অডিও ও ভিডিও [আন নাসর]আন-নাসর মিডিয়াবাংলা প্রকাশনাশাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো [পর্ব-০৩] -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ || ভিডিও, অডিও, পিডিএফ ও ওয়ার্ড

مؤسسة النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media
تـُــقدم
পরিবেশিত
Presentsالترجمة البنغالية
বাংলা ভাষায়
In the Bengali Language

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled:


ذكريات للإمام المجاهد الشيخ أسامة بن لادن رحمه الله
أيام مع الإمام

الحلقة الثالثة
للشيخ أيمن الظواهري حفظه الله
ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহিমাহুল্লাহ) এর
স্মৃতিচারণ
ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো
(পর্ব-০৩)
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
Commemoration of Imamul Mujahideen Sheikh Usama bin Laden Rahimahullah
Days with the Imam

(part-3)
By Sheikh Ayman al-Zawahiri (May Allah Protect Him)



روابط الجودة الاصلية
FULL HD 1080 (1.3 GB)
মূল রেজুলেশন [১.৩ গিগাবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/4dw8xPoyQcDEBsN
http://www.mediafire.com/file/k23y9t16e8z58wz/Ayam_P-03_HQ_1080p.mp4/file
https://archive.org/download/ayamp03hq1080p/Ayam%20P-03_HQ_1080p.mp4

روابط الجودة العالية
HQ 1080 (345 MB)
১০৮০ রেজুলেশন [৩৪৫ মেগাবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/c2bsCsC7EWyFRjB
http://www.mediafire.com/file/ymc5zvjwru51bni/Ayam_P-03_1080p.mp4.mp4/file
https://archive.org/download/ayamp03hq1080p/Ayam%20P-03_1080p.mp4.mp4


روابط الجودة المتوسطة
MQ 720 (170 MB)
৭২০ রেজুলেশন [১৭০ মেগাবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/cL5NHDTodANcEJ9
http://www.mediafire.com/file/1wy6t3rc6e9r665/Ayam_P-03_720p.mp4/file
https://archive.org/download/ayamp03hq1080p/Ayam%20P-03_720p.mp4


روابط الجودة المنخفضة
LQ 480 (106 MB)
৪৮০ রেজুলেশন [১০৬ মেগাবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/tZDgc6jPLi4nywi
http://www.mediafire.com/file/sd2p7vepq65y9cq/Ayam_P-03_480p.mp4.mp4/file
https://archive.org/download/ayamp03hq1080p/Ayam%20P-03_480p.mp4.mp4


روابط جودة الجوال
Mobile Qoality (170 MB)
3GP রেজুলেশন [১৭০ মেগাবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/nyi2X6bmSDHyArX
http://www.mediafire.com/file/1a5oy3akq2lt8mi/Ayam_P-03.3gp/file
https://archive.org/download/ayamp03hq1080p/Ayam%20P-03.3gp


روابط صوتية
MP3 (45MB)
অডিও ডাউনলোড করুন [৪৫ মেগাবাইট]

https://5.top4top.net/m_14556gdg33.mp3
http://www.mediafire.com/file/47t8jsr01fbx0jt/Ayam_P-03_Audio.mp3/file
https://archive.org/download/ayamp03hq1080p/Ayam%20P-03_Audio.mp3

روابط بي دي اب
PDF (615KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৬১৫ কিলোবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/8XtMdDzHAMzyais
http://www.mediafire.com/file/nqxhkih0e0m3yh8/siticharon_porbo-3.pdf/file
https://archive.org/download/siticharonporbo-3/siticharon%20porbo-3.pdf


روابط ورد
Word (260 KB)
ওয়ার্ড [২৬০ কিলোবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/sdTSikZ4wZcfHKq
http://www.mediafire.com/file/1v19zyrlp0c84vj/siticharon_porbo-3.doc/file
https://archive.org/download/siticharonporbo-3/siticharon%20porbo-3.doc

ব্যানার

https://banglafiles.net/index.php/s/Kzjbz3yTWtLC2Te

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

 

 

ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর স্মৃতিচারণ

ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো

 

পর্ব০৩

 

-শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ

 

——————————————————

 

 

 

 

অনুবাদ ও পরিবেশনা

بسمِ الله والحمدُ للهِ والصلاةُ والسلامُ على رسولِ الله وآلِه وصحبِه ومن والاه.

বিশ্বের আনাচে,কানাচে অবস্থানকারী আমার মুসলিম ভাইগণ! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

হামদ ও সালাতের পর,

ইমামুল মুজাহিদীন, মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর সাথে কাটানো দিনগুলোর স্মৃতিচারণের এটি তৃতীয় পর্ব। আমি প্রথমে মুসলমানদেরকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছো জানিয়ে শুরু করতে চাই। আল্লাহ তা‘আলা সকল মুসলমানের রোজা, তারাবীহর নামায ও দু‘আ কবুল করুন (আমীন)। এই মুবারক মাসকে আমাদের জন্য সাহায্য, বিজয় ও সম্মানের মাস হিসাবে কবুল করুন। বিশেষ করে আমাদের ঐ সকল ভাইদের জন্য, যারা রিবাতের ভূমি শাম, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও অন্যান্য এলাকা পূর্ব তুর্কিস্তান থেকে শুরু করে মরক্কো পর্যন্ত জিহাদের কাজে ব্যস্ত আছেন। ইমামুল মুজাহিদীন, মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. ঘটনাবলীর মাঝে রমজানের বিভিন্ন ঘটনাও অন্যতম। যখনই শাইখ ও রমজানের কথা মনে পড়ে, তখনই ঐ রমজানের কথা স্মরণ হয়; যা আমরা তোরাবোরাতে কাটিয়েছিলাম। আজকের এই পর্বে তোরাবোরা সম্পর্কে বিশেষ কোনো আলোচনা করবো না। কেননা আমি তোরাবোরা আর সেখানকার মুজাহিদীনের বীরত্বগাঁথা সম্পর্কে আলাদা একটি পর্বে আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ। তোরাবোরাতে কীভাবে আল্লাহ তা‘আলার তাওফীকে শাইখ উসামা রহ. বিচক্ষণতার সাথে সকল ক্ষেত্রে মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিতেন? আর কীভাবেই-বা আমেরিকার পতন, কপটতা ও কাপুরুষতা এবং মুনাফিকদের উপর আস্থা রাখার বাস্তবতা সকলের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়? তাও আলোচনা করবো। তবে এখানে আমি শুধু এতটুকু স্মৃতিচারণ করব যে, তোরাবোরাতে যে রমজান কাটিয়েছিলাম, এর মাঝে এমন এক আলাদা মর্যাদা রয়েছে, যা তাকে অন্য রমজান থেকে আলাদা করে দেয়। সে রমজানের সময়গুলো ছিল আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। শাইখ উসামা রহ. আমাদের সকলকে রসদ ও খাবারের কমতির কারণে রোজা রাখতে নিষেধ করেছিলেন। আমার আরো মনে পড়ছে যে, আমি তোরাবোরা থেকে শাইখের আগে বের হয়ে যাই। এরপর আমরা পুনরায় ঈদুল ফিতরের সময় মিলিত হই। তিনি তখন আমার কাছে আসেন। আমার স্মরণ আছে, আমি তখন প্রথমে তাঁর দিকে সালাম জানিয়ে এগিয়ে যাই। তারপর মুতানাব্বীর কবিতা দ্বারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানাই,

ولأخصنك في منجى بتهنئة * إذا سلمت فكل الناس قد سلموا

“আমি আপনাকে উদ্ধারকর্তা হিসাবে বিশেষভাবে অভিবাদন জানাই,

কেননা, যখন আপনি নিরাপদ থাকেন, তখন সকল মানুষই নিরাপদ থাকে।”

কবিতার সাথে, মুতানাব্বীর সাথে, গৌরব, জিহাদ, বীরত্ব ও সাহসিকতার কবিতা ও যুহদ ও আখলাকের কবিতা এবং কবিতার সাথে শাইখের সখ্যতা নিয়ে অনেক লম্বা ঘটনা রয়েছে। ‘শাইখ ও কবিতা’ শিরোনামে একটি স্বতন্ত্র পর্বে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারি, ইনশা আল্লাহ।

আমি আজকের পর্বে আপনাদের সামনে আলেম-উলামাদের সাথে শাইখ রহ. এর সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে আলোচনা করতে চাই।

অনেকে মুজাহিদদের সম্পর্কে এই অপবাদ দিয়ে থাকেন যে, তারা আলেমদের যথাযথ সম্মান করে না, আলেমদের মর্যাদা সম্পর্কে জানে না এবং তাদের ইলমের কমতি রয়েছে, ইত্যাদি।

তাই আমি আলেমদের সাথে শাইখ উসামা রহ. এর অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে এ বিষয়টা স্পষ্ট করে দিতে চাই।

তিনি যৌবনের শুরু থেকেই দ্বীনি শিক্ষার পাবন্দী করে আসছেন। ইলম অন্বেষণের জন্য বহু উলামা-মাশায়েখের ইলমী মজলিসে উপস্থিত হয়েছেন। যেহেতু শাইখ রহ. বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অবস্থায়ই জিহাদের জন্য বের হয়ে যান। এ কারণে ইলম অর্জনে পুরোপুরি সময় দিতে পারেননি। কেননা জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহর কাজে তিনি এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, এটিই ছিল তাঁর সর্বক্ষণের কাজ। কিন্তু এই ব্যস্ততাও শাইখকে ইলম অন্বেষণ এবং এর প্রচার-প্রসার থেকে বিরত রাখতে পারেনি। খুব সম্ভব আমি فرسان تحت رایة النی صلی الله علیه وسلم’এর মধ্যে আফগানিস্তানে শাইখ উসামা রহ. এর দাওয়াত ও ইলমী কার্যক্রমের উপর কিছু আলোকপাত করেছিলাম যে, কীভাবে সেখানে শাইখ ‍উসামা রহ. এ উদ্দেশ্যে ইলমের দরসসমূহ চালু করেছিলেন।

কিন্তু এখন আমি আলোচনা করবো উসামা বিন লাদেন রহ.এর সাথে উলামায়ে কেরামগণের সম্পর্কের কথা। প্রথমে জাযিরাতুল আরবের আলেমদের সাথে, এরপর আফগানিস্তানের, তারপর পাকিস্তানের আলেমদের সাথে তাঁর কেমন সম্পর্ক ছিল, তা আলোচনা করবো।

