মস্কো কনফেরেন্সে ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান-এর প্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতি!
২০১৮সালে আমেরিকার সাথে প্রথমবারের মত আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের মস্কোতে হওয়া আলোচনা সভায় আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের প্রতিনিধি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দেন। ২০১৮সালের ৯ই নভেম্বর ‘লং ওয়ার জার্নাল’ নামক গবেষণা সংস্থাটি নিজেদের বিশ্লেষণসহ সেই বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে। গতকাল ৫ই ফেব্রুয়ারী আবারও মস্কোতে আমেরিকানদের সাথে আলোচনায় বসেছেন তালেবান সরকার প্রতিনিধিদল। তাই, সেই একই বিবৃতি গতকাল ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৯, পুনরায় ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের অফিসিয়াল সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা বাংলাভাষী পাঠকবৃন্দের জন্য ‘লং ওয়ার জার্নাল’ ২০১৮সালের ৯ই নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির অনুবাদ এখানে পেশ করছি।
মস্কো সম্মেলনের উদ্বোধনী বিবৃতিতে তালিবান প্রতিনিধি তাঁদের সংগঠনটিকে ৬১ বার ‘ইসলামিক ইমারাহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। এর সাথে তিনি আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই ‘ইসলামিক ইমারাহ’ এর প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছেন। আল-কায়েদা কর্তৃক ৯/১১ এর ঘটনার পর আমেরিকা আফগানে হামলা চালানোর পূর্ব পর্যন্ত আফগানে তালিবানদের যে সরকার ব্যবস্থার প্রচলন ছিল তার নাম ছিল “ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান”। তালিবান প্রতিনিধি এই সভায় জোরালোভাবে জানান যে, আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই “ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান” পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং একমাত্র এটাকেই আফগান জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেনে নিতে হবে।
তালিবানদের এই বক্তব্য ও দাবিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তারা ক্রমাগতভাবে নিজেদেরকেই ‘ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান’ নামে উল্লেখ করে। তারা এই বিষয়টিও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বর্তমান আফগান সরকারের সাথে তারা কোন ধরণের চুক্তি বা ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারাতে যাবেন না। কেননা বর্তমান সরকারকে তারা (তালিবানরা), “পশ্চিমাদের হাতের পুতুল”, ‘‘অবৈধ’’ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘‘অনৈসলামিক’’ বলে মনে করেন। তালিবানরা প্রায় এক দশকেরও অধিক সময় ধরে কতগুলো দাবিদাওয়া পেশ করে যাচ্ছেন। এগুলো হল- তালিবানদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জাতিসংঘের নিগ্রহ তালিকা থেকে সরিয়ে নিতে হবে, তাদের বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে এবং তালিবানদের রাজনৈতিক দপ্তরের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। এই দাবিগুলো মানা হলেই এরপরে তালিবানরা শান্তি আলোচনার ব্যাপারটি আমলে নিবে। একই সাথে তারা আরও একটি বিষয়ে খুব জোর দিয়ে থাকেন; সেটি হল আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হল, আফগান থেকে আমেরিকা ও NATO এর সৈন্যদের সরিয়ে নিতে হবে। এই শান্তি প্রক্রিয়া হবে তালিবানদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী। আর তালিবানরা আমেরিকাকে তাদের(আমেরিকার) আত্মসমর্পণের শর্ত নিয়ে আলাপ আলোচনা করার আহবান জানিয়েছেন।
তালিবানরা আরো দাবি করেন যে, তারা তাদের প্রতিবেশীদের জন্য হুমকির কোন কারণ হবেন না। তবে এটাও তাদের একটা কথার কথা। কারণ তালিবানরা আল-কায়েদাকে তার কাজের জন্য অভিযুক্ত তো করেই না বরং আল-কায়েদা এবং লস্কর-ই-তইয়েবার মত দলগুলোকে তারা সাহায্য করে ও নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তারা আল-কায়েদাকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ শিবির চালানোর অনুমতি দেয়।
FDD এর Long War Journal তালিবানদের এই সমস্যাগুলোর(?) উপরে বিশদ আলোকপাত করেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমেরিকা ও পশ্চিমা অন্যান্য কর্মকর্তা, সামরিক নেতা এবং চিন্তাবিদরা যারা যেকোনো উপায়ে আফগান থেকে সরে আসতে আগ্রহী তারা এই বিবৃতিকে ভুল বুঝছে বা ভুলভাবে প্রচার করছে। তাদের এই ভুল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যে কোনটাই হতে পারে। তারা তালিবান প্রতিনিধির এই বিবৃতিকে এমনভাবে প্রচার করছে যে, তালিবানরা আফগানের বর্তমান সরকারের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে ইচ্ছুক। আফগানিস্তান, এর মানুষজন ও এর আশেপাশের এলাকার জন্য তাদের এই মিথ্যা প্রচারণা বিপদজনক প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিশেষে মস্কো কনফারেন্সে তালিবানদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া তাদের প্রচারণা বিভাগের একটি সাফল্য হিসেবে দেখা যেতে পারে। এ কথা তারা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ‘Voice of Jihad’এ একটি বিবৃতির মাধ্যমে গতকাল প্রকাশও করেছে। এই কনফারেন্সের মাধ্যমে তালিবানরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থানকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার এবং নিজেদেরকে আফগানের একমাত্র এবং সত্যিকার সরকার হিসেবে উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়েছে। এর সাথে প্রকাশ্যেই তারা আমেরিকা ও পশ্চিমাদেরকে আফগানের বহিরাগত এবং বর্বর দখলদার জান্তা হিসেবে আখ্যায়িত করে।
[এখানে শেষ হলো ‘লং ওয়ার জার্নাল’-এর গবেষণা, নিচে তালিবান প্রতিনিধির বিবৃতির অনুবাদ পেশ করা হলো]
মস্কো কনফারেন্সে তালিবান প্রতিনিধির পূর্ণ বিবৃতিঃ
মস্কো কনফেরেন্সে ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ–এর প্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতিঃ
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের। দরুদ ও সালাম রাসুলুল্লাহ ﷺ, তাঁর পরিবার ও সাহাবিগণের প্রতি।
অতঃপর,
সর্বপ্রথম, আমি এই কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী উপস্থিত সকল ভদ্রমহিলা ও মহোদয়গণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা আজকে এখানে আমাদের প্রিয় ভূমি আফগানিস্তান ও এর শোষিত জনগণের চলমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও তাদের মতামত প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছেন। আমি বিশেষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনকে তাদের দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ কনফেরেন্সটির আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমি এখন আপনাদের সামনে আফগানের বর্তমান পরিস্থিতি, সেই সাথে ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান এর অবস্থানের ব্যাপারে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।
গত চার দশক ধরে আফগানে চলমান সংঘাত ও দুর্দশার কারণ নিচে তুলে ধরা হল-
আমাদের প্রিয় ভূমি, এখানকার মুসলিম ও মুজাহিদগণ গত চার দশক ধরে পশ্চিমাদের প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে দগ্ধ হচ্ছে। তাদের বাহ্যিক এবং আত্মিক সম্পদগুলো চুরি ও লুটপাটের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। তাদের অগ্রগতির পথে ক্রমাগত বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। চলমান যুদ্ধের কারণে আফগানের লোকেরা প্রকটভাবে আরও যে দু’টি সমস্যায় পড়েছে তা হল ক্ষুধা ও দারিদ্র। এই সকল সমস্যার মূল কারণ হল বহিরাগতদের অন্যায় আগ্রাসন।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী যে, ইতিহাস সাক্ষী, আফগানের মুজাহিদ জনগণ যুগে যুগে এমন অনেক আগ্রাসনের মুখে তাদের প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধের দ্বারা জবাব দিয়েছে। এর প্রমাণ আমরা বর্তমানেও দেখতে পাই। গত ১৭ বছর ধরে ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তান এর নেতৃত্বে আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমেরিকা যে মুহূর্তে আফগানে একটি ইসলামিক শাসন ব্যবস্থাকে উৎপাটন করার খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে আগ্রাসন চালায়, সে মুহূর্ত থেকে আফগানের অধিবাসীদের শান্তির ও নিরাপদ জীবন একটি দুর্দশার জীবনে পরিণত হয়। দেশটিতে অন্যায় দখলদারিত্ব চালিয়ে তারা কয়েক লক্ষ আফগানকে শহীদ করে, সমসংখ্যক অধিবাসীকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করে এবং তাদের ঘরবাড়ি ও শস্যক্ষেত্রগুলো ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত করে। তারা আফগানবাসীর শত বছরের ভৌগলিক, নৈতিক, জাতিগত, ভাষাগত, ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কলুষিত করে তাদের স্বাতন্ত্র বিলুপ্ত করার মত অপরাধে লিপ্ত হয়।
তারা প্রশাসনিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে ব্যাপকহারে দুর্নীতির প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে দেশের জনগণের শত বছরের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংসের জন্য উঠেপড়ে লাগে। নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তারা মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলার পাশাপাশি সেখানকার পশুপাখিদের জীবন পর্যন্ত বিপন্ন করে তুলেছে। তারা দেশটির বিশুদ্ধ বাতাসকে বিষাক্ত করে তুলেছে এবং এক সময়ের উর্বর ভূমিগুলোকে বিরানভূমিতে পরিণত করেছে। তারা দেশটিকে আবারও মাদকের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। পূর্বে আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের শাসনামলে যেখানে সারা দেশে মাদকাসক্ত ছিল মাত্র কয়েক হাজার, সেখানে আজ মোট জনসংখ্যার ১০% মাদকাসক্ততে পরিণত হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। তারা দেশটাকে আন্তর্জাতিক গুপ্তচরদের আস্তানাতে পরিণত করেছে। তারা পরিকল্পিতভাবে আফগানবাসীর মধ্যে অনাস্থা ও অবিশ্বাসের বীজ বপনের কাজ করে যাচ্ছে। আমেরিকার আগ্রাসন ও দখলদারিত্বের কারণে আফগানবাসী যে অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে জীবনযাপন করছে তার মধ্যে একেবারেই অল্প কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল। আর না বলা অসংখ্য দুর্দশার কথা আমাদের মাঝেই রয়ে গেল।
এখন দেখা যাক এই বিপর্যয় থেকে আফগানের নির্যাতিত জনসাধারণকে বের করে আনার উপায়গুলো –
শান্তি প্রতিষ্ঠাঃ
যে কোনো সমাজের সর্বপ্রথম চাহিদা হচ্ছে শান্তি। বর্তমানে নির্যাতনের শিকার আফগানিদের সর্বপ্রধান চাওয়া হচ্ছে শান্তি। শান্তি ছাড়া একটি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা খাতে উন্নতি করা অসম্ভব। একটি দেশের উন্নতির জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত হল দেশটি শান্তিতে থাকতে হবে, যুদ্ধ বিগ্রহ মুক্ত থাকতে হবে। যাইহোক, শান্তি কোন কথা বা স্লোগানের মাধ্যমে আসে না। এর জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ। বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা দেখছি আমেরিকা ও তাদের আজ্ঞাবহ পুতুল সরকার আফগানে শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেই যাচ্ছে। সে অনুযায়ী কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যখন একটি দেশের অধিবাসীদের থেকে তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয় তখন সেখানে সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য যুদ্ধ বিগ্রহ বাড়বে এটাই তো স্বাভাবিক।
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য করণীয়-
শান্তি আলোচনা শুরুর আগে, কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যা শান্তির জন্য অপরিহার্য এবং পারস্পরিক আস্থা তৈরির পদক্ষেপের অংশ । যেমন:
১. নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারঃ
শান্তি চুক্তি ও নিষেধাজ্ঞা তালিকা দুইটি পরস্পরবিরোধী বিষয়। এই দুইটি বিষয়ের কাজ একসাথে চলতে পারে না। এটাকে ক্ষমতাসীনরা নানান সময়ে ইসলামিক ইমারাহ এর নেতাদের উপর চাপ প্রয়োগের একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই শান্তি চুক্তির ব্যাপারে কথা বলা শুরু করার আগে এই প্রহসনমূলক নিষেধাজ্ঞা তালিকাকে বাতিল করতে হবে। যেন আমাদের ইসলামিক ইমারাহ এর শীর্ষ নেতারা যেকোনো ধরণের শান্তি আলোচনার জন্য পৃথিবীর যেকোনো স্থানে আলোচনায় বসতে পারেন।
