অডিও ও ভিডিও [আন নাসর]আন-নাসর মিডিয়াবাংলা প্রকাশনাবাংলাদেশশাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো [পর্ব-০১] -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ || ভিডিও, অডিও, পিডিএফ ও ওয়ার্ড

আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর স্মৃতিচারণ
ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো
[পর্ব-০১]


-শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ

 

[বাংলা ডাবিং ভিডিও, অডিও, পিডিএফ ও ওয়ার্ড]


ভিডিও ফরম্যাট ডাউনলোড করুন
(১০৮০ ফরম্যাট, ৬৯২মেগাবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/C49d3sYdBCDJyjQ
https://archive.org/download/ayamfcorrection1080/Ayam_F_Correction_1080.mp4

ভিডিও ফরম্যাট ডাউনলোড করুন
(৭২০ ফরম্যাট, ১৬৩ মেগাবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/67q8rJo2HC79ePN
https://archive.org/download/ayamfcorrection1080/Ayam_F_Correction_720.mp4

ভিডিও ফরম্যাট ডাউনলোড করুন
(৪৮০ ফরম্যাট, ৫২.৯ মেগাবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/SbHyNtBS2qZNzKH
https://archive.org/download/ayamfcorrection1080/Ayam_F_Correction_480.mp4

অডিও ফরম্যাট ডাউনলোড করুন
(২২.৪ মেগাবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/sSwgNcobCD6wbbF
https://archive.org/download/ayamfcorrection1080/Ayam_F_Correction.mp3

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
(৪০২ কিলোবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/rprAddKnNrBtaXQ
https://archive.org/details/siti_charon_porbo1
https://archive.org/download/siti_charon_porbo1/siticharon%20porbo1.pdf

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
(১৭৫ কিলোবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/iX3ytARj9LpzCFo
https://archive.org/details/siticharonporbo1
https://archive.org/download/siticharonporbo1/siticharon%20porbo1.doc


ব্যানার ডাউনলোড করুন
(১৪.১ মেগাবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/TdxCfx6emYpg8HY

———————-

اپنی دعاؤں میں ہمیں یاد رکھيں
اداره النصر براۓ نشر و اشاعت
القاعدہ برِّ صغیر(بنگلادیش)

আপনাদের দোয়ায়
আন নাসর মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ (বাংলাদেশ শাখা)

In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]


ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর স্মৃতিচারণ

ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো

 

পর্ব-০

 

-শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ

 

———————————————————– 

অনুবাদ ও পরিবেশনা

بسمِ الله والحمدُ للهِ والصلاةُ والسلامُ على رسولِ الله وآلِه وصحبِه ومن والاه.

বিশ্বের আনাচে-কানাচে অবস্থানকারী আমার মুসলিম ভাইগণ! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

হামদ ও সালাতের পর-

সম্মানিত ভাইয়েরা আমাকে অনুরোধ করেছেন- মুজাহিদ, মুজাদ্দিদ, ইসলামের সিংহ, বীরপুরুষ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর সাথে আমার অতিবাহিত সময়গুলোর এবং তাঁর মানবিক দিকসমূহ নিয়ে কিছু স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা করার জন্য। কারণ, তাঁর এই উন্নত, মহৎ ও সুউচ্চ দিকটির ব্যাপারে অধিকাংশ মুসলিমরাই জানে না। তাছাড়া এ ব্যাপারে সেই ব্যক্তিই ভালো জানতে পারবেন, যার এই উন্নত চরিত্রের, চেতনাবান, উদারতা ও বদান্যতার অধিকারী সেই মহান ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে দীর্ঘ দিন সফরে ও বাসস্থানে এবং সুখে-দুঃখে এই মহান ব্যক্তির সাথে থাকার তাওফীক দান করেছেন। এ কারণে আমি তাঁর উন্নত গুণাবলী খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি তা থেকে কিছু স্মৃতি আমার ভাইদের নিকট তাদের চাহিদা অনুযায়ী উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। আর সম্মানিত ভাইদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি যে, এ ক্ষেত্রে আমার কথাগুলো হবে ধীরগতিতে। যার দ্বারা অন্তরসমূহ বিগলিত হবে। (ইনশা আল্লাহ)

মাশাআল্লাহ! শাইখ রহ. এর অনেক স্মৃতি রয়েছে। এমনিভাবে তার অগণিত ফায়দাও রয়েছে। আমি এ সম্পর্কিত কিছু বিষয় খাতায় লিপিবদ্ধ করেছিলাম। এই মুহূর্তে আমার যতটুকু স্মরণ আছে, সে অনুযায়ী আপনাদের সামনে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ। আশা করি, আল্লাহ তা‘আলা সহজ করে দিবেন। এই মহান ব্যক্তির আলোচনার ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে আমরা পরবর্তীতে আরো আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ।

