আন-নাসর মিডিয়াউস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহপাকিস্তানপ্রবন্ধ-নিবন্ধবার্তা ও বিবৃতি [আন নাসর]মিডিয়া

Bengali Translation || একটি সংবাদ… একটি বার্তা… || উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ

اداره النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media

پیش کرتے ہیں
পরিবেশিত
Presents

بنگالی ترجمہ
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

عنوان:
শিরোনাম:
Titled:

ایک خبر … ایک پیغام …

একটি সংবাদ… একটি বার্তা…

A news… a message…

از استاد اسامہ محمود حفظہ اللہ
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
Ustad Usama Mahmud Hafizahullah

 

 

پی ڈی ایف
PDF (325 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৩২৫ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/DFeSAqZFxk78rax
লিংক-২ :
https://archive.org/download/ekti-songbad-ekti-barta-update/Songbad%20-%20AQS%20-%20UstadUsamaMahmudHafi.pdf
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/b2c0036f-854d-485a-b9ac-6c5becda9867/454574db20a8607e8985f685ee9ac4df7b5dfb99feb9b6c29d905be231eefe72

 

ورڈ
WORD (335 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৩৩৫ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/3Mq8JxnmpQ5EjdA
লিংক-২ :
https://archive.org/download/ekti-songbad-ekti-barta-update/Songbad%20-%20AQS%20-%20UstadUsamaMahmudHafi.docx
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/8525684c-6fe5-4a3c-87e1-e9ee75e98acc/8ef4f29ed64a9af7014bc43186e98aec48ae819d1bfc23ff0e92e394aaf117bc

 

غلاف ٢
২anner [2.4 MB] 
ব্যানার [২.৪  মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/mFD2en5sAa7QP5H
লিংক-২ :
https://archive.org/download/ekti-songbad-ekti-barta-update/Songbad%20-%20AQS%20-%20UstadUsamaMahmudHafi.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/d2382273-2fbd-476b-bf7d-3c03882b8a19/bbce56baf88db98144e8f7a50aa355004986c8b13f7ddd34e06911ed7f5dd2ad

 

غلاف ١
Book cover [932 KB] 
বুক কভার [৯৩২ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/iqQZ9JZqisHfFLy
লিংক-১ :
https://archive.org/download/ekti-songbad-ekti-barta-update/Songbad%20-%20AQS%20-%20UstadUsamaMahmudHafi%20cover.jpg
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/a35c4f4f-f1c1-4b68-a4fe-871186dd895f/054d4d5f1e9026bb21834ebde831f76f2531632fa7cc332a44ee43824a0d49b9

*****


***********

একটি সংবাদএকটি বার্তা…

উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ

আস সাহাব মিডিয়া উপমহাদেশ

মুহাররম ১৪৪৫ হিজরী

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله الكريم، أما بعد.

সকল প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের, দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর সম্মানিত রাসূলের উপর।

হামদ ও সালাতের পর..

আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে পাকিস্তানের করাচি শহর থেকে আমাদের এক বোন ‘লাপাত্তা’ (নিখোঁজ) হয়ে গিয়েছিল। তাকে তার নিজ দেশের লোকেরাই অন্যদের নিকট বিক্রি করে দেয়। আজ আবার আমাদের সেই ‘লাপাত্তা’ (নিখোঁজ) বোনের হঠাৎ ‘পাত্তা’ (খোঁজ) পাওয়া গেছে।

সংবাদ হলো- সে বোন আজও আমেরিকায় আছেন। তবে হাতকড়া এবং শিকলাবদ্ধ অবস্থায়। জীর্ণ-শীর্ণ দেহ, রুগ্ন শরীর, ক্লান্ত চোখ, বিধ্বস্ত চেহারা, ভাঙ্গা দাঁত এবং ছেঁড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় সেখানকার এক কুখ্যাত কারাগারে জীবনসন্ধ্যা পার করছেন। অবস্থা এমন যে, তিনি প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন, আবার নতুন জীবন লাভ করছেন।

তাঁর সম্মানিতা বোন ফৌযিয়া সিদ্দিকী এবং মুশতাক আহমাদ খান সাহেব সরাসরি তাঁর এ অবস্থা দেখেছেন এবং তাঁর আর্তনাদও সরাসরি তাঁর কাছ থেকেই শুনেছেন। এটা কার আর্তনাদ? কী ধরণের আর্তনাদ? কোন কোন জালেম ও দুশমনদের বিরুদ্ধে এ আর্তনাদ? কাদের নিকট পৌঁছানোর জন্য এ আর্তনাদ?!

