আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশননির্বাচিতপিডিএফ ও ওয়ার্ড

তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ০৭ আপনি কীভাবে ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করবেন?

مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdaws

تـُــقدم
পরিবেশিত/
Presents

في اللغة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Language

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:

سلسلة المذاكرة التربوية- الحلقة ٧
كيف تحصل دعاء الملائكة؟
তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ০৭
আপনি কীভাবে ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করবেন?
Tarbiyati Muzakara Series-07
How do you get the blessings of the angels?

لمولانا عبد الله حذيفة حفظه الله
মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হাফিযাহুল্লাহ
By Mawlana Abdullah Huzaifa Hafizahullah

 

তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ০৭ আপনি কীভাবে ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করবেন?

 

 

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

লিংক-১ : https://web.archive.org/web/20210512…ati_mujakara-7
লিংক-২ : https://mediagram.me/5995f58e99255dce
লিংক-৩ : https://web.archive.org/web/20210512…95f58e99255dce


روابط بي دي اب
PDF (446 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৪৪৬ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/WFHn6eMY76eWTw7
লিংক-২ : https://archive.org/download/torbiyoti-muzakara-7_202105/Torbiyoti_Muzakara_-_7.pdf
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/881a4643-6def-45d6-afd6-7f796a4712c7/f96ed42747b691cd90e8518c0e6bd7cc8e13fef9afc25d2134ab070782f25179
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dohb540ec4488573448b88586a11b9e75e13f
লিংক-৫ : https://f004.backblazeb2.com/file/Muzakara7/Torbiyoti+7.pdf
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/wvq8r…a_-_7.pdf/file
লিংক-৭ : https://files.fm/u/cxknxbpbg


روابط ورد
Word (226 KB)
ওয়ার্ড [২২৬ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/sfj8nAnFbkkQeQi
লিংক-২ : https://archive.org/download/torbiyoti-muzakara-7/Torbiyoti_Muzakara_-_7.docx
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/4fc6edc6-985b-408a-b84a-cbd7aaa87472/b760e9238e616655b3f6ceda414a1c4df6c6585231e9184ab587e942fa4d7693
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dohb5e07fbde26f364909a65f2a37268c5997
লিংক-৫ : https://f004.backblazeb2.com/file/Muzakara7/Torbiyoti+7.docx
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/376rn…_-_7.docx/file
লিংক-৭ : https://files.fm/u/7jfzmmhev

 


روابط الغلاف- ١
book Banner [137 KB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১৩৭ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/KGYJxwzmqPrZMKz
লিংক-২ : https://archive.org/download/torbiyoti-7/Torbiyoti%20-%207.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/6383a84f-d9c1-4f22-98d6-58551dd6aa6d/d98b29cbf16c29960bcb37f8b6471cf430bc063e4a17497a9924f135ce6617b1
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dohb5824d5adf4de84027a124ab53eb766d07
লিংক-৫ : https://f004.backblazeb2.com/file/Muzakara7/Torbiyoti+7+Cover.jpg
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/1sm1y…i+-+7.jpg/file
লিংক-৭ : https://files.fm/u/76vnen3ed


روابط الغلاف- ٢
Banner [717 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [৭১৭ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/HnbgNAke2PcDMcG
লিংক-২ : https://archive.org/download/torbiyoti-7-web/Torbiyoti%20-%207%20-%20Web.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/e62295f7-1d01-4c85-9793-f38a66247daa/8b6c8bc169683fc139ceb58dd6dcac2aa0e1bfa7890416c835dc18ae20177605
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dohb5e21567056e774840ac7f410e5fb8bcc4
লিংক-৫ : https://f004.backblazeb2.com/file/Muzakara7/Torbiyoti+7+Banner.jpg
লিংক-৬ : https://files.fm/u/xn7mc95y9
লিংক-৭ : https://www.mediafire.com/file/nusxa…-+Web.jpg/file

 

=======================================

তরবিয়তি মুযাকারা সিরিজ : ০৭

————————————-

আপনি কীভাবে ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করবেন?

