إِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ
“নিশ্চয়ই তোমাদের এ জাতি- এতো একই জাতি। আর আমিই তোমাদের রব। তোমরা আমারই ইবাদত করো”। (সুরা আল আম্বিয়া 21:৯২)
‘উম্মাতুন ওয়াহিদাহ’ ম্যাগাজিনের পঞ্চম সংখ্যার সূচনা
আমেরিকা পুড়ছে
সঞ্চালকঃ
করোনা, সামাজিক বিভক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, অর্থনৈতিক ধ্বস এবং মুজাহিদদের ধারাবাহিক হামলা: এগুলো হলো আমেরিকার কফিনের পাঁচ স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমেরিকার মাটিতে তাঁর নিদারুণ কুদরতগুলো প্রকাশিত করছেন।
আল্লাহ তায়ালার এক অদৃশ্য সৈনিক ‘করোনা’। ‘করোনা’ ধ্বংসপ্রায় আমেরিকার শরীর এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। করোনায় মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে অর্ধ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
করোনা মহামারীর মধ্যেই আমেরিকায় ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করে বাইডেন যুগ শুরু হয়েছে। আমেরিকার দেহে ‘প্রতিরোধ ক্ষমতাশূন্য’ রোগাক্রান্ত শরীরের মতই মরণ ব্যাধিগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। করোনার বিধ্বংসী প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে দেহের কোষে কোষে।
বাইডেনের বক্তব্য:
“করোনার ধাক্কায় থমকে দাঁড়িয়েছে বহু দেশ ও রাষ্ট্র। খোদ আমেরিকার মাটিতে এক বছরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশী প্রাণহানি হয়েছে। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ বেকার হয়েছে, লাখ লাখ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে”।
সঞ্চালকঃ
সুদভিত্তিক অর্থনীতি বাতাসে ফাঁপানো বেলুনের মতো। অচিরেই তা বিস্ফোরিত হবে। এই বিস্ফোরণের প্রভাব আমেরিকা, পশ্চিমা বিশ্বসহ সারা পৃথিবীর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।
লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাহায্য পাবার আশায় ভিড় করছে। তারা অভাবীদের জন্য ফ্রি খাবার বিতরণ-সংস্থাগুলোর সামনে খাবারের জন্য ভিড় করছে। আমেরিকা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কাগুজে ডলার ছাপাচ্ছে অর্থনৈতিক ধ্বসের এই ঝড় ঠেকাতে। কিন্তু এর দ্বারা শুধুমাত্র ওয়াল স্ট্রিটের পুঁজিপতি ও কমিউনিস্ট চীনই উপকৃত হচ্ছে।
জিন মার্ক ড্যানিয়েল, প্রফেসর, ই এস সি পি- ইউরোপ (Jean Marc Daniel, Proffessor, ESCP-Europe)
“নিজেদের ইচ্ছে মতো ডলার ছাপানোর ক্ষমতা আমেরিকা পুরোপুরিই ভোগ করে। সম্প্রতি অবশ্য আমেরিকান কিছু রাজনীতিবিদ এ কথা পরিষ্কার করেছে যে, অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও ব্যবসার কেনাবেচার তাগিদে বাধ্য হয়েই চীনকে এসব ডলার আমাদের দিতে হয়। আর সেগুলো দিয়ে তারা আমাদের প্রতিষ্ঠান, কারখানাগুলো কিনে নিচ্ছে। বহু জায়গায় আমাদের সম্পদের মজুদগুলো কিনে নিচ্ছে। আর সেজন্য আমাদের নেতৃত্ব বেশ চাপের মুখে থাকে”।
সঞ্চালকঃ
বিপরীতে আমেরিকান সাধারণ নাগরিকদের দারিদ্র্য ও দুর্দশা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ত্রিশ মিলিয়নের অধিক আমেরিকান পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে না। আমেরিকার সাধারণ ঋণের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি, যা কিনা বাইডেন-হ্যারিসের প্রথম টার্মেই চল্লিশ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে- তা শুধু আমেরিকান অর্থনীতিই নয়, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের ধ্বস ও ভঙ্গুরতারই ইঙ্গিত বহন করে।
