আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (AQIS)আল-হিকমাহ মিডিয়াউস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহবার্তা ও বিবৃতিবার্তা ও বিবৃতি [আল হিকমাহ]

সকলের পড়া জরুরী || বাগদাদীর হত্যা ও আইএসের ফিতনায় আমাদের করণীয় -উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

 

আল হিকমাহ মিডিয়া
পরিবেশিত

একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ
রিসালাহ’র অনুবাদ

বাগদাদীর হত্যা ও আইএসের ফিতনায়
আমাদের করণীয়

-উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

সকলের পড়া জরুরী || বাগদাদীর হত্যা ও আইএসের ফিতনায় আমাদের করণীয় -উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৮৪৮ কিলোবাইট]

https://files.fm/f/ms4rnwhr

https://archive.org/download/banner_20200419/PDF.pdf
https://archive.org/details/20201115_20201115_1755
https://upload.ac/emkt34wfuc7u
https://files.fm/f/ms4rnwhr

 

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [১.১ মেগাবাইট]
https://files.fm/f/ec2mqvpx

https://archive.org/download/banner_20200419.docx

https://archive.org/details/20201115_20201115_1755
https://upload.ac/5tk9tggz66cl
https://files.fm/f/ec2mqvpx

 

ব্যানার ডাউনলোড করুন [৪.২ মেগাবাইট]
https://files.fm/f/mwbqb3v8

https://archive.org/download/banner_20200419/Banner.jpg

প্রচ্ছদ ডাউনলোড করুন [২.৯ মেগাবাইট]
https://files.fm/f/hvahy8gz

https://archive.org/download/banner_20200419/Photo.jpg

————————

 

বাগদাদীর হত্যা ও আইএসের ফিতনায় আমাদের করণীয়

উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

——————————————

মুহাম্মাদ উমর হাফিজাহুল্লাহ অনূদিত

 

শুধু আইএস সম্প্রদায় আমাদের ঘৃণার পাত্র নয়!

আবু বকর আল-বাগদাদী কীভাবে নিহত হলো? বাস্তব অবস্থা আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন৷ কিন্তু এতটুকু স্পষ্ট যে, সে নিহত হয়েছে এবং আমেরিকা কর্তৃক পরিচালিত এক হামলায় মারা গেছে৷

সে তো আল্লাহ তা‘আলার কাছে চলে গেছে৷ আমরা তাকে নিয়ে এতটুকুই বলতে পারি, আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার কর্ম অনুযায়ী বদলা দিবেন।

বাগদাদী ও তার দল আইএসের ফিতনায় মুজাহিদ ভাইদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় বিষয়।

যুদ্ধরত জিহাদি তানজীমসমূহ যদি এগুলোকে সামনে রাখে এবং নিজেদের সদস্যদের ফিকির ও কর্ম নিয়ে পর্যালোচনা করে, তাহলে সফলতার অনেক বড় পুঁজি খোঁজে পাবে৷ ফলে তা আমাদের, জিহাদী আন্দোলনের এবং পুরো জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

পক্ষান্তরে যদি আমরা আইএসকে শুধু ফিতনা আখ্যা দিয়ে, তার সদস্যদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে তাদের সেই কুচিন্তা ও মন্দ আচরণের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করি, যে কারণে এই তানজিম আজ ফিতনা ও ফাসাদে পরিণত হয়েছে। তাহলে আমরা নিজেদেরকে আল-কায়েদা বা অন্যান্য জিহাদী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রেখে; তাদের সাথী হিসেবে পরিচয় দিয়ে, জিহাদ ও মুসলিম উম্মাহর তেমন উপকার করতে পারবো না৷ বরং আইএস অপেক্ষা আমরাই ইসলামের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবো৷ কারণ সত্য কথা হলো: العبرة بالحقائق لا بالأسماء বস্তুর পরিচয় নাম দিয়ে নয়; মূলতত্ত্ব দ্বারাই তার আসল পরিচয়।

আমাদের কারো কারো মতে খিলাফাহ ঘোষণা করাটাই শুধুমাত্র আইএসের ফিতনা৷ আর তারা যখন আইএস নিয়ে কথা বলেন, তখন তাদের বিষয়বস্তু হয় খিলাফাহ ঘোষণা করা যাবে কি না? এ ঘোষণা আসলেই কখন কীভাবে করতে হয়? এই প্রশ্নগুলো অবশ্যই জরুরী৷ তার সঠিক উত্তরও জেনে রাখা দরকার। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আইএসের চিন্তা-চেতনা, কার্যপ্রণালী ,কথাবার্তা, বৈধতা-অবৈধতা, জিহাদী আন্দোলনের জন্য উপকারী এবং ক্ষতিকর নির্ধারণ; ইত্যকার বিষয়।

যদি আইএস খিলাফাহ ঘোষণা নাও করতো, তবু তার চিন্তা, চরিত্র এখনকার মতো বাড়াবাড়ির উপরই স্থির থাকতো। বৈধ-অবৈধের হুকুম আরোপ এখনকার মতো মনগড়াই থাকতো। তারা নিজেদের ব্যতীত বাকি সমস্ত মুসলিমদের শত্রু ভাবতো। খিলাফাহ ঘোষণা না করলেও এই গোষ্ঠী জিহাদ ও উম্মাহর ক্ষতি সাধনে কমতি করতো না। সুতরাং এর সদস্যরা ঈমানদারদের কাছে ততটুকুই ঘৃণিত থাকতো, যতটুকু বর্তমানে দৃশ্যমান।

যে বিষয়টি নিয়ে মুজাহিদদের আলোচনা করা দরকার এবং যার দ্বারা জিহাদ ও মুজাহিদদের প্রকৃত ফায়দা হবে; তা হলো: এই ফিতনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। জিহাদী জামায়াতগুলো যদি এটাকে নিজের তরবিয়াতি নেযামের অন্তর্ভুক্ত করে, তাহলে ইনশাল্লাহ, বিশ্ব কুফুরী শক্তির বিরুদ্ধে এ জিহাদ আরও শক্তিশালী ও সূদৃঢ় হবে। মুসলিম উম্মাহ এর বরকত ও সুফল লাভ করতে পারবে।

এই প্রবন্ধে আমরা আইএসের কিছু ভ্রান্তি ও তা থেকে শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদেরকে যে কাজের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে, তার দিকে মনোনিবেশ করবো। (ইনশা আল্লাহ)

এ প্রবন্ধে প্রথম সম্বোধিত ব্যক্তি হলাম আমরা নিজেরা। অর্থাৎ আমরা, আমাদের তানজিম, আমাদের সহচর ও সমর্থকরা।  নিঃসন্দেহে সমস্ত আহলে জিহাদের চেয়ে আমরা নিজেরা এসলাহের বেশী মুখাপেক্ষী। আল্লাহর কাছে দু‘আ করি, তিনি যেন আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেন এবং হেদায়েত ও কামিয়াবীর পথে চলার তৌফিক দান করেন। (আমীন)

এ প্রবন্ধে দ্বিতীয় সম্বোধিত ব্যক্তিরা হলেন, পাকিস্তান ও উপমহাদেশের দাওয়াত ও জিহাদের ইবাদাতে নিয়োজিত অন্যান্য জিহাদী তানজিমগুলোর প্রাণপ্রিয় ভাইয়েরা। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবার উপর রাজি ও সন্তুষ্ট হোন। আমাদের প্রত্যেককে পরস্পরের প্রতি কল্যাণকামী ও সাহায্যকারী হিসেবে কবুল করুক এবং আমাদের মদদ ও নুসরাত প্রদান করুক। আমীন।

মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে বর্তমানের সর্বাধিক আলোচিত ঘটনা অর্থাৎ বাগদাদীর মৃত্যু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয় পাঠকের সামনে পেশ করা জরুরী মনে করছি-

প্রথম বিষয়: আমেরিকার খুশি কখনো গ্রহণযোগ্য নয়!!

বাগদাদীকে হত্যা করে আমেরিকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষণ এবং অহংকারে মোড়ানো বিবৃতি আমরা মোটেও সহ্য করতে পারিনা৷ খারিজীরা মুসলিম উম্মাহর এক ভ্রষ্ট সম্প্রদায়৷ মুজাহিদ ভাইয়েরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাবেন৷ কারণ, তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত৷ কিন্তু আমাদের এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, ভ্রষ্টদের সাথে মুজাহিদীনের যুদ্ধ মুসলিম উম্মাহর অভ্যন্তরীণ বিষয়৷ তাদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে আমেরিকা ও অন্যান্য কুফফারকে সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না৷ তাদের খুশিতে আনন্দিতও হওয়া যাবে না৷[1]

খারিজীরা নিশ্চয় মু’মিনদের শত্রু৷ কিন্তু আমেরিকা খারেজিদের চেয়ে জঘন্যতম শত্রু৷ আমেরিকা আবু বকর আল-বাগদাদীর মত নিকৃষ্ট পাপীকে হত্যা করলেও আমরা তাদের খুশিতে আনন্দিত হতে পারি না৷ আর এমন কোন কাজের অনুমতি দিতে পারি না যা তারা যুদ্ধ পলিসি হিসেবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে৷

দ্বিতীয় বিষয়:  বাগদাদী কোন ধরনের সম্মান ও সহমর্মিতার উপযুক্ত নয়!

