জিহাদ ত্যাগকারী আলেম ও তালিবুল ইলমদের বিরল ও বিস্ময়কর সংশয় -শায়খ খালিদ আল হুসাইনান (রহিমাহুল্লাহ)
জিহাদ ত্যাগকারী আলেম ও তালিবুল ইলমদের
বিরল ও বিস্ময়কর সংশয়
শায়খ খালিদ আল হুসাইনান (রহিমাহুল্লাহ)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/PCKpTq2ioJ3DCpg
http://www.mediafire.com/file/F.pdf
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/GWoTmambRPscPeL
https://archive.org/download/kotipoi-alemer-sonshoi_202106/kotipoi-alemer-sonshoi.docx
**************************************
কতিপয় আলেম ও তালিবুল ইলমদের বিরল বিস্ময়কর সংশয়
শায়খ খালিদ আল হুসাইনান (রহিমাহুল্লাহ
সূচীপত্র
কতিপয় আলেম ও তালিবুল ইলমদের বিরল বিস্ময়কর সংশয়. 6
কারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠাংশ?. 14
কিভাবে শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা সত্য বলে প্রমাণিত হবে?. 18
কুরআনে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্যাবলী.. 22
কেন তুমি রাগ কর এবং গোস্বায় ফেটে পড়?. 26
মুজাহিদদের বিরুদ্ধে সিংহ আর কাফেরদের বেলায় উটপাখী.. 27
কেন আপনারা কিতাবুল জিহাদকে অতিক্রম করে চলে যান?. 28
এমন কতগুলো বিষয়, যাতে বিবেক থমকে যায়. 29
কতিপয় তালিবুল ইলমের নিকট আরেকটি বিরল প্রতিবন্ধক হল, তারা বলে: উলামাগণ জিহাদে বের হননি। 31
বনী ইসরাঈলীদের কিছু বৈশিষ্ট্য.. 34
তাহলে কেন এই ধোঁকা ও পিছুটান?. 36
তুমি কি হকের সাথে না শক্তির সাথে?. 38
কতগুলো চিন্তাধারা, যা সঠিক করা প্রয়োজন. 40
কতিপয় আলেম ও তালিবুল ইলমদের বিরল বিস্ময়কর সংশয়
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার জন্য। রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তার সাহাবীদের উপর।
এ কথাগুলো কিছু গবেষণা, নির্দেশনা, জিজ্ঞাসা ও আমার অন্তরের চিন্তা-ভাবনার ফসল, যা আমার বন্ধু ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করা প্রয়োজন মনে করি। তাদের উদ্দেশ্যে উপহার যাদের সাথে পঁচিশ বছর যাবৎকাল অতিবাহিত করেছি। তাদের মঙ্গল কামনা এবং তাদের প্রতি মমতা ভালোবাসা স্বরূপ।
কেন নয়? আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ দিয়েছেন পরস্পর ধৈর্য, দয়া ও হকের ওসিয়ত করতে।
যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا بِالْمَرْحَمَةِ
“আর তোমরা পরস্পর ধৈর্য ও দয়ার অসিয়ত কর।” (আল বালাদ ৯০: ১৭)
আর কতবারই না তিনি বলেছেন,
وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
“তোমরা পরস্পর হকের ও ধৈর্যের অসিয়ত কর।” (আল আসর ১০৩: ৩)
তাই আমাদের মধ্যে রয়েছে পারস্পারিক দয়া-মায়া আর অন্যের মঙ্গল কামনার অসিয়তের সম্পর্ক। জেনে রাখুন, আল্লাহ তা’আলা আপনার উপর দয়া করুন! যখনই আপনি জিহাদে বের হওয়ার জন্য নিয়ত করবেন, তখনই শয়তান তার বাহিনীসহ সকল প্রকারের ওয়াসওয়াসা ও ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয়। আপনাকে জিহাদ থেকে বিরত রাখার জন্য।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
وكان الشيطان للإنسان خذولا
“আর শয়তান মানুষকে বঞ্চিত রাখে”
অর্থাৎ তাকে হক থেকে ফিরিয়ে রাখে এবং বাতিলের কাজে ব্যবহার করে ও সেদিকে আহ্বান করে।
যেমন নাসায়ী শরীফে ও অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত আছে, হযরত সাবুরা ইবনে আবু ফাকেহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ হতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেছেন,
“শয়তান বনী আদমের সকল রাস্তায় ওঁত পেতে থাকে, কেউ ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং বলে, তুমি ইসলাম গ্রহণ করবে, আর তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে ছেড়ে দিবে? তখন সে তার কথা অমান্য করে ও ইসলাম গ্রহণ করে অতঃপর শয়তান তার হিজরতের পথে ওঁত পেতে থাকে এবং বলে আরে তুমি হিজরত করে তোমার দেশ ও বাসস্থান ত্যাগ করবে, আর তুমি তো জান হিজরতকারী ব্যক্তির উদাহরণ হচ্ছে, ঐ ঘোড়ার ন্যায় যেটি দীর্ঘ সময় চলতেই থাকে। কিন্তু সে শয়তানের কথা অমান্য করে হিজরত করে।
অতঃপর শয়তান তার জিহাদের পথে ওঁত পেতে থাকে এবং বলে তুমি জিহাদ করবে? জিহাদ হচ্ছে জান ও মালের কুরবানি! তাতে তুমি লড়াই করে নিহত হয়ে যাবে আর তোমার স্ত্রীর অন্যত্র বিবাহ হয়ে যাবে! তোমার সম্পদ বণ্টন হয়ে যাবে! কিন্তু সে ব্যক্তি শয়তানের কথা অমান্য করে জিহাদে বের হয়ে যায়।”
অতঃপর রসূল ﷺ বলেন,
“যে ব্যক্তি অনুরূপ করল, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব। সে যদি নিহত (শহীদ) হয়, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব।
সে যদি পানিতে ডুবে নিহত হয়, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব। অথবা যাকে তার সওয়ারী ফেলে দেয়, এতে সে নিহত হয়, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব।”
অতএব, চিন্তা করুন কিভাবে নাবী করিম ﷺ শয়তানের চক্রান্ত ও কৌশলের কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, সে ইসলাম, হিজরত ও জিহাদ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে।
তাই তার ধোঁকায় পড়া ও তার কথা অনুযায়ী আমল করা থেকে সতর্ক থাকো, অন্যথায় তুমি শয়তানের গুলি হয়ে যাবে। জেনে রেখো, আল্লাহ তা’আলা কারো হক নষ্ট করেন না। তাই তুমি যেন বঞ্চিত না হও।
অতএব, চিন্তা করুন কিভাবে নাবী করিম ﷺ শয়তানের চক্রান্ত ও কৌশলের কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, সে ইসলাম, হিজরত ও জিহাদ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে।
আশ্চর্য কথা যে, অনেক শিক্ষার্থী যখন শুনে, কোন ব্যক্তি জিহাদ ব্যতীত অন্য কোন ভাল কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে তখন সে তাকে বাধা দেয় না বিরতও রাখে না।
কিন্তু যখন কেউ জিহাদের কাজে এগিয়ে যায় এবং কুফফারদের সাথে লড়াই করতে চায়.. যেটি সর্বোত্তম ইবাদত (যেমনটা সত্য নাবী ﷺ বলেছেন), তখন সে তাকে তা হতে ফিরিয়ে রাখতে চায় এবং যেকোনো উপায়ে বাধা দেয়। তাহলে এটা আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় জিহাদের ইবাদাতকে অপছন্দ করা ও তার সাথে শত্রুতা ব্যতীত আর কি? আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
“যারা রসূল ﷺ এর বিরোধিতা করে জিহাদে না গিয়ে ঘরে বসে ছিল তারা খুশি এবং তারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জান-মাল দিয়ে লড়াই করতে অপছন্দ করে। আর তারা বলে তোমরা এই গরমে বের হয়ো না। হে নবী আপনি বলে দিন, জাহান্নামের আগুন আরো বেশি উত্তপ্ত, যদি তারা বুঝত। অতএব তারা অল্প হেসে নিক, অতঃপর বেশি কাঁদবে। তারা যা উপার্জন করেছে, তারই প্রতিদানস্বরূপ।”
আল্লামা সাদি (রহঃ) বলেন,
“আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন যে, জিহাদ থেকে পিছিয়ে থেকে আনন্দ প্রকাশ করা ও জিহাদের ব্যাপারে পরোয়া না করাই, মুনাফিকদের ঈমান না থাকা ও ঈমানের উপর কুফরকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রমাণ।
রসূল ﷺ এর বিরোধিতা করে জিহাদ বিমুখ হয়ে আনন্দিত হওয়া! এতে জিহাদে বের না হওয়ার সাথে আরেকটি বিষয় যুক্ত হলো, তা হচ্ছে আনন্দিত হওয়া ও হারামের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।”
মুনাফিকরা আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় জান মাল দিয়ে জিহাদ করাকে অপছন্দ করে। এটা মুমিনদের স্বভাবের বিপরীত। কেননা মুমিনগণ কোন কারণবশত পিছিয়ে থাকলেও তাতে চিন্তিত হন এবং চরমভাবে দুঃখিত হন। মুমিনগণ আল্লাহর রাস্তায় জান মাল দিয়ে জিহাদ করতে ভালবাসেন।
কেননা তাদের অন্তরে রয়েছে প্রগাঢ় ঈমান। আর তারা আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ, প্রতিদান ইত্যাদির আশা করে। অপরদিকে মুনাফিকরা বলে, তোমরা গরমে বের হয়ো না। অর্থাৎ গরমে বের হওয়া অনেক কষ্টকর। তারা সাময়িক প্রশান্তিকে চিরস্থায়ী আনন্দের উপর প্রাধান্য দিয়েছে।
হে মুসলিম ভাই, কেন তারা তোমাকে বাধা দেয় ও ফিরিয়ে রাখে, যখন তুমি জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করো? এর কারণ ও রহস্য কি?
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে জানেন, যারা তোমাদেরকে জিহাদ থেকে ফিরিয়ে রাখে। তারা তাদের বন্ধুদেরকে বলে, তোমরা আমাদের সাথে থাক। তারা নিজেরাও জিহাদে বের হয় না, তবে খুব কম।”
ইমাম তাবারী (রহিঃ) বলেন,
“আল্লাহ তা’আলা ভালভাবেই জানেন, যারা লোকদেরকে রসূল ﷺ থেকে ফিরিয়ে রাখে ও তার সাথে জিহাদে শরীক হওয়া থেকে বাধা দেয়। এটা তাদের নিফাকের কারণে এবং ইসলাম ও মুসলিমদেরকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে।
“এবং যারা তাদের ভাইদেরকে বলে: আমাদের কাছে আস।” অর্থাৎ আমাদের সাথে থাক ও মুহাম্মদকে ﷺ ছাড়। তাঁর সাথে জিহাদে শরীক হয়ো না। কেননা আমরা তোমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করছি, হয়ত তারা ধ্বংস হয়ে গেলে তোমরাও শেষ হয়ে যাবে।
‘আর তারা নিজেরাও জিহাদে শরীক হয় না, তবে খুব অল্প’ অর্থাৎ তারা জিহাদে বের হয়ই না, যদিও শরীক হয়, তবে ভিন্ন কারণে।”
আশ্চৰ্যজনক বিষয়ের মধ্যে আরেকটি হলো, অনেক শিক্ষার্থী যখন দেখে কোন ব্যক্তি জিহাদের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করছে, তখন সে খুব রাগান্বিত হয়, তার চেহারার রং বদলে যায়, রগগুলো ফুলে যায়, যেন তাকে সাপে দংশন করেছে। আর তাকে বলে তুমি কেন ইলম ও উলামাদের ফজিলত সম্পর্কে বয়ান করছো না।
আর যদি কোন ব্যক্তি ইলমের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করে তখন তাকে অপছন্দ করে না এবং এ কথাও বলে না যে কেন তুমি জিহাদ ও শাহাদাতের ফজিলত সম্পর্কে বয়ান করছো না!
কেন দু’টি ইবাদাতের মধ্যে এই পার্থক্য? অথচ উভয় বিষয়েই কোরআন ও হাদিসে বর্ণনা রয়েছে! তুমি তোমরা অন্তরকে প্রশ্ন কর এবং দেখ সেখানে কি সমস্যা রয়েছে।
তুমি কি জানো? অধিকাংশ আয়াত ও হাদিস নামায ও জিহাদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“অধিকাংশ আয়াত ও হাদিস নামাজ ও জিহাদ সম্পর্কিত।“
নাবী করিম ﷺ যখন কোন রোগীকে দেখতেন তখন এই দোয়াটি বলতেন,
“হে আল্লাহ তুমি তোমার বান্দাকে আরোগ্য দান কর, যাতে সে তোমার জন্য নামাজে শরীক হতে পারে এবং তোমার শত্রুদের সাথে লড়াই করতে পারে।”
নাবী করিম ﷺ আরো বলেন,
“যাবতীয় কাজের মূল হচ্ছে ইসলাম। এর খুঁটি হচ্ছে নামাজ। আর এর সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ।”
আরেকটি আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী, যখন কোন বুজুর্গের কারামত শুনে তখন আনন্দিত হয় এবং এটা আলোচনা করে বেড়ায়। কিন্তু যখন কোন মুজাহিদের কারামত সম্পর্কে বা শহীদের কারামত সম্পর্কে কিছু শুনে তখন তা অপছন্দ করে, তা প্রচার করে না।
সেটাকে ওলীদের কিছু কিছু কল্প-কাহিনীর মত কুসংস্কার মনে করে।
কেন এই পার্থক্য? অথচ তারা সকলেই তো আল্লাহর ওলি!
