বসে থাকাদের দলে থেকেও কীভাবে তারা সন্তুষ্ট থাকতে পারে? – মুজাহিদ শাইখ ইবরাহিম আল- রুবাইশ
তারবিয়াহ
ইস্যু-৫ | ১৪৪১ হিজরি | ২০২০ ইংরেজি
বিষয়ঃ বার্তা/চিঠি
বসে থাকাদের দলে থেকেও কীভাবে তারা সন্তুষ্ট থাকতে পারে? – মুজাহিদ শাইখ ইবরাহিম আল- রুবাইশ
অনুবাদঃ আবু বাসীর
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা নিজেদের নফস হতে এবং আমাদের কর্মের খারাপ ফলাফল হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। যাকে আল্লাহ পথ দেখান তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না, এবং যাকে আল্লাহ গোমরাহ করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক ও তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা এবং রাসুল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাহাবীদের উপর শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত শান্তি ও কল্যাণ বর্ষিত হোক।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে অন্যের সামনে আমাদের শক্তি-সামর্থ্যের দুর্বলতায় ফরিয়াদ জানাই। আমরা আপনার কাছে আমাদের মুখোমুখি হওয়া বহু দু:খে এবং আমাদের ভোগ করা সকল যন্ত্রণায় আপনার কাছে ফরিয়াদ জানাই।
মুসলিম উম্মাহ আজ দু:খের মধ্যে ডুবে আছে এবং আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই। উম্মাহ আজ রক্তের আধারে আটকে আছে এবং ডুবে যাচ্ছে, এবং আপনি যখন একে শত্রুর মুখের সামনে দেখেন তখন আপনার একটি প্রবাদ মনে পড়ে: যদি আপনি তাইম গোত্রের একটি দাসকে দেখেন তাহলে আপনি চিন্তা করবেন যে তাদের মধ্যে দাস কারা। বিষয়াদি ঠিক করা হয় যখন তাইমরা অনুপস্থিত থাকে, আর তাদের উপস্থিতিতে কেউ ঐসব নিয়ে তাদের কিছু জিজ্ঞেস করে না। উম্মাহ এমন এক অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে যে আপনি তার প্রশংসা করতে পারবেন না। এটা শত্রুর নিয়ন্ত্রণে আছে, এবং আপনি আমাদের জাতির মত আর কোন জাতি পাবেন না যারা এত বেশি অপমানিত হয়েছে ও যন্ত্রণা সহ্য করেছে। আমরা অনেক জখম ও দু:খ সহ্য করেছি এবং করছি। উম্মাহর প্রতিটি অংশে আপনি পাবেন বিপর্যয়, দু:খ, বেদনা ও শাস্তি।
এই ব্যাপারটিকে অধিকতর খারাপ করে তুলেছে যে ব্যাপারটি, তা হচ্ছে উম্মাহ বিভিন্ন দল ও বিভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে কিছু দল অন্য দলদের পরাস্ত করে তাদের অধীনস্ত করেছে। এটা শত্রুদের জন্য আনন্দের বিষয়। তারা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে কীভাবে তাদের কাজটা উম্মাহর একটা দল তাদের হয়ে করে দিচ্ছে।
তাদের হয়ে তাদের কাজ করে দেওয়ার জন্য আমাদের উম্মায় যথেষ্ট লোক আছে। কি আশ্চর্য ব্যাপার! এটা কি সেই একই উম্মাহ যারা ইতিহাসের পাতা তাদের বীরত্ব ও কৃতিত্ব দিয়ে পূরণ করেছিল? এটা কি সেই একই উম্মাহ যারা সারা বিশ্বে পরিচিত ছিল এবং যারা শত্রুর অন্তর ভয় ও ত্রাস দিয়ে পূর্ণ করে দিত? এটা কি সেই একই উম্মাহ যার শাসক বৃষ্টি মেঘকে বলত যে, “তোমার যেখানে ইচ্ছা সেখানেই বৃষ্টি বর্ষণ কর, কারণ আমি আগে-পরে তোমার ফলনের শুল্ক হতে লাভবান হবই।”
এখন আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, উম্মাহ তার ধর্ম ও তার সম্মানের কারণ হতে সরে গিয়েছে। ফলে দিন দিন এটি আরো দুর্বল ও আরো অপমানিত হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাহর এই আপতিত হওয়া অবস্থার কথা আবু দাউদের হাদিসে বর্ণনা করেছেন, “যদি তোমরা ব্যবসা কর এবং কৃষিকাজে জড়িয়ে পড়ে তাতে সন্তুষ্ট হয়ে জিহাদ ছেড়ে দাও – তবে আল্লাহ তোমাদের অবমাননা ও পরাধীনতার মাধ্যমে শাস্তি দিবেন। এটা তিনি অব্যাহত রাখবেন – যতদিন না তোমরা আবার দ্বীনের পথে ফিরে আস।”
আমাদের ভালবাসার মানুষটি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এই অসুখের কারণ এবং এর ঔষধের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। যা হচ্ছে দ্বীনে প্রত্যাবর্তন। তাই আমরা কখনোই আমাদের উম্মাহ হতে এই পরাধীনতা ও অবমাননা দূর করতে পারব না – আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া। আমাদের নিজেদের দুনিয়াবি ব্যাপার হতে এমন ভাবে ব্যস্ত থাকা বন্ধ করতে হবে, যা আমাদের আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালনে বাঁধা দেয়।
