আরবইতিহাস- ঐতিহ্যউসামা মিডিয়াবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ আবুন নুর আল ফিলিস্তিনী রহিমাহুল্লাহশামহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

ফিলিস্তিনের একটি নিভে যাওয়া প্রদীপের গল্প || উসামা মিডিয়া পরিবেশিত

১৪ আগস্ট ২০০৯ সালে ফিলিস্তিনের গাজায় শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ মসজিদে আল কায়েদার মুজাহিদদের উপর হামাসের নির্মম হামলার রক্তাক্ত বিবরণ…

ফিলিস্তিনের একটি নিভে যাওয়া
প্রদীপের গল্প

মূল
আবু সাঈদ আল-মুহাজির
অনুবাদ
মাওলানা হামিদুর রহমান

https://archive.org/details/IbnuTaimiahMosque

pdf
http://www.mediafire.com/file/kjn9ycvu2ou7ynu/ibnu%20taimiah%20mosque.pdf
https://archive.org/download/IbnuTaimiahMosque/ibnu%20taimiah%20mosque.pdf

word
http://www.mediafire.com/file/0bljc7ibw07o7oi/ibnu%20taimiah%20mosque.docx
https://archive.org/download/IbnuTaimiahMosque/ibnu%20taimiah%20mosque.docx

ছড়িয়ে দিন-

https://justpaste.it/IbnuTaimiahMosque

 

 

Banner

http://u.cubeupload.com/usama_media/110ibnutaimiahmosque.jpg

PDF
—-
http://www.mediafire.com/file/vsflurm4cbcmziy/110._ibnu_taimiah_mosque.pdf/file
https://archive.org/download/U_M_A_04/110.%20ibnu%20taimiah%20mosque.pdf

Word
——
http://www.mediafire.com/file/jsfy1fhy9s5fmh7/110._ibnu_taimiah_mosque.docx/file
https://archive.org/download/U_M_A_04/110.%20ibnu%20taimiah%20mosque.docx

 

————

 

ভূমিকা

কি ঘটেছিল রাফাহ’র শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ মসজিদে?

ফিলিস্তিনের গাজা ভুখণ্ডে এবং বিশেষভাবে রাফাহ শহরে ২০০৯ সালের ১৪ই আগষ্ট মোতাবেক ১৪৩০ হিজরীর ২৩শে শাবানের শুক্রবার দিনটি ছিল একটি বিশদ দিন৷ কেননা সেদিন গাজার ক্ষমতাধর হামাস সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদে ইবনে তাইমিয়্যাতে আক্রমণ করার ঘটনা ঘটেছিল৷ এবং মসজিদে ইবনে তাইমিয়্যার ইমাম শাইখ আব্দুল লতিফ মুসা কর্তৃক জেরুজালেমের বুকে ইসলামী ইমারত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার পর সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল৷ সেক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা করেছিল সালাফি ও জিহাদি দলগুলোর একটি জোট, যাদের নেতৃত্বে ছিল জুন্দ আনসারুল্লাহ’র জামাতটি৷ সেই সশস্ত্র যুদ্ধের ফলে ডঃ শাইখ আব্দুল লতিফ মুসা, জুন্দ আনসারুল্লাহ্ জামাতের আমির শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ আল মুহাজির আস-সুরী এবং তাঁদের কিছুসংখ্যক অনুসারী শহীদ ও আরো কিছুসংখ্যক বন্দি হন৷ এবং সেই ঘটনায় ও ঘটনার পরেও সকল সালাফিদের  নিশানা বানানো হয়৷ এই ঘটনার দ্বারা-ই সালাফি ধারা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের মাঝে বিচ্ছিন্নতা তৈরী হয়ে যায়, ফিলিস্তিনে যাদের প্রতিনিধিত্ব করছে হামাস৷

হামাস তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী যে কাউকে বা তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনার বাইরে চলা যে কোন দলকে কিংবা ইসরাঈলের সাথে সংঘটিত তাদের যুদ্ধনীতির চুক্তিতে অরাজকতা সৃষ্টিকারী সকলকে নিঃশেষ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে ঘটনাগুলো ধারাবাহিকভাবে খুব কাছাকাছি সময়েই সংঘটিত হচ্ছিল৷ আর জুন্দ আনসারুল্লাহ জামাতটি এই যুদ্ধনীতির চুক্তি লংঘন করেছে এমন একটি অপারেশনের মাধ্যমে, যা মিডিয়ায় তুমুল হট্টগোল সৃষ্টি করেছিল৷ যা হামাসকে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী দল হিসাবে এবং ইসরাঈলের বিরুদ্ধে কোন ধরণের হামলা না চালানোতে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার কারণে ইহুদিবাদী শত্রুদের সামনে একটি সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছিল৷ তাই হামাস এ জামাতের সদস্যদের গ্রেফতার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ আরোপ করার মাধ্যেমে এ জামাতকে কোণঠাসা করে রাখা ও দমন করে ফেলার হীন প্রচেষ্টায় রত হয় এবং গাজা ভুখণ্ডে সালাফিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধের ঘোষণা দিয়৷

সুতরাং যে সকল মসজিদগুলো এমন সালাফিগণ পরিচালনা করতেন, যাদের উপস্থিতি হামাসের দৃষ্টিতে তাদের রাজনীতির জন্য হুমকি স্বরূপ ছিল, সে সকল মসজিদ ও দ্বীনি মাদরাসাসমুহ যেমনঃ “মাদরাসায়ে সাআ’দ” কে তারা উৎখাত ও অপসারণ করা শুরু করে৷ মসজিদ ও মাদরাসাসমূহের অপসারণের এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকাবস্থায় তার-ই ধারাবাহিকতায় এই দুর্গতি একপর্যায়ে রাফাহ শহরের ইবনে তাইমিয়্যাহ মসজিদ পর্যন্ত পৌছে যায়৷ এই মসজিদের দায়িত্বে ছিলেন ডঃ শাইখ আব্দুল লতিফ মুসা৷ সেখানকার সালাফি ধারার ভেতর তাঁর আওয়াজ-ই ছিল গ্লোবাল জিহাদি আন্দোলনের পক্ষে সবচে’ উচ্চকণ্ঠ৷ এবং তিনিই হামাস কর্তৃক কুফরি গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করার কারণে এবং মাহমুদ আব্বাস আল বাহায়ীকে বৈধ রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার কারণে হামাসের লোকদের মধ্যে যারা হামাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করেছিল তাদেরকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেওয়ার মাধ্যমে হামাসের ক্রোধকে উত্তেজিত করেছিলেন৷

