুমি সক্ষম হবে ক্রুসের সাহায্যকারী, মুজাহিদীনদের শত্রু মুনাফিক, ক্রুসেডারদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে।
আমার কিছু আসে যায় না যদিও আমার পথ কঠিন হয়ে পরে এবং প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ হয়ে যায়।
অতঃপর তোমাকে নিশ্চিতভাবে এটা জানতে হবে যে এই ব্যাপারটি অবশ্যকরণীয় এবং তোমার উপর তোমার ভাইয়ের অধিকার এবং এটা তোমার পক্ষ থেকে কোন অনুগ্রহ না। বরং এই অনুগ্রহ মহিমান্বিত আল্লাহর পক্ষ থেকে; তিনি সেই স্বত্তা যিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কারণ তিনি তোমাকে পথ দেখিয়েছেন এবং তোমাকে সুযোগ দিয়েছেন যুদ্ধে অবস্থানকারী অগ্রগামী মুজাহিদীনদের সাহায্য করার জন্য। কত মানুষই তার এই রহমত থেকে বঞ্চিত এবং কত কম সংখ্যককেই না তিনি এই কাজের জন্য পছন্দ করেছেন!
হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এই অল্প সংখ্যকদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করুন ……।
আসুন, আমরা স্মরণ করি মহিমান্বিত আল্লাহর কথাঃ
هَٰٓأَنتُمْ هَٰٓؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنفِقُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبْخَلُۖ وَمَن يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِۦۚ وَٱللَّهُ ٱلْغَنِىُّ وَأَنتُمُ ٱلْفُقَرَآءُۚ وَإِن تَتَوَلَّوْا۟ يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓا۟ أَمْثَٰلَكُم
“লক্ষ্য কর, তোমরাইতো তারা যাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার জন্য বলা হচ্ছে অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছো। যারা কার্পন্য করে তারা তো কার্পন্য করে নিজেরই প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাবর্তী করবেন; তারা তোমাদের মত হবে না।” [22]
আসুন, আমরা আমাদের প্রিয় মুহাম্মাদ ﷺ-এর কথাগুলি মাথায় রাখি “যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজে সহযোগিতা করল, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে তা সম্পন্ন করল।” এবং “হে আল্লাহ! তাকে উপযুক্ত প্রতিদান দিন যে মুক্ত হস্তে ব্যয় করে এবং তাকে নিশ্চিহ্ন করে দিন যে কৃপণ।”
১০. তাদেরকে যাকাত প্রদান করাঃ
আমাদের সম্পত্তির ওপর আল্লাহর হক হল যাকাত এবং বর্তমানে যাকাত যাদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তারা হলেন মুজাহিদীন। আর তারাই এটার সবচেয়ে যোগ্য কারণ তারাই সত্যিকার অর্থে আল্লাহর রাস্তায় (আছেন) এবং তারা বিত্তহীন, মুসাফির প্রভৃতি। শাইখ আব্দুল্লাহ্ আয্যাম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেনঃ “একবার ইবন তাইমিয়্যার (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল অর্থ সংকটের ব্যাপারে যা ক্ষুধার্তদের খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজন পাশাপাশি জিহাদের জন্যও প্রয়োজন, যার সংকটে জিহাদ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তিনি জবাব দিলেনঃ ‘আমরা জিহাদকে অগ্রাধিকার দেই যদিও ক্ষুধার্তরা মৃত্যু বরণ করে, যেরূপ হয়ে থাকে মানব ঢালের ক্ষেত্রে (যে ক্ষেত্রে কুফ্ফারদেরকে আক্রমণ করতে হবে যদিও তারা মুসলিমদেরকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এই আক্রমনের ফলে সেই মুসলিমরা হয়ত অনিচ্ছাকৃত ভাবে মারা যেতে পারে) এবং এ বিষয়টি আমাদের ক্ষেত্রে আরো বেশী প্রযোজ্য (কিছু মুসলিমের মৃত্যু সত্ত্বেও বিরতিহীন ভাবে জিহাদ চালিয়ে যাওয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া)। এটার কারণ মানব ঢালের ক্ষেত্রে, আমরা তাদেরকে আমাদের কর্ম দ্বারা হত্যা করছি, পক্ষান্তরে (তাদেরকে যাকাত দেয়া না দেয়ার কারণে যদি তারা ক্ষুধায় মারা যায়) তারা আল্লাহর হুকুমে মারা যাচ্ছে।’”
আল কুরতুবী (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেনঃ “আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে যাকাত (বাইতুল মালে) প্রদানের পরে মুসলিমদের যদি কোন প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন সেই প্রয়োজনে সম্পদ ব্যয় করা তাদের উপর ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক)।”
ইমাম মালিক (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেনঃ “এটা মানুষের (মুসলিম) উপর বাধ্যতামূলক যে তারা তাদের বন্দীদের মুক্তিপণ আদায় করবে যদিও তাতে তাদের সমস্ত সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং এই বিষয়ে (সবার) ঐকমত্য রয়েছে।”
শাইখ আব্দুল্লাহ্ আয্যাম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেনঃ “দ্বীনের সংরক্ষণকে (মুসলিমদের) জীবনের সংরক্ষণের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং জীবন সংরক্ষণকে প্রাধান্য দেওয়া হয় সম্পদ সংরক্ষণের উপর। সম্পদশালীদের সম্পদ কখনই মুজাহিদীনদের রক্তের চেয়ে মূল্যবান নয়, সুতরাং সম্পদশালীদের উচিত সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহর বিধানের দিকে মনোযোগ দেয়া। যখন জিহাদ এবং মুসলিমদের দ্বীন ও ভূমি সম্ভাব্য ধ্বংসের সম্মুখীন হওয়া থেকে রক্ষার জন্য অর্থের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন; তখন সম্পদশালীরা ভোগবিলাসে লিপ্ত রয়েছে। যদি সম্পদশালীরা এক দিনের জন্য তাদের ভোগবিলাস থেকে বিরত থাকত এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাদের সম্পদ নষ্ট করা থেকে নিজেদের হাতগুলো সংযত রেখে তা মুজাহিদীনদের জন্য পাঠাতো যারা শীতে মারা যাচ্ছেন, যাদের পাগুলো তীব্র ঠান্ডায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে এবং নিজেদেরকে প্রতিপালন করার জন্যে যাদের কোন সহায়-সম্বল নেই অথবা তাঁদের রক্ত ঝরা বন্ধ করার জন্য, আমি বলি, যদি সম্পদশালীরা তাদের একদিন ব্যয়ের অর্থটুকু আফগান মুজাহিদীনদের জন্য ব্যয় করতো, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় তাদের সম্পদ জিহাদে চূড়ান্ত বিজয়কে তীব্র বেগে ধাবিত করতো।”
মুজাহিদীনদের যাকাত প্রদান করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক কারণ এটা আমাদের সম্পদের উপর আল্লাহর হক এবং শাইখ মুহাম্মাদ বিন উছাইমিন (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) এবং শাইখ আব্দুল্লাহ্ বিন জিব্রীন (আল্লাহ্ তাকে হিফাযত করুন) বলেছেনঃ “কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগেই যাকাত দিয়ে দেয়া অনুমতি রয়েছে যদি তা মুজাহিদীনদের এবং (জিহাদের ভূমিতে) নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর হয়।”
এতে কোন সন্দেহ নেই যে যাকাতের শুধুমাত্র এক-চুতর্থাংশ যদি জিহাদ ও মুজাহিদীনদের জন্য ব্যয় করা হত তবে আমরা এক অসামান্য ফলাফল দেখতে পেতাম এবং তা পৃথিবীর সকল মুজাহিদীনদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য যথেষ্ট হত। যদি তুমি কিছু মানুষকে বলো ‘রাফিদাহ্’ (ইরাক,ইরান ও অন্যান্য এলাকার শিয়া)-রা তাদের বিশ্বাসের (দ্বীনের) জন্য কি পরিমানে ব্যয় ও উৎসর্গ করে তাহলে তুমি নিম্নের উত্তর দু’টি,পাবে যেঃ
১. তাঁদেরকে সাহায্য করার জন্য রাষ্ট্র রয়েছে এবং
২. তাঁরা তাঁদের নেতাদেরকে ‘খুমুস’ [23]প্রদান করে।
আমি এর উত্তরে বলিঃ আমরা আহলুস-সুন্নাহ -গণ জিহাদের অর্থায়নের জন্য কোন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বা ‘খুমুসের’ অংশ চাচ্ছিনা । বরং আমরা শুধুমাত্র যাকাতের এক চুতার্থাংশ চাচ্ছি যারমাধ্যমে এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হবে ও সমগ্র পৃথিবীর মুজাহিদিনদের জন্য যথেষ্ট হবে। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুনঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামিক ইমারাত নির্মানের জন্য আপনার যাকাতের কতটুকু ব্যবহৃত হয়েছে; যখন তালিবানদের স্থাপিত নতুন ইসলামিক রাষ্ট্রের মুসলিমদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও সে মুহুর্তে যখন আমীর উল-মু’মিনীন আল মুল্লা মুহাম্মাদ উমার (আল্লাহ্ তাঁকে হিফাজত করুন) গজনীতে মুজাহিদীনদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারলেন, তিনি মুসলিমদের বায়তুল মালের তত্ত্বাবধায়ককে জিজ্ঞেস করলেন যে আমাদের কত অর্থ জমা আছে। তাঁকে জানানো হলো যে মাত্র তিন লক্ষ ($ ৩০০,০০০) ডলার রয়েছে। তখন তিনি তত্ত্বাবধায়কে তা থেকে এক তৃতীয়াংশ চেচনিয়ার মুজাহিদীনদেরকে প্রদান করতে আদেশ দিলেন!!
দেখুন! একটি পূর্ণাঙ্গ মুসলিম রাষ্ট্রের সঞ্চায়িত সম্পদের পরিমান হলো মাত্র তিন লক্ষ ($ ৩০০,০০০) ডলার যেখানে মুসলিমদের যাকাতের অর্থ এখানে ওখানে ব্যয় করা হয়েছে, যেখানে ব্যয় করার কথা সেখানে ব্যয় না করে অপ্রয়োজনীয়ভাবে খরচ করা হয়েছে! পক্ষান্তরে যখন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ক্রুসেড (ধর্মযুদ্ধ) শুরু হয়, তখন সেই ইসলামিক রাষ্ট্রে কোষাগারে সংরক্ষিত ছিল মাত্র ($ ৭০,০০০) ডলার!!
হে আল্লাহ্! কতই না আশ্চর্যজনক এই আহলুস সুন্নাহগণ! এমন কি তাদের সম্পত্তির যাকাত সঠিক খাতে ব্যয় করা হচ্ছে না। আল্লাহ্ হলেন সমস্ত সাহায্যের উৎস এবং তাঁর উপরই সমস্ত নির্ভরশীলতা।
১১. আহতদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করাঃ
…এটা করা যায় তাদের জন্য ঔষধ ক্রয় করে, তাদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করার মাধ্যমে, তাদের চিকিৎসার জন্য অর্থ প্রদান করে বা তাদের চিকিৎসকের বেতন প্রদানের মাধ্যমে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে এই আহতদের বড় একটা অংশ হচ্ছেন মুজাহিদীনরা।সুতরাং যখন তাদের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করা হয়, তখন তা তাদের জন্য একটি বিশাল সাহায্য। নিম্নোক্ত মানুষের কাছে এই সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়ঃ
- চিকিৎসকগণ ও ফার্মাসিষ্ট যাদের আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে;
- যারা এমন স্থানে অথবা আশে পাশে বসবাস করে যেখানে যুদ্ধ চলছে; তারা এমন অনেক কিছু করতে সক্ষম যা অন্যদের দ্বারা সম্ভব নয়, কারণ তারা ঐ সকল আহতদের স্থানে যেতে সক্ষম এবং চিকিৎসা দিতে পারেন।
- যাদের কাছে আহতরা অন্য স্থান থেকে আসে তাদের উচিৎ অবশ্যই প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা এবং আনুসাঙ্গিক সকল বিল পরিশোধ করা। অনুরূপভাবে, এটা সাধারণ ভাবে সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে যারা মুজাহিদীনদের জন্য ব্যয় করার ক্ষমতা রাখেন তাদের উচিত আহত ও আঘাত প্রাপ্তদের জন্য ব্যয় করা।
১২. মুজাহিদীনদের প্রশংসা করা, তাঁদের কাজের যৌক্তিকতা তুলে ধরা এবং মানুষদেরকে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার দিকে আহবান করাঃ
জিহাদ ও মুজাহিদীনদের সাহায্যের অপর পদ্ধতিটি হল মুজাহিদীনদের প্রশংসা করা, তাদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো, তাঁদের কাজের প্রশংসা করা এবং তাঁদের ঘটনাগুলো বর্ণনা করা এবং দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে যে সব অলৌকিক ঘটনা ও বিজয় সংঘটিত হয়েছে তা প্রচার করা। এর মাধ্যমে অন্তর পুনরুজ্জীবিত এবং অতীতের মর্যাদা ও গৌরব স্মরন হয়। মুজাহিদীনরা তাঁদের পবিত্র রক্ত, অঙ্গপ্রতঙ্গ, এবং স্বচ্ছ ও পরিশুদ্ধ আত্মা উৎস্বর্গ করেছেন যা কলমের কালিকে ম্লান করে দিয়েছে।
প্রতিদিন, চলছে জান্নাতের কাফিলায় শহীদগণ যিনি সর্বজ্ঞ তিনি তাঁদের উপর সন্তুষ্ট
যা তাঁরা করে গেছেন তা কিভাবে আমি বর্ণনা করি? কথাগুলি থেমে গেছে আর কলমগুলি শুকিয়ে গেছে।
তাঁদের কাহিনীগুলো বর্ণনার মাধ্যমে মানুষকে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার প্রতি আহবান করা যেন তারা রসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর দেখানো পথে চলতে পারে। আপনার জন্য উত্তম আর কি হতে পারে যে আপনি এক উম্মাহর মুজাহিদীনদের উদাহরণ প্রদান করছেন যাঁরা দ্বীনের পতাকাকে তুলে ধরার জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন এবং এই জীবনের (দুনিয়ার) সুখ-স্বাচ্ছন্দের ব্যাপারে তাঁদের কোন লোভ-লালসা ছিল না।
উম্মাহর জানা উচিত যে জিহাদ, মুজাহিদীন ও শহীদদের ইতিহাস কোন বিছিন্ন ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। বরং তা এই মহান উম্মাহর ইতিহাসের ধারাবাহিকতারই অংশ যার সূচনা হয়েছিল মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর মহান সাহাবাদের দ্বারা। তা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে তাদের মাধ্যমে যাঁরা তাঁদের পদাংঙ্ক অনুসরণ করেছে।
যে ব্যক্তি মুজাহিদীনদের কাফিলায় অংশ গ্রহণ করে, প্রকৃত ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সে পথভ্রষ্ট নয় বরং সে সেই ইসলামের অনুসারী যেই ইসলাম নিয়ে রসূল ﷺ এসেছিলেন। বরং সে তার নিজের পথই পাড়ি দিচ্ছেন। যখন কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করে, কেন বর্তমানের আলিমগণ জিহাদের জন্য বের হয় না এবং কেন আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে না, তখন আমরা তাকে বলিঃ (আমাদের) আদর্শ হল মুহাম্মাদ ﷺ; তারা নয় যারা এই দুনিয়ার জীবনের প্রতি আসক্ত এবং নিজেদেরকে দুনিয়ার কাজে ব্যস্ত রেখেছে। তাদরেকে যে নাম বা পদবী দ্বারা সম্বোধন করা হোক না কেন এতে আমাদের কিছুই আসে যায় না।
তারা বলেছিলঃ “আলিম বা তিলাওয়াতকারীদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যার পদাংঙ্ক অনুসরণ করা যায়?”
আমি বলিঃ “রসূল মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর সাহাবাগণ; জিহাদের ব্যাপারে তারা ছিলেন অনড়।
নিশ্চয়ই, আমার আদর্শ হলেন ইবন আল-ওয়ালীদ এবং মুসআব এবং ইবন আয-যুবায়ব এবং বাকি আনসারগণ।”
তারা বলেঃ “তোমার পথে ছড়িয়ে আছে দুর্ভোগ সুতরাং, কেন তুমি এমন ঝুঁকিপূর্ণ জীবন খুঁজে বেড়াও?”