তুমি কি জানো, শহীদগণ সর্বোচ্চ স্তরের ওলীদের মর্যাদা লাভ করেন?
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহিঃ) বলেন,
“নিশ্চয় শহীদগণকে সর্বোচ্চ ওলির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর তারা আল্লাহ তা’আলার বিশেষ নৈকট্যশীল বান্দা। সিদ্দিকগণের পরের মর্যাদা হচ্ছে শহীদগণের। আল্লাহ তা’আলা ঐ সকল শহীদগণকে ভালবাসেন, যারা তার মহব্বত ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রক্ত প্রবাহিত করে। নিজ জানের উপরও তার ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেয়। একমাত্র সর্বশক্তি দিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করা ছাড়া এ মর্যাদা পাওয়ার কোন পথ নেই।”
আরো যে সকল রোগ ছড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের মাঝে তা হচ্ছে, তারা মুজাহিদদের ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা শুনতে পেলে আনন্দিত হয়। যেন এটা তাদের বসে থাকার নীতিকে আরো বেশি শক্তিশালী করে। আর মনে মনে এ ধরনের বিপদে পড়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
মুজাহিদগণের খবরাখবর নিতে থাকে, যেন তাদের বিপদে খুশি হতে পারে। আর তার বের না হওয়ার নীতি এবং পরিণতির ব্যাপারে তার সঠিক!! দৃষ্টিভঙ্গি আরো বেশি মজবুত হয়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তা’আলা বলেন:
“যে ব্যক্তি কৃপণতা করল সে নিজের সাথেই কৃপণতা করল।”
অর্থাৎ এর কুফল সে নিজেই ভোগ করবে।
“আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, তোমরা তার মুখাপেক্ষী। তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে আরেকটি জাতিকে আনয়ন করবেন, যারা তোমাদের মত হবে না।”
অপরদিকে তুমি দেখতে পাবে, মুজাহিদদের বিজয় সংবাদ শুনলে তারা আনন্দিত হয় না। তবে কোনো মুজাহিদের জন্যও জায়েজ হবে না কোন আলেমের ভুল হলে আনন্দিত হওয়া। বরং সকলের করণীয় হল, পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়ার সম্পর্ক সৃষ্টি করা। কেননা সকল মুমিনগণ একটি শরীরের ন্যায়।
আরেকটি রোগ, যা ছড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের মাঝে, যা সত্যিকারার্থেই বেদনাদায়ক, তা হলো, যখন তারা জিহাদে যাওয়ার পথে কোন প্রতিবন্ধকতা বা ওজর দেখতে পায়, তখন খুশি হয়। চাই তা কোন আলেমের ফতোয়ার মাধ্যমে হোক বা কোন জিহাদি বইয়ের খণ্ডন থেকে হোক।
অথচ সাহাবাগণ (রাঃ) জিহাদের পথে কোন বাধা আসলে দুঃখিত হতেন ও ক্রন্দন করতেন।
কতই না ব্যবধান আমাদের মাঝে ও সাহাবাদের মাঝে। সাহাবা রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈনের ছিল জিহাদের প্রতি ভালোবাসা, আকর্ষণ ও প্রবল আগ্রহ। অপরদিকে আমরা জিহাদে বের না হওয়ার যত বাহানা তালাশ করি। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
“পশ্চাতে অবস্থানকারীরা আল্লাহর রসূলের বিরোধিতা করত: পশ্চাতে বসে থেকে আনন্দিত এবং তারা নিজেদের জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে অপছন্দ করে। আর বলে: তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না। তুমি বল: জাহান্নামের আগুন এর চেয়ে গরম, যদি তারা বুঝত। তাই তারা সামান্য হেসে নিক, অত:পর অধিক পরিমাণে কাঁদবে। এটা তাদের অর্জিত আমলের প্রতিফলস্বরূপ।”
শায়খ সা’দী বলেন:
আল্লাহ তা’আলা, পশ্চাতে অবস্থান করে মুনাফিকদের উৎফুল্ল হওয়া ও এ ব্যাপারে তাদের পরওয়ানহীন হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। যা তাদের ঈমান না থাকা ও ঈমানের উপর কুফরকে প্রাধান্য দেওয়া প্রমাণ করে।
অথচ সাহাবাগণ (রাঃ) জিহাদের পথে কোন বাধা আসলে দুঃখিত হতেন ও ক্রন্দন করতেন।
কতই না ব্যবধান আমাদের মাঝে ও সাহাবাদের মাঝে। সাহাবা রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈনের ছিল জিহাদের প্রতি ভালোবাসা, আকর্ষণ ও প্রবল আগ্রহ। অপরদিকে আমরা জিহাদে বের না হওয়ার যত বাহানা তালাশ করি। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
“পশ্চাতে অবস্থানকারীরা আল্লাহর রসূলের বিরোধিতা করত: পশ্চাতে বসে থেকে আনন্দিত” – এটা হচ্ছে, পশ্চাতে বসে থাকার উপর অতিরিক্ত বিষয়। কারণ এই পশ্চাতে বসে থাকা একটি হারাম কাজ। আর তার উপর অতিরিক্ত হলো গুনাহের কাজে সন্তুষ্ট হওয়া।
“এবং তারা নিজেদের জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে অপছন্দ করে।” – এটা হল মুমিনদের অবস্থার বিপরীত। মুমিনগণ কোন ওজরের কারণে যদিও পশ্চাতে থাকে, কিন্তু তারা এর কারণে দুঃখিত হয় এবং সীমাহীন আফসোস করে। আর জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করাকেই ভালবাসে। কারণ তাদের অন্তরে ঈমান রয়েছে এবং তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া কামনা করে।
“তারা (মুনাফিকরা) বলে: তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না” অর্থাৎ গরমের কারণে আমাদের জন্য বের হওয়া কষ্টকর। তারা অস্থায়ী সীমিত আরামকে স্থায়ী পূর্ণাঙ্গ আরামের উপর প্রাধান্য দেয়।
আল্লাহ তাআলা জিহাদের ব্যাপারে সাহাবাদের (রাঃ) অবস্থা নিয়ে আমাদেরকে খবর দিয়েছেন। যখন তাদের কেউ ওজরের কারণে বের হতে পারতেন না তখন তাদের কি অবস্থা হত?!
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
“তাদের প্রতিও কোন অভিযোগ নেই, যারা তোমার নিকট বাহন চাইতে আসার পর তুমি বলেছ, আমি তোমাদেরকে দেওয়ার মত কোন বাহন পাচ্ছি না। আর তখন তারা এমন অবস্থায় ফিরে যায় যে, তাদের চক্ষু হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে, এই অনুতাপে যে, তারা ব্যয় করার মত কিছু পাচ্ছে না!”
আরেকটি বিষ্ময়কর ব্যাপার এই যে, অনেক শিক্ষার্থী এমন রয়েছে, যারা মুজাহিদগণের ভুলের কথা শুনে নিজেদেরকে জিহাদের ফজিলত হতে বঞ্চিত রেখেছে।
সে কি কখনো নিজেকে একথা জিজ্ঞেস করেছে যে, যখন খালেদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বনু খুজাইমা গাগোত্রের উপর আক্রমণ করেছিলেন, তখন সে উপস্থিত থাকলে খালেদ (রাঃ) এর সাথে বের হত কি না?
অথবা অনেক আলেম মাসায়েলের ক্ষেত্রে ভুল করলে কি সে একারণে ইলম থেকে নিজেকে মাহরুম রাখবে? কোন বিবেকবান ব্যক্তিই তো এরূপ করবে না।
আরেকটি আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী এজন্য জিহাদের ফজিলত হতে বঞ্চিত থাকে যে, সে যে শায়খের নিকট দরশ নিয়েছে, তিনি কখনো জিহাদে বের হননি। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন যে, তার ইমাম নাবী মুহাম্মাদ ﷺ জিহাদে বের হতেন। আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমে নাবী করিম ﷺ সম্পর্কে বলেন,
“কিন্তু রসূল ও যারা তার সাথে ঈমান এনেছে, তারা জান-মাল দিয়ে জিহাদ করে। আর এ সকল লোকদের জন্যই রয়েছে সর্ব প্রকার কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম।”
এটা কি বুদ্ধির কথা যে, কোন মুসলিম নিজেকে ইবাদত ও নেক আমল থেকে বঞ্চিত রাখবে এই কারণে যে, তার উস্তাদ সেই আমলটি করেনি।
তোমার শায়খই কি তোমার অন্তরে রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে অধিক মর্যাদাবান? আল্লাহ তাআলা তো তোমাকে শুধু নাবী ﷺ এর আনুগত্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন!
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
“সেদিন তিনি তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রসূলদের আহ্বানে কি উত্তর দিয়েছিলে?”
আরেকটি আশ্চর্যজনক বিষয় ও শয়তানের ধোঁকা হচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী, যখন কোন ব্যক্তিকে জিহাদে বের হতে দেখে, তখন তাকে বলে শহিদের মর্যাদার চেয়ে সিদ্দিকগণের মর্যাদা উপরে।
এর উত্তরে বলে দিন:
১. কোন সাহাবা (রাঃ) কি সিদ্দিকগণের মর্যাদা শহীদদের চেয়ে বেশী, এ যুক্তিতে জিহাদ ছেড়ে দিয়েছেন?
২. সে কি আগে থেকে জানতে পেরেছে যে, তার সিদ্দিকগণের মর্যাদা লাভ হয়েছে? তার কি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন গ্যারান্টি আছে?
৩. কেউ কি নিজেকে যথেষ্ট মনে করে একথা বলতে পারবে যে, সিদ্দিকগণের মর্যাদায় সে পৌঁছে গেছে, তাই তার জিহাদে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই?
৪. কোন সিদ্দিকের কি এই বৈশিষ্ট্য হতে পারে যে, তিনি মানুষদেরকে জিহাদ থেকে বঞ্চিত রাখবেন? অথচ এটা তো মুনাফিকদের গুণ!
৫. জিহাদ কি (সিদ্দিক ও শহীদ) দু’টি গুণকে এক সাথে অর্জন করতে বাধা দেয়?
৬. হযরত আবু বকর (রাঃ) তিনি ছিলেন সিদ্দিকগণের প্রধান ও ইমাম। তিনি সততার দিক থেকে এই উম্মতের সকলের উপরে, এমনকি তাকে প্রকাশ্যে সিদ্দিক উপাধি দেওয়া হয়েছে, তিনিও তো জিহাদের প্রতি অনেক আগ্রহী ছিলেন। তাঁর জীবনী বহু কুরবানী ও সাহসিকতায় পরিপূর্ণ। তিনি নবী করিম এর সাথে সকল জিহাদে শরীক হয়েছেন।
তুমি যদি সিদ্দিকগণের মর্যাদা পেতে চাও, তবে কেন তুমি হযরত আবু বকর (রাঃ) এর আদর্শের অনুসরণ কর না?
তুমি কি জানো, সিদ্দিকগণের মর্যাদা পাওয়ার অন্যতম রাস্তাটি হচ্ছে জিহাদ?
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
“নিশ্চয় মুমিন তারা, যারা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, অতঃপর তাতে কোন সন্দেহ করে না এবং তারা জান মাল দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করে। তারাই হচ্ছে সত্যবাদী (বা সিদ্দিকুন।)”
আল্লামা সাদি (রহঃ) বলেন:
এখানে ‘মুমিনগণ’ বলে প্রকৃত মুমিনগণ বুঝানো হয়েছে।
“নিশ্চয় মুমিন তারা, যারা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করে অতঃপর তাতে কোন সন্দেহ করে না।”
অর্থাৎ যারা ঈমান ও জিহাদকে একত্রিত করে। কেননা যিনি কাফেরদের সাথে জিহাদ করেছেন, এটা তার অন্তরে পরিপূর্ণ ঈমান থাকার প্রমাণ। কেননা যে অন্যের বিরুদ্ধে ইসলামের জন্য, শরিয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করে, তার জন্য নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা খুবই স্বাভাবিক।
যে জিহাদ করতে সমর্থ হয়নি, এটাই তার ঈমান দুর্বল হওয়ার দলীল।
আর আম্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ঈমানের মধ্যে সন্দেহ না থাকাকে শর্ত করেছেন। কারণ প্রগাঢ় বিশ্বাসযুক্ত ঈমানই উপকারী ঈমান। সেই ঈমান এর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না।
তারাই সত্যবাদী – অর্থাৎ যারা সুন্দর আমলের মাধ্যমে ঈমানকে সত্যে পরিণত করেছেন। কেননা সততা এমন একটি দাবি, যার জন্য দাবিকারীকে প্রমাণ পেশ করতে হয়।
আর এটাই হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে বড় দাবি, যার উপর সৌভাগ্য-সফলতা নির্ভর করে।
অতএব যে এর দাবি করে এবং সাথে সাথে এর প্রমাণ স্বরূপ আমলের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করে, সেই প্রকৃত মুমিন। আর যে এমনটি করে না, সে স্বীয় দাবিতে সত্যবাদী নয়। আর এই দাবি দ্বারা তার কোন উপকারও হবে না। কেননা অন্তরের ঈমানের অবস্থা আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কেউ জানেন না।
কারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠাংশ?