সালাফি ধারা এবং সালাফি মুজাহিদদের প্রতি কৃত হামাসের আক্রমণকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে (জুন্দ আনসারুল্লাহ্ ও শাইখ আব্দুল লতিফ মুসা) উভয় পক্ষেরই সম্মত হওয়ার পেছনে হামাস কর্তৃক জুন্দ আনসারুল্লাহ্ জামাতকে কোণঠাসা করে রাখা, তাঁদের আমিরকে অপহরণ করে মিশরের কাছে হস্তান্তর করতে চেষ্টা করা এবং শাইখ আব্দুল লতিফ মুসা থেকে মসজিদকে মুক্ত করার প্রয়াস চালানোর একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে৷ যখন সবাই দেখেছিল যে, জাইশুল ইসলাম হামাস কর্তৃক তার পুলিশ ও সামরিক উইং আল কাসসাম ব্যাটেলিয়নের দ্বারা কি ধরণের জুলুমের শিকার হয়েছিল তখন সকলেই সম্মতি প্রকাশ করেছিল যে, হামাস যতই শক্তিশালী হোক না কেন তার কাছে কেউ নতি স্বীকার করবে না৷ এবং হামাসের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে ও সালাফি মুজাহিদদের বিক্ষিপ্ততাকে ঐক্যবদ্ধতায় রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে জেরুজালেমের বুকে ইসলামী ইমারত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল৷ যার আমির হবেন ডঃ শাইখ আব্দুল লতিফ মুসা এবং জুন্দ আনসারুল্লাহ্ জামাত তার সমৰ্থনে এবং নতুন আমিরের হাতে বাইআ’ত প্রদানে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করবে৷ তবে ঘোষণা দেওয়ার পর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা ও বিশিষ্টজনদের নেতৃত্বে স্থাপিত সন্ধি ও মধ্যস্থতাকে বাতিল করে হামাস  সশস্ত্র হামলা করে শাইখ আব্দুল লতিফ মুসা এবং জুন্দ আনসারুল্লাহ্ জামাতের আমির শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ আল মুহাজিরকে শহীদ করে ফেলে, মসজিদকে জবরদখল করে নেয়, কয়েক ডজন সালাফি যোদ্ধাকে নিহত ও বন্দি করে এবং পরবর্তীতে হামাস সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে ঘোষিত এই ইসলামী ইমারতকে বিনাশ করে দেয়৷ যদিওবা এই স্বপ্নের ইসলামী ইমারতের প্রাসাদ নির্মাণের বাসনা হৃদয়ে আজো প্রোথিত রয়েছে, যা বুকে লালন করে আসছে গাজার বহু সালাফিগণ এবং তাদের পিছনে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানগণ৷

 

 

بسم الله الرحمٰن الرحيم

“শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীন” এই সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজির থেকে। তিনি ঘটনার দিন “শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ মসজিদে” উপস্থিত ছিলেন এবং শাইখ আবুন নূর আল মাক্বদিসী[1] ও শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ আল মুহাজির[2] উভয় শাইখেরই সোহবত লাভে তিনি ধন্য হয়েছিলেন৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ কেমন আছেন শাইখ! হে মহান শাইখ আল্লাহ্ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন!

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ হে সম্মানিত ভাই আল্লাহ্ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখুন! আল্লাহ্ আপনার মঙ্গল করুন! এবং আপনার কাজে ও মানুষদের সামনে আপনার সত্য ঘটনা তুলে ধরার প্রচেষ্টায় বরকত দান করুন!

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ সম্মানিত শাইখ! সংক্ষেপে হলেও এ সাক্ষাৎকারটিতে আমরা শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ আল মুহাজির রহঃ সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই৷

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ তিনি হচ্ছেন শহীদ শাইখ খালেদ বানাত, তিনি আবু আব্দুল্লাহ্ আল মুহাজির[3] উপাধিতে ভূষিত ও গাজায় তিনি ‘সুরী’ (সিরিয়ান) বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি স্বীয় জীবনের চল্লিশটি বছর জিহাদ করে ছিলেন৷ তিনি বসনিয়ায় জিহাদ করেছেন এবং আফগানিস্তানে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে জিহাদের সময় সেখানেও জিহাদ করেছেন এবং শীশানে শহীদ খাত্তাব রহঃ এর সাথে একসাথে জিহাদ করেছেন ও উভয়ে একইসঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন৷ তিনি তাঁদের মধ্যেও অন্যতম ছিলেন, যারা সুদানে শাইখ উসামা বিন লাদেন রহঃ এর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন৷ তেমনিভাবে তিনি শহীদ শাইখ আবু হাফস আল মিছরীর হাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন৷ অতঃপর তিনি সিরিয়ায় গিয়ে সেখানে ‘আল কাসসাম বিগ্রেড’ কে প্রশিক্ষণ দান করেন৷ এরপর তিনি গাজায় গমন করে ‘আল কাসসাম বিগ্রেড’কে সেখানেও প্রশিক্ষণ দান করেন৷ তিনিই গাজার ব্যাটালিয়নসমূহকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন৷ সেসময় শাইখের নিকট হামাসের আসল চেহারা ও তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব স্পষ্ট হয়নি৷ অবশেষে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছে৷ অতঃপর যুদ্ধের আগে ও পরে গাজায় ইহুদীরা হাজার হাজার মুসলমানদের শহীদ করা সত্ত্বেও তারা ইহুদীদের সঙ্গে যুদ্ধনীতির চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷ তারপর থেকে শাইখ (হামাসকে রেখে) একাই জিহাদ করতে মনস্থ করলেন ও নিজের দল “জুন্দ আনসারুল্লাহ্” প্রতিষ্ঠা করলেন৷

এই হচ্ছে শাইখের জীবন-বৃত্তান্তের সংক্ষিপ্ত কিয়দংশ৷ আমরা যদি বলতে চাই তাহলে আলোচনা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ আপনি যদি আমাদেরকে এই দল ও দলের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কিছু বলতেন?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ জুন্দ আনসারুল্লাহ্ দলটি সাম্প্রতিককালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে; সংক্ষেপে তার পরিচয় হচ্ছে: তা এমন একটি জিহাদি জামাত যা কাজ করে থাকে ফিলিস্তিনে শরিয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য, মুসলমানদের ভূখণ্ডগুলোকে মুক্ত করার জন্য এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রতিরক্ষা করার জন্য ও মুসলিম বন্দি নারী-পুরুষদেরকে মুক্ত করার জন্য৷ এই জামাত একটি ছোট পুস্তিকা প্রকাশ করেছিল যার ভেতর আমাদের আকিদা-মানহাজ বর্ণনা করা হয়েছে ও সেটা গাজার মসজিদসমূহে বিলি করা হয়েছে৷

এ জামাতের মুজাহিদদের সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে ই’দাদ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত৷ শাইখ আবু আব্দুল্লাহর যে দক্ষতা ছিল তা আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল; কেননা আমরা গাজার বাইরে ফিলিস্তিনি সংগঠনের ন্যায় অনুশীলন করতাম৷

এই জামাত সর্বপ্রথম যে সামরিক অপারেশনটি সম্পাদন করছে তা হচ্ছে “বালাগ অভিযান”৷[4] যেখানে শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ ও তাঁর সঙ্গীরা ঐক্যবদ্ধভাবে পূর্ব গাজার ঔপনিবেশিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৷ কিন্তু এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির শিকার হয়ে শাইখ অভিযানের ধাপগুলো কমপ্লিট না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন৷

