ইসলামের বার্তা – দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথ কি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন (অহিংস মতবাদ)? – চতুর্থ ও শেষ পর্ব
একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক ডকুমেন্টারি
দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথ কি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন (অহিংস মতবাদ)?
চতুর্থ ও শেষ পর্ব
ভিডিও ডাউনলোড করুন
সাবটাইটেল ভিডিও ডাউনলোড করুন
১০৮০ফরম্যাট ১.১ জিবি
https://banglafiles.net/index.php/s/BGcJGpR9yL6TFCi
https://archive.org/download/paygameislam04/Paygame%20islam04_Sub_1080.mp4
https://www.file-upload.com/702chvdwotej
http://www.mediafire.com/file/90gea5qdjgj6xl3/Paygame_islam04_Sub_1080.mp4/file
৭২০ফরম্যাট, ১৪৮.৯ মেগাবাইট
https://banglafiles.net/index.php/s/yEmxnXqKAZAcw4J
https://archive.org/download/paygameislam04_201911/Paygame%20Islam04%20Sub%20720-.mp4
https://www.file-upload.com/7u0upihy2of0
https://www.mediafire.com/file/s3p948e5qm99dvx/Paygame_Islam04_Sub_720-.mp4/file
https://file.fm/f/a654a9r9
৪৮০ফরম্যাট, ৮৯.৫মেগাবাইট
https://banglafiles.net/index.php/s/sfrBGMo8g9YM6fE
https://archive.org/download/paygameislam04_201911/Paygame%20Islam04%20Sub%20480-.mp4
https://www.file-upload.com/zguly3hteqo1
https://www.mediafire.com/file/uofzqcbpqxth0wj/Paygame_Islam04_Sub_480-.mp4/file
https://file.fm/f/hy73b35x
ডাবিং ভিডিও ডাউনলোড করুন
১০৮০ফরম্যাট, ১.০ জিবি
https://archive.org/download/paygameislam04/Paygame%20islam04_Dubbing_1080.mp4
https://www.file-upload.com/dldemdw9y0cr
http://www.mediafire.com/file/acy3x00fvhsrk9m/Paygame_islam04_Dubbing_1080.mp4/file
https://file.fm/f/tnx8nh46
৭২০ফরম্যাট, ১৫৫.২মেগাবাইট
https://banglafiles.net/index.php/s/K7fsDfdJc8DxZLz
https://archive.org/download/paygameislam04_201911/Paygame%20islam04_Dubbing_720.mp4
https://www.file-upload.com/nvtviw52ybm8
https://www.mediafire.com/file/1w8hngq9o12akp3/Paygame_islam04_Dubbing_720.mp4/file
https://file.fm/f/rh3gxkd9
৪৮০ফরম্যাট, ৯০.৪মেগাবাইট
https://banglafiles.net/index.php/s/3BCsFgwDpttBX3M
https://archive.org/download/paygameislam04_201911/Paygame%20islam04_Dubbing_480.mp4
https://www.file-upload.com/jcmxk14e7lho
https://www.mediafire.com/file/zzv1scsh4oxwxcc/Paygame_islam04_Dubbing_480.mp4/file
https://file.fm/f/gkhf6ru7
ডাবিং অডিও ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/8RdLjbGkfLQaNJq
https://archive.org/download/paygameislam04/paygame%20islam04_dubbing.mp3
https://www.file-upload.com/38jtm7wa7cz8
http://www.mediafire.com/file/c6380rsduusnq75/paygame_islam04_dubbing.mp3/file
ওয়ার্ড ফাইল ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/jsyyjsipBrFWrko
https://archive.org/download/poygam-4/poygam-4.docx
https://www.file-upload.com/iqvg8gznx54y
https://www.mediafire.com/file/qgn4e17v4x1v721/poygam-4.docx/file
https://file.fm/f/3dktk2zv
পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/Pxmg7JKYpJp5o32
https://archive.org/download/poygam-4/poygam-4.pdf
https://www.file-upload.com/eoktigvdqy01
https://www.mediafire.com/file/qgn4e17v4x1v721/poygam-4.docx/file
https://file.fm/f/fxd3aqn7
ব্যানার ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/g46j6Dp3MrGaki8
https://www.file-upload.com/zg98z9qirgms
https://www.mediafire.com/view/kpsb1gidgfkw616/poygam-4.jpg/file
————-
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]
=========================
ইসলামের বার্তা
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ
[চতুর্থ পর্ব]
দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথ কি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন (অহিংস মতবাদ)?
(শেষ পর্ব)
“(এই ঢাল তলোয়ার অর্থাৎ অস্ত্র–শস্ত্র) কল্যাণ ও বরকতের সেই উপকরণ, যা আল্লাহ তা‘আলা নবী রাসূল আলাইহিমুস সালামদের দান করেছিলেন, যাতে করে কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। বিশেষকরে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব উপকরণ দ্বারাই সমস্ত কাফের এবং দুষ্কৃতিকারীদেরকে পরাস্ত করে বিশ্বকে সত্য ধর্মের আলোয় আলোকিত করেছেন। যদি এই অস্ত্র–শস্ত্র না হতো; তাহলে না আমরা আসতাম, আর যদিও আসতাম, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা জানেন কোন ধর্মে আসতাম?!”
(আমীরুল মু’মিনীন হযরত সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহ.)