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেনঃ
এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ তারা, যারা সবচেয়ে বেশি রসূল ﷺ এর অনুসরণ করেছে। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন ঈমানের সাথে জিহাদে শরীক হয়।
যেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
“নিশ্চয় মুমিন তাৱা, যারা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, অতঃপর এতে কোন সন্দেহ পোষণ করে না।”
শয়তানের আরেকটি ধোঁকা ও প্রবঞ্চনা এই যে, যারা আল্লাহ তা’আলার এই নির্দেশকে পরিত্যাগ করে এবং নিজ চিন্তা ও কল্পনার উপর নির্ভর করে দেশে বসে থাকে; জিহাদে বের হয় না, তারা অনেক সময় উভয় মর্যাদা হতেই বঞ্চিত হয়।
না শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করে, না সিদ্দিকগণের মর্যাদা লাভ করে। শয়তান তাকে দু’টি ক্ষতির মধ্যে ফেলে দেয়।
অনেক শিক্ষার্থীকে জিহাদে বাধাদানকারী আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, সে বলে: নিশ্চয় উলামাদের মর্যাদা শহীদদের চেয়ে বেশী।
এর উত্তরে বলব:
১. সাহাবাগণ কি এই যুক্তিতে জিহাদ ছেড়ে দিয়েছেন যে, উলামাদের মর্যাদা শহীদদের চেয়ে বেশি?!
২. কোন মুসলিমের, ইলমের ফজিলত ও জিহাদের ফজিলত উভয়টি অর্জন করতে কোন বাধা আছে কি? কেন সে উভয় ফজিলত অর্জন করে দু’টি মর্যাদা হাসিল করবে না?
৩. কোনো আলেমের বৈশিষ্ট্য কি এটা হতে পারে যে, সে জিহাদকে খাটো করে দেখবে, জিহাদের ব্যাপারে ধোঁকায় পড়ে থাকবে এবং উম্মতের পবিত্র ভূমি ও সম্ভ্রম প্রতিরক্ষার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে? নাকি সে-ই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় জিহাদে বের হবে, পবিত্র ভূমি ও সম্ভ্রমের প্রতিরক্ষা করবে এবং নিজের জান মাল কুরবানি করে সকলের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
৪. সাহাবা ও তাবিয়ীদের মধ্যে আলেমগণ জিহাদের আগ্রহ রাখতেন এবং শাহাদাতের আশা পোষণ করতেন। কেউ সিরাতের কিতাবাদী অধ্যয়ন করলেই জানতে পারবে, খোলাফায়ে রাশেদীন ও আলেম সাহাবীগণের (রাঃ) সাহসিকতা ও কুরবানি কেমন ছিল।
৫. শয়তানের ধোঁকার মধ্যে একটি হল, অনেক সময় মুসলিমগণ জিহাদের নির্দেশ ত্যাগ করে আলেমের মর্যাদা হতেও বঞ্চিত হয়। তাহলে সে কোনটিই অর্জন করতে পারল না। শয়তান তার দু’টি ক্ষতি করল।
কেউ কি নিজেকে এমন ভাবতে পারে যে, সে হক্কা আলেমের মর্যাদা অর্জন করেছে, তাই তার জিহাদে বের হওয়ার দরকার নেই ও শাহাদাতের মর্যাদা দরকার নেই।
কে হক্কানি আলেম?
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহিঃ) বলেন,
“পরবর্তী আলেমগণের এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, কোন আলেমকে ততক্ষণ পর্যন্ত আলেমে রাব্বানি বলা হবে না, যতক্ষণ না সে হক জানে, তার উপর আমল করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়। অতএব যে ইলম অর্জন করে নিজে এর উপর আমল করেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে, তিনিই সৃষ্টির কাছে মহান হিসাবে পরিচিত হন।”
অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন, আমরা ইলম অর্জন বাদ দেওয়ার কথা বলছি, আসলে তা নয়। আমরা ইলম ও জিহাদকে সমন্বয় করার কথা বলছি। আর এ বিষয়টি নিয়ে ইখতেলাফও রয়েছে যে, কোনটি উত্তম? জিহাদ না ইলম।
আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন মুসলিম যেন জিহাদে শরীক হওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়। বিশেষ করে যখন সে ইলম অর্জন করে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়। ইলম কি জিহাদ ত্যাগের নির্দেশ দেয়? দুনিয়াকে আকড়ে ধরতে ও তার প্রতি আকৃষ্ট হতে শিক্ষা দেয়?
নাকি ইলম জিহাদের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে? আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে সাক্ষাতের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে এবং দুনিয়া বিমুখতা সৃষ্টি করে।
যারা রসূল ﷺ এর জিহাদ সংক্রান্ত হাদিসগুলো অধ্যয়ন করেছে, যেগুলো বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য কিতাবে রয়েছে, তাদেরকে বলছি: সেগুলোর উপর আপনাদের আমল কোথায়? নাকি শুধু পড়ার জন্য; আমলের জন্য নয়?
রসূল ﷺ ছিলেন সকল আলেমগণের সর্দার ও প্রধান, তিনিও জিহাদে বের হতেন, শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতেন, তরবারি উঠাতেন; মসজিদে বসে মানুষদেরকে ইলম শিক্ষা দেওয়াকে যথেষ্ট মনে করেননি।
সাহাবীগণ (রাঃ) জিহাদ করা অবস্থায়ও ইলম অর্জন করতেন। অনেক মাসায়েল তারা জেনে নিতেন। অনেক আয়াত ও শরিয়তের বিধান জিহাদে থাকা অবস্থায় নাযিল হয়েছে।
কোন আলেম অথবা ছাত্র জিহাদের ময়দানে বের হয়ে ইলমি কিতাব ও রিবাতের বিষয়গুলো একে অন্যকে শিক্ষা দিতে কোন বাধা আছে কি? তারা তো দু’টি ইবাদত একসাথে করতে পারেন।
একজন ছাত্র ও জিহাদের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব আছে কি? জিহাদ তো কোন মুজাহিদকে ইলম অর্জন করতে বাধা দেয় না বা অন্যকে শিক্ষা দিতেও বাধা দেয় না। এমনভাবে ইলম অর্জনও জিহাদ ও রিবাতকে বাধা দেয় না। আমাদের পূর্ববর্তী নেককারগণ চমৎকার দৃষ্টান্ত পেশ করে গেছেন ইলম ও জিহাদের সমন্বয় সম্পর্কে।
যেমন ইমাম ও মুজাহিদ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ। তিনি ইলম শিক্ষা দিতেন ও হাদিসের দরশ দিতেন জিহাদ ও রিবাতের ময়দানে থাকা অবস্থায়।
হে শিক্ষার্থী! জেনে রেখ, অনেক মুখস্থ করা, অনেক কিতাব পড়া, অনেক মাসায়েল জানা ও অনেক সংকলন করার মাঝেই শুধু কল্যাণ রয়েছে এমন নয়। বরং তুমি যা জেনেছো, তার উপর আমল করাই হচ্ছে মূল কল্যাণ। এটাই বান্দাকে আল্লাহ তা’আলার নিকট উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন করে।
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন,
“‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা অনেক স্তর উন্নত করবেন।’
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা আলেমদের প্রশংসা করেছেন। আয়াতটির উদ্দেশ্য হল; আল্লাহ তা’আলা যাদেরকে ইলম দিয়েছেন, তাদের মর্যাদা ঐ সকল ঈমানদারদের উপর উন্নত করেছেন, যাদেরকে ইলম দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ দ্বীনি মর্যাদা। যদি তারা আমল করে নির্দেশ অনুযায়ী।”
শয়তানের আরেকটি ধোঁকা ও প্রবঞ্চনা হচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী বলে: এখন জিহাদে বের হয়ো না, আগে ইলমের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা অর্জন করো।
এর জবাবে আমি বলবঃ
১. সাহাবাগণ (রাঃ) কি জিহাদ ছেড়েছেন বা বিলম্ব করেছেন এই দোহাই দিয়ে যে, তারা ইলমে পরিপূর্ণ হননি?
২. তুমি কি জানো? যখনই তুমি বিলম্ব করতে থাকবে, তোমার বয়স বাড়তে থাকবে, তোমার জিহাদি মনোভাব দুর্বল হতে থাকবে।
তোমার শরীর ভারী হয়ে যাবে, ব্যস্ততা বেড়ে যাবে, দায়িত্ব বেড়ে যাবে, নিজ ভূমিতে থেকে যাওয়াকে পছন্দ করবে, জিহাদে অলসতা আসবে!! তাই সতর্ক হও।
৩. আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার মাঝে ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ান ”
আল্লামা সাদি (রহিঃ) বলেন,
আল্লাহর নির্দেশ যখন প্রথমবার তোমার নিকট আসে, তখন তুমি তা ফিরিয়ে দেওয়া হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ হতে পারে তোমার অন্তরের অবস্থার পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
কেননা আল্লাহ তা’আলা বান্দার অন্তরকে তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন, সেভাবেই পরিবর্তন করেন। তাই প্রত্যেকের এই দোয়া বেশি পড়া উচিৎ–
“হে অন্তর পরিবর্তনকারী আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল রাখো। হে অন্তর রুপান্তরকারী! আমার অন্তরকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরাও।”
৪. অগ্রসর হও বিলম্ব করো না-
হজরত আবু সাঈদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ ﷺ যখন কোন সাহাবীকে পিছিয়ে থাকতে দেখতেন, তখন বলতেন,
“তোমরা সামনে অগ্রসর হও, অতঃপর আমার অনুসরণ করো। আর তোমাদের পরবর্তীরা যেন তোমাদের অনুসরণ করে। একটি দল সর্বদা পিছিয়ে থাকে, ফলে আল্লাহও তাদেরকে পিছিয়ে দেন।” (মুসলিম)
শায়খ ইবনে উসাইমিন বলেন,
“তাই প্রত্যেকের উচিৎ ভালো কাজে বিলম্ব না করা। বরং অগ্রসর হওয়া। যখনই কোন ভালো কাজের রাস্তা খুলে যায়, তখন তা দ্রুত করা।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,
“তোমরা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা কর।”
যখন কোন ব্যক্তির জন্য ভালো কাজের রাস্তা খুলে যায়, কিন্তু সে প্রথমবারই তার দিকে দ্রুত অগ্রসর হয় না, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে পিছিয়ে দেন।”
তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল; প্রত্যেক জ্ঞানী ও সচেতন মুমিনের উচিৎ ভালো কাজের সুযোগ নষ্ট না করা এবং প্রত্যেক ভালো কাজে অংশ নেওয়ার আশা ও চেষ্টা করা।
আরেকটি আশ্চর্য বাধাদানকারী বিষয় হচ্ছে, অনেক মানুষ, যখন কেউ জিহাদে বের হতে চায় তখন নাবী ﷺ এর একটি হাদিস দিয়ে দলিল পেশ করে
নাবী ﷺ ইরশাদ করেন;
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নিকট সত্য দিলে শাহাদাত কামনা করে আল্লাহ তাআলা তাকে শাহাদাতের মর্যাদায় পৌঁছে দেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।” (মুসলিম)
এই সংশয়ের জবাবের জন্য ভালোভাবে এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মনোযোগ দিন-
ইবনুল কায়্যিম (রহঃ) বলেন,
“তুমি এ বিষয়টি বুঝতে চাইলে নাবি ﷺ এর এই কথাটি গবেষণা করে দেখ:
“যে সত্য দিলে শাহাদাত চায় আল্লাহ তা’আলা তাকে শহীদগণের মর্যাদায় পৌছিয়ে দেন, যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যু বরণ করে।“
এতে সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তির সওয়াবের পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্য ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশি হবে, যিনি শুধু নিয়ত করেছেন আর বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছেন। যদিও তিনি শাহাদাতের মর্যাদায় পৌঁছবেন।
দু‘টি পুরস্কার: একটি হল বিনিময়, আরেকটি হল নৈকট্য প্রাপ্তি। তাই মূল বিনিময়ের ক্ষেত্রে যদিও উভয়ে সমান, কিন্তু আমলকারীর আমল অবশ্যই অতিরিক্ত প্রতিফল ও বিশেষ নৈকট্যের দাবি করে। আর এটা আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।”
কিভাবে শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা সত্য বলে প্রমাণিত হবে?
