তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ০৮ || হৃদয়ের স্বচ্ছতা আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে || মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হা÷
مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdaws
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
في اللغة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Language
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:
سلسلة المذاكرة التربوية- الحلقة ٨
يمكن ان شفافية القلب ان يذهبك الى الجنة
তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ০৮
হৃদয়ের স্বচ্ছতা আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে
Tarbiyati Muzakara Series-08
The transparency of the heart can take you to Paradise
لمولانا عبد الله حذيفة حفظه الله
মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হাফিযাহুল্লাহ
By Mawlana Abdullah Huzaifa Hafizahullah
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
লিংক-১ : https://archive.ph/SNxCO
লিংক-২ : https://mediagram.me/32f1859edf2f4018
লিংক-৩ : https://archive.ph/SpRG1
লিংক-৪ : https://noteshare.id/whuy4Oi
লিংক-৫ : https://archive.vn/mPihR
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20210614…oti_muzakara-8
লিংক-৭ : https://web.archive.org/web/20210614…f1859edf2f4018
লিংক-৮ : https://web.archive.org/web/20210614…are.id/whuy4Oi
روابط بي دي اب
PDF (1 MB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [১ মেগাবাইট]
লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/J4TYbwwgJzZQeSx
লিংক-২ : https://archive.org/download/08-torb…erSocchota.pdf
লিংক-৩ : https://file.fm/f/gs5unyc69
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/4fbb8830-9ff0-4592-a658-0b683ac1aded/74ab69412203f7c840a9e35e08529716ea145b3c365651711dff0dd46d0013f2
লিংক-৫ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dhoipfea75711c7ee4e90a70fe2c4a3cb5a19
লিংক-৬ : https://f004.backblazeb2.com/file/Torbiyoti8/TorbiyotiMuzakara+8.pdf
روابط ورد
Word (464 KB)
ওয়ার্ড [৪৬৪ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/LFZcxd9AHNTcMWA
লিংক-২ : https://archive.org/download/08-torb…rSocchota.docx
লিংক-৩ : https://file.fm/f/t7sm5umkv
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/7ccc5679-ed3a-4432-934c-399fac6b4ae4/7e0fc9cb6e5d8ad009010a566df0e38088fb4b91412b6bae88e5fa88f3d43fd0
লিংক-৫ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dhoip7ea66c63f9a8431b9ae73216a74f680b
লিংক-৬ : https://f004.backblazeb2.com/file/Torbiyoti8/TorbiyotiMuzakara+8.docx
روابط الغلاف- ١
book Banner [814 KB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৮১৪ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/pYbQ3s6jB9wL3tT
লিংক-২ : https://archive.org/download/08-torb…ta-prossod.jpg
লিংক-৩ : https://file.fm/thumb_show.php?i=x2tqjxxsf
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/0c7ee25d-d8c7-45f3-a5f9-bb422582ac43/30525e7e99d229ccfaf32470ac6527fc886ee9ceb46f008ce072b420378e8e12
লিংক-৫ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dhoip02c5675cd3244a189c02599712ecd13d
লিংক-৬ : https://f004.backblazeb2.com/file/Torbiyoti8/TorbiyotiMuzakara+8+Cover.jpg
روابط الغلاف- ٢
Banner [660 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [৬৬০ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/3HdBseDwkkENTy8
লিংক-২ : https://archive.org/download/08-torb…web-banner.jpg
লিংক-৩ : https://file.fm/thumb.php?i=cpgvktsfy
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/a8138efd-020f-46b8-beb1-2a28fa7ca9d5/f52a960f08e7a3a7ba26fb926ff9d3cdfacb5467e87570ab898d609964b91698
লিংক-৫ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dhoipbc62cc6b76fb416c9b2d8e86ba2fab60
লিংক-৬ : https://f004.backblazeb2.com/file/Torbiyoti8/TorbiyotiMuzakara+8+Banner.jpg
************
তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ০৮
————————————-
হৃদয়ের স্বচ্ছতা
আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে
মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হাফিযাহুল্লাহ
সূচিপত্র
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
اَلْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى أَشْرَفِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ، وَعَلَى آله وَأَصْحَابِهِ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ، أَمَّا بَعْدُ
فأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم، بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ
মুহতারাম ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াতে নানা আঙ্গিকে জান্নাতের বিভিন্ন অবস্থা আমাদের জানিয়েছেন। জান্নাতের বিবরণের পাশাপাশি জান্নাতিদের বিভিন্ন অবস্থা ও গুনাবলীর কথাও আমাদের জানিয়েছেন। হাদিসে এসবের বিবরণ স্ববিস্তারে এসেছে।
কুরআনে কারীমে জান্নাতিদের সেসব গুণের কথা এসেছে তার মধ্যে একটি হল, তাঁদের হৃদয়ের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা। আরবিতে যাকে বলে, سَلَامة الصَّدر বা سَلَامة القلب
এ গুণটি জান্নাতিদের মধ্যে থাকবে। তাদের অন্তরে কারো প্রতি কোনো ধরনের হিংসা থাকবে না, বিদ্বেষ থাকবে না। জান্নাতে প্রবেশের পূর্বেই আল্লাহ তাআলা তাঁদের অন্তর থেকে এসব কিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেবেন।
যেসব মহান ব্যক্তিগণ দুনিয়াতেই জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ লাভ করেছিলেন অর্থাৎ সাহাবিগণ তাঁদের মধ্যেও এ মহামূল্যবান গুণটি ছিল।
আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিলে এ বিষয়টি নিয়েই আজ কিছু কথা মুযাকারা করব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইখলাস ও ইতকানের সাথে কথাগুলো বলার এবং আমাদের সবাইকে সে মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
জান্নাতিদের একটি গুণ
মুহতারাম ভাইয়েরা! দেখুন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা জান্নাতিদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ
“আমি তাদের অন্তরের বিদ্বেষ দূর করে দেব। তারা ভাই ভাইয়ের মতো সামনা-সামনি আসনে বসবে”। সূরা হিজর (১৫) ৪৭
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الأَنْهَارُ
“আমি তাদের অন্তরের বিদ্বেষ দূর করে দেব। তাদের তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণী প্রবাহিত হবে”। সূরা আরাফ (০৭) ৪৩
ইমাম ইবনে আতিয়্যাহ রহ. বলেন,
هذا إخبار من الله عزَّ وجلَّ أنَّه ينقِّي قلوب ساكني الجنَّة من الغلِّ والحقد، وذلك أنَّ صاحب الغلِّ متعذِّب به، ولا عذاب في الجنَّة
“এখানে আল্লাহ তাআলা (আমাদেরকে) জানাচ্ছেন যে, তিনি জান্নাতিদের অন্তর সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেবেন। এর কারণ হল, কারো অন্তরে হিংসা বিদ্বেষ থাকলে সে এ কারণে নিজেই (এক ধরণের) শাস্তি পেতে থাকে আর জান্নাতে তো কোনো ধরণের শাস্তি থাকবে না”। (আল-মুহাররারুল ওয়াজীয ফী তাফসীরিল কিতাবিল আযীয ২/৪০১)
তাঁর শেষ কথাটি মনে রাখার মতো, أنَّ صاحب الغلِّ متعذِّب به – কারো অন্তরে হিংসা বিদ্বেষ থাকলে সে এ কারণে নিজেই (এক ধরণের) শাস্তি পেতে থাকে।
সূরা হাশরে আল্লাহ তাআলা আনসারি সাহাবিদের প্রশংসা করে তাদের বিশেষ যে গুণগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম একটি হল, তাদের অন্তরে কারো প্রতি কোনো ধরনের হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ تَبَوَّؤُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং ঈমান এনেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়, সে জন্য তারা তাদের অন্তরে কোনো ধরনের বিদ্বেষ পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম”। সূরা হাশর (৫৯) ৯
এর পরের আয়াতে সাহাবিদের পরে আসবে এমন সবার কথা কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে তাদের একটি দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে। দেখুন, দোয়াটিতে কী চাওয়া হচ্ছে?