আবু বকর আল-বাগদাদীর হত্যার কথা বাদ দিয়ে শুধু তার নিধন মুসলিম বিশ্বের জন্য খুশি ও আনন্দের বার্তা। সে তো  ছিল পাপাচারী, হত্যাকারী, ইসলামের কুৎসাকারী এবং জিহাদি আন্দোলনের বিনষ্টকারী৷ তবুও আমরা আমেরিকার খুশিতে আনন্দিত হবো না৷ অন্যদিকে আমেরিকার হাতে তার মৃত্যুটা তার জন্য সম্মানজনকও নয়৷ তবে আমেরিকার হাতে মৃত্যু হওয়ায় সে আন্তরিকতার উপযুক্ত হওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবা যায় না৷ কেননা, আমেরিকার হাতে কেউ মারা গেলেই সম্মানের পাত্র হতে পারে না৷

কোন ব্যক্তি যদি ভ্রান্ত আকিদা লালন করে, মুসলমানদের সাথে অনৈতিক আচরণ করে, এমনকি তার অস্তিত্বটুকুও যদি মুসলিম উম্মাহ ও জিহাদী কাফেলার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সমস্ত কুফুরী শক্তি এক হয়ে গেলেও তা তার সঠিক পথে থাকার প্রমাণ বহন করবে না৷ আর যদি সে শত্রুর হাতে মারাও যায়, তথাপিও তাকে শহীদ বলা যাবে না৷ আমেরিকা তো ভিয়েতনামে ইসলামের অনেক শত্রুদেরকে হত্যা করেছে৷ এরকম জাপানের বৌদ্ধরাও আমেরিকার হাতে নিহত হয়েছে৷ তখন কি কোন মু’মিন তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখেছে? তাদেরকে মু’মিন আখ্যা দিয়েছে? হিটলারের বিরুদ্ধে ইউরোপের সমস্ত কুফফাররা ঐক্যজোট হয়ে যুদ্ধ করেছিল৷ তাই বলে কি কোন মু’মিন তার ব্যাপারে একথা বলতে পারবে যে, হিটলার সঠিক পথের পথিক ছিল৷ স্বয়ং গাদ্দাফি ও সাদ্দাম হোসাইন আমেরিকা এবং পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল৷ যার দরুন তারা ইউরোপ-আমেরিকার দুশমন ছিল। তাই বলে কি আমাদের জন্য তাদের কাউকে কোন সম্মানজনক উপাধিতে ভূষিত করা বা তাদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদার সাথে সম্পৃক্ত করার যোগ্য বিবেচিত হতে পারে?

মোট কথা, কোন ব্যক্তি সঠিক পথের পথিক হওয়ার জন্যে শুধু ইসলামের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা ও তাদের হাতে মৃত্যুবরণ করাটাই যথেষ্ট নয়৷ সে সঠিক দ্বীনের উপর আছে কি না? তাও বিবেচনায় আনতে হবে৷ তার কাজকর্ম শরীয়াহ ভিত্তিক হচ্ছে কি না? তাও যাচাই-বাছাই করতে হবে৷ তখনই আমাদের কাছে একজন নিহত ব্যক্তি সম্মানী, প্রিয় ও পূর্ণ বিশ্বস্ত হবে, শহীদ উপাধি লাভ করবে, তার নামের শেষে ‘রহিমাহুল্লাহ’ বলা হবে৷ তখন আমরা এই মনে করে তার কাজ-কর্মের প্রশংসা করি যে, তার পথ একজন মু’মিনের জন্য অনুসরণযোগ্য৷ কিন্তু এমন ব্যক্তির প্রশংসা আমরা কীভাবে করতে পারি, তাকে অনুকরণের পাত্র কীভাবে বলতে পারি, যখন দেখি তার আক্বীদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; বরং হিতে বিপরীত এবং তারা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত৷ মুজাহিদীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত৷ তাই তার মৃত্যু যার হাতেই হোক না কেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বাণী শুনানোর কারণে এবং তার অতিশয় মন্দ পরিণতির ব্যাপারে ধমকি শুনানোর কারণে তার সমস্ত কাজ-কর্ম আমাদের কাছে ঘৃণ্যতম এবং তার মৃত্যু আমাদের কাছে শিক্ষণীয়৷

আইএসের অপরাধ!

কাফেরকে অবশ্যই কাফের বলা উচিত। সুতরাং কেউ যদি কোন নিশ্চিত কাফেরকে কাফের বলে সম্বোধন করে, তাহলে বাহ্যত: তা তার সৌন্দর্য বটে। কিন্তু আইএস সম্প্রদায় কাফেরকে তো কাফের বলেই; কিন্তু তাদের একটি উগ্রতা হচ্ছে, তারা কাফেরদের পাশাপাশি মুসলমানদেরকেও তাকফীর করে৷ শাম ও ইরাক থেকে বের হওয়া এই ফেতনা যেখানেই পৌঁছেছে, যারা তাদের সঙ্গ দেয়নি, তাদের পক্ষাবলম্বন করেনি, তাদেরকে তারা কাফের আখ্যা দিয়েছে৷ কোন মুসলমানকে কাফের বলা কম সাংঘাতিক ব্যাপার না৷ বরং আমরা জানি এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয় এবং অনেক বড় গুনাহের কাজ৷ কাফের সম্বোধিত ব্যক্তি যদি বাস্তবে কাফের না হয়, তাহলে যে ব্যক্তি তাকফীর করেছে কথাটা তার উপর বর্তাবে৷ নিজের সমস্ত আমল বিনষ্ট হওয়ার জন্য এবং পরকাল ধ্বংস করার জন্য এই একটা গুনাহই যথেষ্ট৷ এ রকম কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করাই তাদের ত্রুটি নয়৷ তাদের মূল ত্রুটি হচ্ছে: তারা কাফেরদের সাথে সাথে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করে৷ তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। অথচ কোন মুসলিম ভাইকে অন্যায়ভাবে হত্যাকারী ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে এবং জাহান্নামের কীটে পরিণত হবে৷

তারা তো এমন যে, কোন ব্যক্তি তাদের সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করলে সে যত বড় আলেম, মুজাহিদ এবং আল্লাহর ওলীই হোক না কেন, তারা তাঁর রক্তকে বৈধ মনে করে৷ তাঁদের বিরুদ্ধে জালিমরা রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হয়৷ তারা নাঙ্গাহারে (আফগানিস্তানের) মুজাহিদ ভাইদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে৷ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আজ পর্যন্ত তাদের হাতে ইমারাতে ইসলামিয়ার অনেক উচ্চ পর্যায়ের মুজাহিদ শহীদ হয়েছেন৷ এমন মুজাহিদীনকে তারা শহীদ করেছে, যারা আমেরিকাকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছিলেন৷ আইএস সম্প্রদায় এমন মুজাহিদীনকে শহীদ করেছে, যাদেরকে হত্যা করার জন্য আমেরিকা দিবা-রাত্র এক করে নিয়েছিল৷ শুধু আফগানিস্তান নয় বরং ইয়েমেন, সোমালিয়া, মালি, সিরিয়া, লিবিয়া ইত্যাদি যেখানেই জিহাদ চলছে, সেখানেই তারা গিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে এবং মুজাহিদীন ভাইদেরকে অন্যায়ভাবে শহীদ করেছে৷ তারা অন্যায়ভাবে এমন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সাধারণ মুসলমান পর্যন্ত তাদের জুলুম থেকে রক্ষা পায়নি; বরং বিভিন্ন ধরনের ছল-চাতুরি করে তারা সাধারণ মুসলমানকে নির্মমভাবে শহীদ করেছে৷

শুধু কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করলেই হকপন্থী হওয়া যায় না!