বিনিয়োগ ছাড়া মুনাফা আদায়ের ধান্ধায় চতুর বাইডেন “অনভিজ্ঞ যুবরাজ” মুহাম্মাদ বিন সালমানের প্রতি চাপ প্রয়োগের কৌশল নেয়। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক জামাল খাশোগীর নির্মম হত্যার শাস্তি স্বরূপ নানা কঠোরতা আরোপ করে।
বাইডেন বিন সালমানের বিরুদ্ধে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সফরে বাদশা সালমানের সঙ্গে সাক্ষাত করলেও আল্লাহর গজবে নিপতিত যুবরাজের সাথে কথা বলেনি। বাইডেন প্রশাসনকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে শিশু-যুবরাজ তখন বাধ্য হয়ে সৌদি সেন্ট্রাল ব্যাংকের পদচ্যুত পরিচালককে তার পদে পুনর্বহাল করে। এই পরিচালক বিগত ওবামা-বাইডেনের আমলে ব্যাংক পরিচালনা করতো। সৌদি রাজ পরিবার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থনৈতিক কুট-কৌশল সম্পর্কে সে অধিক অভিজ্ঞ।
আল্লাহ তায়ালা আমেরিকাকে আরও কিছু আজাব ভোগ করাতে চেয়েছেন, যাতে করে তারা পৃথিবীর দুর্বলদেরকে যে কষ্ট দেয়, এর কিঞ্চিৎ স্বাদ নিজেরাও আস্বাদন করে। তাই তিনি তাদের দিকে পাঠালেন জাহান্নামের হিমশীতল বায়ু। এই বায়ু পানিকে তার উৎসস্থলে জমাটবদ্ধ করে দিল। লক্ষ লক্ষ ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। পান-উপযোগী পানি ও ক্ষুধা নিবারণের খাবারের জন্য লাখ লাখ আমেরিকান তখন খাবারের লাইনে দাড়ায়। কত মহান সে সত্তা, যিনি যথার্থ প্রতিশোধ গ্রহণকারী ও মহা পরাক্রমশালী।
আমরা কখনো আমেরিকানদের সামাজিক কঠিন বিভাজন ও অন্তর্কোন্দলের দিনগুলোর কথা ভুলবোনা। এ বিভাজন পুরো আমেরিকা জুড়ে ছিল। ডেমোক্রেটিক পার্টি ট্রাম্পের পুরো শাসনকাল জুড়ে বিভাজনের এ রাজনীতি সফল করার চেষ্টা করেছে। এর দ্বারা ডেমোক্রেটরা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রেখে নিজ দলের সমর্থকদের উদ্দীপনা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল। তাদের মুল লক্ষ্য ছিল – বিভাজনের এই রাজনীতির মাধ্যমে রাজ্য-নির্বাচন এবং পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করা।
বাস্তবে তারা এতে সফলও হয়েছে। এমনকি ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পকে ‘রুশ গোয়েন্দা’ বলে অপবাদও দিয়েছে। আমেরিকার নীতি বিরুদ্ধ কাজ ও বিভিন্ন তদন্তের কথা বলে তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে এবং সর্বশেষ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। আর এই অভিযোগের নেতৃত্বে ছিল তিন ডেমোক্রেট সদস্য: ন্যান্সি পেলোসি (Nancy Pelosi), চাক শুমার (Chuck Schumer) ও অ্যাডাম শিফ (Adam Schiff)। তাদেরকে সাহায্য করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও আমেরিকান সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী উদারপন্থী সংবাদ মাধ্যম সিএনএন (CNN)।
প্রভাবশালী এই সংবাদ মাধ্যমটি ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে এমনভাবে সমর্থন প্রকাশ করে, যা সর্বসাধারণের মনে বিরক্তি ও ঘৃণার সৃষ্টি করেছিল। এই বিষয়টি বোঝার জন্য আপনি একটি বিষয় লক্ষ্য করুন যে, নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক দলের গভর্নর অ্যান্ড্রু মার্ক কুওমো (Andrew Mark Cuomo) এর সমস্ত অপকর্ম সিএনএন কীভাবে ধামাচাপা দিয়ে গেল!