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
“যারা তাদের পরে আসবে। তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং আমাদের যে ভাইয়েরা আমাদের আগে ঈমান এনেছেন তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো ধরণের বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়”। সূরা হাশর (৫৯) ১০
এ গুণটি একজন মুমিনকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে
সালামাতে কলব বা হৃদয়ের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা এমন মহা মূল্যবান একটি গুণ, যে গুণটি একজন মুমিনকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে হাদিসে খুব চমৎকার একটি ঘটনা এসেছে। হাদিসটি এসেছে মুসনাদে আহমদে। সনদও সহীহ। বর্ণনাকারী হলেন, হযরত আনাস রাযি.।
পুরো হাদিসটি হল,
عَنِ الزُّهْرِيِّ ، قَالَ : أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ : كُنَّا جُلُوسًا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : يَطْلُعُ عَلَيْكُمُ الْآنَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ . فَطَلَعَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ تَنْطِفُ لِحْيَتُهُ مِنْ وَضُوئِهِ، قَدْ تَعَلَّقَ نَعْلَيْهِ فِي يَدِهِ الشِّمَالِ، فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ ذَلِكَ، فَطَلَعَ ذَلِكَ الرَّجُلُ مِثْلَ الْمَرَّةِ الْأُولَى، فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الثَّالِثُ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ أَيْضًا، فَطَلَعَ ذَلِكَ الرَّجُلُ عَلَى مِثْلِ حَالِهِ الْأُولَى، فَلَمَّا قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَبِعَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ فَقَالَ : إِنِّي لَاحَيْتُ أَبِي، فَأَقْسَمْتُ أَنْ لَا أَدْخُلَ عَلَيْهِ ثَلَاثًا، فَإِنْ رَأَيْتَ أَنْ تُئْوِيَنِي إِلَيْكَ حَتَّى تَمْضِيَ فَعَلْتَ. قَالَ : نَعَمْ. قَالَ أَنَسٌ : وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ يُحَدِّثُ أَنَّهُ بَاتَ مَعَهُ تِلْكَ اللَّيَالِيَ الثَّلَاثَ، فَلَمْ يَرَهُ يَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ شَيْئًا، غَيْرَ أَنَّهُ إِذَا تَعَارَّ وَتَقَلَّبَ عَلَى فِرَاشِهِ ذَكَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَكَبَّرَ حَتَّى يَقُومَ لِصَلَاةِ الْفَجْرِ. قَالَ عَبْدُ اللَّهِ : غَيْرَ أَنِّي لَمْ أَسْمَعْهُ يَقُولُ إِلَّا خَيْرًا، فَلَمَّا مَضَتِ الثَّلَاثُ لَيَالٍ وَكِدْتُ أَنْ أَحْقِرَ عَمَلَهُ قُلْتُ : يَا عَبْدَ اللَّهِ، إِنِّي لَمْ يَكُنْ بَيْنِي وَبَيْنَ أَبِي غَضَبٌ وَلَا هَجْرٌ ثَمَّ، وَلَكِنْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَكَ ثَلَاثَ مِرَارٍ : ” يَطْلُعُ عَلَيْكُمُ الْآنَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ “. فَطَلَعْتَ أَنْتَ الثَّلَاثَ مِرَارٍ، فَأَرَدْتُ أَنْ آوِيَ إِلَيْكَ لِأَنْظُرَ مَا عَمَلُكَ فَأَقْتَدِيَ بِهِ، فَلَمْ أَرَكَ تَعْمَلُ كَثِيرَ عَمَلٍ، فَمَا الَّذِي بَلَغَ بِكَ مَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ فَقَالَ : مَا هُوَ إِلَّا مَا رَأَيْتَ. قَالَ : فَلَمَّا وَلَّيْتُ دَعَانِي فَقَالَ : مَا هُوَ إِلَّا مَا رَأَيْتَ، غَيْرَ أَنِّي لَا أَجِدُ فِي نَفْسِي لِأَحَدٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ غِشًّا، وَلَا أَحْسُدُ أَحَدًا عَلَى خَيْرٍ أَعْطَاهُ اللَّهُ إِيَّاهُ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ : هَذِهِ الَّتِي بَلَغَتْ بِكَ، وَهِيَ الَّتِي لَا نُطِيقُ. أخرجه النسائي في «السنن الكبرى» (١٠٦٩٩)، وأحمد (١٢٦٩٧) واللفظ له، قَالَ شعيب الأرنؤوط (ت ١٤٣٨) : إسناده صحيح على شرط الشيخين.
“হযরত আনাস রাযি. বলেন,
كُنَّا جُلُوسًا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
আমরা একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে (মসজিদে) বসা।
এ সময় তিনি বলে উঠলেন,
يَطْلُعُ عَلَيْكُمُ الْآنَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنّةِ
‘এখন তোমাদের মাঝে একজন জান্নাতি মানুষের আগমন ঘটবে।’
নবীজীর মুখে একথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই সবাই খুব উৎসুক হয়ে উঠেছিলেন, কে সেই ভাগ্যবান? যার ব্যাপারে নবীজী বলছেন তিনি জান্নাতি!
হযরত আনাস রাযি. বলেন,
فَطَلَعَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ تَنْطِفُ لِحْيَتُهُ مِنْ وَضُوئِهِ، قَدْ تَعَلَّقَ نَعْلَيْهِ فِي يَدِهِ الشِّمَالِ
তখন একজন আনসারি আগমন করলেন, যিনি সবেমাত্র ওযু করেছেন। তাই তাঁর দাড়ি বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছে। জুতা জোড়া বাম হাতে ভাঁজ করা।
فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ ذَلِكَ، فَطَلَعَ ذَلِكَ الرَّجُلُ مِثْلَ الْمَرَّةِ الْأُولَى
দ্বিতীয় দিন একই ঘটনা ঘটল। আমরা সবাই নবীজীকে ঘিরে বসা। গতকালের মতই তিনি বললেন, ‘এখন তোমাদের মাঝে একজন জান্নাতি মানুষের আগমন ঘটবে।’
দেখা গেল এ দিনও সেই একই ব্যক্তি আগমন করছেন। অবস্থাও আগের দিনের মতোই। দাড়ি বেয়ে পানি ঝরছে। বাম হাতে জুতা জোড়া।
فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الثَّالِثُ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ أَيْضًا، فَطَلَعَ ذَلِكَ الرَّجُلُ عَلَى مِثْلِ حَالِهِ الْأُولَى
তৃতীয় দিন দেখা গেল একই ঘটনা। গত দু’দিনের মতো এ দিনও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘এখন তোমাদের মাঝে একজন জান্নাতি মানুষের আগমন ঘটবে।’।
দেখা গেল নবীজীর কথার পর সেই সেই একই ব্যক্তি আগমন করলেন।
হযরত আনাস রাযি. বলেন, মজলিস শেষ হলে ওই আনসারি যখন বাড়ির দিকে রওনা হন তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. তাঁর পিছু পিছু হাঁটতে লাগলেন। তাঁর মনে একটাই চিন্তা তিনি কী আমল করেন? কোন আমলের বদৌলতে তিনি এই সৌভাগ্য অর্জন করলেন, তা আমাকে জানতেই হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. হলেন এমন একজন সাহাবি যার ব্যাপারে আবু হুরাইরা রাযি. বলতেন, তিনি আমার চেয়েও বেশি হাদিস জানতেন। আর তাঁর আমলের অবস্থা তো আমাদের জানাই আছে।
প্রসিদ্ধ হাদিস, নতুন বিয়ে করার পরও সারা রাত নামায পড়তেন আর প্রতিদিন রোযা রাখতেন। যার ফলে তাঁর আব্বাজান আমর বিন আস রাযি. নবীজীর কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দিয়েছেন।
যাক তিনি হয়তো ভেবেছেন, এই সাহাবি কত বেশি আমল যেন করেন?
হযরত আনাস রাযি. বলেন, রহস্য উদঘাটনের জন্য আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. ওই আনসারি সাহাবির কাছে গিয়ে বললেন, চাচা, আপনি কি আমাকে আপনার ঘরে একটু থাকতে দিবেন? আনসারি বললেন, ঠিক আছে, থাকো। কোনো অসুবিধা নেই।
আনাস রাযি. বলেন,
وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ يُحَدِّثُ أَنَّهُ بَاتَ مَعَهُ تِلْكَ اللَّيَالِيَ الثَّلَاثَ، فَلَمْ يَرَهُ يَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ شَيْئًا، غَيْرَ أَنَّهُ إِذَا تَعَارَّ وَتَقَلَّبَ عَلَى فِرَاشِهِ ذَكَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَكَبَّرَ حَتَّى يَقُومَ لِصَلَاةِ الْفَجْرِ. قَالَ عَبْدُ اللَّهِ : غَيْرَ أَنِّي لَمْ أَسْمَعْهُ يَقُولُ إِلَّا خَيْرًا
পরে আব্দুল্লাহ আমাদেরকে শুনিয়েছেন, তিনি তিন রাত ওই আনসারির বাড়িতে কাটান। কিন্তু তাঁকে তিনি রাতে তাহাজ্জুদও তেমন পড়তে দেখতেন না। তবে রাতে যখনই তার ঘুম ভাঙ্গত তখন পাশ ফেরার সময় আল্লাহর যিকির করতেন; আল্লাহু আকবার বলতেন। এরপর ফজরের সময় হলে নামাযের জন্য উঠে যেতেন।
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ : غَيْرَ أَنِّي لَمْ أَسْمَعْهُ يَقُولُ إِلَّا خَيْرًا
আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, তবে এ তিন দিন ভালো কথা ছাড়া কোনো কথা তাকে বলতে শুনিনি। তাকে সব সময় শুধু ভালো কথাই বলতে দেখেছি।
আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, তিন রাত কাটানোর পর আমি তাঁকে বললাম, চাচা, আমার উদ্দেশ্য ছিল, আপনি বিশেষ কী আমল করেন তা দেখা। কারণ, পর পর তিন দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, يَطْلُعُ عَلَيْكُمُ الْآنَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنّةِ ‘এখন তোমাদের মাঝে একজন জান্নাতি মানুষের আগমন ঘটবে।’
তিনো দিন দেখা গেল আপনি এসেছেন। তখন থেকেই আমি সংকল্প করেছি, আপনার সাথে থেকে আপনার আমল পর্যবেক্ষণ করব এবং আমিও তা করার চেষ্টা করব।
তাঁর শেষ কথাটি খেয়াল করুন-
فَأَرَدْتُ أَنْ آوِيَ إِلَيْكَ لِأَنْظُرَ مَا عَمَلُكَ فَأَقْتَدِيَ بِهِ
তখন থেকেই আমি সংকল্প করেছি, আপনার সাথে থেকে আপনার আমল পর্যবেক্ষণ করব এবং আমিও তা করার চেষ্টা করব।
এ হল তাঁদের এবং আমাদের মধ্যে পার্থক্য। তাঁরা শিখতেন আমল করার জন্য। কিন্তু আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিখি শুধু শিখার জন্য। আল্লাহ আমাদের মাফ করেন।
যাক এরপর তিনি ওই আনসারি সাহাবিকে বললেন,
فَلَمْ أَرَكَ تَعْمَلُ كَثِيرَعَمَلٍ، فَمَا الَّذِي بَلَغَ بِكَ مَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟
কিন্তু চাচা, আপনাকে তো বেশি কিছু আমল করতে দেখলাম না। তাহলে কী এমন বিষয়, যা আপনাকে নবীজীর যবানে উচ্চারিত এই সৌভাগ্য এনে দিল?
