আরবশাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসী হাফিযাহুল্লাহশামহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

হুজুর আলাইহিস সালাম কতৃক আবু বাসীর রা: কে কুরাইশের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার হাদীসের মাধ্যমে দলীল পেশ করে মুজাহিদদেরকে কুফ্ফারদের নিকট সোপর্দ করার সন্দেহের নিরসন -শাইখ আবু মুহাম্মাদ মাকদেসী

হুজুর আলাইহিস সালাম কতৃক আবু বাসীর রা: কে কুরাইশের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার হাদীসের মাধ্যমে দলীল পেশ করে মুজাহিদদেরকে কুফ্ফারদের নিকট সোপর্দ করার
সন্দেহের নিরসন
শাইখ আবু মুহাম্মাদ মাকদেসী

 

প্রশ্ন: হুদায়রিয়া সন্ধির একটা শর্ত ছিল মুসলিম হয়ে যে মদীনায় আসবে তাকে ক্কুরইশের নিকট ফেরত পাঠানো। আর এই জন্যই আবু বাসীর রা: এর সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। এখানে কিছু ব্যক্তি এই সন্দেহটাকে ছড়াচ্ছে এবং কুরাইশের নিকট আবু বাসীর রা:কে সোপর্দ করার ঘটনা দ্বারা ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান ও ত্বাগুতদেরকে সাহায্য করা ও মুজাহিদদেরকে তাদের কাছে সোপর্দ করা জয়েজের উপর দলীল পেশ করছে। এবং গোয়েন্তানামো, বাগরাম ও তাদের গোপল কারাগারগুলোহ আমাদেরকে ইহার ব্যাখ্যা ও উদাহারণের প্রয়োজনিয়তা মুক্ত করে দিয়েছে। তো তাদেকে কি ভাবে জবাব দেয়া হবে ?

উত্তর: ইহা একটা ভ্রান্ত ত্বাগুতী যুক্তি। আসল দলীলের সাথে কিয়সকৃত বিষয়ের কোন সম্পর্কই নেই যে তার হুকুমের একই হবে। আসল দলীল হচ্ছে আল্লাহর নবী (সা); যার ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى * إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى

অর্থ “ এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। নিশ্চই ইহা ওহী, যা প্রত্যদেশ হয়” এই জন্যই দুর্বলদেরকে ফেরত পাঠানোর সময় বলেছিলেন:

قال : ( يا أبا جندل اصبر واحتسب فإن الله جاعل لك ولمن معك من المستضعفين فرجاً ومخرجاً.) هذا عند البخاري

( হে আবা জানদাল! ধৈর্য ধারণ কর, নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা তোমার ও তোমার মত অন্যদের জন্য মুক্তি ও বের হওয়া পথ করে দিবেন। ) ইহ বুখারী বর্ণনা;

وفي صحيح مسلم : (ومن جاءنا سيجعل الله له فرجاً ومخرجاً )؛ وكذلك كان بالفعل .

মুসলিমে আছে: আমাদের নিকট যেই আসবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য মুক্তি ও বের হওয়া পথ করে দিবেন।

ইবনে হাজম রা: আল-আহকাম কিতাবে লেখেন (৫/২৬) :

وهذا هو ما نص عليه ابن حزم حيث قال في الإحكام (5/26) : ( أن النبي صلى الله عليه وسلم لم يرد إلى الكفار أحداً من المسلمين في تلك المدة إلا وقد أعلمه الله عز وجل أنهم لا يفتنون في دينهم ولا في دنياهم وأنهم سينجون ولا بد ) … إلى أن قال : ( وقد قال الله عز وجل واصفاً لنبيه صلى الله عليه وسلم [ وما ينطق عن الهوى، إن هو إلا وحي يوحى ]، فأيقنا أن إخبار النبي صلى الله عليه وسلم بأن من جاءه من عند كفار قريش مسلماً فسيجعل الله له فرجاً ومخرجاً وحي من عند الله صحيح لا داخلة فيه، فصحّت العصمة بلا شك من مكروه الدنيا والآخرة لمن أتاه منهم حتى تتم نجاته من أيدي الكفار، لا يستريب في ذلك مسلم يحقق النظر، وهذا أمر لا يعلمه أحد من الناس بعد النبي صلى الله عليه وسلم ، ولا يحل لمسلم أن يشترط هذا الشرط ولا أن يفي به إن شرطه إذ ليس عنده من علم الغيب ما أوحى الله تعالى به إلى رسوله وبالله تعالى التوفيق )أهـ .


