আন-নাসর মিডিয়াইলম ও আত্মশুদ্ধিখোরাসান (আফগানিস্তান)বই ও রিসালাহবই ও রিসালাহ [আন নাসর]মিডিয়াশাইখুল হাদিস হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাহ হাফিযাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

১৪৪০ হিজরীর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আমিরুল মু’মিনীন শাইখুল হাদীস মৌলবি হেবাতুল্লাহ্ আখুন্দযাদাহ হাফিযাহুল্লাহ’র বার্তা

আন-নাসর’ পরিবেশিত
১৪৪০ হিজরীর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে
আমিরুল মু’মিনীন শাইখুল হাদীস মৌলবি হেবাতুল্লাহ্ আখুন্দযাদাহ হাফিযাহুল্লাহ’র বার্তা
অনলাইনে পড়ুন
https://justpaste.it/5gutw
ডাউনলোড করুন
pdf
word
***********
আরও একাধিক লিংক-
—————

আন-নাসর‘ পরিবেশিত

 

১৪৪০ হিজরীর পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে

আমিরুল মুমিনীন শাইখুল হাদীস মৌলবি হেবাতুল্লাহ্ আখুন্দযাদাহ হাফিযাহুল্লাহ’র বার্তা

 

******************

 

إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا. من يهده الله فلا مضل له. ومن يضلل فلا هادي له. وأشهد أن لا إلٰه إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله.

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন-

وَاذْكُرُوا إِذْ أَنتُمْ قَلِيلٌ مُّسْتَضْعَفُونَ فِي الْأَرْضِ تَخَافُونَ أَن يَتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَآوَاكُمْ وَأَيَّدَكُم بِنَصْرِهِ وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ﴿الأنفال: ٢٦﴾.

“আর স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে অল্প, পরাজিত অবস্থায় পড়েছিলে দেশে; ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলে যে, তোমাদের না অন্যেরা ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। অতঃপর তিনি তোমাদিগকে আশ্রয়ের ঠিকানা দিয়েছেন, স্বীয় সাহায্যের দ্বারা তোমাদিগকে শক্তি দান করেছেন এবং পরিচ্ছন্ন জীবিকা দিয়েছেন যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর।” (সূরা আনফাল-২৬)

মুমিন মুজাহিদ আফগান জাতি… রণাঙ্গনে অবস্থানরত দুঃসাহসী মুজাহিদীনে কেরাম ও বিশ্বের সকল মুসলিমদের প্রতি-

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

বরকতময় ঈদুল ফিতর আগমন উপলক্ষে আমি আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি৷ আল্লাহ তা’আলা আপনাদের নামায, রোযাসহ সকল ইবাদাত কবুল করে নিন৷ আল্লাহ তা’আলার কাছে আমার মিনতি – তিনি যেন শুহাদায়ে কেরামের শাহাদাতকে কবুল করে নেন, মুজাহিদদেরকে তাদের কষ্ট -মুজাহাদা ও জিহাদের উত্তম বিনিময় প্রদান করেন ও আহতদের দ্রুত শিফা নসীব করেন। তিনি যেন আপন করুণায় দুশমনদের নির্দয় কারাগারের নির্জন কুঠিরে অবস্থানরত কারাবন্দিদের মুক্তির পথ সহজ করে দেন৷ আল্লাহ তা’আলার কাছে আরো মিনতি – তিনি যেন শুহাদাদের মাতা-পিতা, বিধবা স্ত্রী, ভাই-বোন ও সন্তানদের ছবরে জামিল ও নেক হায়াত দান করেন এবং তাদের হৃদয়ের সুউচ্চ উৎকৃষ্ট আশাগুলো পূর্ণ করেন৷ (আমীন। ইয়া রাব্বাল আলামীন।)

হে মুজাহিদ জাতি!