যিনি শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর সাহচর্য পেয়েছেন, তিনি জানবেন যে, শাইখ খুবই বিশ্বস্ত একজন মানুষ ছিলেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁর সাথে আমাদেরকে রাখুন। তিনি সাথীদেরকে উত্তম উপদেশ দিতেন এবং তাদের ভালো দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতে ভালবাসতেন। শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. উত্তম চরিত্রের অধিকারী একজন ধৈর্যশীল ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নির্বোধ প্রকৃতির ছিলেন না এবং হুলস্থুলও করতেন না। যখন তিনি অনুভব করতেন, মুজাহিদগণ যুদ্ধের ময়দানে নির্যাতিত এবং অধিকারহারা, তখন তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়তেন। বিশেষকরে তাঁদের ব্যাপারে, যারা দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁর সাথে ছিলেন। যেমন শহীদ আবু উবাইদা বানশিরি রহ.। যিনি বর্তমান সময়ে যুদ্ধের ময়দানে পাহাড়তূল্য। শহীদ শাইখ আবু হাফস আল-মিসরি (রহ.)। যিনি কমান্ডার আবু হাফস কুমান্দান নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের ও সকল শুহাদাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। শাইখ উসামা রহ. অধিকাংশ সময় তাঁদের উত্তম আলোচনা করতেন এবং তাঁদের জন্য রহমতের দু‘আ করতেন।

আমার মনে পড়ে, আফগান জিহাদের সময় একদিন তিনি আমাকে বলেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জিহাদের ময়দানে আসার সৌভাগ্য দান করেছেন। যার ফলে আমি পরিচিত হতে পেরেছি শাইখ আবু উবাইদার মতো ব্যক্তির সাথে। আমার আরো মনে পড়ে, আফগানিস্তানে ক্রুসেডার আমরিকার যুদ্ধের সময় এই দুইজন বীর সিংহ পুরুষের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মিডিয়া দুর্নাম করেছিল। তখন তিনি আমাকে বলেছেন, এদেরকে যথাযথ উত্তর দিয়ে দিন, যারা আমাদের ভাইদের বদনাম করে। তারপর আমি আমার বিভিন্ন বয়ানে এবং আমার কিতাব فرسان تحت راية النبي নামক কিতাবের দ্বিতীয় সংস্করণে এই মহান ব্যক্তিগণের উত্তম চরিত্রের ব্যাপারে আলোকপাত করেছি।

এমনিভাবে শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. ইমামুল জিহাদ শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. এর কথা খুব স্মরণ করতেন এবং বলতেন, এই মহান ব্যক্তি বর্তমান যুগে জিহাদকে পুনর্জীবন দান করেছেন। তিনি আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. এর খুব প্রশংসা করতেন।

অনুরূপভাবে শাইখ উসামা রহ ৯/১১ এর ১৯ জন শুহাদাকে খুব মুহাব্বত ও জযবার সাথে স্মরণ করতেন। যারা যুগের হুবাল আমেরিকার সামরিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পেন্টাগন এবং তাদের অর্থনৈতিক গৌরব নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস করেছিলেন। আর তাদের চতুর্থ বিমানটি ছিল হোয়াইট হাউজ কিংবা কংগ্রেসমুখী। শাইখ উসামা রহ. এই ১৯ জন শুহাদার কথা খুব ভালোবাসার সাথেই স্মরণ করতেন। আপনারা জেনে রাখুন! শাইখ উসামা রহ. যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর তোরাবোরা পাহাড়ে সর্বপ্রথম এই ১৯ জন শুহাদার আলোচনা রেকর্ড করেছেন। আপনারা অবশ্যই দেখেছেন যে, তখন শাইখের চেহারা খুব ক্লান্ত ও মলিন ছিল। কারণ, তখন আমাদের অবস্থা এমন ছিলো যে, সেখানে কনকনে শীত, সীমিত খাবার, অল্প ঘুম ও সামান্য পানি বিদ্যমান ছিল। তাছাড়া পানির স্তর আমাদের অবস্থানস্থল থেকে প্রায় ৫০০ মিটার নিচে ছিল। তাও আবার প্রচন্ড ঠান্ডায় জমাট বাধা ছিল। এই কঠিন মুহূর্তে মুনাফিক দুশমনরা আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে রেখেছিল। আর ক্রুসেডাররা ওপর দিক থেকে বোমা বর্ষণ করছিল। এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়ও শাইখ উসামা রহ. সেই ১৯ জন বীর শুহাদার সাথে তাঁর অঙ্গীকার পূরণের কথাগুলো রেকর্ড করেছেন। অথচ তখন তাঁর এই কথা বলার সুযোগও ছিল যে, এই মুহূর্তে তিনি শহীদ হয়ে যেতে পারেন।(তাই আলোচনা রেকর্ড করবেন না।)কিন্তু না! তারপরেও তিনি সেই ১৯ জন ভাইয়ের আলোচনা রেকর্ড করবেনই। আমরা অন্য আলোচনায় তোরাবোরা পাহাড় এবং ঐ সময় সেখানে অবস্থানরত মুজাহিদ ভাইদের বীরত্ব ও দৃঢ়তা সম্পর্কে আলোকপাত করবো, ইনশা আল্লাহ।