সুতরাং এই উম্মাহকে তাদের দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে হলে তাদের অবশ্যই নিজ দ্বীনে ফিরে যেতে হবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদে নিযুক্ত হতে হবে। এটা করার মাধ্যমেই আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হবে এবং আল্লাহর সামনে আমাদের পেশ করার মত ওয়াসিলা হবে। এটা আল্লাহর শত্রুদের ক্রোধান্বিত করে তুলবে, যা হচ্ছে আল্লাহর পর আমাদের প্রথম উপায় উম্মাহকে অবমাননায় ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য।
ভাইয়েরা আমার,
কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আল্লাহ বলেন,
ا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّـهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ ۚ أَرَضِيتُم بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ ﴿٣٨﴾
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে?”(আত-তাওবাহ : ৩৮)
ভাইয়েরা, কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আল্লাহ বলেন,
نفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿٤١﴾
“তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জিহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে।” (আত-তাওবাহ: ৪১)
কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আল্লাহ বলেন,
إِلَّا تَنفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا ۗ وَاللَّـهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿٣٩﴾
“যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না”(আত-তাওবাহ:৩৯)
কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যে যুদ্ধ ছাড়া মারা যাবে অথবা যুদ্ধের পূর্ণ সংকল্প ছাড়া মারা যাবে সে মুনাফিকের ডালের উপর নিয়ে মারা গেল।”
কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আল্লাহর শরিয়াহকে বাতিল করা হচ্ছে, এবং মানবরচিত শরিয়াহ এর স্থান নিয়ে নিচ্ছে? আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।
ভাইয়েরা কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আমরা আমাদের ভাইদের নিহত হতে দেখছি। তাদের সম্মানহানী হচ্ছে, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে। আমরা মুসলিমরা পাশে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছি। আল্লাহ আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন –
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَـٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا ﴿٧٥﴾
“আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর পথে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।”(আন-নিসা:৭৫)
কীভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ায় সন্তুষ্ট থাকতে পারি যখন আমরা দেখছি যে ইসলামের ভূমি একটির পর একটি দখল করা হচ্ছে, একটির পর একটি শত্রুর হাতে পড়ছে। আলেমরা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, জিহাদ ব্যক্তিগতভাবে ফরজ হয় তিনটি অবস্থায়, তাদের একটি হচ্ছে, যখন শত্রুরা মুসলমানদের কোন একটি এলাকায় আক্রমণ করে। শিশুরা তাদের পিতামাতার অনুমতি ছাড়া জিহাদের জন্য বের হয়ে যাবে। তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে এই অবস্থায় চাকররা তার মনিবদের অনুমতি ছাড়া, এবং দেনাদার পাওনাদারের অনুমতি ছাড়া এবং যারই যুদ্ধ করার সামর্থ আছে সে যেন সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে। যারা মুসলিমদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত, তাদের কি কোন সন্দেহ আছে যে জিহাদ সকল সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর ফরজ হয়েছে?
উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় দু:খের বিষয় হচ্ছে, আমরা দেখছি যে শত্রুরা আমাদের ভূমিতে চারদিকে তাণ্ডব করছে। সেসময় আমরা ডিবেট করার জন্য কনফারেন্স আয়োজন করছি যে, জিহাদ কি ব্যক্তিগত ফরজ নাকি সাম্প্রদায়িক ফরজ?!
বছর যায় আর আসে। আমাদের জমি করায়ত্ত হচ্ছে, আমাদের সম্মানহানী হচ্ছে নিয়মিত। আর আমরা এখনো “জিহাদের কিতাব” এর প্রথম পৃষ্ঠায় আছি। ডিবেট করছি যে জিহাদ এখনো ব্যক্তিগত ফরজ হয়েছে কিনা, নাকি এখনো এটি একটি সাম্প্রদায়িক ফরজ রয়েছে।
ভাইয়েরা!
