আন-নাসর মিডিয়াইলম ও আত্মশুদ্ধিপাকিস্তানবই ও রিসালাহবই ও রিসালাহ [আন নাসর]মাওলানা আসিম উমরমিডিয়াহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

দরসে তাযকিয়াহ (১ম পর্ব) || উজব এবং খোদপসন্দি -মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ

দরসে তাযকিয়াহ
(১ম পর্ব)

উজব এবং খোদপসন্দি
মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ


আস সাহাব মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত এবং আন নাসর মিডিয়া কর্তৃক বাংলায় অনূদিত
রজব ১৪৩৮ হিজরী

 

ডাউনলোড করুন

PDF

https://banglafiles.net/index.php/s/nPtRzcZz4LWepLc

https://archive.org/download/tazkiah-1_201906/tazkiah-1.pdf

https://alfirdawsweb.files.wordpress.com/2017/11/tazkiah-1.pdf

https://archive.org/download/tazkiah-1/tazkiah-1.pdf

https://www.file-upload.com/b4g74gzkznti

http://www.mediafire.com/file/71if854he5u3bg0/tazkiah-1.pdf

http://www.mediafire.com/file/qmomb25bk8dlk9q/tazkiah-1.pdf/file

 

WORD

https://banglafiles.net/index.php/s/pnf4QotxG9qWeXN

https://alfirdawsweb.files.wordpress.com/2017/11/tazkiah-1.docx

https://archive.org/download/tazkiah-1/tazkiah-1.docx

https://archive.org/download/tazkiah-1_201906/tazkiah-1.docx

https://www.file-upload.com/0u2c19bzw9sy

http://www.mediafire.com/file/rmbz8l185lgjpds/tazkiah-1.docx
http://www.mediafire.com/file/36k5ij5qy4a55pc/tazkiah-1.docx/file

 

=====================

 

দরসে তাযকিয়াহ

(১ম পর্ব)

উজব এবং খোদপসন্দি

মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ

আস সাহাব

রজব ১৪৩৮ হিজরী

 

 

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدالمرسلين ،وعلى آله وصحبه أجمعين ، اما بعد

أعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم : قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا

و قال سبحانه و تعالي:إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ

وقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ : ” لَيْسَ عَدُوُّكَ الَّذِي إِذَا قَتَلَكَ أَدْخَلَكَ الْجَنَّةَ، وَإِذَا قَتَلْتَهُ كَانَ لَكَ نُورًا ، أَعْدَى عَدُوٍّ لَكَ نَفْسُكَ الَّتِي بَيْنَ جَنْبَيْكَ

আল্লাহ তাআলা মুজাহিদ সাথীদের উপর অপরিসীম দয়া ও রহমতের আচরণ করেছেন যে, তিনি তাঁদেরকে দ্বীনের জন্য মরা ও মারা এবং জান ও মাল উৎসর্গ করার তাওফিক দান করেছেন। ফিতনার এই যুগে দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে বের করে আল্লার প্রশস্ত জান্নাতের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রতি পথপ্রদর্শন করেছেন। সমস্ত প্রশংসা সেই পবিত্র সত্ত্বার জন্য।

কিন্তু আমার প্রিয় ভাইয়েরা! আপনারা যেমনটি জানেন যে জিহাদ ওই পবিত্র ইবাদত, যার দ্বারা ইবলিসের কোমর ভেঙ্গে যায়। কেননা জিহাদ ইবলিসের রোপণ করা অপবিত্র গাছের ডালপালার পরিবর্তে তার গোঁড়া কেটে দেয়।

এই মোবারক আমলের মাধ্যমে কুফুরি শাসনব্যবস্থার গাছের মূলোৎপাটন করা হয়। এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শরীয়তের পবিত্র গাছ রোপণ করা হয়, যাতে আল্লাহর বান্দারা এই গাছের ছায়ায় নির্ভয়ে জিন্দেগীর প্রতিটি শাখায় শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। সুতরাং মানবতার শত্রু ইবলিস এটা কিভাবে বরদাশত করতে পারে যে, কোন মুসলমান দুনিয়াতে তার পাতানো জাল থেকে বেড়িয়ে জিহাদের মত মহান পথের পথিক হয়ে যায়?

সে মুসলমানদেরকে জিহাদ থেকে বাঁধা প্রদানের জন্য সব ধরনের মেহনত করে। জিহাদ থেকে পিছনে সরানোর জন্য তাঁর সামনে অযৌক্তিক তাবীল বা ব্যাখ্যা, নতুন নতুন ওজর এবং আকলি দালায়েলের স্তূপ লাগিয়ে দেয় এবং সেগুলোকে তার এজেন্টদের মাধ্যমে এতোটা ব্যাপক করে দেয় যে, লোকেরা এতে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়।

কিন্তু এরপরও যদি কোন মুসলমান আল্লাহর ফজলে জিহাদে বের হয়ে পড়ে, তখন সে তাঁর জিহাদকে নষ্ট করার জন্য সম্ভাব্য সব ধরণের প্রচেষ্টা ব্যয় করে। কিন্তু ইবলিসের চাইতে বড় দুশমন মানুষের নফস। যাকে মানুষ সর্বদা নিজের সাথে চলাফেরা করে।

যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

أَعْدَى عَدُوٍّ لَكَ نَفْسُكَ الَّتِي بَيْنَ جَنْبَيْكَ

“তোমাদের সবচে’ বড় দুশমন তোমাদের নফস, যা তোমাদের পার্শ্বে রয়েছে।”

এবং এই নফস আসলেই অনেক বড় দুশমন। ইবলিসের চাইতেও বড় দুশমন, কেননা ইবলিস যে  انا خير منه অর্থাৎ “আমি আদমের চাইতে শ্রেষ্ঠ”[1] বলেছিল, তার কারণ তো এই নফস-ই ছিল!