আমার মনে হচ্ছে যে, এই বরকতময় উপলক্ষকে সদ্ব্যবহার করে জিহাদের অগ্রগতি ও সাম্প্রতিক রাজনীতি সম্পর্কে আমার অভিমত নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করা দরকার।

আমি প্রথমত: আল্লাহ তা’আলার নুসরাতের প্রতি ঈমান রেখে ও এই জিহাদের প্রতি আপনাদের জনগণের সাহায্য-সহযোগিতার উপর আস্থা রেখে আপনাদেরকে আশ্বস্ত করছি যে, দখলদারদের বিরুদ্ধে আপনাদের এ ন্যায়নিষ্ঠ জিহাদ আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে৷ বিদেশী দখলদাররা তাদের সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রভাবে এ পর্যন্ত অনেক ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই তারা নিরস্ত্র আফগান জাতির বিরুদ্ধে বর্বরতাপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করেছে। আর এখন তাদের সকল দাম্ভিকতা ও সামরিক শক্তি আপনাদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের সামনে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে৷ আপনাদের জিহাদ ও অনুপম কুরবানির বদৌলতে আজ ইমারতে ইসলামিয়া এ দেশের সকল সামরিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপসমূহের উপর ছড়ি ঘুরাবার ক্ষমতা রাখে৷ এ রকম পরিস্থিতিতে মুজাহিদিনে কেরামের নিকট আমার আবেদন, আপনারা দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে শক্তিশালী জিহাদি অপারেশন পরিচালনা করুন। প্রয়োজনে মার্কিনিদের সাথে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে উভয়টিরই লক্ষ্য হচ্ছে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো ও এ দেশে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা৷

ইমারতে ইসলামিয়ার সকল সামরিক অপারেশন ও রাজনৈতিক কার্যপ্রণালী সম্পাদিত হবে একক নেতৃত্বের অধীনে ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ৷ যেন কাজের ক্ষেত্রে একে অন্যের সহায়ক হয়৷

দখলদার মার্কিনি ও তাদের পা চাটা ভাড়ার গোলামরা যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধনীতি ও নৈতিক আইন-বিধান রক্ষা করে চলে না৷ তারা এমন সব জঘন্যতম অন্যায় সাধন করে, মানব ইতিহাসের কোথাও যার কোন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না৷ তারা গ্রামের পর গ্রাম, মসজিদ-মাদ্রাসা, বাজার ও হাসপাতালসমূহে অন্ধের মত নির্বিচারে গোলাবর্ষণ করে যাওয়াসহ আরো অনেক যুলুম-অন্যায় করে থাকে৷ তারা নিরপরাধ বেসামরিক লোকদেরকে হত্যা করে ও তাদেরকে তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে৷ তারা রাতের আঁধারে লোকদের বাড়িতে আক্রমণ করে ও বিস্ফোরকদ্রব্যের মাধ্যমে বাড়ির দরজা বিস্ফোরিত করে বাড়ির ভিতরস্থ মহিলা ও শিশুদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে৷ সেক্ষেত্রে তারা কারো প্রতি কোন বিবেচনা করে না৷ বরং লোকদেরকে তাদের স্ত্রী, মাতা ও সন্তানদের সামনে সম্পূর্ণ নির্দয়ভাবে হত্যা করে, এক্ষেত্রে তাদের অন্তরে সামান্যতম করুণারও উদ্রেক হয় না।

দখলদার মার্কিনি ও তাদের দোসররা হাজার হাজার আফগান যুবকদেরকে কারাগারের অন্ধকার কুটিরে বন্দি করে রেখেছে৷ তাদেরকে তারা বিভিন্ন প্রকারের নির্মম শাস্তি প্রদান করছে। অত্যাচারী দুশমনদের কারাগার থেকে আমাদের কাছে একের পর এক নিপীড়িত নির্যাতিত কারাবন্দির মৃত্যুর সংবাদ আসছে। আমাদের এই ভায়েরা কারাগারের ভয়াবহ নৃশংস পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ও সেখানকার দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাত্রার কাছে হার মেনে পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়; বরং সম্প্রতি বিভিন্ন কারাগারের কারারক্ষীরা নিরস্ত্র হাতকড়া পরিহিত কারাবন্দিদের বুকে তাজা বুলেট ছুড়ে মারছে। অথচ এ কাজটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের হীনতা ও নীচতা হওয়ার কারণে এটিকে একটি অন্যতম যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ সন্দেহাতীতভাবে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মার্কিনি যোদ্ধা ও তাদের দোসরদের কপালে লজ্জা ও কলঙ্কের ছাপ এঁকে দিয়েছে৷ এ সকল অন্যায় ও পাপরাশি দ্বারা ইতিমধ্যে তারা মানব ইতিহাসে সংঘটিত হওয়া সকল অন্যায়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে৷

হে সম্মানীত দেশবাসী! হে চিন্তাবিদ, গবেষকগণ!