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অর্থাৎ অসহিংস মতবাদের দর্শন মোহনদাস করমচাঁদ মহাত্মা গান্ধী পেশ করেছে। জিহাদ বিরোধিতায় অহিংস মতবাদের প্রচার মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর মিশন ছিল।
অভিশপ্ত গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী লিখেছে, আমার পাচঁটি মূলনীতি। তার মাঝে দু’টি হলো–
১. জিহাদ হারাম।
২. ব্রিটিশদের আনুগত্য।
# হাফেজ সুহাইব ঘুরী হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
“মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর কবিতা–
অনুবাদ
‘হে বন্ধু! এখন তুমি ছেড়ে দাও জিহাদের খেয়াল
দ্বীনের জন্য হারাম এখন জঙ্গ ও ক্বিতাল।’
জিহাদ ও ক্বিতালকে হারাম প্রমাণিত করার জন্য ব্রিটিশ সম্রাট মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে দাঁড় করিয়ে দেয়। ফলে মির্জা জিহাদকে হারাম বলে ফতোয়া দেয়। অনুরূপভাবে স্যার সৈয়দ আহমাদ খান ইংরেজদের সাথে ভালো আচরণ ও তাদের সেবা করার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছে।
অহিংস মতবাদের দর্শন উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী বিস্তার করে। যখন এর বিপরীতে উলামায়ে কেরাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নত জিহাদের ফরজিয়্যাতকে জিন্দা করেন। চাই সেটা সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহ. এর কাফেলা হোক, সাদেকপুরের উলামায়ে কেরামের কুরবানী হোক, বা মাওলানা কাসিম নানুতুবী রহ. ও হযরত মাওলানা রশিদ আহমাদ গাংগুহী রহ. এর চেষ্টা–প্রচেষ্টা হোক, অথবা শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ. এর জিহাদী আন্দোলন হোক।
মোটকথা, হক্কানী উলামায়ে কেরাম; যখনই সময় সুযোগ পেতেন, তখনই তরবারী হাতে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কেননা, উলামায়ে কেরাম এ কথা জানতেন যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে স্বশরীরে ২৭টি যুদ্ধে শরীক ছিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীরাস হিসাবে দিরহাম ও দীনারের পরিবর্তে নয়টি তরবারী রেখে গেছেন। কারণ, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমনিভাবে রহমতের নবী ছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে যোদ্ধা নবীও ছিলেন। অর্থাৎ বড় বড় যুদ্ধ পরিচালনাকারী শ্রেষ্ঠ ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন একজন যোদ্ধা ছিলেন।
এমনিভাবে স্বয়ং উপমহাদেশের মুসলমানদের ঈমান আনয়ন করাও তো মুহাম্মাদ বিন কাসিম ও সুলতান মাহমুদ গজনভী প্রমুখদের বরকতময় জিহাদ পরিচালনার বদৌলতেই হয়েছিল।
মোটকথা, আমাদের আকাবিরগণ সর্বদাই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর একনিষ্ঠ দা‘য়ী ছিলেন। নিজেরা মুজাহিদ ছিলেন। জিহাদের প্রশিক্ষণ নিতেন। জিহাদের ময়দানে দুশমনের সাথে লড়াই করে শাহাদাত লাভের আকাঙ্খা পোষণ করতেন। অন্যদিকে মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী, স্যার সৈয়দ আহমাদ খান ও মহাত্ম গান্ধীর মতাদর্শের ঘোর বিরোধী ছিলেন।”
***
শাইখুল হিন্দ রহ. এর (ইন্তেকালের) পর যখন উপমহাদেশের ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ দ্বীনের ধারক বাহকদের হাতছাড়া হয়ে গেল, অপরদিকে মুসলমানরা দূর্বল হয়ে পড়ল এবং হিন্দুরা প্রবল হয়ে উঠল। ঠিক সেই সময়ে মহাত্মা গান্ধী ইংরজদের থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অহিংস মতবাদের দর্শন উপস্থাপন করে।
# মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাসসান হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
“বর্তমান সময়ে অহিংস মতাদর্শের খুব উচ্চ আওয়াজ শোনা যায়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: মানুষকে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পথ দেখানো এবং এর বিপরীতে জিহাদের পথ রোধ করা। আপনারা দেখে থাকবেন যে, যখনই দ্বীনের বিজয় ও শরীয়াহ বাস্তবায়নের সংগ্রামের জন্য ক্বিতালের কথা বলা হয়, তখনেই তারা এর বিরোধিতায় অহিংস মতাদর্শের চর্চা শুরু করে দেয়। অথচ এটা দ্বীনের কোন পরিভাষা নয়। সর্বাবস্থায় সব ধরনের কঠোরতার না বৈধতা আছে, আর না সর্বাবস্থায় সব ধরনের অহিংস মতাদর্শের বৈধতা আছে। উপরন্তু জিহাদ ও ক্বিতালকে বাতিল করার জন্য অহিংস মতাদর্শকে প্রচার করা নিঃসন্দেহে দ্বীন থেকে বিমুখতা ও ধর্মহীনতা।”
***
শাইখুল হিন্দ রহ. এর (ইন্তেকালের) পর এক শ্রেণীর আলেম–উলামা অহিংস মতাদর্শকে রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে গ্রহন করে। কিন্তু এই সমস্ত আলেম–উলামারাও অহিংস মতাদর্শের আড়ালে জিহাদ ও ক্বিতালকে কখনো প্রত্যাখান করেননি।
মুফতি কেফায়েতুল্লাহ দেহলবী সাহেব রহ. তাঁর ফতোয়ার কিতাবে লিখেছেন–
“অহিংস মতাদর্শ, মুসলমানদের কাছে কখনো এক সেকেন্ডের জন্যও দ্বীনি হুকুম ও দ্বীনি আকিদা হিসাবে গ্রহনযোগ্য হয়নি এবং মুসলমানরা কখনো অহিংস মতাদর্শকে এভাবে মেনেও নেয়নি।”
প্রাচ্যের কবি আল্লামা মুহাম্মাদ ইকবাল রহ. অহিংস আন্দোলনের মোকাবেলায় ইসলামের পয়গামকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন–
