“একাকী জিহাদের বিধিবিধান!” – শায়খুল মুজাহিদ হামুদ আত তামিমি হাফিজাহুল্লাহ
“একাকী জিহাদের বিধিবিধান!”
– শায়খুল মুজাহিদ হামুদ আত তামিমি হাফিজাহুল্লাহ
.
পিডিএফ ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/JEGBoHoxWMX64xN
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/GpZw9QgMiDoLYM9
https://archive.org/download/ekaki-jihader-bidhan_202106/Ekaki%20Jihader%20Bidhan.docx
********************************
একাকী জিহাদের বিধিবিধান
শাইখ হামীদ আল তামীমি
আল ফজর
‘ইন্সপায়ার’ পত্রিকা শাইখ হামীদ আল তামীমিকে পশ্চিমা বিশ্বে একাকী জিহাদের বিধিবিধান সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিল। শাইখ আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন গবেষণা আকারে, যা তিনি কয়েকভাগে বিভক্ত করেছেন। আমরা বিষয়ভিত্তিকভাবে ক্রমানুসারে তা আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি। শাইখ ‘বেসামরিক ব্যক্তি’ শব্দটির অর্থ এবং শারীআহ আইনে এর উৎস আছে কি নেই তা আলোচনা করেছেন।
_________________
১। বেসামরিক ব্যক্তিদের আক্রমন
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সারা বিশ্বের মালিক, সকল নবী ও রাসুলদের মধ্যে উচ্চমর্যাদার অধিকারী আমাদের নবী মুহাম্মাদ(ﷺ), তাঁর পরিবার ও সাথীদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
শুরু করছি…
মুসলিমদের বক্ষ প্রশমিত হয়েছে ও আরোগ্য লাভ করেছে। এমন এক সময়ে যখন তারা পশ্চিমা বিশ্বে আমেরিকা, বিট্রেন, ফ্রান্স ইত্যাদিতে একাকী জিহাদের হামলা বাড়তে দেখেছে যা একাকী জিহাদের নায়কদের আরও বেশি বেশি একই রকমের হামলার জন্য সাহস দিচ্ছে।
আমরা তাই এই নায়কদের পাশাপাশি দাঁড়াই আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে, এইসব হামলায় সাহায্য ও সমর্থনের মাধ্যমে যা শারীয়াহের বৈধ পথে সম্পাদিত এবং যা উম্মাহর স্বার্থ উপলব্ধি করে। তাই এটা আমাদের উপর তাদের হক, তাদের অনুপ্রাণিত করা, সাহস দেওয়া এবং তাদের জন্য উপযুক্ত রাস্তা তৈরী করা যেহেতু পশ্চিমে তারাই আমাদের সাহায্যকারী হাত, আল্লাহর পর যাদের উপর আমরা ভরসা করি, আমাদের নির্যাতিত মুসলিম ভাইদের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য।
এই কারণে আমি দেখলাম যে শারীআহ অনুযায়ী পশ্চিমা বিশ্বে একাকী জিহাদের বিধিবিধান পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে আমি বাধ্য। যেন একাকী মুজাহিদরা এই পথে পরিষ্কার অন্তর্দৃষ্টি ও নেতৃত্ব সহকারে অগ্রসর হতে পারেন এবং অজ্ঞতা যেন তাদেরকে হক পথ থেকে এদিক-ওদিক না করে দেয় বা তাকে সঠিক পথে নিযুক্ত হতে বাধা না দেয় কিংবা তার হতে অনেক কল্যাণ ও উপকারিতা অগ্রাহ্য না হয়।
উদাহরণস্বরূপঃ একজন একাকী মুজাহিদ জিহাদী হামলায় অংশগ্রহণ করতে ভয় পেতে পারে কোন পাপে পতিত হওয়ার ভয়ে বা বিব্রত বোধ করতে পারে-যখন সেখানে কেউ নেই অথচ আছে পুরষ্কার, প্রতিদান এবং সর্বোপরি মুসলিমদের স্বার্থ। আমি আল্লাহর কাছে চাই যেন তিনি আমাকে সাহায্য ও পথ প্রদর্শন করেন। আমি বেসামরিক ব্যক্তি ও তাদের সম্পর্কিত বিধানের কথা শুরু করতে যাচ্ছি…
প্রথমতঃ
জিহাদে রক্ত সম্পর্কিত বিধিবিধান কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা (মুজতাহিদ উলামাদের ঐক্যমত) কিয়াস (ফকিহবিদদের যুক্তি) নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের বিধিবিধান উল্লেখ করা যাবে না চিরাচরিত বা আন্তর্জাতিক আইন থেকে কিংবা যা মানুষের মধ্যে প্রচলিত এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা ও পছন্দের জন্য সুবিধাজনক।
