আমেরিকা এ যুগের ফেরাউন! – শাইখ খালিদ বিন আব্দুর রহমান আল হুসাইনান রহঃ
আমেরিকা এ যুগের ফেরাউন!
(খোরাসানের পুণ্যভূমিতে ১৪৩৩ হিজরির ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে প্রদত্ত মূল্যবান খুতবা)
মূল
শাইখ খালিদ বিন আব্দুর রহমান আল হুসাইনান রহঃ
অনুবাদ
মাওলানা আইমান মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/JXi9Kj9mBYbrTnr
https://archive.org/download/america-a-juger-firaun_20210617/America%20A%20juger%20Firaun.docx
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/33oJZQfFnojetPN
https://archive.org/download/america-a-juger-firaun_20210617_0735/America%20A%20juger%20Firaun.pdf
****************************************
========================
আমেরিকা এ যুগের ফেরাউন!
(খোরাসানের পুণ্যভূমিতে ১৪৩৩ হিজরির ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে প্রদত্ত মূল্যবান খুতবা)
মূল
শাইখ খালিদ বিন আব্দুর রহমান আল হুসাইনান রহঃ
অনুবাদ
মাওলানা আইমান মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
প্রকাশক
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله، نستعين به ونستغفره، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا وسيئات أعمالنا، من يهدي اللهُ فهو المهتدي، ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله صلى الله عليه وسلم
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, তার কাছে আমরা সাহায্য কামনা করি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি৷ তার নিকট আমরা পানাহ চাই আমাদের নফসের অনিষ্টতা থেকে এবং আমাদের কর্মের বিষক্রিয়া থেকে৷ তিনি যাকে হেদায়াত দিবেন একমাত্র সেই হেদায়াতপ্রাপ্ত৷ আর তিনি যাকে গোমরাহ করবেন তাকে পথ দেখাবার কেউ নেই৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং তার কোন শরীক নেই৷ আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল৷
হামদ ও সালামের পর–
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে কারীমে আমাদের আদেশ করেছেন আমরা যেন আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের অবস্থা নিয়ে চিন্তা ফিকির করি৷ চাই তারা কাফের জাতি হোক বা মুমিন জাতি৷ উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ তাআলা আমাদের আদেশ করেছেন আমরা যেন ফেরাউনের অবস্হা থেকে শিক্ষা নিই৷ তিনি এরশাদ করেছেন-
{فَأَخَذَهُ اللَّهُ نَكَالَ الْآخِرَةِ وَالْأُولَى * إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِمَنْ يَخْشَى}
অর্থঃ ফলে আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের আযাবে পাকড়াও করলেন, এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে যে ভয় করে তার জন্যে৷ (সুরা নাযিআত: ২৫-২৬)
যদি আমরা চিন্তা করি বা অবাধ্য আমেরিকা ও পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতির মাঝে মিলাই তাহলে আমরা দেখতে পাবো যে, যমানার অবাধ্য কাফের শ্রেণীর সাথে এ যমানার অবাধ্য কাফের শ্রেণীর মাঝে বিরাট মিল রয়েছে৷
তাই এই বক্তৃতাটিকে طاغية العصر وفرعون الزمان – “যুগের স্বৈরাচারী ও যমানার ফেরাউন” নামে নামকরণ করতে আমার মনে ইচ্ছে জাগল৷ আর এখানে আমি আমেরিকাকে উদ্দেশ্য নিয়েছি এবং আমেরিকা সম্বন্ধে আমি তিনটি বিষয় আলোচনা করছি:
