আরবতথ্য প্রযুক্তি ও যুদ্ধকৌশলবই ও রিসালাহশাইখ আবু মুসআব আস সুরী রহিমাহুল্লাহশামহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

মুজাহিদিন নেতাদের প্রতি বার্তা – নেতৃত্বঃ সিদ্ধান্ত ও আলোচনা -শায়খ আবু মুসাব আস-সুরি রহিমাহুল্লাহ

মুজাহিদিন নেতাদের প্রতি বার্তা

নেতৃত্বঃ সিদ্ধান্ত ও আলোচনা

শায়খ আবু মুসাব আস-সুরি রহিমাহুল্লাহ

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভীরুতা যুদ্ধের ময়দানের ভীরুতা থেকেও মারাত্মক, যদি আপনি দেখেন যে যুদ্ধ বিরতি করাই উপযুক্ত যদিও পুরো সেনাদল যুদ্ধ করতে চায়, আল-হুদাইবিয়ার মত , যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম একটি যুদ্ধ বিরতি করেছিলেন যদিও প্রত্যেকে এর বিপক্ষে ছিল। অবস্থা এমন ছিল যে রাসুলের পাশে যারা ছিল যদি তারা পারত তবে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলত। অনুরূপভাবে খালিদ ইবন ওয়ালিদ এর ইয়ারমুকের যুদ্ধে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘটনা বলা যেতে পারে, যখন পুরো সেনা দল সামনে অগ্রসর হতে চাচ্ছিল ও যুদ্ধ করতে চাচ্ছিল, তিনি সিরিয়া প্রায় জয় করে ফেলেছিলেন কিন্তু যখন তিনি দেখলেন রোমানরা এক বড় সেনা দল নিয়ে আসছে তখন তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করে তাঁর সেনা দলকে দক্ষিণ সিরিয়ায় নিয়ে গেলেন যুদ্ধের মাঠ খালি রেখে । তিনি তার বিজিত জায়গা থেকে ৩০০ কিলোমিটার ছেড়ে দিলেন এবং দারুল ইসলামে ফিরে গেলেন। সামরিকভাবে এটা ছেড়ে দেয়ার প্রয়োজন ছিল , সেখানের ব্যায়বহুল যুদ্ধ এড়ানোর জন্য। তিনি হোমসের লোকদের কাছে ফিরে গিয়ে তাদের জিযিয়া ফেরত দিলেন যেহেতু তিনি তাদেরকে আর সুরক্ষা দিতে পারছেন না, এই ঘটনার পর অনেক খ্রিস্টান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল । তিনি আবার ফিরে গিয়ে যুদ্ধের স্থান নির্বাচন করলেন, যখন তিনি আবার যুদ্ধ শুরু করেন তখন রোমান সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে কন্সটান্টিপল পর্যন্ত পৌঁছে যান। রোমান আর্মি পরাজিত হলে তিনি তাঁর ছেড়ে দেওয়া জায়গা আবার দখল করেন ।

খালিদ বিন ওয়ালিদের জন্য কি এটা প্রয়োজন ছিল যে প্রত্যেক বেদুইনের কাছে, প্রত্যেক মুসলিমের কাছে ব্যাক্তিগত ভাবে প্রত্যেকের কাছে এই সৈন্য প্রত্যাহারের কারন ব্যাখ্যা করার?? সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা কোথায় ?? জনসাধারণকে উল্লেখযোগ্যদেরকে অনুসরণ করা উচিৎ ( আহলে আল-মদিনাহ; মুহাজির ও আনসারদের মত), উল্লেখযোগ্যরা নেতাদের অনুসরণ করবে আর নেতারা আমিরদের অনুসরণ করবে। যতক্ষন পর্যন্ত আমিরের অভিজ্ঞতা ও অতীতের উপর আপনার আস্থা থাকবে, আবার এমন কোন নেতা নয় যাকে রাস্তা থেকে তুলে আনা হল এবং সে আপনার নিজের বাড়িকে ধ্বংস করল। যখন তারা আলজেরিয়ার জিআইএ তে আবু আব্দুর রহমান আমিন নামে রাস্তা থেকে একজনকে আমির হিসেবে ঠিক করল যার পেশা ছিল কসাইগিরি, সে মুসলিমদের উপরও তার পেশা কার্যকর করল একই বিষয়ে । সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের পছন্দ করা এই দুর্নীতগ্রস্থ নেতার ব্যাপারে কিছুই করার ছিল না । ডঃ আবু খলিল মাহফুজ যিনি ইসলামি আন্দোলনের সাথে বড় হয়েছিলেন , তিনি জিহাদে অংশগ্রহন করেন, তিনি আলজেরিয়া তে গেরিলা সেল প্রতিষ্ঠা করেন , কিন্তু তিনি আবু আব্দুর রহমান আমিন এর দ্বারা প্রতিস্থাপিত ও অপসারিত হন । তাই তাদেরকে তাদের পছন্দের মূল্য দিতে হয়েছিল । তাই সমস্যাটি শরিয়াহতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শ করার যে সীমাবদ্ধতা এর মাঝে নয় ।

নেতাকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সাহসী হতে হবে , অন্যরা এটা পছন্দ করুক বা না করুক । কিন্তু যদি নেতা কয়েকবার সিদ্ধান্ত নিতে ব্যার্থ হয় , তাহলে এমনিতেই তার পতন হবে । কারন এটাই ছিল তার ভাগ্য , অনেকেই বিয়ে করার জন্য চেষ্টা করে, সে যদি প্রথম, দ্বিতীয় , তৃতীয় প্রচেষ্টাতেও ব্যার্থ হয় তাহলে তার স্ত্রী আসবে কোথা থেকে। । একজন স্ত্রী পাওয়ার ক্ষেত্রে তার এই প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এটাই ছিল ধার্য ফলাফল। যদি ইসলামের নির্ধারণ করা সঠিক বৈশিষ্ট্য , অভিজ্ঞতা ও অতীত ইতিহাস দেখে একজন নেতা নির্বাচন করে তার হাতে ক্ষমতা দেয়া হয় , তবে তাকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহসী হতে হবে ।

এমনও হতে পারে আপনি সাধারন বা প্রধান নেতা হউন না কেন আপনাকে কোন একটি নির্দিষ্ট ফ্রন্টের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে , উদাহরণস্বরূপ কোন কারনে যদি আপনার ও নেতার মাঝে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় , তাহলে কি এটা বুঝায় যে আপনি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না?? যদি যোগাযোগ ভেঙ্গে যায় তবে ময়দানের যিনি কমান্ডার আছেন তিনি এর দায়িত্ব নিবেন , প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নিবেন যদি সেখানে দরকার হয় । যদি তিনি সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তবে এটা ক্ষতির কারন হতে পারে এবং অধিকাংশ সময় সাধারন নেতাকেই দোষী করা হয়, যিনি প্রত্যেক মাঠের কমান্ডারদের শাস্তি দেন নির্দেশ না পালন করলে এবং যিনি সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে উপপ্রধান হিসেবে থাকেন। এমন কিছু নেতারাও আছে যারা তাদের গ্রুপে এমন প্রত্যেক কে হত্যা করে যে সিদ্ধান্ত নেয় বা নিতে চায়, সব সিদ্ধান্ত নেতা নিজে নিতে চায় যেমন ময়দানের, রান্নাঘরের এমনকি ফুটবল ম্যাচেরও ইত্যাদি । তাই কেউ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কারন সে জানে নেতা তাকে পর্যবেক্ষণ করছে যদি সে এরকমটা করে । এই বিষয়টা খুবই সংবেদনশীল এবং বিশদভাবে বললে আন্দোলনের জন্য খুবই উদ্বেগের । আপনি যদি শাখা গুলোতে অনেক ক্ষমতা প্রদান করেন তবে তারা সব ধ্বংসও করে দিতে পারে , আবার যদি নেতা সব সিদ্ধান্ত নেয় তবে বিপর্যয়ও দেখা দিতে পারে । প্রত্যেক বিষয়ের দুটা অবস্থা আছে একটা হল চরম্পন্থা আরেকটা হল মধ্যমপন্থা । আমাদেরকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে , এখানে একটা সাধারন কৌশল আছে যা পরিবর্তন হবে না এবং আছে বিস্তারিত কার্যপদ্ধতি যা অবস্থার কারনে পরিবর্তন হতে পারে। ধরুন প্যারিসের একজন নেতা মিলানে সৈন্য পাঠাল একটি নির্দিষ্ট অপারেশন করার জন্য , তিনি তাদেরকে ট্রেনে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কমান্ডার ও সৈন্য রা জানতে পারল যে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে , একজন উচ্চপদস্থ কূটনীতিক বা অফিশিয়াল কেউ মিলানে এসেছে যার ফলে ট্রেনে যাতায়াত নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক , এক্ষেত্রে কি সে গাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে না ? যেহেতু এক্ষেত্রে এটাই অধিক নিরাপদ। নেতা তাকে একটা সাধারন কৌশল দিয়েছেন কিন্তু কৌশলের বিস্তারিত বাস্তবায়নে পরিবর্তন হতে পারে যতক্ষণ কমান্ডার তার সুস্থ মন কাজে লাগান, এবং সাধারন নেতাকে এর বিরুধীতা করা উচিতও নয় । কারন মিলান, অপেরেশন এবং লক্ষ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি ।

