একটা প্রেমের গল্প
একটা প্রেমের গল্প
বিষয়টা আমাদের মাথায় গেঁথে যায় একেবারে ছোটবেলায়। সময়ের সাথে সাথে শেকড় গভীর থেকে গভীরে যায়। মন, আবেগ ও শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। একসময় ব্যাপারটাকে আমরা নিজ অস্তিত্বের অংশ মনে করা শুরু করি। এ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনের কোন ভারশান থাকা সম্ভব, এটা আমাদের কাছে অকল্পনীয় মনে হয়। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, সত্য বলে জানি যে প্রেম হল জীবনের অর্থের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। ভালোবাসা ছাড়া জীবন হতে পারে না। যখনই কল্পনায় ভবিষ্যতের ছবি আঁকি, আমরা এমন এক ভবিষ্যতের কথা ভাবি যেখানে দেখা কিংবা অদেখা কোন প্রেমিক/প্রেমিকা কেন্দ্রীয় চরিত্র দখল করে আছে। ছোটকাল থেকে আমরা এভাবে ভাবতে শিখি। ব্যাপারটা অনেকটা আমাদের সহজাত প্রবণতার মতো হয়ে যায়। .
প্রেম, ভালোবাসা, অ্যাফেয়ার, রিলেশান, ক্রাশ, স্ক্যান্ডাল – নানা নামে, নানা রূপে আমরা প্রেমকে চিনি। আমাদের সমাজের ৯০% এর বেশি মানুষের কাছে প্রেম জীবনের অপরিবর্তনীয় ফ্যাক্ট। আমাদের আগের প্রজন্ম ভান করে যে তারা প্রেমকে অনুমোদন করে না, কিন্তু আসলে তারাও ধরে নেয় ছেলেমেয়েরা বিয়ের আগে প্রেম করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা এটার সুন্দর একটা নামও দিয়েছি, নিজের পছন্দে বিয়ে করা। হাই স্কুলে ওঠার পর ছেলেমেয়েরা নিজেদের ক্রাশদের প্রপোয করবে। নাম্বার আদান-প্রদান হবে, স্কুল পালিয়ে দেখা হবে। সাইবার ক্যাফে, পার্কে, সিসা বার, রেস্টুরেন্ট আর ফাস্টফুড জয়েন্টে। কলেজের কাপলগুলো টাকা পয়সা জমিয়ে প্ল্যান করতে ঘুরতে যাবে। ফ্রেন্ডরা কলেজ-বাসা হ্যান্ডেল করবে। হয়তো কলেজেই অনেকে লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়া শুরু করবে, কিংবা প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে রুম-ডেইটের আয়োজন…ভার্সিটিতে উঠলে তো কথাই নেই। .
এগুলো আমাদের কাছে রোমান্টিসিযম। মিষ্টি আবেগ। মুখের কোণে নিজের অজান্তেই এক চিলতে হাসি এনে দেয়ার মতো গোপন ভালোলাগা। ছোটকাল থেকে দেখা বলিউডের সিনেমা আর গান আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয় – প্রেম ছাড়া জীবন অর্থহীন। ধূসর জীবন প্রেমের মাধ্যমে রঙ খুঁজে পায়, অর্থ খুঁজে পায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ –আমাদের সমাজের সবাই প্রেমকে জীবনের আরেকটি অমোঘ বাস্তবতা হিসেবে ধরে নেই। মানুষ জন্মায়, আস্তে আস্তে বড় হয়, হাটতে শেখে, বলতে শেখে, পড়তে শেখে, প্রেম করে..প্রেম ছাড়া জীবন হয় না। প্রেম আমাদের কাছে পবিত্র সম্পর্ক। তাই আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে বলতে শুনি – মন ভাঙ্গা মসজিদ ভাঙার চেয়েও খারাপ! . আমাদের এ বিশ্বাস আর ইসলামের অবস্থানের মধ্যে আমরা কোন সংঘর্ষ খুঁজে পাই না। আসলে পাই, কিন্তু গোণায় ধরি না। এটা গুনাহ, কিন্তু ঐরকম গুনাহ যেটা অহরহ করা যায়। সমস্যা নাই। তাই আমরা অনেক ধরণের যুক্তি বানাই। নিজেদের বুঝ দেই – .
আল্লাহ বুঝবেন। এটা তো সবাই করে। আল্লাহ কি সবাইকে শাস্তি দিবেন নাকি? বরং আমি তো বিয়ে করার জন্যই প্রেম করছি। আমি তো ওদের মতো না যারা জাস্ট ফান হিসেবে এটাকে নিয়েছে। আমি বরং নামায পড়ে ওর আমার জন্য দু’আ করি। আল্লাহ যেন আমাদের বিয়ে দিয়ে দেন… . আমরা এটাকে হারাম হিসাবে মানলেও হারাম হিসাবে স্বীকার করি না। তাই তো হিন্দু বয়ফ্রেন্ড উত্তেজিত হয়ে মোল্লাদের শুনিয়ে দেয় – “আমার গার্লফ্রেন্ড হিজাব করে,ওর কাছ থেকে আমি ইসলাম সম্পর্কে অনেক জেনেছি। ইসলাম এমন না।“ .
কিন্তু আসলে ইসলাম কেমন? আমরা যে প্রেমের কথা বলি, যে “পবিত্র সম্পর্কের” পেছনে নিজেকে নষ্ট করি ইসলাম কি সেটাকে পবিত্র বলে? ইসলাম কি সেটার অনুমোদন করে? যদিও আমরা নিজেরা অন্যদের যেকোনো একটা বুঝ দিয়ে দিতে পারি, কিন্তু নিজেকে ইচ্ছেমতো কিছু একটা বোঝানো এতো সহজ না। উত্তরগুলো সবার জানা। .
জানা উত্তরটা নিয়ে চিন্তা করতে বসলে মন বিদ্রোহ করতে চায়। কীভাবে প্রেম ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব? এতো কঠিন নিয়ম কি মানা যায়? ইসলামে কি আনন্দের কোন সুযোগই নেই? পরে, মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা এ থেকে দূরে কীভাবে থাকবো? .
ইসলাম প্রেম নিয়ে তাই বলে যা মানুষের প্রকৃতি ও মনের সাথে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণময়। আমরাই বরং নানা অজুহাতে, নানা মোহ-প্রলোভন আর দুর্বলতার কারণে এ সত্যকে স্বীকার করতে চাই না। অনেকভাবে প্রমাণ করা যায়। কিন্তু আসুন জটিল প্রমাণে না গিয়ে আজ একটা গল্প শোনা যাক। একটা প্রেমের গল্প… .