১– সীমালঙ্ঘনকারী আমেরিকা ও পূর্ববর্তী সীমালঙ্ঘনকারীদের মাঝে যোগসূত্র৷
২– ইতিহাসের আলোকে আমেরিকার সন্ত্রাসের ধরণ৷
৩– সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার নীতিমালা৷
�প্রথম আলোচনা�
সীমালঙ্ঘনকারী আমেরিকা ও পূর্ববর্তী সীমালঙ্ঘনকারীদের মাঝে যোগসূত্র৷
উভয়টির মাঝে প্রথম যোগসূত্র হল, আমেরিকা এই দাবি করে যে, আমেরিকা এমন এক রাষ্ট্র যা কখনো দমন করা সম্ভব না, এবং এমন এক শক্তি যা কখনো পরাভূত হবে না৷ বরং সর্বদাই তা টিকে থাকবে৷ (নাউযুবিল্লাহ)৷ তাই অন্যান্য সকল রাষ্ট্রের প্রতি তার শাসন ও নিয়ন্ত্রণকে প্রতিরোধ করার মত কেউ নেই৷ এটা মূলতঃ তাদের এই প্রাচীন কথিকার উপর নির্মিত যে, “আমেরিকাই বিশ্ব, বিশ্বই আমেরিকা”৷
তাদের পূর্ববর্তী কাফের জাতিও অনুরূপই করত৷ যখন তারা নিজেদের শক্তিমত্তা ও প্রভাব- প্রতিপত্তি নিয়ে পর্যালোচনা করত তখন তারা অহংকারবশতঃ বলত, আমরা কখনই বিলীন হবনা৷ এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
{أَوَلَمْ تَكُونُوا أَقْسَمْتُمْ مِنْ قَبْلُ مَا لَكُمْ مِنْ زَوَالٍ}
অর্থঃ তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই৷ (সুরা ইবরাহীম: ৪৪)
এজন্যই আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন এক সাক্ষাৎকারে অত্যন্ত অহমিকাপূর্ণভাবে এই মারাত্মক কথাটি বলেছিল যে, “এই বিশ্বে একটিই সুপার পাওয়ার (মহা শক্তিধর রাষ্ট্র) রয়েছে, আর তা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র”৷
সুতরাং তারা এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, আমেরিকা এমন এক শক্তি, যা কখনো পরাভূত হবে না এবং যার সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবেনা৷ এমনকি প্রেসিডেন্ট বুশ তার কোন ভাষণে বলেছিল যে, “অচিরেই আমেরিকা সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিবে… অচিরেই আমেরিকা সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিবে…” এজন্যই তুমি সর্বদা মার্কিনিদের দেখবে যে, তারা বিশ্বের সামনে নিজেদের কুশলী ও অভিজ্ঞজনদের এভাবে তুলে ধরতে খুব ভালবাসে যে, তারা জলে, স্থলে ও শূন্যে সর্বত্র নিজেদের ট্যাংক ফাইটার ও যুদ্ধজাহাজ নিয়ে পরিভ্রমণ করে ও ঝাপিঁয়ে পড়ে… ইত্যাদি ইত্যাদি৷ কিন্তু এতসব কেন?! এসব এজন্যই, যেন বিশ্ব তাদের প্রতি আতঙ্কিত থাকে৷ সীমালঙ্ঘনকারী আমেরিকা ও পূর্ববর্তী অবাধ্য কাফের জাতির মাঝে এটাই প্রথম যোগসূত্র৷
উভয়টির মাঝে দ্বিতীয় যোগসূত্র হল, আল্লাহ ও বান্দাদের প্রতি বড়াই-অহংকার করা৷ আমেরিকাও বিশ্ববাসীর সাথে
{أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى}
অর্থঃ আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক (সুরা নাযিআত: ২৪)
এবং
{مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرِي}
অর্থঃ আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ আছে বলে আমি জানিনা (সুরা কাসাস: ৩৮)
এবং
{مَا أُرِيكُمْ إِلَّا مَا أَرَى وَمَا أَهْدِيكُمْ إِلَّا سَبِيلَ الرَّشَادِ}
অর্থঃ আমি যা বুঝি, তোমাদেরকে তা-ই বলছি৷ আমি তোমাদেরকে শুধু সৎপথই দেখিয়ে থাকি৷ (সুরা মুমিনঃ ২৯)
এ আয়াতত্রয়ের মত আঁচরণ করে থাকে৷
এজন্যই আমেরিকার কোন এক নেতা যে কিনা “উপসাগরীয় যুদ্ধে” তথা আরব উপসাগর তীরে অবস্হিত একটি যুদ্ধে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ছিল, সে জাজিরাতুল আরবের ভূমিতে আগমনের সময় বলেছিল, “আমরা এসেছি পালনকর্তার ভুল শুধরাতে, কেননা তিনি পেট্রলকে আরবের মাটিতে রেখেছেন”৷