নিশ্চয়ই, শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা তখনই সত্য বলে প্রমাণিত হবে, যখন কেউ এর জন্য চেষ্টা করতে থাকবে, ভালোভাবে অনুসন্ধান করবে কোথায় এটা পাওয়া যায়।
যেমন কোনো ব্যক্তি বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রী খুঁজতে থাকে, পাত্রী পাওয়ার জন্য। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা গোপনীয় বিষয় ভালোভাবে জানেন।
শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা সততা প্রসঙ্গে একটি বাস্তব উদাহরণ:
ইমাম ইবনে কাসির (রহিঃ) বলেন:
“বহু সৈন্যদলের প্রধান, বহু সেনাবাহিনীর অগ্রসেনা, ইসলামী ভূমির অতন্দ্র প্রহরী, শত্রুর বিরুদ্ধে আল্লাহর উন্মুক্ত তরবারি আবু সুলাইমান খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি তার মৃত্যুর পূর্বক্ষণে বলেন:
আমি এত এত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম! আমার এমন কোন অঙ্গ নেই, যাতে তীর, বর্ষা বা তরবারীর আঘাত নেই। কিন্তু হায়! আজ আমি নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করছি, যেভাবে গাধার দল মৃত্যুবরণ করে!! তাই কাপুরুষদের চক্ষুগুলো যেন নিদ্রা না যায়!”
অর্থাৎ তিনি এই জন্য অস্থির যে, তিনি কোন যুদ্ধে নিহত হন নি। আফসোস ও দুঃখ প্রকাশ করলেন নিজ বিছানায় ইন্তেকাল করছেন, এই ব্যথায়।
একটি অসাধারণ প্রশ্ন:
হে ভাই! যে জিহাদ থেকে ফিরিয়ে রাখছে, যদি কোন খ্রিষ্টান কারাগারে তার সম্মান লুণ্ঠিত হত, তাহলে কি সে এ অবস্থায় তোমাকে জিহাদ থেকে ফিরিয়ে রাখতো?
অথবা যদি কেউ নিজ দেশে জিহাদরত থাকে, তাহলে কি সে এ অবস্থায় তোমাকে জিহাদ থেকে ফিরিয়ে রাখবে?
অথচ জিহাদ থেকে বাধাদানকারী আরেকটি বিষয় রয়েছে: অনেকে বলে: তুমি তার সাথে জিহাদে বের হয়ো না, কারণ সে তো তোমার দেশের লোক নয়!
এর জবাবে বলা যায়:
১। তুমি কি এই আয়াত জান না!
“নিশ্চয়ই সকল মুমিন পরস্পর ভাই ভাই।”
আল্লামা সাদী বলেন,
“অর্থাৎ হকের জন্য পরস্পরকে সহায়তা করা, মুসলমানদের মাঝে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করা এবং বিচ্ছিন্ন না হওয়ার ক্ষেত্রে।”
২। তুমি কি এই হাদিস জান না-
“এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না, তাকে বঞ্চিত করবে না, তাকে হেয় করবে না।” (মুসলিম)
তাকে বঞ্চিত করার অর্থ হল সে জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াইয়ে সাহায্য চাইলে সাহায্য না করা। তাই তখন তাকে সর্বসাধ্য সাহায্য করা আবশ্যক।
৩। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন:
“যখন কোন মুসলিম দেশে শত্রুরা প্রবেশ করে, তখন কোন সন্দেহ নেই যে, তাদেরকে প্রতিহত করা সর্বাধিক নিকটবর্তীদের উপর ওয়াজিব। অতঃপর পরবর্তী নিকটবর্তীদের উপর ধারাবাহিকভাবে ওয়াজিব হতে থাকবে। কারণ সকল মুসলিম দেশগুগো একটি দেশের হুকুমে। আর পিতা বা পাওনাদারের অনুমতি ব্যতীতই তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বের হয়ে যাওয়া ওয়াজিব।”
৪। এই দেশকেন্দ্রিক চিন্তাধারা কাফেরদের থেকে মুসলিমদের মাঝে অনুপ্রবেশ করেছে। এ ধরনের দাবির ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা কোন প্রমাণ নাযিল করেননি।
কাফেররা চায় – ইসলামী সমাজকে ছিন্ন ভিন্ন করতে যা, ইসলামী শিক্ষার পরিপন্থী এবং ধর্মীয় ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। এ ধরনের কথা কোনো মুসলিম চিন্তা করতে পারে না।
শুধুমাত্র এমন ব্যক্তিই চিন্তা করতে পারে, যে নিজ দেশে অবস্থান করে বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে আছে।
এমন কথা কোন ব্যক্তি তখনই বলতে পারে, যখন সে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখবে না!!?
চেতনাহীন হয়ো না
আফসোস লাগে ঐসকল আহলে ইলমদের জন্য, যারা শুধু কিতাব সংকলন, কবিতার ব্যাখা করা ও মতন মুখস্থ করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু মুসলিমদের দুরবস্থা, তাদের দুর্দশা, বন্দিত্ব, সম্ভ্রমহানি, নির্বাসন ও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে কোন চিন্তাভাবনা করে না।
এ সকল বিষয়ে তারা না কোন চিন্তা করে, না কোন গুরুত্ব দেয়। আর তাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা ও সহযোগিতা করা তো আরো দূরের বিষয়! বরং তুমি লক্ষ্য করলে দেখবে, তার মধ্যে এমন কোন উচ্চ চিন্তা-ভাবনাই নেই যে, মুসলমানদের ইজ্জত, সম্মান রক্ষা করার জন্য জান-মাল ব্যয় করবে। লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন,
“মুসলিমদের কেউ কাফেরদের হাতে বন্দি থাকলে তাকে মুক্ত করতে জিহাদ ওয়াজিব।”
সকল মুসলমানদেরকে কাফেরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আল্লাহ ও তার রসূল ﷺ এর আনুগত্য করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জিহাদ করতে হবে।
যখন হযরত আবু বকর (রাঃ) এর মৃত্যুক্ষণ উপস্থিত হল, তখন তিনি হযরত উমর (রাঃ) কে বললেন; আমাকে নিয়ে কোনো ব্যস্ততা যেন তোমাদেরকে শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ করা হতে বিরত না রাখে।
সাহাবাগণ শক্রদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। নিজেদের চিন্তা করতেন না। রসূল ﷺ মৃত্যু ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েও বলেছিলেন: উসামার দলকে তৈরি কর, তাদেরকে পাঠাও, উসামার বাহিনীকে পাঠাও। এমন কঠিন বিপদেও তিনি শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ স্থগিত রাখতে পারেননি। তেমনি আবু বকর (রাঃ)ও।
মুসলমানদের উপর কমপক্ষে বছরে একবার জিহাদে বের হওয়া ওয়াজিব। যদি তাদের অধিকাংশ লোক তা ছেড়ে দেয়, তাহলে তারা আল্লাহ ও তার রসূল ﷺ এর অবাধ্য এবং শাস্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তেমনিভাবে যদি শত্রুরা মুসলমানদের ভূমিতে পা রাখে।
আপনি জানেন কি, যদিও আপনি ইলম, ফিকহ, ইবাদতে অনেক এগিয়ে গেছেন, কিন্তু আপনি যদি মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করেন, তাদের চিন্তায় চিন্তিত না হন, তাদের খুশিতে খুশি না হন – তাহলে শরিয়তের মানদণ্ডে আপনি দুর্বল ঈমানদার।
কেননা ঈমানের হাকিকত ও পরিপূর্ণতা আপনার নিকট পৌঁছেনি!
এর দলিল:
আনাস বিন মালেক (রাঃ), যিনি রসূল ﷺ এর খাদেম ছিলেন তিনি বলেন, নাবী ﷺ ইরশাদ করেন,
“তোমদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্যের জন্যও তাই পছন্দ না করে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।” (বুখারী, মুসলিম)
শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহিঃ) বলেন,
“এটা হচ্ছে কল্যাণ কামনা। তুমি তোমার ভাইদের জন্যও তা-ই পছন্দ করবে, যা তুমি নিজের জন্য পছন্দ করো। ফলে তাদের পেরেশানিতে পেরেশান হবে এবং তাদের সাথে সেভাবে মুআমালা করবে, যেভাবে তুমি তোমার নিজের সাথে মুআমালা করা পছন্দ কর। আর এ বিষয়টি অনেক প্রশস্ত।
নাবী কারিম ﷺ তার ঈমানকে অপরিপূর্ণ বলেছেন, যে তার ভাইয়ের জন্যও তাই পছন্দ না করে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে। উলামাগণ বলেন: ঈমান না থাকার অর্থ হল পরিপূর্ণ ঈমান না থাকা।
অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ করো, তোমার ভাইয়ের জন্যও তাই পছন্দ না করো, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার ঈমান পূর্ণাঙ্গ ঈমান হবে না। একেবারে ঈমানই থাকবে না, এমনটা উদ্দেশ্য নয়।”
ঈমানদার হবে না অর্থ পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না। ঈমানই থাকবে না এমন অর্থ নয়।
আমাদের কর্তব্য হল, উম্মাহর দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য কাজ করা। আর যদি নিজের মনের ভিতর এমন চেতনাই পাওয়া যায়, তাহলে এটাই অন্তর রোগাক্রান্ত হওয়া ও ঈমান দুর্বল হওয়ার প্রমাণ। এর সমর্থনে কতইনা উত্তম ও সঠিক দলিল এটি-
“যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিষয়ে চিন্তিত হয় না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”
কুরআনে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্যাবলী
১) ঘরে অবস্থানকারী নারীদের সাথে অবস্থান করতে পছন্দ করা।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
“তারা ঘরে বসে থাকা নারীদের সাথে থাকতে পছন্দ করল। তাদের অন্তরে সিল মেরে দেওয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝে না।’’
ইমাম ইবনে কাসির (রহিঃ) বলেন,
“যারা জিহাদ হতে পিছিয়ে থাকে, সামর্থ্য ও সচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও তা থেকে পলায়ন করে এবং রসূলের কাছে বসে থাকার জন্য অনুমতি চায়, তাদের নিন্দা করে আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“এবং তারা (মুনাফিকরা) বলে: আমাদেরকে উপবিষ্টদের সাথে থাকতে দাও।”
তারা নির্লজ্জভাবে নারীদের সাথে ঘরে বসে থাকতে পছন্দ করল। অথচ মুজাহিদ বাহিনী অভিযানে বের হয়ে যাওয়ার পর নারীরাই ঘরে অবশিষ্ট থাকে।
যখন যুদ্ধ লেগে যায় তখন তারা হয়ে যায় মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কাপুরুষ। আর যখন নিরাপদ অবস্থা চলে আসে, তখন তারাই মানুষের মধ্য সবচেয়ে বেশি কথা বলে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেন:
“অতঃপর যখন ভয়ের অবস্থা আসে, তখন (হে নবী) তুমি তাদেরকে দেখবে, তারা মৃত্যুভয়ে মূৰ্ছিত ব্যক্তির ন্যায় তোমার দিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখছে। আর যখন ভয় কেটে যায় তখন তারা ধারালো জিহ্বা দিয়ে তোমাদেরকে বিদ্ধ করে।”
অর্থাৎ নিরাপদ অবস্থায় তারা চাতুর্যপূর্ণ কথা উচ্চস্বরে বলে।
যেমন কবি বলেন:
তুমি কি শান্তির সময় লজ্জা দেওয়া, বর্বরতা ও কঠোরতায় পারদর্শী? * আর যুদ্ধের সময় পর্দানশীন নারীদের মত?