ইতিমধ্যে ইমারতে ইসলামিয়া তার নীতিপরায়ণ অবস্থান ও শান্তিপ্রিয় পন্থানুসরণের কারণে পার্শ্ববর্তী ও এতদ অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহের জনমত অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে৷ মস্কোতে আফগানিস্তানের কিছুসংখ্যক প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ মোট বারটি রাষ্ট্রের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ( এই সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়গুলো ছিল) ইমারতে ইসলামিয়ার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সম্পর্ক রাখা, ইমারতে ইসলামিয়ার কর্মকর্তাদের সাথে বিভিন্ন সরকারী উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল মিটিং ও বিভিন্ন আফগানী সম্প্রদায়ের সাথে সমাজবদ্ধতার চুক্তি ও সমঝোতার মিটিং করা ইত্যাদি। এ সবই হচ্ছে উপরিউক্ত দাবির স্বপক্ষে জলজ্যান্ত প্রমাণ৷

ইমারতে ইসলামিয়া ও আফগানী রাজনৈতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যকার সমঝোতা প্রক্রিয়ার মাঝে বিঘ্নতা সৃষ্টি করার জন্য কাবুল প্রশাসন নিজেকে তাতে জড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে৷ কাবুল প্রশাসন এই সমঝোতাতে বাঁধা তৈরি করাকে নিজেদের প্রধান লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছে। এই উদ্দেশে তারা এই সমঝোতা চুক্তিকে বানচাল করার জন্য নানান ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কিন্তু ইমারতে ইসলামিয়া তাদের এই কৌতুকপূর্ণ প্রচেষ্টা ও সেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করে না। আমরাও আমাদের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এখন সময় এসেছে, দেশে দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাকে নিজেদের প্রধান টার্গেট বানানোর ক্ষেত্রে সকল দেশবাসী সমস্বরে কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে একাত্বতা পোষণ করার৷

ইমারতে ইসলামিয়া ক্ষমতার অপব্যবহারের ধারেকাছেও ঘেষবে না ইনশা আল্লাহ৷ আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী যে, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিটি আফগানী জনগণ তাদের নতুন জীবন খুঁজে পাবে৷ বিশেষকরে বর্তমানে যে সকল প্রশাসন ও কার্যালয় রয়েছে সেগুলোতে৷ কেননা সেগুলোর উন্নতি সাধনের দ্বারা ইমারতে ইসলামিয়া ইসলামি শরিয়াহর আলোকে সেগুলো থেকে ইতিবাচকভাবে ফায়দা লাভ করবে ইনশা আল্লাহ৷

পররাষ্ট্রনীতি

ইমারতে ইসলামিয়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আফগানিস্তান শান্তিপ্রিয় মনোভাবের কারণে তা বিদেশী দখলদার থেকে মুক্ত থাকার দাবি রাখে৷ যেন তার স্বাধীনতাকে কেউ খর্ব করতে না পারে এবং তার জমিন ও আকাশকে যেন কেউ আফগানিস্তান ছাড়াও অন্যদের ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করতে না পারে৷

তেমনিভাবে ইমারতে ইসলামিয়া এও বিশ্বাস করে যে, বিশ্বের সকল দেশের সাথে বিশেষকরে এতদ অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে তাদের ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠবে ও তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে উত্তম প্রতিবেশী নীতি বজায় থাকার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে৷ তবে আমেরিকা ও তার পুতুল কাবুল প্রশাসন এ যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করা ও এ দেশে জাতীয়, আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক মতভেদের অগ্নি প্রজ্জ্বলন করার নেশায় মত্ত রয়েছে৷ যেন এ দেশকে তারা আমাদের প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে ও এ অঞ্চলের সকল দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক রণকূপে পরিণত করতে পারে৷ এ কারণেই তারা বিভিন্ন ফেতনাবাজ দল তৈরী ও সেগুলোকে অর্থায়ন ও শক্তি সঞ্চার করতে সহায়তা করে যাচ্ছে৷ তবে আলহামদুলিল্লাহ, সেসব ফেতনা ও ফেতনাবাজ দলগুলি মুজাহিদদের সামনে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে৷ এভাবেই মার্কিনি দাম্ভিক জেনারেলদের মস্তক ও তাদের দেশীয় এজেন্টদের মস্তক আফগান জাতির জিহাদি শক্তির সামনে নীচু হয়ে গিয়েছে৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন-