সুতরাং আমেরিকানরা এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, তারাই স্বাধীন এবং সারা বিশ্ব তাদের গোলাম। যে তাদের পরোয়ানায় নতি স্বীকার করবে না, তার জন্য যেন আফসোস ও দুর্ভোগের কোন শেষ নেই৷
তাদের আরেক নেতা বলেছে, (এ বাক্যে তাদের দম্ভের প্রতি লক্ষ্য করুন) “পুরা বিশ্ববাসীর উচিত আমেরিকার দপ্তরে চাকুরী করা”৷ সুতরাং আল্লাহ তাআলা ও বান্দাদের প্রতি অহংকার ও বড়াইয়ের ক্ষেত্রে আমেরিকা পূর্ববর্তী সীমালঙ্ঘনকারীদের সাথে সাদৃশ্যতা রাখে৷
আমেরিকার পূর্ববতী সীমালঙ্ঘনকারীদের সাথে বিশেষত ফিরাউনের সাথে তৃতীয় যোগসূত্র হল, ধ্বংস করা হত্যা করা ও জনগনের রক্তকে হালাল মনে করা৷ এটা ছিল ফেরাউনের অবস্থা৷ কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-
{إِنَّ فِرْعَوْنَ عَلَا فِي الْأَرْضِ وَجَعَلَ أَهْلَهَا شِيَعًا يَسْتَضْعِفُ طَائِفَةً مِنْهُمْ يُذَبِّحُ أَبْنَاءَهُمْ وَيَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ}
অর্থঃ নিশ্চই ফেরাউন দেশে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল এবং তথাকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রেখেছিল, তাদের পুত্রদেরকে সে যবাহ করতো এবং নারীদেরকে সে জীবিত ছেড়ে দিত৷ প্রকৃতপক্ষে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের একজন৷ (সুরা কাসাস: ৪)
আমেরিকার অবস্থাও এমনই৷ কত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে যে সে তার জোর-জুলুমের স্টিম রোলারে পিষ্ট করেছে তার ইয়ত্তা নেই৷
মার্কিনী জাতি এমন এক জাতি যাদেরকে অপরাধ প্রবণতার, খুনাখুনির ও বিশ্বময় ফ্যাসাদ সৃষ্টির শিক্ষা দেয়া হয়৷ এই বিষয়টিকে ফিলিপাইনে আন্দোলন নির্মূল করণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক মার্কিন জেনারেল অফিসার নিজ সেনাবাহিনীদের ওপর পরোয়ানা জারী করতে গিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছিল৷ সে বলেছিল, “আমি কোন বন্দি চাই না, আমি শুধু চাই তোমরা জ্বালাও-পোড়াও কর ও হত্যা কর৷ তোমরা যতবেশী পোড়াবে ও হত্যা করবে আমাকে ততবেশী আনন্দ দিতে পারলে, আমাকে ততবেশী আনন্দ দিতে পারলে”৷
আমরা কিছুতেই ভুলতে পারব না আমেরিকায় আদিবাসি রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যাযজ্ঞের ঘটনা এবং সে ব্যাপারে মার্কিন ইতিহাসবিদ যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিল সেটি৷ কোন আরবী বা কোন মুসলিম নয় বরং মার্কিন ইতিহাসবিদই এই তথ্য দিয়েছে যে, “বিশ্বের মধ্যে এটিই ছিল সর্ববৃহৎ সম্মিলিত হত্যাকাণ্ড”৷
সুতরাং মার্কিন জাতিকে তাদের নেতারা অপরাধ প্রবণতা ও খুনাখুনি প্রবণতার মধ্যেই বড় করে তুলেছে৷ এ কথা আমরা নিজ থেকে বানিয়ে অযথা বলে যাচ্ছিনা; বরং এর যথেষ্ট প্রমানও রয়েছে৷ যেমন, মার্কিনিদের ৮৫% জনগনই আফগান বিরোধী যুদ্ধে সমর্থন যুগিয়েছে এবং ৮০% জনগন বুশকে ইরাক আক্রমনে সহায়তা করেছিল৷ চিন্তা করে দেখুন, তারা এমন জাতি, যাদের অধিকাংশ মানুষই মুসলিম বিশ্বকে জালিয়ে অগ্নিদগ্ধ করার জন্য ও ধ্বংসাত্মক আগুন দ্বারা দেউলিয়া বানাবার জন্য সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে৷ সুতরাং এরপরও কি তাদের সীমালঙ্ঘন ও বাড়া-বাড়ির ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে!