এই অভিযানটিতে শাইখ ও শাইখের সঙ্গীদের থেকে অনন্য ও অসাধারণ বীরত্ব প্রকাশ পেয়েছে৷ তখন শাইখ রহঃ ও তাঁর সেই বড় ছেলে যার বাগদানের এক সপ্তাহও অতিবাহিত হয়নি ও তাঁর অন্যান্য সঙ্গীদের একটি দল ঘোড়ার পিঠে চড়ে পূর্ব গাজার বর্ডারে আক্রমণ করেছিলেন ও কাঁটাতার পর্যন্ত পৌছে তা বিস্ফোরিত করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন৷ তখন ইহুদীদের একটি জিপ গাড়ি এগিয়ে এলে শাইখ নিজে তা RPG ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা উড়িয়ে দেন ও তার ভেতর যারা ছিল সকলকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন৷ তখন শাইখ পিছনে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন৷ ফলে সকল সঙ্গীরা নিরাপদে পিছনে সরে আসেন৷ কিন্তু আল্লাহ্ তাআ’লার ইচ্ছা ছিল যে, যে সকল পিকআপগুলো মুজাহিদদের বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল তার পিছন সারির একটি পিকআপে একটি মিসাইল পড়বে; ফলে তিনজন ভাই শাহাদাত বরণ করেন৷ আমরা আল্লাহর কাছে দোআ’ করি যে, তিনি তাদেরকে কবুল করে নিন৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ আমরা আপনাদের সর্বশেষ বিবৃতি পর্যবেক্ষণ করেছি৷ তাতে পেলাম আপনারা আলোচনা করছেন যে, আপনারা হামাসের পক্ষ থেকে কিছু হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন৷ দয়া করে যদি আপনি আমাদেরকে হামাসের হয়রানি ও বালাগ অভিযান থেকে ফিরার পথে আপনাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সম্পর্কে কিছু বলতেন?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ হ্যাঁ, বালাগ অভিযান থেকে ফিরার পর হামাস মুজাহিদদের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে ও তাদের থেকে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি অস্ত্রশস্ত্র ও তিনটি ঘোড়া হাতিয়ে নিয়ে গেছে৷ যার বাজারমূল্য ছিল একলক্ষ বিশ হাজার (১,২০,০০০) ডলার৷ আমাদের জামাত এ সম্পর্কে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ উক্ত অভিযানটি ছাড়াও কি আপনাদের আর কোন কার্যক্রম ছিল?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ হ্যাঁ, শাইখ ও মুজাহিদগণ গাজা যুদ্ধের সময় ইহুদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছেন এবং শাইখ ইহুদীদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে বড়বড় অভিযান পরিচালনা করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন; কিন্তু (আগে-পরে হামাসের হাতে) জামাতের বিরাট সংখ্যক মুজাহিদের শাহাদত বরণ ও উক্ত ঘটনাটি সেই ইচ্ছার মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ানোর দরুণ তা আর সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি৷ একমাত্র আল্লাহই আমাদের সাহায্যস্থল৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ এতক্ষণে আমরা মসজিদে ইবনে তাইমিয়্যার আলোচনায় পৌছলাম৷ আসলে সঠিকভাবে সেখানে কি ঘটেছিল?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ হে সম্মানিত ভাই! আমার উচিত মুসলমানদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, মসজিদে ইবনে তাইমিয়্যার ঘটনাটি হচ্ছে হামাস কর্তৃক গাজার জামাত ও সালাফীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ষড়যন্ত্রের অধ্যায়সমূহের মধ্য থেকে কেবল একটি অধ্যায়৷ সেক্ষেত্রে বালাগ অভিযান সম্পন্নকারী ভাইদের অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার পর থেকে হামাস ও শাইখ আবু আব্দুল্লাহর মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে৷ তারা শাইখকে বলেছে, “আমরা আপনাকে অস্ত্র (ফিরিয়ে) দিতে চাই, কিন্তু এই শর্তে যে, আমরা আপনার সাথে বসব এবং আপনি সাময়িক যুদ্ধবিরতি নীতিমালা এবং সামরিক পদক্ষেপের নিম্নমুখী সীমাবদ্ধতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবেন”। তখন শাইখ তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন৷

তাদের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা চলতে চলতে আমরা ২০০৯ এর জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত এসে পৌছি৷ তখন হামাস ‘খান ইউনিস’ শহরে দাহলান পরিবারের একটি অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনার দ্বারা ফায়দা লুটে৷ তারা খান ইউনিস শহরের শাথ টাওয়ারে আমাদের জামাতের একটি অ্যাপার্টমেন্টকে ঘিরে রেখে মুজাহিদদের এই অভিযোগে গ্রেফতার করতে চেয়েছিল যে, তাঁরাই অনুষ্ঠানে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷ অথচ হামাস নিশ্চিতভাবে জানে যে, তাদের লোকেরাই এই হামলাটি ঘটিয়েছে এবং হামাস এও জানে যে, এই এপার্টমেন্টটি মুজাহিদদের; বরঞ্চ শাইখ সেখানেই তাদের মূল মূল বিষয়গুলোকে প্রশিক্ষণ দিতেন৷ তথাপি তারা জনমতকে বিভ্রান্ত করেছিল ও ভেতরে প্রবেশ করতে চেয়েছিল; কিন্তু মুজাহিদগণ তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন ও বললেন, এ এপার্টমেন্টে কেবল মুজাহিদদের সরঞ্জামাদি রয়েছে এবং এগুলোই তাঁদের সম্বল৷ এবং মুজাহিদগণ তাদেরকে এই হুমকি দেন যে, “তারা অ্যাপার্টমেন্ট অনুপ্রবেশের জন্য বেশি প্রচেষ্টা চালালে মুজাহিদিন হামাস অনুগামী জাতীয় নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে নিজেদেরকেও উড়িয়ে দিবে”৷ তখন তারা ভিতরস্থ লোকদেরকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য সবদিক থেকে বিভিন্ন উপকরণের অনুপ্রবেশ ঘটাতে থাকে৷ পরিশেষে মুজাহিদগণ এপার্টমেন্ট থেকে নিজেদের (কারামাত) অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে সেখান থেকে সসম্মানে বেরিয়ে চলে আসে এবং হামাস তাতে প্রবেশ করতে পারেনি৷ শহীদ হুসাইন ত্বাআ’ রহঃ, যিনি ছিলেন অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থিত ভাইদের একজন তিনি বলেন, আমরা টাওয়ার থেকে অবতরণের সময় অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটি সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, “আপনারা আমাদের বাহু, কিন্তু অ্যাপার্টমেন্টটি যে আমরা ইহুদিদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি এটি কোন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নয়”৷ এর একদিন পর হামাস দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ও সেখানে বিদ্যমান সবকিছু বাজেয়াপ্ত করে, যার বাজারমূল্য ছিল ষাট হাজার (৬০,০০০) ডলার৷ এতে শাইখ ভীষণ রাগ হন এবং কতিপয় আল কাসসাম বিগ্রেডের নেতাদের হুমকি প্রদর্শন করেন৷

শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ যখন বালাগ অভিযানের পূর্বে হামাসের সাথে স্বাধীনভাবে বিভিন্ন কাজ করতেন তখন হামাস যা করেছিল আমি হয়তবা আপনাদেরকে তা বলতে ভুলে গিয়েছি৷ সে সময় মুজাহিদগণ ইহুদীদের লক্ষ্য করে একটি বিরাট সুরঙ্গ খনন করেছিলেন৷ বিষয়টি হামাস নেতা ‘জা’বরী’ জানত৷ তখন পুলিশ ও হামাস অনুগামী জাতীয় নিরাপত্তাকর্মীরা সুরঙ্গটি ধ্বংস করে ফেলে এবং মুজাহিদদের প্রহার করে ও সুরঙ্গের সরঞ্জামাদি ভেঙ্গে ফেলে এবং বিষয়টি বলাবলি না করার জন্য শাইখকে অনুনয় করে ও বলে, “যেন তা হামাসের ভ্রাতৃত্বকে নষ্ট করার মতো কারণ হয়ে না দাড়ায়”৷

অতঃপর মসজিদে ইবনে তাইমিয়্যার ঘটনার কয়েকদিন আগে তাদের এ দুরাবস্থার আরো ক্ৰমোন্নতি ঘটে৷ এমনকি তারা শাইখ আবু আব্দুল্লাহকে রাফাহ’তে তার বাড়ী থেকে অপহরণ করে মিশরকে হস্তান্তর করতে চেয়েছিল; কিন্তু আকস্মিকভাবে তারা শাইখের সঙ্গীদের মুখোমুখি হয়ে যাওয়ায় শাইখকে অপহরণ করার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি তাদের জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়৷ সেদিনই তারা আমাদের জামাতের আরেক ভাইকে ইহুদীদের প্রহরা ঘাঁটি থেকে ফিরার সময় অপহরণ করে তার সরঞ্জামাদি হাতিয়ে নেয়৷

এটাও উল্লেখ করা দরকার যে, এপার্টমেন্ট অবরোধের দিন কতিপয় আল কাসসাম নেতা শাইখ আবু আব্দুল্লাহর সাথে বসতে চেয়েছিল; কিন্তু শাইখ তা প্রত্যাখ্যান করে দেন৷ তারপর তারা শাইখের পরিচিত আল কাসসামের একজন প্রশিক্ষক আবু ওমরের মাধ্যমে শাইখের নিকট প্রবেশ করতে চেষ্টা করলে তখন শাইখ সম্মত হন৷ সেখানে শাইখ ও আবু ওমরের সাথে আসা এক আল কাসসাম নেতা রায়েদ সা’দের মাঝে যে কথোপকথন হয়েছিল তা হচ্ছেঃ “আল কাসসাম আপনাকে এলাকায় কাজ করার জন্য কেন্দ্র, সরঞ্জামাদি ও আপনি যা চাইবেন তাই দিবে, তবে শর্ত এই যে, আপনাকে হামাসের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি ও যুদ্ধনীতি অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে”৷ তখন শাইখ তা প্রত্যাখ্যান করেলেন৷ আলোচনার শেষে রায়েদ সা’দ শাইখকে বলল, “আমরা আপনাকে হামাসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একটি বার্তা জানাতে চাই, যার সারমর্ম হচ্ছে: আমরা আপনাদের দলকে যে কোন উপায়ে শেষ করতে চাই৷ আর ইখওয়ান নেতৃত্বের পক্ষ থেকে আরেকটি বার্তা জানাতে চাই, যার সারমর্ম হচ্ছে: তারা কিছুতেই আল কায়েদাকে গাজায় কাজ করার অনুমোদন দেবে না”৷ তখন শাইখ তাদেরকে এই বলে জবাব দিলেন যে, “আল কায়েদা যখন কোথাও কাজ করে তখন সে ইখওয়ানের কাছ থেকে অনুমতি তালাশ করে না; বরং তাদের সকল শর্তসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে দেয়৷ এবং বললেন যে, আমরা গাজায় প্রবেশ করেছি শূন্যহাতে এবং আল্লাহর সাহায্যে অচিরেই আমরা পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাব”৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ মসজিদে ইবনে তাইমিয়্যার ঘটনাটির সূচনা কিভাবে হয়েছিল?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার মসজিদে শাইখ আবুন নুরের একটি স্থায়ী দরস থাকত৷ এবং সেই রক্তাক্ত শুক্রবারের আগের ক্লাসে তিনি ঘোষনা করেন যে, আগামী জুমআ’য় মসজিদে ইবনে তাইমিয়্যা থেকে ইমারত ঘোষণা করা হবে এবং তিনি এও ঘোষণা করেন যে, সেদিন খুতবা প্রদান করা হবে ‘ইসমাইল হানিয়া সরকারের প্রতি সোনালী উপদেশ’ এই শিরোনামে৷

খুতবাটি পর্যালোচনামূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে তা যুবকদেরকে খুতবা চলাকালীন মসজিদে অবস্থান করতে উদ্বুদ্ধ করায় তা যুবকদেরকে আকস্মিকভাবে সেই রণকৌশলের সম্মুখীন করে দেয় যা আমাদের জামাত শুক্রবার বিকেলে শুরু করেছে৷ অথচ হামাসের সাথে কোন ধরণের সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার কথা তাদের কল্পনায়ও ছিল না৷

স্বভাবতই শুক্রবারের আগের রাতে হামাস অনুগামী জাতীয় নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের জামাতের একজন জিম্মাদার শাইখ আবু মুআ’জ এবং তার ডেপুটিকে রাফাহ’র একটি চেকপয়েন্ট থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়৷ শাইখও আইনী কার্যধারা হিসাবে তাদের সাথে গিয়েছিল এই ভিত্তিতে যে, তারা তাঁদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে দেবে৷ কিন্তু শাইখকে বিস্মিত করে যে, সদর দফতরে তারা তাদের শাইখদের একজনকে নিয়ে এসেছে শাইখের সাথে কথা বলার জন্য৷ তখন তারা উভয়ে আল্লাহর নাযিলকৃত কুরআন ব্যতিত অন্য আইন দ্বারা ফয়সালা করার হুকুম নিয়ে পরস্পরে বিতর্ক করলেন৷ অতঃপর যখন ফজরের নামাজের সময় হয়ে যায় তখন শাইখ আবু মুআ’জ তাদের সাথে নামাজ পড়েন; কিন্তু এরপর তারা আকস্মিকভাবে শাইখকে তার বিস্ফোরক বেল্ট খুলে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয়৷ শাইখ অস্বীকার করলে তারা শাইখের প্রতি গুলি ছোড়া শুরু করে, যা শাইখের বুকে এসে লাগে৷ তারপর তারা শাইখ ও তাঁর সঙ্গীদেরকে গাজা বন্দীশালায় নিয়ে যায়৷

