আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশননির্বাচিতপিডিএফ ও ওয়ার্ডমিডিয়া

আত্মশুদ্ধি- পর্ব- ২৫ || দেশ ও জাতির কল্যাণকামীতা || মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdaws
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presentsفي اللغة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Languageبعنوان:
শিরোনাম:
Titled:

سلسلة تزكية النفس- الحلقة ٢٥
النصيحة للبلد والأمة
আত্মশুদ্ধি- পর্ব- ২৫
দেশ ও জাতির কল্যাণকামীতা
Self-purification- Episode-25
Kindness of the country and the nation


لمولانا صالح محمود حفظه الله
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
By Mawlana Saleh Mahmud Hafizahullah

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

https://justpaste.it/attoshoddi-25
https://archive.vn/JtFTg
https://mediagram.me/23a78f7c91004762
https://archive.ph/eOHCp
https://web.archive.org/web/20210322…/attoshoddi-25
https://web.archive.org/web/20210322…a78f7c91004762

روابط بي دي اب
PDF (905 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৯০৫ কিলোবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/dH5A6owg9q4oCQJ
https://archive.org/details/25.-desh…nkamita_202102
http://www.mediafire.com/file/ig21vt…amita.pdf/file


روابط ورد
Word (1.60 mb)
ওয়ার্ড [১.৬০ মেগাবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/DqdENeM4os4LGPM
https://archive.org/details/25.-desh…r-kollankamita
http://www.mediafire.com/file/58h8w2…mita.docx/file


روابط الغلاف- ١
book Banner [1.39 MB]

বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৩৯ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/madebWMjfmDN6fJ
https://archive.org/details/attoshoddi-shriz-25
http://www.mediafire.com/file/pf5dzs…iz-25.jpg/file
روابط الغلاف- ٢
Banner [1.49 mb]

ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৪৯ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/2HbyXNoe5AiHHgA
https://archive.org/details/25_20210227
http://www.mediafire.com/file/uth3g2…4e/25.jpg/file

 

 

আত্মশুদ্ধি – ২৫

দেশ ও জাতির

কল্যাণকামীতা

 

 

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সূচিপত্র

 

দেশ ও জাতির কল্যাণকামীতা.. 4

এক. আমান ও নিরাপত্তা প্রার্থনা.. 6

দুই. প্রতিমা-পূজা থেকে মুক্ত থাকার প্রার্থনা.. 7

ইবরাহীম আ.-এর যুক্তি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল. 9

তিন. সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার প্রার্থনা.. 13

বরকত কাকে বলে?. 14

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয়. 14

সুখ ও সমৃদ্ধি চাওয়ার আরও একটি দোয়া.. 15

আলোচনার সারকথা.. 17

 

 

 

 

 

 

 

 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,

আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন, ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা সাইয়্যেদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালিন,ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসানিন ইলা ইয়াওমিদ্দীন, মিনাল উলামা ওয়াল মুজাহিদীন, ওয়া আম্মাতিল মুসলিমীন, আমীন ইয়া রাব্বাল আ’লামীন।

আম্মা বা’দ:

মুহতারাম ভাইয়েরা! আমরা সকলেই দুরুদ শরীফ পড়ে নেই-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ،كما صَلَّيْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰي آلِ إبراهيم، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰى آلِ إبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ.

প্রতি সপ্তাহের ন্যায় আজকে আবারও আমরা তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এই জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি- আলহামদুলিল্লাহ।

দেশ ও জাতির কল্যাণকামীতা
মুহতারাম ভাইয়েরা! আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে: দেশ ও জাতির কল্যাণকামীতা।

মুহতারাম ভাইয়েরা! প্রথমেই আমি কালামে পাক থেকে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করছি, সে আয়াতগুলোর আলোকেই আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ। এ ব্যাপারে আমি আল্লাহর তাওফিক ও সাহায্যেরই মুহতায। আয়াতগুলো হচ্ছে:

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـٰذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعْبُدَ الْأَصْنَامَ ﴿٣٥﴾ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ ۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي ۖ وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴿٣٦﴾ رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ ﴿٣٧﴾

যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে পালনকর্তা, এ শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন। (35) হে পালনকর্তা, এরা অনেক মানুষকে বিপথগামী করেছে। অতএব যে আমার অনুসরণ করে, সে আমার এবং কেউ আমার অবাধ্যতা করলে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (36) হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে (37) [সূরা ইবরাহীম  ১৪ : ৩৫-৩৭]

সূরায়ে ইবরাহীমের কয়েকটি আয়াত এখানে উল্লেখ করা হল। আল্লাহ তা’আলা নিজ বান্দা ও খলীল হযরত ইবরাহীম আ.-এর একটি দুআ এখানে বর্ণনা করেছেন। এ দুআয় যেই গভীর শিক্ষা ও চেতনার খোরাক রয়েছে তা প্রত্যেক মুমিনেরই উপলব্ধি করা দরকার। কারণ কুরআন চায় যে, প্রত্যেক তিলাওয়াতকারীই তা উপলব্ধি করুক এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুক।

মুহতারাম ভাইয়েরা! দুআ সম্বলিত আয়াতগুলোর সূচনা-অংশটি লক্ষ্য করুন-

وإذ قال إبراهيم -এর শাব্দিক অর্থ, ‘যখন ইবরাহীম বললেন’। আরবি বাক্যরীতি অনুসারে এখানে একটি ‘ফেয়েল’ বা ক্রিয়া উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ اذكر (স্মরণ কর)। তাহলে বাক্যটির সারমর্ম হচ্ছে, ইবরাহীমের (আ.) ঐ অবস্থাটি স্মরণ কর ও আলোচনা কর যখন তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করছিলেন। তার ঐ অবস্থাটি কত সুন্দর, কত প্রশংসনীয়! কুরআন মাজিদের অনেক জায়গায় এ উপস্থাপনা-রীতিটি পাওয়া যায়। এতে আলোচিত ঘটনা বা অবস্থা গভীরভাবে উপলব্ধি করা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। সুতরাং আমাদের জন্য কর্তব্য হচ্ছে, দুআটি গভীরভাবে বোঝা এবং তা থেকে নূর ও আলো গ্রহণ করা।

আল্লাহর খলীল হযরত ইবরাহীম আ.-এর এ দুআয় মৌলিক তিনটি বিষয় পাওয়া যায়। যথা:-

এক. আমান ও নিরাপত্তা প্রার্থনা।

দুই. প্রতিমা-পূজা থেকে মুক্ত থাকার প্রার্থনা।

তিন. সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার প্রার্থনা।

এবার আসুন প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করি।

এক. আমান ও নিরাপত্তা প্রার্থনা
ইবরাহীম আ. মক্কা নগরী ও এর অধিবাসীদের জন্য নিরাপত্তার দুআ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর খলীলের এ দুআ কবুল করেছেন এবং বিভিন্ন দিক থেকে মক্কা নগরীকে ‘নিরাপদ’ নগরী বানিয়েছেন। কিয়ামতের পূর্বলগ্নে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে দাজ্জাল সদম্ভে বিচরণ করবে। কেবল মক্কা ও মদিনায় সে প্রবেশ করতে পারবে না।

حديث أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَيْسَ مِنْ بَلَدٍ إِلاَّ سَيَطَؤُهُ الدَّجَّالُ، إِلاَّ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ لَيْسَ لَهُ مِنْ نِقَابِهَا نَقْبٌ، إِلاَّ عَلَيْهِ الْمَلاَئِكَةُ صَافِّينَ يَحْرُسُونَهَا ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِينَةُ بِأَهْلِهَا ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ، فَيُخْرِجُ اللهُ كُلَّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“এমন কোনো ভূখণ্ড নেই যা দাজ্জালের পদভারে মথিত হবে না। তবে মক্কা ও মদিনায় সে প্রবেশ করতে পারবে না। সেখানকার প্রতিটি গলিতে ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মদিনা তার অধিবাসীসহ তিনটি ঝাঁকুনি দেবে। যার ফলে আল্লাহ তা’আলা (মদিনা থেকে) সকল কাফির ও মুনাফিককে বের করে দেবেন”। [বুখারী: ১৮৮১; মুসলিম: ২৯৪৩]