অতঃপর তারা তাদের এ ন্যক্কারজনক কাজকে মার্কিনি সভ্যতা(!) বলে নামকরণ করে থাকে৷ ধ্বংস হোক এই সভ্যতা৷ এটাতো কোন সভ্যতাই হতে পারে না; বরং এটা হচ্ছে হীনতা৷ তাদের নিকট এমন কোন ধর্ম নেই, যা তাদেরকে চালায় এবং এমন কোন চারিত্রিক মূল্যবোধও নেই, যা তাদেরকে পরিচালনা করে৷ এজন্যই আমেরিকাতে আক্রমনের পর বুশ অন্যান্য মার্কিনিদের নিকট জানতে চেয়েছিল যে, তারা (মুসলমানরা) আমাদেরকে দেখতে পারে না কেন? হে বুশ! কেন তোমাদেরকে দেখতে পারে না? কেননা তোমরা মুসলমানদের ওপর জুলুম করেছো, তাদের রক্তের স্রোত বইয়েছো, তাদের মা বোনদের ধর্ষণ করেছো৷
এজন্যই ফেরাউনকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তুমি কেন ঔদ্ধত্যপূর্ণ হলে? জানেন কি, ফেরাউন কি জবাব দিয়েছিল? সে বলেছিল, অমি এমন কাউকে পাইনি, যে আমাকে লক্ষ্য বানিয়েছে৷ অর্থাৎ আমি এমন কাউকে পাইনি, যে আমাকে আদব শিক্ষা দিয়েছে৷ ফলে আমি ঔদ্ধত্যপূর্ণ হয়ে গেছি৷
আমাদের কথা হল, আমরা আল্লাহ তাআলার জন্য বরকতময় উত্তম প্রশংসা করছি যে, তিনি এ যমানায় আমেরিকার জন্য এমন কাউকে তৈরী করে দিয়েছেন, যে আমেরিকাকে আদব শিক্ষা দিতে পারবে৷ আর নিঃসন্দেহে তারা হচ্ছেন আল্লাহর পথের মুজাহিদগণ৷ সারা বিশ্ব আমেরিকার ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে, সারা বিশ্ব আমেরিকার সামনে নতি স্বিকার করে, সারা বিশ্ব আমেরিকার জন্য শত সহস্র হিসাব কষে৷ কেবল এক শ্রেণীর মানুষই এর ব্যতিক্রম৷ আর নিঃসন্দেহে তারা হচ্ছেন আল্লাহর পথের মুজাহিদগণ৷ তাঁরা আমেরিকার বড়ত্ব অহংকার ও গর্বকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে৷ এটা মুজাহিদদের প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়া, করুণা, অনুগ্রহ ও অনুকম্পা ছাড়া আর কিছু না৷ আমরা আল্লাহ তাআলার দেয়া নেয়ামতের কথা এজন্য আলোচনা করছি যেহেতু তিনি আমাদেরকে এ কাজের আদেশ দিয়ে বলেছেন-
{وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ}
অর্থঃ তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা ব্যক্ত করতে থাকো৷ (সুরা দুহা: ১১)
আরো বলেছেন-
{لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ}
অর্থঃ তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিবো৷ (সুরা ইবরাহীম: ৭)
সুতরাং সীমালঙ্ঘনকারী আমেরিকার সাথে পূর্ববর্তী সীমালঙ্ঘনকারীদের এটাই তৃতীয় যোগসূত্র। আর তা হচ্ছে ধ্বংস করা হত্যা করা ও জনগনের রক্তকে হালাল মনে করা৷
চতুর্থ ও সর্বশেষ যোগসূত্র হল, ফেরেরবাজি করা, প্রতারণা করা, কুটনৈতিক ধোঁকা দেয়া, অন্তর্নিহিত মোনাফেকি করা ও মিথ্যা ছলনা করা৷
আমেরিকা যে এমন, তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ তারা সেই মূলনাতির অনুসরণ করে যার পরিকল্পনা করেছিল জার্মানের নাৎসিবাদী প্রচারমন্ত্রী “জোসেফ গোয়েবলস”৷ তার নিকট একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি ছিল৷ সে বলত, “তুমি মিথ্যা বলতে থাক, মিথ্যা বলতে থাক, মিথ্যা বলতে থাক, যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ তোমাকে সত্যবাদী মনে করে’”৷ মার্কিনী প্রশাসন তাদের প্রতিটি ধোঁকা ও প্রতারণায় এ মূলনীতিটিরই অনুশীলন করে থাকে৷ এভাবে সে আরব জনগনকে ধোঁকা দেয়; বরং গোটা বিশ্বকেই৷ সে মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে ধোঁকা দেয় ও প্রতারিত করে৷ যাকে খুশি হত্যা করে, যাকে খুশি বন্দি করে, যাকে খুশি অবরোধ করে, মনমতো যার তার সাথে যুদ্ধে বাধিয়ে দেয়৷ এতসব কিছু কিসের নামে বা কিসের আড়ালে? “সন্ত্রাস দমন”!