এ সকল হৃদয় বিদারক প্রশ্ন অন্তরে রক্তক্ষরণ এবং আত্মাকে বিক্ষুব্ধ করে। বর্তমানে আমাদের চিন্তাধারা ‘উম্মাহ’ হিসেবে ‘প্রাচীন’ অবস্থানে নেই। লাভ-লোকসানের হিসেব বদলে গেছে। সম্মান ও অসম্মানের মানদণ্ডও পরিবর্তিত হয়েছে।

এই আর্তনাদ যদি সে যুগে পৌঁছানো যেত, যে যুগে ‘ঈমানী গায়রত’ (আত্মমর্যাদাবোধ) এবং ‘ইসলামী আখলাক’ মুসলিমদের মূল পরিচয় হিসাবে স্বীকৃত ছিল, তাহলে পুরো বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর মাঝে জাগরণ সৃষ্টি হতো। ফলশ্রুতিতে বাবা তার মেয়ের, ভাই তার বোনের সামনা-সামনি হতে লজ্জাবোধ করতো। এই এক ঘটনা-ই উম্মতের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াত। রাজা-প্রজা, অভিজাত-সাধারণ, সব শ্রেণীর ভেদাভেদ ভুলে সবাই নিজের বোনের প্রতিশোধ নিতে এবং তাকে ফিরিয়ে আনতে মরতে ও মারতে প্রস্তুত হয়ে যেতো।

আমরা সেই উম্মত, যাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের এক সাহাবীর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তৎকালীন সময়ে পুরো উম্মত থেকে মৃত্যুর বায়আত নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়; সাত আসমানের উপর থেকে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই বায়আতের প্রশংসায় কুরআনের কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ করেছিলেন। এটা কিভাবে সম্ভব যে, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী উম্মতেরা আজ নিজেদের বোনের এমন আর্তনাদ শোনার পরও ব্যথিত হয় না! তাদের ভেতর কোন স্পন্দন আলোড়িত হয় না!!

আমাদের এই বোনকে নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করুন! এই বোন নিজের দ্বীন নিয়ে গর্ব করতেন। আল কুরআনের হাফেজা ছিলেন এবং উম্মতের জন্য একজন দরদী নারী ছিলেন। সে বোনের উপর কি পরিমাণ জুলুম-নির্যাততের স্টিম রোলার চালানো হয়েছে? সে বোন এক দিন, এক সপ্তাহ বা এক মাস নয়; এক বছর বা দু-তিন বছরও নয়, টানা বিশ বছর যাবৎ এই জুলুমের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন! এত বছর ধরে জুলুমের শিকার হাওয়ার পরেও, মুসলিমদের নিকট তাঁর করুণ আর্তনাদ পৌঁছানোর পরেও সে বোন মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছেন না!

এখনো তাঁর একটু সুখ-প্রশান্তির সাথে দেখা মেলেনি। বরং দুঃখ-দুর্দশা, অশ্রু বিসর্জন এবং ফোঁপানির সাথে পুনরায় তাকে সেই কুখ্যাত কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমাহীন ও অবর্ণনীয় জুলুমের কারণে স্বয়ং আমেরিকানদের কাছেও, এটি ‘সময়ের কুখ্যাত কারাগার’ হিসেবে পরিচিত।

বোন আফিয়া সিদ্দিকীর এই আর্তনাদ আজ আবারো এভাবে জনসম্মুখে আসার পিছনে অবশ্যই কোনো না কোন কারণ রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার নিকট এর কোনো তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, তিনি হাকীম (মহাজ্ঞানী) ও ক্বাদীর (সর্বশক্তিমান রব)। তিনি কখনো কখনো তাঁর কোন এক বান্দাকে বিপদাপদে আক্রান্ত করেন, আর এই একজনের মাধ্যমে বাকি সব লোকদের পরীক্ষা নিয়ে নেন।

