আত্মশুদ্ধি- পর্ব-২১ ধৈর্যই সফলতার সোপান || মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
مؤسسة الفردوس
আল ফিরদাউস
Al Firdaws
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
في اللغة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Language
بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:
تزكية النفس- الحلقة ٢١
الصبر هو طريق الفلاح
আত্মশুদ্ধি- পর্ব-২১
ধৈর্যই সফলতার সোপান
Self-purification- Episode-21
Patience is the ladder of success
لمولانا صالح محمود حفظه الله
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
By Mawlana Saleh Mahmud Hafizahullah
للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading
https://justpaste.it/tazkiah-21
https://archive.vn/VaC9R
https://mediagram.me/518c0c2a76dc036d
https://archive.vn/lv72s
https://web.archive.org/web/20210107….it/tazkiah-21
https://web.archive.org/web/20210107…8c0c2a76dc036d
روابط بي دي اب
PDF (1 MB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [১ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/bBgtgzpLfJEW3Yi
https://archive.org/download/21.-dho…lotarSopan.pdf
روابط ورد
Word (421 KB)
ওয়ার্ড [৪২১ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/yZMSmmTwgxLicSq
https://archive.org/download/21.-dho…otarSopan.docx
روابط الغلاف- ١
book Banner [303 KB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৩০৩ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/NzSfD7KRjoWCxA9
https://archive.org/download/tazkia-21/tazkia-21.jpg
روابط الغلاف- ٢
Banner [3.1 MB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [৩.১ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/A7ciNNiMz9jofSe
https://archive.org/download/tazkia-…-21-mockup.jpg
আল-ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল চ্যানেলসমূহ
চারপওয়্যার অ্যাকাউন্ট ফলো করুন-
https://chirpwire.net/profile/alfirdawsmedia
চারপওয়্যার গ্রুপে জয়েন করুন-
https://chirpwire.net/groups/profile/14002/al-firdaws
টেলিগ্রাম চ্যানেল-
https://t.me/alfirdaws3
টেলিগ্রাম বট-
https://t.me/alfirdaws_1_bot
জিওনিউজ চ্যানেল-
https://talk.gnews.bz/channel/al-fir…-mussh-alfrdws
**********
আত্মশুদ্ধি – ২১ |
ধৈর্যই সফলতার সোপান
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
সূচিপত্র
দাওয়াতের ক্ষেত্রে সবরের প্রয়োজনীয়তা.. 7
তাকদীরের ওপর বিশ্বাসের সুফল. 9
বালা-মুসিবত আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভের মাধ্যম. 10
সিয়াম সাধনার মাধ্যমেও ধৈর্যের অনুশীলন করা যায়. 16
ধৈর্য অর্জনে মুজাহাদার প্রয়োজনীয়তা.. 17
ভাল মানুষের ধৈর্য ও মন্দ লোকের ধৈর্যের মাঝে পার্থক্য… 18
সুদিনে নেয়ামতের উপর ধৈর্যের দিকসমূহ: 19
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন, ওয়াস্-সালাতু ওয়াস্-সালামু আলা সাইয়্যেদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালিন, ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসানিন ইলা ইয়াওমিদ্দীন, মিনাল উলামা ওয়াল মুজাহিদীন, ওয়া আম্মাতিল মুসলিমীন, আমীন ইয়া রাব্বাল আ’লামীন।
আম্মা বা’দ।
মুহতারাম ভাইয়েরা! আমরা সকলেই দুরূদ শরীফ পড়ে নিই-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ،كما صَلَّيْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰي آلِ إبراهيم، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إبْرَاهِيْمَ، وَعَلٰى آلِ إبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ.
বেশ কিছুদিন পর আজকে আবারো আমরা তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এই জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করি- আলহামদুলিল্লাহ।
আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে: সবর বা ধৈর্যই সফলতার সোপান। প্রথমেই আমাদের জানা দরকার সবরের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কি? এবং কুরআন হাদীসে এর কী ফযীলত বর্ণিত আছে। আসুন, একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ধৈর্য ধারণের গুরুত্ব
বন্ধুগণ! সবর বা ধৈর্যধারণ করা মু’মিন মুজাহিদের অন্যতম একটি গুণ। যা আকীদার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই জন্য জীবনে কখনো বিপদাপদ বা মুসিবত নেমে আসলে অস্থিরতা প্রকাশ করা যাবে না। ইমাম আহমদ রহ. বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে প্রায় নব্বই জায়গায় সবর সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
إِنَّ اللهَ مَعَ الصَابِرِيْنَ.
