আত্মশুদ্ধি – ০৮ || অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া || মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
আত্মশুদ্ধি – ০৮
অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
অনলাইনে পড়ুন
https://justpaste.it/onner_bethay_bethito
ডাউনলোড করুন
Pdf
https://banglafiles.net/index.php/s/9KNLjjmdJWjS4WR
http://www.mediafire.com/file/8jwoim…HowaF.pdf/file
https://archive.org/download/08.onne…thitoHowaF.pdf
word
https://banglafiles.net/index.php/s/JtQ2ywEKinpefRM
http://www.mediafire.com/file/okv9oj…owaF.docx/file
https://archive.org/download/08.onne…hitoHowaF.docx
*************
অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা সাইয়িদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালীন, ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন। আম্মা বা’দ
আমরা সকলেই প্রথমে দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
আলহামদুলিল্লাহ বেশ কিছুদিন পর আবার আমরা আরেকটি তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এ জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ।
অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হল, অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া। অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া, অন্যের বিপদাপদে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা অনেক বড় একটি গুণ এবং অনেক বড় একটি নেক আমল।
আমরা নানান প্রকারের তরকারি দিয়ে তিনও বেলা পেট পুরে খাচ্ছি। অথচ আমাদের আরাকানি ও কাশ্মীরি মা ও ভাই-বোনরা অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, খাবার না পেয়ে তাদের অবোধ শিশুরা চিৎকার করে কাঁদছে।
ফ্যাশন বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সন্তানদের পোশাক বদল হয়। অথচ প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে আমাদের আরাকানি ও কাশ্মীরি মা ও ভাই-বোনদের প্রাণ যায়।
প্রিয় ভাইয়েরা! এই মূহুর্তে যদি আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন আর তাঁর চিকিৎসা করাতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা অস্থির হয়ে পড়ব। ধার-কর্জ করে হলেও তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। তাই না ভাই?
উপস্থিত এক ভাইঃ জি ভাই।
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ এবার একটু ভেবে দেখি তো আরাকান ও কাশ্মিরের মজলুম মুসলমানদের জন্য কি আমার আপনার এ অবস্থা হয়? অথচ তাঁরাও তো আমাদের মা-বোন, আমাদের ভাই ও পিতা।
মু’মিনের বৈশিষ্ট
একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট কেমন হওয়া উচিৎ, দেখুন হাদীসে কী এসেছে?
- عَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «مَثَلُ المُؤْمِنينَ في تَوَادِّهِمْ وتَرَاحُمِهمْ وَتَعَاطُفِهمْ، مَثَلُ الجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الجَسَدِ بِالسَّهَرِ والحُمَّى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
- হযরত নুমান বিন বশীর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, দয়া-মায়া এবং স্নেহ-মমতার দিক দিয়ে মুমিনদের উদাহরণ হল একটি দেহের মতো। দেহের কোন অঙ্গ ব্যাথাপ্রাপ্ত হলে সারাটা দেহ তার জন্য অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যায়। সহী বুখারী ৬০১১; সহী মুসলিম ২৫৮৬
দেখুন ভাই, এখানে দুনিয়ার সমস্ত মুমিনদেরকে একটি মাত্র দেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সবাই যেন একটি দেহ। অতএব দুনিয়ার সকল মুসলমান যে যেখানেই থাক সবাই একটি দেহের মতো। দুনিয়ার কোন প্রান্তে কোন মুসলমান কষ্ট পেলে, ব্যথিত হলে তাঁর ব্যথায় আমাকেও ব্যথিত হতে হবে তবেই আমি ‘মুসলিম দেহের’ অঙ্গ হতে পারব। তা না হলে আমি কিসের মুসলমান!