এটা হচ্ছে শৃঙ্খলা পূর্ণ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ যদিও আপনি মনে করতে পারেন যে আন্দোলনের শৃঙ্খলা শুধু পাহাড়ে ট্রেনিং এর মাধ্যমেই গঠিত হয়। এই সামরিক আন্দোলনের ব্যাপারে যে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা লাভ হয়েছে গত ২০ বছর ধরে আমাদের প্রত্যেকের উচিত তা একে অপরের সাথে আদান প্রদান করা যেন একটা সফল আন্দোলন গড়ে তুলা যায় । সামরিক প্রশিক্ষন আন্দোলনের একটা ছোট অংশ মাত্র , আমরা এমন একজন নেতা সৃষ্টি করতে চাই যে বিষয়গুলো যথাযথভাবে পরিচালনার সামর্থ্য রাখে , কারন সে যদি ব্যার্থ হয় তবে তা নিজের বাড়ি নিজেই ধ্বংস করার নামান্তর , আর এই ধরনের নেতৃত্ব শৃঙ্খলা , শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা ছাড়া সম্ভব নয় ।

আমাদের এমন কোন নেতৃত্বের প্রয়োজন নয় যে অপ্রধান বিষয়ের ক্ষেত্রেও নির্দেশের অপেক্ষা করে , সে যেন এমন যে আযান পুনরাবৃত্তি করে যেন দূরের লোকেরা তা শুনতে পায় । আমাদের এমন নেতার প্রয়োজন যে যুদ্ধের ময়দান পরিচালনা করতে পারে স্বাধীনভাবে, এমন নেতা নয় যে শুধু প্রদান করা নির্দেশই পালন করতে পারে । তাকে অবশ্যই কোন রুটিনের দাস হলে চলবে না , কারন কতজন যে এই কারনে ধ্বংস হল । নেতৃত্ব নিয়ে আমাদের অনেক খারাপ অভিজ্ঞতাও আছে কারন অনেককেই দেখে মনে হত তারা নেতৃত্ব দানে সক্ষম কিন্তু বাস্তবে ছিল তার উল্টা । অনেক ভুল করার পর সে সবকিছু ছেড়ে দেয় এবং সে ভাবতে থাকে , আমি মাসিক বেতন পাই , আমি একজন মুহাজির মুরাবিত, যদিও সে জিহাদ করুক বা না করুক , সে রুটিনের দাসে পরিনত হয় , তার একঘেয়েমি শুরু হয় এবং অবশেষে সে সব ছেড়ে দেয়। আর অন্যরা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চরম্পন্থা অবলম্বন করে, বিশ্বাস করুন আমি তুচ্ছ বিষয়ে ও একজন স্ত্রী ও তার স্বামীর মাঝে হস্তক্ষেপ করেছি কারন সে (স্ত্রী) একটা টেবিল সরিয়ে ছিল উদাহরন স্বরূপ , আর সে (স্বামী) ছিল একজন নেতা । তাকে (স্ত্রী) কোন কিছুই পছন্দ করতে দেয়া হত না। আপনাদেরকে আপনাদের স্ত্রী ও সন্তানদের উপর যত্নবান ও আস্থা রাখা উচিত , কারন কতবার যে আমরা দেখেছি প্রয়োজনের সময় মহিলারা অনেক বড় বড় দায়িত্ব তাদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন, কারন আমাদেরকে সামনে আগানোর জন্য ও তাদেরকে পিছনে রেখে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল উদাহারন সরূপ বলা যায় । আমি ব্যাথিত হয়েছি যখন দেখেছি এক লোক তার সন্তানকে অতিথিদের সামনে থাপ্পর দিয়েছিল তার কতৃত্ব দেখানোর জন্য, সেও ছিল একজন নেতা , তার পুত্রও হয়ত ভবিষ্যতে তারই পদাংক অনুসরন করবে । অন্যান্য নেতাদেরকেও দেখা যায় তারা যেন তাদের সৈন্যদের কে অপদস্থ ও তাদের মাঝে ভয় সৃষ্টি করে রাখতে চায় এবং এধরনের উদাহারন ও অনেক আছে।

মূল লেখাঃ http://justpaste.it/leadership1

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − five =

Back to top button