আনসারুল্লাহ বাংলা টিমআমিরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহআরবখোরাসান (আফগানিস্তান)বই ও রিসালাহবার্তা ও বিবৃতিমিডিয়াশাইখ আলী আল খুদাইরশাইখ সুলাইমান ইবনে নাসির আল উলওয়ানশাইখ হামুদ বিন উকলা আশ শুয়াইবী রহিমাহুল্লাহসৌদী আরবহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

উলামাগণের পক্ষ থেকে আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমার এর প্রতি চিঠি

Ansarullah Bangla
আনসারুল্লাহ বাংলা

Presents
পরিবেশিত

A Bengali Translated Book of At-Tibyan Publications
আত-তিবইয়ান পাবলিকেশন্সের বাংলায় অনূদিত বই

Entitled
শিরোনাম

Letter to Mulla Muhammad Umar From the Scholars
উলামাগণের পক্ষ থেকে আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমার এর প্রতি চিঠি

ডাউনলোড
PDF Download  DOC Download

Archive Page
https://archive.org/details/LetterBn

========================

 

উলামাগণের পক্ষ থেকে আমিরুলমুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমার মুজাহিদ এর প্রতি চিঠি

হামুদ ইবনে উকলা আশশুয়াইবী, আলী ইবনে খুদাইর আলখুদাইর ও সুলাইমান ইবনে নাসির আলউলওয়ানের পক্ষ থেকে আমিরুলমুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমার মুজাহিদ এর প্রতি চিঠি

আমিরুল-মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমার মুজাহিদ! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। মহান আল্লাহ আপনার হেফাজত ও তত্ত্বাবধান করুন এবং সত্যের ওপর আপনাকে আরও দৃঢ়পদ করে দিন। আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, আমাদের চিঠি যখন আপনার হাতে পৌঁছাবে তখন আপনি পূর্ণ সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন। আমিরুল-মুমিনীন! মুসলিম উম্মাহর আলেম সমাজের জন্য আপনি গৌরবের প্রতীক। কেননা আপনি এ উম্মতকে أَنتُمُالْأَعْلَوْنَ – তোমরাই বিজয়ী হবে – এ কথার ওপর আমল করে দেখিয়ে দিয়েছেন। বস্তুগত বিজয় বা শ্রেষ্ঠত্ব ইসলামে মূখ্য নয়, এখানে প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে শরীয়তের ওপর সুদৃঢ় থেকে যে কোন অবস্থার মোকাবেলা করা। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ

وَلَاتَهِنُواوَلَاتَحْزَنُواوَأَنتُمُالْأَعْلَوْنَإِنكُنتُممُّؤْمِنِينَ

আর তোমরা নিরাশ হয়োনা এবং দুঃখ করোনা। যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরাই জয়ী হবে।

(সূরা আলে ইমরান: ১৩৯)

এ আয়াত হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে তখন নাযিল করা হয়, যখন উহুদের ময়দানে তাদের এক সাময়িক পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে চূড়ান্ত বিজয়। আর ইসলামের ওপর দৃঢ়পদ থাকাই মুসলমানের বিজয়।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘ইসলামই সুউচ্চে প্রতিষ্ঠিত থাকবে, অপর কোন ধর্মই এর মোকাবেলায় এসে সফল হতে পারবে না।’

ইমাম বুখারী প্রসঙ্গত এর উল্লেখ করেছেন, ইমাম তাহাবী বর্ণনা করেছেন বিশুদ্ধ সনদে। মুসলমানেরা সাময়িক বেকায়দায় পড়লেও বিজয় ইসলাম এবং মুসলমানেরই হবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَلِلَّهِالْعِزَّةُوَلِرَسُولِهِوَلِلْمُؤْمِنِينَ

পরাক্রম ও মর্যাদা তো আল্লাহর, তাঁর রাসূলের এবং ঈমানদারদের।

(সূরা মুনাফিক্বুন: ৮)

অতএব, পরাক্রম ও মর্যাদা শুধুমাত্র আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলেরই, আর সেসব ঈমানদারদের যারা আল্লাহর বিধানের ব্যাপারে নিরাপোস। এসব মুমিনগণ আল্লাহর ওপর অকৃত্রিম বিশ্বাস ও দৃঢ় আস্থার ফলে মর্যাদাবান থাকবেন, আর আল্লাহর পরাক্রমে তারাও পরাক্রান্ত হবেন। কুরআন ও সুন্নাহ্‌র আলোকে এ তত্ত্ব সম্পূর্ণ সত্য।

