রোযা ও তার আধ্যাত্মিক উপকারসমূহ||আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ
রোযা ও তার আধ্যাত্মিক উপকারসমূহ
মূল
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ
মাওলানা আবদুল হামিদ হাফিজাহুল্লাহ
অনলাইনে পড়ুন
https://justpaste.it/rojar_addhattik_upokar
ডাউনলোড করুন
পিডিএফ
https://banglafiles.net/index.php/s/F52pftsC8iY4AWH
https://archive.org/details/rojaraddhattikupokar
https://archive.org/download/rojarad…ttikUpokar.pdf
ওয়ার্ড
https://banglafiles.net/index.php/s/5d8McDk2b4QHjNS
https://archive.org/details/rojaraddhattikupokar_201912
https://archive.org/download/rojarad…tikUpokar.docx
**************
=====================
রোযা ও তার আধ্যাত্মিক উপকারসমূহ
মূল
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ
মাওলানা আবদুল হামিদ হাফিজাহুল্লাহ
রোযার উদ্দেশ্য হল, আত্মাকে এই পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেন তা মনোবাসনা পূরণে বাঁধা প্রদান করার শিক্ষা লাভ করে।
মানুষের ভিতরকার পশু স্বভাবকে আয়ত্বে আনা, প্রবৃত্তির চাহিদা শক্তিকে ভারসাম্যতা শিক্ষা দেওয়া এবং নফসের চাহিদাকে বস্তুবাদী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে ফিরিয়ে এনে এক মহান ও পবিত্র লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ করানোও রোজার উদ্দেশ্য। একারণে উপভোগের এমন অনেক ছুরত যা হাতের নাগালেই রয়েছে তা এই মহান উদ্দেশ্যে পরিত্যাগ করা হয়। রোজার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এই যোগ্যতা তৈরী করার চেষ্টা করা হয় যেন সে অন্য কোন জগতের অনুসন্ধান করতে সক্ষম হয় – যেখানে আমোদ-প্রমোদের কোন অন্ত নেই, যেখানে নিয়ামতরাজি ও আরাম-আয়েশের উপকরণের কোন পরিমাপ নেই এবং সেখানে আয়েশ করাতে কোন ক্ষতিও নেই। একজন মানুষ যেন এই সমস্ত সৌন্দর্যে সজ্জিত হয়ে স্থায়ী জীবনের(আখিরাতের) এক চমৎকার সূচনা করতে পারে তার জন্যই রোযার বিধান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা রেখেছেন।
রোযার বিশেষ আরেকটি উদ্দেশ্য হল, নফসের মাঝে দুনিয়ার ক্ষোধ-পিপাসার বিশেষ কোন অবস্থান থাকবে না। আর এখানে পানাহারই মুমিনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হবে না। রোজার আরেকটি দিক – একজন হতদরিদ্র ক্ষুধার্তের কলিজার উপর কি অবস্থা অতিবাহিত হয়, একজন ক্ষুধার্ত মিসকিনের মনের অবস্থা কিরূপ হয়ে থাকে তা যেন সকলেই বুঝতে পারে।
রোযা মানবদেহে শয়তানের চলাচলের পথকে সংকীর্ণ করে তুলে। পানাহারের রাস্তা দিয়ে শয়তানের সহজসাধ্য আসা-যাওয়াকে কঠিন করে তুলে। দৈহিক শক্তির স্বাধীনতাকে কিছুটা সীমাবদ্ধ করে এবং শারীরিক উত্তেজনাকে কিছুটা কমিয়ে আত্মাকে মা’বুদের পথে ধাবিত করে।
তাই এটা মুত্তাকীদের জন্য এক শক্তিশালী রশি আর মুজাহিদদের জন্য মজবুত ঢাল স্বরূপ। এটা সৎকর্মশীলদের জন্য সাধনা ও আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য প্রাপ্তির জন্য মেহনতের বিশাল ময়দান।
দেখুন, সকল আমলের মধ্যে রোযা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্যই হওয়ার এক বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে। কারণ রোযাদার কিন্তু বিশেষ কিছুই করে না, শুধুমাত্র নিজ প্রভূর জন্য নিজের প্রবৃত্তি, চাহিদা এবং নিজের খানা-পিনাকে ছেড়ে দেয়।
সুতরাং এটা আল্লাহর মুহাব্বতে নফসের প্রিয় জিনিসগুলোকে ভুলিয়ে দেওয়ার নাম, নফসের চাহিদাগুলোকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর উৎসর্গ করার নাম। যেন এটা আত্মার এক প্রেমাস্পদ থেকে বিমুখ হয়ে অন্য প্রেমাস্পদকে গ্রহণ করা।