মাওলানা আব্দুল্লাহ হুযাইফা হাফিযাহুল্লাহ

 

 

সূচিপত্র

ভূমিকা : 4

ফেরেশতাদের একটি কাজ মুমিনদের জন্য ইস্তেগফার করা.. 5

১ম আমলঃ জামাতের সাথে নামাজ পড়ে স্বস্থানে কিছুক্ষণ বসে থাকা… 6

২য় আমলঃ প্রথম কাতারে নামাজ পড়া.. 9

৩য় আমলঃ কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানো… 11

৪র্থ আমলঃ মানুষকে কল্যাণকর কথা শিক্ষা দেয়া.. 11

৫ম আমলঃ মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করা.. 12

৬ষ্ঠ আমলঃ ওযু সহকারে ঘুমানো… 14

৭ম আমলঃ প্রতিদিন সামান্য কিছু হলেও সদকা করা.. 15

৮ম আমলঃ সেহরি খাওয়া.. 16

৯ম আমলঃ কোনো মুসলিম অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া.. 16

১০ম আমলঃ দুরুদ শরীফ পড়া.. 17

১১তম আমলঃ সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করা.. 18

ভূমিকা :

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم

الْحَمْدُ لله رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى أَشْرَفِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِيْنَ، وَعَلَى أله وَأَصْحَابِهِ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ، أَمَّا بَعْدُ

فعن عبدالله بن عمر رضى الله عنه  أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَن بات طاهرًا بات في شِعارِه مَلَكٌ فلَمْ يستيقِظْ إلّا قال المَلَكُ: اللَّهمَّ اغفِرْ لعبدِك فلانٍ فإنَّه بات طاهرًا

 আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার মাখলুকের মধ্যে ফেরেশতারা হলেন এমন এক মাখলুক, নবী রাসুলগণের মতো তাঁদের অস্তিত্বের ওপর এবং তাঁদের সিফাতের ওপর ঈমান আনা ঈমানের মৌলিক একটি অংশ। কুরআনে কারীমের অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের আলোচনা করেছেন, তাঁদের বিভিন্ন সিফাতের কথা আমাদের জানিয়েছেন।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَجَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَنِ إِنَاثًا

“মুশরিকরা ফেরেশতাদেরকে নারী সাব্যস্ত করেছে, যে ফেরেশতারা হল করুণাময় আল্লাহর বান্দা”।-সুরা যূখরুফ (৪৩) : ১৯

এখানে ফেরেশতাদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে তাঁরা হল, আল্লাহর বান্দা।

অন্য আয়াতে তাঁদের সিফাত প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,

لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

“আল্লাহ তাঁদেরকে যা আদেশ করেন, তা তাঁরা অমান্য করে না এবং তাঁদেরকে যা করতে আদেশ করা হয়, তাই তাঁরা করে”। – সুরা তাহরীম (৬৬) : ৬

يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ

“তারা রাতদিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে, তাঁরা ক্লান্ত হয় না”। – সুরা আম্বিয়া (২১) : ২০

بِأَيْدِي سَفَرَةٍ كِرَامٍ بَرَرَةٍ

“(যা সংরক্ষিত রয়েছে) এমন লিপিকার ফেরেশতাদের হাতে, যারা সম্মানিত, পুণ্যবান”। – সুরা আ’বাসা (৮০) : ১৫, ১৬

وَمَا مِنَّا إِلَّا لَهُ مَقَامٌ مَّعْلُومٌ وَإِنَّا لَنَحْنُ الصَّافُّونَ وَإِنَّا لَنَحْنُ الْمُسَبِّحُونَ

“আমাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট স্থান-মর্যাদা। আমরা সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান থাকি। আমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি”। – সুরা সাফফাত (৩৭): ১৬৪, ১৬৫, ১৬৬

ফেরেশতাদের একটি কাজ মুমিনদের জন্য ইস্তেগফার করা 

ফেরেশতারা কী কী কাজ করেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে কী কী কাজে লাগিয়ে রেখেছেন, কুরআনে কারীমে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এসেছে। হাদিসে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।

কুরআনে কারীমে তাঁদের যে সকল কাজের কথা উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে একটি কাজ হল, মুমিনদের জন্য ইস্তেগফার করা, আল্লাহর কাছে তাঁদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করা।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِن فَوْقِهِنَّ وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَن فِي الْأَرْضِ أَلَا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