তখন ওই আনসারি বললেন, (ভাতিজা!) আমার আমল তো ওইটুকুই যা তুমি দেখেছ।
হযরত আবদুল্লাহ রাযি. বলেন, আমি যখন বাড়ির দিকে রওনা হলাম তখন তিনি আমাকে ডাক দেন। আমি ফিরলে তিনি বললেন,
مَا هُوَ إِلَّا مَا رَأَيْتَ، غَيْرَ أَنِّي لَا أَجِدُ فِي نَفْسِي لِأَحَدٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ غِشًّا، وَلَا أَحْسُدُ أَحَدًا عَلَى خَيْرٍ أَعْطَاهُ اللَّهُ إِيَّاهُ
(ভাতিজা,) তুমি আমাকে যেমন দেখেছ আমার আমল তো ওই টুকুই। তবে একটি বিষয় আছে। আমার অন্তরে কোনো মুসলমানের প্রতি কোনও ধরণের অকল্যাণকামিতা বা খারাপ চিন্তা নেই আর আল্লাহ কাউকে কোনো নেয়ামত দিলে সে কারণে আমি তার প্রতি কখনো হিংসা করি না।
এ কথা শুনে আবদুল্লাহ বলে উঠলেন,
هَذِهِ الَّتِي بَلَغَتْ بِكَ، وَهِيَ الَّتِي لَا نُطِيقُ
হ্যাঁ, এই গুণটিই আপনাকে এই সৌভাগ্যের অধিকারী করেছে। আর এটিই আমরা পারি না”। -সুনানে কুবরা, নাসায়ী : ১০৬৯৯; মুসনাদে আহমাদ : ১২৬৯৭ (হাদিসটি সহীহ)
কালবুন সালীম-স্বচ্ছ ও নির্মল অন্তরের পরিচয়
মুহতারাম ভাই, কারো অন্তর স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হওয়া এটি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় একটি নেয়ামত। এটি একজন মুমিনের মাঝে থাকা মহা মূল্যবান একটি গুণ।
স্বচ্ছ ও নির্মল অন্তর একজন মুমিনকে দুনিয়াতেই অন্য রকম এক আত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়। যে অন্তরে কোনো ধরণের শিরক-কুফর তো দূরের কথা কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ কোনো হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই। কারো অমঙ্গল কামনার কোনো চিন্তা যে অন্তরে একদম নেই। এমন অন্তরই হল কুরআনে ভাষায় ‘কালবুন সালীম’।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ
“যে দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোনও উপকারে আসবে না কিন্তু যে স্বচ্ছ ও নির্মল অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে (তা তার উপকারে আসবে)”। সূরা শুআরা (২৬) ৮৯
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল জাওয়াবুল কাফী’তে বলেন,
القلب السليم هو الذي سلم من الشرك والغل والحقد، والشح والكبر وحب الدنيا
কলবে সালীম বা স্বচ্ছ ও নির্মল অন্তর হল, যে অন্তর শিরক, হিংসা-বিদ্বেষ, কৃপণতা, অহংকার ও দুনিয়ার লোভ থেকে মুক্ত।
ইমাম ইবনুল আরাবি রহ. তাঁর ‘আহকামুল কুরআনে’ বলেন,
لا يكون القلب سليمًا إذا كان حقودًا حسودًا معجبًا متكبرًا، وقد شرط النَّبي صلى الله عليه وسلم في الإيمان، أن يحبَّ لأخيه ما يحبُّ لنفسه
“কোনো অন্তর স্বচ্ছ ও নির্মল হবে না যদি তাতে হিংসা থাকে, বিদ্বেষ থাকে, আত্মম্ভরিতা থাকে, অহংকার থাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণাঙ্গ ঈমানের জন্য শর্তারোপ করেছেন, নিজের জন্য যা পছন্দ করে মুমিন ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করা”। আহকামুল কুরআন: 3/459
ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন,
أفضل الأعمال سَلَامة الصَّدر من أنواع الشَّحْناء كلِّها
“সব ধরণের হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্তর স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাখা হল সর্বোৎকৃষ্ট আমল”। (লাতায়েফুল মাআরিফ ১৩৯)
আয়াত ও হাদিস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা
উপরে উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস থেকে যে শিক্ষা আমরা পাই তা হল, অন্তর সব ধরণের হিংসা বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হওয়া এটি জান্নাতিদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট। পাশাপাশি এটি ওই মহান জামাতেরও বৈশিষ্ট, যারা সবাই দুনিয়াতেই মাগফুর-ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতি হওয়ার আম সুসংবাদ লাভ করেছেন এবং যাদের অনেকে খাস ভাবেও জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ লাভ করেছেন।
পাশাপাশি এ শিক্ষাও আমরা পাই যে, পরবর্তীদের মধ্যে ওই জামাতই হবে সাহাবিদের সত্যিকারের অনুসারী জামাত এবং জান্নাতের পথের পথিক জামাত যাদের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে এ গুণটি থাকবে। যাদের অন্তর সব ধরণের হিংসা বিদ্বেষ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন হবে। কোনো মুসলিমের প্রতি তাদের অন্তরে কোনো প্রকার হিংসা থাকবে না। বিদ্বেষ থাকবে না।
মুহতারাম ভাই, একটি কথা আমরা সবাই জানি, সবাই মানি যে, আল্লাহ অবশ্যই তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করবেন। আর এ কাজটি তিনি করবেন তাঁর নির্বাচিত কিছু বান্দাদের মাধ্যমে। যাদেরকে তিনি নির্বাচন করবেন।
আমি আপনি আল্লাহর সেই নির্বাচিত বান্দাদের মধ্যে তখনই শামিল হতে পারব যখন আমরা প্রত্যেকে আল্লাহর নির্বাচিত প্রথম জামাতের মতো নিখুঁত হতে পারব।
কারণ, আল্লাহর হাতে বান্দার তো অভাব নেই। তিনি তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে নিখুঁতদেরকে বাছাই করবেন। এটাই স্বাভাবিক।
অতএব প্রিয় ভাই আমার! আমাদের সবাইকে প্রতি মুহুর্তে সতর্ক থাকতে হবে, আমাদের মধ্যে কোনো ধরণের খুঁত যেন না থাকে। যখনই নিজের মধ্যে কোনো খুঁত ধরা পড়বে সঙ্গে সঙ্গে তা দূর করে ফেলব।
ছোট বড় প্রতিটি গুনাহ এক একটি খুঁত। আর কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রতি হিংসা রাখা, বিদ্বেষ রাখা, এটি তো অনেক বড় একটি খুঁত।
তো ভাই, আমরা যদি কখনো নিজের মধ্যে এ জাতীয় কোনো খুঁত দেখতে পাই তাহলে নিজের ব্যাপারে এ আশংকা করা উচিত, না জানি এ কারণে আল্লাহ আমাকে বাদ দিয়ে দেন।
ছোট বড় যে কোনো খুঁত দেখলেই এ আশংকা করা উচিত, না জানি এ কারণে আল্লাহ আমাকে বাদ দিয়ে দেন। দীনের পথ থেকে সরিয়ে দেন।
কোনো মুসলিমের প্রতিই যেন আমাদের অন্তরে কোনো ধরণের হিংসা বিদ্বেষ, অমঙ্গল কামনা ইত্যাদি কিচ্ছু না থাকে। সবার প্রতিই যেন অন্তরে শতভাগ খায়েরখাহি থাকে। কল্যাণকামিতা থাকে।
মুসলিম মাত্রই তার প্রতি আমার অন্তরে আলাদা একটা জায়গা থাকবে। সে আমার মতের হোক বা না হোক। যতক্ষণ সে মুসলিম ততক্ষণ তার ব্যাপারটা অন্যদের চেয়ে অবশ্যই আলাদা। সে যেমন মুসলিমই হোক।
এটি আমার সুন্নাহ-আদর্শ
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে বিষয়টির আরও ব্যাপকতা বুঝা যায়। অন্যের খায়েরখাহি ও মঙ্গল কামনা করতে হবে, সে যে-ই হোক। মুসলিম হোক বা কাফের।
খায়েরখাহির বিপরীত অবস্থা থেকে অন্তর পবিত্র রাখা, এটিকে নবীজী নিজের সুন্নাহ আখ্যা দিচ্ছেন।
হ্যাঁ, প্রত্যেকের প্রতি খায়েরখাহি তার অবস্থা অনুপাতে। একজন মুসলিমের প্রতি খায়েরখাহির ধরণ আর একজন কাফেরের প্রতি খায়েরখাহির ধরণ কিছুতেই এক হবে না।
عَنْ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَا بُنَىَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تُصْبِحَ وَتُمْسِيَ لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لأَحَدٍ فَافْعَلْ . ثُمَّ قَالَ لِي يَا بُنَىَّ وَذَلِكَ مِنْ سُنَّتِي وَمَنْ أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي . وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجَنَّةِ.