সুতরাং যেমনিভাবে মুজাহিদ জিহাদের ময়দানে তার বাহ্যিক শত্রুর ব্যাপারে সর্বদা চৌকান্না থাকে, কোথায় গুপ্তঘাঁটি আছে, এবং কোথায় আশঙ্কা আছে সে জানে, এই নফসও এমন জিনিস, যার ব্যাপারে সর্বদা চৌকান্না থাকতে হবে।

এই নফসের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের দিকে ইশারা করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

” لَيْسَ عَدُوُّكَ الَّذِي إِذَا قَتَلَكَ أَدْخَلَكَ الْجَنَّةَ

“তোমাদের শত্রু সে নয় যে, তোমাকে হত্যা করে, কারণ তার এই হত্যা করা তো তোমাকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়,” অর্থাৎ তার এই হত্যা করার কারণে যদি তুমি শহীদ হও, তাহলে জান্নাতে চলে যাবে।

وَإِذَا قَتَلْتَهُ كَانَ لَكَ نُورًا

“আর যদি তুমি তাকে হত্যা করে দাও, তাহলে এই হত্যা করা কিয়ামতের দিন তোমার জন্য নূর হয়ে যাবে।” বরং

أَعْدَى عَدُوٍّ لَكَ نَفْسُكَ الَّتِي بَيْنَ جَنْبَيْكَ

আকায়ে মাদানি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের সবচে’ বড় শত্রু তোমাদের নফস, যা তোমাদের পার্শ্বে রয়েছে।”

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا

পুরো জান্নাত ও জাহান্নাম আল্লাহ তাআলা এই বাক্যের মাঝে বর্ণনা বলে দিয়েছেন। যে ওই ব্যক্তি সত্যিই কামিয়াব হয়ে গেল, যে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের মাধ্যমে পবিত্র করে নিয়েছে এবং সে-ই ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে, যে এই নফসকে গুনাহের মাঝে ধুলোমলিন করে ফেলেছেন। এই বাক্যের মাঝে পুরো জান্নাত ও জাহান্নামকে বলে দেওয়া হয়েছে।

এই নফসের স্বভাব-প্রকৃতি কি, কুরআনে কারিমে সে দিকে ইশারা করে ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ

বাস্তবতা হল এই যে, নফস সর্বদা মন্দের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয় শুধুমাত্র ওই ব্যক্তি ছাড়া যার উপর আমার রবের রহমত রয়েছে।

এই নফস কিভাবে মানুষের উপর আক্রমণ করে ? আলিম হোক বা আবিদ, মুজাহিদ বা মুহাজির প্রত্যেকের উপর তার মেজাজ এবং স্বভাব-প্রকৃতি অনুযায়ী এই নফস আক্রমণ করে। তার সহজ শিকার গাফেল ব্যক্তি হয়ে থাকে।

যে এই নফস থেকে গাফেল হয়ে গেল, সে যেখানে থাকুক, যদি হারাম শরীফে ইবাদতগুজার আবেদ, অথবা লড়াইয়ের ময়দানে যুদ্ধরত মুজাহিদও গাফলতের শিকার হয়ে যায়, তাহলেও এই নফসের হামলা কামিয়াম হয়ে যায়। এর হামলা থেকে বাঁচতে পারবে না।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت

“বুদ্ধিমান হল ওই ব্যক্তি যে, নিজের নফসের হিসাব গ্রহণ করে।” নিজেই নিজেকে পবিত্র না মনে করে। এই নফসের হামলাসমূহ থেকে গাফেল না হয়ে যায়। এবং মৃত্যুর পরের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এমন ব্যক্তি হচ্ছে বুদ্ধিমান।

والعاجز من اتبع نفسه هواها وتمنى على الله

“অক্ষম হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে নিজেকে খাহেশাতের গোলাম বানিয়ে দেয়। এতদাসত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা থেকে অনেক আশা রাখে।”

ফুজাইল বিন আয়াজ রহঃ আল্লাহ তাআলার এই বানী ولا تقتلوا انفسكم অর্থাৎ যে তোমরা নিজেদের নফসকে হত্যা করো না” [2]এর ব্যাখ্যায় বলেন- “لا تغفلوا عن انفسكم অর্থাৎ নিজেদের নফসের ব্যাপারে গাফেল হইয়ো না!” কেননা من غفل عن نفسه فقد قتلها  যে নিজের নফস থেকে গাফেল হয়েছে, সে তাকে হত্যা করেছে। ইবলিসের প্ররোচনায় নিজের প্ররোচিত হওয়াটা অনুধাবন হয়, কিন্তু নফসের দ্বারা তার প্ররোচিত হওয়ার বিষয়টা সহজে অনুধাবন হয় না। সুতরাং প্রত্যেক সাথীর নফসের হিলা-বাহানাসমুহ সম্পর্কে অবগত হওয়া উচিত, যেমনিভাবে তারা নিজেদের বাহ্যিক শত্রু সম্পর্কে অবগত হয়ে থাকেন।

নফসের হামলাসমূহের মধ্যে অত্যান্ত গোপন ও খতরনাক হামলা হচ্ছে উজব বা খোদপসন্দির হামলা। বিশেষত এই যুগে, যে যুগের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

يعجب كل ذي رأي برأيه

এই যুগে এই হামলা থেকে বাঁচা অতীব জরুরী।

উজব অর্থ হচ্ছে মানুষ মনে মনে নিজের ইলম, তাকওয়া, অর্থ ও প্রসিদ্ধি, শক্তি ও মেধার ব্যাপারে এভাবে খুশী হয় যে, সে এটাকে নিজের পরিপূর্ণতা মনে করে, এবং এর সম্পর্ক আল্লাহ তাআলার দিকে করে না, চাই এই নেয়ামত দুনিয়াবি হোক অথবা দীনী, যতক্ষন এটা তার অন্তরেই থাকে।

আর যদি এই খুশি অন্তর থেকে বের হয়ে কোন আমলে প্রকাশ পায়, মুখে প্রকাশ পায়, তাহলে তো এটাকে তাকাব্বুর বলা হবে। উজব ততক্ষণ বলা হবে, যতক্ষণ তা অন্তরেই থাকবে।

এই উজবের ব্যাপারে কত ভর্ৎসনা এসেছে! এর কতই না ক্ষতি রয়েছে!

