পিডিএফ/ওয়ার্ড || শাইখ মুস্তফা আবুল ইয়াজিদ রহঃ জীবন ও কর্ম -মাওলানা হামিদুর রহমান অনূদিত
শাইখ মুস্তফা আবুল ইয়াজিদ রহ.
জীবন ও কর্ম
মাওলানা হামিদুর রহমান অনূদিত
অনলাইনে পড়ুন
ডাউনলোড করুন
https://archive.org/details/MustofaAbulYazidJiboni
http://www.mediafire.com/file/zhn6gg6wzaw262k/MustofaAbulYazidJiboni.pdf/file
word
https://archive.org/details/MustofaAbulYazidJiboni
http://www.mediafire.com/file/b8w015gka1o8pba/MustofaAbulYazidJiboni.docx/file
PDF
—-
http://www.mediafire.com/file/5bt5qx91k3rwv2v/137._MustofaAbulYazidJiboni.pdf/file
https://archive.org/download/u_m_a_5/135.%20MustofaAbulYazidJiboni.pdf
Word
—–
http://www.mediafire.com/file/eu0rxrgheiysy01/137._MustofaAbulYazidJiboni.docx/file
https://archive.org/download/u_m_a_5/135.%20MustofaAbulYazidJiboni.docx
============================
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
মুস্তফা আহমদ উসমান আবু ইয়াযীদ, যিনি শাইখ সাঈদ আল মুহাসিব নামে পরিচিত। তিনি ১৯৭৯ সালে জাকাজিক ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত জিহাদী সংগঠনের একজন সদস্য ছিলেন।
তিনি অল্প বয়সেই মক্কায় যান। সেখানে তিনি কিছু কাল অবস্থান করার পর ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং তখন কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আক্রমণ করার কারণে সেখান থেকে আফগানিস্তানে চলে আসেন।
অবশেষে ১৯৮৮ সালে তিনি তার দু’জন শহীদ সঙ্গীর সাথে একসাথে তানজীমুল কায়েদার মজলিসে শুরার সদস্যপদ লাভ করেন৷ যাদের একজন হচ্ছেন শাইখ কমান্ডার আলী আমিন রশিদী, যিনি আবু উবাইদা আল বানশিরী নামে প্রসিদ্ধ এবং আরেকজন হচ্ছেন কমান্ডার শহীদ সুবহী আব্দুল আজীজ, যিনি মুহাম্মাদ আতেফ নামে পরিচিত ও আবু হাফস মিসরী নামে প্রসিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলের প্রতি রহম করুন৷
তিনি জিহাদী জামাতের সে সকল প্রথম সারির ক্যাম্পগুলোতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন, যা সে সময় শাইখ উসমা বিন লাদেন রহ. আফগানিস্তানে তৈরী করেছিলেন। এবং তিনি জাজী, জালালাবাদ, খোস্ত ও মাসাদাতুল আনসারসহ আরো বিভিন্ন রণাঙ্গনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর তাঁর জীবন নক্ষত্র উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং তিনি শাইখ উসামা বিন লাদেনের একজন একান্ত আস্থাভাজনে পরিণত হন৷ ফলে তিনি সে ক্যাম্পগুলোর প্রধান একাউনটেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরপর যখন শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. সুদানে চলে যান তখন তিনি ওয়াদি আকীক কোম্পানির আর্থিক কর্মকর্তা নিযুক্ত হন৷