আমরা আমাদের পিতা-মাতা, ভাই বোন ও সন্তানাদির দুঃখ-কষ্টে যে পরিমাণ দরদ ও ব্যথা নিয়ে এগিয়ে যাই দুনিয়ার নানা প্রান্তে আমাদের মজলুম ভাই ও মা-বোনদের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনে আমরা কি সে পরিমাণ দরদ ব্যথা নিয়ে এগিয়ে যাই? আমাদের অধিকাংশের অবস্থা হল, এগিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা অন্তরে ব্যথাটাও অনুভব করি না।
এমন কেন হল ভাই? কেন আজ আমরা আমাদের মুসলমান ভাই বোনদের ব্যথায় ব্যথিত হই না? কেন আজ আমরা অসহায় ভাই বোনদের পাশে দাঁড়াচ্ছি না? আমরা সবই দেখছি, সবই জানছি কিন্তু তবুও আমাদের অবস্থা একই রকম! অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়ার মূল্যবান গুণটি কি তাহলে আমরা হারিয়ে ফেলেছি? মানুষ হিসেবেও তো এ গুণটি আমাদের মধ্যে থাকার কথা ছিল। অন্যান্য প্রাণীর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তার বুদ্ধি বিবেকের কারণে নয়। বরং এর সঙ্গে মানবীয় কিছু মূল্যবান গুণ মানুষকে অন্যান্য প্রাণীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে।
কোরআন থেকে শিক্ষা
ইসলাম মানুষকে সর্বোচ্চ মানবিকতা, সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রহমত, দয়া ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। সুরা আম্বিয়া ২১:১০৭
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আসা বিধানগুলোর দিকে দেখুন, কী চমৎকার ভাবে এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। আমরা যেন অভুক্ত-অনাহারী বনি আদমের কষ্টের ভাগীদার হতে পারি, তাদের দুঃখ কষ্ট উপলব্ধি করতে পারি এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা রমযানের সিয়াম ফরয করেছেন। দুঃখীর অভাব মোচনের জন্য এবং অভাবীদের কষ্ট দূর করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা যাকাত ফরয করেছেন এবং সদকাতুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন। একই উদ্দেশে সালাত, সিয়াম ইত্যাদির ফিদিয়া ও কসম ইত্যাদির কাফফার বিধান দিয়েছেন। দান-সদকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ তাআলা বহু আয়াত নাযিল করেছেন। এ বিষয় কয়েকটি আয়াত আমরা একটু দেখি,
এক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
مَن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَلَهُ أَجْرٌ كَرِيمٌ
‘এমন কে আছে যে, আল্লাহকে উত্তম কর্য দেবে? তাহলে তিনি তার জন্য তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত : ১১]
দুই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّئَةُ حَبَّةٍ وَاللّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاء وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের (দানের) উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। [সুরা বাকারা ২:২৬১]
তিন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوم
‘আর তাদের ধনসম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক রয়েছে।’ [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত : ১৯]
চার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوم
‘আর যাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের নির্ধারিত হক রয়েছে। [সূরা আল-মা‘আরিজ, আয়াত : ২৪-২৫]
এ ধরনের আরও অনেক আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দান সদকা করার মাধ্যমে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কাউকে ‘না’ বলেননি
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোনো প্রার্থীকে ‘না’ বলেননি।
তাঁর বদান্যতা, পরোপকার ও মানবসেবার অসংখ্য ঘটনা হাদীসের গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ আছে। এগুলো তিনি নিজে যেমন করতেন অন্যদেরকেও উৎসাহিত করতেন। হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার ধারণা তিনি আরও বলেছেন, ‘এবং সে ওই সালাত আদায়কারীর ন্যায় যার ক্লান্তি নেই এবং ওই সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যার সিয়ামে বিরাম নেই।’ [সহী বুখারী : ৬০০৭; সহী মুসলিম : ৭৬৫৯]
হাদিসে কুদসি থেকে শিক্ষা
মানবসেবা ও মজলুমের পাশে দাঁড়ানোর গুরুত্ব বুঝার জন্য একটি হাদীসে কুদসীই যথেষ্ট। হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘কেয়ামত দিন আল্লাহ তাআ’লা (মানুষকে লক্ষ্য করে) বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা, আমি কীভাবে আপনার শুশ্রূষা করব? তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে?
এরপর আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, আপনি হলেন বিশ্ব পালনকর্তা, আপনাকে আমি কীভাবে খাবার দেব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানো না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাবার দাও নি। তুমি কি জানো না যে, তুমি যদি তাকে খাবার দিতে তাহলে নিশ্চয়ই তা (অর্থাৎ তার প্রতিদান আজ) আমার কাছে পেতে?