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ ﴿يونس: ٥٨﴾

“বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ।” (সূরা ইউনুস: ৫৮)

ইমারতে ইসলামিয়া প্রথমত: আল্লাহ তা’আলার দয়া, অতঃপর তার মু’মিন জাতির সহযোগিতায় ফেতনাবাজ দলগুলিকে আফগান জাতির মাঝে তাদের বিষাক্ত বীজ বপণ করা এবং এ দেশকে তাদের ফেতনার কেন্দ্রস্থল বানিয়ে অন্যদের জন্য হুমকি হবার সুযোগ দেয়নি৷

আলাপ-আলোচনা

ইমারতে ইসলামিয়া তার শান্তিপ্রিয় দৃষ্টিকোণ থেকে মার্কিনিদের বুদ্ধিমান ও সমঝোতার অবস্থান গ্রহণ করার আহবান জানায়৷ আরো আহবান জানায় যে, সে যেন তার কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে সততা অবলম্বন করে এবং এই কর্মতৎপরতায় অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে ইমারতে ইসলামিয়ার থিসিসকে গ্রহণ করে৷

ইমারতে ইসলামিয়া চায় যে, তার প্রিয় দেশে যেন পূর্ণ স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার সাথে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়, যার অধীনে সকল আফগানবাসী সন্তুষ্টচিত্তে বসবাস করবে৷ এ লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য ইমারতে ইসলামিয়া এবার সশস্ত্র জিহাদের দিকে সমঝোতা ও সংলাপের দ্বার উম্মোচন করেছে ও ইমারার আলাপ-আলোচনাকারী প্রতিনিধিদল এবার কার্যত আপোষ-মিমাংসা ও সংলাপ নিয়ে রাজনৈতিক ব্যুরোর মাধ্যমে মার্কিনিদের সাথে যোগাযোগ করবে৷ আমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ করি– তিনি যেন আমাদের দেশবাসীকে উত্তম ফলাফল প্রত্যক্ষ করান৷ (আমীন ইয়া রাব্ব!)

আমাদের শত্রু-মিত্র সকলের জেনে রাখা উচিত যে, ইমারতে ইসলামিয়া রাজনৈতিক রীতিনীতির ক্ষেত্রে কখনো ধূর্ততা-প্রতারণা ও নিফাকির রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়৷ পাশাপাশি ইমারতে ইসলামিয়া নিফাকির রাজনীতি, সময় অপচয় ও লোকচক্ষুর আড়ালে চক্রান্তে লিপ্ত হওয়াকে পছন্দ করে না, এবং এটাকে তারা সফলতার পথ বলে মনেও করে না৷

আমাদের থেকে যেন কস্মিনকালেও কেউ এই প্রত্যাশা না করে যে, আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগপর্যন্ত আমাদের সশস্ত্র জিহাদ থেকে কখনো সরে আসবো, কিংবা গত চল্লিশ বৎসর যাবৎ জিহাদের ময়দানে আমরা যে সকল কুরবানি দিয়ে এসেছি সেগুলো থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করব৷

আমরা মার্কিনিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আফগান কর্তৃপক্ষের সাথেও সমঝোতার ক্ষেত্রে বিরাট উন্নতি লাভ করেছি৷ আমরা ইনশা আল্লাহ, উত্তরোত্তর আরো অগ্রসর হতে থাকব৷ যেন আফগান জাতির সে সকল সম্প্রদায়গুলো প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হতে পারে, যারা এ দেশে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বিয়োগান্তকভাবে জীবনযাপন করেছে৷ আমরা চাইছি দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি লাভ করার পাশাপাশি সমঝোতা ও সংলাপের মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোরও যেন অবসান ঘটে৷