“হযরত আনাস বিন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, বেটা! তুমি যদি সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে কাটাতে পার যে, তোমার অন্তরে কারোর প্রতি কোনো ধরণের অকল্যানকামিতা নেই, তাহলে তা-ই কর।
এরপর বললেন, বেটা! এটি আমার সুন্নাহ। যে আমার সুন্নাহকে জীবিত করল সে আমাকে ভালোবাসল, আর যে আমাকে ভালোবাসল সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে”। জামে তিরমিযী ২৬৭৮; (হাদিসটিকে ইমাম তিরমিযী রহ. ‘হাসান গরীব’ বলেছেন)
দেখুন, সালামাতে কলবের পুরষ্কার, জান্নাতে নবীজীর খাস সঙ্গ লাভ হবে।
আরেক বিষয় লক্ষ করুন ভাই, এখানে শব্দটি এসেছে, لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لأَحَدٍ
কারোর প্রতিই কোনো অকল্যানকামিতা নেই। একদম কারোর প্রতিই নেই।
দেখুন, এখানে أَحَد – শব্দটি নাকিরা তাহতান নাফি, যা উমূমের ফায়েদা দিচ্ছে। ব্যাপকতা বুঝাচ্ছে। তার মানে, ভালো-মন্দ, পক্ষের-বিপক্ষের, এমনকি মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতিই আমার অন্তরে খায়েরখাহি থাকবে, কল্যাণ কামনা থাকবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী শরহে তিরমিযী)
অন্তরে সবার প্রতিই কল্যাণকামিতা থাকবে
মুসলিম-অমুসলিম সবার প্রতিই আমার অন্তরে খায়েরখাহি থাকবে, কল্যাণ কামনা থাকবে। হ্যাঁ, প্রত্যেকের প্রতি খায়েরখাহি, তার অবস্থা অনুপাতে হবে। খায়েরখাহির ধরণ একেক জনের ক্ষেত্রে একেক ধরণের হবে।
একজন কাফেরের প্রতি আমাদের মনোভাব, তার প্রতি আমাদের কল্যাণকামিতা যেমন হবে একজন মুসলিমের প্রতি তা অবশ্যই আরও ওপরের স্তরের হবে।
মুসলিমের মধ্যেও যারা দ্বীন থেকে দূরে তাদের প্রতি আমাদের মনোভাব, আমাদের কল্যাণকামিতা যেমন হবে মুসলিমের মধ্যে যারা দ্বীনদার (হোক তাদের মধ্যে অনেক ভুল আছে) তাদের প্রতি তা অবশ্যই আরও ওপরের স্তরের হবে।
এভাবে আরও অগ্রসর হলে মুসলিমের মধ্যে যারা নিজের দ্বীনদারির পাশাপাশি দীনের জন্য কিছু কাজও করেন। যে যেভাবেই করেন। হোক তাদের কাজগুলোতে অনেক ভুল আছে। তাঁরা আলেম ওলামা হোক কিংবা সাধারণ মুসলমান হোক। তাঁদের সবার প্রতি আমাদের মনোভাব, আমাদের কল্যাণকামিতা হবে অন্য সবার চেয়ে অনেক ওপরের স্তরের।
এটাই হবে ইনসাফের দাবী। প্রত্যেককে তার নিজ নিজ স্থানে রাখা।
প্রিয় ভাই আমার! এ ক্ষেত্রে কিছুতেই যেন আমাদের থেকে ভুল না হয়। আমাদের পক্ষে না, এমন সবাইকে এক পাল্লায় রাখা যাবে না। সবার সাথে একই মনোভাব, একই আচরণ কিছুতেই করা যাবে না।
মনে রাখবেন, যতক্ষণ আমাদের মধ্যে দ্বীন ও শরিয়ত শতভাগ থাকবে ততক্ষণই আমরা হক জামাত। হকের অনুসারী। হকের দিকে আহবান কারী।
মুহতারাম ভাই, লক্ষ করুন, আমাদের পক্ষে না এমন লোকদের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নস্তরে আছে হল, কাফের-মুশরিকরা। দেখুন, তাদের মধ্যে যারা সাধারণ কাফের, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কী হেদায়েত দিচ্ছেন,
لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
“দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, এমন কাফেরদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন”। সূরা মুমতাহিনা (৬০) ৮
দেখুন, এখানে সাধারণ কাফেরদের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে-
أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ
“তাদের সাথে সদাচরণ করা হবে এবং ইনসাফ করা হবে”।
সূরা মায়েদাতে এসেছে,
وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
“কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে অবিচার করতে উৎসাহী না করে। তোমরা ইনসাফ করো। এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আর আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করো, আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত”। সূরা মায়েদা (৫) ৮
কথাগুলো যে জন্য বললাম, তা হল, আমাদের কোনো কোনো ভাইকে দেখা যায়, তারা ‘হুব্বে ফিল্লাহ ও বুগযে ফিল্লাহ (আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ পোষণ করা)-এর সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতি না জানার কারণে দ্বীনী অন্যান্য জামাতের সদস্যদের প্রতি এমন মনোভাবে রাখেন যা আসলে কাফেরের প্রতি বা বদদ্বীন মুসলিমদের প্রতি মানায়। কিন্তু তিনি না বুঝে দ্বীনী অন্যান্য জামাতের সদস্যদের প্রতিও এমন বুগয-বিদ্বেষ রাখেন। আর ভাবেন, এটি হল বুগয ফিল্লাহ-আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ পোষণ করা। কোনো কোনো অবুঝ ভাইকে আলেম ওলামাদের প্রতিও বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করতে দেখা যায়। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
দেখুন ভাই, আলেম ওলামা কিংবা দ্বীনী কোনো জামাতের বিশেষ কোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে কিছু বলার হলে তার জন্য আমাদের জামাতের মুহতারাম বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম আছেন।
আমাদের কাজ হল এ জাতীয় বিষয়গুলো তাঁদের ওপর ছেড়ে দেয়া। তাঁরাই যা বলার বলবেন। তাঁরা আমাদেরকে কোনো উত্তর প্রস্তুত করে দিলে আমরা শুধু তা প্রচার করব।
নিজেরা কারো ব্যাপারে কোনো ধরণের মন্তব্য করা তো পরের কথা, খারাপ কিছু মনেও লুকিয়ে রাখব না। আমাদের মনকে একদম পরিষ্কার রাখব। তা না হলে শয়তান নানা বাহানায় আমাদের অন্তরকে কলুষিত করে ফেলবে।
একটি কথা মনে রাখবেন ভাই, এই যে সালামাতে কলব বা অন্তরের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতার কথা বলছি, এটি আমার আপনার অনেক অনেক বড় একটি গুণ। এটিকে কোনো ভাবেই হাত ছাড়া করা যাবে না ভাই।
শয়তান যদি একবার আপনাকে পেয়ে বসে তখন দেখবেন, আজ অন্যদের ব্যাপারে আপনার মনে খারাপ চিন্তা এল, তো কাল নিজেদের ব্যাপারেই খারাপ চিন্তা শয়তান মনে হাজির করবে। এক সময় দেখবেন, নিজেকে ছাড়া কাউকেই পছন্দ হয় না। মনে রাখবেন, ওটাই আপনার ধবংসের শেষ প্রান্ত। যার শুরুটা হয়তো আপনি টেরই পাননি। তাই সাবধান ভাই, সাবধান!!
