একটি মুখতাসার জীবনীগ্রন্থ || শাইখ আবু উমর আস-সাইফ রহ. জীবনচরিত – শাইখ ডঃ আবদুল মুহসীন বিন জুব্বান আল-মাতিরী
একটি মুখতাসার জীবনীগ্রন্থ
শাইখ আবু উমর আস-সাইফ রহ. জীবনচরিত
মূল- শাইখ ডঃ আবদুল মুহসীন বিন জুব্বান আল-মাতিরী
অনুবাদ- মাওলানা হামিদুর রহমান
پی ڈی ایف
PDF (786 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৭৮৬ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.org/download/AbuUmorAsSaif/abu%20umor%20as%20saif.pdf
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hy3e97e3d76802477fbe91efd77d3918d4
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/71b72fd3-9ade-4f0f-9202-e90f235a4587/95d90f1d8c7c69c8c7c3c114085ee0ae31cc3d768599d2a28dc5aef9033fda31
লিংক-৪ : https://f005.backblazeb2.com/file/jiboncorito/abu+umor+as+saif.pdf
লিংক-৫ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=h2a9q3u5b7
ورڈ
WORD (316 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৩১৬ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.org/download/AbuUmorAsSaif/abu%20umor%20as%20saif.docx
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hy0fe5e06e203141219c5fc2c0a29e0663
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/ec5be949-bae8-4e38-898a-b7c62cd657e9/780dc68f556307a962a1a68f144d239716506fcc5cc7ebb6185bef730d5af8f7
লিংক-৪ : https://f005.backblazeb2.com/file/jiboncorito/abu+umor+as+saif.docx
লিংক-৫ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=y9f0m2q4j6
روابط الغلاف- ١
book cover [636 KB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [৬৩৬ কিলোবাইট]
লিংক-১ : https://archive.org/download/abu-umor-as-saif/abu%20umor%20as%20saif.jpg
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hy8c2472d7e697401cb26932559a8b4583
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/d3bafab4-2253-4d4e-a255-5cae2b3d559b/146f025bc10d4e656c561727202cd7bdcddbd4c07c95960067ea36bd05dc96d8
লিংক-৪ : https://f005.backblazeb2.com/file/jiboncorito/abu+umor+as+saif.jpg
লিংক-৫ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=d4b7k4o3p5
===================
শাইখ আবু উমর আস-সাইফ রহ. জীবনচরিত
মূল
শাইখ ডঃ আবদুল মুহসীন বিন জুব্বান আল–মাতিরী
(লেখক শাইখের নিকটাত্মীয়–মামাতো ভাই ও অধ্যয়নকালের সহপাঠী)
অনুবাদ
মাওলানা হামিদুর রহমান
بسم الله الرحمٰن الرحيم
শাইখ আবু উমর আস-সাইফ রহ. জীবনচরিত
নামঃ শাইখ আবু উমর আস-সাইফ রহ. এর মূল নাম হচ্ছে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ্ বিন সাইফ আল-জাবের আলে বুয়েনাইন আল-খালিদী৷ তাঁর মোট চৌদ্দজন ভাইবোন ছিল৷ যাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন এবং বর্তমানে তাঁরা সাত বোন ও ছয় ভাই জীবিত আছেন৷ ভাইয়েরা হচ্ছেন যথাক্ৰমেঃ মোবারক, ইবরাহীম, ফাহাদ (যিনি মারা গিয়েছেন) অতঃপর আবু উমর, ফয়সাল, বদর ও আলী৷ তাঁর একজন বৈমাত্রেয় ভাই রয়েছেন, যার নাম হচ্ছে সাইফ৷
তিনি খেলাধুলাপ্রেমী ছিলেন; বিশেষকরে ফুটবল খেলা৷ তিনি (সৌদি আরবের) কাইছুমাহ্ শহরের যুবকদের নিয়ে খেলার টুর্নামেন্ট গঠন করতেন এবং তিনিই সর্বদা টিম লিডার থাকতেন৷ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
خياركم في الإسلام خياركم في الجاهلية إذا فقهوا
“তোমাদের জাহেলী যুগের শ্রেষ্ঠ লোকেরা ইসলামেরও শ্রেষ্ঠ লোক; যখন তারা দ্বীনের ব্যাপারে গভীর জ্ঞান অর্জন করে৷ (বুখারী: ৩৩৭৪)