“আকাশ ওপর থেকে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় আর ফেরেশতারা তাদের পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং দুনিয়াবাসীদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। শুনে রাখ, আল্লাহই ক্ষমাশীল, পরম করুনাময়”। – সুরা শূরা (৪২):৫

সুরা মু’মিনে এসেছে,

وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ

“(আরশ বহনকারী ফেরেশতারা এবং আরশের চারপাশে অবস্থানকারী ফেরেশতারা) মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। (তারা বলে,) হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন”। – সুরা মু’মিন (৪০) : ৭

আমরা সবাই কামনা করি, শুধু আমরা না, সকল মুসলমানই কামনা করি, আল্লাহ তাআলা তাঁর যেসব বান্দাদের দোয়া এবং তাঁর যেসব মাখলুকের দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল করেন আমরা যেন তাদের দোয়া পেতে পারি। এটি এমন একটি জিনিস যা আমরা সবাই চাই, সব মুসলমানই চায়।

আল্লাহ তাআলার কত বড় দয়া যে, তিনি রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আমাদেরকে এমন কিছু আমলের কথা জানিয়ে দিয়েছেন, যে আমলগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিষ্পাপ মাখলুক- ফেরেশতাদের খাস দোয়া পেতে পারি। আম দোয়া তো ঈমানদার হিসেবে আমরা পাইই, তবে খাস দোয়া পাওয়ার জন্য হাদিসে ছোট ছোট কিছু আমলের কথা বলা হয়েছে। আমলগুলো ছোট হওয়ার পাশাপাশি সহজও।

আল্লাহ তাওফিক দিলে আজকে এ বিষয়টি নিয়েই ভাইদের সাথে কিছু কথা মুযাকারা করব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা ইখলাস ও ইতকানের সাথে কথাগুলো বলার এবং আমাদের সবাইকে সে মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।

১ম আমলঃ জামাতের সাথে নামাজ পড়ে স্বস্থানে কিছুক্ষণ বসে থাকা

রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিভিন্ন হাদিসে ছোট ছোট এমন কিছু আমলের কথা জানিয়েছেন আমরা যদি সেই আমলগুলো করতে পারি তাহলে ফেরেশতারা আমাদের জন্য রহমত ও মাগফেরাতের দোয়া করবেন আর তাঁদের দোয়া তো নিশ্চয়ই কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

তো এমন আমলগুলোর মধ্যে একটি আমল হল, জামাতের সাথে নামাজ পড়ে স্বস্থানে কিছুক্ষণ বসে থাকা।

এ সংক্রান্ত হাদিসটি এসেছে সহী বুখারী ও সহী মুসলিমে।

عن أبي هريرةَ رضي الله عنه قَالَ : قالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم : صَلاةُ الرَّجلِ في جمَاعَةٍ تَزيدُ عَلَى صَلاتهِ في بيتهِ وصلاته فِي سُوقِهِ بضْعًا وعِشرِينَ دَرَجَةً، وَذَلِكَ أنَّ أَحدَهُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضوءَ، ثُمَّ أَتَى المَسْجِدَ، لا يَنْهَزُهُ إِلا الصَلاةُ، لا يُرِيدُ إلا الصَّلاةَ، لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلا رُفِعَ لَهُ بِهَا دَرجَةٌ، وَحُطَّ عَنْهُ بها خَطِيئَةٌ حَتَّى يَدْخُلَ المَسْجِدَ، فإِذا دَخَلَ المَسْجِدَ كَانَ في الصَّلاةِ مَا كَانَتِ الصَّلاةُ هِي تَحْبِسُهُ، وَالمَلائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ في مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ، يَقُولُونَ: اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيهِ، مَا لَم يُؤْذِ فيه، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ . مُتَّفَقٌ عليه، وهذا لفظ مسلم .

“হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মসজিদে) জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার সওয়াব বাজারে কিংবা বাড়িতে একা নামাজ পড়ার চেয়ে পঁচিশ বা সাতাশ গুণ বেশি।

কারণ, যখন কোন ব্যক্তি (যাবতীয় সুন্নত ও মুস্তাহাব সহকারে) উত্তমরূপে ওযু করে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে এবং একমাত্র নামাজের নিয়তেই মসজিদে আসে, তখন মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে পাপ মোচন করা হয়।

মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ নামাজ তাকে (মসজিদে) আটকে রাখে ততক্ষণ সে নামাজের মধ্যেই থাকে (অর্থাৎ ততক্ষণ সে নামাজের সওয়াব পেতে থাকে)

এবং নামাজ পড়ে যতক্ষণ সে স্বস্থানে বসা থাকে ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। তারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন। হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, তার তওবা কবুল করুন। (তারা তার জন্য এ সব দোয়া করতেই থাকে) যে পর্যন্ত সে কাউকে কষ্ট না দেয় এবং তার ওযু নষ্ট না হয়”। – সহী বুখারী ২১১৯; সহী মুসলিম ৬৪৯

 লক্ষ করুন, হাদিসের শেষ দিকে এসেছে,

وَالمَلائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ في مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ، يَقُولُونَ: اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيهِ، مَا لَم يُؤْذِ فيه، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ .

“নামাজ পড়ে যতক্ষণ সে স্বস্থানে বসা থাকে ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। তারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন। হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, তার তওবা কবুল করুন। (তারা তার জন্য এ সব দোয়া করতেই থাকে) যে পর্যন্ত সে কাউকে কষ্ট না দেয় এবং তার ওযু নষ্ট না হয়”।

হাদিস থেকে যে শিক্ষা আমরা পাই তা হল, কেউ যখন জামাতের সাথে নামাজ আদায় করে ওযু সহকারে নামাজের স্থানে কিছু সময় বসে থাকে তখন ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। তাঁরা তার জন্য রহমত ও মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে।

একটু ভাবুন তো ভাই, আপনি নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ মসজিদে বসে রইলেন এতে নিষ্পাপ ফেরেশতারা আপনার জন্য রহমতের দোয়া করছেন, মাগফেরাতের দোয়া করছেন।

আপনি পাঁচ মিনিট বসে থাকলেন বা দশ মিনিট বা আধা ঘণ্টা, যতক্ষণ বসে রইলেন ফেরেশতারা অনবরত আপনার জন্য দোয়া করে যাচ্ছে। কত সহজ একটি আমল। কিন্তু এর বদৌলতে প্রাপ্তিটা কত বড়!

লক্ষ করুন, হাদিসে দুটি শর্তের কথা উল্লেখ রয়েছে। প্রথম শর্ত, এ সময় কাউকে কোনো প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না। দ্বিতীয় শর্ত, এ সময় যেন ওযু নষ্ট না হয়। কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেললে বা ওযু ছুটে গেলে আর ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যাবে না।

মুহতারাম ভাই, আমরা যারা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারি, আমরা এ আমলটি করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

যত তাড়াহুড়াই থাক, নামাজ শেষে একটু সময়ের জন্য হলেও মসজিদে বসে থাকব। তখন মনে মনে এ একিন রাখব যে, এখন ফেরেশতারা আমার জন্য দোয়া করছেন। তাঁরা কী বলে আপনার জন্য দোয়া করছেন সেই কথাগুলো মনে মনে ভাবতে থাকবেন। যেন আপনি তাঁদের কথাগুলো কানেও শুনতে পাচ্ছেন।

اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيهِ

“হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন। হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, তার তওবা কবুল করুন”।

একেই বলে ইহতিসাব ও তাসদীক বিওয়াদিল্লাহ-সওয়াব প্রাপ্তির আশা এবং আল্লাহর ওয়াদার ওপর একিন।

এই যে ইহতিসাব, এটি অনেক অনেক দামী একটি জিনিস ভাই। বহু হাদিসে এ শব্দটি এসেছে। কেউ যখন কোনো আমল ইহতিসাবের সাথে আঞ্জাম দেয়, হোক তা বাহ্যত যতই ছোট, তখন সেই আমলের গুণগত মান অনেক অনেক বেড়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রতিটি আমল ইহতিসাব ও তাসদীক বিওয়াদিল্লাহর সিফাতের সাথে করার তাওফিক দান করেন, আমীন।

২য় আমলঃ প্রথম কাতারে নামাজ পড়া

দ্বিতীয় আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি তা হল, প্রথম কাতারে নামাজ পড়া।