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।[1]
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
اَلصَّبْرُ ضِيَاءٌ
সবর হল জ্যোতি।[2]
হযরত উমর রা. বলেন,
إنَّ أَفْضَلَ عَيْشٍ أَدْرَكْنَاهُ بِالصَّبْرِ،
সবরকে আমরা আমাদের জীবন-জীবিকার সর্বোত্তম মাধ্যম হিসেবে পেয়েছি।[3]
হযরত আলী রা. বলেন, “ঈমানের ক্ষেত্রে সবরের উদাহরণ হল দেহের মধ্যে মাথার মত।” এরপর তিনি আওয়াজ উঁচু করে বললেন, “যার ধৈর্য নেই, তার ঈমান নেই।”[4]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
مَا أَعْطَى اللّٰهُ أَحَدًا مِنْ عَطَاءٍ أَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ
আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেন নি।[5]
ধৈর্য ধারণের ৩ রূপঃ
সবর তিন প্রকার, যথা-
১) আল্লাহর আদেশের ওপর সবর করা।
২) আল্লাহর নিষেধের ওপর সবর করা।
৩) বিপদাপদে সবর করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللهِ يَهْدِ قَلْبَهُ
আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন বিপদ আসে না। আর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, তিনি তাঁর অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন।[6]
এই আয়াতের তাফসীরে আলকামা রা. বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা যার অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন, সে হল ঐ ব্যক্তি, যে বিপদে পড়লে বিশ্বাস করে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে বিপদে পড়েও সে খুশি থাকে এবং সহজভাবে তাকে গ্রহণ করে।”
অন্যান্য মুফাসসিরগণ উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, “যে ব্যক্তি বিপদে পড়লে বিশ্বাস রাখে যে, এটা আল্লাহ তা‘আলার ফায়সালা মোতাবেক এসেছে, ফলে সে সবর করার পাশাপাশি পরকালে এর প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখে এবং আল্লাহর ফয়সালার নিকট আত্মসমর্পণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন, আর দুনিয়ার যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, তার বিনিময়ে তিনি তার অন্তরে হেদায়াত এবং সত্যিকার মজবুত ইয়াকীন দান করেন। যা নিয়েছেন তার বিনিময় দান করবেন।”
সাঈদ বিন জুবাইর রা. “যে ব্যক্তি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়াত দেন।” এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, অর্থাৎ, সে কোন ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপদের সম্মুখীন হলে বলে-
إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
অর্থাৎ আমরা আল্লাহর জন্যই আর তাঁর নিকটই ফিরে যাব। (সূরা বাকারাঃ ১৫৬)
সবরের প্রয়োজনীয়তা
মুসলিম হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধৈর্যের প্রয়োজন। প্রতিটি পদক্ষেপেই মুমিনের ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর নির্দেশের সামনে ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহর পথে জিহাদের ক্ষেত্রে ধৈর্যের প্রয়োজন। কারণ, এ পথে নামলে নানা ধরণের কষ্ট ও বিপদের মুখোমুখি হতে হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوْا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْا وَاتَّقُوْا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! ধৈর্যধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।[7]
অতএব প্রিয় ভাইয়েরা!
আমরা যেহেতু তাগুতের মোকাবেলায় মাঠে নেমে পড়েছি, তাই আমাদের ওপরও বহু রকমের কষ্ট, মুসিবত ও নির্যাতন নেমে আসবে। সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে হিফাযত করুন। যদি এ পথে বিপদাপদ নিজের ওপর এসেই পড়ে, আল্লাহ তা‘আলা যেন আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক দান করেন এবং ঈমানের উপর অটল-অবিচল রাখেন। আমীন।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে সবরের প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ادْعُ إِلِٰى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ.
আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।”[8]
তিনি আরো বলেন:
وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُواْ بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرينَ
আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। আর যদি সবর কর, তবে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম।”[9]
وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلاَّ بِاللّٰهِ وَلاَ تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلاَ تَكُ فِي ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُونَ
আপনি সবর করুন। আপনার সবর তো আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত নয়। তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না।”[10]
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করতে গেলেও চরম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়। কারণ, এ পথে মানুষের পক্ষ থেকে নানা ধরণের যাতনার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন কুরআনুল কারীমে লোকমান আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তিনি তাঁর সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন-
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ.
হে বৎস, নামায প্রতিষ্ঠা কর, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ কর। আর যে বিপদ আসে, তাতে ধৈর্য ধারণ কর। বিপদে ধৈর্য ধরণ করা তো বিশাল সংকল্পের ব্যাপার।[11]
মুমিন মুজাহিদেরও ধৈর্যের প্রয়োজন, জীবনের নানান বিপদাপদ, মুসিবত, কষ্ট ও জটিলতার সামনে। কারণ, সে বিশ্বাস করে- যত সংকটই আসুক না কেন, সব আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। ফলে সে তা সহজভাবে মেনে নেয়। বিপদে পড়েও খুশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্ষোভ, হতাশা ও অস্থিরতা প্রকাশ করে না। নিজের ভাষা ও আচরণকে সংযত রাখে। কারণ, সে আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে বিশ্বাসী। সে তাকদীরকে বিশ্বাস করে। তাকদীরকে বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি রোকনের একটি।
তাকদীরের ওপর বিশ্বাসের সুফল
তাকদীরের উপর ঈমান রাখলে তার অনেক সুফল পাওয়া যায়। তন্মধ্যে একটি হল, বিপদে ধৈর্য ধারণ। সুতরাং কোন ব্যক্তি বিপদে সবর না করলে তার অর্থ হল, তার কাছে ঈমানের এই গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিটি অনুপস্থিত। অথবা থাকলেও তা খুব নড়বড়ে। ফলে সে বিপদের মুহূর্তে রাগে-ক্ষোভে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খবর দিয়েছেন যে, এটা এমন এক কুফুরীমূলক কাজ, যা আকীদার মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে। বিপদ-আপদের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মোচন হয়। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে বিভিন্ন বালা-মুসিবত দেন এক মহান উদ্দেশ্যে। তা হল- এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার গুনাহ মোচন করে থাকেন। যেমন আনাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِذَا أَرَادَ اللّٰهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللّٰهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَٰى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
আল্লাহ যখন কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি দেন। কিন্তু বান্দার অকল্যাণ চাইলে তিনি তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত রেখে কিয়ামতের দিন তার যথার্থ প্রাপ্য দেন।[12]
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, বিপদ-মুসিবত হল নেয়ামত। কারণ, এতে গুনাহ মাফ হয়। বিপদে ধৈর্যধারণ করলে তার প্রতিদান পাওয়া যায়। বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে আরও বেশি রোনাজারি করতে হয়। তার নিকট আরও বেশি ধর্ণা দিতে হয়। আল্লাহর নিকট নিজের অভাব ও অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরার প্রয়োজন হয়। সৃষ্ট জীব থেকে বিমুখ হয়ে এক আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হয়।
বিপদের মাঝে এরকম অনেক বড় বড় কল্যাণ নিহিত আছে। বিপদে পড়লে যদি গুনাহ মোচন হয়, পাপরাশী ঝরে যায়, তবে তো এটা বিশাল এক নেয়ামত!
