ইতিহাস- ঐতিহ্যউসামা মিডিয়াবই ও রিসালাহমিডিয়া

রুওয়াইস কারাগার থেকে পলায়নের কাহিনী || শাইখ আবুল লাইস আল-লিবী রহ. এর দুর্লভ সাক্ষাৎকার

প্রায় ২০ বছর আগে দুই সঙ্গীসহ সৌদি আরবের রুওয়াইস কারাগার থেকে পলায়ন করার পর “আল ফজর” ম্যাগাজিনকে প্রদত্ত শাইখ আবুল লাইস আল-লিবী আল-কাসেমী রহ. এর দুর্লভ সাক্ষাৎকার।

রুওয়াইস কারাগার থেকে পলায়নের কাহিনী

মাওলানা হামিদুর রহমান
অনুদিত

 

پی ڈی ایف
PDF (1.1 MB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [১.১ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/ruais-karagar/ruais%20karagar.pdf
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hya38c1c85adbb4e63b63d9d10cc631df8
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/15169868-a229-4688-b40e-5338f685515c/f77a04b4f5ef9da117685d01053b29887842f187b4485a391787f937505f18d6
লিংক-৪ : https://f005.backblazeb2.com/file/ruaiskaragar/ruais+karagar.pdf
লিংক-৫ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=q1c2j2h8i3
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/1vwkoqubsy8k75y/ruais+karagar.pdf/file

ورڈ
WORD (897 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৮৯৭ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/ruais-karagar/ruais%20karagar.docx
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hyb0ae8b51f92c4746b728917e69ae9907
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/259d309e-116a-4819-8eeb-e07d50899260/6a719172f955ebc5909ab7d73f44ebce6ea2ea2198086b1c243a9af2692efed8
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=e9a9z9b3k5
লিংক-৫ : https://f005.backblazeb2.com/file/ruaiskaragar/ruais+karagar.docx
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/9rsgd7z6wt78rp6/ruais+karagar.docx/file

غلاف
book cover [2.2 MB]
বুক কভার [২.২ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/ruais-karagar/ruais%20karagar.jpg
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hy6cbaa2bfd36d4dba88c0853899fbfeb7
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/5ec9cb7c-bc27-4bb9-bec5-85a67287276d/af1607e4918b5684c68a4ae3e40a53bb6ebedc5a98f31f2c40347f9761f9de63
লিংক-৪ : https://f005.backblazeb2.com/file/ruaiskaragar/ruais+karagar.jpg
লিংক-৫ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=m5c5f5k3u4
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/qrkumpiuvm9winm/ruais+karagar.jpg/file

 

 

===================

রুওয়াইস কারাগার থেকে পলায়নের কাহিনী

মূল

শাইখ আবুল লাইস কাসেমী রহ.

অনুবাদ

মাওলানা হামিদুর রহমান

 

(আজ ২০১৮ ইং সাল থেকে প্রায় ২০ বছর আগে) আরও দুই সঙ্গীসহ সৌদি আরবের রুওয়াইস কারাগার থেকে পলায়ন করার পর আল ফজরম্যাগাজিনকে প্রদত্ত শাইখ আবুল লাইস আল-লিবী আল-কাসেমী’র সাক্ষাৎকার।

(আল ফজর ম্যাগাজিন সংখ্যা-৪০, রবিউল আউয়াল ১৪১৯ হিজরী)

 

শাইখ আবুল লাইস আল-লিবি রহ.

এর সংক্ষিপ্ত পরিচিত

শাইখ আবুল লাইস আল-লিবি রহ. ছিলেন আল-কায়দার সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন একজন সিনিয়র কমান্ডার। আমেরিকান ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি তাকে একজন “গেরিলা যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ” হিসেবে অভিহিত করে থাকে।

১৯৮০ এর দশকে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে আফগান জিহাদে যোগ দেয়ার জন্য তিনি আফগানিস্তানে আসেন। ১৯৯৪ সালে লিবিয়ায় ফিরে গিয়ে স্বৈরশাসক গাদ্দাফির উৎখাতে যুক্ত হন। বিদ্রোহ ব্যার্থ হলে সৌদী চলে যান। সৌদীর রিয়াদের অবস্থিত খোবার টাওয়ারে বোমা হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কিছুদিন পর তিনি সেখান থেকে ছাড়া পান অথবা পালিয়ে আসতে সমর্থ হন এবং পুনরায় আফগানিস্তানের ফিরে এসে আল-কায়দা ও তালেবানের সাথে যোগ দেন।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উপজাতী এলাকা ছিল তার প্রধান বিচরণস্থল। সেখানে আল-কায়দার পক্ষ থেকে তিনি মুজাহিদদের প্রশিক্ষণের দায়ত্ব পালন করতেন। এছাড়া আল-কায়দার একজন মুখপাত্র হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে আল—কায়দার অফিশিয়াল মিডিয়া আস-সাহাবের একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে তাঁকে দেখা যায়।

একই বছর, তাঁর নির্দেশে মুজাহিদরা আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে হামলা করলে ২৩জন নিহত হয়। এ সময় বিমান ঘাঁটিতে অবস্থিত মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনীকে লক্ষ্য করেই এই দুঃসাহসী হামলা করা হয়েছিল।

শাইখ আল-লিবি ছিলেন আল-কায়দা এবং লিবিয়া, আলজেরিয়া, উজবেক ও তুর্কি মুজাহিদদের মধ্যে সেতুবন্ধন স্বরূপ। তিনি লিবিয়ান ইসলামিক ফাইটিং গ্রুপেরও (আলজামাআতুল ইসলামিয়াহ আল-মুকাতিলা) প্রধান ছিলেন। উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের জিহাদী শাখাগুলো ও আল-কায়দার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম সংযোগ স্থাপনকারী।  শাইখ আবুল লাইস রহ. ২০০৭ সালে আল-কায়দার কাছে লিবিয়ান ইসলামিক ফাইটিং গ্রুপের বাইয়াহবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দেন।

আমেরিকা তাঁকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ২লক্ষ ডলার পুরষ্কার ঘোষোণা করেছিল। ২০০৮ সালের জানুয়ারীতে শাইখ আবুল লাইস আল-লিবি পাকিস্তানের উপজাতী এলাকা ওয়াজিরিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলা নিহত হন। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন।

রুওয়াইস কারাগার থেকে পলায়নের কাহিনী

গত রমজান মাসের চব্বিশতম তারিখের সকাল আটটায় সৌদি ব্যবস্থা ও তার দুর্ভেদ্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিংবদন্তী একটি কঠিন বিপদ ও প্রচন্ড চপেটাঘাতে কেঁপে উঠেছিল৷ কেননা তখন “আল-জামাআ’তুল ইসলামিয়াহ আল-মুক্বাতিলা” সংগঠনের তিন সন্তান জেদ্দা শহরের “রুওয়াইস কারাগার” নামক তাগুতী কারাগার থেকে পলায়ন করতে সমর্থ হন৷ অথচ এই কারাগারটিকে তাদের সকল নিরাপত্তামূলক কর্মপন্থা ও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে মডেল হিসেবে পেশ করা হত৷