অতঃপর শুক্রবার সকাল ঠিক আটটায় এক ভাইকে তারা তাঁর মোটরসাইকেলে আরোহণ করা অবস্থায় ঘেরাও করে ও বৃষ্টির ন্যায় তার প্রতি গুলিবর্ষণ করে, যা সবই তাঁর মোটরসাইকেলের ওপর দিয়ে যায় এবং আলহামদুলিল্লাহ্ তিনি বেঁচে যান৷

আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করছি যে, ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে হামাসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘ফাতহী হামাদ’ এবং তার পূর্বে থেকে জাব’রী রাফাতে অবস্থান করেছিল৷ সেখানে তাদের মাঝে ও আল কাসসাম নেতাদের মাঝে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সেখানে তারা দুজন আল কাসসামকে অনুপ্রাণিত এবং অভ্যন্তরীণভাবে সংগঠিত করেছিল৷ যার দ্বারা বুঝে আসে যে, এ হত্যাকাণ্ডটি পুরোপুরিই পূর্বপরিকল্পিত ছিল৷ তাছাড়া আল কাসসাম শুক্রবার ফজরের পর থেকেই মসজিদ অভিমুখী সড়ক ও ক্রসিংগুলোকে অবরোধ করে রেখেছিল এবং আশপাশের ভবনগুলোতে তাদের স্নাইপারগুলো তাক করে রাখা হয়েছিল৷ সকালবেলা আমাদের কিছু মুজাহিদও মসজিদের চতুর্পাশ্বের ভবনগুলোতে আরোহণ করেছিলেন৷ তখন আল কাসসাম আমাদের ভাইদের নিকট তাদের নাসের বিগ্রেডের একটি প্রতিনিধিদলকে এই মর্মে প্রেরণ করল, যার সারমর্ম হল: “আপনারা ভবনগুলো থেকে নিচে নেমে আসুন; আল কাসসাম অচিরেই সড়ক থেকে সরে পড়বে”৷ তখন শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ তাতে সম্মত হলেন; কিন্তু আল কাসসাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে অস্বীকার করল বরঞ্চ আগের চেয়ে আরে বেশি অগ্রসর হয়৷

শাইখ তাঁর খুতবা দিয়ে মসজিদের ধারে তাঁর বাড়িতে চলে গেলেন৷ যখন তিনি বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন এবং মুজাহিদগণ মসজিদে প্রবেশ করেছিল ও তাতে বসেছিল তখন তারা জানত না যে, হামাস তাদের জন্যে কি পরিকল্পনা করে রেখেছে৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ অতঃপর সংঘর্ষ ও মসজিদে গুলি ছোড়া কখন শুরু হয়েছে?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ আসরের কিছুক্ষণ পূর্বে আল কাসসাম সদস্যরা মসজিদে গুলি ছুড়তে শুরু করে৷ তখন শাইখ আবু আব্দুল্লাহর ডেপুটি শহীদ আবু তারেক তাদেরকে মসজিদের মাইক দ্বারা আল্লাহকে ভয় করার ব্যপারে নসীহত করতে থাকেন৷ অতঃপর আসরের সময় হয়ে গেলে শাইখ আবুন নূর আল মাক্বদিসী মসজিদে এসে মসজিদে অবস্থানরত লোকদের নিয়ে আসরের নামাজ পড়লেন৷ এদিকে হামাস সদস্যরা লোকদেরকে নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে নিষেধ করছিল৷ কেননা তারা মসজিদকে ঘিরে রেখেছিল এবং তারা মসজিদ থেকে একশো মিটারের চেয়ে বেশি দূরে ছিল না৷ আমরা তাদেরকে বলছিলাম, “হে হামাস সদস্যরা! নামাজে এসো”; কিন্তু তারা আমাদের কথা মানেনি৷ মুজাহিদগণ আসরের নামাজ পড়ার পর শাইখ আবুন নূর আল মাক্বদিসী তাঁর বাড়িতে ফিরে গেলেন ও তাঁর সাথে শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ আল মুহাজিরও ছিলেন৷

কোন রকম ভূমিকা ছাড়াই হামাস অতর্কিতভাবে চারটি জিপ গাড়ির মাধ্যমে মসজিদে প্রবলভাবে গুলিবর্ষণ করেছিল৷ যেগুলোর ওপর ছিল দোশাকা, হেভি মেশিনগান ও RPG ক্ষেপণাস্ত্র৷

মুজাহিদগণ তাদেরকে যতই আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন ও আল্লাহর ভয় দেখাচ্ছিলেন; কিছুতেই তারা বিরত থাকছিল না৷ তখন মুজাহিদগণ আগ্রাসীদের থেকে নিজেদেরকে প্রতিরক্ষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন ও উভয়দিক থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেল এবং তা ক্রমাগতভাবে চলতেই থাকে; একপর্যায়ে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে মসজিদে অবস্থানরত সমস্ত তাওহীদবাদীকেই নিঃশেষ করে দেওয়া৷

মসজিদে প্রচুর পরিমাণে আক্রমণ করা হয়েছিল৷ ফলে ভাইয়েরা আহত যুবকদের বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আল কাসসামের সাথে সমন্বয়ে এসেছিলেন ও তারা তাতে সম্মতিও দিয়েছিল৷ কিন্তু তারা আহত ভাইদের পায়ে গুলি করে ও তাদের এক বিরাট অংশকে যাদের সংখ্যা পাঁচ হবে; হত্যা করে ফেলে। আমাদের হতবাক হয়ে যাই৷

কতিপয় মুজাহিদীন তখন আত্মসমর্পণ করেছিলেন ও অনেকে করেননি৷ গণহত্যা অবিরাম চলতে থাকে৷ তারা পরদিন সকালবেলা মুজাহিদদের সরঞ্জামাদি শেষ যাওয়ার আগপর্যন্ত মসজিদে গুলি ও গোলাবর্ষণ চালিয়ে যায়৷ সুতরাং কেউ শহীদ ও কেউ গ্রেফতার হয়েছেন৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ শাইখ আবুন নূর আল মাক্বদিসী ও শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্ আল মুহাজিরকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ মসজিদে হামলার সমান্তরালে শাইখের বাড়িকেও তারা ঘিরে ফেলে এবং তাতে ঢুকে পড়তে চেষ্টা করে; কিন্তু শাইখের সঙ্গীরা হামলার প্রতিরোধ করে এবং এ সংঘর্ষ প্রায় আধা দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়৷ আল কাসসাম যখন ভিতরে ঢুকতে ব্যর্থ সাব্যস্ত হল তখন তারা বিস্ফোরণে পরিপূর্ণ বড় বড় ড্রাম এনে শাইখের বাড়ির নিচে রেখে তা বিস্ফোরিত করে দেয়৷ আল্লাহর ইচ্ছায় এতে ভবনের অর্ধেক ধ্বসে পড়ে এবং উভয় শাইখ বেরিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে ওঠে৷ কিন্তু তাদের নিকট তা প্রকাশ পেয়ে যায় ও পাশের বাড়িটিকেও তারা উড়িয়ে দেয় ৷ ফলে সেখানকার সকল মুজাহিদীনই শাহাদাত বরণ করেন৷ তারা হচ্ছেন শাইখ আবু আব্দুল্লাহ্, শাইখ আবুন নূর ও শাইখ আবু আব্দুল্লাহর সাথী শহীদ খাত্তাব এবং শাইখ আবু আব্দুল্লাহর ডেপুটি আবু তারিক৷ আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করছি যে, হামাসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাতহী হামাদ শাইখ আবুন নূরের হত্যার আগপর্যন্ত রাফাহ’র দিওয়ারুন নাজমা এলাকায় অবস্থান করে ঘটনাগুলোর পর্যবেক্ষণ করছিল৷ অতঃপর শাইখের শাহাদাতের পর সেখান থেকে ফিরে এসেছে৷[5]