জালিমদের হত্যা করা, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং মুসলমানদের হেফাজতের জন্য জিহাদ চালিয়ে যাওয়া; সবই আল্লাহর হুকুম৷ আর তা মুসলমানদের উপর ফরয৷ এখন যদি কোন ব্যক্তি কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে; কিন্তু সাথে মুসলিমদেরকেও অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তাহলে সে প্রকৃতপক্ষে জালেম, প্রবৃত্তি পূজারী, শরীয়াহর সাথে বিদ্রোহকারী৷

শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রকৃত মু’মিন ঐ ব্যক্তি; যার মাঝে- أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ(তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর) এর সাথে সাথেই বলেছেন رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ(নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।) এর গুণাবলী বিদ্যমান।

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে ভালো মুসলমান ঐ ব্যক্তি; যার মাঝে- أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ (কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে।) এর গুণ-ই শুধু বিদ্যমান নয়, বরং أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ (মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে) এই গুণও বিদ্যমান থাকবে।

সুতরাং যে গোষ্ঠী কাফিরদের সাথে সাথে মুসলমানদেরকেও হত্যা করবে, কাফিরদের সাথে সাথে মুসলমানদেরকেও তাকফীর করবে, তারা কুফফারের বিরুদ্ধে যত যুদ্ধই করুক না কেন, যত ভূখণ্ডই তাদের করতল হোন না কেন, এমনকি তারা যদি কাফেরদের হাতে মারাও যায়, তা সত্ত্বেও তাদের কৃত কর্মের প্রশংসা করা এবং তাদের অনুসরণ করা কোন মুমিনের জন্য বৈধ হবে না৷ কারণ, তারা অনুসরণীয় হওয়ার উপযুক্তও নয়৷ তাদের মতো এমন ভ্রষ্ট এবং জালেম থেকে নিজেকে বাঁচানো, অপর মুসলিম ভাইকে রক্ষা করা প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব৷

আসল কথা হচ্ছে, আমেরিকা ও অন্যান্য বিশ্ব কুফুরী শক্তির বিরুদ্ধে শুধু যুদ্ধ করাটা প্রশংসনীয় নয়৷ কেননা, তারা তো একে অপরের সাথে নিজেদের মধ্যে বিবাদে লিপ্ত৷ প্রকৃত মুজাহিদ ও মু’মিন হচ্ছে ঐ ব্যক্তি; যে একদিকে কাফেরদের বিপক্ষে জিহাদ করবে; অপরদিকে মুসলমান ভাইদেরকে হেফাযত করবে৷ তাঁর হাত কোন মু’মিনের রক্তে রঞ্জিত হবে না৷

শুধুমাত্র ধ্বংস উদ্দেশ্য নয়। সঙ্গে প্রয়োজন ভাতৃত্বের বন্ধন ও সমাজ নির্মাণ। কেননা, কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার অন্যতম কারণ হল ইসলামকে হেফাযত করা৷ অথচ ঐ ভ্রষ্ট সম্প্রদায় ইসলামের নাম বিক্রি করে ঈমানদারদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করছে৷ জিহাদের নামে তারা জিহাদকে সমূলে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে৷

ফিতনার জ্ঞান রাখা জরুরী!

এই ভ্রষ্ট সম্প্রদায় মু’মিনদের বিরুদ্ধে কেন যুদ্ধ করে? মুসলিম উম্মাহর আলেমগনের সাথে তাদের মতবিরোধের উৎস কি? উম্মাহর সর্বোত্তম মানুষদেরকে এরা কেন তাকফীর করে? যদি আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানি, তাহলে সত্যের উপর পথচলা আরও সুগম হবে এবং এমন কিছু ফিতনা থেকে রক্ষা পাব, যার দরুন জিহাদী কাফেলা ও মুসলিম উম্মাহর সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে৷

আমাদেরকে হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর কথার উপর আমল করতে হবে ৷ তিনি বলেন,

كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي. )صحيح البخاري و صحيح مسلم(

“লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কল্যাণের বিষয়াদি জিজ্ঞাসা করত৷ কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম; এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে।”(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন,

من لم يعرف إلا الخير فقد يأتيه الشر فلا يعرف أنه شر، فإما أن يقع فيه، وإما ألا ينكره كما أنكره الذي عرفه. )مجموع الفتاوى(

“যে ব্যক্তি শুধু কল্যাণের জ্ঞান রাখে, আর অকল্যাণের জ্ঞান রাখে না, হয়তো সে অকল্যাণকে কল্যাণ মনে করে তাতে লিপ্ত হয়ে যাবে অথবা কমচেকম সে অকল্যাণকে না চেনার কারণে এমন বিরোধিতা করবে না, যেমনটা অকল্যাণ সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তি করবে৷”(মাজমাউল ফাতওয়া)

তাই ঐ সমস্ত বিষয়াদি সম্পর্কেও আমাদের মুজাহিদীনের জানা থাকা উচিত- যার কারণে আইএস সম্প্রদায় মুসলিম উম্মাহর প্রতিরক্ষার পরিবর্তে তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে৷ যার কারণে তাঁরা মুজাহিদদের কাতার থেকে সরে গিয়ে উল্টো মুজাহিদদের বদনাম করার মানসে জিহাদ বিরোধী শত্রুদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করেছে৷

ভ্রষ্টতার মূল কারণ… প্রবৃত্তির অনুসরণ

আইএস ফিতনার সূচনালগ্ন থেকে, বরং ‘খিলাফাহ ঘোষণা’র সময় থেকে নিয়ে আজ অবধি জুলুমের কালিমা লেগেই আছে। ইনশাআল্লাহ, তাদের পতন সন্নিকটে। যদি আপনি তাদের চিন্তা-চেতনা ও কাজ-কর্মের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করেন, আর নিকট-অতীতের সমস্ত ভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করেন… তাহলে দেখবেন- সময় ও স্থানের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামী ইতিহাসের সকল ভ্রষ্ট সম্প্রদায় একটি মৌলিক গুণে গুণান্বিত এবং তা এক ও অভিন্ন। আর তা হলো: প্রবৃত্তির অনুসরণ।

ইসলাম মানে হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত ও উপাসনা করা৷ আল্লাহর ইবাদত শরীয়তের উপর আমল করার নাম৷ কি বৈধ কাজ বা অবৈধ, বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে সকল বৈধ কাজের মাঝে, বিশেষ করে কোন জিনিস জিহাদী আন্দোলনের জন্য উপযোগী আর কোন জিনিস অনুপযোগী… এগুলো সব ইসলামী শরীয়াহর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ শরয়ী হুকুমতও শরয়ী ইলমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ইসলামী শরীয়াহ আমাদের যা বলে তা আমাদের মন:পুত হোক বা না হোক, তা আমাদের মেনে নেয়া অপরিহার্য৷ কিন্তু আইএস সম্প্রদায় নিজেদের প্রবৃত্তিকে শরীয়ত হিসেবে বানিয়ে নিয়েছে৷ নিজ প্রবৃত্তির বাসনা পূরণে তারা জিহাদের কল্যাণের বুলি আওড়ায়৷ তাদের প্রবৃত্তি ইলমে শরীয়াহর বিপরীত হলে, তখন প্রবৃত্তিকে পশ্চাতে রাখেনা৷ আমল শুধু তাই করে, যা প্রবৃত্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷ কিন্তু সাথে সাথে তারা শরীয়াহ বহির্ভূত কাজকে শরীয়াহর অন্তর্ভুক্ত কাজ হিসেবে প্রচার করে৷

এমতাবস্থায় যদি শরীয়াহর ও জিহাদী কাফেলার কল্যাণের ভিত্তিতে কেউ তাদেরকে বাধা প্রদান করে, তখন বাধাদানকারীরা বিপদের সম্মুখীন হয়৷ আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে: তারা এটাকে সঠিক পথ আখ্যা দেয় এবং অন্যদেরকে সবচেয়ে জ্ঞানী, অধিক পরহেজগার ও আল্লাহভীরু বলে ঠাট্রা করে। এমনকি দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে যাদের জীবনের দশ বছরের অধিক সময় কেটেছে, যারা ইলম, তাকওয়া ও খোদাভীরুতে, অভিজ্ঞতায় এবং কুরবানীর দিক দিয়ে অন্যতম, তারা এমন ব্যক্তিদের অবদান অস্বীকার করে, বরং নিজেদের বন্দুকের মুখ তাদের দিকে ঘুরিয়ে দেয়৷

শরীয়তের নয়, নিজেদের উন্নতি-ই তাদের লক্ষ্য!

তারা শয়তান ও প্রবৃত্তির প্ররোচনার কারণে শরীয়ত অনুসরণ ছাড়া শুধু ক্ষমতাসীন হওয়ার মধ্যে জিহাদ ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ খুঁজে বেড়ায়। তাই তারা যেকোনভাবে শক্তি অর্জন করতে ইচ্ছুক। এই সীমালঙ্ঘনকারী দল যেকোনভাবে ক্ষমতায় আসীন হতে চায়। এটাকে তারা নিজেদের জন্য ফরজ করে নিয়েছে৷ এই পদমর্যাদা হাসিলের জন্য তারা শরীয়তের অনেক সুষ্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ হুকুম-আহকাম পদদলিত করেছে। অসংখ্য নিষ্পাপ প্রাণ তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। অসংখ্য সতী নারীর সতীত্ব নষ্ট করেছে। আশ্চর্যের বিষয় তারা এগুলোকে নিজেদের জন্য শুধু বৈধ নয়, বরং ফরজ মনে করে৷