ঐ সকল ভাইদের পলায়নের পর সৌদির নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ তাঁদেরকে গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর করুণায় তাঁরা সৌদির অঞ্চল ত্যাগ করে নিরাপদ ভূমিতে পৌছতে সক্ষম হন৷ তাঁদের নিরাপদ স্থানে পৌছার পর আমাদের “আল ফজর” পত্রিকার প্রতিনিধি তাঁদের সাথে সাক্ষাৎ করেন৷ আর তাঁরা হলেন, শাইখ আবুল লাইস কাসেমী, ভাই বাশীর আব্দুল কারীম ও ভাই আবু মুহাম্মাদ যাবী৷ আল ফজর পত্রিকার এই সাক্ষাৎকারে কারাগারের পরিস্থিতি ও সেখানে সৌদী রাজপরিবারের পুলিশদের হাতে তাউহীদপন্থীরা কি ধরনের আচরণের সম্মুখীন হন সেটা ও তাঁদের পলায়নের ধরণ উঠে এসেছে৷

আল ফজরঃ রুওয়াইস কারাগারে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যাবস্থাদি থাকা সত্ত্বেও আপনারা পলায়নে সমর্থ হলেন কিভাবে?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের জন্য যেভাবে তিনি নির্দেশ করেছেন৷ প্রথমতঃ তো প্রত্যেক মুসলমানই এ কথা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে আদিষ্ট বিষয় আদায়ে অক্ষমতা প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন৷ আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে দ্বীনের ভেতর কোনরুপ ত্রুটি করতে নিষেধ করেছেন এবং আমরা যেন কাফেরদেরকে মুসলমানদের কোন ব্যক্তিসত্তার মালিক হতে সুযোগ না দেই৷

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন-

ولن يجعل الله للكافرين على المؤمنين سبيلا

অর্থঃ “আল্লাহ্ কিছুতেই মুমিনদের প্রতিপক্ষে কাফিরদেরকে বিজয়ী করবেন না”৷ (সুরা নিসা: ১৪১)

এ খোদায়ী নির্দেশেরই সূত্র ধরে জেদ্দা শহরের রুওয়াইস কারাগারের ভাইয়েরা তাগুতদের ফাঁদ থেকে বের হওয়া ও পলায়ন করার পথ খুঁজে বের করার জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন৷ প্রথম দিনগুলো থেকেই আমরা পলায়নের কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম৷ কিন্তু আমাদের দুইটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে৷ এই দ্বিতীয় উদ্যোগটিই ভাই বাশীর আব্দুল কারীম একাকী গ্রহণ করেছিলেন এবং তাতে তিনি সফল হয়ে কারাগার থেকে বেরও হয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু তথাপি তিনি ধরা পড়ে গিয়েছিলেন৷ কেননা আমরা ম্যাপ একেছিলাম ঠিকই; কিন্তু তার পাঁ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে তিনি পলায়ন চালিয়ে যেতে পারেননি ও বিষয়টি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল৷ মোটকথা প্রথম ও দ্বিতীয়বারে আমরা কারাগার থেকে বের হতে সমর্থ হইনি৷

আল ফজরঃ এই দ্বিতীয় পলায়নটি কিভাবে সম্পাদিত হয়েছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ ভাই বাশীর একটি স্বতন্ত্র সেলে ছিলেন৷ সেই সেলে একটি করিডোর ছিল, যার মাথায় দরজা রয়েছে৷ ভাই বাশীর সেখানে খাবারের ট্রলি প্রবেশের সুযোগটিকে কাজে লাগায়৷ কেননা খাবারের ট্রলির জন্য দরজাগুলো খোলা হতো৷ সুতরাং যখন ভাই বাশীরের জন্য দরজা খোলা হল ও এদিকে করিডোরের দরজাও খোলা রয়েছে, তখন ভাই বাশীর নিজেকে কারাগার মাস্টার ও সামরিক গার্ডদের দৃষ্টির আড়াল করতে সমর্থ হন ও নিজেকে কারাগারের অভ্যর্থনাকক্ষে দেখতে পান৷ তখন তিনি দ্রুত গতিতে তিনশো মিটার দৌড়ে গিয়ে তদন্ত কক্ষের কাছাকাছি কারাগারের প্রান্তে পৌছে যান৷ দেয়ালের উচ্চতা তিনি ভেতর দিক থেকে তিন মিটার উঁচু দেখতে পেয়ে কারো সহযোগীতা ছাড়া তাতে চড়তে সক্ষম হন ও নিজেকে দেয়ালের ওপর আবিষ্কার করেন৷ এরপর তিনি বাইরে লাফ দেন৷ অথচ বাইরের দিক থেকে দেয়ালটির উচ্চতা ছিল ছয় থেকে সাত মিটার৷ লাফ দেওয়ার সময় তিনি তার পায়ের ওপর পড়েছিলেন৷ ফলে তা ভেঙ্গে যায় এবং কারাগারের রক্ষীবাহিনী তার পিছু নিয়েছিল ও কারাগার থেকে তিনশো-চারশো মিটার দূরে যাওয়ার পর তাকে ধরে ফেলে৷

আল ফজরঃ আপনাদের সর্বশেষ পলায়ন কর্মতৎপরতা সম্বন্ধে কিছু বলুন? 

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আমরা অনেক সময়ই পলায়নের উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম৷ একপর্যায়ে আমরা এমন কিছু জিনিস অর্জন করতে সমর্থ হই, যা আমাদের জন্য পলায়নের কয়েকটি পন্থা সহজসাধ্য করে দেয়৷ আসলে দূর থেকে কারাগারগুলো দেখতে অত্যন্ত সুরক্ষিত দূর্গসদৃশ মনে হয়; কিন্তু বাস্তবে সব ঠুনকো৷

আল ফজরঃ ঐ জিনিসগুলো কি যা আপনারা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিলেন? 

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ হাত পায়ের শিকলের চাবির মত কয়েকটি জিনিস৷ আমরা সেগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে অর্জন করেছিলাম৷ সেখানে পলায়নের অনেক কৌশলই আমাদের মাথায় ছিল; কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো থাকতো একাকী পলায়নের পন্থা৷ আর আমরা যতটা সম্ভব বড় থেকে বড় জামাত নিয়ে পলায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ তাই আমরা সে সকল পরিকল্পনাগুলোকে উপেক্ষা করি ও সতর্কতার সাথে কাজ সম্পন্ন করি৷ কেননা আগের পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল৷