“তাদের অন্তরে সিল মেরে দেওয়া হয় অর্থাৎ জিহাদ থেকে পলায়ন করা এবং রসূল ﷺ এর সাথে আল্লাহ তা’আলার পথে জিহাদ না করার কারণে।”
“তারা বুঝে না” অর্থাৎ কোন জিনিসে তাদের কল্যাণ রয়েছে, যা করতে হবে এবং কোন জিনিসে তাদের ক্ষতি রয়েছে, যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে, তারা তা বুঝে না।
২) শুধু সংবাদ শোনাকেই যথেষ্ট মনে করো না
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“মুনাফিকগণ ধারনা করে, সৈন্যদল চলে যায়নি। আর যদি সৈন্যদল চলে আসে, তাহলে তারা কামনা করবে, তারা যদি গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে শুধু তোমাদের খোজ খবর নিতে থাকতো আর যদি তারা তোমাদের সাথে থাকতও, তবে খুব কমই যুদ্ধ করত।“
ইমাম ইবনে কাঁসির (রহঃ) বলেন;
“এটিও তাদের একটি মন্দ গুণ, তথা ভয় ও কাপুরুষতা। তারা ধারনা করে সৈন্যদল চলে যায়নি; বরং নিকটেই আছে এবং তারা ফিরে আসবে। আর যদি বাহিনী ফিরে আসে, তবে তারা কামনা করবে, গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে শুধু তোমাদের খোঁজ খবর নিতে।
অর্থাৎ সৈন্যবাহিনী আসলে তারা চাইবে তোমাদের সঙ্গে শহরে অবস্থান না করে গ্রামে থাকতে। সেখান থেকে তোমাদের খোঁজ খবর নিবে এবং শত্রুদের সাথে তোমাদের কি হয়েছে, তা জানবে।
আর যদি তোমাদের সাথে থাকতও, তবে খুব কমই যুদ্ধ করত। তাদের কাপুরুষতা, হীনমন্যতা ও বিশ্বাসের দুর্বলতার কারণে।”
৩) আল্লাহ তা‘আলা তাদের বের হওয়া অপছন্দ করেন
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
“যদি তারা বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত, তবে তারা এর জন্য প্রস্তুতি নিত। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের বের হওয়াকে অপছন্দ করেন। তাই তাদেরকে বঞ্চিত রাখলেন এবং বলা হল- তোমরা উপবিষ্টদের সাথে বসে থাকো। যদি তারা তোমাদের সাথে বের হত, তবে শুধু বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি করত। তোমাদের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে দৌড়াদৌড়ি করত। আর তোমাদের মধ্যে তাদের কিছু গুপ্তচর রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যালিমদের সম্বন্ধে খুব অবগত আছেন।”
আল্লামা আস সাদী (রহিঃ) বলেন:
“আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট করে বর্ণনা করলেন যে, পিছনে থেকে যাওয়া মুনাফিকগণ হতে এমন কিছু আলামত প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, তারা জিহাদে বের হওয়ার জন্য নিয়তই করেনি। আর তারা যে সকল উযর পেশ করেছে তা অগ্রহণযোগ্য। কারণ অগ্রহণযোগ্য ওজর হল, বান্দা নিজ সামর্থ্য ব্যয় করার পর এবং বের হওয়ার সকল উপায় অবলম্বন করার পরও যদি কোন শরয়ী বাধা তাকে বাধা দিয়ে রাখত, তবে এটাই হল গ্রহণযোগ্য উযর।”
অথচ এ সকল মুনাফিক যদি বের হওয়ার ইচ্ছা রাখত তাহলে যতদূর সম্ভব প্রস্তুতি নিয়ে রাখত। অতএব যখন প্রস্তুতি নেয়নি তাই তাদের বের হওয়ার ইচ্ছাও ছিল না।
আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদের তোমাদের সাথে জিহাদে বের হওয়াকে অপছন্দ করেছেন। তাই তাদেরকে বঞ্চিত রেখেছেন। তাকদীরী ভাবে যদিও তাদেরকে বের হওয়ার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং সামর্থ্যও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা নিজ হিকমতে তাদেরকে এ কাজে সাহায্য করেননি। বরং বঞ্চিত করেছেন।
তাই বলা হল “তোমরা উপবিষ্টদের সাথে বসে থাকো?” তথা নারী ও অক্ষমদের সাথে।
তাই তুমি সাবধান হও। আল্লাহ তাআলা যেন তোমরা বের হওয়াকে অপছন্দ না করেন। তোমার অধিক আমল, অধিক মুখস্থ করা, অধিক ইবাদত এবং জগতজোড়া খ্যাতি সম্মানের দ্বারা তুমি ধোঁকাগ্রস্থ হয়ো না।
তাই তুমি যদি নিজের মাঝে জিহাদে বের হওয়ার ব্যাপারে অলসতা ও বিমুখতা দেখতে পাও, তবে নিজ অন্তর থেকে হিসাব নাও। নিজেকে মুনাফিকর ভয় হতে মুক্ত রেখো না।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন,
“জিহাদ বিমুখ হওয়া মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।”
নাবী কারিম ﷺ ইরশাদ করেন,
“যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল যে, সে জিহাদও করেনি, অন্তরে জিহাদের সংকল্পও করেনি সে মুনাফিকর একটি শাখার উপর মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম)
আল্লাহ তা’আলা সূরা বারাআহ নাযিল করেছেন, যেটিকে “সূরা ফাদিহাহ’ও বলা হয়। কেননা এটা মুনাফিকদেরকে অপমানিত করেছে।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“এটি হল ‘ফাদিহাহ’ (অপমানকারী)। একের পর এক “তাদের মধ্যে কেউ”, “তাদের মধ্যে কেউ” নাযিল হতে লাগল.. অবশেষে তাদের মনে হতে লাগল, না জানি সবার কথাই উল্লেখ করে দেওয়া হয় এখানে।“
হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “এর আরেকটি নাম হল “সুরা বুহুস” (পর্যালোচনা করা)। কেননা এটা মুনাফিকদের সকল গোপন বিষয়গুলো তুলে ধরেছে।”
হযরত কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এটাকে “মুসিরা” (প্রসারকারী) ও বলা হয়। কেননা এটা মুনাফিকদের লাঞ্ছনার বিষয়গুলোকে প্রসার করেছে।
আমি তোমাকে প্রস্তাব করছি:
তুমি নিজের মনের সাথে একটি শ্বাসরুদ্ধর বৈঠকে বস। যাতে তুমি তাফসীরে ইবনে কাসীর ও তাফসীরে সাদী থেকে সূরা আনফাল ও সূরা তাওবার তাফসীর নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে। সেখানে তুমি মুনাফিকদের গুণগুলো নিয়ে ভালভাবে গবেষণা করবে। তারপর সেগুলো নিজের অবস্থা ও কাজ কর্মের সাথে তুলনা করে দেখবে। আর এটাই হবে তোমার আত্মসমালোচনা।
নিয়ন্ত্রিত আবেগ
অনেক আহলে ইলম, কেউ জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলে তাকে একথাগুলো বলতে থাকে: নিয়ন্ত্রিত আবেগ কাম্য, মানসিক প্রবণতার শিকার হলো না … বেহুশ হয়ো না .. এধরণের আরো অনেক শব্দ রয়েছে।
যেগুলোর পিছনে তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল কেউ জিহাদে বের হতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া ও বঞ্চিত করা।
ফলে যে-ই জিহাদকে ভালবাসে, আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে এবং পবিত্র ভূমি ও সম্মানের পক্ষে লড়াই করতে ইচ্ছা করে, সে-ই হয়ে যায় আবেগী লোক। সে ভারসাম্যপূর্ণ জ্ঞান দিয়ে চিন্তা করে না .. বেহুশ .. তার অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ..।
আচ্ছা মানসিক প্রবণতা জিনিসটা কি?! ভালোবাসা ও ঘৃণা ব্যতীত কিছু? আর আল্লাহকে ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গ করে দেয়াই কি ভালোবাসার সর্বোচ্চ স্তর নয়?
আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গ করতে তাড়াহুড়া করা, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা এবং আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে কোনরূপ অলসতা, দ্বিধা – দ্বন্দ্ব ও বিলম্ব না করাকেই নামকরণ করা হয় মানসিক প্রবণতা ও অনিয়ন্ত্রিত আবেগ বলে!
তাই তোমরা যে নামেই অভিহিত করো না কেন, এগুলো হচ্ছে তোমাদের আল্লাহকে ও আল্লাহর প্রতীকসমূহকে সম্মান না করার আলামত। যা অন্তরের তাকওয়ার অন্তর্ভুক্ত।
প্রকৃতপক্ষে এসমস্ত বুলি ও ডায়লগগুলো হলো নিজ বন্ধুদের প্রতি শয়তানের সাজানো গুছানো ওহী। এধরণের আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে, যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। এগুলো মূলত: আপন বন্ধুদের প্রতি শয়তানের ওহী।
আর যদি কোন ব্যক্তি এ সকল চমকপ্রদ কথার প্রবক্তা ও তথাকথিত ভারসাম্যপূর্ণ যুক্তিবাদীদের পক্ষে বলত, তাদের সম্মান ও মর্যাদার পক্ষে কথা বলত, তাহলে তার দিকে এতসব কথার তীরবৃষ্টি বর্ষণ হত না, যার পরতে পরতে শুধু ধোঁকা ও বাঁধা দান!
তাহলে এই পার্থক্য কেন!!!??
আমরা এমন কাউকে শুনিনি, যে, যে সরকারী বাহিনীর সাথে মিলে অথবা যে শাসন ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে শুধু ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা বা স্বৈরাচারি শাসন রক্ষার জন্য তথা না দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য, না জবরদখলকৃত পবিত্র ঐতিহ্যগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য, না পৃথিবীতে আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য তার সাথে মিলে যুদ্ধ করতে যায়, তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেছে – ‘মানসিক প্রবণতার শিকার হয়ো না‘, ‘আবেগাপ্লুত হয়ো না‘, ‘নিয়ন্ত্রিত জজবা রাখতে হবে‘ .. এমন কাউকে শুনিনি।
তাহলে কেন যে জিহাদে যেতে চায় তাকেই কেবল এসকল কথাগুলো বলা হয়!!!??
কেন তুমি রাগ কর এবং গোস্বায় ফেটে পড়?
যখন পবিত্র কোরআনকে অবমাননা করা হয়েছে, মহান রসূলুল্লাহ ﷺ কে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে, ইজ্জত – সম্মান সব ভূলুষ্ঠিত হয়েছে, সমস্ত পবিত্র ঐতিহ্যগুলোকে ময়লাযুক্ত করা হয়েছে এবং সমস্ত উম্মতের উপর জিহাদ ফরজ হওয়ার ও জিহাদ হতে পশ্চাতগামীদের গুনাহগার হওয়ার ব্যাপারে ফাতওয়া বের হয়েছে সে অবস্থায় কতিপয় আহলে ইলম ক্রোধান্বিত হয়ে উঠেছে, রাগে ফেটে পড়েছে এবং এই ফাতওয়া রদ করার জন্য পূর্ণ শক্তিতে ভাষণ দিতে আরম্ভ করেছে।
তাহলে এই সকল বিরক্তি, উত্তেজনা ও এই ফাতওয়ার ব্যাপারে এত তীব্র অনুভূতি কেন? আর কিছু কিছু লোকের নিকট এই ফাতওয়াটিই যেন সকল বিপদের চাবিকাঠি।
তাহলে এই ভাষণ কি নিজের জিহাদ হতে বসে থাকাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য? নাকি উম্মাহর বাস্তবতা ও তাদের উপর আপতিত বিপদাপদ ও ভয়ংকর আঘাতে হৃদয় দগ্ধ হওয়ার কারণে?
আচ্ছা, যদি এই ফাতওয়াটি তার দেশকেও পেয়ে বসত, যেমন তার দেশ দখল করে নেওয়া হত এবং সমস্ত বিশ্ব তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যেত, তাহলেও কি তিনি এই ফাতওয়া – যা উম্মাহর উপর জিহাদের ফরজিয়াতকে প্রমাণ করে তা রদ করার জন্য পূর্ণ আসর জমাতেন?!!!
না কি তখন তিনি তার সাহায্য করতেন, তার পক্ষে শক্তি যোগাতেন এবং মানুষের মাঝে তা ছড়িয়ে দিতেন?
কারণ তখন তো তিনি তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতেন আর এই ফাতওয়া সেই কঠিন অবস্থা তুলে ধরত, যে অবস্থার মধ্যে তারা তাদের দেশে বসবাস করছেন।
তথা সে অন্যায় ও জুলুম – নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হত, যা তার দেশবাসী ও দেশের উপর চলছে!! তাই সাহায্য ও ভরসা আল্লাহরই নিকট।
কিছু কিছু আহলে ইলম যখন শহীদদের চেহারায় মুচকি হাসি দেখতে পান তখন বিরক্ত ও রাগান্বিত হয়ে যান।
কেন এত ক্ষিপ্ততা, এত গোস্বা? কোন জিনিসটি আপনার ক্ষতি করল?
যখন আপনার কোন মৃত সন্তানের চেহারায় মুচকি হাসি দেখতে পান, তখন কি খুশি হন না?
এর দ্বারা কল্যাণের সুসংবাদ গ্রহণ করেন না?
মানুষের নিকট এটা বলে বলে এর জন্য আল্লাহর প্রশংসা করেন না? এটাই কি পরিপূর্ণ ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য নয় যে, সে তার অন্যান্য মুমিন ভাইদের আনন্দে আনন্দিত হবে, তাদের দুঃখে দুঃখিত হবে?
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “পারস্পারিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে সমস্ত মুমিনের দৃষ্টান্ত হল একটি দেহ, যার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে পুরো দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।” (বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম রহ)
মুজাহিদদের বিরুদ্ধে সিংহ আর কাফেরদের বেলায় উটপাখী
কিছু আহলে ইলমদের অবস্থা আমাকে বিচলিত করে, তারা যখন কোন মুজাহিদের দোষ – ক্রটি সম্পর্কে জানতে পায়, তখন দেখবেন খুব জোরেশোরে এবং বেশ বীরত্ব ও উৎসাহের সাথে তা নিয়ে ময়দানে ও মিম্বরে কথা বলতে থাকে।
অথচ সেই বিশ্ব কুফরের লিডারদের ব্যাপারে তার ঠোটের নিচের পাটিটিও নড়তে দেখবেন না, যারা মুসলমানদের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে ও সম্মানিত ঐতিহ্যগুলো ময়লাযুক্ত করেছে …। আল্লাহর নিকটই অভিযোগ ! আল্লাহ তা’আলা বলেন :
“মুমিনদের প্রতি নম্র, কাফের উপর কঠোর।“
ইমাম ইবনে কাসীর রহ: বলেন,
এটা হল পরিপূর্ণ মুমিনের বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেকে তার ভাইয়ের প্রতি নম্র ও সাহায্যকারী হবে আর তার প্রতিপক্ষ ও শত্রুর উপর হবে কঠোর। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“মুহাম্মদ (যিনি আল্লাহর রসূল) ও তার সাথে যারা আছে, তারা কাফেরদের উপর কঠোর, পরস্পরের প্রতি দয়াশীল।”
রসূলুল্লাহ ﷺ এর বৈশিষ্ট্যাবলীর মধ্যে রয়েছে, ‘তিনি সদাহাস্য তুখোর যোদ্ধা।‘ তাই তিনি তার বন্ধুদের মাঝে সদাহাস্য আর তার শত্রুদের বিরুদ্ধে তুখোর যুদ্ধকারী। তার শত্রু তথা কাফেরদের বিরুদ্ধে।
এটাই হল মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। কাফেরদের উপর কঠোর ও শক্ত আচরণকারী হওয়া আর শ্রেষ্ঠ লোকদের প্রতি দয়াশীল। ও কোমল হওয়া। কাফেরের চেহারায় ক্রোধ ও মলিনতার কারণ হওয়া আর স্বীয় মুমিন ভাইয়ের চেহারায় হাসি ও আনন্দের কারণ হওয়া।
কেন আপনারা কিতাবুল জিহাদকে অতিক্রম করে চলে যান?
