নির্বাচিতপ্রবন্ধ-নিবন্ধ
শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি ও শাইখ আবু কাতাদা কি ঈমান ও তাকফিরের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছেন ?
কিছুদিন ধরে আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি আমাদের কিছু মুসলিম ভাই জিহাদ ও তাওহিদের রাস্তায় নিজেদের উৎসর্গকারী শাইখদের ব্যাপারে জুলুম করছেন। বিশেষ করে বিশুদ্ধ তাওহিদ ও জিহাদের দিকে আহ্বানকারী শাইখদের মধ্যে শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসি এবং শাইখ আবু কাতাদা হাফিযাহুমুল্লাহ সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে তারা ঈমান ও তাকফিরের প্রশ্নে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহর অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। এবং তাঁদের ব্যাপারে সেইসব অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে যা এর আগেও আমরা শুনেছি, তবে দরবারী ও ইরজাগ্রস্থদের কাছ থেকে – যেমন তাঁরা “তাকফিরি”, তাঁরা চরমপন্থায় পতিত হয়েছে ইত্যাদি।
এমন প্রেক্ষাপটে আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান ও সম্মানিত মনে করছি আমাদের এই শাইখদের ব্যাপারে দু কলম লেখার সুযোগ পাওয়ায়, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের শাইখদের হেফাজত করুন, তাঁদের মাধ্যমে আমাদের উপকৃত হবার তৌফিক দান করুন, এবং তাঁদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।
নিঃসন্দেহে তাকফির একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। বলা যায় সকল ফতোয়ার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ফতোয়া হল তাকফিরের ফতোয়া। এবং এ বিষয়টির ব্যাপারে বিস্তারিত জ্ঞান না থাকলে একজন ব্যক্তি খুব সহজেই ইরজা কিংবা গুলুহ (চরমপন্থায়) পতিত হতে পারে। এটি এমন একটি বিষয় যা বিস্তারিত ও বিশদ পড়াশুনার দাবি রাখে। তাকফিরের মাসআলা নিয়ে একদিকে যেমন আহলুস সুন্নাহর সাথে বাতিল ফিরকা, যেমন খারেজি, মুরজিয়া, মু’তাযিলা – ইত্যাদিদের মতপার্থক্য হয়েছে, তেমনিভাবে মূলনীতিসমূহে একমত হবার পরও এ বিষয়ের প্রয়োগের ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহর মাঝে কিছু মতপার্থক্য হয়েছে। যেমন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ এবং ইবনুল কাইয়্যিমের এ সংক্রান্ত বক্তব্য এবং ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব ও তাঁর ছাত্রদের এ সংক্রান্ত কিছু বক্তব্য নিয়ে পরবর্তীদের মধ্যে মতপার্থক্য হয়েছে। একারণে এটা বুঝা জরুরি যে উসুলে একমত হবার পর প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমার মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য আলিমদের মধ্যে হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময় এই মতপার্থক্য হয়ে থাকে তাঁদের কাছে থাকা তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে। তার অর্থ এই না যে উসুলে একমত হবার পর এই মতপার্থক্য কাউকে আহলুস সুন্নাহ থেকে ইরজাগ্রস্থ কিংবা চরমপন্থীতে পরিণত করে।
এ ভূমিকার পর আমরা দেখবো শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসি ও শাইখ আবু কাতাদা আল-ফিলিস্তিনি হাফিযাহুমুল্লাহ কি ইমান ও তাকফিরের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছেন কি না। ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে আমরা ধাপে ধাপে বেশ কিছু আলোচনা তুলে ধরার ইচ্ছা রাখি। তবে প্রাথমিকভাবে এই শাইখদের ব্যাপারে সঠিক আক্বিদা ও মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত, সত্যের প্রশ্নে নির্ভীক ও আপোষহীন, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহর সমকালীন দুইজন শাইখের বক্তব্য আমরা তুলে ধরবো। তাঁরা হলে শাইখ আল-আল্লামা হামুদ বিন উকলা আশ-শুয়াইবি রাহিমাহুল্লাহ এবং শাইখ আলি বিন খুদাইর আল-খুদাইর ফাকাল্লাহু আসরাহ।