বরং আমিতো আশাবাদি যে, আমি একথা বললেও কোন অতিরঞ্জনকারী হবো না যে, আমরা গত দশ বৎসরে গণমাধ্যমে যে শব্দটি সবচাইতে বেশী শুনেছি তা হল, “সন্ত্রাস দমন”৷ (আল্লাহ আপনাদের ওপর রহম করুন) আপনারা চিন্তা করে দেখুন, আমেরিকা “সন্ত্রাস দমন” এর নামে মানুষের বিবেক বুদ্ধিকে কিভাবে ধোঁকা দেয় ও প্রতারিত করে! তাদের নেতা ও পরিচালকরাও সেভাবেই বাস্তবতাকে উল্টে দেয়, যেমন ফেরাউন সম্মানিত নবী হযরত মুসা আঃ এর ব্যপারে বলেছিল-
{إِنِّي أَخَافُ أَنْ يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَنْ يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ}
অর্থাৎঃ আমি আশঙ্কা করি যে, সে তোমাদের দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে৷ (সুরা মুমিন: ২৬)
ভাবুন! ফেরাউন মূসা আঃ কে বিপর্যয় সৃষ্টির অপবাদ দিচ্ছে (সুবহানাল্লাহ)!! এভাবে সীমালঙ্ঘনকারী আমেরিকাও গণমাধ্যমে তাদের মুখে আওড়ানো শ্লোগানগুলো দ্বারা মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে ধোঁকা দিয়ে প্রতারিত করে থাকে৷ যেমন স্বাধীনতার শ্লোগান, ন্যায়পরায়ণতার শ্লোগান ইত্যাদি… এবং বলে যে, আমরা মধ্যপ্রাচ্যে এসেছি স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়পরায়ণতা ছড়িয়ে দেবার জন্যে৷ এটাতো অন্তর্নিহিত মোনাফেকি বৈ অন্য কিছু নয়৷ তারা মানুষের বিবেক বুদ্ধিকে তেমনই বোকা বানিয়ে থাকে যেমন বানাতো ফেরাউন৷ যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-
{فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهُ فَأَطَاعُوهُ}
অর্থঃ এভাবে সে তার সম্প্রদায়কে হতবুদ্ধি করে দিলো, ফলে তারা তার কথা মেনে নিয়েছে৷ (সুরা যুখরুফ: ৫৪)
তারা তাদের মুখে আওড়ানো এসমস্ত শ্লোগান দ্বারা মানুষদের বিবেক বুদ্ধিকে বোকা বানিয়ে থাকে৷
সুতরাং মার্কিনি দফতর তাদের রাষ্ট্রকে পরিচালনা করে অন্তর্নিহিত মোনাফেকি, মিথ্যা, প্রতারণা এবং বাস্তবতাকে উল্টানোর মাধ্যমে৷ এজন্য আপনি আমেরিকার অবস্থান দেখে অবাক হবেন৷ যেমন একদিকে সে খৃষ্টান অধ্যুষিত পূর্ব তৈমুরকে ইন্দোনেশিয়া থেকে পৃথক হওয়ার জন্য সাহায্য করছে ও জোর দাবি জানাচ্ছে এবং দক্ষিণ সুদানকে পৃথক হওয়ার আন্দোলনে সহায়তা করছে ও উস্কানি দিচ্ছে৷
অপরদিকে হে আমেরিকা তুমি মুসলমানদের সেই কাশ্মীর থেকে কোথায়, যা আজীবন হিন্দুদের হাতে বন্দি জীবনযাপন করছে?! সেই ফিলিস্তিন থেকে কোথায়, যা আজীবন বন্দি জীবনযাপন করছে ইয়াহুদীদের হাতে?! বরং যেমনটি আমি পূর্বেও বলেছি যে তারা ঐসকল শ্লোগান দ্বারা মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে ধোঁকা দিয়ে প্রতারিত করে থাকে ولا حول ولا قوة إلا بالله..
�দ্বিতীয় আলোচনা�
ইতিহাসের আলোকে আমেরিকা সন্ত্রাসের ধরণ৷
হে মুসলমানগণ! আপনারা কি জানেন যে, মানবজাতির ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হচ্ছে আমেরিকা! বরং বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের জনক-ই হচ্ছে আমেরিকা! সুতরাং আসুন আমরা ইতিহাসের পাতা উল্টাই এবং এই অত্যাচারী ঔদ্ধত্যপূর্ণ সীমালঙ্ঘনকারী রাষ্ট্র সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের অজানা সব তথ্য বেরিয়ে আসুক৷
ইতিহাসের আলোকে আমেরিকা সন্ত্রাসের প্রথম ধরণ হচ্ছে, আমেরিকা-ই হচ্ছে সেই রাষ্ট্র, যে সর্বপ্রথম পারমাণবিক বোমা জাপানের দুটি শহরে নিক্ষেপ করেছে৷
দ্বিতীয় ধরণ হচ্ছে, আসবাবগত বা সামরিকগত বা রাজনৈতিকগত মোটকথা সামগ্রিকভাবে ইয়াহুদীদের সহায়তা করা৷ আর এটাই হচ্ছে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড৷
তৃতীয় ধরণ হচ্ছে, আমেরিকা একটি নিয়মতান্ত্রিক সন্ত্রাস রাষ্ট্র৷ কিভাবে সন্ত্রাস রাষ্ট্র?