এটা হওয়া উচিত ছিল যে, শরীয়ত আমাদেরকে যে পথ প্রদর্শন করে, কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই নিজেরদের জন্য কল্যাণকর ও উপকারী বিবেচনা করে, সে পথ চলায় অবিচল থাকা। এটা কাম্যও বটে৷ যেন আমরা ইলম ও জ্ঞানের এই পথ থেকে বিচ্যুত না হই, এমন চিন্তা-চেতনা লালন করা আমাদের জন্য জরুরী। এমনিভাবে আমাদের জন্য আবশ্যক হলো: জ্ঞানী, আল্লাহভীরু, অভিজ্ঞ উলামাদের শরণাপন্ন হয়ে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পথ চলা এবং অহংকার ও গোড়ামি পরিহার করে বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে জিহাদের পথে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু তারা শরীয়তের জ্ঞান লাভ করে পথ চলে না; বরং নিজ প্রবৃত্তির বাসনা পূরণে ইলমে শরীয়াহকে জোর করে নিজেদের কাজের সপক্ষে দলীল হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয়।

সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায় কখনো মাসআলা জেনে-শুনে, ভালো-মন্দ ভেবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না; বরং তারা তাদের সমস্ত কথা-বার্তা, কাজকর্ম, আচার-আচরণ, দাওয়াত, যুদ্ধ-বিদ্রোহ নিজ প্রবৃত্তি অনুযায়ী করে৷ অর্থাৎ কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে রাগ ও প্রতিশোধের আগুনে দগ্ধ হয়ে তারা জঘন্য পাপাচার করে এবং তার পক্ষে আবার শরয়ী প্রমাণাদি তালাশ করে৷

উলামায়ে কেরামের সাথে মতানৈক্য কেন?

জেনে শুনে আমল করার নাম হলো ইসলাম। যেখানে  ইলমে শরয়ী বিদ্যমান, জিহাদী ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বিদ্যমান, উভয়ের আলোকে কল্যাণ-অকল্যাণ সবকিছু ইতিহাসের পাতায় সংরক্ষিত এবং বিভিন্ন কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। এমনিভাবে আলহামদুলিল্লাহ, পথ প্রদর্শন ও দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য জিহাদের ময়দানে অজস্র আল্লাহভীরু অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম  ও জিহাদী ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছেন, কিন্তু তারা তাদের কাছে কোন কিছু জিজ্ঞেস করে না; বরং জেনে বুঝে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। কেন? কারণ শুধু একটাই, বিজ্ঞ উলামাগণ তাদের প্রবৃত্তির বিপরীত মশওয়ারা এবং ফতোয়া প্রদান করেন। এই উলামাগণ যেহেতু তাদের ভ্রষ্টতার পক্ষে দলিল আনবেন না, তাই তারা তাদের শরণাপন্ন হয় না এবং তাদের কিতাবের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, বরং তাদের প্রবৃত্তি যা চায়, তা করে বসে। যাকে যেভাবে চায় নৃশংসভাবে হত্যা করে.. আর যাকে চায় তাকে তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়.. এই সবকিছু করার পরও তারা চায় তাদের কাজ-কর্মগুলোকে যেকোনোভাবে শরীয়াহ সমর্থিত বলা হোক এবং জিহাদ নির্মূলকারী ঐ সমস্ত কাজকে সরাসরি জিহাদই বলা হোক!

ভ্রষ্টতার আরেক কারণ হচ্ছে: “গোঁড়ামি”!

সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের ভ্রষ্টতার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে গোঁড়ামি। আসলে এই গোঁড়ামি সৃষ্টি হয় প্রবৃত্তির দাসত্বের কারণে। কিন্তু তা নিয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা জরুরী। গোঁড়ামি ঈমান ও নেক আমল বিনষ্ট করার জন্য ধ্বংসাত্মক ও মারাত্মক নিকৃষ্ট একটি বিষয়। জিহাদী ইতিহাসের পাতায় পাতায় সেই সীমালঙ্ঘনকারী দল ‘আল-জাযায়ের’ থেকে নিয়ে আইএস পর্যন্ত তাদের অধিকাংশের মাঝেই আপনি এই গোঁড়ামি লক্ষ্য করবেন। এই গোঁড়ামির কারণেই সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তারা বুঝতে শুরু করে। ফলে তারা সত্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাকে আর মাজলুমের বিরুদ্ধে জালেমদেরকে সাহায্য করে। এই গোঁড়ামির কারণে তারা অনেক কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই গোঁড়ামির কারণেই তারা জঘন্য পাপাচারকেও নিজেদের পাপের খাতায় লিপিবদ্ধ করেছে।

অধিকাংশ জায়গায় এই গোঁড়ামি দলবদ্ধভাবে আত্মপ্রকাশ করে। গোঁড়ামি জিহাদি আন্দোলনের অনেক ক্ষতি করেছে। সমাজে কোন ধরনের গোঁড়ামির সৃষ্টি হলে, তা দূরীভূত করা শরীয়াহ বাস্তবায়নকারী দা‘য়ীদের জন্য জরুরী।

কিন্তু আইএস সম্প্রদায় দিন দিন গোঁড়ামিকে বৃদ্ধি করে এবং তাকে নিজেদের সম্মান লাভের মাধ্যম মনে করে। অসংখ্য হাদীসে আসাবিয়্যতের নিন্দা করা হয়েছে। তার দিকে আহ্বান করাকে জাহিলিয়াতের দিকে দাওয়াত প্রদানের নামান্তর আখ্যা দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে-

دَعُوهَا فَإِنَّهَا مُنْتِنَةٌ

‘তা ছেড়ে দাও। কেননা তা অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত।’(সহীহ বুখারী)

তার পতাকাতলে যুদ্ধ করাকে স্বার্থপরতার পতাকাতলে যুদ্ধ করার নামান্তর বলা হয়েছে। আর সেই যুদ্ধে নিহত হওয়াকে জাহেলী অবস্থায় নিহত হওয়ার নামান্তর বলা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

« من قتل تحت راية عمية يدعو عصبية أو ينصر عصبية فقتلة جاهلية ».

“যে ব্যক্তি স্বার্থপরতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে- চাই তা গোষ্ঠিপ্রীতির খাতিরে হোক বা স্বজনপ্রীতির আহবানে হোক, কিংবা স্বজনপ্রীতির সহায়তায় হোক (মোটকথা দ্বীনের জন্য নয়, বরং নিজের খান্দানের জন্য) এমতাবস্থায় তার নিহত হওয়াটা  জাহেলী অবস্থায় নিহত হওয়ার শামিল।” (সহীহ মুসলিম)

সুতরাং এ থেকে বোঝা যায়, গোঁড়ামির সূচনা হলো: মূর্খতা। এমনিভাবে গোঁড়ামির সমাপ্তি হলো: এ লক্ষ্য পূরণের জন্য যুদ্ধ করা, কাউকে হত্যা করা এবং নিজে নিহত হওয়া।

গোঁড়ামি কি?!

গোঁড়ামি মানে অন্যের মাঝে থাকা কল্যাণ ও সৌন্দর্যকে অস্বীকার করা এবং নিজের মাঝে থাকা খারাবি ও দোষ-ত্রুটিকে সঠিক জ্ঞান করা। সীমালঙ্ঘনকারী দল নিজেরদের সকল সদস্যদের কাজ-কর্মকে নেক আমল এবং সবাইকে অনন্য দায়ী হিসেবে দাবি করে। তারা সব সময় নিজ সদস্যদের গুণাবলী বর্ণনা করে। আর অন্যান্য জিহাদী কাফেলার সাথীদের গুণাবলিকে যেকোনোভাবে ত্রুটিপূর্ণ সাব্যস্ত করে। নিজ দলের সাথীদের দোষ-ত্রুটির ব্যাখ্যা করে চলে। তাদের পাপকে পুণ্য মনে করে। আর ত্রুটিকে মনে করে মহৎ গুন। অথচ তারা তাদের বাইরের সমস্ত জিহাদি কাফেলার সমস্ত কল্যাণকে অনিষ্ট বোধ করে। তাদের সমস্ত গুণাবলিকে ত্রুটি সাব্যস্ত করে। তারা ঐ সমস্ত কল্যাণের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, যা তাদের তানজিমের বাইরে অবস্থিত। ঐসব ত্রুটি এড়িয়ে যায়, যা তাদের দলে বিদ্যমান। যে ত্রুটি  তাদের ভিতরে রয়েছে, তা যেকোনমূল্যে ভালো প্রমাণ করে। যদি কোন পাপ তাদের দল থেকে তাদের নামে, তাদের পক্ষ থেকে বের হয়, তাহলে তারা কখনো তা পাপ হিসেবে মেনে নিতে রাজি হয় না। তারা ওই পাপকে পুণ্য বানিয়ে ছাড়ে। পাপের সাথে তাদের এমন মিত্রতা, যে ব্যক্তি তাদের সাথে সম্পৃক্ত কোন পাপের দিকে দৃষ্টিপাত করে, তার সাথে তারা শত্রুতা পোষণ করে।

কল্যাণকর যুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণ!!