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ তারা কি কারাগারে বা হসপিটালে মুজাহিদদের প্রতি নির্যাতন করেছে?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ হ্যাঁ, কিন্তু এর আগে আমার মন চাচ্ছে শাইখ আবু আব্দুল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ্ সুরীর হত্যার ঘটনাটি বলতে ৷

আব্দুল্লাহ্ সুরী আবু ইউসুফ মাতার নামক এক আল কাসসাম নেতার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছিল৷ সে তাকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে, সে তার জন্যে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেবে৷ কেননা তিনি হালকা আঘাতে আহত ছিলেন৷ আর এটি ছিল শনিবার সকালে৷ সুতরাং আব্দুল্লাহ্ বেরিয়ে গেল৷ এদিকে আল কাসসাম শাইখ আবু আব্দুল্লাহর স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে তাকে জানিয়েছেন যে, শাইখ আবু আব্দুল্লাহকে হত্যা করে ফেলা হয়েছে এবং তার ছেলে সুস্থ রয়েছে৷ এম্বুলেন্স উরুবীর হসপিটালে পৌছার পূর্বে আল কাসসামের একটি গাড়ি এসে তাঁর গতিরোধ করে ও তাঁকে নিচে নামিয়ে ঠান্ডা মাথায় তাঁর হত্যাকার্য সম্পাদন করে৷ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক৷ তারা একমাত্র ইহুদীদেরই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে৷

আমি মূল প্রশ্নে ফিরে আসছি: তারা অবশ্যই মুজাহিদদের নির্যাতন করেছে৷ এমনকি এম্বুলেন্সের ভেতরও তারা মুজাহিদদের প্রহার করেছে এবং তাঁদেরকে কখনও তারা কাফের বলত আবার কখনও বলত খারেজি৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ হামাস লোকদেরকে এ বলে উসকানি দিয়ে বেড়াচ্ছে যে, আপনারাই নাকি পূর্ব গাজার আল কাসসাম জিম্মাদার আবু জিবরীল শিমালীকে আগে হত্যা করে এ লড়াইয়ের সূচনা করেছেন৷ এ কথার যথার্থতা কতটুকু?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ তাদের এ প্রোপাগাণ্ডা সঠিক নয়৷ আবু জিবরীলকে মসজিদে হত্যা করা হয়নি৷ এ সংক্রান্ত নেটে একটি আলোকচিত্র রয়েছে, যা তার মৃত্যুর রহস্য পরিষ্কার করে দেয়৷ তাদের তদন্ত-অনুসন্ধানই এই ধারণা প্রমাণিত করেছে৷ তাছাড়া তাকে হত্যা করা হয়েছে মসজিদে হামলা শুরু করার একঘন্টারও অধিক সময় পরে এবং তারা ভালভাবেই জানে যে, তাকে কে হত্যা করেছে? সংক্ষেপে এতটুকুই বললাম৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ সরকার ও হামাস বন্দীশালায় মুজাহিদদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছে সে সম্বন্ধে কি আপনাদের নিকট কোন তথ্য রয়েছে?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ কারাগারে যুবকদের সাথে কিরূপ আচরণ করা হয়েছে তা আমাদেরকে তাঁরা জানিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন যে, প্রথমে তাঁরা যখন কারাগারে প্রবেশ করেছিল তখন প্রায় একমাসের চেয়ে অধিক সময়কাল পর্যন্ত তাঁদের চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল৷ যুবকরা টয়লেটে প্রবেশ করার সময়টুকু ব্যতিত বাকি পূর্ণ রমজান মাস চোখ বাঁধা অবস্থায় কাটিয়েছে৷ কী আর বলব! তারা যুবকদেরকে কুরআন তেলাওয়াত ও জামাতে নামাজ পড়তেও বাধা দিত, এমনকি রমজান মাসেও এবং সেই সময়টিতে যারা নিজেদের সাথে কুরআন রাখত তাঁদেরকে তারা প্রহার করত ও অপমানিত করত৷ তেমনিভাবে যারা কারাগারে জামাতে নামাজ পড়ত তাদেরকেও৷ পুরা রমজান মাসব্যাপী এভাবেই চলেছে৷ তারা যুবকদের হাত-পা ছড়িয়ে টান করে রাখত, এমনকি কোন কোন যুবককে তারা পঞ্চাশ দিনেরও বেশি সময় হাত-পা ছড়িয়ে টান করে রেখেছে৷ যেমনিভাবে তারা যুবকদেরকে তিন তিনদিন পরই কেবল এক ঘণ্টার জন্য মাটিতে বা চেয়ারে ঘুমানোর সুযোগ দিত৷ উপরন্তু প্রচণ্ডভাবে বেত্রাঘাত তো আছেই৷ কিছু ভাইদেরকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা নোংরা পদ্ধতি অবলম্বন করত, যেমন নখের ভিতরে তারা সরু খিলাল ঢুকিয়ে দিত৷

যুবকদের নিকট কারাগারে উল্লেখযোগ্য কিছু বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে৷ আর তা এই যে, তদন্তকারীরা কতিপয় যুবকদের বলেছে, মসজিদে হামলার সবকটি হামাস মিশরের কাছ থেকে শিখেছে এবং ঘটনার পর তারা তাদের কাছ থেকে একটি ধন্যবাদপত্র পেয়েছে৷ এবং তাদের কেউ কেউ যুবকদের বলেছে, এই নির্দেশ সরাসরি ইরান থেকে এসেছে৷ আমরা বিশেষভাবে উল্লেখ করছি যে, তারা যুবকদের মগজ ধোলাই করার জন্য তাদের শাইখদের উপস্থিত করত; কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ তারা তাওহীদের সন্তানদেরকে তাঁদের দ্বীন থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ ও পরাস্ত হয়েছে৷