করোনা-সম্প্রসারণ রোধ করার জন্য এক অমানবিক সিদ্ধান্ত দিয়ে কুওমো যখন হাজার হাজার প্রবীণদের হত্যা করেছে, তখনো উদারপন্থী সংবাদ মাধ্যম সিএনএন করোনা রোধে তার রাজনৈতিক দক্ষতার ঢোল বাজাচ্ছিলো এবং তাকে অনুসরণীয় বলে প্রচার করছিল। আর এই সমঝোতা ভিত্তিক ধামাচাপাটিও ছিল নির্বাচনে বাইডেনের বিজয় ও ট্রাম্পের পরাজয়ের অনেকগুলো কারণের একটি।
তৃতীয় জঘন্য বিষয়টি হলো- ট্রাম্প-সমর্থক উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের অনুগামীদের কংগ্রেসে হামলা। এরাই হলো “আঞ্চলিক-সন্ত্রাসী”। আর এই নামেই বাইডেন এবং তার সমর্থকরা তাদেরকে সম্বোধন করে। এমনকি ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার (Chuck Schumer) তো তাদের জন্য ওয়াশিংটন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য নয়- যারা ইয়েমেন কিংবা উত্তর কোরিয়া থেকে আসবে; বরং তাদের জন্য যারা টেক্সাস কিংবা ফ্লোরিডা থেকে আসবে।
‘দ্য ইউনাইটেড স্টেটস হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ’ এর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ১১ই সেপ্টেম্বরের তদন্ত কমিটির অনুরূপ ৬ই জানুয়ারির ঘটনাগুলো সম্পর্কেও তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ করেছে। তো এই কমিটির তদন্ত সমাপ্তির পর কি ট্রাম্পের সন্ত্রাসী অনুচরদের জন্য আরেকটি গোয়ান্তানামো কারাগার খোলা হবে? কিংবা স্টেলার উইন্ড (Stellar Wind) এর মতো করে আমেরিকানদের উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য নতুন কোন পন্থা আবিষ্কার করা হবে?? কিংবা ট্রাম্পের সমর্থকদের কংগ্রেস কিংবা হোয়াইট হাউস আক্রমণ সম্পর্কে তাদের পরিকল্পনা জানার জন্য কি তাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে অথবা নির্ঘুম রেখে EIT (Enhanced interrogation techniques) এর পদ্ধতিতে শাস্তি দেয়া হবে?
ট্রাম্পের পার্টির কাছ থেকে তার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছিনিয়ে আনতে বাইডেন সবচে শক্তিশালী অস্ত্র ড্রোন (চালক বিহীন বিমান) ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নথিপত্র ফ্লোরিডার তীরে কিংবা টেক্সাসের মরুভূমিতে – যেখানেই লুকিয়ে রাখা হোক না কেন, বাইডেন তা খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর।
ট্রাম্পের অনুসারীরা ৬ই জানুয়ারিতে কংগ্রেস সদস্যদের সাথে সন্ত্রাসমুলক আচরণ করেছিল এবং তাদেরকে সন্ত্রস্ত হয়ে ‘ক্যাপিটাল হিল’ এ লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করেছিলে। আর এই দৃশ্যটি অবশ্যই ট্রাম্পকে অনেক আনন্দ দিয়েছিল। এর মাধ্যমে ট্রাম্প ঐ দিনের প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়েছে যেদিন সে হোয়াইট হাউজের চার দেয়ালের ভিতর আবদ্ধ থাকতে বাধ্য হয়েছিল। ট্রাম্প তখন পেলোসি-বাহিনীর আক্রমণের ভয়ে ছিল। কারণ পেলোসি তখন ট্রাম্পের প্রতি প্রকাশ্য বিদ্বেষী। বাইডেনের এই প্রতিশোধ ট্রাম্পের সেই জুলুমেরই প্রতিদান, আর দুই জালেমের মধ্যে ‘সূচনাকারী’ই হচ্ছে অধিক জালিম।
এদিকে উদারপন্থী সংবাদমাধ্যম সিএনএন ওয়াশিংটনের “আই এস” এর বিরুদ্ধে এবং সন্ত্রাসের উস্কানীদাতা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে; যে কিনা আসলেই অনেকটা আই এস এর মতই (উগ্র)আচরণ করা শুরু করছিল।