হাদিস, তাফসীর ও ফিকহের কিতাবসমূহে এর আরো বিস্তারিত বিবরণ আছে।

দুই. প্রতিমা-পূজা থেকে মুক্ত থাকার প্রার্থনা
আল্লাহর খলীল ইবরাহীম আ. প্রতিমা-পূজা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন! নিজের জন্যও, সন্তানদের জন্যও। সাথে সাথে একথাও বলছেন যে, হে পরওয়ারদেগার! এ সকল প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। অর্থাৎ, বহু মানুষের বিভ্রান্তির কারণ হয়েছে। বিষয়টি খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করা দরকার।

আমরা জানি যে, ইবরাহীম আ.-এর কওম ছিল প্রতিমা-পূজারী। স্বয়ং ইবরাহীম আ.-এর পিতা আযরও এ গোমরাহিতে লিপ্ত ছিল। আপন পিতা ও নিজ কওমকে পৌত্তলিকতার অসারতা তিনি অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এটি কুরআন মাজিদের এক বিশেষ প্রসঙ্গ। কুরআন যেহেতু তাওহীদের কিতাব এবং এর প্রথম সম্বোধিত ছিল আরবের অধিবাসীরা, যারা ইসমাইল আ.-এর বংশধর হওয়ার সূত্রে ‘ইবরাহীমী’ হওয়ার দাবিদার, তাই ইবরাহীম আ.-এর প্রকৃত পরিচয় এবং শিরক ও পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে তাঁর কঠিন বিরোধিতার বিবরণ কুরআন মাজিদে স্পষ্টভাবেই এসেছে। এ বিষয়ে পিতা আযর-এর প্রতি হযরত ইবরাহীম আ.-এর শক্তিশালী কিন্তু সশ্রদ্ধ সম্বোধন পবিত্র কুরআনে কিভাবে এসেছে দেখুন?

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا

“আপনি এই কিতাবে ইবরাহীমের কথা বর্ণনা করুন। নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী, নবী”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪১]

إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِي عَنكَ شَيْئًا

“যখন তিনি তার পিতাকে বললেনঃ হে আমার পিতা, যে শোনে না, দেখে না এবং তোমার কোন উপকারে আসে না, তার ইবাদত কেন কর?” [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪২]

يَا أَبَتِ إِنِّي قَدْ جَاءنِي مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِي أَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا

“হে আমার পিতা, আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে; যা তোমার কাছে আসেনি, সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৩]

يَا أَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَنِ عَصِيًّا

“হে আমার পিতা, শয়তানের ইবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৪]

يَا أَبَتِ إِنِّي أَخَافُ أَن يَمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحْمَن فَتَكُونَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا

“হে আমার পিতা, আমি আশঙ্কা করি, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৫]

قَالَ أَرَاغِبٌ أَنتَ عَنْ آلِهَتِي يَا إِبْراهِيمُ لَئِن لَّمْ تَنتَهِ لَأَرْجُمَنَّكَ وَاهْجُرْنِي مَلِيًّا

“পিতা বললঃ যে ইবরাহীম, তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৬]

قَالَ سَلَامٌ عَلَيْكَ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيًّا

“ইবরাহীম বললেনঃ তোমার উপর শান্তি হোক, আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি মেহেরবান”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৭]

وَأَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ وَأَدْعُو رَبِّي عَسَى أَلَّا أَكُونَ بِدُعَاء رَبِّي شَقِيًّا

“আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত কর তাদেরকে; আমি আমার পালনকর্তার ইবাদত করব। আশা করি, আমার পালনকর্তার ইবাদত করে আমি বঞ্চিত হব না”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৮]

ইবরাহীম আ.-এর যুক্তি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল
তাছাড়া ইবরাহীম আ.-এর স্বজাতিকে বিভিন্ন অকাট্য যুক্তি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল দ্বারা তাওহীদের পথে আনার প্রচেষ্টার কথাও পবিত্র কুরআনে এসেছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ إِبْرَاهِيمَ

“আর তাদেরকে ইবরাহীমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৬৯]

إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا تَعْبُدُونَ

“যখন তাঁর পিতাকে এবং তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কিসের ইবাদত কর?” [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭০]

قَالُوا نَعْبُدُ أَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِينَ

“তারা বলল, আমরা প্রতিমার পূজা করি এবং সারাদিন এদেরকেই নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকি”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭১]

قَالَ هَلْ يَسْمَعُونَكُمْ إِذْ تَدْعُونَ

“ইবরাহীম (আঃ) বললেন, তোমরা যখন আহ্বান কর, তখন তারা শোনে কি?” [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭২]

أَوْ يَنفَعُونَكُمْ أَوْ يَضُرُّونَ

“অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে?” [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৩]

قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آبَاءنَا كَذَلِكَ يَفْعَلُونَ

“তারা বললঃ না, তবে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি, তারা এরূপই করত”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৪]

قَالَ أَفَرَأَيْتُم مَّا كُنتُمْ تَعْبُدُونَ

“ইবরাহীম বললেন, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের পূজা করে আসছ”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৫]

أَنتُمْ وَآبَاؤُكُمُ الْأَقْدَمُونَ

“তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা?” [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৬]

فَإِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّي إِلَّا رَبَّ الْعَالَمِينَ

“বিশ্বপালনকর্তা ব্যতীত তারা সবাই আমার শত্রু”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৭]

الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِينِ

“যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৮]

وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ

“যিনি আমাকে আহার এবং পানীয় দান করেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৯]

وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ

“যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৮০]

وَالَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحْيِينِ

“যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৮১]

وَالَّذِي أَطْمَعُ أَن يَغْفِرَ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ

“আমি আশা করি তিনিই বিচারের দিনে আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৮২]

رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ

“হে আমার পালনকর্তা, আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৮৩]

এমনিভাবে পৌত্তলিক স্বজাতির সাথেও ইবরাহীম আ.-এর সম্পর্কহীনতার সুস্পষ্ট ঘোষণা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

“তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে। কিন্তু ইবরাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশ্যে এই আদর্শের ব্যতিক্রম। তিনি বলেছিলেন, আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। তোমার উপকারের জন্যে আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু করার নেই। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন”। [সূরা মুমতাহিনা ৬০:৪]

এগুলো হচ্ছে হযরত ইবরাহীম আ.-এর জীবনের এমন কিছু ঈমান-উদ্দীপক অধ্যায় যা কুরআন মাজিদের কোনো পাঠকেরই অজানা থাকার কথা নয়।

তো ভাই! ইবরাহীম আ.-এর খুব ভালোভাবে জানা ছিল, এসকল অসার প্রতিমা গোমরাহির কত মারাত্মক অনুষঙ্গ এবং কত অসংখ্য মানুষকে তা বিপথগামী ও চির-জাহান্নামী করে ছেড়েছে। সুতরাং হেদায়েত ও গোমরাহি যাঁর হাতে সেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, নিজের জন্যও; নিজের সন্তানদের জন্যও। ইবনে জারীর তবারী রাহ. ইমাম ইবরাহীম আততাইমী রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাঁর বয়ানে বলতেন-

من يأمن من البلاء بعد خليل الله إبراهيم، حين يقول : رب “اجْنُبْنِیْ وَ بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ

অর্থাৎ “ইবরাহীম আ.-এর মতো ব্যক্তিও যখন আল্লাহর কাছে দুআ করেছেন, পরওয়ারদেগার, আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে দূরে রাখুন, তখন কে আছে, যে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে?” [তাফসীরে তবারী ১/৪৬০]

তাহলে প্রতিমা পূজার ছিদ্রপথগুলোর ব্যাপারে ঈমানদারদের কত সতর্ক হওয়া উচিত! সাহাবী আবু বাকর রা.-এর পুত্র মুসলিম বলেন, তিনি তার বাবাকে নামাযের পর এ দুআ পড়তে শুনতেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ.