কাবুল প্রশাসনের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের প্রতি

কাবুল প্রশাসনের সামরিক কর্মকর্তা, প্রতিনিধি ও সকল কর্মচারীদের প্রতি আমাদের বার্তা হচ্ছে: আপনারা সকলেই এ দেশ ও মাটির সন্তান৷ আপনাদের বাপ-দাদারা ইসলাম প্রতিরক্ষার পথে কুরবানি দিয়ে গেছেন৷ তাই আপনাদের জন্য কোন অবস্থাতেই সে সকল দখলদারদের অধীনে নিজেদের মুজাহিদ জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ হবে না, যারা আমাদের দ্বীন ও দেশের ঘোরতর দুশমন৷ তারা আমাদের ভূখণ্ডকে জবরদখল করে রেখেছে ও আমাদের মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে জঘন্যতম অন্যায় করে বেড়াচ্ছে৷

আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান গ্রহণ করি কেবল আপনারা দখলদারদের পক্ষাবলম্বন করার কারণে৷ আপনারা যদি দখলদারদের পক্ষাবলম্বন করা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে আপনারা আমাদের ভাইয়ে পরিণত হবেন৷ মুজাহিদিনে কেরাম শত্রুদের সাথে সম্মুখ সমর থেকে ফিরে আসা সৈন্যদেরকে যেমনিভাবে প্রশস্তচিত্তে অভ্যর্থনা জানিয়ে থাকেন ও ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানিয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে যারা বন্দী হয়েছেন তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন ও আহতদের সেবা-শুশ্রুষা করে থাকেন; আপনাদের জন্যও ইমারতে ইসলামিয়া ঠিক তেমনিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে৷ সুতরাং আপনারা নিজেদের দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তির পথ অবলম্বন করুন৷ মার্কিনিদের দালালি করা অবস্থায় আপনাদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার পূর্বে আপনারা দখলদারদের কাতার থেকে বেড়িয়ে আসার সুযোগকে কাজে লাগান৷ মুজাহিদদের কাতারে এসে শামিল হন ও বীরদের খাতায় নাম লেখান৷

হে প্রিয় জাতি!

ইমারতে ইসলামিয়া তার স্বজাতিকে নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, শরয়ী ব্যবস্থার অধীনে ইমারতে ইসলামিয়া তার নারী-পুরুষ প্রতিটি নাগরিককে তাদের প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিবে৷ শীঘ্রই দ্বীনি ও আধুনিক উভয় শিক্ষা খাতে, কর্ম খাতে, ব্যবসা খাতে ও সামাজিক অন্যান্য সকল খাতেই বিকাশ ও উন্নয়ন সাধনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ কেননা এগুলো একদিকে যেমনিভাবে প্রতিটি আফগানীর মৌলিক অধিকার৷ অপরদিকে এগুলো একটি সুখী ও কল্যাণময় সমাজ গড়ার জন্য মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত৷

ইমারতে ইসলামিয়া তার মুজাহিদদের প্রতি মালিকানাভুক্ত সম্পদ ও জনপ্রকল্পসমূহের রক্ষণাবেক্ষণের ফরমান জারী করেছে ও সেগুলোর মাধ্যমে কিভাবে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া যায়, সে ব্যাপারে গভীর মনোযোগী হবার নির্দেশ দিয়েছে৷

হে মুজাহিদ ভাইয়েরা!

আপনাদের প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে: আপনারা আপনাদের সামরিক ও বেসামরিক গুরুদায়িত্ব আন্তরিকতা, ইখলাস ও পূর্ণ আমানতদারীর সাথে আঞ্জাম দিবেন ও পরস্পরে মতবিরোধ করবেন না৷ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুজন সম্মানিত সাহাবিকে বলেছেন-

تطاوعا ولا تختلفا

“তোমরা একমত হয়ে চলবে, ভিন্নমত পোষণ করবে না৷” (বুখারী)