আমি বলিঃ দূর্ভোগের পথই হলো আমাদের জান্নাতের পথ!! আর ভোগ-বিলাস তা হল আগুনের (জাহান্নমের) পথ।”
সুতরাং জনগণ এবং এই উম্মাহকে জীবনের আদর্শ হিসেবে মুজাহিদীনদেরকে গ্রহণ করার জন্য আহবান করা অত্যাবশ্যক যাতে করে উম্মাহ্ তার অতীতের উজ্জ্বল পথে ফিরে পেতে পারে।
১৩. মুজাহিদীনদের অনুপ্রেরণা দান করা এবং তাঁদেরকে (জিহাদ) চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করাঃ
কোন সন্দেহ নেই যে গাদ্দার (বিশ্বাসঘাতক) ও প্রত্যাখানকারীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা মুজাহিদীনদের মনোবলের উপর (নেতিবাচক) প্রভাব ফেলে। তারপরও তা তাঁদের দমাতে পারে না কারণ রসূল ق বলেছেন, “…. তাঁরা তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না যারা তাঁদের বিরোধীতা করবে বা গাদ্দারি করবে।” তবে এটা খুবই প্রয়োজন যে মুজাহিদীনদের উৎসাহিত করা এবং তাদের সাথে থাকা এবং তাদেরকে সহায়তা করা এবং তাঁদেরকে আশ্বস্ত করা যে শত্রুদের বিরুদ্ধে সর্ব অবস্থায়, সবখানে আমরা তাঁদের সাথে আছি। অনুরূপভাবে, আমরা অবশ্যই তাঁদেরকে উৎসাহিত করব জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এবং এই ব্যাপারে ধৈর্য্য ধারণ করার জন্য যত বিপদ-আপদই আসুক না কেন। সুতরাং এটা হচ্ছে নৈতিক সহযোগিতার সর্বোচ্চ পর্যায় যা আমরা মুজাহিদীনদের দিতে পারি এবং হয়ত এ জন্য আমাদেরকে আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন। বর্তমান সময়ে মুজাহিদীনদের কাছে এটার প্রয়োজনীয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে যা তাঁদের সিদ্ধান্তকে শক্তিশালী করবে, কারণ এখন
প্রতারক এবং সত্যের সাথে যারা মিথ্যার সংমিশ্রন ঘটায় তাদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে । (লা হাওলা ও’য়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) মহান আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনই (কুউয়া) শক্তি নেই।
রসূলুল্লাহ্ ﷺ সত্যই বলে গিয়েছিলেন,
“তোমাদের পর এমন দিন আসবে যখন সৎকর্মশীলদের ধৈর্য্যের পুরস্কার তোমাদের (সাহাবাগণের) পঞ্চাশ জনের সমান হবে। কারণ তোমাদের পাশে এমন অনেকে আছেন যারা তোমাদেরকে ভাল কাজে উৎসাহিত করে এবং তারা তাদের পাশে এমন কাউকে পাবে না যারা তাদেরকে ভাল কাজে উৎসাহিত করবে।”
সুতরাং আসুন আমরা তাদেরই একজন হই যাঁরা মুজাহিদীনদের উৎসাহিত করে।
দেওয়ার মত তোমার কাছে কোন অশ্ব নেই বা নেই কোন সম্পদ।
সুতরাং, জিহবার দ্বারা সাহায্য কর যদি পরিস্থিতি (শারীরিকভাবে সাহায্য) করতে না দেয়।
১৪. মুজাহিদীনদের পক্ষে কথা বলা এবং তাদের সমর্থন দেয়াঃ
আবু আদ্-দারদা রা. থেকে আত্-তিরমিযী বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্মানকে রক্ষা করে, পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ্ তার সামনে থেকে আগুন সরিয়ে দিবেন।”
এবং এটি সমস্ত উম্মাহর উপর মুজাহিদীনদের একটি অধিকার। মুজাহিদীনদের সম্মানহানির ব্যাপারে আমাদের খুবই সর্তক থাকতে হবে, এমন কিছু প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে যা তাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করে এবং তাঁদের ভুল ক্রুটি খোঁজা ও তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। বরং বর্তমান পরিস্থিতি ও সময়ে যা আমাদের জন্য অবশ্যকরণীয় তা হল তাদের পক্ষে দাঁড়ানো, তাদের সম্মানকে রক্ষা করা, তাঁদের ভুল ক্রুটি ঢেকে রাখা এবং যারা তাঁদের ক্ষতি করতে চায় অথবা এমন কিছু প্রচার করতে চায় যা তাঁদের ক্ষতির কারণ, তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা। এখানে আমি আমার ভাইদের ‘আস-শারক আল-আওসাত’ পত্রিকাটি এবং এই ধরনের অন্যান্য পত্রিকাগুলো বর্জন করার জন্য উৎসাহিত করছি কারণ তা উম্মাহ ও মুজাহিদীনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং তাঁদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা এবং তাঁদের ব্যাপারে মিথ্যা কথা প্রচার করা এবং উম্মাহর নৈতিকতাকে ধ্বংস করার মাধ্যমে ইহুদী-ক্রুসেডার মিত্রদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করছে। সুতরাং এর উৎস ও কর্ম পদ্ধতি উভয় দিক থেকেই এটা শয়তানের পত্রিকা এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, এটা কখনই হালাল নয় যে এই ধরনের পত্রিকার জন্য কাজ করা অথবা এমন কোন প্রচার মাধ্যমে কাজ করা যা আল্লাহ্, তাঁর রসূল এবং ঈমানদারদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করছে। এবং আমাদের জানা উচিত মুজাহিদীন ভাইদের ব্যাপারে আমাদের ভূমিকা কি হবে। আল্লাহ তা’য়ালার বাণীতে বর্ণিত হয়েছেঃ
وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلْإِيمَٰنِ وَلَا تَجْعَلْ فِى قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
“আর যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলেঃ “হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং আমাদের ভাইয়েরা যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছেন, তাদেরকেও ক্ষমা কর এবং মু’মিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রাখিও না। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আপনি বড় স্নেহশীল, পরম দয়ালু।” [24]
শাইখ ইউসূফ আল-উয়াইরী (রহীমাহুল্লাহ) বলেছেন, “জিহবা দ্বারা জিহাদ করার একটি উপায় হল ইসলামের বিরুদ্ধে শুরু করা এই ক্রুসেডের বাস্তবতা প্রকাশ করে দেওয়া এবং মুজাহিদীনদের সম্মানকে রক্ষা করা এবং এটা করতে হবে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে এবং যেখানে সাধারন মানুষ সমাগম হয় সেখানে অর্থাৎ মসজিদে, কর্মস্থলে এবং শিক্ষাঙ্গনে। সুতরাং এটা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যই কর্তব্য তার সাধ্য অনুযায়ী জিহ্বার জিহাদ চালিয়ে যাওয়া এবং জিহ্বা দ্বারা জিহাদ করার ক্ষেত্রে কোনই শর্ত নেই। বরং এটা আমাদের দ্বায়িত্ব মানুষকে জানানো এবং স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করা যে প্রত্যেকটি কথার মাধ্যমে ক্রুসেডারদের মুখোস খুলে দেওয়া, তাদের প্রতিহত করা এবং মুজাহিদীনদের সমর্থন করা। আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন।”
তিনি (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি ক্ষমাশীল হোন) আরও বলেছেন, যারা চুপ থেকেই সন্তুষ্ট, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ও তাদের মতো লোকদেরকে বলছেনঃ
هَٰٓأَنتُمْ هَٰٓؤُلَآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنفِقُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبْخَلُۖ وَمَن يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِۦۚ وَٱللَّهُ ٱلْغَنِىُّ وَأَنتُمُ ٱلْفُقَرَآءُۚ وَإِن تَتَوَلَّوْا۟ يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓا۟ أَمْثَٰلَكُم
“…যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তারা তোমাদের মত হবে না।” [25]
মহা মহিমান্বিত ও প্রশংসিত আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে এরকম প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির সময় নীরব থাকে যা আবু দাউদ ও আহমাদে জাবীর বিন আব্দুল্লাহ্ ও আবু তালহাহ্ বিন সাহল আল-আনসারী (আল্লাহ্ তাঁদের দু’জনের প্রতি সন্তুষ্ট হোন) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, “এমন কোন মুসলিম নেই যে অপর মুসলিমের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এমন পরিস্থিতিতে যখন তার সম্মান হানি করা হয় বা তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়, তাহলে তাকে প্রবল শক্তিশালী, মহিমান্বিত আল্লাহ্ ত্যাগ করবেন এমন পরিস্থিতিতে যখন সে (আল্লাহর) সাহায্য পেতে পছন্দ করবে। এবং এমন কোন মুসলিম নেই যে তার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করে এমন পরিস্থিতিতে যখন তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয় বা তার সম্মান হানি করা হয়, তাহলে তাকে আল্লাহ্ সাহায্য করবেন এমন এক পরিস্থিতিতে যখন সে সাহায্য পেতে পছন্দ করবে।”
বর্তমানে আমরা এমন এক সময়ে আছি যখন মুনাফিক, মুরতাদ এবং এমন লোকের সংখ্যায় প্রচুর যারা নিজেদেরকে ইসলামিক চিন্তাবীদ বলে পরিচয় দেয়, যদিও তাদের ইসলামের জ্ঞান নেই, যারা মুজাহিদীনদের অপমান করে এবং তাঁদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে এবং তাঁদেরকে নিয়ে বিদ্রুপ করে।
এখানে যে বিষয়টি অবশ্যই জানা উচিৎ তা হল বর্তমানে জিহাদ এবং মুজাহিদীনদের মর্যাদা ঐ রকম অনেক আলিমের চেয়েও বেশী পবিত্র, যারা মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সামান্য সুযোগও হাত ছাড়া করে না। এবং এখানে যে দু’টি বিষয়ের প্রতি অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে তা হলোঃ
- জিহাদ ও মুজাহিদীনদের সমর্থন করার মাঝে বিশাল উপকার রয়েছে যা প্রাধান্য পায় ঐ সব আলিমদের স্বার্থের উপরে যারা মুজাহিদীনদেরকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে। তারা যে কারণেই এ কাজ করার দাবী করুক না কেন তাদের প্রতিউত্তর দেয়া অত্যাবশ্যকীয় কাজ। এতে যদিও তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় তবুও তা করতে হবে কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের জিহ্বা দ্বারা এ বিপদ ডেকে এনেছে।
- এমন অনেক হাদীস রয়েছে যেখানে বর্ণিত হয়েছে যে, এমন এক সময় আসবে যখন আলিমরা এবং তিলাওয়াতকারীরা জিহাদকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করবে যা আন-নাসাঈ তার সুনানে সালামাহ্ বিন নুফাইল রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, “আমি আল্লাহর রসূল ﷺ-এর সাথে বসে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! মানুষজন তাদের ঘোড়াগুলি সরিয়ে রেখেছে এবং তাদের অস্ত্রগুলি রেখে দিয়েছে এবং বলছে যে আর কোন জিহাদ নেই কারণ যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে।’ তখন আল্লাহর রসুল ﷺ ঐ ব্যক্তির দিকে তাকালেন এবং বললেন, ‘তারা মিথ্যা বলেছে! এখন! এখন! যুদ্ধ তো কেবল শুরু হয়েছে এবং আমার উম্মাহর একটি দল থাকবে যারা কখনই সত্যের উপর যুদ্ধ করা থেকে বিরত হবে না, এবং আল্লাহ্ মানুষের অন্তরকে পরিবর্তন করে (কাফির বানিয়ে দিবেন) দিবেন, এবং তাদের জন্য রিযক সরবরাহ করবেন ঐসব মানুষের সম্পত্তি থেকে, যে পর্যন্ত না ‘কিয়ামাত’ ঘনিয়ে আসবে এবং আল্লাহর ওয়াদা সংঘটিত হবে এবং ঘোড়ার কপালে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে পুনঃরুত্থান দিবস পর্যন্ত।’”
ইবনে আসাকির যায়েদ বিন আসলাম হতে তার পিতার মাধ্যমে আরও বর্ণনা করেছেন যে রসুল ﷺ বলেছেন, “জিহাদ ততদিন পর্যন্ত সুমিষ্ট ও সতেজ থাকবে যতদিন পর্যন্ত আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে যখন তাদের মধ্যকার তিলাওয়াতাকারীরা বলবে ‘এটা জিহাদ করার সময় না। সুতরাং যে ব্যক্তি ঐ সময় জীবিত থাকবে তখন সেটিই হবে জিহাদের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।’ তখন তাঁকে ﷺ-কে প্রশ্ন করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল, সত্যিই কি এমন লোক থাকবে যারা এমন কথা বলবে?’ তিনি ﷺ বললেন, ‘হ্যাঁ, তারা ঐ সমস্ত লোক যাদের উপর আল্লাহ, ফিরিশতাগণ এবং সমস্ত মানুষের লা’নত।’”
১৫. মুনাফিক এবং বিশ্বাসঘাতকদের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে দেয়াঃ
এটি অত্যাবশ্যকীয় এবং তা ইসলামের শত্রুদের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক, যারা মুজাহিদীন এবং তাদের পন্থাকে আঘাত করে। কিন্তু এখানে এটা বলা যায় যে পবিত্র কুরআন, বিশেষভাবে সেই সকল মুনাফিকের চেহারা প্রকাশ করে দিয়েছিল যারা জিহাদে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এবং মুজাহিদীনদের পথে বাধা ও বিপত্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল। এরা হলো ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু। এবং আমাদের বর্তমান সময়ে আব্দুল্লাহ্ বিন উবাই বিন আবি সলুলের অনেক বংশধর রয়েছে এবং তাদের বিবৃতি নিফাকের ইমাম ইবন সলুলের কথার অনুরূপ। সুতরাং, পবিত্র কুরআনের উদাহরণ অনুযায়ী তাদেরকে এবং তাদের চক্রান্তগুলো প্রকাশ করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এ সকল মুনাফিকরা এবং তাদের মতাদর্শীরা সবচেয়ে জঘন্যতম যে কাজটি করে তা হলো তারা (আল্লাহর পথের) মুজাহিদীনদেরকে খাওয়ারিজদের সাথে তুলনা করে এবং বলে রসূল ﷺ এর বর্ণনাকৃত হাদীস তাদের (মুজাহিদীন) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু এটা উপলব্ধি করে না যে তারাই খাওয়ারিজদের বেশী কাছাকাছি কারণ এ সকল মুনাফিকদের নেতা এবং তাদের অনুসারীরা বিশ্বাসঘাতকদের অন্তর্ভুক্ত “…. তারা কুরআন পড়ে, কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালী পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করেনা” এবং তারা মুজাহিদীন ও মুসলিমদের পরিবর্তে মুরতাদ, ক্রস ও মূর্তি পূজারীদের আনুগত্য ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব করেছে। সুতরাং হে আমার রব! আপনার জন্য সকল প্রশংসা; প্রকৃতপক্ষে এটা একটি বিশাল মিথ্যাচার!
‘সূরা তাওবাহ্’ তিলাওয়াতকারীদের জন্য এটা কতই না জরুরী যে কোন প্রকার আপোস বা ইতস্ততা ছাড়াই বর্তমান যুগের মুনাফিকদের চেহারা প্রকাশ করে দেয়া। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এই দ্বীনের জন্য সত্যবাদী আলিমের কোন শেষ হবে না যারা সত্য কথা বলেন যদিও তা তাদের কষ্টের কারণ হয়ে যায়; তারা সম্মুখে এগিয়ে নেয় দ্বীনকে এবং রসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর সুন্নাহ্কে রক্ষা করতে। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে যারা সবচেয়ে বিখ্যাত, তারা হলেনঃ শাইখ ‘আলী আল-খুদাইর, শাইখ নাসীর আল-ফাহ্দ (আল্লাহ্ দ্রুত তাঁদের মুক্তি নিশ্চিত করুন), এবং শাইখ ইউসুফ আল-উয়াইরী (আল্লাহ্ তাঁর উপর রহমত বর্ষন করুন)। উনারা এবং অন্যরা যারা সত্যের উপর ছিলেন, তাঁরা ছিলেন শক্ত পাথরের ন্যায় যা বিশ্বাসঘাতকদের এবং প্রত্যাখ্যানকারীদের ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিত। এখনও এমন এক দল জ্ঞানী ও সৎ লোক রয়েছেন যারা মানুষদেরকে দ্বীনের ব্যাপারগুলো পরিষ্কার করে তুলে ধরেন এবং এ দ্বীনের শত্রুদের চক্রান্ত স্পষ্ট করে দেন। বিশ্বাস ঘাতকদের মধ্য থেকে যারা তাদের সহায়তা করে (হয় তা তারা ভাল নিয়্যতে করুক অথবা খারাপ নিয়্যতে), তাদের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে দেন।
আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, “এমন কিছু মানুষ সর্বদা বিদ্যমান থাকবে যারা পথ ভ্রষ্ট লোকদের থেকে এই জ্ঞানকে রক্ষা করবে; তারা এটাকে চরমপন্থীদের বাড়াবাড়ি থেকে, প্রত্যাখ্যানকারীদের (মিথ্যা) আরোপণ থেকে, এবং অজ্ঞদের ব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করবে।” সুতরাং জিহাদ ও মুজাহিদীনদের সহায়তা করার অন্যতম পন্থা হল এই সকল মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়া এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক সকল সমাবেশে তাদের নিফাকী ও গোপন পরিকল্পনাগুলো প্রকাশ করে দেয়া এবং এটা করার ক্ষেত্রে কোন রকম সংশয় বোধ না করা কারণ তারা সাম্রাজ্যবাদ ও পাশ্চাত্যপন্থীদের সাহায্যকারী; তারা উম্মাহকে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নিষেধ করে, এবং তারা এটাকে ভুল বলে আখ্যায়িত করে। যখন তা যুদ্ধের রূপ নেয় তখন তারা মানুষকে আহবান করে বশ্যতা এবং লাঞ্ছিত জীবন যাপন করার দিকে; তারা এই দুনিয়ার জীবন নিয়ে পরিতৃপ্ত এবং তারা এটাতেই বিশ্বাস করে এবং শয়তান তাদের চোখে তাদের কাজগুলো সুন্দর করে তুলেছে। (লা হাওলা ওলা কুউয়া তা ইল্লা বিল্লাহ) আল্লাহর ছাড়া কোন ক্ষমতা নেই, নেই কোন শক্তি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হল পূর্ব উল্লেখিত আলিমদের বইগুলো ছাপানো ও বিতরণের জন্য প্রচেষ্টা করা, কারণ সেগুলোর মধ্যে অসংখ্য বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা রয়েছে ।
১৬. মানুষদেরকে জিহাদের দিকে ডাকা এবং উদ্বুদ্ধ করাঃ
যে ব্যক্তি নিজে স্বশরীরে জিহাদে অংশ নিতে পারছে না তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সব পন্থা উন্মুক্ত রয়েছে তার একটি হলো অন্যদেরকে জিহাদ করার জন্য উৎসাহিত করা কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেছেনঃ
فَقَٰتِلْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَۚ وَحَرِّضِ ٱلْمُؤْمِنِينَۖ …