এই দুই শাইখের পরিচয় সংক্ষেপে দেয়া সম্ভব নয়। তাই পাঠকের প্রতি অনুরোধ থাকবে আগে নিচের লিঙ্ক থেকে তাঁদের ব্যাপারে পড়ে নেয়ার যাতে করে পাঠক বুঝতে পারেন যে আমরা এমন কোন ব্যক্তিদের কথা আখানে উদ্ধৃত করছি না যারা ইলমের জন্য পরিচিত না, এবং যাদের কথার গ্রহনযোগ্যতা নেই। বরং আমরা এমন ব্যক্তিদের কথা উদ্ধৃত করছি যারা ফিতনাহর এ সময়েও সত্যের উপর দৃঢ় অবস্থানের ব্যাপারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং বিভ্রান্ত উম্মাহকে সত্যের দিকে আহ্বান করেছেন। একইসাথে আমরা এমন ব্যক্তিদের কথা উদ্ধৃত করছি যারা আকিদা ও তাকফিরের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহর মানহাজের ব্যাপারে গভীর, বিস্তারিত ও বিশদ জ্ঞানের অধিকারী।
শাইখ হামুদ বিন উকলা আশ-শুয়াইবি রাহিমাহুল্লাহ – http://darulilm.org/2018/08/03/shaykh-hamud-bin-uqla-bio/
শাইখ আলি বিন খুদাইর আল-খুদাইর ফাকাল্লাহু আসরাহ – http://www.darulilm.org/2017/08/17/ali-khudair/
কয়েক বছর আগে “সালাফিয়্যুন ফোরাম” শাইখ আলি আল-খুদাইরের সাথে একটি সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে। যেখানে শাইখ আলি আল খুদাইরকে শাইখ আবু বাসীর আত-তারতুসী, শাইখ আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসি, শাইখ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনীর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। এ প্রশ্নের জবাবে শাইখ তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন, তাঁদেরকে সঠিক আক্বিদা ও বিশুদ্ধ তাওহিদের উপর প্রতিষ্ঠিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামাহর আলিম আখ্যায়িত করেন, এবং বলেন যে তারা হলেন আহলুল জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া শাইখ আলি আল-খুদাইর আরো জানান যে শাইখ আল-আল্লামা হামুদ বিন উক্বলা আশ-শুয়াইবি রাহিমাহুল্লাহ এই শাইখদের প্রশংসা করতেন, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন, এবং তাঁদের বই অধ্যায়ন ও তাঁদের অধীনে ‘ইলম অর্জনের ব্যাপারে উৎসাহিত করেন।
শাইখ আলি আল-খুদাইরকে প্রশ্ন করা হয় –
নিম্নোক্ত শাইখদের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী – আব্দুল মুনীম মুস্তফা হালীম যার কুনিয়া হল আবু বাসিত (আত-তারতুসি), ইসাম মুহাম্মাদ আল-বারকাউ যিনি আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসি নামে পরিচিত এবং উমার বিন মাহমুদ, যার কুনিয়া হল আবু কাতাদা আল-ফিলিস্তিনী।
শাইখ জবাবে বললেন –
“তাঁরা বিশুদ্ধ তাওহীদ ও সঠিক আক্বিদার উপর প্রতিষ্ঠিত আহলে সুন্নাহ্ ওয়াল জামাহর আলেম, তারা আহলে জিহাদ এবং লেখনী ও তালিমের লোক। তাদের ব্যাপারে আমরা ভালো ব্যতীত অন্য কিছুই জানি না। কিছু কিছু লোক তাকফিরের বিষয়ে তাদের ব্যাপারে মিথ্যে ও বানোয়াট কথা আরোপ করে, এটা মুরজিয়াগোষ্ঠীর কাজ । অথচ এই তিনজন আলেম ঈমান এবং তাকফিরের ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাহর সঠিক উসূলের (মূলনীতির) উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন।