আমেরিকা তার জন্মকাল থেকেই বিশ্বব্যাপী ভয় আতঙ্ক ও নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করে আসছে৷ সে জনগণের সম্পদ চুরি-লুট করে, তাদের স্বাধীনতা খর্ব করে, তাদের ভূমি জবরদখল করে… বিশ্বে কি আমেরিকা সন্ত্রাসের চেয়ে বিশ্রি ও কদাকার আর কোন সন্ত্রাস হতে পারে?! তারা বাস্তবতার মুখের কথাটুকুও কেড়ে নিয়েছিল৷ এখন বাস্তবতাই কথা বলবে যে, আমেরিকা ও ইয়াহুদী শক্তিই বিশ্বব্যাপী ভয়, আতঙ্ক ও নিয়ন্ত্রণের বীজ বপন করে আসছে৷ এই বাস্তবতাকে কি বোধশক্তিসম্পন্ন কোন লোক অস্বীকার করতে পারবে?
হে মুসলমানগণ! আপনাদের কি জানা আছে যে, এ যমানায় জুলুম অত্যাচার ও সীমালঙ্ঘনের কমান্ডার-ই হচ্ছে আমেরিকা?! আমেরিকার ইতিহাস সর্বস্তরে সর্বস্থানে কালো ইতিহাস৷ আমি আপনাদের একটি উদাহরণ দিচ্ছি, আমি সর্বদাই দলিলভিত্তিক কথা বলতে ভালবাসি৷ এমন কোন রাষ্ট্র আছে, যা আমেরিকার আকাঙ্ক্ষা পূরণে সাড়া দেয়না, আমেরিকার কথা শোনেনা, আমেরিকাকে মান্য করেনা, আমেরিকার আদেশে নতি স্বীকার করেনা? আপনারা কি জানেন, আমেরিকা এজন্য (তাদেরকে বশে আনার জন্যে) কি করে?! সে তাদেরকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে৷ ফলে নিরীহ অসহায় জনগণ ক্ষুধাতুর দিনাতিপাত করতে থাকে৷
যেমনটি করেছে ইরাকে৷ সেখানে দশ বৎসরেরও বেশী সময়ে এক মিলিয়নের বেশী ইরাকী শিশুকে নিষ্ঠুর অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে এবং আফগানিস্তানে ইমারতে ইসলামিয়ার সময়কালে যখন আমেরিকা অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টি করে তখন পনেরো হাজার আফগানী শিশু মৃত্যুবরণ করেছিল৷
আমেরিকা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ একটি সীমালঙ্ঘনকারী কাফের জাতি, সে আল্লাহর কিতাবকে কলুষিত ও অবমাননা করেছে৷
হে সম্মানিত পাঠক! আপনাদের কি জানা আছে যে, আমেরিকাই বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের ঝান্ডা উত্তোলনকারী ও রক্ষক৷ বিশ্বে সন্ত্রাসবাদকে যে পৃষ্ঠপোষকতা করে সে হচ্ছে আমেরিকা৷ অন্যথায় ইসরাইলকে মদদ দিচ্ছে কে? আফগানিস্তানকে ধ্বংস করেছে কে? ইরাককে বিনাশ করেছে কে? জনগণের সম্পদ লুট করে কে?
এজন্য আমি পূর্ণ স্পষ্টভাবে বলি যে, আমেরিকা মনুষ্যত্বের দুশমন৷ শুধু মুসলমানদের নয়, বরং সকল জনগোষ্ঠীর দুশমন৷ এর প্রমান কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের জিজ্ঞাসা করুন, জাপানীদের জিজ্ঞাসা করুন, দক্ষিণ আমেরিকানদের জিজ্ঞাসা করুন, যেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে৷
আর আমেরিকানদের হত্যাযজ্ঞের পদ্ধতিটিও বড় পাশবিক ও নৃশংস, মানবিকতার লেশ পর্যন্ত তাতে বাকি থাকেনা৷ তারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় টনকে টন বোমা এমন মুষলধারে নিক্ষেপ করতে থাকে যে, যেন কোন জনমানবহীন বিরান পাহাড়ে তারা তা নিক্ষেপ করছে৷
জাপানের কথাই চিন্তা করুন, সেখানে একরাতে মার্কিন বিমানের গোলা বর্ষণ দ্বারা দুইলক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷ এখন বুঝুন যে, আমেরিকা কিভাবে শুধু মুসলমানদের নয় বরং মনুষ্যত্বের-ই দুশমন! চিনে, কোরিয়ায় ও কম্বোডিয়াতে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে৷ এই হচ্ছে অমুসলিমদের সাথে কুফরীর সরদার সীমালঙ্ঘনকারী আমেরিকার অপরাধ সমূহ৷
এজন্য আমি পূর্ণ স্পষ্টতা ও আস্থার সাথে বলি যে, আমেরিকা না মানে কোন আইন-কানুন, না মানে কোন রীতি-প্রথা, আর না মানে কোন ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি৷ বরং সে কেবলই তার ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য ও ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে৷
আর মুসলিমদের সাথে আমেরিকার অপরাধসমূহ বলে কখনো শেষ-ই করা যাবেনা৷ তাদের চাদর সর্বদা মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত থাকে৷ মুসলমানদের রক্ত তাদের অভিধানে বন্যপ্রাণীর রক্তের মান রাখে, যার কোনই দাম নেই৷ এজন্য তারা সর্বদা ইসলামকে কদাকার আকৃতিতে রূপ দিয়ে থাকে৷ আমি আপনাদেরকে এর কয়েকটি দলিল দিচ্ছি:-
প্রথমত তারা আমাদের প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আখ্যা দিয়ে থাকে “ব্যতিক্রমধর্মী ও অনিয়মতান্ত্রিক পুরুষ” বলে৷ এবং তাদের স্কুলগুলোতেও তা শিক্ষা দেয়া হয়৷ আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চলছে?