কিছু ভাই কারাগারে চারমাসের বেশি সময় থেকেছে এবং তাদের কেউ কেউ এখনও কারাগারে রয়েছে৷ বর্তমানে তারা (হামাস সরকার) সার্বক্ষণিকভাবে যুবকদেরকে তলব করে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ করছে ও সালাফী শাইখদেরকে গৃহবন্দী করে রাখছে এবং শাইখদেরকে মানুষদের সামনে কোন ওয়াজ বা দরস প্রদান করতে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ সেখানে জিহাদি সালাফীদের মানহাজের বিরুদ্ধে প্রচণ্ডভাবে যুদ্ধ চলছে৷ যার ফলশ্রুতিতে তারা মুজাহিদিনের তহবিল ও সরঞ্জাম জব্দ করছে, তাঁদের রকেট লঞ্চারকে নজরদারিতে রাখছে এবং তাঁদের প্রতি ও তাঁদের ঘর-বাড়ির প্রতি স্থায়ী নিরীক্ষণ চালাচ্ছে ও তথ্যভিত্তিক যুদ্ধবিগ্রহ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ আর এ সবই মুজাহিদদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরুপ এবং তাঁদের ও তাঁদের পরিবার-সন্তানাদির জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয় এবং এর জন্য হামাসই একমাত্র দায়ী৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ  হামাস ও আল কাসসাম সদস্যদের প্রতি আপনার কোন বার্তা রয়েছে কি?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ হ্যাঁ, আমি তাদেরকে বলবঃ মুসলমানদের রক্তের ব্যপারে আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করুন ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠা করুন৷ আর আল কাসসামের মুখলিছ ভাইদের প্রতি আমি বলবঃ আপনাদের কি এখনো অনুধাবন করার সময় হয়নি যে, আপনারা কিসের জন্য জিহাদ করছেন এবং আপনাদের ফল কারা ভোগ করছে? উহা তো হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যেটিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে একটি কুফরী গণতান্ত্রিক প্রকল্পের জন্য৷ إنا لله وإنا إليه راجعون

আল্লাহ্ তাআ’লা আপনাদেরকে মুসলমানদের ওপর কর্তৃত্ব দান করেছেন; আর আপনারা তাঁদেরকে পরিচালিত করছেন আল্লাহর শরিয়ত ভিন্ন অন্য আইন দ্বারা৷ সুতরাং হে হামাসের সন্তানেরা! আপনারা কিসের অপেক্ষা করছেন? আপনারা কি সেই সময়ের অপেক্ষা করছেন যখন আপনাদেরকে আপনাদের গাফলতির ঘুম থেকে জাগ্রত করার জন্য আপনাদের নেতৃত্ব ইসরায়েলের হাতে হাত রাখবে? আমাদের দাবি হচ্ছে শরিয়ত; বরঞ্চ প্রতিটি তাওহীদবাদী মুসলিম মুজাহিদেরই দাবি এটা হওয়া উচিত৷ আমরা ছোট থেকে ছোট ও বড় থেকে বড় প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহ্ তাআ’লার শরিয়তের বিচার কামনা করি৷ আল্লাহ্ তাআ’লা বলেন-

إن الحكم إلا لله

“বিধান চলবে শুধু আল্লাহর!”

সুতরাং আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন এর বাইরে যে কোন বিচার করবে বা আইন প্রণয়ন করবে সে সকল ওলামায়ে কেরামের সম্মতিক্রমে কাফের৷ আমরা নিজ থেকে কোন নতুন কথা নিয়ে আসিনি৷ সুতরাং আল্লাহকে ভয় করুন এবং নিজেদের দ্বীনের বিষয়াবলী শিক্ষালাভ করুন এবং আপনাদের প্রত্যেকেই যেন নিজের অজান্তে ইহুদী বা খৃষ্টান হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখে৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ হামাস কি নিজ সদস্য ও জনগণের সামনে নিজেদেরকে নির্দোষ সাব্যস্ত করার জন্য কোন বৈধ যুক্তি দাবী করে থাকে?

ভাই আবু সাঈদ আল মুহাজিরঃ হ্যাঁ, তাদের ভাষ্যমতে আমরা বিদ্রোহী, আমরা মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করেছি; এজন্যে তারা আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে৷ আমরা বলি, এটা একটি ডাহা মিথ্যা কথা; কেননা যারা শরিয়তকে সালিস মানে না, শরিয়ত অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না তাদের তো কোন বৈধতা-ই নাই৷ বরং শরিয়তকে বিবর্তন করার কারণে তারা শিরকে লিপ্ত রয়েছে৷

আর তর্কের খাতিরে যদি আমরা মেনেও নিই যে, আমরা বিদ্রোহী তাহলে তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন যে, বিদ্রোহীরা কি কাফের নাকি মুসলিম? তাছাড়া ফুকাহায়ে কেরাম বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধের জন্য কিছু শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেনঃ

প্রথমতঃ তাদের সাথে আগে যুদ্ধ শুরু করা যাবে না; বরং তারা আগে শুরু করতে হবে৷

দ্বিতীয়তঃ তাদের দাবী যখন বৈধ-যুক্তিযুক্ত হবে তখন তা অবশ্যই পূরণ করা উচিত৷ আর আমাদের দাবী বৈধ৷ আর তা হচ্ছে শরিয়ত প্রতিষ্ঠা করা৷

তৃতীয়তঃ তাদের নিকট যদি কোন সংশয় থাকে তাহলে তা দূরীভূত করা জরুরী৷

চতুর্থতঃ তাদের আহতদের মেরে ফেলা হবে না৷ অথচ তারা যুবকদের আহত হওয়া ও তাদের কর্তৃক যুবকদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করা সত্ত্বেও তাঁদেরকে হত্যা করেছে৷

পঞ্চমতঃ তাদের পলায়নরতদের পশ্চাদ্ধাবন করা যাবে না৷ অথচ তারা সকল যুবককেই বন্দি করেছে।

ষষ্ঠতঃ তাদের অস্ত্রশস্ত্র কবজা করা যাবে না৷ অথচ তারা তা কবজা করেছে; বরং তাদের ঘরে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে৷

সপ্তমতঃ তাদের প্রতি এমন মাত্রাতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করা যাবে না, যা তাদেরকে ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে৷ অথচ তারা সেদিন এমন সব অস্ত্রও ব্যবহার করেছে, যা তারা ইহুদীদের ক্ষেত্রে পর্যন্ত ব্যবহার করেনি৷ সেদিন তারা ১৩০ টিরও বেশি RPG মিসাইল নিক্ষেপ করেছে, হাজার হাজার বুলেট ছুড়েছে, ছয়টি দোশকা মেশিনগান ব্যবহার করেছে এবং মিনারে একটি 107 রকেট নিক্ষেপণ করেছে ও ব্যারেট M99 এর মত আধুনিক স্নাইপার ব্যবহার করেছে, যা ইহুদীদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়নি৷ বরঞ্চ তাদের সবচাইতে বিপদজনক ও তিক্তকর বিষয় হচ্ছেঃ তারা ড্রামকে ড্রাম ও টনকে টন বিস্ফোরকদ্রব্য বাড়ির নিচে রেখে বাড়ির লোকদেরকে উড়িয়ে দিয়েছে৷ এভাবে তারা প্রায় তিনটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলেছে৷ কী আর বলব! এই অভিযানে তিনটি ব্যাটালিয়ন অংশগ্রহণ করেছে৷ ইত্যাদি আরো অনেক কিছু৷ আমরা যা কিছু বললাম আল্লাহ্ তাআ’লা সে সবগুলোর সাক্ষী৷

