ইলম ও আত্মশুদ্ধিনির্বাচিতবই ও রিসালাহবালাকোট মিডিয়ামিডিয়া

মুজাহিদের আত্মশুদ্ধি – ০৬ || কুরআন শ্রেষ্ঠ মুজিজা -উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ

‘বালাকোট মিডিয়া’
পরিবেশিত

মুজাহিদের আত্মশুদ্ধি – ০৬
কুরআন শ্রেষ্ঠ মুজিজা
উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ

***************************************

অনলাইনে পড়ুন

https://justpaste.it/4bov2

ডাউনলোড করুন

WORD
https://banglafiles.net/index.php/s/sejjn7nXq66NWJQ

https://archive.org/download/mujahider-attosuddhi-6/.docx
https://www.file-upload.com/cevj9hiytdg1

PDF
https://banglafiles.net/index.php/s/SjBcYTf8FM6YAwW

https://archive.org/download/mujahider-attosuddhi-6/.pdf
https://www.file-upload.com/lb1jh9y1e5xr
====================================
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

————————————

‘বালাকোট মিডিয়া’ পরিবেশিত

মুজাহিদের আত্মশুদ্ধি – ০৬

কুরআন শ্রেষ্ঠ মুজিজা

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ

**********************

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা   রাসূলিল্লাহ। আমরা সবাই দুরূদ শরীফ ও মাশোয়ারার দোয়াগুলো পড়ে নিই। আজকে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় ভাই, মাশোয়ারা দিন।

প্রথম ভাইঃ ‘আখিরাতের পথে যাত্রা’ বিষয়ে আলোচনা করলে কেমন হয় ভাই?

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আচ্ছা, অন্যান্য ভাইদের পরামর্শ কী?

দ্বিতীয় ভাইঃ কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব, আদব, অর্থ বুঝে তিলাওয়াত এবং তাদাব্বুর তথা চিন্তা-ফিকির করে তিলাওয়াত ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে ইনশাআল্লাহ। কারণ, এ বিষয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই গাফলতি আছে। পাশাপাশি সামনে যেহেতু রমজান তাই রমজানে নিজেদেরকে কীভাবে পরিশুদ্ধ করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।

তৃতীয় ভাইঃ ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা’ এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আজ তাহলে আমরা কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব, আদব, অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করা এবং তাদাব্বুর তথা চিন্তা-ফিকির করে তিলাওয়াত করা নিয়ে আলোচনা করি ইনশাআল্লাহ।

প্রথমেই বলে রাখি, কোরআনের ব্যাপারে কথা বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই। তারপরও এটা বেছে নিলাম কারণ, এ বিষয়ক আলোচনা আমার কাছে খুব ভালো লাগে আলহামদুলিল্লাহ। কোরআনের আয়াত নিয়ে তাদাব্বুর করা ও কোরআন বুঝে তার ওপর আমল করার স্বাদই অন্যরকম। এটা অনেক বড় ও ভারী একটি বিষয়।

কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা

আমার নিজের একটি বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করি। ছোটবেলা আমি যখন উস্তাদের কাছে কোরআন শরীফ শেখা শুরু করি তখন আমার আম্মা আমাকে বলেছিলেন, ‘কোরআন হল সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা’। তখন আমি বিভিন্ন নবী-রাসূলদের জীবনী পড়েছিলাম। দেখলাম,  হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মুজেযা বেশ চমৎকার, লাঠি সাপ হয়ে যায়। ওটা আবার   সবকিছু খেয়েও ফেলে। আবার ওটার ‍মুখে ধরলে পুনরায় তা লাঠি হয়ে যায়। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে পড়লাম, তিনি আল্লাহর হুকুমে অন্ধকে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিতে পারতেন। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় আল্লাহর হুকুমে কুষ্ঠরোগী সুস্থ হয়ে উঠত। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের ব্যাপারে পড়লাম, আল্লাহ বাতাসকে তাঁর অধীন করে দিয়েছিলেন। জ্বীনরা তাঁর কাজ করে দিতো। তখন আমি মনে মনে ভাবতাম, এগুলোই তো অনেক বড় বড় মুজেযা মনে হয়! কোরআন তো একটি কিতাব মাত্র, এটা আবার মুজেযা হয় কী করে? তাও আবার শ্রেষ্ঠ মুজেযা!

আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, বড় হয়ে বুঝবে। যাই হোক, তখন বুঝিনি। অনেক পরে আল্লাহ তাআলা অল্পকিছু বুঝার তাওফিক দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।

কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা কীভাবে?