সালাফদের হৃদয়ের স্বচ্ছতার কিছু নমূনা
আমাদের সালাফদের অবস্থা কেমন কিছু ছিল একটু দেখুন-
সুফিয়ান বিন দিনার রহ. বলেন, আমি একবার (আলী রাযি.-এর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত তাবেয়ী) আবু বাশীর রহ.কে বললাম,
أخبرني عن أعمال من كان قبلنا؟
“পূর্ববর্তীদের (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামের) আমল সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন।
তিনি উত্তর দেন,
كانوا يعملون يسيراً ويؤجرون كثيراً
তাঁরা আমল করতেন কম কিন্তু সাওয়াব পেতেন বেশি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ولم ذاك؟ – এটি কেন? তিনি উত্তর দেন, لسلامة صدورهم – তাঁদের হৃদয়ের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতার কারণে।
সাহাবিদের মধ্যে হযরত আবু দুজানা রাযি. এর নাম শুনেনি আমাদের মধ্যে এমন কে আছে? তাঁর সম্পর্কে তাবাকাতে ইবনে সাআদে একটি ঘটনা এসেছে।
عن زيد بن أسلم، أنَّه دخل على ابن أبي دُجانة، وهو مريض، وكان وجهه يتهلَّل، فقال له : ما لك يتهلَّل وجهك ؟ قال : ما من عملِ شيءٍ أوثق عندي من اثنين : أمَّا أحدهما، فكنت لا أتكلَّم بما لا يعنيني، وأما الأُخْرى : فكان قلبي للمسلمين سليمًا [رواه ابن سعد فى الطبقات الكبرى]
“হযরত যায়েদ বিন আসলাম রহ. থেকে বর্ণিত আছে, একবার হযরত আবু দুজানা রাযি. অসুস্থ হলে তিনি তাঁকে দেখতে যান। তখন তাঁর চেহারা (চাঁদের মতো) ঝলমল করছিল। তিনি তাঁকে লক্ষ করে বললেন, ব্যাপার কী! আপনার চেহারা যে ঝলমল করছে?
তিনি বলেন, (ভাবার্থ) আমার দুটি আমল আমার কাছে সবচেয়ে দামী। (যে আমল দুটির ব্যাপারে আমি অনেক আশাবাদী।) একটি হল, আমি কখনো অনর্থক কথা বলি না। ২য়টি হল, সকল মুসলমানের জন্য আমার অন্তর একদম পরিষ্কার। (কারো প্রতি আমার মনে কোনো হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই।)” (তাবাকাতে ইবনে সাআদ)
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. এর হৃদয়ের স্বচ্ছতা ও নির্মলতা আন্দাজ করা যায় তার নিম্নোক্ত কথা থেকে। তিনি বলেন,
إني لآتي على الآية في كتاب الله فلوددت أن جميع الناس يعلمون ما أعلم وإني لأسمع بالحاكم من حكام المسلمين يعدل في حكمه فأفرح ولعلي لا أقاضى إليه أبدا وإني لأسمع بالغيث قد أصاب البلد من بلاد المسلمين فأفرح وما لي به سائمة
رواه الطبراني ورجاله رجال الصحيح.اهـ
“কুরআনের কোনো আয়াত আমার সামনে এলে ইচ্ছে করে, এ আয়াতের ব্যাপারে আমি যা যা জানি সকল মুসলমান যদি তা জানতে পারত!
যখন কোনো বিচারকের ব্যাপারে শুনি যে, তিনি ন্যায় নিষ্ঠার সাথে বিচার করেন তখন খুব ভালো লাগে। অথচ তার কাছে হয়তো আমার কোনো দিনই বিচার নিয়ে যেতে হবে না।
যখন শুনি, মুসলমানের কোনো এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে তখন খুব খুশি হই। অথচ ওখানে আমার কোনো জন্তু নেই। (কোনো ক্ষেতখামার নেই।)” (তাবারানি; হাদিসটির সনদ সহী)
ইমাম শাফেয়ী রহ. এর সমকালীন এক আলেম ইউনুস সাদফি রহ. ইমাম শাফেয়ী রহ. সম্পর্কে বলেন,
ما رأيت أعقل من الشافعي، ناظرته يومًا في مسألة ثم افترقنا، ولقيني، فأخذ بيدي، ثم قال: يا أبا موسى، ألا يستقيم أن نكون إخوانًا، وإن لم نتفق في مسألة واحدة؟
“আমি শাফেয়ীর চেয়ে বিচক্ষণ কাউকে দেখিনি। একবার একটি মাসআলা নিয়ে তার সাথে আমার বিতর্ক হয়। এরপর আমরা একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। পরে আমার সাথে তার দেখা হলে আমার হাত ধরে বললেন, আবু মূসা! কোনো মাসআলায় আমাদের মতপার্থক্য থাকলেও আমরা পরষ্পর ভাই ভাই হয়ে থাকাটা কি ভালো হয় না”?
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. সম্পর্কে তাঁর ছাত্র ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন,
ما رأيته يدعو على أحد من خصومه قط، بل كان يدعوا لهم
“আমি কখনো তাঁকে তাঁর বিরোধিতাকারীদের জন্য বদদোয়া করতে দেখিনি। বরং তিনি তাদের জন্য দোয়া করতেন”।
ইবনুল কাইয়িম রহ. আরও বলেন, একবার আমি তাঁকে এক লোকের মৃত্যু সংবাদ দেই। যে লোকটি তাঁর প্রতি প্রচন্ড বিদ্বেষ পোষণ করত। কিন্তু তিনি এ সংবাদ শুনে ইন্নালিল্লাহ পড়েন এবং সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের লোকজনকে সান্ত্বনা দেয়ার তাঁর বাড়িতে গিয়ে হাজির হন।
সর্বোত্তম কে?
সুনানে ইবনে মাজাহ’তে আসা সহীহ সনদে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَىُّ النَّاسِ أَفْضَلُ قَالَ كُلُّ مَخْمُومِ الْقَلْبِ صَدُوقِ اللِّسَانِ. قَالُوا صَدُوقُ اللِّسَانِ نَعْرِفُهُ فَمَا مَخْمُومُ الْقَلْبِ قَالَ هُوَ التَّقِيُّ النَّقِيُّ لاَ إِثْمَ فِيهِ وَلاَ بَغْىَ وَلاَ غِلَّ وَلاَ حَسَدَ .
“হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম কে? তিনি বললেন, প্রত্যেক ‘মাখমূমুল কালব’ ও সত্যভাষী।
তারা বলেন, সত্যভাষীকে তো চিনলাম, কিন্তু ‘মাখমূমুল কালব’ কে? তিনি বললেন, ‘মাখমূমুল কালব’ হলো যে তাকওয়া ওয়ালা এবং এমন স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হৃদয়ের অধিকারী, যার কোনো গুনাহ নেই, (ব্যক্তিগত কারণে কারো সাথে) কোনো দুশমনি নেই, কারো প্রতি কোনো হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই। (এ জাতীয় সব কিছু থেকে যার অন্তর একদম পবিত্র)”। -সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৫৪৮ (হাদিসটি সহীহ)
সে আল্লাহর সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়
অন্তরে কারো প্রতি বিদ্বেষ রাখা কত জঘন্য একটি কাজ যে, শুধু এ কারণে কোনো বান্দা আল্লাহর সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়। সহীহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلاَّ رَجُلاً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا .
“আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যারা আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরিক করেনি। তবে ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না, যার মাঝে এবং তার কোনো ভাইয়ের মাঝে বিদ্বেষ রয়েছে, শত্রুতা রয়েছে। তাদের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়, এ দু’জনকে আপোষ করার জন্য অবকাশ দাও, এ দু’জনকে আপোষ করার জন্য সুযোগ দাও, এ দু’জনকে আপোষ করার জন্য সুযোগ দাও”। সহীহ মুসলিম ৬৪৩৮
সহীহ মুসলিমেরই অন্য একটি হাদিসে এসেছে,
تُعْرَضُ الأَعْمَالُ فِي كُلِّ يَوْمِ خَمِيسٍ وَاثْنَيْنِ فَيَغْفِرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي ذَلِكَ الْيَوْمِ لِكُلِّ امْرِئٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلاَّ امْرَأً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا ارْكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا .
“প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার (আল্লাহর সামনে বান্দাদের) আমল পেশ করা হয়। তখন আল্লাহ তা’আলা সেদিন প্রত্যেক এমন বান্দাকে ক্ষমা করেন, যারা তাঁর সাথে কোনো কিছু শরিক করেনি। তবে ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না, যার মাঝে এবং তার কোনো ভাইয়ের মাঝে বিদ্বেষ রয়েছে, শত্রুতা রয়েছে। তাদের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়, এ দু’জনকে আপোষ করার জন্য অবকাশ দাও, এ দু’জনকে আপোষ করার জন্য অবকাশ দাও”। সহীহ মুসলিম ৬৪৪০
ভাইদের খেদমতে কয়েকটি আরজ
হাদিসগুলোর আলোকে আমার মুহতারাম ভাইয়ের খেদমতে আমার আরজ থাকবে, আমরা আম ভাবে সকল মুসলমানের ব্যাপারে এবং খাস ভাবে আমাদের সকল সাথী সঙ্গীদের ব্যাপারে অন্তর একদম সাফ রাখব। একদম সাফ। কোনো ভাইয়ের প্রতি আমার অন্তরে ছোট্ট একটা দাগও থাকবে না। ছোট্ট একটা দাগও না।
মুহতারাম ভাই, আমাদের ভাইরা যেহেতু মানুষ তাই মানবিক দূর্বলতার কারণে তাঁদের থেকেও আল্লাহ না করেন এমন কোনো কাজ বা আচরণ হয়ে যেতে পারে যার ফলে শয়তান তাঁদের প্রতি আমাদের অন্তরে খারাপ কিছুর কুমন্ত্রণা দেয়ার সুযোগ নিতে পারে।
আল্লাহ না করুক এমন পরিস্থিতি হলে আমরা এটিকে আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা মনে করব। এ পরিস্থিতিতে আমি কি আমার ভাইয়ের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করি, না ভাইকে এ ক্ষেত্রে মাযূর ধরে, ভাইয়ের কাজের কোনো একটা তাবিল (ব্যাখ্যা) করে নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করি। এটিই হল তখন আমার জন্য পরীক্ষা।
উদাহরণত, আমরা কোনো ভাইকে একটি কাজের কথা বললাম। কিন্তু ওই ভাই কাজটি করলেন না, কেন করলেন তাও জানালেন না। তখন আমাদের উচিত, ভাইয়ের প্রতি মন খারাপ না করে, নিজ থেকে ভাইয়ের কাজের কোনো তাবিল (ব্যাখ্যা) করে নেয়া। হয়তো ভাইয়ের কোনো সমস্যা ছিল, বা কোনো ওযর ছিল যে কারণে তিনি কাজটি করতে পারেননি এবং জানানোরও সুযোগ পাননি।
ভাইয়ের সাথে কথা বলার সময়ও এ বিষয়টি মাথায় রাখবেন যে, হয়তো ভাইয়ের কোনো ওযর ছিল। ভাইয়ের সম্ভাব্য ওযরের কথাটি পারলে আপনিই বলে ফেলুন। শুরুতেই ভাইয়ের কাছে জানতে চান, আপনি কোনো সমস্যায় পড়েননি তো ভাই? তাহলে দেখবেন, আপনি যা বলতে চাচ্ছেন তা বলাও হচ্ছে, আবার ভাইয়ের মনে বিরূপ কোনো প্রভাবও পড়ছে না।
দেখুন, হযরত ইউসুফ আ. এর একটি কথা, যা তিনি তাঁর ভাইদেরকে লক্ষ করে বলেছিলেন,
قَالَ هَلْ عَلِمْتُم مَّا فَعَلْتُم بِيُوسُفَ وَأَخِيهِ إِذْ أَنتُمْ جَاهِلُون
“ইউসুফ (তাঁর ভাইদেরকে) বলল, আপনাদের কি জানা আছে, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সাথে কী করেছিলেন, যখন আপনারা জাহেল ছিলেন?”। সূরা ইউসুফ (১২) ৮৯
লক্ষ করুন, এখানে ইউসুফ আ. তাঁর কথার শেষে ‘যখন আপনারা জাহেল ছিলেন’ এটি কীজন্য বললেন? এটি তো আসলে তাঁর ভাইদের বলার কথা ছিল।
তিনি যখন বললেন ‘আপনাদের কি জানা আছে, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সাথে কী করেছিলেন’ তখন তাঁর ভাইয়েরা বলতেন, ভাই, আমরা তো তখন জাহেল ছিলাম। তাই ওসব করে ফেলেছি। একথা বলে তাঁরা একটা ওযর পেশ করতেন।
কিন্তু দেখুন, তাঁদের ওযরটি তিনি নিজেই বলে দিচ্ছেন। এই হল নবীওয়ালা আখলাক।
প্রিয় ভাই আমার, নবীওয়ালা মেহনত নবীওয়ালা আখলাক নিয়েই করতে হবে।
একটি কথা সব সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, আমাদের প্রত্যেকটি ভাই এমন একটা সময় আমাদেরকে সঙ্গ দিচ্ছেন যখন কিনা জঙ্গি হওয়া হত্যাযোগ্য অপরাধ। তাই প্রত্যেকটি ভাইয়ের কদর প্রতি মুহুর্তে আমাদের মনে রাখতে হবে। এই ভাইগুলো সঙ্গ না দিলে আমার আপনার একার পক্ষে জিহাদের এ ফরিযা আঞ্জাম দেয়া কোনোভাবেই তো সম্ভব ছিল না।
এত বললাম আমাদের অধীনস্থ ভাইদের কথা। আমাদের ওপরস্থ ভাইদের ব্যাপারেও একই কথা। আপনার মাসউল হোক বা আরও ওপরে যারা আছেন তাঁরা হোক। আঞ্চলিক মাসউল হোক কিংবা হেডঅফিসের মাসউল হোক। সবার বেলায় একই কথা।
কখনো এমন হতে পারে, আপনার মাসউল আপনার একটা কাজ করে দেবেন বললেন কিংবা আপনাকে কিছু দেবে বললেন। পরে দেখলেন, কাজটি তিনি করে দিচ্ছেন না। তাহলে ভাইয়ের প্রতি মন খারাপ না করে, নিজ থেকে ভাইয়ের কাজের কোনো তাবিল (ব্যাখ্যা) করে নিন। হয়তো ভাইয়ের কোনো সমস্যা আছে, যে কারণে তিনি কাজটি করতে পারছেন না এবং আপনাকে দিতে পারছেন না।
একদম ওপরের দিকের মাসউলদের ব্যাপারেও একই কথা। মুহতারাম ভাই, কখনোই আমরা নিজের ওপর শয়তানকে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ দিবো না।
অনেক সময় এমন হতে পারে, কোনো ভাইয়ের মনে হচ্ছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কিছু একটা করা উচিত, কিন্তু উমারাগণ কিছুই তো করছেন না। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকের উচিত, এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখা যে, কখন কী করা উচিত, তা আমাদের চেয়ে আমাদের উমারাগণ বহুগুণ ভালো বুঝেন আলহামদুলিল্লাহ। তাঁরা প্রতিটি কাজ সব লেভেলের ভাইদের সাথে পরামর্শ করেই করেন। নিজেরা নিজেরা কিছু করে ফেলেন না। কোনো কিছু থেকে বিরত থাকলেও তা পরামর্শ করেই বিরত থাকেন।
তাই আমরা যদি বাহ্যত তাঁদেরকে কিছু করতে বা করার নির্দেশ দিতে না দেখি তাহলে মনে করতে হবে, নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো কারণেই তাঁরা তা করছেন না। যা আমরা বুঝতে পারছি না। সময় মতো আমরাও হয়তো বুঝব ইনশাআল্লাহ।
সালাফদের মূল্যবান দুটি বাণী
মুহতারাম ভাই, কোনো মুসলমানের কোনো কথা কিংবা আচরণ আমার কাছে আপত্তিকর মনে হলেও কীভাবে তার ব্যাপারে আমার মন পরিষ্কার রাখব, এ প্রসঙ্গে সালাফদের মূল্যবান দুটি বাণী উল্লেখ করছি।
১ম বাণীটি হল হযরত উমর রাযি. এর। তিনি বলতেন,
لا تظنَّ بكلمة خرجتْ مِن أخيك المؤمنِ شرًّا، وأنتَ تجد لها في الخير مَحْملًا
“কোনো মুমিন ভাইয়ের মুখ থেকে বের হওয়া কথার কারণে তার প্রতি খারাপ ধারনা করো না, যখন তার কথার ভালো কোনো ব্যাখ্যাও তুমি খুঁজে পাও”।
২য়টি প্রসিদ্ধ তাবেয়ী মুহাম্মদ বিন সীরীন রহ. এর। তিনি বলতেন,
إذا بَلغَك عن أخيك شيءٌ، فالْتمِسْ له عذرًا، فإن لم تجد فقل: لعل له عذرًا لا أعْرِفه
“তোমার ভাইয়ের (আপত্তিকর) কোনো কিছু তোমার কানে এলে তুমি এর জন্য কোনো ওযর তালাশ করো। কোনো ওযর না পেলে বল, হয়তো তার এমন কোনো ওযর আছে যা আমার জানা নেই”।
অন্তরকে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাখার তিনটি আমল
সবশেষে তিনটি আমলের কথা বলে আজকের মুযাকারা শেষ করছি, যে আমলগুলো করতে পারলে সবার প্রতিই আমরা আমাদের অন্তর স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে পারব ইনশাআল্লাহ।
কারো প্রতি খারাপ ধারণা না করা
১ম আমল, কখনো কারো প্রতি খারাপ ধারণা না করা।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيراً مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ
“হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ”। সূরা হুজুরাত (৪৯) ১২
إَنَّ الظَّنَّ لاَ يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا
“ধারণা বা আন্দাজ অনুমান সত্যের ব্যাপারে কোনই কাজে আসে না”। সূরা ইউনুস (১০) ৩৬
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
“হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা যাচাই করে দেখবে, তা না হলে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত হবে”। সূরা হুজুরাত (৪৯) ৬
মনে রাখবেন, আপনি যদি বিনা দলিলে কারো প্রতি খারাপ ধারনা পোষণ করেন তাহলে এর জন্য আল্লাহর কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন, কীজন্য তুমি তার প্রতি খারাপ ধারনা করলে? কিন্তু এর বিপরীত আপনি যদি বিনা দলিলে কারো প্রতি ভালো ধারনা পোষণ করেন তাহলে এর জন্য আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন না যে, তার প্রতি তোমার ভালো ধারণার রাখার দলিল কী ছিল? বরং শুধু ভালো ধারনা রাখার কারণে আপনি সাওয়াব পাবেন।
অতএব যেখানে বিনামূল্যে সাওয়াব অর্জন করা যায় সেখানে তা না করে বিনামূল্যে গুনাহ কামাই করা কত বড় নির্বুদ্ধিতা!