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীনঃ হে ভাই আবু সাঈদ! এই চমৎকার সাক্ষাৎকারটি প্রদানের জন্যে আল্লাহ্ তাআ’লা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন এবং আমরা আল্লাহ্ তাআ’লার কাছে প্রার্থণা করি যে, তিনি ফিলিস্তিনে তাওহীদের পতাকা উড্ডীন করে দিন ও আপনাদেরকে সাহায্য করুন৷

 

 

সফর ১৪৩১ হিজরী

শাবাকাত আনসারুল মুজাহিদীন

————————-

[1] শাইখ মানুষের কাছে “শাইখ আব্দুল লাতিফ মুসা” নামে পরিচিত ছিলেন। শাইখ ফিলিস্তিনের গাজাতে ১৯৫৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১১ বছর বয়সে মাধ্যমিক পড়া শেষ করেন। এরপর মেডিসিন বিষয় ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে Faculty of Medicine of Alexandria University তে ডক্টর ও শিক্ষক হিসাবে জয়েন করেন। সেখানে তিনি শাইখ সাঈদ আব্দুল আযিম, মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আল মুকাদ্দিম, শাইখ আহমাদ ফারিদ, এবং শাইখ হামদ ইবরাহীম এর কাছে ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেন।

 

তারপর তিনি গাজাতে খান ইউনুস শহরে Ahl Al Hadith Al Sharif Centre এ ৫ বছর হাদিস বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। খান ইউনুস শহরে ‘আহলুস সুন্নাহ মসজিদে’ ১৫ বছর খতিব ছিলেন, এরপর ‘Nour Ala Al Hadoud মাসজিদে’ ১৮ মাস খতিব ছিলেন, মাসজিদটি ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় ২০০৬ সালে ধ্বংস হয়ে গেলে তিনি ‘শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ মসজিদ’ এ ইমাম ও খতিব ছিলেন শহীদ হওয়ার আগপর্যন্ত। তিনি Medicine of the Rafah Martyrs Medical Centre এর পরিচালক থাকা অবস্থাতে তিনি পাশাপাশি মসজিদগুলোর খেদমতে ছিলেন।

 

শায়েখ ফিলিস্তিনের বড় মুফতি ছিলেন, শায়েখ কিছু ফতওয়ার কিতাব লিখেন। শাইখ বেশ কিছু কিতাবাদি লিখেছেন, যা জ্ঞানী সমাজে বহুল গ্রহণযোগ্য, তার কিছু নিম্নে দেওয়া হল-

الصوفية في ميزان الكتاب والسنة

الطريق السوي في اقتفاء أثر النبي عليه الصلاة والسلام

صفة صلاة النبي عليه الصلاة والسلام

البَــيِّــنـة – 30 سؤالاً وجوابًا في باب الجهاد

الياقوت والمرجان في عقيدة أهل الإيمان

 

নিচের লিংক থেকে কিতাবগুলো ডাউনলোড করুন-

http://www.ilmway.com/site/maqdis/MS_14218.html

 

শাইখের অসংখ্য অনুসারী ও ভক্ত তৈরি হয় ফিলিস্তিনসহ গাজার রাফাহ এলাকাতে, কয়েক হাজার তরুন শাইখের ইবনে তাইমিয়া মসজিদে জুম্মা পড়তে জড়ো হতেন। শাইখের সাথে আল কায়দার মুজাহিদদের সম্পর্ক ছিলো, শাইখ আল কায়দার মানহাজ অনুসরণ করতেন। আল কায়দার শাইখ আসেম মাকসিদির (হাফিজাহুল্লাহ) সাথে সম্পর্ক রাখতেন। রাফাহ’তে কয়েক শতাধিক (প্রায় ৫০০) আল কায়দার অনুসারী মুজাহিদ তৈরি হলে জুন্দ আনসারুল্লাহ নামে ২০০৮ সালের নভেম্বরে দল গঠন করা হয়।

[2] শাইখ আবু আব্দুল্লাহ আল মুহাজির নামে আল কায়েদার দুইজন শাইখ রয়েছেন। একজন জুন্দ আনসারুল্লাহর সামরিক কমান্ডার শাইখ খালেদ বানাত রহঃ, ইনি সিরিয়ান। আরেকজন হচ্ছেন শাইখ আবুল আফগান আল-মিসরি রহঃ, তিনি সিরিয়ান আল কায়েদা শাখা জাবহাতুন নুসরাহ ও পরবর্তীতে জাবহাত ফাতহুশ শামের মুফতি ছিলেন, ইনি মিসরের অধিবাসী ছিলেন।

[3] শাইখ আবু আব্দুল্লাহ আল মুহাজির রহঃ এর দুটি অডিও বার্তা আমাদের হস্তগত হয়েছে। শাইখের অন্য কোন রিসালাহ, বই ও ভিডিও আমরা খুঁজে পাইনি। নিম্নে অডিও দুটির লিংক দেওয়া হল-

১- https://archive.org/details/almhajer

২- https://archive.org/details/esdr2

[4] জুন্দ আনসারুল্লাহর মিডিয়া বিভাগ জান্নাহ মিডিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০০৯ সালে “গাজওয়াতুল বালাগ” নামে একটি ভিডিও রিলিজ করা হয়, যাতে যোদ্ধাদের ট্রেনিং ও ইহুদীদের উপর চালানো বেশ কিছু অপারেশনের ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়। নিচের লিংক থেকে ডাউনলোড করতে পারেন-

https://archive.org/details/Ghazwat-Albalagh-Ansar-allah

https://archive.org/details/blaag

[5] ইবনে তাইমিয়াহ মসজিদে শাইখের প্রদত্ত বয়ানের ভিডিও-

https://archive.org/details/APO-NOOR

 

নুখবাতুল ফিকর কর্তৃক বিশাল ডকুমেন্টারি সংকলন-

https://archive.org/details/Masjd-Abn-Timia

 

ইবনে তাইমিয়াহ মসজিদের ট্র্যাজেডি নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংকলন-

শাইখ আব্দুল লতিফ মুসার শাহাদাত বরণের পরের ভিডিও-

http://www.archive.org/download/ta84000/abdalatef2_512kb.mp4

 

শাইখ আব্দুল লতিফ মুসার জানাজা ও দাফনের ভিডিও-

http://www.archive.org/download/ta84000/jnaza_512kb.mp4

 

মুজাহিদদের উপর হামাসের মসজিদে হামলা করার ভিডিও-

https://goo.gl/cLf2Yh

 

গুলিবিদ্ধ মসজিদের ভিডিও-

http://www.archive.org/download/ta84000/abdalatdf_512kb.mp4

 

আল জাজিরা’র নিউজ-

http://www.archive.org/download/ta84000/jzera1_512kb.mp4

 

বিবিসি’র নিউজ-

http://www.archive.org/download/ta84000/bbc_512kb.mp4

 

রাশিয়ান চ্যানেলের নিউজ-

http://www.archive.org/download/ta84000/rusea_512kb.mp4

 

আল জাজিরা’র নিউজ-

http://www.archive.org/download/ta84000/jzera-enteha_512kb.mp4

 

ইবনে তাইমিয়াহ মসজিদ বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও-

http://www.archive.org/download/ta84000/tfjer_512kb.mp4

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + 1 =

Back to top button