প্রথম কথা হল, মুজেযা এমন জিনিসকেই বলা হয় যা কোনো নবী ছাড়া অন্য কারো হাতে প্রকাশ পেতেই পারে না। অন্য কারো পক্ষে সম্ভবও না। যা দেখে, সবাই বুঝতে পারে, তিনি  আর দশ জন সাধারণ মানুষের মতো কেউ নন। যদি তাই হত তাহলে তিনি যা করতে পেরেছেন অন্যরাও তা পারতো। যখন অন্যরা পারে না, শুধু তিনিই পারেন তখন সবাই একথা মেনে নিতে বাধ্য হয় যে, তিনি সাধারণ কেউ নন। তিনি হলেন নবী। তাঁর হাতে যা প্রকাশ পাচ্ছে তা তাঁর নিজের কাজ নয়। আল্লাহই তাঁর হাতে প্রকাশ করেছেন। এ হিসেবে কোরআন যে মুজেযা তা একদমই স্পষ্ট। কারণ, আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সবাইকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, কেউ পারলে কোরআনের সূরার মতো একটি মাত্র সূরা নিয়ে এসো। কোরআন নাযিল হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউই এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেনি। কেয়ামত পর্যন্ত কেউ পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِن كُنتُمْ فِى رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلٰى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِۦ وَادْعُوا شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صٰدِقِينَ

এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। সূরা বাকারাঃ ২৩

দ্বিতীয় কথাঃ সমস্ত নবী-রাসূলের মুজেযা ততদিন ছিল যতদিন তাঁরা দুনিয়াতে ছিলেন। তাঁদের বিদায়ের সাথে সাথে তাঁদের মুজেযাও বিদায় নিয়েছে। একমাত্র আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই ব্যতিক্রম। তাঁর বিদায়ের পরও আমাদের মাঝে তাঁর মুজেযা বিদ্যমান।

তৃতীয় কথাঃ আল্লাহ তাআলা অন্য কোনও নবী-রাসূলের মুজেযা বা কিতাব সংরক্ষণ করার ওয়াদা করেননি। কিন্তু কোরআন সংরক্ষণের ওয়াদা তিনি নিজে করেছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।

সূরা হিজর : ৯

দেখুন, কেয়ামত পর্যন্ত সবাই যেন আল্লাহর এ কালাম পড়তে পারে, তা থেকে হেদায়েত লাভ করতে পারে, এজন্য আল্লাহ তাআলা নিজে এ কিতাব সংরক্ষণ করার ওয়াদা করেছেন। এটা অনেক বড় বিষয়! আল্লাহু আকবর!।

চতুর্থ কথাঃ কোরআন আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর পূর্বে নাযিল হয়েছে। তখনকার সময়ের বিশ্ব পরিস্থিতি, মানব সভ্যতা, মানুষের মানসিকতা, চিন্তা-চেতনাকে সামনে রেখে এ কোরআন যেভাবে তাদের সমস্যাগুলোর সঠিক ও সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধান দিয়েছিল, ঠিক সাড়ে চৌদ্দশ বছর পর আজও সেই একই কোরআন বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি সদস্যের সকল সমস্যার সঠিক ও সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধান দিয়ে যাচ্ছে। হাজার বছরের ব্যবধানে কত মানুষ মাটির উপর থেকে নিচে চলে গেছে, এই দীর্ঘ সময়ে কত কি পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু এই কালামের একটি অক্ষরও পরিবর্তন হয়নি। আজও কোরআন তেমনই সজীব আছে, যেমন সজীব ছিল নাযিল হওয়ার সময়।

উপস্থিত এক ভাইঃ আমার কাছে এটাকেই কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ দিক মনে হয়।

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ জ্বি হ্যাঁ, এই কোরআন সর্বকালেই জীবন্ত ও প্রাণবন্ত ছিল, এখনো আছে, সামনেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। কালের পরিক্রমায় মানুষের কত কি বদলেছে, সংস্কৃতি বদলেছে, ভাষা বদলেছে, রুচি চাহিদা বদলেছে। আরও কত কি বদলেছে! অথচ কোরআনের কোনও কিছুই বদলায়নি। তার সব কিছু একই রকম আছে। সেই সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে।

তাহলে এবার চিন্তা করে দেখুন, এ কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মুজিযা নয় কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ যেই কোরআন থেকে পথনির্দেশ নিতেন, আজকের মুজাহিদগণও সেই কোরআন থেকেই নিজেদের পথনির্দেশ নিচ্ছেন। সুবাহানাল্লাহ! আজ পর্যন্ত দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে অগনিত মানুষকে হেদায়েতের পথ দেখাচ্ছে এই কোরআন। আল্লাহু আকবার।

কোরআনের আরেকটা চমৎকার দিক হচ্ছে, এই কোরআন নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছে। কোরআন বলে, এ কিতাব হচ্ছে নূর, হেদায়াত, শিফা, রহমত, সর্বোপরি মহান আল্লাহ তাআলার বাণী।

যাই হোক, কোরআন কীভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ মুজিযা, এ ব্যাপারে কিঞ্চিত ধারণা আমরা পেলাম। এই বিষয়টি আমাদের সকলেরই জানা থাকা উচিত। কারণ, এ বিষয়টির সঠিক উপলব্ধি কোরআনের সাথে আত্মিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ‘কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মুজিযা’ এই উপলব্ধি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে দিতে হবে। নতুবা কোরআনের সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক তৈরি হবে না।