আর আমাদের পলায়নের ধরণ এই ছিল যে, আমরা যেস্থানে আটক ছিলাম তা ছিল একটি প্রশস্ত ভবন৷ যার আটটি কক্ষ ছিল ও একটি দ্বারা আরেকটিতে প্রবেশ করা যেত৷ এই ভবনের এক কর্ণারে ছয়টি টয়লেট ছিল এবং টয়লেটগুলোর জানালা থেকে সেই করিডোরটি উকি দিয়ে দেখা যেত, যা লোহার বেষ্টনী দ্বারা আচ্ছাদিত সূর্যালোক গ্রহণ চত্বরের দিকে চলে গেছে৷ সুতরাং আমরা যখন লোহার করাত সংগ্রহ করতে পারলাম তখন আমাদের চিন্তাধারা এই ছিল যে, আমরা এয়ারপাম্প (বায়ুনিষ্কাশনযন্ত্র) গুলোর কোন একটি দ্বারা বেরিয়ে যাব, যা টয়লেটের ভেতর রয়েছে৷ এভাবে যে, এক ভাই এয়ারপাম্প দ্বারা সেই করিডোরে নেমে যাবে, যা বন্দীদের বের হওয়ার জন্য একমাত্র রোদ পোহানোর সময়ই খোলা হয়৷ এরপর তার মাঝে ও সূর্যালোক গ্রহণ চত্বরের মাঝে শুধুমাত্র একটিই দরজা থাকবে৷ আল্লাহর শুকরিয়া যে, আমরা গার্ডদেরকে প্রতারিত করতে সমর্থ হওয়ায় সেই দরজায় এমন একটি তালা ঝুলানো ছিল, যা আমরা নষ্ট করে দিয়েছিলাম৷ ফলে এ দরজাটিও আমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল৷ কয়েকদিন পর আমরা ভাই বাশীরের নিকট করাতটি দিলাম৷ তিনি এয়ারপাম্প দিয়ে বের হতেন ও সেটিকে পূর্ববস্থায় রেখে দিতেন৷ করিডোর অতিক্রম করে তিনি দরজা দিয়ে বের হয়ে সূর্যালোক গ্রহণ চত্বরে পৌছে যেতেন৷ এরপর একটি দরজা রয়েছে, যার দ্বারা এমন করিডোরে প্রবেশ করা হয়, যা কক্ষগুলোকে ঘিরে রেখেছে৷ তখন ভাই বাশীর দরজাটি কাটতে লেগে গেলেন৷ অতপর সেই করিডোরে প্রবেশ করে কক্ষগুলোর পিছনে উপনীত হলেন এবং কক্ষগুলোর একটি এয়ারকন্ডিশনারের ওপর চড়ে নিজেকে ছাদের ওপর আবিষ্কার করলেন৷ এখন তার মাঝে ও বহির্ভাগের মাঝে কেবলমাত্র লোহার গ্রিলই অন্তরায় হয়ে আছে৷ তখন তিনি তা একজন মানুষ বের হতে পারে এই পরিমাণ চতুষ্কোণী করে কাটলেন৷ আর এসব কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় নিয়ে পরিস্থিতি ও প্রহরার প্রতি লক্ষ করে, যা অনেক সময় কাজ চালিয়ে যেতে বাধার সৃষ্টি করতো৷ আমরা বিভিন্ন অনুকূল সময় নির্বাচন করতাম ও গার্ডদেরকে ধোঁকা দিতাম৷ সেখানে আমাদের অনেক কাজ সামরিক বাহিনী করে দিয়েছে, যেগুলেতে আমরা ধরাও পড়ার উপক্রম হয়েছিলাম; কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছেন৷

আমরা পলায়নের প্রতীক্ষিত দিনটির অপেক্ষা করছিলাম এবং সে দিনটি হিসেবে গত রমজানের চব্বিশতম তারিখ বুধবারকে ধার্য করলাম৷ আমরা পলায়নের জন্য এই দিনটিকে এ কারণে নির্বাচন করলাম যে, সৌদির সকল কর্মখাতে রমজান মাসের শেষ দশককে সরকারি ছুটি হিসেবে গণ্য করা হয়৷ আর বুধবার সাধারণতঃ কাজের সময় শুধুমাত্র যোহর পর্যন্ত থাকে ও বৃহস্পতিবার শুক্রবার সপ্তাহান্তের ছুটির দিন এবং সুতরাং আমরা এই দিনটিকে নির্বাচন করলাম যেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ঠান্ডা থাকে৷ তেমনিভাবে সকালবেলা এজন্য যে, কেননা তখন মানুষরা ঘুমিয়ে থাকে৷

সুতরাং আলহামদুলিল্লাহ্ সবকিছু সুবিন্যস্তভাবেই ছিল৷ কেননা প্রথমে ভাই আবু মুহাম্মাদ যাবী এয়ারপাম্পের ফাঁক দিয়ে বের হন, তারপর আমি ও সর্বশেষ ভাই বাশীর আব্দুল কারীম বের হন৷ পরিশেষে আমরা বাইরের দেওয়ালের চূড়ায় পৌছি এবং ছয় থেকে সাত মিটার উঁচু থেকে মাটিতে লাফ দেই৷

আল ফজরঃ এরপর আপনারা কোথায় গিয়েছিলেন?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আলহামদুলিল্লাহ্ আমরা জাজিরাতুল আরবে দীর্ঘদিন যাবৎ অবস্থান করায় আমাদের নিকট শহরের কয়েকটি পথ জানা ছিল৷ তাই সচরাচর যে পথে মানুষের আনাগোনা থাকে না আমরা সে পথে মক্কায় পৌছি৷ এরপরও আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের তাকদীরে রেখে ছিলেন যে, আমরা পথিমধ্যে এক গার্ডের সাথে সাক্ষাৎ করবো৷ সে আমাদেরকে চিনতো৷ এস্থানে আমাদের উপস্থিতি তার নিকট অদ্ভূত মনে হওয়ার কারণে আমরা তার চেহারায় হতবুদ্ধিতা দেখতে পেলাম৷ এরপর আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের জন্য গন্তব্যে পৌছা সহজ করে দিয়েছেন৷

আমরা মক্কা ও জেদ্দায় তাগুতের পুলিশদের কথা শুনতাম ও তাদেরকে দেখতাম যে, তারা আমাদের তালাশ করছে৷ এমনকি আমাদের এক ভাই কারাগার পরিচালককে মক্কার হেরেম শরিফে দেখেন যে, সে আমাদেরকে অনুসন্ধান করছে ও তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে রয়েছে৷

আল ফজরঃ তার মানে আপনারা মক্কার হেরেম শরিফেও প্রবেশ করেছেন? 

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ্ … এবং তাতে নামাজও পড়েছি৷

আল ফজরঃ আপনাদের পলায়নের পর সব ধরণের নিরাপত্তামূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও আপনারা জাজীরাতুল আরব থেকে কিভাবে বের হতে সমর্থ হলেন? যেহেতু সকল সীমান্ত অতিক্রম পয়েন্ট ও গেটগুলোতে আপনাদের ছবি বিতরণ করে দেওয়া হয়েছিল ও হারামাইনের পুলিশদের মাঝে তা বিতরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল?! 