তাই ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী যে বিধান সে তার দিকেই প্রত্যর্পণ করতে বাধ্য যদিও তা প্রথা ও ঐতিহ্যের বিপরীতে যায় বা ব্যক্তিগতভাবে দুর্বল এবং দুর্নীতিগ্রস্থ অন্তর দ্বারা গৃহীত না হয়, বিকৃত সাধন করা হয় কিংবা নিন্দুকের দ্বারা নিন্দিত হয়।
আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।” (৪:৫৯)
সর্বশক্তিমান আল্লাহ আরও বলেন,
“অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায় বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমরা মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নিবে।” (৪:৬৫)
নিজের মধ্যে এই নমনীয়তা, সম্মতি এবং বিরোধিতার অনুপস্থিতিই বিশ্বাসের একটি চিহ্ন ও শর্ত।
দ্বিতীয়তঃ
আমাদের এটা বুঝতে হবে যে ‘বেসামরিক ব্যক্তি’ এই পরিভাষাটি সৈনিকের বিপরীতে আরোপ করা হয় এবং এরপর তা হতে শারীয়াহ বিধান প্রয়োগ করা হয়, এটা সম্পূর্ণভাবে নতুন এবং কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াসের উপর ভিত্তি করে নয়।
এই পরিভাষাগুলোর মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইনে (জাতিসংঘ নামক কুফরি সংঘ কর্তৃক প্রণীত) যা শারীয়াহ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং আমাদের এটি (আন্তর্জাতিক আইন) অবিশ্বাস করতে বলা হয়েছে, এই বিধিবিধানের উপর ভিত্তি করে বিচার করতে বলা হয় নি।
‘বেসামরিক ব্যক্তি’ পরিভাষাটি আন্তর্জাতিক মহল ও তাদের আইন দ্বারা এই যুগে উদিত হয়েছে।
এই কারণে আমরা এই পরিভাষাটি খুঁজব, এর বর্তমান অর্থে, শারীয়াহ’র বই ও সালাফদের জিহাদ সম্পর্কিত লেখায়। এটা আমাদের জন্য আবশ্যক হয়ে গিয়েছে শারীয়াহ মনোনীত ও এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিধানের পরিভাষার দিকে প্রত্যাবর্তন করা।
তৃতীয়তঃ
শারীয়াহ’র পরিভাষা অনুযায়ী কাফিরদের শ্রেণীবিভাগ ও তাদের সম্পর্কিত বিধিবিধান যা ফিকহের বইগুলোতে এসেছে সেগুলো হচ্ছেঃ
জিহাদ সম্পর্কিত এবং রক্ত ও অর্থ সম্পর্কিত বিধান, শারীয়াহ আইন অনুযায়ী যা ইসলামী ফিকহ বইয়ে উল্লেখিত আছে, কাফিরদের ৪ টি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেঃ
- প্রথম শ্রেণীঃ
একজন অবিশ্বাসী যার মুসলিমদের সাথে চুক্তি আছেঃ
তাদের মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ স্থগিত রাখার ব্যাপারে শান্তিচুক্তি আছে। যতক্ষণ তারা চুক্তির সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ শারীয়াহ তাদের অর্থ ও রক্তকে যে কোন ধরনের লক্ষ্য বানাতে নিষেধ করে।
- দ্বিতীয় শ্রেণীঃ
জিম্মিঃ জিম্মি, একজন অবিশ্বাসী যে ইসলামের বিধান । ও নিরাপত্তার অধীনে বাস করে। তারা মুসলিমদের জিজিয়া দেয়, যেহেতু তারা তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অনুগত ও জিজিয়া দেয়, শারীয়াহ তাদের রক্ত ও সম্পদে যে কোন ধরনের আক্রমণ করতে নিষেধ করে।
- তৃতীয় শ্রেণীঃ
নিরাপত্তা প্রাপ্ত অবিশ্বাসীঃ প্রত্যেক অবিশ্বাসী যারা মুসলিম ভূমিতে বসবাস না করার ইচ্ছায় প্রবেশ করে এবং একজন মুসলিম দ্বারা তার নিজের ও সম্পদের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের মুক্তি প্রত্যাহার না করে অথবা নিরাপদ অন্য কোনো পরিবেশে যাচ্ছে না ততক্ষণ শারীয়াহ তাদের রক্ত ও সম্পদে যে কোন ধরনের আক্রমণ করতে নিষেধ করে।
- চতুর্থ শ্রেণীঃ
এবং এই শ্ৰেণীটি গুরুত্বপূর্ণ যা নিয়ে আমরা কথা বলতে মনস্থ করেছিলাম।