বিজ্ঞানী জেফরি ল্যাংয়ের ইসলাম গ্রহণ   

আল্লাহ তাআলা সূরা ইয়াসীনের শুরুতে কোরআনের ব্যাপারে বলেছেন,

والقُرْآنِ الحَكِيْمِ

বিজ্ঞানময় (গভীর প্রজ্ঞাময়) কোরআনের শপথ।

অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী কোরআনকে চ্যালেঞ্জ করে শেষ পর্যন্ত তার সামনে আত্মসমর্পণ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। এমনই একজন হলেন বিজ্ঞানী জেফরি ল্যাং। তিনি লোকমুখে  শুনেছিলেন যে, এই কোরআন একটি জীবন্ত মিরাকল। তাই তাঁর অন্তরে কোরআন অধ্যয়নের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিনি প্রথমেই সূরা বাকারা পড়া শুরু করেন,

الم ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ  فِيهِ  هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ

আলিফ লাম মীম। এই সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। যা আল্লাহভীরুদের জন্য পথ প্রদর্শনকারী। সূরা বাকারা : ২

প্রথমেই তিনি থমকে যান। আরে, এ যে দেখি আশ্চর্য এক গ্রন্থ! শুরুতেই ঘোষণা দিচ্ছে, তার মধ্যে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। তিনি মনে মনে বললেন, আমি এর শেষ দেখেই ছাড়বো। এটা নির্ভুল গ্রন্থ কীভাবে হয় তা আমি দেখে ছাড়বো। এরপর তিনি যতই সামনে বাড়তে লাগলেন দেখতে পেলেন, কোরআন একের পর এক চ্যালেঞ্জ করেই যাচ্ছে। এক  জায়গায় বলছে, পারলে এর মতো দশটি সূরা নিয়ে আসো। আরেক জায়গায় বলছে, পারলে এর মতো একটি মাত্র সূরা নিয়ে আসো। প্রয়োজনে তোমাদের সকল সাহায্যকারীদেরকে ডেকে আনো। জায়গায় জায়গায় বলছে, তারা কি দেখে না, তারা কি বুঝে না?

শেষ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করলেন, প্রতিটি পদে পদে কোরআন শুধু আমাকে চ্যালেঞ্জই করে গেলো। আমি ভুল তো দূরের কথা, সামান্য গরমিল পর্যন্ত খুঁজে পেলাম না। এরপরই তিনি মুসলমান হয়ে যান। আলহামদুলিল্লাহ।

ড. মরিস বুকাইলির ইসলাম গ্রহণ

এমন একটি দুটি নয়। অসংখ্য ঘটনা আছে। বিখ্যাত আরেকটি ঘটনা হচ্ছে, ড. মরিস বুকাইলির ইসলাম গ্রহণের ঘটনা। ‘বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান’ বইটির নাম হয়তো আপনারা শুনেছেন। এ বইয়ের লেখক হলেন ড. মরিস বুকাইলি। তিনি ছিলেন অনেক বড় মাপের একজন বিজ্ঞানী। একবার ফেরাউনের মমি পরিক্ষা করার জন্য তাকে ডাকা হয়। তিনি পরিক্ষা নিরিক্ষা করে বুঝতে পারেন যে, ফেরাউন লবনাক্ত পানিতে (অর্থাৎ সাগরের  পানিতে) ডুবে মারা গেছে। তখন দুটি বিষয় কোনও ভাবেই তাঁর বুঝে আসছি না। ফেরাউন সাগরে গেল কীভাবে? আর সাগরে ডুবে গেলে তা মমি করা হলো কীভাবে? কারণ, মমি করার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে, দেহকে যতটুকু সম্ভব শুকনো রাখতে হবে। মমি করার পদ্ধতি হল, মৃতদেহ থেকে তরল সবকিছু বের করে ফেলতে হয়। যেহেতু এ দেহ সাগরে ডুবেছে তার মানে তাতে প্রচুর পানি ঢুকেছে। এরপর সাগর থেকে তুলে এনে মমি কীভাবে করা হলো? আর করা হলেও তা টিকে আছে কীভাবে? এ যে এক অসম্ভব বিষয়!! তখন কেউ একজন তাঁকে বললো, মুসলিমদের কোরআনে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা আছে। এ কথায় তিনি একদম হতবাক হয়ে যান। কোরআনে এ বিষয়ে কী থাকতে পারে? এরপর তিনি কোরআন অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। তখন দেখলেন, কোরআনে ফেরাউনকে ডুবিয়ে মারার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা এ ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন যে, আমি তার দেহকে সংরক্ষণ করবো। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّىٰ إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنتُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ

আর আমি বনি ইসরাঈলকে সাগর পার করে দিয়েছি। তারপর ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। অবশেষে সে যখন ডুবতে শুরু করল তখন বলল, আমি বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, বনি ইসরাইল যে মাবুদের ওপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোনও মাবুদ নেই। আমিও তাঁর অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।সূরা ইউনুস : ৯০

فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ ءَايَةً وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ ءَايٰتِنَا لَغٰفِلُونَ

আজ আমি তোমার দেহকে রক্ষা করবো যেন তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারো। অধিকাংশ মানুষই আমার নিদর্শনাবলী সম্পর্কে উদাসীন। সূরা ইউনুস : ৯২

এরপরই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

এটি কোন সংগীত? 