আমার মুসলিম ভাইয়েরা! তোরাবোরার ঘটনার ব্যাপারটি আমরা আল্লাহর সোপর্দ করে দিলাম। তখন মুনাফিক বাহিনী আমাদেরকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছিল। অন্যদিকে ওপর দিক থেকে ন্যাটো বাহিনী বোমা বর্ষণ করছিল। আমরা যেখানে অবস্থান করছিলাম, দুশমন সেখানেও হামলা করেছিল। আর মুজাহিদ ভাইয়েরাও আমরণ লড়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল। সে সময় ক্রুসেডার সৈনিকদের কাপুরুষতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং তারা যেই শক্তির বড়াই করতো; তা ধূলিস্মাত হয়ে গিয়েছে। তাদের ভীরু সৈনিকরা ইসলামের মাত্র ৩০০ বীর সিংহের সাথে লড়াই করতে ভয় পেয়েছিল। মূলত: আল্লাহর ইচ্ছা এমনি ছিল যে, শাইখ উসামা রহ. নিরাপদে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়বেন এবং তিনি পুনরায় এই ক্রুসেডারদের সাথে বিশ্ব জিহাদের নেতৃত্ব দিবেন। পাশাপাশি ঈমানদাররাও যেন বুঝতে পারে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই একক ক্ষমতাবান। যিনি ইরশাদ করেছেন-

وَلَا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ إِن تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴿النساء: ١٠٤﴾

তাদের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করো না। যদি তোমরা আঘাত প্রাপ্ত, তবে তারাও তো তোমাদের মতই হয়েছে আঘাতপ্রাপ্ত এবং তোমরা আল্লাহর কাছে আশা কর, যা তারা আশা করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (৪: ১০৪)

সারকথা হলো: শাইখ উসামা রহ. এমন কঠিন সময়েও সেই ১৯ জন শুহাদার বয়ান রেকর্ড করার জন্যে দৃঢ় সংকল্প করেছেন এবং তাঁদের সহিত নিজের অঙ্গীকার পূরণের কথা প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধের পর শাইখ ‍উসামা রহ. তোরাবোরা থেকে সফলভাবে বের হয়ে সর্বপ্রথম যেই বয়ান রেকর্ড করেছেন, তাও ছিল এই ১৯ জন শুহাদা সম্পর্কিত। তাঁদের প্রত্যেকের আলোচনা শাইখ আলাদা আলাদা করেছেন।

এমনিভাবে শাইখ উসামা রহ. শাইখ আব্দুর রহমান কানেডি রহ.কেও অনেক ভালবাসতেন। তিনি আমাকে পত্রের মাধ্যমে শাইখ আব্দুর রহমান রহ. সম্পর্কে আলোচনা করতে বলেছেন। যাতে মানুষ তাঁর মর্যাদা ও মাকাম সম্পর্কে জানতে পারে। তাই আমি আমার এক বয়ানে তাঁর হিজরত, বদান্যতা ও উত্তম গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে প্রথম সারিতে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদাত বরণ করেছেন।