যুদ্ধরত কাফিরঃ এরা হলো তারা যাদের মুসলিমদের সাথে চুক্তিপত্র বা নিরাপত্তার অঙ্গীকার নেই। এরা হলো তারা যারা পরোক্ত দলের অন্তর্ভুক্ত না, চাই তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করুক বা না করুক। “যোদ্ধা” শব্দটি তাদের জন্য একদম অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে দ্বিধাদ্বন্দ্বের উদ্ভব হয়। যে, যুদ্ধরত হলো তারা যারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণকারী। আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে এটা ঠিক নয়। সত্য হলো এ ধরনের কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা যখন চাইবে তখন লড়াই করা অনুমোদনযোগ্য।
আর এই ভিত্তিতেই কাফিরদের সাথে আমাদের সকল কাজ কারবার। তারা মূলত যুদ্ধরত কাফির যতক্ষণ না তারা মুসলিমদের সাথে কোন শান্তি চুক্তি বা নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ না হয়। আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে, আক্রমনাত্নক জিহাদ হলো কাফিরদের বিরুদ্ধে এবং যুদ্ধ করা হবে যেখানেই তারা থাকুক, যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, এমনকি যদিও তারা মুসলিমদের প্রতি কোমল হয় এবং যুদ্ধ শুরু নাও করে। অতএব এইরকম কাফিরদের জন্য যদি এই নিয়ম হয় তাহলে সেইসব জন্য কেমন আচরণ হবে যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছে এবং তাদের ভূমি দখল করেছে… অবশ্যই এতে কোন সন্দেহ নেই যে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা অগ্রাধিকার পাবে।
অন্যদিকে কাফিরদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক জিহাদে কাফিরদের পুশ ব্যাক করা হয় যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আক্রমণ শুরু করেছে। এটাই হলো এই দুই প্রকার জিহাদের মধ্যে পার্থক্য। যুদ্ধরত কাফিরদের জন্য কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী, ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা এবং সালাফদের নিকটে শারীয়াহ সম্মত আইন হলো যে যুদ্ধরতদের কে হত্যা করা হবে এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা হবে এবং তাদের অর্থ সম্পদ গণীমাহ হিসেবে গন্য হবে। কাফিরদের ভূমি আক্রমণকারীদের জন্য বৈধ । আর সেখানে তাদের জন্য কোন নিরাপত্তা নেই কোন চুক্তি, সম্মতিপত্র, নিরাপত্তা অথবা ছাড়পত্র ছাড়া।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁত পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে। যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
আরও বলেন,
“আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। সমবেতভাবে।”
এবং বলেন;
“আর তাদেরকে হত্যা কর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে।”
ইমাম বুখারী এবং মুসলিম বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বনু আল মুসতালিক্ব গোত্রকে আক্রমণ করেন যখন তারা অপ্রস্তুত ছিল এবং তাদের পশুগুলো পানি পান করছিল। তিনি তাদের সৈন্যদেরকে হত্যা করেন এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করেন।