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহঃ উজবের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-

العجب ان تراان عندك شيئاليس عند غيرك

উজব ইহাকে বলে যে, আপনি এমনটি মনে করবেন যে, আপনি এমন নেয়ামতের মালিক, যা অন্য কারো কাছে নেই।

এবং হযরত মুহাসাবি রহঃ বলেন-

العجب هو حمل النفس علي ما عملت او علمت و نسيان ان النعم من الله عز و جل

নিজের ইলম বা আমলের ব্যাপারে স্বীয় নফসের প্রশংসা করা এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নেয়ামত এই কথা ভুলে যাওয়া ই হচ্ছে উজব।

ইমাম গাজালি রহঃ বলেন-

العجب هو استعظام النعمة والركون اليها مع نسيان اضافها للمنعم

নিজের কাছে বিদ্যমান কোন নেয়ামতকে বড় কিছু মনে করা, এবং উহার দিকে এভাবে ঝুঁকে থাকা যে, এই নেয়ামতকে আল্লাহ তাআলার দিকে সম্পর্কিত করা থেকে ভুলে যাওয়া।

সুতরাং উজব বা খোদপসন্দি এই দিক থেকে গোপন হামলা যে, এটাকে অনুধাবন করা সহজ কোন কাজ নয়। কেননা খোদপসন্দির সকল খেয়াল বা ধারণা মুখে আসা ব্যতীত অন্তরেই রয়ে যায়। এবং অন্তরের পর্দায় এতো দ্রুত অতিক্রম করে যে, আল্লাহ যাকে এর থেকে হেফাজত রাখবেন, সেই হেফাজত থাকবে, অন্যথায় নফস আমাদের সাথে কি করে গিয়েছে, সে অনুধাবনও করতে পারবে না, আবেদ তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে, আলিম তাঁর ইলমের ব্যাপারে, শক্তিমান তাঁর শক্তির ব্যাপারে নফসের শিকার হয়ে খোদপসন্দিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

বরং হয়রান হয়ে যাওয়ার মত বিষয় হল এই যে, নফসের এই হামলা কোন দুর্বল আমলদার ব্যক্তিকেও ছেড়ে দেয় না। বরং আপনারা এই জমানায় দেখবেন যে, যার কাছে কিছুই নেই, তাকেও খোদপসন্দির এই হামলায় আক্রান্ত দেখা যায়।

এটাই কারণ যে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ও তাবেইন এটা থেকে বাঁচার ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দিতেন।

হাফেজ ইবনুল কাইয়িম রহঃ বলেন- যে ব্যক্তিই নফসের এই কথাকে খোদপসন্দির দৃষ্টিতে দেখল, অর্থাৎ নিজের নফসের আমলে খুশি হয়েছে, সে অবশ্যই তাঁর এই আমলকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

হযরত আতা রহঃ বলেন- অনেক গুনাহ যা অপরাগতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করে দেয়, তা ওই নেক কাজ থেকে উত্তম, যা উজব এবং তাকাব্বুর সৃষ্টি করে।

যখন মানুষ তার নফসের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যায়, এবং এটা ভাবতে থাকে যে, সে তো অনেক ভালো এবং দ্বীনদার হয়ে গিয়েছে। এর অর্থ হল এই যে, এই ব্যক্তি তার নফসের জালে ফেঁসে গিয়েছে। এখন তার নফস তাকে যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যাবে। সে তাকে দিয়ে তার সকল খাহেশাত পূর্ণ করাবে। কখনো তো দ্বীনের নামেই পূরণ করাবে, কিন্তু তাকে নিশ্চিন্ত রাখবে যে, আপনি তো অনেক দ্বীনদার এবং আমলদার লোক! এভাবে নফস তাকে ধ্বংসের মাঝে ফেলে দিবে।

কুরআনে কারিম এই দৃষ্টিভঙ্গির তিরস্কার করছে – আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন – فَلَا تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ ۖ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَىٰ

“তোমরা নিজেদেরকে পাক-পবিত্র হিসেবে সাব্যস্ত করিও না, যারা মুত্তাকী আল্লাহ তাআলা তাঁদের ব্যাপারে ভালো করেই জানেন।”[3]

সুরা নিসা’তে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم ۚ بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا

“আপনি কি ওই লোকদের দেখেন নি, যারা নিজেদেরকে পাক-পবিত্র বলছে, বরং আল্লাহ যাকে চান পাক বানিয়ে দেন, এবং তাদের উপর সুতা পরিমাণও জুলুম করা হবে না।”[4]

আল্লাহ তাআলার কাছে কার কি গুরুত্ব আল্লাহ তাআলা তা ভালো করেই জানেন। দুনিয়াবাসি তো বাহ্যিক সাজসজ্জা দেখে থাকে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা বান্দার আমলের ব্যাপারে গাফেল নন।

সুতরাং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

رُب أشعث أغبر مدفوع بالأبواب

“অনেক লোক রয়েছে দুরবস্থায় ও দুঃখে জর্জরিত, ধুলায় ধূসরিত, লোকেরা তাঁদেরকে নিজেদের দরজায় দাড়াতেও দেয় না।” কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁদের মর্যাদা কেমন?

لو أقسم على الله لأبره

“যদি তারা কোন ব্যাপারে আল্লাহর কসম খায়, আল্লাহ তাঁদের কসমকে পুরো করে দেন।”

আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁদের গুরুত্ব এমনই।

সুতরাং নিজের কোন আমলের উপর গর্ববোধ করা, স্বীয় মেধা, ইলম ও তাকওয়ার ব্যাপারে গর্ববোধ করা, এবং কাউকে নিচু মনে করা, গর্ববোধ করার প্রথম দরজা-ই এটা যে, সে অন্যকে নিচু মনে করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাআলাই জানেন هو أعلم بمن اتقى আল্লাহ তাআলা খুব জানেন, আল্লাহ ভালো করেই জানেন, আল্লাহ তাআলা আমাদের চেয়েও অধিক ভালো জানেন যে, মুত্তাকী কে! আল্লাহকে ভয়কারী কে!

