ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো || পর্ব-০৫ || শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
مؤسسة النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Mediaتـُــقدم
পরিবেশিত
Presents
الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translationبعنوان:
শিরোনাম:
Titled: ذكريات للإمام المجاهد الشيخ أسامة بن لادن رحمه الله
أيام مع الإمام
الحلقة الخامسة
للشيخ أيمن الظواهري حفظه اللهইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহিমাহুল্লাহ) এর স্মৃতিচারণ
ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো
(পর্ব-০৫)
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
Commemoration of Imamul Mujahideen Sheikh Usama bin Laden Rahimahullah
Days with the Imam
(part-5)
By Sheikh Ayman al-Zawahiri (May Allah Protect Him)
للمشاهدة المباشرة والتحميل
সরাসরি দেখুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Viewing and Downloading
https://mediagram.me/939a218985645528
https://justpaste.it/77wwc
روابط الجودة الاصلية
FULL HD 1080 (715 MB)
মূল রেজুলেশন [৭১৫ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/gYfHQnJprkarsPP
https://www.mediafire.com/file/lgme48bpht1q4xz/Ayam_05_1080_HQ.mp4/file
روابط الجودة العالية
HQ 1080 (205 MB)
১০৮০ রেজুলেশন [২০৫ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/pinqJeAHaBMnCTp
https://www.mediafire.com/file/qrrv0eoxcgefpmt/Ayam_05_1080_%5B205%5D.mp4/file
روابط الجودة المتوسطة
MQ 720 (151 MB)
৭২০ রেজুলেশন [১৫১ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/WxyefGgNEA5g4f6
https://www.mediafire.com/file/nuw6p9q9jgnhet3/Ayam_05_720_%5B150%5D.mp4/file
روابط الجودة المنخفضة
LQ 360 (96 MB)
৩৬০ রেজুলেশন [৯৬ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/XDnLYFkgpCfa57D
https://www.mediafire.com/file/akpzymq2rwnhrw1/Ayam_05_360_%5B96%5D.mp4/file
روابط جودة الجوال
Mobile Qoality (58 MB)
3GP রেজুলেশন [৫৮ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/3y3d6PQC7KmzQbb
https://www.mediafire.com/file/ye7x1y3p4nm31yz/Ayam_05_3gp.mp4/file
روابط صوتية
MP3 (24MB)
অডিও ডাউনলোড করুন [২৪ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/dREEeggz6brbfBJ
https://www.mediafire.com/file/i8bvnh6blhyuo6s/Ayam_05_.mp3/file
روابط بي دي اب
PDF (852KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৮৫২ কিলোবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/T6F6NBZKfNNCKTZ
https://www.mediafire.com/file/z8kbtjppuvenwh9/ImamerSatheDinguli_-_5.pdf/file
روابط ورد
Word (0.99MB)
ওয়ার্ড [০.৯৯ মেগাবাইট]
https://banglafiles.net/index.php/s/H7TjzJzRWefYWcn
https://www.mediafire.com/file/k81iv1adf8jx6a7/ImamerSatheDinguli_-_5.docx/file
Banner (3.3 MB)
https://banglafiles.net/index.php/s/KQAaRgfrx3DJ6mS
——————–
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]
ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর স্মৃতিচারণ
ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো
পর্ব–০৫
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
অনুবাদ ও পরিবেশনা
بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وصحبه ومن والاه
বিশ্বের সর্বত্র অবস্থানরত মুসলিম ভাইয়েরা!
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। পরসমাচার-
এটি ’أيام مع الإمام’ (ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো)-এর ৫ম পর্ব। এই পর্বে আমি ইমামুল জিহাদ, মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহু-এর সাথে অতিবাহিত দিনগুলোর কিছু উত্তম স্মৃতিচারণ করব। আল্লাহ তাঁর ওপর রহমতের বারিধারা বর্ষণ করুন এবং আমাদেরকেও তাঁর সাথে উত্তমভাবে মিলিত হওয়ার তাওফিক দান করুন।