বালা-মুসিবত আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভের মাধ্যম
সাধারণভাবে বালা-মুসিবত আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত লাভের মাধ্যম হয়। তবে কোন ব্যক্তি যদি এ বিপদের কারণে এর থেকে আরও বড় গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা দ্বীনের ক্ষেত্রে তার জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, কিছু মানুষ আছে, যারা দারিদ্র্যতায় পড়লে বা অসুস্থ হলে তাদের মধ্যে মুনাফেকী, ধৈর্যহীনতা, মনোরোগ, স্পষ্ট কুফুরী ইত্যাদি নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেকে কিছু ফরয কাজ ছেড়ে দেয়। অনেকে বিভিন্ন হারাম কাজে লিপ্ত হয়। ফলে দীনের ক্ষেত্রে তার বড় ক্ষতি হয়ে যায়। সুতরাং এ রকম ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিপদ না হওয়াই কল্যাণকর। পক্ষান্তরে বিপদ-মুসিবত যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে ধৈর্য ও আনুগত্য সৃষ্টি করে, তবে এই মুসিবত তার জন্য দীনের ক্ষেত্রে বিশাল নেয়ামতে পরিণত হয়।
বিপদাপদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ধৈর্যের পরীক্ষা নেন। বিপদ দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করেন- কে ধৈর্যের পরিচয় দেয় ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে, আর কে ধৈর্যহীনতার পরিচয় দেয় এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ، وَإِنَّ اللّٰهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ
বিপদ যত কঠিন হয়, পুরস্কারও তত বড় হয়। আল্লাহ কোন জাতিকে ভালবাসলে তাদেরকে পরীক্ষা করেন। সুতরাং যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। আর যে তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে, আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে যান।[13]
উক্ত হাদীসে আমাদের জন্য কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। যেমন-
১. বান্দা যেমন আমল করবে, তেমনই প্রতিদান পাবে। অর্থাৎ “যেমন কর্ম তেমন ফল”।
২. এখানে আল্লাহর একটি গুণের পরিচয় পাওয়া যায়। তা হল ‘সন্তুষ্ট হওয়া’। আল্লাহ তা‘আলার অন্যান্য গুণের মতই এটি একটি গুণ। অন্য সব গুণের মতই এটিও আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য হবে; যেমনটি তার জন্য উপযুক্ত হয়।
৩. অত্র হাদীসে জানা গেল যে, আল্লাহ তা‘আলা এক বিশাল উদ্দেশ্যে বান্দার উপর বিপদ-মুসিবত দিয়ে থাকেন। তা হল, তিনি এর মাধ্যমে তার প্রিয়পাত্রদেরকে পরীক্ষা করেন।
৪. এখানে তাকদীরেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। “আর যে তাতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে, আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে যান। ” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
৫. মানবজীবনে যত বিপদাপদই আসুক না কেন, সব আসে আল্লাহর তাকদীর তথা পূর্বনির্ধারিত ফায়সালা অনুযায়ী।
৬. এখান থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, বিপদ নেমে আসলে ধৈর্যের সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি বিপদের মুখে আল্লাহর নিকটই ধর্ণা দিতে হবে এবং তার উপরই ভরসা রেখে পথ চলতে হবে। ধৈর্যের পরিণতি প্রশংসনীয়। জীবনের সকল কষ্ট ও বিপদাপদে আল্লাহ তা‘আলা নামায ও সবরের মাধ্যমে তাঁর নিকট সাহায্য চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, এতেই মানুষের কল্যাণ নিহিত আছে। ধৈর্যের পরিণতি প্রশংসনীয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলে দিয়েছেন যে, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন। অর্থাৎ তাদেরকে তিনি সাহায্য করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصَّابِرِينَ.
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নামায ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য অনুসন্ধান কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন।[14]
এখান থেকে ধৈর্যধারণ করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়। মুমিন ব্যক্তির জন্য জীবনের প্রতিটি পদে পদে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া দরকার। কারণ এই সবরের মাধ্যমেই আকীদা ও বিশ্বাস দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়।