(হে আল্লাহ! আপনার আশ্রয় নিচ্ছি কুফর থেকে, দারিদ্র থেকে ও কবরের আযাব থেকে)

তিনিও তা পড়তে আরম্ভ করলেন। একদিন বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, বেটা! এ বাক্যগুলো কোথায় পেলে? তিনি বললেন, আব্বাজান! আপনাকে নামাযের পর এ বাক্যগুলো পড়তে শুনেছি। তখন বাবা বললেন-

فالزمهن يا بني فإن نبي الله صلى الله عليه وسلم كان يدعو بهن في دبر الصلاة.

“এগুলো নিয়মিত পাঠ কর। কারণ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের পর এ বাক্যগুলো দ্বারা দুআ করতেন”। [সুনানে নাসায়ী ৮/২৬২; মুসতাদরাক, হাকিম ১/৩৫]

তো ভাই! এই হচ্ছে সালাফের অবস্থা। কুফর-শিরকের বিষয়ে তাঁরা কত সতর্ক ছিলেন। শঙ্কিত ছিলেন। তাহলে এখন কে আছে যে এই মহা-ফিতনা সম্পর্কে উদাসীন থাকতে পারে? মূলত যে ভয় করে সে আত্মরক্ষার চেষ্টায় থাকে। আর যে আত্মরক্ষার চেষ্টায় থাকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। এ বাস্তবতাকেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস শরীফে বর্ণনা করেছেন।

তিনি ইরশাদ করেন,

من خاف ادلج ومن ادلج بلغ المنزل

অর্থাৎ, “যে (শত্রুর আক্রমণের) ভয় করে সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আর যে দ্রুত (আশঙ্কার) স্থান ত্যাগ করে সে (নিরাপদে) ঘরে পৌঁছে”। [সুনানে তিরমিজি, হাদিস ২৪৫০]

নবীগণ যেহেতু আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি চেনেন তাই তাঁরাই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন। এই সর্বোচ্চ ভয় তাঁদের ‘ইসমত’ ও নিষ্পাপতারই এক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ। সুতরাং আমাদেরও উচিৎ কুফর-শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

তিন. সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার প্রার্থনা
হযরত ইবরাহীম আ. মক্কাবাসীর জন্য রিজিকের দুআ করেছেন এবং তারা যেন আল্লাহর শোকরগোযারি করে-এ প্রত্যাশা করেছেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহতেও বিষয়টি পাওয়া যায়। অনেক হাদিসেই আছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার জন্য দুআ করেছেন। সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, মৌসুমের নতুন ফল এলে সাহাবীগণ তা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসতেন, তিনি সেই ফল হাতে নিয়ে দুআ করতেন-

اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثَمَرِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا، اللهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ عَبْدُكَ وَخَلِيلُكَ وَنَبِيُّكَ، وَإِنِّي عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ، وَإِنَّهُ دَعَاكَ لِمَكَّةَ، وَإِنِّي أَدْعُوكَ لِلْمَدِينَةِ بِمِثْلِ مَا دَعَاكَ لِمَكَّةَ، وَمِثْلِهِ مَعَهُ

অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমাদের ফল-ফসলে বরকত দিন। আমাদের শহরে বরকত দিন। আমাদের ‘ছা’-এ বরকত দিন। আমাদের ‘মুদ্দ’-এ বরকত দিন। হে আল্লাহ! ইবরাহীম আপনার বান্দা, আপনার খলীল ও আপনার নবী আর আমি আপনার বান্দা ও নবী। ইবরাহীম মক্কার জন্য আপনার কাছে দুআ করেছেন, আমি মদিনার জন্য আপনার কাছে ঐসব কিছু চাইছি যা তিনি মক্কার জন্য চেয়েছেন এবং তার সাথে আরো অনুরূপ চাইছি। অর্থাৎ দ্বিগুণ চাইছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস ৪৭৩]

ছা এবং মুদ্দ দুটি পাত্রের নাম, আরবে শস্য পরিমাপ করার যে পাত্রগুলো ছিল, এর একটির নাম ছা’। আর তরল কিছু মাপার যে পাত্রগুলো ছিল এর একটির নাম মুদ্দ। তো রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করেছেন, আমাদের লেনদেনে যে সকল পাত্র ব্যবহৃত হয়, ছা, মুদ্দ ইত্যাদি। হে আল্লাহ! এগুলোতে বরকত দান করুন।

‘ছা’ এবং ‘মুদ্দে’ বরকত দান করার অর্থ কী?

এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে, আমাদের লেনদেনে বরকত দান করুন।

বরকত কাকে বলে?
‘বারাকা’ শব্দের অর্থ- প্রাচুর্য। প্রাচুর্য দুইভাবে হয়, পরিমাণগত দিক থেকে কোনো কিছু বেড়ে যাওয়া এটাও প্রাচুর্য। আবার বস্তুর যে উদ্দেশ্য তা ভালোভাবে পূর্ণ হওয়া এটাও প্রাচুর্য। একজনের অর্থ বৃদ্ধি পেল। যদি তা হালাল পন্থায় হয় তাহলে তা বরকত। এটা দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রাচুর্য যা দেখা যায়, গণনা করা যায়। আরেকজনের অর্থ হয়তো সংখ্যায় ও পরিমাণে বৃদ্ধি পেল না তবে অর্থের যে উদ্দেশ্য তা পুরা হয়ে গেল। অল্প অর্থে সকল প্রয়োজন পুরা হলো। বিপদ-আপদের শিকার হলো না। বড় বড় চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় হলো না। মামলা-মুকদ্দমায় পয়সা খরচ হলো না। যতটুকু হালাল উপার্জন তা দিয়েই জীবন সুন্দরভাবে কেটে গেল। এটাও প্রাচুর্য ও বরকত। তবে তা আগেরটির মত প্রত্যক্ষ নয়। এটা উপলব্ধির বিষয়। ঈমানদার যখন চিন্তা করে তখন এ বরকতের উপস্থিতি বুঝতে পারে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয়
তো রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার ব্যবসা-বাণিজ্যের বরকতের জন্য, সমৃদ্ধি ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেছেন। সুতরাং মুমিনের কর্তব্য, দেশ ও জাতির উপার্জনে যেন সমৃদ্ধি আসে, তারা যেন স্বাবলম্বী হয়, অন্যের মুখাপেক্ষী না হয় এবং তারা যেন তাদের উপার্জনের মাধ্যমে আখিরাতের পথে, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে যেতে পারে- এ দুআ করতে থাকা। এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইবরাহীম আ.-এর দুআর উল্লেখ করেছেন, হে আল্লাহ! ইবরাহীম আপনার বান্দা, আপনার খলীল, আপনার নবী, আর আমি আপনার বান্দা, আপনার নবী’। দেখুন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয় দেখার মত। হাদিস শরীফে দুআর বাক্যগুলোতে তাঁর যে বিনয় পাওয়া যায়, অতুলনীয়। হাদিসের এ বর্ণনায় দুআটি যেভাবে আছে এটিই যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শব্দ হয় তাহলে এর তাৎপর্য এই হতে পারে যে, ইবরাহীম আ. যেহেতু প্রাচীন ও বংশীয় দিক থেকে পিতা, তাই তাঁর বৈশিষ্ট্য যা উল্লেখ করেছেন, নিজের বৈশিষ্ট্য তার চেয়ে একটা কম উল্লেখ করেছেন। ইবরাহীম আপনার বান্দা, আপনার খলীল, আপনার নবী আর আমি আপনার বান্দা, আপনার নবী। আল্লাহর রাসূল তো বলতে পারতেন, আমি আপনার হাবীব।

কারণ হাদিস শরীফেই তাঁর এ বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে-

ألا وأنا حبيب الله، ولا فخر

“আমি আল্লাহর হাবীব, গর্ব নয়” (তিরমিজি)

কিন্তু তিনি তাঁর বৈশিষ্ট্য কম উল্লেখ করেছেন, এটাই ছিল তাঁর বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ। আর এখানে এসকল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার উদ্দেশ্য, আল্লাহ পাকের রহমত আকর্ষণ করা। আপনিই তো নবী বানিয়েছেন, আপনিই তো দয়া করে নৈকট্যের মর্যাদা দিয়েছেন। সুতরাং আরো দয়া করুন। আমি তো আপনারই দাস, আপনারই গোলাম, আপনার কাছেই তো প্রার্থনা করব, আর কার কাছে করব? তো আল্লাহ পাকের রহমত আকর্ষণ করার জন্য তাঁর বান্দা ও নবী হওয়ার উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! ইবরাহীম আ. মক্কার জন্য দুআ করেছেন, আমি আপনার বান্দা মদিনার জন্য দুআ করছি। আপনি মদিনাতেও ঐ সকল বৈশিষ্ট্য দান করুন যা ইবরাহীম আ. মক্কার জন্য চেয়েছেন এবং তার সাথে আরো অনুরূপ দান করুন’।