তো ১ম আমল হল, সবার প্রতি সুধারণা রাখা। এই সুধারণার প্রভাব আমার আপনার কথা ও কাজে প্রকাশ পাবে।
অন্যকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত হওয়া
২য় আমল হল, অন্যকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত হওয়া। কারো থেকে কষ্ট পেলে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তির আশায় তাকে ক্ষমা করে দেয়া।
আমরা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কষ্ট পেতে পারি। নিজের পরিবারের কারো থেকে পেতে পাই। সহপাঠিদের থেকে পেতে পারি। দ্বীনী কাজের সাথীদের থেকেও কষ্ট পেতে পারি। সবার বেলায় একই কথা। আমরা অন্যকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত হই। কারো ব্যাপারেই মনে কিছু জমিয়ে রাখব না। সব কিছু স্বাভাবিকভাবে নেবো।
আল্লাহ তাআলার এ ইরশাদগুলো সব সময় আমাদের চোখের সামনে রাখার চেষ্টা করব।
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ
“ক্ষমা করার নীতি গ্রহণ করো, সৎকাজের আদেশ দাও এবং জাহেলদেরকে এড়িয়ে চলো”। সূরা আরাফ (০৭) ১৯৯
وَجَزَاء سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ
“মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। তবে যে ক্ষমা করে এবং আপোষ করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন না”। সূরা শুরা (৪২) ৪০
وَأَن تَعْفُواْ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى
“ক্ষমা করে দেয়াটা তাওয়ার অধিক নিকটবর্তী”। সূরা বাকারা (২) ২৩৭
أُوْلُوا الْفَضْلِ مِنكُمْ وَالسَّعَةِ أَن يُؤْتُوا أُوْلِي الْقُرْبَى وَالْمَسَاكِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلْيَعْفُوا وَلْيَصْفَحُوا أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্মীয়-স্বজনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তাদের উচিত, ওদেরকে ক্ষমা করা এবং দোষক্রটি উপেক্ষা করা। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়”। সূরা নূর (২৪) ২২
প্রিয় ভাই আমার! মনে রাখবেন, ‘জাযা মিন জিনসিল আমাল’ বা আমলের অনুরূপ প্রতিদান দেয়া, এটি আল্লাহ তাআলার একটি নীতি। বান্দা যেমন আমল করে তাকে তিনি সেই আমলের অনুরূপ প্রতিদান দিয়ে থাকেন। কুরআন-হাদিসে এর নজির প্রচুর। একটি নজির দেখুন,
হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنيَا، نَفَّسَ الله عَنْهُ كُربَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيَامَةِ، وَمَنْ يَسَّر عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ الله عَلَيهِ في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ الله في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، والله في عَونِ العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَونِ أخِيهِ،
“যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের জাগতিক কষ্ট দূর করে দেবে আল্লাহ তাআলা (এর বিনিময়ে) তার থেকে কেয়ামতের দিনের বড় একটি কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির কষ্ট লাঘব করে দেবে আল্লাহ দুনিয়াতে ও আখেরাতে তার কষ্ট লাঘব করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার মুসলমান ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে”। মুসলিমঃ ২৬৯৯
দেখুন, এখানে বান্দা তার ভাইয়ের কষ্ট দূর করে দিচ্ছে, বিনিময়ে আল্লাহ তার কষ্ট দূর করে দিচ্ছেন। বান্দা তার ভাইয়ের দোষত্রুটি গোপন রাখছে, বিনিময়ে আল্লাহও তার দোষত্রুটি গোপন রাখছেন। বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করছে, বিনিময়ে আল্লাহও তার সাহায্য করছেন। এ হল জাযা মিন জিনসিল আমাল বা আমলের অনুরূপ প্রতিদান। তো আপনি এ উদ্দেশ্য ক্ষমা করে দিন যে, এর ওসিলায় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন।
এছাড়া আরেকটি পুরস্কারের কথাও হাদিসে এসেছে,
مَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزًّا
“ক্ষমা করার কারণে আল্লাহ বান্দার সম্মান ও মর্যাদাই বৃদ্ধি করে থাকেন”। সহী মুসলিম ৬৪৮৬
এমনও কেউ কেউ আছে যারা ছোট বড় কোনো কিছুই স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেন না। কেউ তাকে কোনো ভাবে কষ্ট দিল, বস! সারা জীবন সেই কথা তিনি মনে রাখবেন। মনের মধ্যে যেন একটা পাথর জমিয়ে রাখেন। এটি কোনো মুমিনের গুণ হতে পারে না।
মনে পড়ে, অনেক আগে একটি আরবি পত্রিকায় একটা লেখা পড়েছিলাম। শিরোনাম ছিল, শিশুদের থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
সেখানে একটা কথা ছিল, শিশুরা কারো সাথে ঝগড়া লাগলে একটু পরই আবার তার সাথে মিলে যায়। মনে এসব জিনিস বেশিক্ষণ রাখে না। কী চমৎকার একটা গুণ। যা আমরা প্রায় সবাইই হারিয়ে বসেছি। ফা ইলাল্লাহিল মুশতাকা
গুণটি কিন্তু আমাদের সবার মাঝেই ছিল। আমরা এখন হারিয়ে ফেলেছি। আবার একটু ফিরিয়ে আনলেই হল।
কেউ কেউ তো মুখেও বলে ফেলেন, আমাকে কেউ কষ্ট দিলে কখনো ভুলতে পারি না!!! অথচ মুমিন হিসেবে বলার কথা ছিল, কেউ আমাকে কষ্ট দিলে আমি ওসব একদম মনে রাখি না।
প্রিয় ভাই আমার! এবার আপনি বলুন তো, আপনি কোন কথাটা বলবেন? প্রথমটি? না দ্বিতীয়টি?
আল্লাহ তাআলা মুতাকাল্লিম-মুখাতাব সবাইকে সালামাতে কলবের মহা মূল্যবান নেয়ামত দান করে ধন্য করেন, আমীন।
তো আরজ করছিলাম, সালামাতে কলবের গুণটি লাভ করার জন্য ২য় আমল হল, অন্যকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত হওয়া। কারো থেকে কষ্ট পেলে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তির আশায় তাকে ক্ষমা করে দেয়া।
নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্য দোয়া করা
৩য় আমল হল, দোয়া করা। নিজের জন্য দোয়া করা। নিজের অন্তরের স্বচ্ছতা লাভের জন্য এবং সব ধরণের ময়লা থেকে মুক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। পাশাপাশি সকল মুসলিম ভাই বোনদের জন্য দোয়া করা।
অন্যের জন্য প্রাণখুলে দোয়া করা এটি একজন মুমিনের হৃদয়ের স্বচ্ছতার অন্যতম একটি লক্ষণ। কারো অন্তরে কুটিলতা থাকলে সে অন্যের জন্য দোয়া করতে পারে না।
শারেহে বুখারি ইমাম ইবনে বাত্তাল রহ. এক প্রসংগে উল্লেখ করেছেন,
عن أبي الدَّرداء رضي الله عنه أنَّه كان يدعو لسبعين من أصحابه، يسمِّيهم بأسمائهم، وهذا العمل علامة على سَلَامة الصَّدر.
বর্ণিত আছে, হযরত আবু দারদা রাযি. তার সত্তুর জন সংগীর নাম নিয়ে নিয়ে দোয়া করতেন। এটি ছিল তার অন্তরের পরিশুদ্ধতার আলামত।
এ থেকে বুঝা যায়, অন্যদের জন্য দোয়া করা এটি কোনো ব্যক্তির অন্তরের পরিশুদ্ধতার আলামত। আমরাও কি পারি না ভাই এটি করতে?