“যদি রাজত্ব আমাদের কর্তৃত্ব থেকে চলে যায় যাক, তবুও আল্লাহর হুকুমের সাথে গাদ্দারী করিও না তুমি
ইতিহাসের মাধ্যমে করা হয়নি কি তোমায় সর্তক?! তবুও কেন খেলাফতকে কলংকিত করছো তুমি?
আমরা আমাদের রক্তের বিনিময়ে যা খরিদ করিনি, সেই রাজত্ব মুসলমানদের জন্য লজ্জার।”
অহিংস মতাদর্শ ইসলাম ধর্মের স্বভাব রুচি নয়। তাই এটাকে ইসলামের মানহাজ বলে চালানো দ্বীনি ইমারাতকে ধ্বংসের নামান্তর।
# মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাসসান হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
“আল্লাহ তা‘আলা যেখানে নিজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দ্বীন বিজয়ের জন্য দাওয়াতের পথ ও পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন, চরিত্র ও নৈতিকতার মাহাত্ম্য দান করেছেন, সেখানে এ বাস্তবতাও বুঝিয়েছেন যে, দ্বীনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়া সম্ভব নয়। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণকে কাফেরদের মোকাবেলায় জিহাদের ময়দানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। তার কারণও আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে বলে দিয়েছেন যে, ইসলামের মোকাবেলায় বাতিলের শক্তি তখনই খর্ব হয়, যখন ইসলামের শক্তিতে বাতিলের শক্তিকে নিঃশেষ করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন–
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ … ﴿الأنفال: ٣٩﴾
“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।”(সূরা আনফাল : ৩৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেছেন–
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ … ﴿الأنفال: ٦٠﴾
“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর …”(সূরা আনফাল : ৬০)
এই যুদ্ধ প্রস্তুতি এগুলো কি? এই শক্তি কি?? এই ঘোড়া প্রস্তুতি কি??? আল্লাহর ও আমাদের দুশমনকে ভয় দেখানো এটা কি???? এই সবগুলোই হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ তথা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। যা অহিংস মতবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন–
وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ… ﴿الحديد: ٢٥﴾
“আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি..।”(সূরা হাদীদ : ২৫)
অর্থাৎ জিহাদের উপকরণ অবতীর্ণ করেছি। যদি অহিংস মতবাদ ইসলামে থাকতো, তবে দ্বীন নিরাপদ থাকতো না। দ্বীনের উপর আমল করা সম্ভব হতোনা।
আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেছেন–
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ﴿التوبة: ٣٣﴾
“তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।”(সূরা তাওবা : ৩৩)
সুতরাং দ্বীনের বিজয় এবং শরীয়ত বাস্তবায়নের জন্যে অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য হলো: দাওয়াতের সাথে সাথে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাতিল শক্তির মোকাবেলা করা। আর সেই শক্তি হলো, জিহাদ ও ক্বিতালের শক্তি।
***
# শহীদ মুফতী মাওলানা ইশতিয়াক আজমী রহ. (রুকন, শরীয়াহ বোর্ড, আল–কায়েদা উপমহাদেশ) বলেন–
মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন–
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ … ﴿الأنفال: ٦٠﴾
“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর …”(সূরা আনফাল : ৬০)
অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব এই কাফেরদের বিরুদ্ধে শক্তি অর্জন করো। যে পরিমান সম্ভব হয়, নিজেদেরকে পরিপূর্ণরূপে অস্ত্র–শস্ত্রে সজ্জিত করে নাও।
আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেছেন–
وَدَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُم مَّيْلَةً وَاحِدَةً… ﴿النساء: ١٠٢﴾
“কাফেররা চায় যে, তোমরা কোন রূপে অসতর্ক থাক, যাতে তারা একযোগে তোমাদেরকে আক্রমণ করে বসে।”(সূরা নিসা : ১০২)
এটা তো কাফেরদের আকাঙ্খা। কিন্তু মুসলমানদেরকে এই কথার উপর তাকিদ দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা নিজেদেরকে পরিপূর্ণরূপে অস্ত্র–শস্ত্রে সজ্জিত করে নাও। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন–
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ…﴿الأنفال: ٦٠﴾
“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে…।”(সূরা আনফাল : ৬০)
অর্থাৎ যুদ্ধের সামানা গ্রহন করো।
***
ইউরোপিয়ান উপনিবেশবাদী ব্যবস্থা হোক, বা আমেরিকার পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক কমিউনিস্ট ব্যবস্থা হোক অথবা বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে চলমান আমেরিকা ও ইউরোপীয় পুঁজিবাদী, রাশিয়া ও চীনের আধুনিক সমাজতান্তিক ব্যবস্থা এবং বিশ্ব ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, এ সবই শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পৃথিবীতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অতএব, দুনিয়াতে দ্বীনে ইসলাম কিভাবে অহিংস মতবাদ ও জিহাদ থেকে পলায়নের পথ ও পন্থা দিয়ে বাস্তবায়ন হতে পারে!!
# উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
“আজ কুফুরী শক্তি আমাদের স্বাধীনতা ও ইচ্ছার কোন তোয়াক্কা করছে না। বরং নিজেদের শক্তির বলে বলিয়ান হয়ে তাদের বিকৃত পথ ও পন্থা আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এমনকি দুনিয়াতে যেখানেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আছে, সেটা শক্তি ও বল প্রয়োগের মাধ্যমেই টিকে আছে। এই গণতন্ত্রের নামেই ইরাক ও আফগানিস্তানের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এরই নামে পাকিস্তানের নাপাক বাহিনী মসজিদ, মাদরাসাসমূহ ধ্বংস করছে। মুসলমানদের রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করছে। এখন যেই গণতন্ত্র ইসলামের ভিত্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, সুদকে অর্থনীতি হিসেবে নির্ধারণ করেছে, আল্লাহর বিধি–নিষেধের সাথে তামাশা করে চলেছে, যার মাঝে চুক্তি ভিত্তিক উদ্দেশ্য এবং নারীদের অধিকার সর্ব দিক দিয়ে সমান বিবেচনা করা হয়, এমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং একে নিঃশেষ করা জরুরী। নাকি এর বিপরীতে এই গণতন্ত্রের মাধ্যমেই দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো হবে? এর মাধ্যমে ইসলামকে বাস্তবায়ন করা কিভাবে সম্ভব হতে পারে ?! কখনই হতে পারে না।”
***
# হাফেজ সুহাইব ঘুরী হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
“এখানে কেউ এ প্রশ্নও করতে পারে যে, যদি মুসলিম দেশগুলোতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদের পথ গ্রহণ করা হয়, তো কালিমা ওয়ালা মুসলমানদের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে? এজন্য দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করাই আবশ্যক। এর প্রতি উত্তরে প্রশ্ন হয়, কাফেররা যখন মুসলমানদের কোন অঞ্চল দখল করেছে, আর সেখানে কোন জিহাদী কাফেলা দাঁড়িয়েছে, তখন কি তাঁদের অনিবার্যভাবে কাফেদের সমর্থনকারী কালিমা ওয়ালা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা আবশ্যক ছিল না?”
–১৯৪০ এর দশক–
রয়েল ইন্ডিয়ান আর্মিতে কর্মরত “মুসলিম” সৈনিকদের উপর বৃটিশ পাথ নিউজের রিপোর্ট।
দুশমন (এখানে মুজাহিদদেরকে দুশমন বলা হচ্ছে) এই জওয়ানদের (যে সকল মুসলিম বৃটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো) চতুর্দিক থেকে অবরুদ্ধ করে নিয়েছিল। দুশমন (মুজাহিদরা) ধারণা করেছিলো যে, তারা (মুরতাদ বাহিনী) তাদের অবরোধ ভেঙ্গে বাহিরে আসতে পারবে না। কিন্তু এই জওয়ানরা (মুরতাদ বাহিনী) তাঁদের “বৃটিশ ভাইদের” সাথে দুশমনের অবরোধ ভেঙ্গে বের হয়ে আসে। এখন জওয়ানরা (মুরতাদ বাহিনী) তাদের সফলতার দু‘আ করতে নিজেরাই আল্লাহর দরবারে হাজির হয়েছে।
মহামান্য বাদশাহ (রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ) সুভাগমন করেছেন। ইনি হলেন রিসালদার (একশ বাহিনীর প্রধান) মেজর আশরাফ খান। (রয়েল ইন্ডিয়ান আর্মির) মৌলবী সাহেবদেরকে বাদশাহ হাদিয়া দিচ্ছে। এই জওয়ানরা (মুরতাদ বাহিনী) স্বীয় সৌভগ্যের উপর যত গর্বই করুক, তা ঠিক আছে।
# হাফেজ সুহাইব ঘুরী হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
উপমহাদেশে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ হোক বা আফগান জিহাদ, চেচনিয়া বসনিয়ায় কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে জিহাদ হোক বা ইরাক ও সিরিয়ার জিহাদ। এমনকি আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলেও যদি আবারো ক্রুসেডাররা হামলা চালাতে চায়, তাহলে তারা নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য সেখানকার কালিমা ওয়ালা মুসলমানদের একটি বাহিনী তৈরী করে। এরূপ অবস্থায় যে ব্যক্তি কালিমা ওয়ালা পরিভাষা ব্যবহার করে কাফেরদের নীতিকে বাস্তবায়ন করবে, তাদের এজেন্ডা পূর্ণ করবে এবং সরকার ও সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদ ও ক্বিতাল করাকে নাজায়েজ ও হারাম বলে ফতোয়া দিবে, সে ব্যক্তি না চাইলেও বা তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্রুসেডার কাফেরদের বিপরীতে জিহাদকে অকেজো করে দিয়ে মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানির মিশন ও এজেন্ডাকেই বাস্তবায়ন করবে।
***
# মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাসসান হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
পশ্চিমা শক্তি নিজেরদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের সামনে যদি কোন কিছুকে সমস্যা মনে করে থাকে, তবে তা ঐ মুসলমানদেরকেই মনে করে, যারা জিহাদ ও ক্বিতালের মাধ্যমে তাদের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে। কারণ, তাদের ভালোভাবেই জানা আছে যে, জিহাদ ও ক্বিতালের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নষ্ট হয়। তারা সে শক্তিকে নিজের হাতে রাখতে চায়। এজন্য তারা নিজেরা যত কঠোরতা করে, তা সব বৈধ। তাদের পোষ্য বাহিনী যে পরিমাণ কঠোরতাই করুক, তাও সব বৈধ। পাকিস্তানী বাহিনীকেই দেখুন– তাদের জন্য সব ধরণের কঠোরতা বৈধ। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যদি কোন মুসলমান আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখায় ও শরীয়াহ নির্দেশিত পথে অস্ত্র ধারণ করে, তবে তাকে সন্ত্রাসী, দেশদ্রোহী, অপরাধী ও ফাঁসির যোগ্য আসামি বলে গণ্য করা হয়।
হ্যাঁ, যেহেতু গণতান্ত্রিক রীতি–নীতির কলকাঠি তাদের হাতে, অন্যদিকে যে কেউ গণতান্ত্রিক কর্মযজ্ঞের অংশ হয়, সেও তাদের কন্ট্রোলে চলে যায়। ফলশ্রুতিতে তাদের জন্য মুসলমানদেরকে এটা বুঝানো সহজ হয়ে যায় যে, দ্বীন বিজয়ের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা, তার সব কিছু এ পথেই ব্যয় করুন।
এ পদ্ধতিতে প্রথমত: মুসলমানদেরকে শক্তিশালী হতে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়, দ্বিতীয়ত: মুসলমানদের মাঝে দ্বীন প্রতিষ্ঠার যে জযবা আছে, তা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়, তৃতীয়ত: শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে নিঃশেষ করে দিয়ে কুফরের বিজয় নিশ্চিত করা হয়।
***
# মাওলানা মুফতী হামিদুল্লাহ জান রহ. বলেন–
“গণতান্ত্রিক পন্থায় বদরের সাহাবায়ে কেরাম ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারতেন না। আরো শুনে রাখুন, যদি কোথাও দু’ একজন “পুঁজিবাদ বিরোধী” লোক ক্ষমতায় এসে যায়, যদি কোথাও কোন একজন মাওলানা নির্বাচিত হয়ে যায়, কোথাও কোন পীর সাহেব নির্বাচিত হয়ে যায়, কোথাও কোন বুযুর্গ নির্বাচিত হয়ে যায়, বা কোথাও কোন দরিদ্র লোক উকিল নির্বাচিত হয়ে যায়। অথবা কোথাও দু’ একটি সিট এসেও যায়, তথাপি এই ব্যবস্থাপনার ভিত্তি এমনই অশুভ যে, এই ব্যবস্থাপনার অধীনে দুই চার বছর অতিবাহিত করার পর, তার মস্তিস্ক আপনা–আপনিই পুঁজিবাদী হয়ে যায়। তার বাহ্যিক সূরত পীরের হতে পারে, তার বাহ্যিক সূরত মৌলভীর হতে পারে, তার বাহ্যিক সূরত বুযুর্গ হতে পারে, কিন্তু তার চিন্তা–দর্শনে সে একজন পুঁজিবাদী হয়ে যাবে।”
***
গণতন্ত্র নয়, দাওয়াত এবং জিহাদই হচ্ছে দ্বীন রক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি। আমাদের আসলাফ থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক যুগে সকল হকপন্থীরাই এই কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
# মাওলানা আব্দুল করীম নাদিম দা.বা. বলেন–
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শেষ যামানায় আমার উম্মতের মাঝে এমন এক দল আসবে, যাদের প্রতিদান পূর্ববর্তীদের মত হবে। তাঁদের প্রতিদান প্রথম যুগের লোকদের অনুরূপ হবে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁরা কী আমল করবে? তিনি বললেন, তাঁরা তিনটি আমল করবে। সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজে বাঁধা দিবে এবং ফিতনার সাথে লড়াই করবে। তাঁরা এমন নয় যে, ফেতনার সাথে সন্ধি করবে। তাঁরা এমন হবে না যে, ফেতনার সাথে বসে আলোচনা করবে। তাঁরা এমন হবে না যে, ফেতনার কারণে ইলেকশন করবে। তাঁরা এমন হবে না যে, গণতন্ত্রের ভিত্তিতে সমাধান করবে। তাঁরা ফেতনা পূজারীদের সাথে লড়াই করবে। ফেতনার মোকাবেলা করবে। আবার মোকাবেলা জন্য লড়াই ও অস্ত্রের পথ ধরবে। নিজে মরবে এবং তাদেরকেও মারবে। নিজে শহিদ হবে এবং তাদেরকেও জাহান্নামে পাঠাবে। যারা এ তিনটি কাজ করবে, আল্লাহ তাঁদেরকে এ র্মযাদা দান করবনে।
***
# মাওলানা মুফতি হামদুল্লাহ জান রহ. বলেন–
“আমরা বুযুর্গদের প্রতি সালাম পেশ করছি। আমরা বুযুর্গদের সম্মান করি। আমরা বুযুর্গদের ব্যাপারে বদ–ধারণা করি না। কিন্তু আমাদের বড়দের কিছু সীমাবদ্ধতা, কিছু নিয়ন্ত্রিত বাধ্যবাধকতা বা একটি ইজতেহাদী ভুল, আপনি তাদের ব্যাপারে এমনই কিছু ওজর পেশ করে তাবীল করতে পারেন। কিন্তু এই সকল পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, সেই হযরতদের গণতান্ত্রিক পন্থায় করা সেই প্রচেষ্টাগুলো কামিয়াব হয়নি। সুতরাং হযরত আবু হুরাইরাহ রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীস, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন–
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لَا يُلْدَغُ الْمُؤْمِنُ مِنْ جُحْرٍ وَاحِدٍ مَرَّتَيْنِ .