এবার একটি ঘটনা বলি। ক্বারী মিশারীর তিলাওয়াত আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আমি একবার ইউটিউবে তার একটি তিলাওয়াত শুনছিলাম। হঠাত ওটার নিচে একটি কমেন্টে নজর পড়ল। এক অমুসলিম নারীর কমেন্ট। যার মূলভাবটা এমন, আমি ধর্মভিত্তিক সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করি। অনেক বছর যাবত আমি এ বিষয়ে পড়াশোনা করছি। দুনিয়ার অনেক ধর্মীয় সঙ্গীত আমি শুনেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ সঙ্গীতটির মতো কোনো সঙ্গীত আমি শুনিনি। এটা অন্য সব কিছু থেকে আলাদা। এটা আমার ভিতরে কেমন যেন একটা অনুভূতি তৈরি করেছে, যা অন্য কোনো সংগীতে আমি পাইনি। কেউ কি বলতে পারেন, এটি কোন সংগীত এবং এর অর্থগুলোই বা কি?

দেখুন ভাই! এক অমুসলিম নারী, যে কোরআন সম্পর্কে কিছুই জানে না, সেও কোরআন শুনে বিমোহিত হয়ে গেছে। আর বরাবর এমনটাই হয়ে থাকে। যতবার তারা কোরআন শুনে তাদের একটাই কথা, ‘এটা কেমন যেন আলাদা’। এর মধ্যে কেমন যেন একটা শান্তির ভাব আছে। এমন একটা ভাব আছে যা অন্তরকে নাড়া দেয়। যদিও তারা অর্থ বুঝে না। এটাই হল কোরআনের বৈশিষ্ট।

ওরাও লুকিয়ে লুকিয়ে কোরআন শুনতো!

একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইতুল্লাহ শরিফে সূরা নাজম তিলাওয়াত করছিলেন। কাফিররা মুগ্ধ হয়ে তাঁর তিলাওয়াত শুনছিলো। যখন সেজদার আয়াত এল তখন সবাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সেজদায় চলে গেলো!

মক্কার কাফেররা প্রকাশ্যে অস্বীকার করলেও লুকিয়ে লুকিয়ে তারাও কোরআন শুনতো! এটা হচ্ছে কোরআনের আরেকটি অলৌকিক দিক। কোরআনের আসল মুজিযা এখানেই। ভাষাগত মুজিযা! আল্লাহ বলেন, পারলে কোরআনের মতো মাত্র একটি সূরা বানিয়ে দেখাও।

وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। সূরা বাকারাঃ ২৩

মক্কার কাফেররা অনেক চেষ্টা করেছে। প্রাণপণ চেষ্টা করেছে, পারেনি। একটি বিষয় লক্ষ্য করুন, তখনকার আরবরা আরবি ভাষা ও সাহিত্যে খুবই পারদর্শী ছিল। তারপরও তারা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেনি। তারা বুঝতে পেরেছিল, এটি একদমই অসম্ভব।

যাই হোক, এতকিছু বলার উদ্দেশ্য হলো, আমরা সকলে যেন কোরআনের ওজনটা বুঝতে পারি। কোরআনের ব্যাপারে এত বেশি মুজিযা আর নিদর্শন রয়েছে যে, বলে শেষ করা যাবে না।

এ কোরআন আখিরাতে তোমাকে কাঁদাবে

তাই আসুন, এবার আমরা আমাদের মূল আলোচনায় আসি। তা হচ্ছে, কোরআনের মাকসাদ কী? কেন এই কোরআন? কোরআনের মতো এমন একটি মহাগ্রন্থ ও জীবন্ত মুজিযা আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কী জন্য দিলেন?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

أَفَلَايَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا

তারা কি কোরআন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?

সূরা মুহাম্মাদ : ২৪

লক্ষ্য করুন, আল্লাহ তাআলা বলছেন, তারা কি কোরআন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে না?