সুখ ও সমৃদ্ধি চাওয়ার আরও একটি দোয়া
এরকম আরো দুআ হাদিসে আছে। যেমন: –

اللَّهُمَّ ضَعْ فِي أَرْضِنَا بَرَكَتَهَا وَزِينَتَهَا وَسَكَنَهَا

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের মাটিতে প্রাচুর্য দিন, শোভা ও শ্যামলিমা দিন, শান্তি ও নিরাপত্তা দিন”। (আল-মুজা’মুল কাবীর-৬৭৮৬)

সুবহানাল্লাহ! কোনো জনপদের জন্য এর চেয়ে বড় দুআ কী হতে পারে? প্রাচুর্য, শোভা ও শান্তির পর কোনো শহর-নগরের আর কীসের প্রয়োজন থাকতে পারে? মানুষ মনে করে ইসলাম বোধহয় শুধু কঠিন কঠিন কথা বলে, শোভা ও সৌন্দর্যের কোনো কথা, আনন্দের কোনো কথা বোধহয় ইসলামে নেই। এটা আসলে আমাদের জানার কমতি।

এখানে হাদিসের দুআয় শোভা ও শ্যামলিমা চাওয়া হয়েছে। এরপর আছে سكنها আরবি ভাষা হিসাবে سَكَن শব্দের দুই অর্থ হয়। শব্দটি سكون (সুকূন) থেকেও আসে। সুকূন মানে প্রশান্তি। এ হিসেবে ‘সাকান’ শব্দের অর্থ শান্তি, প্রশান্তি। আবার শব্দটি سكنى (সুকনা) থেকেও আসে। ‘সুকনা’ মানে, আবাস। ‘সাকান’ শব্দটি যখন ‘সুকনা’ থেকে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ হয়, জীবনোপকরণ তথা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি। নাগরিক জীবনে যা কিছুর প্রয়োজন হয় সব কিছু ‘সাকান’ শব্দে শামিল। কারণ মানুষ সেখানেই বসবাস করে যেখানে তার জীবনোপকরণ আছে, যেখানে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ আছে। সুতরাং দুআটির এ অর্থও হতে পারে যে, ‘হে আল্লাহ! আমাদের এই মাটিতে প্রাচুর্য দিন, শোভা ও শ্যামলিমা দিন এবং পর্যাপ্ত জীবনোপকরণ দিন’। এ দুআর পরের বাক্য দুটি আরো চমৎকার, তা হচ্ছে,

اللهم لا تحرمني بركة ما أعطيتني ولا تفتني فيما أحرمتني

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যা দান করেছেন, তার বরকত থেকে আমাকে বঞ্চিত করেন না”।

অর্থ-বিত্ত অনেক হলো, কিন্তু অর্থ-বিত্তের যে উদ্দেশ্য, দুনিয়ার জীবনটা শান্তিতে কাটানো, তা-ই হলো না। তাহলে এই অর্থ-বিত্তের কী মূল্য? তো আল্লাহ পাকের কাছে দুআ করা হচ্ছে, আপনি আমার জন্য যা ফায়সালা করেছেন, তার বরকত থেকে আমাকে বঞ্চিত করেন না। যা কিছু দান করেছেন তার সুফল ও কল্যাণ দান করুন।

দুআর শেষ অংশে আছে,

ولا تفتني فيما أحرمتني

অর্থ: “আর যা কিছু থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন তার বিষয়ে আমাকে পরীক্ষাগ্রস্ত করেন না”।

অর্থাৎ যা আমাকে দেননি, আশা ছিল, আকাঙ্ক্ষা ছিল, কিন্তু পূরণ হয়নি, সে ব্যাপারে আমাকে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েন না। অর্থাৎ এমন যেন না হয় যে, অস্থিরতার কারণে গুনাহে লিপ্ত হলাম, পাপাচারে জড়িয়ে গেলাম, আপনার না-শোকরী ও নাফরমানীতে পড়ে গেলাম। তো যা দিয়েছেন তাতে কল্যাণ ও বরকত দিন আর যা দেননি তার কষ্ট ও অনিষ্ট থেকে নাজাত দিন। এই যে দুআ, এরচেয়ে বেশি কিছু দুনিয়ার জীবনে একজন বান্দার আর কী চাই?

হাদিস শরীফের দুআগুলোতে নিজের ভূখণ্ড এবং সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জন্য, আপন মুসলিম ভাইদের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে আফিয়াত ও নিরাপত্তা এবং রহমত ও বরকত প্রার্থনার শিক্ষা রয়েছে।

আলোচনার সারকথা
সারকথা হচ্ছে, উপরের আলোচনা থেকে কুরআন সুন্নাহর আলোকে তিনটি বিষয় পাওয়া গেল।

এক. মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো ঈমান ও ইসলামের কেন্দ্র মক্কা-মদিনার জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করতে থাকা।

দুই. নিজ ভূখণ্ডের জন্যও আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা, দেশবাসীর জাগতিক ও আদর্শিক নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা। আর এটি যেহেতু দ্বীন-ধর্মের দাবি আর দ্বীনের দাঈ, হক্বপন্থি আলেম এবং মুজাহিদগণই হচ্ছেন দ্বীনের প্রকৃত অনুসারী।

তিন. কোনো ভূখণ্ডের সর্বোত্তম অধিবাসী হচ্ছে ঐ ভূখণ্ডের ঈমানদার, খোদাভীরু ও কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের অধিকারী আলেম মুজাহিদগণ। এরাই ঐ ভূখণ্ডের শান্তি ও নিরাপত্তার সূত্র। এদেরই কর্ম ও প্রচেষ্টায় ঐ ভূখণ্ডে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে এবং এদেরই দুআ ও রোনাজারিতে ঐ ভূখণ্ডে আল্লাহর রহমত আসে। পক্ষান্তরে, দাম্ভিক অনাচারী সম্প্রদায় যেকোনো ভূখণ্ডের জন্য আযাব স্বরূপ। এদের মাধ্যমে অনাচারের বিস্তার ঘটে এবং এদের অপকর্ম আল্লাহর আযাবকে ত্বরান্বিত করে।

তাই তো কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,

وَ اِذَاۤ اَرَدْنَاۤ اَنْ نُّهْلِكَ قَرْیَةً اَمَرْنَا مُتْرَفِیْهَا فَفَسَقُوْا فِیْهَا فَحَقَّ عَلَیْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنٰهَا تَدْمِیْرًا

অর্থ: “আমি যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করতে চাই তখন তার সমৃদ্ধশালীদের (সৎকর্মের) আদেশ করি, কিন্তু ওরা ওখানে অসৎকর্ম করে। ফলে ওখানে দম্ভাজ্ঞা ন্যায়সঙ্গত হয়ে যায়, পরিশেষে আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি”। [সূরা বানী ইসরাইল ১৭:১৬]

সুতরাং যার অন্তরে ঈমানের সামান্যতম আলো রয়েছে তার জন্য কর্তব্য হল কুরআনী এই সত্যকে উপলব্ধি করা। প্রত্যেক ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জন্য কর্তব্য হলো, তারা আগে এটা নির্ণয় করবে যে, কোন পথে দেশ ও জাতির প্রকৃত কল্যাণ? আর কোন পথে অনিষ্ট-অকল্যাণ? কারা জাতির প্রকৃত মিত্র ও কল্যাণকামী? আর কারা জাতির দুশমন ও অনিষ্টকামী? প্রত্যেক ভূখণ্ডের অধিবাসীদের এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝে সামনে অগ্রসর হওয়া দরকার।