উলামায়ে কেরামগণের সাথে শাইখের কিছু সাক্ষাৎকারে আমি নিজে উপস্তিত ছিলাম। কিছু সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে স্বয়ং শাইখ আমার কাছে বলেছেন। আমার স্মরণ আছে, শাইখ আমাকে জাযিরাতুল আরবের আলেমদের সাথে সাক্ষাতের কথাও বলেছেন। শাইখ রহ. তাঁদেরকে জিহাদে বের হওয়ার এবং জিহাদের জন্য প্রস্তুতি ফরয হওয়ার মাসআলা মানুষকে জানানোর উদ্দেশ্যে ফতোয়া প্রদান করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। কেননা উম্মাহর ধ্বংসই এখন শত্রুদের মূল টার্গেট। শত্রুরা চারদিক থেকে উম্মাহকে ঘিরে ধরেছে। ইসলামের ভূখন্ডগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করেছে। আর স্পেনের পরাজয়ের পর থেকেই উম্মাহর উপর জিহাদ ফরযে আইন হয়ে আছে। এই সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে শাইখ আলেমদের উদ্দেশ্যে বলতেন, তাঁরা যেন উম্মাহর সামনে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ফতওয়া প্রদান করেন।

এই বিষয়ে শাইখ উসামা রহ. আমাকে মুহাম্মাদ ইবনে উসাইমিন রহ. এর সাথে সাক্ষাতের কথা বলেছেন। এটাও এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, শাইখ উসাইমিন শাইখ উসামা বিন লাদেনকে টেপ-রেকর্ডারের মাধ্যমে বিশেষ প্রশংসাসূচক সনদ প্রদান করেন। এমনকি তিনি এ ব্যাপারে ঘোষণাও দেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলের উপর রহম করুন। যাই হোক, শাইখ আমাকে বললেন, আমি শাইখ উসাইমিনকে অনুরোধ করলাম, “শীর্ষ আলেমদের কাউন্সিল থেকে এই ফতওয়া প্রদান করা জরুরী যে, জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা মুসলমানদের উপর ফরয।” এরপর শাইখ উসাইমিন রহ. স্পষ্টভাবেই তাঁকে এ কথা বলেছিলেন, আমরা শীর্ষ উলামা কাউন্সিল থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো ফতওয়া দিতে পারি না; যতক্ষণ না আমরা উপর থেকে অনুমতি পাই। অর্থাৎ বাদশাহর কাছ থেকে অনুমতি আসে। তখন শাইখ উসামা রহ. আসল বিষয়টি বুঝে নিলেন।

এমনিভাবে উলামায়ে সাহওয়াহর সাথে শাইখ উসামা রহ. এর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তারা ঐ সকল যুবক আলেম; যারা ‘সাহওয়াতুল ইসলামীয়া’র আন্দোলনকে জাযিরাতুল আরবে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। শাইখ উসামা রহ. এদের নিয়ে অনেক আশা পোষণ করতেন। বিশেষ করে খালিজের প্রথম যুদ্ধের পর।

শাইখ তাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করার জন্য বলতেন। তিনি তাদেরকে বলতেন, দাওয়াত ও জিহাদের জন্য হিজরত খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটা নবীগণ, সালেহীন ও তাদের অনুসারীদের সুন্নতও বটে। শাইখ তাদেরকে বলতেন, সরকার আপনাদেরকে ছাড়বে না, তারা অবশ্যই আপনাদেরকে রুখে দিবে। শক্তি বলে আপনাদের মুখ বন্ধ করে দিবে। এই জন্য আপনাদের উপর আবশ্যক যে, আপনাদের মাঝ থেকে কিছু আলেমকে হিজরতের জন্য প্রস্তুত করবেন। যখন দেশের অভ্যন্তরে আপনাদের উপর জোর-জবরদস্তি করা হবে, তখন বাহির থেকে তো এমন কেউ থাকা দরকার; যারা আপনাদের পক্ষ হয়ে কথা বলবে। শাইখ উসামা রহ. বলতেন, আমি তাদের উপর অনেক মেহনত করেছি। আমার এখনো শাইখের ঐ কথা মনে আছে, যা তিনি আমাকে ও ভাইদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘জাযিরাতুল আরবের এমন কোনো আলেম নেই, যাকে আমি হিজরতের দাওয়াত দেইনি। চাই আপনারা তাকে চিনেন অথবা না চিনেন। উত্তরে তারা বিভিন্ন ধরনের ওযর পেশ করতেন।’ তারপরও শাইখ তাদেরকে নিজের দূরদৃষ্টি দ্বারা সাবধান করতে থাকেন। আর বাস্তবেও তাই ঘটেছে; যে রকম শাইখ বলেছিলেন। তিনি ঐ সকল আলেমদেরকে বলেছিলেন, অচিরেই আপনাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। আপনাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। আপনাদেরকে জেলখানায় বন্দী করে রাখা হবে। সবশেষে শাইখ আমাকে বলেছিলেন যে, তখন তাদের থেকে একজন বলেছিল, হে উসামা! যদি আমাদের উপর ভেতর থেকে কোনো বিপদ এসে যায়; তবে বাহির থেকে আমাদের পক্ষে বলার জন্য আপনি তো আছেনই। কার্যত শাইখের দূরদৃষ্টি দ্বারা যেমনটা আশংকা করেছিলেন, বাস্তবে তেমনি হয়েছিল। আপনারা সকলেই তা অবগত আছেন, কীভাবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে! কীভাবে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে! আর এই কাজ পর্যায়ক্রমে চার বছর বা তার চেয়ে বেশি কিছু সময় ধরে চলেছিল। এ সময়েও শাইখ তাদের নাম শুনে তাদের সম্পর্কে বলতেন এবং তাদের উপর আপতিত নির্যাতনের কথা আলোচনা করতেন। এরপর এক পর্যায়ে সরকার তাদেরকে ছাড়তে শুরু করে।

আমার স্মরণ আছে, যখন আমি জানতে পারলাম, তাদের মধ্য থেকে একজন প্রসিদ্ধ আলেমকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তখন আমি শাইখের কাছে তার কথা বললাম। কিন্তু শাইখ আমার আগেই এ বিষয়ে আরো সবিস্তারে জানতেন। আমি খুশি খুশি শাইখের সামনে আসলাম। আর তাকে বললাম, আলহামদু লিল্লাহ! অমুক শাইখকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, ওনার থেকে অনেক কল্যাণের  আশা করা যায়। শাইখ প্রথমে চুপ ছিলেন। তারপর আমাকে বললেন, আসলে আপনি একটি কথা জানেন না। আমি বললাম, আল্লাহ আমাদের ভালো করুন। কী হয়েছে? শাইখ বললেন, এই লোকটি সম্পর্কে আমি ভাইদের সামনে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না। আমি বললাম, কোনো সমস্যা নেই। পরে শাইখ বলেছিলেন, ওই ব্যক্তিকে সরকার নিজের পক্ষের লোক বানিয়ে নিয়েছে। আর সে যখন বের হয়, তখন মুহাম্মাদ নায়েফের প্রশংসা করতে করতে বের হয়েছিল। আমি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’পড়লাম। শাইখ বলতে থাকলেন, আপনার কী জানা নেই, জেলের মধ্যে কী হয়? সরকার জেলকে সুসজ্জিত করে রেখেছে। আরাম,আয়েশের জায়গা বানিয়ে দিয়েছে। যার ফলে এ রকম অনেক লোক বদলে গেছে। আমি অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লাম। শাইখ বললেন, হ্যাঁ, এ রকমই!

অধিক আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে, এ ধরনেরই একজন ব্যক্তি; যিনি নিয়মিত টেলিভিশনের প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়ে থাকেন। একটি প্রোগ্রামে শেষ পর্যন্ত সে এটাও বলেছে, “আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে উসামা বিন লাদেন থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করছি।”আমি অস্থির হয়ে বললাম, সুবহানাল্লাহ! এটা কী রকম কথা! ভাই আমার, আমার কাছে দু‘আ করার চেয়ে অধিক কী সম্বল আছে! আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য এই দুআ করি, তিনি আপনাকে উত্তমভাবে সত্যের পথে প্রত্যাবর্তন করান।  আর আপনাকে এমন শাহাদাত দান করুন, যেমন শাহাদাত আল্লাহ উসামা বিন লাদেন রহ.কে দান করেছিলেন।

এমনিভাবে নিজেকে দায়ী দাবীকারী আরেক ব্যক্তি টেলিভিশনের পর্দায় এসে বলতে লাগলো, উসামা বিন লাদেন সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট একজন মানুষ। টেলিভিশনের পর্দায় শাইখকে উদ্দেশ্য করে বলা হলো, আপনি স্পষ্ট বিপদগামী মানুষ! সুবহানাল্লাহ! উসামা বিন লাদেন সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট মানুষ! আর হুসনে মোবারাক ও আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয হলো আমীরুল মু’মিনীন! কতই না নিকৃষ্ট বিচার তাদের! আমি তাদের উদ্দেশ্যে এ দু‘আ করব, হে আমার ভাই! আল্লাহ আপনাকে উত্তমভাবে সত্যের পথে প্রত্যাবর্তন করান। আর আপনানাকে এমন শাহাদাত দান করুন, যেমন শাহাদাত আল্লাহ তা‘আলা উসামা বিন লাদেন রহ. অথবা আবু দুজানা খুরাসানী রহ.কে দান করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা সকল মুসলমান শহীদদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। এগুলো ছিল শাইখের সাথে জাযিরাতুল আরবের আলেমদের সাথে ঘটমান কিছু ঘটনা।

অনুরূপভাবে শাইখ উসামা রহ. এর আফগানিস্তানের আলেমগণের সাথে; বিশেষ করে মুজাহিদ আলেমদের সাথে মজবুত সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। আফগানিস্তানে আল্লাহ তা`আলার অন্যতম একটি নিদর্শন হচ্ছে, সেখানে অনেক আলেম রয়েছেন; বিশেষ করে মুজাহিদ আলেম। যখন আফগান আলেমদের সাথে শাইখ রহ. এর সম্পর্কের কথা আসবে, তখন শাইখ ইউনুস খালিসের কথা সর্বাগ্রে আসবে। যিনি একজন আলেম ছিলেন, আবার একজন মুজাহিদও ছিলেন। অন্যদিকে শাইখ ইউনুস খালিসের সাথে শাইখ উসামা বিন লাদেনের সম্পর্ক অনেক দিনের। আমরা এর একটা উদাহরণ দেখি, যখন সুদানের সরকার শাইখ উসামা বিন লাদেনকে সুদান ছেড়ে যেতে বলেন, তখন ইউনুস খালিস রহ. তাঁকে জালালাবাদে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁকে তাঁর প্রাপ্য প্রতিদান দান করুন। সুদান সরকারের না-শোকরীর আলোচনা আলাদা শিরোনামে বর্ণনা করবো, ইনশা আল্লাহ।