এমনিভাবে শাইখ ‍উসামা রহ. এর ইবনুশ শাইখ আল-লিবি রহ. এর সাথেও খুব অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। শাইখ উসামা রহ. আমাকে বলতেন, এই ব্যক্তি নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে। তোরাবোরায় যুদ্ধের নেতৃত্ব ছিল শাইখ আল-লিবি রহ. এর ওপর। যখন শাইখ উসামা রহ. এর ময়দানে সামরিক নেতৃত্বের বীরত্ব নিয়ে আলোচনা করবো, তখন আমরা এটাও আলোচনা করবো যে, কোন অবস্থায় এবং কীভাবে শাইখ উসামা রহ. শাইখ লিবি রহ. এর ওপর মুজাহিদদের সর্ববৃহৎ অংশকে তোরাবোরা থেকে পাকিস্তানে নিয়ে আসার গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। যখন ক্রুসেডাররা আক্রমণ করেছিল, অপরদিকে দুশমন চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছিল, ক্ষুধা-পিপাসায় সকলের কাতর অবস্থা এবং পুরা আফগানিস্তানে বিস্তৃত শত্রু বাহিনী; তখন শাইখ লিবি রহ. মুজাহিদদেরকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে পাকিস্তান সীমান্তে প্রবেশ করেছেন। সেখানে ক্রুসেডাররা তাঁদের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। তবে পাকিস্তানের কিছু লোক তাঁদের সাথে গাদ্দারি করেছে। যা খুবই প্রসিদ্ধ ঘটনা। পাকিস্তানের প্রশাসন তাঁকে কোহাট জেলে বন্দী করে। সে সময় শাইখ লিবি রহ. এর সাথে মুজাহিদদের খরচের জন্য অনেক টাকা ছিল। পাকিস্তান প্রশাসন তাকে প্রস্তাব দিল, এই অর্থের বিনিময়ে তারা শাইখকে ছেড়ে দিবে এবং তাঁর নামও গোপন রাখবে। যেন তার নামে কোন মোকদ্দমাই হয়নি। তখন লিবিয়ার সেই শাহসাওয়ার যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তা আজো মুসলিম যুবকদের জন্যে; বিশেষত: লিবিয়ার যুবকদের জন্যে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যাদের বিজয় হবে ইসলামের বিজয়। তাদের মধ্য হতে এক লিবির অবর্তমানে লক্ষ লিবি বের হবে। যখন পাকিস্তান অফিসাররা তাঁকে এই প্রস্তাব দিল, তখন তিনি বলেছেন, আমি আমার সাথী ভাইদেরকে কখনো ছেড়ে যাবো না। বরং তোমাদেরকে এই টাকার সাথে আরো বাড়িয়ে দিবো। বিনিময়ে তোমরা আমাদের সবাইকে ছেড়ে দাও। পাকিস্তান প্রশাসন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। ফলে শাইখ রহ. সাথীদের সাথে বন্দী জীবন কাটাতে লাগলেন। অতঃপর বেইমান গাদ্দাফী প্রশাসন তাঁকে শহীদ করে দেয়। ইনশা আল্লাহ, সেই দিন বেশি দূরে নয়; যেদিন লিবিয়ার আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন, ইসলাম ও রাসূলপ্রেমী সম্মানিত মুজাহিদ ভাইয়েরা গাদ্দাফী থেকে এবং ন্যাটো থেকে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। যারা তাঁকে বন্দী করেছে এবং গাদ্দাফীর হাতে সোপর্দ করে দিয়েছে। শাইখ উসামা রহ. বলতেন, এই ব্যক্তি নিজেকে জিহাদে সঁপে দিয়েছে।

শাইখ উসামা রহ. আমার কাছে চিঠি পাঠাতেন। তাতে শাইখ মুস্তফা আবুল ইয়াযিদ রহ. এর কথা উল্লেখ করতেন। শাইখ উসামা রহ. আমাকে বলতেন, ইনি আমাদের স্বার্থে তাঁর নিজেকে এবং তাঁর খান্দানকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তিনি মুজাহিদ ভাইদের অবস্থা দেখাশুনা করতেন এবং তাদের মধ্যকার যোগাযোগের ব্যবস্থা করতেন। আনসার ও মুহাজির ভাইদের যে কোনো সমস্যার সমাধান করতেন। বরং তিনি তাঁদের সকলের জন্য একজন হৃদয়বান পিতৃতুল্য মানুষ ছিলেন। এই সব কিছুর বিনিময়ে শাইখ রহ. ও তাঁর পরিবারকে ন্যাটো গোয়েন্দারা শহীদ করে দিয়েছে। তাদের হাত থেকে শাইখ মুস্তফা আবুল ইয়াযিদ রহ. এর ছোট মাসুম বাচ্চারা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। যাদেরকে শাইখ আপন তত্ত্বাবধানে হাফেজে কুরআন বানিয়েছেন। এই সব হলো সেই মহামানবের গুণাবলী; যিনি তাঁর অঙ্গীকার সত্যরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আমার মুসলিম ভাইয়েরা! এই মজলিসে আমার আরো স্মরণ আসছে, শাইখ উসামা রহ. এমন একজন সিংহ পুরুষ ছিলেন, আমেরিকার মানুষ স্বপ্নের মাঝেও শাইখ উসামা রহ. বুশকে হুমকি দিচ্ছেন, এমন কিছু দেখে আঁতকে উঠতো। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারটি জানতো না যে, শাইখ উসামা রহ. ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী, ধৈর্যশীল এবং লাজুক প্রকৃতির। তাঁর মাঝে পূর্ণমাত্রায় ছিল উত্তম চরিত্রের গুণাবলী। যারা তাঁর সাথে উঠাবসা করেছেন, তারা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে, শাইখ রহ. কেমন উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন! উদাহরণস্বরূপ: আমার সাথে শাইখ উসামা রহ. এর একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। যা থেকে তাঁর নরম তবিয়ত তথা কোমল স্বভাব স্পষ্টত: বুঝে আসে।

