উপমহাদেশনির্বাচিতবাংলাদেশসংবাদ

কেন অপরাধীর বিচার চেয়ে আন্দোলন করতে হবে??!!

‘সড়ক দুর্ঘটনা’ দেশের অতি পরিচিত একটি ঘটনা। যে কোন সড়ক দুর্ঘটনা-ই কোনো না কোনো পরিবারে দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি করে। বিবেকবান কোন মানুষই চাননা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটুক, আর এতে কোন পরিবারের ক্ষতি হোক! কিন্তু, এদেশের শাসকগোষ্ঠীর কথাবার্তা শুনলে কেমন জানি শরীরটা আৎকে উঠে! কেননা, যাদের হাতে ক্ষমতা, তারাই যদি মানুষ মারার পরিকল্পনা করে তাহলে সে জনতার আৎকে উঠারই কথা! বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও আমাদের দেশের তথাকথিত শাসকগোষ্ঠীর কার্যক্রম ও কথাবার্তায় এমনই বার্তা প্রকাশ পায় প্রতিনিয়ত। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিরপরাধ জনতার হাজারটা লাশ ফেলতেও তারা কুণ্ঠিত হয় না! সম্প্রতি একটি সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী হতাহত হয়। ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে চলছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন! কিন্তু, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এই দাবিতে কেন আন্দোলন করতে হবে!! ‘অপরাধীর বিচার চাই’ এই শিরোনামে কেন আন্দোলন করতে হবে?!!! তাহলে কি দেশের সরকার অপরাধ মানে কি তাই বুঝে না! নিরাপত্তার মানে বুঝে না! নাকি দেশে সরকার বলতে শুধু জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়কারীকে বুঝায়! আজ বুঝে আসে না, যখন রাস্তাঘাটে খুন-খারাবি হয়, বাসে ধর্ষণ করা হয়, বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে রাস্তার পাশে থাকা ব্যক্তিটির উপরও গাড়ি উঠিয়ে দেওয়া হয়, এমনকি তথাকথিত ট্রাফিক পুলিশগুলোও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়; তখন আবার এসকল সুস্পষ্ট অপরাধ সম্পাদনাকারীদের বিরুদ্ধেও শাস্তির ব্যবস্থা নিতে আন্দোলন করে সরকারকে জানাতে হয়! এখন কথা হলো- তাহলে সরকারের কাছে কি এগুলো কোন অপরাধই না! যেভাবে তাদের কাছে কোটি টাকা চুরি হয়ে যাওয়াও কোন ব্যাপারই না! এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও কোন প্রয়োজন মনে করে না! সরকারের এক হিংস্র মন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া শিক্ষার্থীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পরিবর্তে ঘটনার কথা শুনে নির্মম-নিষ্ঠুর এক হাসি দেয়! সেই মন্ত্রীর ভাষণ হলো- ‘সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবেই, এ নিয়ে আন্দোলন করার কিছু নেই!’  এ কেমন ভাবনা এই মন্ত্রীর!  তারা আজ প্রকাশ্যে এসেছে বলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে কতগুলো টাকা দিল পরিবারকে! পরে, ঐ পরিবারদ্বয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় আন্দোলন বন্ধ করতে! কিন্তু, যারা আজও মরছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, তাদের খবর নেওয়ার মত কেউ আছে! কেউ কি আছে যারা তাদের মূল্যবান সম্পদ হারানোর ক্ষতিপূরণ দিতে! আজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কেবল অপরাধীর বিচার চাওয়া কিংবা ‘হিংস্র’ মন্ত্রীর পদত্যাগের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, যে তারা ঘরে ফিরে যাবে! আজ তাদের দাবি হলো- নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার। আজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন একটি জাতি তৈরি হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে ইনশাআল্লাহ। তারা একদিন বুঝতে পারবে  কেবল সড়ক ব্যবস্থাতেই সমস্যা নয়, বরং সমস্যা এই ‍পুরো সরকার ব্যবস্থাতেই! যে ব্যবস্থা পরিবর্তনেও হয়তো একদিন তারা জাগবে এবং জাগবেই ইনশাআল্লাহ।

এদিকে, ‘সড়ক দুর্ঘটনা আইন’ থাকলেও কার্যকর করা দূরে থাক নিজেরাই আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে ধরা পড়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। মন্ত্রী, পুলিশসহ সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লাইসেন্সহীন গাড়ি, ড্রাইভারকে হাতেনাতে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা! যেখানে কাউকে আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেও শাস্তি থেকে তাকে মুক্ত রাখা হয়েছে, সেখানে সাধারণ ব্যক্তিদের মাঝেও অপরাধ প্রবণতা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে, রাস্তায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় কাউকে হত্যা করলে, হত্যাকারীকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখেছে। কিন্তু, তাদের আইন বেপরোয়াভাবে ড্রাইভিংয়ের কারণে যদি কোন দুর্ঘটনায় কেউ মারা যায় তাহলে এর শাস্তির বিধান রেখেছে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড! এ দুটি আইনকে আলাদ করার দ্বারা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোকে কেমন জানি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে মানুষ মারার! কেন এই দুটি আইনকে আলাদা করতে হলো! ইনভেস্টিগেশনের পর হত্যার বিষয়টি প্রমাণ হলে তো সেটা তাদের তথাকথিত সংবিধানের হত্যা সম্পর্কিত আইনের ক্যাটাগরিতেই পড়তো! তাদের এ ধরণের সুবিধাবাদি আইনের কারণেই গাড়ি চালকেরা আজ জনতার উপর দিয়ে গাড়ি চালাতেও কুণ্ঠিত হয় না। এর প্রমাণ প্রতিনিয়তই মিলছে, এই তো আন্দোলন চলাকালীন সময়েই এক ছাত্রের উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দিয়েছে নিষ্ঠুর ড্রাইভার! তার কাছে সামনে কোন মানুষ আছে বলেই মনে হয়নি মনে হচ্ছিল!! কিন্তু, দেশের শাসকদের কাছে এটা কোন অপরাধই না! তারা হয়তো আবারো প্রশ্ন করবে, কেন গাড়ির ড্রাইভারের কাছে লাইসেন্স চাওয়া হচ্ছিল! সে তো দেখা যাচ্ছে ড্রাইভিং করতেই পারছে!

তথাকথিত মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া এই সকল নিকৃষ্ট প্রাণীদের আসলে মানবতাবোধ বলতে কিছু নেই, তাই কোন অপরাধও তাদের চোখে পড়ে না! আর, পড়লেই বা কি, সে নিজেই দেখা যায় একই অপরাধে লিপ্ত! ‘সন্ত্রাসের বিচার করবে সন্ত্রাসী’ – তা স্বার্থহীনভাবে কখনো হতেই পারে না! তাই, আজ দেশের শাসক আছে, উন্নয়নের নামে ভ্যাট বাড়াতে; শাসক আছে, বিনাবিচারে ক্রসফায়ারে হত্যা করতে; শাসক আছে, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালাতে, অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে! শাসক  আছে, গদি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সকল অন্যায়ের প্রশ্রয় দিতে এবং নিজে অন্যায় করতে। কিন্তু, শাসক নেই, অপরাধ শনাক্ত করতে, অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে, অপরাধের মূলকে উপড়ে ফেলতে। তাই তো জনতাকেই মাঠে নামতে হয় অপরাধীর বিচার চেয়ে!

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 − two =

Back to top button