এ জাতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে কর্মরত ডিরেক্টর ও সম্পাদকদের উচিৎ, সন্ত্রাস নিয়ে লুকোচুরি খেলা বাদ দিয়ে ‘প্রকৃত সন্ত্রাস’ বের করে আনার জন্য আল-জাজিরা ও আল-আরাবিয়ার মতো পত্রিকাগুলোর কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া।
ওয়াশিংটনে সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে আছে একজন আঞ্চলিক কিংবা বহিরাগত মহিলা সন্ত্রাসী। অবশ্য পরক্ষণেই স্পষ্ট হয়েছিল যে- সে ছিলে বিমান বাহিনীর একজন সশস্ত্র সৈনিক। এ ঘটনার পরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সশস্ত্র বাহিনীতে বেশ কিছু তদন্তমুলক কমিটি গঠন করেছে। এসকল কমিটির কাজ হল- মার্কিন সৈন্যদের ভিতরে চুপিসারে ঢুকে পড়া সন্ত্রাসীদেরকে খুঁজে বের করা।
জনৈক ব্যক্তিঃ
“আমি বিশ্বাস করি যে উগ্রবাদের বিষয়টিকে পেন্টাগন গুরুত্বের সাথেই নিয়েছে। তা সত্ত্বেও গত সপ্তাহে ক্যাপিটাল ভবনে প্রবেশকারী সৈনিকদের অনেকেই এমন ছিলেন যারা অবসরে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে একজন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজরও ছিলেন। এটি আমাদেরকে বার্তা দেয় যে, সামরিক বাহিনীতে উগ্রবাদ ছড়িয়ে না দিতে আমাদের আরও বেশী সতর্ক থাকা প্রয়োজন”।
সঞ্চালকঃ
ট্রাম্পের সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে অল্প সংখ্যক নিহত হওয়ার বিষয়টি ডেমোক্রেটদের খেপিয়ে তুলেছে। তারা স্পষ্টভাবে বলেছিল যে, হামলাকারীরা যদি বাইডেনের সমর্থক বাহিনীরও হয় তবুও তাদেরকে ক্যাপিটাল ভবনের চূড়া থেকে নিক্ষেপ করা হবে এবং খোলা মাঠে তাদের সবার চামড়া ছিলে রক্ত ঝরানো হবে।
জনৈক ব্যক্তিঃ
“আমি খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম তাদের কথা শুনে যারা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করত যে, যদি এই ‘ক্যাপিটাল হিল’ এর আক্রমণকারীরা বাদামী বর্ণের হত তবে তাদের সাথে কেমন আচরণ করা হত? যদি কংগ্রেসে হামলাকারীরা কালো বর্ণের হত তাহলে তাদের সাথে কেমন আচরণ করা হত?
আমরা সকলেই এর উত্তর জানি। এর মানে এটা নয় যে, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অসম্মান করি। বরং এটি আমাদের একটি স্বাধীন মতামত। তাদের সাথে অবশ্যই সবচেয়ে জঘন্য ও কঠোর আচরণটা করা হত। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে”।
সঞ্চালকঃ
৬ই জানুয়ারিতে কংগ্রেসে সংঘটিত ঘটনাটি ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আসল চেহারা প্রকাশ করেছে। কারণ হাজার হাজার বিক্ষোভকারীদের সামনেই সেদিন বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের সবচে বড় দুর্গটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। কালো পোশাকধারী পুলিশ যদি সেদিন আক্রমণকারীদেরকে কৌশলে সরিয়ে না দিতো এবং তাদেরকে কংগ্রেস সদস্যদের লুকিয়ে থাকার জায়গা থেকে দুরে না রাখতো তাহলে সেদিন রক্তের বন্যা বয়ে যেত। ন্যান্সি পেলোসি, চাক শুমার ও অ্যাডাম শিফের মাথা, এমনকি ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতক উপ-রাষ্ট্রপতি মাইক পেন্স, যে কিনা বাইডেনের নির্বাচনী বিজয়ের জন্য ভোট প্রমাণীকরন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তাদের সবার মাথা কংগ্রেসের মাঠে ঝুলানো ফাঁসির রশিতে ঝুলতো।