ধৈর্য ব্যতীত কোনো ব্যক্তি সফল ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ অর্জনে প্রতিটি মানুষই ধৈর্যের মুখাপেক্ষী। কেননা, আমল অল্প হোক কিংবা বেশি, তা আদায় করতে হলে উপযুক্ত ধৈর্যের প্রয়োজন। তাইতো এর প্রতি উৎসাহ দিয়ে অনেক আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বলেন-
»اَلصَّبْرُ نِصْفُ الْإيْمَانِ«
ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক।[15]
ধৈর্যের প্রকারভেদ
উলামায়ে কেরাম বলেন, ঈমানের অর্ধেক ধৈর্য ও বাকি অর্ধেক শুকরিয়া। ধৈর্যকে আরবীতে বলা হয় সবর। আর সবর শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে, আটকানো, ফিরানো, বাধা প্রদান।
আর শরিয়তের দৃষ্টিতে সবর (ধৈর্য) পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যথা-
১. ওয়াজিব ধৈর্য।
২. মুস্তাহাব ধৈর্য।
৩. হারাম ধৈর্য।
৪. মাকরূহ ধৈর্য।
৫. মুবাহ (জায়েয) ধৈর্য।
এবার আসুন প্রত্যেক প্রকার সংক্ষেপে জেনে নিই।
১. ওয়াজিব ধৈর্য: এটি আবার তিন প্রকার।
(ক) আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যধারণ। অর্থাৎ, আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে নিজেকে নিবেদিত রাখা। যেমন, মুসলিমদের সাথে জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। যাকাত আদায় ও পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।
(খ) গুনাহ থেকে ধৈর্যধারণ। অর্থাৎ পাপে জড়িত হওয়া থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা। যেমন, হারাম দৃষ্টি থেকে ধৈর্যধারণ। অবৈধ সম্পদ ছেড়ে দেওয়া, গীবত ও খারাপ বন্ধু-বান্ধব পরিত্যাগ―ইত্যাদি।
(গ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিপদাপদের উপর ধৈর্যধারণ। সর্বসম্মতিক্রমে এটি ওয়াজিব।
অর্থাৎ হতাশা ও নৈরাশ্য প্রকাশ করা থেকে নিজেকে সংরক্ষণ করা। কোনরূপ অভিযোগ পেশ করা থেকে জিহ্বাকে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয় এমন কাজ থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হেফাযত করা। যেমন―গাল চাপটানো, জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলা প্রভৃতি।
আত্মীয়-স্বজন কিংবা সম্পদ হারানো এবং অসুস্থতার উপর ধৈর্যধারণ এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। সবর বা ধৈর্যের বিপরীত হলো―অসন্তোষ তথা রাগ প্রকাশ করা, অভিযোগ করা, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া এবং উৎকন্ঠা ও নৈরাশ্য ব্যক্ত করা।
এর কারণে প্রতিদান নষ্ট হয়ে যায়, বিপদ-মুসিবত আরো বেড়ে যায় এবং ঈমান হ্রাস পায়। নেক কাজ করা ও অন্যায়-অসৎ কাজ থেকে ফিরে থাকা সম্পর্কিত ধৈর্য, বিপদ-আপদের উপর ধৈর্য অবলম্বন করা থেকে উত্তম। এ অভিমত প্রকাশ করেছেন সা‘ঈদ ইবনে যোবায়ের, মাইমূন ইবনে মেহরান প্রমুখ। আর ভালো কাজে ধৈর্যধারণ করা হারাম থেকে বেঁচে থাকার ধৈর্য থেকে উত্তম।
২. মুস্তাহাব ধৈর্য: এটি হচ্ছে মাকরূহ কাজ ছেড়ে দেওয়া ও মুস্তাহাব আমলের ধৈর্যধারণ। যেমন―অপরাধীর মোকাবেলায় তার অনুরূপ অপরাধ না করা।
৩. হারাম ধৈর্য: যেমন―মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত খানা-পিনা পরিত্যাগ করা, ধ্বংসাত্মক বস্তুর উপর ধৈর্যধারণ। যেমন―আগুন লাগলে তার উপর কিংবা পরিবারের কেউ অশ্লীল কাজ করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ।
৪. মাকরূহ ধৈর্যধারণ: মাকরূহ কাজে অথবা মুস্তাহাব ছেড়ে দেওয়ার উপর ধৈর্যধারণ।
আর ভালো কাজে ধৈর্যধারণ করা হারাম থেকে বেঁচে থাকার ধৈর্য থেকে উত্তম।
৫. মুবাহ (জায়েয) ধৈর্য: ক্ষতি হয় না এ পরিমাণ সময় খাবার গ্রহণ না করা অথবা কিছু সময় ঠান্ডার উপর ধৈর্যধারণ।
ধৈর্য ধারণের ফযীলত
এবার আসুন ধৈর্যধারণের কি ফযীলত? সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। ধৈর্য ধারণের ফযীলত সম্পর্কিত অনেক আয়াত ও হাদীস রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:―
(১) ধৈর্যের প্রতিদান অসীম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন―
﴿إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِحِسَاب﴾
একমাত্র ধৈর্যশীলদের প্রতিদান হিসাব ছাড়া দেওয়া হবে।[16]
(২) ধৈর্যশীলদের জন্যে মহা সুসংবাদ। আল্লাহ বলেন―
