উত্তম নাসিহা সিরিজঃ পর্ব ২ || ইলম অর্জন, তাকফির ও রক্তপাতের ব্যাপারে সতর্কতা -শায়খ হারিস বিন গাজি আন নাজারি
উত্তম নাসিহা সিরিজঃ পর্ব ২
ইলম অর্জন, তাকফির ও রক্তপাতের ব্যাপারে সতর্কতা
বয়ানে শায়খ হারিস বিন গাজি আন নাজারি (আল্লাহ তার উপর রহম করুন)
Download/ডাউনলোড (১৮ মেগাবাইট)
https://archive.org/details/3.un2ilmotakfir
https://ia601502.us.archive.org/13/items/GR2BnSub/GR-2_bn-Sub.mp4
https://archive.org/download/3.un2ilmotakfir/3.UN2%20-%20Ilm%20O%20Takfir.mp4
http://www.mediafire.com/file/49pdupb0gvot9p1/3.UN2_-_Ilm_O_Takfir.mp4/file
PDF DOWNLOAD
https://archive.org/download/3.un2ilmotakfir/3.UN2%20-%20Ilm%20O%20Takfir.pdf
http://www.mediafire.com/file/2u6hg80xaeofeld/3.UN2_-_Ilm_O_Takfir.pdf/file
WORD DOWNLOAD
https://archive.org/download/3.un2ilmotakfir/3.UN2%20-%20Ilm%20O%20Takfir.docx
http://www.mediafire.com/file/uxbdi5inrjhir0r/3.UN2_-_Ilm_O_Takfir.docx/file
————–
উত্তম নাসিহা
শায়খ হারিস ইবনে গাজী আন-নাযারী (রহ.)
দ্বিতীয় উপদেশ: ইলম অর্জন, তাকফির ও রক্তপাতের ব্যাপারে সতর্কতা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সঙ্গীসাথিদের উপর।
এব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, আমলের পূর্বে ইলম অর্জন করা ওয়াজিব। মানুষ কোন একটি কাজ বাস্তবায়নের পূর্বে চিন্তা করবে এবং গবেষণা করে দেখবে, এ ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম কি? তারপর উক্ত কাজটিতে অগ্রসর হবে। বুঝে শুনে।
আল্লামা গাজালী রহ: ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন কিতাবে এবং ইমাম শাফি রহ: তার কিতাবে ইজমা বর্ণনা করেছেন:
“কোন মুকাল্লাফের জন্য কোন একটি কাজে ততক্ষণ পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া জায়েয নেই, যতক্ষণ না জানতে পারে, এ ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম কি?”
সুতরাং প্রমাণ নিশ্চিত হওয়া, দলীল অনুসন্ধান করা এবং শরয়ী হুকুম জানা প্রতিটি মুসলিমের উপর ওয়াজিব সাব্যস্ত হল।
সুতরাং এটা মুজাহিদদের ক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং আরো বড় ওয়াজিব। কারণ জিহাদে রক্ত প্রবাহিত করা হয়, মাল দখল করে নেওয়া হয়। তাই মুজাহিদদের জন্য সে যে কাজে লিপ্ত হতে যাচ্ছে তার ব্যাপারে শরয়ী হুকুম জানা অত্যাবশ্যকীয়।
অতএব জিহাদের ফরজটির অনেক বিধানাবলী, আদাব ও সুনান রয়েছে। রয়েছে এখানেও অনেক নিষিদ্ধ ও হারাম বিষয়, যা মানুষের জন্য করা উচিত নয়।
বরং আল্লাহর কিতাবের সামনে থেমে যাবে। তাই চিন্তা-ভাবনা করা, পরিস্কার হওয়া ও নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক। যেহেতু জিহাদ হল রক্ত ও সম্পদ নিয়ে কারবার।
আর রক্তের মূল বিধান হল তা হারাম, যতক্ষণ পর্যন্ত তা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তের বিবরণ না আসে।