হে আমিরুল-মুমিনীন! বিশ্ব মুসলিমদের একটি অংশ আপনার কাজের সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে অজ্ঞ। কিন্তু এতে করে আপনার মর্যাদায় বিন্দু মাত্রও কমতি আসবে না। আপনি এই উম্মাহ্‌র অনেক বড় একজন ব্যক্তিত্ব। অচিরেই আমরা বর্তমান সময়ের ইতিহাস রচনায় হাত দেবো, অনাগত প্রজন্মকে আমরা বলে যাব যে, আপনি ছিলেন বর্তমান ইসলামী জগতের ইমাম। যদি ইমাম হবার আগেই আপনাকে শহীদ করে দেয়া হতো, তবুও (ইমাম হবার পূর্বে শুধুমাত্র একজন মুজাহিদ হিসেবে) আপনার অবদান স্বর্ণাক্ষরেই লিপিবদ্ধ থাকতো, আর আল্লাহর দরবারে আমরা সাক্ষী দিবো যে, আপনি এই উম্মাতের একজন অন্যতম সত্যবাদী ও নির্ভেজার বান্দা। আর এ সবকিছুই আপনার কৃত কাজের উপর ভিত্তি করে আপনার ব্যাপারে আমাদের ধারণা, আর সবশেষে কে প্রকৃত মুমিন তার অনুমোদন দেবার মালিক শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাই। আপনি ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও পদ্ধতির ওপর দৃঢ়চিত্তে শক্তপদে প্রতিষ্ঠিত থেকে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন এমন এক সময়ে, যখন অনেক মুসলিমই ক্রুসেডারদের সামনে ঝুঁকে পড়েছিল। সুতরাং, আপনি যেরূপ প্রকৃতির মুসলমান সেরূপ প্রকৃতির মুসলমান এই উম্মাতে এখনও বিদ্যমান থাকার জন্য এই মুসলিম উম্মাহ্‌কে অভিনন্দন!

হে আমিরুল-মুমিনীন! আপনার কাজকর্মে ন্যায়বিচার, সাম্য, অন্য সবকিছুর উপরে দ্বীন ইসলামের প্রাধান্য, মহানুভবতা, বিজয়, ইসলাম ও মুসলমানদের নিরাপত্তা প্রদান, আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের সাথে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক করা এবং আল্লাহর শত্রুদের সাথে শত্রুতা ও ঘৃণার সম্পর্ক করা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এ সবকিছুই আপনি আপনার কাজের মাধ্যমে এই মুসলমান জাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন, যখন আপনি আল্লাহর রহমতে আফগানিস্তানে আপনার যাত্রা আরম্ভ করলেন এবং ঈমানী ফসলের চাষাবাদ করলেন এবং সোভিয়েত নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের সুমিষ্ট ফসল ঘরে তুললেন। আর যখন ধর্মনিরপেক্ষ-বস্তুবাদী সেকুলারিস্ট, নাস্তিক্যবাদী কমিউনিস্ট ও বিধর্মীদের হাতে আফগানিস্তান ধ্বংস হয়ে ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছিল, আর যখন জিহাদের ফসল থেকে সুফল লাভের আশা আমরা প্রায় হারিয়েই ফেলছিলাম, তখন আপনি আল্লাহর সাহায্যে নতুন আফগানিস্তানের সূচনার দ্বারা এই উম্মাতের আশার সঞ্চার করলেন। আজ এই উম্মাতের সকল মুসলমানের দৃষ্টি এই ভূখন্ডের দিকে, তারা সকলেই এই জমিনের কর্তৃত্ব ও বিজয় কামনা করে এবং এই জমিনের আদর্শের উপর ভিত্তি করে অন্যান্য জায়গাতে দ্বীন কায়েমের স্বপ্ন বুনে। অতঃপর আপনি সমগ্র আফগানিস্তানের লাগাম হাতে নিলেন এবং এতে আল্লাহর শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করলেন। আলহামদুলিল্লাহ! যেদিন আপনি একটি বিধ্বস্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত ও বিকৃত দেশের ধ্বংসাবশেষের উপর আল্লাহর সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন একটি সম্পূর্ণ সতেজ ইসলামী রাষ্ট্র, সেদিন আল্লাহ আপনার মাধ্যমে জিহাদকে করেছেন বিজয়ী ও শক্তিশালী। সুতরাং, ন্যায়বিচার ও বিশুদ্ধ ধর্ম ইসলাম সেই জমিনের নেতৃত্বে পরিণত হয়। অতঃপর আপনি কবরপূজা সহ সকল প্রকারের শিরক ও বেদাত এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং মানুষের হক আদায় করেন। আর আপনার ন্যায়বিচার ছিল এতটাই ধারালো যে, কেউ যদি বলতো যে, আপনার নেতৃত্বাধীন জমিনে কোন এক স্থানে একই সাথে নেকড়ে ও ভেড়া চরানো হয়, তবে সেটাও বাড়িয়ে বলা হতো না।