বস্তুত: বিপদে পড়া ব্যক্তিটি আল্লাহ তাআলার প্রিয় ওলী হয়ে থাকেন। এ বিপদে আক্রান্ত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে নিজের নৈকট্য ও ভালোবাসা দান করেন। কিন্তু অন্যরা এই জুলুমের শিকার ব্যক্তিকে দেখে কী অবস্থান গ্রহণ করে, সেটাই আল্লাহ দেখতে চান। তারা কি জুলুম দূর করতে রুখে দাঁড়ায় এবং সেসব পদ্ধতি অবলম্বন করে; যেগুলো বাস্তবেই মাজলুমদের সাহায্য করবে? নাকি নিজেদের স্বাভাবিক জীবনাচারে মগ্ন থেকে মাঝে মাঝে শুধু কিছু বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে নিজের কর্তব্য পালন যথেষ্ট হয়েছে বলে মনে করতে থাকে?

মনে রাখা দরকার, এই মাজলুম ব্যক্তির সাহায্যের অনুপাতে আল্লাহর পক্ষ হতে অন্য লোকদের নাজাত অথবা পাকড়াও এর ফয়সালা হয়।

আল্লাহ তাআলা যেহেতু শাকুর (যথাযথ প্রতিদান দানকারী) এবং ওয়াদূদ (পরম স্নেহপরায়ণ সত্তা), তাই তিনি বান্দা কর্তৃক তাঁর প্রতি ভালোবাসা, ইখলাসসহ সকল আমল ও কুরবানীকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করেন। যা কোন মানুষ ধারণাও করতে পারবে না।

সুতরাং বোন আফিয়া সিদ্দিকী সফল। ইনশা আল্লাহ, আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানে অনেক কিছু দান করবেন। যার ওয়াদা আল্লাহ করেছেন।

হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী-

لَوْ أنَّ رَجُلًا يُجَرّ عَلَى وَجْهِهِ مِنْ يَوْمِ وُلِدَ إِلَى أَنْ يَمُوتَ هَرَمًا فِي مَرْضَاةِ اللهِ لَحَقّرَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. المعجم الكبير

অর্থাৎ “যদি কোন মুমিনকে তার জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি আল্লাহর আনুগত্যের পথে উপুড় করে টানা হেঁচড়া করা হয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সম্মান এবং পুরস্কার পেয়ে নিজের জীবনের এ দুঃখ-কষ্টকে তুচ্ছ মনে করবে।” (আল মুজামুল কাবীর তবারানী, ১৭/১২২ হাদীস নং: ৩০৩ [শামেলা])

মূল পেরেশানি কিন্তু আমাদের। সবচেয়ে বিপদসঙ্কুল অবস্থা আমাদের দেড়শ কোটি মুসলমানের। কারণ, এটি আমাদের ঈমান ও ইখলাসের কঠিন পরীক্ষা। আল্লাহ তাআলা যখন আমাদেরকে তাঁর এই প্রিয় বান্দী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বিশাল উম্মতের মান-মর্যাদা ও ইজ্জত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, তখন আমরা কী জবাব দিবো?

এমন নয় যে, পাকিস্তান থেকে বোন আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির জন্য কোন প্রচেষ্টা চালানো হয়নি। বড় বড় র‌্যালি বের হয়েছে ও বিভিন্ন রেজুলেশন পাশ হয়েছে। এমনকি আমেরিকান শাসকদের বরাবর চিঠিও পাঠানো হয়েছে। আইনি লড়াইও চালানো হয়েছে। অহিংস গণতান্ত্রিক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে যা যা করা দরকার, সম্ভাব্য সবকিছু করা হয়েছে। এগুলোর দ্বারা আমেরিকানদের প্রতি নিজেদের রাগ, দুঃখ-কষ্ট, সনির্বন্ধ অনুরোধ ও তোষামোদি পৌঁছানো হয়েছে। কিন্তু এসব কিছু নিষ্ফল প্রমাণিত হয়েছে। জালিম আমেরিকা এসব কিছুর প্রতি বিন্দু পরিমাণও কর্ণপাত করেনি! উল্টো তার জুলুম, হঠকারিতা ও অহংকার আরও বেড়েছে!!

এমতাবস্থায় আমরা আর কী কী করতে পারি? এ কথা ভেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকব যে, আমাদের যে জিম্মাদারী ছিল, তা আমরা পূরণ করেছি, তাই এখন আর আমাদের কোন জিম্মাদারী বাকি নেই?