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ এরচে ভয়ঙ্কর হল যে, তারা সেগুলো সাধারণ নাগরিকদের মাঝেও বিলি করতো৷ বরঞ্চ আমাদের চেনাশোনাদের মধ্যে আমাদের পলায়নের পূর্বে যারা রুওয়াইস কারাগারে ছিল (ও মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে গেছে,) তাঁদেরকেও পর্যন্ত গ্রেফতার করে তারা৷ তাদের ধারণা ছিল হয়তো আমরা ঐ সকল ভাইদের নিকট আশ্রয় নিয়েছি৷

কারাগার থেকে পলায়নের পর আমরা প্রায় একমাসের কাছাকাছি জাজিরাতুল আরবে ছিলাম৷ জাজিরাতুল আরবে আমরা আলহামদুলিল্লাহ্ ঘুরে বেড়াতাম৷ একবার ভাই “আবু মুহাম্মাদ যাবী” ফেঁসে গিয়ে ছিলেন৷ কেননা এক পুলিশ তাকে সন্দেহ করেছিল ও তার চেহারা চিনে ফেলেছিল৷ কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ আবু মুহাম্মাদ তার থেকে পূনরায় পলায়ন করতে পেরেছিলেন৷ এ ঘটনাটি মক্কায় সংঘটিত হয়েছিল৷ এরপর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের জন্য জাজিরাতুল আরব থেকে বের হওয়া সহজ করে দিয়েছেন এবং আমরা বের হয়ে গিয়েছি৷

আল ফজরঃ যে কেউই এ ঘটনা শুনে সেই অবাক হয়ে যায় যে, জাজিরাতুল আরব থেকে আপনারা বের হলেন কিভাবে, পাঠকদের জন্য আপনার তা খুলে বলা সম্ভব হবে কি?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ শুরু ও শেষের যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য৷ আমাদের বের হওয়ার বিস্তারিত বিবরণে মুজাহিদদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিস্থিতির প্রতি বিবেচনা করতঃ এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো বলা মুশকিল, যা আপনাদের নিকট অস্পষ্ট নয়৷ তবে আমরা … পথ দিয়ে আমরা বেরিয়েছিলাম; কেননা আমরা মক্কা থেকে … এর … পর্যন্ত সদর দরজার রাস্তা দিয়ে দুরত্ব এমন পর্দা ও মুখোশ পড়ে অতিক্রম করেছিলাম, যা আমাদের পরিচিতি ও আসল চেহারাই মুছে দিয়েছিল এবং আমরা আলহামদুলিল্লাহ্ … পর্যন্ত পৌছতে সমর্থ হই ও তারপর বর্ডার যোগে … থেকে … এর দিকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হই৷ (এখানে শাইখ গুরুত্বপূর্ণ কোন ফায়েদার প্রতি লক্ষ্য রেখে জায়গার নামগুলো বর্ণনা করেননি।)

আল ফজরঃ আমরা একটু পিছনে ফিরে যাচ্ছি… সৌদি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে গ্রেফতার করার বাহ্যিক কারণ কি ছিল? এবং তা কখন সংঘটিত হয়েছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে রিয়াদে এক সপ্তাহের কাছাকাছি বোমা হামলার পর সৌদি সরকার মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী থেকে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী ইসলামপন্থীদের এই বলে দোষী সাব্যস্ত করে যে, তারাই এ হামলা চালিয়েছে৷ তখন সৌদি কর্তৃপক্ষ ইসলামমনা লোকদের মাঝে সাধারণভাবে ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান চালানো শুরু করে৷

এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে৷ আর তা হল, সৌদি সরকার শাইখ সফর আল হাওয়ালী ও শাইখ সালমান আল আউদাহ্ ও তাঁদের সহকর্মীদের গ্রেফতার করার পর প্রকৃত অবস্থা শনাক্ত করা, ইসলামপন্থীদের প্রকার নির্ধারণ করা ও তাঁদেরকে পার্থক্যকরণের একটি উপায় তালাশ করছিল এবং এটা জানতে চাচ্ছিল যে, সেখানে ইসলামপন্থীদের এমন কেউ রয়েছে কিনা, যারা সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার চিন্তা-ভাবনা রাখে? সুতরাং সেই বোমা হামলাটি ছিল তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ; কেননা তারা এলোমেলোভাবে গ্রেফতার করা শুরু করেছিল৷ সেই পরিস্থিতিতে আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের ভাগ্যে একটি ট্র্যাফিক দুর্ঘটনা ঘটান ও সেটার জেরধরে এক ভাই গ্রেফতার হন৷ তার গ্রেফতার হওয়ার সময় সেখানে একটি বাড়িতে সংগঠনের সাথে জড়িত কিছু জিনিসপত্র ছিল এবং তাতে এমন কিছু ছিল যে, যদি তা ফাঁস হয়ে যায় তাহলে তা সেই ভাইকে দোষী সাব্যস্ত করবে৷ তাই আমি ভাইকে রক্ষা করার জন্য সেগুলো সরিয়ে ফেলতে সে বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিই৷ তখন আমি দুর্ভাগ্যক্রমে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হই ও পুলিশ সেই বাড়িতে বিদ্যমান থাকে এবং সেখানেই আমি গ্রেফতার হয়ে যাই৷

আল ফজরঃ অতঃপর কি আপনাকে সরাসরি রুওয়াইস কারাগারে নিয়ে গিয়েছে?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ হ্যাঁ, সরাসরিই … আমাকে অজ্ঞানবস্থায় নিয়ে গিয়েছে৷

আল ফজরঃ অতঃপর কি ঘটেছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আল্লাহই একমাত্র সাহায্যস্থল৷ শুরুতেই তারা কোনরুপ জিজ্ঞাসাবাদ ও অবতরণিকা ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে আমাকে নির্যাতন করতে প্রবৃত্ত হয়ে যায়৷ তারা যখন আমার ইসলামী পরিচয় জানতে পারে তখন তারা আমার ভিতরের ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণকে বিলোপসাধন করতে চাইলো। আর তাদের ব্যাপারে আমি এমনটি ধারণা করেছিলাম৷ তাই যে ব্রিগেড আমাকে নির্যাতন করার দায়িত্বে ছিল, তার নাম ছিল আমিন যুক্বরুক্ব এবং যে মিশরীয় বংশোদ্ভূত ছিল ও তাকে কারাগারের জেনারেল ম্যানেজার মনে করা হত, সে ধর্মকে গালিগালাজ করে আমার সাথে কথা বলা শুরু করে তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, তারা তো আমাকে উত্তেজিত করতে চেষ্টা করছে৷ তাই আমি খেয়াল না করার ভাব দেখালাম৷ অতঃপর সে আরও কঠোরভাবে গালাগালি করা শুরু করে তখনও আমি মনোযোগ না দেওয়ার ভাব নিই৷ তারপর সে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিন্দা করা শুরু করে৷ কিন্তু যখন সে প্রতিবারই আমার মাঝে বেপরোয়া ভাব প্রত্যক্ষ করলো তখন সে কোনরকম রাখঢাক ব্যতিত কুকর্ম উদ্দেশ্য নিয়ে বাজারি শব্দে এককথায় বলল, “আজ যদি এখানে ইবনে বায, উসাইমীন (এভাবে আরো কয়েকজন মাশায়েখের নাম উল্লেখ করে বলল,) তারা যদি এখানে থাকত তাহলে আমি তাদের সকলকে করতাম”৷ এরপর তারা আমাদেরকে শাস্তি প্রদান করা শুরু করে৷