দ্বিতীয়ত আমেরিকা কিছু সংখ্যক চলচিত্র তৈরী করেছে, যার সবকটি ইসলাম ও মুসলমানদের মানহানী করে থাকে এবং সেখানে ইসলামে নারীর মর্যাদাকে খাট করে দেখানো হয়েছে এবং সেখানে সমস্ত হিংস্রতা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতামূলক আচরণকে আরব ও মুসলমানদের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে৷
অথচ আমেরিকান বাহিনী পনের বৎসর আগে সোমালিয়ায় হাজার হাজার সোমালিয়ানকে হত্যা করেছে এবং আফগানিস্তানে ক্রুসেড যুদ্ধের সূচনালগ্নে মাত্র তিনমাসের মধ্যেই পঞ্চাশ হাজার আফগানীকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক৷ আর এসবই সংঘঠিত হয় মার্কিন বিমানের গোলা বর্ষণে৷ এছাড়াও তারা সেই আমেরিকান অস্ত্র -যা আমেরিকার সহযোগিতায় হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইসরাইল- তা দ্বারা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বৃদ্ধ শিশু ও নারীদের হত্যা করেছে৷
এই হচ্ছে মুসলিমদের সাথে আমেরিকানদের অপরাধের কিছুটা নমুনা৷ তাই বুশ ঠিকই বলেছিল, যখন সে বলেছিল, “এটা হচ্ছে (প্যালেস্টাইন উদ্ধারের জন্য) খৃস্টানদের ধর্মীয় যুদ্ধ”৷ কথাটি সে ঘুমেও বলেনি বা তার মুখ ফস্কেও কথাটি বের হয়নি, যেমনটি অনেকে ধারণা করে থাকে৷ বরং বুশ যুদ্ধকালীন সময়ে মার্কিনদের চেতনাটুকুই ব্যক্ত করেছে৷
এজন্য আমরা বলি, মানবজাতির ইতিহাসের নিরিখে পশ্চিমা খৃষ্টানরাই সবচাইতে বড় সন্ত্রাসী৷ হ্যাঁ, এতে (এ সন্ত্রাসের মাধ্যমে) আমেরিকার কিছুটা অর্জন হলেও সে বিজয় লাভ করতে পারেনি৷ কিছু অর্জন করা এক জিনিস আর বিজয় লাভ করা আরেক জিনিস৷ আমরা যদি ইসলাম-মুসলমান ও জিহাদ-মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে আমেরিকার যে ক্ষয়-ক্ষতি ও লোকসান হয়েছে তা নিয়ে ভাবি, তাহলে দেখি যে, তা আমেরিকার অর্জনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি৷
আমেরিকার আশার গুড়েবালি
হে প্রিয় সুধী! আমেরিকা সর্বপ্রথম যখন ইসলাম ও মুসলমানদের যুদ্ধে জড়ায় তখন সে ভেবেছিল মুসলমানরা নিঃস্ব দরবেশ, তাদের কাছে কিছুই নেই! না আছে ফাইটার! না আছে ট্যাংক! না আছে মিসাইল! না আছে অন্যকিছু! কিন্তু আল্লাহ তাআলা স্বীয় দয়া করুণা অনুগ্রহ ও গৌরব ক্ষমতায় আফগানিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া ও আরব উপদ্বীপে আমেরিকার কৃষ্ণ চেহারাকে মুজাহিদদের বশীভূত করে দিয়েছেন৷ ফলে তারা আমেরিকার অহংকার ও গর্বকে পদদলিত করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে, যেমনটা আমি পূর্বেও বলেছি৷ অতএব হে মুজাহিদগণ! আপনারা সেই অবাধ্য-উত্তেজিত ষাড়টির গতিরোধ করুন, যে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে, আল্লাহর বান্দাদের নিধন করছে এবং পবিত্র বস্তুসমূহকে কলুষিত করছে৷ আপনারা তাকে থামান নিজেদের রক্ত জান ও মাল দ্বারা, আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে তাওফিক ও বরকত দান করুন৷
�তৃতীয় ও সর্বশেষ আলোচনা�
সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার নীতিমালা৷