যুবকদের অভ্যাস হিসেবে তিনি গানও শুনতেন৷
হেদায়াত লাভের কারণঃ
তাঁর হেদায়াত লাভের কারণ হল, তিনি আকস্মিকভাবে কিছু অডিও শুনেছিলেন৷ অতঃপর তিনি তাঁর দাদাজান সাইফের রেখে যাওয়া পারিবারিক গ্রন্থাগারে “আল জওয়াবুল কাফি” নামক একটি কিতাব পেলেন৷ তাঁর দাদা একজন হাফেজে কুরআন ও কাইছুমাহ্ শহরের মেয়র ছিলেন৷ কিতাবটি তিনি পড়লেন ও তা দ্বারা খুব প্রভাবান্বিত হলেন৷ কারণ আল জওয়াবুল কাফি কিতাবটি পুরোটাই পরিপূর্ণ ছিল গোনাহের পরিণাম সম্পর্কিত আলোচনায়৷ তাই যে কোন পাঠক কিতাবটি শেষ করা মাত্রই সে তার ও গোনাহের মাঝে বিশাল দূরত্ব অনুভব করতে থাকে৷ তিনি মসজিদে মসজিদে যেয়ে আল জওয়াবুল কাফি কিতাবটির সারাংশ নিয়ে আলোচনা করতেন৷ সুতরাং তিনি বিভিন্ন গ্রন্থাগারে ইবনুল কাইয়িম রহ. এর কিতাবাদি তালাশ করতে লাগলেন৷ তখন তিনি “আল ওয়াবিলুছ ছইয়িব” কিতাবটি হাতে পেলেন৷ এর দ্বারা তিনি আরো বেশি প্রভাবান্বিত হলেন৷ অতঃপর “মাদারিজুস সালিকীন” এবং তারপর “তরিকুল হিজরাতাইন” পড়লেন৷ এ কিতাবটিকে তিনি প্রচুর পরিমাণে ভালবাসতেন৷ এমনকি তিনি “তরিকুল হিজরাতাইন” কিতাবটি বিশ বারেরও বেশী পড়ে শেষ করেছেন এবং কিতাবটিকে প্রায় মুখস্তই করে ফেলেছিলেন৷
যুহদঃ
তিনি বেশি কাপড়-চোপড়, পোশাক-আশাক অপছন্দ করতেন এবং সেগুলোকে তিনি যুহদবিরোধী মনে করতেন৷ তিনি খাটের ওপর ঘুমানোকেও অপছন্দ করতেন এবং মাটিতে শুতে ও এ কথা বলতে পছন্দ করতেন যে, তা কিয়ামুল লাইলের জন্য অত্যাধিক সহায়ক৷ তিনি চামচ দ্বারা খানা খেতে এবং পাইপ ব্যবহার করে জুস পান করতে অপছন্দ করতেন৷ তাঁর একটি পিকআপ ৮৫ নিসান গাড়ি ছিল৷ তিনি তা সম্পূর্ণরুপে অকেজো হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত পরিত্যাগ করেননি৷ এরপর তিনি একটি হাইলাক্স ৯৩ টয়োটা গাড়ি সংগ্রহ করেন, যা তিনি শীশানে হিজরত করার আগপর্যন্ত ব্যবহার করেছেন৷ তিনি বিলাসিতা ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা পছন্দ করতেন না৷ এমনকি আমাদের পাশ দিয়ে একদিন ফোর্ড গ্র্যান্ড মারকুইসের সর্বশেষ মডেলের একটি গাড়ি অতিক্রম করলে তিনি বললেন- “আল্লাহ্ পানাহ!, খোদার কসম গাড়িটি যদি আমাকে হাদিয়াও দেয়া হয় তবুও আমি গ্রহণ করব না”৷
ইলমঃ
তিনি কুরআনুল কারীম, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ এবং কিছুসংখ্যক মতন (তথা কুদূরী, বেকায়া, হেদায়া, ইত্যাদি) মুখস্থ করেছিলেন৷ তিনি ইবনুল কাইয়িম রহ. এর প্রায় সকল কিতাবাদি অধ্যয়ন করেছিলেন এবং অধিকাংশগুলোকেই মুখস্থ করে ফেলেছেন৷ উনাইযা শহরে থাকাকালীন এবং জামিআতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সৌদে পড়াশুনাকালে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীনের সান্নিধ্যে ছিলেন৷ তিনি কিছু কিছু মাসআলা নিয়ে আলোচনা করার জন্য শীশান থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করতেন৷ তখন আমি তাকে বলতাম, “আপনার কাছে কি মুগনী নেই? তিনি বলতেন, মুগনী তো একটি ছোট কিতাব”৷ যে ব্যক্তি তাঁর বার্তা পড়বে এবং তাঁর অডিও শুনবে সে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পাড়বে যে, তাঁর ইলমি গভীরতা কতটুকু৷
আল–কাছিম প্রদেশে থাকাকালীন দৈনন্দিন কার্য–তালিকাঃ
ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত কুরআন তেলাওয়াতের জন্য বসা৷ অতঃপর জামিআয় যাওয়া৷ অতঃপর যোহরের নামাজের পর দুপুরের খাবার ও কাইলুলাহর জন্য সেখান থেকে ফিরে আসা৷ আসরের নামাজের পর রিয়াজুস সালিহীন পাঠ করার জন্য শাইখ ইবনে উসাইমীনের নিকট উপস্থিত হওয়া৷ অতঃপর পঠন ও মুতালাআ করার জন্য বাসায় ফিরে আসা৷ অতঃপর মাগরিবের নামাজের পর শাইখ ইবনে উসাইমীনের ক্লাস৷ অতঃপর এশার আজান হতে ইকামত পর্যন্ত শাইখের আরেকটি ক্লাস৷ অতঃপর এশার নামাজের পর শাইখের কিছু ছাত্রকে দরস প্রদান৷ অতঃপর আগে আগে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য বাসায় ফিরে আসা৷ অতঃপর কিয়ামুল লাইলের জন্য ফজরের আড়াই ঘন্টা আগে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া৷