সীমালঙ্ঘনকারী দলের বাইরে যদি কোন জিহাদী কাফেলা শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, কাফেরদের সাথে প্রাণপণ লড়াই করে, শরীয়াহর উপর পরিপূর্ণভাবে আমল করে, এসব পুণ্যের কাজ তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। সেই ভালোর কোন দাম নেই। সেই পুণ্যের কোন প্রশংসা নেই। প্রশংসা তো দূরে থাক, তা স্বীকারও করা যাবে না। যেহেতু তা তাদের দলের বাইরে সংঘটিত হয়েছে। তাদের দলের বাইরে যেসব পুণ্য বিদ্যমান, তা তাদের কাছে ঘৃণা ও শত্রুতার যোগ্য।

কেন? কারণ একটাই! যেহেতু তারা তাদের দল থেকে বা তাদের দলের নাম পরিচয় দিয়ে বের হয়নি। আর তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে, যাতে করে এই ভালো দলটা তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। যদি এই ভাল দলটা তাদের আনুগত্য ও বাইয়াত গ্রহণ না করে, তাহলে তারা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালায়। তাদেরকে এজেন্সির দালাল ও বিকৃত মানহাজের অনুসারী বলে অপবাদ দেয়। যদি কোনরকম শক্তি অর্জন হয়, তাহলে তারা ঐ জিহাদী কাফেলার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দেয়। আর সাধ্যমত শক্তি প্রয়োগ করে। তাদের কাছে তাদের দলের বাইরে কোনো পুণ্য প্রশংসার যোগ্য নয়। একজন ব্যক্তি দ্বীনের খেদমত করছে, তার দ্বারা দিনের কিছু কল্যাণ হচ্ছে৷ দরকার তো ছিল তাদের প্রশংসা করা। কিন্তু না ! বরং তার গুণাবলীর অস্বীকার করে বসে। পারলে তার পুণ্যকে পাপে পরিবর্তন করে। যদি কোনভাবে তার মাঝে কোন ত্রুটি বিদ্যমান থাকে, তাহলে তারা তা বাড়িয়ে সাজিয়ে-গুছিয়ে বলে। আর ঐ ত্রুটিকে একটি মহাপাপে রূপায়ণ করার চেষ্টা করে।

“শত্রুতা-মিত্রতা” শুধুমাত্র দলের জন্য!

তাদের তো এ রকম হওয়া উচিৎ ছিলো; জিহাদী দলের উদ্দেশ্য দ্বীন জয়ী হওয়ার পর মুসলিম উম্মাহর নুসরাত ও তাদের পথ প্রদর্শন করা। কিন্তু এই কপালপোড়া দল নিজেদের দলের ঝান্ডা মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তোলন করে ভালোবাসা ও মিত্রতার পরিধিকে তারা এতটাই সংকীর্ণ করেছে যে, তাদের কাছে এ ক্ষুদ্র দলটিই হলো মুসলিম উম্মাহ!

যে তাদের দলে আছে, সে যেন পুরো উম্মাহর মাঝে আছে। বন্ধুত্বের পরিধিতে সে শামিল। আর যে তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত না, সে যেন উম্মাহর-ই অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের মহব্বত-ভালোবাসা শুধুমাত্র তাদের সাথেই হবে, যারা তাদের তানজিমের সদস্য বা তাদের দলের হিতাকাঙ্খী। আর যে ব্যক্তি তাদের দলের বাইরে থাকবে, সে অবশ্যই ঘৃণা ও শত্রুতার পাত্র ৷

একজন মু’মিনের শত্রু-মিত্র এর মাপকাঠি একমাত্র আল্লাহর দ্বীন হওয়া জরুরী। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ أَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ وَأَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَنْكَحَ لِلَّهِ فَقَدْ اسْتَكْمَلَ إِيمَانَهُ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করে, আল্লাহর জন্য দান করে, আল্লাহর জন্য বারণ করে এবং আল্লাহর জন্য বিবাহ করেছে, তার ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছে৷”(সুনানে তিরমিজী)

কিন্তু তাদের কাছে এগুলোর মাপকাঠি হলো: তানজীম এবং দল। এমনিভাবে ঈমান বিশুদ্ধতার কষ্টিপাথরও একমাত্র ঐ নির্দিষ্ট দলের সাথেই নির্দিষ্ট। নাউজুবিল্লাহ!

এ রকম লোক যেন সময়ের ভাষায় এই কথারই পয়গাম দেয় যে-

من أحب للتنظيم و أبغض للتنظيم، و منع للتنظيم، و أعطى للتنظيم فقد

অর্থাৎ যে ব্যক্তি তানজিমের জন্য ভালোবাসে, শত্রুতা পোষণ করে, দান করে ও বারণ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছে। নাউজুবিল্লাহ!

এরা তানজিমের জন্য মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে, তার জন্য মুসলিমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং শত্রুতা পোষণ করে৷ তারা তো ঈমানী ভ্রাতৃত্বকে নামমাত্র ব্যবহার করে। ঈমানী বন্ধন তারা অস্বীকার করে না। কিন্তু তা তাদের তানজিমের ফায়দা ও কল্যানের জন্য ব্যবহার করে। যদি কোন জায়গায় ঈমানী চাহিদা আর তানজিমের কল্যাণ এর মাঝে বৈপরীত্য দেখা দেয় এবং দুটো থেকে যেকোন একটার সঙ্গ দিতে হয়, তখন তারা তানজিমকেই আঁকড়ে ধরে।

নেককার-পাপাচারী সবাইকে দলের অন্তর্ভুক্তকরণ!

এরা যেহেতু নিজেদের দলের জয় ও বড়ত্বের আশায় নিমগ্ন; তাই তারা নিজেদের দলকে অন্যের বিপক্ষে শক্তিশালী ও সামর্থবান  দেখানোর জন্য উম্মাদনায় মেতে ওঠে। কেননা, তারা এটা প্রকাশ করতে আগ্রহী যে, যদি শক্তি-সামর্থ্য ও অস্ত্র থেকে থাকে, তাহলে তা শুধু আমাদের কাছেই আছে। এই জন্য যে ব্যক্তি তাদের সামনে নিজের শক্তি-সামর্থ্য ও যোগ্যতা প্রকাশ করে নিজেকে তাদের কাছে সোপর্দ করে, তাদের হাতে বায়াত দেয়, তখন সে ব্যক্তি যত বড় পাপীই হোক না কেন, হত্যাকারী, লম্পট, বদমাশ বা ডাকাত-ই হোক না কেন, যদি সে তাদের দলকে অন্যান্য মুসলমানদের বিপক্ষে শক্তিশালী করে; তাদের দলকে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়ে দিতে পারে, তাহলে তারা তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। নেককার-পাপী সবাইকে দলের অন্তর্ভুক্ত করাকে তারা অপারগতা হিসেবে প্রকাশ করে। এটা প্রকাশ্য যে, তারা এটাই বলতে চায় পৃথিবীতে তাদের দল “আইএস”ই হচ্ছে একমাত্র জিহাদী দল! যখন উদ্দেশ্য এমন হয় যে, তখন তাদের দলভুক্ত হওয়ার জন্য একটাই লাইসেন্স জরুরী; তা হলো: লোকজন তাদের দলকে নিজেদের দল বলুক এবং তাদের আমীরকে নিজেদের খলিফা ভাবুক। সুতরাং পরশ পাথর শুধু এই একটাই, যার দ্বারা লোকজনকে তানজিমের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

একটা হিসাব ব্যতীত অন্য কোন হিসাব না থাকা!

এরকম তানজিমে কারো কোনো হিসাব নিকাশ হয় না! তানজিম থেকে কাউকে বহিষ্কার করা হয় না! তবে শুধু একটা হিসাব হয়। আর তা হলো: তানজিমের আমীরের সাথে বিদ্রোহ করছে কিনা? এই দল ছেড়ে অন্য কোন দল প্রতিষ্ঠা করছে কি না? কেউ তানজিম ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে কি না? যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ‘না‘ হয় ; তাহলে আর কোন কথা নেই। কোনো হিসাব নিকাশ নেই। তাদের সব হত্যা গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়… সব জুলুম-নিপীড়ন মেনে নেয়া হয়… নিকৃষ্ট পাপীও তাদের কাছে পবিত্র… তাদের পাপসমূহ ক্ষমার যোগ্য বরং পুরো তানজিমের জন্য উপমাযোগ্য ৷

তানজিমের নাম দিয়ে যদি কেউ কোন মুসলমানকে হুমকি-ধমকি দেয়, তাহলে তাদের কিছু যায়-আসে না৷ তানজিমের প্ল্যাটফর্ম থেকে যত মুসলমানকে কাফের বলা হোক না কেন, কোনো বাধা নেই৷ কেন?? কারণ, যদি বাধা দিতে যায়, তাহলে লোকজন দল ছেড়ে চলে যাবে৷ তারা তানজিম বিরোধী হয়ে যাবে৷