সুতরাং এই রোযা রবের সাথে বান্দার সম্পর্ক উপলব্ধির একটা পথ। বান্দা ও আল্লাহর মাঝে এক গোপন রহস্য রয়েছে। আর তা এমন গোপন ভেদ যা শুধু আল্লাহ তা’আলার পছন্দের বান্দারায় খুজে পান।
লোকেরা বেশি থেকে বেশি এতুটুকু দেখতে পারে যে, বান্দা নিজ খানা-পিনা ও রোযা ভংগকারী অন্যান্য জিনিস ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু মনের ওই অবস্থা যা তাকে এই খানা-পিনা, প্রবৃত্তি চাওয়া ও চাহিদা থেকে বিরত রাখছে, মাবুদের সন্ধানে নফসের বৈধ কামনাগুলোকে বিসর্জন দিচ্ছে তা কেবল আল্লাহ তা’আলাই জানেন। অন্য কেউ কীভাবেই বা তা জানবে? রোযার প্রকৃত হাকিকত বোঝার চেষ্টা করুন! মানুষের জাহের ও বাতেনকে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে রোযাই যথেষ্ট।
এই সাধনার মাধ্যমে শুধু দেহের অসৎ যোগ্যতা কমে যায় বিষয়টা এমন নয়। বরং রূহের অনেক অপছন্দনীয় দিকও এই ইবাদতের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। কলব ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতার জন্য রোযার প্রভাব দেখার মত। নফসের যে অংশ প্রভৃত্তি ও চাহিদার অধিনস্ত হয়ে থাকে তা এই আমলের দ্বারা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ইবাদতের এই জগতে দৃঢ়পদে চলার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য পাওয়া যায়।
অন্তরে তাকওয়ার পথ সুগম করার ক্ষেত্রে অন্যান্য ইবাদতের মধ্য হতে রোযার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। (সূরা বাকারাহ। আয়াত – ১৮৩)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
الصوم جنة
রোযা ঢাল স্বরূপ। (বুখারী)
তাছাড়া যৌন চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযার পরামর্শ দিয়েছেন।
আকল, স্বভাব ও নফসের ইসলাহের ক্ষেত্রে রোযার যে অসাধারণ প্রভাব রয়েছে তাতে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখতে পাই যে, আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির জন্য এই ইবাদতকে রহমতস্বরূপ দিয়েছেন।
সুতরাং এটা বান্দার প্রতি আল্লাহ তা’আলার বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহ। তিনি বান্দাদেরকে পাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য এমন মজবুত এক মাধ্যম দিয়েছেন।
সুতরাং রোযার সারমর্ম হল এই – রোযাদার সে সব হালাল উপভোগ্য জিনিস যা হাতের নাগালেই রয়েছে এবং সে সব বৈধ উপকরণ নফস যেগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে আছে তা থেকে দূরে থাকে। তার উপর এই অবস্থা কিছু সময় ধরে চলতে থাকে। এই অবস্থা তাকে আল্লাহ মুখি করে যার দ্বারা জীবনের বিশেষ কিছু সময় আখিরাতের সামনা গুছানোর কাজে ব্যয় করা যায়। এইভাবে পূর্ণ একটি মাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অতিবাহিত করে।
মুখের কাছে থাকা এই সমস্ত প্রিয় ও উপভোগ্য বস্তুসমূহ যেহেতু পরিত্যাগ করা সহজ ছিল না, তাই এর ফরযিয়্যাতও বেশ বিলম্ব করেই নাযিল হয়েছে। ফরয হিজরতেরও কিছু কাল পরে রোযা ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রথমে অন্তরসমূহকে তাওহীদের উপর বদ্ধমূল করেছেন। এরপর নামাজের মাধ্যমে এই সমস্ত একত্ববাদী অন্তরগুলোকে মুমিনের জিন্দেগীর একটি রূপ-রেখা দেখিয়ে দিয়েছেন। এরপর সাহাবায়ে কেরাম কুরআন থেকে নির্দেশ গ্রহণ করার কিছু তরবিয়তও পেয়েছিলেন। এ সকল ধাপ অতিক্রম করার পর পর্যায়ক্রমে তাদের উপর রোযার ফরযিয়্যাত আরোপ করা হয়েছিল।
*******************