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ স্বীয় কিতাব “আয যুহদ” এ লিখেছেন –

যে হযরত সুলাইমান আঃ লোকদের সাথে বৃষ্টি বর্ষণের দুয়া করতে বের হলেন। তিনি এক পিঁপড়ার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যে তার পা আসমানের দিকে উল্টিয়ে শুয়ে বলছিল, হে আল্লাহ! আমরা আপনার মাখলুকদের মধ্য থেকে একটি মাখলুক, আমরা আপনার রিজিকের মুখাপেক্ষী, হয়তো আপনি আমাদের পানি দিন অথবা আমাদের ধ্বংস করে দিন! এটা শুনে সুলাইমান আঃ লোকদের বললেন “চল! ফিরে চল! অন্য কারো দুয়ায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়ে যাবে”। আল্লাহ তাআলার কাছে কার কি গুরুত্ব, আল্লাহ ই ভালো জানেন।

সুতরাং হে আমার সাথীরা! উজব এই যুগে খুবই খতরনাক একটি জিনিস। বিভিন্ন ধরণের হিলা-বাহানা দ্বারা, বিভিন্ন ধরণের কলাকৌশলের দ্বারা, বিভিন্ন ধরণের মারপ্যাঁচ ব্যবহার করে মানুষের উপর নফস আক্রমণ করে বসে।

এর উপশম ও এর বিরোধিতা হচ্ছে তাওয়াজু, আল্লাহ তাআলার জন্য নিজে নিজেকে ছোট মনে করা। অন্য মুসলমানদের নিজের চাইতে উত্তম মনে করা, এটাই হচ্ছে উজবের উপশম বা ঔষধ।

কেননা বান্দা যদি অন্তরে তার হাকিকতের অনুভূতি রাখে, তার শক্তিসামর্থ তার জেহেনে থাকে যে, সে কি ছিল? তার হাকিকত কি? তাকে কি দিয়ে বানানো হয়েছে? তাহলে তো আর অন্তরের মাঝেই বড়ত্ব সৃষ্টি হবে না। নিজের কোন আমলের উপর গর্ববোধ করবে না! আল্লাহ যদি কোন নেয়ামত দেন, তাহলে সে এটার উপর বড়ত্ব প্রকাশ করবে না।  অবশ্যই সে তার হক হিসেবে সাব্যস্ত করবে না, বরং সে উহাকে আল্লাহ তাআলার দিকেই সম্পৃক্ত করবে! এবং অন্তরে তাওয়াজু’ রাখবে। আর যখন অন্তরে তাওয়াজু, তখন তো আর তাকাব্বুরও আসবে না।

ওই পবিত্র নফসগুলো, যাদের ব্যাপারে কুরআনে কারিমে رضي الله عنهم ورضوا عنه এর[5] ঘোষণা করা হয়েছে, ওই পবিত্র নফসগুলো, যারা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরীক্ষা ও মসিবতে সাহায্য করেছেন, এবং মক্কায় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক মুহূর্তের জন্য ছেড়ে যাননি, যারা তাঁর সাথে হিজরত করেছেন, বদর লড়াইয়ে তাঁর সাথে শরীক হয়েছেন, এবং সমস্ত রণাঙ্গনে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শরীক ছিলেন। তাঁদের কি অবস্থা দেখুন!

হজরত আবু বকর রাঃ বলতেন-

لو يعلم الناس ما أنا فيه أهالوا عليَّ التراب

“যদি তারা আমার হাকিকত সম্পর্কে অবগত হয়, তাহলে আমার উপর মাটি নিক্ষেপ করবে,”

আমার মুজাহিদ সাথীগণ! আপনারা কি মনে করছেন এটা শুধুমাত্র একটি লৌকিকতাপূর্ণ বাক্য ছিল? তাঁরা তো সাদামাটা মনের মানুষ ছিলেন, যা তাঁদের অন্তরে থাকতো, তাই তাঁদের জবানে আসতো। তাঁরা নিজেদেরকে এমনটাই মনে করতেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে সমুন্নত করে দিয়েছেন।

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ বলেন-

একদিন আমি দেখলাম আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ কোন একদিকে যাচ্ছেন। আমিও তাঁর পিছু পিছু চললাম, আমি দেখলাম, তিনি একটি বাগানে প্রবেশ করলেন এবং বাগানের মাঝে দাড়িয়ে অর্থাৎ যখন তিনি নিশ্চিন্ত হলেন যে, কেউ তাঁকে দেখছে না, তাঁর কথা কেউ শুনছেন না, তখন তিনি নিজের নফসকে লক্ষ্য অরে বলছেন

“عُمَرُ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ بَخٍ بَخٍ وَاللَّهِ بَنِي الْخَطَّابِ لَتَتَّقِيَنَّ اللَّهَ أَوْ لَيُعَذِّبَنَّكَ”

“বাহ! বাহ! আমিরুল মুমিনিন, উমর ইবনুল খাত্তাব! আল্লাহর কসম! হে খাত্তাবের ব্যাটা! আল্লাহকে ভয় কর! অন্যথায় তিনি তোমাকে অবশ্যই শাস্তি দিবেন।”

কখনো নিজেকে সম্ভধন করে বলতেন “হে খাত্তাবের ব্যাটা! আজ তুমি আমিরুল মুমিনিন, অথচ কালকে যখন তোমার বাবা তোমাকে উট চড়াতে পাঠাতো, তখন উঠ ক্ষুধার্ত আসতো আর তোমার পিতা তোমাকে প্রহার করতো! তুমি উটও চড়াতে পারতে না!”

তাঁরা আল্লাহর দেওয়ানা ছিলেন, যে তাওয়াজু তাঁদের অন্তরে এমনভাবে বসা ছিল, যে তাঁদের প্রত্যেক আমলে তাওয়াজু প্রকাশ পেত। ইহা লৌকিকতা ছিল না।

হযরত আবু বকর রাঃ হলেন রফিকে গার বা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের সাথী।

হযরত খাব্বাব রাঃ বলেন- হযরত আবু বকর রাঃ নিজের ঘরে ছিলেন, গাছের ডালে কোন কবুতর বা চড়ুই এসে বসলো, আবু বকর রাঃ তাঁকে দেখলেন এবং বললেন,

طُوبَى لَكَ يَا طَيْرُ ، مَا أَنْعَمَكَ عَلَى هَذِهِ الشَّجَرَةِ

“হে পাখি! তোকে মোবারকবাদ! কি চমৎকার, তুই গাছের ডালে বসছিস!”

تَأْكُلُ مِنْ هَذِهِ الثَّمَرَةِ ، ثُمَّ تَمُوتُ

“তুই ফল খাচ্ছিস, উড়ছিস! এবং একদিন মরে যাবি!”

ثُمَّ لا تَكُونُ شَيْئًا

“অতঃপর আর কিছুই বাকি থাকবে না! অর্থাৎ তোর কোন হিসাব কিতাব হবে না!”