গত পর্বের শুরুতে তোরাবোরার স্মৃতি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম এবং বলেছিলাম এই পর্ব আমরা বন্ধু ও শত্রুদের আলোচনা দিয়েই আরম্ভ করব। গত পর্বে আমাদের বন্ধু, মিত্র ও সাহায্যকারী ইউনুস খালেস রহিমাহুল্লাহু-এর কথা উল্লেখ করেছিলাম। স্মরণ করেছিলাম শহীদ কমান্ডার মুয়াল্লিম আওয়াল গুল রহিমাহুল্লাহু-এর কথাও। আরো স্মরণ করছিলাম ক্বারি আব্দুল আওয়াল রহিমাহুল্লাহু-এর কথা।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই। তা হলো, আমি শহীদদের নিয়ে আলোচনা করব। আর জীবিতদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমার আশঙ্কার কারণে তাদের আলোচনা আপাতত করছি না। যেহেতু এখনো যুদ্ধের তীব্রতা কমেনি এবং শত্রুরাও তথ্য সংগ্রহের জন্য অধীর অপেক্ষায় বসে আছে। অথচ এই জীবিত মুজাহিদ ভাইদের কাছে আমরা চির ঋণী। আমাদের প্রতি তাদের অনেক অবদান রয়েছে। যা কখনো ভুলা সম্ভব না। আমরা যেন তাদের উপকার ও অবদানের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য কিছু করতে পারি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সেই তাওফিক দান করুন, আমিন।
আমরা যদি তাদের সেই প্রতিদান পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হই, তাহলে আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের পক্ষ থেকে তা পৌঁছে দেন। তাদের প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ মূল্যায়ন, অগাধ ভালোবাসা, যথাযথ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা রয়েছে। ইনশাআল্লাহ অচিরেই এমন দিন আসবে, যেদিন আমরা তাদের স্মৃতিচারণ করতে পারব। তাদের শ্রেষ্ঠত্ব এবং সকল জিহাদি সংগঠন ও মুজাহিদদের প্রতি তাদের অবদানগুলো বর্ণনা করতে পারব।
এই পর্ব রেকর্ডের পূর্বে আমি এক ভাইয়ের সাথে তোরাবোরার অবরোধ নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন তিনি আমাকে সিরিয়ার হোমসে আমাদের মুসলিম জনগণের ওপর অবরোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। কীভাবে জাতিসংঘ তাদেরকে ধোঁকা দিয়েছিল, সেই আলোচনা করলেন! এই দূষিত-দুষ্কর্মা সংগঠনটিকে নিয়ন্ত্রণ করে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ পাঁচ অপরাধী। এদের লক্ষ্য হলো, বিশ্ববাসীকে ধোঁকা দেওয়া এবং এই মিথ্যা কথাটি বোঝানো যে, এখানে প্রত্যেক মানুষের অধিকার ও স্বার্থ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানে কেবল এই পাঁচ অপরাধীর অধিকার রয়েছে। এরা ঘোষণা দেয় এবং দাবি করে যে, আমরা প্রতিটি মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন করি। কিন্তু আসলে এরা ধোঁকা দিচ্ছে। যা আমি ইতিপূর্বে আমার ‘فرسان تحت راية النبي’ নামক কিতাবের দ্বিতীয় সংস্করণে উল্লেখ করেছি।
আমি সেখানে বলেছিলাম, এই দুষ্কর্মারা বলে যে, ধর্ম, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান। কারো মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, এ কথার মধ্য দিয়ে তারা দুটি প্রধান বিভাজনকে গোপন করে। আর এই দুটি বিভাজনের মাধ্যমে তারা মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে থাকে—
প্রথমটি হচ্ছে দেশ ও জাতীয়তা ভিত্তিক বিভাজন: এই পদ্ধতি অনুসরণ করে তারা কেবল একটি জাতির মাঝে বিভেদ তৈরি করে। যেখানে আমরা সমগ্রটাই একটা জাতি, একটা উম্মাহ – সেখানে তারা এটা মিশরীয়, এটা ভারতীয়, এটা পাকিস্তানী বলে বিভাজন করে। আর এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, উম্মতে মুসলিমাকে ৫০টিরও বেশি রাষ্ট্রে ভাগ করা। অথচ একটা সময় আমরা ছিলাম একটি মাত্র রাষ্ট্রের অধীনে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে ক্ষমতাভিত্তিক বৈষম্য: এর কথা তারা কখনোই বলে না। তারা কথা বলে গণতন্ত্রের, সাম্য ও নিরপেক্ষতার। তাদের এই সবগুলোই নকল ও ভেজাল মিশ্রিত। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, এই শক্তি ও ক্ষমতার মাধ্যমে তারা মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে থাকে। এভাবেই এই পাঁচটি শক্তি সারা পৃথিবীকে শাসন করছে এবং অবশিষ্ট দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষদের ওপর দাপট দেখাচ্ছে।
নোংরা এই সংস্থাটি (জাতিসংঘ) আমাদের হোমসের জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে এবং অবরোধ থেকে বের করে এনে তাদেরকে বর্বর বাশার আল-আসাদের জেলে প্রেরণ করেছে। তোরাবোরাতে আমাদেরকেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমাদেরকে বলা হয়েছিল, যেন আমরা তোরাবোরা থেকে বেরিয়ে আসি এবং জাতিসংঘের কাছে আত্মসমর্পণ করি। সামনে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহে আমরা তা অস্বীকার করে বলেছিলাম, “হয়তো আমরা নিজেরা জীবিত বের হবো, নয়তো মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করে যাব।”
