আমিরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহইতিহাস- ঐতিহ্যখোরাসান (আফগানিস্তান)বই ও রিসালাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর রহঃ এর জীবনী

৪ই এপ্রিল ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ, আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রায় দুই দশক আগে এমনই একটি বিশেষ দিনে আফগানিস্তানের ১৫০০ আলেম, বরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং জিহাদি নেতৃবৃন্দ ‘মুজাহিদিন ‘ মোল্লা মোহাম্মদ ওমরকে (হাফি.) তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেন অর্থাৎ তাকে(হাফি.) বাইয়াত দেন এবং তাকে “আমিরুল মুমিনীন”(ইমানদারদের নেতা) উপাধিতে ভূষিত করেন।

 

পিডিএফ

https://archive.org/download/texts_369/Amirul-Muminin-Mullah-Muhammad-UmorHafizahullah.pdf

http://www.pdf-archive.com/2015/04/30/amirul-muminin-mullah-muhammad-umorhafizahullah/

ওয়ার্ড

https://archive.org/download/texts_369/Amirul-Muminin-Mullah-Muhammad-UmorHafizahullah.docx

=======================

ইসলামিক ইমারত আফগানিস্তানের আমির, আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের(হাফি.) জীবনী

 

 

৪ই এপ্রিল ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ, আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রায় দুই দশক আগে এমনই একটি বিশেষ দিনে আফগানিস্তানের ১৫০০ আলেম, বরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং জিহাদি নেতৃবৃন্দ ‘মুজাহিদিন ‘ মোল্লা মোহাম্মদ ওমরকে (হাফি.) তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেন অর্থাৎ তাকে(হাফি.) বাইয়াত দেন এবং তাকে “আমিরুল মুমিনীন”(ইমানদারদের নেতা) উপাধিতে ভূষিত করেন।

ঐতিহাসিক দিক দিয়ে ইসলামিক ইমারতের অফিসিয়াল পঞ্জিকায় এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং ইসলামী ইমারাহ সাংস্কৃতিক কমিশন এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রবন্ধ ও রচনা প্রকাশ করে থাকে।

আমির উল মুমিনীন মোল্লা ওমরের সঠিক  জীবনী প্রকাশ করার জন্য আমাদের অনেক সহকর্মী বিশেষত লেখক ও গবেষকদের কাছ থেকে অনেক অনুরোধ থাকায় ইসলামী ইমারাহ সংস্কৃতি কমিশন আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর(আল্লাহ তাকে হিফাজত করুন) এর সর্বাঙ্গীণ জীবনী প্রকাশ করার মাধ্যমে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মিথ্যুক লেখক, বিশ্লেষক এবং কিছু পক্ষপাতদুষ্ট গোষ্ঠীদের অপপ্রচারের জবাব দেয়া এবং লেখক ও সাধারণ পাঠকদের একটি পরিষ্কার ধারনা দেওয়ার জন্য আমরা আমিরুল মুমিনীনের(হাফি.) অসাধারণ জীবনীর বিভিন্ন পর্যায় নিম্নলিখিত ধারা অনুসারে সাজিয়েছি,

 

১.

জন্ম এবং বেড়ে ওঠাঃ

মুজাহিদিন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর , পিতা মৌলভি গোলাম নবী , পিতামহ মৌলভি মোহাম্মাদ রাসূল এবং প্র পিতামহ বিখ্যাত মৌলভি বায মোহাম্মাদ(রহিমাহুমুল্লাহ), ১৩৩৯ হিজরি (১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ) আফগানিস্তানের  কান্দাহার প্রদেশের খাকরে-য জেলার ‘চাহ-ই-হিম্মত’ গ্রামে একটি ধার্মিক এবং শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মৌলভি গোলাম নবীও (মৃত) খাকরে-য জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং একটি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিবেশে থেকে বাল্যশিক্ষা পেয়েছিলেন। লোকজনকে ইসলামের সঠিক পথের দিকে আহবান ও শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে তিনি সমাজে একজন প্রভাবশালী ও পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

যখন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের বয়স ২ বছর তখন তার পিতা একই প্রদেশের ‘খাকরে-য’ জেলা থেকে ‘ধান্দ’ জেলার ‘নদে’ নামক গ্রামে চলে আসেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত এখানেই  স্থানীয়দের মাঝে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়েছিলেন ।  তিনি হিজরি ১৩৪৪ সালে (১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে) মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে কান্দাহার শহরের তালেবানদের পুরাতন বিখ্যাত কবরস্থানে  শায়িত করা হয়।

বাবার মৃত্যুর পর ৫ বছরের বালক মোল্লা মোহাম্মাদ উমার ‘মুজাহিদিন’ তার পরিবারের সাথে ‘কান্দাহার’ প্রদেশের ‘ধান্দ’ জেলা থেকে ‘উরুজগান’ প্রদেশের ‘দে-রাউদ’ জেলায় চলে যান এতে সেখানে তার চাচা মৌলভি মোহাম্মাদ আনোয়ার এবং মৌলভি মোহাম্মাদ জুম্মার তত্ত্বাবধায়নে  শৈশবকাল অতিবাহিত করেন।

 

শিক্ষাজীবনঃ

৮ বছর বয়সে মোল্লা মোহাম্মাদ উমার ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে ‘দে-রাউদ’ জেলার ‘শার-এ- কোহনা’ অঞ্চলের প্রাথমিক মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তার চাচা মৌলভি মোহাম্মাদ জুম্মা এই মাদ্রাসাটি পরিচালনা করতেন এবং মোল্লা  মোহাম্মাদ উমার ‘মুজাহিদিন’ তাঁর চাচার কাছ থেকেই  বাল্যশিক্ষা পেয়েছিলেন ।

তার উভয় চাচাই বিশেষ করে মৌলভি মোহাম্মাদ আনোয়ার তাকে ধর্মীয় শিক্ষা দানের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মোল্লা মোহাম্মাদ উমার ‘মুজাহিদিন’ সফলতার সাথে  ঐ মাদ্রাসা থেকেই তার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৮ বছর বয়সে, তিনি একই প্রদেশে উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা নেওয়া শুরু করেন কিন্তু ১৯৭৮ সালে যুদ্ধবাজ কমিউনিস্টদের আফগানিস্তান আক্রমণের পর তা আর শেষ করতে পারলেন না।

 

পরিবারঃ 

মুজাহিদিন মোল্লা মোহাম্মাদ উমার ‘হোতাক’ গোত্রের ‘তমজি’ বংশে জন্মগ্রহণ করেন যেখানকার সিংহভাগ ছিল জাতিতে পোষ-তুন এবং এই গোত্র থেকে ‘হাজী মিরওয়াস খান হোতাক’ সহ আরও অনেক জাতীয় এবং জিহাদি বীরের আবির্ভাব ঘটে।