এটিও আল্লাহ তায়ালার একটি হিকমাত ছিল যে ১১ই সেপ্টেম্বরে চতুর্থ বিমানটি তার লক্ষ্যে পৌছতে পারেনি। ডেক চিনি সেটিকে ভূপাতিত করার আদেশ দিয়েছিল। আমেরিকানরা এখন তদের গণতন্ত্রের সুউচ্চ ভবনটি নিজ হাতেই ধ্বসিয়ে দিচ্ছে, তাদের পূর্বসূরি বনু-নাজিরের মতো। আর এটি অবশ্যই তাদের জন্য অপমানজনক কিন্তু মুমিনদের হৃদয় শীতলকারী। আর আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সত্য বলেছেন:
هُوَ الَّذِي أَخْرَجَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مِن دِيَارِهِمْ لِأَوَّلِ الْحَشْرِ مَا ظَنَنتُمْ أَن يَخْرُجُوا وَظَنُّوا أَنَّهُم مَّانِعَتُهُمْ حُصُونُهُم مِّنَ اللَّهِ فَأَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ حَيْثُ لَمْ يَحْتَسِبُوا وَقَذَفَ فِي قُلُوبِهِمُ الرُّعْبَ يُخْرِبُونَ بُيُوتَهُم بِأَيْدِيهِمْ وَأَيْدِي الْمُؤْمِنِينَ فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ
“অর্থঃ তিনিই কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে প্রথমবার একত্রিত করে তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বহিষ্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল। অতএব, হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ, তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর”। (সূরা হাশর ৫৯:২)
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর আমেরিকায় সাধারণ লোকদের অস্ত্র কেনার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, গৃহযুদ্ধ সন্নিকটেই। গৃহযুদ্ধ দিয়েই চরম নিকৃষ্ট আমেরিকা অস্তিত্বে এসেছিল এবং গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়েই আমেরিকার বিলীন হবে ইনশাআল্লাহ। আর গৃহযুদ্ধ তো কার্যত শুরু হয়েই গেছে। যদিও উদ্বোধনী বক্তৃতায় বাইডেন এটিকে ‘গৃহযুদ্ধ নয়’ বলে দাবী করেছিল: “এই বিশৃঙ্খলার সমাপ্তি ঘটাতে হবে”।
যদি আপনি এতেই আশ্চর্য হন, তবে তার চেয়েও বেশী আশ্চর্য হওয়ার বিষয় হলো- গণতন্ত্রের দাবীদারদের একে অপরকে ছিঁড়ে খওয়ার বিষয়টি। ২০শে জানুয়ারিতে ওয়াশিংটন এক নিশ্ছিদ্র সেনা ক্যাম্পে পরিণত হয়েছিল। পথে পথে চেক পোস্ট আর রাস্তাঘাটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনী এবং রক্ষী বাহিনী মিলে সেদিন সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশী সৈনিক ছিল। উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। ওয়াশিংটনে সৈনিকদের এই সংখ্যাটি আফগানিস্তানে (তখন অবস্থানকারী) মার্কিন সৈন্যদের তুলনায় দশ গুণ ছিল, যাদেরকে ট্রাম্প প্রত্যাহার করার আদেশ করেছিল।
আরেকটি বিষয় হল- বর্ণবাদের বিস্তার এবং শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বে অমূলক বিশ্বাস। ঐ চার শ্বেতাঙ্গ পুলিশের অপকর্মটি আমরা কখনো ভুলবো না যারা একজন কৃষ্ণাঙ্গকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করছিল। সে তখন চিৎকার করে বলছিল, “আমাকে শুধু একটু শ্বাস নিতে দাও”!