“মু’মিনরা একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না।”(সহীহ বুখারী)
পঞ্চাশ বছরেরও বেশী সময় ধরে আমরা লোকদের কাছে ভোট চেয়েছি। লোকেরা ভোট দিয়েছে। এমনও সুযোগ এসেছে যে, আমাদের পঁচাশিটি আসন অর্জন হয়েছে এবং জাতীয় এসেম্বলিতে যথেষ্ট আধিক্যতা অর্জন হয়েছে। কিন্তু আপনারা দেখেছেন, এর দ্বারা সেখানে ইসলামের কোন বিধানটা কার্যকর হয়েছে? বলা হয়ে থাকে, আমরা প্রতিরোধ করি। আমরা প্রতিরোধ করি। প্রতিরোধ কাকে বলে হয়? নারী অধিকার বিল পাস হয়েছে। কে সেটাকে প্রতিরোধ করেছে? জবাব দিন। (সংসদে শুধু) আওয়াজ তোলা তো উদ্দেশ্য নয়। প্রতিরোধের উদ্দেশ্য তো সেটাকে প্রতিহত করা। প্রতিরোধের অর্থটা তো বুঝতে হবে। প্রতিরোধের অর্থ তো মুখে বলা নয়। প্রতিরোধের অর্থ, সেটাকে ঠেকানো। সেটাকে পিছনে হটিয়ে দেওয়া। তো আপনারা বলুন– সে বিল পাস হয়েছে নাকি হয়নি? সে বিল পাস হয়েছে।”
***
# মাওলানা মুফতি নিযামুদ্দীন শামজায়ী রহ. বলেন–
সংসদীয় গণতন্ত্র, আপনি চাইলে সেটাকে ইসলামী গণতন্ত্র নাম দিন অথবা কোরআনী গণতন্ত্র নাম দিন। কিন্তু আল্লামা ইকবালের ভাষায়, গণতন্ত্র এমন এক শাসনব্যবস্থা, যেখানে মানুষকে গণনা করা হয়, পরিমাপ করা হয় না। সেখানে গণনা করা হয়। এর মাধ্যমে এগুলোই হবে, যা বর্তমানে হচ্ছে।
***
# (পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) ইমরান খান বলেন–
মদীনার পর, পৃথিবীর ইতিহাসে পাকিস্তানই একমাত্র রাষ্ট্র, যা ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠা হয়। ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠা হওয়ার উদ্দেশ্য এটা যে, পাকিস্তানের কোন আইন কোরআন সুন্নাহর বিরুদ্ধে যেতে পারবে না। তো যে জজই রায় দিয়েছে, সে আইন মতেই রায় দিয়েছে। আর পাকিস্তানের আইন কোরআন সুন্নাহর অনুগামী।
***
# মাওলানা মুফতি নিযামুদ্দীন শামজায়ী রহ. বলেন–
“এই মুনাফিকির বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে। আর এই মুনাফিক, যে আমাদের উপর চেপে আছে, সর্ব প্রথম এর বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র জিহাদ করতে হবে। আমি কলমের জিহাদের কথা বলছি না, যবানের জিহাদের কথা বলছি না। এসব আমরা অনেক করেছি। কলমের জিহাদ অনেক করেছি, যবানের জিহাদ অনেক করেছি। এ ছাড়া বিকল্প কোন চিকিৎসা নাই। যদি মুসলিম যুবকদের মাঝে শক্তি থেকে থাকে, তবে জেগে উঠুন এবং তাদের গর্দান মাড়িয়ে দিন। এদের মাথাগুলো পেকে গেছে এবং এগুলো এখন কেটে ফেলার জন্য উপযুক্ত। যদি শক্তি থাকে তবে জেগে উঠুন, আপনাদের পরর্বতী প্রজন্ম আপনাদের পদ চুম্বন করবে। আর যদি স্বশস্ত্র জিহাদের নাম নেওয়ার মতো শক্তি সাহস দেখাতে না পারেন, তবে ভাই কিছুই পরিবর্তন হবে না।”
***
এই ভূখন্ডে “জিহাদ ও ক্বিতালের প্রতি দাওয়াত” কোন নতুন বিষয় নয়।
এই দাওয়াত কোন বিশেষ মাজহাব বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এই দাওয়াত; মুসলিম উম্মাহর কণ্ঠস্বর।
# সাইয়্যেদ মুনাওয়ার হাসান রহ. বলেন–
“ইতিহাসের পাতায় এমন কোন বিপ্লব দেখতে পাবেন না, যা পুরোপুরি দাওয়াত ও তাবলীগের ভিত্তিতে এসেছিল এবং যদি এই ধরণের বিপ্লব সম্ভব হতো; তবে তা হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামানায় সম্ভব হতো! কেননা, ইতোপূর্বে এবং পরবর্তীতে অথবা ভবিষ্যতে এমন উত্তম জামা‘আত পৃথিবীবাসীর দৃষ্টিগোচর হবে না, যেমনটি ছিলেন সাহাবাহ আজমাঈন[রাদিয়াল্লাহু আনহুম]!
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের সময়কালে; তাঁর মজলিশসমূহে, ফরমান ও রেওয়ায়েতসমূহে “দাওয়াত ও তাবলীগের” ধরণে আলোচনা হতো। যদি কেবল “দাওয়াত ও তাবলীগের” মাধ্যমেই বিপ্লব ঘটতো, তবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় এমন একটি বিপ্লব ঘটে যেতো। তথাপি বিপ্লব এলো দাওয়াত ও তাবলীগের পরে; যখন “হিজরত ও জিহাদের” ধারা শুরু হলো।
যদি হিজরতের রীতি কায়েম না হতো, যদি জিহাদের ময়দানগুলো উত্তপ্ত না হতো, যদি তাঁরা বদরের ময়দান থেকে উত্তীর্ণ হয়ে না আসতো, তবে কোন “দাওয়াত ও তাবলীগ” এমনতর সাংগঠনিক সর্বোচ্চ ও মহান রূপ পরিগ্রহ করে মানুষের নজরে আসতো না।
আমরা আমাদের সমাজে যে তথাকথিত ধর্মীয় কালচারের সাথে পরিচিত, সেখানে মানুষ জিহাদকে ভিন্ন কিছু বলে মনে করে।
সুন্দর স্লোগান তো আমিও দিতে পারি, আপনারা এটি আমার চেয়ে আরও ভাল দিতে পারেন.. তবে স্লোগানেরও দরকার আছে, এর একটি আলাদা তাত্পর্যও আছে।
যাইহোক, জিহাদকে অবশ্যই আমাদের “দাওয়াহ ও তাবলীগের” একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গি, চলাফেরায়, আচরণে, পথচলায়, জীবনের অগ্রাধিকারগুলোতে, শুরু এবং শেষে, এগিয়ে যাওয়া এবং পিছিয়ে পড়ার মাঝে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের মাঝে জিহাদকে বিষয়বস্তু বানানো, দ্বীনদারী ও বদদ্বীনীর মাঝে জিহাদকে মাপকাঠি বানানো। আমাদের সভ্যতা, বিজ্ঞতা, দূরদর্শীতা যে প্রসঙ্গ আসুক; আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে জিহাদকে প্রাধান্য দিতে হবে। নিজেকে জিহাদের সাথে পরিচিত করুন, কেবল জিহাদই আপনাকে একটি স্বকীয়তা দিতে পারে! আর যখনই এই জজবা হারিয়ে যায় অথবা পরিস্থিতি, মাসলাহাত এবং হেকমতের অজুহাতে নতজানু হয়ে যায়, সেখানে বাহ্যিকভাবে শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে, আমালের মধ্যেও স্থবিরতা সৃষ্টি হয়।”
***
# ড. ইসরার আহমাদ রহ. বলেন–
যে কোন বিপ্লবে, সংঘর্ষ অনিবার্য! সংঘর্ষ এড়িয়ে কোনও বিপ্লব আসতে পারে না। যদি কেউ খুব শান্তিকামী হয়, তবে তার উচিৎ গৃহেই অবস্থান করা এবং বাতিল শক্তির যে আস্ফালন চলছে, তা মুখ বুজে সহ্য করা। ব্যস!
কিন্তু আপনি যদি প্রচলিত সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে চান … তবে সংঘর্ষ অনিবার্য!
কি এই সংঘর্ষ?
এটি হলো “জিহাদ”!
ক্বিতাল!
লড়াই!