বিখ্যাত গাজী হাজী মিরওয়াস খান হোতাক (আল্লাহ তাকে রহমত দান করুন), যাকে আফগানরা শ্রদ্ধা করে ‘মিরওয়াইস নিকা’ (মিরওয়াইস দাদা) নামে ডাকে, যিনি আফগানিস্তানকে ‘সাফাভিদ’ রাজবংশের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন এবং আফগানিস্তানের জন্যে স্বাধীন ও সার্বভৌম ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

পেশাগতভাবে মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের পরিবারের সদস্যগণ আলেম এবং ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন। তারা সকলে মহান আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত সত্য ধর্মের প্রচার এবং মানুষকে এর আদর্শিক শিক্ষা দেওয়ার কাজে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। যার কারণে তারা সেখানে অনেক প্রশংসিত ছিলেন এবং আধ্যাত্মিক ভাবে, তারা ছিলেন সবচেয়ে সম্মানিত এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আসনে অধিষ্ঠিত।

এমনই একটি আধ্যাত্মিকতা এবং শিক্ষা-দীক্ষায় পরিপূর্ণ পরিবারে মোল্লা ওমরের জন্ম নেন এবং তাদের এই প্রজ্ঞা-পূর্ণ(উচ্চা-দর্শী) পৃষ্ঠপোষকতা তাকে একজন আদর্শ মুজাহিদিন এবং সদাজাগ্রত কাণ্ডারি হিসেবে গড়ে তোলে যিনি আফগান সমাজকে জুলুম, দুর্নীতি, অবিচার থেকে মুক্ত করেন এবং সর্বোপরি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির অখণ্ডতা রক্ষায় অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন।

তাঁর চাচারা, ভাইয়েরা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও মুজাহিদিন এবং ইতোমধ্যে তার পরিবারের ৪ জন সদস্য আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হিসেবে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন । তাঁর চাচাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ‘মোল্লা মোহাম্মাদ হানাফিয়া ’ আমেরিকানদের বেপরোয়া বোমা হামলায়  শুরুর দিন, ৭ অক্টোবর ২০০১ সালে  শহীদ হন।

 

 

 

তাঁর জিহাদি আন্দোলনঃ 

মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের বয়স যখন ২০ বছর, তখন কমিউনিস্টরা একটি রক্তাক্ত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করে নেয়।  নাস্তিক কমিউনিস্টরা সারা দেশ জুড়ে আলেম, তালিবান, ছাত্র ও অন্যান্য মুসলিম চিন্তাবিদদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ শুরু করলে অন্যান্য মেধাবী ছাত্রদের মত মোল্লা মোহাম্মাদ উমার মুজাহিদিন (হাফি.) এর পক্ষে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠে  । এই সময়ে মোল্লা মোহাম্মাদ উমার তাঁর অসমাপ্ত উচ্চ শিক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।  তিনি মাদ্রাসা ত্যাগ করেন এবং জিহাদের ফরজ দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে জিহাদের কাফেলায় শরিক হন।

তিনি ‘উরুজগান’ প্রদেশের ‘দেহ-রাউদ’ জেলার ‘হারকাত-ই-ইনকিলাব-ই-ইসলামী’ (ইসলামী পূনজাগরন আন্দোলন) নামের একটি সুপরিচিত জিহাদি দলের সাথে তাঁর জিহাদি সংগ্রাম শুরু করেন। কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারনে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ঐ জেলায় একজন নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর সাহসিকতার কারণে এবং বিভিন্ন জিহাদি অপারেশনে তাঁর সফল ভূমিকার কারনে , দে-রাউদ জেলার অজ্ঞাত অনেক মুজাহিদের কাছ থেকে শত্রুদের মোকাবেলায় তাকে আমির হওয়ার আহবান জানানো হয়, কমান্ডার হিসেবে তিনি অনেকগুলো সফল অপারেশন পরিচালনা করেন এবং অনেক অপারেশনে তিনি কয়েকবার আহত হয়েছিলেন। পরবর্তী ৩ বছরেরও অধিক সময়ে তিনি রাশিয়ান সৈন্য এবং তাদের পুতুলদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুজাহিদিনদের নিয়ে অনেকগুলো সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

জিহাদের ময়দানে তাঁর সঙ্গীরা এবং কমান্ডাররা বলেন, মোল্লা মোহাম্মাদ উমার ‘মুজাহিদিন’ যুবক হওয়া সত্ত্বেও তার কাজ সম্পাদনে যথেষ্ট দক্ষ ছিল কারণ সে ছিল দৈহিক দিক দিয়ে যথেষ্ট সামর্থ্য-বান এবং অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী।

 

পরে ১৯৮৩ সালে তিনি অন্যান্য মুজাহিদিনদের সাথে আরও ভালো সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে  তার সঙ্গীদের নিয়ে কান্দাহার প্রদেশের ‘মাইওয়ান্দ’ জেলায় চলে যান এবং সেখানে বিখ্যাত জিহাদি কমান্ডার ‘ফাইজুল্লা আখুঞ্জাদা’র অধীনে রাশিয়ান সৈন্য ও তাদের পুতুলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকেন। ফাইজুল্লা আখুঞ্জাদা ছিলেন জিহাদি সংগঠন ‘হারকাত-ই-ইনকিলাব-ই-ইসলামী’ এর সদস্য, যেটি ছিল তৎকালীন সময়ের সাতটি বড় জিহাদি সংগঠনের একটি। পরবর্তীতে বিভিন্ন অপারেশনে স্থানীয় আমির হিসেবে তাঁর সফলতা এবং সামরিক বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর অবাধ জ্ঞানের কারণে তিনি জিহাদি সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন, ফলশ্রুতিতে তাকে ‘The Islamic Revoulitionary Movement’  নামে একটি জিহাদি দলের স্থায়ী আমির নিযুক্ত করা হয় যেটি পরিচালনা করতেন প্রয়াত মৌলভি মোহাম্মাদ নাবী মোহাম্মাদী।

 