যাই হোক, শাইখ ইউনুস খালিস উসামা বিন লাদেনকে অভ্যর্থনা জানান অত্যন্ত মর্যাদার সাথে এবং তাঁর অনেক খেদমত করেন। আমার মনে আছে, একবার যখন শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. শাইখ ইউনুস খালিস রহ. এর কাছে আসেন, তখন তাঁকে বলেন, আপনার অনুমতি হলে আমি চাচ্ছিলাম, মিডিয়াতে আপনাকে নিয়ে কিছু কথা বলবো। তখন শাইখ ইউনুস খালিস রহ. বললেন, শাইখ! এতে আমার অনুমতি নেয়ার কি আছে? যদি জিহাদে এর কোনো প্রয়োজন থাকে; তবে নিঃশঙ্কোচে আপনি তাই করুন। আমার কাছ থেকে আপনার অনুমতি নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

এমনিভাবে শাইখ উসামা রহ. আমাদেরকে বলেছেন, একবার পাকিস্তানে ইউনুস খালিসের কাছে একজন সৌদি দূত এসেছিল। সে তাঁকে বলল, আপনি উসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছেন! আপনার কী জানা নেই, সে কত ভয়ঙ্কর মানুষ! সে রাষ্ট্রদ্রোহিতায় লিপ্ত। এ রকম আরো কথাবার্তা বলে ঐ সৌদি দূত তাঁর কান ঝালাপালা করে দেয়। শাইখ ইউনুস খালিস রহ. ঐ সৌদি দূতের কথার জবাবে বলেন, “হে আমার ভাই! যদি হারামাইনের ভূমি থেকে একটা জানোয়ারও আমাদের কাছে আসে; তবে আমরা তাকেও আশ্রয় দিতাম। তো এটা কীভাবে সম্ভব যে, আমরা মুজাহিদদের আশ্রয় দেবো না?” তাঁর এই দাঁতভাঙা জবাবের পর সে সৌদি দূত খালি হাতে নাকাম হয়ে ফিরে যায়। আলহামদুলিল্লাহ।

শাইখ ইউনুস খালিস রহ. এর সাথে শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর উত্তম আচরণ সর্বদাই অটুট ছিল। তিনি সব সময় শাইখকে উত্তম নসীহত করতেন। শাইখ উসামা রহ. জালালাবাদ থেকে কান্দাহারে স্থানান্তরিত হওয়ার পর একবার জালালাবাদে আসেন। তখন তিনি শাইখ ইউনুস খালিস রহ. এর সাথে সাক্ষাৎ করতে তাঁর কাছে যান। সে সফরে আমিও ছিলাম তাঁর সাথে। তখন শাইখ ইউনুস খালিস রহ. তাঁকে নসীহত করে বলেন, “হে উসামা! একটু সাবধানে থাকবেন; কেননা টাকা-পয়সার পূজারী লোকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সুতরাং যাতায়াতের সময় সাবধানে থাকবেন। বিশ্বস্ত লোক ছাড়া অপর কোনো লোকের উপর ভরসা করবেন না।”শাইখ ইউনুস খালিস রহ. এর এই নসীহত আমার এখনো মনে আছে।

অতঃপর যখন আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের হামলা শুরু হয়। তখন শাইখ ইউনুস খালিস রহ. এতই অসুস্থ ছিলেন, যেন প্রায় অক্ষম অবস্থা। তাঁর রানের হাঁড় ভাঙা ছিল। স্বাস্থ্য ছিল খুবই করুণ; কিন্তু অসুস্থতা সত্ত্বেও তাঁর হৃদয় ঈমান ও জিহাদের জযবাতে পূর্ণ ছিল। তিনি একটি ভিডিও বয়ানও জারী করেন। যে বয়ানে আফগান কওম আর উম্মাতে মুসলিমাহকে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আহবান করেন। যে আমেরিকা আফগানিস্তানে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য হামলা চালিয়েছে। আল্লাহ তা`আলা তাঁদের উপর, মুসলিম উলামায়ে কেরামের উপর রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)

এমনিভাবে শাইখ উসামা রহ. এর সাথে সম্পৃক্ত মুজাহিদীন আলেমদের মাঝে একজন হলেন ‘শাইখ জালালুদ্দীন হক্কানী। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন। তাঁকে ইসলাম ও জিহাদের জন্য কবুল করুন। একদম জিহাদ শুরুর প্রাথমিক সময় থেকে নিয়ে তাঁর সাথে শাইখের অনেক দিনের সম্পর্ক বিদ্যমান। শাইখ উসামা রহ. তাঁর সাথে খোস্ত বিজয়, কাবুল বিজয়, জাওয়ারের যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতেও শরিক ছিলেন। আমার মনে পড়ে যখন আমাদের ভাই মুস্তফা আবুল ইয়াজীদ রহ. শহীদ হলেন। তখন শাইখ জালালুদ্দীন হক্কানী শাইখ উসামা বিন লাদেন ও আমার নামে চিঠি প্রেরণ করেন। আমার আরো মনে পড়ে, তিনি শাইখ উসামা রহ.কে উদ্দেশ্য করে এভাবে সম্বোধন করে লিখেন, “আমার প্রিয়তম মুজাহিদ ভাই উসামা বিন লাদেনের নিকট।” আল্লাহ তা‘আলা শাইখ উসামা রহ.কে আপন রহমতের চাদরে ঢেকে রাখুন।(আমীন)

এমনিভাবে আফগানিস্তানের যে সকল আলেমের সাথে শাইখের মজবুত সম্পর্ক ছিল; তাঁদের একজন ‘মৌলভী আব্দুল্লাহ জাকিরী। তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেমন পরিচিত নন; তবে আফগানিস্তানে সুপরিচিত ছিলেন। মৌলভী আব্দুল্লাহ জাকিরী ‘ইত্তেহাদে উলামা’এর প্রধান ছিলেন। আফগানিস্তানে তাঁর অনেক খ্যাতি ছিল। তাঁর প্রতি মানুষের হৃদয়ে ছিল অনেক সম্মান। তিনি ‘জাকের’নামক গ্রামের অধিবাসী। যা কান্দাহারে আরব পল্লীর কাছেই ছিল। যে সম্পর্কে আমি আগে বলেছিলাম, এটা ছিল একদমই সাধারণ গ্রাম।

আর শাইখের বাড়িও ছিল একেবারে সাদাসিধে। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে তাঁর প্রতি অনেক সম্মান ছিল। শাইখ উসামা বিন লাদেন অধিকাংশ সময় তাঁর কাছে যেতেন। একবার আমিও তাঁর সাথে গেলাম। শাইখ তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ ও নসীহত চাইতেন। আর শাইখ আব্দুল্লাহ জাকিরীও নসীহত প্রদান করতে কোনরূপ কার্পণ্য করতেন না। মাশাআল্লাহ, শাইখ আব্দুল্লাহ অনেক হিম্মতের অধিকারী ছিলেন। এমনিভাবে তেজোদ্দীপ্ততা ও বিচক্ষণতারও অধিকারী ছিলেন। জাযিরাতুল আরবে খ্রিস্টান ক্রসেডার বাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বয়ান প্রচার করেছিলেন। এমনিভাবে সেখানে অনেক আফগানিস্তানের আলেম-উলামাদের স্বাক্ষরও একত্রিত করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করি- তিনি যেন তাঁর মঙ্গল করেন। তাঁকে ইহকাল ও পরকালে আপন রহমতের ছায়ায় রাখেন।(আমীন)

এমনিভাবে আফগানিস্তানের আলেমদের সাথে শাইখের সম্পর্কের কথা আসলে যার কথা মনে পড়ে যায়, তিনি হলেন ‘শাইখ ইয়াসির রহ.’। আল্লাহ তাঁর উপর অগণিত রহমত বর্ষণ করুন। আমি ব্যাপকভাবে সকল মুসলমানের কাছে, আর বিশেষ করে শাইখ ইয়াসিরের পরিবারের কাছে শাইখের মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছি। শাইখ ইয়াসির রহ. পাকিস্তানের গোয়েন্দাদের কাছে বন্দী ছিলেন। আর এভাবেই এক সময় তাঁর মৃত্যুর খবর আসে। যদিও পাকিস্তানি গোয়েন্দাসংস্থা পুরো জোর দিয়েছিল, যেন এই খবর বাহিরে না যায়। কিন্তু তারপরও এই খবরটি প্রকাশ হয়ে যায়। এখনও জানা যায়নি, তাঁর মৃত্যুর আসল কারণ কি? তাঁকে কি হত্যা করা হয়েছে? তাঁকে কি এমনি অযত্নে-অবহেলায় ফেলে রাখা হয়েছে নাকি তাঁর চিকিৎসার প্রতি খেয়াল রাখা হয়নি? পাকিস্তানি গোয়েন্দাসংস্থা যা কিছুই করে থাকুক এবং যে অপরাধই তারা করেছে, তা অচিরেই প্রকাশ হয়ে যাবে। কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাসে এটা একটা কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। এমনিভাবে পাকিস্তানিদের ইতিহাসও কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। পাকিস্তানি সরকার ও তার গোয়েন্দাসংস্থাগুলো যা কিছু করেছে, তা এমন বিশ্বাসঘাতকতা, যার দৃষ্টান্ত মুসলমানদের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। তারা এই বিশ্বাসঘাতকতা শুধু এ কারণে করেছিল যে, এর মাধ্যমে তারা অল্প কিছু টাকা-পয়সা দ্বারা নিজেদের পকেট পূর্ণ করবে। আল্লাহর হুকুমে এ সকল টাকা-পয়সা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ ﴿يونس: ٨١﴾

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুস্কর্মীদের কর্মকে সুষ্ঠুতা দান করেন না।”(সূরা ইউনুস : ৮১)