যাহোক, পুনরায় তোরাবোরার আলোচনায় ফিরে যাচ্ছি। আজ এমন একজন শহীদ, বীর মুজাহিদের আলোচনা করব, যিনি তোরাবোরায় আমাদেরকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছিলেন। তিনি হলেন, বীর শহীদ মৌলভী নূর মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহু। তিনি ছিলেন ইসলামের একজন সিংহ-পুরুষ। যিনি অনেক প্রতিকূল ও কঠিন সময়ে আমাদেরকে তার সর্বোচ্চ সহায়তা করেছেন। মৌলভী নূর মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহু ছিলেন একজন আলেম, মুজাহিদ ও পূর্ণ যুবক। জালালাবাদের ‘ওয়াজির’ কবিলার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তিনি। তালেবান প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি যে পদটিতে দায়িত্বরত ছিলেন, সেটিকে বলা হতো ‘ওয়ালিসওয়াল’। আমরা যাকে সিটি-মেয়র বা কাউন্সিলর বলে থাকি।
অতঃপর যখন আফগানিস্তানে ক্রুসেডারদের আক্রমণ শুরু হয়, তখন তিনি মুজাহিদীনদের সাথে যোগ দেন। আমরা যখন তোরাবোরায় আসলাম, তখন এই মহান লোকটি একদল মুজাহিদ নিয়ে আমাদের সাথে এসে মিলিত হন এবং পাহাড়ে ওঠেন। অতঃপর আমাদের সাথে দেখা করেন এবং শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, “আমি আপনার আদেশের আজ্ঞাবহ। আপনার যা ইচ্ছা আমার কাছে বলুন। আমি যথাসাধ্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে আপনার কথা পালন করব।”
এই মানুষটি তোরাবোরার ট্র্যাজেডির পর শহীদ হয়ে যান। তিনি এবং তার ভাই পাকিস্তানের পেশোয়ারে নিহত হন। আমার সন্দেহ হচ্ছে যে, আমেরিকার মুনাফিক দালালরাই তাকে শহীদ করেছে। আল্লাহ তাদের উভয়ের ওপর অশেষ রহম নাযিল করুন।
মৌলভী নূর মুহাম্মাদ আমাদের সাথে পাহাড়ে আরোহণ করেছেন এবং আমাদেরকে সব ধরনের সাহায্য করেছিলেন। আমার মনে পড়ে, মৌলভী নূর মুহাম্মাদ এবং আরো কয়েকজন আনসার ভাই শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু-এর কাছে এই অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তাদের এই ভ্রাতৃত্ববন্ধন অবশ্যই দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানেই থাকবে। আর আমি মহান রাব্বুল আলামিনের প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। কারণ তিনি আমাকে সেই মজলিশে উপস্থিত রেখে সম্মানিত করেছেন। আমিও তাদের হাতের সাথে আমার হাত বাড়িয়ে দিয়ে শাইখের সাথে অঙ্গীকার করেছিলাম এবং আল্লাহর কাছে কবুলিয়্যাতের প্রার্থনা করেছিলাম।
একটি মজার কথা মনে পড়ছে, মৌলভী নূর মুহাম্মাদ সে সময় আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন “আইমান আয-যাওয়াহিরী কোথায়? শুনেছি তিনি নিহত হয়েছেন!” আমি হেসে উঠে বললাম, “না তিনি জীবিত আছেন এবং সুস্থ আছেন।”
আরো মনে পড়ছে, তাকে বলেছিলাম, “মৌলভী সাহেব, আমরা এই মুহূর্তে সায়্যিদুনা হুসাইন বিন আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মতো শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত।” তিনি বলেছিলেন, “হ্যাঁ, সত্যিই আমাদের অবস্থা (এখন) হুসাইন বিন আলীর মতোই।”
তিনি আমাদেরকে অনেকভাবে সাহায্য করেছিলেন। সবচেয়ে বড় যে সাহায্যটি করেছিলেন তা হলো, তিনি জালালাবাদের স্থানীয় নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তাদের মধ্য হতে কয়েকজনকে আমাদের কাছে নিয়েও এসেছেন। এমনকি একবার একজন গোত্রপ্রধানকেও আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। যিনি তালেবান সরকারের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। তারপর যখন মুনাফিকদের সরকার আসলো, তখনও তিনি একই পদে বহাল ছিলেন।
এটা যুদ্ধের অন্যতম আশ্চর্যজনক একটি দিক! অর্থাৎ যুদ্ধের সময় আপনি প্রকৃত বন্ধু যেমন পাবেন, তেমনই প্রকৃত শত্রু এবং মাঝামাঝি অবস্থানকারী একদলকেও পাবেন। তো আফগানিস্তানে যখন আমেরিকানরা আসলো, তখন এই লোকটিও মুনাফিক সরকারের ডেপুটি হিসেবে যোগ দেয়। কিন্তু তার মনের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা দুদিকে বিভক্ত হয়ে যায়। একদিক ছিল ক্ষমতা যা সে ছাড়তে চায়নি, অপরদিকে মুজাহিদীনদের জন্য তার ভালোবাসা।
লোকটি পাহাড় বেয়ে আমাদের কাছে উঠে আসে। তার অন্তরের মানসিক অস্থিরতা চেহারায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু তাকে লক্ষ্য করে বললেন “আমরা আপনার ভাই, সকলেই মুজাহিদ, মুহাজির, গুরাবা এবং মুসাফির (আফগানীদের কাছে মুসাফির অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি শব্দ)। আমরা আপনাদের আরবী ভাই। যারা আপনাদের সাথেই জিহাদে শরীক হয়েছিলেন। আপনাদের কাছ থেকে কিছুই চাই না আমরা। যুদ্ধ হচ্ছে আমাদের ও আমেরিকানদের মধ্যে। তাহলে আপনারা কেন এখানে হস্তক্ষেপ করবেন?”