১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত, মুজাহিদিন মোল্লা মোহাম্মাদ উমার, কান্দাহার প্রদেশের  ‘মাইওআন্দ’ , ‘জারি’, ‘পাঞ্জোয়াই’ এবং ‘দান্দ’ জেলায় অনেকগুলো সফল অপারেশন পরিচালনা করেন, যেটা(প্রদেশ) ছিল জিহাদের অপরিহার্য কেন্দ্রবিন্দু এবং মুজাহিদিনরা প্রায় প্রতিদিনই এই প্রদেশটিতে শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করত। তিনি নিজে ‘জাবুল’ প্রদেশের ‘শাহার-ই-সাফা’ এবং ‘কালাত’ শহরের উপকণ্ঠে ‘কাবুল-কান্দাহার’ হাইওয়েতে রুশদের বিরুদ্বে বেশ কয়েকটি বিজয়ী অভিযানে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তার পছন্দের অস্র ছিল ‘RPG-7’ যেটিকে স্থানীয় মুজাহিদেরা রকেট বলত, তিনি এই অস্র চালনায় বেশ দক্ষ ও কুশলী ছিলেন।  একটা কথা উল্লেখযোগ্য যে ‘মাইওআন্দ’, ‘জারি’ এবং ‘পাঞ্জোয়াই’ জেলায় কমিউনিস্টদের সাথে জিহাদিদের তীব্র সংঘর্ষ যুদ্ধের পটপরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং কমিউনিস্টরা শেষ পর্যন্ত পরাজয় বরন করতে বাধ্য হয়। এখানে কমিউনিস্টদের ব্যাপক পরিমাণ ট্যাঙ্ক এবং সামরিক যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করা, যেগুলো দিয়ে তারা মুজাহিদিনদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য রাস্তার দুই পাশে দেয়াল তৈরি করেছিল।

 

মোল্লা মোহাম্মাদ উমার ‘মুজাহিদিন’ (হাফি.) রুশদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে মোট ৪ বার আহত হন এবং একটি অপারেশনে তিনি তাঁর ডান চোখ হারান।

মোল্লা মোহাম্মাদ উমার ‘মুজাহিদিন’ (হাফি.) কান্দাহার এবং এর আশেপাশের প্রদেশগুলোতে,  কমিউনিস্ট এবং তাদের পুতুলদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অপারেশনে কার্যকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় একজন বিশিষ্ট এবং অনন্য কমান্ডার হিসেবে ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

নিচে আমরা রুশদের বিরুদ্ধে জিহাদের ময়দানে তাঁর সঙ্গীদের মুখে কয়েকটি ঘটনা শুনবোঃ

 

১। কান্দাহার প্রদেশে ‘বুদওয়ান’ নামে শত্রুদের একটা শক্তিশালী ঘাটি ছিল । একটা মিলিটারি ট্যাঙ্ক মুজাহিদিনদের জন্য অনেক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কারণ এটা এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে স্থাপিত ছিল, যেখান থেকে এটা খুব সহজে যে কোন “লাইন অফ ফায়ারে” লক্ষ স্থির করতে পারত । মুজাহিদিনরা ঐ ট্যাঙ্কটা ধ্বংস করার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিল। অবশেষে মোল্লা মোহাম্মাদ উমার ‘মুজাহিদিন’ (হাফি.)কে সাহায্যের জন্য ‘সাং-ই-হাইসার’ অঞ্চল থেকে ডেকে আনা হল। তিনি তাঁর প্রিয় ‘RPG’ রকেট ল্যাংচার দিয়ে ‘বুদওয়ান’ ঘাটির ট্যাঙ্কটাকে টার্গেট করলেন এবং ধ্বংস করে ফেললেন যা মুজাহিদিনদের জন্য একটি অসাধারণ সাফল্য ছিল।

২। রুশদের বিরুদ্ধে জিহাদ চলাকালীন সময় কান্দাহার প্রদেশের মাহাল্লা-জাত এলাকার একটি যুদ্ধে শহিদ মোল্লা উবায়দুল্লাহ আখুন্দ রহ. মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদিন (হাফি.)-র সঙ্গী ছিলেন, যিনি পরে ইমারতে ইসলামিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং আমেরিকার আগ্রাসনের পর আমিরুল-মুমিনীনের সহকারী নিযুক্ত হন। তারা বিপুল পরিমাণ ট্যাঙ্ক এবং সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। পরের দিন সেখানে গিয়ে সবাই অবাক হয়ে গেল, তারা বিশ্বাস করতে পারছিলনা যে শত্রুরা পরাস্ত হয়েছে। তাঁরা ভেবেছিল শত্রুরা এখনো অক্ষত আছে, এমনকি তাদের অনেকগুলো সামরিক যান মুজাহিদিনরা ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং শুধু একটা মাত্র যানবাহন তারা নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

৩। রুশ মিলিটারি ট্যাঙ্কের একটা বহর ‘যারি’ জেলার ‘সাং-ই-হাইসার’ অঞ্চলের কান্দাহার-হেরাত হাইওয়ের পথে যাচ্ছিল। তখন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদিন (হাফি.)-র সঙ্গী ছিলেন মোল্লা বিরাদার আকন্দ যিনি পরে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের ডেপুটি হয়েছিলেন এবং তাদের কাছে মাত্র চার রাউন্ড RGP ছিল। তারা নির্দ্বিধায় চার রাউন্ড RGP দিয়েই ৪টি মিলিটারি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।

৪। মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর (হাফি.)-র একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা বিরাদার আকন্দ তার সম্পর্কে বলেন যে, রুশদের সাথে যুদ্ধে মোল্লা মোহাম্মাদ উমার (হাফি.) এত পরিমাণ ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছেন যে এর সঠিক সংখ্যা তাঁর জানা নেই।

১৯৯২ সালে নাজিবের কমিউনিস্ট শাসনের পতন এবং দেশব্যাপী ভয়াবহ সংঘাত থেমে যাওয়ার পর, অন্যান্য হকের উপর থাকা মুজাহিদিনদের মত মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদ (হাফি.) তাঁর অস্ত্র তুলে রাখেন এবং কান্দাহার প্রদেশের মাইওয়ান্দ জেলায় সাং-ই-হাইসার অঞ্চলের ‘গিশান’ গ্রামে ‘হাজি ইব্রাহীম’ মসজিদের পাশে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৪ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর তিনি তাঁর আরও কয়েকজন জিহাদি সাথীদেরকে নিয়ে তার অসমাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা আবার শুরু করেন।

এটা ছিল সেই সময় যখন রাজধানী কাবুলসহ সাড়া দেশে মারাত্মক সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছিল। শুধুমাত্র ব্যক্তি স্বার্থের কারণে যুদ্ধ করেছিল এমন কিছু যুদ্ধবাজ নেতা রাশিয়ানদের সাথে জিহাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে কলঙ্কিত করেছিল এবং প্রায় পনের  লক্ষ শহিদের রক্তকে তারা অপমান করেছিল যারা শুধুমাত্র ইসলামকে রক্ষার জন্য এবং প্রিয় মাতৃভূমিতে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলো।

 

২.