অতএব ভাইয়েরা! আমাদেরকেও উক্ত বিষয়গুলো নির্ণয় করে দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দেশ ও জাতির কল্যাণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করার তাওফিক দান করুক। আমাদের মুজাহিদ ভাইদেরকে সব জায়গায় কাফেরদের ওপর বিজয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন। সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে আ’মালের উন্নতি করার তাওফিক দান করুন। জিহাদ ও শাহাদাতের পথে ইখলাসের সাথে অগ্রসর হওয়ার তাওফিক দান করুন। পরকালে আমাদেরকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।

প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের আজকের মজলিস এখানেই শেষ করছি। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়া পড়ে নিই।

 

سبحانك اللهم وبحمدك،أشهدأن لاإله إلا أنت،أستغفرك وأتوب إليك

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين

وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين

 

***********

 

আত্মশুদ্ধি – ২৫

দেশ ও জাতির

কল্যাণকামীতা

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

 

সূচিপত্র

 

দেশ ও জাতির কল্যাণকামীতা.. 4

এক. আমান ও নিরাপত্তা প্রার্থনা.. 6

দুই. প্রতিমা-পূজা থেকে মুক্ত থাকার প্রার্থনা.. 7

ইবরাহীম আ.-এর যুক্তি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল. 9

তিন. সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার প্রার্থনা.. 13

বরকত কাকে বলে?. 14

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয়. 14

সুখ ও সমৃদ্ধি চাওয়ার আরও একটি দোয়া.. 15

আলোচনার সারকথা.. 17

 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,

আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন, ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা সাইয়্যেদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালিন,ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসানিন ইলা ইয়াওমিদ্দীন, মিনাল উলামা ওয়াল মুজাহিদীন, ওয়া আম্মাতিল মুসলিমীন, আমীন ইয়া রাব্বাল আ’লামীন।

আম্মা বা’দ:

মুহতারাম ভাইয়েরা! আমরা সকলেই দুরুদ শরীফ পড়ে নেই-

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ،كما صَلَّيْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰي آلِ إبراهيم، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰى آلِ إبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ.

প্রতি সপ্তাহের ন্যায় আজকে আবারও আমরা তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এই জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি- আলহামদুলিল্লাহ।

দেশ ও জাতির কল্যাণকামীতা

মুহতারাম ভাইয়েরা! আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে: দেশ ও জাতির কল্যাণকামীতা।

মুহতারাম ভাইয়েরা! প্রথমেই আমি কালামে পাক থেকে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করছি, সে আয়াতগুলোর আলোকেই আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ। এ ব্যাপারে আমি আল্লাহর তাওফিক ও সাহায্যেরই মুহতায। আয়াতগুলো হচ্ছে:

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـٰذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعْبُدَ الْأَصْنَامَ ﴿٣٥ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ ۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي ۖ وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴿٣٦ رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ ﴿٣٧

যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে পালনকর্তা, এ শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন। (35) হে পালনকর্তা, এরা অনেক মানুষকে বিপথগামী করেছে। অতএব যে আমার অনুসরণ করে, সে আমার এবং কেউ আমার অবাধ্যতা করলে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (36) হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে (37) [সূরা ইবরাহীম  ১৪ : ৩৫-৩৭]

সূরায়ে ইবরাহীমের কয়েকটি আয়াত এখানে উল্লেখ করা হল। আল্লাহ তা’আলা নিজ বান্দা ও খলীল হযরত ইবরাহীম আ.-এর একটি দুআ এখানে বর্ণনা করেছেন। এ দুআয় যেই গভীর শিক্ষা ও চেতনার খোরাক রয়েছে তা প্রত্যেক মুমিনেরই উপলব্ধি করা দরকার। কারণ কুরআন চায় যে, প্রত্যেক তিলাওয়াতকারীই তা উপলব্ধি করুক এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুক।

মুহতারাম ভাইয়েরা! দুআ সম্বলিত আয়াতগুলোর সূচনা-অংশটি লক্ষ্য করুন-

وإذ قال إبراهيم -এর শাব্দিক অর্থ, ‘যখন ইবরাহীম বললেন’। আরবি বাক্যরীতি অনুসারে এখানে একটি ‘ফেয়েল’ বা ক্রিয়া উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ اذكر (স্মরণ কর)। তাহলে বাক্যটির সারমর্ম হচ্ছে, ইবরাহীমের (আ.) ঐ অবস্থাটি স্মরণ কর ও আলোচনা কর যখন তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করছিলেন। তার ঐ অবস্থাটি কত সুন্দর, কত প্রশংসনীয়! কুরআন মাজিদের অনেক জায়গায় এ উপস্থাপনা-রীতিটি পাওয়া যায়। এতে আলোচিত ঘটনা বা অবস্থা গভীরভাবে উপলব্ধি করা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ। সুতরাং আমাদের জন্য কর্তব্য হচ্ছে, দুআটি গভীরভাবে বোঝা এবং তা থেকে নূর ও আলো গ্রহণ করা।

আল্লাহর খলীল হযরত ইবরাহীম আ.-এর এ দুআয় মৌলিক তিনটি বিষয় পাওয়া যায়। যথা:-

এক. আমান ও নিরাপত্তা প্রার্থনা।

দুই. প্রতিমা-পূজা থেকে মুক্ত থাকার প্রার্থনা।

তিন. সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার প্রার্থনা

এবার আসুন প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করি।

এক. আমান ও নিরাপত্তা প্রার্থনা

ইবরাহীম আ. মক্কা নগরী ও এর অধিবাসীদের জন্য নিরাপত্তার দুআ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর খলীলের এ দুআ কবুল করেছেন এবং বিভিন্ন দিক থেকে মক্কা নগরীকে ‘নিরাপদ’ নগরী বানিয়েছেন। কিয়ামতের পূর্বলগ্নে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে দাজ্জাল সদম্ভে বিচরণ করবে। কেবল মক্কা ও মদিনায় সে প্রবেশ করতে পারবে না।

حديث أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَيْسَ مِنْ بَلَدٍ إِلاَّ سَيَطَؤُهُ الدَّجَّالُ، إِلاَّ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةَ لَيْسَ لَهُ مِنْ نِقَابِهَا نَقْبٌ، إِلاَّ عَلَيْهِ الْمَلاَئِكَةُ صَافِّينَ يَحْرُسُونَهَا ثُمَّ تَرْجُفُ الْمَدِينَةُ بِأَهْلِهَا ثَلاَثَ رَجَفَاتٍ، فَيُخْرِجُ اللهُ كُلَّ كَافِرٍ وَمُنَافِقٍ

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“এমন কোনো ভূখণ্ড নেই যা দাজ্জালের পদভারে মথিত হবে না। তবে মক্কা ও মদিনায় সে প্রবেশ করতে পারবে না। সেখানকার প্রতিটি গলিতে ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে পাহারায় নিয়োজিত থাকবে। এরপর মদিনা তার অধিবাসীসহ তিনটি ঝাঁকুনি দেবে। যার ফলে আল্লাহ তা’আলা (মদিনা থেকে) সকল কাফির ও মুনাফিককে বের করে দেবেন”। [বুখারী: ১৮৮১; মুসলিম: ২৯৪৩]

হাদিস, তাফসীর ও ফিকহের কিতাবসমূহে এর আরো বিস্তারিত বিবরণ আছে।

দুই. প্রতিমা-পূজা থেকে মুক্ত থাকার প্রার্থনা

আল্লাহর খলীল ইবরাহীম আ. প্রতিমা-পূজা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন! নিজের জন্যও, সন্তানদের জন্যও। সাথে সাথে একথাও বলছেন যে, হে পরওয়ারদেগার! এ সকল প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। অর্থাৎ, বহু মানুষের বিভ্রান্তির কারণ হয়েছে। বিষয়টি খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করা দরকার।

আমরা জানি যে, ইবরাহীম আ.-এর কওম ছিল প্রতিমা-পূজারী। স্বয়ং ইবরাহীম আ.-এর পিতা আযরও এ গোমরাহিতে লিপ্ত ছিল। আপন পিতা ও নিজ কওমকে পৌত্তলিকতার অসারতা তিনি অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। এটি কুরআন মাজিদের এক বিশেষ প্রসঙ্গ। কুরআন যেহেতু তাওহীদের কিতাব এবং এর প্রথম সম্বোধিত ছিল আরবের অধিবাসীরা, যারা ইসমাইল আ.-এর বংশধর হওয়ার সূত্রে ‘ইবরাহীমী’ হওয়ার দাবিদার, তাই ইবরাহীম আ.-এর প্রকৃত পরিচয় এবং শিরক ও পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে তাঁর কঠিন বিরোধিতার বিবরণ কুরআন মাজিদে স্পষ্টভাবেই এসেছে। এ বিষয়ে পিতা আযর-এর প্রতি হযরত ইবরাহীম আ.-এর শক্তিশালী কিন্তু সশ্রদ্ধ সম্বোধন পবিত্র কুরআনে কিভাবে এসেছে দেখুন?