لَيْتَنِي مَكَانَكَ

“হায়! আমি যদি তোর জায়গাতে হতাম!”

তুই সেই হিসাবের দিন থেকে বেঁচে গিয়েছিস, হায় যদি আমি তোর জায়গায় হতাম!

তিনিই হচ্ছেন রফিকে গার, সিদ্দিকে আকবর, দেখুন তাওয়াজু অন্তরের মাঝে! এমনই উমর ফারুক রাঃ এর হালত ছিল।

একদিন উমর রাঃ মাটির একটি টুকরা উঠালেন, এবং বললেন হায় যদি আমি এই ইটের মত হতাম! হায় যদি আমার মা আমাকে জন্ম না দিত, হায় যদি আমি কিছুই না হতাম! হায় যদি আমার কোন নাম নিশানাই না থাকতো!

এই মহান মনীষীদের তাওয়াজুর এই আশ্চর্য অবস্থা ছিল, যারা তাঁদের জিন্দেগী হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে কুরবান করে দিয়েছিলেন।  যারা তাঁদের গর্দান স্বীয় মনিবের গর্দান মোবারক, এবং নিজেদের বুক স্বীয় মনিবের দেহ মোবারক বাঁচাতে ঢাল বানিয়ে দিয়েছিলেন।

সুতরাং মেরে দোস্ত! অন্তরে যদি তাওয়াজু থাকে, তাহলে সেই অন্তরে আর উজব সৃষ্টি হবে না! অন্যদের উপর বড়ত্ব দেখানো, নিজেকে অন্যদের চাইয়ে বড় প্রমান করা, মসজিদ ও মাহফিলসমূহে নিজেকে প্রদর্শন করা, এই সব কিছু উজব এবং তাওয়াজু না থাকার দরুন হয়ে থাকে। খোদপসন্দির কারণে হয়ে থাকে, এ কারণেই অন্তরে অন্যদের ব্যাপারে নিচুতা সৃষ্টি হয়।

যখন নিজেই নিজেকে বড় মনে করতে থাকবে, যখন নিজেই নিজেকে মুত্তাকী মনে করতে থাকেব, যখন নিজেই নিজেকে মেধাবী এবং সাহসী মনে করতে থাকবে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের ব্যাপারে নিচুতা/তুচ্ছতা সৃষ্টি হবে, যাতে মুহাব্বাত শেষ হয়ে যায়, লেনদেনের ক্ষেত্রে অমর্যাদা এবং পরস্পর বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে যায়। এটা এমন খতরনাক রোগ!

আমার ভাইয়েরা! চিন্তা করার বিষয় হল, যদি নিজেকে বড় মনে করার দ্বারা মানুষ বড় হয়ে যেত, তাহলে তো এই জমিনে শুধু অহংকারীরাই জীবিত থাকতো! নিজেকে বড় মনে করার দ্বারা কে ই বা বড় হয়ে গেছে!?

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَنْ تَوَاضَعَ لِلَّهِ دَرَجَةً يَرْفَعْهُ اللَّهُ دَرَجَةً ، حَتَّى يَجْعَلَهُ فِي أَعْلَى عِلِّيِّينَ

“যে ব্যক্তি মাখলুকের সামনে আল্লাহ তাআলার জন্য এক স্তর তাওয়াজু অবলম্বন করলো, আল্লাহ তাআলা তাঁকে স্তরে স্তরে মর্যাদা বৃদ্ধি করতে থাকেন। এমনকি তাঁকে ইল্লিনের সর্বোচ্ছ স্থানে পৌঁছে দিবেন।”

وَمَنْ يَتَكَبَّرْ عَلَى اللَّهِ دَرَجَةً ، يَضَعْهُ اللَّهُ دَرَجَةً ، حَتَّى يَجْعَلَهُ فِي أَسْفَلِ السَّافِلِينَ

“আর যে ব্যক্তি মাখলুকের সামনে স্বীয় বড়ত্ব প্রদর্শন করে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে পর্যায়ক্রমে নিচু ও অপমানিত করতে থাকবেন, এমনকি তাকে সাফিলিনের (জাহান্নামের) সবচে’ নিম্নস্তরে পৌঁছে দিবেন।”

একদিন হযরত উমর ফারুক রাঃ মিম্বারে তাশরিফ রেখে বলেন,

يا ايها الناس تواضعوا

“হে লোক সকল! তাওয়াজু অবলম্বন কর!” কেননা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি

مَنْ تَوَاضَعَ لِلَّهِ رَفَعَهُ اللَّهُ ، فَهُوَ فِي نَفْسِهِ صَغِيرٌ

এটা আশ্চর্য একটা হাদিস! যে আল্লাহর জন্য ছোট হবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন, যদিও সে নিজেকে স্বীয় দৃষ্টিতে ছোটই মনে কর থাকে। এটা আল্লাহ তাআলার সবচে’ বড় নেয়ামত। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কে আল্লাহ তাআলা এই মর্তবা দান করেছিলেন। ইরশাদ করেছেন

وَفِي أَعْيُنِ النَّاسِ عَظِيمٌ

কিন্তু “লোকদের দৃষ্টিতে মহান হবে।”

এবং ইরশাদ করেছেন-

وَمَنْ تَكَبَّرَ وَضَعَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ، فَهُوَ فِي أَعْيُنِ النَّاسِ صَغِيرٌ ، وَفِي نَفْسِهِ كَبِيرٌ

“যে তাকাব্বুর করবে, নিজেকে বড় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে নিচু করে দিবেন। সুতরাং সে লোকদের দৃষ্টিতে ছোটই হবে, যদিও সে নিজেকে মনে মনে বড় করে।”

নফস তার অন্তরে এই সকল ধারণা সৃষ্টি করতে থাকে, রোপণ করতে থাকে যে, আপনার চাইতে তো ভালো কেউ নেই, আপনার চাইতে তো উত্তম মশওয়ারা কেউ দিতে পারে না। আপনার চাইতে ভালো কথাবার্তা কেউ বলতে পারে না। আপনার চাইতে ভালো ইবাদত কেউ করতে পারে না। আপনার মত ইলমওয়ালা তো ভূখণ্ডে পাওয়া ই যায় না। নফস মানুষের সাথে এভাবে খেলা করে। কিন্তু হাকিকত টা কি?