বুখারী রহ: ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস রা: বলেন,
এক ব্যক্তি তার কয়েকটি বকরি সহ এক জায়গায় ছিল। মুসলমানগণ তার কাছে গেল। লোকটি বলল, আস সালামু আলাইকুম! কিন্তু তারা তাকে হত্যা করে তার বকরিগুলো নিয়ে নিল। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর, তখন যাচাই করে নিও এবং যে, তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও।
তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর, বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন।”
[সুরা নিসা ৪:৯৪]
আল্লাহ তা’আলা বিশেষ করে জিহাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার এবং অবস্থা ও হুকুম জানার আদেশ দিলেন। সুতরাং মানুষ কোন কাজে অগ্রসর হবে না, বিশেষ করে কোন অভিযানে বের হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যাপারে আল্লাহ হুকুম না জানবে। যেহেতু এ বিষয়টি ভয়ংকর এবং তাতে অগ্রসর হওয়া মানে ধ্বংস ও বিপর্যয়। নবী সা: খালিদ বিন ওয়ালিদ রা: এর কাজ থেকে সম্পর্কমুক্তি ঘোষণা করেছিলেন,
যখন রাসূল সা: তাকে বনী জুযাইমার নিকট প্রেরণ করেছিলেন তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করার জন্য। তারা ইসলাম গ্রহণ করলাম কথাটি ভালভাবে বলতে পারল না। তারা বলল, আমরা ধর্মচ্যুত হলাম, আমরা ধর্মচ্যুত হলাম।
তখন খালিদ রা: তাদেরকে হত্যা করে ফেললেন এবং সন্দেহের মাঝেই তাদের সম্পদ নিয়ে নিলেন। রাসূল সা: এ খবর পেলেন। তিনি খালিদের কর্ম থেকে সম্পর্কমুক্তির ঘোষণা দিলেন। অথচ তিনি ছিলেন আল্লাহর নাঙ্গা তরবারী, যা রাসূল সা: তার নাম দিয়েছেন।
হাফেজ ইবনে হাজার রহ: ফাতহুল বারীতে এ হাদীসের সাথে সংযোজন করে বলেন: খাত্তাবী রহ: বলেন,
রাসূল সা: খালিদ রা: কর্তৃক তাড়াহুড়া করা ও তাদের ‘ধর্মচ্যুত হলাম’ কথার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে স্পষ্ট না হয়ে তাদেরকে হত্যা করাকে নিন্দা করেন।
অর্থাৎ, রাসূল সা: রক্তপ্রবাহের ক্ষেত্রে তার তাড়াহুড়া করা ও যাচাই-বাছাই না করার নিন্দা করেছেন। উস্তাদ আব্দুল্লাহ আদাম বলেন,
(এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা।) এর মাঝেই অন্তর্ভূক্ত হবে, গবেষণা করার যোগ্যতা ছাড়া এবং কোন যাচাই-বাছাই ও প্রমাণিত হওয়া ছাড়া শরয়ী হুকুম জারি করার ব্যাপারে দু:সাহসিকতা দেখানো।
অর্থাৎ মাসআলার মধ্যে চিন্তা-ভাবনাকে কাজে না লাগিয়ে, মাসআলার সকল পার্শ্ব ও সকল শাখা-প্রশাখাসমূহ আয়ত্ব না করে এবং তার ব্যাপারে আহলে ইলমদের মতামতগুলো না জেনে এরূপ করা।
এর মধ্যেই গণ্য হবে, উলুমে শরইয়্যাই আয়ত্ব না করে কাফের, ফাসেক বা বিদআতি সাব্যস্ত করার ব্যাপারে দু:সাহসিকতা দেখানো।
উলামায়ে কেরাম বলেন, যে অধ্যায়সমূহে প্রবেশ করতে প্রাজ্ঞ আলেমগণও ভয় পেতেন, তার মধ্যে যে একটি বা দুটি কিতাব পড়েছে অথবা কারো থেকে শুনেছে বা এখান থেকে একটু-ওখান থেকে একটি সংগ্রহ করেছে সে কিভাবে প্রবেশ করে?!