শাইখের কথা শুনে লোকটি অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে বলল, “না, না! আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমার দিক থেকে আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না।” শাইখ বললেন, “আমরা আপনার সাহায্য চাই।” সে বলল, “আমি আপনাকে সহায়তা করব এবং রসদ সরবরাহ করব।” অতঃপর তোরাবোরার অবরোধের সময় এই লোকটিও অংশগ্রহণ করেছিল এবং একটি সেকশনের সেকশন-ইন-চার্জ ছিল।
অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, আফগানের জনগণ সৃষ্টিগতভাবেই ক্রুসেডারদেরকে ঘৃণা করে এবং এই বলে গর্ব করে যে, “আমরাই তো সেই জাতি, যারা ইংরেজদেরকে বিতাড়িত করেছি এবং আমাদের দেশে বসতি স্থাপন করতে দিইনি।” এমনকি তারা কাউকে গালি দিলে ‘ইংরেজ’ বলে গালি দিত। এমনকি কখনো তারা আমেরিকানদেরকে বাহ্যিকভাবে কোনো সহায়তা করলেও অন্তর থেকে অভিশাপ দিত।
তো এই লোকটি শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু-কে বলল, “আমি আপনার সাথে অঙ্গীকার করছি যে, আমার পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিই হবে না।” শাইখও তাকে বললেন, “আমরা আপনার কাছে কিছু গোলাবারুদ এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম প্রত্যাশা করছি।” সে বলল, “হ্যাঁ, আমি আপনার প্রয়োজন পূরণ করব।” তাই সেগুলো ক্রয় করার জন্য শাইখ তাকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। সে বলল, “ইনশাআল্লাহ আমি আপনার জন্য তা নিয়ে আসব।” শাইখ তাকে আরো বললেন, “আমি আপনার কাছ থেকে আরো একটি সাহায্য চাই।” লোকটি বলল, “কী সেটা?” তিনি বললেন, “আপনি আপনার এলাকার আলেমদের জুমার খুতবায় সাধারণ জনগণকে আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের প্রতি অনুপ্রাণিত করতে অনুরোধ করবেন এবং তাঁরা তাদেরকে এ কথা যেন স্পষ্ট করে দেয় যে, এই আমেরিকানরা আফগান দখল করতে এসেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ওয়াজিব হয়ে গেছে।” লোকটি প্রতিজ্ঞা করেছিল। কিন্তু আমার জানা নেই, সে তার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছিল কি না!
এই লোকটির সাথে আমাদের একটি বিস্ময়কর ঘটনা রয়েছে। অবরোধকালে সে একটি সেক্টর পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। এদিকে একজন ভাই শাইখ লিবী রহিমাহুল্লাহু-এর সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল। এই ভাইটির কথা পূর্বেও বলেছি যে, সে তোরাবোরার যুদ্ধের সময় সামরিক বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। তো এই ভাই অন্য একজন আনসার ভাইকে সাথে নিয়ে শাইখকে না জানিয়েই ওই লোকটির (যিনি আফগানের মুনাফিক সরকারের ডেপুটি ছিলেন) গ্রামের ওপর হামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমরা যেই পর্বতশ্রেণীতে ছিলাম তার গ্রামটি সেগুলোর পাশেই ছিল।
তাই সে আনসার ভাইদের একটি দল নিয়ে নিচে নেমে যায় এবং মর্টারশেলের মাধ্যমে তার গ্রামের ওপর কয়েকটি আক্রমণ করে। আক্রমণ করে তারা ফিরে আসে। অতঃপর সেই লোকটি শাইখকে এই বলে বার্তা পাঠায় যে, “আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, আমার পক্ষ থেকে কিছুতেই আপনাদের কোনো ক্ষতি হবে না, তাহলে আমাদের ওপর আক্রমণ করা হলো কেন?”
আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে সেই শেলগুলো কারো গায়ে লাগেনি। তাই শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু সেই ভাইকে তলব করলেন। যিনি ছিলেন মুজাহিদীনদের প্রথম সারির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। শাইখ তাকে বললেন, “ভাই, এ তুমি কী করলে?!” সে বলল, “যারা আমাদেরকে অবরোধ করে রেখেছে, আমি চেয়েছিলাম তাদেরকে ধ্বংস করে দিতে।” শাইখ বললেন, “তুমি কি এ বিষয়ে আমাদের কাউকে অথবা তোমার কমান্ডারকে জানিয়েছিলে?” সে বলল, “জি না, এটা আমি নিজে নিজেই করেছি।” তিনি বললেন, “ভাই, আল্লাহকে ভয় করো। আমরা খুবই জটিল একটা অবস্থার সম্মুখীন। তুমি যদি নিজে নিজেই এভাবে কাজ করা শুরু করে দাও, তাহলে যুদ্ধের ভারসাম্য আমাদের বিপরীতে চলে যেতে পারে। যারা আমাদের অবরোধ করছে, তাদের মধ্যে আমরা সর্বদিক দিয়ে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাই কিছুতেই এমন কাজের পুনরাবৃত্তি করবে না।”
এটা ছিল আমাদের প্রতি মৌলভী নূর মুহাম্মাদের অনেকগুলো সাহায্যের মধ্যে একটি। তোরাবোরার শেষ মুহূর্তটি পর্যন্তও মৌলভী নূর মুহাম্মাদ আমাদের সাথে ছিলেন। তিনি যুদ্ধে অনেক বড় বড় সাফল্য অর্জন করেছিলেন। আজ প্রথমবার আমি তার অবদানের কথা আলোচনা করছি। আমেরিকানরা এটা জানত কি না আমার জানা নেই। তবে আমি তাদেরকে ক্রোধান্বিত করার জন্য বলছি যে, মৌলভী নূর মুহাম্মাদই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যিনি শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু-কে তোরাবোরার অবরোধ থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন।
শহীদ কমান্ডার মুয়াল্লিম আওয়াল গুল রহিমাহুল্লাহু-এর কথা পূর্বে বলেছিলাম। তিনি শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু-কে জালালাবাদ থেকে এবং মৌলভী নূর মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহু তোরাবোরার কঠিন পর্বতশ্রেণী থেকে সহজ স্থানে বের করে নিয়ে এসেছিলেন।
এটা ছিল মৌলভী নূর মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহু-এর পক্ষ থেকে মুজাহিদীনদের ওপর অনেক বড় অনুগ্রহ যে, তিনি তোরাবোরার কঠিন পাহাড়ি এলাকা থেকে শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু-এর বের হওয়ার পথকে সহজ করে দিয়েছিলেন। তোরাবোরা থেকে বের হওয়ার সময় শাইখ সাথীদেরকে কীভাবে বিন্যস্ত করেছেন, সে বিষয়ে ইনশাআল্লাহ সামনে আলোচনা করব।
সে সময় সারা দুনিয়ার চোখ তোরাবোরার দিকে ছিল। পুরো ক্রুসেডার জোট তোরাবোরাকে ঘেরাও করে রেখেছিল। তখন আমেরিকানরা বলেছিল, “আমরা যদি উসামা বিন লাদেন ও তাঁর সাথীদের সাথে তোরাবোরায় বিজয় অর্জন করতে পারি, তাহলে আফগানিস্তানের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং যুদ্ধও সমাপ্ত হয়ে যাবে।” কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে এবং তাঁরই ক্ষমতায় এই ভাইদের মাধ্যমে শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু ও সকল ভাইকে এই অবরোধ থেকে বের হতে সাহায্য করেছেন।
শাইখের তোরাবোরা থেকে বের হওয়ার ঘটনাটি অনেক দীর্ঘ। পরে তা বলব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু তোরাবোরায় শুধু মৌলভী নূর মুহাম্মাদই আমাদেরকে সাহায্য করেননি; বরং সেখানে আরো অনেকেই আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং তাদের মধ্যে সেখানকার স্থানীয় লোকজনও ছিল।
মৌলভী নূর মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহু আমাদের বলতেন, “একবার তিনি এবং তার সাথী ভাইয়েরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে তোরাবোরা পর্বতে উঠছিলেন। এ সময় একজন বৃদ্ধা মহিলা তাদের দেখে ফেলে। বৃদ্ধা মহিলাটি ভেবেছিল, মৌলভী নূর মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহু ও তার দল আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেদিকে যাচ্ছে”। তিনি বলেন, “এই ভেবে বৃদ্ধা মহিলাটি আমাদেরকে বদদোয়া দিয়ে যাচ্ছিল আর বলছিল, “তোমরা আরবদের সাথে যুদ্ধ করতে যাচ্ছ?! ধিক তোমাদের জন্য! ধ্বংস হও তোমরা!”। এই বলে বৃদ্ধাটি ক্রমাগত আমাদের মৃত্যু ও ধ্বংসের জন্য অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছিল। আর আমরা চুপচাপ তা শুনছিলাম।”
মৌলভী নূর মুহাম্মাদ রহিমাহুল্লাহু আরো বলতেন, “একবার একজন লোক তার কাছে এসে বলল, “আমি জানি, আপনি আরব ভাইদের সাথে দেখা করার জন্য তোরাবোরাতে ওঠেন। আমার কাছে এই সুদানী চিনাবাদামের বস্তাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি মুজাহিদ ভাইদের জন্য আমার পক্ষ থেকে এই বস্তাটি তোরাবোরাতে নিয়ে যান, যেন পর্বতে তাদের অবস্থান করতে এটি একটি সাহায্যের উপলক্ষ হয়।”