আল ফজরঃ আপনি কি তদন্তের ক্ষেত্রে রিয়াদের বোমা হামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয়েছিলেন?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আসলে তারা আমাদের থেকে শুধু এটাই চাচ্ছিল যে, আমরা যেন এ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে নিই৷ তারা আমাকে সৌদির চার ভাই গ্রেফতার হওয়ার আগপর্যন্ত দেড় মাসের কাছাকাছি সময় লাগাতার শাস্তি প্রদান করে৷ তাদের গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁদের ঘাড়ে রিয়াদের বোমা হামলার মুকাদ্দামা চাপিয়ে দেয়৷

আল ফজরঃ সৌদির চার ভাই গ্রেফতার হওয়ার আগে রিয়াদের বোমা হামলার সূত্রে আপনাদের সাথে কিরূপ আচরণ করা হয়েছে?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ সেখানে একটি তদন্ত কমিটি ছিল, যাদের প্রধান ছিল জেনারেল ম্যানেজার ব্রিগেড আমিন যুক্বরুক্ব এবং দৈনন্দিন তাদেরকে তত্বাবধায়ন করত সালেহ বিন তহা খাসীফান, যাকে সৌদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নায়েফ বিন আব্দুল আজিজের ভারপ্রাপ্ত মনে করা হত৷ সেই তদন্ত কমিটিটি গঠন করা হয়েছিল নয় মিশরীয় তদন্তকারী ও দশ সৌদী তদন্তকারীর সমন্বয়ে৷ কিন্তু সেখানে সৌদী তদন্তকারীদের তেমন একটা ভূমিকা থাকত না; কেননা তারা সহজ-সরল ছিল এবং তদন্তবৃত্তিতে তারা ততটা দক্ষ প্রকৌশলী ছিল না৷ তারা যখন আমাদের নিকট এমন কিছু জিনিস পেল, যা আমাদের আল-জামাআ’তুল ইসলামিয়াহ আল-মুক্বাতিলা সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ বহন করে তখন তারা নিয়ম-নীতি ও কাজের মাঝে যোগসূত্র তৈরী করে বলল, “এ হামলা তোরা ছাড়া আর কেউ করেনি”৷ বিশেষকরে কতক সৌদি বন্দীদেরকে তাদের তদন্তের সময় “এ হামলা কারা করেছে বলে তোদের মনে হয়?” এই প্রশ্ন করা হলে তারা বলেছিল, আমরা মনে করি জাজিরাতুল আরবে ইসলামী জিহাদি আন্দোলনের যে সকল ভিনদেশী অনুসারীরা বিদ্যমান রয়েছে তারাই এ হামলা চালিয়েছে৷ তাদের এ অভিব্যক্তির কারণে রিয়াদ বোমা হামলা মুকাদ্দামার অভিযোগের প্রথম তীরটি আমাদের দিকেই ছুটে এসেছে৷

আল ফজরঃ তারা কি আপনাদেরকে এই অভিযোগের ভুল স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য বাধ্য করেছে?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ অবশ্যই … বরঞ্চ তার চেয়েও আগে বেড়ে বিভ্রান্তিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি নিয়ে ক্যামেরায় ধারণ করা হত৷ ফলে এ সকল কর্মকান্ডের চাপে তখন আমরা স্বীকার করেছিলাম৷

আল ফজরঃ এ সকল ক্যামেরায় ধারণকৃত স্বীকারোক্তির পর কি আপনাদেরকে বিচারে পাঠিয়ে দিয়ে ও প্রকাশ্যে আপনাদেরকে অভিযুক্ত করার মাধ্যমে আপনাদের প্রতি সকল হুমকি-ধমকি শেষ হয়ে গিয়েছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ তারা আমাদেরকে এ কথার ওপর ভিত্তি করে ক্যামেরাবন্দি করত যে, বোমা হামলাটি আমরাই চালিয়েছি; বিশেষকরে আমি৷ কেননা তারা আমাকে নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেছিল৷ সেটা হল, তারা আমাকে বিভ্রান্তিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন প্রয়োগের পর আমাকে দোষী সাব্যস্ত করত৷ এমনকি তারা আমার জন্যে ক্যামেরার স্ক্রিনের নীচে একটি কাগজ রেখে দিত৷ যেখানে বড়বড় অক্ষরে ঐ সকল কথা লেখা থাকত, যেগুলোর উচ্চারণ করা বা স্বীকার করাটা তারা আমার নিকট প্রত্যাশা করত৷ সেখানে পূর্ণ পরিকল্পনার নীলনকশা আঁকা থাকত যে, কিভাবে আমি বোমা হামলাটি চালিয়েছি৷ এ সকল আচরণই আমার সাথে করা হয়েছে৷

আল ফজরঃ আপনাদের এই স্বীকারোক্তি কি উক্ত চার ভাই যে বিবৃতি পেশ করেছে তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আমি কি বলেছিলাম তা আমি সঠিকভাবে শতভাগ মনে করতে পারছিনা৷ কিন্তু আমি যখন উক্ত চার ভাইকে টেলিভিশনে বিবৃতি দিতে দেখলাম তখন তা প্রায় একই কথা ছিল৷

আল ফজরঃ কারাগারে থাকাকালীন কি আপনারা সেই চার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আমরা একসাথেই ছিলাম৷ আমাদেরকে এক কক্ষে নির্যাতন করা হত ও তাঁদেরকে নির্যাতন করা হত আরেক কক্ষে৷ সম্ভবত উক্ত চার ভাই স্বীকার করেছিলেন যে, তাঁদের আসলেই স্বশস্ত্র কর্মকাণ্ড নিয়ে চিন্তা-ভাবনা রয়েছে৷ তাই এরপর তাঁদেরকে রিয়াদ বোমা হামলার দায়ে অভিযুক্ত করেছে৷ আমি তাঁদের একজনের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম তাঁর নাম হল মুছলেহ শামরানী; কিন্তু পরিস্থিতি আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেয়নি৷ তখন সে لا إلٰه إلا الله প্রমাণিত করার জন্য আমার প্রতি শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করল৷ অতঃপর আমিও তাঁকে একই ইশারা করলাম৷ কিন্তু আমরা তাঁদের খবরাখবর শুনতাম; কেননা তাঁরা আমাদের পাশের সেলেই থাকত এবং আমরা তাঁদের কোরআন তেলাওয়াত ও ফরিয়াদ শুনতে পেতাম৷

আল ফজরঃ তাঁদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার পূর্বে তাঁদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা কিরূপ ছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আসলে কারাগারের ভেতর তাঁদের যে মহানুভবতা প্রকাশ পেয়েছে। দরকার ছিল যে, এখন আমি তাঁদের ব্যাপারে যা বলব তাঁর চাইতে অনেক বেশী মনোমুগ্ধকর ভাষায় তা ব্যক্ত করা৷ বাস্তবিকভাবেই সেই চার ভাইয়ের বার্তা ও অবস্থানের ভেতর অন্যান্য ঐ সকল ভাইদের জন্য অবিচলতা ও অটলতার সর্বোত্তম পাথেয় রয়েছে, যাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে৷ তাদেরকে এমনভাবে শাস্তি প্রদান করা হত যে, যদি তা বর্ণনা করা হয় তাহলে তা হবে অবিশ্বাস্য বর্ণনাতীত ও কল্পনাতীত৷ তাঁরা প্রচন্ড মর্মান্তিক শাস্তির মুখোমুখি করা হত৷ এমনকি ক্যামেরাবন্দি করার দিন পুলিশেরা বাধ্য হয়েছে নির্যাতনের ছাপ মুছতে ভাইদের মুখে ম্যাকাপ ব্যাবহার করতে৷