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ ﴿الأنفال: ٣٦﴾

“নিঃসন্দেহে যেসব লোক কাফের, তারা ব্যয় করে নিজেদের ধন-সম্পদ, যাতে করে বাধাদান করতে পারে আল্লাহর পথে। বস্তুতঃ এখন তারা আরো ব্যয় করবে। তারপর তাই তাদের জন্য আক্ষেপের কারণ হয়ে এবং শেষ পর্যন্ত তারা হেরে যাবে। আর যারা কাফের তাদেরকে দোযখের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।” (সূরা আনফাল : ৩৬)

শাইখ ইয়াসির রহ. (আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করুন) পাকিস্তানের জেলে শহীদ হন। মূলতঃ পাকিস্তানের জেলে যে রকম ট্রাজেডি ও ন্যাক্কারজনক কাজ হয়; তা বাচ্চাদেরকে বুড়ো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এমনিভাবে পাকিস্তানের জেলে শহীদ হন মোল্লা উবায়দুল্লাহ রহ.। যিনি ইমারাতে ইসলামীয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। পাকিস্তানের এজেন্সীগুলো তাঁর মৃত্যুর খবরও গোপন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা তাঁর ব্যাপারটিও গোপন রাখতে পারেনি। অপরদিকে শাহাদাতের এত বছর পরেও এখনো তাঁর লাশ তাঁর পরিবারের কাছে সোপর্দ করা হয়নি।

পাকিস্তানের জেলে বন্দীদের হত্যা করা, এখন একটি সাধারণ ব্যাপার মাত্র। হাজারো, লাখো মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। আরো বেশিও হতে পারে। কারণ, আসল সংখ্যা আমাদের কারো জানা নেই। পাকিস্তানি এজেন্সিগুলো তাদেরকে মারার পর লাশগুলো রাস্তার উপর ফেলে রাখে। আপনারা যারা পাকিস্তানের সংবাদপত্র নিয়মিত পড়ে থাকেন, তারা ইন্টারনেটে শেয়ারকৃত সেই ভিডিওটি দেখে থাকবেন যে, সেনাবাহিনী কর্তৃক সওয়াতের একদল মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। এভাবেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মানুষদেরকে হত্যা করে থাকে। যার দরুন এক পর্যায়ে প্রতারক আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত এ বিষয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়; যারা স্বয়ং এই ধরনের হত্যাকান্ডের নির্দেশাবলী দিয়ে থাকে!

যাই হোক, আমরা শাইখ ইয়াসির রহ.কে নিয়ে আলোচনা করতেছিলাম। তিনি শাইখ উসামা রহ. এর অন্তরঙ্গ বন্ধুদের মাঝে অন্যতম একজন ছিলেন। তাঁদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় থেকে চলে আসছিল। যেমনটি আমি আমার কিতাব ‘তাবরিয়া’তে শাইখ ইয়াসির রহ. সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলাম। তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের প্রথম পর্যায়ের মুজাহিদ নেতাদের একজন। তিনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। যখন জিহাদ শুরু হল, তখন তিনি পাকিস্তানে হিজরত করলেন। অতঃপর জামিয়া ইসলামীয়া মদীনা মুনাওয়ারায় অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তারপর তিনি মুজাহিদদের কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। এমনিভাবে তিনি কাবুলে মুজাহিদদের কায়েম করা রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে যখন তিনি এখানে বিশৃঙ্খলা দেখলেন, তখন তাদের থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। পুনরায় দাওয়াত ও অধ্যাপনায় প্রবৃত্ত হলেন। অতঃপর যখন ‘ইমারাতে ইসলামীয়া’র শাসন প্রতিষ্ঠা হলো। তিনি ছিলেন তাঁদের সাহায্যকারীদের মধ্যে অন্যতম। এরপর যখন আফগানে খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের হামলার আলামত দেখা যাচ্ছিল, তখন তিনি বৃদ্ধাবস্থার কাছাকাছি; সম্ভবত তাঁর বয়স হয়েছিল, প্রায় পঞ্চাশ বছর। তারপরেও তিনি আফগানিস্তানে আসেন। আমার মনে পড়ে, তিনি তোরাবোরায় আমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন। এজন্য তোরাবোরা পাহাড়ের বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়েছিলেন। অথচ তখনো আমেরিকার বোমা বর্ষণের শব্দ শোনা যায়নি। আসার পর শাইখ উসামা রহ.এর সাথে দীর্ঘক্ষণ বসেছিলেন। আমার মনে পড়ে সেই সময় তিনি শাইখ উসামা রহ.কে বলেছিলেন, “আমার আশা ছিল; আমি যেন বায়তুল মাকদিসে শহীদ হই। কিন্তু যখন আফগানিস্তানের জিহাদ শেষ হয়ে গেল, অথচ তখনো আমি বায়তুল মাকদিস পৌঁছাতে পারলাম না; তাই আশাহত হয়ে গিয়েছিলাম। কেননা, আমার আশা পূর্ণ হলো না। এখন যেহেতু খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের হামলা শুরু হওয়ার পথে, তো হতে পারে, এবার আমার বায়তুল মাকদিসে শহীদ হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হবে।” আল্লাহর কাছে দুআ করছি, তিনি যেন শাইখকে শহীদদের সওয়াব ও মর্যাদা দান করেন। এমনিভাবে আমার আরো মনে পড়ে তিনি শাইখ উসামা রহ.কে বলেছিলেন, “আমি পাকিস্তানে অবস্থান করছিলাম। সেখানে তাদরীসের দায়িত্ব পালন করছিলাম। কিন্তু এখন আফগানিস্তানে মুজাহিদদের মাঝে থাকার জায়গা ব্যতীত আর কোথাও থাকার জায়গা নেই।”

শাইখ উসামা রহ. তাঁকে অনেক আমলী নসীহত করেন। সুযোগ হলে পরে তা প্রকাশ করবো, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা শাইখ উসামাকে জিহাদের ক্ষেত্রে অনেক দূরদৃষ্টি দান করেছিলেন। শাইখ তাঁকে বললেন, এই অবস্থায় আপনি আপনার প্রচেষ্টা মিডিয়ার কাজে লাগান; কেননা আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে ইলমে দ্বীন ও দাওয়াতের ধরন সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। অতএব, আপনি মিডিয়ার ক্ষেত্রে অগ্রসর হোন। এরপর শাইখ মুহাম্মাদ ইয়াসির রহ. টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেয়া শুরু করেন এবং বিভিন্ন বয়ান প্রচার করতে লাগলেন। পরবর্তীতে যখন আমেরিকা আফগানিস্তানে প্রবেশ করল, তখন তিনি তাঁর হিজরতের স্থল পাকিস্তান থেকে মিডিয়ার কাজে বিরাট ভূমিকা রাখেন। যারা আফগানিস্তানের খবর রাখেন, তাদের আল-জাযিরাতে দেয়া শাইখ ইয়াসির রহ. এর সাক্ষাৎকারের কথা নিশ্চয়ই স্মরণ আছে।

আর যারা শাইখকে আত্মগোপনে থাকার ও ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিতেন, শাইখ তাদেরকে বলতেন-

“আমার দিক বিবেচনায় এই মিডিয়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা, তা ইস্তেশহাদী/ফিদায়ী আমলের অনুরূপ-ই। তাই আমি নিজেকে ইস্তেশহাদী তথা উৎসর্গিত মনে করি। কেননা আমি আর এমন কাউকে দেখছি না, যে এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবে, এ কাজের শূণ্যতা পূরণ করতে পারবে। সুতরাং এ কাজে থাকা অবস্থায় যদি আমাকে শহীদ করে দেয়া হয় অথবা বন্দী করে ফেলা হয়; তাহলে তা আমার জন্য ফিদায়ী আমল হিসাবেই পরিগণিত হবে।”

তাঁকে প্রথমে কাবুলে গ্রেফতার করা হয়। অতঃপর তাঁকে কাবুল প্রশাসন ও মুজাহিদীনের মাঝে বন্দী বিনিময়ের চুক্তিতে মুক্ত করা হয়। মুক্তির পর সাথে সাথে তিনি পুনরায় দাওয়াতের ময়দানে তৎপরপরতা চালাতে শুরু করলেন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মুজাহিদীনের মাঝে তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রমের ব্যাপক তৎপরতা বিদ্যমান ছিল। এরপর তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। আল্লাহর কাছে দু‘আ করছি- তিনি যেন তাঁর উপর রহম করেন। আমাদেরকে তাঁর সাথে কল্যাণের সাথে একত্রিত করেন। (আমীন)

এমনিভাবে পাকিস্তানের আলেমদের সাথে শাইখ উসামা রহ. এর সম্পর্ক ছিল খুবই গভীর। আমি প্রথমেই বলেছিলাম, তিনি যখন কান্দাহারে ছিলেন, তাঁর কাছে পাকিস্তান থেকে আলেমদের অনেক প্রতিনিধি দল আসত। এ সকল আলেমদের নামের মাঝে একটি উজ্জ্বল নাম হলো ‘মুফতী নিযামুদ্দীন শামযাঈ রহ.’। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের অত্যন্ত বিখ্যাত একজন আলেম। তিনিও শাইখ উসামার অন্তরঙ্গ মুহিব্বীনদের মাঝে অন্যতম একজন ছিলেন। তিনি যখনই আফগানিস্তানে আসতেন, শাইখ উসামার সাথে অবশ্যই সাক্ষাত করতেন। তাঁর সাহচর্য গ্রহন করতেন, নসীহত গ্রহন করতেন, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সাথে শলা-পরামর্শ করতেন। আমার মনে আছে, এ রকম এক সাক্ষাতে যখন তাঁর সাথে আমার দেখা হলো। আমি তাঁর কাছে মিসরের চলমান অবস্থা উল্লেখ করলাম। মাশাআল্লাহ, তিনি চলমান ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। মুসলমানদের অবস্থা জানার চেষ্টায় খুবই উদগ্রীব ছিলেন। আমি এই সময় তাঁকে মিশর সম্পর্কে আমার লিখিত বই ‘মিসরুল মুসলিমাহ বাইনা সিয়াতিল জাল্লাদীন ও আম্মালাতিল খায়িনীন’উপহার দিলাম। তিনি আমার কাছে মিসর সম্পর্কে আরো অধিক তথ্য জানতে চাচ্ছিলেন। আমার আরো মনে পড়ে আমি তাঁর কাছে এ সম্পর্কিত কিছু বই ও প্রকাশনা পাঠিয়েছিলাম। কান্দাহারে শাইখ উসামা বিন লাদেনের সাথে শেষ সাক্ষাতের সময় তাঁর সাথে তাঁর কিছু সঙ্গী-সাথীও ছিল। তাঁরা আফগানিস্তান সফরে এসেছিলেন। এ সাক্ষাতের কথা আমার ভালো করে মনে আছে, মাওলানা শামযাঈ রহ. তাঁদেরকে উসামা বিন লাদেনের কাছে নিয়ে গেলেন। আর তাঁকে বললেন, এই ভাইদেরকে পথ দেখান। তাঁদেরকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের কাজ করার জন্য উৎসাহ দিন।