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا

আপনি এই কিতাবে ইবরাহীমের কথা বর্ণনা করুন। নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী, নবী”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪১]

إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِي عَنكَ شَيْئًا

যখন তিনি তার পিতাকে বললেনঃ হে আমার পিতা, যে শোনে না, দেখে না এবং তোমার কোন উপকারে আসে না, তার ইবাদত কেন কর?” [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪২]

يَا أَبَتِ إِنِّي قَدْ جَاءنِي مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِي أَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا

হে আমার পিতা, আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে; যা তোমার কাছে আসেনি, সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৩]

يَا أَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَنِ عَصِيًّا

“হে আমার পিতা, শয়তানের ইবাদত করো না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৪]

يَا أَبَتِ إِنِّي أَخَافُ أَن يَمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحْمَن فَتَكُونَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا

“হে আমার পিতা, আমি আশঙ্কা করি, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৫]

قَالَ أَرَاغِبٌ أَنتَ عَنْ آلِهَتِي يَا إِبْراهِيمُ لَئِن لَّمْ تَنتَهِ لَأَرْجُمَنَّكَ وَاهْجُرْنِي مَلِيًّا

“পিতা বললঃ যে ইবরাহীম, তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৬]

قَالَ سَلَامٌ عَلَيْكَ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيًّا

“ইবরাহীম বললেনঃ তোমার উপর শান্তি হোক, আমি আমার পালনকর্তার কাছে তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি মেহেরবান”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৭]

وَأَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ وَأَدْعُو رَبِّي عَسَى أَلَّا أَكُونَ بِدُعَاء رَبِّي شَقِيًّا

“আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত কর তাদেরকে; আমি আমার পালনকর্তার ইবাদত করব। আশা করি, আমার পালনকর্তার ইবাদত করে আমি বঞ্চিত হব না”। [সূরা মারঈয়াম ১৯:৪৮]

ইবরাহীম আ.-এর যুক্তি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল

তাছাড়া ইবরাহীম আ.-এর স্বজাতিকে বিভিন্ন অকাট্য যুক্তি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল দ্বারা তাওহীদের পথে আনার প্রচেষ্টার কথাও পবিত্র কুরআনে এসেছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ إِبْرَاهِيمَ

“আর তাদেরকে ইবরাহীমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৬৯]

إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا تَعْبُدُونَ

“যখন তাঁর পিতাকে এবং তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কিসের ইবাদত কর?” [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭০]

قَالُوا نَعْبُدُ أَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِينَ

“তারা বলল, আমরা প্রতিমার পূজা করি এবং সারাদিন এদেরকেই নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকি”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭১]

قَالَ هَلْ يَسْمَعُونَكُمْ إِذْ تَدْعُونَ

“ইবরাহীম (আঃ) বললেন, তোমরা যখন আহ্বান কর, তখন তারা শোনে কি?” [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭২]

أَوْ يَنفَعُونَكُمْ أَوْ يَضُرُّونَ

“অথবা তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে?” [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৩]

قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آبَاءنَا كَذَلِكَ يَفْعَلُونَ

“তারা বললঃ না, তবে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি, তারা এরূপই করত”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৪]

قَالَ أَفَرَأَيْتُم مَّا كُنتُمْ تَعْبُدُونَ

“ইবরাহীম বললেন, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের পূজা করে আসছ”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৫]

أَنتُمْ وَآبَاؤُكُمُ الْأَقْدَمُونَ

“তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা?” [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৬]

فَإِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّي إِلَّا رَبَّ الْعَالَمِينَ

“বিশ্বপালনকর্তা ব্যতীত তারা সবাই আমার শত্রু”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৭]

الَّذِي خَلَقَنِي فَهُوَ يَهْدِينِ

“যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৮]

وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ

“যিনি আমাকে আহার এবং পানীয় দান করেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৭৯]

وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ

“যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৮০]

وَالَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحْيِينِ

“যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৮১]

وَالَّذِي أَطْمَعُ أَن يَغْفِرَ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ

“আমি আশা করি তিনিই বিচারের দিনে আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৮২]

رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ

“হে আমার পালনকর্তা, আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর”। [সূরা শু’য়ারা ২৬:৮৩]

এমনিভাবে পৌত্তলিক স্বজাতির সাথেও ইবরাহীম আ.-এর সম্পর্কহীনতার সুস্পষ্ট ঘোষণা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

“তোমাদের জন্যে ইবরাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে। কিন্তু ইবরাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশ্যে এই আদর্শের ব্যতিক্রম। তিনি বলেছিলেন, আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। তোমার উপকারের জন্যে আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু করার নেই। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন”। [সূরা মুমতাহিনা ৬০:৪]

এগুলো হচ্ছে হযরত ইবরাহীম আ.-এর জীবনের এমন কিছু ঈমান-উদ্দীপক অধ্যায় যা কুরআন মাজিদের কোনো পাঠকেরই অজানা থাকার কথা নয়।

তো ভাই! ইবরাহীম আ.-এর খুব ভালোভাবে জানা ছিল, এসকল অসার প্রতিমা গোমরাহির কত মারাত্মক অনুষঙ্গ এবং কত অসংখ্য মানুষকে তা বিপথগামী ও চির-জাহান্নামী করে ছেড়েছে। সুতরাং হেদায়েত ও গোমরাহি যাঁর হাতে সেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, নিজের জন্যও; নিজের সন্তানদের জন্যও। ইবনে জারীর তবারী রাহ. ইমাম ইবরাহীম আততাইমী রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাঁর বয়ানে বলতেন-

من يأمن من البلاء بعد خليل الله إبراهيم، حين يقول : رب “اجْنُبْنِیْ وَ بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَ

অর্থাৎ “ইবরাহীম আ.-এর মতো ব্যক্তিও যখন আল্লাহর কাছে দুআ করেছেন, পরওয়ারদেগার, আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে প্রতিমা পূজা থেকে দূরে রাখুন, তখন কে আছে, যে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে?” [তাফসীরে তবারী ১/৪৬০]

তাহলে প্রতিমা পূজার ছিদ্রপথগুলোর ব্যাপারে ঈমানদারদের কত সতর্ক হওয়া উচিত! সাহাবী আবু বাকর রা.-এর পুত্র মুসলিম বলেন, তিনি তার বাবাকে নামাযের পর এ দুআ পড়তে শুনতেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ.

(হে আল্লাহ! আপনার আশ্রয় নিচ্ছি কুফর থেকে, দারিদ্র থেকে ও কবরের আযাব থেকে)

তিনিও তা পড়তে আরম্ভ করলেন। একদিন বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, বেটা! এ বাক্যগুলো কোথায় পেলে? তিনি বললেন, আব্বাজান! আপনাকে নামাযের পর এ বাক্যগুলো পড়তে শুনেছি। তখন বাবা বললেন-

فالزمهن يا بني فإن نبي الله صلى الله عليه وسلم كان يدعو بهن في دبر الصلاة.