আপনারা আপনাদের সামরিক কর্মকাণ্ডের সময় লোকদের জান-মালের হেফাযতের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন৷ যেন বেসামরিক লোকদের কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয়, নিরপরাধ লোকদের রক্ত প্রবাহিত না করা হয় ও আপনাদের উদাসীনতার কারণে যেন দেশবাসীর কোন কষ্ট না হয়৷

আমি আপনাদেরকে অসিয়ত করছি শত্রুপক্ষের লোকদের সাথে সদাচারণ ও উত্তম ব্যবহার করতে; যখন তারা আপনাদের হাতে বন্দী হয়৷ সাবধান! সাবধান!! সাবধান!!! শত্রুদের পাপাচরণ যেন আপনাদেরকে উত্তেজিত করে না তোলে, আপনাদের মাঝে প্রতিশোধের আত্মা জাগিয়ে না তোলে ও আপনাদেরকে যেন আপনাদের ভারসাম্যতা, সদাচারণ ও উত্তম ব্যবহার থেকে সরিয়ে না দেয়৷ আর শরয়ী আদালতের নির্দেশ ছাড়া যেন কোন বন্দিকে হত্যা করা না হয়৷

তেমনিভাবে আমি আপনাদেরকে অসিয়ত করছি- পাপিষ্ঠ ও খারাপ চরিত্রের লোকদের থেকে আপনাদের দলকে পবিত্র রাখতে৷ কেননা যখন আপনাদের মাঝে পাপিষ্ঠ ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ ঘটবে ও তারা আপনাদের মাঝে অন্যায়ের বীজ ছড়াবে, তখন সেখানে কিছুতেই আল্লাহ তা’আলার সাহায্য আসতে পারে না। আর তখন আপনারা স্বজাতির সহোযোগিতা লাভে ধন্যও হতে পারবেন না৷ তাই সে সমস্ত লোকদের যেন আপনাদের দলে ঠাই না হয়, যারা নাফরমানী করে বা নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে৷

আমি আপনাদের আরো অসিয়ত করছি আপনারা আপনাদের শহীদ ও বন্দী ভাইদের পরিবার-পরিজনদের দেখাশুনা করুন ও তাদের প্রতি নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন৷ মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-

وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا ﴿الانسان: ٨﴾

“তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।”

(সূরা দাহর: ৮)

মুজাহিদদের ক্ষমতাবলে বিজিত অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে পরিচালনা করাকে তাদের জন্য এক মহা পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ সেক্ষেত্রে পর্যালোচনা করা হবে যে, তারা কি নিজেদের দাবি অনুযায়ী সেখানকার জনগণের সেবা করে থাকে ও তাদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে থাকে?

আমরা প্রত্যেকেই আল্লাহ তা’আলার সামনে জিজ্ঞাসিত হবো৷ আমাদের প্রত্যেককেই তাঁর দায়িত্ব ও অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷ তাই প্রত্যেক জিম্মাদার যেন জনগণের সেবা করা ও নাগরিকদের হক আদায় করাকে নিজের প্রধান দায়িত্ব বলে মনে করে৷

পরিশেষে

বরকতময় ঈদুল ফিতরের আগমন উপলক্ষে আমি আপনাদের সকলকে আবারো মোবারকবাদ জানাচ্ছি৷ আমি সকল মুজাহিদ ও জনসাধারণের কাছে আশা রাখি যে, আপনাদের বাড়ির পাশে যে সকল অসহায়, এতীম, বিধবা, অভাবী ও বন্দী ভাইদের পরিবার রয়েছে, আপনারা তাদের প্রতি আপনাদের সহায়তার হাত সম্প্রসারণ করবেন ও তাদের সাথে আপনাদের ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে ভুলবেন না৷ আপনারা তাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন, যেন তারাও এ বরকতময় দিনগুলোর আনন্দে অংশগ্রহণ করতে পারে ও এই সুবর্ণ সুযোগ গ্রহন থেকে বঞ্চিত থেকে না যায়৷

ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

 

 আমিরুল মু’মিনীন শাইখুল হাদীস মৌলবি হেবাতুল্লাহ্ আখুন্দযাদাহ [হাফিজাহুল্লাহ]

প্রধান, ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান

২৭-০৯-১৪৪০ হিজরী

০১-০৬-২০১৯ ঈসায়ী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + 20 =

Back to top button