শাইখ নিযামুদ্দীন শামযাঈ রহ. সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে আমি ভুলে গেছি। একবার শাইখ নিযামুদ্দীন শামযাঈ রহ. শাইখ উসামা রহ. এর সাথে সাক্ষাত করতে আসলেন। সেই সময় শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. মুসলিম উম্মাহর উপর পশ্চিমা খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের জুলুম, সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলেন। এ বিষয়ে শাইখ উসামা রহ মেহমানখানার দেয়ালে একটি বড় মানচিত্র এঁকে রেখেছিলেন। পাশাপাশি শাইখ আবু হাফস রহ., যিনি আবু হাফস কুমান্দান নামে খ্যাত ছিলেন। (এই বীরও ইতিমধ্যে শহীদ হয়ে গেছেন।) তো তিনি এই মানচিত্রের আলোকে ইসলামী বিশ্বের উপর খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের দখলদারিত্বের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করলেন। কীভাবে পশ্চিমা ক্রসেডাররা মুসলিম বিশ্বের উপর তাদের আইন-কানুন, ষড়যন্ত্র ও সেনাবাহিনী দ্বারা দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করছে! কীভাবে তারা মুসলিম বিশ্বেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং শ্বাসরুদ্ধ করে রেখেছে। কিভাবে পশ্চিমা ক্রসেডাররা গুরুত্বপূর্ণ জল, স্থল ও আকাশ পথগুলো দখল করে রেখেছে! এই আলোচনা শাইখ শামযাঈ রহ.এর উপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরে যখন তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে ফিরে গেলেন। তখন তিনি ইসলামাবাদের একটি হোটেলে এই ধরনের একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেন। আর উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে ইসলামী বিশ্বের একটি মানচিত্র দ্বারা এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে আলোচনা করে বুঝিয়ে বলেন। পরে যখন তিনি দ্বিতীয়বার শাইখ উসামার সাথে মিলিত হোন। তখন তিনি শাইখকে জানালেন, আমি ইসলামাবাদে ফিরে গিয়ে সেই একই লেকচার দিয়ে এসেছি; যা কান্দাহারে আপনারা আমাকে দিয়েছিলেন।

যখন আফগানিস্তানে আমেরিকা হামলা করল। এতে আজকের আবু রিগাল বিশ্বাসঘাতক পারভেজ মোশাররফও অংশগ্রহন করল। সে আফগানিস্তানে আমেরিকার দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বদিক থেকে সাহায্য করল। তখন শাইখ নিযামুদ্দীন শামযাঈ রহ. এর বিরুদ্ধে তাঁর বিখ্যাত ফতওয়া জারি করেন, ‘‘যে শাসকই মুসলমানদের ভূমি দখল করার ক্ষেত্রে কোনো কাফেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, তাহলে সে তার দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।”

এ ফতওয়া দেয়ার কিছুদিনের মাঝেই শাইখ নিযামুদ্দীন শামযাঈ রহ. কে করাচিতে একটি এনকাউন্টারে শহীদ করে দেয়া হয়। আর হত্যাকারী পলায়ন করে। শাইখ উসামা রহ. তাঁর কোন এক কথা প্রসঙ্গে বলেন, “নিযামুদ্দীন শামযাঈকে হত্যা করার সম্ভাব্য কারণ হলো, মোশাররফের বিরুদ্ধে দেয়া তাঁর প্রচারিত ফতওয়াটি।” আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আমাদেরকেও তাঁদের সাথে জান্নাতুল ফিরদাউসের উঁচু মাকামে একত্রিত করুন। (আমীন)

এমনিভাবে পাকিস্তানের আলেমদের মধ্যে যাদের সাথে উসামা রহ. এর সম্পর্ক ছিল; তাঁদের মাঝে একজন হলেন ‘শাইখ আব্দুল্লাহ গাজী রহ.।’যিনি ইসলামাবাদে শহীদে লাল মাসজিদ আব্দুর রশীদ গাজী রহ. এর সম্মানিত পিতা ছিলেন। শহীদ আব্দুর রশীদ রহ. এর পরম সৌভাগ্য, তাঁর পরিবারে শুধু তিনি একা শহীদ নন; বরং তিনি শহীদ বাবা ও শহীদা মায়ের সন্তান। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলের উপর রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)

শাইখ আব্দুল্লাহ গাজী রহ. তাঁর মাদরাসার উসতায ও সঙ্গীদের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে কান্দাহারে  আমাদের সাথে সাক্ষাত করতে আসেন। তখন তাঁর সাথে শহীদে লাল মাসজিদ আব্দুর রশীদ গাজী রহ.ও ছিলেন। তাঁরা আমাদের সাথে পুরো একদিন কাটান। প্রতিনিধি দলের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত এক সাথী আমাদের সামনে শাইখ উসামাকে নিয়ে আরবীতে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। কিন্তু আফসোস! কবিতাটি আমার এখন স্মরণ নেই। শাইখ আব্দুল্লাহ গাজীর সাথে এ সাক্ষাৎকার খুবই সুখময় ছিল। শাইখ উসামা রহ. তাঁর সাথে বিস্তারিত কথাবার্তা বলেন। আর তাঁকে বললেন, তিনি যেন পাকিস্তানের আলেমদেরকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন, যেন তাঁরা মুসলমানদের ভূমিতে বিশেষ করে হারামাইনের ভূমিতে খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের হামলার বিরুদ্ধে ফতওয়া প্রদান করেন। শাইখ আব্দুল্লাহ গাজী শাইখ উসামার কাছে ওয়াদা করেন, ইনশা আল্লাহ, যখন তিনি ফিরে যাবেন, তখন এ বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। আলেমদের থেকে ফতওয়া সংগ্রহ করবেন ও তাঁদেরকে উৎসাহিতও করবেন।

আমার আরো মনে পড়ে যে, শাইখ আব্দুল্লাহ গাজী এবং শাইখ আব্দুর রশীদ গাজীর সাথে আমারও একবার সাক্ষাত হয়। তখন আমি তাঁদের সামনে মিশরের অবস্থা সম্পর্কে কিছু বর্ণনা দিয়েছিলাম। তাঁদেরকে কিছু বইও হাদিয়া দিয়েছিলাম। যখন শাইখ আব্দুল্লাহ গাজী ইসলামাবাদ ফিরে যান। তখন তিনি নিজের মাসজিদে প্রথম যে খুতবা দেন; তা আফগানিস্তানের অবস্থা এবং মুসলমানদের দেশসমূহে ক্রসেডার খ্রিস্টানদের হামলা ও এ সমস্ত ক্রসেডীয় হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্পর্কে ছিল। এমনিভাবে তিনি শাইখ উসামা বিন লাদেনের সাথে সাক্ষাতের কথাও বলেন। তাঁর দাওয়াতের সাথে একত্বতা ও তাঁর কাজে সাহায্য করার ঘোষণাও দিলেন। এরপর শাইখ আব্দুল্লাহ গাজী রহ. কে তাঁর নিজ মাদরাসার অভ্যন্তরে-ই শহীদ করে দেওয়া হয়। তাঁর ছেলে শহীদ আব্দুর রশীদ গাজী রহ. এক সাংবাদিকের নিকট সাক্ষাৎকারের সময় স্পষ্টতার সাথে এ কথাও বলেছিলেন যে, আমার ধারণা শাইখ উসামা বিন লাদেনের দাওয়াতে মুসলমানদের ভূমি মুক্ত করার আহ্বানে সাড়া প্রদানের কারণেই তাঁর বাবাকে শহীদ করা হয়। আর এর কিছুদিন পরেই জুলুম, ফাসাদ ও মোশাররফের স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে শহীদে লাল মাসজিদ আব্দুর রশীদ গাজী রহ.কেও শহীদ করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের সকলের উপর রহমত বর্ষণ করুন। (আমীন)

এখানে এ কথারও উল্লেখ করা দরকার, যা আমি পূর্বে উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। তা হলো: কান্দাহারে শাইখ উসামা বিন লাদেনের সাথে সাক্ষাত করার জন্য পাকিস্তানের যত উলামায়ে কেরামের প্রতিনিধি দলই এসেছিল, তাদের মধ্যে অধিকাংশ দলই শাইখের কাছে নসীহত চাইতেন। তখন শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. সর্বদা পাকিস্তানের উলামায়ে কেরামকে এবং পাকিস্তানে ইসলামের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক প্রত্যেক মুসলমানকে একটা নসীহতই করতেন, তা হলো: “ইমারাতে ইসলামীয়া আফগানিস্তানের পরিপূর্ণ সাহায্য করুন। ইমারাতে ইসলামীয়া আফগানিস্তানকে শক্তিশালী করুন।” তাঁরা শাইখ উসামার কাছে পাকিস্তানে কাজ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেন যে, কিভাবে পাকিস্তানে কার্যক্রম চালানো উচিত? উত্তরে শাইখ তাঁদেরকে বলতেন, “আপনারা ইমারাতে ইসলামীয়া আফগানিস্তানকে শক্তিশারী করার জন্য কাজ করুন। যখন আফগানিস্তানে ইমারাতে ইসলামীয়া প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহর ইচ্ছায় সমগ্র ইসলামী ভূখণ্ডে এর কল্যাণ ছড়িয়ে পড়বে।”