এছাড়া আরও একটি বিষয় এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে, উভয় পক্ষ যেন ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিয়ে স্বাধীনভাবে কোন ধরণের চাপ ছাড়া শান্তি আলোচনায় বসতে পারে। একপক্ষ স্বাধীন অবস্থায় থাকবে আর অপরপক্ষের নেতারা নিষেধাজ্ঞা তালিকার চাপে থাকবে, এভাবে শান্তি আলোচনা হতে পারে না। দুইপক্ষের মাঝে এমন ব্যবধান বিদ্যমান রেখে কোন ফলপ্রসূ শান্তি আলোচনা হওয়া সম্ভব না । এ অবস্থায় শান্তি আলোচনা করলে তা থেকে উপকারী কোন ফলাফল আসা সম্ভব না।
২. বন্দীদের মুক্তিদানঃ
শান্তি আলোচনার পথের আরেকটি বাধা হল নির্বিচারে আফগানী ও মুজাহিদদের অন্যায়ভাবে আটক করে তাদের উপর নির্যাতনের স্টিম-রোলার চালানো। আমেরিকা ও তার আজ্ঞাবহ কাবুল সরকার হাজার হাজার আফগানী ও মুজাহিদদেরকে সকল ধরণের আইন অমান্য করে, অন্যায়ভাবে আটক করে, অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব যে, একই ব্যক্তি এক দিকে শান্তি আলোচনার স্লোগান তুলে মিডিয়ার চোখে ভাল সাজছে আবার সে ব্যক্তিই অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ও মুজাহিদদের আটক করে নির্মম নির্যাতনের মত ঘৃণ্য কাজ করে বেড়াচ্ছে? এটা শান্তি আলোচনার পথে একটি উল্লেখ্যযোগ্য অন্তরায়। যদি সত্যি সত্যি কেউ শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয় তাহলে তাকে অবশ্যই সমস্ত বন্দী মুজাহিদিন এবং সকল সাধারণ আফগানী যাদেরকে মুজাহিদদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে এই তুচ্ছ অভিযোগে বন্দী করা হয়েছে, তাদের সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
৩. একটি স্থায়ী অফিস প্রতিষ্ঠাঃ
শান্তি আলোচনাকে ফলপ্রসূ করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা এবং যোগাযোগের জন্য একটি স্থায়ী অফিস এখন সময়ের দাবী। বর্তমানে আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের এই ধরণের কোন স্থায়ী অফিস নেই। শান্তি আলোচনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিতভাবে আলোচনার জন্য একটি স্থায়ী অফিসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এছাড়া শান্তি আলোচনার বিষয়ে জনগণ ও গণমাধ্যমকে জানানো, জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমের বিভিন্ন বিষয়ের সংশয় নিরসনের জন্য একটি স্থায়ী অফিস এবং তার স্বীকৃতি প্রয়োজন। যার ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা প্রদানকারী মাধ্যমগুলো আর এই দাবী তুলতে পারবে না যে, আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের অফিসের ঠিকানা জানা নেই।
৪. আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো বন্ধ করাঃ
আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রদের সহযোগিতায় আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের বিরুদ্ধে নোংরা প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের বিরুদ্ধে এমন এমন মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয় যা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য বাধা স্বরূপ। এখানে কিছু আন্তর্জাতিক গুপ্তচরদের গুপ্ত সংগঠন রয়েছে যারা ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া, ছাত্র- ছাত্রীদের উপর এসিড ছুঁড়ে মারা, বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে রাস্তার পাশে গাড়ি বোমা ফাটানো, বেসামরিক লোকদের কিডন্যাপ করাসহ আরও অন্যান্য জঘন্য কাজ করে সেগুলোর দায় ইমারাহ এর উপর চাপিয়ে দেয় । এরপর তাদের নিজেদের ঘটানো এই সব জঘন্য কাজের মাধ্যমে ইমারাহ এর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালায়। পরবর্তীতে যখন এই ঘটনা গুলোর কোন তদন্ত হয় এবং সত্য প্রকাশ পেয়ে যায় তখন সেই তদন্তের ফল সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়না। এটাই আসলে প্রমাণ করে যে, এই জঘন্য কাজগুলো আসলে কখনই মুজাহিদদের নয় বরং এগুলো সেই জঘন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হীন, নিচ এবং বিকৃত চিন্তাধারার প্রকাশ। তারা মনে করে এই হীন চক্রান্ত করে তারা আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতকে সাধারণ জনগণ এবং বহির্বিশ্ব থেকে আলাদা করে ফেলতে পারবে। তাই আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যে শান্তি প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে অবশ্যই এরকম ভিত্তিহীন এবং জঘন্য মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে। কারণ এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডার কারণে সত্য প্রকাশ ও শান্তি প্রক্রিয়া উভয়ই ব্যাহত হচ্ছে।
শান্তি প্রক্রিয়ার পথে বাধা সমুহঃ
১.বহিরাগতদের দখলদারিত্বঃ
প্রকৃত শান্তির জন্য সাধারণ জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান জানাতে হবে, আমাদেরকে দেখতে হবে যে এখানকার জনগণ কী চায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, আফগানবাসী কখনোই কোন দখলদারদের সামনে মাথা নত করেনি। বর্তমানে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের অন্যায় আগ্রাসন সকল সমস্যার মূল কারণ । তাই আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এই অন্যায় দখলদারিত্বের ইতি টানতে হবে। “আফগান থেকে দখলদার সৈন্যদের অপসারণ” ও “আফগানের শান্তি প্রতিষ্ঠা” একটির সাথে অপরটি জড়িত । কারণ দখলদার সৈন্যদের সরিয়ে নিলেই আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে বিশ্ববাসী আফগানের লোকজনকে শুধু স্বপ্নই দেখিয়ে যাচ্ছে। এর বাস্তবায়নের জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