“সুতরাং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন; আপনাকে শুধু আপনার নিজের কাজের জন্য দায়ী করা হবে; আর মু’মিনদের উৎসাহিত করুন…।” [26]
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ حَرِّضِ ٱلْمُؤْمِنِينَ عَلَى ٱلْقِتَالِۚ
“ হে নাবী! মু’মিনদেরকে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করুন।” [27]
সুতরাং এটা সেই ব্যক্তির উপর আবশ্যক যে ব্যক্তি জিহাদ করতে সক্ষম এবং তার উপরও যে জিহাদ করতে সক্ষম নয়। এবং সকল মুসলিমের উপর এটা আবশ্যক যে সে তার ভাইদেরকে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করবে। আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে আমাদের এই আয়াতগুলোর উপর সরাসরি আমল করা খুবই প্রয়োজন এবং এর মধ্যে রয়েছে মহা পুরস্কার, কারণ রসুলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজে সাহায্য করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে ব্যক্তি কাজটি সম্পাদন করে।”
১৭. মুসলিম এবং মুজাহিদীনদেরকে পরামর্শ দেয়াঃ
এই উপায় অসংখ্যভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, যেমন কাফিরদের চক্রান্ত ও কৌশল সম্পর্কে মুসলিমদেরকে অবহিত ও সতর্ক করা, যে রূপ আল্লাহর কথায় উল্লেখিত হয়েছেঃ
وَجَآءَ رَجُلٌ مِّنْ أَقْصَا ٱلْمَدِينَةِ يَسْعَىٰ قَالَ يَٰمُوسَىٰٓ إِنَّ ٱلْمَلَأَ يَأْتَمِرُونَ بِكَ لِيَقْتُلُوكَ فَٱخْرُجْ إِنِّى لَكَ مِنَ ٱلنَّٰصِحِينَ
“এবং শহরের দূর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে আসল। সে বললঃ হে মুসা! নিশ্চয়ই পরিষদবর্গ (ফিরাউনের) আপনার সন্বন্ধে পরামর্শ করছে যে, তারা আপনাকে হত্যা করে ফেলবে, সুতরাং আপনি এখান থেকে চলে যান। সত্যিই, আমি আপনার জন্য তাদের মধ্য থেকে একজন যারা (অকৃত্রিম) সুপরামর্শ দেয়।” [28]
সুতরাং এই আয়াতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কাফিরদের চক্রান্তের ব্যাপারেঈমানদারকে সর্তক করার জন্য এবং শত্রুর হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য মুজাহিদকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা এবং আপনার উচিৎ যথাসম্ভব এ বিষয়ে সাহায্য করা যদি এ বিষয়ে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এ প্রক্রিয়ায় আরও রয়েছে যে মুসলিমরা যে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার তথ্য ও উপাত্ত সরবরাহ করা এবং পাশাপাশি মুসলিমদের গোপনীয়তা রক্ষা করা।
মুরতাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার সম্পর্কে শাইখ উল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা বলেছেন যে, “…. প্রতিটি মুসলিমের উপর সাধ্যানুযায়ী এটা সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক। সুতরাং কোন ব্যক্তির জন্য এটা অনুমোদিত নয় যে সে (শত্রুর) তথ্য ও গোপনীয় বিষয়গুলো গোপন করেবে। বরং তার উচিত সে যা জানে তা প্রকাশ করা ও প্রচার করা যেন মুসলিমরা বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। কারও জন্য এটাও কাোনভাবেই অনুমোদিত নয় যে ঐ যুদ্ধের জন্য নিয়োজিত সৈন্যবাহিনীকে সাহায্য করা। এবং এটাও কারও জন্য অনুমোদিত নয় যে আল্লাহ ও তাঁর রসূল ﷺ যা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আদেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে নীরব থাকা অথবা বাধা দেয়া; কারণ এটা ভালো কাজে সাহায্য করা (আমর বিল মা‘রুফ) এবং মন্দকে বাধা দেয়া (ওয়া নাহি আন-মুনকার) ও আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার সবচেয়ে শক্তিশালী দরজাগুলোর একটি এবং মহামান্বিত আল্লাহ্ তাঁর রসূল ﷺ কে বলেছেন,“হে নাবী, আপনি জিহাদ করুন কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন।” [29]
এবং এরা (মুরতাদরা) কাফির ও মুনাফিকদের থেকে আলাদা কিছু নয়।” [30]
১৮. মুজাহিদীনদের গোপন বিষয়গুলো গোপন রাখা যাতে করে তা থেকে শত্রুরা উপকৃত হতে না পারেঃ
এটা অত্যাবশ্যকীয় যে মুজাহিদীনদের ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করা যেন তা থেকে কাফির ও মুনাফিকরা সুবিধা নিতে না পারে। আমরা যদি চাই ‘ভ্রাতৃত্ববোধের’ যথার্থতা তা প্রমাণ করতে এবং জিহাদ ও মুজাহিদীনদেরকে ভালোবাসার যে দাবি আমরা করি তার স্বপক্ষে যেন কিছু প্রমাণ থাকুক; তা হলো মুজাহিদীনদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়, তাদের সুরক্ষা, তাদের নিরাপত্তা এবং তাদেরকে কোন রকম বিপদে না ফেলার বিষয়ে সব সময় আমাদেরকে অবশ্যই সচেষ্ট থাকা। আলিমগণ বলেছেন মুজাহিদীনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা, তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা, তাঁদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, তাদের বিরুদ্ধে অন্যকে সাহায্য করা, তাদের আশ্রয়স্থান প্রকাশ করে দেয়া, তাঁদের ছবি প্রচার করা (কর্তৃপক্ষের হয়ে), তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (হারাম)। এবং যে এইগুলো করে, সে প্রকৃতপক্ষে আমেরিকানদের সহায়তা করছে যারা তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করছে মুজাহিদীনদেরকে গ্রেফতার করার জন্য এবং তাদের লক্ষ্যে পোঁছানোর জন্য অন্যথায় তা তারা কখনো অর্জন করতে পারতো না। সুতরাং সতর্ক হও মুসলিম ভাইয়েরা মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডারদের (ধর্ম যোদ্ধাদের) সাহায্যকারী হওয়া থেকে এবং যে কেউ তা করবে সে ব্যক্তি সীমালংঘন করল এবং জুলুম করল, এবং পাপ ও সীমালংঘনে সহায়তা করল, এবং মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেনঃ
وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوٰنِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
“…এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করিবে না।” [31]
এবং রসূল ﷺ বলেছেন, “তোমার ভাইকে সাহায্য কর হোক সে অত্যাচারিত অথবা অত্যাচারি।”
এটা সহীহ্ হিসেবে স্বীকৃত যে, হাম্মান বিন আল হারীছ রা. বলেছেন, “এক ব্যক্তি ছিল যে মানুষের কথা শাসকদের কাছে পৌঁছে দিত। একদিন আমরা যখন মসজিদে বসে ছিলাম তখন লোকেরা বলল এই ব্যক্তি হল তাদের মধ্যে এক জন যারা মানুষের কথা শাসকদের কাছে পৌঁছে দেয়।” যখন লোকটি আসল এবং আমাদের সাথে বসল, তখন হুযাইফা (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেনঃ ‘আমি রসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যের কথা ছড়ায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’”
১৯. তাঁদের জন্য দু’আ করাঃ
মুজাহিদীনদের সাহায্য করা, তাতে অংশগ্রহণ করা ও সেবা করার পদ্ধতি সমূহের মধ্যে আরেকটি হল গোপনে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা যেন আল্লাহ্ তাঁদেরকে শত্রুদের উপর বিজয়ী করেন এবং যেন তিঁনি (আল্লাহ) তাঁদেরকে দৃঢ়পদ রাখেন এবং যেন তিনি তাঁদের শত্রুদের ধ্বংস করে দেন, এবং পাশাপাশি প্রার্থণা করা যেন কারাবন্দীরা মুক্তি পায় এবং তাঁদের সুস্বাস্থের জন্য ও আঘাত (যখম) থেকে আরোগ্যতা লাভের জন্য, তাঁদের ক্ষমা ও শহীদ হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য, তাঁদের নেতৃত্বের সংরক্ষণ ও রক্ষার জন্য, তাঁদের সন্তানদের নিরাপত্তা ও বেড়ে উঠার জন্য, এবং তারা যেন সত্যের উপর অবিচল থাকতে পারে।
প্রার্থণাকারী যেন ঐ সময় গুলোকেই প্রার্থণার জন্য বেছে নেয় যখন দু’আ কবুল করা হয় এবং এখানে আমরা মুজাহিদীনদের জন্য দোয়ার ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরব (ইনশাআল্লাহ):
- তাঁদের জন্য বিনীত হৃদয়ে দু’আ করা এবং তাঁদের জন্য শুধু মুখে মুখে দু’আ না করা (দু’আ করার জন্য খালিছ নিয়্যতে দু’আ করা), কারণ আল্লাহ এমন বান্দার দু’আ গ্রহন করেন না যে তাঁর ব্যাপারে (মুখলেছ) মনোযোগী নয়। তুমি এমন সময় দু’আ করবে সে সময়টি দু’আ কবুলের সময় এবং এ ব্যাপারে অন্যদের স্মরণ করিয়ে দিবে। এটা করার কিছু পদ্ধতির মধ্যে একটি হল অন্যদের লিখিত বার্তা (এসএমএস) পাঠানো এবং নিজের পরিবার পরিজনদেরকে এ ব্যাপারে স্মরণ করে দেয়া। ঐ ব্যক্তি যে সব কিছুর জন্য দু’আ করে যা সে উপযুক্ত বলে মনে করে এবং সে যেন সমসাময়িক ঘটনার প্রেক্ষিতে দু’আ করে যাতে করে সে গতানুগতিক একই দো’আ বারবার না করে এবং কবুল না হলে যেন বিরক্ত না হয়ে যায় এবং এখানে আমাদেরকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে যে দু’আ তখনই করা উচিত যখন দু’আকারী তার দু’আ কবুলের ব্যাপারে নিশ্চিত এবং সে যেন ধৈর্য্য হারা না হয়ে যায় এবং যেন না বলে ফেলে “আমি দু’আ করেছিলাম, এবং তা কবুল করা হয় নি।”
২০. সঙ্কটকালীন দু’আ (কুনুত আন-নাওয়াযিল):
এ বিষয়ের গুরুত্বের কারণে এবং এটি মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাহ্ হওয়ার জন্য এবং যারা এই সুন্নাহকে মুছে দিতে চায় তাদের কারণে আমি কুনুতের বিষয়টি স্বতন্ত্র ভাবে উপস্থাপন করছি। অন্যথায় এটা ‘মুজাহিদীনদের জন্য দু’আ করা’ উপরোক্ত অনুচ্ছেদের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বর্তমানে, কেউ কেউ এই সুন্নাহ্কে নিম্ন বর্ণিত দুই উপায়ে ত্যাগ করতে চায়ঃ
প্রথমতঃ তারা বলে এই কাজে শাসকদের অনুমতি প্রয়োজন এবং এর ফলে কুনুতে অংশগ্রহন করা একটি সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে পরিনত করা হয়েছে যদি না তাতে কোন রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকে, যেমন রাশিয়ান শক্রদের বিরুদ্ধে দু’আ করা এবং আমেরিকানদের বিরুদ্ধে না করা।
বর্তমানের এই শাসকরা কারা যাদের অনুমতির আশা আমরা করব এবং অপেক্ষায় থাকব? এমন একজন যে কিনা ক্রুসেডারদের জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়? নাকি এমন ব্যক্তি যে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানায় যখন সে কি না ছিল গ্রজনীর মুসলিমদেরকে নৃশংসভাবে নির্বিচারে হত্যা করার মধ্যমণি? শাইখ হামুদ বিন উক্বলা (আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন) বলেছেন, “বর্তমানে, আমরা নেতাদের লালসা ও তাদের আকাঙ্খার মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে অবহিত, সুতরাং কুনুত আন-নাওয়াযিলের সাথে তাদের সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে মুসলিমদের বিষয়গুলো রাজনীতি ও শাসকদের অনুগত করে দেয়া হয়েছে। এবং আপনি বর্তমান বাস্তবতায় মুসলিমদের দুর্দশায় এই সব শাসকদের অনেকেরই বিশ্বাসঘাতকতা ও অপারগতা দেখতে পাবেন; বরং তারা সেই সকল মানুষের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত যারা জিহাদ ও মুজাহিদীনের কাজে সহায়তা করে। সুতরাং কিভাবে আমরা তাদের কাছ থেকে কুনুতের ব্যাপারে তাদের অনুমতির প্রাপ্তির আশা করব যদি না তা তাদের স্বার্থ ও ইচ্ছা অনুযায়ী না হয়?” উল্লেখ্য যে এই শর্ত গ্রহনযোগ্য নয় কারণ এটার সমর্থনে কোন দলিল-প্রমান নেই, যে রূপ শাইখ হামুদ বিন উক্বলা (আলাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) তার ফাতাওয়ায় বর্ণনা করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ অনেকে বলেন, “যদি আমরা প্রতিটি বিপদের জন্য কুনুতে নাওয়াযিল আদায় করি তবে আমরা কখনই একটি বিপদের জন্য কুনুত পাঠ করা বন্ধ করব না যতক্ষণ পর্যন্ত না যে অন্য একটি বিপদ তার স্থান নিয়ে নেয় এবং এটা বিরতিহীন ভাবে চলতে পারে!” এবং এ সকল মানুষদের এই উত্তর দেওয়া যেতে পারে এই ভাবে যে, এটা আমাদের জন্য বৈধ যে আমরা প্রতিটি বিপদে কুনুতে নাওয়াযিল আদায় করব, তা আসতে থাকুক অথবা বন্ধ হোক কারণ এটা রসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ্।
শাইখ উল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “… কুনুত হল প্রয়োজনের সময়ে পালনীয় একটি সুন্নাহ্, নিয়মিত কোন সুন্নাহ্ নয়। কারণ এটা প্রমাণিত যে তিনি ﷺ তা (কুনুত পাঠ করা) বন্ধ করে দিতেন যখন এটার প্রয়োজনীয়তা আর থাকত না এবং তা আবার শুরু করতেন যখন প্রয়োজন দেখা দিত।” [32]
এখানে আমরা আপনার কাছে শাইখ হুমুদের কুনুত আন নাওয়াযীল সংক্রান্ত গবেষণামূলক প্রবন্ধের একটি অংশ পেশ করছি: “ইবন আল ক্বাইঈম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) সলাতের গ্রন্থে লিখেছেন, আবু ছাওর, আবু আব্দিল্লাহ আহমাদ বিন হামবাল (আল্লাহ্ তাঁর
প্রতি রহম করুন) কে জিজ্ঞেস করলেন,‘ফরজ সলাতে কুনুত পাঠ করার ব্যাপারে আপনার মতামত কি?’ সুতরাং আবু আব্দিল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই শুধুমাত্র বিপদের সময়ে কুনুত পাঠ করা উচিত।’ সুতরাং আবু ছাওর তাকে বললেন, ‘আমরা যে বিপদের মধ্যে আছি তার চেয়ে বড় বিপদ আর কি হতে পারে?’ সুতরাং আহমাদ বিন হাম্বল (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) তাকে বলেন, ‘যদি ব্যাপারটা তাই হয়ে থাকে তাহলে কুনুত পাঠ কর।’”
আমরা বলি, বর্তমানের মুসলিমরা কত প্রকার বিপদেই না আক্রান্ত? তাহলে কিভাবে কুনুতের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন যে বিশ্বাসীরা হল একে অপরের বন্ধু? আমরা জানি যে কুনুতের বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে যা শুধুমাত্র সাধারনভাবে সিজদায় বা খুতবার পাঠ করা নয় কারণ এটার উদ্দেশ্যগুলোর একটি হলো মুসলিমদের নৈতিকভাবে সহযোগিতা করা এবং তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকা, তাদের প্রতি সমবেদনা দেখানো, তাদের সাহায্য করা এবং এটার মাধ্যমে মুজাহিদীনদের শক্তি সঞ্চার হবে এবং তা দেখা ও অনুভব করা যাবে। আমরা অনেক মুজাহিদীনদেরকে বলতে শুনেছি যে, প্রকাশ্য কুনুত পাঠ করা হলে তারা মুসলিম ভাইদের দু’আর কারণে খুশি হন। তারা এটা করার জন্য আমাদেরকে প্রায়শ অনুরোধ করে। ইবন হাযার (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেনঃ “আমার কাছে এটা প্রতীয়মান যে, সিজদার পরিবর্তে কুনুতে নাওয়াযিল দাড়িয়ে পাঠ করার মধ্যে যে বিচক্ষণতা রয়েছে তা হলো যাতে করে অনুসারীরা ইমামের সাথে দু’আয় অংশ নিতে পারে এবং আমিন বলতে পারে। এই কারণে সবাই মিলে এটা প্রকাশ্যেই পাঠ করতে হবে। [33]
এবং কুনুত হল শত্রুর বিরুদ্ধে এক প্রকারের বিজয়। এটা সহীহ্ সূত্রে আলী ইবন তালিব রা. হতে বর্নিত আছে যে, যখন তিনি যুদ্ধের সময় কুনুত পাঠ করতেন তখন তিনি বলতেন, ‘নিশ্চয়ই, আমাদেরকে শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য করা হয়েছে।” জ্ঞানী লোকদের মধ্যে উনারা হচ্ছেন তারা যারা কুনুত আন নাওয়াযিলের বাধ্যবাধকতার উপর কথা বলেছেন এবং বলেছেন যে, এটা হচ্ছে ইমামদের কাজ যেরূপ আল ইসতিযকারে (৬/২০২) ইবন আবদিল বারী ইয়াহিয়াহ বিন সাঈদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘যখন সেনা বাহিনীরা শত্রুদের ভূমিতে যুদ্ধ করে তখন দু’আ করা (কুনুত পাঠ করা) ফরজ এবং এটা ছিল ইমামদের কাজ।’
২১. জিহাদের সংবাদ সংগ্রহ করা এবং তা প্রচার করাঃ
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুজাহিদীনদের খোঁজ-খবর রাখার মধ্যে পুরস্কার রয়েছে যদি তা জিহাদের প্রতি সচেতনতা ও ভালবাসা থেকে হয়ে থাকে; যেখানে সে তাদের সুখে সুখী হয় এবং তাদের দুঃখে দুঃখী হয়। যে ব্যক্তি এটা যথেষ্ট মনে করে যে যদি (মুজাহিদীনদের) খবরটি ভাল হয়, তবে সে মুজাহিদীনদের সাথে আছে এবং যদি খবরটি খারাপ হয় তবে সে সেখানে সরাসরি জড়িত না থাকাকে আল্লাহর নিয়ামাত হিসেবে গণ্য করে তাহলে সেই ব্যক্তি হল তার মত যে রূপ শাইখ আবু উমার মুহাম্মাদ আস সাঈফ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জিহাদে সহযোগিতা না করা এবং অংশগ্রহন করা থেকে বিরত থাকা এবং দূর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে (অডিও, ভিডিও, লিখিত) মুজাহিদীনদের সংবাদ সংগ্রহ করাকেই যারা যথেষ্ট মনে করেন, তাহলে তা হবে মুনাফিকের চরিত্র যে রূপ আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
يَحْسَبُونَ الْأَحْزَابَ لَمْ يَذْهَبُوا ۖ وَإِن يَأْتِ الْأَحْزَابُ يَوَدُّوا لَوْ أَنَّهُم بَادُونَ فِى الْأَعْرَابِ يَسْـَٔلُونَ عَنْ أَنۢبَآئِكُمْ ۖ وَلَوْ كَانُوا فِيكُم مَّا قٰتَلُوٓا إِلَّا قَلِيلًا
“…যদি সম্মিলিত বাহিনী আবার এসে পড়ে, তখন তারা কামনা করবে যে, ভাল হতো যদি তারা যাযাবর মরুবাসীদের সহিত থাকিয়া তোমাদের সংবাদ নিতো। তারা তোমাদের সঙ্গে অবস্থান করলে তারা যুদ্ধ অল্পই করত।” [34]
অর্থাৎ, মাদিনার মুসলিমদেরকে আক্রমণকারী কাফির সৈন্যদলের মুখোমুখি হওয়ার বদলে মুনাফিকরা যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে দূরে অবস্থান করার এবং বেদুইনদের সাথে অবস্থান করে দূর থেকে মুজাহিদীনদের সংবাদ নেয়ার ইচ্ছা পোষন করতো। সুতরাং এই উম্মাহর ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির জন্য অন্য কোন উপায় খোলা নেই এটা ব্যতীত যে সে যথার্থভাবে তার দ্বীনে প্রত্যাবর্তন করবে এবং সেই লেনদেন সম্পূর্ণ করবে যা আল্লাহ তাঁর ঈমানদার বান্দাদের সাথে করেছেন যে রূপ আল্লাহ বলেছেনঃ