বাস্তবতা হলো – এখনো নির্যাতনের পর নির্যাতন চলছে! আর আমরা মনে মনে আশ্বস্ত হয়ে বসে আছি যে, আমরা তো দায়িত্ব শেষ করে ফেলেছি! আজও কি সেসময় আসেনি, যখন আমরা তথাকথিত কল্যাণ চিন্তা, বিলাসিতা ও যুক্তিবোধ এক পাশে রেখে ঈমানী চেতনার ডাকে সাড়া দিবো? আর চিৎকার করে বলবো যে, না…!

আমাদের মূল ফরযটা আদায়ই এখনো বাকি। তা এভাবে যে, জালেম যদি শুধু শক্তির ভাষা বোঝে, বুদ্ধি এবং যুক্তির কথা না শোনে, প্রাপককে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে না দেয়, প্রতিপক্ষ হিসেবে তার সামনে ভিক্ষা করে, বারংবার চেয়ে এবং ইনসাফের কথা বুঝিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। বরং সে জালেমের হাত মচকে দেওয়া এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তার দম্ভকে খর্ব করে দেওয়াই হলো মাজলুমকে সাহায্য করার মৌলিক পদ্ধতি। এটিই দুনিয়ার নিয়ম। আত্ম-মর্যাদাবোধসম্পন্ন প্রতিটি জাতির নীতি এটাই।

আর এ পদ্ধতি কেবল মুস্তাহাব নয় যে, এ পথে চললে সাওয়াব পাবো এবং না চললে কোন গুনাহ নেই। কক্ষনো নয়, বরং আল্লাহ তাআলা কুরআনে একে ফরয হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, সাবধান! যদি মাজলুমের সাহায্য না করো, কুফর ও জুলুমের রাস্তা ঈমানের বলে যদি বন্ধ না করো, তাহলে দুনিয়াতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। দুনিয়ার জীবন তোমাদের জন্য আযাব বনে যাবে।

আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের উপর জিহাদ ও কিতালের ময়দানে বের হওয়া ফরজ করেছেন। যদিও তা আমাদের পছন্দনীয় নয়, কিন্তু এটাই নির্দেশ। আর আমাদের কাছে কোন কিছু পছন্দনীয় না হলেই যে তাতে কোন কল্যাণ থাকবে না, বিষয়টি এমন নয়। আবার আমাদের পছন্দের সবকিছুর মধ্যেই কল্যাণ থাকবে, সেটাও জরুরী নয়।

দুনিয়া থেকে জুলুম ও অবাধ্যতাকে বিদায় করা, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা, গাইরুল্লাহর শক্তি ও দাপট খর্ব করে আল্লাহ তাআলার বাণী সমুন্নত করা এবং শয়তানের রাজত্বের মোকাবেলায় রহমানের রাজত্ব কায়েম করা – এসবই আবশ্যক। আর এ সকল কাজ বাতিলের দাঁত ভেঙ্গে দেয়া ছাড়া সম্ভব হয় না। হককে বিজয়ী করার জন্য হক পন্থীদেরকে বাতিলের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

আল্লাহর হেকমত দেখুন! সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ তাআলা শরীয়ত হিসেবে যে বিষয় ফরজ করেছেন, সৃষ্টিগতভাবেও জীবন পদ্ধতিকে এমন করে দিয়েছেন যে, ঐ বিষয়ের উপর আমল করা ছাড়া সংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। ফেতনা-ফাসাদ এবং জুলুম-অত্যাচারকে তথাকথিত কোন শান্তিপূর্ণ পন্থায় দমন করতে চাইলেও করা যাবে না।

ইতিহাস সাক্ষী, যখনই আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হয়েছে এবং কুফর ও ফাসাদের দুর্গ নির্মূল হয়েছে, তখন তা জিহাদ ও কিতালের ময়দানে নামার দ্বারাই হয়েছে। শুধু দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমেও এই উদ্দেশ্য অর্জিত হয়নি। জিহাদ ও কিতালকে বাইরে রেখে, কোন শান্তিপূর্ণ পথেও তা অর্জন করা যায়নি। যখন বাতিলের বিরুদ্ধে হকের তরবারি পরিচালিত হয়েছে, তখনই বড় বড় তাগুতের পতন হয়েছে। আল্লাহ তাআলার ইরশাদ:

قُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا ‎﴿٨١﴾

“সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, নিশ্চয়ই মিথ্যা এমন জিনিস, যা বিলুপ্ত হওয়ারই।” (সূরা বনী ইসরাঈল 17:৮১)

আজ বোন আফিয়া সিদ্দিকীর ঘটনাতেও আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই নীতি দেখাচ্ছেন। যুগের কুফফার গুরু আমাদের বোন ও মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। তারা তার উপর সর্বোচ্চ জুলুম চালিয়েছে। এই জুলুমের বৃত্তান্তও গোপন নয়। এটা পুরা উম্মতের নিকট পৌঁছে গেছে। অতঃপর তার মুক্তির জন্য উম্মতের পক্ষ থেকে চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু যথাযথ যেই চেষ্টার প্রয়োজন, সেটা করা হয়নি। অথচ এই চেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে আমাদের উপর ফরজ। কুরআনুল কারীমে এর নাম সহকারে উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদেরকে তিরস্কার করে বলেছেন,

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا ‎﴿٧٥﴾‏

“অর্থঃ তোমাদের কি হল যে তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছো না— যখন ঐ দুর্বল ও মাজলুম পুরুষ, নারী এবং শিশুরা চিৎকার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করছে যে, হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে জালিমদের এই বসতি থেকে বের করুন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন অভিভাবক ও একজন সাহায্যকারী পাঠান। [সূরা নিসা ৪:৭৫]

আফসোসের বিষয় হল: আমরা এই ফরজের প্রতি মনোনিবেশ করছি না, বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। বরং একে অস্বীকার করে এমন পথকে একক সমাধান মনে করছি, যার দ্বারা মাজলুমের উপর জুলুম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জালেম আরও শক্তিশালী হচ্ছে!

উম্মাহর একটি অংশ এই ফরজের দিকেই আহ্বান করছেন। তাদের বক্তব্য – এই পথ গ্রহণ করা ব্যতীত জালিমকে জুলুম থেকে ফিরানো যাবে না। আল্লাহর দ্বীন আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। অন্যদেরকে কল্যাণ ও সফলতা দেয়ার দায়িত্ব আদায় করা তো দূরের কথা, মুসলিমদের জন্য ‘মুসলিম’ হিসেবে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

এ কথাগুলো বলার আগে শরীয়তের আদেশ, আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত এবং ফুকাহায়ে কেরামের হাজার বছরের ইলমের ভাণ্ডার থেকে উদাহরণ সম্মানের সাথে পেশ করা হয়েছে। সেখান থেকে এটাই প্রমাণিত যে, এই অন্যায় শাসনব্যবস্থা এবং তার ধারক-বাহক কুফফার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জিহাদে বের হওয়া ফরজ। এই ফরজ ছেড়ে দিলে মুসলিম উম্মাহর উপর গোলামী, বেইজ্জতি এবং গোমরাহি নেমে আসে।

দুঃখের বিষয় হল: এই শরয়ী, যৌক্তিক এবং ইতিহাস নির্ভর দাবিকেও অনেকে ‘অতি জযবা’ বলে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য এমন – জিহাদ অবশ্যই ফরজ। আল্লাহর কিতাব এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতেও এর বিধান অবশ্যই আছে। কে এটাকে অস্বীকার করে?

কিন্তু এখন জামানা পাল্টে গেছে। এখন মাথা কাটার সময় নয়, বরং মাথায় হাত বুলানোর সময়। এখন সমস্যার সমাধান যুদ্ধ দ্বারা নয়, বরং আলোচনা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে। এখন গণতান্ত্রিক পন্থায় আইনিভাবে নিজেদের অধিকার আদায় করা হয়। যেহেতু এই যুদ্ধ বিগ্রহের কথা এখন পুরাতন হয়ে গেছে, তাই এগুলোকে এখন জিহাদ নয়, বরং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে মনে করা হয়!!