অতঃপর আপনি সমগ্র বিশ্বকে উপেক্ষা করে মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার (যেমনঃ বামিয়ান বুদ্ধা) মাধ্যমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত দ্বীনের অনুসরণ করলেন। সুতরাং, আমরা বললাম, “আল্লাহ এই উম্মাতে তাঁর এক রহমতপ্রাপ্ত বান্দাকে প্রেরণ করেছেন যেন এই বান্দা সেই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর মিল্লাতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন যিনি ছিলেন মূর্তি ধ্বংসকারী ও মূর্তিপূজা প্রত্যাখ্যানকারী!” আপনার কাজগুলোর দ্বারা আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ছিলাম যখন আপনি তাওহীদের প্রকৃত মর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন, যে তাওহীদের বাস্তবতা প্রায় কয়েক শতাব্দী যাবত এই উম্মাত থেকে অনুপস্থিত হয়ে পড়েছিল, কারণ বিভিন্ন ধরনের, আকারের ও আকৃতির মূর্তি ও প্রতিমা দিয়ে মুসলমানদের দেশগুলো ভরে আছে। কিন্তু আপনি এমন একটি দেশে অবস্থান করা পছন্দ করনেনি, যেখানে আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদাত করা হবে। আপনার এই তাওহীদী আবেগ আমাদের সকলকে অপার আনন্দ দিয়েছে। আপনি আপনার দেশে খোদাদ্রোহীদের লাঞ্ছিত করেছেন, ঠিক যেমন ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফির-মুশরিক জিম্মিরা লাঞ্ছনার সাথে মুসলমানদের কর দিয়ে বসবাস করতো। সুতরাং, আমরা বললাম, “এ হলো আফগানিস্তানের উমার যিনি তাঁর যুগে ইসলামের বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছেন, তাঁর জমিনে কাফেরদের উপর লাঞ্ছনা-অপমান ও পরাজয় আরোপ করেছেন।”

দুনিয়াব্যাপী আল্লাহপ্রেমিক বান্দারা ইসলামের মর্যাদাপূর্ণ স্বপ্নভূমি আফগানিস্তানের পানে ছুটে যেতে শুরু করলে তাঁরা স্থানীয় শাসকদের বাধার সম্মুখীন হন, তখন আপনার প্রতিকৃতিতে মর্দে মুমিনের সকল চিহ্ন ঝলসে উঠতে দেখা যায়। পূর্ব-পশ্চিমের সকল ইয়াহুদী, খৃস্টান, পৌত্তলিক, কমিউনিস্ট, জাতি-পূজারী, মুরতাদ ও মুনাফিক এক হয়ে একে অপরকে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করছিল, আপনার উচ্চ মর্যাদা ও প্রতাপের মোকাবিলা করবে বলে। তখন তাদের সম্মিলিত সামরিক শক্তি, সৈন্যবাহিনী, আর ভয়ানক সকল মারণাস্ত্র আপনাকে বিন্দুমাত্রও ভীত বা চিন্তিত করতে পারেনি। আপনার সৈনিকেরা এক মুহূর্তরে জন্যও কম্পিত বা বিচলিত হয়নি। আপনি শেষ পর্যন্ত নিজ সিদ্ধান্ত ও ভূমিকার ওপর অটলই রইলনে। এতে পৃথিবীর তাবৎ কাফির লাঞ্ছিত হলো। এ সময় অনেক নামধারী মুসলমানের ঈমানের গায়ে ফাটল ধরতে শুরু করে, আপনাকে তখন দেখা গেছে মজবুত এক পর্বতের মতো নিজ আদর্শে শক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠিত থাকতে। এজন্য বিশ্ব মুসলিম গর্ব করে। দুনিয়ার সমস্ত অবিশ্বাসী-কাফের নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে আপনার ওপর হামলে পড়লো, আর আফগানিস্তানে তাণ্ডবলীলা চালালো।

ইতিহাস সাক্ষী, ঈমানদারদের ছোট একটি দলের উপর কাফিরদের এতবড় সমষ্টি এমন শক্তি নিয়ে আর কখনই হামলা করেনি। আপনি নিজের দেশ, জান, মাল, সামর্থ্য ইত্যাদি সবকিছুর কুরবান দিয়েছেন। এ ছিল আপনার ঈমান ও সততার বৈশিষ্ট্য। সম্মিলিত শত্রু-শক্তির সকল আয়োজনের তুলনায় আপনার ঈমান ও তাওয়াক্কুলের শক্তি বহু বহুগুণ বেশী।

আমিরুল-মুমিনীন! যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি! এখানে আমরা আপনাকে মহান আল্লাহর রহমতে এক উন্মুক্ত ও সুস্পষ্ট বিজয়ের অগ্রিম মুবারকবাদ দিচ্ছি। যার পূর্বলক্ষণ প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। পাশাপাশি ওই মহাসাফল্যের সুসংবাদও দিতে চাই, যা আপনার মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। কেননা, অবিশ্বাসীদের শত অপপ্রচার সত্ত্বেও আল্লাহ্‌ আপনার মর্যাদাকে সুউচ্চে প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন। আপনার ভূমিকা ও চিন্তাধারার সপক্ষে বিশ্ব জনমত সহানুভূতিশীল রয়েছে। আপনার প্রতিপক্ষ যারা ন্যায়নীতি, সুবিচার, মানবাধিকার, সাম্য ও স্বাধীনতার পতাকাবাহী হওয়ার দাবীদার, তারা প্রতিটি ঘটনায়, প্রতিটি অবসরে আজ মিথ্যাবাদী ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীরূপে লাঞ্ছিত হচ্ছে। যুদ্ধ তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। ইয়াহুদী-খৃস্ট শক্তির মানসিক ব্যাধি, বুক ভরা বিদ্বেষও মানুষ দেখেছে। মানুষ খুব ভালো করে বুঝতে পারছে যে, নিষ্পাপ নাগরিকদের হত্যাকারী কারা? কারা মানবাধিকারের সুরক্ষাকে নিশ্চিত করে আর কারা মানুষের অধিকার ধ্বংস করে তাও মানুষ দেখতে পাচ্ছে। তাছাড়া, একথাও দুনিয়া জুড়ে মানুষ বুঝে ফেলেছে যে, স্বাধীনতার অর্থ কী আর আইনের শাসন কাকে বলে। একথাও আজ মানুষ বুঝতে পারছে যে, তাদের কথিত নানা ধর্ম, বর্ণ, ও সংস্কৃতির ঐক্য কোন মূলনীতির আলোকে রচনা করা সম্ভব!