পরহেযগারীঃ
তিনি স্বল্প আহার এবং হালাল-হারামে তাহকিক খুব বেশি করতেন৷ সন্দেহজনক কোন জিনিস তিনি গ্রহণ করতেন না৷ এবং সদকা তো দূরের কথা ঋণও তিনি কখনো গ্রহণ করতেন না৷ তাঁর নিকট কোন হাদিয়া এলে অধিকাংশ সময় তিনি তা অপরকে হাদিয়া দিয়ে দিতেন৷ শাইখ উসাইমীনের ক্লাসে তিনি খুঁটির পিছনে বসতেন, যেন শাইখ তাকে না চিনেন৷ সুতরাং পুরা চারটি বৎসর তিনি এভাবেই খুঁটির পিছনে বসেছেন এবং শীশান থেকে শাইখের সাথে যোগাযোগ করা ব্যতিত শাইখ তাকে চিনতেন না৷
স্বপ্নঃ
তিনি খুব বেশি স্বপ্ন দেখতেন, এমনকি তিনি দৈনিক দশটির কমে স্বপ্ন দেখতেন না৷ স্বপ্নগুলো হয়ে থাকত তাঁর কোন ভুলের ওপর সতর্ক করার জন্য বা কোন ধারণাকে শুধরানোর জন্য বা উপদেশ দান করার জন্য বা অন্য কোন কারণে৷ এটা এক বিরাট অধ্যায়, যার জন্যে ভিন্ন এক পুস্তিকা লেখা দরকার৷ তাঁর কিছু স্বপ্ন এমন থাকত, শ্রবণকারী অনেকক্ষেত্রে যা বিশ্বাস করত না৷
ইবাদাতঃ
তাঁর ইবাদত ছিল আশ্চর্য প্রকৃতির৷ আমি আমার নিজের কথা বলছি- আমি তাঁর চেয়ে বেশি কাউকে ইবাদত করতে দেখিনি৷ তিনি সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আইয়ামে বীজগুলোতে রোজা রাখতেন৷ যদি কখনো এ দিনগুলোতে অসুস্থ থাকতেন তাহলে সেদিন রোজা রাখতেন না এবং অন্য আরেকদিন কাজা করে নিতেন৷ তিনি রাতের এক তৃতীয়াংশ সময়ে, যা প্রায় তিন ঘন্টার কাছাকাছি- এগারো রাকাআত কিয়ামুল লাইল পড়তেন৷ রুকু সেজদাকে আশ্চর্যজনকভাবে লম্বা করতেন৷ যখন তিনি সেজদা হতে মাথা তুলেন তখন তুমি দেখতে পাবে যে, মাটির এক বিশাল অংশ তার চোখের অশ্রুতে ভেজা রয়েছে৷ আমি তাঁর সাথে দেড় বৎসর থেকেছি৷ যখন আমরা একসাথে থাকতাম তখন তিনি তাহাজ্জুদে তাঁর সাথে আমাকেও ডেকে দিতেন৷ একদিন তিনি আমাকে এ কথা বলে ডাকছিলেন যে, “ওঠ! ওঠ! আমাদের দেরি হয়ে গিয়েছে, আজ আমরা মাহরুম হয়ে গেলাম, সময় শেষ হয়ে গিয়েছে”৷ আমি তখন মনে করেছিলাম যে, হয়তোবা আজান হয়ে গিয়েছে বা আজানের সময় ঘনিয়ে এসেছে৷ তারপর ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি যে, এখনও দেড় ঘন্টা বাকি রয়েছে৷ সুতরাং তিনি মনে করতেন যে, দেড় ঘন্টা কিয়ামুল লাইল করার দ্বারা কেবল শাস্তিই মিলে৷ সে সত্যই বলেছে যে বলেছে-
سيئات المقربين حسنات الأبرار
“অন্তরঙ্গদের অপরাধ ধার্মিকদের জন্য পুণ্যের কাজ”৷
আমাদের (আমার ও আবু ওমরের) এক আত্মীয় খরজ শহরে একটি মানসিক হসপিটালে ভর্তি ছিল৷ আমরা ছিলাম কাছিম প্রদেশে৷ আর কাছিম প্রদেশের ছাত্রদের অভ্যাস ছিল যে, তাঁরা বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের জন্য জ্বলন্ত অঙ্গারের চেয়ে উষ্ণতর অপেক্ষা করত, যেন তাঁরা এই দুই দিন পড়াশোনার বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পাদন করতে পারে৷ যেমন- মতন মুখস্থ করা বা কিতাব পড়া বা কিতাবের সংক্ষিপ্তসার আয়ত্ত করা ইত্যাদি৷ তো তিনি আমাকে বললেন- “আমরা আমাদের খরজ শহরের আত্মীয়কে দেখতে যেতে চাচ্ছি এবং আমরা বৃহস্পতিবার ফজরের পর বেরিয়ে পড়ব৷ এতে দুটি ইবাদাত রয়েছে- আত্মীয়তা রক্ষা করা এবং অসুস্থকে দেখতে যাওয়া”৷ আমি তাঁকে বললাম- “আপনি জানেন আমরা বৃহস্পতিবার দিনটির কিভাবে অপেক্ষা করে থাকি৷ আর আমাদের আত্মীয় আমাদেরকে উপলব্ধি করতে পারেনা”৷ তিনি আমাকে বললেন- “ইলমের বরকত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, মতন