কিন্তু অসহায় লোকটি ভুলে গিয়েছিল যে শ্বেতাঙ্গরা কয়েক বছর পূর্বে তার বাবা- দাদাদের সাথে একই রকম আচরণ করেছিল। তারপর জর্জ ফ্লয়েডের হত্যা নিয়ে আমেরিকা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল যেমন খালেদ সাঈদের হত্যা নিয়ে মিশরীয়রা পুলিশ দিবসে চরম ক্ষিপ্ত হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের সমাগমে আমেরিকার পথঘাট ভরে উঠেছিল। কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, বর্ণবাদী, উগ্রবাদী, বামপন্থী ও সংস্কারবাদী থেকে শুরু করে অনাহারী, অর্ধাহারী পর্যন্ত সবাই এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। আন্দোলনের দাবানল চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। দোকানপাট লুটপাট হয়েছিল, পথঘাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি সামলাতে সব জায়গায় কারফিউ জারি করা হয়েছিল এবং সশস্ত্র বাহিনী রাজপথে নেমেছিল।
জনৈক বিক্ষোভকারীঃ
“আমরা যা চাই তা যদি আমেরিকা আমাদেরকে না দিতে পারে তাহলে এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আমরা পুড়িয়ে ছাই করে দিবো”।
সঞ্চালকঃ
তারপর অভিশপ্ত ট্রাম্প বেরিয়ে এসে ক্ষিপ্ত জনগণকে হিংস্র কুকুর ও বিধ্বংসী অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছিল যেমনটা গাদ্দাফি তার “যানক্বা যানক্বা” নামে প্রসিদ্ধ বক্তৃতায় জনগণকে হুমকি দিয়েছিল।
এদিকে গণতান্ত্রিক সেনাবাহিনীও শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও সাংস্কৃতিক দূরত্বের অভিযোগ তুলছে।
জোশুয়া ডেভিড হাওলি (Joshua David Hawley), মার্কিন সিনেটরঃ
“গত ছয় সপ্তাহ ধরে সংস্কারবাদী বামপন্থী, তাদের মিত্র এবং উদারপন্থী সংবাদ মাধ্যমগুলো চেষ্টা করছে আমাকে সংকীর্ণ করে রাখার, পর্যবেক্ষণে রাখার। তারা আমাকে চাপে রাখার ও আমার মুখ বন্ধ করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে”।
সঞ্চালকঃ
অচিরেই তারা শ্বেতাঙ্গদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ বলে শ্লোগান তুলবে যেমন এখন তারা কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ বলে শ্লোগান দেয়।
রিপাবলিকান পার্টির ম্যাককনেল কোলে করে ট্রাম্পকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। আর তার সমর্থকরা- তাদের ‘রক্ষাকারী’ এবং তাদের সাহসী ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ নেতাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা ‘তার’ জন্য একটি স্বর্ণ-মূর্তি তৈরি করেছে। মূর্তিটি আমেরিকান পতাকা খচিত একটি ছোট প্যান্ট পরে আছে এবং আমেরিকান সংবিধান হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর এটি উদার বামপন্থী ও উগ্রবাদী নিকৃষ্ট আমেরিকানদের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনার ইঙ্গিত দেয়।
ট্রাম্প আহবান করেছে, তার সমর্থনকারীরা যেন নতুন কিছু ফেসবুক একাউন্ট সন্ধান করে, যাতে করে একাউন্ট ব্লকের ঝুঁকি থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারে। ডেমোক্রেটিক-ঘেঁষা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কারণে একাউন্ট বন্ধ হবার এই আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
এ জাতীয় নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলা এবং সেগুলোর বিকল্প বের করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প ও তার অনুসারীরা কখনো কখনো মুজাহিদদের অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগায়। আবার কখনো তারা জাজিরাতুল আরবের মুজাহিদদের প্রকাশিত “ইন্সপায়ার” পত্রিকায় নিজেদের হারানো সম্পদ খুঁজে পায়।
আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, বাইডেন হচ্ছে হোয়াইট হাউজে প্রবেশকারী দ্বিতীয় ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট। তাই সে জোর করেই পোপের ছবি হোয়াইট হাউজে স্থাপন করতে চায়। কিন্তু ট্রাম্পের প্রোটেস্টেন্ট সমর্থনকারীরা কি সেটা কখনো মেনে নিবে? নাকি তার পরিণতিও তার পূর্ববর্তী ক্যাথলিক জন এফ কেনেডি’র (John F. Kennedy) মতই হবে?!