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেছেন, এই কোরআন যদি আজ দুনিয়ায় তোমাকে কাঁদাতে না পারে, তবে নিশ্চিত থাকো তা আখিরাতে তোমাকে কাঁদাবে।

ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে হেফাযত করো। আমাদের অধিকাংশের অবস্থা হল আমরা আমাদের ঘরে কোরআনকে এমনভাবে ফেলে রাখি যে, তার ওপর মাকড়সার জাল আর ধূলোর আস্তরন পড়ে যায়।

একবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এক সাংসদ কোরআন হাতে নিয়ে বলেছিলো, যত দিন  মুসলমানরা এই কোরআনকে না ছাড়বে তত দিন তোমরা তাদেরকে শাসন করার কথা ভুলে যাও।

উম্মত হিসেবে আজ আমরা কোরআন থেকে কত দূরে সরে গেছিো! আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করেন।

উপস্থিত এক ভাইঃ এটাই হল বাস্তবতা। মুসলিমরা আজ কোরআন ছেড়ে বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে আছে।

আমরা কোরআন থেকে কত দূরে সরে গেছি

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ আল্লাহ বলেছেন,

أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنْ تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَكَثِيرٌ مِنْهُمْ فَاسِقُونَ

যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।সূরা হাদীদ : ১৬

একটু চিন্তা করে দেখুন, আজ উম্মাহ হিসেবে কোরআনের সাথে আমাদের আচরণ কী! বর্তমানে মুসলিমধারী কিছু লোকও এ কথা বলার দুঃসাহস দেখাচ্ছে যে, আল্লাহর এ কালাম হল ব্যাকডেটেড, এর আইন বর্বর, সেকেলে, এই আইন আজকের আধুনিক যুগে চলবে না! নাউজুবিল্লাহ!

আল্লাহর কালাম আমাদের মাঝে বিদ্যমান, অথচ আমাদেরই সন্তান, ভাই-বোন এই কালামের ব্যাপারে কত বড় স্পর্ধা দেখাচ্ছে! এর মূল কারণ, আমরা এই কালামকে তাকের ওপর তুলে রেখেছি। এর সাথে আমরা আমাদের আত্মার সম্পর্ক তৈরি করিনি। এমনকি পরবর্তী প্রজন্মকে এর সাথে সম্পৃক্ত করার মতো সদিচ্ছাও আমাদের আছে বলে বাহ্যত মনে হচ্ছে না।

কোরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক থাকা উচিত ছিল অন্তরের। কারণ, এই কোরআন পৃথিবীতে এসেছে ‘ক্বলবে সালীম’ (পরিশুদ্ধ আত্মা) তৈরি করা জন্য, অন্তরকে আলোকিত করার জন্য। অথচ যুগ যুগ ধরে সূক্ষ্ম চক্রান্তের মাধ্যমে আমাদেরকে কোরআন থেকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। আমাদের দিলে কোরআন নেই। কোরআনের সাথে ভালোবাসা নেই। আল্লাহর কিতাব যা দ্বীনের মূল উৎস, সেই কিতাব কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় তাকের উপরে পড়ে থাকে! বর্তমানে আমাদের অধিকাংশের অবস্থা হল, কোরআন আমাদেরকে ভাবায় না, হাসায় না, কাঁদায় না, আশা দেয় না, ভীতি সঞ্চার করে না; অথচ এর প্রতিটিই হওয়ার কথা ছিল। হায়, কোরআন ছেড়ে আজ আমরা কত দূরে চলে গেছি! যে কোরআনে আল্লাহ তাঁর  বান্দাদের সাথে কত কথা বলে রেখেছেন। উদ্দেশ্য ছিল, বান্দা তাঁর কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করবে, হাসবে, কাঁদবে, ভীত হবে, আশান্বিত হবে। আল্লাহর দিকে ছুটে আসবে আর বলবে,

رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخٰسِرِينَ

হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছি, আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তাহলে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো। সূরা আরাফ : ২৩

কিংবা বলবে,

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَة إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। সূরা আল-ইমরানঃ ৮

হায়! আমরা কোরআন থেকে কত দূরে সরে গেছি, যে কোরআনে আল্লাহ তাঁর গুনাহগার বান্দাদেরকে কত মহব্বত ও ভালোবাসার সাথে ডেকে বলছেন,

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيم

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা যুমার : ৫৩

 

কোরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক

আজ আমাদের সন্তানরা কোরআন কী এটাই বুঝে না! কোরআন কী? কোরআন হচ্ছে এমন এক জিনিস যা বহন করার ভয়ে আসমান, যমীন, পাহাড় কেঁপে উঠেছিলো। কোরআন দেখে বা কোরআন পড়ে আমাদের অন্তর কি কাঁপে? যেখানে আমাদের মধ্যেই এর মর্যাদা ও মহত্বের উপলব্ধি নেই সেখানে আমাদের সন্তানদের মধ্যে এই উপলব্ধি কোত্থেকে আসবে? সন্তানের মধ্যে এসব উপলব্ধি সঞ্চারিত করার প্রথম এবং ‍গুরু দায়িত্ব বাবা-মায়েরই।  কোরআন হাতে নিয়ে যদি আমাদের মধ্যে কোনো ধরণের অনুভূতি কাজ না করে, বুঝতে হবে আমাদের অন্তর মরে গেছে। আমাদের বেশিরভাগের অবস্থা হলো, কোরআন হাতে নিয়ে ভক্তিতে গদগদ করি, চুমু খেয়ে তাকের ওপর তুলে রাখি। কেউ মারা গেলে দু‘একদিনের জন্য তাক থেকে নামিয়ে আনি। রমজান এলে কোনো রকম একটা খতম দেই। এটাই আমাদের অধিকাংশের বাস্তব অবস্থা। এ থেকে বুঝা যায়, আমি কোরআন থেকে শুধু অতটুকু কল্যাণ নেয়ার মতো হালতে আছি। শুধু বরকত লাভের উদ্দেশ্য একটু তিলাওয়াত করি। এর চেয়ে বেশি কিছু না। তাও আবার নিয়মিত না। কারো আবার কোরআন হাতে নিলে মাসে এক খতম করার ইচ্ছা মনে জাগে। কারো আবার কোরআন থেকে কিছু জানতে ইচ্ছা করে, দেখি আল্লাহ কী বলেছেন? এগুলো দিয়েই নির্ণিত হয় কোরআনের সাথে আমাদের কার সম্পর্ক কতটুকু? কোরআনের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতেই আমাদের অন্তরের অবস্থা নির্ণিত হয়।

কোরআন হল আমাদের আয়না 

কোরআন হল আমাদের আয়না। আয়না দেখে যেমন নিজেকে ঠিক করতে হয়। চুল ঠিক করতে হয়, দাড়ি ঠিক করতে হয়। একবারে না হলে বার বার দেখতে হয় তারপর ঠিক হয়। ঠিক তেমনি ভাবে কোরআন দেখে আমাদেরকে নিজের ঈমান ঠিক করতে হবে। আমল ঠিক করতে হবে। আখলাক ঠিক করতে হবে। নিজেদের যাবতীয় বিষয় কোরআন দেখে দেখে ঠিক করতে হবে। আমরা এই কোরআনের দিকে যত বার তাকাবো এই কোরআন আমাদের কিছু না কিছু অবশ্যই ঠিক করে দেবে। কোরআনের একটি বৈশিষ্ট হল, এতে কেউ যদি হেদায়েত খুঁজে তাহলে সে হেদায়েত পায় আর কেউ যদি হেদায়েতের বিপরীত কিছু খুঁজে তাহলে সে তাই পায়। কোরআন তাকে তাই দেয়। আল্লাহ বলেন,

يُضِلُّ بِهِ كَثِيرًا وَيَهْدِي بِهِ كَثِيرًا وَمَا يُضِلُّ بِهِ إِلَّا الْفَاسِقِينَ

আল্লাহ এ কোরআনের মাধ্যমে অনেককে পথভ্রষ্ট করেন আবার অনেককে পথ প্রদর্শন করেন। এর মাধ্যমে কেবল ফাসেকদেরকেই পথভ্রষ্ট করে থাকেন। সূরা বাকারা : ২৬

চলুন, এবার দেখি, কোরআন কীভাবে আমাদের সামনে আমাদের অবস্থাকে আয়নার মতো তুলে ধরে। আল্লাহ তাআলা সূরা মারইয়ামে হযরত যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম), ইয়াহইয়া (আলাইহিস সালাম) ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম), ইসহাক (আলাইহিস সালাম) ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম), নূহ (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম), ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কথা উল্লেখ করে বলেন,

أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّـهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ مِن ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِن ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا  إِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَـٰنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا

এরাই হল সে সব নবী আদম সন্তানের মধ্যে হতে যাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন আর যাদেরকে আমি নূহের সঙ্গে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলাম তাদের মধ্যে হতে এবং  ইবরাহীম ও ইসমাইলের বংশধরদের মধ্যে হতে এবং যাদেরকে আমি হেদায়েত দিয়েছিলাম আর বেছে নিয়েছিলাম তাদের মধ্য হতে। যখন তাঁদের নিকট দয়াময় আল্লাহর আয়াত তেলাওয়াত করা হত তখন তাঁরা কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় লুটিয়ে পড়তো।সূরা মারইয়াম : ৫৮

অপরদিকে সূরা ইনশিকাক আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَمَا لَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿٢٠﴾ وَإِذَا قُرِئَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنُ لَا يَسْجُدُونَ ۩ ﴿٢١﴾ بَلِ الَّذِينَ كَفَرُوا يُكَذِّبُونَ ﴿٢٢

তাদের কী হল যে, তারা ঈমান আনে না? তাদের সামনে যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তারা সেজদা করে না? (কাফেররা কোরআন শুনে সেজদা করবে তো দুরের কথা) বরং তারা ওটাকে অস্বীকারই করে। সূরা ইনশিকাক : ২০-২২

দেখুন, একই জিনিসের উপর দুই দলের দুই অবস্থা। আল্লাহর আয়াত যখন আল্লাহর নবীগণের সামনে তিলাওয়াত করা হয় তখন তাঁরা কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় লুটিয়ে পড়তেন। অপর দিকে যখন তা কাফেরদের সামনে তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা সেজদা করবে তো দূরের কথা, ওগুলো যে আল্লাহর আয়াত এ কথাও তারা বিশ্বাস করত না।