অরাজকতা প্রতিরোধ এবং ইসলামিক ইমারত প্রতিষ্ঠাঃ

আমদের দেশের সমগ্র মুজাহিদিনদের দীর্ঘ প্রত্যাশা ছিল একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা কিন্তু তার পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ দলাদলির যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ল । ব্যাপারটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র যাতে মুজাহিদিনরা ছিল দুর্বল ও দর্শক। কিছু প্রসিদ্ধ কমিউনিস্ট নেতা যাদের কিনা বিচার হওয়া উচিৎ ছিল দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পূর্ববর্তী কিছু মুজাহিদিন কমান্ডাররা তাদের আশ্রয় প্রদান করেন এবং কিছু সামরিক নেতারা দেশব্যাপী  লুট করা, জনগণের নিয়ম ভঙ্গ করা এবং লুটতরাজ শুরু করে দিলো।

এর ফলে , সমগ্র দেশ ও জাতী নৈরাজ্য ও অরাজকতায় ডুবে যাচ্ছিল যা পুরো আফগান  ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জীবন, ইজ্জত এবং সহায় সম্পত্তি  বিপদাপন্ন ছিল। মূর্খ ও নিষ্ঠুর সামরিক নেতারা দেশের প্রধান সড়ক গুলতে এবং অন্যান্য চলাচল যোগ্য রাস্তায় নিজস্ব চেক পোস্ট ও একরোখা ভাবে বেরি-গেট তৈরি করলো। ইতোমধ্যে আমাদের দরিদ্র জনগণ থেকে তারা অর্থ দাবী করেই ক্ষান্ত হয়নি বরঞ্চ এ সকল বেষ্টনী দ্বারা তারা তাদের সম্মান ও সতীত্বকে বিপন্ন করেছে। ঐ সকল সামরিক নেতারা দেশের জাতিয় সম্পদ, বিগত জিহাদের সাফল্য এবং বন, অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো নির্দয় ভাবে শোষণ করছে যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। শুধু যে রাশিয়ানদের ১৪ বছরের জিহাদ বিপদাপন্ন তা নয় বরঞ্চ সাধারণ মানুষেরাও বিপদাপন্ন।

বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য এত প্রবল হয়েছিলো যে সামাজিক দুর্নীতি, হত্যা, লুণ্ঠন এবং ডাকাতি, উৎপীড়ন, বর্বরতা এবং সারা দেশব্যাপী মুসলিমদের অবিরাম দুঃখকষ্ট প্রতিদিন বেড়েই চলছিলো।  এই পরিস্থিতি ন্যায়পরায়ণ মুজাহিদিনদের গভীরভাবে নাড়া দিলো যারা কিনা জিহাদ করেছিলেন আফগান মুসলিমদের স্বাধীনতা, সম্মান ও উন্নতির জন্য।

ন্যায়পরায়ণ মুজাহিদিনদের মতো মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর(দাঃ বাঃ) দেশব্যাপী এই ক্রমবর্ধমান নৈরাজ্য নিয়ে তিনিও উদ্বিগ্ন থাকতেন , তিনি তাঁর কিছু জিহাদি সাথীদের সাথে কান্দাহার প্রদেশের মাইওন্দ এলাকায় বসবাস করছিলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন “কান্দাহার-হেরাত” মহাসড়কে অসংখ্য বেরি-গেট রাখা হয়েছে এবং নিষ্ঠুর সামরিক নেতাদের দ্বারা যাত্রীরা লাঞ্ছিত, মহিলারা ও সাদা দাড়িওয়ালা বৃদ্ধরা লুণ্ঠিত, অবমাননা এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা চলছিলো। এটা উল্লেখযোগ্য যে অবৈধ বেরি-গেট এবং চেকপোস্ট এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য “হেরাত” প্রদেশ অতিক্রম করে “বলদাক” দিয়ে “কান্দাহারে” প্রবেশ করতো। মাইওন্দ এলাকাতে প্রবেশ কালে তারা পণ্য কমিয়ে নিতো কারণ বেরি-গেট রক্ষকদের অতিরিক্ত চাঁদা আদায়। অসহনীয় কষ্ট সহ্য করে তারা তাদের পণ্য অজ্ঞাত মরুভূমি দিয়ে স্থানান্তর করে দিতো।

কান্দাহার প্রদেশের অত্যন্ত খারাপ অবস্থা সম্পর্কে মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর(দাঃ বাঃ) এবং তাঁর সাথীরা পুরোপুরি সতর্ক ছিলেন সেখানে নিষ্ঠুর সামরিক সেনারা শহরের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে ছিল , তারা অবিরামভাবে সরকারী ও পাশাপাশি বেসরকারি সম্পত্তি দখল করছিলো এবং তা চড়া দামে বিক্রয় করছিলো। প্রাইভেট মার্কেটগুলো সরকারী জায়গাতে নির্মাণ করেছিলো। অধিকন্তু, তারা অত্যন্ত তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাঙ্গামা করতো যা সাধারণ মানুষদের জন্য ব্যাপক কষ্টের কারণ হতো।

দেশের সহায়হীন ও নির্যাতিত মানুষের সীমাহীন দুঃখকষ্ট সত্য ও ন্যায়ের পথের মুজাহিদিনদের একত্র হতে এবং মুসলিমদের জীবন, সম্মান এবং সম্পদ সু-রক্ষার্থে একটি সমাধান খুঁজতে লাগলো। মুজাহিদিন পরস্পরের সাথে পরামর্শ ও সভা করা শুরু করলেন।

কিছু স্থানীয় ও আঞ্চলিক কিছু সুপরিচিত হক্কানি আলেমদের নিয়ে মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর(দাঃ বাঃ) ও তাঁর সাথীরা তাদের প্রথম সভা আয়োজন করেন “কান্দাহার” প্রদেশের “পাঞ্জাই” জেলার “যাঙ্গাএয়াত” নামক স্থানে। এই সভার প্রধান ছিলেন মৌলভি সাইদ মোহাম্মাদ(যিনি মৌলভি পাষাণী সাহেব নামে পরিচিত), তিনি রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে জিহাদে কান্দাহার প্রদেশের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তিনি মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরকে বললেন এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াও ও প্রতিরোধ করো যেহেতু তিনি সকলের দ্বারা সহযোগিতা পেয়েছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের এটা ছিল প্রাথমিক সভা এবং ১৫ই মুহাররম হিজরি ১৪১৫(২৪ বা ২৫ জুন ১৯৯৪)  মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর(দাঃ বাঃ) নৈরাজ্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেন।

মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের(দাঃ বাঃ) নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন , যা সর্বস্তরের সত্য ও ন্যায়পরায়ণ মুজাহিদিনরা তাকে সাধারণ বার্তার দ্বারা স্বাগত জানায় এবং যোগদান করেন। প্রথমে কান্দাহার এবং এরপর আফগানিস্তানের অন্যান্য এলাকা দুর্নীতি-গ্রস্ত ও দুষ্ট সামরিক নেতাদের কবল থেকে রক্ষা পায়। ঐ সময়- যখন আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অংশ তালিবানদের ইসলামিক আন্দোলনের অধীনে ছিল , সে সময় আফগান ওলামাদের একটি বিশাল অংশ যা ১৫০০জনের চেয়েও বেশী, ১৫ই যিলক্‌দ ১৪১৬হিজরি(৪ই এপ্রিল ১৯৯৬সালে) একত্রে মিলিত হওয়ার জন্য কান্দাহারে একটি সভার আয়োজন করে। সে সভায় তারা মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের(দাঃ বাঃ) এর কাছে বায়াত প্রদান করে এবং আমিরুল মু’মিনিন উপাধিতে ভূষিত করেন। (On 6th Libra 1375 AH (solar) ) ২৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৬, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল শহর ইসলামিক এমিরাত অফ আফগানিস্তানের অধীনে চলে আসে এবং পরবর্তীতে, আফগানিস্তানের কেন্দ্রীও এবং উত্তর ভাগসহ ৯৫ভাগ অঞ্চলই ইসলামিক আমিরাতের নিয়ন্ত্রণাধীনে এসে যায়।

শরীয়তের সর্বউন্নত আইন ও নীতি দ্বারা মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের(দাঃ বাঃ) নেতৃত্বে ইসলামিক এমিরাত অফ আফগানিস্তান একটি ইসলামিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। একটি দীর্ঘ সময় পর, পৃথিবী-বাসী আবার দেখতে পেয়েছিলো একটি ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা। তিনি দেশকে বিভাজন থেকে রক্ষা করেন এবং অবাধ্য সামরিক নেতাদের নিরস্র করেন যার ফলে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি ও স্থায়িত্ব পুনঃ-প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো যা পুরো পৃথিবীর(জাতিসংঘসহ) কাছে সোনার হরিণ মনে হতো। কিন্তু( এবং এখানে একটি বিশাল “কিন্তু” রয়েছে) আল্লাহর পৃথিবীতে তাঁর দেয়া প্রতিষ্ঠিত বিধান এই অহংকারী কুফরি শক্তিগুলোর সহ্য হল না , বরঞ্চ তাদের চোখের কাঁটায় পরিণত হল যা ইসলামিক আমিরাত পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেছিলো। তথাপি তারা এর সাথে শত্রুভাবাপন্ন আচরণের আশ্রয় ও ষড়যন্ত্র শুরু করল। তারা তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে খোঁড়া অজুহাত সৃষ্টি বা তৈরি করে এ ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলতে এবং অবশেষে তারা এর (ইসলামিক এমিরাত অফ আফগানিস্তান) বিরুদ্ধে যৌথ সামরিক আগ্রাসন শুরু করে।

 

অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব:

নেতৃত্ব সুলভ ব্যক্তি হিসেবে মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের (দাঃ বাঃ) রয়েছে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও আধ্যাত্মিক শক্তি সৃষ্টি করার ক্ষমতা। তিনি কখনো নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেননা যা উচ্চপদস্থ আমলারা ও নেতারা করে থাকে। অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে তিনি অনাগ্রহী। তবে প্রয়োজনে ব্যবহার করে থাকেন প্রগাঢ়, উপযুক্ত এবং যুক্তিযুক্ত শব্দ ও বাক্য। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, দজ্জালের সাথী আমেরিকার আক্রমণ প্রাক্কালে, বিশ্বব্যাপী মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা ও ইসলামিক আমিরাত বেদখল করা শুরু করে ছিল। মুসলিমদের পবিত্র রক্ত প্রবাহিত-কারি আমেরিকা কিছুই বাকি রাখেনি (মুজাহিদিনদেরদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা ও ইসলামিক আমিরাত বেদখল করা ক্ষেত্রে ) এবং পশ্চিমা মিডিয়া, তাদের রেডিও এবং টেলিভিশন  ষ্টেশনগুলোতে পরিপূর্ণ শয়তানি ভক্তির সাথেই আমেরিকার এই হীন ও জঘন্য কাজে সহযোগিতা করেছিলো (যা এখনো করছে)।

কিন্তু এ সকল বার্থ প্রচেষ্টা এবং প্রচারণা সত্ত্বেও, নিজস্ব জনগণের উদ্দেশে শান্ত, প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা যুক্ত নিম্ন উল্লেখিত বার্তাটি প্রদান করেনঃ

“আল্লাহ্‌ সর্বশক্তিমান। আল্লাহর কাছে আমেরিকা বা একটি ক্ষুদ্র মাছির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমেরিকা ও তোমার সাথীরা খেয়াল করে শুনে নাও, ইসলামিক আমিরাত পূর্বের শাসনামলের মতো নয় যে যার প্রধান নেতা দেশ থেকে পালিয়ে যাবে; যা ঘটেছিলো রাজা জহির শাহ্‌র ক্ষেত্রে, যিনি আফগানিস্তানের প্রাক্তন বাদশাহ, যিনি রোমে আশ্রয় খুঁজেছিলেন; আর না আমার যোদ্ধারা আত্মসমর্পণ করবে। তোমার স্মরণ রাখা উচিৎ যে এরা সুসংগঠিত জিহাদি দল। যদি রাজধানী এবং অন্যান্য শহর তোমাদের দখলে চলে যায় আর ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা যদি বিনষ্ট বা উচ্ছেদ করা হয়, তবুও আমাদের মুজাহিদিনরা আত্মসমর্পণের বদলে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পরবে এবং পাহাড়ে অবস্থান নিবে। তখন তোমারা কি করবে? তোমাদের হত্যা ও ধরা পড়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা ঠিক রাশিয়ার মতো।

তোমার অবশ্যই এটা বোঝা উচিৎ যে বিশৃঙ্খলা করা খুব সহজ কিন্তু তার মূলোৎপাটন এবং আইনের শাসন পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা একটি বিশাল এবং কষ্টকর। মৃত্যু অনিবার্য আর প্রত্যেকটি প্রাণীকেই একদিন না একদিন মরতে হবে। আমেরিকাকে সমর্থন করে ঈমান ও সম্মান হারিয়ে মৃত্যুর চেয়ে – ঈমান ও সম্মান নিয়ে ইসলামের জন্য জীবন দেয়া উত্তম নয় কি?”

মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের(দাঃ বাঃ) এই অভিব্যক্তি হয়তো কিছু মানুষের বুঝে আসেনি যা সঠিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতায় পূর্ণ , কিন্তু প্রায় ১৪ বছর পার হয়ে গেছে এই এক পক্ষীও যুদ্ধের যা সুপার পাওয়ার দাবিদার আমেরিকা , ন্যাটো বাহিনী এবং তার অন্যান্য সহযোগীসহ মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের(দাঃ বাঃ) কিছু ঈমান দীপ্ত এবং সুদৃঢ় মুজাহিদিনদের পরাজিত করার জন্য , যারা ছিল শূন্য হাতে; আমিরুল মু’মিনিনের এই সাধারণ কিন্তু ঐতিহাসিক উক্তির হয়তো এখন ঐ সকল কথিত সভ্য লোকদের বুঝে এসেছে ।

দৃশ্যত আমেরিকার আগ্রাসনের শুরুর দিকে, তিনি পরোক্ষভাবে ভিনদেশী আগ্রাসী কুফফারদের এবং তাদের অভ্যন্তরীণ কুকর্মে সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঘোষণা  দিয়েছিলেন যে অস্ত্র দ্বারা মৃত্যু হতে পারে, তাইবলে এটা(অস্ত্র) মৃত্যুকে অবজ্ঞা করতে পারেনা (অর্থাৎ হয়তো শরীয়ত নয়তো শাহাদাত)। তার এই ঘোষণা আফগান মিডিয়ার একটি রেডিওতে প্রচার হয়েছিলো। কিছু মানুষের জন্য এই বাক্যটি হয়তো আনর্থ্য ও তুচ্ছ  শব্দ দ্বারা গঠিত কিন্তু বিগত ১৩ বছর যাবত এই সাধারণ শব্দগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে যখন মানবরূপই  পিচাশ ভিনদেশী আগ্রাসী কুফফাররা তাদের উন্নত প্রযুক্তি ও অস্ত্র দ্বারা নির্মমভাবে বহুসংখ্যক নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেছে এবং অবর্ণনীয় ক্ষতিসাধন করেছে। বিগত ১৩বছরে বীর মুজাহিদিনরা মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের(দাঃ বাঃ)  নেতৃত্বে চলমান এই জিহাদে আগ্রাসী কুফফাররা নিজস্ব সৈনিকদের মৃত্যু থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়নি , ফলশ্রুতিতে আগ্রাসীরা প্রতিনিয়ত নিহত, আহত এবং বন্দী হয়েছে ।

প্রকৃত সত্য এইযে আফগানিস্তানে নিষ্ফল(কাফেরদের জন্য) এই যুদ্ধে আগ্রাসী – এই সকল অহংকারী শয়তানের দল, যারা কিনা অত্যাধুনিক অস্ত্র ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ পরিপূর্ণভাবে সুসজ্জিত, অকপটে স্বীকার করেছে যে তাদের হাজার হাজার পাপেট যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে  ।

মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের(দাঃ বাঃ) মতে, উত্তম হচ্ছে কথা কম বলা ও কাজ বেশী করা যা আমাদের ইসলাম ধর্মেও জোর দেয়া হয়েছে যে কথা বা ধারনার চেয়ে কাজ বা আমল বেশী কর। অপ্রাসঙ্গিক উৎসব ও অপ্রয়োজনীয় চুক্তি থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। তিনি সকল ক্ষেত্রেই অনাড়ম্বর ও সরল জীবন-যাপন করতে অভ্যস্ত । অনাড়ম্বর পোশাক, খাবার, স্পষ্ট কথা, সরলতা এবং অনানুষ্ঠানিকতা তার প্রকৃত অভ্যাস। তিনি অনুষ্ঠানে বা উৎসবে(ইসলাম বহির্ভূত) যেতে ও আনুষ্ঠানিক লোকদের অপছন্দ করেন।

তিনি মনে করেন সকল উন্নতির ভিত্তি হচ্ছে দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা এবং আন্তরিকতা এবং তার সহযোদ্ধাদের মধ্যে যে যতো বেশী বিচক্ষণ, আন্তরিক ও সুস্পষ্ট সে তার কাছে ততো বেশী প্রশংসিত ও ভালবাসার পাত্র।

একইভাবে তিনি ইহ-কালীন জীবনের কষ্টকর পরিস্থিতি, দুঃখ এবং উত্থান ও পতনের মুখোমুখি হতে অভ্যস্ত। হতে পারে কোন বিড়ম্বনা বা অঘটন বড় ও প্রখরত্বর, তিনি  স্বাভাবিক থাকেন এবং তার অবস্থা ও উদ্দীপনার বিন্দুমাত্র পরিবর্তিত হয় না। কোন সময় আনন্দ ও বেদনা, জয় ও পরাজয়ের তারতম্য হলে, তিনি প্রশান্ত এবং আত্মসংযমতা অবলম্বন করেন।

আলেম সমাজ ও বড়দের তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে থাকেন। গম্ভীরতা, মর্যাদাপূর্ণ অবস্থা, লজ্জা, গভীর ভক্তি, পারস্পারিক সম্মানবোধ, সহানুভূতি, দয়া এবং আন্তরিকতা হচ্ছে তার প্রকৃত আচরণ। তার স্বাতন্ত্র্য কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রবল দৃঢ়তা, সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিশ্বাস এবং  আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত ভালো মন্দ তাকদিরের উপর প্রবল বিশ্বাস।

এসব কারণেই মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের(দাঃ বাঃ) অনুসারী ও মুজাহিদিনরা তাকে গভীরভাবে ভালবাসেন এবং ভক্তি করে থাকেন যা তার প্রতীয়মান পার্থিব পদমর্যাদার বলে নয়। আমাদের জন্মভূমি আফগানিস্তান প্রায় ১৩ বছর ধরে আক্রমণের শিকার এবং ভিনদেশী কুফফারদের দ্বারা দখলকৃত( বর্তমানে অল্পকিছু শহর) কিন্তু তার অনুরক্ত ও আন্তরিক মুজাহিদিনরা তার মৌখিক ও লিখিত সকল নির্দেশনা অনুসরণ করে আসছি এবং  তার উপস্থিতিতে যেভাবে তার নির্দেশনা মেনে চলেছি আর আমরা শহীদ হতে প্রস্তুত কিন্তু তার নির্দেশনাকে ছাড়তে প্রস্তুত নই এবং তা সম্ভবও না।

 

ইসলাম ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অতন্দ্র প্রহরী:

যেহেতু মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর (দাঃ বাঃ) মুসলিমদের নেতা এবং তালিবানদের ইসলামিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা তাই মুসলিম উম্মাহর সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় গুলো তিনি পরিপূর্ণ সতর্ক এবং তীক্ষ্ণ মনোযোগের সাথে নিয়ে থাকেন।

তিনি সবসময় মসজিদুল আকসা(মুসলিমদের প্রথম কিবলা) এবং ফিলিস্তিনই মুসলিমদের অধিকার ইস্যুতে সমর্থন করে আসছেন। মুসলিমদের সব ব্যাপারেই তিনি স্পষ্ট অবস্থান ও সমর্থন করছেন তা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক। অভিশপ্ত ইহুদি জাতির কবল থেকে মসজিদুল আকসাকে মুক্ত করা প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরয কর্তব্য বলে তিনি মনে করেন।

মুজাহিদিনদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর (দাঃ বাঃ) মুসলিমদের দুঃখকষ্টে সমান ভাগীদার ও সহানুভূতি বোধ করেন। মুসলিম ভাইদের সাথে তার আন্তরিকতা, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ব এবং সহযোগিতা আন্দোলন বা শ্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরঞ্চ তিনি এসকল বিষয় বাস্তবিক ও প্রায়োগিক ভাবে প্রমাণ রেখে চলেছেন।

 

৩.