প্রিয় ভায়েরা! এটাই হলো ধ্বংসপ্রায় আমেরিকার অবস্থা।
ট্রাম্পঃ
“মাত্র এক মাসের মধ্য দিয়ে আমরা আমেরিকার সূচনা থেকে সমাপ্তি অবধি পৌঁছে গেছি।”
সঞ্চালকঃ
বিপরীতে মুজাহিদরা আমেরিকা সহ পৃথিবীর সকল প্রান্তের দুর্বলদেরকে আহবান করে যাচ্ছে বর্তমানের নিকৃষ্ট ফেরাউন আমেরিকার ডুবন্তপ্রায় নৌকা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসলামের চির ভাসমান জাহাজে আশ্রয় নিতে। স্বাধীনতা ও ন্যায়ের দিকে ফিরে আসতে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করতে।
মুজাহিদগণ উম্মাহকে নিজেদের জান-মাল কোরবান দেয়ার বিনিময়ে ইসলাম ও মুসলিমদের উপর থেকে এবং পৃথিবীর সকল দুর্বলদের উপর থেকে আমেরিকার অত্যাচার রুখে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তারা প্রথমে একমাত্র আল্লাহর উপর তারপর মুসলিম উম্মাহর উপর ভরসা করে। তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করে, যেন তিনি তাদেরকে তাগুত আমেরিকা ও তার মিত্রদের উপর তাঁর আশ্চর্য রকম কুদরত দেখিয়ে দেন। আর অবশ্যই এটা করতে তিনি পূর্ণ সক্ষম।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহর বক্তব্য:
“আর এজন্যই আমি চাই যে আমেরিকান নিগ্রো- বর্ণবাদের দ্বারা যারা নিগৃহীত, আমেরিকান আদিবাসীরা, স্প্যানিশরা, এশিয়া আফ্রিকা কিংবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অত্যাচারিতরা, এবং সারা পৃথিবীর অসহায়রা জানুক যে, আমরা যখন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করি তখন শুধু মুসলিমদের উপর থেকে নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির উপর থেকে অত্যাচারের নাম মুছে দেয়ার জন্য জিহাদ করি।
আমি সারা পৃথিবীর অসহায়দেরকে আহ্বান করছি ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ার। ইসলাম স্বাধীনতার ধর্ম। এতে কোন অত্যাচার নেই। ইসলাম সমস্ত অন্যায় ও মিথ্যাকে ধূলিসাৎ করে দেয়।
আমেরিকান সেনাবাহিনীতে বর্ণবাদ দ্বারা পিষ্ট সৈনিকের উদ্দেশ্যে আমি বলবো:
বর্ণবাদী এই ক্রুসেডার রাষ্ট্রব্যবস্থা তো তোমার পূর্বপুরুষদেরকে ছিনিয়ে এনেছিল নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধির কাজে ব্যাবহার করার জন্য। একই উদ্দেশ্যে আজ তারা তোমাকেও ব্যাবহার করছে। তারা শুধু তোমাদেরকে বেঁধে রাখা শিকলের ধরণ ও কড়ার প্রকার পরিবর্তন করেছে। তারা তোমাকে ধোঁকা দিয়ে বোঝাচ্ছে যে, তুমি গণতন্ত্রের জন্য এবং আমেরিকার স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করছো। কিন্তু হাজি মালিক শাহবায রহিমাহুল্লাহ এই কথা বলে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন যে: “আমি কোন আমেরিকান নই। আমি আমেরিকার গোড়াপত্তনের জন্য কোরবান হওয়া বাইশ মিলিয়ন কৃষ্ণ জনতার একজন। আমি গণতন্ত্রের অস্তিত্বের জন্য জীবন দেয়া বাইশ মিলিয়ন কৃষ্ণ জনতার একজন। আমি একজন মাজলুমের দৃষ্টি দিয়ে আমেরিকাকে দেখি।
আমেরিকার কোন স্বপ্ন আছে বলে আমি মনে করি না, বরং তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ংকর ভবিষ্যৎ!
আমেরিকার কোন স্বপ্ন আছে বলে আমি মনে করি না, বরং তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ংকর ভবিষ্যৎ!!
আমেরিকার কোন স্বপ্ন আছে বলে আমি মনে করি না, বরং তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ংকর ভবিষ্যৎ!!!
**********