এরপর আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাও নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, আপনি তো রাব্বুল আলামীন আপনাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাও নি। তাকে যদি পান করাতে তাহলে নিশ্চয়ই তা (অর্থাৎ তার প্রতিদান আজ) আমার কাছে পেতে? [সহী মুসলিম : ৬৭২১; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৭৩৬]
উপরে উল্লিখিত আয়াতগুলো থেকে এবং এই হাদীসটি থেকে আমরা কী কী শিক্ষা লাভ করতে পারি সংক্ষেপে এক দুই কথায় কোন ভাই কি বলতে পারবেন? উপস্থিত এক ভাইঃ সৃষ্টির সেবা করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ মাশাআল্লাহ। এ শিক্ষাটি সাথে আরও যে সব শিক্ষা আমরা লাভ করতে পারি তা হল, একজন মুমিন কখনোই শুধু নিজেকে নিয়ে ভাববে না। অন্যকে নিয়েও ভাববে। কেউ বিপদের পড়লে তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করবে। সে সব সময় অন্যের দুঃখে দুঃখী হবে ও অন্যের সুখে সুখী হবে। এটিকে সে নিজের কর্তব্য মনে করবে। আর এ সবের দ্বারা তার উদ্দেশ্য থাকবে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা।
চারটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে কখনো ক্ষতিগ্রস্থ হবে না
কুরআনে কারীমের ছোট্ট একটি সূরা, যার নাম সূরা আসর। এ সূরাতে আল্লাহ তাআলা মহা মূল্যবান চারটি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। এ চারটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে কখনো ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। গুণগুলো হল, ঈমান, নেক আমল, একে অপরকে সত্য ও ন্যায়ের উপদেশ দেয়া এবং সবর ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ الۡعَصۡرِ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ
اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ
কালের শপথ! সব মানুষই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা নয় যারা ঈমান আনে, নেক আমল করে এবং একে অপরকে সত্য ও ন্যায়ের উপদেশ দেয় এবং সবর ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। সূরা আসর।
এখানে উল্লেখিত চারটি গুণের মধ্যে প্রথম দুটি গুণ নিজের কল্যাণের জন্য আর শেষের দুটি অন্যের কল্যাণের জন্য।
ঈমান
প্রথম গুণটি হল ঈমান। প্রখ্যাত মুফাসসির মুজাহিদ রহ. বলেছেন, ঈমান হল, আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, তাঁর একত্ববাদকে সর্বক্ষেত্রে গ্রহণ করা। তাঁর পক্ষ থেকে যত বিধি বিধান এসেছে সবগুলোকে মেনে নেয়া এবং সর্ব বিষয়ে তার কাছে জওয়াব দিতে হবে এ কথা মনে রাখা। (তাফসিরে তাবারি)
নেক আমল
দ্বিতীয় গুণটি হল, নেক আমল। কিছু না কিছু নেক আমল কম বেশি সবাই করে। কিন্তু নেক আমলের পূর্বে যে জিনিসটি জরুরি তা হল, সব ধরণের শিরিক ও কুফর মুক্ত বিশুদ্ধ ঈমান। খাঁটি ঈমান নিয়ে নেক আমল করা হলে সেই নেক আমল দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতে কাজে লাগবে। পক্ষান্তরে খাঁটি ঈমান ছাড়া নেক আমল করা হলে তা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে সামান্য কাজে লাগলেও আখেরাতের স্থায়ী জীবনে কোনোই কাজে লাগবে না। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা আগে ঈমানের কথা বলেছেন এরপর নেক আমলের কথা বলেছেন।
নেক আমল হল, ইসলাম আমাদেরকে যা যা করতে বলেছে তা করা এবং যা যা করতে নিষেধ করেছে তা না করা। এরই নাম হল, নেক আমল। করণীয়গুলোর মধ্যে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব ও নফল সবই শামিল। আর বর্জনীয় বিষয়গুলোর মধ্যে হারাম, মাকরূহে তাহরীমী, মাকরূহে তানযীহী ইত্যাদি সবই শামিল।
ঈমান ও নেক আমলের মাধ্যমে একজন লোক নিজেকে সফলতা ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। কিন্তু একজন মুমিনের ওপর এ ছাড়া আরও দায়িত্ব থাকে। তা হল অন্যদেরকেও সফলতা ও কল্যাণের দিকে আহবান করা।
কারণ, সে একজন মুসলিম। দুনিয়াতে মুসলিমদের আভির্ভাব ঘটানোই হয়েছে বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য। এ জন্যই মুসলিমরা শ্রেষ্ঠ জাতি। আল্লাহ তাআলা বলেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
‘তোমরা হলে সর্বোত্তম জাতি, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১১০)
অতএব একজন মুসলিমের দায়িত্ব নিজেকে সফলতা ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করার পাশাপাশি অন্যদেরকেও কল্যাণের পথে আহবান করা। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা ঈমান ও নেক আমলের কথা বলার পর আরও দুটো গুণের কথা উল্লেখ করেছেন,
وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
তারা একে অপরকে সত্য ও ন্যায়ের উপদেশ দেয়া এবং সবর ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।
একে অপরকে সত্য ও ন্যায়ের উপদেশ দেয়া এবং সবর ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া
তৃতীয় ও চতুর্থ গুণটি হল, একে অপরকে সত্য ও ন্যায়ের উপদেশ দেয়া, সত্য ও ন্যায়ের দিকে মানুষকে আহবান করা, এ আহবান করতে গিয়ে এবং আহবানে সাড়া দিতে গিয়ে যে সকল বিপদ-আপদ, জুলুম-নির্যাতন আসবে তার উপর ধৈর্য ধারন করা। এই ধৈর্য ধারণের জন্য একে অন্যকে উপদেশ দেয়া।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই চারটি গুণ পূর্ণাংগরূপে নিজের মধ্যে নিয়ে আসার তাওফিক দান করেন আমীন।
মুহতারাম ভাইয়েরা! আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন এবং ইখলাসের সাথে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন।
আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়াটা পড়ে নিই।
سبحانك اللهم وبحمدك، أشهد أن لا إله إلا أنت، أستغفرك وأتوب إليك
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين
وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين
****************