কাফেরদের দল আপনার অঞ্চলে আমেরিকার প্রভাব বিস্তারই কামনা করে। ওরা চায় ক্রুসেডীয় সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা। আপনার প্রতি আমাদের হৃদয় নিংড়ানো শুভচ্ছো, কারণ আপনি গোটা পৃথিবীকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন এবং ক্রুসেডারদের প্রকৃত চেহারা দিবালোকের মতো উজ্জ্বল হয়ে গেছে; যা এতদিন অনেকের কাছেই স্পষ্ট ছিল না। আপনার ঈমানী শক্তি, দৃঢ়চিত্ততা ও আল্লাহ-নির্ভরতার ফলে ক্রুসেডারদের প্রতারক চরিত্রের স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে।

হে আমিরুল মুমিনীন! আপনার দৃঢ়তার গুণে কাফিররা যেমন তাদের শক্তি প্রদর্শন ও প্রতাপ প্রমাণের ক্ষেত্রে ব্যর্থ ও লাঞ্ছিত হয়েছে, তেমনি আপনার শক্তিশালী ঈমানের আভায় বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনগোষ্ঠীর সামনে ইসলামী আদর্শ ও উত্তরাধিকার নতুনরূপে এসে ধরা দিয়েছে, যা একসময় অতীত কাহিনীর রূপ পরিগ্রহ করেছিল। আপনার ভূমিকার ফলে এ বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, মুসলমানের শক্তি ও প্রতিপত্তির উৎস কোনটি। আপনার আপোসহীন মনোবৃত্তি ও অনড় অবস্থানের ফলে ইসলাম, জিহাদ, জয়-পরাজয়, আত্মবিসর্জন ও আল্লাহর রাহে সম্পদ ব্যয় সহ সকল পবিত্র বিষয়ের যথার্থ অর্থ, মর্ম ও দৃষ্টান্ত কার্যত বিশ্বমানবের সামনে এসে গেছে।

ইসলামের পক্ষ ত্যাগ করার শর্তে আপনাকে বিশাল ভূখন্ডের অবিসংবাদিত শাসক-নেতা হয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ-শান্তি ভোগ করার প্রলোভন দেখানো হয়েছে। মুনাফিকরা আপনাকে ইসলামী নীতি-আদর্শ ও জিহাদী ভূমিকা ত্যাগ করার জন্য কখনও লোভ-লালসা দেখিয়েছে, কখনও বা দেখিয়েছে অশুভ পরিণতির হুমকি। কিন্তু আপনি ইসলামী নীতি-আদর্শে শৈথিল্য প্রদর্শনে এক মুহূর্তের জন্যও রাজি হননি। এ কথা প্রমাণিত সত্য যে, যদি আপনি জিহাদী চেতনা ছেড়ে মুসলমানের মান-মর্যাদা নিয়ে কাফেরদের সাথে ব্যবসায় নেমে পড়তেন, তাহলে আজ আপনি বিশ্বের সেরা ধনবান আর ভীষণ শক্তিধর এক শাসকরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন। কিন্তু যে হৃদয় ঈমানের আলোকে প্রজ্জ্বল সে কখনও ঐশী জ্যোতির বিনিময়ে আঁধার ক্রয় করতে পারে না। পারে না পরলোককে বিকিয়ে দিতে নশ্বর কোন কিছুর বদলে।

আরব জাতি তো দেড় হাজার আগেকার একজন বীর ইহুদী সামওয়াল ইবনে আদিয়াকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তার উচ্চতর মানবিক গুণাবলীর জন্য। যে আশ্রিত ব্যক্তি ও আমানতের হেফাজতের জন্য বড় বড় সব বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও নিজ অঙ্গীকার রক্ষা করেছিল। নিজের অবস্থান থেকে এক পাও হটেনি। অখন্ড শামের শাসক হারিস ইবনে জাবালাহ গানসানী যখন ওই গচ্ছিত সম্পদ কেড়ে নিতে চেয়েছিল যা সামওয়ালের কাছে রক্ষিত ছিল, তখন সে সামওয়ালের চোখের সামনে তার পুত্রকে হত্যা করে। তথাপি সামওয়াল তার সত্য অবস্থানে দৃঢ় থেকে ওই আমানত তার হকদার (আল কায়েসের মানুষদের অভিভাবক) ব্যতীত অন্য কারও হাতে অর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। সুতরাং, তার ত্যাগস্বীকার ও আমানতদারীতা আরবদের জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। কিন্তু আমরা যদি আপনার ত্যাগস্বীকার ও আমানতদারীতা নিয়ে গর্ব করি যা সামওয়ালের চাইতে হাজার গুণ বেশী তবে সেটাই যথার্থ হবে। বিশ্বের প্রতিটি মুসলামনের উচিত আপনার সাহস ও দৃঢ়তাকে উপমা হিসেবে পেশ করা এবং ভাষা, বক্তৃতা, সাহিত্য, সাংবাদিকতায় প্রবচনরূপে তা ব্যবহার করা।