إِنَّ اللَّهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِى التَّوْرٰىةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْءَانِ ۚ وَمَنْ أَوْفٰى بِعَهْدِهِۦ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِى بَايَعْتُم بِهِۦ ۚ وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের নিকট হতে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে এটার বিনিময়ে। তারা আল্লাহর পথে কিতাল করে, নিধন করে ও নিহত হয়। তাওরাত, ইনজীল ও কুরআনে এই সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ্ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে বানিজ্য করেছো সেই বানিজ্যের জন্য আনন্দিত হও এবং উহাই তো মহাসাফল্য।” [35]
এ জন্য, মুজাহিদীনদের সংবাদ ও বার্তাগুলো মুসলিমদের মাঝে প্রচার করার খুবই প্রয়োজন কারণ এর মাঝে অনেক উপকার রয়েছে যেমনঃ
- (মুসলিমদের) উম্মাহর মাঝে এই অনুভূতির পুনঃজাগরণ করা যে আমরা এক অভিন্ন শরীর, যদি এর (এই শরীরের) কোন অংশ ব্যাথা পায়, তবে অন্য অংশ তা অনুভব করে এবং সাহায্য করে।
- উম্মাহর উপর থেকে সংবাদ মাধ্যমের অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান ঘটানো যেখানে শত্রুরা অধিকাংশ প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা যা চায় তা ছাড়া অন্য কোন কিছু প্রচার করে না। সুতরাং মুজাহিদীনদের খবর সম্প্রচার সাধারণ মানুষের মাঝে তাদের জন্য প্রচার মাধ্যমের ভিত্তি তৈরী করবে। ফলে উম্মাহ্ সচেতন হবে এবং অনুধাবন করবে যে গৌরব ও সম্মানের পথ হল জিহাদ এবং শাহাদাহরপথ।
২২. তাঁদের প্রকাশিত বই ও প্রকাশনা ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করাঃ
এটি পূর্ববর্তী পদ্ধতি “তাঁদের সংবাদ প্রচার করা ও মুসলিমদের মাঝে তা ছড়িয়ে দেয়া” এর সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি বিষয় প্রচার করা যা উৎসাহিত করে ও মানুষকে জিহাদের দিকে আহবান করে মুজাহিদীনদের সাহায্য করে এবং জিহাদের বিভিন্ন
পদ্ধতির সদ্বব্যবহার করার ব্যাপারে চিন্তা করা তোমাদের জন্য জরুরী। উদাহরণ স্বরূপ তাদের ত্যাগ ও সাহসীকতার ঘটনাগুলো সংগ্রহ করা, সেগুলো ফটোকপি করা এবং তা মানুষের মাঝে ও ইন্টারনেটে প্রচার করা; এ ছাড়া গুয়ান্তানামো কারাগারের বন্দীদের চিঠি সংগ্রহ করা এবং তা থেকে সর্বশ্রেষ্ঠগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যেন তা তাদের মাঝে বন্দীদের জন্য সমবেদনা বৃদ্ধি করে দেয়। অনুরূপভাবে সকলের উচিত মুজাহিদীন ও তাঁদের কার্যাবলী নিয়ে কিছু প্রচার মাধ্যমের প্রজেক্ট তৈরী করার জন্য চেষ্টা করা। এখানে আমি একজন পুন্যবতী বোনের কথা উল্লেখ করব যিনি নিজ কাঁধে চেচনিয়ার সর্বশেষ খবর সংগ্রহ করার দায়িত্ব তুলে নিয়ের্ছিলেন। তিনি শামিল বাসায়েভ ও খাত্তাবের সর্বশেষ সাক্ষাৎকার এবং কিছু কবিতা, ঘটনা ও বিবৃতি সংগ্রহ করে সেগুলোকে এক সাথে সংকলন করে তা মানুষের মাঝে বিতরন করেছিলেন। এখন যদি আপনি নিজে প্রকাশ করতে অপারগ হন তবেজিহাদ ও মুজাহিদীনদের সহায়তা করার নিমিত্তে মুজাহিদীনদের সাথে সম্পৃক্ত প্রকাশনা, বই ইত্যাদি প্রচার করা আপনার দায়িত্ব।
২৩. এরূপ ফাতাওয়া দেয়া যা তাঁদের সাহায্য করবেঃ
এটা আলিমগণের কর্তব্য এবং তাঁদের উপর মুজাহিদীনদের অধিকার, কারণ এটি তাদের দায়িত্ব যে তারা উম্মাহ্কে পরিচালিত করবে মুজাহিদীনদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, জান, মাল ও দু’আর মাধ্যমে তাদের সাহায্য করার জন্য। এবং এটা ইলমের ছাত্রদের এবং দায়ীদের
উপর দায়িত্ব যে তারা উম্মাহ্কে এই বিরাট কর্তব্যের দিকে ডাকবে, ঠিক যেভাবে তা জ্ঞানীদের নিকটবর্তীদের, যারা হতে পারে শিক্ষার্থী অথবা তাদের আত্মীয়, উপর দায়িত্ব হলো তাদেরকে (জ্ঞানীদেরকে) উৎসাহিত করা এবং তাদের এমন কথা বলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাকে শক্তিশালী করা যা মুজাহিদীন ভাইদের সাহায্য করতে উৎসাহিত করবে। যখন আলেমগণ তা করবে তখন তাৎক্ষণিক ও এক আশ্চর্যজনক প্রভাব দেখা যাবে যা হয়েছিল আমাদের সময়কার মুজাহিদীনদের শাইখ হামূদ বিন ‘উক্বলা’ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি ক্ষমাশীল হোক)- এর ক্ষেত্রে। মুসলিম বা মুজাহিদীনদের উপর এমন কোন বিপদ আপতিত হয় নাই যখন তাঁকে এই ব্যাপারে দৃঢ় ও অনমনীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা যাই নাই এবং তা করার ক্ষেত্রে তিনি সৃষ্টির কাউকেই ভয় করেন নাই। বরং তাঁর সম্পর্কে একজন স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে যে, একবার তিনি একটি ফার্মের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যেখানে একটি পুরনো মরচে ধরা কামান পড়েছিল তখন তিনি বললেন, “যদি মুজাহিদীনরা এর দ্বারা কোন প্রকারে উপকৃত হত, তবে আমি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতাম।” আল্লাহ্ তাঁর উপর রহমত বর্ষণ করুন; যেহেতু তিনি ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য তীব্র আবেগ নিয়ে ফাতাওয়া প্রকাশ করতেন, এবং শাইখের জীবন বৃত্তান্ত এটাবর্ণিত রয়েছেঃ “শাইখ (আল্লাহ্ তাঁকে ক্ষমা করুন) মুসলিমদের মাঝে অতীতেও ছিলেন এবং বর্তমানেও আছেন ও ভবিষ্যতে থাকবেন। তিনি খবরগুলো পর্যবেক্ষণ করতেন এবং তা দীর্ঘক্ষণ ধরে করতেন এবং তা করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থেকে তিনি নিজে রেডিও ব্যবহার করতেন এবং খুঁজে বের করতেন কোন কেন্দ্র থেকে খবর প্রচার করা হচ্ছে (যেহেতু শাইখ অন্ধ ছিলেন, এবং তাঁকে তা করতে হত রেডিওর নাম্বার না দেখেই)। প্রকৃতপক্ষে, তিনি প্রায়ই তাঁর পাশের ব্যক্তির কাছ থেকে রেডিওটি ছিনিয়ে নিতেন যখন তারা সংবাদের চ্যানেল খুঁজে না পেত এবং নিজেই ডায়াল ঘুরাতেন তা বের করার জন্য এবং তিনি বিশেষ সংবাদগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারতেন কারণ তিনি জানতেন কোন ধরনের উপস্থাপক কোন ধরনের সংবাদ উপস্থাপন করতো। এবং ইন্টারনেটের খবরগুলো প্রতিদিন তাঁকে পড়ে শুনানো হত, যেখানে তাঁকে অন্তত এক বা দুই ঘন্টা বসে থেকে তা শুনতে হত কিন্তু তিনি বিরক্ত বা অস্থির হতেন না।
সুতরাং, আপনি দেখতে পাবেন যে তাঁর সচেতনতা থেকেই মুসলিমদের সব রকম অবস্থাই তিনি জানতেন এবং সকল সাম্প্রতিক খবরা-খবর তিনি রাখতেন। সুতরাং এমন কেউ নেই যে তাঁর কাছে গিয়ে সাম্প্রতিক খবর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত না, যা শাইখ তাদেরকে জানাতেন এবং তাকে তাঁর নিজের বিশেষণ ও সিদ্ধান্ত জানাতেন।
সাম্প্রতিক ঘটনা সমূহের প্রতি এরূপ সচেতনতার পাশাপাশি শাইখ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) ইতিহাস, অতীতের ঘটনা, যুদ্ধ, রাজনীতি, এমনকি রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব জীবিত বা মৃত, তাদের ইতিহাস ও মতাদর্শ সম্পর্কেও ভাল জ্ঞান রাখতেন। ফলে তিনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিত্ব ও ঘটনার সাথে সমন্বয় সাধন করতে পারতেন। তাঁর পর্বততুল্য জ্ঞান এবং সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে তাঁর গভীর বোধশক্তির কারণে শাইখ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) মুসলিমদের জন্য রহমত স্বরূপ ছিলেন। মুসলিমদের ব্যাপারে তাঁর এই উদ্বেগ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল; কারণ তিনি সব সময় আফগানিস্তান, তালেবান সরকার ও মুজাহিদীনদের সর্বশেষ খবরা-খবর সম্পর্কে বলতেন এবং ইন শা আল্লাহ্ তাঁর সমাপ্তি ছিল উত্তম।
যখন কিছু আলেম এবং ইলমের ছাত্ররা কারাগারে ছিলেন, তিনি সব সময় তাঁদের কথা জিজ্ঞেস করতেন এবং অবিরাম তাঁদের জন্য দু’আ করতেন যেন তাঁরা (কারাবন্দীগণ) সত্যের উপর অটল থাকতে পারে এবং ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে। সুতরাং আল্লাহ্ যেন তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কারে পুরস্কৃত করেন।
২৪. আলেম ও দ্বীনের দা’য়ীদের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং তাঁদেরকে মুজাহিদীনদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করাঃ
এর কারণ হল শত্রুরা চায় মুসলিমদের শ্বাসরোধ করতে এবং তাঁদের একতার তীব্র অনুভূতিকে মুছে দিতে ও সাধারণ মুসলিমদেরকে ক্ষুদ্র ব্যাপারে আছন্ন করে রাখতে। সুতরাং যদি আলেমগণ জেগে ওঠেন, ফলশ্রুতিতে তারা জনগণকে জাগ্রত করবেন এবং যদি তারা ঘুমিয়ে থাকে, তবে একই ভাবে জনগণও ঘুমিয়ে থাকবে। সাধারণ মানুষ সাধারণত আলেমগণের সাথে থাকে, অন্তত ধর্মীয় ব্যাপারে, যার চূড়ায় রয়েছে জিহাদ এবং মুজাহিদীনদের সাহায্য করা। অতীতে যখন ক্রুসেডার ও তাতার কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছিল, উম্মাহ্ দৃঢ় থাকতে পারত না যদি না আলেমগণ ও লোকেরা জিহাদে ঝাঁপিয়ে না পড়তো এবং জিহাদের পতাকার নিচে একত্রিত না হতেন। তিনি হলেন শাইখ আল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন), যিনি মানুষকে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন, মুসলিম বাহিনীর পক্ষে তাতারদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাঁর বিখ্যাত উক্তি দ্বারা উম্মাহকে সুদৃঢ় রেখেছিলেন, “আল্লাহ্র শপথ, তোমরাই বিজয়ী হবে!” সুতরাং তারা তাঁকে বলল, “বলুন ইনশাআল্লাহ্!” তিনি উত্তর দিলেন “আমি ইনশাআল্লাহ্ বলি সুনিশ্চিত হলে, কোন শুভ কামনা থেকে নয়।” এভাবেই, ইবন ক্বুদামাহ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) সালাহ্ উদ-দ্বীন আল-আইয়্যুবির (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) পাশে দঁড়িয়ে ছিলেন।
সুতরাং, এ কারণে আলেমগণের খুব কাছে থাকা এবং তাঁদেরকে মুজাহিদীনদের ঘটনা সম্পর্কে জানানো অবশ্য করণীয় যেন তারা জিহাদের পাশে দাঁড়ায় এবং অন্যদেরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে। যেহেতু ভ্রান্ত মতবাদ ও এর সহকারীরা তাঁদেরকে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে জিহাদ সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টির মাধ্যমে এবং জিহাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে সতর্ক করার মাধ্যমে, তাই আমাদেরকে অবশ্যই এই প্রবনতাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে এবং তাঁদের সংস্পর্শে থেকে মুজাহিদীন ও তাঁদের অধিকারের ব্যাপারে তাঁদের যে কর্তব্য রয়েছে সেই ব্যাপারে তাঁদের স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। এর মাধ্যমে আল্লাহ্–হয়ত শাইখ আব্দুল্লাহ্ আয্যাম ও হামুদ বিন ‘উক্বলা (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন)-এর মত মানুষদের প্রত্যাবর্তন করাবেন।
সত্যবাদী আলেমগণ হলেন তারা যারা মুজাহিদীনদের পাশে সততার সহিত দাঁড়ায় এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো ও সত্য কথা বলার কারণে, মৃত্যু, জেল এবং যন্ত্রনা সহ্য করেন। এবং শাইখ ইউসুফ আল-উয়াইরি (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন)-কে হত্যা করার বিষয়টি আমাদের সামনেই রয়েছে।
২৫. শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করাঃ
যে ব্যক্তি জিহাদে অংশ গ্রহণ করার নিয়্যত বা ইচ্ছা রাখে তার অন্য কোন সুযোগ নেই শারীরিক যোগ্যতা অর্জন ছাড়া যা তাকে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে কারণ এটা মুজাহিদীনদের জন্য অত্যাবশ্যক। সুতরাং তাকে অবশ্যই হাঁটা, জগিং করা এবং অনেক দূরের দূরত্বে দৌঁড়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে শারীরিক অবস্থা এমন এক অবস্থায় উপনীত করতে হবে যা তাকে জিহাদের ডাক পাওয়া মাত্রই বেরিয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং যেন সে তাঁর ভাইদের উপর বোঝা না হয়ে পড়ে যা তাদেরকে বয়ে বেড়াতে হবে… ইত্যাদি এবং প্রকৃতপক্ষে এটা বসনিয়ায় (এবং অন্যান্য স্থানের) ক্ষেত্রে ঘটেছিল যেখানে কিছু ভাইকে শারীরিক সক্ষমতা না থাকার জন্য কারা বরণ করতে হয়েছিল। শাইখ ইউসুফ আল-উয়াইরি (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “নিশ্চয়ই, মুজাহিদীনদের শারীরিক সক্ষমতা, তাঁর বহুদূরে দৌঁড়ানোর ক্ষমতা, অনেক ভারী ভার বহন করার ক্ষমতা এবং অনেক লম্বা সময়ের জন্য তার প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করার ক্ষমতা হল প্রধান উপাদান যা যুদ্ধ ক্ষেত্রে তাঁর প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে। একজন মুজাহিদ হতে পারে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী, কিন্তু শারীরিক যোগ্যতা না থাকার কারণে, বন্দুক চালনা করার জন্য সে উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করতে পারে না বা দেয়াল বেয়ে উঠতে পারে না। এ সব কিছুই ঘটে শারীরিকভাবে অযোগ্য হওয়ার কারণে এবং যেই মুজাহিদের খুব ভালো শারীরিক যোগ্যতা থাকে সে প্রয়োজনীয় সব রকম কাজ সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতিতে সম্পাদন করতে পারে যদিও সে অস্ত্র চালনায় তেমন পারদর্শী নয়। কারণ সে গুলি চালানোর জন্য সবচেয়ে উত্তম স্থানে নিজেকে নিয়ে যেতে পারে এবং সে এ সকল কিছুই করতে পারবে দ্রুততার সাথে ও সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে কারণ ক্লান্তি ও অবসাদ তাকে আচ্ছাদিত করতে পারেনা, তার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে না এবং তার গতি-কে প্রভাবিত করতে পারে না। এ জন্য আমরা পরিশেষে বলতে পারি যে, মুজাহিদদের জন্য শারীরিক যোগ্যতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিশেষ করে শহর কেন্দ্রীক যুদ্ধের ক্ষেত্রে।” আমাদের এ সময়ে আমরা যে যুগে বাস করছি, দেখতে পাই যে পৃথিবীতে বর্তমানে সবগুলো জিহাদই সংঘটিত হচ্ছে গেরিলা যুদ্ধ এবং শহর কেন্দ্রীক যুদ্ধের রূপে এবং এজন্য প্রয়োজন উঁচু মানের শারীরিক যোগ্যতা। সুতরাং, হে আমার ভাইয়েরা! তুমি যেন অন্যদের জন্য বোঝা হয়ে না যাও, তাই এখন থেকেই প্রয়োজনীয় শারীরিক যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা শুরু করে দাও। আমার ভাইয়েরা, শারীরিক যোগ্যতার এ বিষয়টিকে তুচ্ছ ভাবে নিও না- এবং জেনে রাখো এ জন্য পুরষ্কারটাও অনেক বড় যদি তা এক খাঁটি নিয়্যাতে অর্জনের চেষ্টা করা হয়, এবং তুমি তা কর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার নিয়্যাতে। এবং একজন দৃঢ় ঈমানদার আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় একজন দুর্বল ঈমানদারের চেয়ে। এবং দৃঢ়তা মধ্যে শারীরিক ও কায়িক শক্তি অন্তর্ভুক্ত। শাইখ ও মুজাহিদ ইউসূফ আল-উয়াইরি (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলছেনে, “একজন মুজাহদিরে মাঝে যে সকল শারীরকি যোগ্যতার দরকার তার মধ্যে নম্নি লখিতি কাজগুলো করার ক্ষমতা র্অন্তভুক্তঃ
- কোন রকম বিরতি ছাড়া ১০ কি: মি: (প্রায় ৬.২ মাইল) জগিং (ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে দৌঁড়) করা এবং খুব খারাপ অবস্থার ক্ষত্রেও তা যেনো ৭০ মিনিটের চেয়ে বেশী সময় না নেয়।
- ১৩.৫ মিনিটের মধ্যে ৩ কি: মি: (প্রায় ২ মাইল) দৌঁড়ানো।
- শুধু ১২-১৫ সকেন্ডের বিরতীতে ১০০ মিটার দৌঁড়ানো।
- কোন বিশ্রাম না নিয়ে একটানা কমপক্ষে ১০ ঘন্টা হাঁটা।
- কোন বিশ্রাম না নিয়ে ২০ কিলোগ্রাম (প্রায় ৪৪ পাউন্ড) ওজনের জিনিস কমপক্ষে ৪ ঘন্টা বহন করা।
- না থেমে একটানা কমপক্ষে ৭০ বার বুক-ডন দেয়া (একজন হয়ত একবারে ১০ বার পুশ আপ দিতে পারবে, অতঃপর প্রতিদিন ৩টি করে বৃদ্ধি করা যতক্ষণ না তা ৭০ পর্যন্ত পৌঁছে)।
- একবারে না থেমে ১০০টি সিটআপ (উঠ-বস করা) দেয়া (হয়ত একজন প্রথমে ১০টি সিটআপ দিতে পারবে, অতঃপর প্রতদিনি ৩টি করে বৃদ্ধি করা যতক্ষণ না তা ৭০ পর্যন্ত পৌঁছে)।
- বাহু দিয়ে হামাগুড়ি করে ৫০ মিটার দূরত্ব পার হওয়া সর্বোচ্চ ৭০ সেকেন্ডে।
- ফার্টলিক অনুশীলন করা (এটা এমন একটি অনুশীলন যার মধ্যে হাটা, দ্রুত গতিতে হাঁটা, জগিং এবং দৌঁড় অন্তর্ভূক্ত এবং এটা হলো এই রকমঃ মুজাহীদগণ সাধারণত শুরু করনে ২ মিনিট সাধারণভাবে হাঁটার মাধ্যমে, অতঃপর দ্রুত বেগে ২ মিনিট হাঁটেন, অতঃপর
২ মিনিট জগিং করেন, এরপর ২ মিনিট দৌঁড়ান এবং এরপর ১০০ মিটার দূরত্ব আরো দ্রুত বেগে দৌঁড়ান, অতঃপর তিনি আবার হাঁটতে থাকনে এবং এভাবইে চলতে থাকে অবিরত, তারা এটা করতে থাকনে অবরিাম ১০ বার পর্যন্ত।)