এবং আমাদের শাইখ হামুদ বিন উক্বলা আশ শুয়াইবী (রাহিমাহুল্লাহ্) তাদের প্রশংসা করতেন, তাদের সমর্থন ও প্রতিরক্ষা করতেন, তাদের সাথে চিঠিপত্র বিনিময় ও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এবং তারাও শাইখের সাথে অনুরূপ করতেন। একবার মরোক্কোতে এক টেলি-কনফারেন্সে শাইখ হামুদ বিন উক্বলা আশ শুয়াইবিকে (রাহিমাহুল্লাহ্) তাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি তাঁদের প্রশংসা করেন এবং তাঁদের রচনাবলী পড়তে ও তাঁদের অধীনে শিক্ষাগ্রহণ করার ব্যাপারে জোর দেন। এটি ছিল শাইখ হামুদের ইন্তেকালেরর মাত্র দুই মাস আগে, রাহিমাহুল্লাহ। আমি অনেকবার শাইখ হামুদকে তাঁর মজলিসে এই শাইখদের ব্যাপারে প্রশংসা করতে, তাদের জন্য দুয়া করতে এবং তাঁদের প্রতিরক্ষায় কথা বলতে দেখেছি। অনেকে শাইখ হামুদকে ফোন করে এই শাইখদের বই পড়ে শুনাতেন, এবং তাঁদের বই এর কপি তাঁর কাছে পাঠাতেন।
অনুরূপভাবে আমি আহলে সুন্নাহ্ ওয়াল জামাহর অনেক আলিমগণকে, যারা আমাদের সাথে আছেন, তাঁদের দেখেছি এই শাইখদের ব্যাপারে প্রশংসা করতে ও তাদের ইতিবাচকভাবে স্মরণ করতে, এবং তাদের ব্যাপারে যে মিথ্যে ও অভিযোগসমূহ আরোপ করা হয়েছে সেগুলো থেকা তাঁদের প্রতিরক্ষা করতে দেখেছি। আমরা কাউকে ভুলের উর্দ্ধে মনে করি না, বরং আমরা বলি- “সত্যবাদী হও! এটাই তাকওয়ার নিকটবর্তী”।
এবং আহলে কালাম, পরাজিত মানসিকতার লোক, মর্ডানিস্ট, শাসকশ্রেণীর অনুগত লোকেরা ও ইরজাগ্রস্ত লোকেদের কথায় কর্ণপাত করো না। কারণ তারা এই ধরনের ব্যক্তিদের পছন্দ করে না এবং তাঁদের প্রশংসাও করে না।
ওয়াল্লাহী! আল্লাহর সামনে বিবাদকারীদের জড়ো করা হবে এবং- “শীঘ্রই জালিমরা জানতে পারবে তাদের শেষ পরিণতি কোথায়।”
এবং আমরা তো আমাদের ভাইদের জবাব দেওয়ার ব্যাপারে আরো নমনীয় হবার ইচ্ছা রাখি, কারণ আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে আঘাত করা, কারো বযাপার বিদ্বেষ ছড়ানো, কাউকে অপমান অথবা তাচ্ছিল্য করা না, আমরা কেবল বিভ্রান্তি দূর করতে এবং সত্যকে মুসলিমদের সামনে স্পষ্ট করতে চাই। যদি সম্ভব হতো তাহলে আমরা কিছু কথা বাদ দিতাম, কিন্তু আমানতদারিতার খাতিরে শাইখ আলি আল-খুদাইর ফাকাল্লাহু আসরাহ-এর এ শক্ত কথাগুলোও আমাদের উল্লেখ করতে হল।
ইনশাআল্লাহ পরবর্তী সময় শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসি এবং শাইখ আবু কাতাদার হাফিযাহুমুল্লাহ তাকফিরের মানহাজের ব্যাপারে আরো বিস্তারিত লেখা আমরা তুলে ধরার ইচ্ছা রাখি, ওয়ামা তাউফিকি ইল্লাহ বিল্লাহ।[লেখক]
============== মূল আরবী বক্তব্য ও লিঙ্ক –
كلمة الشيخ على الخضير حفظه الله
في مشائخ وعلماء الجهاد
س 70/1 ما الذي ترونه في هؤلاء الشيوخ: عبد المنعم مصطفى حليمة الملقب بأبي بصير … عصام محمد البرقاوي المشهور بأبي محمد المقدسي … عمر بن محمود الملقب بأبي قتادة الفلسطيني؟
ج ـ هؤلاء من علماء أهل السنة والتوحيد والعقيدة ، ومن أهل الجهاد والتأليف والتعليم ، ولا نعلم عنهم إلا خيرا ، وقد قرأت لهم كتبا كثيرة ، وما يُفترى عليهم من الكذب والزور في مسائل التكفير فهو محض افتراء ومن صنع المرجئة ، وهم أهل سنة في باب التكفير والإيمان ، وكان شيخنا العلامة حمود بن عقلاء الشعيبي رحمه الله يثني عليهم خيرا ويمدحهم ويذب عنهم ، ويراسلهم ويراسلونه ، وسئل شيخنا حمود رحمه الله عنهم في ندوة ألقاها عبر الهاتف في المغرب العربي سئل عنهم فأثنى عليهم وحث على قراءة كتبهم والتتلمذ عليهم ، وكان ذلك قبل وفاته رحمه الله بشهرين تقريبا ، وقد سمعته مرارا وتكرارا وفي مجالس عدة يثني عليهم ويدعو لهم ويذب عنهم ، ولقد هاتف بعضهم بالهاتف وقُرأ عليه بعض كتبهم وراسل بعضهم .
وهكذا سمعت كثيرا من علماء من أهل السنة عندنا يثنون عليهم ويذكرونهم بخير ويذبون عنهم فيما يُفترى عليهم من الكذب والاتهام ، ولا ندعي العصمة لهم فكل ابن آدم خطاء قال تعالى ” اعدلوا هو اقرب للتقوى ” ، ولا يلتفت الى كلام أهل الإرجاء واهل السلطان والانهزاميين والعصرانيين فيهم ، فهم لا يثنون على أمثال هؤلاء ولا يحبونهم ، وعند الله تجتمع الخصوم وسيعلم الذين ظلموا أي منقلب ينقلبون
[সংগৃহীত]