থেকে নয়৷ তুমি সওয়াবের আশাবাদী হও, আল্লাহ্ তোমাকে এর পরিবর্তে এমন কিছু দিয়ে দিবেন, যা তুমি কল্পনাও করোনি”৷ তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমি তা মেনে নিলাম৷ সুতরাং আমরা বের হলাম এবং যখনই আমরা নামাজের জন্য কোন মসজিদে অবস্থান করতাম তখনই তিনি দাঁড়িয়ে নসিহত প্রদান করতেন৷ আমরা যখন খাবারের জন্য একটি হোটেলে গেলাম তখন তিনি টেলিভিশন বন্ধ করার জন্য তাঁদের নিকট অনুমতি চাইতে গেলেন এবং একবার বন্ধ করালেন৷ তখন হোটেলে উপস্থিত সকলে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেল৷ আওয়াজ উচুঁ হয়ে গেলে তিনি তাদের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন এবং বললেন- “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তাআলার জন্য এবং দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি৷ হামদ ও সালামের পর কথা হল, নিঃসন্দেহে আপনারা সকলে মুমিন এবং মুসলমান, যাদেরকে আল্লাহ্ তাআলা বাছাই করেছেন তাঁর প্রদত্ত শরিয়ত ও রিসালাতকে বহন করার জন্য৷ আপনাদের পক্ষে শোভা পায় না নিজেদেরকে এ গোনাহে কলুষিত করা৷ আল্লাহর কসম! আপনারা যদি দেখতে পেতেন যে, কেয়ামতের দিন এ গুনাহের বীভৎস চেহারা ও ভয়াবহতা কেমন হবে, তাহলে তা হতে উদ্ধার করার কারণে আপনারা অবশ্যই আমাকে ধন্যবাদ জানাতেন…”৷ তিনি এ ধরণের কথা বলতে শুরু করলেন৷ অতঃপর মানুষ নীরব হয়ে গেল; কিন্তু তিনি তাঁর কথা শেষ করলেন না; যতক্ষণ-না মানুষ বলেছিল- “আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন, আপনি হক্বের ওপর রয়েছেন”৷
পরিশেষে আমরা আমাদের আত্মীয়র সাথে সাক্ষাৎ করলাম৷ আমাদের দেখে তার আনন্দ ছিল বাঁধভাঙ্গা৷ অতঃপর আমরা ফিরে এলাম৷ তখন আমি একটি বিস্ময়কর বিষয় উপলব্ধি করলাম৷ আর তা হচ্ছে- আমি এক পৃষ্ঠা সবক মাত্র একবার পড়ার দ্বারাই মুখস্থ করে ফেলতে লাগলাম৷ আমি তখন নিজেই বিস্মিত হচ্ছিলাম যে, আমি নিজের ব্যপারে পূর্বে এটা নিশ্চিত করেছিলাম যে, আমার এক পৃষ্ঠা সবক পড়তে কমপক্ষে বিশ মিনিট সময় লাগে৷ অথচ এখন একবার পড়ার দ্বারাই তা আমার আয়ত্তে চলে আসছে৷ বিষয়টি আমি আবু উমরকে জানালে তিনি আমাকে বললেন- “আমি কি তোমাকে পূর্বেই বলিনি যে, ইলমের ভেতর সৎকর্মের একটি আলাদা বরকত রয়েছে”৷ আমি যদি সেই সৎকর্মগুলো চালিয়ে যেতাম তাহলে আমার পূর্বে যে পরিমাণ স্মরণশক্তি ছিল তা আবার ফিরে আসত৷
আবু ওমরের আশ্চর্যজনক অভ্যাসগুলোর একটি হচ্ছে- তাঁকে কেউ اتق الله “আল্লাহকে ভয় কর” এ কথাটি বললে তিনি তা সইতে পারতেন না৷ কেননা তিনি তখন আর নিজের চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারতেন না৷ একদিন সকালে আমি এবং আবু ওমর জামিআয় যাচ্ছিলাম৷ আমাদের পথটি উনাইযা বাজারের ওপর দিয়ে ছিল৷ সেখানে এক দোকানদার প্রত্যুষে দোকান খুলে টেপে কুরআন বাজাচ্ছিল৷ তখন টেপ এ আয়াত থেকে পড়া শুরু করে-
يا أيها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم
“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন… (সুরা নিসাঃ ১)
যা শুনে তিনি উনাইযা থেকে জামিআয় পৌছা পর্যন্ত কাঁদেন৷ আর বারংবার শুধু এ কথাই বলছিলেন যে, “আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল, আমরা আল্লাহকে সেভাবে ভয় করিনা, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত”৷