আমরা আমাদের ভাইদের জন্য তো দোয়া করবই। আমি বলছি, আমাদের দোয়া যেন আরও ব্যাপক হয়। দোয়াতে আমরা যেন কৃপণ না হই।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন ওমর রাযি.-এর জন্য দোয়া করেছিলেন, তেমন আমরাও এ যুগের ওই সব লোকদের জন্য দোয়া করব, যারা সহী মানহাজ বুঝে ফেললে দীনের অনেক বড় খেদমত হবে।
পাশাপাশি আমরা আমাদের ওসব উলামায়ে কেরামের জন্য নাম ধরে ধরে দোয়া করব উম্মাহর বিরাট একটা অংশের ওপর যাদের প্রভাব রয়েছে।
তিনি এখন যেমনই হোক, যে দলেরই হোক। হেফাজতে ইসলামের হোক, চরমোনাইর হোক, তাবলিগের হোক, সুন্নি জামাতের হোক, কওমির হোক, আলিয়ার হোক কিংবা জামাতে ইসলামির হোক।
আল্লাহ যেন তাদের মাধ্যমে দীনের সহী তাকাযা পূরণ করেন এবং দীনের সহী দাওয়াকে শক্তিশালী করেন। অন্তরের অন্তস্তল থেকে সব সময় আমরা এই দোয়া অব্যাহত রাখব ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ করে আমরা আমাদের উস্তাদদের জন্য দোয়া করব, যাদের থেকে আমরা ইলম শিখেছি। যাদের সামনে বসার ওসিলায় আমরা কুরআন হাদিসের সামান্য কিছু ইলম লাভ করতে পেরেছি। অন্তরের অন্তস্তল থেকে আমরা তাঁদের জন্য দোয়া করব। এটি হবে আমাদের অন্তরের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতার আলামত।
অন্তরের স্বচ্ছতা লাভের আরও কিছু আমল
সালামাতে কলব বা অন্তরের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা লাভের জন্য এই তিনটি আমল হল মূল। এতিনটি আমল আমরা অবশ্যই করব ইনশাআল্লাহ।
এর সাথে ওলামায়ে কেরাম আরও কিছু আমলের কথা বলেছেন। এই তিনটি আমলের পাশাপাশি ওগুলোও করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। ওই আমলগুলোর শুধু নাম বলে যাই।
১. বেশি বেশি সালাম দেয়া। বিশেষ করে যাদের প্রতি অন্তরে খারাপ কিছু এসেছে তাদেরকে বেশি বেশি সালাম দেয়া। কারণ, সালামের ফলে পরষ্পরে মহাব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
২. হাদিয়া দেয়া।
৩. ব্যক্তিগত কারণে কখনো কারো সাথে রাগ না করা। করে ফেললে একটু পরই তার সাথে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া।
৪. অতিরিক্ত রসিকতা না করা। কারণ, এর ফলেও অনেক সময় সম্পর্ক নষ্ট হয়। পরষ্পর হিংসা বিদ্বেষ তৈরি হয়।
৫. পদ-পদবির লোভ অন্তর থেকে একদম বের করে ফেলা। এ রোগ কারো ভিতরে থাকলে এটিই তার অন্তরে অন্যদের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।
ফুযাইল বিন ইয়ায রহ. বলতেন,
ما من أحد أحب الرياسة إلا حسد وبغي وتتبع عيوب الناس وكره أن يذكر أحد بخير
কারো মধ্যে নেতৃত্ব বা পদ-পদবির লোভ থাকলে সে অন্যদের প্রতি হিংসা করে, সীমালঙ্ঘন করে। মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ায়, কারো ব্যাপারে ভালো আলোচনা হোক এটি সে পছন্দ করে না।
৬. না কারো গীবত করা, আর না কারো গীবত শোনা।
কারো গীবত করা যেমন জঘন্য অপরাধ, গীবত শোনাও তেমনই জঘন্য অপরাধ। গীবত করার দ্বারা যার গীবত করা হল সে জানতে পারলে তার অন্তরে গীবতকারীর প্রতি বিদ্বেষ তৈরি হয় আর গীবত শুনলে যে শুনে তার অন্তরে যার গীবত করা হল তার প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা তৈরি হয়। এজন্য আমরা কারো গীবত করা থেকে যেমন বেঁচে থাকি ঠিক তেমনই কারো গীবত শোনা থেকেও বেঁচে থাকব।
দূর্বল সনদে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে,
عن عبد الله بن مسعود -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا يُبَلِّغُنِي أحدٌ من أصحابي عن أحدٍ شيئًا، فإنِّي أحبُّ أن أخرج إليكم وأنا سَلِيم الصَّدر.
“হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার সাহাবিদের কেউ যেন কারো সম্পর্কে আমার কাছে (আপত্তিকর) কোনো কথা না পৌঁছায়। কারণ, আমি চাই এমন ভাবে তোমাদের কাছে আসি যে, সবার ব্যাপারেই আমার অন্তর স্বচ্ছ ও পরিষ্কার”। -জামে তিরমিযী ৩৮৯৬; সুনানে আবু দাউদ ৪৮৬০ (হাদিসটির সনদ দূর্বল)
তাছাড়া একটি কথা মনে রাখবেন, যাকে আপনি আপনার সামনে অন্যের গীবত করতে দেখছেন মনে রাখবেন সে কিন্তু এক সময় আপনারও গীবত করবে। কারণ, এ রোগটি তার মধ্যে আছে। সে আপনাকেও ছাড়বে না। অতএব এমন লোককে চিনে রাখুন এবং তার থেকে সতর্ক থাকুন।
তেমনিভাবে আপনি যখন কারো সামনে অন্যের গীবত করছেন তখন এ কথা মনে রাখবেন, গীবত করে আপনি নিজের পরিচয়টাই তাকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, আমি কিন্তু মানুষের গীবত করে বেড়াই। অতএব আপনি ভাবছেন, গীবত করে একজনকে অন্যজনের কাছে ছোট করছেন, আসলে আপনি নিজেই নিজেকে ছোট করছেন।
যিনি আপনার গীবত শুনছেন তিনি বুঝতে পারবেন, আপনি যার গীবত করছেন তার ব্যাপারে আপনার কথা মিথ্যাও হতে পারে। কিন্তু আপনি যে গীবত করছেন এটি তো তিনি নিজেই শুনছেন।
ফলাফল কী হল? তিনি এ কথা বুঝে নেবেন যে, আপনি লোকটা যে তত ভালো না, এটি নিশ্চিত আর আপনি যার কথা বললেন তার খারাপ হওয়াটা অনিশ্চিত। হতেও পারে, নাও হতে পারে।
এ জন্য ভাইদের কাছে আমার আবেদন থাকবে, আমরা না কারো গীবত নিজেরা করব আর না কেউ গীবত করলে তা শুনব। থামিয়ে দেব। বা নিজে সরে যাব।
একটি দোয়া
আজকের মূল আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত একটি দোয়া বলেই কথা শেষ করছি।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الثَّبَاتَ فِي الْأَمْرِ، وَأَسْأَلُكَ عَزِيمَةَ الرُّشْدِ، وَأَسْأَلُكَ شُكْرَ نِعْمَتِكَ، وَحُسْنَ عِبَادَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ لِسَانًا صَادِقًا، وَقَلْبًا سَلِيمًا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَعْلَمُ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا تَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ مِمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ
“হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করি কাজে অবিচলতা, সৎপথে দৃঢ়তা, আপনার দেওয়া নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদাত করার যোগ্যতা। আমি আপনার কাছে কামনা করি সত্যবাদী জিহ্বা এবং স্বচ্ছ ও নির্মল অন্তর। আমি আপনার জানা সকল অকল্যাণ হতে আশ্রয় চাই এবং আপনার জানা সকল কল্যাণ আপনার কাছে কামনা করি। আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই সকল অন্যায় থেকে (যা আমি করে ফেলেছি) যা আপনি জানেন। নিশ্চয়ই আপনি অদৃশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত”। (জামে তিরমিযী ৩৪০৭; মুসনাদে আহমাদ ১৭১১৪)
পারলে পুরো দোয়াটা মুখস্থ করে নিন। না হয় কমপক্ষে এটুকু-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ لِسَانًا صَادِقًا، وَقَلْبًا سَلِيمًا
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করি সত্যবাদী জিহ্বা এবং স্বচ্ছ ও নির্মল অন্তর।
ভাই, আজ কথা এখানেই শেষ করলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কথাগুলোর ওপর আমল করার তাওফিক দান করেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দীনের জন্য কবুল করেন, শাহাদাত পর্যন্ত জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করেন এবং আমাদেরকে সর্বোচ্চ জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউসে একত্রিত করেন, আমীন।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وأصحابه أجمعين
وآخردعوانا أن الحمد لله رب العالمين
***********
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
In your dua remember your brothers of
Al Firdaws Media Foundation
Assalamualaikum