আপনি যা করতে পারেন তাই করুন, তবুও প্রথমে আপনাদের ভাইদের রক্ষা করুন। এরপর জিহাদের বিধানের ব্যাপারে আপনার যা ইচ্ছা হয় বলুন!
আরো খারাপ ব্যাপার হচ্ছে যে, কেউ কেউ মুসলিমদের বলছে যে জিহাদ হচ্ছে সাম্প্রদায়িকভাবে ফরজ। এভাবে তারা এই দায়িত্ব পালনে উম্মাহকে বাধা দিচ্ছে। আমরা দেখি যে, সে কখনো জিহাদের মাঠও দেখেনি টেলিভিশন ছাড়া। সে কীভাবে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিবে?
আমার ভাইয়েরা!
যদি এটা সাম্প্রদায়িক ফরজও হয় তবুও এটা মনে রাখতে হবে যে, এটি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ(আল্লাহ তার উপর করুণা করুন) বলেন, “যেই গুনাহর মধ্যে নিমজ্জিত, তার নিরাময়ের জন্য সবচেয়ে ভাল ঔষধ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ।”
মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿١٠﴾ تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿١١﴾ يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿١٢﴾ وَأُخْرَىٰ تُحِبُّونَهَا ۖ نَصْرٌ مِّنَ اللَّـهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ ﴿١٣﴾
“মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বুঝ। তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জান্নাতে উত্তম বাসগৃহে। এটা মহাসাফল্য। এবং আরও একটি অনুগ্রহ দিবেন, যা তোমরা পছন্দ কর। আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন।”(আল-ছফ:১০-১৩)
ভাই!
কি তোমাকে পিছিয়ে থাকতে বাধ্য করছে? তুমি কি পিছিয়ে থাকছো কারণ তুমি তোমার পরিবার ও মাতৃভূমিকে ছেড়ে যেতে ঘৃণা কর? যখন আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّـهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّـهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ ﴿٢٤﴾
“বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।(আত-তাওবাহ:২৪)”
নাবিগাহ আল-জা’দি একটি বহিঃআক্রমণের জন্য যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর পরিস্থিতি এই কবিতার লাইন দিয়ে প্রকাশ করেন,
“আল্লাহর কসম, সে রাত পার করেছে বসে থেকে, আমার কথা চিন্তা করতে করতে। একে অপরের কথা চিন্তা করেছে আর অশ্রু ঝড়েছে। হে আমার চাচার কন্যা, আল্লাহর কিতাব আমাকে সুদূরে নিয়ে এসেছে, আমি কি আল্লাহকে জোরপূর্বক তাঁর কৃতকাজ থেকে বিরত রাখব? যদি আমি চলে আসি, খোদা আমাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। যদি আমি আমার প্রভুর সাথে মিলিত হই, তবে অন্য কারো খোঁজ কর। আমি না খোঁড়া, না বধির যাতে আমাকে ক্ষমা করা হবে। না আমি অসুস্থতায় কাতর না আমি অক্ষম যা আমি ওজর হিসেবে পেশ করতে পারবো।”
কীভাবে তুমি তোমার স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে জীবন উপভোগ কর যখন তুমি তোমার ভাইদের এমন পরিণতি দেখতে পাচ্ছ? তুমি কি তাদের দেখে দু:খবোধ কর না? তুমি কি তাদের জন্য তা কামনা কর না যা তোমার কাছে আছে? যদি তুমি তাদের পরিস্থিতিতে থাকতে তুমি কি পছন্দ করতে যদি তারাও পিছিয়ে থাকতো যেমনটা আজ তুমি আছ?
ভাই!
আর কতক্ষণ তোমরা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর উম্মাহকে ব্যর্থ করবে যখন শত্রুদের স্পর্ধা আরো বেশি বেশি বাড়ছে? প্রতিবার তারা যতবেশি সীমালঙ্ঘন করছে ততবেশি আমরা পশ্চাদপসরণ করছি। আমরা কি শয়তান ও তার দোসরদের মোকাবেলা করতে দ্বিধা করছি?