﴿وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَا أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ١٥٦ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَيۡهِمۡ صَلَوَٰتٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَرَحۡمَةٞۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُهۡتَدُونَ١٥٧﴾
আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন, যারা মুসিবতে আক্রান্ত হলে বলে― إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ অর্থাৎ আমরা আল্লাহর জন্যেই এবং পরিশেষে তার কাছেই ফিরে যাব। প্রভুর পক্ষ থেকে তাদের উপর শান্তি ও রহমত রয়েছে এবং তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।[17]
(৩) ধৈর্যশীলদের জন্যে আল্লাহর বিশেষ সঙ্গ ও ভালোবাসা:
আল্লাহ বলেন―
﴿وَٱصۡبِرُوٓاْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ﴾
তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।[18]
মহান আল্লাহ আরো বলেন-
﴿وَٱللّٰهُ يُحِبُّ ٱلصَّٰبِرِينَ﴾
আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন।[19]
(৪) ধৈর্য উত্তম সম্পদ:
আল্লাহ বলেন―
﴿وَلَئِن صَبَرۡتُمۡ لَهُوَ خَيۡرٞ لِّلصَّٰبِرِينَ﴾
আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর, তাহলে তা ধৈর্যশীলদের জন্য উত্তম।[20]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―
« وما أُعْطِيَ أحَدٌ عَطَاءً خَيْرًا وأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ»
কোনো বান্দাকে ধৈর্যের মত উত্তম সম্পদ অন্য কিছু দেওয়া হয়নি।[21]
(৫) আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের উত্তম প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। তিনি বলেন―
﴿وَلَنَجۡزِيَنَّ ٱلَّذِينَ صَبَرُوٓاْ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ﴾
অবশ্যই ধৈর্যশীলদের আমলের চেয়েও উত্তম প্রতিদান দেওয়া হবে।[22]
সিয়াম সাধনার মাধ্যমেও ধৈর্যের অনুশীলন করা যায়
যেহেতু সিয়াম ধৈর্যের অন্তর্ভুক্ত, তাই এর প্রতিদানও বিনা হিসেবে দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘বনী আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান দশগুণ থেকে সাতশত গুণ দেওয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন- ‘তবে সিয়াম ব্যতীত; কেননা সেটি আমার জন্যে, আর এর প্রতিদান আমিই দেব।’
ধৈর্যের প্রকারসমূহের মাঝে সিয়াম সাধনা অন্যতম। কেননা, এর মাঝে দুই প্রকার ধৈর্যই বিদ্যমান।
১. এটি আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্যধারণের প্রকৃত রূপ। ভালো কাজে ধৈর্যধারণ করা হারাম থেকে বেঁচে থাকার ধৈর্য থেকে উত্তম। কর্তব্য পালন করতে গিয়ে হারাম থেকে বেঁচে থাকা আর ইচ্ছাকৃতভাবে ভাল কাজ করা- দুটি এক নয়। তাই ভালো কাজে ধৈর্যধারণ করা হারাম থেকে বেঁচে থাকার ধৈর্য থেকে উত্তম।
২. বান্দা নফসের চাহিদার বিপরীত অবস্থান নেয়, ফলে এটি গুনাহ থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে সবরের স্বরূপ। কেননা রোযাদারকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কষ্ট সহ্য করতে হয়। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়ামের মাসকে সবরের মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―
«صَومُ شَهرِ الصَّبرِ، وثلاثةِ أيامٍ من كلِّ شَهرٍ صومُ الدهْرِ كُلِّه»
সবর মাস তথা রমযান মাসের রোযা এবং প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা পূর্ণ এক বছর রোযার সমতুল্য।[23]
বুঝা গেল রোযার মাধ্যমে ধৈর্যের গুণ অর্জন করা সহজ। তাই এখন থেকে আমরা সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং আইয়্যামে বীয-এর রোযার প্রতি যত্নবান হব, ইনশাআল্লাহ।
ধৈর্য অর্জনে মুজাহাদার প্রয়োজনীয়তা
ধৈর্যের জন্যে মুজাহাদা ও অনুশীলনের প্রয়োজন। ভালো কাজ করা, খারাপ কাজ ছেড়ে দেওয়া, দুঃখ-বেদনা ও মুসিবতের সময় এবং মানুষ কষ্টে আক্রান্ত হলে – সর্বক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন। অবশ্যই এ সমস্ত কাজে মানুষকে কষ্ট করতে হয়। কিন্তু ধৈর্যের পথ অবলম্বন করার স্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা তাকে সাহায্য করেন। অতঃপর সে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম পরিণতি লাভ করে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―
«ومَن يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللّٰهُ».