এটা তো স্পষ্ট যে, দলের ঐক্য এবং শক্তিই তাদের জিহাদের প্রধান উদ্দেশ্য৷ শত্রু-মিত্রু, আপন-পর উভয়ের বিপক্ষে তো শক্তি দরকার৷ তাই নেককার-পাপী সবাইকে তানজিমের অন্তর্ভুক্ত করাকে তারা নিজেদের অপারগতা বানিয়ে নিয়েছে৷ আর এই অপারগতাকে জিহাদের কল্যাণ হিসেবে ব্যাখ্যা করে, সীমালঙ্ঘনকারীরা এভাবে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে৷ মিডিয়া তাদের কাজ-কর্মকে ব্রেকিং নিউজ বানিয়ে সমালোচনা আর তর্ক যুদ্ধের মাধ্যমে পুরো জাতির সামনে জিহাদি কাফেলাসমূহকে কলুষিত করে তোলে৷ জিহাদের শত্রুরা জিহাদের নামে এই জুলুম অবিচার দেখে খুশিতে ফুল ছিড়ে৷ তাদের এই কাজ-কর্মের অনুতাপ, আফসোস সমগ্র জিহাদী কাফেলা বরং সমস্ত উম্মাহকে ভুগতে হয়৷

“আমাদের জন্য আমাদের আলেম, তোমাদের জন্য তোমাদের আলেম”

জিহাদের তরী যখন ডুবে যাওয়ার উপক্রম, তখন অন্যান্য জিহাদী কাফেলাগুলোর জন্য এই সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতিরোধ করা জরুরী৷ কেননা, এই অনিষ্ট থেকে বাধা দেওয়া ফরজ৷ ফরজ আদায়ের লক্ষে যখনই কোন জিহাদী কাফেলা অগ্রসর হয়, তারা নিষ্ঠুরভাবে তাদের বাধা দেয়৷ “আমাদের জন্য আমাদের আলেম, তোমাদের জন্য তোমাদের আলেম” এই বলে তাদেরকে নিশ্চুপ করে দেয়৷ তারা বলে, আমরা সেই নসিহা কবুল করবো, যা আমাদের আলেমরা করবে৷ অন্য কোন দলের কোন আলেমদের নসীহা আমরা কবুল করব না ৷ তাদের ফতোয়া মানবো না! এভাবে তারা তাদের গোঁড়ামিকেই দ্বীন ও শরীয়তের গন্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলে। যেন এখন থেকে প্রত্যেক জামাআহ আর তানজিমের এক একটা শরীয়ত থাকবে!.. এরা নিজেরাই তো শরীয়াহকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। কিন্তু হায়! যদি তাদের কাজ-কর্মের ফলাফলের কোন সীমানা ঠিক করে দেয়া যেত৷

হায়! যদি পৃথিবীতে আইএস গোষ্ঠী কেবল তাদের রোপনকৃত ক্ষেত-ই বিনষ্ট করতো! এবং তাদের দায়ভার অন্যান্য তানজিম ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উপর না আসত…! কিন্তু না! জিহাদে কি এরকম কোথাও হয়?! এ দিকে একদলের একগুঁয়েমির কারণে পুরো মুসলিম উম্মাহ তাদের কারণে কষ্টে ভুগছে৷ একদল যদি ওই জিহাদী তরীতে ছিদ্র করে, তাহলে তো সমগ্র কাফেলা ডুবে যাবে৷

আবার এই সীমালঙ্ঘনকারী প্রথমেই এই ঘোষণা করে দেয় যে, আমরা শুধু ওদের নসিহা শুনবো, যারা আমাদের কাতারে আছে৷ অথচ তারা তাদের ভালো মনীষীদের কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না এবং অন্যান্য জিহাদী তানজিমের দলিলভিত্তিক কথাও শুনতে চায় না৷

আফসোস! যদি তারা এই একটা হকও অন্যদেরকে দিয়ে দিত যে, তারা যা নিজেদের জন্য সঠিক মনে করছে, তারা সেটার প্রচার করুক! তারা যদি এতটুকু সহনশীলতার সাথেও কাজ করত, তাহলেও কিছুটা মানা যেত। তখন যারা সঠিক পথ অন্বেষণ করছে, তারা তা পেয়ে যেত। কিন্তু না! তাদের সাথে মতবিরোধ এবং যেকোনোভাবে তাদের কথার সমালোচনা করাই পাপ! প্রথমে বলতো আমাদের উলামা আমাদের জন্য, তোমাদের উলামা তোমাদের জন্য। কিন্তু পরে এসে দেখা যায়, তারা অন্যের কাছ থেকে নিজেদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ-কর্ম হওয়াটাই কামনা করে৷ তারা অন্যের থেকে নিজেদের মতামতের উপর আনুগত্যের আগ্রহ প্রকাশ করে। নিজেদের কাজ-কর্মে জানান দেয় যে, যারা তাদের দলকে সঠিক মেনে নিবে, সেই সঠিক। তাদের দলকে সবার সঠিক বলা উচিত। তাদের আগে বেড়ে কারো কথা বলার কোনো অনুমতি নেই!

এরা কেমন জাতি! যা তাদের সমাবেশে বলা হয় তা সবই সঠিক,

আর যারাই তাদের সুরে সুর মিলাবে তারাই তাদের অন্তর্ভুক্ত!

এরপরেও যদি কেউ নিজ ফরজ দায়িত্ব আদায়ের লক্ষ্যে মতবিরোধের বীরত্ব ও সাহসিকতা দেখায়, মুসলমানদের সামনে সঠিককে সঠিক আর ভুলকে ভুল হিসেবে সাব্যস্ত করার মাধ্যমে সত্য মিথ্যার মাঝে তফাৎ করে দেয়, তখন তাদের বিরুদ্ধে মুরতাদ হওয়ার অপবাদ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে তৈরি করে। তারপর তারা এমন কাজ করে, যার দরুন জিহাদী কাফেলাসমূহ পরাজিত হয়। আপনি সিরিয়া, ইরাক থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত চষে বেড়াতে পারেন, দেখবেন আইএস এর কার্যপ্রণালী ঠিক এ রকমই৷

এই ফাসাদের মূল কি? কারণ কি? কারণ শুধু একটাই গোঁড়ামি ও অহংকার। আর এই উভয়ের পেছনে কারণ হচ্ছে ঐ প্রবৃত্তির দাসত্ব। বর্তমানের সীমালঙ্ঘনকারী আইএস বলেন, আর পূর্বের খারেজী গোষ্ঠি বলেন, তারা সবাই এই গুণে একীভূত৷ এজন্যই উম্মাহর বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম খারেজীদেরকে ‘প্রবৃত্তির দাসত্বকারী’ দল হিসেবে স্মরণ করেছেন।

এজেন্সিদের জন্য ভাসমান গঙ্গা!

এটাই গোঁড়ামি, যা এজেন্সিদের ষড়যন্ত্রের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে৷ পৃথিবীর সমস্ত কুফুরী এজেন্সিগুলো নিজেদের সদস্যদেরকে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এমন তানজিম পাঠিয়ে থাকে৷ আর তারা এমন লোকদেরকে যাচাই বাছাই ছাড়া সহজেই গ্রহণ করে নেয়, নিজেদের সদস্য বানিয়ে নেয়৷ আর তখন তারা অত্যন্ত সহজভাবেই জিহাদ বিরোধী কার্যকলাপ করার কাজ আঞ্জাম দিয়ে থাকে৷ যেহেতু কেউ তাদের দল, পতাকা এবং আমীরের আনুগত্যের ভিত্তিতে ঐক্যমত প্রকাশ করলেই সদস্য গণ্য করা হয়৷ তাদের চিন্তা-চেতনা ও কাজ-কর্মের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হয় না৷ তারা যে কাজই করুক না কেন, যদি সে কোনভাবে জিহাদ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলেই হলো৷ যেহেতু তাদের নিকট তাদের কাজ-কর্মের প্রতি খেয়াল করার কোন দরকার নেই; তাই তারা তাদেরকে ‘মারহাবা’ বলে নিজেদের তানজিমে শামিল করে নেয়। তারা তাদেরকে যোগ্যতা, শক্তি এবং যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য নিজেদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে এবং তাদের কাছ থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করে। তারা উপকৃত হবেই না কেন? যেহেতু তারা শুধু নিজেদের মর্যাদা-সম্মান চায়। এমনিভাবে মিডিয়ায় যদি সব সময় তাদের দলের নাম উচ্চারিত রাখতে হয়, তাহলে তো তাদেরকে ভর্তির নিয়মটা অবশ্যই হালকা রাখতে হবে। যেন তারা এ কথাই বলে যে, ‘সঠিক মুজাহিদ’ ও ‘সঠিক মুসলমান’ হওয়ার জন্য তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ও কাফিরদের মুকাবিলায় কিছু অপারেশন পরিচালনা করাই যথেষ্ট। এর বিপরীতে তারা যে কোন মুসলিমকে কাফের বলুক, তাতে কিছু আসে যায় না! যে কোন মানুষের রক্ত প্রবাহিত করুন বা যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে হত্যা করুক, তাতে কোন পরওয়া নেই! তারা মানুষের চামড়া ছিলে ফেলে, জীবন্ত, ‍সুস্থ-সবল মানুষকে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে তাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করে। বিরোধী দলের লোকজন হত্যা করে তাদের গোশতকে টুকরা টুকরা করে। বন্দী মেয়েদেরকে দাসী বানিয়ে তাদের দ্বারা বড় বাজার বসায়। জিহাদের নামে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের হিংস্রতায় ভরপুর এমন দৃশ্য দিয়ে সিনেমা বানিয়ে জিহাদ বিরোধী শিবিরকে আরও শক্তিশালী করে… এ সবকিছু ঐ একটা ‘ভাল গুণের’ বদৌলতেই গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। আর তা হলো: সে তাদের একজন সদস্য। নিজ দলের সব পাপই পুণ্য এবং সব কুশ্রীই সুশ্রী এবং সমস্ত পাপ ও দোষকে খিদমতের দৃষ্টিতে দেখা হয় বলেই পরিলক্ষিত হয়।