ঘটনাটি হলো: তখন আমরা তোরাবোরায় অবস্থান করছিলাম। আমার নিকট আমার স্ত্রীর শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছল। আল্লাহ তাঁদের প্রতি এবং তাঁদের সাথে যারা শহীদ হয়েছেন, সব ভাইদের প্রতি রহম করুন! এই সংবাদ যিনি নিয়ে এসেছিলেন; তিনি আমাদেরই একজন ভাই ছিলেন। শাইখ উসামা রহ. চেয়েছিলেন, সে যেন আমার সাথে কথা না বলে। কিছুক্ষণ পর যখন ফজরের নামাজের সময় হলো, তখন শাইখ আমাকে ইমামতি করতে বললেন। নামাজের পর আমরা যিকির-আযকারে মশগুল ছিলাম। আমি দেখছিলাম, নামাজের পর ভাইয়েরা একের পর এক সেখান থেকে উঠে যাচ্ছে। আমি আমার জায়গায় বসা ছিলাম। তারপর সেই ভাই আমার কাছে আসলেন। পরস্পর সালাম বিনিময় হলো। তিনি আমাকে আমার স্ত্রীর শাহাদাতের সংবাদ শোনালেন। আমাকে জানালেন, আমার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে এবং আমাদের আরো তিনজন ভাই তাঁদের সন্তানসহ শাহাদাত বরণ করেছেন। আমি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লাম এবং আল্লাহর নিকট সবর ও আজরের দু‘আ করলাম। ঠিক তখনি শাইখ ‍উসামা রহ. এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, একেবারে অশ্রুসজল অবস্থায়। তারপর এক এক করে সাথীরা আমার কাছে আসছিল, আর আমাকে শান্তনা দিচ্ছিল। আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমরা এখান থেকে অপর এক স্থানে চলে যাবো। এ সময় শাইখ উসামা রহ.ও আমাদের সাথে ছিলেন। আমরা প্রায় ত্রিশ জনের ওপরে ছিলাম। শাইখ উসামা রহ. ভাইদের এক বৃহৎ অংশকে অন্য কোথাও চলে যেতে বললেন । আর আমার উদ্দেশ্যে বললেন, আমি, তুমি ও আরো কিছু ভাই এখানে থাকবো। আমি বললাম, আমরা এখান থেকে চলে যাই। সফর তো মানুষের দুঃখ-কষ্ট মুছে দেয়। পরে অবশ্য শাইখের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানেই থেকে গেলাম। এমনকি আমার অন্তর থেকে দুঃখ-বেদনাও দূর হয়ে গেল। আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ  করলাম- তিনি যেন আমাদের পরিবারকে উত্তম প্রতিদান দান করেন এবং তাঁদের থেকে আমাদের মাহরুম না করেন। আমাদেরকে শাহাদাতের মৃত্যু দান করেন, মুসলমানের মৃত্যু নসীব করেন। তারপর আমি যখনি আমার ছেলে মুহাম্মাদের কথা শাইখ উসামা রহ. এর কাছে বলতাম, তখনি তাঁর চোখে অশ্রু এসে যেতো। আমি তাঁর চোখে অশ্রু দেখতাম!

আরেকটি ঘটনা: যা আমার স্মরণ হয়েছে। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি হলেন একমাত্র ব্যক্তি; যিনি আমাকে সর্বপ্রথম আমার মায়ের ব্যাপারে শান্তনা দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করুন! আমাদেরকে মুসলমানের মৃত্যু নসীব করুন! শাইখ উসামা রহ. আমার কাছে একটি পত্র লিখে আমাকে খুব শান্তনা দিলেন। আমি তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করে বললাম, শাইখ আপনি আমার আগেই আমার মায়ের শাহাদাতের সংবাদ জেনেছেন! আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!

অন্য আরেকটি ঘটনা: যা আমার মনে পড়ছে। তা হলো: যারা শাইখ উসামা রহ. এর নৈকট্য লাভ করেছেন; তারা জানবেন যে, তিনি খুবই কোমল প্রকৃতির লোক ছিলেন। অল্পতেই কেঁদে ফেলতেন। যখনি তিনি ভাষণ দিতেন, খুব কাঁদতেন। একবার তিনি আমাকে বললেন, অনেকে আমাকে বলে থাকে, শাইখ আপনি আলোচনা শুরু করার আগেই কেঁদে ফেলেন! আপনি চাইলে আরেকটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তখন তিনি এ বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে আলাপ করলেন। তিনি বললেন, আমি এখন কি করতে পারি? আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! শাইখ, এটা তো আপনার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। যা আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে দান করেছেন।