বরং এর চেয়েও বিস্ময়কর ঘটনা হল, আমি তাঁর বিবাহের সাক্ষীদের মধ্যে একজন ছিলাম৷ আমার পাশে বসে ছিল উকিল এবং সামনে বসে ছিল আবু ওমর৷ আর তাঁর পাশে তাঁর ভাই, অতঃপর মেয়ের ওলি৷ সুতরাং উকিল বিবাহের নৈতিক খুতবা দেওয়া শুরু করলেন এবং সুরা নিসার প্রথম আয়াত এবং সুরা আল ইমরান ও সুরা আহযাবের আয়াতগুলো তেলাওয়াত করলেন, যার সবগুলোই শুরু হয় إتق الله দিয়ে৷ আমার মাথা সে সময় অর্ধনমিত ছিল৷ তখন আমার স্মরণে এসে গেল যে, আবু ওমর তো এ সকল আয়াত দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে থাকে৷ তখন আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি হয়তবা এখন প্রভাবান্বিত হবেন না; কেননা তিনি এখন নিজের বিবাহে আনন্দের শৃঙ্গে রয়েছেন৷ তখন আমি আমার মাথা একটু একটু করে তুললাম ও তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখি যে, তা চোখের অশ্রুতে টইটম্বুর৷ তিনি চেহারা থেকে পানি মুচ্ছিলেন ও আস্তে আস্তে বলছিলেন- আল্লাহই আমার সাহায্য স্থল। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
কথাঃ
তিনি খুব সীমিত কথা বলতেন৷ অপ্রয়োজনীয় কোন কথা বলতেন না৷ কথা বলার সময় এমন ধীরে ধীরে বলতেন যে, কেউ চাইলে তা গুণতে পারত৷ তিন স্বল্প হাসতেন এবং সর্বদা এ কথা বলতেন যে, বেশি হাসার দ্বারা অন্তর মরে যায়৷
হিম্মতঃ
তিনি প্রতিটি ইবাদাতের ক্ষেত্রেই উচ্চ মনোবলের অধিকারী ছিলেন৷ সৎকর্মে অন্য কেউ তাঁর চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যাওয়াতে তিনি তুষ্ট হতে পারতেন না৷ তিনি জুমুআর দিন সর্বদা আগে আগে মসজিদে যেতেন৷
একদিন তিনি আমাকে তাঁর পূর্বে মসজিদে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন- তুমি কখন থেকে মসজিদে রয়েছো? আমি বললাম- সূর্যোদয়ের পর থেকে৷ তিনি বললেনঃ কেন? আমি বললামঃ যেন উট সদকা করার সওয়াব আমি লাভ করতে পারি৷ সেদিনের পর থেকে আমি যত জুমুআর দিনই সূর্যোদয়ের পর মসজিদে প্রবেশ করতাম তাঁকে আমি আমার পূর্বে মসজিদে পেতাম৷
শারীরিক সক্ষমতাঃ
তাঁর একটি চমৎকার স্বভাব ছিল৷ তিনি প্রতি সপ্তাহে বনে চলে যেতেন এবং কিছু সময়ের জন্য পাহাড়ে চড়ে পূনরায় ফিরে আসতেন৷ এর দ্বারা তিনি নিজের ফিটনেস ও কর্মদক্ষতাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করতেন৷
এই হচ্ছে তাঁর বিস্তৃত জীবন-বৃত্তান্তের কিঞ্চিৎ পরিমাণ এবং সমুদ্রের একটি ফোঁটা ও বাগানের একটি ফুল৷ কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে আল্লাহ্ তাআলা সম্ভবত তাঁর আরও বিস্তারিত জীবন-চরিত লেখা আমার জন্যে সহজ করে দিবেন৷
শীশানে শাইখের ইলমি খেদমতঃ
তিনি শীশানে শরয়ী বিচারবিভাগীয় ইনস্টিটিউট ও শরিয়া তত্বাবধান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সেখানে বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন ও বিচারকদের প্রশিক্ষণ প্রদানে অবদান রেখেছেন৷ অতঃপর তিনি ইমাম শাফিয়ী ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ এরপর তিনি (মুআসসাতুল হুদা আল খাইরিয়্যাহ) দাতব্য সংস্থা আল-হুদা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিভিন্ন দাওয়াতী ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে৷ তিনি মিডিয়া জগতের দিকে মনোযোগী হয়েছিলেন৷ তিনি কয়েকটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেছেন, একটি রেডিও চ্যানেল তৈরি করেছেন এবং ককেশাস অঞ্চলে একটি টেলিভিশন চ্যানেল স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন৷ তিনি শীশানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন৷ তাঁর প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে “আস-সিয়াসাতুশ শরইয়্যাহ্” কিতাব এবং “আল ইরাক ওয়া গাজউস সালিব- দুরুস ওয়া তাআম্মুলাত” (ইরাক ও ক্রুসেড যুদ্ধ — পাঠ ও গবেষণা) এই শিরোনামে লেকচার সিরিজ৷ (শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহর আত-তাবরিয়া কিতাব থেকে সঙ্কলিত)
শাহাদাত বরণঃ