প্রখ্যাত আরব কবি আ’শা তার কবিতায় সামওয়ালের যে প্রশংসা করেছেন তার সবটুকু আপনার চারিত্রিক গুণাবলীর সামান্য ঝলক মাত্র। এখানে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় আমরা সেই ঐতিহাসিক কবিতার কিছু পংক্তি উল্লেখ করতে আগ্রহী, যা আরবী সাহিত্যের অনন্য উত্তরাধিকাররূপে কালজয়ী হয়ে রয়েছে। কবি বলেনঃ

তোমরা সামওয়ালের ন্যায় হও

যখন রাতের আঁধারের ন্যায় দীর্ঘ বাহিনী সমেত

তাকে প্রস্তাব দিচ্ছিল হাম্মাম

সে (সামওয়াল) ছিল আশ্রিতের সেবা

আমানতদারীতা ও বীরত্বে সে হার মানিয়েছে

ইবনে আম্মারের প্রতিবেশীকেও

যখন আপন প্রাসাদে দুটি ধ্বংসাত্মক চক্রান্তের দ্বারা সে আক্রান্ত হলো,

সে বললো, যা খুশী করে নাও,

কিন্তু প্রতিবেশীর খিয়ানত!

তা আমাকে দিয়ে হবে না।

ফলে সে (হাম্মাম) বললো, প্রতারণা করো কিংবা পুত্র হারাও,

এগুলোই তোমার জন্য বাকি আছে।

সুতরাং, যা খুশী চয়ন করো,

তোমাকে কোন জবরদস্তি করা হবে না।

ফলে সে ইতস্তত করলো,

অতঃপর বললো,

জবাই করো যা জবাই করতে চাও,

তবে আমি আমার প্রতিবেশীকে রক্ষা করবো!

অর্থাৎ হাম্মাম সামওয়ালকে তার আশ্রিত প্রতিবেশীর সাথে প্রতারণা করার জন্য আহবান করেছিল, আর অন্যথায় তার পুত্রকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। সামওয়াল তখন এর জবাবে বলেছিল, আমার সন্তান-সন্ততিসহ আমি নিজে আমার আশ্রিতদের জন্য জীবন উৎসর্গ করবো, তথাপি, মনুষ্যত্বের অবমাননা করবো না। হীনতা, ভীতি বা কাপুরুষতা আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।

হে আমিরুল মুমিনীন! ইসলামী নীতি-আদর্শের উপর আপনি যেভাবে দৃঢ়তার সাথে আমল করেছেন, তা দেখে আরব আলেমগণ যুগপৎ বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছেন। আমরা সর্বক্ষণ আপনার জন্য দোয়া করছি। আল্লাহ আপনাকে আমৃত্যু দৃঢ়পদ রাখুন। আমাদের আন্তরিক শুভ কামনা আপনার সাথে আছে এবং থাকবে।

আপনার ভূমিকা ও অবস্থানের উপর আরব উলামা-মাশায়েখের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন আছে। আমাদের হৃদয়ও এ বিষয়ে পূর্ণ উন্মুক্ত ও নিশ্চিন্ত। বিশ্বের অধিকাংশ ইসলামী চিন্তাবিদ, দা’ঈ, ইসলামপন্থী ছাত্র-যুবক-জনতা আপনার সমর্থক। আমরা আপনার নিকট আবেদন জানাই, আপনি কোন গুজব বা অপপ্রচারের প্রতি মোটেও কান দেবেন না। যারা বলে, একজন মানুষের জন্য আপনি গোটা আফগানিস্তানের বিরাট ক্ষতি করেছেন, একটি প্রতিষ্ঠিত সরকার উৎখাত হয়ে গেল আপনার অনমনীয়তার ফলে, এসবই ঈমান-বিরোধী চিন্তার ফসল। আপনার এই সিদ্ধান্ত শতকরা একশ ভাগ সঠিক ছিল। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর সম্পূর্ণ সমর্থিত ছিল।

আপনার পরিবার, আপনার সৈন্যদল ও দেশবাসীর উপর যে বিপদ-আপদ আবর্তিত হয়েছে এসবই আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে। এ দুঃখ-কষ্ট আল্লাহর নির্দেশেই আপনারা সহ্য করছেন। বিপদে ধৈয্য ধারণ, আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল, সর্বাবস্থায় দ্বীনের আহকামের উপর আমল করা, ঈমানদারদের সাথে বন্ধুত্ব করা, মুজাহিদদের সাহায্য করা, কাফের-মুশরিকদের বন্ধু না বানানো, দ্বীনের বিজয়ের জন্য সর্বাত্মক জিহাদ করা – এসব আল্লাহ পাকেরই হুকুম, আর এই সকল কাজ নিষ্ঠার সাথে করলে দুনিয়াতে মর্যাদা, শাসনক্ষমতা ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর আখেরাতের যে সাফল্য এ পথে রয়েছে তা কল্পনাতীত। আসহাবুল উখদুদের যে গুণ-বৈশিষ্ট্য আল্লহ পাক ইরশাদ করেছেন তা তো এমনই।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۚ ذَ‌ٰلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِيرُ

নিঃসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য এমন সব বেহেশত রয়েছে যার তলদেশে প্রবাহিত শ্রোতস্বীনি। আর এ হচ্ছে অনেক বড় সাফল্য

(সূরা বুরূজ: ১১)

এমন কি কাজ ছিল যে জন্য আসহাবুল উখদুদকে এত উচ্চ মর্যাদা দেয়া হবে। এদের বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তারা পূর্ণরুপে আল্লাহর উপর ভরসা করে দ্বীনি নীতি আদর্শের উপর আমৃত্যু দৃঢ়পদ ছিল। কোরআন শরীফে এরা ছাড়া আর কোন সম্প্রদায়ের জন্য বড় মর্যাদার কথা বিবৃত হয়নি। অথচ এই গোটা সম্প্রদায়টিই কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হয়ে শাহাদাৎ বরণ করেছিল।

হে আমিরুল মুমিনীন! আমরা আপনার প্রতি এবং আপনার বিশিষ্ট সহকর্মী যথাঃ মোল্লা মোহাম্মদ হাসান, মাওলানা জালালুদ্দীন হাক্কানী, মৌলভী আব্দুল হান্নান, মোল্লা বারাদির, মোল্লা দাদুল্লাহ, মোল্লা রঈস আবদুল্লাহ সহ সকল মুজাহিদ নেতা ও তালেবান যোদ্ধার প্রতি বিনীত নিবেদন পেশ করছি, সদা-সর্বদা যথাসম্ভব প্রতিরোধ, সংগ্রাম ও জিহাদী কার্যক্রম যেন তারা অব্যাহত রাখেন। শরীয়তের প্রশ্নে কোন দিন যেন আপোস না করেন। গোটা তাওহিদী বিশ্বজনতার চোখে আপনারাই প্রশান্তিময় শীতলতা। আল্লাহর সকল সৈন্য আপনাদের উপর সন্তুষ্ট। দূরে থাকা সত্ত্বেও আমরা আপনাদের কাছে আছি, যতদূর সম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা আমরা করে যাব। পৃথিবীর মুসলমানদের আমরা জিাহদের প্রতি উৎসাহিত করেই যাব। উদ্দীপিত করবো মুসলিম সন্তানদের নতুন দিনের স্বপ্নের জন্য। সম্ভব হলে ওরা সবাই আপনার নেতৃত্বে লড়াই করবে। পরিশেষে বিজয় আমাদেরই হবে। যদি আপনারা জিহাদের দ্বারা দীনের সম্মানকে ঊর্ধ্বে তুলে রাখেন তাহলে সহসাই আবার ইসলামী শরীয়তের শাসন কায়েম হবে। দুঃখের দিন শেষ হয়ে অন্যত্র আনন্দের সময়ও দেখা দিতে পারে। যে আল্লাহ জিহাদের হুকুম দিয়ে সাহায্য ও বিজয়ের ওয়াদা করেছেন তার ইচ্ছাতেই জিহাদ ভিত্তিক এক শক্তিশালী বৃহৎ রাষ্ট্রের উন্মেষ ঘটবে ইনশাল্লাহ।

পরিশেষে বিশ্ব মুসলমানদের প্রতি তাদের শুভার্থীরূপে একান্তভাবে অনুরোধ করছি, আপনারা দুনিয়ার সকল কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে আফগান ইসলামী যোদ্ধাদের সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন। বিশেষ করে আফগান জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আপনারা সকল দুঃখ-কষ্ট বরণ করে হলেও ইসলামী নেতৃত্বের সাথে থাকুন। আমিরুল মুমিনীনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামের উচ্চ মর্যাদার জন্য লড়াই চালিয়ে যান। ওসব মুজাহিদের প্রতিও আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ যারা আমিরুল মুমিনীনের সাথে দৃঢ়পদে সত্যের জন্য সংগ্রামরত আছেন, আপনারা ইসলামী নীতি-আদর্শ থেকে এক চুলও নড়বেন না। সর্বাবস্থায় জিহাদ অব্যাহত রাখুন, অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওয়াদা সময়মত আসবে।

এখানে পাক কোরআনের কতিপয় আয়াত উল্লেখ করছি, যেসব জায়গায় আল্লাহ সাহায্য ও বিজয়ের ওয়াদা করেছেন:

وَعَدَاللَّهُالَّذِينَآمَنُوامِنكُمْوَعَمِلُواالصَّالِحَاتِلَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِيالْأَرْضِكَمَااسْتَخْلَفَالَّذِينَمِنقَبْلِهِمْوَلَيُمَكِّنَنَّلَهُمْدِينَهُمُالَّذِيارْتَضَىٰلَهُمْوَلَيُبَدِّلَنَّهُممِّنبَعْدِخَوْفِهِمْأَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِيلَايُشْرِكُونَبِيشَيْئًا ۚ يَعْبُدُونَنِيلَايُشْرِكُونَبِيشَيْئًا ۚ وَمَنكَفَرَبَعْدَذَ‌ٰلِكَفَأُولَـٰئِكَهُمُالْفَاسِقُونَ