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

وَحَتَّى لَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِمْ مِنْ كَلْبٍ أَوْ خِنْزِيرٍ

“হাকিকত হল এই যে, সে লোকদের নিকট কুকুর অথবা খিঞ্জিরের চাইতেও মন্দ হয় থাকে।”

কিন্তু নফসের হামলা দেখুন! নফসের সুক্ষ কর্ম দেখুন! তাকে কেমন বড় বানিয়ে দিয়েছে যে, তার নজরে দুনিয়াই দাড়াতে পারে না! নফস মানুষকে এভাবেই ধোঁকায় ফেলে রাখে। তার দৃষ্টিতে তার জাতকে এমন উচু বানিয়ে দেয় যে, তার দৃষ্টিতে বাকি সবাই গতকালের বাচ্চা হয়ে যায়। অথচ বাস্তবতা কি হয়ে থাকে, আপনারা এই হাদিসে শুনেছেন।

এটা কেন হয়, তাওয়াজু না থাকার কারণে হয়, যদি তাওয়াজু থাকতো, তাহলে মুয়ামালা এর উল্টো হত। যদিন জবান অথবা কোন বাহ্যিক চমকের দ্বারা কেউ বড় হত, তাহলে কায়সার ও কিসরার পতন কখনোই আসতো না। দুরাবস্থা, ও ধুলায় ধূসরিত পোশাক, ছিটেফাটা জুতা, মাটিতে উপবেশনকারীদের পদতলে তাদের মুকুট দলিত হতো না।

কোথায় কায়সার আর কিসরা আর কোথায় আরবের বদ্দুরা! যদি ঠাশ ঠাশ কথাবার্তা ও চিকন চিকন কথাবার্তায় কেউ বড় হয়ে যেত, তাহলে উপমহাদেশ ও আন্দালুস (স্পেন) এর মুসলিম সালতানাত অধঃপতনের শিকার হতো না। কেননা দরবারী পরামর্শদাতারা তাঁদের চিকন চিকন কথাবার্তায় এই বাদশাহদেরকে সর্বদা শাহজাহান বানিয়ে রাখতো! তাদের কথাবার্তায় সেই শাসকদের বাদশাহির কখনোই পতন আসতো না।

এর বিপরীত রহমাতুল লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর জান কুরবানকারীদের দেখুন! তাকাল্লুফ, লৌকিকতা ও বানোয়াট বিষয় থেকে মুক্ত কথাবার্তা, তালি লাগানো পোশাক। সাদাসিধা খানা, সাদামাটা ঘর, সাদামাটা মসজিদ এবং সাদামাটা জীবন যাপন, কিন্তু যখন উঠেন, তো কায়সার ও কিসরার শান শৌকত, ঠাটবাট পদদলিত করে এগিয়ে চলেন এবং নিজেদের হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনপদ্ধতি দুনিয়া ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

আপনারা কি ইমারাতে ইসলামী আফগানিস্তানের দরবেশদের দেখেন নি? আধুনিক সভ্যতার রঙ্গিন দুনিয়া থেকে বেখবর, লৌকিকতা ও কৃত্তিমতা থেকে দূরে, কাচা মসজিদ, সেই কাঁচা মাদারেস, এই চাটাইয়ের উপর বসেই দুই সুপার পাওয়ারকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছেন। নিজে নিজে বড় হয়ে কে বড় হতে পারে?

বাহ্যিক তাকাল্লুফ ও রংঢং দেখিয়ে কেই বা বড় হয়ে যায়? যে আল্লাহ তাআলার জন্য তাওয়াজু অবলম্বন করবে। রহমাতুল লিল আলামিনের ফরমান আজো তরুতাজা আছে।

مَنْ تَوَاضَعَ لِلَّهِ رَفَعَهُ اللَّهُ

অন্যথায় আপনি দেখুন, কোথায় একদিকে মুসলিম বিশ্ব, এটোম বোমার অধিকারী জাতিসমূহ, আরব পেট্রলের সম্পদের অধিকারী, কিন্তু কাফের দরজায় তাদের শক্তি কি? কাফেরদের সম্মুখে তাদের কি ই বা শক্তি? এবং এই দরবেশদেরও দেখুন! এই মাটিতে উপবেশনকারীদেরও দেখুন! এদের কাছে তাদের গুরুত্ব কতটুকু! এবং ওই পশ্চিমা বিশ্ব এদের কাছে কেমন আবেদন করছে সংলাপ ও আলোচনার জন্য। জান বাঁচানোর জন্য।

সুতরাং হে আমার মুজাহিদ সাথীগণ! অন্তর থেকে তাওয়াজু বের হয়ে যাওয়া, এবং উজব ও খোদপসন্দি এসে যাওয়া মুজাহিদদেরকেও কেমন খারাপ করে দিতে পারে। সেটাও জিহাদের ময়দানগুলোতে আপনারা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কত যোগ্যতাসম্পন্ন, মেধাবী ও চৌকশ ব্যক্তিত্ব, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিও এই নফসের হামলার শিকার হল, তখন এই সকল অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা আল্লাহর দ্বীনের কোন ফায়েদা দিতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তাআলার নিকট এগুলো অত্যান্ত অপসন্দ, চাই যে মুজাহিদ হোক অথবা হারাম শরীফে ইবাদতরত আবেদ হোক। যদি সে নিজেকে বড় মনে করতে থাকে, তাহলে اللَّهُ الصَّمَدُ আল্লাহ তো অমুখাপেক্ষী। আল্লাহর জরুরত নেই কারো ইবাদতের! কারো জিহাদের!

আল্লাহ তাআলার উজব পসন্দ নয়, বড়ত্ব প্রদর্শন পসন্দ নয়। চাই সেটা অন্তরের মাঝে থাক না কেন! কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষকে বান্দা বানিয়েছেন। যখন তার বান্দা বান্দার স্তর থেকে উপরে উঠতে থাকে, তাহলে এটা কিভাবে হতে পারে যে তাকে পসন্দ করবেন? তার ইবাদত কবুল করবেন?

তিনি ঘোষণা করেছেন الكبرياء ردائي এই উপরে উঠা, এই বড়ত্ব আমার চাঁদর, আর কে রয়েছে যে তাঁর থেকে তাঁর ছিনিয়ে নিতে পারে? কেউ ই ছিনিয়ে নিতে পারবে না। অপরদিকে এর বিপরীত আপনারা দেখবেন, যে আল্লাহ তাআলা সাদাসিধা, নতুন নতুন ও সাধারণ মুজাহিদদের দ্বারা দ্বীনের এতো বড় কাজ নিয়ে নেন, যে সকল লোক তাঁর উপর ঈর্ষা করতে থাকে।

মেরে দোস্ত! এই উজব-ই জিহাদের কাতারসমূহে বিচ্ছিন্নতা ও বিক্ষিপ্ততার প্রথম বীজ বপন করে। একজন মুজাহিদ, যে আল্লাহ তাআলার জন্য ঘরবাড়ী ছেড়ে আসে, সব কিছু কুরবান করে আসে, পরিশেষে কি কারণ থাকতে পারে যে, একাকি ই নিজের রায়ের উপর অটল থেকে যায়? যে যখন তার মশওয়ারাকে কবুল করা হয় না, তখন সে জিহাদের কাতার ছেড়েই চলে যায়, অথচ সে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য তাঁর জানের সওদা করেছিল।

এটা হচ্ছে নফসের হামলা, যা উজবের সুরতে তাঁদের উপর করা হয়েছিল। তাঁর রায়কে নফস এতো সুসজ্জিত করে দেখিয়েছে যে, এই সকল লোকদের মধ্য থেকে সর্বাধিক উত্তম ও রায়প্রদানের যোগ্য আপনিই! হক জারি হলে তো আপনার জবানেই জারি হয়। আল্লাহ আমাদের স্বীয় পানাহে রাখুন।  নফসের এই ধোঁকা থেকে আল্লাহ আমাদের স্বীয় পানাহে রাখুন। কিন্তু জিহাদের ময়দানেও এবং হারাম শরীফে ইবাদতকারী আবেদের অন্তরেও এই ধরণের খেয়ালসমূহ ঢালতে পারে, তাঁদের উপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম। এই বিষয়গুলো আপনারা অবশ্যই দেখেছেন। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুজাহিদ এর অনিষ্ঠতা থেকে রক্ষা করুন।

এই দৃষ্টিভঙ্গি এক দিনেই মজবুত হয় না। এই বিল্ডিং এর নির্মাণে নফস একটি দীর্ঘ ও লম্বা সময়ের মেহনত করে। আর যে গাফলতের শিকার হয়, সে তা অনুধাবন করতে পারে না।

الكيس من دان نفسه

যদি সে স্বীয় নফসের হিসাব গ্রহণ করতে থাকতো, অন্তরে উদিত হওয়া খেয়ালসমূহের মুহাসাবা করতে থাকতো, তাহলে নফস এই পর্যন্ত সুযোগ পেত না। সুতরাং এই দৃষ্টিভঙ্গি একদিনেই এতোটা শক্তিশালী হয় না, বরং এর জন্য যথেষ্ট সময় লাগে, নফস এর পিছনে যথেষ্ট মেহনত করেছে।

সুতরাং আমার প্রিয়তম সাথীগণ! এই ধারণা ও নফসের ধোঁকা থেকে বাঁচার অনেক প্রয়োজন রয়েছে। মুজাহিদের এই ধারণা যে সে পুরাতন মুজাহিদ, তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি, অথবা সে অনেক কাজ করেছে অথবা তাঁর চাইতে বেশি কারো ইলম নেই, এটা নফসের ধোঁকা। তার বাতিল হওয়ার জন্য আর কারো দলিলের প্রয়োজন নেই, এতোটুকুই যথেষ্ট যে এটাকে উজব বলা হয়, এবং উজব আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যান্ত অপসন্দ। অতঃপর যখন এই বাক্য মুখে প্রকাশ পায়, তখন তো এটা তাকাব্বুর হয়ে যায়, উজব আর বাকি থাকে না, এটাকে তাকাব্বুর বলে।

আমার প্রিয়তম ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলাকে ভয় করুন! আমাদের রব আমাদের সর্বদা এই অবস্থায় দেখুক যে, আমরা তার বান্দা হয়ে আছি। কোন অবস্থায় যেন “انا خير منه আমি তাঁর চাইতে উত্তম” এর মত ইবলিসি বাক্য মুখ থেকে বের না হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের স্বীয় নিরাপত্তায় রাখুন।

এই নফস ই ইবলিসকে এই ধারণায় লিপ্ত করেছিল যে, أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ ۖ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ দেখুন সে তাঁর খালেক/সৃষ্টিকর্তাকে বলছে, সে স্বীয় নফসের ধোঁকায় এমনভাবে পড়েছে যে, সে স্বীয় খালেককে বলছে, যে আমি তাঁর চাইতে শ্রেষ্ঠ, কারণ আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এভাবে গাফলতের শিকার হয়ে গেল।

সুতরাং কোন অবস্থায় এই বাস্তবতা ভুলে যাবেন না, যে আমাদের পূর্বে কত পুরাতন মুজাহিদ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছেন। জিহাদের ময়দানে তাঁদের বীরত্ব ও সাহসিকতা, নেতৃত্ব ও মেধার উপাখ্যান সমূহ ব্যাপক ছিল। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে কত জন ছিল যে, কুফরি শক্তির সামনে দাড়িয়ে থাকতে পেরেছে? আল্লাহ তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে আমাদের হেফাজত করুন এবং আমাদের পরিসমাপ্তি ঈমানের উপর দান করুন এবং জিহাদের কাতারসমূহে আমাদের শাহাদাত দান করুন এবং কিয়ামতের দিন এই

‘السابقون السابقون أولئك المقربون

এর মাঝে আল্লাহ তাআলা আমাদের হাশর করুন।

কিন্তু আপনারা কি দেখছেন না, এদের মাঝে কত লোক রয়েছে, যারা আজ শরীয়ত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শরীয়তের দুশমনদের কাতারে বিদ্যমান রয়েছে? কিন্তু নফসের মাইর শয়তানের মাইরের চেয়ে অধিক খতরনাক যে, এর অনুধাবনও হয় না।

আপনারা এই কথা ভুলে যাবেন না, যে আল্লাহ তাআলা কারো দ্বারা জিহাদের কাজ নিচ্ছেন, তো ওই মুহূর্তেও তাওয়াজু জরুরী। কেননা তাঁর নফস তাকে এটা পসন্দনীয় করাতে চাইবে যে, এই যে কাজ হচ্ছে এটা তো আপনার কারণেই হচ্ছে। আপনার মশওয়ারা, আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার মেহনতের কারণেই হচ্ছে। ব্যস যখন অন্তরে এই খেয়াল সৃষ্টি হতে থাকে, তাহলে বুঝে নিন যে, নফসের তীরের বিষ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আল্লাহ তাআলার আশ্রয় কামনা করুন।

সুতরাং এটাকে খতম করার জন্য, উজব থেকে বাঁচার জন্য যে পদ্ধতি সাহাবায়ে কেরাম রাঃ অবলম্বন করেছেন, সেটা কার্যকর পদ্ধতি। সালফে সালিহিন থেকে এই পদ্ধতি বর্ণিত। এই নফসের মুহাসাবা, তার শক্তি তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকা, তাঁকে হুমকি ধমকি দিতে থাকা, এবং নিজের অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকা। নিজের অপর আসা সকল নেয়ামতকে আল্লাহ তাআলার দিকে সম্পৃক্ত করা।

উজবের একটি কারণ, তার আশেপাশের পরিবেশও হয়ে থাকে যে, পরিবেশ ই এমন, এই দিকে ভ্রুক্ষেপই নেই, এবং প্রত্যেকেই উজব এবং বড়ত্ব প্রদর্শনে লিপ্ত রয়েছে, গর্ববোধ করছে। একজন অপরজনের উপর প্রতিযোগিতা করছে। দুনিয়াবি মুয়ামালের মধ্যে, বড়ত্বের মধ্যে। উত্তম হল এর থেকে বাঁচার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করা।  কখনো এমন হয় যে, মানুষ এক খাস পরিবেশ এবং খাস হালকায় থেকে থেকে বড় হয়ে যায় এবং ওই হালকা থেকে বের হয়ে সে আর দেখে না, এবং সে নফসের মুহাসাবাও করে না যে, তুই কি? তোর ক্ষমতা ই বা কি?  দুনিয়াতে তোর চাইতে কত বড় বড় লোক বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু কোন এক খাস মহলের মাঝে থাকার ফলে সে এক খোলসের মাঝে বন্দি হয়ে পড়ে।

মানুষের জন্য উচিত যে, সে তার চাইতে উত্তম লোকদের সোহবত গ্রহণ করবে। তাঁর চাইতে অধিক ইলমের অধিকারী লোকদের সাথে বসবে। নিজের চাইতে অধিক ভালো লোকদের সাথে উঠাবসা করবে, যাতে নফসের এই ক্ষমতার বিষয়ে অনুভূতি আসে যে, তোর চাইতে অধিক ভালো লোক এই দুনিয়াতে বিদ্যমান আছে। তোর চাইতে অধিক ইলমের অধিকারী, এবং অধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক এই দুনিয়াতে বিদ্যমান আছে।

এমনিভাবে তাঁর ইখলাসের একটি পদ্ধতি এটাও হতে পারে যে, সে তাঁর কোন বন্ধুর সাথে চুক্তি করে রাখবে, যদি আমার মুখ দিয়ে কখনো কোন বড়ত্ব প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহলে আপনি আমাকে সতর্ক করে দিবেন, যাতে আমি আমার ইসলাহ করে নিতে পারি। যেহেতু এমন পরিবেশে আছি, যেখানে এগুলো অনুধাবন করা যায় না। এগুলো ব্যাপক হয়ে যায়। কারো সাথে এমন চুক্তি করে নিন এবং তাঁকে ইসলাহের মাধ্যম বানিয়ে নিন।

এই ধরণের মজলিস এবং সোহবত থেকে বেঁচে থাকুন, যেখানে আপনার মুখের সামনে আপনার প্রশংসা করা হয়। যদি আপনার প্রশংসা করা হয়, তাহলে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ থেকে বর্ণিত- যখন কেউ তাঁর সামনে তাঁর প্রশংসা করতো অথবা তাঁর কাছে তাঁর প্রশংসা পৌঁছতো যে তাঁর পশ্চাতে কেউ তাঁর প্রশংসা করেছে, তাহলে তিনি দুয়া করতেন যে,

اللهم أنت أعلم مني بنفسي، وأنا أعلم بنفسي منهم

হে আল্লাহ আপনি আমাকে আমার চাইতে অধিক জানেন এবং আমি আমাকে ওই লোকদের চাইতে বেশি জানি, যারা আমার প্রশংসা করছে।

اللهم أجعلني خيراً مما يظنون

হে আল্লাহ লোকেরা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করে, আমাকে তাঁর চাইতে অধিক ভালো বানিয়ে দিন।

وأغفر لي ما لا يعلمون

আমার যে গুনাহসমুহ সম্পর্কে এরা অবগত নয়, সেগুলো ক্ষমা করে দেন।

ولا تؤاخذني بما يقولون.

তারা আমার যে প্রশংসা করছে, আপনি আমাকে সে ব্যাপারে পাকড়াও করিয়েন না! এই দুয়া একটি উত্তম দুয়া।

এমনিভাবে একটি দুয়া আরও বর্ণিত আছে যে,

اللهم اني اعوذبك من العجب و سوء الكبر

সকাল সন্ধ্যা যদি এই দুয়া করা হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে আশা, তাঁর রহমতের কাছে আশা যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের এই রোগ থেকে বাচিয়ে নিবেন। নফসের এই হামলা থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মুক্ত রাখবেন। আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আমাদেরকে এর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।   আল্লাহ তাআলা সকল সাথীকে এর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।

 

اللهم اعط نفسه تقواها

وزكها أنت خير من زكاها

انت وليها ومولاها

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

[1] সুরা আ’রাফ ৭:১২

[2] সুরা নিসা ৪:২৯

[3] সুরা নাজম ৫৩:৩২

[4] সুরা নিসা ৪:৪৯

[5] সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে এই আয়াতটি সুরা বাইয়িনাহ সহ একাধিক সুরায় এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে “আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − nine =

Back to top button