শাইখ উসামা রহ. এর কোমলতার আরেকটি ঘটনা: যা আমি নিজ চোখে শাইখ উসামা রহ. এর মাঝে দেখেছি। তা হলো: আমরা একবার দক্ষিণ কাবুলে আইনাক প্রশিক্ষণ শিবিরে ছিলাম। শাইখ উসামা রহ তখন সেখানে অবস্থান করছিলেন, আর তাঁর সাথে আমিও ছিলাম। কয়েকজন ভাই এসে আমাদের সাথে বসলেন। তখন শাইখ ফিলিস্তিন ও গাজা সম্পর্কে বয়ান করলেন। যেখানে তাদের সাহায্যের কথা বলেছেন। হয়তো এগুলো তাঁর সেই কথাগুলোই; যা তিনি প্রায়ই বলতেন, হে আমার ফিলিস্তিনের ভাইয়েরা! নিশ্চয় তোমাদের রক্ত আমাদেরই রক্ত। তোমাদের সন্তানদের রক্ত আমাদের সন্তানদেরই রক্ত। তাই খুনের বদলা খুনই এবং ধ্বংসের বদলা হবে ধ্বংসই।” ফিলিস্তিনের প্রতি শাইখের ভালোবাসা একটি স্বতন্ত্র আলোচনা। আমরা এটা পরে আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ। তো এই আগত ভাইদের একজন বললেন, আমরা খবরে দেখেছি, ফিলিস্তিনের মহিলারা হাতে পেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ করছেতাতে লেখা আছে, ‘আমরা উসামার ওয়াদা পূরণের অপেক্ষায় আছি।’ এ রকম আরো কিছু কথা। শুনে তিনি চুপ রইলেন, কিন্তু ভীষণ প্রভাবিত হলেন। তারপর আমরা ইশার নামাজের প্রস্তুতি নিলাম। নামাজের জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরের মসজিদে গেলাম। ৭ : ৫৬ মিনিটে ফরয নামাজের পর শাইখ উসামা রহ. মসজিদের এক কোণে গিয়ে সুন্নাত আদায় করছিলেন; আর আমি তাঁর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। নামাজের আগে তাঁর শুনা ফিলিস্তিনের খবরটিই ছিল এই কান্নার কারণ!ফিলিস্তিনের মহিলারা হাতে পেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ করছে। তাতে লেখা আছে, আমরা উসামার ওয়াদা পূরণের অপেক্ষায় আছি।আমার বিশ্বাস, তিনি তা পূরণ করেছেন। আল্লাহ তাঁর ওপর, আমাদের ওপর, সকল মুসলমানের ওপর তাঁরই রহমতের বারিধারা বর্ষণ করুক! (আল্লাহুম্মা আমীন)

শাইখ উসামা রহ. এর জীবনের একটি সুন্দরতম দিক হলো, তাঁর সন্তানদের সাথে সম্পর্ক। যিনিই শাইখের কাছে গিয়েছেন; তিনিই তাঁর সন্তানদের মাঝে নম্রতা-ভদ্রতা, উত্তম চরিত্র অবলোকন করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর, আমাদের ও সকল মুসলিমদের সন্তানদের হেফাযত করুন। তিনি অত্যন্ত ধনী ছিলেন। তাঁর অনেক ধন-সম্পদ ছিল। তবুও তাঁর সন্তানরা মেহমানদের খেদমত করতো। তাঁদের হাত ধুয়ে দিতো, খাবার এগিয়ে দিতো এবং তাঁদেরকে তাঁদের স্বস্থানে পৌঁছিয়ে দিতো। মানুষের মুখে শুনতাম, মাশাআল্লাহ! কত সুন্দর শিষ্টাচার! যা শাইখ উসামা রহ. নিজ সন্তানদের শিক্ষা দিয়েছেন। সব সময় এদিক সেদিক যাওয়া সত্ত্বেও; তিনি তাঁর সন্তানদের আদবের প্রতি ও পড়া-লেখার ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। সর্বপ্রথম তিনি এই ব্যাপারে মনযোগী ছিলেন, তাঁর সন্তানরা হাফেযে কুরআন হবে। আমার ধারণা তাদের অনেকেই কুরআনের অনেকাংশ হিফয করেছে। হতে পারে আমার জানা নেই যে, তাদের অনেকেই সম্পূর্ণ কুরআন হিফয করেছে। আল্লাহ যেন সকল মুসলিম সন্তানদেরকে সেই তাওফীক দান করেন। (আল্লাহুম্মা আমীন)

শাইখ রহ. এর তালীম-তায়াল্লুমের পাশাপাশি ব্যক্তিগত আগ্রহ-উদ্দীপনা ছিল অনেক বেশি। যার কিছু আমি  فرسان تحت راية النبي এর দ্বিতীয় সংস্করণে উল্লেখ করেছি। সেখানে তাঁর তালীম ও দাওয়াতের প্রতি আগ্রহ পূর্ণাঙ্গরূপে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি তাঁর সন্তানদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য একজন বিশেষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন।

আমার মুসলিম ভাইয়েরা! আমি এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে তাঁর (সেই শিক্ষকের) সামান্য বিবরণ দিবো। তিনি কোনো সাধারণ আলেম ছিলেন না; বরং তৎকালীন শ্রেষ্ঠ উলামাদের মাঝে অন্যতম একজন আলেম ছিলেন। তিনি আরবী ভাষা, কেরাত ও রসমুল মুসহাফ সম্পর্কে খুবই প্রাজ্ঞ ছিলেন। অনেক ভাই এর থেকে উপকার হাসিল করেছে। আমি নিজেও তা থেকে উপকৃত হয়েছি। আমি তাঁর চরিত্রের ওপর আমার কিতাব আত-তাবরিয়ার মধ্যে কিছু আলোচনা করেছি। ইনি শুধুমাত্র একজন শিক্ষকই নন, বরং আল্লাহর রাস্তায় হিজরত ও জিহাদকারী। তিনি উসামা বিন লাদেন রহ. এর মত একজন ঘোড়সাওয়ার ছিলেন। আরবের এক গ্রামে তাঁর ঘোড়াটি ছিল, যা শাইখ উসামা রহ. তাঁর আস্তাবলে নিয়ে এসেছিলেন। এ সম্পর্কে লম্বা ঘটনা আছে। আরবের সেই গ্রামটি খুবই বরকতময়। যা আমি আগে আর কখনো দেখিনি। ইনশা আল্লাহ, তা নিয়ে পরে আলোচনা করবো। সেখানে আমি যেই দিনটি অতিবাহিত করেছি, এমন সুখময় দিন আমি আর কোথাও কাটাইনি। আমরা এই শিক্ষকের কাছে তাঁর সোহবত নেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। তিনি নিজ হাতে আমাদেরকে খাবার পরিবেশন করেছেন। আমরা তাঁকে বলেছিলাম, আপনি আমাদের উস্তায! এটা  আপনার জন্য কখনো শোভা পায় না।