এরপর সুদান সরকার যখন শাইখ উসামা বিন লাদেন, মুজাহিদীন কমান্ডার, তাদের পরিবারবর্গ ও তাদের সাথে শাইখ মুস্তফা আবু ইয়াযীদকে সুদান ত্যাগে বাধ্য করে তখন তারা সকলে পুনরায় জিহাদের পূণ্যভূমি আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। সেখানে তাদেরকে শাইখ ইউনুস খালেস ও শাইখ হক্কানীসহ সে সকল মুজাহিদীন কমান্ডারগণ স্বাগত জানান, যারা বদলে যাননি ও আপন অবস্থান থেকে ফিরে আসেননি; আল্লাহ তা‘আলা তাদের মৃতদের প্রতি রহম করুন ও তাদের জীবীতদের হেফাজত করুন এবং তাদেরকে তাদের শত্রুদের কন্ঠনালীর কাঁটা বানিয়ে দিন৷ তখন আফগানিস্তানের ইমারাতে ইসলামিয়ার সূচনা হয়েছিল কেবল। তাই তারা তাদেরকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেছেন এবং আশ্রয় দিয়েছেন ও সাহায্য করেছেন৷
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে শাইখ আব্দুল হাদী আল ইরাকী গ্রেফতার হওয়ার পর এবং তাকে তুরস্ক থেকে প্রস্থান করে অধিকৃত ইরাকের মার্কিন বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করার পর ও সেখান থেকে কিউবায় নিয়ে যাওয়ার পর শাইখ মুস্তফা আবু ইয়াযীদ রহ. কে আফগানিস্তানের তানজীমুল কায়দার জেনারেল কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়৷
শাইখ মুস্তফা আবু ইয়াযীদের বড় কন্যার নাম ছিল শীমা। তার আরেক কন্যার নাম ছিল জিহাদ। ইনি হচ্ছেন বন্দী শাইখ উমর আব্দুর রহমানের (আল্লাহ তা‘আলা তাকে বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করুন) ছেলে মুহাম্মাদের স্ত্রী। মুহাম্মাদও আফগানিস্তানে মার্কিনিদের আগ্রাসনের পর সে মৃত্যুপুরী দেশে ২০০৩ সালে গ্রেফতার হন৷ যা সে সময় বাস্তবিকভাবেই মুজাহিদীনদের জন্য গোরস্থান হিসেবে গণ্য হত৷ এরপর তাকে মার্কিনিদের হাতে হস্তান্তর করা হয় এবং গুয়েন্তেনামো বে কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। কয়েক বছর পর মার্কিন সরকার তাঁকে মিশর সরকারের কাছে হস্তান্তর করে ও তাকে তুর্রাহ জেলে বন্দী করে রাখে।
শাইখ মুস্তফা আবু ইয়াযীদ রহ. আবুন নযর নামে প্রসিদ্ধ—শহীদ আদিল এওয়াজ রহ. এর বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করেছিলেন। শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ তাকে বড় মনে করতেন ও অনেক সম্মান করতেন। তিনি তাকে “ভূত” বলে উপাধি দিতেন। কেননা তিনি অনেকবার নিরাপত্তাকে ঘোল খাইয়েছেন ও এমন এমন কাজ সম্পাদন করতেন, যা তার ব্যতিক্রমী দক্ষতার প্রমাণ বহন করত৷ রণাঙ্গনে তাকে একজন উল্লেখযোগ্য কমান্ডার হিসেবে গণ্য করা হত৷ অবশেষে তাঁকে মিশরের জীযা জেলায় ১৯৯৪ সালে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে৷ আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি রহম করুন৷
শায়খ মুস্তফা আবু ইয়াযীদ রহ. যদিও আফগানিস্তানের তানজীমুল কায়দার জেনারেল কমান্ডার ছিলেন তথাপি তিনি আফগানিস্তানের ইমারতে ইসলামিয়ার আমীর মোল্লা মুহাম্মাদ ওমরের রহ. হাতে বাইআত ছিলেন ও তালেবান কমান্ডারদের সাথে ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক সম্পর্ক রাখতেন।