সাধারণ হাঁটা হল দ্রুত হাঁটা, জগিং দ্রুত হাটা থেকে, দৌঁড়ানো জগিং থেকে আলাদা। সাধারণ হাঁটার সঙ্গে সবাই পরচিতি, দ্রুত হাঁটা হল, যে একজন ব্যক্তি দ্রুত বেগে হাঁটবে এভাবে যে তার পা মাটি থেকে ততটুকুর খুব বেশী উপরে উঠবেনা যতটুকু হাঁটার সময় ওঠে। জগিং এর ক্ষেত্রে, তা ১ কি:মি: (প্রায় ০.৬ মাইল) দূরত্ব অতক্রিম করা ৫.৫ মিনিটের কম সময়ের মধ্য। দৌঁড়ানোর ক্ষেত্রে, ১ কি: মি দূরত্ব অতক্রিম করা ৪.৫ মিনিটরে চেয়ে কম সময়ের মধ্য। মুজাহিদীনরা এ পর্যায়ের শারীরিক যোগ্যতা এক মাসের মধ্যে র্অজন করতে পারে যদি সে কঠোর সাধনা করে র্শত থাকে যে সে পর্যায়ক্রমে উন্নতি সাধন করবে এবং তার মাংসপশেী ক্ষতিগ্রস্থ না হয় বা ছিঁড়ে না যায়। উদাহরণ স্বরূপ, যদি কোন ব্যক্তি মাসের শুরুতে ১৫ মিনিট জগিংকরে এবং প্রতি দিন ২ মিনিট করে সে সময় বৃদ্ধি করতে থাক, তাহলে এক মাসে মধ্যে ঐ ব্যক্তি কোন রকম বিরতি ছাড়াই পুরো এক ঘন্টা জগিং করতে সক্ষম হবে (এক মাসে ২০ দিন হিসেব করে, যদি সে সপ্তাহে পাঁচ দিন এই শারীরিক ব্যায়ামের কাজটি করে)। অনুরূপভাবে, যদি সে মাসের শুরুতে ১০টি বুক-ডন (Push up) দিয়ে আরম্ভ করে এবং প্রতিদিন ৩টি করে বৃদ্ধি করতে থাকে, তবে সে এক মাসের মধ্যে বিরতিহীনভাবে ৭০টি পুশ আপ (Push up) দিতে সক্ষম হবে। সুতরাং, পর্যায়ক্রমে এবং অবিরাম অগ্রসর হওয়া কোন ব্যক্তির শারীরিক যোগ্যতা অর্জনের উপর অনেক বড় প্রভাব ফেলে। শুধু তাই নয়, কোন ব্যক্তির শারীরিক অনুশীলনের মধ্যে অবশ্যই কিছু শক্তিমত্তা অর্জন ও মাংসপেশীর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কিছু কৌশল থাকা উচিত এবং মুজাহিদীনদেরকে অবশ্যই সেসব ওয়েট ট্রেইনিং-এর উপর জোর দিতে হবে যা খুব বেশী ব্যায়ামের সরঞ্জাম ছাড়াই করা যায়, যেন সে তার শরীর চর্চা যে কোন স্থানে চালিয়ে যেতে পারে। ব্যায়ামের সরঞ্জাম একজনের শরীরকে অক্ষম করে দিতে পারে যদি অনেক দিন ধরে সেগুলো থেকে দূরে থাকে। সবচেয়ে উত্তম প্রকৃতির ব্যায়াম হল সেটি যা সহজে এবং শরীরের নিজস্ব শক্তির উপর নির্ভর করে করা যায়।
২৬. অস্ত্র দ্বারা প্রশিক্ষণ নেয়া এবং গুলি চালনা করতে শেখাঃ
বই পড়ে বা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিভাবে গুলি চালনা করতে হয় তা শেখা এবং অস্ত্র দ্বারা প্রশিক্ষণ নেয়া এর অন্তর্ভূক্ত। কেননা একজন মানুষ হয়তো সক্ষম হবে সত্যিকারের গোলাবারুদ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে বা গোলাবারুদ ছাড়া শুধুমাত্র অস্ত্র দ্বারা অথবা শুধুমাত্র ছবিসহ ম্যানুয়াল পড়ার মাধ্যমে; প্রত্যেক স্থানেই এই ব্যাপারে কোন না কোন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَءَاخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَىْءٍ فِى سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
“তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখবে এতদ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করিবে আল্লাহর শত্রুকে ও তোমাদের শত্রুকে এবং এতদ্ব্যতীত অন্যদেরকে যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন।” [36]
এবং রসূল ﷺ বলেছেন, “নিশ্চয়ই নিক্ষেপই শক্তি, নিক্ষেপই শক্তি এবং নিক্ষেপই শক্তি।”
সুতরাং প্রাপ্ত বয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিমের উপর অত্যাবশক এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বকে অবহেলা কর না। ইবনে তাইমিয়াহ (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “যুদ্ধের সামর্থ্য অর্জন ও ঘোড়া প্রস্তোুত করার মাধ্যমে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নেয়া একজনের উপর বাধ্যতামূলক যখন তার যুদ্ধ করার সামর্থ্য না থাকে কারণ কোন বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা বাধ্যতামূলক কাজ।” [37]
সুতরাং নিক্ষেপ করতে শেখা এবং অস্ত্রের সাথে সুপরিচিত হওয়ার মধ্যে রয়েছে মর্যাদা এবং সাফল্য অর্জনের পথ। এবং তাদের অবস্থা কতই না অদ্ভুত যাদের অস্ত্র দেখলেই ভয়ে চুল সাদা হয়ে যায়।
“ও উম্মাহ, সময়ের সাথে সাথে তোমরা অস্ত্র দেখতে ভুলে গিয়েছ।
জীবনের জন্য কেঁদো না এবং সফলতার জন্য ব্যাকুল হয়ো না।”
কি অদ্ভুতই না সেই মানুষ! যে শত্রুদের আঘাত করার ইচ্ছা পোষণ করে এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে চায় অথচ সে এটা পর্যন্ত জানেনা যে কিভাবে অস্ত্র ধরতে হয়! এতে কোন সন্দেহ নেই যে সে একজন গুনাহ্গার যার অস্ত্র চালনা শিক্ষার সুযোগ রয়েছে কিন্তু সে তা শিখে না কারণ আল্লাহ্ তার উপর যা বাধ্যতামূলক করেছেন তা পালন না করার জন্য। এবং আরো আশ্চর্যজনক সে সকল লোকের চিন্তাধারা যারা তাদের শক্তি এবং সময় ব্যয় করছে পৃথিবীর বিষয়াদি শেখার ব্যাপারে এবং কিভাবে আরাম আয়েশ বৃদ্ধি করা যায় এবং তারা বিরত থাকে অস্ত্র পরিচালনা শেখা থেকে। বাস্তবতা এই যে শত্রুরা তাদের দোরগোড়ায় এবং তাদের ভূমিতে আক্রমণ করেছে; এবং আল্লাহ্ই সকল সাহায্যের উৎস।
২৭. সাঁতার কাটতে এবং ঘোড়ায় চড়তে শেখাঃ
উমর বিন আল-খাত্তাব রা. শামের লোকদের কাছে লিখেছিলেন, “তোমাদের সন্তানদের সাঁতার কাটতে এবং ঘোড়ায় চড়তে শেখাও।” সাঁতার কাটতে এবং ঘোড়ায় চড়তে শিক্ষা মুজাহিদদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সুফল বয়ে আনবে কারণ সাঁতার হচ্ছে শারীরিক শক্তি অর্জনের সবচেয়ে ভালো উপায়গুলোর একটি এবং ঘোড়ায় চড়ার প্রয়োজনীয়তা কোন সময়েই এবং কোন স্থানেই শেষ হয়ে যাবে না; বিশেষ করে জিহাদ এবং যুদ্ধের ময়দানে। এটা বুখারীতে উল্লেখিত রসূল ﷺ এর হাদীস দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে, “পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত ঘোড়ার ঝুঁটিতে কল্যাণ রয়েছে।” সুতরাং ঘোড়া সর্বদা জিহাদে ব্যবহৃত হয়েছে এবং হবে, সেটা আফগানিস্তান, চেচনিয়া বা ইরাক যেখানেই হোক না কেন। সুতরাং যে জিহাদে অংশ নিতে চায় এবং সে তা করতে সক্ষম, তার উপর দায়িত্ব হলো সাঁতার কাটতে এবং ঘোড়ায় চড়তে শেখা কারণ এইগুলো সেই সব জিনিস যা তাকে জিহাদে সাহায্য করবে।
২৮. প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান অর্জন করাঃ
জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং জিহাদ ও মুজাহিদীনদের সাহায্য করার আরেকটি উপায় হলো প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান অর্জন করা যা মুজাহিদীনদের জন্য খুবই প্রয়োজন যেমনঃ ভাঙ্গা হাড়ের চিকিৎসা করা, ক্ষত নিরাময় করা, বিষ বের করে ফেলা, পেশী ও শিরা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করা। মুজাহিদীনদের এ সকল দক্ষতা আয়ত্ব করা দরকার। সুতরাং এগুলো খুবই উপকারী জ্ঞান যা জিহাদের ময়দানে অত্যন্ত প্রয়োজন এবং এটা সহজ ও নিরাপদে শেখা যায়।
২৯. জিহাদের ফিকহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাঃ
জিহাদ ও মুজাহিদীনদের সাহায্য করার আরেকটি উপায় হলো জিহাদের ফিকহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং জিহাদের বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং তা সম্মুখ যুদ্ধে অবস্থানরত মুজাহিদীনদের উপকারে আসবে। যেহেতু তাদের উপস্থিতি, যারা তাদের দ্বীনের বিষয়গুলো শিক্ষা দিবে, সম্মুখ যুদ্ধে অবস্থানরতদের জন্য খুবই প্রয়োজন। অনুরূপভাবে এই ব্যক্তিরা বক্তব্যের মাধ্যমে জিহাদ এবং মুজাহিদীনদেরকে মুনাফিকদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে উপকারে আসবে এবং যে জেনে কাজ করে সে ঐ ব্যক্তির মত নয়, যে জ্ঞান ছাড়া কাজ করে।
এক্ষেত্রে শাইখ ইউসুফ আল-উয়াইরী (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)-এর উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, তিনি তার জ্ঞান দ্বারা জিহাদের সাহায্য করেছিলেন এবং মুজাহিদীনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সুতরাং সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন একটি বিধ্বংসী শক্তি যা সে সকল লোকের শিংগুলো ভেঙ্গে ফেলত, যারা জিহাদের বিপক্ষে কথা বলত; তা তারা ভালো উদ্দেশ্যেই করুক বা খারাপ উদ্দেশ্যেই করুক।
জিহাদের ফিকহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের মধ্যে এটাও অন্তর্ভূক্ত যে, এমন কিছু পড়া যা জিহাদ সম্পর্কে এবং এর পদ্ধতি সম্পর্কে কারো জ্ঞানকে বৃদ্ধি করবে এবং এটাকে ঘিরে থাকা সন্দেহ দূর করবে। এটা অর্জন করা যেতে পারে আলেমদের বই পড়ে। যেমন- আব্দুল্লাহ আয্যাম, ইউসূফ আল-উয়াইরী, আবূ মুহাম্মাদ আল-মাকদিসী, আবু কাতাদাহ আল-ফিলিস্তিনি, আব্দুল কাদির ইবন আব্দিল আজিজ, সুলাইমান আল-উলওয়ান, আলি আর-খুদাইর, নাসির আল-ফাহদ, আব্দুল আজিজ আল-জাররু ও আবু জানদাল আল-আযদি প্রমুখ।
৩০. মুজাহিদীনদের আশ্রয় দেয়া এবং তাদের সম্মান করাঃ
আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَٰئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ…
“এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে, স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তারা একে অপরের সহায়ক।..”[38]
মুজাহিদীনরা সর্বদা ক্ষতি ও দুর্ভোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এমনকি শক্ররা এবং তাদের সহযোগী দোসররা তাঁদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া এবং তাঁদেরকে পালিয়ে থাকতে বাধ্য করে। সেই কারণেই তাদের সাহায্য করা, তাদের আশ্রয় দেয়া এবং তাদের আরাম-আয়েশ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী; তাদের সম্মান করা এবং কোন প্রকার বিরক্তি ছাড়াই অতিথি হিসাবে তাদের অধিকারগুলো পূরণ করা ঠিত যেরূপ চেচেনরা করেছিল আরব মুজাহিদীন ও অন্যদের সাথে, যারা তাদেরকে সাহায্য করতে গিয়েছিল। তারা তাদের আবাসস্থলকে মুজাহিদীনদের বিশ্রাম কেন্দ্রে পরিণত করেছিল যদিও তারা জানত যে যদি রাশিয়ান শত্রুরা তা জানতে পারতো তবে তারা ঘর বাড়ীগুলোকে ধ্বংস করে দিবে এবং এর বাসিন্দা পুরুষ ও নারীদের হত্যা করে ফেলবে।
এই একই ধরনের কাজ আফগানরাও করেছিল যখন কাবুল আমেরিকানদের দখলে চলে যায় তখন তারা মুজাহিদীনদের সম্মান করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন এবং ঐ অঞ্চলে আমেরিকানদের উপস্থিতি ও কর্তৃত্ব এবং নর্দান অ্যালাইয়েন্সের, যারা আমেরিকানদের সাহায্য করছিল, নিষ্ঠুরতা সত্বেও তারা আফগানিস্তান থেকে মুজাহিদীনদের বের হতে সাহায্য করেছিলেন। এছাড়া অনেক আফগানী মুজাহিদীনদের অধিকারগুলো পূরণ করেছিল তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে এবং শত্রুদের থেকে তাদেরকে গোপন রাখার মাধ্যমে যদিও এ জন্য তাদেরকে অনেক চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল। এই নীতিগুলোই আমাদেরকে নিজেদের মাঝে স্থাপন করতে হবে এবং এর জন্য চড়া মূল্য পরিশোধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, পাশাপাশি মনের মাঝে দয়াময় আল্লাহর থেকে মহা পুরস্কারের আশা রাখতে হবে, যেমন বলা হয়ঃ
“উৎসাহ আসে জাতির শক্তি অনুযায়ীই
এবং মর্যাদাও আসে জাতির শক্তির উপর নির্ভর করেই।”
৩১. কাফিরদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা এবং তাদের ঘৃণা করাঃ
এই বিষয়টি যদিও ঐ বিশ্বাসের সাথে যুক্ত যা ঈমানদারদের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত, কেউ যদি তা (হৃদয়ে) লালন করেন এবং তা বৃদ্ধি করেন তা হবে মুজাহিদীনদের সাহায্য করার একটি উপায়। ঐ ব্যক্তি যে নিজেকে কাফিরদের শত্রুতে পরিণত করেছে অবশ্যই সে মুজাহিদীন তথা আল্লাহর দলের একজন যারা কাফিরদের কষ্ট ও বেদনার স্বাদ দেয়।
৩২. বন্দীদের মুক্ত করার চেষ্টা বৃদ্ধি করাঃ
মুসলিম বন্দিদের ব্যাপারে এটা এমন একটি দায়বদ্ধতা ও দ্বীনি দায়িত্ব যা অবশ্যই পালন করতে হয়। ইসলাম হুকুম দিয়েছে কাফিরদের হাত হতে বন্দীদের মুক্ত করার জন্য। সুতরাং যদি কোন মুসলিম কাফিরদের হাতে বন্দী হয় তখন মুসলিমদের উপর এটা ফরজ হয়ে যায় সম্ভাব্য সকল উপায় ও চেষ্টার মাধ্যমে তাদের মুক্ত করা। এমনকি যুদ্ধ করে হলেও। যদি তাদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা না থাকে, তাদেরকে অবশ্যই মুক্তিপণ দিয়ে হলেও মুক্ত করতে হবে। যেহেতু রসূল ﷺ বলেছেন, “বন্দীদের মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, এবং অসুস্থদের দেখতে যাও।” [39]
সহীহ্ বুখারীতে বর্নিত আছে যে, আবু যুহাইফা রা. বলেছেনঃ “‘আমি আলী রা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে আল্লাহর কিতাব ছাড়া অন্য কোন অহী আছে কি?’ তিনি উত্তর দিলেনঃ ‘আল্লাহর কসম, একজন কুরআন অনুসরনকারীকে আল্লাহ্ যে বুঝ দেন এবং এই পৃষ্ঠাগুলোতে যা লেখা আছে তার বাহিরে আমি কিছু জানি না।’ তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই পৃষ্ঠাগুলোতে কি লেখা আছে?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘বন্দীদের মুক্ত কর, এবং একজন কাফেরের জন্যে মুসলিমকে হত্যা কর না।’”
ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, উমর রা. বলেছেন, ‘কাফিরদের হাতে আটক প্রত্যেকে বন্দীর মুক্তিপনের অর্থ মুসলিমদের কোষাগার (বাইতুল মাল) থেকে দেয়া হবে।’ [40]
ইবনে আবি শাইবা আরও বর্ণনা করেন যে, উমর রা. বলেছেন, ‘একজন বন্দী মুসলিমকে মুক্ত করা সমগ্র আরব উপদ্বীপ হতে আমার কাছে বেশী প্রিয়।’ [41]
অতীতের অনেক মুসলিম শাসক যেমন ইসলামিক স্পেনের আমীর আল-হাকাম বিন হিশাম বন্দীদের মুক্ত করার এবং কাফিরদের হাতকে গুড়িয়ে দেয়ার ব্যপারে বিস্ময়কর বীরত্ব দেখিছেন। যখন তিনি শুনছিলেন যে এক মুসলিমাকে বন্দী করা হয়েছে এবং সে মহিলা ব্যক্তিগত ভাবে তাকে উদ্দেশ্যে করে রক্ষার আহবান করেছে, তিনি তাঁর সেনাবাহিনী জড় করলেন, তাদের প্রস্তুত করলেন এবং ইউরোপিয়ানদের ভূমিতে ছুটে গেলেন ১৯৬ হিজরীতে তাদের হত্যা করেন, দখল করেন অনেক দূর্গ এবং ভয়াবহ ধ্বংস-যজ্ঞ চালিয়েছেন সে মহিলাকে উদ্ধারের জন্যে। তিনি তাদের অনেক পুরুষদের হত্যা করেন এবং মহিলাদের বন্দী করেন, বিশাল গণীমত সংগ্রহ করেন; তারপর অগ্রসর হতে থাকলেন ঐ অঞ্চলের দিকে যেখানে ঐ মহিলাকে বন্দী রাখা হয়েছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে মুক্ত করা হয়। অতঃপর তিনি করডোভায় বিজয়ী বেশে ফিরে এসেছিলেন।
যখন আল-মনসুর বিন আবি আমির উত্তর স্পেনের এক যুদ্ধ হতে ফিরলেন, তখন করডোভার ফটকে তার সাথে এক মুসলিম মহিলা দেখা করলেন এবং বললেনঃ ‘আমার ছেলে খ্রিষ্টানদের দ্বারা বন্দী রয়েছে! তুমি তাকে মুক্ত কর!’ তখন আল-মনসুর করডোভারে প্রবেশ করলেন না, বরং তিনি সেনাবাহিনী নিয়ে সেই স্থানে ফিরে গেলেন যে স্থান থেকে তিনি মাত্র ফিরে ছিলেন এবং বন্দীটিকে মুক্ত করতে ছুটলেন। সত্যনিষ্ঠ মুসলিমদের ইতিহাস এরূপ মহৎ ঘটনায় পরিপূর্ণ। নিশ্চয়ই এটা হচ্ছে সত্যবাদিতা, ন্যয়নিষ্ঠতা এবং একনিষ্ঠতা। এরা হলেন সেইসব শাসকেরা যারা তাদের জনগণের জন্যে কাজ করেন যদিও এতে তাদের ক্ষমতাও চলে যায়, জাতির কষ্ট তাদেরকে কষ্ট দিতো, জাতির বেদনায় তারা ব্যথিত হতেন। সুতরাং এই জন্যেই কর্মীদের কাজ করা উচিত এবং প্রতিযোগীদের প্রতিযোগীতা করা উচিত। বন্দীদের মুক্ত করার বিষয়টি একটি মতোবিরোধহীন বিষয় এবং এর প্রমাণসমূহ সর্বজন স্বীকৃত ও ব্যাপক এবং আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত এবং মুসলিমদের এই ব্যাপারে ইজমা রয়েছে।
[সুলাইমান আল-উলওয়ানের ‘আমেরিকা ও বন্দী’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত]
৩৩. বন্দীদের সংবাদ প্রচার করা এবং তাদের বিষয়ে সচেতন থাকাঃ
মুসলিমরা কাফিরদের হাতে বন্দী হলে তাদের কথা খুব কমই স্মরণ করা হয় এবং যে সব ভাইয়েরা তাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ও তাদের মুক্তির ব্যাপারে চেষ্টা করেন, তারা তাদের পাশে কাউকে পান না যারা বন্দীদের ব্যাপারে একই রকম উদ্বিগ্ন। কত মুজাহিদীন রয়েছেন আরব ও অনারব অত্যাচারীদের কারাগারে বন্দী যাদের জন্যে কাঁদার কেউ নেই অথবা তাদের খোঁজ নেয়ার কেউ নেই। সুতরাং জিহাদ ও মুজাহিদীনদেরকে সাহায্য করার উল্লেখযোগ্য উপায়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বন্দী মুজাহিদীনদের ব্যাপারে যে কোন সংবাদ প্রচারের চেষ্টা করা এবং তাদের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা মুক্ত হন। এটাই হচ্ছে নূন্যতম যা আমরা মুসলিম বন্দীদের ব্যাপারে করতে পারি।
৩৪. ইলেক্ট্রনিক জিহাদঃ
এই পরিভাষার উদ্ভব হয়েছে তাদের জন্যে যারা জিহাদে অংশ নিতে চান ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং এটা এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে অনেক উপকার পাওয়া যায়; যেমন সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের কাজে, মুজাহিদীনদের সমর্থন ও তাদের পক্ষ অবলম্বন করার মাধ্যমে এবং তাদের মতাদর্শ ও আহবান জন-সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে। এই প্রচেষ্টা দু’টি প্রধান ভাগে বিভক্তঃ (ফোরামের মাধ্যমে) আলোচনা সভা ও হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে।