আমরা দেখতে পাই যে, আমেরিকা ও তার কিছু মিত্র আফগানে শান্তি প্রচেষ্টার নামে কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে না গিয়ে বরং আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের আত্মসমর্পণের ব্যাপারেই তারা অধিক উৎসাহী। তারা চায় যে, প্রথমত তারা যুদ্ধক্ষেত্রে ইসলামিক ইমারাহকে পরাজিত করবে। এর ফলে বিজয়ী দল হিসেবে ইসলামিক ইমারাহ এর উপর তারা কর্তৃত্ব করতে পারবে এবং শান্তি আলোচনায় ইমারাহ এর উপর নিজেদের পছন্দের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু এই চিন্তা তাদের জেনে বুঝে নিজেদেরকে ফাঁকি দেওয়ারই নামান্তর। বাস্তবতার সাথে তাদের এই দিবাস্বপ্নের কোন মিল নেই। আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের ব্যানারে আফগানের মুজাহিদরা দৃঢ়তার সাথে তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। আমেরিকা ও তার দোসরদের একথা মনে রাখা উচিত যে, জাতিগত শক্তির সামনে পৃথিবীর কোন শক্তিই টিকতে পারে না। একইভাবে আফগানের চলমান সমস্যার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্ম ও অবাস্তব কৌশল কোন সুফল বয়ে আনবে না। আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় সদিচ্ছা ও বাস্তবতার আলোকে সুচিন্তিত কৌশল যার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো।
২.ইসলামিক শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতিঃ
আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ইসলামের উপর ভিত্তি করে একটি স্থিতিশীল ইসলামিক শাসনব্যবস্থা প্রয়োজন। এই শাসন ব্যবস্থাটি হবে একটি পরিপূর্ণ ইসলামী শাসনব্যবস্থা এবং একই সাথে আফগান মূল্যবোধের প্রতিফলন। আর এমন একটি ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা অবশ্যই আফগানীদের কাছে পছন্দের হবে কারণ তাদের ধর্ম ইসলাম। এমন একটি শাসন ব্যবস্থার অধীনেই আফগানের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জাতীয় ঐক্য সম্ভব।
৩. শান্তি প্রক্রিয়া ও এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তাঃ
যে কোন শান্তি প্রক্রিয়া কার্যকর হওয়ার জন্য এর স্বপক্ষে নিশ্চয়তা প্রয়োজন। এই নিশ্চয়তা ব্যতীত শান্তি প্রক্রিয়ার পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। তাই আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ, অন্যান্য পরাশক্তি ও ইসলামিক কনফারেন্স এর মুসলিম দেশগুলোকে এই নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে যে, শান্তি চুক্তি হলে পরে তার বাস্তবায়নও করা হবে।
৪. বর্তমানে প্রচলিত কুফুরি সংবিধানঃ
সংবিধান প্রতিটি রাষ্ট্রের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয় বিষয়। সংবিধান ছাড়া দেশ ও জাতির উন্নয়নের পথে অনেক সমস্যা ও বাধার মুখোমুখি হতে হয়। সংবিধানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের রূপরেখা নির্ধারণ ও অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয় । এটি সরকার ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে তা ব্যাখ্যা করে। সরকারের প্রধান তিনটি শাখার কার্যক্রম পরিচালনা, পর্যবেক্ষণ ও ভারসাম্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। সংবিধান এ সকল শাখার গঠন ও ক্ষমতার পরিমাণ কেমন হবে তা নির্ধারণ করে। এছাড়াও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক রাজনীতির কৌশল কেমন হবে তা এই সংবিধানের আলোকেই নির্ধারিত হয় ।
কাবুল প্রশাসনের বর্তমান যে সংবিধান তা আমাদের কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তারা এটি পশ্চিমাদের থেকে নকল করে দখলদার বাহিনীর সহায়তায় আফগানের মুসলিম জনগণের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিয়েছে। এই সংবিধান কখনোই আফগানীদের কাম্য নয় এবং এটা আফগানীরা কখনও মেনেও নিবে না। এই সংবিধানের মূলনীতি গুলো আসলে কিছু ফাঁপা বুলি এবং পরস্পরের সাথে সাংঘর্ষিক । কাবুল সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রায়ই এই সংবিধানের আইন ভঙ্গ করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই প্রশাসন নিজেই সংবিধান বিরোধী। তাই বলা যায় বর্তমান সংবিধান আফগানের জনসাধারণের শান্তির পথে নিজেই একটি বাধা।
তাই আফগানিস্তান ইসলামী ইমারত মনে করে যে, এই দেশ ও এই দেশের সম্মানিত জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য ইসলামের উপর ভিত্তি করে একটি সংবিধান হওয়া উচিত। এই সংবিধানে ইসলামকে মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে এর পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ঐতিহাসিক অর্জনকেও গুরুত্বের সাথে নিবে। এটা এমন একটি সংবিধান হবে যা সাধারণ মানুষের মর্যাদা, জাতীয় মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে এবং দেশের সকল নাগরিকদের সকল অধিকারের নিশ্চয়তা দিবে। এমন একটি সংবিধানের পূর্বশর্ত হল দখলদারদের থেকে স্বাধীনতা। আর এই খসড়া সংবিধান প্রস্তুতের দায়িত্ব দিতে হবে আফগানের আলেম উলামাদের উপর।
৫. আমেরিকার দিক থেকে শান্তি প্রক্রিয়ার পরিবর্তে যুদ্ধের পদ্ধতি নির্ধারণের দিকে অধিক মনোযোগী হওয়াঃ
আমরা দেখতে পাই যে দখলদার আমেরিকা ও তাদের মিত্ররা প্রায়ই আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি আলোচনার কথা বলে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তাদের কার্যপ্রণালীতে সে কথার কোন ছাপ পাওয়া যায় না। মুখে শান্তি আলোচনার কথা বললেও বাস্তবে তারা অবিরতভাবে স্থলপথে ও আকাশপথে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবেই তারা আফগানে শান্তি চায় কিনা তা তাদের সাম্প্রতিক কৌশল গুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়। নিজেদের দখলদারিত্ব শেষ করে সৈন্যদের তুলে নিয়ে আফগানের শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজটি আফগান জনগণের উপর ছেড়ে দিলে বোঝা যেত যে, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী । কিন্তু বাস্তবে এ ধরণের কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে তারা সম্প্রতি আরও বেশি পরিমাণে সৈন্য আফগানে নিয়োজিত করেছে এবং আফগানের লোকদের হত্যা ও নির্যাতন করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে । এই সৈন্যরা রাতের বেলায় সাধারণ মানুষের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাদেরকে আটক করে, নির্যাতন ও হত্যা করে। পাশাপাশি তারা রাতের