“আল্লাহর নবী (সা) ঐসময় মুসলমানদের মধ্য থেকে কাউকে ফেরত পাঠান নাই তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে জানিয়েছেন যে, তারা তাদের দ্বীন-দুনিয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরণের সমস্যায় পতিত হবে না এবং অতি শিঘ্রই তারা মুক্তি পাবে আর ইহা অবশ্যই হবে। …….. এই পর্যন্ত বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা তার নবীকে *গুনান্বিত করে বলছেন: “ তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। নিশ্চই ইহা ওহী, যা প্রত্যদেশ হয়” অত:পর আমরা ইহা বিশ্বাষ করে নিলাম যে, মুসলমানদের মধ্য থেকে যারা কুরাইশের কুফ্ফারদের কাছ থেকে তার নিকট আসবে তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা মুক্তি ও বের হওয়ার পথ তৈরি করার খবরটা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ওহী যাতে কোন অতিরঞ্জন নেই। অত:পর নিস্বন্দেহে তাদের মধ্য থেকে যারা এসেছে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত অনিষ্টতা থেকে মুক্তি মিলেছে এমনকি তারা কুফ্ফাদের হাত থেকেও স্বাধীন হয়ে যার। গভীর দৃষ্টিসম্পন্ন কোন মুসলিম ইহা অস্বিকার করতে পারবে না। আর ইহা (তাদের ভবিষ্যত মুক্তির সংবাদ ) এমন এক বিষয় যা আল্লাহ নবী (সা) এর পর কোন মানুষের জন্য জানা সম্ভব নয়। তাই কোন মুসলিমের জন্য এই ধরণের শর্ত করা বা শর্ত করা হলে তা পূর্ণ করা জায়েজ নয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে তার রাসূলের নিকট যে গায়েবের ইলম জানিয়েছেন কোন মানুষের নিকট তা নেই”

অপর দিকে যার হুকুমকে ইহার সাথে মিলানো ইচ্ছা করা হয়েছে তারা হচ্ছে তাগুত যারা আমেরিকাকে বন্ধু বানিয়েছে এবং মুজাহিদীনের বিরোদ্ধে তাদেরকে সাহায্য করছে। তারাই ঐসমস্ত ব্যাক্তি যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা পরিচয় করিয়েছেন এই ভাবে:

( هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ )

তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সর্তক হোন। হত্যা করুন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে। তারা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে ? ( মুনাফিকুন-৪)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন:

وبقوله سبحانه : لَا يَرْقُبُونَ فِي مُؤْمِنٍ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُعْتَدُونَ

তারা মর্যাদা দেয় না কোন মুসলমানের ক্ষেত্রে আত্নীয়তার, আর না অঙ্গীকারের। আর তারাই সীমালংঘনকারী। (তাওবা:১০)
আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেছেন:

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ ۗ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ ٨:٣٦(

নিঃসন্দেহে যেসব লোক কাফের, তারা ব্যয় করে নিজেদের ধন-সম্পদ, যাতে করে বাধাদান করতে পারে আল্লাহর পথে। বস্তুতঃ এখন তারা আরো ব্যয় করবে। তারপর তাই তাদের জন্য আক্ষেপের কারণ হয়ে এবং শেষ পর্যন্ত তারা হেরে যাবে। আর যারা কাফের তাদেরকে দোযখের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

এবং তারা ইহা ভাল ভাবেই জানে ও বিশ্বাষ করে যে, দ্বীনের শত্রুদের থেকে তাদের বন্ধুদের নিকট যখন মুসলমানদেরকে সোপর্দ করবে তখন তারা অবশ্যই তাদেরকে হয়ত হত্যা করবে না হয় কষ্ট দিবে ও কঠিন শাস্তি দিবে। এবং অনেক সময় তারও ভিটে-ভূমি ছিনিয়ে নেয়া হয় অথবা দ্বীনকে ধ্বংস করে দেয়া হয় তা সত্বেও ইহারা একই কাজ করে যায় !! এবং যে জিহাদকে তারা সন্ত্রাস নামে অভিহিত করে তাকে ধ্বংস করার জন্য তাদের আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়।

সুতরাং সূর্য থেকে জমিন কতইনা দূরে !!!

আর যেহেতো তাদের কিয়াসটা এখানে সঠিক নয় তাই ইবনে আ’রাবী তার আহকামুল কুরআনে বলেছেন (৪/১৭৮৯):

( فأما عقده على أن يرد من أسلم إليهم فلا يجوز لأحد بعد النبي صلى الله عليه وسلم)

আর এই ধরণের চুক্তি করা যে, যেই মুসলমান হবে তাকে তাদের কছে ফিরিয়ে দেয়া হবে তা আল্লাহর নবীর পর কারোর জন্য জায়েজ নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − five =

Back to top button