মুজাহিদীনদের বিপক্ষে শত্রুদের শক্তি, এবং তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের একত্রীকরণই কি তোমার বসে থাকার কারণ? তুমি দেখছ যে পুরো বিশ্ব তাদের একসাথে আক্রমণ করছে। এমন লোকও আছে যারা দাবী করে যে তারা আমাদেরই একজন কিন্তু তারা শত্রুদের পক্ষে অবস্থান করছে। যদি এটা হয় তোমার বসে থাকার কারণ, তাহলে চিন্তা কর:
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কীভাবে বিজয়প্রাপ্ত হয়েছেন? তাঁর সাহাবারা তীব্র যুদ্ধ ছাড়াই কি পূর্ব ও পশ্চিম বিজয় করেছেন? তারা তাদের সাথে সবসময় অস্ত্র বহন করতেন। এমনকি যখন তারা ঘুমিয়ে থাকতেন তখনও। এতই ভয় তারা পেত যে তারা নিজ ঘরেও নিরাপদ বোধ করতেন না। তারা যখন হালকা হবার জন্য বাইরে যেতেন তখনও নিরাপদ বোধ করতেন না।
হয়ত তুমি মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ও শক্ত অবরোধ দেখেছ। এটাই কি তোমার বের না হওয়ার কারণ যেখানে তোমার বিশ্বাস এই যে, আল্লাহ হচ্ছেন যোগানদাতা, ক্ষমতার মালিক, এবং সর্বশক্তিশালী?
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের হিজরতের নির্দেশ দেন যখন তাঁর কাছে মসজিদ ছাড়া তাদের থাকতে দেওয়ার মত কোন জায়গা ছিল না। মানুষ তাদের অনেকজনকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখতেন। মানুষজন মনে করতো তারা উন্মাদ। অথচ এমনটা হয়েছিল তাদের ক্ষুধা ও নিরতিশয় ক্লান্তির কারণে।
চিন্তা করুন সেসময়কার অবস্থার কথা যখন আল্লাহর রাসুল ঘর থেকে বের হতেন শুধু ক্ষুধার কারণে। তীব্র ক্ষুধার কারণে তিনি দুটি পাথর তার পেটের সাথে বেঁধে রেখেছিলেন। চিন্তা করুন সেসময়কার কথা – যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদল সৈন্য প্রেরণ করেছেন শুধুমাত্র এক বস্তা খেজুর দিয়ে। কারণ এটা ব্যতীত অন্য কোন খাবার তিনি পাননি।
যদি মুজাহিদীনদের এরকম কিছু করতে হয় তবে তাদের প্রথম বিরোধিতাকারী হবে তাদের যাজকসম্প্রদায় ও টেলিভিশনের আলেমগণ – যারা তাদের বেপরোয়া, অক্ষম ও শত্রুর মোকাবেলায় তাড়াহুড়াকারী বলে ডাকেন।
ভাই, তুমি কি পেছনে দাঁড়িয়ে আছ কারণ তুমি মনে করছ যে তুমি উম্মাহর কোন প্রয়োজন পূরণ করছ অথবা তুমি যেখানে আছ সেখানে থেকে কোন ভাল কাজ করছ? আমরাও বিশ্বাস করি যে, তুমি কোন ভাল কাজ করছ ইনশা আল্লাহ। কিন্তু তুমি কি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ব্যতীত উচ্চতর কিছু করতে পারবে? একটি বিশুদ্ধ হাদিস অনুসারে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন একটি ভাল কাজ উল্লেখ করতে যা জিহাদের সমপর্যায়ের। তিনি বললেন যে, তিনি(প্রশ্নকারী সাহাবী) পারবেন না। তারপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, একজন মুজাহিদ বের হয়ে গিয়ে ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি কি ক্লান্তি ছাড়া সালাত আদায় করতে এবং না ভেঙে রোজা রাখতে পারবে?
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ ۚ لَا يَسْتَوُونَ عِندَ اللَّـهِ ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ ﴿١٩﴾
“তোমরা কি হাজীদের পানি সরবরাহ ও মসজিদুল-হারাম আবাদকরণকে সেই লোকের সমান মনে কর, যে ঈমান রাখে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি এবং যুদ্ধ করেছে আল্লাহর রাহে, এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়, আর আল্লাহ জালেম লোকদের হেদায়েত করেন না।(আত-তাওবাহ:১৯)”
হ্যা ভাই তুমি নেক আমল করছ, কিন্তু আল্লাহ এটা তোমার উপর ফরজ করে দিয়েছেন যে তুমি তোমার বোনদের ইজ্জত এবং ইসলামী ভূমি রক্ষা করবে। চল বের হই এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, এই আশায় যে আল্লাহ আমাদের পূর্বে পিছিয়ে পড়ার গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
ভাই, তুমি কি শরিয়াহকে ও দ্বীনকে রক্ষা করার চেয়ে উত্তম কোন আমল করতে পার – যখন শত্রুরা হচ্ছে অনেক এবং সাহায্যকারী হচ্ছে অল্প? আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তোমার সম্পদ নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার এবং নামমাত্র মূল্যে তোমার আত্মা বিকিয়ে দেওয়ার চেয়ে ভাল কোন কিছু কি আছে? এবং আল্লাহর সাথে করা সওদা পূরণ কর, যেখানে তিনি বলেন,
إِنَّ اللَّـهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّـهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿١١١﴾
আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে – অতঃপর মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করেছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য। (111) (আত-তাওবাহ:১১১)”
ভাই হয়ত তোমার জিহাদে বের না হওয়ার কারণ হচ্ছে যে, তুমি হয়ত কোন মুজাহিদের ভুল অথবা সীমালঙ্ঘন দেখেছ। আল্লাহর কিতাব ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহতে কি এমন কোন প্রমাণ আছে যে, ভুল করা হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ হতে বিরত থাকার একটি বৈধ অজুহাত?