তাঁর মতাদর্শঃ 

মতাদর্শিক ভাবে মোল্লা মোহাম্মাদ উমার মুজাহিদিন (আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত (কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহর একনিষ্ঠ অনুসরণকারী, মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যের দিকে আহ্বানকারী হাক্বপন্থী জামায়াত) এর অনুসরণকারী। তিনি হানাফি ফিকাহের একটি ইসলামিক স্কুল(দেলবন্দ মাদ্রাসা) এর ছাত্র।

তিনি নাস্তিক্যবাদ এবং প্রচলিত অপ-মতবাদের(গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি কুফরীবাদের) ঘোর বিরোধী। তিনি মুসলিমদের মাঝে মতাদর্শ গত, গোষ্ঠী বা জাতিগত পার্থক্য ও মতবিরোধ পছন্দ করেন না। তিনি সবসময় তাঁর সহচরদের যেকোনো অবস্থায় ইসলামের স্বার্থে, উম্মাহর স্বার্থে সকল মুসলিমদের ঐক্য ও সংঘবদ্ধ থাকার উপদেশ দেন এবং উম্মাহর এই ক্রান্তি-লগ্নে সাধারণ মুসলিমদের মতাদর্শ গত ঐক্যের আহবান  করেন। তাঁর মতে কুরআন ও হাদিস (রাসূল সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ) এর আলোকে আল্লাহ ভীরু পূর্বসূরিদের পথ(সালাফদের পথ) এবং নেতৃস্থানীয় আলেমদের অনুসরণ করাই মুসলিম উম্মাহর জন্য একমাত্র মুক্তির পথ।

 

তাঁর ব্যক্তিগত জীবনঃ

মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদিন(আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন) তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন ইসলাম শিক্ষা অর্জনে, জিহাদের ময়দানে এবং ইসলামের প্রতি দাওয়াত ও আহবানে। আফগানিস্তানের সমসাময়িক নেতাদের মাঝে তিনিই সম্ভবত সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তি যে কিনা ‘বায়তুল মাল'(ইসলামি রাষ্ট্রের কোষাগার) থেকে ব্যক্তিগত কোন সুবিধা গ্রহণ করেননি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে বিলাসবহুল জীবনের জন্য কোন সম্পদই জমা করেননি। তিনি মোট ৭ বছর আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত পরিচালনা করেন, এসময় তিনি এক মুহূর্তের জন্যও প্রাচুর্যে বা বিলাসিতায় কাটাননি।

এমনকি মোল্লা মোহাম্মাদ উমার মুজাহিদিন (আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন) একটি সাধারণ বাস ভবনেরও মালিক নন, এবং বিদেশি ব্যাংকে তাঁর কোন একাউন্ট বা আমানতও নেই।এমনকি ১৯৯৯ সালে যখন জাতিসংঘ দ্বারা সাধারণ আফগান নাগরিকদের উপর সম্পূর্ণ একতরফা ও নির্মম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তালিবান নেতাদের বিদেশি ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়, তখনো ‘ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান’ এর সর্বোচ্চ পদস্থ মোল্লা মোহাম্মাদ উমার মুজাহিদিনের (আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন এর নিজের নামে কিংবা ছদ্মনামে দেশে অথবা বিদেশে কোন ব্যাংক একাউন্ট ছিলনা।

ইসলামিক আমিরাতের শাসনামলে যখন তাঁর আবাস্থল পাশবিক শত্রুদের(আমেরিকান কুফফার দ্বারা) মর্মান্তিক আক্রমণের শিকার হয় আর তখন সাধারণ মুসলিমগণও ভূমিহীন হয়ে পড়েন। এসময় অনেক সাধারণ মুসলিমদের সাথে তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শহরতলীতে কোন আবাস্থল না থাকায় মুসলিমদের নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রেখে “বাবাসাহিব” পাহাড়ের নিকটে নতুন একটি আবাসিক এলাকা প্রতিস্থাপন এবং কান্দাহার শহরের পশ্চিমাংশে ইসলামিক আমিরাতের আমীরদের জন্য কার্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন এই আবাসিক এলাকাও বায়তুল মাল কর্তৃক পরিচালিত হতো এবং এর কোন সাধারণ সম্পত্তি (ভূমি) ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হিসেবে বিবেচিত হতোনা।

১৯৯৬সালে যখন প্রথমবারের মত তাঁকে “আমিরুল মুমিনীন” (মুমিনদের নেতা) ঘোষণা করা হয় তখন তিনি আনন্দধ্বনি বা উত্তেজনার বদলে বরং কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় তাঁর চোখের অশ্রুতে কাঁধ ভিজে জবজবে হয়ে যায়। ঐতিহাসিক সেই আলোচনা মাহফিলের শেষে তিনি উপস্থিত গণ্যমান্য আলেমদের উদ্দেশ্যে বলেন,

“হে উলামাগন, আপনারা হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উত্তরসূরি এবং আপনারা আমার কাঁধে অনেক ভারী দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। বাস্তবিক ভাবে আমার অটলতার জন্য আপনারাই দায়ী হবেন, ঠিক যেমনি ভাবে দায়ী থাকবেন আমার পথভ্রষ্টটার জন্যও।

হে আমাদের সম্মানিত শাইখ ও আলেমগণ! আমি যদি মুসলিম উম্মাহর প্রতি আমার এই মহান দায়িত্ব ঠিক মত পালন করতে ব্যর্থ হই অথবা পথভ্রষ্ট হয়ে যাই ,তাহলে আপনাদের কাজ হচ্ছে আমাকে আপনাদের জ্ঞানের আলো দ্বারা আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। যদি তালেবান শরী’য়া বাস্তবায়নে কোন ভুল করে থাকে আর আপনারা যদি তা আপনাদের জ্ঞানের দ্বারা সংশোধন না করে দেন তবে মনে রাখবেন, শেষ বিচারের দিন আপনাদেরকেই এর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।”

 

স্বভাব প্রকৃতিঃ

মোল্লা মোহাম্মদ উমার মুজাহিদিন(আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন)  নীরব ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সেই সাথে তিনি ভদ্র মেজাজের অধিকারী এবং সবচেয়ে মজার বিষয় তিনি কখনই তাঁর সহ যোদ্ধাদের চেয়ে নিজেকে উৎকৃষ্ট মনে করেন না। তিনি পারস্পরিক আচরনের ক্ষেত্রে তাদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, যত্নবান, বিনম্র এবং আন্তরিকতা সম্পন্ন। বেশিরভাগ আলোচনায় তিনি সর্বোত্তম ইবাদত জিহাদের কথা বলেন।