বেলায় বিমান হামলার পরিমাণও বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে বেসামরিক আফগানদের জীবন দিনের পর দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। আফগান ও এর অধিবাসীদের বিরুদ্ধে তারা নিত্যনতুন প্রকল্প তৈরি ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্বের চাইতে আরও খারাপ পরিবেশ তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে আফগানকে নিয়ে আশেপাশের দেশগুলোর উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এতেই বুঝা যায় যে, আমেরিকানদের আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোন ইচ্ছাই নেই। তারা যেটা চাইছে তা হচ্ছে আফগানের নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করতে ও আফগানকে ধ্বংস করে দিতে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এ সকল কাজে তাদেরকে কাবুল সরকার সব ধরণের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
আফগানিস্তান ইসলামী ইমারত সেই প্রথম থেকেই বলে আসছে যে আফগানিস্তানের এই সমস্যা যুদ্ধ, সংঘাত, বল প্রয়োগ বা অর্থের মাধ্যমে সমাধান করা যাবে না। বরং এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একটাই উপায় আর তা হল অন্যায় দখলদারিত্ব শেষ করে আফগানের ভবিষ্যৎ আফগানের লোকজনের হাতেই তুলে দিতে হবে ।
ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান আগেও বলেছে এখন আবার এই মঞ্চ থেকে সারা পৃথিবীর উদ্দেশ্যে জানাচ্ছে যে, আফগানে আমেরিকার দখলদারিত্ব শেষ করার জন্য এবং এর জন্য কার্যকর পদ্ধতি ও কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আমরা আমেরিকানদের সাথে মুখোমুখি আলোচনায় বসতে রাজি আছি । আমরা আশা করবো যে আমেরিকা তার এই সংঘাত ও বল প্রয়োগের রাস্তা পরিহার করে যুক্তি ও প্রজ্ঞার রাস্তা অবলম্বন করবে। একটু জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কাজে লাগালেই তারা বুঝবে যে এই পথে তারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করছে, দেশের জনগণ এবং একই সাথে তার নিজের সন্তানদের (আমেরিকার সৈন্যদের) হত্যা করছে ও হত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের উচিত আফগানবাসীর সম্মানার্থে তাদের হাতেই তাদের ভবিষ্যৎ ছেড়ে দেওয়া।
যে কোন ধরণের বোঝাপড়া ও আলোচনার জন্য ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের দরজা সবসময় উন্মুক্ত আছে। যে কেউ সত্যিকার অর্থে আফানিস্তানের ব্যাপারে শান্তি আলোচনায় অগ্রসর হতে চায় তার জন্য উচিত হবে কাবুল প্রসাশনকে সামনে রেখে কথা না বলে সরাসরি ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের সাথে আলোচনা করা।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের বিবৃতিঃ
পবিত্র ঈদ- উল- ফিতর উপলক্ষে ৩ দিনের যুদ্ধবিরতিঃ
ইসলামিক ইমারাহ কর্তৃক পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ৩ দিনের যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল তাতে একটি বিষয় সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, আফগানে আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমগ্র আফগানবাসী এক নেতৃত্বের অধীনে রয়েছে। তাছাড়া এই ঘটনায় ইসলামিক ইমারাহ এর সামরিক ও বেসামরিক উভয়দিকে শক্তিশালী শৃঙ্খলার দিকটিরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর আগে পশ্চিমারা একটি প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল যে, আফগানে ২০ টির মত দল রয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে সমগ্র আফগান যে এক নেতৃত্বের অধীন এবং সকলেই তাদের নেতার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তা আবার প্রমাণিত হয়েছে।
আফগানে শান্তি প্রক্রিয়ার শত্রু পশ্চিমারা অনেক সময় বলে থাকে আফগানে চলমান যুদ্ধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ নয় বরং তা আফগানীদের নিজেদের মধ্যে করা গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধ বিরতির ফলে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে আফগানে নিজেদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আমেরিকা ও তার দোসরদের আফগানে আগ্রাসনই আফগানের মূল সমস্যা। যতদিন আমেরিকার সৈন্যরা আফগানে থাকবে ততদিন এই যুদ্ধ চলতে থাকবে। তাই আফগানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই এই বহিরাগতদের আফগান থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
ইসলামিক ইমারাহ প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীলঃ
‘ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান’ আফগানের স্বাধীনতার জন্য বৈধভাবে চেষ্টা করে থাকে। আর অন্য জাতির মতই, আফগানিস্তানের মুসলিম জাতির জন্য স্বাধীনতা একটি স্বাভাবিক এবং মানবিক অধিকার। নিজের দেশের স্বাধীনতা কামনা করা এবং নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা কখনোই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে পারে না। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, অন্য কোন দেশে ধ্বংসাত্মক কাজ চালানোর কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। বিগত ১৭ বছরে আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে একথা প্রমাণ করেছি যে, আমরা কোনভাবেই প্রতিবেশী অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাই না। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে কোন ধরণের হামলা বা অনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর ব্যাপারে আমরা আফগানের ভূমি কাউকে ব্যবহার করতে দেই না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আফগানিস্তানের সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধান চাই। আমেরিকাকে অবশ্যই তাদের অবৈধ খবরদারী বন্ধ করতে হবে এবং আফগানের বিষয়টি আফগানের জনগণের উপর ছেড়ে দিতে হবে। আফগানের জনগণের আশ্বস্থ একটি সরকার ব্যবস্থার কাছে শাসনভার ন্যস্ত করার ক্ষমতা তাদের উপর ছেড়ে দিতে হবে। স্বাধীনতা পাওয়ার পর আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। একই সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোসহ পৃথিবীর যেকোন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের পথে আমরা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চাই।