দুঃখজনক বিষয়, কিছু কিছু তালিবুল ইলম ফিকহের কিতাবসমূহ ব্যাখ্যাসহ পাঠ করে, তথাপি যখন কিতাবুল জিহাদে পৌঁছে, তখন ভারি মনে করে ও অনাগ্রহ বোধ করে। হয়ত তা বাদ দিয়েই চলে যায় অথবা তার উপর দিয়ে ভদ্র লোকদের ন্যায় চুপচাপ অতিক্রম করে; তার বিধানগুলো বুঝা এবং তার উদ্দেশ্য ও রহস্যগুলো অনুসন্ধান করার সামান্য কষ্ট করে না।
অথচ ফিকহের অন্যান্য অধ্যায়গুলোর মধ্যে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে, তার মাসআলাগুলো বিশদভাবে পড়ে, তার বর্তমান রূপের ব্যাপারে সূক্ষ্ম দৃষ্টি দেয়। তাহলে কেন জিহাদের ফিকহ ও তার খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর ব্যাপারে এমন অজ্ঞ মূর্খ সাজা হয়??
এমনকি কোন কোন তালিবুল ইলমকে যদি জিহাদের আহকাম, তার ফিকহ ও তার ফযিলত সম্বলিত কোন কিতাব হাদিয়া দেওয়া হয়, তাহলে সে এটাকে এতটা গুরুত্ব দেয় না। তার পৃষ্ঠাও উল্টিয়ে দেখা হয় না; বরং তা নিজস্ব কিতাব ভাণ্ডারে এমনভাবে রেখে দেওয়া হয় যে, তার উপর দিয়ে বছরকে বছর অতিবাহিত হয়ে যায়, কিন্তু একবারও তা পড়ার কষ্টটুকু করে না।
কখনো তা লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়, এমনকি কখনো তা জালিয়েও দেওয়া হয় এবং তা থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করে; পাছে সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থী, চরমপন্থি ও বিপথগামী দলের সদস্য হওয়ার অভিযোগ আরোপ করে বসে!!
এমন কতগুলো বিষয়, যাতে বিবেক থমকে যায়
যে সেনাবাহিনীতে বা সরকারী বাহিনীতে ভর্তি হতে চায়, তাকে কি বলা হয়, আমরা তোমার কল্যাণ কামনা করছি, তুমি ইলম অন্বেষণ কর?
যে স্বীয় দুনিয়াবি লেখাপড়া সম্পন্ন করতে কাফের রাষ্ট্রে যেতে চায়, তাকে কি বলা হয়, আমরা তোমার কল্যাণকামনা করছি, তুমি দুনিয়াবি ইলমের পরিবর্তে শরয়ী ইলম অর্জন কর? নাকি দেখা যায়, তাকে শত উচ্ছ্বসিত বানী দেওয়া হয় এবং আক্ষরিক ও নৈতিক সাহায্য করা হয়!?
তাহলে কেন আমরা সর্বদা একদল আহলে ইলমকে শুনতে পাই, তারা যে কাউকে জিহাদের উদ্দেশ্যে যেতে দেখলেই তা থেকে বাঁধা দিয়ে ইলম অন্বেষণের দিকে মনোযোগী করার চেষ্টা করে!?
আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে:
কিছু আহলে ইলম যারা মানুষকে আল্লাহর পথে জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করে ও আগ্রহ সৃষ্টি করে তাদের প্রতিবাদ করে বলে: তোমরা কি চাও সব মানুষ মুজাহিদ হয়ে যাক? এটা অসম্ভব ও অযৌক্তিক। আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলব: আপনারা কি চান সব মানুষ তালিবে ইলম হয়ে যাক? যখনই কেউ জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে আপনাদের নিকট আসে, তখনই তাকে জিহাদ ছেড়ে ইলম অর্জনের প্রতি মনোযোগী হতে বলেন!?
সকল সাহাবাগণ মুজাহিদ
যে রসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবন, কর্মপন্থা ও নীতির ব্যাপারে চিন্তা করবে সেই দেখতে পাবে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ কখনো এই কামনা করতেন না যে, সকল সাহাবা আলেম হয়ে যাক।
কখনো এই কামনা করতেন না যে, সকল সাহাবি ফকীহ হয়ে যাক।
এই কামনা করতেন না যে, সকল সাহাবি মুহাদ্দিস হয়ে যাক।
এই কামনা করতেন না যে, সকল সাহাবি কারী হয়ে যাক।
এই কামনা করতেন না যে, সকল সাহাবি দায়ী হয়ে যাক।
এই কামনা করতেন না যে, সকল সাহাবি কাযী হয়ে যাক।
কিন্তু রসূলুল্লাহ ﷺ পূর্ণ আকাঙ্ক্ষা করতেন এবং পূর্ণ চেষ্টা করতেন, যেন তার প্রতিটি সাহাবী মুজাহিদ ও আল্লাহর সৈনিক হয়ে যায়, তাদের আত্মা ও সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে দেন। এটাই প্রমাণ করে রসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনে জিহাদের মহা গুরুত্বের কথা।
কিন্তু কিছু তালিবুল ইলম এর বিপরীত। তাদের নিকট জিহাদ হল সবার পরে দেখার বিষয়। আর তার ব্যাপারে চিন্তা করা ও তার মাঝে নিজের হৃদয় ও মন ব্যস্ত করা তো আরও দূরের বিষয়।
কিছু তালিবুল ইলমের নিকট জিহাদের আরেকটি বিরল প্রতিবন্ধক হল, “সে বলে আমি আমার মসজিদ ছাড়তে পারবো না।”
সে আল্লাহর পথে জিহাদ অপেক্ষা মসজিদ স্থায়ী হওয়া ও তার সাথে লেগে থাকাকে প্রাধান্য দেয়।
এই সন্দেহের নিরসন:
১. সাহাবায়ে কেরাম, যারা এই উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম ও ফকীহ জামাত, তারা কি জিহাদ ছেড়ে মসজিদে হারাম বা মসজিদে নববীর সাথে লেগে ছিলেন??
২. আর তোমার মসজিদ কি মসজিদে হারাম বা নাবী ﷺ এর মসজিদ থেকে শ্রেষ্ঠ, যাতে নামায পড়লে নামাযের সাওয়াব অনেক গুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়?
জাবের রা: থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“আমার এই মসজিদে একটি নামায অন্যান্য স্থানে একহাজার নামায অপেক্ষা উত্তম। তবে মসজিদে হারাম ব্যতীত। মসজিদে হারামে একটি নামায় অন্যান্য স্থানে এক শ’ হাজার নামায অপেক্ষা উত্তম।”
(বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে মাজাহ রহ.)
৩. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন:
একারণেই আল্লাহর রাস্তায় প্রহরা দেওয়ার নিয়তে সীমান্তে অবস্থান করা এ তিন মসজিদের নিকট অবস্থান করা থেকেও উত্তম। উলামায়ে কেরমের সর্বসম্মতিক্রমে। কারণ যেকোন ধরনের জিহাদ যেকোন ধরনের হজ্জ অপেক্ষা উত্তম। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“তোমরা কি হাজীদেরকে পানি পান করানো ও মসজিদুল হারামকে আবাদ করার কাজকে সেই ব্যক্তির (কার্যাবলীর) সমান মনে কর, যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে? আল্লাহর কাছে এরা সমতুল্য হতে পারে না। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান না।”
কতিপয় তালিবুল ইলমের নিকট আরেকটি বিরল প্রতিবন্ধক হল, তারা বলে: উলামাগণ জিহাদে বের হননি।
এই সংশয়ের নিরসন:
এই সংশয়ের আলোকে আমরা বলব:
আমরা সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন রোজা রাখব না, কারণ অমুক আলেম রাখেন না।
আমরা তাহাজ্জুদ পড়ব না, কারণ অমুক আলেম পড়েন না।
আমরা কিছু কিছু সুন্নাহ পালন করব না, কারণ অমুক আলেম পালন করেন না।
আমরা ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসব না, কারণ অমুক আলেম বসেন না।
এমনিভাবে বাকি সমস্ত নেক আমলগুলো আমরা পালন করব না, কারণ অমুক আলেম তা পালন করেন না।
এমন হলে তো আমাদের কার্যাবলী ও আমাদের অবস্থা কিতাব – সুন্নাহর সূত্রে বাঁধা থাকবে না; বিভিন্ন ব্যক্তির সূত্রে বাধা থাকবে, সে যদি পালন করে তাহলে আমরা পালন করব, সে যদি ছেড়ে দেয় তাহলে আমরাও ছেড়ে দিব।
তাহলে কোন জ্ঞানবান মুমিন কি একথা বলবে যে আমরা কিতাব – সুন্নাহর উপর আমল করব না, যেহেতু অমুক আলেম তার উপর আমল করে না!?
১. তুমি কেন সাহাবায়ে কেরামের উলামা ও ফুকাহাদেরকে অনুসরণ কর না, যারা কখনোই জিহাদ ফি সাবিল্লিাহ পরিত্যাগ করেননি।
২. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন;
“জিহাদ ও রিবাতের মর্যাদা অনেক বেশি। একারণেই পূর্বে নেককার মুমিনগণ সীমান্ত এলাকায় রিবাতে (সীমান্ত প্রহরায়) যেতেন।
যেমন: ইমাম আওযায়ী, ইসহাক আল ফাজারী, মিখলাদ ইবনুল হুসাইন, ইবরাহিম ইবনে আদহাম, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, হুযায়ফা আল-মারআশী, ইউসুফ ইবনে আসবাত ও অন্যান্য ইমামগণ। তারা শাম সীমান্তে রিবাত করতেন।
তাদের কেউ কেউ খোরাসান, ইরাক ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে শাম সীমান্তে রিবাতে আসতেন। কারণ তখন শামবাসী আহলে কিতাব নাসারাদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত থাকতেন।”
৩. তুমি নিজেকে শহীদদের মর্যাদা, উচ্চস্তর ও মহা প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করো না এই অজুহাতে যে, অমুক আলেম এই আমলটি করেন নি।
৪. তুমি কোথায় আছ আল্লাহ তাআলার এই বাণী থেকে:
“এ বিষয়েই প্রতিযোগীতাকারীদের প্রতিযোগীতা করা উচিত”
কতিপয় তালিবুল ইলমের নিকট জিহাদ হতে বিরতকারী আরেকটি প্রতিবন্ধক হল, তারা বলে থাকে, যদি জিহাদ ফরজে আইন হতো তাহলে জিহাদে চলে যেতাম।
এই সংশয়ের নিরসন: আমরা বলব;
১. জিহাদে যাওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে একটি শর্ত কি জিহাদ ফরজে আইন হওয়া? তুমি তো ফরজ হজ্জ ছাড়াও প্রতি বৎসর নফল হজ্জ করতে যাও অধিক সওয়াব ও বিনিময় লাভের আশায়। তাহলে কেন জিহাদ ও রিবাতের ব্যাপারে আগ্রহী হও না, ফরজে কিফায়াহ-ই হোক না কেন!
২. কেন আল্লাহর পথে জিহাদ ও রিবাতের ইবাদতের ব্যাপারে এত অনাসক্তি ও অনীহা, যার ফলে একমাত্র বাধ্য হলেই আমরা সেটা পালন করব, আর নইলে করব না?
৩. উচ্চ হিম্মত ওয়ালা লোকদের বৈশিষ্ট্য কি এটা যে, তারা নেক আমল কেবল ওয়াজিব হলেই করবে, আর নইলে করবে না? তুমি তো দৈনন্দিনের সুন্নাহসমূহ বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে পূর্ণ আগ্রহী (সুন্নাতে যায়েদা, তাহাজ্জুদ, নফল রোজা, খাবার ও ঘুমানোর সুন্নাহ … আরও বহু সুন্নাহ), তাহলে জিহাদ যদি তোমার মতে ফরজে কিফায়াহও হয়, তবুও তুমি তার প্রতি আগ্রহী হও না কেন?