এটা শুনে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, এভাবে ফরজ জিহাদকে অপব্যাখ্যা করতে এবং জিহাদের বিরোধিতা করতে এই বিরোধীরাই ‘জযবা’র বশে কাজ করছেন। স্বয়ং এই হযরতগণই ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করেন না, তাহকীক ও আমলের নিয়তে পড়েন না এবং বাস্তব চোখে দুনিয়ার শাসননীতিকে দেখেন না। অথবা তারা অন্যভাবে চিন্তা করেন, সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে চোখ বন্ধ করে রাখেন।

তারা এমন একটি পথে চলতে বলেন, যার ব্যাপারে স্বয়ং ঐ পথের দিকে আহ্বানকারীদেরও কথা হল: এর দ্বারা দ্বীনের বিজয় এবং জুলুমের অবসান সম্ভব নয়। কারণ শরীয়ত, যুক্তি বা ইতিহাস কোনটার আলোকে একথা গ্রহণযোগ্য নয় যে, কুফরের নিবন্ধিত এবং বিশ্বের তাগুতদের অনুমোদিত পন্থায় কখনো ইসলাম বিজয়ী হবে। স্বয়ং জালেমদের অঙ্কিত নকশায় চলে কখনো জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। যে পন্থায় তারা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কল্যাণের কথা বলে, শরয়ী দলীল-প্রমাণের ব্যাখ্যা করে যে পথকে শরীয়তের আসল উদ্দেশ্য সাব্যস্ত করে, সে পথে চলতে গিয়ে আজ কল্যাণ ও অকল্যাণের পরিচয়ই বদলে যাচ্ছে। দ্বীনি আদর্শ ও শরীয়তের নীতিমালাকে সরাসরি বিসর্জন দিতে হচ্ছে। এমন পথ শরীয়তের দৃষ্টিতে কীভাবে জায়েয হতে পারে?!

আমরা এই কথা মানি যে, আল্লাহর এই দ্বীন বিজয় চায়। আমরা নিজেদের জান-মাল, সন্তান-সন্ততি এবং ব্যক্তিগত সংগঠনের উপর দ্বীনকে অগ্রাধিকার দিবো। অতঃপর আল্লাহর বান্দাদেরকে আল্লাহর সাথে জুড়ে দেওয়া এবং তাদের উপর গায়রুল্লাহ’র আধিপত্য নিঃশেষ করার উদ্দেশ্যে দ্বীনের দুশমনের শক্তিকে নস্যাৎ করাকেও নিজেদের জন্য আবশ্যক মনে করবো। আর এটাই ঐ উদ্দেশ্য যার জন্য জিহাদের ময়দানে অবতরণ করাকে শরীয়ত ফরজ করেছে।

সুতরাং যে কোন পন্থায় আমাদেরকে এই ফরজ আদায় করতে হবে। আমাদের দাওয়াত এবং আন্দোলনের দ্বারা মুজাহিদদের সাহায্য-সমর্থন করার মাধ্যমে জিহাদের ময়দানে তাদের শক্তি যোগাবো। কিন্তু এই ফরজ কাজকে অনর্থক কাজ হিসেবে উপস্থাপন করে আমরা এমন কোনো বিকল্প পথ দেখাবো না, যা বাতিলের বিরুদ্ধে হকের ঝাণ্ডাবাহীদের শক্তিকে দুর্বল করে এবং তাদেরকে পদে-পদে শরীয়তের বিধিবিধান ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। পশ্চিমা সভ্যতা আসার আগ পর্যন্ত পুরো ইসলামী ইতিহাসে এমন কোন পথের অস্তিত্বই ছিল না!

আমাদের মেনে নিতে হবে, বোন আফিয়া সিদ্দিকীর মতো মাজলুমাদের মুক্তির ফরজ দায়িত্ব শুধু তখনই পালন হতে পারে, যখন আমেরিকার সাথে তার যথাযোগ্য ভাষায় কথা বলা হবে। এটা সেই ভাষা যার উপর আমল করলে فكوا العاني (বন্দীদের মুক্ত করো)’-এর নির্দেশের উপর আমল হবে। ফলে আমাদের মুসলিম বন্দীদের শিকল বাস্তবেই ভেঙ্গে যাবে।