ঠিক এ আয়াতটির প্রতিই যদি আমরা লক্ষ্য করি দেখবো, এ আয়াত শুনে বা পড়ে আমাদের কারো মন নরম হয়ে যাবে, কারো কান্না আসবে, কেউ আবার অঝোরে কাঁদবে। কেউ আবার সেজদায় পড়ে কাঁদতে শুরু করবে, কেউ বার বার আয়াতটি পড়তে থাকবে আর ঢুকরে ঢুকরে কাঁদতে থাকবে। এভাবে এই আয়াতটি আমাদের প্রত্যেককে আমাদের অবস্থা অনুযায়ী আলাদা আলাদা কিছু দিবে।

কোরআন আমাদের জীবন বিধান

ভাই, আমরা বিশ্বাস করি এবং মুখেও বলি যে, কোরআন আমাদের জীবন বিধান। কিন্তু আমরা আমাদের বাস্তব জীবনে ‘জীবন বিধান’ আর ‘কোরআন’ এই দু‘টি শব্দকে এক করতে হিমশিম খেয়ে যাই। বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই কথা বুঝানোটাই অনেক  কঠিন হয়ে যায়। কারণ, জীবন-বিধান শব্দটা একটা নিছক শব্দই। এই শব্দটা জীবন তখনই পায় যখন এটা জিন্দেগীর মধ্যে ঢুকে যায়। বিশ বছর বয়স হওয়ার পর যদি আমি আমার সন্তানকে বলি ‘কোরআন তোমার জীবন-বিধান’ তাহলে সে হয়তো আমার কথা মেনে নেবে কিন্তু কোরআনকে জীবন-বিধান হিসেবে উপলব্ধি করা তার পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে যাবে। অথচ আমাদের উচিত ছিলো, ছোট বেলা থেকেই তার অন্তরে এ কথা বদ্ধমূল করে দেয়া যে, কোরআনই হল আমাদের জীবন বিধান। আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি অঙ্গনের বিধান কোরআন থেকেই গ্রহণ করবো। জীবনের প্রতিটি বিষয়ে আমরা কোরআনের কাছেই ফিরে যাবো। আমরা আমাদের জীবনের ছোট বড় প্রতি সমস্যার সমাধান কোরআন থেকেই নেবো। আমাদের উচিৎ, ছোট বেলা থেকেই আমাদের সন্তানদের অন্তরে এ কথা বদ্ধমূল করে দেয়া।

কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি

আজকের শেষ কথা। দেখুন ভাই, আল্লাহ তাআলা সূরা কামারে ইরশাদ করেন,

وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ

বুঝার জন্য বা উপদেশ গ্রহণের জন্য আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, আছে কি কোনো উপদেশগ্রহণকারী? সূরা কামার : ২২

দেখুন ভাই, আল্লাহ কীভাবে বলছেন, আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, আছে কি কোনো উপদেশগ্রহণকারী?

কত মায়া মমতার সাথে আল্লাহ আমাদেরকে ডাকছেন, আমরা যেন কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করি। কিন্তু আমাদের মধ্যে কত জন আছে এমন যারা কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করি। উপদেশ গ্রহণ করার নিয়তে কোরআন তিলাওয়াত করি। সংখ্যাটা একদমই কম হবে। একদমই কম। হে আল্লাহ! আমাদেরকে কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন।

আজকের আলোচনা এ পর্যন্তই। এখন আপনারা কেউ কিছু শেয়ার করতে চাইলে করতে পারেন। কোনো স্বপ্ন বা শিক্ষনীয় কোনো ঘটনা। বিশেষ করে কোরআনের সাথে সম্পৃক্ত কোনো কিছু যদি থাকে। আচ্ছা প্রথমে আমিই একটি ঘটনা শুনাই।

সরাসরি কোরআন দিয়ে দাওয়াত দেয়া 

আমি এক ভাইয়ের ব্যাপারে জানি, যিনি অনেক দিন থেকে তার বন্ধুদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করছিলেন, কিন্তু তেমন কোনো কাজই হচ্ছিলো না! তিনি প্রায় হতাশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ছিলেন। হঠাত একদিন তার মাথা এল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো শুধু এই কোরআন দিয়েই দাওয়াত দিতেন। তাহলে আমি কেন এত কাহিনী বলি? আমি সরাসরি কোরআন দিয়ে দাওয়াত দেই। দেখি, কী হয়? হেদায়েতের মালিক তো হলেন আল্লাহ। যেই ভাবা সেই কাজ। পরের দিন তিনি একটি তাফসীরের কিতাব হাতে নিয়ে তাঁর এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মসজিদে নামায পড়লেন। নামাযের পর ওই কিতাব থেকে মাত্র একটি সূরা অর্থসহ তাকে পড়ে শুনান। ব্যাস, আর কিচ্ছু না। কয়েকদিন পরই আলহামদুলিল্লাহ তাঁর ওই বন্ধু দ্বীনের পথে চলে আসেন। আমরাও এটি করতে পারি ভাই, ইনশাআল্লাহ আমরাও এর উপকারিতা দেখতে পাবো।

