ফাতাওয়া-ফারায়েজবই ও রিসালাহ

সংশয়-৫: জিহাদের জন্য একজন সর্বজনীন খলীফা বা বিশ্বনেতা থাকা কি শর্ত, নাকি স্থানীয়ভাবে আমীর নিয়োগ করে জিহাদ করা যায়?

সংশয়-৫: জিহাদের জন্য একজন সর্বজনীন খলীফা বা বিশ্বনেতা থাকা কি শর্ত, নাকি স্থানীয়ভাবে আমীর নিয়োগ করে জিহাদ করা যায়?

সঠিক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত খলীফা বা রাষ্ট্র ক্ষমতা ছাড়া জিহাদ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে আমরা পূর্বে কথা বলেছি। এখন প্রশ্ন হলো কোনো কারণে যদি সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এক নেতার অধীনে একত্রিত হতে সক্ষম না হয় তবে তাদের করণীয় কি? সকলে একত্রিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে, নাকি একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করার পাশাপাশি শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাবে?

প্রথমতঃ এ বিষয়ে সঠিক উত্তর পূর্বে বর্ণিত আবু বছীর (রাঃ) এর ঘটনাতে পাওয়া যাবে। যখন মক্কার কাফিরদের সাথে কৃত সন্ধির কারণে মদীনা রাষ্ট্রের সাথে মিলিত হওয়া সম্ভব হলোনা তখন তাঁরা কয়েকজন একত্রিত হয়ে স্থানীয়ভাবে শত্রুর মোকাবিলা শুরু করে দিলেন। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের এ কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন। বর্তমানেও যদি কোন কারণে মুসলিমরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তবে তাদের করণীয় হলো একতাবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করা এবং সেই সাথে যে যেভাবে পারে স্থানীয়ভাবে একত্রিত হয়ে শত্রুর মোকাবিলা চালিয়ে যাওয়া। আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِين
হে ঈমানদাগণ! তোমরা নিকটবর্তী কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করো আর তাদের প্রতি কঠোর হও। জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। (সূরা তাওবাঃ ১২৩)

দ্বিতীয়তঃ যারা জিহাদ বৈধ হওয়ার জন্য খলীফার বিদ্যমান থাকাকে শর্ত করেন তাদের জন্য উহুদ যুদ্ধের ঘটনার মধ্যে শিক্ষনীয় কাহিনী বিদ্যমান রয়েছে।

انتهى أنس بن النضر عم أنس بن مالك إلى عمر بن الخطاب وطلحة بن عبيد الله، في رجال من المهاجرين والانصار، وقد ألقوا بأيديهم فقال: فما يجلسكم ؟ قالوا: قتل رسول الله صلى الله عليه وسلم. قال: فما تصنعون بالحياة بعده ! قوموا فموتوا على ما مات عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم. ثم استقبل فقاتل حتى قتل
আনাস (রাঃ) এর চাচা আনাস ইবনে নাদর (রাঃ) উমর ইবনে খত্তাব, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ এবং অন্য কিছু মুহাজির ও আনসারদের নিকট পৌঁছালেন। তারা অস্ত্র ফেলে দিয়ে বসে পড়েছিলেন। তিনি বললেন তোমরা বসে আছো কেনো? তাঁরা বললেন আল্লাহর রাসুল নিহত হয়েছেন। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা বেঁচে থেকে কি করবে? ওঠো! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কারণে জীবন দিয়েছেন তোমরাও সে কারণে জীবন দাও। তারপর তিনি চলে যান এবং যুদ্ধ করতে করতে নিহত হন। (বাইহাকী দালাইলুন নুবুওয়া, সিরাতে ইবনে হিশাম, সিরাতে ইবনে কাছীর ইত্যাদি)

একটি রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে আনাস ইবনে নাদর (রাঃ) বলেছিলেন,

يَا قَوْمُ إِنْ كَانَ مُحَمَّدٌ قُتِلَ فَرَبُّ مُحَمَّدٍ لَمْ يُقْتَلْ فَقَاتِلُوا عَلَى مَا قَاتَلَ عَلَيْهِ
হে আমার সমপ্রদায়! যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিহত হয়েই থাকেন, তবে অনেক মুহাম্মাদই তো জীবিত রয়েছে। তিনি যে বিষয়ের উপর যুদ্ধ করেছেন তোমরাও তার উপর টিকে থেকে যুদ্ধ করে যাও। (ফাতহুল বারী, তাফসীরে তাবারী)

অর্থাৎ স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিহত হলেও জিহাদ বন্ধ করা হবে না, কারণ আল্লাহর রাসুলের জন্য জিহাদ করা হয় না, বরং জিহাদ করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এই হাদীসে প্রমাণ রয়েছে যে, যদি খলীফা বিদ্যমান না থাকে বা নিহত হন, তবে জিহাদ পরিত্যাগ করা হবে না।

তৃতীয়তঃ আল্লাহ বলেন,

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ
মুহাম্মাদ তো একজন রাসুল মাত্র, তার পূর্বেও বহু রাসুল গত হয়েছে। অতএব যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন বা নিহত হন, তবে কি তোমরা পিছনে ফিরে যাবে? (আলে ইমরানঃ ১৪৪)