আমি বলছি হে প্রিয় সুধী! যে ব্যক্তি আমেরিকার অবস্থা নিয়ে চিন্তা ফিকির করবে, বিশেষ করে আমাদের আমেরিকা সন্ত্রাসের ধরণ তুলে ধরার পর কোন বোধশক্তি সম্পন্ন লোক একথায় আর সন্দেহ করবে বলে মনে হয়না যে, বাস্তবিক পক্ষে আমেরিকাই বিশ্বসন্ত্রাসবাদের মূল, আমেরিকাই বিশ্ব-অনিষ্টের মূল, আমেরিকাই বিশ্ব-অন্যায়ের মূল, আমেরিকাই বিশ্ব-স্বেচ্ছাচারিতা ও সীমালঙ্ঘনের মূল৷
যে ব্যক্তি আমেরিকার অবস্থা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ফিকির করবে এবং সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার নীতিমালা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে, তার এ ব্যপারে কোন সন্দেহ রবে না যে, আমেরিকা আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তি আযাব ও ধ্বংসের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে৷ কেননা আল্লাহর নীতিমালায় কোন পরিবর্তন আসেনা৷ তবে আমরা কোন গায়েব জানার দাবি করছিনা; বরং গায়েব জানার দাবি করা থেকে আমরা আল্লাহর নিকট পানাহ চাই৷ এবং আমরা এই দাবিও করি না যে, তা মুজাহিদদের হাতেই হবে; বরং (এতটুকু বলি যে,) সে ধ্বংসটি আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে৷ তিনি তাকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করবেন এবং তার শক্তিকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিবেন; কেননা কোন জাতি কুফরি, গোমরাহী, অন্যায়, পৃথিবীময় ফ্যাসাদ বিস্তার ও আল্লাহর পথে বাধা দানে এই পর্যন্ত আগে বাড়েনি যতটুকু বেড়েছে এই আমেরিকা৷ আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কোরআনে কারীমে বলেন-
{وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ}
অর্থঃ আর এরুপেই তখন তিনি কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন যখন তারা অত্যাচার করে৷ (সুরা হুদ: ১০২)
আর আমেরিকা যে, জুলুম ঔদ্ধত্য ও সীমালঙ্ঘনের সকল পথই মারিয়ে এসেছে এতে কোন সন্দেহ নেই-
{إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ}
অর্থঃ নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত কঠোর যন্ত্রনাদায়ক৷ (সুরা হুদ: ১০২)
তাই আমরা মহামূল্যবান আরশের মালিক মহামহিম আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি, প্রার্থনা করি তাঁর দাপট ক্ষমতা অহঙ্কার ও আত্মগরিমার দোহাই দিয়ে!
হে আল্লাহ! তুমি আমেরিকা ও তার মিত্রদেরকে পাকড়াও কর…
হে আল্লাহ! তুমি আমেরিকায় দাঙ্গা ছড়িয়ে দাও, তাদের মাঝে সকল প্রকার ফাটল ও অনৈক্য তৈরী করে দাও, তাদের ওপর বড় বড় বেশী বেশী বালা-মসিবত ও দুর্যোগ প্রেরণ কর…
হে আল্লাহ! তুমি আমেরিকার ওপর আযাব-গযব ও শাস্তি অবতীর্ণ কর…
হে আল্লাহ! তুমি আমেরিকায় বন্যা-প্লাবন টর্নেডো-সাইক্লোন ও ভূমিকম্প প্রেরণ কর…
হে আল্লাহ! তুমি তাদের অর্থনীতিতে ধস নামিয়ে দাও, তাদের বিমানগুলোকে ভূপাতিত কর, তাদের ট্যাংকগুলোকে ধ্বংস কর…
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তাদের ব্যাপারে তোমার আশ্চর্যজনক কুদরত দেখাও…
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين..
وصلى الله وسلم وبارك على نبينا محمد وعلى آله وصحبة وسلم