শায়খ সুলাইমান ইবনে সাহমান তদ্বিয় কিতাব ‘মিনহাজু আহলিল হাক ওয়াল ইত্তিবা ফি মুখালাফাতি আহলিল হাক ওয়াল ইবতিদা‘এ বলেন,
(তিনি বলেন), শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আবু বুতাইল রহ: বলেন,
তিনি প্রথমে তাকফীরের ব্যাপারে আলেমদের ইখতিলাফ ও মতবিরোধ উল্লেখ করেন। তাকে তাকফীরের মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন আব্দুল্লাহ আবু বুতাইল বলেন, মোটকথা, (এই কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী) তিনি বলেন,
মোটকথা, যে নিজের কল্যাণ কামনা করে তার জন্য কর্তব্য হল এই মাসআলার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলম ও সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতিত কথা না বলা এবং নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেচনার আলোকে কাউকে তাকফীর করা থেকে বিরত থাকা।
কারণ কাউকে ইসলাম থেকে বের করা বা কাউকে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করানো হল দ্বীনের সবচেয়ে বড় বিষয়গুলোর মধ্যে একটি বিষয়। এই মাসআলা ও এর অন্যান্য মাসআলাসমূহের ব্যাপারে তো আমাদেরকে শরীয়তের পক্ষ থেকেই আলোচনা যথেষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
বরং মোটামুটিভাবে এর হুকুমটা দ্বীনের অন্যান্য হুকুমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট। সুতরাং আমাদের উচিত রাসূলের অনুসরণ করা, বিদআত সৃষ্টি না করা।
যেমন ইবনে মাসউদ রা: বলেছেন:
তোমরা অনুকরণ কর, নিজেদের পক্ষ থেকে আবিস্কার কর না, কেননা তোমাদেরকে সব যথেষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন,
এজন্য কোন বিষয় কুফর হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মতবিরোধ থাকলে, দ্বীনের জন্য সতর্কতম পন্থা হল তার ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকা, কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত মাসআলায় নিস্পাপ সত্তা সা: থেকে কোন স্পষ্ট বিবরণ না পাওয়া যায়।
খুব সূক্ষ কথা,
তিনি বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
শয়তান অধিকাংশ মানুষের পদস্খলন ঘটিয়েছে এই মাসআলার মধ্যে।
একদলের দ্বারা শৈথিল্য ঘটিয়েছে, ফলে তারা এমন লোকদের ব্যাপারে মুসলিম হওয়ার হুকুম আরোপ করেছে, যাদের কাফের হওয়ার ব্যাপারে কিতাব-সুন্ন্হর প্রমাণ রয়েছে। তারা এমন লোকদের মুসলমান হওয়ার ফায়সালা করেছে।
আর আরেক দলের থেকে সীমালংঘন ঘটিয়েছে, ফলে সর্বসম্মতিক্রমে কিতাব-সুন্নাহ যাদের মুসলিম হওয়ার ফায়সালা করে তারা তাদেরকে তাকফীর করেছে। ফলে এই দলও ভুলের মধ্যে পড়েছে, ওই দলও ভুলের মধ্যে পড়েছে।
এখানে আবু বুতাইল রহ: সংযোজন করে বলেন,
আশ্চর্যের বিষয় হল, এদের কাউকে যদি তাহারাত বা বাই এর একটি মাসআলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে তারা শুধু নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনা দ্বারা ফাতওয়া দেয় না, বরং আলেমদের কথাগুলো তালাশ করে, অত:পর তার আলোকে ফাতওয়া দেয়, তাহলে যেটা দ্বীনের সবচেয়ে বড় ও স্পর্শকাতর বিষয়, সেই বড় বিষয়ে কিভাবে শুধু নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনার উপর ভরসা করে?!
তাই এই দুই প্রান্তের লোকের জন্য ইসলামের কত যে মুসিবত হয়!!
এই হল আবু বুতাইল রহ: এর কথা। খুব চমৎকার ও দামি কথা।
আল্লাহ সুবহানাহুর কাছে প্রার্থনা করি, আল্লাহ আমাদেরকে ইহা মানার তাওফীক দান করেন এবং আমদের থেকে তার অবাধ্যতার বিষয়গুলোকে দূরে রাখুন! নিশ্চয়ই তিনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।
ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।