মাদক উৎপাদন ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞাঃ
২০০১ সালে আমেরিকার অন্যায় আগ্রাসনের আগে ‘ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের’ শাসনামলে আফিম চাষ কমিয়ে শূন্য করা হয়েছিলো এবং সারা আফগানে হেরোইন আসক্ত ছিলো প্রায় শূন্যের কোঠায়। ২০০১ সালে আফগানে আমেরিকার অন্যায় আগ্রাসনের পর, আফিমের চাষ আগে যেখানে ছিল শূন্য সেখান থেকে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৩২৮ হাজার হেক্টর জুড়ে আফিম চাষ। আর গত ১৭ বছরের আগ্রাসনের কারণে এখন মাদকাসক্ত লোকের সংখ্যা ৩ মিলিয়নে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের Counter-Narcotics Organization এর রিপোর্ট অনুযায়ী কেবল ২০১৭ তেই মাদকদ্রব্যের উৎপাদন বেড়েছে ৮৭% আর চাষ বেড়েছে ৬৩%। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৯০০০ মেট্রিক টন মাদকদ্রব্য উৎপাদন হচ্ছে আফগানে। ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান এই মাদকদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও ব্যবহার কখনোই সমর্থন করে না। আর তাই আমেরিকা এবং তার মিত্ররা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটালে ইসলামিক ইমারাহ মাদকের উৎপাদন ও ব্যবহার আবারও শূন্যতে নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর। আর এই কাজের জন্য ইসলামিক ইমারাহ, আফগানের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে যেকোনো ধরণের সহযোগিতার আদান-প্রদান এবং সমন্বয় সাধনের জন্য প্রস্তুত আছে।
বেসামরিক লোকদের ক্ষয়ক্ষতি বন্ধ করাঃ
আমরা সম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি যে আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া এই আগ্রাসী যুদ্ধের কারণে সাধারণ জনগণের হতাহতের পরিমাণ আগের চাইতে অনেক বেড়ে গেছে। আফগানের সাধারণ মানুষদের এই দুরাবস্থা শুধু আমাদেরকেই না বরং যাদের সামান্য মানবতাবোধ আছে তাদের সবাইকেই ব্যথিত করে। আফগানের সকলকেই আমরা আমাদের আত্মা ও দেহ মনে করি। তাই যেকোনো আফগানবাসীর কষ্ট মানে তা আমাদেরই কষ্ট।
এমনকি আমাদের সম্মানিত নেতা আমীরুল মু’মিনিন শায়খ হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিজাহুল্লাহ) তাঁর ইদ বার্তায় জনসাধারণ হতাহত হওয়ার ঝুঁকি আছে এরূপ জায়গায় অপারেশন পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে মুজাহিদিনকে দৃঢ় নির্দেশনা দিয়েছেন। তাছাড়া, ইসলামী ইমারত ‘‘জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি নিরোধ’’ নামে আলাদা একটি স্বাধীন বিভাগই চালু করেছে, যার কাজই হবে জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো। এই কমিশনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক প্রদেশে প্রতিনিধি প্রেরণ করা হয়েছে যাঁরা খুব কাছ থেকে এবং সূক্ষ্মভাবে ঘটনাসমূহ তদন্ত করে থাকেন। বছরজুড়ে এই কমিশনটি জনসাধারণের হতাহত হওয়া সম্পর্কে কয়েকবার গ্রহণযোগ্য রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে।
প্রায়ই, সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকায় ইসলামী ইমারত আফগানিস্তান তাদের সামরিক অপারেশন স্থগিত রাখে। তবে, আমেরিকা এবং তাদের মিত্ররা জনসাধারণের বাড়ি-ঘরে রাত্রিবেলা হামলা চালায়, নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে এবং জনসমাগমের স্থানে ভারী যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে। এমনকি সন্দেহের উপর ভিত্তি করে শহরাঞ্চল থেকে নিরপরাধ লোকদের গ্রেফতার করে এবং পরে শাস্তি ও অত্যাচারের মাধ্যমে তাদেরকে হত্যা করে দেয়। এখন, আমেরিকার নতুন নীতিতে, বোমাবর্ষণ ও রাত্রকালীন হামলা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সেভাবেই বেড়েছে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা। অথচ, অধিকাংশ মিডিয়াই এই সকল রিপোর্ট এবং ঘটনাবলি প্রকাশ করে না, যার কারণে এগুলো অনিবন্ধিত রয়ে যায়।কিছু সংবাদমাধ্যম এবং ব্যবস্থাপনা বেসামরিক হতাহতের আসল ঘটনা লুকানোর চেষ্টা করে, যার কারণে অপরাধীরা তাদের অপরাধ কর্ম চালিয়ে যেতে আরো সাহস পায়।
আমেরিকার Special Inspector General for Afghanistan Reconstruction অথবা SIGAR বলেছে, ২০১৮ সালে প্রকাশিত তাদের তদন্ত অনুযায়ী, আমেরিকা সাম্প্রতিক সময়ে বোমা হামলা অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। কেবল ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসেই আমেরিকা আফগানে ১২০০ এর অধিক বোমা হামলা চালিয়েছে। এপ্রিল ২, ২০১৮ তে আফগানের কুন্দুয প্রদেশের দাস্ত- এ – আর্চি এলাকার এক মাদরাসায় আমেরিকান বর্বররা বিমান হামলা চালায়। এতে প্রায় ১০০ জন হাফিজে কুরআন শিশু শহীদ হয় এবং আরও প্রায় ১০০ জনের মত আহত হন। এটা ছিল বিভীষিকাময় ঘটনাগুলোর একটি। গত ১৭বছর ধরে, বাড়ি-ঘর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে এ ধরণের শত শত হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে ইসলামী ইমারত আফগানিস্তান নিম্নোক্ত প্রাকটিক্যাল পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে:
১. জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে নিয়মিত আলেমদের দেওয়া দিকনির্দেশনা মুজাহিদিনের কাছে পৌঁছানো হয় এবং এই বিষয়ে আলাদা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
২. সময়ে সময়ে জনসাধারণ হতাহতের ঘটনা তদন্ত করতে এবং অপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করতে প্রতিনিধিদল মুজাহিদিনকে পরিদর্শন করতে যান।