অবশেষে এক অনন্য পারিবারিক শোভাযাত্রায় তিনি ইহকালকে অন্তিম বিদায় জানিয়ে শুহাদায়ে কেরামের খাতায় নিজের নাম লিখান৷ এবং তার সাথে একই পথের পথিক হিসেবে সঙ্গী হন তার স্ত্রী, তিন কন্যা, নাতনী ও তার পাড়া-পড়শী বন্ধু-পরিজন নারী পুরুষ ও শিশুরা৷ শাইখ রহ. বাইশ বৎসরের অধিককালব্যাপী ধৈর্য-কষ্টসহিষ্ণুতা ও শ্রম-প্রচেষ্টায় পরিপূর্ণ এই সুদীর্ঘ জিহাদি সফরের পর মহান প্রভুর সান্নিধ্যে পাড়ি জমান৷ এ সময়ে তিনি মুজাহিদীনদের মাঝে তার উন্নত চরিত্র, গাম্ভীর্যপূর্ণ মনোভাব, প্রশস্ত হৃদয়, ব্যপক সহিষ্ণুতা, পাহাড় সদৃশ ধৈর্য, পবিত্র আত্মা, বর্ণনাতীত বিনম্রতা, ইবাদতে অবিচলতা, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি প্রখর আস্থা ও তাওয়াক্কুল, মুজাহিদীনদের ঐক্য গড়তে জীবনভর আগ্রহ ও নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়া, ইত্যাদি বহুবিধ গুণের অধিকারী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন৷ তিনি ছিলেন বাস্তবিকভাবেই একজন চলন্ত পূর্ণাঙ্গ জিহাদী মাদরাসা৷ এমনকি কবি যেন তার নিচের পংক্তিটি তাকেই লক্ষ্য করে গেয়েছিলেন:
إذا القوم قالوا من فتى لعظيمة # فما كلهم يعنى ولكنه الفتى
অর্থঃ
তার রেখে যাওয়া স্মৃতিমালা বর্ষণ মুখর বদান্য হয়ে বাকি থাকবে, যা যুগের পর যুগ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও শিশুদেরকে দীক্ষাদানকারী ও শিক্ষাপোকরণ হিসেবে পাথেয় যুগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ৷ এবং কিছুতেই তার মৃত্যু কাফেরদের জন্য তার জীবনের চাইতে কম অভিসম্পাতের কারণ হবে না৷
তাই শাইখের পরিণত বয়সের এ শাহাদাতকে আপনারা মূল্যায়ন করুন ও এ শাহাদাতকে মহান প্রভুর পক্ষ থেকে হাদিয়া হিসেবে গ্রহণ করুন৷ এমন শাহাদাত, যার ব্যাজ হচ্ছে গৌরব, যার মুকুট হচ্ছে মহত্ব, যা ভূপৃষ্ঠে রেখে যায় সুনাম-সুখ্যাতি, যার বিনিময়ে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, যা অর্জনকারীর সঙ্গী হচ্ছেন নবীগণ সিদ্দীকগণ ও সৎকর্মশীলগণ৷ সুতরাং যে ব্যক্তি এ পূর্ণাঙ্গ সম্মান লাভ করেছে তার কি কোন দুঃখ বা ভয় থাকতে পারে? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ
﴿ وَالَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَلَن يُضِلَّ أَعْمَالَهُمْ [٤٧:٤]﴾ ﴿ سَيَهْدِيهِمْ وَيُصْلِحُ بَالَهُمْ [٤٧:٥]﴾ ﴿ وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ [٤٧:٦]﴾
অর্থঃ যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয় আল্লাহ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না৷ তিনি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করবেন৷ অতপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন৷ (সূরা মুহাম্মাদ: ৪-৬)
হে শ্রদ্ধেয় শাইখ! আপনি কতইনা চমৎকার দুনিয়া বিরাগী, আবেদ, মুজাহিদ, দ্বীনের অতন্দ্র প্রহরী, বীরপুরুষ, মুহাজির! আপনি পরিতৃপ্তির সাথে ঘুমান, আল্লাহ চাহেন তো জান্নাতেই আপনার সাথে সাক্ষাৎ হবে ৷ আর এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য৷