হযরত আবু উমামা বাহেলি রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে,

قال رسولُ اللهِ ﷺ: إنَّ اللهَ وملائكتَه يُصلُّونَ على الصَّفِّ الأوَّلِ، قالوا: يا رسولَ اللهِ، وعلى الثّاني؟ قال: إنَّ اللهَ وملائكتَه يُصلُّونَ على الصَّفِّ الأوَّلِ، قالوا: يا رسولَ اللهِ، وعلى الثّاني؟ قال: إنَّ اللهَ وملائكتَه يُصلُّونَ على الصَّفِّ الأوَّلِ، قالوا: يا رسولَ اللهِ، وعلى الثّاني؟ قال: وعلى الثّاني

“একদিন রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর সামনে উপস্থিত সাহাবিদেরকে লক্ষ করে) বললেন, যারা প্রথম কাতারে নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।

(তাঁর এ কথা শুনে) সাহাবিরা বললেন, যারা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে তাদের জন্যও (দোয়া করুন)।

রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, যারা প্রথম কাতারে নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।

তখন সাহাবিরা বললেন, যারা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে তাদের জন্যও (দোয়া করুন)।

রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, যারা প্রথম কাতারে নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। তখন সাহাবিরা বললেন, যারা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে তাদের জন্যও (দোয়া করুন)।

(তাদের কথা শুনে চতুর্থবার) রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এবং যারা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে তাদের প্রতিও (রহমত বর্ষণ করেন)”। (মুসনাদে আহমদ ২২২৬৩; হাদিসটি সহী লিগাইরিহি)

মুহতারাম ভাই, আমরা যারা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারি, আমরা এ আমলটিও করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। একদম সামনে কাতারে দাঁড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

আমাদের এক উস্তাদে মুহতারাম বলতেন, এখন তোমরা যারা নামাজের প্রথম কাতারে দাঁড়াতে পারো আশা করা যায়, তাঁরাই জিহাদের ময়দানে প্রথম কাতারে দাঁড়াতে পারবে ইনশাআল্লাহ।

৩য় আমলঃ কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানো

৩য় আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি তা হল, নামাজের কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানো।

এ সংক্রান্ত হাদিসটি এসেছে সহীহ ইবনে হিব্বানে,

عن عائشة أم المؤمنين قَالَ : قالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلمإنَّ اللهَ وملائكتَه يُصَلُّون على ميامنِ الصُّفوفِ

“হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা কাতারের ডান দিকে দাঁড়ায় আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন”।-সহীহ ইবনে হিব্বান ২১৬০; সুনানে কুবরা, বাইহাকি ৩/১০৩ (হাদিসটি সহীহ(

যদি আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে এ হাদিসটির ওপরও আমল করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। ডান দিকে ফাঁকা থাকলে সেদিকেই আগে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। ফাঁকা না থাকলে তো ভিন্ন কথা।

৪র্থ আমলঃ মানুষকে কল্যাণকর কথা শিক্ষা দেয়া

৪র্থ আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি তা হল, মানুষকে কল্যাণকর কথা শিক্ষা দেয়া।

হাদিসটি এসেছে জামে তিরমিযীতে,

عَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «فَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ» ثُمَّ قَالَ  : «إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّماوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الحُوْتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِي النَّاسِ الخَيْرَ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن

“হযরত আবূ উমামাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,  তোমাদের মধ্যকার সাধারণ কারো ওপর আমার মর্যাদা যেমন একজন আবেদের ওপর একজন (সত্যিকারের) আলেমের মর্যাদা ঠিক তেমন। এরপর বলেন, আল্লাহ তাআলা ওই সব লোকদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন যারা মানুষকে কল্যাণকর কথা শিক্ষা দেয়, ফেরেশতারা এবং আসমান-জমিনের সকল বাসিন্দা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া এবং পানির মাছ পর্যন্ত তাদের জন্য দোয়া করে”। – জামে তিরমিযী ২৬৮৫ (হাদিসটি হাসান)

মুহতারাম ভাই, আমরা আমাদের ভাইদেরকে নিয়ে কত সময় কত ধরনের হালাকা করি, দাওরা করি, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভাইদেরকে দরস দেই, প্রায় প্রতিদিনই আমরা আমাদের ভাইদেরকে কিছু না কিছু শিখাই, তাই না?