যে ব্যক্তি ধৈর্যের অনুশীলন করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যধারণের তৌফিক দিয়ে দেন।[24]
ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যে আল্লাহ তা‘আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা প্রয়োজন। কেননা, তিনি ধৈর্যদানকারী ও সাহায্যকারী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন―
﴿وَٱصۡبِرۡ وَمَا صَبۡرُكَ إِلَّا بِٱللّٰهِ ۚ﴾
অর্থ: “‘আর তুমি ধৈর্যধারণ কর। আল্লাহর ইচ্ছাই তোমার ধৈর্যধারণের শক্তি হবে।[25]
আল্লাহ তা‘আলা আপন জাতির প্রতি মুসা আলাইহিস সালাম-এর বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন—
﴿ٱسۡتَعِينُواْ بِٱللّٰهِ وَٱصۡبِرُوٓاْ ۖ﴾
তোমরা আল্লাহর সাহায্য কামনা কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।[26]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, ধৈর্যের গুণ এমনিতেই অর্জন হবে না; বরং তার জন্য চেষ্টা-সাধনা ও মুজাহাদা করতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তি অনুপাতে ধৈর্যের মাঝেও তারতম্য হয়ে থাকে।
ভাল মানুষের ধৈর্য ও মন্দ লোকের ধৈর্যের মাঝে পার্থক্য
ভালো ব্যক্তি ভালো বিষয়ে ধৈর্যধারণ করে আর মন্দ ব্যক্তি মন্দ বিষয়ে ধৈর্যধারণ করে। ভাল মানুষ আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যধারণ করে, আর মন্দ মানুষ শয়তানের আনুগত্যে ধৈর্য ধরে। মন্দ লোকেরা কুপ্রবৃত্তির পিছনে অধিক ধৈর্য ধরে। আর আল্লাহর আনুগত্যে খুব কম সময় ধৈর্য ধরে। তারা শয়তানের আনুগত্যে সবকিছু প্রচুর পরিমাণে খরচ করে। কিন্তু আল্লাহর পথে সামান্য বস্তুও খরচ করার উপর ধৈর্যধারণ করে না। নফসের চাহিদা পূরণ করতে অনেক কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনে কোনো কষ্ট করতে চায় না।
নেয়ামতের উপর ধৈর্যধারণ:
অনেকে মনে করে, ধৈর্য কষ্টদায়ক বিষয়ের সাথেই সংশিষ্ট। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যেভাবে কষ্টের ওপর ধৈর্য ধরতে হয়, ঠিক তেমনিভাবে নেয়ামত ও আনন্দদায়ক বিষয়ের ওপরও ধৈর্যধারণ করতে হয়। বরং এ ব্যাপারে ধৈর্যধারণ কষ্টের সময়ের ধৈর্যের চেয়ে বেশি কঠিন। আর এ কারণেই সত্যবাদীগণ এ গুণে গুণান্বিত হয় এবং অন্যরা এর থেকে গাফেল থাকে। কারণ নেয়ামতের উপর সবর করার বিষয়টি শক্তি সামর্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত। শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন―
والعبد مأمور بالصبر في السراء أعظم من الصبر في الضراء
মানুষের সুসময়ে ধৈর্যধারণ মুসিবতে ধৈর্যধারণের চেয়ে আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন―
﴿ وَلَئِنْ أَذَقْنَا الإِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوسٌ كَفُورٌ (9) وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ (10) إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولٰئِكَ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ (11)﴾
আমি মানুষকে অনুগ্রহ করার পর আবার তা ছিনিয়ে নিয়ে গেলে সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। আর মুসিবতের পর নেয়ামত প্রদান করলে সে বলে, আমা থেকে দূরাবস্থা চলে গেল। সে খুশি হয় এবং গর্ব করে। তবে যারা ধৈর্যধারণ করে এবং নেক আমল করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহান প্রতিদান।[27]
সুদিনে নেয়ামতের উপর ধৈর্যের দিকসমূহ:
১. নেয়ামতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হওয়া এবং তা পেয়ে ধোঁকায় না পড়া। গর্ব ও অহংকার না করা। অকৃতজ্ঞ না হওয়া এবং এমনভাবে খুশি না হওয়া, যা দেখে আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হন।