আমার মনে পড়ে- আমি যখন উনাকে আরবী ভাষা এবং উলুমুল কুরআন এর দরসের কথা বললাম, তখন তিনি বলেছেন, সর্বপ্রথম আমরা কিতাবুল্লাহর তিলাওয়াত শুদ্ধ করার দ্বারা দরস শুরু করবো। এরপর আমরা আরবী ভাষা নিয়ে আলোচনা করবো। আমি আমার কিতাব আত-তাবরিয়ার মধ্যে এই আলোচনা করেছি, তিনি প্রথমে আমাকে দিয়ে ইলমুত তাজবীদের ওপর মধ্যম স্তরের একটি মুকাদ্দামা লিখিয়েছেন। এরপরই আমরা নাজমে যাজরী পড়তে শুরু করলাম।

মাশাআল্লাহ! তিনি ইলমের সাগর ছিলেন। তিনি আমাদেরকে খুব সুন্দর ও সহজভাবে শিখাতেন। গ্রামের মাসজিদে উনাকে দেখা যেতো, তিনি খুব সহজেই তাজবীদ শিক্ষা দিচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ: ইখফা ও ইদগামের আলোচনায় তিনি কোনো একটা জিনিস হাতে নিয়ে কাপড়ের ভেতর লুকিয়ে বলতেন, দেখো! এটা ইখফা হয়ে গেছে। আবার অন্য একটি জিনিস দেখিয়ে বলতেন, দেখো! এটা ইদগাম হয়ে গেছে। যার কোনো আলামত আর বাকি নেই। এভাবে তিনি সব কিছু বুঝিয়ে দিতেন।

আমি যখন তাঁর সামনে আল-জারিয়ার দরস নিচ্ছিলাম। তখন আমার সাথে কখনো কখনো আবু হাফস ও শাইখ আবু উবায়দা মৌরতানী শহীদ রহ. থাকতেন।

সেই সময়ে মাঝে মাঝে তিনি আমাদের সাথে বেরিয়ে বাজারে আসতেন এবং ফল কিনে দিতেন। তখন আমরা বলতাম, আপনি এটা কি করছেন? উস্তাদ! এটা তো আমাদের দায়িত্ব। তখন তিনি বলতেন, না, এটা তোমার জন্য না। এটা তোমার বেটা মুহাম্মাদের জন্য। এটা ফিরিয়ে দিও না। একবার তিনি আমাকে মাছ কিনে দিলে আমি বললাম, এটা আমার দায়িত্ব। তিনি বলতেন, না, এটা তোমার না, মুহাম্মাদের জন্যে; ফিরিয়ে দিও না। তিনি ছিলেন এমনি একজন পুণ্যাত্মা আলেম। যিনি শাইখ উসামা রহ. এর সন্তানদেরকে কুরআন পড়াতেন। তাঁর ছাত্রত্বের সৌভাগ্য আমিও হাসিল করেছি। (আলহামদুলিল্লাহ)

পাঠদানকালে তিনি শাইখ উসামা রহ. এর সন্তানদের সাথে রাগ করে কথা বলতেন। একবার তিনি উসামা রহ. এর এক সন্তানকে বললেন, এই ছেলে! তোমার সাথে কথা বলা ঠিক হবে না, কথা হবে তোমার আব্বুর সাথে। তোমার সাথে লাঠির ভাষায় কথা হবে। তারা চুপ করে বসে থাকতো। শিক্ষকের দিকে চোখ তুলে তাকাতো না। তারা ভয় ও নম্রতার কারণে নিজেদের চোখ নামিয়ে রাখতো। কারণ, তারা তাদের আব্বুর কাছে উত্তম আদবের শিক্ষাই পেয়েছে। মাঝে মাঝে তিনি মসজিদে ইসলামে বাচ্চাদের শিষ্টাচারের পাঠ শিক্ষা দিতেন এবং এই আলোচনার ওপর তারবিয়াতুল আবনা ফিল ইসলাম নামের কিতাব মুতালা‘আ করতেন। (সেই শিক্ষকের সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ হলো)

