নির্বাচিতপ্রবন্ধ-নিবন্ধ

আমেরিকার সাথে জোটবদ্ধতা শুধু পরাজয় আর ব্যর্থতাই ডেকে আনবে -সাইফুল্লাহ হারুয়ী

 

যারা আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব করল, তারা যেন কয়লার সাথে বন্ধুত্ব করল; তার থেকে শুধু কালো ময়লাই পাবে।” -এই উক্তিটি করে আমেরিকার একজন সেনা সদস্য বিবৃতি দিয়েছে।
যদিও আমরা এ উক্তির সাথে পুরোপুরি একমত নই, বরং আমরা বলি, যারা আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব করবে তাদের ভাগ্যে শুধু ক্ষতিগ্রস্ততা আর ব্যর্থতাই মিলবে। কয়েক দশকের নাস্তিক-আল্লাহদ্রোহী রাজ্যের ইতিহাস আমাদের এই বিবৃতির সত্যতা এবং সত্যের বাস্তবতা প্রমাণ করে।
যখন আমরা আমেরিকার মিত্রদের বাস্তবতা দেখি, এই দেশেই দেখি যে, আমেরিকা কখনো তাদের মিত্রদের সাথে সম্মান বা মানবতার ব্যবহার করেনি এবং অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তাদেরকে মানুষের পর্যায়েও গণ্য করেনি; বরং তাদের মিত্রদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি শ্রেষ্ঠত্বের, গর্বের এবং অহংকারীর। যেমনটা হয়ে থাকে দরিদ্র দূর্বল ক্রীতদাসের প্রতি প্রভাবশালী অহংকারী ব্যক্তির উঁচু জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকা। -যে তার সেবার জন্য অনুপযুক্ত বা মুনিবের সেবা করতে অক্ষমতার কারণে তার পরিবর্তে অন্য একটি সামর্থবান গোলাম আনতে হবে, যার দ্বারা তার স্বার্থ অর্জন হবে।
তাই আমেরিকানরা কখনোই তাদের মিত্রদের সমর্থনে এগিয়ে আসেনি, যখন তারা সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের সমর্থন কামনা করেছিল। অতঃপর তারা দেখেছিল, তাদের সর্বাধিক বিশ্বস্ত মিত্রদের জন্য আত্মত্যাগ এবং রাতদিন তাদের উপকার করা সত্ত্বেও নাস্তিক রাষ্ট্র তাদের সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদেরকে হতাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ব্যর্থতাগুলোর নমুনা অনেক বেশি। এখানে আমরা আমেরিকার মিত্রদের ব্যর্থতার দুটো উদাহরণ উল্লেখ করছি-
প্রথমত এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো সহকর্মী তুরস্কে কী ঘটিয়েছিল! সেখানে আমেরিকা নতুন নতুন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই দেশ তাকে গোপনে সমর্থন করে, যে অভ্যুত্থান তুর্কি জনগণের দ্বারাই ব্যর্থ হয়ে যায় এবং আমেরিকার স্বপ্ন বিফল হয়।
আমেরিকার মিত্রদের ব্যর্থতার দ্বিতীয় নতুন নমুনা- তাদের মিত্রদের ব্যর্থতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। সারা বিশ্ব দেখেছে ঐ দিনগুলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিবৃতি দিয়েছিল যে, কুর্দি সশস্ত্র বাহিনী এবং বাগদাদে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বন্দ্বের প্রতিবাদে তারা অবস্থান নেবে। যখন সে বলেছে, সে এই দুটি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে নিরপেক্ষতার ভূমিকা নেবে। এতে স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়, ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারকে পেশমার্গার বিনিময়ে সাহায্য করেছে। তাই পেশমার্গায় কুর্দি ইরাকি বাহিনীর অগ্রগতি এবং জনপ্রিয়তাকে জনতার অনুপস্থিতিতে কিরকুকের পরিবেশে ধসিয়ে দেয়। আর কুর্দি পেশমার্গাকে সমর্থনের জন্য আমেরিকান কভার বিমান পাঠায়, যা মিডিল ইস্টের আমেরিকানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীদের অন্যতম ছিল, যারা যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল সরকারকে সাহায্য করে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের সরকারকে উৎখাত করার সাথে যুক্ত ছিল। তারপর তারা বাগদাদে সুন্নি এলাকায় সশস্ত্র প্রতিরোধের বিরুদ্ধে তুমুল লড়াইয়ে নামে। তারপর কিরকুক, তিক্রিত এবং মসুল ইরাকী সরকার দ্বারা পরিকল্পিত ভাবে আইএস’রা দখল করে। যদিও মেনে নেওয়া হয়, পেশমার্গায় আবারও একটি যুদ্ধ চলছে যা তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। এই ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের আক্রমণে দশ হাজারেরও বেশি প্রশিক্ষিত সৈন্য এবং কর্মকর্তারা আহত-নিহত হয়। পেশমার্গার বিখ্যাত কুর্দি সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা প্রদত্ত এই উৎসর্গগুলো পুরোনো ও নতুন জোট করেছিল। যেন একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র বাস্তবায়নের স্বপ্নকে আমেরিকানরা সমর্থন করে এবং সহায়তা করে, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কিরকুক শহরকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আমেরিকানদের ব্যর্থতার দ্বারা পেশমার্গায় কুর্দি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন হতাশ হয়ে পড়েছিল। অতঃপর ইরাকের তেলের অর্থে ফেডারেল সরকার অন্যান্য ইরাকি প্রাদেশিক প্রদেশগুলোর মতো এটিও নির্মাণ করে।
এভাবেই আমেরিকানরা তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধে আন্তরিক ও অনুগত মিত্রকে ব্যর্থ করেছে। কুর্দি সশস্ত্র বাহিনী তাদের সাথে জোটবদ্ধও হয়েছিল। আমেরিকানরা তাদের সহকর্মী আরব নাগরিকদেরকে ইরাকে হস্তান্তরিত করার এবং স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার স্বপ্ন বুঝতে সাহায্য করেছে। আমেরিকানরা তাদের মিত্রদের সাথে মোকাবিলা করে যখন তাদের প্রয়োজন হয় তখন তাদেরকে নিচে নামিয়ে দেয়। আর তাদের সাহায্য-সহযোগিতা তাদের প্রয়োজনীয়তা এবং জরুরতের কারণেই করে। যেমনটা করেছিল আফগানিস্তানে এবং অন্যান্য দেশে। এজন্য আবশ্যক হলো সচেতন হওয়া। বিশ্বের ইতিহাসে আমেরিকার সহযোগীদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আর সর্বদা মনে রাখবেন, একজন মুসলিম জেনারেল বলেছেন যে, আমেরিকানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার অবস্থা এমন, কয়লার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা যেমন। তার থেকে শুধু কালো কালিই পাওয়া যাবে।
যেই অঞ্চলের লোকেরা আমেরিকানদেরকে সব ধরনের বাস্তবসম্মত সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখে এবং তাদের সাথে জোট করে, সে সমস্ত আমেরিকার মিত্রদের ভাগ্যে শুধু বিশ্বাসঘাতকতাই রয়েছে। এতে গর্বিত হওয়ার কিছুই নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + twelve =

Back to top button