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের প্রতি আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তাদের শাসনক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দেয়া হবে। যেমন পূর্বকার লোকদের দেয়া হয়েছে। যে দ্বীন তাদের জন্য মনোনীত করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত করা হবে এবং আল্লাহ তাদের ভীতিকে নিরাপত্তা দিয়ে বদলে দেবেন। এরা এমন মানুষ যারা আমার ইবাদত করে, আমার সাথে আর কোন শক্তিকে শরীক করে নাএরপরও যে সব লোক অকৃতজ্ঞ হবে তারাই ফাসিক (সূরা নূর: ৫৫)

আয়াতের এ মর্ম থেকে বোঝা গেল যে, যারা ঈমান আনবে, নেক আমল করবে এবং সর্ববিধ শির্‌ক থেকে মুক্ত থাকবে তাদের জন্যই সাহায্য ও বিজয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا ۖ إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ

হযরত মূসা (আঃ) তাঁর জাতির উদ্দেশ্যে বলেন, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং দৃঢ়পদ থাকোএ পৃথিবী আল্লাহর, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের চান, তাদেরকে এর অধিকার দেন। তবে চরম সাফল্য তাদের জন্যই যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে

(সূরা আরাফ: ১২৮)

আয়াতের মর্মে আল্লাহপাকের সাহায্য পাওয়ার শর্ত স্বরূপ বলা হয়েছে, কেবল তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়া, ঈমানের উপর দৃঢ়পদ থাকা, আর তাঁর নির্দেশের ওপর অটল থেকে তাঁকে ভয় করে চলা।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَقَالَ مُوسَىٰ يَا قَوْمِ إِن كُنتُمْ آمَنتُم بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ

হযরত মূসা (আঃ) বলেন, হে আমার সম্প্রদায়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো, তবে কেবল তাঁর উপরই ভরাসা করো যদি তোমরা অনুগত হয়ে থাকো।

(সূরা ইউনুস: ৮৪)

তৃতীয় আয়াতের মর্মেও সাহায্যের শর্ত করা হয়েছে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা ও আস্থাকে।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ

নাযিলকৃত কিতাবসমূহে নানা উপদেশের পর আমি এ কথাও লিখেছি যে, পৃথিবীর অধিকারী হবে আমার সৎ কর্মশীল বান্দারা

(সূরা আম্বিয়া: ১০৫)

চতুর্থ আয়াতের মর্মে বোঝা যায়, প্রকাশ্য ও গোপন সকল ক্ষেত্রে সংশোধন হয়ে যাওয়া নেক বান্দারাই পাবে পৃথিবীর মালিকানার অধিকার।

মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ

নিশ্চয়ই যারা বলে যে, আল্লাহ আমাদের রবঅতঃপর এ স্বীকৃতির ওপর অটল রয়েছে, তাদের প্রতি এ বার্তা নিয়ে ফেরেশতাগণ অবতীর্ণ হবেন যে, আপনারা ভয় পাবেন না, চিন্তিতও হবেন না, সুসংবাদ গ্রহণ করুন সেই জান্নাতের যার ওয়াদা আপনাদের সাথে করা হয়েছে। ইহলোকে আমরা আপনাদের বন্ধু ছিলাম, পরলোকেও থাকবোজান্নাতে পরম দয়ালু অসীম ক্ষমাশীল আল্লাহর মেহমানদারীতে তাই রয়েছে যা আপনাদের মন চায়, অথবা আপনারা যা কামনা করবেন তাই সেখানে পাবেন (সূরা ফুসসিলাত: ৩০-৩১)

এ আয়াতের মর্মে আল্লাহপাকের প্রভুত্ব ও কর্তৃত্বের স্বীকৃতি আর দ্বীনের ওপর দৃঢ়তাকেই সাহায্য ও সাফল্যের শর্ত করা হয়েছে।

হযরত নবী করীম (সাঃ) এর হাদীসে সাহায্য ও বিজয়ের শর্তরূপে বিভিন্ন কথা বর্ণিত হয়েছে।