কতিপয় তালিবুল ইলমের নিকট জিহাদ হতে বিরতকারী আরেকটি প্রতিবন্ধক হল, তারা বলে, আমরা কিভাবে এই কল্যাণকর বিষয় ছেড়ে যাবো?
এর দ্বারা তারা তাদের দরশ ও ভাষণে অধিক শ্রোতার উপস্থিতি ও দৈনন্দিন তাদের সাথে যত মানুষের যোগাযোগ হয়ে থাকে তা বুঝিয়ে থাকে। এছাড়া ইন্টারনেটে তার ভূমিকা রয়েছে, যাতে হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করে।
এই সংশয়ের জবাব:
১. সাহাবায়ে কেরামের আলেমগণ কি এই দলিল দিয়ে জিহাদ ছেড়ে দিয়েছেন যে, মানুষ তাদের ইলম ও ফিকহের মুখাপেক্ষী।
২. দৃঢ়ভাবে জেনে রেখ, আল্লাহর নিকট তোমার মর্যাদা তোমার অনুসারীদের আধিক্যের ভিত্তিতে হবে না।
৩. আরো জেনে রেখ, প্রসিদ্ধিই সব কিছু নয়। এমন কত লোক রয়েছে, অপ্রসিদ্ধ, কিন্তু আল্লাহর নিকট উচ্চ মর্যাদাশীল। উওয়াইস আল-করনীকে স্বীয় যামানায় কেউ চেনেনি; এতদসত্তেও তিনি ছিলেন তাবিয়ীদের মধ্যে সর্বোত্তম।
ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি:
“সর্বোত্তম তাবিয়ী হল উওয়াইস নামক এক ব্যক্তি। তার বৃদ্ধা মা আছেন। তার গায়ে শ্বেত চিহ্ন রয়েছে। তোমরা তাকে বলবে, সে যেন তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।” ( বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম রহ. )
৪. বর্ণিত আছে, ইবনে মাসুদ রা: বের হলেন। কিছু লোক তাকে অনুসরণ করল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি কোন প্রয়োজন আছে? তারা বলল, না; তবে আমরা আপনার অনুসরণ করছি। তিনি বললেন, এমনটি করো না; কারণ এটা অনুসরণকারীর জন্য লাঞ্ছনা এবং যার অনুসরণ করা হয় তার জন্য ফিতনা।
ইমাম শাফী রহ: বলেন,
“আমি চাইতাম, মানুষ আমার নিকট যে ইলম আছে তা দ্বারা উপকৃত হোক। কিন্তু আমি ছিলাম অখ্যাত এক উপত্যকায়, কেউ আমাকে চেনে না।”
সুতরাং কোন মুসলিম যেন স্বীয় আদায়কৃত ইবাদতের দ্বারা বা অগ্রে পাঠানো আমলের দ্বারা প্রতারিত না হয়। স্বীয় দাওয়াতের অধিক সাড়া দানকারী দেখে যেন ধোঁকায় না পড়ে, স্বীয় ইলমের অধিক অনুসরণকারী দেখেও যেন আত্ম প্রবঞ্চিত না হয়।
৫. আরো জেনে রেখ, তোমাদের দরশ ও ভাষণের আধিক্য, তার চমকপ্রদ শিরোনাম ও তাতে অধিক উদ্ধৃতি পেশ করা বা তাতে অধিক সংখ্যক শ্রোতার উপস্থিতির কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
বারাকাহ তো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, তোমার অন্তরের ইখলাস, সততা ও কথা অনুযায়ী আমলের পরিমাণ হিসাবে। কত মানুষ কয়েক দশক কিতাব লিখেছে ! কত ক্যাসেট বের করেছে, কিন্তু উম্মাহর মাঝে তার উপকারীতা খুব কম। আর কত মানুষ আছে, যার নিকট মাত্র একটি বা দুইটি কিতাব আছে, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা সারা পৃথিবীতে তার প্রসার ও অধিক সংখ্যক মানুষকে তার দ্বারা উপকৃত করার মাধ্যমে তাতে ব্যাপক বারাকাহ দান করেন।
বনী ইসরাঈলীদের কিছু বৈশিষ্ট্য
কিছু আহলে ইলমের আকীদার বিষয়ে এবং বিদআতি ও পথভ্রষ্ট দলসমূহের প্রতিবাদ করার বিষয়ে খুব আগ্রহ ও গুরুত্ব। অপরদিকে তিনি দেখেন, শাসক–কুফর, শিরক ও ধর্মত্যাগে লিপ্ত, কিন্তু এতে তিনি স্বীয় দ্বীন ও আকীদার ব্যাপারে গোস্বা ও গায়রত প্রকাশ করেন না।
এব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে যথাসম্ভব ইঙ্গিতে সেরে যান; স্পষ্ট ও পরিস্কারভাবে বলেন না। আর এর জন্য নিজের সামর্থ্যমত বিভিন্ন ওযর বানিয়ে নেন।
কিন্তু যদি দরিদ্র লোকদের কেউ তাতে লিপ্ত হয়, যার দেশে কোন ক্ষমতা নেই, সামাজিক অবস্থান নেই, তখন সে দ্বীন ও আকীদার ব্যাপারে নিজের গোস্বা ও গায়রত প্রকাশ করে, বিভিন্ন মন্দ বৈশিষ্ট্যের সাথে তার বিবরণ তুলে ধরে, মানুষকে তার মজলিসে বসা থেকে সতর্ক করে, সেখানে আল-ওয়ালা ওয়াল বারা (বন্ধুত্ব ও সম্পর্কচ্ছেদ) এর আকীদার ব্যাবহার করে, উক্ত লোককে পরিত্যাগ করে এবং অন্য মানুষকে আদেশ করে তাকে পরিত্যাগ করার জন্য।
তাহলে সেই ব্যাক্তি শাসক বা যার দেশে ক্ষমতা আছে, তার ক্ষেত্রে এই আয়াতের উপর আমল করে:
“তোমরা গিয়ে তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে। হয়ত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা (আল্লাহকে) ভয় করবে। “
এবং এই আয়াতের উপর:
“তোমার প্রভুর পথে আহ্বান কর প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে (বিতর্কের প্রয়োজন হলে) বিতর্ক করবে সর্বোত্তম পন্থায়।”
পক্ষান্তরে দরিদ্র, সাধারণ জনগণ এবং যাদের দেশে কোন অবস্থান নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই আয়াতের উপর আমল করে:
“তাই তোমাকে যে বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে বলতে থাক আর মুশরিকদেরকে পরওয়া করো না।”
বনী ইসরাঈলীদের সাথে এর বেশ সাদৃশ্য রয়েছে।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন :
“তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছিল এজন্য যে, যখন তাদের কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত, পক্ষান্তরে যখন তাদের মধ্যে নিম্ন শ্রেণীর লোক চুরি করত, তার উপর হদ প্রয়োগ করত।” (বুখারী, মুসলিম)
কতিপয় তালিবুল ইলমের আরেকটি আশ্চর্য ও বিরল ব্যাপার হল, তারা তাদের ভাষণে ও দরসে ঘোষণা দেয়, এমন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার, যা জীবনের সর্ববিষয়ে আল্লাহর শরীয়ত দ্বারা শাসন করবে, কিন্তু যখন কোন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় অথবা প্রতিষ্ঠার পথে থাকে আর মুজাহিদগণ তাদের সাহায্য করার ও তাদের সঙ্গে থাকার আহ্বান করেন, তখন তারা পিছুটান দিতে শুরু করে, তার সাহায্য সহযোগীতা থেকে বিরত থাকে এবং অলসতা করে।
তখন তারা আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়নকারী ইসলামী রাষ্ট্রে হিজরত করার তুলনায় তাগুতের রাষ্ট্রে বসবাস করাকেই প্রাধান্য দেয়, যা আল্লাহর বিধান ব্যতীত ভিন্ন আইনে শাসন করে।
তাহলে কেন এই ধোঁকা ও পিছুটান?
এটা কি পার্থিব ইনকাম ও ব্যক্তিস্বার্থ হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে? আল্লাহই ভাল জানেন।
নাকি এটা শয়তানের ধোঁকা, মিথ্যা স্বপ্ন, মিথ্যা প্রবঞ্চনা? আল্লাহই ভাল জানেন।
সে কি ধারণা করে, তার আলোচনা ও ভাষণের দ্বারা অচিরেই এখানে এমন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, যা তাগুতী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবে এবং সেদেশে তাকে পরাজিত করবে?
আসলে সে হাজার বার চিন্তা করে, কিভাবে তার সুন্দরী স্ত্রীর বিচ্ছেদ সহ্য করবে?
কিভাবে তার সন্তানদের বিচ্ছেদবরণ করবে? কিভাবে তার সেই বাড়ী-ঘর ছেড়ে যাবে, যা বানাতে ও সাঁজাতে তার বহু ক্লান্তি সহ্য করতে হয়েছে?
কিভাবে তার সেই বেতন ছেড়ে আসবে, যার পশ্চাতে মহাসম্মান তার পদচুম্বন করে?
আরো চিন্তা করে, কিভাবে তার সেই দেশ ছাড়বে, বহু বছর যাতে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে?
আমরা তাকে আল্লাহ তা’আলার এই বাণী স্মরণ করিয়ে দিব:
“বল, পার্থিব ভোগ-সম্ভার তুচ্ছ আর যারা (আল্লাহকে) ভয় করে তাদের জন্য আখেরাতই উত্তম। আর তোমাদের প্রতি সামান্যও জুলুম করা হবে না।”
আরো স্মরণ করিয়ে দিব:
“বল, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তার রসূল এবং তার পথে জিহাদ করা অপেক্ষা বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের খান্দান, তোমাদের সেই সম্পদ, যা তোমরা অর্জন করেছ, তোমাদের সেই ব্যবসায়, যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং বসবাসের সেই ঘর, যা তোমরা ভালবাস, তাহলে অপেক্ষা কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ ফায়সালা প্রকাশ করেন। আল্লাহ অবাধ্যদেরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান না!”
শায়খ আস সা’দী রহ: বলেন:
“এই আয়াতটি বড় দলিল আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল ﷺ কে ভালোবাসা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে, তাদের ভালোবাসাকে অন্য সকল জিনিসের ভালোবাসার উপর প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারে এবং ঐ ব্যক্তির উপর কঠিন শাস্তি ও ভীষণ ক্রোধ অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে, যার নিকট উল্লেখিত জিনিসগুলোর কোনটার ভালোবাসা আল্লাহ, আল্লাহর রসূল ও জিহাদের ভালোবাসার চেয়ে অধিক হয়।”
এটা বোঝার আলামত হল, যখন তার নিকট দু’টি জিনিস পেশ করা হয়, একটি হল সে আল্লাহ ও তার রসূলকে ভালবাসবে, তাতে তার কোন প্রবৃত্তির কামনা থাকবে না।
আর দ্বিতীয়টি হল, সে নিজের নফস ও নফসের কামনাকে ভালবাসবে, কিন্তু এতে তার আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের ভালোবাসা হারাতে হবে অথবা তাতে ঘাটতি আসবে।
এক্ষেত্রে যদি সে আল্লাহ যা ভালবাসেন তার উপর নিজের কামনাকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে এটাই প্রমাণ করবে যে, সে জালিম, স্বীয় ওয়াজিব পরিত্যাগকারী।
তুমি কি হকের সাথে না শক্তির সাথে?
যখনই ক্রুসেডের পূজারীরা তাদের আঞ্চলিক মিত্র ও দালালদের সহযোগীতায় ইসলামী বিশ্বের উপর প্রভাবশালী হয়ে উঠল, তখন থেকেই কতিপয় আহলে ইলম দাড়িয়ে গেল মিডিয়ায় জিহাদ ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য। তারা তাদেরকে নাম দিল সন্ত্রাসী, কট্টরপন্থী ও উগ্রপন্থী বলে।
এ সবগুলো কেন ছিল? কারণ তখন শক্তি-শাসন, ক্ষমতা-দাপট সব ছিল ক্রুসেডার ও তাদের দালালদের। আর যখনই ক্রুসেডারদের পতন হবে-এটা অচিরেই হবে ইনশাআল্লাহ – আর ক্ষমতা, দাপট, শক্তি ও শাসন হবে মুজাহিদদের, তখনই তারা তাদের বক্তৃতা, ভাষণ ও কবিতা – সব কিছু নিয়োজিত করবে জিহাদ ও মুজাহিদদের সাহায্যের জন্য।
তখন বিভিন্ন ভাষণ বের হবে: আল্লাহু আকবার! কাবুল বিজয় হয়েছে! আল্লাহু আকবার! রাফিদীনের দেশগুলো বিজীত হয়েছে।
তাহলে কি তুমি শক্তির সাথে আবর্তিত হও যেদিকেই শক্তি আবর্তিত হয়? নাকি সত্যের সাথে থাক, তা যেখানেই থাকে? আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“এরা সেই সব লোক, যারা তোমাদের (অশুভ পরিণামের) অপেক্ষায় বসে থাকে। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের যদি বিজয় অর্জিত হয়, তবে (তোমাদেরকে) বলে, আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? আর যদি কাফেরদের বিজয় নসীব হয়, তবে (তাদেরকে বলে, আমরা কি তোমাদেরকে ভাগে পেয়েছিলাম না এবং (তা সত্ত্বেও) আমরা কি মুসলিমদের হাত থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করিনি?”