যখন বনু কুরাইযাহ তাদের চুক্তি প্রত্যাহার করে নেয় তখন তারা যুদ্ধরত কাফির হিসেবে গণ্য হয়। ইমাম বুখারী এবং মুসলিম বর্ণনা করেন যে, বনু কুরাইযাহ আত্নসমর্পন করেছিল এবং সাদ বিন মু’আযের মীমাংসার জন্য অপেক্ষা করছিল। আল্লাহর রাসূল ﷺ সাদ কে পাঠান যিনি একটি গাধায় চড়ে এসেছিলেন এবং তিনি মসজিদের কাছে লাগাম টেনে ধরেছিলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছিলেন, “তোমাদের নেতার প্রতি দাঁড়াও” অথবা “তোমাদের সর্বোত্তম অভ্যর্থনা জানাও।” তারপর তিনি বলেছিলেন, “এই লোকেরা আত্নসমর্পন করেছে এবং তোমার মীমাংসার প্রত্যাশী।” সাদ বলেছিলেনঃ “আপনি তাদের যোদ্ধাদের হত্যা করুন এবং তাদের নারী ও শিশুদের বন্দী করুন।” রাসূল (ﷺ) বলেছিলেন, “তুমি আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার করেছে।” অথবা বলেছিলেন, “সার্বভৌম ক্ষমতার মালিকের আইন অনুযায়ী ফয়সালা করেছে।”
আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণিত যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) খায়বারের বিরুদ্ধে একটি অভিযান পরিচালনা করেন। যখন তিনি শহরে প্রবেশ করেন, তিনি বলেন, “আল্লাহু আকবার! খায়বার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে!” অতঃপর আমরা যখন তাদের ভূমিতে অবতরণ করলাম (তাদের কাছাকাছি), প্রত্যুষে তাদের জন্য অশুভ আছে যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল! লোকেরা তাদের কাজ থেকে আসলো এবং বললো, “মুহাম্মাদ! আর তার সৈন্যরা!” আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলপ্রয়োগ পূর্বক খায়বার দখল করেন। তিনি তাদের সৈন্যদের হত্যা করেন এবং নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করেন। ন্যায়পরায়ণ খলিফা এবং তারপরের মুসলিমদের এই বিষয়ক প্রচলন নিয়ে অনেক উদাহরণ আছে। আমরা সেই বইগুলো খুঁজব যেখানে উল্লেখ আছে, মুসলিমরা কি করেছিল যখন তারা কোন জায়গা বা দুর্গ জয় করেছিল এবং কিভাবে যোদ্ধাদের সাথে কারবার করেছিল-তাদের হত্যা করে, তাদের মহিলা ও শিশুদেরকে বন্দী করে এবং গানীমাহ হিসেবে অর্থ ও সম্পদ বণ্টনের মাধ্যমে। উদাহরন স্বরূপ “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া” বইয়ে উল্লেখ আছে যে উমার ইবনে খাত্তাব সালামা বিন কায়িসের নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠান। তিনি তাদেরকে উপদেশ দেন, আল্লাহর নামে ও আল্লাহর জন্য আক্রমণ করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়তে যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করে। তারা দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হলো, কাফিরদের একটি সমাবেশ পেল এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে ডাকল তিনটির মধ্যে যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে অথবা যুদ্ধের মাধ্যমে। কাফিররা কোনটিই মানতে অস্বীকার করল এবং মুসলিমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল, তাদের যোদ্ধাদের হত্যা করল, নারী ও শিশুদের বন্দী হিসেবে এবং অর্থ গানীমাহ হিসেবে গ্রহণ করল।
শারহ আল কাদীরের বইয়ে, বিন হামাস বলেন, “যুদ্ধের ভূমিতে কোন অলঙ্ঘনীয়তা বা নিরাপত্তা নেই” (এটা মুসলিমদের আক্রমণ ও হানা দেওয়ার জন্য ভেদ্য)
তিনি আরো বলেন, “যেসব কাফির মুসলিম হতে বা জিজিয়া দিতে অস্বীকার করে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কর্তব্য যদিও তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু না করে কেননা তাদের যুদ্ধ শুরু করা কোন প্রয়োজন নয়।
তাবেঈন আল হাকাইক তাঁর বই ‘আল যাইলায়ী’তে বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জিহাদ একটি সমষ্টিগত কর্তব্য” এটার অর্থ এই যে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা আমাদের কর্তব্য যদিও তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে, যেহেতু আল্লাহ বলেন, “আর কাফিরদের সাথে যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে।
