উপমহাদেশনির্বাচিতবাংলাদেশসংবাদসম্পাদকীয়

‘টাকা দাও, লোক নাও!’- পুলিশেরও এই নীতি!!!

About the author

About the author

খালিদ মুন্তাসির, অনুবাদক, লেখক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক।

টিআইব ‘র সাম্প্রতিক জরিপে উঠে আসা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত পুলিশ বাহিনী নিয়ে গত ৩০শে আগস্ট সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি’র অনলাইন বাংলা সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে পুলিশী নির্যাতনের দুটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ভিন্ন  ঘটনাদুটির মূল বক্তব্য এক। তা হলো- রাস্তা থেকে অপহরণ করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছে পুলিশ!  প্রথম ঘটনায় ২২ বছরের এক ছেলেকে চায়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ! অতঃপর, ছেলের বাবাকে ডেকে নিয়ে ছেলের মুক্তি বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দাবি করে পুলিশ বলে, টাকা না দিলে মাদকের মামলা দেয়া হবে!  অনেক অনুনয় করে শেষ পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনে পরিবার! পরের ঘটনাও একই চক্রের এবং একই তাদের কার্যক্রম। টাকা দাও, লোক নাও!- এটাই তাদের নীতি।

এই হলো কথিত বাংলাদেশ সরকারের গর্বের পুলিশ বাহিনী! যারা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত!  আর, সে দায়িত্ব নিয়েই তারা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে! অর্থাৎ, জনগণের কাছে টাকা থাকলে চুরি-ডাকাতি হয়ে যেতে পারে, জনতা বাড়িতে থাকলে খুন হয়ে যেতে পারে, সেজন্যই হয়তো সরকারের  অতি গর্বের এই বাহিনী জনগণের জান-মালের দায়িত্ব নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেন!!! রাস্তাঘাট থেকে মানুষকে তুলে নেন নিজেদের হেফাজত খানায়!!! আর, মুক্তির দাবি……! ওহ, এখানেই সমস্যা পাকাইছে!  কত সু্ন্দর করে পুলিশকে নিয়ে গর্ব করতে চাইলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না! হতচ্ছাড়াগুলো একটা কাজও ঠিক মত করতে পারে না!!

জনগণকে কারাগারে অযথাই আটক করে রাখবে, তার একটি ভালো(!?) ব্যাখ্যারূপ দেওয়া যেত; কিন্তু আটকের পর আবার মুক্তিপণ দাবি!!! এ তো প্রকাশ্য সন্ত্রাসী!!

যাইহোক, এখন কথা হলো- হয় পুলিশ বাহিনী অযথাই জনতাকে ধরে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে পরিবারের কাছে, আর না হয় কোন অপরাধীকে ধরার পর মুক্তিপণের বিনিময়ে তাকে অন্যায়ভাবে ছেড়ে দিচ্ছে!  এখানে দুটোই অপরাধ। আর, এ ধরণের অপরাধ দেশের প্রতিটা অঞ্চলে নিয়মিত করে যাচ্ছে কথিত সরকারের গর্বিত পুলিশ বাহিনী! আর, জনগণ পুলিশী নির্যাতনের কারণে সর্বদাই ত্রাসের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে! একদিকে তাদের জান-মালের নিরাপত্তা নেই সন্ত্রাস, চোর, ছিনতাইকারীর হাত থেকে; অপরদিকে যারা নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিয়োজিত, তারাও বৈধতার পোশাক পরে জনগণের রক্ত চুষে খাচ্ছে নিয়মিত।  পুলিশের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অসংখ্য ঘটনাবলির মধ্য থেকে কেবল দুটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। তাতেই পুলিশের অত্যাচারের নির্মম চিত্র উঠে এসেছে। আর, যে ঘটনাগুলো  আড়ালে থেকে যাচ্ছে, সেগুলো যে আরো কত ভয়াবহ হতে পারে, আরো কত নিষ্ঠুর চিত্রের হতে পারে তা অনুমান করাও কঠিন!

পুলিশ আজ বাঁধনহীন, জবাবদিহিমুক্ত এক বৈধ সন্ত্রাসী!! এমনটাই মনে করেন অনেক বিশ্লেষক! আর আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা কারোরই অজানা নয়  যে সরকারই এই পুলিশবাহিনীর পৃষ্ঠপোষক। শাসকের নীতি হয় জনতাপ্রীতি, কিন্তু এখন তো দেখি দুর্নীতি!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × four =

Back to top button