এগুলো নিয়মিত পাঠ কর। কারণ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের পর এ বাক্যগুলো দ্বারা দুআ করতেন”। [সুনানে নাসায়ী ৮/২৬২; মুসতাদরাক, হাকিম ১/৩৫]

তো ভাই! এই হচ্ছে সালাফের অবস্থা। কুফর-শিরকের বিষয়ে তাঁরা কত সতর্ক ছিলেন। শঙ্কিত ছিলেন। তাহলে এখন কে আছে যে এই মহা-ফিতনা সম্পর্কে উদাসীন থাকতে পারে? মূলত যে ভয় করে সে আত্মরক্ষার চেষ্টায় থাকে। আর যে আত্মরক্ষার চেষ্টায় থাকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। এ বাস্তবতাকেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস শরীফে বর্ণনা করেছেন।

তিনি ইরশাদ করেন,

من خاف ادلج ومن ادلج بلغ المنزل

অর্থাৎ, “যে (শত্রুর আক্রমণের) ভয় করে সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আর যে দ্রুত (আশঙ্কার) স্থান ত্যাগ করে সে (নিরাপদে) ঘরে পৌঁছে”। [সুনানে তিরমিজি, হাদিস ২৪৫০]

নবীগণ যেহেতু আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি চেনেন তাই তাঁরাই আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করেন। এই সর্বোচ্চ ভয় তাঁদের ‘ইসমত’ ও নিষ্পাপতারই এক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ। সুতরাং আমাদেরও উচিৎ কুফর-শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

তিন. সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার প্রার্থনা

হযরত ইবরাহীম আ. মক্কাবাসীর জন্য রিজিকের দুআ করেছেন এবং তারা যেন আল্লাহর শোকরগোযারি করে-এ প্রত্যাশা করেছেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহতেও বিষয়টি পাওয়া যায়। অনেক হাদিসেই আছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার জন্য দুআ করেছেন। সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, মৌসুমের নতুন ফল এলে সাহাবীগণ তা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসতেন, তিনি সেই ফল হাতে নিয়ে দুআ করতেন-

اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثَمَرِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا، اللهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ عَبْدُكَ وَخَلِيلُكَ وَنَبِيُّكَ، وَإِنِّي عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ، وَإِنَّهُ دَعَاكَ لِمَكَّةَ، وَإِنِّي أَدْعُوكَ لِلْمَدِينَةِ بِمِثْلِ مَا دَعَاكَ لِمَكَّةَ، وَمِثْلِهِ مَعَهُ

অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমাদের ফল-ফসলে বরকত দিন। আমাদের শহরে বরকত দিন। আমাদের ‘ছা’-এ বরকত দিন। আমাদের ‘মুদ্দ’-এ বরকত দিন। হে আল্লাহ! ইবরাহীম আপনার বান্দা, আপনার খলীল ও আপনার নবী আর আমি আপনার বান্দা ও নবী। ইবরাহীম মক্কার জন্য আপনার কাছে দুআ করেছেন, আমি মদিনার জন্য আপনার কাছে ঐসব কিছু চাইছি যা তিনি মক্কার জন্য চেয়েছেন এবং তার সাথে আরো অনুরূপ চাইছি। অর্থাৎ দ্বিগুণ চাইছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস ৪৭৩]

ছা এবং মুদ্দ দুটি পাত্রের নাম, আরবে শস্য পরিমাপ করার যে পাত্রগুলো ছিল, এর একটির নাম ছা’। আর তরল কিছু মাপার যে পাত্রগুলো ছিল এর একটির নাম মুদ্দ। তো রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করেছেন, আমাদের লেনদেনে যে সকল পাত্র ব্যবহৃত হয়, ছা, মুদ্দ ইত্যাদি। হে আল্লাহ! এগুলোতে বরকত দান করুন।

‘ছা’ এবং ‘মুদ্দে’ বরকত দান করার অর্থ কী?

এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে, আমাদের লেনদেনে বরকত দান করুন।

বরকত কাকে বলে?

‘বারাকা’ শব্দের অর্থ- প্রাচুর্য। প্রাচুর্য দুইভাবে হয়, পরিমাণগত দিক থেকে কোনো কিছু বেড়ে যাওয়া এটাও প্রাচুর্য। আবার বস্তুর যে উদ্দেশ্য তা ভালোভাবে পূর্ণ হওয়া এটাও প্রাচুর্য। একজনের অর্থ বৃদ্ধি পেল। যদি তা হালাল পন্থায় হয় তাহলে তা বরকত। এটা দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রাচুর্য যা দেখা যায়, গণনা করা যায়। আরেকজনের অর্থ হয়তো সংখ্যায় ও পরিমাণে বৃদ্ধি পেল না তবে অর্থের যে উদ্দেশ্য তা পুরা হয়ে গেল। অল্প অর্থে সকল প্রয়োজন পুরা হলো। বিপদ-আপদের শিকার হলো না। বড় বড় চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় হলো না। মামলা-মুকদ্দমায় পয়সা খরচ হলো না। যতটুকু হালাল উপার্জন তা দিয়েই জীবন সুন্দরভাবে কেটে গেল। এটাও প্রাচুর্য ও বরকত। তবে তা আগেরটির মত প্রত্যক্ষ নয়। এটা উপলব্ধির বিষয়। ঈমানদার যখন চিন্তা করে তখন এ বরকতের উপস্থিতি বুঝতে পারে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয়

তো রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার ব্যবসা-বাণিজ্যের বরকতের জন্য, সমৃদ্ধি ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেছেন। সুতরাং মুমিনের কর্তব্য, দেশ ও জাতির উপার্জনে যেন সমৃদ্ধি আসে, তারা যেন স্বাবলম্বী হয়, অন্যের মুখাপেক্ষী না হয় এবং তারা যেন তাদের উপার্জনের মাধ্যমে আখিরাতের পথে, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে যেতে পারে- এ দুআ করতে থাকা। এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইবরাহীম আ.-এর দুআর উল্লেখ করেছেন, হে আল্লাহ! ইবরাহীম আপনার বান্দা, আপনার খলীল, আপনার নবী, আর আমি আপনার বান্দা, আপনার নবী’। দেখুন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয় দেখার মত। হাদিস শরীফে দুআর বাক্যগুলোতে তাঁর যে বিনয় পাওয়া যায়, অতুলনীয়। হাদিসের এ বর্ণনায় দুআটি যেভাবে আছে এটিই যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শব্দ হয় তাহলে এর তাৎপর্য এই হতে পারে যে, ইবরাহীম আ. যেহেতু প্রাচীন ও বংশীয় দিক থেকে পিতা, তাই তাঁর বৈশিষ্ট্য যা উল্লেখ করেছেন, নিজের বৈশিষ্ট্য তার চেয়ে একটা কম উল্লেখ করেছেন। ইবরাহীম আপনার বান্দা, আপনার খলীল, আপনার নবী আর আমি আপনার বান্দা, আপনার নবী। আল্লাহর রাসূল তো বলতে পারতেন, আমি আপনার হাবীব।

কারণ হাদিস শরীফেই তাঁর এ বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে-

ألا وأنا حبيب الله، ولا فخر

“আমি আল্লাহর হাবীব, গর্ব নয়” (তিরমিজি)

কিন্তু তিনি তাঁর বৈশিষ্ট্য কম উল্লেখ করেছেন, এটাই ছিল তাঁর বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ। আর এখানে এসকল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার উদ্দেশ্য, আল্লাহ পাকের রহমত আকর্ষণ করা। আপনিই তো নবী বানিয়েছেন, আপনিই তো দয়া করে নৈকট্যের মর্যাদা দিয়েছেন। সুতরাং আরো দয়া করুন। আমি তো আপনারই দাস, আপনারই গোলাম, আপনার কাছেই তো প্রার্থনা করব, আর কার কাছে করব? তো আল্লাহ পাকের রহমত আকর্ষণ করার জন্য তাঁর বান্দা ও নবী হওয়ার উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! ইবরাহীম আ. মক্কার জন্য দুআ করেছেন, আমি আপনার বান্দা মদিনার জন্য দুআ করছি। আপনি মদিনাতেও ঐ সকল বৈশিষ্ট্য দান করুন যা ইবরাহীম আ. মক্কার জন্য চেয়েছেন এবং তার সাথে আরো অনুরূপ দান করুন’।

সুখ ও সমৃদ্ধি চাওয়ার আরও একটি দোয়া

এরকম আরো দুআ হাদিসে আছে। যেমন: –

اللَّهُمَّ ضَعْ فِي أَرْضِنَا بَرَكَتَهَا وَزِينَتَهَا وَسَكَنَهَا

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের মাটিতে প্রাচুর্য দিন, শোভা ও শ্যামলিমা দিন, শান্তি ও নিরাপত্তা দিন”। (আল-মুজা’মুল কাবীর-৬৭৮৬)