আরেকবার তোরাবোরার কাছাকাছি একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় গ্রামের একজন লোক দাঁড়িয়ে মুনাফিক কারজাই সরকারকে অভিসম্পাত করতে শুরু করল। লোকটি বলছিল, “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে ফয়সালা করবেন। বিপদাপদ অচিরেই তোমাদের পেয়ে বসবে। তোমরা পাহাড়ে অবস্থানরত যাদের সাথে যুদ্ধ করছ, তারা সাহাবীদের সন্তান। অনতিবিলম্বে তোমরা তোমাদের পরিণতি দেখতে পাবে।”
এ সময় আমাদের স্মৃতিবিজড়িত বহু ঘটনা আছে, যা হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। বস্তুত সেখানকার পুরো গ্রামবাসী আমাদেরকে সাহায্য করেছিল এবং আশ্রয় দিয়েছিল। একটি আশ্চর্যজনক বিষয় দেখেছিলাম সেখানে। আশপাশের গ্রামগুলো থেকে বিভিন্ন গোত্রপতিরা শাইখের কাছে ছুটে আসত এবং একটি স্বাক্ষরলিপি লিখে দিতে অনুরোধ করত। যাতে লেখা থাকবে যে, “যুদ্ধের সময় এই ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে, সে মুজাহিদদেরকে সাহায্য করেছে এবং সে তাঁর সেই সকল ভাইদের মধ্যে ছিল, যাদেরকে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন।” তারা আরো বলত, “আমরা এই স্বাক্ষরলিপিটি সংরক্ষণ করব এই কারণে যে, শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহু আমাদের প্রশংসা করেছেন। আমরা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলাম এবং সাহায্য করেছিলাম।” এটি ছিল আফগানীদের এক অদ্ভুত বিষয়।
সেখানে এমন অনেক আনসারও ছিলেন, যারা মুনাফিক সরকারের কাছ থেকে কঠোর হুমকির সম্মুখীন হতেন। আপনাদেরকে হাজী দ্বীন মুহাম্মাদের ব্যাপারেও বলব। এই লোকটি জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে গিয়ে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টিই হারিয়েছে। সে সময় সম্ভবত সে জালালাবাদ সরকারের ডেপুটি গভর্নর ছিল। তো যারা আমাদের সাহায্য করত, এমন কয়েকজনকে সে এই বলে হুমকি দিয়েছিল যে, “তোমরা যদি আরবদেরকে ত্যাগ না করো, তবে আমেরিকানরা ৫০টা বিমান পাঠিয়ে তোমাদের গ্রামকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।”
আর বাস্তবেই আমেরিকা সেই গ্রামে বিমান হামলা চালিয়েছিল এবং গ্রামটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তার মা এবং একটি ছোট্ট বাচ্চা ছাড়া তার পরিবারের প্রায় সবাইকেই শহীদ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই গ্রামের প্রায় ৫০ জন তাওহীদবাদী মাজলুম মুসলিমকে শহীদ করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে ১৮ জনই ছিলেন তার বাড়ির লোকজন। আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাদেরকে তাঁর রহমতের চাদরে ঢেকে নেন। এত নির্যাতন সত্ত্বেও সেই আনসারী ভাইটি ও অন্যান্য আনসারী ভাই আমাদেরকে ত্যাগ করেননি। বরং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছিলেন।
সেখানে আরো একটি গ্রামের লোকেরা আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল এবং শাইখ তাদের কাছ থেকে জিহাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তারা প্রতিজ্ঞা করে বলেছিল, “আমরা জানি, এই যুদ্ধে খুব শীঘ্রই আমাদের গ্রামের ওপর প্রচণ্ড ধ্বংসলীলা চালানো হবে। তাই আমরা আপনার কাছে এই ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করছি যে, আমাদের লোকদের গ্রাম থেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাব এবং আমরা এসে আপনার সাথে যুদ্ধ করব”।
শাইখ অনুমতি দিয়ে বললেন, “আমি আমার তরফ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করব, যাতে তারা হিজরত করতে পারে”। আমরা তাদেরকে সত্যবাদী বিবেচনা করেছিলাম। কারণ তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। বিনিময়ে তারা কিছুই চায়নি। কিন্তু তারপরেই যুদ্ধ আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।
সেই দিনগুলোতে আমাদের পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা অবশ্যই বর্ণনা করা প্রয়োজন। চারদিকে প্রচণ্ড আতঙ্ক বিরাজ করছিল। আমেরিকা ও তার দালালরা অদ্ভুতভাবে গুজব ছড়াচ্ছিল। তারা এভাবে প্রচারণা চালাতে লাগল যে, আমেরিকা সবকিছুই দেখতে পায়। তাদের কাছে এমন অস্ত্র আছে, যা দিয়ে ক্লাসিনকোভ লক্ষ্য করে আক্রমণ করলে সব গলে যায়। এমনকি ঘরের ভেতরে কী রয়েছে, তাও দেখতে পায়।