এই অবস্থায় ‘সিআইএ’ ‘আইএসআই’ ‘র’ এবং পৃথিবীর সমস্ত ইসলাম বিদ্বেষী কুফরি এজেন্সিগুলো এই ভাসমান গঙ্গায় হাত ধুতে দৌঁড়াবে না কেন? এই এজেন্সিগুলো জিহাদের নামে এমন এমন কাজ কেন করবে না, যার দ্বারা ইসলামের কুৎসা রটানো হবে এবং জিহাদকে ঘৃনার পাত্র বানানো হবে! অতঃপর জিহাদের নামে তারা সব ধরনের অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয় এবং ‘খলীফাতুল মুজরিমীন’ তথা অপরাধীদের খলিফা, আর তার ‘আমলা ও সৈন্যরা’ আপন গদিতে খুশিতে মত্ত। ওদিকে ধোঁকাবাজ এজেন্সিগুলো নিজ জায়গায় খুশি! সবার আক্রমন আলাদা আলাদা। আর সব ধ্বংসলীলা ও ক্ষতি জিহাদি আন্দোলন ও নিগৃহীত নিপীড়িত মুসলিম উম্মাহর উপর দিয়েই বয়ে যায়৷

জিম্মাদারী প্রত্যেক কর্ম পরিচালনার… যখন কাউকে তিরস্কার করা হয় না!

আইএস এর নামে এমন কোন অপরাধ নেই, যা সংঘটিত হয়নি? জিহাদের দুর্নাম করে এমন কোন হরকত বাকি আছে কি, যা এখানে হয়নি? এমন সব কাজই হয়েছে, যা ইহুদী, হিন্দু ও তাদের মিত্ররা হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সেসব কাজ-ই হয়েছে, তাও আবার জিহাদের নামে হয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা কি কখনো তাদের কোনো অপরাধের তিরস্কার করেছে? ওই সমস্ত জঘন্য অপরাধ করার পরেও কি কখনও তাদের কোনো সদস্যের হিসাব-নিকাশ হয়েছে? না, কখনো হয়নি!

আইএস হোক বা আইএসের পূর্ববর্তী আল জাযায়ের; যারাই সীমালঙ্ঘন করেছিল তাদের ইতিহাস দেখুন, এখানে যারা কাজ পরিচালনা করে, মুখের থুথু দ্বারা তাদের প্রতিদান দেওয়া হয়। কিন্তু কোন কাজ পরিচালনা না করলে, অথবা তিরস্কার বা বন্ধন ছিন্নতার কোন একটি শিরোনামও যদি অনুসন্ধানে উঠে আসত! এখানে তাদের চলন ভঙ্গি বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাঁক-ডাক তো খুব হয়। কিন্তু এই ভিড়ে তাদের মধ্যে কোন ‘গতিরোধক’ ও ‘ড্রাইভিং’ করার কোন মূলনীতির দেখা কোথাও মিলে না। পাপকে ঘৃণা করা ও তা থেকে বিরত থাকাকে এরা আবশ্যক মনে করে না। দলের নামে কিছু-না-কিছু হওয়া এবং মিডিয়ায় তাদের নাম দীর্ঘজীবী হওয়ারই আশা… সব ধরণের অপরাধকেও তারা জিহাদের খাতায় তুলতে মিডিয়াকে চাপ প্রয়োগ করে বাধ্য করে। যদি কেউ কোন খারাপ কাজের সমালোচনা করে এবং তা থেকে বিরত থাকার তাগিদ দেয়, তখন তারা নিজেদের সভ্য ভাইয়ের মনোমালিন্যতাকে কেন প্রাধান্য দেয়? মিডিয়া কভারেজ ও সদস্যদের যদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে তার জিম্মাদারী নেওয়াটা তানজিমের প্রাপ্য। চাই এই জিম্মাদারী জিহাদী দাওয়াত এর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হলেও! অতঃপর এখানে কে লক্ষ্য রাখে যে, কর্ম পরিচালনা যদি নিজেদের হয়ে থাকে, তাহলে জিম্মাদারীও নেওয়া চাই? সুতরাং কর্ম পরিচালনা যদি হয়েই থাকে, তাহলে জিম্মাদারীও নিজেদেরই নিতে হবে এবং তা জিহাদ ও নিজের দলের খাতায় আবশ্যকীয়ভাবে উঠাতে হবে। এখন চাই ওই কাজ পরিচালনাটা কোন এজেন্সির দালালেরা করুক, তার কোন পরওয়া নেই। জিম্মাদারী তানজিমের নামেই নেওয়া যাবে। কেন? কেননা মিডিয়ায় তাদের নাম জারি থাকতে হবে! এরকম জিম্মাদারী দ্বারা তো তানজিমেরই শক্তি মিলে! জিহাদ এবং জিহাদী দাওয়াতের শক্তি সঞ্চয় হোক বা না হোক, তানজিমের প্রসিদ্ধি তো অবশ্যই পাওয়া যাচ্ছে!!

ফেতনার কারণ ভিতরগত না বহিরাগত?

এই সবকিছু দেখে এটা বলা যাবে না যে, জিহাদের নামে যা কিছু পাপাচার হচ্ছে, তার সবকিছু এজেন্সির দালালেরাই করছে এবং আইএসের এইসব পাপীরা আসলে সিআইএর এজেন্ট। আর না এটা বলা যাবে যে, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আইএসের নামে যতসব পাপাচার প্রসিদ্ধ, সবকিছু আইএসের সীমালঙ্ঘনকারী খারেজীরাই করে। আর এতে এজেন্সির দালালদের কোনো হাত নেই। এই উভয় মতামতই ভুল। আইএস হোক বা তার পূর্বের সীমালঙ্ঘনকারী অন্য কোন দল হোক, সবার বাস্তবতা হলো: এমন দল জিহাদ ও ইসলামের নামেই আত্মপ্রকাশ করে। তাদের নেতৃত্ব সরাসরি এজেন্সিদের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া মোটেও জরুরী না। শুধুমাত্র তাদের প্রবৃত্তির দাসত্ব ও গোঁড়ামি সব ধরনের অনিষ্টতার দুয়ার খুলে দেয়। তাদের সব ধরনের জুলুম অত্যাচারকে ইনসাফ হিসেবে সাব্যস্ত করে। আর প্রত্যেক মিথ্যাকে নিজেদের জন্য সহ্য করে। এই গোঁড়ামি, অজ্ঞতা ও প্রবৃত্তির দাসত্বের কারণেই তানজিমের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত সাথীদের চিন্তা-চেতনা ও চরিত্র আখলাক খারাপ থেকে খারাপতর হতে থাকে। একদিকে প্রতিশোধের অন্ধ জযবা এবং অজ্ঞতার কারণে তানজিমের সদস্যরা অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়ে যায়। অপরদিকে নেতৃত্বদানকারীরা নিজের তানজিমকে শক্তিশালী দেখানোর জন্য ওই সমস্ত অত্যাচারকে জিহাদের নামে গ্রহণ করে নেয়৷ এমতাবস্থায় এজেন্সিগুলো ওই সকল তানজিমের মাধ্যমে নিজেদের পরিপূর্ণ ফায়দা হাসিল করে। যদি অপরাধমূলক কোন কাজের দিকে তানজিমের লোকদের চোখ না যায়, তাহলে এজেন্সিগুলো নিজেদের দালাল মারফত সেসব অপরাধ করিয়ে নেয়। আর তানজিমের নেতারা সাথে সাথে এজেন্সিদের ঐ পাপাচারগুলোকে নিজেদের কাধে তুলে নেয়। যেন এজেন্সিদের ঐ সব ষড়যন্ত্র ও ফিতনাসমূহকে সুযোগ দান তানজিমের খারাপ নীতিই একত্রিত করে নেয়৷ এভাবে ঐ সীমালঙ্ঘনকারী দলের সদস্যরা এবং এজেন্সি উভয়ই জিহাদী দাওয়াত বিনষ্টে কোথাও পরোক্ষভাবে আর কোথাও প্রত্যক্ষভাবে সাহায্যকারী সাব্যস্ত হয়েছে।

আমাদের করণীয় কী?