নাকি এমনটা ঘটলে দুটি জিনিস তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যায়? একটা হচ্ছে জিহাদ আরেকটা হচ্ছে নিজ ভাইদের উপদেশ। বল আমার ভাইয়েরা, কোন কিছু কি ভুল ছাড়া করা যায়? বিশ্বে বিচরণকারী শ্রেষ্ঠ সৈন্যদল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দল কি কোন ভুল করেনি?
উহূদের যুদ্ধে ইবন উবাই এক তৃতীয়াংশ সেনাবাহিনী নিয়ে পশ্চাদগমন করে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদেরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একা রেখে চলে যায়। কেউ কি বলতে পারে যে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে জিহাদ করা ঠিক ছিল না কারণ তাঁর সেনায় কিছু মুনাফিক ছিলেন? তাবুকের যুদ্ধে একদল মুনাফিক আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। কেউ কি এই কথা বলেছে যে, “কীভাবে আমরা এমন এক নেতার নেতৃত্বে জিহাদ করব যার নিজ সৈন্য তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে?”
উসামা বিন যাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বিধান বুঝতে ভুল করেন এবং একজন ব্যক্তিকে হত্যা করেন যদিও সে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছিল। কিন্তু আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু করেননি, শুধু বলেছেন, “তুমি কি করবে যদি তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’কে কিয়ামতের দিন সামনে পেশ করা হয়?” তিনি কি তাকে সরিয়ে দিয়েছেন, তাকে সরানোর হুকুম দিয়েছেন, তার সাথে একসাথে জিহাদ করা বন্ধ করে দিয়েছেন, নাকি তার ভুল মানুষের কাছে উন্মোচিত করে বক্তৃতা দিয়েছেন?
বরং একসময়কার একজন সাধারণ সেনাবাহিনীর পদাতিক সৈন্য, তিনি পরবর্তীতে শুরুর দিককার সাহাবাদের এক সৈন্যদলের কমান্ডার ছিলেন। আল্লাহ তাঁদের সবার উপর সন্তুষ্ট হলেন।
একবার খালিদ ইবন ওয়ালিদ(আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হন) একটি গোত্রের উপর হানা দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তারা বলেছিল যে – আমরা সেবিয়ান হয়েছি (ইসলাম গ্রহণ করেছি)। তারা ঠিকভাবে বলতে পারেননি যে তারা মুসলিম হয়েছেন। খালিদ তারা যা বোঝাতে চেয়েছেন তা বুঝতে পারেননি। তাই তাদের হত্যা ও বন্দী করা শুরু করেন। যখন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা শোনেন তখন তিনি কিছু না করে শুধু হাত তুলে বলেন, “হে আল্লাহ! নিশ্চই খালিদ যা করেছে তা থেকে আমি পবিত্র।”
এই ঘটনাটি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে “আল্লাহর তরবারীগুলোর একটি তরবারী” ডাকতে বিরত রেখেছিল? আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেনায় এমন লোকজন ছিলেন যারা একে অপরকে হত্যা করতেন এবং তাদের গনিমত চুরি করতেন এবং মদপান করতেন। হুদাইফাহ বিন ইয়ামানের পিতা এমনকি দুর্ঘটনাবশত উহূদের যুদ্ধে নিহত হন। আপনি এমন কোন সেনাবাহিনীর অপেক্ষায় আছেন যারা এর চেয়েও পবিত্র?
ভাই, ধর্মের মধ্যে আসল দুর্ঘটনা হচ্ছে, আমরা মুজাহিদীনদের সকল দোষ খুঁজে বেড়িয়েছি, তাঁদের ব্যাপারে কথা বলেছি। তাদেরকে প্রচার মাধ্যমগুলোতে উন্মোচন করেছি। কিন্তু ইসলামের জন্য তাঁরা যতটুকু করেছে তার সিকি পরিমাণও আমরা করিনি।