(ফোরামের মাধ্যমে) আলোচনা সভার ক্ষেত্রে, কিছু ভাইয়ের একত্রিত হয়ে প্রত্যেকের সুপরিচিত ফোরামগুলোতে তালিকাভুক্ত (রেজিস্টার) হওয়া উচিত এবং নিম্নে উল্লেখিত প্রকারের সংবাদগুলো পোস্ট (প্রচার) করা উচিতঃ
- আমাদের সময়ের জিহাদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্নণা করে এ ব্যাপারে উদ্বুব্ধ করা।
- মুজাহিদীনদের পক্ষে লেখা এবং তাদের সম্মানকে রক্ষা করা তাদের থেকে যারা তাদের সম্পর্কে মিথ্যা বলে।
- জন-সাধারণের মাঝে জিহাদ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা।
- জিহাদের উপর গবেষণামূলক লেখা ও জ্ঞান সমৃদ্ধ প্রবন্ধগুলো প্রচার করা।
- পথভ্রষ্ট ও আধুনিকতাবাদীদের মধ্যে যারা জিহাদের বিপক্ষে তাদের বিরোধিতা করা এবং তাদের ভুলগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা।
ভাইদের উচিত প্রত্যেক দিন প্রতিটি আলোচনা সভায় এই ধরনের সংবাদগুলোকে ছড়িয়ে দেয়া এবং অন্য ভাইদের উচিত এই সংবাদগুলোর প্রতি সাড়া দেয়া যাতে করে সংবাদগুলো আলোচনা সভার প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়।
হ্যাকিং পদ্ধতির যথাযথোপযুক্ত পরিভাষাটি হচ্ছে ‘ইলেক্ট্রনিক জিহাদ’। কারণ, শব্দটি দ্বারা শক্তি প্রয়োগ, আঘাত করা এবং আক্রমণ করা বুঝায়।
সুতরাং আল্লাহ যাকে এই বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন, তার এই জ্ঞান ব্যবহার করে জিহাদে অংশগ্রহন করার ব্যাপারে কৃপণ হওয়া উচিত নয়। তার উচিত আমেরিকান, ইয়াহুদী, আধুনিকতাবাদী, স্যেকুলার ওয়েবসাইটগুলো এবং যে সমস্ত সাইট জিহাদ ও মুজাহিদীনদের বিরোধিতা করে তাদের ধ্বংসে আত্মনিয়োগ করা।
যাদের এই ধরনের কলা-কৌশলের জ্ঞান নেই, তাদের উচিত একনিষ্ঠতা ও এখলাসের সাথে এই জ্ঞান অর্জন করা। কারণ, এটা শক্রকে আক্রমণ করার একটি মাধ্যম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে হলেও আসুন আমারা জিহাদে অংশগ্রহন করি।
৩৫. কাফিরদের বিরুদ্ধাচরণ করাঃ
যারা ন্যায়সঙ্গত কারণে কাফিরদের সাথে বসবাস করছেন, তাদের দায়িত্ব হলো সাধ্যমত সেই সব কাফিরদের বিরোধিতা করা, যারা মুসলিমদের ক্ষতি করছে। যেমনটি নু‘আম বিন মাসুদ কনফিডারেটসের যুদ্ধে এবং ইয়াহুদীদের বনী কুরাইদ্বার সাথে খন্দকের যুদ্ধে করা হয়েছিল এবং যেরূপ করেছিলেন ফির‘আউনের বংশের ঐ বিশ্বাসী লোকটি যার কথা আল্লাহ বলেছেনঃ
وَقَالَ رَجُلٌ مُّؤْمِنٌ مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَكْتُمُ إِيمَانَهُ أَتَقْتُلُونَ رَجُلًا أَن يَقُولَ رَبِّيَ اللَّهُ…
“ফেরাউন গোত্রের এক মুমিন ব্যক্তি, যে তার ঈমান গোপন রাখত, সে বলল, তোমরা কি একজনকে এজন্যে হত্যা করবে যে, সে বলে, আমার পালনকর্তা আল্লাহ..।”[42]
কাফিরদের বিরোধিতা করার জন্য জরুরী হলো কোনভাবেই, কোন উপায়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য না করা। কারণ, যে এরূপ করে, তার এই কাজকেআল্লাহর বাণী অনুসারে কুফর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছেঃ
وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ…
“তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।…”[43]
৩৬. সন্তানদের জিহাদ ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের ভালোবাসার মানসিকতা দিয়ে গড়ে তোলাঃ
কারো পরিবার ও সন্তান হলো ভবিষ্যতের প্রস্তুতি স্বরূপ এবং তারা নিজেরা হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। পরিবারবর্গ ও সন্তানদের মধ্যে জিহাদ ও মুজাহিদীনদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করা, আল্লাহর দ্বীনের জন্যে শহীদ হওয়া ও ত্যাগ স্বীকার করার ধারণা দেয়া প্রত্যেকের কর্তব্য যাতে করে যখন তারা আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে, আপনি (আল্লাহর) আনুগত্য করতে তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে একজন হতে পারবেন। এটার আরেকটি উপকারীতা হলো এটার ফলে পরিবারগুলো প্রস্তুত হবে এবং আগ্রহ করবে মুজাহিদীনদের সাহায্য এবং তাদের মধ্যে যারা ফেরারি তাদের আশ্রয় দেয়ার জন্যে। এটার আরেকটি উপকার হলো কারো মৃত্যুর পরও তার সন্তানেরা জিহাদ চালিয়ে যাবে। আব্দুল্লাহ বিন আয-যুবায়েরের পিতা আয-যুবায়ের বিন আল-আওআম নিজ চোখে যুদ্ধ দেখার জন্যে খুব ছোট কাল থেকে তাকে সাথে করে যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিয়ে যেতেন এবং তিনি আহত মুজাহিদীনদের সেবা করতেন। ফলে যখন তার বয়স হলো, তিনি এক দুঃসাহসী মুজাহিদে পরিণত হলেন। যখন কাউকে কোন কিছুর জন্যে গড়ে তোলা হয়, তখন সে তা হওয়ার জন্যে গড়ে উঠে। কারো পরিবারবর্গ ও সন্তানদের জিহাদের উপর গড়ে তোলার পদ্ধতি হলো নিম্নরূপঃ
- রসূল ﷺ -এর জীবনী ও তিনি যেসব যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সেই ঘটনাগুলো তাদের শিক্ষা দেয়া;
- সিরাত গ্রন্থে সাহাবী ও তাবেঈদের যেসব বীরত্বপূর্ণ সহীহ্ ঘটনা আছে সেগুলো তাদের শিক্ষা দেয়া;
- জিহাদ ও মুজাহিদীনদের প্রতি ভালোবাসা ও সংশ্লিষ্টতা বাড়ানোর জন্যে তাদেরকে জিহাদ ও মুজাহিদীনদের অডিও শোনানো এবং ভিডিও দেখানো;
- বর্তমান ও অতীতের মুজাহিদীনদের সংবাদ ও জীবনী থেকে তাদেরকে বিভিন্ন ঘটনা শোনানো;
- জিহাদ ও শাহাদাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় ও শাহাদাতের মহত্ব বর্ণনামূলক বক্তৃতা ও উপদেশ তাদের শোনানো;
- বীর মুজাহিদীনদের নামে সন্তানদের নাম রাখা।
৩৭. বিলাসিতা ত্যাগ করাঃ
জিহাদ ও এর সাথে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার একটি মাধ্যম হলো বিলাসিতা, আরাম-আয়েশ এবং দুনিয়ার পিছু ছোটা ত্যাগ করা, যেরূপ আব্দুল্লাহ আয্যাম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছিলেন, ‘বিলাসিতা হলো জিহাদের শত্রু।’
বিলাসিতার যেসব প্রভাব পড়ে তা হলো ক্বলবের (হৃদয়) কঠোরতা, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, দুনিয়ার প্রতি ছোটা ও সেগুলো ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে ঘৃণা করা। এগুলোই মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে রাখে; বরং সত্যকে ত্যাগ করার দিকে নিয়ে যায় এবং অন্যকেও তা ত্যাগ করতে পথ দেখায়!
আল-কুরআনে এই দুনিয়ার বিলাসিতা ও আরামকে নেতিবাচক ভাব ছাড়া অন্যকোনভাবে বর্ণনা করা হয়নিঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ كَافِرُونَ
“কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করা হলেই তার বিত্তশালী অধিবাসীরা বলতে শুরু করেছে, তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, আমরা তা মানি না।”[44]
وَكَذٰلِكَ مَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِى قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدْنَآ ءَابَآءَنَا عَلٰىٓ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلٰىٓ ءَاثٰرِهِم مُّقْتَدُونَ
“এমনিভাবে আপনার পূর্বে আমি যখন কোন জনপদে কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি, তখনই তাদের বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে চলছি।” [45]
وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَآ أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ
“আর পাপিষ্ঠরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল যার সামগ্রী তাদেরকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহা অপরাধী।” [46]
إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذٰلِكَ مُتْرَفِينَ
“তারা ইতিপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যশীল ছিল।” [47]
আরো দেখুনঃ (বনী-ইসরাঈল (১৭): ১৬), (আল-আম্বিয়া (২১): ১৩), এবং (আল-মু’মিনূন (২৩): ৩৩, ৬৪)। এই আটটি আয়াতে বিলাসিতার উল্লেখ করা হয়েছে এবং কোনটিতেই বিলাসিতাকে নেতিবাচক ভাব ছাড়া অন্যকোনভাবে বর্ণনা করা হয়নি।
কেহ এই লেখা পড়ে যেন এরূপ মনে না করেন যে আমরা সম্পদের গুরুত্বকে ছোট করছি যেহেতু সম্পদ আমাদের জীবনকে রক্ষা করে (আল্লাহর পরে) এবং যুদ্ধের চালিকা শক্তি। এই বিষয়টি, কিভাবে সম্পদ ব্যয় করতে হবে দ্বিতীয় অধ্যায়ে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
অধিকন্তু, আমরা সর্তক করছি অত্যাধিক অর্থ খরচ করা এবং বিলাসিতার ব্যাপারে, বিশেষ করে তাদেরকে সর্তক করছি যারা জিহাদের ক্ষেত্রে সক্রিয় আছেন। কারণ তাদের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব আমরা নিজের চোখে দেখেছি। যেমন, এর কারণে অনেকে জিহাদের বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করছেন এবং দুনিয়ার পিছনে ছুটেছেন। আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
“হে মু’মিনগন! তোমাদের ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদিগকে আল্লাহর স্মরণে উদাসীন না করে, যাহারা উদাসীন হইবে তাহারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।” [48]
وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ
“এবং জানিয়া রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো এক পরীক্ষা এবং আল্লাহই নিকট মহাপুরষ্কার রহিয়াছে।” [49]
ইবনে খালদুন তার ‘মুকাদ্দিমাহ্’-য় অনেকগুলো উপকারী অনুচ্ছেদের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন যেখানে তিনি বিলাসিতা এবং সম্পদের অনেকগুলো নেতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন এবং বর্ণনা করছেন কিভাবে তা একটি জাতির ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং কিভাবে এর খারাপ দিকগুলো একটি জাতিকে শত্রুদের হাতে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেয়।
৩৮. শত্রুদের পণ্যসামগ্রী বর্জন করাঃ
এই বিষয়ে শাইখ হামুদ বিন ‘উক্বলা’ আশ-শুআ’ঈব (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি দয়া করুন)- এর ফাতাওয়াটি উপস্থাপন করা আমাদের জন্য যথেষ্ট যেখানে তিনি বলেছেনঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সমস্ত বিশ্বের প্রতিপালক এবং শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রসূল মুহাম্মদ ﷺ এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবাদের উপর।”
আল্লাহ ﷻ বলেছেনঃ
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ …
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল; তার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর….” [50]
মহিমান্বিত আল্লাহ বিশ্বাসীদের বর্ণনা দিয়ে বলেছেনঃ
أَعِزَّةٍ عَلَى الْكٰفِرِينَ يُجٰهِدُونَ فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَآئِمٍ …
“…তারা কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে; তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না…”[51]
কাফিরদের সাথে যুদ্ধের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেনঃ
فَإِذَا انسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ …
“…মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাবে, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে …।”[52]
তিনি আরও বলেছেনঃ
وَلَا يَطَـُٔونَ مَوْطِئًا يَغِيظُ الْكُفَّارَ وَلَا يَنَالُونَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلًا إِلَّا كُتِبَ لَهُم بِهِۦ عَمَلٌ صٰلِحٌ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ…
“…এবং কাফিরদের ক্রোধ উদ্রেক করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শত্রুদের নিকট হতে কিছু প্রাপ্ত হওয়া উহাদের সৎকর্মরূপে গণ্য হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না…।”[53]
নিশ্চয়ই, যুদ্ধ ও জিহাদের ব্যবহারের জন্য প্রত্যেক সময় ও যুগের নিজস্ব অস্ত্র রয়েছে যা শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় এবং মুসলিমরা শত্রুদের পরাজিত করতে ও তাদের দূর্বল করে দিতেসব সময়ই এই সব অস্ত্র ব্যবহার করেছে। যা আশ-শাওকানী (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “আল্লাহ আমাদেরকে কুফ্ফারদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কিভাবে তা করতে হবে সেটি নির্দিষ্ট করেননি এবং তিনি এ কথাও বলেননি যে আমাদেরকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে যদি এই এই পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।”[54]
এবং মহিমান্বিত আল্লাহ্ যা সর্বজনীনভাবে বলেছেন এটি তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, “মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাবে, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকবে।” এবং যে পদ্ধতিগুলো জিহাদে রসূলুলাহ্ ﷺ শত্রুদের দূর্বল করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, যা বর্তমানে economic boycott হিসেবে পরিচিত। এবং রসূলুলাহ্ ﷺ যে এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তার কিছু উদাহরণ নিচে দেয়া হলোঃ
১. জিহাদের প্রথম তৎপরতা এবং প্রথম যে অভিযান রসূলুলাহ্ ﷺ-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল এবং প্রথম যুদ্ধ যার নেতৃত্ব তিনি দিয়েছিলেন, পরিচালিত হয়েছিল কুরাইশদের সিরিয়া (উত্তরে) এবং ইয়ামেনের (দক্ষিণে) বাণিজ্য পথকে হুমকির সম্মুখীন করা এবং যার উদ্দেশ্য ছিল মক্কার অর্থনীতিতে তীব্র আঘাত হানার মাধ্যমে মক্কার অর্থনৈতিক অবস্থাকে দূর্বল করে দেয়া।
২. বনু আন-নাজিরের ইয়াহুদিদেরকে অবরোধের ঘটনা এবং তা সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। যখন তারা চুক্তি ভঙ্গ করে, রসূলুলাহ্ ﷺ তাদের অবরোধ করেন এবং তাদের খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলেন এবং পুড়িয়ে দেন। সুতরাং, তারা তাঁকে বলে পাঠায় যে তারা সে ভূমি ছেড়ে চলে যাবে। সুতরাং, তিনি ﷺ অর্থনৈতিক যুদ্ধের মাধ্যমে তাদেরকে পরাজিত করেছিলেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহা মহিমান্বিত আল্লাহ্ নিম্নের আয়াতটি নাযিল করেনঃ
مَا قَطَعْتُم مِّن لِّينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَآئِمَةً عَلٰىٓ أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيُخْزِىَ الْفٰسِقِينَ
“তোমরা যে খেজুর বৃক্ষগুলি কর্তন করেছ এবং যেগুলি কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছে, তাহা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে; এবং এই জন্য যে, আল্লাহ পাপাচারীদের লাঞ্ছিত করবেন।”[55]
সুতরাং তাদেরকে অবরোধ করা ও তাদের ফসল ধ্বংস করে দেয়া, যা ছিল তাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তি, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে পরাজিত করা ও মদীনা থেকে তাদের বের করে দেওয়ার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম।
৩. মক্কা বিজয়ের পর আত-তাইফ অবরোধ করার ঘটনা এবং এ ঘটনাটি উল্লেখিত আছে সহীহ্ আল বুখারীর জিহাদ অধ্যায়ে এবং সহীহ্ মুসলিমের জিহাদ অধ্যায় এবং ইবনে আল ক্বাইয়্যিম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) এ ঘটনাটি বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন ‘যাদ-আল-মা’দ-এ, এবং ইবন সা’দ তাঁর ‘তাবাকাত’ (২/১৫৮)-এ বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, “…সুতরাং আল্লাহর রসূল ﷺ তাইফের ফসল কেঁটে ফেলতে ও পুড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেন। সুতরাং মুসলিমরা সেগুলো কেঁটে ফেলার জন্য অগ্রসর হয়।” ইবন আল-ক্বাইয়্যিম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) এই ঘটনার উপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, “এটা কাফিরদের ফসল কেঁটে ফেলার দলিল যদি তা তাদের দূর্বল ও ক্ষতিগ্রস্থ করবে।”
৪. আরো রয়েছে সাহাবী সুমামা বিন আযাল আল-হানাফি রা.-এর অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘটনা এবং এ ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে ইতিহাস ও জীবনীর বিষয়ক গ্রন্থগুলোতে; ইবনে ইসহাক্ব (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) তাঁর ‘সীরাত’-এ, ইবনে আল-ক্বাইয়্যিম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) তাঁর ‘যাদ আল-মা’দ’-এ, ইমাম বুখারী (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) ‘সামরিক অভিযান’ অধ্যায়ে, এবং ইমাম মুসলিম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) ‘জিহাদ’ অধ্যায়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর ঘটনাটি মক্কা বিজয়ের পূর্বে সংঘটিত হয়, যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং উ’মরা পালনের জন্য মক্কার দিকে অগ্রসর হন। উ’মরাহ্ পালনের পর তিনি কুরাইশদের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা দেন এই বলে যে, “আল্লাহর শপথ! কখনই না! যে পর্যন্তনা রসূলুলাহ্ ﷺ আমাকে অনুমতি দিবেন আমি আল-ইয়ামামাহ থেকে তোমাদেরকে গমের একটি দানাও দেবনা।” অতঃপর তিনি আল-ইয়ামামাতে যান এবং সেখানকার জনগণকে কোন কিছু মক্কায় নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখেন যেন তা কুরাইশদের কাছে পৌছতে না পারে। রসূলুলাহ্ ﷺ এই অর্থনৈতিক অবরোধকে অনুমোদন করেছিলেন এবং এটা ছিল সাহাবা রাদিআল্লাহু আনহুম-গণের মহৎ গুণাবলীর একটি।