এবার আপনারা কিছু বলুন।

কোরআন তিলাওয়াত করলে মন ভাল হয়ে যায়

উপস্থিত এক ভাইঃ কোরআন সম্পর্কে আমার নিজস্ব বেশ কিছু উপলব্ধি আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল, কোন কারণে যখনই আমার মন খারাপ থাকে তখন কোরআন তিলাওয়াত করলে মন ভাল হয়ে যায় আলহামদুলিল্লাহ।

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ ময়দানের ভাইদেরকেও দেখেছি, বোমার আঘাতে তাদের কারো হাত পা উড়ে গেলে ব্যাথার অনুভূতি দূর করার জন্য তাঁরা কোরআন তিলাওয়াত করতে শুরু করেন। সুবহানাল্লাহ!

উপস্থিত আরেক ভাইঃ বড়দের কাছ থেকে শুনা, সঠিক কি না আল্লাহই ভালো জানেন। কোরআনের একটি বৈশিষ্ট্য হল, যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো সমস্যা নিয়ে কোরআন খুলবে, খোলার পর প্রথম পৃষ্ঠাতেই ওই সমস্যার কোনো না কোনো সমাধান সে অবশ্যই পাবে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে কোরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

একটি স্বপ্ন

উপস্থিত আরেক ভাইঃ আমি একটি স্বপ্ন বলতে চাচ্ছি। স্বপ্নটি হল, আমি দেখি, বাংলাদেশের এক শায়েখের বাড়িতে গেছি। আমার সাথে আরেক ভাইও ছিলেন। আমরা শায়খের বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করি। কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থানও করি। এরপর হঠাত আমার ঘুম  ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে আমি আফসোস করতে থাকি, হায়! আরেকটু সময় পেলে তো আমি আমার প্রিয় শায়েখকে দেখতে পেতাম। পরে আমি আমার মাসউল ভাইকে স্বপ্নটা জানাই। তিনিও বললেন, ইস! যদি দেখতে পেতেন! তখনই হঠাত একটি কথা আমার মনে এল, সবকিছুই তো আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। তিনি চাননি তাই দেখা হয়নি। হয়তো এর মধ্যেই আল্লাহ কল্যাণ রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল শায়েখদেরকে পূর্ণ নিরাপদে রাখেন, সঙ্গে আমাদেরকেও। আমীন

স্বপ্নে শাইখ উসামা রহ.

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিযাহুল্লাহঃ এমনই একটি স্বপ্ন আমাদের আরেক ভাই দেখেছিলেন। স্বপ্নটি তিনি এভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে, আমি আলহামদুলিল্লাহ সাধারণত প্রতি রাতে অন্তত আয়াতুল কুরসী, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার এবং সব শেষে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু … ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, এ আমলগুলো করি। সেই রাতে এ ছাড়া আর কোনো দোয়া পড়েছিলাম কিনা মনে নেই। তবে এটুকু মনে পড়ে যে, ওই রাতে আমি দেয়ালে হালকাভাবে ঠেস দিয়ে যিকির করেছিলাম আর আমার এক বন্ধুর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলাম। আর যতটুকু মনে পড়ে, ওই রাতটি ছিল রমযানের শেষ দশকের বেজোড় কোনো রাত।

তো আমি স্বপ্নে দেখি, শাইখ উসামা রহ. পাহাড়ের মতো একটি উঁচু জায়গা থেকে দ্রুত নিচের দিকে নেমে আসছেন। তাঁর মুখে হাসি। মাথায় পাগড়ি নেই। রুমাল পেঁচানো। দাড়িগুলো সব কালো। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্রুত নিচে নেমে আসছেন। আমি ভাবছিলাম, তিনি কি আমার দিকেই আসছেন? এমন ভাবতেই মনে হল, তিনি ঠিক আমার মাথার পাশে চলে এসেছেন। তখনও দেখি, তাঁর মুখে হাসি, দাঁতও দেখা যাচ্ছিল। অনেক সুন্দর হাসি। আমি ভাবছিলাম, তিনি একদম আমার মাথার পাশে চলে এসেছেন। এই ভেবে আমি লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে যাই। সঙ্গে সঙ্গে আমার ঘুমও ভেঙ্গে যায়। ঘড়িতে সময় তখন রাত দুইটা কি তিনটা।

আজকের আলোচনা আপাতত এই পর্যন্তই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মাফ করুন এবং আমাদের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে যান। আমার কথায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তা আমার পক্ষ থেকে আর তাতে কল্যাণকর কিছু থাকলে তা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে।

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين

وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين

—————

Related Articles

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =

Back to top button