এমনিভাবে পাকিস্তানের আলেমদের মধ্যে যাদের সাথে উসামা রহ. এর সম্পর্ক ছিল। তাদের মাঝে একজন হলেন ‘শাইখ ফযল মুহাম্মাদ হাফিযাহুল্লাহ’। তিনি করাচীর একজন খ্যাতনামা মুহাদ্দিস ছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. ও অন্যান্য মুজাহিদদের অন্তরঙ্গ সাথী ছিলেন। শাইখ ফযল মুহাম্মদ আর শাইখ উসামা বিন লাদেনের এক সাক্ষাতের সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি মুজাহিদদের বিভিন্ন বিষয়ে ও তাদের হালাত সম্পর্কে শাইখর সাথে দরদের সাথে পরামর্শ করতেন। শাইখ ফযল মুহাম্মাদ ফাযায়েলে জিহাদের উপর একটি প্রসিদ্ধ কিতাবও রচনা করেছিলেন। যা উর্দূ ও পশতু ভাষায় ছাপা হয়। যদি এটির আরবী অনুবাদ বের করা যায়, তাহলে তা থেকে অনেক উপকারের আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ।

এগুলো ছিল শাইখ উসামা রহ.এর সাথে আলেমদের সম্পর্কের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা। (টেকনিশিয়ান সাথী সময় স্বল্পতার ইঙ্গিত করছেন। যাই হোক, কথা সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করছি।)

আলেমদের সাথে শাইখ উসামা বিন লাদেনের সম্পর্কের কথা বলতে গেলে, তাঁর সাথে ইসলামী জামাআত এবং তানজীমের সাথে শাইখের সম্পর্কের কথা মনে পড়ে যায়। আমি পূর্বে উল্লেখ করেছিলাম যে, শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. একজন নরম দিলের মানুষ ছিলেন। তিনি খুব দ্রুতই কেঁদে ফেলতেন। পাশাপাশি তিনি রসিকও ছিলেন। তিনি পরিশুদ্ধ কৌতুক করা পছন্দ করতেন। এর দ্বারা মজলিসকে আনন্দময় করে তুলতেন। ইনশাআল্লাহ, এ বিষয়েও শাইখের ব্যক্তিত্বের কথা আলোচনা করা হবে। তিনি বলতেন, আসলে আমাকে তো একটি তানজীম থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমি ইখওয়ানের তানজীমের সাথে ছিলাম। পরবর্তীতে আমাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। সুতরাং আমি হলাম তানজীম থেকে বের করে দেওয়া একজন মানুষ!

আসল ঘটনা হচ্ছে: শাইখ জাযিরাতুল আরবে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের জামাআতের সাথে ছিলেন। যখন রাশিয়া আফগানিস্তানের উপর হামলা করল। তখনই শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. মুজাহিদদের সঙ্গে পরিচিত হতে ও তাঁদেরকে সাহায্য করতে পাকিস্তানে চলে আসেন। তাঁকে তানজীমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ,“তিনি যেন লাহোরের পর আর সামনে না যান। তিনি লাহোরের জামাআতে ইসলামীর অফিসে যাবেন। সেখানে সকল ত্রাণ, সাহায্য তাদেরকে দিবেন এবং তিনি ফিরে আসবেন। এগুলো মুজাহিদদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা তারা করবে।”অতঃপর শাইখ সেখানে গেলেন কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তিনি সেখান থেকেই পেশোয়ারে রাস্তা পেয়ে গেলেন। এমনিভাবে মুজাহিদদের সঙ্গও পেয়ে গেলেন। ফলে মুজাহিদদের সাথে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তারপর আফগানিস্তানে প্রবেশের রাস্তাও পেয়ে গেলেন। অথচ তানজীম তাঁকে সতর্ক করেছিল। আর বলেছিল যে, আমরা আপনাকে বলেছিলাম, আপনি লাহোরের জামাআতে ইসলামীর অফিসে যাবেন। কিন্তু আপনি পেশওয়ার চলে গেলেন! অবশেষে আফগানিস্তানেও প্রবেশ করে ফেললেন! তো আপনি যখন আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিলেন, তখন যদি আপনি সেখানে গ্রেফতার হতেন!( তাহলে অবস্থাটা কি হতো?!) কারণ, আপনি হলেন সৌদি নাগরিক। ‍সুতরাং আপনি যদি সৌদি নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও আফগানিস্তানে গ্রেফতার হতেন, তাহলে রাশিয়ানরা সৌদি সরকারের সাথে বড় ধরনের ঝামেলা পাকিয়ে দিত। এভাবেই তাঁরা শাইখের জন্য একটি কাল্পনিক গল্প তৈরি করল। যার মোটকথা ছিল, আপনি আর কোনোভাবেই আফগানিস্তানে জিহাদ করবেন না। আপনার জিহাদ শুধু এতটুকুই যে, আপনি লাহোরে টাকা দিতে থাকবেন। শাইখ উসামা রহ. বললেন, এটা কখনো সম্ভব নয়। তারা বলল, এমতাবস্থায় আপনার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। শাইখ উসামা রহ. বললেন, ঠিক আছে, আমি আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন!

তানজীম থেকে আলাদা হওয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জিহাদের জন্য কবুল করে নেন। ফলে তিনি ইসলামী তানজীমসমূহের সেতুবন্ধনে পরিণত হোন। তিনি মুজাহিদ এবং মুসলমানদের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হোন। আমি আগেও এ কথা বলেছিলাম, আমি জালালাবাদ বিজয়ের পর জালালাবাদে শাইখের অবস্থান স্থল ‘সোরাকা’তে যেতাম। তখন দেখতে পেতাম, তাঁর চারপাশে বিভিন্ন তানজীমের ভাইয়েরা বসে আছেন; যাঁরা তাঁর অধীনে কাজ করতেন। তিনি তাঁদেরকে কল্যাণের কাজে লাগিয়ে রাখতেন। আল্লাহ প্রদত্ত এই দানের কারণে আমি তাঁর উপর ঈর্ষা করতাম যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে মুসলমানদের মাঝে কি পরিমাণ গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে রেখেছেন!

যাই হোক, যখন জাযির যুদ্ধের পর শাইখ উসামা রহ. প্রসিদ্ধি লাভ করলেন। তখন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের উপদেষ্টা শাইখ মুস্তফা মানসূরী রহ. তাঁর সাথে দেখা করতে আসলেন এবং শাইখ উসামা রহ.এর সাথে মত বিনিময় করলেন। সে ঘটনা সম্পর্কে তিনি আমাদেরকে বলেছিলেন যে, শাইখ মুস্তফা মানসূরী রহ. তাঁকে বললেন, “হে উসামা! আপনি আপনার ভাইদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন। পুনরায় আপনি আপনার ভাইদের কাছে ফিরে আসুন! কেননা তাদের অধিকার আপনার উপর অধিক রয়েছে।”কিন্তু শাইখ উসামা রহ. বিনয়ের সাথে ওযর পেশ করলেন, “এখন আমি সকল ইসলামী জামাআতের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি; যা আমার কাজের জন্য সহায়ক। এ জন্য হয়তো আমার এভাবেই কাজ করা উত্তম হবে।”এভাবে শাইখ বিনয়ের সাথে আপত্তি পেশ করলেন। এ জন্য যখন কোনো ইসলামী তানজীমের আলোচনা ওঠতো, তখন শাইখ বলতেন, আমি এমন একজন লোক; যাকে তার তানজীম বের করে দিয়েছে!

এভাবে শাইখ উসামা রহ. এর সাথে ইসলামী তানজীম আর ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা আমি সামনে করবো। তবে আমি আফগানিস্তানে ইমারাতে ইসলামিয়ার সাথে তাঁর সম্পর্কের আলোচনা করার আগে শাইখের জীবনের আরো একটি উজ্জ্বল দিক সম্পর্কে আলোচনা করতে আগ্রহ বোধ করছি। কারণ হয়তো অধিকাংশ লোকজন এ সম্পর্কে জানে না। সেটি হলো: শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহর পথে নিজ ব্যক্তিত্ব ও তার পরিবার যে বিপদাপদের সম্মুখীন হয়েছিলন। মানুষজন এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। জানলেও সংক্ষিপ্তভাবে জানে। কিন্তু এ পথে শাইখ ও তার পরিবার যে মসীবতের মুখোমুখী হয়েছিলেন, তা সবিস্তারে বলা দরকার।

শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. জিহাদের পথে অনেক কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মর্যাদাকে আ‘লায়ে ইল্লিয়ীনে সমুন্নত করুন। আর যা কিছু তিনি এ পথে হারিয়েছেন আল্লাহ যেন তা কবুল করে নেন। (আমীন)

শাইখ উসামা বিন লাদেনের কাছে দুনিয়ার কোনো মূল্যই ছিল না। তিনি কবির এই পঙ্ক্তির উদাহরণ ছিলেন।

যখন সে ইচ্ছা  করল

সমুদ্রের দৃঢ়তা চোখে দেখা দিল,

বিষয়ের সকল দিক দেখে নিল

দৃঢ় মনোবলে সে বের হয়ে গেল ।

তলোয়ার ব্যতীত কোনো কিছুর কাছে পরামর্শ চায়নি

তলোয়ার বহনকারী ব্যতীত কাউকে সাথে নেয়নি।

তিনি এমন মানুষ ছিলেন, একবার যদি ইচ্ছা করতেন, তবে তা (আল্লাহর ইচ্ছায় হিম্মতের সাথে) করেই ছাড়তেন। কোনো কিছু বললে তা অবশ্যই পূরণ করতেন। যখন দিতেন তো সব দিয়ে দিতেন। তিনি জিহাদের পথে আসলেন তো নিজের সবকিছু এ পথে দিয়ে দিলেন, কিন্তু এর বিপরীতে তাঁর জীবন মোটেও আয়েশী ছিল না; বরং তাঁর পুরো জীবন বিপদাপদে পূর্ণ ছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ ﴿البقرة: ٢١٤﴾

“তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনি ভাবে শিহরিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে! তোমরা শোনে নাও, আল্লাহর সাহায্যে একান্তই নিকটবর্তী।” (সূরা বাকারাহ : ২১৪)

শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ তোরাবোরাতে থাকার সময় এই আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে সাথীদেরকে বলতেন, “হে ভাইয়েরা! তোমরাও বলো, ( مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ) “কখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে!”তখন সাথী ভাইয়েরা এই আয়াতের শেষের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য এভাবে বলতেন- ( أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ) “আল্লাহর সাহায্যে একান্তই নিকটবর্তী।”