আমি তাঁদের কিছুটা মাহাত্মপূর্ণ অবস্থানের কথা বর্ণনা করছি- ভাই মুছলেহ শামরানীকে যখন কারাগার প্রধান হত্যার হুমকি দিল তখন তিনি নিজের গর্দানের দিকে ইশারা করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানালেন যে, “গর্দান একমাত্র তিনিই উড়াবার ক্ষমতা রাখেন যিনি তা সৃষ্টি করেছেন৷ আর তুমি তো আলকাতরার মত, যা কোনকিছুরই সম্মান রাখে না”৷ ভাই রিয়াদ হাজেরী’র মহানুভবতাও ছিল প্রবাদতুল্য৷ তাঁকে সেনাদের একদল থেকে আরেক দলের হাতে এ কথা বলে হস্তান্তর করা হত যে, তারা তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে; কিন্তু তাঁর চেহারার আকৃতি আগের মতই থাকত৷ মূলত তাঁদের হৃদয়ে মৃত্যুভয়ের চাইতেই বড় একটি জিনিস বিদ্যমান ছিল৷

আল ফজরঃ আপনি আমাদের নিকট বর্ণনা করেছিলেন যে, আপনারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন, এমনকি তদন্ত শুরু করার পূর্বেই৷ তো রুওয়াইস কারাগারে সাধারণত কি ধরণের শাস্তি প্রদান করা হয়?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আমি আন্দালুসিয়ার জেরা ট্রাইবুনালের শাস্তির বর্ণনা থেকে নিয়ে শুরু করে বহু কারাগারের শাস্তির ধরণ ও প্রকার পড়েছিলাম৷ সেগুলোতে আমি যা যা পড়েছিলাম তার সবই আমি পেয়েছি; হয় আমি নিজে দেখেছি অথবা যার সাথে সেই আচরণ করা হয়েছে তার কাছ থেকে শুনেছি৷ তাঁদের আইনগত বা ঐতিহ্যগত বা সংবিধানগত এমন কোন প্রতিবন্ধকতা বা নিয়ম-নীতি নেই, যা তাদেরকে শাস্তির এমন কোন প্রকার অবলম্বন করতে বারণ করে, যা দ্বারা তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বীকারোক্তি বন্দিদের থেকে উদ্ধার করা সম্ভবপর বলে মনে করে৷ তাই তাদের নিকট শাস্তির বহু ধরণ রয়েছে৷ বিদ্যুৎ উদ্ভূত ধরণই রয়েছে কয়েকটি৷ তাছাড়া হাতকড়া পড়িয়ে গ্রীল বা ছাদের সাথে লটকে রাখা, বন্দিদের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বসতে ও ঘুমোতে না দেওয়া এবং এর মধ্যবর্তী সম্পূর্ণ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা, পাশাপাশি বিভ্রান্তিকর ও অনুভূতি বিলোপকারী ট্যাবলেট ও ইনজেকশন প্রয়োগ করা …৷ সুতরাং আমি মনে করি যে, এ সকল দশা অতিক্রম করার পর একজন মানুষ বাস্তবিকভাবেই পাগলপ্রায় হয়ে যায়৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমারও বোধশক্তি লোপ পেয়েছে৷

আর শাস্তির নিকৃষ্টতম প্রকার হল, মান-ইজ্জত লঙ্ঘন করা৷ কেননা তারা বলপূর্বক এক বন্দিকে অপর বন্দির সাথে অপকর্মে লিপ্ত হতে নির্দেশ দিয়ে থাকে৷ কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ এ কাজে তারা খুব কম মানুষকেই বাধ্য করে থাকে৷

আর বিদ্যুৎ ব্যবহৃত ধরণ তিনটিঃ

প্রথম পদ্ধতি: একটি কাষ্ঠখন্ডের ওপর একজন মানুষকে সটান করে শুইয়ে দেওয়া হবে৷ অতঃপর একটি শিকল দ্বারা তার সারা শরীর পেচিয়ে তাকে আটকে দেওয়া হবে৷ এরপর বিদ্যুৎ সঞ্চালিত করে দেওয়া হবে৷

দ্বিতীয় পদ্ধতি: বৈদ্যুতিক চাবুক, যা আপনাকে স্পর্শ করা মাত্রই আপনার অনুভূত হবে যে, আপনার ঘিলু উথলাচ্ছে৷

তৃতীয় পদ্ধতি: বৈদ্যুতিক তার, এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় তারের মাথায় একটি ক্লিপ লাগিয়ে দেওয়া হয়, যা অন্ডকোষ বা উভয় কান বা বুককে আঁকড়ে ধরে রাখে৷

আর তদন্তের সময় সাধারণত বন্দিরা সবধরনের কাপড় থেকে বস্ত্রহীন হয়ে একেবারে উলঙ্গ থাকে৷ এগুলো ছাড়াও সেখানে আরো অনেক ধরণের শাস্তি রয়েছে৷

এ হিসেবে ব্রিটেনস্থ সৌদি রাষ্ট্রদূত গাজী আব্দুর রহমান কুছাইবী, যে একটি ব্রিটিশ রেডিও চ্যানেলে এসে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিল, “সৌদিতে কোন প্রহার, নির্যাতন ও জবরদস্তি করা হয় না” তাকে আমার এ কথা বলতে মন চায় যে, (অথচ) আমরা সেই দিনগুলোতে শাস্তির সর্বনিকৃষ্ট ধরণটি ভোগ করেছি৷ তদন্তকারীরা ম্যাগাজিন নামক পত্রিকায় ভাষান্তরিত তার সেই কথাটি পরস্পরে একে অন্যের নিকট ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে বলাবলি করত ও আলোচনা করত যে, যখন কুছাইবীর প্রতি তার প্রভুরা ক্রুদ্ধ হয়েছিল তখন এই কুছাইবী নিজেই কারাগারে ও চাবুকের চাপে কিরূপ অবস্থায় দিন কাটিয়েছিল যে, পরিশেষে সইতে না পেরে সে বাহরাইনে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিল ও পরবর্তীতে বাহরাইন সরকার মধ্যস্থতা করে তাকে স্কয়ার রয়েল আদালতে ফিরিয়ে দিয়েছিল৷

আল ফজরঃ ইতিপূর্বে রুওয়াইস কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত এক ভাই “আল ফজর” পত্রিকাকে বলেছিলেন যে, এক শিয়া তদন্তকারী নাকি তদন্তকালে বন্দি ভাইদের মুখে পেশাব করে দিত?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ এটাতো একটি স্বাভাবিক বিষয় —আল্লাহ্ আপনাদেরকে সম্মানিত করুন— বরঞ্চ দুরবস্হা তো এই পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, তারা নিজেদের বীর্য পর্যন্ত বন্দিদের মুখে তুলে দিতে কুন্ঠাবোধ করে না৷