ব্যক্তিগত রক্ষীবাহিনী
আমাদের এখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ আছে, যেটাকে বলা হয় ব্যক্তিগত রক্ষীবাহিনী। তাদের কাজ হল নেতা ও লিডারদের প্রতিরক্ষা করা।
তারা তাদের নেতা ও লিডারকে রক্ষার জন্য স্বীয় জীবন বাজী রাখে, নিজেকে মৃত্যু ও ধ্বংসমুখে ফেলে দেয়। যখন মারা যায়, সংবাদ মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় যে, সে কর্তব্য পালনে শহীদ হয়েছে।
কিন্তু লোকদের মাঝে কেউ এ বিষয়টার প্রতিবাদ করে না, কেউ বলে না যে, সে আত্মহত্যাকারী, নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে ফেলেছে। তবে আল্লাহর দয়াপ্রাপ্ত দু’একজন বান্দা ছাড়া।
কারণ বিষয়টি শাসকের সাথে সম্পৃক্ত। সে ব্যক্তিগত স্বার্থ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কিছুই বলতে পারে না।
এর বিপরীতে যখন কোন শহীদী বা জিহাদী অভিযান দেখতে বা শুনতে পায়, যার মধ্যে ইসলাম ও মুসলিমদের বিজয় এবং আল্লাহর শত্রুদের পরাজয় রয়েছে, তখন সংবাদ মাধ্যমে তার প্রতিবাদের জন্য দাড়িয়ে যায় সর্বশক্তি দিয়ে এবং বাহাদুরী ও বীরত্বের সাথে।
বলতে থাকে এই কাজ তো জায়েয না, এটা তো আত্মহত্যা, নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে ফেলা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা .. তারা যুবকদের ব্রেনগুলো নিয়ে খেলা করছে ইত্যাদি…।
কতগুলো চিন্তাধারা, যা সঠিক করা প্রয়োজন
অনেক আহলে ইলম ধারণা করে, সে যখন জিহাদে চলে যাবে, তার ইলমী ও দাওয়াতী দান কমে যাবে। এটি একটি ভুল চিন্তা, জিহাদের বাস্তবতা সম্পর্কে না জানার ফলাফল।
বরং আমরা জিহাদী ময়দানগুলোতে আরো অধিক ইলমী ও দাওয়াতী কার্যক্রম দেখতে পাই। বিভিন্ন পুস্তিকা সংকলন, অডিও ও ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রদান অতঃপর তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা, যা পরবর্তীতে অনেক ভাষায় অনূদিত হয়।
এটা মুজাহিদদের উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, তারা দাওয়াত ও ইলম প্রসারের কর্তব্যকে ভুলে যান না।
তুমি কি জান, তুমি জিহাদের ময়দানেও শরয়ী কোর্স, আকীদা, ফিকহ, জিহাদের বিধি-বিধান, তাজওয়ীদ ও আদাবে শরইয়্যাহর মজলিস চালু করতে পার। এতে ইলম শিখানো ও প্রসার উভয়টাই হয়ে যায়।
তুমি কি জান, তুমি জিহাদী ময়দানগুলোতেও বিভিন্ন ভাষার অনুসারী বিভিন্ন মারকাযগুলোতে ঘুরে ঘুরে ঈমানী ও তারবিয়াতী দরস দিতে পার। এতে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়ার কর্তব্যও পালিত হয়। সুতরাং অনেক মানুষ যা বুঝে তা সঠিক নয় যে, জিহাদের মাঠে যুদ্ধ ছাড়া কিছু নেই। একটি অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ বুঝ। বরং জিহাদের মাঠগুলো বিভিন্ন ইবাদত ও বিভিন্ন ধরনের সওয়াবের কাজ করার জন্য প্রশস্ত, অনেক বিস্তৃত যা একমাত্র অভিজ্ঞজনেরা ছাড়া কেউ জানবে না।
নতুন ধারা
কতিপয় আহলে ইলমের অভ্যাসই হয়ে গেছে, যে-ই তার নিকট আসে জিহাদে যাওয়ার পরামর্শ চাইতে, সে তাকেই উপদেশ দিয়ে ইলম অর্জনে দিকে ফিরিয়ে দেয়।
এটাই সবসময় ও সর্ব অবস্থায় তার পেশা, নীতি ও আদর্শ … আমরা তাকে বলব: তাহলে রসূলুল্লাহ ﷺ এর নীতি পদ্ধতিও কি সর্বদা এটাই ছিল যে, যখনই কেউ তার নিকট জিহাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসত, তাকেই মদীনায় গিয়ে বড় বড় সাহাবীদের কাছ থেকে ইলম অন্বেষণ করার উপদেশ দিতেন?
মাত্র দুই বা ততোধিক ঘটনা বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ কতিপয় সাহাবাকে, যারা জিহাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন, তিনি তাদেরকে জিহাদ ছাড়া অন্য কাজের প্রতি মনোযোগী করেছিলেন। তা ছিল বিভিন্ন ওযরের কারণে, যেমন: আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ﷺ বলেন,
জনৈক লোক রসুলুল্লাহ ﷺ এর নিকট আসলো জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইতে, তখন রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছে? লোকটি বলল, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তাহলে তুমি তাদের ব্যাপারে জিহাদ কর। (বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম রহ.)
হযরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি শুনেছেন,
রসুলুল্লাহ ﷺ বলছেন: কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে তার মাহরাম ছাড়া নির্জনে মিলিত না হয়। এবং কোন মহিলা যেন তার মাহরাম ছাড়া সফর না করে। তখন জনৈক লোক বলল, ‘হে আল্লাহর রসুল আমার স্ত্রী হজ্বে গিয়েছে, আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। তখন তিনি বললেন, যাও তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ কর। (বুখারী মুসলিম)
শয়তানের একটি ধোঁকা
আদ দুরারুস সানিয়্যাহ কিতাবে এসেছে, শায়খ আব্দুর রহমান ইবনে হাসান রহ: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
“আল্লাহর শপথ! শয়তান অনেক মানুষকে ধাধায় ফেলে দেয়, তার প্রকৃতি পরিবর্তন করে দেয় এবং তাকে তার সৃষ্টিকর্তা ও রবের ব্যাপারে সংশয়ে ফেলে। এমনকি এতে লোকটি কাফেরদের প্রতি ঝুকে পড়ে এবং মুসলমানদের আদর্শের পরিবর্তে তাদের আদর্শকে পছন্দ করতে শুরু করে।
এই ফিতনা আক্রান্ত হওয়া ও তারপর এই কষ্টের শিকার হওয়ার পূর্বে আমরা এই ধারণা করতাম যে, হয়ত কোনো কোণায় সুপ্ত কিছু আছে, হয়ত এখনও এমন কিছু পুরুষ আছে, যারা স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে আত্মমর্যাদা রাখে এবং দ্বীনি অহংবোধের কারণে নিজেদের জান ও মাল বিলিয়ে দেয়।
তাই হে ঈমানদারগণ! সকলে তাওবা করুন আল্লাহর সমীপে, যাতে সফলতা লাভ করতে পারেন, আপনাদের শত্রু কাফের – মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করত: নিজেদের ঈমানের প্রতি প্রত্যাবর্তন করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদের মাধ্যমে আপনাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন এবং তাদেরকে আপনাদের দেশের নিকটবর্তী করে দেওয়ার মাধ্যমে আপনাদেরকে যাচাই করছেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“মানুষ কি মনে করে, “আমরা ঈমান এনেছি একথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকেও আমি পরীক্ষা করেছি। সুতরাং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্যনিষ্ঠার প্রমাণ দিয়েছে এবং তিনি অবশ্যই জেনে নেবেন কারা মিথ্যাবাদী।”
আর আল্লাহ তা’আলা আপনাদেরকে আদেশ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে এবং এটাকে আপনাদের জন্য ইবাদত সাব্যস্ত করেছেন।”
তারাই প্রকৃত স্বাধীন
যারা জিহাদ থেকে বসে থাকে তারা কি স্বীয় অন্তরে যা কিছু বিশ্বাস করে, সব পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করতে পারে? না শাসকের জুলুমের ভয়ে স্বীয় আকীদা – বিশ্বাসের কিছু কিছু গোপন রাখার চেষ্টা করে? তারা কখনো স্পষ্ট কুফর ও প্রকাশ্য রিদ্দা (ধর্মত্যাগ) দেখতে পায়, কিন্তু যখন মাঠে – ময়দানে তাদেরকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উত্তর দিতে প্রয়াস পায়, যাতে মাঠে – ময়দানে তার ইলমী দারস ও দাওয়াতি কার্যক্রম চালু থাকে।
ফলে সে অনেক সময় প্রকাশ্য স্পষ্ট অন্যায় দেখতে পায়, (যেমন আল্লাহর কুরআন ব্যতীত ভিন্ন আইনে শাসন করা, প্রকাশ্যে সুদী ব্যাংকের বৈধতা দেওয়া, নারীদের সৌন্দর্য প্রকাশ করে বের হওয়া, দাড়ি মুণ্ডন করা ও ভ্রষ্ট সাংবাদিকতা…) কিন্তু সে তাতে বাঁধা দিতে পারে না।
(অর্থাৎ সে সরাসরি বাধা দিতে পারে না, যখন সে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর এসকল অন্যায়গুলো প্রত্যক্ষ করছে। বক্তৃতা বা ভাষণে সাধারণভাবে বলতে পারে না – এমনটা উদ্দেশ্য নয়। কেননা অনেক সময় এসকল অন্যায়কারীরা আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকে না, ফলে তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ ভাষণ যথেষ্ট হয় না, বরং অবশ্যই সরাসরি অন্যায়কাজেরত ব্যক্তিকেই বাঁধা দিতে হয়। হয়ত মৌখিক বার্তার মাধ্যমে অথবা লিখিত বার্তার মাধ্যমে।)
এভাবে সে বাতিলের ব্যাপারে চুপ থাকাকেই প্রাধান্য দেয়। ব্যক্তিগত স্বার্থে সমস্যা হওয়ার ভয়ে হক স্পষ্টভাবে বলতে পারে না। তবে আল্লাহ যাকে রহম করেন, সে ব্যতীত।
পক্ষান্তরে মুজাহিদগণ হককে স্পষ্ট ও প্রকাশ্যভাবে বলতে পারেন এবং নিজেরা যা কিছু বিশ্বাস করেন, সব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারেন। পৃথিবীর সুপার পাওয়ারকেও ভয় করেন না।
ফলে তারা দুই কল্যাণের যেকোনো এক কল্যাণের মাঝে থাকেন; শাহাদাত, নয়ত আল্লাহর সাহায্যে বিজয়।
হযরত জাবের রা: থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, রসূল ﷺ বলেন:
“শহীদদের সর্দার হল – হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং সেই ব্যক্তি, যে জালিম শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে আদেশ – নিষেধ করে, ফলে জালিম শাসক তাকে হত্যা করে ফেলে। (বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী ও হাকিম। ইমাম হাকিম আরও বলেছেন, হাদিসটির সনদ সহীহ।)
পরিশেষে
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“নিশ্চয়ই এর ভেতর এমন ব্যক্তির জন্য উপদেশ রয়েছে, যার অন্তর আছে কিংবা যে মনোযোগ দিয়ে কর্ণপাত করে।”
মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, যিনি সম্মানিত, আরশের রব; তিনি যেন আমাকে ও আপনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে পরস্পর মুখোমুখী সিংহাসনে বসা অবস্থায় নাবী সিদ্দীকীন ও শুহাদাদের সাথে একত্রিত করেন! আমাদেরকে পরস্পরে ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ করে দিন।
আপনাদেরকে যা কিছু উপদেশচ্ছলে বললাম, আমাদের পক্ষ থেকে তা কবুল করে নেন এবং তাকে সর্বোত্তম প্রয়োগক্ষেত্রে প্রয়োগ করার তাওফিক দান করেন। যদিও তা আপনার মতের বিপরীত হয়।
আর আমাদের মাঝে শয়তানের প্রবেশপথ সৃষ্টি করবেন না।
জাবের রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি:
“শয়তান এব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে যে, জাযীরাতুল আরবে কোন নামাযী তার ইবাদত করবে, কিন্তু সে তাদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উস্কে দিতে চেষ্টা করবে।”[1] (বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম রহ:)
লিখেছেন:
স্বীয় প্রভুর ক্ষমা, দয়া ও অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী বান্দা
খালিদ ইবনে আব্দুর রহমান আল হুসাইনান
আপনার মুজাহিদ ভাইদের জন্য দু’আর আবেদন
[1] হাদীসে বর্ণিত ‘আত তাহরীশ’ অর্থ হল, ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা, অন্তর বিগড়ে দেওয়া এবং একজনকে আরেকজন থেকে বিচ্ছিন্ন করা, যাকে আমরা বাংলায় “উস্কে দেওয়া” বলে প্রকাশ করেছি।