সুবহানাল্লাহ! কোনো জনপদের জন্য এর চেয়ে বড় দুআ কী হতে পারে? প্রাচুর্য, শোভা ও শান্তির পর কোনো শহর-নগরের আর কীসের প্রয়োজন থাকতে পারে? মানুষ মনে করে ইসলাম বোধহয় শুধু কঠিন কঠিন কথা বলে, শোভা ও সৌন্দর্যের কোনো কথা, আনন্দের কোনো কথা বোধহয় ইসলামে নেই। এটা আসলে আমাদের জানার কমতি।

এখানে হাদিসের দুআয় শোভা ও শ্যামলিমা চাওয়া হয়েছে। এরপর আছে سكنها আরবি ভাষা হিসাবে سَكَن শব্দের দুই অর্থ হয়। শব্দটি سكون (সুকূন) থেকেও আসে। সুকূন মানে প্রশান্তি। এ হিসেবে ‘সাকান’ শব্দের অর্থ শান্তি, প্রশান্তি। আবার শব্দটি سكنى (সুকনা) থেকেও আসে। ‘সুকনা’ মানে, আবাস। ‘সাকান’ শব্দটি যখন ‘সুকনা’ থেকে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ হয়, জীবনোপকরণ তথা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি। নাগরিক জীবনে যা কিছুর প্রয়োজন হয় সব কিছু ‘সাকান’ শব্দে শামিল। কারণ মানুষ সেখানেই বসবাস করে যেখানে তার জীবনোপকরণ আছে, যেখানে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ আছে। সুতরাং দুআটির এ অর্থও হতে পারে যে, ‘হে আল্লাহ! আমাদের এই মাটিতে প্রাচুর্য দিন, শোভা ও শ্যামলিমা দিন এবং পর্যাপ্ত জীবনোপকরণ দিন’। এ দুআর পরের বাক্য দুটি আরো চমৎকার, তা হচ্ছে,

اللهم لا تحرمني بركة ما أعطيتني ولا تفتني فيما أحرمتني

অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যা দান করেছেন, তার বরকত থেকে আমাকে বঞ্চিত করেন না”।

অর্থ-বিত্ত অনেক হলো, কিন্তু অর্থ-বিত্তের যে উদ্দেশ্য, দুনিয়ার জীবনটা শান্তিতে কাটানো, তা-ই হলো না। তাহলে এই অর্থ-বিত্তের কী মূল্য? তো আল্লাহ পাকের কাছে দুআ করা হচ্ছে, আপনি আমার জন্য যা ফায়সালা করেছেন, তার বরকত থেকে আমাকে বঞ্চিত করেন না। যা কিছু দান করেছেন তার সুফল ও কল্যাণ দান করুন।

দুআর শেষ অংশে আছে,

ولا تفتني فيما أحرمتني

অর্থ: “আর যা কিছু থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন তার বিষয়ে আমাকে পরীক্ষাগ্রস্ত করেন না”।

অর্থাৎ যা আমাকে দেননি, আশা ছিল, আকাঙ্ক্ষা ছিল, কিন্তু পূরণ হয়নি, সে ব্যাপারে আমাকে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েন না। অর্থাৎ এমন যেন না হয় যে, অস্থিরতার কারণে গুনাহে লিপ্ত হলাম, পাপাচারে জড়িয়ে গেলাম, আপনার না-শোকরী ও নাফরমানীতে পড়ে গেলাম। তো যা দিয়েছেন তাতে কল্যাণ ও বরকত দিন আর যা দেননি তার কষ্ট ও অনিষ্ট থেকে নাজাত দিন। এই যে দুআ, এরচেয়ে বেশি কিছু দুনিয়ার জীবনে একজন বান্দার আর কী চাই?

হাদিস শরীফের দুআগুলোতে নিজের ভূখণ্ড এবং সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জন্য, আপন মুসলিম ভাইদের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে আফিয়াত ও নিরাপত্তা এবং রহমত ও বরকত প্রার্থনার শিক্ষা রয়েছে।

আলোচনার সারকথা

সারকথা হচ্ছে, উপরের আলোচনা থেকে কুরআন সুন্নাহর আলোকে তিনটি বিষয় পাওয়া গেল।

এক. মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো ঈমান ও ইসলামের কেন্দ্র মক্কা-মদিনার জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করতে থাকা।

দুই. নিজ ভূখণ্ডের জন্যও আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করা, দেশবাসীর জাগতিক ও আদর্শিক নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা। আর এটি যেহেতু দ্বীন-ধর্মের দাবি আর দ্বীনের দাঈ, হক্বপন্থি আলেম এবং মুজাহিদগণই হচ্ছেন দ্বীনের প্রকৃত অনুসারী।

তিন. কোনো ভূখণ্ডের সর্বোত্তম অধিবাসী হচ্ছে ঐ ভূখণ্ডের ঈমানদার, খোদাভীরু ও কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের অধিকারী আলেম মুজাহিদগণ। এরাই ঐ ভূখণ্ডের শান্তি ও নিরাপত্তার সূত্র। এদেরই কর্ম ও প্রচেষ্টায় ঐ ভূখণ্ডে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে এবং এদেরই দুআ ও রোনাজারিতে ঐ ভূখণ্ডে আল্লাহর রহমত আসে। পক্ষান্তরে, দাম্ভিক অনাচারী সম্প্রদায় যেকোনো ভূখণ্ডের জন্য আযাব স্বরূপ। এদের মাধ্যমে অনাচারের বিস্তার ঘটে এবং এদের অপকর্ম আল্লাহর আযাবকে ত্বরান্বিত করে।

তাই তো কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,

وَ اِذَاۤ اَرَدْنَاۤ اَنْ نُّهْلِكَ قَرْیَةً اَمَرْنَا مُتْرَفِیْهَا فَفَسَقُوْا فِیْهَا فَحَقَّ عَلَیْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنٰهَا تَدْمِیْرًا

অর্থ: “আমি যখন কোনো জনপদ ধ্বংস করতে চাই তখন তার সমৃদ্ধশালীদের (সৎকর্মের) আদেশ করি, কিন্তু ওরা ওখানে অসৎকর্ম করে। ফলে ওখানে দম্ভাজ্ঞা ন্যায়সঙ্গত হয়ে যায়, পরিশেষে আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি”। [সূরা বানী ইসরাইল ১৭:১৬]

সুতরাং যার অন্তরে ঈমানের সামান্যতম আলো রয়েছে তার জন্য কর্তব্য হল কুরআনী এই সত্যকে উপলব্ধি করা। প্রত্যেক ভূখণ্ডের অধিবাসীদের জন্য কর্তব্য হলো, তারা আগে এটা নির্ণয় করবে যে, কোন পথে দেশ ও জাতির প্রকৃত কল্যাণ? আর কোন পথে অনিষ্ট-অকল্যাণ? কারা জাতির প্রকৃত মিত্র ও কল্যাণকামী? আর কারা জাতির দুশমন ও অনিষ্টকামী? প্রত্যেক ভূখণ্ডের অধিবাসীদের এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝে সামনে অগ্রসর হওয়া দরকার।

অতএব ভাইয়েরা! আমাদেরকেও উক্ত বিষয়গুলো নির্ণয় করে দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দেশ ও জাতির কল্যাণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করার তাওফিক দান করুক। আমাদের মুজাহিদ ভাইদেরকে সব জায়গায় কাফেরদের ওপর বিজয়ী হওয়ার তাওফিক দান করুন। সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে আ’মালের উন্নতি করার তাওফিক দান করুন। জিহাদ ও শাহাদাতের পথে ইখলাসের সাথে অগ্রসর হওয়ার তাওফিক দান করুন। পরকালে আমাদেরকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।

প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের আজকের মজলিস এখানেই শেষ করছি। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।

আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়া পড়ে নিই।

 

سبحانك اللهم وبحمدك،أشهدأن لاإله إلا أنت،أستغفرك وأتوب إليك

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين

وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين

 

***********

 

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 13 =

Back to top button