 

তাঁর সমসাময়িক প্রাত্যহিক কার্যক্রমঃ

শত্রুদের আক্রমণের এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও ইসলামিক আমিরাতের সর্বোচ্চ পদে আসীন আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মদ উমার মুজাহিদিন(আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন)  এর প্রাত্যহিক কাজে এবং জ্বিহাদী কার্যক্রমে কোন বড় রকমের পরিবর্তন এবং বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়নি। তাঁর দিন শুরু হয় আল্লাহ সুবহানু তায়ালার ইবাদত এবং পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। তিনি অবসর সময় অতিবাহিত করেন পবিত্র কুরআন এর তাফসীর এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদিস থেকে শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে। তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বিদেশী কুফর পরাশক্তির বিরুদ্ধে জ্বিহাদী কার্যক্রম পরিচালিত করেন। তিনি একটি নির্দিষ্ট উপায়ে তাঁর জ্বিহাদী কমান্ডারদের  মাধ্যমে জ্বিহাদী কার্যক্রম এবং সমসাময়িক বিষয়গুলোকে সুসংগঠিত ও পুনর্বিন্যাস করেন। তিনি নিয়মিত জ্বিহাদী এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ার তথ্য পর্যবেক্ষণ করেন যাতে করে তিনি তাদের বিজয় এবং বিদেশী কুফফারদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারেন। এই ভাবেই তিনি তাঁর দেশ এবং বহির্বিশ্বের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এগুলোই তাঁর সমসাময়িক কার্যক্রম।

 

তাঁর নেতৃত্বে ইসলামিক আমিরাত:

১৪১৫হিজরি সনের (১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ) ১৫ই মুহররম মোল্লা মোহাম্মদ উমার মুজাহিদের(আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন) নেতৃত্বে ইসলামিক এমিরাত অফ আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীকালে আফগানিস্তানের অসংখ্য আলেম, দা’ঈ, মুজাহিদিনদের এবং ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের সমর্থন পেয়ে অনেক বাধা পেরিয়ে ইসলামিক আমিরাত আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির(আফগানিস্তানের) শতকরা ৯৫ ভাগ অংশজুড়ে ইসলামী শারিয়াহ বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এখনও দেশের স্থায়ী অংশ নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই গর্বিত ইসলামিক আমিরাত পশ্চিমা কুফর ও পরাশক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে মুখরিত রয়েছে।

মোল্লা মোহাম্মদ উমার মুজাহিদিন এখনও ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় আমীর। তাঁর অধীনে তাঁর প্রতিনিধি, শুরা সভা (মন্ত্রীসভা), বিচারকগণ, ৯টি কার্যনির্বাহী কমিশন, ৩টি আলাদা প্রশাসন ও অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে, যারা কিনা ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থানের শুরু থেকেই রয়েছেন।

ইসলামিক আমিরাতের প্রতিনিধিগণ অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর দেখাশোনা ও পরিচালনার পাশাপাশি তাদের কার্যক্রমের প্রতিবেদন তৈরি করে নিয়মিত আমিরুল মুমিনীন-এর নিকট উপস্থাপন করেন এবং আমিরুল মুমিনীনের কোন নির্দেশ বা তথ্য থাকলে তা সেইসব প্রতিষ্ঠান গুলোকে জানিয়ে দেন। ইসলামিক আমিরাতের নিয়োগ প্রাপ্ত ২০ জন শুরা সদস্যের মাধ্যমে এর শুরা সভা গঠিত। ইসলামিক আমিরাতের প্রতিনিধির অধীনে তাঁরা “শুরাসভা” পরিচালনা করেন। এই শুরাসভা-ই মূলত সকল রাজনৈতিক, সামরিক এবং অন্যান্য জটিল বিষয়গুলোর ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

প্রাথমিক আদালত নিয়ে গঠিত ইসলামিক আমিরাতের বিচারপতিগণের স্বতন্ত্র ও বিস্তৃত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পদবী আদালত(courts of appellation)ও বাতিল-করণ আদালত(court of cassation) তাঁদের নিজস্ব দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত।

বর্তমানের এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলামিক আমিরাতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নয়টি ভিন্ন ভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে। জিহাদের এই সুমহান যাত্রাকে প্রাণশক্তি যোগান দেয়ার জন্য সবচেয়ে বড় সামরিক বিভাগকে নয়টি উপ-কমিশনে ভাগ করা হয়েছে। এই কমিশন আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের জন্য শাসক বা সামরিক ইন-চার্জ নিয়োগ করে থাকে। এরপরে সামরিক ইন-চার্জ সকল জেলায় সাব-কমিশন গঠন করে। যা পরবর্তীকালে তাদের নিজ নিজ প্রদেশে এবং জেলার সব সামরিক ও বেসামরিক বিষয়ক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য দায়িত্ব-রত থাকে।

অবশিষ্ট কমিশন সমুহ নিম্নরূপঃ

  • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কমিশন
  • রাজনৈতিক বিষয়াদি কমিশন
  • সংস্কৃতি কমিশন
  • অর্থনৈতিক কমিশন
  • স্বাস্থ্য কমিশন
  • দাওয়াহ, পথপ্রদর্শন এবং সংমিশ্রণ কমিশন
  • কারাবন্দী বিষয়ক কমিশন
  • এনজিও(NGO)বিষয়ক কমিশন

 

ইসলামিক মিরাতের বাকি সংগঠনগুলো হলঃ

  • বেসামরিক হতাহতের প্রতিরোধের জন্য সংগঠন
  • শহীদ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংগঠন
  • সংগঠিত হবার জন্য এবং বিশেষ রাজস্ব আদায়ের জন্য সংগঠন

মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর ‘মুজাহিদের’ নেতৃত্বে দুই দশক ধরে ইসলামিক আমিরাত, আফগানিস্তানের বড় একটা অংশ ইসলামিক বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে সফলভাবে পরিচালনা করে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং সাধারণ মুসলিমদের জীবন, সম্মান-সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই দীর্ঘ সময়ে, ইসলামিক শাসন-ব্যবস্থায় পরিচালিত ইসলামিক আমিরাত অনেক চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। কিন্তু মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দয়ায় ইসলামিক আমিরাত নিজেদের শারি’য়া নীতি ধরে রেখেই এই প্রতিকূলতা সফলভাবে মোকাবেলা করেছে।

 

সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের নেতাকে সুরক্ষিত রাখুন।

আমীন।



**** সমাপ্ত ****

Related Articles

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + five =

Back to top button