আল ফজরঃ বন্দিদের স্ত্রীদের সম্বন্ধে কিছু বলুন যে, তাঁদের দুর্গতি কেমন হয়?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ আমাদের সাথে আমাদের মুকাদ্দামায় জড়িত এক ভাই ছিল৷ তাঁকে যে বিষয়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল সে যখন তা স্বীকার করতে অস্বীকার করেছিল তখন তারা তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিল ও তাঁকে বলেছিল যে, “যদি তুই স্বীকার না করিস তাহলে আমরা তোদের সামনে তার সাথে কুকর্ম করব”৷ তখন সেই ভাইয়ের জন্য তাদের লিখিত কাগজে স্বাক্ষর করা ছাড়া কোন উপায় বাকি থাকেনি৷ বহু বন্দির ক্ষেত্রেই এভাবে এ কাজের দ্বারা হুমকি প্রদান করা হয়ে থাকে৷ এর মাঝে আমি বলে নিই যে, কারাগারে অনেক ভাইদেরই স্ত্রী তাঁদের সাথে থাকে৷ বিশেষকরে সৌদিয়ান নয় এমন ভাইদের৷ তাঁদেরকে তারা ভাইদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে৷ তাদের নিকট এটি একটি সাধারণ ব্যাপার৷ তবে এ কাজে প্রবৃত্ত হতে অর্থাৎ বোনদের ইজ্জতহানী করতে আমি নিজে কখনও দেখিনি ও নির্ভরযোগ্য কারো কাছ থেকে শুনিনি, কিন্তু কতিপয় সৈন্যকে বলতে শুনেছি যে, তারা এ কাজ করেছে৷

আল ফজরঃ আপনারা কি আপনাদের পলায়নের পূর্বে সৌদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নায়েফ বিন আব্দুল আজিজের লিবিয়া সফরের কথা জানতে পেরেছিলেন? কেননা বলাবলি হচ্ছিল যে, সে রুওয়াইস কারাগারের লিবিয়ান যুবকদের ব্যাপারে দরকষাকষি করবে৷ সেটাই কি আপনাদের পলায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল কারণ ছিল বা পলায়নে তাড়াহুড়া করার কারণ ছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ বাস্তবিকপক্ষে তার লিবিয়া সফরকালেই আমাদের পলায়নটি সংঘটিত হয়েছিল ঠিকই; কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সৌদি মিডিয়া নায়েফের ব্যাপারে কিছুই বলছিল না৷ অথচ একসময় টেলিভিশনে সারাদিন এই একই ক্যাসেট বাজত যে, তাকে সম্বর্ধনা জানানো হয়েছে…। সে সাক্ষাৎ করেছে…। পাঠিয়েছে…। গিয়েছে… ইত্যাদি৷ সুতরাং হঠাৎ তার এভাবে হারিয়ে যাওয়াটা আমাদেরকে অবাক করে দিয়েছে৷

আল ফজরঃ তাহলে কি সে সফরটি সঙ্গোপনে হয়েছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ হ্যাঁ… শুরুতে এভাবেই হয়েছিল৷ কিন্তু তা সম্পন্ন করার পর প্রচার করা হয়েছিল৷

আল ফজরঃ আপনাদের কারাগার থেকে পলায়ন করার পর কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল? নিরাপত্তামূলক ব্যাবস্থাগুলো কি আগের চেয়ে আরো জোরদার করা হয়েছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ সৌদি ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিরা ভালভাবেই জানে যে, তা একটি অবর্ণনীয় অধঃপতিত ব্যবস্থা৷ এবং তবুও তারা তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে নারাজ৷ অন্যথায় ভিনদেশী বন্দিদের এমন পথ দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়া, যা তাদের নিকট আমার জানামতে এখন পর্যন্ত উদঘাটিত হয়নি এমন একটি ব্যাপার যা তাদের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে৷ এমনকি বন্দিদেরকে যেন পরবর্তীতে দোষারোপ না করা হয় সেজন্যে তারা তিনজনের পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ দেওয়ার আগপর্যন্ত তারা আমাদের পলায়নের কথা জানতেও পারেনি৷ দেখুন তারা সকল বন্দীদেরকে হাতকড়া পড়িয়ে রেখেছিল৷ অতঃপর আমাদের পলায়নের সময় কারাগারে সামরিক গার্ড বসিয়ে রেখেছিল ও সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে পালাক্রমে কারাগার মাস্টাররা দায়িত্বরত থাকত৷ এবং তারা বন্দিদের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা মেজর পদের আবু ইয়াসিরকে সামরিক চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছে, যাকে সালেহ আল মাত্বীরী বলে ডাকা হত৷

আল ফজরঃ রুওয়াইস কারাগারকে অত্যন্ত গৌরবান্বিত মনে করা হত৷ বিশেষকরে সৌদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলত যে, রুওয়াইস কারাগারবাসীরা রিয়াদের হাইর কারাগারে যারা রয়েছে তাদের চেয়ে বেশী নিরাপদ…৷ তো এ কারাগারের ব্যবস্থাপনা ভেতরের দিক থেকে কেমন ছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ কারাগারটি জেদ্দা শহরের মাঝে একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত৷ তাতে বিভিন্ন রকমের পাঁচটি ভবন রয়েছে৷ তার মধ্যে একটি নারীদের জন্য নির্দিষ্ট৷ বাকিগুলো সব তালাবদ্ধ থাকে৷ সেগুলোতে তিন প্রকারের সেল রয়েছেঃ কিছু সেল রয়েছে একেবারেই সংকীর্ণ, যেগুলো শারিরীক ও মানসিক যন্ত্রণা প্রদানের সূচনালগ্নকার কঠিন মূহুর্তগুলোর জন্য৷ আর কিছু সেল রয়েছে মোটামুটি বড়৷ সেখানে পাঁচটি ভবন ও প্রায় চল্লিশটি সেল রয়েছে৷ আর তদন্ত ব্যবস্থাপনাটি অন্যত্র রয়েছে৷

আল ফজরঃ রুওয়াইস কারাগারে বন্দি সংখ্যা কত ছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ বন্দি সংখ্যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের থাকে৷ কোন কোন সময়ে তা ভরে যায় এবং তখন বন্দি সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় তিনশত৷

আল ফজরঃ কারাগারে আপনাদের প্রতি খোবার টাওয়ার বোমা হামলার প্রভাব কিরূপ পড়েছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ যখন বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল তখন তারা কিছু লোককে গ্রেফতার করে এবং আমাদের কাছে তাদের ব্যপারে জানতে চাওয়ার জন্যে আমাদেরকে নতুন করে তদন্তের জন্য ফিরিয়ে আনে এবং নতুন করে আবার নির্যাতন করা শুরু করে৷ কিন্তু শিয়াদের ব্যাপারে আমরা আর কিইবা জানাব!!