“ধাওয়াকারীরা তাঁকে সব দিক থেকে ঘিরে নেয়৷ তাঁরা তাঁর বিবি ও সন্তানকে হত্যা করে ফেলে; কিন্তু এর দ্বারা তিনি দুর্বলও হননি, মনোবলও হারাননি; বরঞ্চ তিনি সিদ্ধান্তহীনতায়ও ভুগেননি, পিছপাও হননি৷ বরং তিনি অস্ত্র নিয়ে শত্রুবহরে ঢুকে পড়েছেন এবং পাষণ্ড কাফেরদের হত্যা করে আপন চক্ষুদ্বয় শীতল করেই তারপর তা বন্ধ করেছেন৷
এভাবে এই বিদ্যাসাগরের মৃত্যুটি ছিল এমন এক শিক্ষা ও উপদেশ, যা তিনি লেখেছেন আপন রক্তকালি দ্বারা, যা আপনাকে অমুখাপেক্ষী করে দিবে হাজার হাজার খণ্ড কিতাব পড়া থেকে৷ এবং তাঁকেও তাঁর শানে কাসীদা রচনা করা থেকে ও পৃষ্ঠা কালো করা থেকে অমুখাপেক্ষী করে দিয়েছে এমন এক বীরত্বপূর্ণ মহাকাব্য, যার কায়া হচ্ছে একজন মানুষ; বরং খোদার কসম যিনি হচ্ছেন একটি জাতি৷ তিনি ইলমের দিকে অগ্রবর্তী হয়েছিলেন, আর মানুষ প্রতিদ্বন্দিতা করে মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতা নিয়ে৷ তিনি জিহাদের পথে আগে বেড়েছিলেন, আর মানুষ প্রতিযোগিতা করে কাপুরুষতা অনুনয়-মিনতি ও জিহাদের প্রতি অনুৎসাহীত করা নিয়ে৷ তিনি মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন, আর মানুষ প্রতিদ্বন্দিতা করে দুনিয়ার সামান্যতম আসবাব নিয়ে৷ তিনি দুইটি উত্তম জিনিস পেয়েছেন: আল্লাহর সাহায্য ও শাহাদাত, আর মানুষ দুইটি জিনিসের স্বাদগ্রহণ করে থাকে: পরাজয় ও বিছানায় লাঞ্ছনার মৃত্যু৷ হাদিস শরীফে এসেছে-
في كل قرن من أمتي سابقون
“আমার উম্মতের প্রত্যেক যুগেই কিছু অগ্রগামী থাকে”৷
আর আমি দৃঢ় আশাবাদী যে, আবু ওমরও হবেন তাঁদের একজন৷
আমি অনেক দ্বিধান্বিত ছিলাম যে, আমি লেখবো কিনা? আমার মত মানুষের পক্ষে কি আবু ওমরকে নিয়ে লেখা সাজে? আমাকে সাহস দিয়েছে আমার সাথী এবং বলেছে, হে আবু মারিয়া! তুমি লেখ; কেননা খোদার কসম! দুনিয়াবাসী এই মহান আক্রান্ত ব্যক্তির কথা ভুলতে বসেছে৷ প্রিয় ভাইটি সত্যই বলেছে যে, অবাক লাগে একটি নেকড়ে মারা গেলে, একটি হিংস্র সিংহ মারা গেলে বা একটি কুকুর মারা গেলে দুনিয়া জেগে ওঠে, বসে থাকে না৷ অথচ একজন যমানার মুজাদ্দিদ ইমাম মারা গেলে কেউ তাঁকে স্মরণ করে দেখে না৷ হে আল্লাহর বান্দারা আমার প্রতি ভুল বুঝবেন না! এর দ্বারা আমি ঐ সকল জাহান্নামের কুকুর আরব তাগুতদের উদ্দেশ্য নিচ্ছি না, যাদেরকে শহীদ বলে আখ্যা দেওয়া হয়৷ এমনটি আদৌ নয়, কেননা শহীদ নামটি আমি এরচেও ঊর্ধে মনে করি যে, তা তাদের কারো মুখে উচ্চারিত হোক; বরং আমার ভর্ৎসনা বরঞ্চ আমার আক্রোশ ঐ সমস্ত লোকদের প্রতি যারা আলেমের বেশভূষা ধারণ করে মিম্বারে আরোহণ করছে এবং সভা ও পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে৷ আমার ভর্ৎসনা ঐ সকল ছাত্রদের প্রতি, আমার ভর্ৎসনা ঐ সকল মসজিদসমূহের কারী সাহেবদের প্রতি, আমার ভর্ৎসনা আমার সেই জাতির প্রতি, যাদেরকে তাদের যুগের শ্রেষ্ঠতম লোকেরা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অথচ তারা নিজেদের আরাম-আয়েশের মধ্যেই ডুবে রয়েছে”৷ (ইরাকের অন্যতম আলেম মুজাহিদ শাইখ আবু মারিয়া আল-কারশি’র প্রবন্ধ থেকে সংগৃহীত)
“ইরাক ও ক্রুসেড যুদ্ধ” সিরিজ থেকে-
(১) আরব উপদ্বীপ এবং উপসাগরীয় দেশগুলিতে অবস্থিত বিদেশী স্বার্থসমূহকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা:
“যাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে তাঁদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে ইরাকের প্রতিবেশী দেশগুলোতে অবস্থিত মার্কিন বাহিনী ও মার্কিনিদের মিত্র বাহিনীকে টার্গেট বানানো, যারা নিজেদের ঘাঁটিগুলো থেকে ইরাকে হামলা করার জন্য যাত্রা করছে৷ কেননা এ বাহিনী এসেছে ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য, কোন শান্তিপূর্ণ চুক্তি করার জন্য আসেনি৷ তাদের সঙ্গে চুক্তির দাবি করা মানে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে ইহুদীদের সঙ্গে চুক্তি করা৷ আর এমন কোন চুক্তির অনুসরণ করা, যা ইরাক আক্রমণ করার জন্য ঘাঁটিগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা ঈমান ভেঙ্গে দেয় এবং উম্মতে মুসলিমাহ তা পূরণে বাধ্য নয়৷ যেমনিভাবে সরকারি আমলারা ফরজ জিহাদকে বাতিল করণের কোন অধিকার রাখে না; কেননা আল্লাহ্ তাআলার অবাধ্য হয়ে কোন মাখলুকের আনুগত্য করা জায়েয নেই”৷