বাস্তবতা হলো, শাইখ উসামা বিন লাদেন জিহাদের পথে খুবই কষ্ট করেছিলেন। তিনি আমাদেরকে বলেছিলেন, রুশদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার সময় কাবুল বিজয়ের আগে শাইখের প্রচন্ড আগ্রহ ছিল যে, তিনি কাবুল বিজয়ের জন্য বড় ধরনের হামলা চালাবেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি জিহাদি তানজীমগুলোকে একত্রে ডাকলেন এবং তাদেরকে নিয়ে কাবুলকে অবরুদ্ধ করার জন্য ও তা বিজয়ের জন্য এক বিরাট পরিকল্পনা প্রস্তুত করলেন। এই উদ্দেশ্যে সৈন্য ও শক্তি জোগাড়ের লক্ষ্যে, কাবুল পর্যন্ত রাস্তা খোলার জন্য শাইখ অগণিত সম্পদ খরচ করলেন। অর্থাৎ সময়ও দিয়েছেন, মালও ঢেলেছেন। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি একবার সফরে বের হলেন। আর আমি পূর্বেও বলেছিলাম যে, শাইখ রহ. এর সকল সফরই হতো ইসলাম ও জিহাদের খেদমতের উদ্দেশ্যে। তখন শীতকাল, তুষারপাতও বেড়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে খুব ঠান্ডাও ছিল। বরফের আধিক্যতায় রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। শাইখ আর তাঁর সাথীরা না আগে যেতে পারছিলেন না পিছনে আসতে পারছিলেন। যে ব্যক্তি বরফ আর পাহাড়ের এমন অবস্থার সাথে পরিচিত, সে জানে এমন পরিস্থিতি কেমন কঠিন হয়ে থাকে। তাঁরা গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেঁটে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। যদি কোনো ঘর পেয়ে যান, তাহলে তাতে আশ্রয় নিবেন। আর এই বরফ আর ঠান্ডা থেকে বেঁচে যাবেন। শাইখ উসামা বলেছিলেন, ঠান্ডা সারা এলাকা ঘিরে ছিল। যাই হোক, আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের জন্য এই বিচ্ছিন্ন স্থানে অন্য ধরনের ঘর মিলিয়ে দিলেন। যার মধ্যে দুইজন আফগানি মুজাহিদ ছিলেন। এটা ছিল তাঁদের উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত, অন্যথায় হয়তো তাঁরা মারাই যেতেন। তাঁরা এই ঘরে আফগানি দুই মুজাহিদের সাথে আশ্রয় নিলেন। তারা সে দুইজনকে বললেন, “আমাদের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। আর অন্য গ্রামের পথও বন্ধ। তাই যতক্ষণ না বরফ পড়া বন্ধ হয় অথবা রাস্তা খুলে যায়, আমাদেরকে এখানে থাকতে হবে।”এই ঘটনা একটি কঠিন বিপদের উদাহরণ। কিন্তু এছাড়াও তাঁর উপর আরো অধিক কঠিন বিপদ এসেছিল।  ইনশাআল্লাহ, এ সকল বিপদ তাঁর মর্যাদা উঁচু হওয়ার কারণ হবে। এ সময়ে শাইখ উসামা বিন লাদেনের খুব খারাপ ম্যালেরিয়া রোগ হয়ে যায়। শাইখ রহ. আমাকে বলেছিলেন, ম্যালেরিয়া ওনাকে একেবারেই নাজেহাল করে দেয়। এমনকি তাঁর পেশাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত আসছিল। ডাক্তার ভাইয়েরা জানেন, ম্যালেরিয়া রোগে রক্ত আসা কত মারাত্মক বিষয়। আর অধিকাংশ সময় এর কারণে বিভিন্ন অসুবিধা তৈরী হওয়ার পাশাপাশি এক পর্যায়ে মৃত্যুও হয়ে থাকে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে ‘কালো জল জ্বর’ বলা হয়। ম্যালেরিয়াতে এটি একটি বিপদজনক লক্ষণ। যা লাল কোষগুলির ভাঙ্গন ও কিডনির ক্ষতির তীব্রতার প্রতি ইঙ্গিত করে।

বিশেষ করে, এই বিজন ভূমিতে, জনবিচ্ছিন্ন স্থানে ও প্রচন্ড ঠান্ডাতে এবং বরফের মাঝে এই মারাত্মক ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলেন। শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. বলতেন, আমি তখন মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। ওই সময় যারা ঘরে ছিলেন; তাঁরা ওষুধের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেন। এই ঘরে একটি ঝুঁটি বিশিষ্ট মুরগী ছিল। এ দিকে ঘরের মালিক এই মুরগীর ব্যাপারে ছিল আবেগপ্রবণ। সাথীরা বলতে লাগলেন, মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত এই রোগীর জন্য আমাদেরকে মুরগীটি জবাই করতে দাও। সাথীরা ওই ব্যক্তিকে বারবার অনুরোধ করতে লাগলেন; কিন্তু ঐ ব্যক্তি বারংবার নিষেধ করে যাচ্ছিল। এমনকি সাথীরা এর দাম অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। তারপর সে রাজি হয়ে যায়। তাঁরা সেই মুরগী শাইখের জন্য জবেহ করে দেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা শাইখকে এই মারাত্মক অসুস্থতা থেকে সুস্থতার নিয়ামত দান করেন।

যারাই শাইখের সাথে ছিলেন অথবা শাইখকে চিনেন; তারা জানেন যে, শাইখের শরীরের শক্তি ক্ষীণ ছিল। এমনকি জালালাবাদের যুদ্ধগুলোর সময়, তাঁর শক্তিক্ষীণতার কারণে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়তেন। আর তাঁকে ট্রিপের মাধ্যমে খাদ্য দিতে হতো। আমার মনে আছে, তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ হাঁপানি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আর সেও জালালাবাদের যুদ্ধের সময় শাইখের সাথে ছিলেন। আমি এক সময় তার হাঁপানি রোগের কারণে তাকে টিকা লাগিয়ে দিই। আমার এ কথাগুলো বলার উদ্দেশ্যে হলো, শাইখ উসামা রহ. কে শরীরের কমজোরির কারণে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল।

জিহাদের পথে শাইখ উসামা রহ. এর উপর আসা বিপদসমূহের মধ্যে একটি ঘটনা। আফগানিস্তানে আমেরিকা প্রবেশের পরের কথা। তখন আমিও তাঁর সাথে ছিলাম। আমরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হচ্ছিলাম, আর প্রায় সময় আঁধারেই সফর করতাম। এ সময়ে আমাদেরকে একটি পিছলে পাহাড় থেকে নামতে হচ্ছিল; যা থেকে নামার জন্য প্রায় চার ঘন্টা সময় লাগতো। আর স্পষ্ট কথা, আমাদের জন্য কোনো প্রকার আলো জ্বালানো একেবারেই নিষেধ ছিল। যেন এলাকাবাসী কোনোরূপ আন্দাজ করতে না পারে। আমার অবস্থা তো আপনারা বুঝতেই পারছেন; তো যারা জানেন না, তাদেরকে জানানোর জন্য আমি বলছি, শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.ও শুধু এক চোখেই দেখতে পেতেন। তাঁর একটি চোখ ছিল দৃষ্টিহীন। কেননা বাল্যকালে এক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি চোখের আলো চলে যায়। কোনো দৃষ্টিসম্পন্ন লোক শাইখ রহ. এর সেই বিখ্যাত ছবি দেখে বলতে পারবেন না যে, যার মধ্যে তিনি ঈদের সময় নিজের বাম কাঁধের উপর বন্দুক রেখে গুলি চালাচ্ছেন। শাইখ উসামা সাধারণত বাম হাতের ব্যবহার করতেন না। কিন্তু যেহেতু তাঁর ডান চোখ কাজ করতো না। তাই দেখা যেতো, তিনি বাম দিক হতে গুলি চালাচ্ছেন। এক দিকে গভীর আঁধার। অন্য দিকে শাইখের একটি চোখ কাজ করে না। আর আল্লাহ পাহাড়টিকে এমনভাবে বানালেন যে, এর মধ্যে ছোট ছোট ধারালো পাথর ছিল। যার কারণে আমাদের পা বারবার পিছলে যাচ্ছিল। আর আমরা তো কোনো পাহাড়ি লোকও ছিলাম না। এ জন্য নামার সময় আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আর সকল ঈমানদারদেরকে কবুল করুন। যাই হোক, কিছু সময় চলার পর আমরা সামান্য আরামের জন্য বসলাম। শাইখ উসামা বললেন, আপনি কিছু মনে না করলে, একটু পেছনে সরে আসুন। আমি বললাম, কোনো সমস্যা নেই। আমি পেছনে সরে যাচ্ছি। আসলে শাইখ রহ. নিজের পা ছড়াতে চাচ্ছিলেন। তারপর শাইখ বললেন, “আপনি জানেন?, কেন আপনাকে পেছনে যেতে বললাম?” আমি বললাম, কেন? শাইখ বললেন, “আসলে অন্ধকারে আমি পিছলে যাই। আর আমার হাঁটু আমার ওজন নিয়ে একটি পাথরের সাথে এসে লাগে। ব্যাথার তীব্রতার কারণে আমি এটা বুঝলাম যে, আমার পায়ের হাঁড় ভেঙে গেছে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন, যার ফলে আমার হাঁড় ভাঙেনি।” আমি বললাম, আল্লাহর শুকরিয়া! যিনি আপনাকে বাঁচিয়ে দিলেন।

আফগানিস্তানে ক্রুসেডারদের হামলার সময় এ ধরনের আরেকটি সফর করতে হয়েছিল। আমাদেরকে যেতে হয়েছিল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এতে আমাদেরকে দেড় দিনের পায়ে হেঁটে সফর করতে হয়েছিল। এই সফরের প্রথম ধাপ রাতের প্রথম প্রহরে শুরু হয়। প্রথম ধাপেই চড়তে হবে, একটি বড় পাহাড়ে। রাহবার সাথী আমাদেরকে বললেন, “আপনারা দৃঢ় হিম্মত করুন, যেন আমরা ফজরের আগে অথবা ফজর পর্যন্ত এর চূড়ায় ওঠতে পারি। আমাদেরকে যেন পাহাড় চড়ার সময় কেউ না দেখে। কারণ এখানে মুনাফিকও থাকতে পারে; থাকতে পারে রাখাল আর সাধারণ লোকজনও। তাই আমরা চাই, আমাদেরকে যেন কেউ না দেখে।”এ পাহাড়ে চড়া আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য তা সহজ করে দিলেন। এরপর আমরা সফর অব্যাহত রাখলাম। এ সময়ও শাইখ উসামা রহ. এর অনেক কষ্ট হয়েছিল। আল্লাহ তাঁর মর্যাদা উঁচু করুন।