আমরা আশা করতে পারি, এ হাদিসে যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে আমরাও শামিল হবো ইনশাআল্লাহ।

ফেতনা ফাসাদের এ যুগে ঈমান ও তাওহিদ, জিহাদ ও কিতালের চেয়ে বড় কল্যাণকর কথা আর কী হতে পারে?

তাছাড়া আমরা তো সব ধরনের কথাই বলে থাকি, আমল আখলাক, তাযকিয়া তারবিয়া ইত্যাদি, কোনটা বাদ থাকে আমাদের কথায়? এ জন্য আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এ হাদিসে যে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে আমরাও শামিল হবো ইনশাআল্লাহ।

৫ম আমলঃ মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করা 

৫ম আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি তা হল, মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করা।

সহীহ মুসলিমে হযরত আবু দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلمٍ يَدْعُو لأَخِيهِ بِظَهْرِ الغَيْبِ إِلاَّ قَالَ المَلَكُ: وَلَكَ بِمِثْل

“যখন কোন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের জন্য তাঁর পশ্চাতে দোয়া করে, তখন তার (মাথার কাছে নিযুক্ত) একজন ফেরেশতা তাঁকে লক্ষ্য করে বলে, তোমার জন্যও এমনই হোক”। – সহী মুসলিম ২৭৩২

সহী মুসলিমেরই অন্য বর্ণনায় এসেছে,

دَعْوَةُ المَرْءِ المُسْلِمِ لأَخِيهِ بِظَهْرِ الغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ، عِنْدَ رَأسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لأَخِيهِ بِخَيْرٍ قَالَ المَلَكُ المُوَكَّلُ بِهِ: آمِينَ، وَلَكَ بِمِثْلٍ

“কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের অবর্তমানে তার জন্য নেক দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, তখনই ওই ফেরেশতা বলেন, ‘আমীন, তোমার জন্যও এমনই হোক”।-সহী মুসলিম ২৭৩২

ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করার কত সহজ একটি আমল।

আমার যা যা প্রয়োজন সেই প্রয়োজনগুলো আমার জানা অজানা কত কত ভাইয়ের আছে। আমি যদি আমার ভাইদের সেই প্রয়োজনগুলো পূরণ হওয়ার জন্য দোয়া করতে থাকি তাহলে এর বিনিময়ে ফেরেশতারা আমার জন্য এই বলে দোয়া করবে যে, তোমার জন্যও এমনই হোক। তাই না? কত সহজ একটি আমল!

আপনি অসুস্থ, তো আপনি আপনার অসুস্থ ভাইদের জন্য দোয়া করুন।

আপনি কোনো কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তো আপনার যে সব ভাই আপনার মতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আপনি তাঁদের জন্য আন্তরিক ভাবে, অনুনয় বিনয়ের সাথে দোয়া করতে থাকুন, এর বিনিময়ে আপনার সঙ্গী ফেরেশতা আপনার নিরাপত্তার জন্য দোয়া করবেন ইনশাআল্লাহ।

আপনি আপনার নিচের ওপরের সকল ভাইদের জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ যেন সকল ভাইকে শাহাদাত পর্যন্ত জিহাদের পথে অবিচল রাখেন। সকল ফেতনা থেকে নিরাপদ রাখেন, এতে সবার আগে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আপনাকে অবিচল রাখবেন, আপনাকে নিরাপদ রাখবেন ইনশাআল্লাহ।

অন্যের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করতে পারা, একজন মুমিনের হৃদয়ের স্বচ্ছতার অন্যতম একটি দলিল। কারো হৃদয়ে কুটিলতা থাকলে সে অন্যের জন্য দোয়া করতে পারে না।

৬ষ্ঠ আমলঃ ওযু সহকারে ঘুমানো

৬ষ্ঠ আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি, তা হল রাতে ওযু সহকারে ঘুমানো।

সহীহ ইবনে হিব্বানে বর্ণিতে একটি হাদিসে এসেছে,

عن عبدالله بن عمر رضى الله عنه  أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَن بات طاهرًا بات في شِعارِه مَلَكٌ فلَمْ يستيقِظْ إلّا قال المَلَكُ: اللَّهمَّ اغفِرْ لعبدِك فلانٍ فإنَّه بات طاهرًاصحيح   •  أخرجه ابن حبان في صحيحه ١٠٥١

“হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে পবিত্র অবস্থায় (ওযু সহকারে) ঘুমায় একজন ফেরেশতা তার গায়ের সাথে লেগে থাকা কাপড়ের ভেতরে অবস্থান করে। রাতে সে যখনই জাগ্রত হয় ওই ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ, আপনি আপনার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিন। সে পবিত্র অবস্থায় রাত কাটাচ্ছে”।-সহীহ ইবনে হিব্বান ১০১৫

এ আমলটি আমাদের মধ্যে যাদের আছে তাঁদের তো আছেই আলহামদুলিল্লাহ, যাদের নেই আমরা আজ থেকেই শুরু করি ইনশাআল্লাহ।

গরমের দিনে তো এটি একদম সহজ। আর আমাদের দেশে তো গরমের দিনই বেশি। ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে গেলে শীতের দিনও সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ।

বরং আমি তো বলব, এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে আপনি পানি গরম করে নিন। একটু বিদ্যুত কিংবা গ্যাস খরচ হলে হোক। সামান্য একটু বিদ্যুত বা গ্যাসের চেয়ে আমলটার মূল্য অনেক অনেক বেশি।

৭ম আমলঃ প্রতিদিন সামান্য কিছু হলেও সদকা করা

৭ম আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি, তা হল, প্রতিদিন সামান্য কিছু হলেও সাদাকা করা।

এ সংক্রান্ত হাদিসটি এসেছে, সহী বুখারী ও মুসলিমে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا ‏‏.

“হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা (আসমান থেকে) অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, যে দান করে তাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ, যে দান করে না তাকে ধ্বংস করে দিন”। – সহীহ বুখারি ১৪৪২; সহীহ মুসলিম ১০১০

এ হাদিসটির ওপরও আমরা আমল করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। প্রতিদিন সামান্য কিছু হলেও সাদাকা করার চেষ্টা করব। হোক তা মাত্র দুই টাকা বা এই মূল্যের কোনো জিনিস। সাদাকা তো শুধু টাকা দিয়ে করাই জরুরি না। আপনি কোনো রিকশাওয়ালা কিংবা ভ্যান চালককে এক প্যাকেট শসা কিনে হাদিয়া দিলেন বা এক বোতল পানি দিলেন, সাদাকা হয়ে গেল।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন ছোট ছোট সাদাকা অনেক বড় বড় সাদাকার চেয়েও বেশি মূল্যবান হয়।

এটিকেও আমরা আমাদের প্রতিদিনের আমলের অন্তর্ভূক্ত করে নেবো যে, আমি প্রতিদিন সামান্য কিছু হলেও সাদাকা করব ইনশাআল্লাহ

৮ম আমলঃ সেহরি খাওয়া

৮ম আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি তা হল, সেহরি খাওয়া।

সহী ইবনে হিব্বানে হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إنَّ اللهَ وملائكتَه يُصَلُّونَ على المتسحِّرينَ

“যারা সেহরি খায় আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন”।-সহী ইবনে হিব্বান ৩৪৬৭

মুসনাদে আহমদে হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

السَّحورُ كلُّهُ برَكَةٌ فلا تدَعوهُ، ولَو أن يجرعَ أحدُكُم جرعةً من ماءٍ، فإنَّ اللَّهَ عزَّ وجلَّ وملائِكَتَهُ يصلُّونَ على المتسَحِّرينَ

“সেহরি পুরোটাই বরকত। অতএব তোমরা সেহরি খাওয়া ছেড়ো না, এক ঢোক পানি হলেও পান করো। কারণ, যারা সেহরি খায় আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন”।-মুসনাদে আহমাদ ১১১০১; হাদিসটির সনদ শক্তিশালী।

এ হাদিসটির ওপর তো আমাদের সবারই আমল চালু আছে আলহামদুলিল্লাহ।

৯ম আমলঃ কোনো মুসলিম অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া

৯ম আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারব তা হল, কোনো মুসলিম অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া।

হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, আমি রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

مَا مِنْ مُسْلِم يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِي، وَإنْ عَادَهُ عَشِيَّةً إِلا صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ ألْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبحَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ في الْجَنَّةِ. رواه الترمذي، وَقَالَ: حديث حسن