(ইরাক ও ক্রুসেড যুদ্ধ — পাঠ ও গবেষণা – চতুর্থ পাঠ)
(২) জিহাদই সমাধান:
“মুসলমানরা যখন কুরআন ও অস্ত্র একসাথে ধারণ করবে তখন তাঁরা আল্লাহর দয়ায় ইজ্জত ও নেতৃত্ব হাতে পাবে, যেমনটি বর্তমানে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, শীশান ও অন্যত্র বিরাজ করছে৷ আর এ নেতৃত্ব জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন পথে সহজসাধ্য হয়ে ওঠে না৷ ইরাকে বাথ পার্টির ঝান্ডা বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ক্রুসেডারদের ঝান্ডার সামনে একমাত্র জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহরই ঝান্ডা রয়েছে৷ তাই সেখানে জিহাদের ঝান্ডাকে শক্তিশালী করা, সাপোর্ট দেয়া ও সহায়তা করা ওয়াজিব৷ সুতরাং মুজাহিদদের জন্য আবশ্যক হল ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ থেকে হিজরত করে ইরাকের দিকে অগ্রসর হওয়া৷ যেন ক্রুসেডার ও মৈত্রীবদ্ধ ইহুদী বাহিনীকে প্রতিহত করার সক্ষমতা অর্জন হয়ে যায়”৷
(ইরাক ও ক্রুসেড যুদ্ধ — পাঠ ও গবেষণা – পঞ্চম পাঠ)
(৩) মার্কিন বাহিনী কোন চুক্তির জন্য আসেনি:
“ইরাকের কিছুসংখ্যক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এমন কিছু ঘাঁটিতে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীরা, যেখান থেকে তারা ইরাক আক্রমণ করার জন্য যাত্রা করছে- মূলত তারা কোন শান্তিপূর্ণ চুক্তি করার জন্য আসেনি৷ তারা এসেছে যুদ্ধ করার জন্য৷ যেমনটি আজ ইরাকে মার্কিনিদের অপরাধসমূহ দ্বারা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান এবং যেমনটি আজ তাদের এলাকা ভাগ করে নেওয়ার ও সেগুলোতে মার্কিনি ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা দ্বারা নিশ্চিতভাবে বুঝা যাচ্ছে৷ আর এ কথাটিই মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যক্ত করেছে ও নিজেদের কাজের দ্বারা তা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে৷ মূলত শান্তিপূর্ণ চুক্তিকারী হচ্ছে সে সমস্ত লোকেরা, যাদের থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ এবং যারা মুসলমানদের থেকে নিরাপদ৷ আর ঐ সকল মার্কিনিদের থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকেনি; বরং তারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে৷
যে চুক্তির অনুসরণ করার দ্বারা ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহের একটি কারণে লিপ্ত হতে হয়, আর তা হচ্ছে ইরাক আক্রমণ করার জন্য মার্কিনিদের ঘাঁটিগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া এবং যে চুক্তির অনুসরণ করার দ্বারা মুসলমানদের বিরাট সমস্যায় পড়তে হবে এবং কাফেররা প্রথমে ইরাক ও পরবর্তীতে একে একে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রেগুলোকে জবরদখল করার ও সে ভূখণ্ডগুলোতে তাদের শয়তানী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সুযোগ পেয়ে যাবে সে চুক্তি তার মূল থেকেই অবৈধ৷ আর যদি আমরা সরকারি আমলাদের কথামত মেনেও নিই যে, মার্কিনিরা চুক্তিবদ্ধ এবং এ চুক্তি তার মূল থেকে শুদ্ধ, তাহলে আমরা বলব যে, মার্কিনিরা ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে বৈরিতাপূর্ণ এমন কিছু কাজ করেছে, যার দ্বারা সরকারী আমলাদের দাবিকৃত তথাকথিত চুক্তি ভেঙ্গে গিয়েছে৷ কেননা চুক্তির চাহিদা হচ্ছে- তারা মুসলমানদের প্রতি তাদের জানমাল ও দ্বীনের ব্যাপারে কোন জুলুম করবে না৷ আর মার্কিনিরা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে সকল জুলুম-অত্যাচার ও অন্যায় সাধন করেছে তা নিম্নরূপ:
প্রথমতঃ ইসলামের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং তার পরিবর্তে কুফরি গণতন্ত্রের ব্যবস্থা করা ও তা সে অঞ্চলের মানুষদের ওপর ধার্য করে দেওয়া৷
দ্বিতীয়তঃ মুসলিম দেশগুলিকে দখল করে নেওয়া এবং সে অঞ্চলগুলোকে নতুন করে পুণর্গঠন করা৷
তৃতীয়তঃ মুসলমানদের প্রতি তাদের জানমাল ও সম্পদসমূহ যেমন- তেলের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করা৷
চতুর্থতঃ মুসলিম উম্মাহর শত্রু ইহুদীদেরকে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাহায্য করা৷
পঞ্চমতঃ ইসলাম, কুরআন ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করা৷
এ সকল চুক্তি ভঙ্গকারী বিষয়গুলোর একটিই যথেষ্ট চুক্তি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য৷ সুতরাং যখন এর সবকটি একসাথে পাওয়া যায় তখন অবস্থা কি দাঁড়াবে!!?”
(ইরাক ও ক্রুসেড যুদ্ধ — পাঠ ও গবেষণা – পঞ্চম পাঠ)
(৪) কারদাভীর এ কথার খণ্ডন যে, মার্কিনিরা উপসাগরীয় অঞ্চলে চুক্তিবদ্ধ:
“যারা চুক্তির অজুহাতে ঐ সমস্ত মার্কিনিদের সাথে লড়াই করতে নিষেধ করে, যারা ইরাকের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহ থেকে ইরাক আক্রমণ করার জন্য যাত্রা করছে; অথচ তারা স্বীকৃতি দেয় যে, মার্কিনিরা যুদ্ধ করছে, তাদের উচিত তারা যে স্থানে বসবাস করছে কেবল সেদিকেই নজর না দেওয়া এবং মার্কিনিরা সীমিত যে কয়টি চুক্তি রক্ষা করছে কেবল সেগুলোই লক্ষ্য না করা; বরং তাদের উচিত জাতিকে গ্রাস করে নেয়া বিপদসমূহ এবং আফগানিস্তান ফিলিস্তিন ও ইরাকের মুসলমানদের প্রতি জুলুমকারী মার্কিনিদের যুদ্ধ এবং ইরাক যুদ্ধ যে সকল পরিণাম বয়ে আনবে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া৷ যেমনঃ এই অঞ্চলের মানচিত্রে পরিবর্তন আনয়ন এবং সমাজ ও শিক্ষার বিকৃতি সাধন ও এই অঞ্চলে অনাচারী গণতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া ইত্যাদি৷ আর যারা উদাহরণস্বরূপ কুয়েত থেকে ইরাকে হামলা করার জন্য যাত্রাকারী মার্কিন সৈন্যদের হত্যা করা হারাম হওয়ার কথা বলে, আমি ঐ সকল ফতোয়াবাজদের বলবঃ যদি ইরাকের পর তাদের রাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয় তাহলে কি তখনও তারা বলবে যে, সে সকল মার্কিনিদের হত্যা করা অবৈধ? নাকি তাদের এ বক্তব্য তখন পরিবর্তিত হবে, যখন তারা এ যুদ্ধের আসল চেহারা দেখতে পাবে এবং সরকারী আমলাদের বিশ্বাসঘাতকতার তিক্ততা গলাধঃকরণ করবে ও হাজার হাজার আহত ও নিহতদের বহর এবং ধর্ম ও নৈতিকতার যুদ্ধ ও নিজের চোখের সামনে দেশ ধ্বংস হয়ে যেতে দেখবে৷ ঐ সকল যুদ্ধকারী কাফেররা যখন বুঝতে পারল যে, ইরাকের প্রতিবেশী দেশগুলোতে অবস্থিত তাদের ঘাঁটিগুলোতে তাদের পৃষ্ঠদেশ নিরাপদ রয়েছে, তখন তাদের জন্য নির্যাতিত দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া ও তারপর সে অঞ্চলের আরেকটি রাষ্ট্রকে আক্রমণ করার মাধ্যমে নিজেদের পরিকল্পনাকে পূর্ণ করা তাদের জন্য সহজতর হয়ে গিয়েছে৷ আর এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, তাদের সাথে লড়াই করা ছেড়ে দেওয়ার দ্বারা জাতি যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা অন্যসব ক্ষতিকে নিশ্চিতভাবে ছাড়িয়ে যাবে”৷
(ইরাক ও ক্রুসেড যুদ্ধ — পাঠ ও গবেষণা – পঞ্চম পাঠ)