আল ফজরঃ তাহলে কি তারা শিয়াদের অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই শিয়াদের প্রতি ঝোঁকপ্রবণ ছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ জ্বী হ্যাঁ… তারা শিয়াদেরকে প্রচন্ড ভয় করে৷ এমনকি তদন্তকারীরা যখন আপনাকে শিয়াদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে তখন যদি আপনি রিপোর্ট দেন যে, আমার ধারণা মতে এ কাজ তারাই করেছে, তাহলে তারা আপনাকে প্রচুর পরিমাণে প্রহার করবে৷ কিন্তু আপনি যখন এ কাজের সাথে শিয়াদের সংশ্লিষ্টতার ব্যপারে কিছুই ব্যক্ত করবেন না তখন আপনার পরিস্থিতি সহজতর হয়ে যাবে৷ কিন্তু কাজটি মৌলিকভাবে শিয়া দলের প্রতি আরোপিত হওয়ার কারণে তদন্তকারীরা বাধ্য হয়েছিল তাদের ব্যপারে প্রশ্ন করতে৷

আল ফজরঃ কারাগারে কি এই মুকাদ্দামায় আপনাদের সাথে কোন শিয়া বন্দী ছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ কস্মিনকালেও না… বরং শিয়ারা সম্মানিত থাকে৷ এমনকি তারা যদি এই মুকাদ্দামা ব্যতিত অন্য মুকাদ্দামায়ও জড়িত থাকে তবুও৷ এ কারণে কারাগারে আমাদের সাথে কোন শিয়া ছিল না৷

আল ফজরঃ আপনাদেরকে যখন রিয়াদ বোমা হামলায় অভিযুক্ত করা সম্পন্ন হলো না, তখন আপনারা সেখানে কোন্‌ মকদ্দমায় অভিযুক্ত হয়ে রয়ে গিয়েছিলেন? আপনাদের ক্ষেত্রে কি কোন বিচারিক বিধান জারী করা হয়েছিল?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ রিয়াদ মুকাদ্দামার পর এবং তাতে উক্ত চার ভাইকে অভিযুক্ত করার পর আমাদের জন্য একটি বিশেষ মুকাদ্দামার দ্বার উন্মোচন করা হয়৷ আর তা হচ্ছে, আলজামাআ’তুল ইসলামিয়াহ আলমুক্বাতিলা সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতার মুকাদ্দামা৷ যা হেজাজের ভূমিতে বিদ্যমান রয়েছে এবং যারা বিভিন্ন দা’ওয়াতী তৎপরতা চালিয়ে থাকে৷ বিশেষকরে হজ্জ ও ওমরাহরত লিবিয়ান যাত্রী কাফেলাতে৷ তারা আমাদেরকে এ মুকাদ্দামায় অভিযুক্ত করে দোষী সাব্যস্ত করার পর আদালতে নিয়ে যায়৷ তারপর বিচারপতি আমাদেরকে বসান ও তিনিও আমাদেরকে সেই মুকাদ্দামায় দোষী সাব্যস্ত করেন; কিন্তু তিনি আমাদের ব্যপারে কোন রায় দেননি বরং বলেছেন যে, তোমরা অচিরেই কারাগার ব্যবস্থাপনা থেকে তোমাদের রায় শুনতে পাবে৷ আলহামদুলিল্লাহ্ এর আগেই আমরা বেরিয়ে চলে এসেছি এবং তাদের অবিচারমূলক রায় আমাদের শুনতে হয়নি৷

এখানে আমি সেই বিচারপতির সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে যা আলোচনা হয়েছিল তা উল্লেখ করছি, যাকে মিথ্যা ও অমূলকভাবে ধারণা করা হত যে, সে শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা করে থাকে৷ যখন সে আমাকে জানাল যে, তদন্ত প্রতিবেদনে যা কিছু লেখা হয়েছে তাতে কি তোমার কোন অসম্মতি রয়েছে? এবং তোমাকে কি এমন কোন কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছে, যা তুমি করনি? তখন আমি তাকে বললাম, আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই; আমি যদি আপনাকে জবাব দেই যে, এখানে লিখিত প্রতিটি অক্ষরেই আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে তাহলে কি আপনি রায়ের ক্ষেত্রে আমাদের জন্যে কিছু করতে পারবেন? সে বলল, না… তবে তোমার দায়িত্ব হল বলা৷ আমি তাকে বললাম, আপনাদের এ রায় কি শরীয়তসিদ্ধ, যার ভিত্তি কোরআন ও হাদিস? তাহলে আমরা আপনাদের সাথে বাদানুবাদ করব, যেন আমরা প্রশান্তি লাভ করতে পারি যে, আমাদেরকে শরীয়ত মোতাবেক বিচার করা হয়েছে৷ তখন আরেক বেজন্মা দাঁড়িয়ে বলল, এতসব কিছু করার পরও তুই আবার তোর মত লোকের ব্যাপারে শরীয়তের বিচার চাচ্ছিস? তোকে তো কেটে টুকরো টুকরো করা দরকার৷

আল ফজরঃ বন্দিরা যে ভয়ঙ্কর মানসিক পরিবেশে জীবনযাপন করে তা সত্ত্বেও তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা কেমন থাকে?

শাইখ আবুল লাইস কাসেমীঃ বন্দি থাকাকালীন মানুষের ওপর যে মানসিক অবস্থা ভর করে নিঃসন্দেহে তা তার স্বাধীনতায় কাটানো দিনগুলোর চেয়ে ভিন্ন হবে৷ কেননা মানবাত্মা সে সময় সংকুচিত ও উৎকন্ঠিত হয়ে ওঠে৷ কিন্তু বন্দিদের অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী দেখতে পায় যে, এসব কিছুই মানুষকে ঘুরেফিরে এই প্রশ্নে এনে উপনীত করে দেয় যে, তারা আমাদের সাথে এইসব করে কেন?

কেননা এ সকল স্থানের নিয়ম-নীতির আসল চিত্র তাদের প্রকৃত কুফরী অবস্থাকে প্রকাশ করে দেয় এবং তাদের কর্তৃক মানুষদেরকে মানুষ বলে গণ্য না করার কথা প্রমাণ করে দেয়৷ আর সেখানে বন্দিদের পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও ভ্রাতৃত্বসুলভ৷ এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি ভাই নিদারুণভাবে এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে যে, তার মাঝে ও কারাগারের অন্যান্য ভাইদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলা জরুরী৷

আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন-

ألمؤمنون والمؤمنات بعضهم أولياء بعض يأمرو بالمعروف وينهون عن المنكر ويقيمون الصلاة ويؤتون الزكاة ويطيعون الله ورسوله أولئك سيرحمهم الله إن الله عزيز حكيم

অর্থঃ আর মুমিন পুরুষরা ও মুমিনা নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তাঁরা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ হতে নিষেধ করে, আর নামাজ কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ মেনে চলে, এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই করুণা বর্ষণ করবেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় সম্মানিত ও মহাজ্ঞানী৷ (সুরা তাওবাহ্: ৭১)

আল ফজরঃ পরিশেষে আমরা শাইখ আবুল লাইস কাসেমীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদেরকে তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের উত্তম সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এবং আমরা তার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য৷ আমরা তাঁকে ও তাঁর ভাইদের বলছি, আল্লাহর শোকর যে, তিনি আপনাদেরকে জালিম সম্প্রদায় থেকে নিরাপত্তা ও মুক্তি দান করেছেন এবং আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করুন৷

 

সমাপ্ত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =

Back to top button