এবং বলেন “তোমরা যুদ্ধ করো আহলে কিতাবদের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না”
এবং বলেন “তোমরা বের হয়ে পড় হালকা (সুস্বাস্থ্য, যৌবন, সম্পদের অধিকারী) বা ভারী (অসুস্থ, বার্ধক্য, দারিদ্র্যতার অধিকারী) সরঞ্জামের সাথে এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করো”
ইমাম শাওকানি বলেন, “কাফিরদের রক্ত মূলত হালাল”.. যার ইঙ্গিত আছে তরবারির আয়াতে, যদি তারা যুদ্ধ পত্তন করে এবং মুসলিমরা তাদের একজন গুপ্তচর বা তাদের মধ্যে একজনকে আটক করে তবে তাদেরকে হত্যা করা ইমামের জন্য অনুমোদনযোগ্য যেহেতু আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বদরের কিছু বন্দীদের হত্যা করেছিলেন এবং বনু কুরাইযা’র বন্দীদেরও।
আল্লাহ বলেন, “নবীর পক্ষে উচিত নয় বন্দীদেরকে নিজের কাছে রাখা (মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি করা), যতক্ষণ না ভূমিতে (শত্রুদের মাঝে) প্রচুর রক্তপাত ঘটাবে।” এটাই তাদের জন্য বিধান যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং যদি কিছু যোদ্ধা আটক হয় তবে ইমামের পছন্দ মত বেছে নেবার সুযোগ আছে যে তাদের হত্যা করতে পারেন, ছেড়ে দিতে পারেন, মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি দিতে পারেন এবং তাদের দাস বানাতে পারেন। মুসলিমদের স্বার্থ অনুযায়ী।
এটা প্রমাণ করে যে, যুদ্ধরত কাফিররা ‘যোদ্ধা’ শ্রেণীতে পড়েছে, যাদের হত্যা করা অনুমোদনযোগ্য এবং যারা যুদ্ধরত নয় তাদের সম্পর্কে বিধান পরবর্তীতে আসবে। ‘যোদ্ধা’ হচ্ছে প্রতিটি পুরুষ, প্রাপ্তবয়স্ক, স্মৃতিশক্তিবিশিষ্ট এবং যুদ্ধ করতে সমর্থ, হোক সে যুদ্ধ করেছিল বা করেনি বা এই ব্যাপারে সে উদাসীন। ফকিহবিদরা তাদেরকে যোদ্ধা বলেন, কারণ তারা যুদ্ধ করতে সমর্থ যদিও তারা যুদ্ধ না করে থাকে। যুদ্ধ করা শুধু অস্ত্র ধারণ করে ও যুদ্ধ করে এমন সামরিক ব্যক্তিগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। এটার অর্থ ব্যাপক, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা যুদ্ধ না করা সত্ত্বেও এদের অন্তর্ভুক্ত, তারা ছাড়া যারা নিজেদেরকে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আমরা এই বিধানগুলো পেয়েছি। রাসুল (ﷺ) এর কাজ ও শাইখদের ব্যাখ্যা থেকে। যা আমরা পূর্বেই বলেছি সাদ বিন মু’আয (রাঃ)-সালিশ দ্বারা বিচার করেন বনু কুরাইযার (যখন তারা চুক্তি প্রত্যাহার করে এবং যুদ্ধরত সৈন্য হয়ে যায়) সব যোদ্ধাদের হত্যা করতে হবে। সেখানে অনেকেই ছিল এবং তাদের প্রত্যেকেই অস্ত্র ধারণ করেনি এবং যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি। যারা যুদ্ধরত এবং যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নি তাদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছিল যুবকদের দেখে যে তারা কি সাবালক না কি সাবালক নয়। যদি তারা সাবালক হয় তবে তারা সৈন্যদের সাথে যোগ দিত এবং যদি সাবালক না হয় তবে তাদের যোদ্ধা শ্রেণীতে ফেলা হয় নি।
আতিয়্যা আল কুরাইযী থেকে বর্ণিত, সে বলে, সে তাদের মধ্যে ছিল যাদের বনু কুরাইযা থেকে বন্দী হিসেবে নেয়া হয়েছিল এবং তারা আমাদের গুপ্ত লোম দেখছিল এবং যাদের লোম গজিয়েছিল তাদের হত্যা করা হচ্ছিল এবং যাদের কোন গুপ্ত লোম নেই তাদের হত্যা করা হচ্ছিল না, আমি তাদের মধ্যে ছিলাম যাদের গুপ্ত লোম ছিল না।
সূত্র: ইন্সপায়ার ১৬
প্রিয় ভাইয়েরা, আল্লাহ আপনাদের বিনিময় দিবেন। এই বইটি এতএত গুরুত্বপূর্ণ যে, ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
…………….