তখন তোরাবোরার দৃশ্যটা খুবই ভয়ংকর দেখাচ্ছিল। অর্থাৎ আমি নিজেই তোরাবোরা থেকে বেরিয়ে আসার পর দেখলাম, এটা একটা ভয়ংকর দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। সেই রাতে নিক্ষিপ্ত গোলাবারুদ আর রকেট লঞ্চারগুলোর অগ্নিশিখা পুরো এলাকাটিকে আলোকিত করে ফেলেছিল। আলহামদুলিল্লাহ, এমন কঠিন মুহূর্তেও আমরা তোরাবোরাতেই ছিলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন। কিন্তু বাইর থেকে যারা এই দৃশ্য দেখছিল, তারা তো ভাবছিল, এটা তো মুহাজির আরব ও তাদের সাহায্যকারীদের জন্য এক গণকবরে পরিণত হবে। এমন কঠিন ভয় ও আতঙ্কের মুহূর্তেও এই সাধারণ অসহায় মানুষগুলো আমাদেরকে নিজেদের সর্বোচ্চ বিলীন করে সাহায্য করে যাচ্ছিল।
আগেও কয়েকবার বলেছিলাম যে, আমরা এসব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একমাত্র আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা ও তাওহীদের শিক্ষা লাভ করেছি। বিভিন্ন পদবি ও সার্টিফিকেট-ধারী সেসব পাগড়ি পরা দাড়িওয়ালা লোক, যারা তাওহীদের ওপর পাণ্ডুলিপি রচনা করেন এবং তাওহীদের দরস দিয়ে থাকেন, তাদের উচিত আমাদের মতো এমন প্রতিষ্ঠানে এসে নতুন করে তাওহীদের দরস গ্রহণ করা। কেননা, প্রকৃতপক্ষে তাদের এসব তাওহীদ অসম্পূর্ণ। উস্তাদ শাইখ মুহাম্মাদ ইয়াসীর রহিমাহুল্লাহু বলেন, “এমনও অনেক আলেম আছেন, যারা ইলমের ক্ষেত্রে উস্তাদ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, কিন্তু ঈমানের ক্ষেত্রে এখনো মুনাফিকের স্তরে রয়ে গেছেন”। আল্লাহ আমাদেরকে এসব থেকে রক্ষা করুন।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এই সাধারণ অসহায় মানুষগুলোর মাঝে তাওহীদ এবং তাওয়াক্কুলের প্রকৃত শিক্ষা দেখেছিলাম। বিষয়টি পরিপূর্ণ স্পষ্ট এবং সবার জানা থাকার দরকার যে – কাফেররা সর্বদাই ইসলামের শত্রু; আর মুমিন-মুসলিমরা অপর মুসলিমদের বন্ধু। এই বিষয়টি তো ইসলামের শুরুর জমানা থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে যে, এরা হচ্ছে মুজাহিদ, তাই আমি এদেরকে সাহায্য করব; আর এরা হচ্ছে কাফের, তাই এদের সাথে যুদ্ধ ছাড়া কোনো সহমর্মিতা প্রদর্শন করব না। এই সৃষ্টিগত গুণাবলি নিয়েই সাধারণ মানুষগুলো আমাদের সাথে কাজ করত।
আপনারা জানেন যে, সাধারণ যুদ্ধে এবং গেরিলা যুদ্ধের এই মারহালায় অর্থাৎ তীব্র আক্রমণ ও ভীতিকর পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ধাক্কাটা অত্যন্ত ভয়ংকর। এমন কষ্ট ও সংঘর্ষের সময়েও সাধারণ মানুষগুলো আমাদেরকে সঙ্গ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ খুব সম্ভব তারা শুধু ইবাদতের নিয়মাবলী এবং ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ছাড়া আর কিছুই জানত না। তাদের কোনো ডক্টরেট ডিগ্রি ছিল না; ছিল না কোনো পদ-পদবি, যা তাদের ঈমানকে কলুষিত করতে পারে এবং তাওহীদের মাঝে ফাটল তৈরি করে দিতে পারে। অন্যান্য এলাকার মুজাহিদীনরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতেন আর এই বলে আফসোস করতেন যে, “আমরাও আপনাদের কাছে আসতে চাই; কিন্তু পারছি না!”
আরো একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো, ৯/১১ হামলার পর আফগানিস্তানে আক্রমণ শুরু হওয়ার পূর্বে যখন আমাদের ভাইয়েরা তোরাবোরায় তাদের ঘাঁটি নির্মাণ শুরু করলেন, তখন তারা নিজেদের জন্য কিছু প্রশাসনিক নীতিমালা নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন। তারা ভাইদের জন্য জালালাবাদে একটি বাড়ির ব্যবস্থা করলেন। এটিকে তাদের জন্য একটি উপ-ঘাঁটিও বলা যেতে পারে। সেখানে চিকিৎসা, কেনাকাটা, যোগাযোগ এবং মুজাহিদদের প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা ছিল। মাঝে মাঝে ভাইয়েরা এখানে ছুটিরও ব্যবস্থা করতেন। এছাড়াও জালালাবাদে কেবল আরবদের জন্য একটি অতিথিশালা ছিল।
অতঃপর যখন মুনাফিকদের হাতে জালালাবাদের পতন হয়, তখন ইমারতে ইসলামিয়ার মুজাহিদীনরা বেরিয়ে যান। কারণ, তারা সম্মুখযুদ্ধ পরিহার করে গেরিলাযুদ্ধের পথ বেছে নেন এবং শহর ত্যাগ করে পাহাড় ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েন। এটিই ছিল মুজাহিদদের জন্য একটি সফল কৌশল। যার মাধ্যমে তারা ক্রুসেডার জোটকে ধ্বংস করতে সক্ষম হন এবং আমেরিকাকে পরাজয় স্বীকার করতে ও আফগানিস্তান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজতে বাধ্য করেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন ইসলামী ইমারতকে পুনরায় ফিরিয়ে দেন এবং আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর কান্দাহারের ইমারাহ ভবনটিতে পুনরায় ফিরে আসতে পারেন। আল্লাহর নিকট আরো প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে আমিরুল মুমিনীনের হাতে বাইয়াত নবায়ন করে সম্মানিত করেন। (উল্লেখ্য, এই আলোচনার সময় আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর রহ. জীবিত ছিলেন)।