নিঃসন্দেহে যুগের ফেরাঊনরা সবল আর উম্মতে মুসলিমাহ দুর্বল। উম্মতের মুজাহিদরাও শক্তিতে তাদের চেয়ে পিছিয়ে। কিন্তু এতেই তো পরীক্ষা যে, আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে স্বর্ণকে খাদ থেকে পৃথক করেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কুফরি শক্তিকে নিঃশেষ করার জন্য মুমিনদেরকে জিহাদের নির্দেশ দেন এবং এই কথা বলে তাদের অনুপ্রাণিত করেন যে, যদি তোমরা ময়দানে অবতীর্ণ হও, জিহাদের মসিবতের উপর সবর করো, তাহলে অহংকারীদের অহংকার ও দম্ভ চূর্ণবিচূর্ণ করা আমার দায়িত্ব। আর আমি (আল্লাহ তাআলা) অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কঠোরভাবে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ ۚ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ عَسَى اللَّهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَاللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلًا ‎﴿٨٤﴾

“সুতরাং (হে নবী!) আপনি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করুন। আপনার উপর আপনার নিজের ছাড়া অন্য কারও দায়ভার নেই। অবশ্য মুমিনদেরকে উৎসাহ দিতে থাকুন। অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ কাফিরদের যুদ্ধ ক্ষমতা রুখে দেবেন। আল্লাহর শক্তি সর্বাপেক্ষা প্রচণ্ড এবং তাঁর শাস্তি অতি কঠোর।” (সূরা নিসা ৪:৮৪)

আমরা বিক্ষোভ-মিছিলের মতো কর্মসূচির বিরোধী নই। বিশেষত যখন সেগুলো জালিমের বিরুদ্ধে ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ এবং আন্দোলনের দাবী জোরালো করার মাধ্যম হয়। তবে আবশ্যক হলো, এই বিক্ষোভ কর্মসূচিগুলোকে উম্মাহকে সজাগ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। এর মাধ্যমে উল্টো জালিমদের থেকে উম্মাহর দৃষ্টিকে ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। জনসাধারণকে দ্বিতীয়বার নেতাদের পিছনে লাগিয়ে আরও একটি জুলুমে নিমজ্জিত করার কাজে এ সকল কর্মসূচিকে ব্যবহার করা যাবে না।

উম্মাহকে বলতে হবে, আমাদের দেশ আজ স্বাধীন নয়, পরাধীন। দেশ আজ ঐ সকল জেনারেলদের একচ্ছত্র শাসনের অধীন, যারা এ জাতির সংরক্ষক বা হিতাকাঙ্খী নয়, বরং সাত সমুদ্রের ওপারের কুফরি শক্তির মোড়ল আমেরিকার গোলাম। তাদের গোলামির ফলস্বরূপ আজ আমাদের বোন/মেয়ে আমেরিকার বন্দীখানায় অবর্ণনীয় জুলুমের শিকার হচ্ছে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, উম্মাহ তখনই জাগ্রত হয় যখন শত্রু-মিত্র এবং হিতাকাঙ্খী-বিশ্বাসঘাতকের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। যদি আজও আমরা সেই কুফরি ব্যবস্থার সমস্যা না বুঝতে পারি, শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের স্থলে বাহ্যিক রূপের পরিবর্তন দেখেই ধোঁকায় পতিত হই – তাহলে বুঝতে হবে যে, এ জাতির কপালে এখনো অনেক দুঃখ-দুর্ভোগ রয়েছে। দুঃখ দুর্দশার কারণও আছে। আমরা এখনো জাগ্রত হইনি, এমনকি আমরা জাগ্রত হওয়ার চেষ্টাও করছি না।

আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের কাছে এই তুচ্ছ-ধোঁকাবাজ দুনিয়াকে সেভাবেই উপস্থাপন করেন যেভাবে তা রয়েছে। দুনিয়ার ভয় ও ভালোবাসা আমাদের অন্তর থেকে বের করে দেন!

আল্লাহ আমাদের নিজ সৈন্যদলের অন্তর্ভুক্ত করে নিন এবং তাঁর দুশমনদেরকে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে ব্যবহার করুন।

আয় আল্লাহ! এই উম্মতের সকল বন্দী নারী পুরুষকে মুক্তি দান করুন। মুজাহিদদের সাহায্য করুন, যেনো তাঁরা আপনার নবী – মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুর্বল উম্মতের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারেন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

وأخر دعوانا أن الحمد لله رب العلمين

***

اپنی دعاؤں میں ہمیں یاد رکھيں
اداره النصر براۓ نشر و اشاعت
القاعدہ برِّ صغیر
আপনাদের দোয়ায়
আন নাসর মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent

Related Articles

২ Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × one =

Back to top button