এই সফরে তাঁর কষ্টের কারণ ছিল, তাঁর পায়ের মাপের জুতো তাঁর কাছে ছিল না। যারা পায়ে হাঁটেন, বিশেষ করে পাহাড়ে ওঠে থাকেন। তারা জুতোর সামঞ্জস্য হওয়ার ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত। তখন আমরা প্লাস্টিকের সাধারণ জুতো পরতাম। এমতাবস্থায় যদি জুতো পায়ের চেয়ে ছোট অথবা বড় হয়; এটা তো আপনি নিজেই কষ্টের জন্য তৈরি হয়ে গেলেন। কেননা তারপরের প্রতিটি পদক্ষেপ কষ্টকর হয়ে পড়বে। এ সফর উসামা রহ. এর উপর কষ্টকর হয়ে পড়েছিল।  তিনি তাঁর পায়ের মাপের জুতো পাননি। আর অনবরত কষ্ট করে পথ চলছিলেন। কয়েকবার তিনি জুতোও বদলে দেখলেন; কিন্তু কোনো লাভ হলো না। শাইখ এ অবস্থায় চলতে লাগলেন। এমনকি আমরা এমন এক জায়গাতে এসে পৌঁছলাম; যার সম্পর্কে রাহবার সাথী বললেন, আমাদেরকে এই এলাকা দ্রুত পার হতে হবে। তাই আমরা খুব দ্রুত চলছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা সে এলাকা পার হলাম। শাইখ উসামা রহ. এরপর যোহর আর আসরের মাঝামাঝি সময়ে বললেন, কিছু সময় আমরা এখানে আরাম করবো; কিন্তু রাহবার ভাই বললেন, না, এই এলাকা নিরাপদ ও উপযোগী নয়। শাইখ বললেন, সমস্যা নেই। আমরা এখানে আরাম করে নিই। কিন্তু রাহবার বললেন, এ জায়গা একটুও নিরাপদ নয়। আর এ সফরে আরাম করার সুযোগ নেই। অগত্যা আমরা আবার চলতে শুরু করলাম। এমনকি আমরা মাগরিবের সময় পর্যন্ত চলতে লাগলাম। অবশেষে আমরা এসে পড়লাম একটি টিলার পাশে খোলা প্রান্তরে। সেখানে কিছুক্ষণ আরাম করলাম। শাইখ রহ. রাহবারকে বললেন, আমরা রাতটা এখানে কাটাবো। এরপর রাহবার বললেন, না, না। আমরা রাত এখানে কাটাতে পারবো না। এখান থেকে আমাদের গন্তব্য দুই ঘণ্টার রাস্তা। আমরা সেখানে পৌঁছে গেলে ইনশাআল্লাহ খাওয়ার ব্যবস্থা হবে। সেখানে আপনি আরামও করতে পারবেন। কিন্তু শাইখ রহিমাহুল্লাহু বললেন, “আমরা এর চেয়ে বেশি আর হাঁটতে পারবো না।”এরপর রাহবার সাথী বললেন, ঠিক আছে, কিন্তু এটা একেবারে খোলা জায়গা আর এখানে কোনো আড়ালও নেই। শাইখ বললেন, তবুও আমরা রাত এখানে কাটাবো। রাহবার ভাই বললেন, আকাশে তো মেঘ দেখা যাচ্ছে। একটু পর বৃষ্টি শুরু। শাইখ বললেন, তবুও রাত আমরা এখানেই কাটাবো। কয়েক ঘণ্টা এখানে কাটিয়ে সকাল বেলা সামনে যাবো। অবশেষ রাহবার সাথী পরাজয় মেনে নিলেন।

কিন্তু মাটির সাথে পিঠ লাগানোর সাথে সাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। আসমান থেকে বৃষ্টি সরাসরি আমাদের উপর এসে পড়ছিল। দুই ঘণ্টা ধরে, একটু থেমে আবার শুরু হতো। আমরা পুরোপুরি ভিজে গিয়েছিলাম। কোনো জিনিস এমন ছিল না, যার ভেতর পানি ঢোকেনি। কিন্তু আমরা কী আর করতে পারতাম! আমার কাছে ছিল একটি লাঠি আর একটি চাদর; যাকে আমি লাঠির উপর এভাবে গোল করে ছড়িয়ে দিলাম, আর মাথা গুঁজার ঠাঁই হলো। পরে, যার ভেতর এসে ঠাঁই নিল আরো দুই সাথী। আমরা এক চাদরের ভেতর তিনজন হয়ে গেলাম। মূলতঃ এ ছাউনিটি ছিল কোনো রকম বাঁচার জন্যই; কেবল মনকে সান্তনা দেয়া। প্রবল বৃষ্টি মাথায় করে আমরা বসেছিলাম, অন্য দিকে পাহাড়ের উপর বোমার পড়ার মতো বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। অদ্ভুত এক অবস্থা। অবশেষে সকাল হলো। আমরা রওয়ানা হলাম। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেখলাম, বাড়ির মালিক খুবই খুশি। তিনি বলছিলেন, “শুকনো আবহাওয়ার কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল; আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তা‘আলা বৃষ্টি দিলেন। আর ক্ষেত পানিতে পূর্ণ হয়ে গেল।”এ কথা শুনে আমার বেশ হাসি এসে গেল। সুবহানাল্লাহ! কীভাবে একজনের বিপদ অপরজনের জন্য নেয়ামত স্বরূপ হয়! 

সবশেষে, টেকনেশিয়ান ভাই আমাকে যে সামান্য সময় দিয়েছেন, এই সামান্য সময়ের মধ্যেই আমি শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর পরিবারের উপর আসা কিছু বিপদাপদের কথা আলোচনা করবো। জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহর পথে যে সকল বিপদাপদ এসেছিল, তা শুধু শাইখের উপর-ই এসেছিল, বিষয়টি এমন নয়। বরং তার ধৈর্যশীল, মুরাবিত ও মুজাহিদ পরিবারের উপরও এমন বহু বিপদাপদ এসেছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের সকলকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তাঁদেরকে তাঁদের পূর্বপুরুষদের মতো উত্তম স্থলাভিষিক্ত বানান, ইনশা আল্লাহ। আর ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা রহ. এর স্মৃতিগুলোকে জীবন্তকারী বানান, ইনশা আল্লাহ।

শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. সন্তানদের উপর আসা বহু বিপদাপদেরও সম্মুখীন হোন। তাঁর যে সকল সন্তানদের উপর বিপদ আসে, তাঁদের মধ্যে একজন আমাদের চোখের মণি সা‘দ বিন লাদেন রহ.। তিনি ইরানি গোয়েন্দাদের কাছে বন্দী ছিলেন। ইরানি এজেন্সীগুলোর সাথে আফগানিস্তানের মুহাজিরীন ও বন্দীদের বেদনাদায়ক ঘটনা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে। সেখানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইনশা আল্লাহ। এই ঘটনা বহু বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে আসে। যা জানা উম্মতের জন্য অত্যন্ত জরুরী। সা‘দ বিন লাদেন রহ. কোনো অপরাধ ছাড়াই কয়েক বছর ইরানের জেলে বন্দী ছিলেন। তিনি গ্রেফতার হওয়া থেকে বাঁচার জন্যই তাঁর বংশের কিছু লোকের সাথে ইরানের দিকে যাচ্ছিলেন। ইরানিরা তাঁকে পরিবারের লোকদের সাথে গ্রেফতার করে ফেলে। এক সময় সা‘দ বিন লাদেন রহ. সেখান থেকে সরে আসতে পেরেছিলেন। তারপর খোরাসান চলে আসেন। তিনি অনেকগুলো বাস্তবতার উপর থেকে পর্দা ওঠান। খোরাসানের মাটিতে তিনি আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদের মহান মর্যাদায় ভূষিত হোন। শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশায় তাঁকে জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহর পথে উৎসর্গ করে দেন।

এভাবে খালিদ বিন লাদেন রহ.ও আল্লাহর পথে শহীদ হোন। এ্যাবোটাবাদে শাইখের সাথেই তিনি শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেন। আল্লাহ তাঁদের সকলের উপর রহমত বর্ষণ করুন। এমনিভাবে শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর কন্যা খাদীজা বিনতে লাদেন সন্তান প্রসবের সময় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তাঁকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। খাদীজা বিনতে লাদেনের স্বামীও আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ করার সময় শাহাদাত বরণ করেন। এমনিভাবে ফাতিমা বিনতে লাদেনের স্বামীও আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করেন। খাদীজা বিনতে লাদেনের সন্তান ও শাইখের নাতি তাঁর শাহাদাতের সময় এ্যাবোটাবাদে তাঁর সাথেই ছিলেন।

“বিশ্বসন্ত্রাসী আমেরিকা সরকারের আদেশে বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তানী গোয়েন্দাসংস্থার নিকট মুহতারাম শাইখের পরিবারের মহিলাদেরকে, সন্তানদেরকে ও নাতী-নাতনীদেরকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দী থাকার কথা কে না জানে?! যে আমেরিকা ব্যক্তি স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করে থাকে! অন্যদিকে আবার এ সকল ধোঁকাপূর্ণ বিষয়াবলী গাফিলদের নিকট চড়া দামে বিক্রিও করে দেয়!! পাকিস্তানী প্রশাসন পূর্ণ এক বছর যাবৎ এ সকল মহিলাদেরকে, মাসুম বাচ্চাদেরকে ও নাতী-নাতনীদের বিনা অপরাধে বিনা অভিযোগে এবং বিনা বিচারে আটকে রেখেছে!!! তাঁদের অপরাধ শুধু এতটুকুই যে, তাঁরা শাইখ উসামা রহ.এর পরিবার ও সন্তান। যিনি আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন।”

 

আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আগামী পর্বে আবার কথা হবে, ইনশাআল্লাহ।

وآخر دعوانا أنِ الحمدُ للهِ ربِ العالمين، وصلى اللهُ  على سيدِنا محمدٍ وآلِه وصحبِه وسلم.

والسلامُ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه

 

****************************

Related Articles

৪ Comments

  1. দারসুল ঈমান এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা আহ সিরিজের ভিডিও গুলো ডাউনলোড হয় না, করতে পারি নি। তবে আলহামদুলিল্লাহ ঈমান সিরিজের ভিডিও গুলো Youtube থেকে নিয়েছি।

Leave a Reply to হাবিব Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − 10 =

Back to top button