“যে কোন মুসলিম অন্য কোন (অসুস্থ) মুসলিমকে সকাল বেলা দেখতে যায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যদি সন্ধ্যা বেলা যায়, তাহলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর জান্নাতে তার জন্য আহরিত ফল নির্ধারিত হবে”। – জামে তিরমিযী ৯৬৭; (হাদিসটি হাসান)

এ হাদিসটির ওপরও আমরা যথাসম্ভব আমল করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। পাশের বাড়ির কোন ভাই অসুস্থ হলে তাকে একটু দেখতে যান। গিয়ে তার হালপুরসি করুন। দেরি করার প্রয়োজন নেই। সামান্য কথাবার্তা বলেই ফিরে আসুন। এতেই আপনি হাদিসে বর্ণিত ফজিলত পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

১০ম আমলঃ দুরুদ শরীফ পড়া

১০ম আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি তা হল, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুরুদ পড়া।

মুসনাদে ইমাম আহমাদে হযরত আমের বিন রাবিয়া রাযি. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ما صَلّى علَيَّ أحَدٌ صَلاةً، إلّا صَلَّت عليه المَلائكةُ ما دام يُصَلِّي علَيَّ، فلْيُقِلَّ عبْدٌ مِن ذلك أو لِيُكْثِرْ.

“যখনই কেউ আমার ওপর দুরুদ পড়ে যতক্ষণ দুরুদ পড়ে ততক্ষণ ফেরেশতারাও তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকে। অতএব কেউ কম পড়তে পারে আবার বেশিও পড়তে পারে”।-মুসনাদে আহমাদ ১৫৬৮৯; (হাদিসটি হাসান)

কত সহজ আমল! দরুদ শরীফের তো কত কত ফজিলত আছে! এটিও তার একটি। আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিদিনই বেশি বেশি দুরুদ পড়তে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ, বিশেষ করে জুমআর দিন।

১১তম আমলঃ সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করা

১১তম আমল, যার বদৌলতে আমরা ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করতে পারি তা হল, সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করা।

তবে এ সংক্রান্ত হাদিসটি জয়ীফ। তাই জয়ীফ হাদিসের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কেরামের যে নীতি সে অনুসারে এখানে যে ফজিলত বলা হয়েছে তার ওপর শতভাগ একিন করা ছাড়া আমলটি করার অবকাশ আছে। কারণ, এটি কোরআনে কারীমেরই তিনটি আয়াত। কারো বানানো দোয়া না। আর কিছু না হোক প্রতিটি হরফের বিনিময়ে দশ দশটি নেকি তো অবশ্যই পাবো ইনশাআল্লাহ। তাই আমরা চাইলে এ আমলটিও করতে পারি।

عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ وَقَرَأَ ثَلاَثَ آيَاتٍ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْحَشْرِ وَكَّلَ اللَّهُ بِهِ سَبْعِينَ أَلْفَ مَلَكٍ يُصَلُّونَ عَلَيْهِ حَتَّى يُمْسِيَ وَإِنْ مَاتَ فِي ذَلِكَ الْيَوْمِ مَاتَ شَهِيدًا وَمَنْ قَالَهَا حِينَ يُمْسِي كَانَ بِتِلْكَ الْمَنْزِلَةِ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ .

“হযরত মা’কিল বিন ইয়াসার রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে তিনবার বলবে,

أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

এরপর সূরা হাশরের শেষের তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়োজিত করে দিবেন। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকবে। সে ওই দিন মৃত্যুবরণ করলে শহীদ হিসেবে মৃত্যুবরণ করবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এরূপ পাঠ করবে, সেও একই ফজিলতের অধিকারী হবে”।-জামে তিরমিযী ২৯২২; মুসনাদে আহমদ ২০৩০৬; আত তারগীব ১/৩০৪

ভাই, আজ এ কয়েকটি কথাই আরজ করলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কথাগুলোর ওপর আমল করার তাওফিক দান করেন।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শাহাদাত পর্যন্ত তাঁর সন্তুষ্টির পথে, জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করেন এবং আমাদের সবাইকে সর্বোচ্চ জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন আমীন।

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وأصحابه أجمعين

وآخردعوانا أن الحمد لله رب العالمين

 

 

*******************************
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
In your dua remember your brothers of
Al Firdaws Media Foundation

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =

Back to top button