আপনারা জানেন, মুনাফিকরা জালালাবাদে প্রবেশ করেই আরব মুজাহিদদেরকে খুঁজতে থাকে, তাদেরকে আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করার জন্য। খুঁজতে খুঁজতে একদল সশস্ত্র মুনাফিক আরবদের জন্য নির্ধারিত সেই অতিথিশালায় প্রবেশ করে। সেখানে দায়িত্বরত একজন প্রহরী ছিলেন। যাকে আমরা ধার্মিক বলেই ধারণা করি। মুনাফিক বাহিনী তার কাছে ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে সে বাধা দেয়। কারণ ভেতরে একজন ভাই ছিলেন। যিনি জালালাবাদের পতনের খবর তখনও জানতেন না। মুনাফিকরা ভাবল, ঘরে ঢুকে আরব মুজাহিদ কাউকে পেলে আমেরিকানদের হাতে সোপর্দ করা যাবে। (আল্লাহ তাআলা সেই প্রহরী ভাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন।) প্রহরী ভাইটি তাদেরকে ঘরে ঢুকতে না দিয়ে তাদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তার ইচ্ছা ছিল, তর্কের কারণে ভেতরে অবস্থানরত ভাই পরিস্থিতি আঁচ করে যেন পালিয়ে যেতে পারেন। অবশেষে ভাইটি তা-ই করলেন। দেয়াল টপকিয়ে কয়েকটি বাড়ি পার হয়ে গেলেন।
এভাবে তিনি একটি বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হওয়া পর্যন্ত মুরগির খাঁচায় লুকিয়ে ছিলেন। এই ঘটনার পর অন্যান্য ভাই তাকে জীবন্ত শহীদ বলে ডাকতেন। অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে জালালাবাদের রাস্তায় হাঁটতে থাকেন। কারণ, তিনি জানতেন না, কোথায় যাবেন? তিনি বলেন, “আমি একটি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকি। মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তাদের তাকিয়ে থাকা দেখে আমি বিস্মিত হচ্ছিলাম যে, তারা কেন আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে! কিছুক্ষণ পরেই তাদের বিস্ময়ের কারণ অনুভব করতে পারলাম। কারণ, সেই রাস্তাটি বন্ধ ছিল এবং তারা সবাই ছিল ওই মহল্লারই বাসিন্দা। আর তাদের দৃষ্টিতে আমি একজন আগন্তুক ছিলাম। তাই সকলে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে এই ভেবে যে, লোকটি যাচ্ছে কোথায়?”
রাস্তা বন্ধ দেখে ভাইটি হতবাক হয়ে পড়ে। তারপর সেখানকার একজন বাসিন্দা তাকে দেখে বলল, “এদিকে আসুন।” অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করল যে, “আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” তিনি কোনো এক বন্ধুর কাছে যাচ্ছেন বলে উত্তর দিলেন। লোকটি তাকে নিয়ে তার বাড়িতে প্রবেশ করলেন এবং তাকে বললেন, “আমি জানি যে, আপনি একজন আরব এবং আপনি এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছেন। এখন রাত্রিবেলা। আর রাতের বেলায় আপনি বের হতে পারবেন না। বরং সকাল পর্যন্ত আমার এখানে অবস্থান করুন। ইনশাআল্লাহ, যতক্ষণ আমি জীবিত আছি, ততক্ষণ আপনার কিচ্ছু হবে না। আর যদি মারা যাই, তাহলে আল্লাহ আপনার দেখাশুনা করবেন।” এই আচরণে মুগ্ধ হয়ে ভাইটি তার জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর বললেন, “আমি দেখলাম যে, তার ছেলে তালেবানদের প্রতিষ্ঠিত একটি দ্বীনি মাদরাসায় পড়ে। তো তাকে দেখে আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ, এটা তালেবানদেরই কাজের বরকত। আল্লাহ আমাকে তালেবানদের বরকতে উপকৃত করেছেন।”
ভাইটি তার সাথে সকাল পর্যন্ত অবস্থান করলেন। অতঃপর সকালে লোকটি তাকে একটি রাস্তা দেখিয়ে বলেন, “আপনি এই পথে যেতে থাকুন। তাহলে তোরাবোরায় গিয়ে উঠতে পারবেন।” ভাইটির দোকান থেকে কিছু জিনিস ক্রয় করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তিনি দোকানে যান। দোকানদার ভাইটিকে আরবের বুঝতে পেরে তার দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর কেনাকাটা শেষে ভাইটি যাওয়ার সময় সে পেছন থেকে তার দিকে তাকিয়ে দেখছিল যে, এই আরব লোকটি যাচ্ছে কোথায়?” তিনি বলেন, “তখন আমি ভুল পথে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দোকানদারকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। অতঃপর দোকানদার আমাকে ডেকে বললেন, “আপনার পথ এদিকে।”
আজ এখানেই সমাপ্ত করলাম।
سبحانك اللهم وبحمدك، أشهد أن لا إله إلا أنت، أستغفرك وأتوب إليك.
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين. وصلى الله على سيدنا محمد وآله وصحبه وسلم.
والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته.
**********************