সংঘাত!
খুব সূক্ষ্ম একটি বিষয়, কিন্তু বিরাট তাত্পর্য বহন করে, তা হলো; “কোন পক্ষ সর্বাগ্রে লড়াই শুরু করে”? এটি হলো প্রথম প্রশ্ন।
আপনি হয়তো বলবেন, কাফের, মুশরিক, ইত্যাদি…এটি ঠিক নয়! লড়াই সব সময় বিপ্লবীদের পক্ষ থেকেই শুরু হয়।
সে [বিপ্লবী] বলে যে, এটা ভুল! আপনার ধারণা ভুল! আক্বিদা ভুল! মতাদর্শ ভুল! আপনার সিস্টেম ভুল!
সুতরাং সেই সমাজটি ছিল স্থিতিশীল… ঠিক সেই জলাশয়ের ন্যায় যার পানি স্থির।
যদিও সেখানে “জালেম” থাকুক… মজলুমরা পারস্পারিক আপোষে সেখানে বাস করতো, বস্তুত সেখানে নিরাপত্তা ছিল।
যেমন ডাকাতদের আস্তানায়ও নিরাপত্তা থাকে, ডাকাতরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে না। এমনকি সর্বনিকৃষ্ট সমাজও শান্তিপূর্ণ হতে পারে।
মক্কার সমাজ ছিল একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ। সেই স্থির পানিতে কে সর্বপ্রথম পাথর নিক্ষেপ করেছিলো? এই সব ভুল! তোমাদের সমাজব্যবস্থা ভুল! তোমার দেবতারা মিথ্যা! আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই!
আর এই পুঁজিবাদীরা! যারা গরীবদের অভুক্ত রাখে, এতিমদের অবমাননা করে, তাদের সাথে কি বিরুদ্ধাচরণ করা হয়নি?
তারা কী দেখতে পাচ্ছে না যে, এটি কাদের স্বার্থে আঘাত হেনেছে?
সুতরাং এই প্রথম বিষয়টি বুঝতে হবে যে, “সংঘর্ষ” বিপ্লবীদের পক্ষ থেকেই শুরু হয়।
***
# মাওলানা আতিকুর রহমান শহীদ রহ. বলেন–
“আল্লাহ তা‘আলার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর উদ্দেশ্য। পৃথিবীতে আল্লাহর রাজ কায়েম করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করাকেই ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ বলা হয়। বর্তমানে কতক ব্যক্তি ইসলাম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে বলতে শুরু করেছে যে, জিহাদ অর্থ “চেষ্টা করা, পরিশ্রম করা”। এরই প্রেক্ষিতে যে কিনা মানুষের উপর প্রভুত্ব করছে অথবা ব্যভিচার করছে; সেও দাবী করছে যে, “আমি জিহাদ করছি”!।”
“জিহাদের শরয়ী পরিভাষার বিকৃতির একটি দিক হলো, মানুষ তার ব্যক্তিগত কাজকেও জিহাদ হিসেবে সাব্যস্ত করছে। যেমন রাজনীতিতে মগ্ন কোন ধর্মীয় রাজনৈতিক দল, যারা নির্বাচন ও ভোটের মাধ্যমে নিজেদেরকে ক্ষমতায় আনতে চায়, তারা বলে যে “আমরা ইসলাম কায়েম করবো” … যদি এই শ্রেণীর লোকেরাও তাদের সংগ্রামকে জিহাদ সাব্যস্ত করতে শুরু করে, তবে এটি জিহাদের সাথে জুলুম ও অন্যায় বলা হবে।”
“জিহাদ ফি সাবলিল্লিাহ প্রকৃত পক্ষে সেই আমল, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরতের পর স্বশস্ত্র পন্থায় শুরু করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথকে প্রশস্ত করেছিলেন এবং ইসলামের শিক্ষাকে পৃথিবীতে কায়েম করার পর (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।”
***
# মাওলানা আব্দুর রশিদ গাজি রহ. (দ্বীন ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার স্বভাব–রীতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে) বলেন–
“আমাদের এ এক স্বভাব হয়ে গেছে যে, আমরা ধাক্কা পর্যন্ত খেতে চাইনা। আমরা এটাই চাই যে, আমাদের কোন টেনশন না হোক। আমি বলি, যদি দ্বীনের খেদমত এমন অহিংস পদ্ধতিতে করা যেতো, তবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে এমন খেদমতই করাতেন। অথবা সাহাবীদের মাধ্যমে এমন অহিংস খেদমতই করানো হতো।
কিন্তু আমরা দেখতে পাই, আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামকে সেসব মনযিল পার করে এনেছেন, যেখানে সমস্যার পাহাড় ছিল এবং টেনশনও ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কি টেনশন হয়নি? তাহলে কেন তিনি রাতে রোনাজারি করতেন? বিভিন্ন সমস্যার কারণে, অবস্থার কারণে কী করা যাবে? আমরা কী করবো? এসব বিষয় নিয়ে রাসূল টেনশন করেছেন। এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদ করেছেন। নিজের রক্ত প্রবাহিত করেছেন। তাঁর দাঁত মোবারক শহিদ হয়েছে।
আমাদের মাঝে কার শরীরে কয়টি পাথরের আঘাত লেগেছে? আমরা পাথরের আঘাত খাওয়ার জন্যও প্রস্তুত নই। আমরা চাই আমাদের শরীরে যেন কোন ধাক্কাও না লাগে! কেউ যেন আমাদেরকে ‘এই মিয়া’ অথবা ‘তুই’ পর্যন্ত না বলে। যাতে আমাদের সম্মান বজায় থাকে। অপরদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তো পাগলও বলা হয়েছে। আরো কত কিছু বলা হয়েছে, (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)। কিন্তু আমাদের একটা মানসিকতা তৈরী হয়ে গেছে, আমরা বলে থাকি যে, একটি রুটিন অনুযায়ী আমাদের লাইফ চলছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, এটা তো সাধারণ মানুষের চিন্তা। সাধারণ দোকানদারদের চিন্তা। একজন সাধারণ চাকুরিজীবি মানুষের চিন্তা হলো: তার কাজে যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে। সে যেন নিজের রুটিন মতো থাকতে পারে।
কিন্তু আমাদের ব্যাপারে আমার মতামত হল, আমাদেরকে সব ধরণের কুরবানির জন্য প্রস্তুত থাকা চাই। টেনশনের জন্যও প্রস্তুত থাকা চাই। সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকা চাই। আর এত তাড়াতাড়ি আমাদের স্যারেন্ডার করাও উচিত নয়।”
***
ইসলামের নামে এদেশের ভিত্তি স্থাপতি হয়েছে
ইসলামই এদেশের ভিত্তি ও স্থায়ীত্ব,
ভিত্তির উপর না থাকলে তার ধ্বংসই ধ্বংস।
# উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
“এ প্রিয় দেশ এ জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে যে, এদেশে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর বিধান জারি হবে। আজ এদেশে আল্লাহর শরীয়াহকে শাসক বানানোর জন্য এ দেশবাসীর জিহাদ করা ওয়াজিব। কিন্তু এ শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার রাস্তা কোনভাবেই গণতন্ত্র নয়। এ রাস্তা দাওয়াত, ইদাদ তথা প্রস্তুতি ও ক্বিতালের রাস্তা। দাওয়াত আর জিহাদের রাস্তাই প্রকৃত শরয়ী পথ। এ রাস্তা দ্বীনের বিজয় এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার পূর্ণ চিত্র তুলে ধরে। এ রাস্তায় আমরা চলবো, তো আল্লাহ রাজি হবেন এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর মোবারক শরীয়াহ শাসক হবে, ইনশা আল্লাহ। এই জালেমরা কুফরি বিধানকে জোরপূর্বক আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এরা মুসলমানদেরকে এ অজ্ঞতার আঁধারে ঠেলে দিচ্ছে। এই জালেমদের থেকে নিজের দ্বীন, দুনিয়া, নিজ উম্মাহ ও আগত প্রজন্মকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া এক আত্মরক্ষামূলক জিহাদ। এ জিহাদ ও ক্বিতাল এক শরয়ী ফরজ। এ লড়াইয়ে আমরা প্রথমত: আমেরিকা এবং দ্বিতীয়ত: ইসলামের অপর দুশমন বিশ্ব কুফরি শক্তিকে প্রথম টার্গেট রাখবো। সেসব শক্তিকে, যাদের সাহায্য সমর্থনে তাদের গোলাম বাহিনী এবং গোলাম সরকার এ অন্যায় ব্যবস্থাকে এখানে চেপে রেখেছে। যদি এ লড়াইয়ের সক্ষমতা না থাকে, তবে আলেম এবং ফকিহগণ স্পষ্ট বলেছেন, এ অবস্থায় এই লড়াইয়ের প্রস্তুতি অর্থাৎ প্রশিক্ষণ নেওয়া ফরজ হয়ে যায়। আর এ প্রস্তুতির অংশ এই জালিম শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাওয়াত হিসেবে কাজ করবে। তো এটি স্বতন্ত্র একটি ফরজ। এটা আমাদের শরয়ী দায়িত্ব যে, আমরা আল্লাহ ও তাঁর শরীয়াহর প্রতি আহ্বানকারী হবো এবং খোদাদ্রোহীতার উপর প্রতিষ্ঠিত এ জাহিলী শাসনব্যবস্থা এবং তার রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণের মনে ঘৃণা সৃষ্টি করবো। আর তাদেরকে এদের বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়াবার দাওয়াহ দিবো।”
***
# মাওলানা আসেম ওমর হাফিজাহুল্লাহ বলেন–
“আল্লাহ তা‘আলা রাহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে রহমত ওয়ালা দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন এবং দুনিয়ায় একে প্রতিষ্ঠার জন্য ক্বিতালের বিধান নাযিল করেছেন। যাতে করে যেই মানবতার দুশমন; এ কল্যাণময় দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বাধা হতে চাইবে এবং নিজের অশ্লীল ও মনগড়া রীতি–নীতি জিইয়ে রাখতে চাইবে, তাকে এই কিতালের মাধ্যমে প্রতিহত করা যায়। সুতরাং এ বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝতে হবে, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথ সেটাই, যা দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। আমরা যত বিবেক বুদ্ধিই কাজে লাগাই অথবা দুশমনের ভয়, দুশমনের সরঞ্জামাদি অথবা বেঁচে থাকার আশা আমাদের যত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে নিপতিত হতে বাধ্য করুক না কেন, এ কথা ধারণাতীত বাস্তবতা যে, এ দ্বীন সেই পথেই বিজয় হবে, যে পথে পূর্ববর্তীরা চলেছেন। যে পদ্ধতি পূর্বসূরীরা গ্রহণ করেছেন, এ উম্মত সেই মাধ্যম ও পদ্ধতিতেই সফল হতে পারবে, যে পথে চলে ও যে পদ্ধতি গ্রহণ করে পূর্ববর্তীরা সফল হয়েছেন। পূর্ববর্তীদের ছেড়ে, ঐ পবিত্র পথকে ছেড়ে এ দ্বীনের বিজয় আসতে পারে না, এ উম্মাহর সম্মান মিলতে পারে না, ইসলাম প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। গণতন্ত্র এক মরীচিকা, এক গোলকধাঁধাঁ, যেখানে উম্মাহ ঘুরতে থাকবে, ছুটতে থাকবে, মাথা কুটতে থাকবে কিন্তু মানযিলে পৌঁছাতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা এ দ্বীনের উন্নতি, এ দ্বীনের শক্তি, এ দ্বীন প্রতিষ্ঠার যে পদ্ধতি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যা সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, আর সাহাবায়ে কেরাম সে পথে চলেছেন এবং তাঁদের পরে তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীনগণ চলেছেন, সে পথেই এ দ্বীন দুনিয়ার বুকে বিজয়ী হবে। এ পথেই দুনিয়ার সকল কুফর পরাজিত হবে।
আজ শরীয়াহর দুশমনরা আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এর ব্যাখ্যাকে বিকৃত করতে চাচ্ছে। দ্বীনি মাদরাসার নেসাব পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতকে কাদিয়ানী ও বিদ‘আতীদের গর্তে পুঁতে ফেলতে চাচ্ছে। তারা শরীয়াহর এমন ব্যাখ্যা চাচ্ছে, যা আমাদের আসলাফরা তথা পূর্বসূরীরা করেননি। বরং কাদিয়ানী ও আধুনিক যুগের কাদিয়ানী এবং বিদ‘আতীরা করেছে। তাদের চেলা চামুন্ডারা করেছে। তারা এ ইসলাম ও দ্বীনের বিধানকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে। এর এক নতুন ব্যাখ্যা করছে– বাস্তবতার নাম দিয়ে, বিশ্লেষণ আর নতুনত্বের নাম দিয়ে। তাই হক্কানি আলেমদের ফরজ হল: এ শরীয়াহকে নিজের রক্ত দিয়ে রক্ষা করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সুসংবাদ দিয়েছেন, হকপন্থীদেরকে কেউ পরাস্ত করতে পারবে না।
قال رسول الله –صلى الله عليه وسلم– « لا تزال طائفة من أمتى يقاتلون على الحق ظاهرين إلى يوم القيامة ».
“আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সর্বদা হকের উপর থেকে লড়াই করবে। তাঁদের বিরোধীদের উপর বিজয়ী থাকবে।”(সহীহ মুসলিম)
হকের উপর অবিচল থাকবে– হকের বাস্তবায়নের জন্য, হকের সঠিক ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণের জন্য; যে ব্যাখ্যা সাহাবায়ে কেরাম করেছেন, যে বিশ্লেষণ সাহাবায়ে কেরাম করে গেছেন। যাকে ফুকাহা, মুহাদ্দিসীন ও মুফাসসিরীন (রাহিমাহুমুল্লাহ) নিজেদের বুকের রক্ত দিয়ে সিঞ্চন করেছেন, সেটাই বাকি থাকবে। যত বিদ‘আ ছড়ানো হোক, যত কাদিয়ানী মতবাদ ছড়ানো হোক, বিশ্লেষণ আর নতুনত্বের নামে বা জ্ঞান বিস্তারের নামে, তারা কোনভাবেই সফল হতে পারবে না। এ কারণে হক্কানী আলেমদের উচিৎ এ রাষ্ট্রীয় জুলুমকে, রাষ্ট্রের মন রক্ষা করে চলা দ্বীনি ব্যাখ্যাকারদেরকে, এমন মর্ডান বিশ্লেষণকারীদেরকে ভয় না করা। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের উপর যে হক বলার দায়িত্ব আরোপ করেছেন, সে হিসাবে তাঁরা হককে হক বলবে, বাতিলকে বাতিল বলবে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলবে। কারণ, এসব ব্যাপারে আল্লাহ প্রত্যেক আলেমকে জিজ্ঞাসা করবেন। আর যে জিম্মাদারী আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর আরোপ করেছেন, তা আমরা অবশ্যই বর্ণনা করবো।
***
# শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ।
“এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ সর্বপ্রথম যাদের উপর আরোপিত হবে, তাঁরা হলেন সম্মানিত আলেমগণ। তাঁরা সম্মানিত আলেমগণ। তাঁদের কর্তব্য হলো: উম্মাহর সামনে বাস্তবতাকে স্পষ্ট করবেন। অপব্যাখ্যাকারীদের সংশয় দূর করবেন এবং উম্মাহকে বলবেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সত্তর বছর পরও সেখানে বিধিবিধান ও লেনদেন থেকে শরীয়াহ একেবারেই অনুপস্থিত। পাকিস্তান সংবিধানের ধারাগুলো স্পষ্টভাবে শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক।
হে উলামায়ে কেরাম! উম্মাহকে বলুন, জিহাদ ও দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলাম বিজয়ী হবে। প্রতারক গণতন্ত্রের খেলা দিয়ে নয়, যে গণতন্ত্র উম্মাহকে শরীয়াহ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। উম্মাহকে বলুন, আমরা এক জাতি। আমাদের জিহাদ এক জিহাদ। ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানকে সাহায্য করা ফরজে আইন– আফগানীদের উপর, তাঁদের আশপাশের লোকদের উপর, তারপর সকল মুসলমানের উপর। যতক্ষণ না আমেরিকা, তার প্রতিনিধি ও আমলাদের পরাস্ত করার সক্ষমতা অর্জন হয়। আর কাশ্মীর, পিলিপাইন, শিশান, মধ্য এশিয়া, ইরাক, শাম, জাজিরাতুল আরব, সোমালিয়া, মরক্কো ও তুর্কিস্তানের জিহাদকে সাহায্য করা মুসলমানদের উপর ফরজে আইন। যতক্ষণ না মুসলিমদের ভূমি থেকে আগ্রাসী শক্তিকে বের করার সক্ষমতা অর্জন হয়।”
***
হযরত আদম আ. থেকে নিয়ে কিয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত ইসলামের বার্তা হচ্ছে: গায়রুল্লাহর সাথে বিদ্রোহ, আল্লাহর শাসন এবং আল্লাহর আনুগত্বের ঘোষণা। এ ঐশী আহ্বানের উৎস পবিত্র গ্রন্থ আল–কুরআন। এ মহাগ্রন্থ আল–কুরআনের না কোন শব্দ পরিবর্তন হবে, না এর অর্থ, না তার ব্যাখ্যা। এ কুরআনের ব্যাখ্যা তো সেটাই, যা মহামহিম আল্লাহর পর পবিত্র শরীয়াহর ব্যাখ্যাকার, যোদ্ধা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।
قال رسول الله –صلى الله عليه وسلم– « لا تزال عصابة من أمتى يقاتلون على أمر الله قاهرين لعدوهم لا يضرهم من خالفهم حتى تأتيهم الساعة وهم على ذلك ».
“আমার উম্মতের মধ্য থেকে একটি দল, সর্বদা আল্লাহর নির্দেশে লড়াই করে যাবে। তাঁরা দুশমনের উপর বিজয়ী থাকবে। যারা তাঁদের বিরোধিতা করবে, তারা তাঁদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। এভাবে কিয়ামত চলে আসবে, আর তাঁরা আপন অবস্থায় টিকে থাকবে।”(সহীহ মুসলিম)
وَمَا عَلَيْنَا إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ.
“পরিস্কারভাবে আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব।”
وَآخِرُ دَعْوَانَاْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.
“আর আমাদের প্রার্থনার সমাপ্তি হয়, ‘সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য’ বলে।”
—————————————————————————————-
উৎসগ্রন্থ
(যেসব গ্রন্থ থেকে তথ্যসমূহ নেওয়া হয়েছে।)
ফতোয়ায়ে আযিযি। মাওলানা শাহ আব্দুল আযিয দেহলবী রহ.।
ওলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাযী। মাওলানা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ মিঁয়া রহ.।
তারিখে দাওয়াত ওয়া আযিমত। মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নাদাবী রহ.।
তেহরিকে মুজাহিদীন। মাওলানা গোলাম রসূল মেহের রহ.।
এহাত্বায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ মেঁ বীতে হোয়ে দিন। মাওলানা মানাযির হাসান গিলানী রহ.।
তেহরিকে রেশমী রুমাল মাওলানা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ মিঁয়া রহ.।
হাকীমুল উম্মত নুক্বূশ ওয়া তাআসসুরাত। মাওলানা আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী রহ.।
তাযকিরাতুজ জাফর– সাওয়ানেহে মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী রহ.। মাওলানা আব্দুশ শাকুর তিরমিজি রহ.।
জাওয়াহিরুল ফিকহ। মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ শফী উসমানী রহ.।
হায়াতে আশরাফ–সাওয়ানেহে
উমরী মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.। মাওলানা ড. গোলাম মুহাম্মাদ রহ.।
খুতুবাতে এহতেশাম। মাওলানা এহতেশামুল হক থানবী রহ.।
বাছায়ের ওয়া ইবার। আল্লামা সাইয়্যেদ ইউসূফ বানূরী রহ.।
আল্লামা সাইয়্যেদ সুলাইমান নাদাবী কে চান্দ নাদের খুতুবাত ওয়া রসায়েল কা মাজমূআহ। মাওলানা ড. সাইয়্যেদ সুলাইমান নাদাবী রহ.।
ইসলামী মামলাকাত কে বুনিয়াদী উসূল – ২২ নুকাত। পাকিস্তান কে আকাবের উলামায়ে কেরাম রহ.।
কেফায়াতুল মুফতি। মাওলানা মুফতি কেফায়াতুল্লাহ দেহলবী রহ.।
কুল্লিয়াতে ইক্ববাল। আল্লামা মুহাম্মাদ ইক্ববাল রহ.।
সাপিদায়ে সেহের আওর টিমটিমাতা চেরাগ(আইনে পাকিস্তন কা শরয়ী মাহাকামাহ) ফযিলাতুশ শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
আসরে হাজের মেঁ জিহাদ কি ফিকরী বুনায়াদেঁ। ড. মুহাম্মাদ সার বুলন্দ যুবায়ের খান শহীদ রহ.।
দস্তূরে পাকিস্তান– ১৯৭৩ পাকিস্তান কি দস্তুর ছাজ এ্যাসেম্বলি।
সমাপ্ত
******************************************