২. নেয়ামত অর্জনে সম্পূর্ণ ডুবে না পড়া। যার ফলে অন্যান্য দিকসমূহ থেকে গাফেল হয়ে হক ও বাতিলের পার্থক্য না করে তাতে ডুবে থাকা হয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলার হক আদায়ে ধৈর্যধারণ করা।
৪. হারাম কাজে তা খরচ করা থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখা। নিজের নাফসকে এমনভাবে প্রবৃত্তির পিছনে ছেড়ে না দেওয়া, যা তাকে হারাম পথে ধাবিত করে।
ধৈর্যের আদবসমূহ:
ধৈর্যধারণের কিছু আদব রয়েছে, যেমন-
১. মুসিবত আসার প্রথম ধাপেই ধৈর্যধারণ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:―
«إِنـَّمَا الصَّبْرُ عِنـْدَ الصَّـدْمَةِ الْأُوْلٰى (أو قال: عند أول صدمة)».
প্রথম আঘাতের ধৈর্যধারণই প্রকৃত ধৈর্যধারণ।[28]
২. মুসিবতের সময় ‘‘ইন্নালিল্লাহ’’ পড়া।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন―
﴿ٱلَّذِينَ إِذَا أَصَٰبَتۡهُمْ مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ﴾
অর্থ: “যখন তাদের ওপর মুসিবত আসে, তখন তারা বলে- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাব।[29]
উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন― কোনো মুসলিম মুসিবতে পড়লে যদি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ এবং নিম্নোক্ত দু‘আ পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ তাকে উত্তম বস্তু দান করবেন।
اَللّٰهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيْبَتِي، وَأَخْلِفْ لِيْ خَيْرًا مِنْهَا،
উম্মে সালামা রা. আরও বলেন, যখন আবু সালামা ইন্তেকাল করলেন, তখন আমি বললাম মুসলিমদের মাঝে আবু সালামার চেয়ে উত্তম আর কে-ই বা আছে? (মনের এই ভাবনা সত্ত্বেও আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শেখানো দু‘আ করলাম। ফলে অল্প সময়ের মাঝেই আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্ধারণ করলেন।
৩. মুসিবতের সময় জবান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির থাকা। তবে উঁচু আওয়াজ ও চিৎকার-চেঁচামেচি না করে কাঁদা বৈধ আছে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সকল ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক দান করুন।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করার তাওফীক দান করুক। আমাদের মুজাহিদ ভাইদেরকে সব জায়গায় কাফেরদের ওপর বিজয়ী হওয়ার তাওফীক দান করুন। সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে আ’মালের উন্নতি করার তাওফীক দান করুন। জিহাদ ও শাহাদাতের পথে ইখলাছের সাথে অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দান করুন। পরকালে আমাদেরকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।
প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের আজকের মজলিস এখানেই শেষ করছি। ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়া পড়ে নিই।
سبحانك اللهم وبحمدك،أشهدأن لاإله إلا أنت،أستغفرك وأتوب إليك
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين
وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين
***********
৩ আস-সবর ওয়াস সাওয়াব আলাইহ (ইবনে আবিদ-দুনিয়া): ২৩
৪ আস-সবর ওয়াস সাওয়াব আলাইহ (ইবনে আবীদ দুনিয়া): ২৪
১৩ তাখরীজ শরহুস সুন্নাহ (শুআইব আরনাউত): ১৪৩৫
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الفردوس للإنتاج الإعلامي
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল ফিরদাউস মিডিয়া ফাউন্ডেশন
In your dua remember your brothers of
Al Firdaws Media Foundation