“জযবাগুলো ইলমের অনুগত, আর ইলম শরীয়তের অনুগত থাকা চাই,

কারণ, জযবার ঢলে ভেসে যাওয়া মূলত: এক কঠিন ষড়যন্ত্র

দাওয়াত এবং জিহাদের এই সফরে সর্বপ্রথম আমাদের কাজ, যা সর্বাবস্থায় করতে হবে, তা হচ্ছে প্রবৃত্তি এবং যাবতীয় জযবাকে ইলমের অনুগত রাখা এবং ওই ইলমকে পরিপূর্ণভাবে ইলমে শরয়ীর অনুগত রাখা৷ ইলমে শরয়ী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: বৈধ-অবৈধের জ্ঞান এবং সাথে সাথে ইসলামী রাজনৈতিক জ্ঞান অর্থাৎ বৈধ জিনিসসমূহ৷ অতঃপর জিহাদি আন্দোলনের জন্য কি কল্যাণজনক হবে, আর কি ক্ষতিকর? তার জ্ঞান রাখাও জরুরী৷ তারপর সমস্ত জিহাদী কার্যক্রম, দাওয়াত ও কিতাল ইলমে শরয়ীর আওতায় হবে৷ অতঃপর শুধু বৈধ-অবৈধের দিকে লক্ষ্য নয় বরং বৈধ জিনিসসমূহের মাঝে যে জিনিস দাওয়াত ও জিহাদের কাজকে শক্তিশালী করার উপলক্ষ্য হবে এবং যার মাধ্যমে মুজাহিদ ভাইদের ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার বিষয়টি সমুজ্জ্বল হবে, এমন সব বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

দ্বিতীয়ত: সমস্ত গোঁড়ামি থেকে অন্তরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। শুধু আল্লাহর জন্য কল্যাণ ও সংশোধনের ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করা। গোঁড়ামি দলীয় হোক বা না হোক, সবসময় ক্ষতিকর। এটা প্রত্যেক অনিষ্টের মূল ও সমস্ত ফিতনা-ফাসাদের প্রবেশদ্বার৷ এর কারণে কল্যাণ ও বরকতের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। এই গোঁড়ামি ইখতিলাফ, মতবিরোধ, ঘৃণা ও শত্রুতার জন্ম দেয়৷ ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সম্মিলিত কাজ, ইত্তেফাক, ইত্তেহাদের জন্য অন্তরায় হয়৷

সুতরাং কাজকর্মে গোঁড়ামিকে সুযোগ না দেওয়া এবং শুধুমাত্র সত্য ও কল্যাণের সঙ্গে থাকা জরুরী৷ পুণ্য যেখান থেকেই প্রাপ্ত হোক তা গ্রহণ করা এবং পাপ যেখান থেকেই প্রাপ্ত হোক, তা প্রতিরোধ করাই শরীয়তের চাহিদা… কোন দলে আমি নেই; কিন্তু তাতে কল্যাণ বিদ্যমান৷ তখন তার কল্যাণ খোলা মনে স্বীকার করা জরুরী৷ তার জন্য আনন্দিত হওয়া এবং ওই দলকে উক্ত কল্যাণ অনুযায়ী ভালোবাসা জরুরী…!

অন্যদিকে নিজেদের দোষ-ত্রুটি স্বীকার করে, তা সংশোধন করার চেষ্টা করা ফরজ৷ তা বাস্তবায়ন করাও জরুরী৷ অন্যের মাঝে বিদ্যমান কল্যাণ অনুযায়ী তাদেরকে আমাদের ভালোবাসা ও আন্তরিকতা প্রকাশ করা জরুরী। যতটুকু কল্যাণ ততটুকু ভালোবাসা যতটুকু মন্দ ততটুকু ঘৃণা৷ তা যখনই বাস্তবায়ন হবে, তখনই এই সীমাবদ্ধতা ও সংকীর্ণতা আর বাকি থাকবে না। এ কল্যাণের এই ভালোবাসাই বিচ্ছিন্নতা ও দূরত্বসমূহকে বিনাশ করে দিবে, ইনশাআল্লাহ।

তৃতীয়ত: সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধকে বাস্তবায়ন করা জরুরী৷

জিহাদী তানজিমের ভিতরে অন্যান্য তানজিম ও ডিপার্টমেন্ট অপেক্ষা এই ফরজটা বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরী৷ প্রত্যেক সদস্যদের তার কাজ-কর্মের হিসাব দিতে হবে, এ কথা তানজিমের প্রত্যেক সদস্যের যেন অনুভব হয়৷ কেউ যেন উগ্রবাদী মন মেজাজ ও কাজ-কর্মের কোনোভাবে প্রশ্রয় না দেয়। তরবিয়ত ও শিক্ষার এমন ব্যবস্থা করা, যাতে তাযকিয়া, এহসান ও সৎ চরিত্র অর্জন হয়।

চতুর্থত: উগ্রতা- শিথিলতা থেকে পবিত্র সঠিক মানহাজ এবং পথের পরিচয় জানা থাকা জরুরী। এজন্য উগ্র ও শিথিলতাপূর্ণ দলের চিন্তা-চেতনা ও তাদের চরিত্র সম্পর্কে অবগত করা; তাদের প্রতিরোধ করাকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করা। তার আলোকে গুরুত্বের সাথে নিজেদের জিহাদী সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা।

পঞ্চমত: জিহাদী কাতারগুলোর মাঝে বন্ধুত্ব ও একতা সৃষ্টির পুরোদমে চেষ্টা করা। কিন্তু তা শুধু দলের নাম এবং এক আমীরের আওতায় একই পতাকাতলে সমবেত করাই আসল উদ্দেশ্য না হওয়া। যদি দলের নাম, আমীর, পতাকা এক হয় কিন্তু তাদের মাঝে চিন্তা-চেতনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, শত্রু-মিত্র চেনার ক্ষেত্রে মতবিরোধ হয়; তাহলে এ রকম একতা ইসলামের ইতিহাসে সবসময় জিহাদ এবং মুসলিম উম্মার শুধু ক্ষতিই করেছে। সুতরাং ঐক্যের মেরুদন্ড হলো উসুল, মানহাজ, চিন্তা-চেতনা, ভালো-মন্দ, বৈধ-অবৈধ, জিহাদি আন্দোলনের জন্য কল্যাণকর ও ক্ষতিকর বিষয়ে সুষ্ঠ মনোভাব এবং সে মতে আমল করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। যদি তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে, যার ফলে জিহাদী তানজিমসমূহ কাছাকাছি ও একই প্লাটফর্মে এসে যায়। ইনশাআল্লাহ, তা জিহাদি দাওয়াতের জন্য সমূহ কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহর হুকুমে জিহাদি আন্দোলন আরো মজবুত থেকে মজবুত হয় উঠবে।

আমরা উল্লেখিত কথার উপর আমল করার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে পূর্ণ এখলাসের সাথে হেদায়াত ও তাওফিক প্রার্থনা করাও জরুরী। তাহলে আল্লাহর হুকুমে এর দ্বারা আমাদের জিহাদ বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে এবং আমরা মুসলিম উম্মাহকে দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে ফায়দা দিতে পারবো।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর রাজি হয়ে যান। আমাদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ থেকে পবিত্র করে দিন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে মুসলিম উম্মাহর জন্য বিনম্র ও দয়াময় এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন৷

صلى الله تعالى على خير خلقه محمد واله وصحبه اجمعين.

 

****************************

 

 

 

 

 

[1] সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরাম খারেজীদেরকে সবচেয়ে ঘৃণ্যতম সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাদেরকে সীমালঙ্ঘনকারী ও বিদ্রোহী দল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷ তাদের নিয়ে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, (যাতে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে) তা বর্ণনা করেছেন৷ কিন্তু তাদেরকে তাকফীর করেননি৷ ((কারণ, কিছু খারেজী এমন আছে, যারা সাহাবীদেরকে তাকফীর করে না, কোরআনের আয়াতকে অস্বীকার করে না৷))

সুতরাং এ যুদ্ধ হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর অভ্যন্তরীণ বিষয়৷ যেহেতু তারা মুজাহিদীন এবং সাধারণ মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করে, তাই মুজাহিদীন তাদের সাথে যুদ্ধ করেন৷ ইনশাআল্লাহ, অবিলম্বে তাদের সেই ফিতনা সমূলে বিনষ্ট হয়ে যাবে। খারেজীদের সাথে যদিও আমরা যুদ্ধে লিপ্ত কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, মুজাহিদীন উমারাদের মতে আমেরিকা ও তাদের মিত্র কুফফাররাই আমাদের প্রথম শত্রু৷ তাদের সাথেই আমাদের প্রথমে যুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি আমরা খারেজীদের সাথেও যুদ্ধ করব, তবে এ যুদ্ধ আমাদের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ৷ সুতরাং খারেজীদের বিরুদ্ধে আমরা কোন কাফের সম্প্রদায়কে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারি না৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 1 =

Back to top button