ইমাম তিরমিযি ও আহমাদ (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে একটি বাহনে সহকারী ছিলাম। তিনি তখন বললেন, হে তরুণ অথবা হে তরুণ সম্প্রদায়! আমি কি তোমাদের এমন কিছু কথা বলে দেব না যা তোমাদের খুব উপকারে আসবে? আমি উত্তর দিলাম, অবশ্যই । সুতরাং তিনি (সাঃ) বললেন, আল্লাহকে স্মরণে রেখো, আল্লাহ তোমাকে স্মরণে রাখবেন। আল্লাহকে স্মরণে রেখো, তবে আল্লাহকে সামনেই উপস্থিত পাবেতোমার সুখ ও স্বস্তির সময় আল্লাহকে স্মরণে রেখো, তবে তোমার কঠিন সময়ে তুমি তাঁকে উপস্থিত পাবে। আর যখন তোমরা কিছু চাইবে বা কোন সাহায্য প্রার্থনা করবে তখন শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই চাও। আগামীতে যা কিছু হবে এর সবই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে এবং কলমের কালি শুকিয়ে গেছেযদি গোটা বিশ্ব এক হয়েও তোমার কোন উপকার করতে চায় আর সেই উপকারটুকু যদি আল্লাহ তোমার ভাগ্যে না লিখে থাকেন তবে তারা সেই উপকার করতে পারবে নাআর যদি গোটা বিশ্বের সকলে এক হয়েও তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় আর সেই ক্ষতিটুকু যদি আল্লাহ তোমার ভাগ্যে না লিখে থাকেন তবে তারা সেই ক্ষতি করতে পারবে নাআর একটি কথা জেনে রাখো, যে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করা মানুষের জন্য খুবই পীড়াদায়ক, সেই ধরনের ধৈর্যে মানুষের জন্য অসাধারণ কল্যাণ থাকে। আর কঠিন সময়ের পেছনেই রয়েছে সুখের সময় এবং প্রতিটি কষ্টের পরেই থাকে আনন্দ

জেনে রাখা উচিত যে, দুঃখ, কষ্ট ও ধৈর্য যদি পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হয় তাহলে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের সাহায্য করবেন। দুনিয়াতে তো বটেই, আখেরাতেও তার বিশেষ রহমত মুসলমানদের আবৃত করে রাখবে। কাফেরদের আল্লাপাক লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন। এ তো আল্লাহর ওয়াদা যার কোন ব্যতিক্রম নেই।

মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ

আমি অবশ্যই আমার রাসূলগণ ও ঈমানদারদের সাহায্য করবো এবং ওই দিবসেও যেদিন মানবজাতি থাকবে সাক্ষীর ভূমিকায়

(সূরা গাফির: ৫১)

আল্লাহ আরও বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ ۗ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ

কাফেররা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে রুখার জন্য নিজেদের ধনসম্পদ ব্যয় করে। এরা যত খরচই করুক সবই হবে তাদের লাঞ্ছনা ও অনুশোচনার কারণ। শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হবে। আর কাফেরদের দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে

(সূরা আনফাল: ৩৬)

বদর যুদ্ধের দিন মুসলমানদের অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,

قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ

সম্প্রতি তোমার সামনে যুদ্ধরত দুটো সৈন্য বাহিনীর একটি দৃষ্টান্ত কায়েম হলোএকটি বাহিনী আল্লাহর পথে লড়াই করে, অপরটি অবিশ্বাসীকাফের সৈন্য দল। যারা নিজেদের খোলা চোখে মুসলিম বাহিনীকে দ্বিগুণ রূপে দেখতোআর আল্লাহ যাকে চান নিজ সাহায্যের দ্বারা শক্তিপ্রদান করে থাকেন। চিন্তাশীলদের জন্য এতে রয়েছে শিক্ষনীয় বিষয়

(সূরা আলে ইমরান: ১৩)

এক হাদীসে আছে, এই দ্বীন এমন প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে পড়বে যেখানে দিবারাত্রির আবর্তন ঘটে। আল্লাহ তাআলা কিছু মানুষকে সম্মানিত করে, আর কিছু মানুষকে লাঞ্ছিত করে এই দ্বীনকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবেন। ইসলামপন্থীদের আল্লাহ তাআলা সম্মানিত করবেন, আর কুফরকে করবেন লাঞ্ছিত।

সহীহ সনদে ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত তামীম দারী (রঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এই হাদীসে সাহায্য ও দ্বীনের বিজয়ের সুসংবাদ অত্যন্ত স্পষ্ট। অতএব মুসলিম জাতির অন্তরে সাহস ও আশা ধরে রাখাই ঈমানের দাবী। হকপন্থীদের বিজয় নিশ্চিত। পরিশেষে আল্লাহপাকের প্রশংসা ঘোষণা করছি, আর অত্যাচারীদের জন্য করছি ঘৃণা ও চিরশত্রুতার বহিঃপ্রকাশ।

আর কবি তার কবিতায় ভালোই বলেছেন:

আর যে কেউই সম্মান ও মহানুভবতা অর্জন করতে চায়

তবে তার অবশ্যই ধৈর্য ধারন করতে হবে

মৃত্যুর মুকাবিলা এবং অপ্রিয়কে পদদলিত করায়

কারণ যদি দিবস আমার খাবার পানিটুকুও দূষিত করে দেয়

আর আমার নিজ অঞ্চলকে দুর্যোগাক্রান্ত ধ্বসে পরিণত করে

তবে কোন পরীক্ষাই আমাকে আমার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি

আর না কোন ছলচাতুরি আমাকে আমার পথ থেকে দূরে সরিয়েছে

আমি তার উপরেই প্রতিষ্ঠিত থাকি যা আমাকে আনন্দিত করে

আমার শত্রুদেরকে করে ক্রুদ্ধ এবং বন্ধুদেরকে করে পরিতুষ্ট

আপনার ভাই হামুদ ইবনে উকলা আশ-শুয়াইবী, আলী ইবনে খুদাইর আল-খুদাইর ও সুলাইমান ইবনে নাসির আল-উলওয়ান

১৬/১০/১৪২২ হিজরী

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × five =

Back to top button