এখানে প্রসঙ্গত বলে রাখতে চায় যে, দেশ ও জনগণের প্রয়োজনীয়তা ও সমৃদ্ধির জন্য এবং আফগানীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য ‘ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান’ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। এই অবকাঠামোর আওতায় রয়েছে ব্রিজ, সুড়ঙ্গ, বাঁধ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেল ও খনিজ পরিশোধন কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদ, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ক্লিনিক, হাসপাতাল ইত্যাদি। এগুলোকে আমরা আফগান জনগণের জাতীয় ও সরকারী সম্পত্তি মনে করি ও এগুলোর নিরাপত্তা ও দেখাশোনা করা আমরা আমাদের দায়িত্ব মনে করি। এর পাশাপাশি আমরা আফগানিস্তান ও এর জনগণের সার্বিক উন্নতির জন্য ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষাকেও প্রয়োজনীয় মনে করি।
মানবিক সহায়তাঃ
বর্তমানে ‘ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান’ একদিকে আফগানকে দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে অপরদিকে ইমারাহ এর নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে মানুষের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, অন্যান্য সকল সময়ের চেয়ে আফগান জাতির মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন বেশি। এই প্রয়োজন পূরণের জন্য, ইসলামি ইমারাহ অফ আফগানিস্তান বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংগঠন, দেশীয় ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন মানবিক সাহায্য প্রদানকারী এনজিওগুলোর সরবরাহ করা মানবিক সাহায্যগুলোর নিরাপত্তা প্রদান করে কেবল এতটুকুই নয়, একই সাথে তাদেরকে এই আহবান জানায়, তারা যেন এই সমস্ত মানবিক সাহায্য নিয়ে মানবতা, সহানুভূতির ভিত্তিতে ইসলামী ইমারতের নিয়ন্ত্রণাধীন সেই সমস্ত অভাবী এবং দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় যাদের মানবিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরী।
ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে এই সকল মানবিক কর্মকাণ্ড করার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর প্রমাণ হল ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের আমিরুল মুমিনিন গত ঈদে তাঁর ভাষণে মানবিক সাহায্য প্রদানকারী এনজিওগুলোকে ইসলামী ইমারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে আসতে বলেছেন এবং তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
নারী অধিকারঃ
‘ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান’ একটি মুসলিম সমাজ গঠনের জন্য নারীদেরকে অপরিহার্য মনে করে এবং ইসলাম তাদেরকে যে সকল অধিকার দিয়েছে সেগুলো পূরণ ও বাস্তবায়নে ইমারাহ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ইসলাম নারীদেরকে সকল মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে, সেগুলো হল- ব্যবসা ও এর মালিকানা, উত্তরাধিকার, শিক্ষা, কাজ করা, নিজের স্বামী পছন্দ করা, সকল দিক থেকে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং উত্তম জীবন যাপনের অধিকার । এছাড়াও মহানবী ﷺ তাঁর জীবনের শেষ দিকেও নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন । ইসলাম নারীদেরকে এমন সকল অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়, যা তাকে জাহেলিয়াতের অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে বের করে জ্ঞান, নৈতিকতা ও মর্যাদার উচ্চতম পদে আসীন করে।
এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে আফগানে আমেরিকানদের দখলদারিত্বের কারণে নারীর মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করা কষ্টসাধ্য। তথা-কথিত নারী অধিকার কর্মীরা আজ ১৭ বছর ধরে আফগানে অবস্থান করছে। এই সময় নারীদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কোটি কোটি ডলার আসলেও নারীদের অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। আফগানিস্তানে এখনো চিকিৎসার অভাবে গর্ভকালীন মাতৃ-মৃত্যুহার পৃথিবীর অন্যান্য যেকোনো দেশের চাইতে বেশি। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে এখানে বিকৃত ও প্রতিবন্ধী শিশু জন্মানোর হার পৃথিবীর যেকোনো দেশের চাইতে বেশি। আফগানিস্তান পৃথিবীর এমন একটা দেশ যেখানে নারীদের কাঙ্ক্ষিত জীবন/ গড় আয়ু মাত্র ৪৫ বছর। এটা পৃথিবীর উল্লেখ্যযোগ্য দেশগুলোর একটি যেখানে প্রায় ১ মিলিয়ন বিধবা রয়েছে। বিগত ১৭ বছরে নারীর উন্নয়ন ও নারী অধিকার বাস্তবায়নের নামে অনেক টাকা আসলেও দুর্নীতির কারণে তার কিছুই আফগানের নারীদের কাজে আসেনি। নারীদের অধিকারের স্লোগান তোলা নেতারাই এই টাকা নিজেদের পকেটে পুরেছে।
নারী অধিকারের নামে এখানে অশ্লীলতা ছড়ানো ও ইসলাম বিরুদ্ধ কাজের উস্কানি দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। এমন এমন নাটক, ড্রামা সিরিয়াল এর প্রচার চালানো হচ্ছে যেগুলো আফগান সংস্কৃতির সাথে যায় না, ইসলাম ও মুসলিমরাও সমর্থন করে না। এসকল প্রোগ্রামের মাধ্যমে নারীদেরকে বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ ও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নারী অধিকারের নামে আফগান নারীদের উপরে এসব অনৈতিক এবং আফগান ইসলামী সংস্কৃতি বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডগুলো চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের শুরু থেকেই নারী অধিকারের ক্ষেত্রে একটি ব্যাপক ও স্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে । ইসলামিক ইমারাহ এর মুজাহিদরা প্রথমত ইসলামের প্রতি আস্থাশীল ও দ্বিতীয়ত আফগানিস্তানের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই মূল্যবোধের ভিতরে থেকে নারীদের সমস্ত অধিকারের ব্যাপারে ইসলামিক ইমারাহ অত্যন্ত সচেতন এবং বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইসলামিক ইমারাহ এমনভাবে নারীদের অধিকারের সুরক্ষা দিতে চায় যেন আফগানের নারীরা প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় এবং একই সাথে তাদের মানবিক মর্যাদা, আফগানের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যও যেন হুমকির মুখে না পড়ে। সেই সাথে ইসলামিক ইমারাহ নারী অধিকারের নামে যে সকল শয়তানী রীতিনীতির প্রচলন আছে এবং পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করা নারী অধিকার যেগুলো ইসলাম সমর্থন করে না সেগুলো নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। এর মাধ্যমে ইসলামিক ইমারাহ নারীদেরকে একটি নিরাপদ পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে।