অন্য একটি রেওয়ায়েতে এসেছে,

إن أول من سل سيفا في الله الزبير ابن العوام، بينا هو ذات يوم قائل إذ سمع نغمة: قتل رسول الله صلى الله عليه وسلم، فخرج متجردا بالسيف صلتا، فلقيه النبي صلى الله عليه وسلم كنة كنة فقال: ما لك يا زبير؟ قال: سمعت أنك قتلت، قال: فما أردت أن تصنع؟ قال: أردت والله أستعرض أهل مكة! فدعا له النبي صلى الله عليه وسلم بخير
আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রথম যে তরবারী উত্তোলন করা হয়েছে তা যুবাইর ইবনে আওয়ামের তরবারী। একদিন তিনি দুপুরে বিশ্রামরত অবস্থায় ছিলেন তখন একটি আওয়াজ শুনলেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিহত হয়েছেন। তিনি দ্রুত খোলা তরবারী হতে বের হয়ে পড়লেন। পরে একস্থানে তার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখা হলে, তিনি (সাঃ) বললেন, হে যুবাইর! তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন আমি শুনলাম আপনাকে হত্যা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে কারণে তুমি কি করতে চাচ্ছিলে? যুবাইর (রাঃ) বললেন, আমি মক্কার কাফিরদের দেখে নিতে চাচ্ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জন্য কল্যাণের দোয়া করলেন। (কানযুল উম্মাল, জামউল জাওয়মি)

এখন খলীফা নিহত হওয়ার খবর শুনলে মুসলিমদের কি করা উচিত? যারা খলীফাকে হত্যা করে পালাচ্ছে তাদের পিছু ধাওয়া না করেই কি মুসলিমরা আর একজন খলীফা নিয়োগে মনোনিবেশ করবে? খলীফার কারণে কি ইসলামের যাবতীয় কাজকর্মে ইস্তফা দিতে হবে? ইসলাম কি শুধু খলীফার জন্য?

চতুর্থতঃ যারা মনে করেন শত্রুর সাথে মুকাবিলা করার পূর্বে সমগ্র মুসলিমদের একজন খলীফার নিকট বায়াত হতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই স্থানীয়ভাবে একত্রিত হয়ে জিহাদ করা বৈধ হবে না, তাদের নিকট আমাদের প্রশ্নঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য নবীগণ জিহাদ করেছেন কি না? তাঁরা জিহাদ করে থাকলে তাদের জিহাদ বৈধ ছিল কি না? কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِي
আমাকে পাঁচটি জিনিস দেওয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি।
এরপর শাফায়াত, গনিমত ইত্যাদি বিষয়গুলি উল্লেখ করে সবার শেষে বলেন,

وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً
আর আমার পূর্বে সকল নবীকে তার সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে প্রেরণ করা হতো আর আমাকে সমস্ত মানুষের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোনো নবীকে সমগ্র বিশ্বের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়নি, বরং নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বহু সংখ্যক নবী তাদের অনুসারীদের নিয়ে আশপাশের কাফিরদের সাথে লড়াই করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,

وَكَأَيِّنْ مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ اللَّهِ
কতো নবী রয়েছেন যাদের সাথে বহু সংখ্যক নেককার বান্দা যুদ্ধ করেছে!
(সূরা আলে ইমরানঃ ১৪৬)

পঞ্চমতঃ হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, ‘আমরা ক্ষতির মধ্যে ছিলাম পরে আপনার মাধ্যমে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়েছি। এই কল্যাণের পর আবার কোনো অকল্যাণ হবে কি?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হ্যা।’ তিনি (রাঃ) বললেন, ‘তার পর আবার কোনো কল্যাণ আসবে কি?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হ্যা, তবে তাতে কিছু ধোঁয়া থাকবে।’ এভাবে কয়েকবার প্রশ্ন করার পর একসময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কোন অকল্যাণ হবে কি না এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন,

نَعَمْ، دُعَاةٌ إِلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ، مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، صِفْهُمْ لَنَا؟ فَقَالَ: «هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا، وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا» قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ؟ قَالَ: تَلْزَمُ جَمَاعَةَ المُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ، قُلْتُ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ؟ قَالَ «فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الفِرَقَ كُلَّهَا، وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ، حَتَّى يُدْرِكَكَ المَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِك

‘হ্যাঁ। একদল লোক জাহান্নামের দরজার দিকে ডাকবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তাদের তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে।’ হুযাইফা (রাঃ) বলেন, “আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাদের বৈশিষ্ট কি?’ তিনি (সাঃ) বললেন, ‘তারা আমাদের মতো হবে। আমাদের ভাষায় কথা বলবে।’ আমি বললাম, ‘আমি যদি সে সময় পাই, তবে আমাকে কি করতে আদেশ করেন?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি মুসলিমদের জামাত এবং তাদের ইমামকে আঁকড়ে ধরো।’ ‘আমি বললাম, যদি তখন মুসলিমদের কোনো জামাত বা ইমাম না থাকে?’ তিনি বললেন, ‘তবে গাছের শিকড় কামড়িয়ে হলেও মৃত্যু পর্যন্ত ঐ সকল দল হতে দূরে থাকো।’” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

হাদীসটির শেষে বলা হয়েছে,

: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ؟
যদি তাদের কোনো জামাত বা ইমাম না থাকে?

এই প্রশ্নের উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি শিকড় কামড়ে হলেও জাহান্নামের দিকে যারা ডাকছে তাদের সাথে মিলিত হয়ো না।’ অর্থাৎ, যখন মুসলিমদের কোনো দল বা জামাত না পাওয়া যায় আমি আবার বলছি যদি মুসলিমদের কোনো দল বা জামাত না পাওয়া যায় তখন বাতিল ফিরকা থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু যদি মুসলিমদের কোনো জামাত পাওয়া যায় যাদের সাথে মিলিত হয়ে দ্বীনের খেদমত করা সম্ভব, তাহলে তাই করতে হবে।
জামাত অর্থ দল। মুসলিমদের জামাত অর্থ মুসলিমদের দল। একদল মুসলিম একত্রিত হয়ে কোন কাজ করতে চাইলে সেই দলটিকে মুসলিমদের জামাত বলা যেতে পারে। তাদের নাম যাই হোক, আর তাদের সংখ্যা যতই হোক। তারা বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হোক বা কোনো স্থানে সীমাবদ্ধ হোক। তাদের কাজ ও দাওয়াত যদি সঠিক হয় এবং যারা জাহান্নামের দিকে ডাকছে তাদের মতো না হয়, তবে তাদের সাথে মিলিত হতে হবে। যেমনঃ আল্লাহ বলেন,

فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا
যখন তোমরা পানি না পাও, তখন পবিত্র মাটিতে তায়াম্মুম করো। (সূরা মায়েদাঃ ৬)

এই আয়াতে অর্থের ব্যাপারে সমস্ত আলেমরা একমত যে, পানি থাকা পর্যন্ত তায়াম্মুম করা যাবে না। তবে পানি যদি নাপাক হয় বা অন্য কোনো দোষে দুষ্ট হয় তবে ভিন্ন কথা। এখন যদি কেউ বলে, সমুদ্র যেহেতু বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত তাই সমুদ্র ছাড়া অন্য কোনো পানি দ্বারা ওযু করা যাবে না তবে তার কথাটি কেমন হবে? তার কথার উত্তরে বলা হবে, ওযু করার জন্য শর্ত হলো পানির প্রয়োজনীয়তা, তা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হোক বা একটি হৃদের পানিই হোক। একইভাবে সত্য পথের দিকে আহবানকারী একদল মুসলিম পাওয়া গেলে তাদের সাথে একত্রে কাজ করতে হবে, তারা বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হোক বা আসহাবে কাহফের মতো কোনো ছোট গুহাতে আশ্রিত হোক। আবু বছীর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবাদের কর্মনীতি থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। জিহাদের জন্য রাষ্ট্র, খিলাফত ইত্যাদিকে যারা শর্ত করেন, তারা সম্পূর্ণ বাড়তি বিষয় যোগ করেন যার কোনো দলীল নেই। এটা ঠিক যে, মুসলিমরা বিশ্বব্যাপী একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কাফেরদের পক্ষ হতে আরোপিত বাধা-বিঘ্নের কারণে বা অন্য কোন কারণে যদি তারা বিশ্বব্যাপী একতাবদ্ধ হতে সক্ষম না হয়, তবে যতদিন একতাবদ্ধ হওয়া সম্ভব না হয়, ততদিন কাফেরদের সুযোগ দিতে হবে- এমনটি নয়। বরং স্থানীয়ভাবে কোনো একজন আমীরের নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়ে কাফেরদের মুকাবিলা করতে হবে, এবং সর্বদা অন্য হক্বপন্থীদের সাথে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমনটি আবু বছীর (রাঃ) ও তার সঙ্গী-সাথীদের ক্ষেত্রে হয়েছিল। তাঁরা আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) সাথে মিলিত হতেই চাচ্ছিলেন, কিন্তু কাফিররা তাঁদের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাঁরা আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বেই সেই বাধাদানকারী কাফেরদের উপর আক্রমণ করতে থাকলেন। জিহাদ নিজেই একটি ওয়াজিব দায়িত্ব। খলীফা না থাকলে যেমন নামাজ, রোযা পরিত্যাগ করা হয় না, তেমনি জিহাদও পরিত্যাগ করা হবে না। ইবনে কুদামা (রঃ) বলেন,

فإن عدم الإمام لم يؤخر الجهاد لأن مصلحته تفوت بتأخيره وإن حصلت غنيمة قسمها أهلها على موجب الشرع
যদি ইমাম না থাকে, তবু জিহাদ পিছিয়ে দেওয়া হবে না। কেননা এর ফলে জিহাদের কল্যাণ থেকে মানুষ বঞ্চিত হবে। যদি কোন গনীমত পাওয়া যায়, তবে মুজাহিদগণ শরীয়ত অনুসারে নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নেবে। (মুগনী)

Related Articles

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − 6 =

Check Also
Close
Back to top button