এ সকল ঘটনা এবং এই ঘটনাগুলোর সাদৃশ অন্য ঘটনাগুলো মূলত সকল যুগের ও স্থানের কাফিরদের সাথে রসূলুলাহ্ ﷺ এর যুদ্ধ করার মূলনীতিগুলোর একটি। এবং বর্তমানে এটার (শত্রুদের পণ্যসামগ্রী বর্জন করা) দ্বারা জিহাদ করার বিষয়টি মুসলিম উম্মাহর হাতে ন্যস্ত। আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর…”[56]
… এবং এটা জিহাদের একটি উপকারী পন্থা যাতে সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারে, কারণ অন্যরা কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা পরিত্যাগ করেছে। এ কারণে, আমরা আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে উৎসাহিত করছি আমেরিকানদের, ব্রিটিশদের ও ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য, এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার এই অস্ত্রকে ব্যবহার করার জন্য যা তাদের অর্থনীতিকে দূর্বল করে দিবে। এবং যদি মুসলিম জনসাধারণের পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণের ক্ষমতা বা সামর্থ্য না থাকে, তবে কমপক্ষে যা তারা করতে পারে তা হল অর্থনৈতিকভাবে তাদেরকে বর্জন করা এবং পাশাপাশি তাদের কোম্পানীগুলো ও তাদের প্রতি আসক্তিকে বা তাদের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলো বর্জন করা। রসূলুলাহ্ ﷺ বলেছেন, “কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর তোমাদের সম্পদ, হাত এবং জিহ্বা দ্বারা।”[57]
অনুরূপভাবে, আমি আমার মুসলিম ভাইদের ধৈর্য্য ধরার জন্য উৎসাহিত করছি এবং এই জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহবান জানাই, যেরূপ মহামহিমান্বিত আল্লাহ ﷻ বলেছেন,
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর, ধৈর্য্যে প্রতিযোগিতা কর এবং সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক …।”[58]
এবং বিরক্ত বা অলস হয়ে যেওনা না কারণ ধৈয্যের সাথেই বিজয়ের আগমন ঘটে, এবং তাদের উচিত দৃঢ়তার সাথে, বলিষ্ঠ ও সমন্বিত ভাবে আমেরিকানদের, বৃটিশদের ও ইহুদীদের কোম্পানীগুলো ও তাদের স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলো বর্জন করার জন্য সর্ব শক্তি ব্যয় করা।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى
“…সৎকর্ম ও তাক্ওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে…।”[59]
আলহামদুলিল্লাহ্! আমেরিকান, বৃটিশ ও ইহুদীদের অর্থনীতিতে গণ বর্জনের প্রভাব সম্পর্কে পূর্বে আমরা সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোকপাত করেছি। আমেরিকান ও বৃটেন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জিহাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধের পৃষ্ঠ-পোষক এবং তারা ফিলিস্তিনে ইস্রায়েলীদের সাহায্যকারী এবং তারা আফগানিস্তানে তালিবানদের ইসলামিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে[60], এবং তারা চেচনিয়ার বিরুদ্ধে রাশিয়ানদের সাহায্যকারী এবং ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, কাশ্মির ও অন্যান্য দেশে আমাদের মুজাহিদীন ভাইদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডারদের সাহায্যকারী। জিহাদ ও মুসলিমদের দূর্বল করার চেষ্টার পেছনে তারাই কাজ করছে এবং তারাই ইরাকের মুসলিমদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, একইভাবে তারা প্রতিদিন বিগত দশ বছর ধরে নির্মমভাবে তাদের উপর অনবরত ভারী গোলাবর্ষন করে যাচ্ছে সেই দেশের শাসকদের অগ্রাহ্য করে।[61] এবং তারা মহিমান্বিত আল্লাহর বাণীর বাস্তবায়ন করেছে এবং যথার্থতা প্রমাণ করেছেঃ
وَلَن تَرْضٰى عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصٰرٰى حَتّٰى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ …
“ইহুদীরা এবং নাসারা কখনও আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের দ্বীনের অনুসরণ করেন …।”[62]
হে আল্লাহ্! আমেরিকানদের, বৃটিশদের, ইহুদীদের, তাদের সাহায্যকারী ও গোলামদের বিতাড়িত করুন। হে আল্লাহ্! আপনার ক্রোধ তাদের উপর বর্ষন করুন এবং তাদেরকে দুঃখ দুর্দশাপূর্ণ বছর দিন যেমন দিয়েছিলেন ইউসূফ (আঃ)-এর জাতির উপর। হে আল্লাহ শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন আপনার রসূল মুহাম্মাদ ﷺ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবাগণের উপর। আমীন।
বিখ্যাত শাইখ হামুদ বিন ‘উক্বলা আশ-শুআইবী কর্তৃক নির্দেশিত,
১১/২৮/১৪২১,
৩৯. যারা যুদ্ধ করে (মুসলিমদের বিরুদ্ধে) (হারবিইয়্যিন), তাদের থেকে কর্মী নিযুক্ত কর নাঃ[63]
এটা অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছেদের সাথে সম্পর্কিত, এবং এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হল সে সকল দেশের অধিবাসীদেরকে কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত না করা যে দেশগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি কোন হিন্দুকে কাজে নিয়োগ দিবেন না কারণ হিন্দুরা কাশ্মীরে আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং আপনি ফিলিপাইনী কোন খ্রিষ্টানকে কাজে নিয়োগ করবেন না কারণ তারা দক্ষিণ ফিলিপাইনে আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে প্রভৃতি। সাধারণভাবে বলতে গেলে আমরা বলি যে, এই কাফির পাপীদের আমাদের কোনই প্রয়োজন নেই। একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র যারা মুসলিম তাদেরকেই কাজে নিয়োগ দিতে পারে, কারণ সেটাই যথেষ্ট এবং উত্তম, যাতে করে যে অর্থ সে এ সকল কর্মচারীদের প্রদান করছে তা যেন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত না হতে পারে। এটি একটি সুস্পষ্ট বিষয়, যা আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ
“…এবং মুশরিক পুরুষ তোমাদেরকে মুগ্ধ করলেও মু’মিন ক্রীতদাস তা অপেক্ষা উত্তম।…”[64]
উপসংহার
আমি এই লেখাটি শেষ করতে চাই জিহাদ পরিত্যাগ করার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে যা শাইখ ‘আবদিল আজিজ আল-জালিল (আল্লাহ্ তাঁকে নিরাপদে রাখুন) তাঁর ‘আত-তারবিয়্যাহ আল-জিহাদিয়্যাহ’ নামক বইয়ে উল্লেখ করেছেনঃ
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ পরিত্যাগ করার ভয়াবহতাঃ
যেহেতু আমরা শুরুতেই দুনিয়া ও আখেরাতে জিহাদ ও এর ফলাফলের উপকারীতার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছি, সুতরাং এখন পরিসমাপ্তিতে জিহাদ পরিত্যাগ করা ও এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ থেকে বিরত থাকার ভয়াবহতা, ক্ষতি এবং দুনিয়া ও আখিরাতের খারাপ
পরিসমাপ্তির ফলাফল সম্পর্কে বলা অনেকটা সহজ হবে।
আলেম সমাজ সর্বদাই জিহাদ পরিত্যাগ করাকে সবচেয়ে বড় পাপের একটি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইবনে হাজার আল-হাইযামী (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেনঃ “৩৯১তম ও ৩৯২তম বৃহত্তম পাপগুলো হলঃ যখন তা প্রত্যেকের উপর ফরজ হয়ে যায় তখন জিহাদ পরিত্যাগ করা; যেমনঃ যখন শত্রুরা ইসলামের ভূমিতে প্রবেশ করে অথবা কোন মুসলিমকে বন্দী হিসেবে নিয়ে যায় যদিও তাকে ছাড়িয়ে আনার ক্ষমতা আছে অথবা যখন সমগ্র জাতি একত্রে জিহাদ পরিত্যাগ করা, অথবা যখন রিবাতের (সীমান্তের) পাহারাদাররা ইসলামিক দেশের সীমানা সুরক্ষিত না করে তা কাফিরদের আক্রমণের জন্য উন্মুক্ত রেখে দেয়।”[65]
এবং এজন্য জিহাদ পরিত্যাগ করা ও এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ না করা মুনাফিকীর লক্ষণ কারণ রসূল ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি জিহাদ না করেই মারা যায় অথবা অন্তত জিহাদ করার নিয়্যত না করেই মৃত্যুবরণ করে, তবে সে মুনাফিকের একটি শাখার উপর মারা গেল।”এবং আল্লাহ্ এটাকে পরকালে বিশ্বাসের ঘাটতি স্বরূপ অথবা সুনিশ্চিত বিশ্বাসের অভাব হিসেবে গণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
لَا يَسْتَـْٔذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ أَن يُجٰهِدُوا بِأَمْوٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌۢ بِالْمُتَّقِينَ * إِنَّمَا يَسْتَـْٔذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِى رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ * وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُۥ عُدَّةً وَلٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقٰعِدِينَ
“যারা আল্লাহে ও শেষ দিবসে ঈমান আনে, তারা নিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করার ব্যাপারে আপনার কাছে অব্যহতি লাভের অনুমতি প্রার্থনা করে না। আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সম্বন্ধে ভাল জানেন। আপনার কাছে অব্যহতির অনুমতি প্রার্থনা করে কেবল তারাই যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসে ঈমান আনে না এবং যাদের চিত্ত সংশয়যুক্ত। ফলে তারা তো আপন সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। তারা বাহির হতে চাইলে তারা নিশ্চয়ই ইহার জন্য প্রস্তুতির ব্যবস্থা করতো, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর মনঃপুত ছিল না। সুতরাং তিনি তাদের বিরত রাখেন এবং তাদের বলা হয়, ‘যারা বসে আছে তাদের সাথে বসে থাক।”[66]
জিহাদ পরিত্যাগের বিপদ ও কূফলের সার কথা নিম্নে দেয়া হলোঃ
১. জিহাদ ত্যাগ করা একটি কবীরা গুনাহ, যেরূপ আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি। কারণ তা একজনকে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর শাস্তির যোগ্য করে তুলে। আল্লাহ্ বলেছেনঃ
إِلَّا تَنفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْـًٔا ۗ وَاللَّهُ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
“যদি তোমরা অভিযানে বাহির না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তিনদিবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁহার কোনই ক্ষতি করতে পাবরে না। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।”[67]
তিনি আরও বলেছেনঃ
قُلْ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوٰنُكُمْ وَأَزْوٰجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوٰلٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجٰرَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسٰكِنُ تَرْضَوْنَهَآ أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٍ فِى سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُوا حَتّٰى يَأْتِىَ اللَّهُ بِأَمْرِهِۦ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفٰسِقِينَ * لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ فِى مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ ۙ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ ۙ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْـًٔا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُم مُّدْبِرِينَ * ثُمَّ أَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُۥ عَلٰى رَسُولِهِۦ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَنزَلَ جُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكٰفِرِينَ
“বল, ‘তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পত্নী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বানিজ্য যাহার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাহা তোমরা ভালোবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত।’ আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। আল্লাহ তোমাদেরকে তো সাহায্য করিয়াছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনে যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল তোমাদের সংখ্যাধিক্য; কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসে নাই এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হইয়াছিল ও পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিয়া পলায়ন করিয়াছিলে। অতঃপর আল্লাহ তাঁহার নিকট হতে তাঁহার রসূল ও মু’মিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবর্তীণ করেন যাহা তোমরা দেখিতে পাও নাই এবং তিনি কাফিরদের শাস্তি প্রদান করেন; ইহাই কাফিরদের কর্মফল।”[68]
ইবনুল কাইয়ুম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে সবচেয়ে কম অঙ্গীকারপূর্ণ ও নিকৃষ্টতম পাপী বলেছেন যারা ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাকে অবহেলা করে। কারণ তিনি বলেছেন, “জিহাদ হচ্ছে ভালো কাজের আদেশ দেয়া ও মন্দ কাজের নিষেধ করা; আল্লাহ, তাঁর রসূল, ও তাঁর বান্দাদের প্রতি সত্যনিষ্ঠ হওয়া, বিজয় এনে দেয়া এবং আল্লাহ্,তাঁর রসূলকে, তাঁর দ্বীন ও তাঁর কিতাবকে সাহায্য করা। যাদের ক্ষেত্রে এইসব দায়িত্ব ঘটেনি, তাদের উচিত তা বাস্তবায়ন করা অথবা এর জন্য নিয়্যত করা। দ্বীনের ব্যাপারে সবচেয়ে কম অঙ্গীকারপূর্ণ ও নিকৃষ্টতম পাপী হচ্ছে তারা যারা এই দায়িত্ব ছেড়ে দেয় যদিও তারা দুনিয়ার সমস্ত ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে। তুমি দেখবে তাদের খুব কম সংখ্যক লোকেরই (ইসলামের গাইরতের জন্য) মুখ লাল হয় যখন তারা দেখে আল্লাহর সীমানা লংঘিত হচ্ছে বা কম লোকই দ্বীনের ব্যাপারে সাহায্য করছে। আল্লাহর কাছে বড় বড় পাপীদের অবস্থাও এদের থেকে অনেক ভালো।”[69]
এই কারণেই জিহাদ ছেড়ে দেয়া দুনিয়া ও আখিরাতে দুর্দশার কারণ। নিম্নের আল্লাহর কথার প্রকৃত অর্থ এটাইঃ
وَأَنفِقُوا فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ…
“তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করিও না…।”[70]
ইবনে কাছির (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “মুহাজিরীনদের এক জন কন্সট্যানটিনোপলে যুদ্ধ করার সময় সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন যতক্ষণ না তিনি নিহত হন। তখন লোকেরা বলল, ‘সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করল।’ সুতরাং আবু আইযুব আল-আনসারী রা. বললেন, ‘এই ব্যাপারে আমাদের বেশী জ্ঞান আছে। এটা নাযিল হয় আমাদের ব্যাপারে যখন আমরা রসূল ﷺ -এর সাথে ছিলাম। আমরা অনেক যুদ্ধের স্বাক্ষী ছিলাম এবং তাঁকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সাহায্য করেছি। যখন ইসলাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং প্রতিষ্ঠিত হল, আমরা আনসাররা একত্রিত হলাম এবং বললাম, ‘আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন তাঁর রাসূলের সঙ্গি করে, তাঁর বিজয়ের মাধ্যমে এবং ইসলাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটার লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যুদ্ধ শেষ হয়েছে। সুতরাং চলো আমরা স্ত্রী, সন্তান-সন্ততিদের কাছে ফিরে যাই এবং তাদের সাথে বসবাস করি। তখন এই আয়াত নাযিল হয়।’ সুতরাং ধ্বংস নিহিত আছে স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও সম্পদের মাঝে বসবাসের মধ্যে এবং জিহাদ ত্যাগের মধ্যে। ”[71]
জিহাদ ত্যাগ আল ওয়ালা ওয়াল বারা’র (আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা) বিশ্বাসকে দূর্বল করে দেয়। এটার কারণ, যা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আল ওয়ালা ওয়াল বারা’র বিশ্বাস ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ (আমর বিল-মারুফ ওয়া নাহি আন-মুনকার) এবং জিহাদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সুতরাং যে ব্যক্তি জিহাদ থেকে দূরে থাকে, তার আল ওয়ালা ওয়াল বারা’র বিশ্বাস দূর্বল হয়ে যায় এবং সে গভীর বিপদে নিমজ্জিত।
২. জিহাদ ছেড়ে দেয়ার কারণে শিরক ও জুলুম সর্বত্র ছড়িয়ে পরে, কুফর ও কাফিররা শক্তিশালী হয়ে যায় এবং মানুষ মানুষের দাসে পরিণত হয় এবং এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে এর অনুপুস্থিতিতে মানুষের মাঝে দুর্দশা ও দূর্নীতি ছড়িয়ে পরে। আল্লাহ বলেছেনঃ
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعٰلَمِينَ
“আল্লাহ্ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করিতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হইয়া যাইত। কিন্তু আল্লাহ্ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল।”[72]
আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيٰرِهِم بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّآ أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوٰمِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوٰتٌ وَمَسٰجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا ۗ وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ
“তাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু এই কারণে যে, তারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্।’ আল্লাহ্ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তা হলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিষ্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ- যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নামে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।”[73]
সুতরাং ব্যাপারটা যদি এরূপ না হত যে আল্লাহ্ ঈমানদারদের জিহাদের মাধ্যমে কাফিরদেরকে বিতাড়িত করবেন, তাহলে কাফিররা তাদের জুলুমের মাধ্যমে ঈমানদারদের উপর কর্তৃত্ব লাভ করতো আর যদি তারা কর্তৃত্ব পায়, তাহলে তারা মানুষকে জোর করে আল্লাহর পরিবর্তে তাদের দাসে পরিণত করতো। যদি মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের ইবাদত করতো, তাহলে সমস্ত বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যেত যেহেতু জীবন সঠিকভাবে পরিচালিত হবেনা যদি না তা আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী পরিচালিত না হয় এবং এটাই আল্লাহর দাসত্ব কায়েমের পথ। এই ভাবেই উন্নত, সৎ ও প্রশংসিত চরিত্র মানবজাতি দ্বারা রচিত হয়েছে কারণ যে এই পদ্ধতি সৃষ্টি করেছেন তিনি আল্লাহ, তিনি সেই মহান সত্ত্বা যিনি জীবন সৃষ্টি করেছেন, তিনি জানেন কি আছে জীবের বুকের গভীরে। অন্য দিকে যদি কোন দেশে কাফিররা কর্তৃত্ব লাভ করে, তারা নিজেদের খেয়াল খুশি অনুযায়ী মানুষের আইন প্রনয়ন করে। কিন্তু সব বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই এবং তারা ভুল-ভ্রান্তি ও কামনা-বাসনার উর্ধ্বে নয় এবং তারা জানেনা প্রকৃতপক্ষে মানবজাতির জন্য কি সবচেয়ে উত্তম। ফলে তারা যা ইচ্ছা তা করে বেড়ায়, মানুষের জীবনেকে দূষিত করে ফেলে যা বর্তমানে ঘটছে এবং যেখানে কাফিররা শাসন করছে দেখুন বাস্তবে কি ঘটছে ঐ সব দেশে যা এই বিষয়ের ব্যাখার জন্য যথেষ্ট। এটা কি জিহাদ ত্যাগ করার ফল নয় যার জন্য আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন? মানুষের জীবন অনেক সুন্দর ও ভালো হতো যদি শারী‘আ অনুযায়ী জীবন পরিচালিত হতো। এই কারণেই রসূল সাল্লাল্লাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম হুকুম দিয়েছেন জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এমনকি তা কোন জালেম শাসকের অধিনে হলেও যে কিনা কাফির হয়ে যায় নাই। কারণ কাফির শাসকদের মানব রচিত আইনের অধিনে শাসিত হওয়ার চেয়ে জালেম শাসকের অধিনে আল্লাহর আইন দ্বারা শাসিত হওয়া অনেক ভালো কেননা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য আইন দিয়ে শাসনই পৃথিবীতে দূর্নীতির প্রধান কারণ।
৩. লাঞ্ছনা ও অবমাননার কারণ হলো জিহাদ ত্যাগ করা যেরূপ রসূল ﷺ বলেছেন,
“যদি তুমি জিহাদ ত্যাগ কর, গরুর লেজ ধরে থাক এবং বাইয়ুল ইনাহ (এক প্রকার সুদের কারবার) তে জড়িত থাক, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন যা সরানো হবে না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহ্র কাছে তওবা না কর এবং ফিরে না আস যার উপর তোমরা ছিলে (জিহাদে)।”[74]
এটা এমন একটি ব্যাপার যা আমরা প্রত্যক্ষ করছি আমাদের সময়ে, যেহেতু কাফিররা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে এবং মুসলিমরা পরাধীনতার মধ্যে বাস করছে- কাফিররা তাদের সম্পদ ভোগ করছে, তাদের কর্মকান্ডে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে, তাদেরকে সকল প্রকার লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার করছে। এবং এটার অন্য কোন কারণ নেই শুধুমাত্র আল্লাহর বিধান পেছনে ছুড়ে ফেলা ও শারী‘আর বিধি-বিধান ত্যাগ করার করণে যার মধ্যে জিহাদের বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভূক্ত। কাফিররা মুসলিমদেরকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিবে না। চিন্তা কর তারা কি করছে। তাদের খারাপ কাজগুলো বন্ধ করবে না সহজ ও মিষ্টি কথার দ্বারা। বরং যা তাদের আতঙ্কিত করবে ও বাধ্য করবে তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে তা হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ; কুফর ও এর সহযোগীদের জন্য যার মধ্যে রয়েছে লাঞ্ছনা এবং মুসলিমদের জন্য শক্তি ও সম্মান । এই বাস্তবতা ইতিহাস প্রত্যক্ষ করেছে। যেহেতু এমন কোন ভূমি নেই যেখানে জিহাদের পতাকা উত্তোলিত হয়েছে কিন্তু মুসলিমরা সেখানে সম্মানিত হয়নি এবং কাফির শত্রুরা মুজাহিদীনদের “আল্লাহু আকবার” ধ্বনিতে আতঙ্কিত হয়নি।
আল-মওদুদী বলেছেন, “এই উম্মাহ্ নিজেকে রক্ষা করার জন্য যদি এই খারাপ কাজ থেকে তওবা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করতো এবং আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা, সম্পদ, ব্যক্তিগত ইচ্ছা ত্যাগ করতো, জান কোরবানী দিত এবং এটার জন্য তার প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতো তাহলে এই উম্মাহর দূর্বল ও অত্যাচারিত জাতিতে পরিণত হওয়ার কোন উপায় থাকতো না। এবং এমন কোন শক্তি থাকতো না, তা সে যতোই শক্তিশালী হোক না কেন, মুসলিমদের সম্মান ও পবিত্রতা কেড়ে নেয়। এই উম্মাহ্কে মিথ্যার কাছে মাথা নত করার চেয়ে সত্যের কাছে মাথা নত করাকে এবং মৃত্যুকে অগ্রধিকার দিতে হবে। যদি তার সত্যের বাণীকে প্রতিষ্ঠিত করার ও এটাকে সাহায্য করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে তাকে কমপক্ষে সত্যেকে যে কোন উপায়ে রক্ষা করতে হবে এবং এটাই হচ্ছে সবচেয়ে নিম্ন স্তরের সম্মান যা সে অর্জন করতে পারে।”[75]
সাইয়্যিদ কুতুব (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া (হিজরত করা) এবং জিহাদ করাকে ভয় পায় এই জন্য যে, তাদের শাস্তি, যন্ত্রনা, শহীদ, জীবন হানি, সন্তান এবং সম্পত্তি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে তাহলে তাদের ভেবে দেখা উচিত তাদের এ দুনিয়াবি ত্যাগ যেমন তাদের জীবন, সম্পদ, সন্তান এবং সর্বোপরি তাদের চরিত্র ও সম্মান আল্লাহ্ বাদে অন্য কারো জন্য…সত্যিকার অর্থে, দুনিয়ার জালিম শাসকের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য যে ত্যাগের প্রয়োজন তা দুনিয়াবি ত্যাগ যা আল্লাহ্ বাদে অন্য কারো জন্য করা হয় তার তুলনায় অনেক কম। সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো এই সব ত্যাগ লাঞ্ছনা, পাপ ও অপমান ছাড়া কিছুই বয়ে আনে না।”[76]
৪. জিহাদ পরিত্যাগের মাধ্যমে তুমি দুনিয়া ও আখিরাতের ঐসব পুরষ্কার হতে বঞ্চিত হচ্ছো যা আল্লাহ্ মুজাহিদীন ও শহীদদের জন্য আখিরাতে রেখেছেন । তুমি আরও বঞ্চিত হচ্ছো এই দুনিয়ার সম্মানের জীবন যা শারী‘আর উপর স্থাপিত এবং বঞ্চিত হচ্ছো শাহাদাত ও যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ (গণীমতের মাল) থেকে। এবং ঈমানের উপর বেড়ে উঠা হতে বঞ্চিত হচ্ছো যা জিহাদ ও আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও যুদ্ধ ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়।
৫. জিহাদ পরিত্যাগের ফলে মুসলিমদের মধ্যে শত্রুতা ও বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং এটা এমন একটি ব্যাপার যা আমরা এখন প্রত্যক্ষ করছি। এমন কোন যুগ অতিবাহিত হয়নি যখন মুসলিম উম্মাহ্ জিহাদকে ভুলে গিয়েছিল যার ফলশ্র“তিতে তারা নিজেরা নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল, এক মুসলিম অপর মুসলিম ভাই এর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলি নিয়েছিল এবং একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। আমাদের বর্তমান পরিস্থিত সম্পর্কে আরেকটি পর্যবেক্ষণ হলো যা আল্লাহর শারী’আ ও জিহাদ ত্যাগের কারণে হয়েছে তা হলো মুসলিমরা তাদের জন্য বিভেদ, ভাগাভাগি ও অনৈক্যকে নিয়মে পরিনত করেছে এবং তারা নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। এটা আর অন্য কোন কারণে নয় শুধুমাত্র সত্যিকারের মানহাজ (কর্ম পদ্ধতি) ও আল্লাহর এই ইবাদত (শরী’আ বাস্তবায়ন) একেবারে বাদ দেওয়ার কারণে হয়েছে।
যার ফলে কাফিররা মুসলিমদের ভূমিতে আধিপত্য বিস্তার করছে এবং তারা মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ ও ঝগড়াকে উস্কে দিয়েছে। আল্লাহর শারী’আ থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের ব্যাপারে এটাই আল্লাহর পন্থা এবং তাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার একটি প্রধান অংশ ভুলে গিয়েছে, কেননা আল্লাহ বলেছেনঃ
وَمِنَ الَّذِينَ قَالُوٓا إِنَّا نَصٰرٰىٓ أَخَذْنَا مِيثٰقَهُمْ فَنَسُوا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا بِهِۦ فَأَغْرَيْنَا بَيْنَهُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَآءَ إِلٰى يَوْمِ الْقِيٰمَةِ ۚ وَسَوْفَ يُنَبِّئُهُمُ اللَّهُ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ
“যারা বলে, ‘আমরা খৃষ্টান’, তাদেরও অংগীকার গ্রহণ করেছিলাম; কিন্তু তারা যা উপদিষ্ট হয়েছিল তার এক অংশ ভুলে গিয়েছে। সুতরাং আমি তাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগরূক রেখেছি; তারা যা করত আল্লাহ্ তাদেরকে অচিরেই তা জানাইয়া দিবেন।”[77]
হে আল্লাহ! আমাদের তা শিক্ষা দিন যা আমাদের উপকারে আসবে এবং আমাদের উপকৃত করুন যা আমরা শিক্ষা লাভ করেছি।
হে আল্লাহ! আমাদের সত্যকে সত্য বলে জানার এবং তা অনুসরণ করা তৌফিক দিন এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলে জানার ও তা বর্জন করার তৌফিক দান করুন।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে জিহাদের মাধ্যমে সম্মাননদান করুন এবং শহীদের কাফেলায় অংশ গ্রহন করার তৌফিক দান করুন এবং আমাদেরকে আপনার আনুগত্য ও সন্তুষ্টির জন্য কবুল করুন।
আমাদের সর্বশেষ দো’আ হলো সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন রসূল সাল্লালাহু আ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ এবং তাঁর সঙ্গীদের উপর। আল্লাহুম্মা আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
আত-তিবয়ান পাবলিকেশন্স-এর প্রকাশিত (বাংলা) অন্যান্য বই সমূহঃ
১. ফিদায়ী অভিযানের বিষয়ে ইসলামের বিধান – এটি কি আত্মহত্যা নাকি শাহাদাহ্ বরণ?
শহীদ, আল-হাফিজ, মুজাহিদ শাইখ ইউসূফ ইব্ন সালেহ্ আল-উয়াইরী (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)
২. মুসলিমদের ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
শহীদ শাইখ ডঃ আব্দুল্লাহ্ আযযাম (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)
৩. মাশারী আল-আশউয়াক্ব ইলা মাশারী আল-উশাক্ব
শাইখ আহমাদ ইব্রাহীম মুহাম্মদ আল দীমাশকী আল দুমইয়াতি (ইবন নুহাস)
৪. জিহাদ বিষয়ক মৌলিক আলোচনা
শাইখ আব্দুল ক্বাদির ইবনে আব্দুল আযিয
৫. মিল্লাতে ইব্রাহীম
আবু মুহাম্মদ ’আসিম আল-মাকদিসী
৬.“মানব রচিত আইন দ্বারা বিচার করা”-ছোট কুফর না বড় কুফ?
শাইখ আবু হামজা আল-মিশরী
৭. গণতন্ত্রঃ একটি জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন!)
শাইখ আবু মুহাম্মদ ’আসিম আল-মাকদিসী
৮. ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্রের সংশয় সমূহ
আত-তিবয়ান পাবলিকেশন্স
৯.আল্লাহ্ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তূত করছেন
শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি
১০. জিহাদের ভূমির পথে
ইমাম ইউসূফ ইবন সালেহ আল-’উয়ায়রী (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)
১১. তাওহীদ আল-আ’মালি
শহীদ শাইখ ডঃ আব্দুল্লাহ্ আযযাম (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)
১২. আল-ইমাম আহমাদ ইবনু নাসর আল-খুজা’ঈ
আল-হাফিজ ইবনু কাসীর (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)
১৩. ত্বলিব আল ইলমদের প্রতি উপদেশ
শাইখ সুলতান আল উতাইবি (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন)
***************
[1] সাহায্যপ্রাপ্ত দল।
[2] সূরা বাকারাহ (২): ১২০
[3] সূরা তাওবাহ (৯): ৯২
[4] সূরা হুজুরাত (৪৯): ১৫
[5] সূরা তাওবাহ (৯): ৪৪-৪৫
[6] মাজমু আল ফাতাওয়া: ২৮/৪৩৬
[7] সূরা তাওবাহ (৯):৪৬
[8] যুদ্ধ
[9] সহীহ বুখারী
[10] সহীহ বুখারী
[11] সহীহ আল-জামে; ৫৪১৯
[12] আবূ- দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমাদ এবং সহীহ আল-জামে; # ৬২৯২
[13] ব্যক্তিগত বাধ্যবাধকতা
[14] আহমাদ ও নাসাঈ
[15] আহমাদ ও আবূ দাউদ
[16] বুখারী ও মুসলিম
[17] ইবনে মাজাহ এবং হাদীসটি সহীহ
[18] মুসলিম ও আবূ দাউদ
[19] মুসলিম , আহমাদ, আবূ দাউদ এবং নাসাঈ
[20] আবূ দাউদে বর্ণিত এবং সহীহ
[21] আবূ দাউদ ও তিরমিযী
[22] সূরা মুহাম্মাদ (৪৭): ৩৮
[23] গনীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ
[24] সূরা হাশর (৫৯): ১০
[25] সূরা মুহাম্মাদ (৪৭): ৩৮
[26] সূরা নিসা (৪): ৮৪
[27] সূরা আনফাল (৮): ৬৫
[28] সূরা কাসাস (২৮): ২০
[29] সূরা তাহরীম (৬৬): ৯
[30] মাজমু আল – ফাতাওয়া: ৩৫/১৫৯
[31] সূরা মায়িদা (৫): ২
[32] মাজমু আল-ফাতাওয়া; ২২/৩৬৮
[33] ফাতহুল বারী: কুনুত অধ্যায়
[34] সূরা আহযাব (৩৩): ২০
[35] সূরা তাওবাহ (৯): ১১১
[36] সূরা আনফাল (৮): ৬০
[37] মাজমু আল- ফাতাওয়া; ২৮/৩৫৫
[38] সূরা আনফাল (৮): ৭২
[39] সহীহ আল বুখারী
[40] ইবনে আবী শাইবা থেকে তাঁর মুসান্নাফে বর্ণনা কৃত; ৬/৪৯৭
[41] মুসান্নাফ; ৬/৪৯৬
[42] সূরা মু’মিন (৪০): ২৮
[43] সূরা মায়িদাহ (৫): ৫১
[44] সূরা সাবা (৩৪): ৩৪
[45] সূরা যুখরুফ (৪৩): ২৩
[46] সূরা হূদ (১১): ১১৬
[47] সূরা আল-ওয়াকি‘আ (৫৬): ৪৫
[48] সূরা মুনাফিকুন (৬৩): ৯
[49] সূরা আনফাল (৮): ২৮
[50] সূরা ফাতহ (৪৮): ২৯
[51] সূরা মায়িদাহ (৫): ৫৪
[52] সূরা তাওবা (৯): ৫
[53] সূরা তাওবা (৯): ১২০
[54] আস-ছেইল আল-জিরার; ৪/৫৩৪
[55] সূরা হাশর (৫৯): ৫
[56] সূরা তাগাবুন (৬৪): ১৬
[57] আনাস(রা;) থেকে আহমাদ ও আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে।
[58] সূরা আল-ইমরান (৩): ২০০
[59] সূরা মায়িদাহ (৫): ২
[60] অনুবাদক-এর নোটঃ অবশ্যই এই ফাতওয়া ৯/১১-এর ঘটনার আগে দেয়া হয়েছে।
[61] অনুবাদকের নোটঃ আরো একবার, এটি পূর্বের ঘটনাকে নির্দেশ করছে।
[62] সূরা বাকারাহ (২): ১২০
[63] নোটঃ পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে গাল্ফের দেশগুলোর জন্য এটা বেশী প্রযোজ্য।
[64] সূরা বাকারাহ (২): ২২১
[65] আজ্-জাওজির মিন ইকতিরাফ আল-কাবায়ের; ২/১৬৩
[66] সূরা তাওবা (৯): ৪৪-৪৬
[67] সূরা তাওবা (৯): ৩৯
[68] সূরা তাওবা (৯): ২৪-২৬
[69] উদাদ আস-সাবিরিন; পৃষ্ঠা-১২১
[70] সূরা বাকারাহ (২): ১৯৫
[71] তাফসীরে ইবনে কাসীর; ১/২২৮
[72] সূরা বাকারাহ (২): ২৫১
[73] সূরা হাজ্জ (২২): ৪০
[74] মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে এবং হাদীসটি সহীহ।
[75] শরীয়াত আল ইসলাম ফিল জিহাদ; পৃষ্ঠা ৩৪
[76] তাফসীর ফি-যিলালিল কুরআন; ৪/১৯৪১
[77] সূরা মায়িদা (৫): ১৪
প্রিয় ও সম্মানিত ভাই, আসসালামু ওয়ালাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহ, আমার প্রশ্নঃ জিহাদে অংশগ্রহণ ও সহায়তার ৩৯ টি উপায়” এই ডকুমেন্টসটি করার কোথায় পথ পাচ্ছিনা কেনো?
প্রিয় ও সম্মানিত ভাই, আসসালামু ওয়ালাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহ, আমার প্রশ্নঃ জিহাদে অংশগ্রহণ ও সহায়তার ৩৯ টি উপায়” এই ডকুমেন্টসটি ডাউনলোড করার কোনো পথ পাচ্ছিনা কেনো?
প্রিয় ও সম্মানিত ভাই, আসসালামু ওয়ালাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহ, আমার প্রশ্নঃ জিহাদে অংশগ্রহণ ও সহায়তার ৩৯ টি উপায়” এই ডকুমেন্টসটি ডাউনলোড করার কোনো পথ পাচ্ছিনা কেনো? আমার কী করনীয় এখন?
প্রিয় ও সম্মানিত ভাই, আসসালামু ওয়ালাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহ, একি কমেন্ট একাধিকবার চলে যাওয়ায় দুঃখিত আমি পাশাপাশি কিছুক্ষণ চেষ্টার ফলে “জিহাদে অংশগ্রহণ ও সহায়তার ৩৯ টি উপায়” এই ডকুমেন্টসটি ডাউনলোড করতে সক্ষম হয়েছি। যাঝাকুমুল্লহু খইর