স্বাস্থ্য সেবাঃ
ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের একটি স্বতন্ত্র ‘স্বাস্থ্য কমিশন’ রয়েছে। এই কমিশন পুরো দেশব্যাপী কাজ করে। দেশের প্রতিটি প্রদেশ ও প্রতিটি জেলায় এর প্রতিনিধি রয়েছে। এই কমিশন একদিকে ইমারাহ এর অন্তর্গত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখে থাকে । অন্যদিকে স্বাস্থ্য সেবা দানকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান গুলোকে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজটিও করে থাকে।
ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান মিডিয়াতে এবং বিভিন্ন কনফারেন্সে বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধিদের সাথে মুখোমুখি বৈঠকে একথা জানিয়েছে যে ইমারাহ স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে নিরপেক্ষ হিসেবে গণ্য করে। উভয় পক্ষের যুদ্ধে আহত সৈন্য এবং বেসামরিক লোকজনদেরকে জরুরীভাবে হাসপাতালে নিয়ে কোন ধরণের বৈষম্য ছাড়া চিকিৎসা করতে হবে। এই বিষয়ে ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা, যেমন- DWB (Doctors without Borders) এবং ICRC এর সাথে চুক্তি রয়েছে। ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান সকল ধরণের মানবিক সাহায্য দাতা সংস্থা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এই আহবান জানাচ্ছে যে, তারা যেন কাবুল সরকার ও আগ্রাসী বাহিনীর প্রতি এই আহবান জানায় যে তারাও যেন বন্দী ও যুদ্ধাহতদের সাথে এমন আচরণ করে যেমনটা ইসলামিক ইমারাহ তাদের ( আমেরিকা ও NATO ) সৈন্য ও যুদ্ধাহতদের সাথে করে থাকে।
ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান তার নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা এবং এগুলো চালানোর জন্য লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল দখলদার সৈন্যরা ক্রমাগতভাবে এই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বোমা হামলা চালাচ্ছে। এ কারণে ইমারাহ এর নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলে বেশ কয়েকবার হাসপাতাল তৈরি করার পরও বোমা হামলার কারণে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি আমাদের এলাকাগুলোতে NGO দের দ্বারা পরিচালিত হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতেও এই দখলদারেরা বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। কুন্দুযের Doctors without Borders (MSF) এর হাসপাতাল এবং ওয়ারদাক প্রদেশের হাসপাতালে হামলাই প্রমাণ করে যে দখলদার সৈন্যরা হাসপাতালগুলোকে লক্ষ্য করেই বোমা হামলা চালায়।
ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের সাথে সম্পর্কিত লোকদের ব্যাপারে কিছুদিন আগে বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এই বিবৃতিতে মুজাহিদদের নসিহত করা হয়েছে তারা যেন এই দুই কাজের সাথে সম্পর্কিত লোকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করেন এবং তাদেরকে যথাসম্ভব নিরাপত্তা প্রদান করেন যেন তারা তাদের সাধ্যমত আফগান জনগণের জন্য কাজ করে যেতে পারে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে দখলদার সৈন্যরা আমাদের হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে আক্রমণের নিশানা বানায়, অ্যাম্বুলেন্সে বহন করা আহতদের তারা বন্দী করে নিয়ে যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের বন্দী করে নিয়ে যায়। জঘন্য ব্যাপার এই যে, তারা তথ্য পাবার আশায় নির্মম নির্যাতন চালালেও সামান্য জরুরী চিকিৎসাটুকু পর্যন্ত সরবরাহ করেনা। দীর্ঘদিন বন্দী থাকার পরেও তারা বন্দীদের শারীরিক বিভিন্ন সাধারণ রোগগুলোর চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়না।
ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান এই ফোরামে আবারও জানিয়ে দিচ্ছে যে স্বাস্থ্যখাতে নাগরিকদের যে সকল অধিকার পাওনা তার ব্যাপারে ইমারাহ সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে এবং এই সেবা সকল নাগরিককে দেওয়ার ব্যাপারে ইমারাহ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আহবান জানাই তারা যেন দখলদার আমেরিকান সৈন্য ও কাবুল সরকারকে ২ টি বিষয় মেনে নেওয়ার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করেন।
১. তারা যেন ন্যুনতম মানবিক অধিকারগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখে ।
২.তারা যেন ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোতে স্থাপিত হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে তাদের বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করে।
আমরা বৈদেশিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে আহবান জানাব তারা যেন সমগ্র আফগানের লোকদের চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা প্রদানে বৈষম্য না করেন । আমরা আরও আশা করবো যে, আন্তর্জাতিক সেবা দানকারী সংস্থাগুলো ইসলামিক ইমারাহ এর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোর ব্যাপারে একটু বিশেষভাবে খেয়াল করবেন কেননা শহরাঞ্চলের আফগানদের তুলনায় এই অঞ্চলের আফগানদের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ ।
জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত যেকোনো ধরণের সহযোগিতার জন্য ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান এর পূর্ণ সহযোগিতা আছে। এর ফলে আমরা আশা করি তারা সমগ্র আফগান জুড়ে নিজেদের কাজ করতে পারবে। এক্ষেত্রে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, এর আগে স্বাস্থ্য সেবা দানকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা আফগানের অনেকাংশে পোলিও ও অন্যান্য টিকা দান কর্মসূচীতে ইমারাহ সরাসরি সহযোগিতা করেছিলো।
ইসলামিক ইমারাহ অফ আফগানিস্তান আবারও স্বাস্থ্য সেবা দানকারী সংস্থাগুলোকে তাদের কাজ করার জন্য সব ধরণের সহযোগিতা করার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
এতক্ষণ ধরে কষ্ট করে আফগানিস্তান ও আফগানবাসীর বর্তমান দুঃসহ অবস্থা ও এ বিষয়ে আমাদের মতামত মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ।