আত-তিবইয়ান পাবলিকেশন্সইতিহাস- ঐতিহ্যবই ও রিসালাহমিডিয়া

ইমাম আহমদ ইবনু নাসর আল খুজাই – হাফেজ ইবনে কাসির রহঃ

আল-ইমাম আহমদ ইবনু নাসর আল-খুজা‘ঈ

– আল-হাফিজ ইবনু কাসীর (রহঃ)

ডাউনলোড করুন

https://archive.org/details/ImamKhuzaibangla

https://archive.org/download/ImamKhuzaibangla/Imam_Khuzaibng.pdf

https://www.mediafire.com/file/g5lng044vvl2a7k/al_Imam_Khuzai_bng.pdf/file

 

 

“আল-ইমাম আহমদ ইবনু নাসর আল-খুজা‘ঈ”

জ্ঞানীদের নেতা, শহীদদের নেতা

সুতরাং তাহাদের নির্দেশনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর।

[আল-আন‘আম: ৯০]

আল-হাফিজ ইবনু কাসীর (রহঃ)

আল-জামা‘আহ আল-ইসলামিয়্যাহ আল-মুক্বাতিলাহ (লিবিয়া) এর

শেইখ আবুল-মুনযির আস্-সাঈদী-র ভাষ্য সহ

(আল্লাহ্‌ তাঁকে রক্ষা ও সাহায্য করুন)

আত্-তিবয়ান পাবলিকেশন্স

কর্তৃক সামান্য সংস্করণসহ ভাষান্তরিত

আত্-তিবয়ান পাবলিকেশন্স – এর পক্ষ হতে বিতরণ

সংক্রান্ত বিশেষ অনুরোধঃ প্রকাশকের টীকাসহ এই গ্রন্থের

সকল অংশে যে কোন প্রকার- যোগ-বিয়োগ, বাড়ানো-

কমানো অথবা পরিবর্তন করা যাবে না, এই শর্তে, যে কোন

ব্যক্তি এই প্রকাশনা প্রচার বা বিতরণ করার অধিকার রাখেন।

ইবনু কাসীর (রহঃ) তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন – তিনি নিজেকে বিক্রয় করেছিলেন এবং অকুতোভয়ে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছিলেন…

তিনি আহল আস্-সুন্নাহ ওয়াল-জামা‘আহ এর আক্বিদার উপর বিপদ আশংকা করেছিলেন, তাই নিজেকে ঘরে সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারেননি, আর সেই ওজর পেশ করেও সন্তুষ্ট থাকতে পারেন নাই যা মু’মিন এবং মুনাফিক উভয়েই বলে থাকে… বরং, তিনি সেই বিপদজনক যাত্রায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন যা একমাত্র সুপুরুষেরাই অতিক্রম করতে পারে, এবং সেই দুর্গম গিরি আরোহণ করেছিলেন – যা আল্লাহ্‌ যাদের উপর সহজ করেছেন তারাই পারে। তিনি আহল আস্-সুন্নাহ এর বিশ্বাসীদেরকে তার সাথে একত্রিত করতে শুরু করেন এবং তাদের আক্বিদা রক্ষা ও দ্বীনকে সমুন্নত করতে এবং মুবতাদি‘ (পথভ্রষ্ট) শাসক, আল-ওয়াসিক, এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্ররোচিত করেন, যে (আল-ওয়াসিক) উলামাদের উপর তার দাবি অনুযায়ী “খাল্ক আল-কুর’আন” (আক্ষরিক অর্থ – সৃষ্ট কুর’আন) মেনে না নেয়া পর্যন্ত অত্যাচার চালাত। কিন্তু সম্মানিত ইমাম তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে অবমাননা মেনে নেন নাই। সরকারী মন্ত্রিত্ব, সম্মানজনক আসন কিংবা সম্পদ বা টাকার মত তুচ্ছ লাভের কাছে তিনি তাঁর আক্বিদা বিক্রি করেন নাই… আর তিনি কোন অজুহাত বা “মাসলাহাহ” (পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বার্থ সংরক্ষণকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ) পেশ করেন নাই, যাকে পুঁজি করে আজকের “আলেম সমাজ” ধ্বংস হয়েছে – এর ব্যতিক্রম তারাই যাদেরকে আল্লাহ্‌ দয়া করেছেন।

এমনিভাবে এই নির্ভীক ইমাম সৈন্য সমবেত করা এবং রসদ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ্‌ ভিন্ন কিছু পরিকল্পনা করেছিলেন – যে তিনি (ইমাম) আল-ওয়াসিকের তরবারি দ্বারাই নিহত হবেন।

এটা তাঁর গল্প, আমরা তার সম্পূর্ণটাই বর্ণনা করব – যেমন উল্লেখ করেছেন ইবনু কাসীর “আল-বিদায়্যাহ ওয়ান-নিহায়্যাহ” গ্রন্থের ১০ম খণ্ডের ৩১৬-৩২০ পাতায়। এবং এরপর আমরা সংক্ষেপে এই কাহিনীর কিছু শিক্ষণীয় দিক আলোচনা করব – যাতে হয়ত তা মৃতপ্রায় সেই হৃদয়গুলিতে গীরাহ (আত্মসম্মান) এর আগুন উস্কে দিবে, এবং হয়ত তা সেই আলেমকে সতর্ক করে দিবে যে তাগুতের হাসিতে মুগ্ধ হয়ে অথবা মিথ্যা সম্পদ এবং প্রাচুর্য তাকে প্রতারিত করেছে অথবা সে ভুলে গেছে যা সে শিখেছিল এবং যা সে তার ছাত্রদের শিখিয়ে ছিল: যে নির্ধারিত সময় (মৃত্যু) একমাত্র আল্লাহ্‌ হাতে – তারপরও সে ভয় পায় যে তাগুত হয়ত তার সেই সময় ত্বরান্বিত করবে!

আমরা এই আশা নিয়ে এ কাহিনী বর্ণনা করছি যে তা মুসলিম উলামাদের অন্তরে প্রাণ সঞ্চালন করবে, এবং হয়ত, তারা তাঁর (আল্লাহ্‌) আয়াত, হারামাইনের ভূমি (মক্কা ও মদিনা), বাইতুল মাকদিস্ ও আল-ইসরার ভূমিকে (ফিলিস্তিন) বিক্রি করার ব্যাপারে আল্লাহ্‌ ভয় করবে …

ইবনু কাসীর (রহঃ) হিজরি দুইশত একত্রিশ (২৩১ হিঃ) সনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেছিলেনঃ

“এবং এই বছর আহমদ ইবনু নাসর আল-খুজা‘ঈ কে হত্যা করা হয়েছিল, আল্লাহ্‌ তাঁর প্রতি রহম করুন, এবং তাঁকে সম্মানজনক বাসস্থান দান করুন।”

তাঁকে হত্যার পিছনে কারণ ছিল – তিনি, অর্থাৎ আহমদ ইবনু নাসর আল-খুজা‘ঈ ইবনু মালিক ইবনু আল- হাতিম আল-খুজা‘ঈ, এবং তাঁর দাদা মালিক ইবনু আল-হাতিম, বানি আল-আব্বাস (আব্বাসীয় বংশ) রাষ্ট্রের বিখ্যাত সৈনিক ছিলেন, যারা তার পুত্রকে হত্যা করেছিল।

আহমদ ইবনু নাসর ছিলেন সম্মানিত এবং নেতৃস্থানীয়, এবং তাঁর পিতা আহল আল-হাদিসদের (হাদিস এর অনুসারী) দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন।

আর হিজরি ২০১ সনে কিছু সাধারণ জনগণ তাঁর কাছে সত্যের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বাতিলকে দূরীভূত করার জন্য বায়‘আহ (আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা) দেয়, যখন বাগদাদের আল-মামুনের অনুপস্থিতিতে দুর্নীতিবাজ, অশ্লীল এবং নীতিহীন মানুষে ভরে গিয়েছিল – যেমনটা ইতিহাসে বলা হয়েছে; এবং বাগদাদের ‘নাসর’ বাজারের নামকরণ তাঁর নামে করা হয়।

আর এই আহমদ ইবনু নাসর ছিলেন জ্ঞানী, ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ, সৎকর্মশীল এবং সত্যের পথে সংগ্রামী; আর তিনি ছিলেন আহল আস্-সুন্নাহ-এর ইমামদের অন্তর্গত – যারা সত্যের পথে আহ্বান করতেন আর মন্দকে বাঁধা দিতেন, এবং তিনি তাঁদের মধ্যে ছিলেন যারা বলতেন – “কুর’আন আল্লাহ্‌ নাজিলকৃত বাণী, কোন সৃষ্ট নয়”।

যারা দাবী করত যে কুর’আন সৃষ্ট সে সকল মানুষদের মধ্যে আল-ওয়াসিক ছিল খুবই কট্টরপন্থী – সে দিনে-রাতে, প্রকাশ্যে-গোপনে এটার দিকে আহ্বান করত, যেই বক্তব্য ছিল তার বাবা আর তার চাচা আল-মামুনের মত – যদিও কুর’আন কিংবা সুন্নাহ হতে তা ছিল প্রমাণহীন, অপরীক্ষিত এবং তার কোন যুক্তি বা ব্যাখ্যাও ছিল না।

তাই আহমদ ইবনু নাসর প্রতিবাদ করলেন, আল্লাহ্‌ দিকে আহ্বান জানালেন এবং সত্যের শাসন ও মন্দের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং সেই বক্তব্যের প্রতি আহ্বান জানালেন যে কুর’আন কোন সৃষ্ট নয় বরং তা আল্লাহ্‌র বাণী। এইভাবে বাগদাদের জনগোষ্ঠী হতে তাঁর নেতৃত্বে এক জামা‘আহ (দল) গঠন হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তাঁর সাথে যোগদান করে। আহমদ ইবনু নাসরের এই আহ্বান মানুষের মাঝে প্রচার করার কাজে দু’জনকে নিযুক্ত করা হয় – পূর্ব প্রদেশের জন্য আবূ হারূন আস্-সিরাজ এবং পশ্চিম প্রদেশের জন্য ছিলেন তালিব নামের একজন ব্যক্তি – এইভাবে হাজারও মানুষ তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়।

এইভাবে হিজরি ২৩১ সনের শা‘বান মাসে সত্যের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মন্দের প্রতি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে এবং সুলতানের সেই বিদ‘আত এবং তার “খাল্ক আল-কুর’আন” এর মিথ্যা দাবীর বিরুদ্ধে, তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তার পরিষদবর্গের পাপ ও নীতিহীনতার বিরুদ্ধে আহমদ ইবনু নাসর আল-খুজা‘ঈ-এর নেতৃত্বে গোপনে বায়‘আহ-র মাধ্যমে সংগঠিত হতে লাগলেন। অতঃপর ঠিক হয় যে, শা‘বানের তৃতীয় রাতে- যা ছিল জুম‘আর রাত – ঢোল বাজানো হবে, আর যারা আগে বায়‘আহ দিয়েছিল তারা সকলে পূর্বনির্ধারিত এক জায়গায় সমবেত হবে। (এই সিদ্ধান্তে আসার পর) তালিব এবং আবূ হারূন নামের দু’ব্যক্তি তাদের সাথীদের মধ্যে অনেক দিনার (মুদ্রা) বণ্টন করেন। যাদের এই দিনার দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে বানু আসরাস (গোত্রের) দু’জন ছিল যারা মদ পানে অভ্যস্ত ছিল।

শেষ পর্যন্ত বানু আসরাসের সেই দুই মাতাল বিপদ বাঁধাল। বৃহস্পতিবার রাতে তারা মদ পানের ফলে মাতাল হয়ে ভাবল আজকেই সেই রাত – যা কিনা আসলে ছিল পরিকল্পিত রাতের আগের রাত। এইভেবে তারা সবাইকে আহ্বান করার জন্য ঢোল বাজাতে শুরু করে – কিন্তু সংগত কারণেই কেউ উপস্থিত হয় নাই। এই বিশৃঙ্খলা একটা সাজানো নকশাকে বানচাল করার জন্য যথেষ্ট ছিল এবং রক্ষীরা রাতে ঢোলের শব্দ শুনতে পেয়ে সুলতানের প্রতিনিধি, মুহাম্মদ ইবনু ইব্রাহীম ইবনু মুস‘আবকে জানায়। মুহাম্মদ ইবনু ইব্রাহীম ইবনু মুস‘আব তখন তার ভাই – ইসহাক ইবনু ইব্রাহীমের অনুপস্থিতিতে তার স্থলাভিষিক্ত ছিলেন। (তাদের এই কাণ্ডে) মানুষেরা উত্তেজিত হয়ে পরে। রক্ষীদের কাছে জানতে পেরে সুলতানের এই প্রতিনিধি সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই দুই মাতালকে ধরে আনে এবং তাদের অত্যাচার করে আহমদ ইবনু নাসর সম্পর্কে তথ্য বের করে নেয়। তাদের কথার ভিত্তিতে আহমদ ইবনু নাসরকে খোঁজা শুরু হয় এবং তাঁর একজন ভৃত্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এ ব্যক্তিকেও তারা অত্যাচার করে আহমদ ইবনু নাসর সম্পর্কে একই স্বীকারোক্তি আদায় করে।

এইভাবে তারা আহমদ ইবনু নাসর এবং তাঁর বেশ কিছু নেতৃস্থানীয় সঙ্গীদের গ্রেফতার করে খলিফার কাছে প্রেরণ করে – (তাদের গ্রেফতার করে সুলতানের সন্তুষ্টি পাবার চেষ্টা করে) – আর এটা ঘটেছিল শা‘বান মাসের শেষের দিকে। দর্শক ভরা মাহফিলের মাঝে বিচারক আহমদ ইবনু আবি দু‘আদ আল-মুতাজিলী বিচার শুরু করে। আহমদ ইবনু নাসরকে আসামী হিসেবে হাজির করা হলেও আল-মুতাজিলী তাঁর প্রতি কোন অসম্মান প্রদর্শন করে নাই। আহমদ ইবনু নাসরকে যখন আল-ওয়াসিকের সামনে উপস্থিত করা হয়, তখনও তাঁকে জনগণের কাছ থেকে বায়‘আহ নেয়ার ব্যাপারে কেউ কোন জেরা করে নাই। বরং এই সবকিছু বাদ দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ “আপনি কুর’আন সম্পর্কে কি বলেন?”

তিনি উত্তর দিলেনঃ “এই কুর’আন আল্লাহ্‌র বাণী।”

আল-ওয়াসিক আবার প্রশ্ন করলঃ “এটা কি সৃষ্ট?”

তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেনঃ “এই কুর’আন আল্লাহ্‌র বাণী।”

সত্যি বলতে, তিনি (ইমাম আহমদ) নির্ভয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ালেন এবং নিজেকে (আল্লাহ্‌র পথে) বিক্রি করে দিলেন, আর (তিনি মৃত্যুর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন কারণ তিনি) তাঁর গায়ে হানূত (শবদেহে ব্যবহারের মেশক এবং কর্পূর-এর মিশ্রণ) মেখে এসেছিলেন এবং সে সময় তাঁকে অস্বাভাবিক রকমের আলোকদীপ্ত দেখাচ্ছিল। তিনি তাঁর লজ্জাস্থানের পোশাক শক্তভাবে বেধে রেখেছিলেন (যাতে চাবুকের আঘাত ও অন্যান্য শাস্তির কারণে তা সরে না যায়)।

আল-ওয়াসিক আবার জিজ্ঞাসা করে, “আপনি আপনার স্রষ্টা সম্পর্কে কি ধারণা রাখেন? আপনি কি তাঁকে কেয়ামতের দিন দেখতে পাবেন?”

আহমদ উত্তরে বললেন, “হে আমীরুল মু’মিনীন, কুর’আন মজিদে আল্লাহ্‌ বলেছেন, ‘(কিছু) মুখ সেদিন তাদের স্রষ্টার দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।[1] এবং আল্লাহ্‌ রাসূল (সঃ) বলেছেন, অবশ্যই যেভাবে তোমরা পূর্ণ চন্দ্র দেখে থাক, সেভাবেই তোমাদের স্রষ্টাকে দেখতে পাবে, এবং তোমরা তাকে দেখে কখনও ক্লান্তও হবে না।[2] সুতরাং আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল (সঃ) যা বলেছেন, আমরা তার উপরই বিশ্বাস স্থাপন করি।”

আল-খতীব (আল-বাগদাদী) আরও বর্ণনা করেছেন যে আল-ওয়াসিক এই উত্তর শুনে বলেছিল, “ধিক্ তোমাকে! আল্লাহ্‌কে কি সংকীর্ণ শরীরে দেখা যাবে?! আর তিনি কি এই ক্ষুদ্র সীমানায় দেখা দিবেন, আর সকলে তাঁকে দেখতে পারবে!? আমি এমন বৈশিষ্ট্যে বিশিষ্ট প্রভুকে বিশ্বাস করি না!”

ইবনু কাসীর এর মতে, আল-ওয়াসিকের বক্তব্য গ্রহণযোগ্যও নয় বা প্রয়োজনীয়ও নয় এবং তার কথার উপর ভিত্তি করে বিশুদ্ধ বর্ণনাকেও বাতিল করা যায় না – আর আল্লাহ্‌ই সবচেয়ে ভাল জানেন।

আহমদ ইবনু নাসর আল-ওয়াসিককে উত্তরে বললেন, “সুফিয়ান আমাকে একটি মারফু‘ হাদিস বর্ণনা করেছে, ‘মানুষের অন্তর আল্লাহ্‌ দুই আঙ্গুলের ফাঁকে থাকে – আল্লাহ্‌ যেমন ইচ্ছা তা উল্টে দেন’ এবং এই কারণে রাসুলুল্লাহ (সঃ) সবসময় দোয়া করতেন, “হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দ্বীনের উপর মজবুত করুন।”

এই শুনে ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম বলে উঠল, “ধিক্ তোমাকে! দেখ তুমি কি বলছ!” তিনি উত্তর দিলেন,

“আপনিই আমাকে তা বলার নির্দেশ দিয়েছেন।”

ইসহাক হতচকিত হয়ে বলল, “আমি আদেশ দিয়েছি?!”

তিনি উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, আপনিই তো আমাকে আদেশ করেছেন তাকে সঠিক উপদেশ দেয়ার জন্য।”

পরিশেষে, আল-ওয়াসিক তার উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এই লোক (আহমদ ইবনু নাসর) সম্বন্ধে আপনাদের মতামত কি?” অতঃপর অনেকে নানা ধরণের কথা বলতে লাগল।

আব্দুর-রহমান ইবনু ইসহাক – যে ছিল পশ্চিম প্রদেশের সাবেক-বিচারক এবং এই ঘটনার আগ পর্যন্ত আহমদ ইবনু নাসরের বন্ধু ছিল – বলল, “হে আমীরুল মু’মিনীন, তাঁর রক্ত হালাল।”

আর আহমদ ইবনু আবি দু‘আদ এর সাথী আবূ আবদিল্লাহ আল-আরমিনী বলল, “হে আমীরুল মু’মিনীন, আমাকে তাঁর রক্ত হতে কিছু পান করতে দিন!”

আল-ওয়াসিক বলল, “তোমরা আশা অবশ্যই পূরণ হবে।”

ইবনু আবি দু‘আদ বলল, “সে কাফির (অবিশ্বাসী), তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হোক, হয়ত সে অসুস্থ বা মানসিক ভারসাম্যহীন।”

অতঃপর আল-ওয়াসিক বলল, “যখন তুমি আমাকে দেখবে যে আমি তাকে হত্যা করার জন্য অগ্রসর হচ্ছি তখন আমার সাথে কেউ এসো না, কারণ আমি আমার প্রতি পদক্ষেপের জন্য নেকি কামনা করি।” এই বলে সে এক (বিশেষ ধরণের) বাঁকা তরবারি হাতে তাঁর দিকে এগিয়ে গেল। এই তরবারিটি ছিল আমর ইবনু মু‘ইদ যুকরাব আয্-যুবাইদির। তরবারিটি মূসা আল-হাদীর খিলাফতের সময় তাকে উপহার স্বরূপ দেয়া হয়। তরবারিটির নিচের দিকে যাদুবিদ্যা লিপি উৎকর্ণ ছিল। প্রথমেই আল-ওয়াসিক তাঁর কাঁধে তরবারি দিয়ে আঘাত করল। তিনি তখন দড়ি দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা অবস্থায় প্রাণদণ্ড দেয়ার জন্য তৈরি বিশেষ চামড়ার চাদরের উপর দাঁড়ানো ছিলেন। এরপর আল-ওয়াসিক আবার তাঁকে আঘাত করল – এই বার মাথায়, তারপর তাঁর পেটে বাঁকা তরবারিটি ঢুকিয়ে দিল। তিনি (আঘাতের কারণে) জর্জরিত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লেন, আল্লাহ্‌ তাঁর প্রতি রহম করুন। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ্‌ও (জন্য) এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র দিকেই আমরা প্রত্যাবর্তন করব। আল্লাহ্‌ তাঁর উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তাঁকে ক্ষমা করুন।

তারপর সেই দামেষ্কবাসী তার তরবারি বের করল ও তাঁর গর্দানে আঘাত করে নির্মমভাবে তাঁর মাথা কেটে নিয়ে প্রদর্শনীর জন্য উত্তোলন করল – অতঃপর তা নিয়ে আসা হল সেই ময়দানে যেখানে বাবক আল – খুররামীকে সাধারণ পোশাক পরিহিত অবস্থায় পায়ে লোহার কড়া বেঁধে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। তারপর তাঁর (ইমাম আহমদের) মাথা বাগদাদে নিয়ে যাওয়া হয় এবং রাতদিন পাহারার মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে বাগদাদের পূর্ব ও পরবর্তীতে পশ্চিমাঞ্চলে তা প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়। তাঁর মাথায় এই কথাগুলো গেঁথে দেয়া হয়েছিল –

“এই হল পথভ্রষ্ট কাফির, মুশরিক আহমদ ইবনু আল-খুজা‘ঈ-এর মাথা – যে তাদের মধ্যে একজন, যারা ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু হারূন, আল-ওয়াসিক বিল্লাহ, আমীরুল মু’মিনীনের হাতে নিহত হয়েছে। সে কুর’আন যে সৃষ্ট এ সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা পোষণ করত এবং আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব নিয়ে এই ধারণা পোষণ করত যে – আল্লাহ্‌কে দেখা সম্ভব। তাকে তার অপরাধের ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল এবং সত্যের পথে ফিরতে বলা হয়েছিল – কিন্তু সে তাতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করে। সুতরাং, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র, যিনি তাকে তার কুফরির কারণে আগুনে নিক্ষেপ করেছেন এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিয়েছেন। এই কারণে আমীরুল মু’মিনীন তাকে হত্যা করার অনুমতি দিয়েছেন। তার প্রতি অভিশাপ।”

এরপর আল-ওয়াসিক আহমদের সাথীদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয় ছিল তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করল। সে প্রায় ২৯ জনকে আটক করল এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলে ঘোষণা করে জেলে পাঠানো হল। তাদের সাথে কাউকে দেখা করতে দেয়া হত না এবং লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হত আর অন্যান্য কয়েদীদের যা খেতে দেয়া হত – তাও তাদের দেয়া হত না – আর এটা ছিল তাদের প্রতি অনেক বড় অন্যায়।

এই আহমদ ইবনু নাসর ছিলেন সত্যিকারের আলেমদের মধ্যে একজন। তিনি আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ছিলেন সক্রিয়, এবং সৎ কাজের আদেশ দিতেন ও অসৎ কাজের নিষেধ করতেন। তিনি হাদিস শুনেছেন হাম্মাদ ইবনু যায়িদ, সুফিয়ান ইবনু ‘উয়ায়নাহ এবং হাসিম ইবনু বাশির হতে যাঁর সমস্ত লেখনী তাঁর নিকট ছিল। তিনি ইমাম মালিক ইবনু আনাসের কাছ থেকেও একাধিক হাদিস শুনেছেন – যদিও তিনি তাঁর হতে বেশি হাদিস বর্ণনা করেন নাই।

তাঁর থেকে যারা হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে আহমদ ইবনু ইব্রাহীম আদ-দাউরিকী, তার ভাই ইয়াকুব ইবনু ইব্রাহীম এবং ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈন প্রমুখ আছেন। ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈন তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন – “আল্লাহ্‌ তাঁকে রহম করুন। আল্লাহ্‌ তাঁকে পরিশেষে শাহাদাহ্ দিয়ে সম্মানিত করেছেন”; যদিও তিনি সচরাচর অন্যের সম্বন্ধে অতিরিক্ত প্রশংসা করতেন না এই বলে যে, ‘আমি (মানুষের প্রশংসা করার) যোগ্য নই’, তথাপি তিনি আহমদ ইবনু নাসর সম্বন্ধে প্রায় সময় উচ্চ প্রশংসা করতেন। ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন – “আল্লাহ্‌ তাঁর প্রতি রহম করুন, তিনি আল্লাহ্‌ প্রতি তাঁর জানের ব্যাপারে কতই না উদার ছিলেন! তিনি নিজেকে আল্লাহ্‌র জন্য কুরবানি দিয়েছেন।”

জাফর ইবনু মুহাম্মদ আস্-সয়িগা বলেন – “আমার দুই চোখ সাক্ষী আছে – অন্যথায় তারা অন্ধ হয়ে যাক – আমার দুই কান শুনেছে – অন্যথায় তারা বধির হয়ে যাক: আহমদ ইবনু নাসর আল-খুজা‘ঈকে যখন শিরোচ্ছেদ করা হয়, তখন তাঁর (কর্তিত) মস্তক বলছিল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’; আর যখন তাঁকে গাছের গুড়ির সাথে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, তখন কিছু লোকেরা তাঁর (কর্তিত) মস্তক থেকে এই কুর’আনের তিলাওয়াত শুনেছিল, “আলিফ, লাম, মীম। লোকেরা কি মনে করে নিয়েছে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ শুধুমাত্র এটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?”[3]। আমি শিহরিত হয়েছিলাম।”

– এইখানেই আল-হাফিজ ইবনু কাসীর তাঁর বর্ণনা শেষ করেন, আল্লাহ্‌ তাঁর প্রতি রহম করুন।

শিক্ষণীয় বিষয়াবলী

১) তাঁর সম্বন্ধে ইবনু কাসীর এর প্রশংসা, তাঁর জ্ঞান, তাঁর সত্যের প্রতি আহ্বান ও বাতিলের প্রতি নিষেধাজ্ঞা, প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ, আল্লাহর কাছে তাঁর রহমতের প্রার্থনা এবং তাঁর সমগ্র প্রচেষ্টা ও পরীক্ষাকে শাহাদাত হিসেবে উল্লেখ করা।

২) তাঁর সাময়িক বায়‘আহ (নেতৃত্বের শপথ) ও জিহাদের উপর অটল থাকা, সত্যের প্রতি আহ্বান ও বাতিলের প্রতি নিষেধাজ্ঞা এবং সত্য পথের উপর অটল থাকা পূর্বপুরুষদের আক্বিদার প্রসার করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার বৈধতা । এবং এছাড়াও এসকল বায়‘আহ নেয়ার ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করার বৈধতা – যাতে তার অনুসারীদের তাওয়াগীত (সীমালঙ্ঘনকারী যালেম শাসকেরা) কোন অত্যাচার করতে না পারে।

৩) ফাজির (পাপী) ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও জিহাদের কাজে তার সহযোগিতা নেয়ার বৈধতা (যেমন দুই মাতালের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল)।

৪) সত্যিই, আহমদ ইবনু নাসর ছিলেন তাদের মধ্যে একজন, যিনি পথভ্রষ্ট (শাসকদের) বিরুদ্ধাচরণ করা সম্পূর্ণ বৈধ মনে করেছিলেন – যদিও তারা কোন কুফরি করে নাই। আর এটা তাঁর আল-ওয়াসিককে ‘আমীরুল মু’মিনীন’ সম্বোধন করা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। আর এ (ঘটনা) থেকে (এটাও স্পষ্ট হয় যে), ‘শাসক পথভ্রষ্ট ও ফাসিক (পাপী) হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধাচরণ করা অবৈধ’ এব্যাপারে ইজমা (সর্বসম্মতি) রয়েছে বলে যে দাবী করা হয় তার অনিশ্চয়তা দেখা যায়। অথচ এই ক্ষেত্রে ইজমা-র মতপার্থক্য কিভাবে থাকতে পারে, যখন আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী (রাঃ) – আল্লাহর রাসূলের (সঃ) নাতি- ফাসিক যিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন; আব্দুর-রহমান ইবনু আল-আস‘আথ ও তাঁর সাথে সা‘দ ইবনু যুবায়ের ও আস্-সা‘বি এবং অন্যান্যরা আব্দুল-মালিক ইবনু মারওয়ানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন; আর আব্দুল্লাহ ইবনু হানযালাহ (রাঃ) ইয়ায়িদ ইবনু মুওয়াবিয়াহ-র বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন … আর তা হলে, (সে সকল শাসকদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত) যারা স্পষ্ট কুফরি কর্মে লিপ্ত এবং আল্লাহ্‌র বিধান পরিবর্তন করছে?

ইমাম আন্-নাওয়াবী বলেছেন, “বিচারপতি ‘ইয়াদ বলেছেন, আলেমেরা এই বিষয়ে একমত যে, কোন কাফিরকে ইমাম (নেতা) নিযুক্ত করা যাবে না। আর যদি (নেতা নিযুক্ত হওয়ার পর) তার থেকে কুফরি প্রকাশ পায় তবে তাকে অপসারণ করতে হবে। সুতরাং যদি নেতা কোন কুফরি করে, বা আল্লাহ্‌র বিধানে কোন পরিবর্তন করে অথবা যদি কোন বিদ‘আত (ইবাদতের নামে নতুন প্রথা) চালু করে, তবে তার ক্ষমতা বাতিল হয়ে যায় এবং তাকে মান্য করার বাধ্যতাও উঠে যায়। আর তখন মুসলিমদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে যে, তারা সেই নেতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে এবং সম্ভব হলে তার জায়গায় একজন সত্যপরায়ণ ইমাম (নেতা) নিয়োগ করবে। তা যদি সম্ভব না হয়, তবে একটা (তা‘ইফাহ) দলের জন্য এটা অবশ্য কর্তব্য হয়ে যায় যে তারা সেই নেতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে এবং তার (কাফির শাসকের) অপসারণ করবে। আর (শাসকের বিরুদ্ধাচরণ ও অপসারণ) বাধ্যতামূলক নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সেই সামর্থ্য অর্জন করে। আর সেক্ষেত্রে যদি অপারগতা প্রমাণিত হয়, তবে তাদের জন্য বিদ্রোহ করা অবশ্যকরণীয় নয়, তবে মুসলিমদের অবশ্যই তাদের দ্বীন হেফাযতের জন্য সেই ভূমি ছেড়ে অন্য ভূমিতে হিজরত করতে হবে।” [সহীহ মুসলিম বি শারহ্ আন-নাওয়াবী, ১২/২২৯]

৫) আলেমগণের জন্য সুলতান বা শাসকদের সাথে (আন্তরিক) মেলামেশা বা উঠবস ক্ষতিকর – যা তাদের দ্বীনকে নষ্ট করে দেয়। এইখানে তার প্রমাণ মিলে আব্দুর-রহমান ইবনু ইসহাকের আচরণে – যে ছিল আহমদ ইবনু নাসরের বন্ধু, কিন্তু শাসকের সাহচর্য তাকে অন্ধ করে দিয়েছিল, আর সে আহমদের রক্তকে (তাকে হত্যা করা) বৈধ করে দিয়েছিল।

ইবনু আল্-জাওযি ‘সাইদ আল্-খাত্বীর’ [পৃ-৪০৩] এ বলেছেন, “একজন আলেমের জন্য সুলতানের সাথে মেলামেশার চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছুই হতে পারে না – কারণ নিশ্চয়ই, সুলতান তার কাছে দুনিয়াকে আকর্ষণীয় করে তুলবে আর বাতিল বা মন্দকে তুচ্ছ করে প্রকাশ করবে।”

আর আল্লাহ্‌র রাসূল (সঃ) বলেছেন, “যে কেউ সুলতানের দরজায় যাতায়াত করবে, সে ফিতনায় নিমজ্জিত হবে।” [সহীহ আল-জামি‘, নং ৬১২৪]

৬) আাহমদ ইবনু নাসরের সাথীদের মধ্যে যাদের বন্দী করা হয়েছিলেন (আল্লাহ্‌ তাঁদের প্রতি রহমত প্রদর্শন করুন), তাদের খাবার না দেয়া বিশাল অন্যায় ছিল – আর সে ক্ষেত্রে যুগে যুগে তাঁদের মত মু’মিনদের হত্যা করাকে কি বলা হবে? !!

৭) আহমদ ইবনু নাসরের প্রতি ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈনের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈন ছিলেন আল্-জাহর ওয়াত্-তা‘দীল (দোষ ও মীমাংসা) এর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইমাম, যিনি অন্যের প্রশংসাপত্র দেয়ার ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর।

আয-যাহাবী ‘মীযান আল্-ই‘তিদাল’ এ উল্লেখ করেছেন, যে সকল আলেম কাউকে তাওথীক (নির্ভরযোগ্য) বলাতে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন, তাদের সম্বন্ধে বলেছেন, “একদল আলেম কাউকে নির্ভরযোগ্য স্বীকৃতি দেয়ার আগে অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন, এবং অতি সতর্কতার সাথে তার সত্যতা প্রতিপাদন করেন – তারা একজন বর্ণনাকারীর (শুধুমাত্র) দুই বা তিনটি ভুলের জন্য তাকে নিন্দা করে থাকেন এবং তার বর্ণনা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। সুতরাং এমন সমালোচক যাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন, তোমরা তা নির্দ্বিধায় মেনে নাও এবং তা তোমাদের মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। … আর এই শ্রেণীর আলেমদের মধ্যে ছিলেন – আল-জুঝজানী, আবু হাতিম আর-রাযী, আবু মুহাম্মদ আদুর-রহমান ইবনু আবি হাতিম আর-রাজি, আন-নাসাঈ, সু‘বাহ, ইবনু আল-কাত্তান, (ইয়াহইয়া) ইবনু মা‘ঈন, ইবনু আল-মাদীনী এবং ইয়াহইয়া আল-কাত্তান।”

৮) আহমদ ইবনু নাসরের প্রতি ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বলের প্রশংসা – যিনি ছিলেন আহল আস্-সুন্নাহ-র ইমাম এবং আল্-জাহর ওয়াত্-তা‘দীল এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম।

৯) আহমদ ইবনু নাসরের সাথে যে অলৌকিক ব্যাপার (কারামত) ঘটেছিল, যা ছিল তাঁর সত্যের উপর আস্থার ফলস্বরূপ প্রাপ্ত, এবং আল্লাহ্‌ই সবচেয়ে ভাল জানেন।

নিশ্চয়ই, সৎ পথপ্রান্ত পূর্বপুরুষদের আক্বিদা এক অমূল্য সম্পদ, যার জন্য উপযুক্ত মোহরানা দরকার – প্রিয় পাঠক, আপনি কি তার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন?

সাবধান! সৎ পথপ্রাপ্ত পূর্বপুরুষদের আক্বিদা শুধু আত্মাবিহীন দেহের মত না হয়ে যায়, বা ছাইয়ের মত না হয় যা পরীক্ষা আর কাঠিন্যের ঝড়ে যে কোন পথে বিলীন হয়ে যায়।

“প্রকৃতপক্ষে মু’মিন তো তারাই যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, অতঃপর তারা আর কোনো সন্দেহ পোষণ করে না এবং নিজেদের সম্পদসমূহ ও জান দ্বারা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।” [আল-হুজুরাত: ১৫]

[1] আল-কিয়ামাহ: ২২-২৩

[2] আল-বুখারী ও মুসলিম

[3] আল-আনকাবূত ১-২

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 3 =

Back to top button