আমি জানি শাইখের সন্তানরা তাঁর ব্যক্তিত্বের সাথে সর্বক্ষেত্রেই সম্পর্ক ও মিল রাখে। খুব কাছ থেকেই আমি তা দেখেছি। শাইখের পাশে তাঁর সন্তানরা এমনভাবে ঘিরে থাকতো, যেভাবে সিংহকে সিংহ শাবকরা ঘিরে থাকে। ইনশাআল্লাহ! এমন কিছু স্মৃতিকথা নিয়ে পরে আলোচনা হবে। শাইখের স্মৃতি তো অনেক রয়েছে। আজ শাইখ ও তাঁর সন্তানদের মাঝের স্মৃতিময় দু’টি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবো।

ঘটনা-১. প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল জালালাবাদে। যখন মুনাফিকরা জালালাবাদ দখল শুরু করল। তখন আমরা তোরাবোরা পাহাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। শাইখ ‍উসামা রহ. এর সাথে তাঁর আদরের ছোট তিন বাচ্চা ছিল। তাদের একজন হলেন খালেদ (রহ.)। যিনি শাইখের সাথেই শাহাদাতের সুমিষ্ট স্বাদ আস্বাদন করেছিলেন। তাঁর সন্তানদের মাঝে খালেদই ছিল তুলনামূলক বড়। আমরা ওখান থেকে বের হয়ে তোরাবোরায় মাগরিব পড়ার ইচ্ছে করলাম। আসর ও মাগরিবের মাঝামাঝি সময়; এক সাথী শাইখের বাচ্চাদের নিয়ে এলেন। তারা আপন পিতাকে সালাম করল। শাইখ ঐ ভাইকে দায়িত্ব দিলেন, যেন প্রথমে বাচ্চাদেরকে কোন নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাদেরকে নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়। আমি দূর থেকে এ দৃশ্যই দেখছিলাম, একজন পিতা নিজের ছোট তিন বাচ্চাকে আল-বিদা বলছে! তাঁর জানা নেই, পুনরায় কবে আবার তাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে? এই দুনিয়ায় কি সাক্ষাৎ হবে? আর না জানা আছে এ কি প্রথম বিদায়; না শেষ বিদায়?! আমি শাইখকে বিদায় দিতে দেখেছি। দেখেছি সালামের পর তিনি তাঁদের বুঝাচ্ছেন, তোমরা এই চাচ্চুর সাথে যাও; তিনি তোমাদেরকে ঘরে পৌঁছিয়ে দিবেন। বড় ছেলেটির চোখে অশ্রু ঝরঝর করছিল। শাইখ নিজেও ছিলেন আবেগাপ্লুত। শাইখের ছোট ছেলে বলল ‘‘আব্বু! আমি কাবুলে ব্যাগ ফেলে এসেছি। আমি ব্যাগ কোথায় পাবো?” তাঁকে কে বুঝাবে? কাবুল তখন শত্রুদের দখলে। শাইখ বললেন ‘‘কোন সমস্যা নেই আব্বু! তোমার চাচ্চু ব্যাগ এনে দিবেন।” তারপর তাঁরা আলাদা হয়ে গেল। খুবই করুণ ছিল সেই দৃশ্য। পিতা ও তাঁর ছেলেরা আলাদা হয়ে যাচ্ছেন। অথচ কেউ জানে না, আবার কবে, কখন, কোথায়, কিভাবে তাদের সাক্ষাৎ হবে?!

ঘটনা-২. এমনি আরেকটি ঘটনা। যার ফলে আমার অন্তরে তাঁর ভালবাসা গেঁথে গেছে। এটি ঐ সময়ের কথা; যখন আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তন হচ্ছিলাম। তাঁর কোনো এক সন্তান আমাদের সাথে ছিল। আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে রাতের আঁধারে গাড়িতে আরোহণ করলাম। এক জায়গায় গাড়ি থামল। সেখানে শাইখের সন্তানকে তাঁর রাহবারের সাথে নিচে নামানো হলো। তাঁরা ও আমরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। তাকে বিদায় দেয়ার জন্য শাইখ নিচে নামলেন। তারা কেউ জানে না, দ্বিতীয় বার দেখা হবে কিনা? আমরা দেখছিলাম, এই মুহূর্তে তিনি তাঁর সন্তানকে কী বলেন? তিনি বলেছিলেন, বেটা! শপথ কর, ‘‘জিহাদের রাস্তা কখনও ছাড়বে না।এই মুহূর্তটি আমি কখনও ভুলবো না।

আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তা‘আলা তাওফীক দিলে পুনরায় শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহ.) এর জীবনীর উপর আলোচনা করবো।

وآخر دعوانا أنِ الحمدُ للهِ ربِ العالمين، وصلى اللهُ  على سيدِنا محمدٍ وآلِه وصحبِه وسلم.

والسلامُ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه

 

 

****************************

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + ten =

Back to top button