আল-হিকমাহ মিডিয়ানির্বাচিতবই ও রিসালাহ [আল হিকমাহ]

Pdf/word কেমন ছিলেন তারা?! || শাইখ খালিদ বিন আব্দুর রহমান আল হুসাইনান রহিমাহুল্লাহ || আল হিকমাহ মিডিয়া

مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

كيف كانوا؟
কেমন ছিলেন তারা?!
How were they?!

للشيخ خالد بن عبد الرحمن الحسينان – رحمه الله
শাইখ খালিদ বিন আব্দুর রহমান আল হুসাইনান রহিমাহুল্লাহ
Shaykh Khalid Bin Abdur Rahman Al-Husainan Rahimahullah

 

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

লিংক-১ : https://justpaste.it/kemon_chilen_tara
লিংক-২ : https://mediagram.me/0a2cfe639ec659fe
লিংক-৩ : https://noteshare.id/wlPz0CN
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20230430…on_chilen_tara
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20230430…2cfe639ec659fe
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20230430…are.id/wlPz0CN

روابط بي دي اب
PDF (624 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৬২৪ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/zApaJFjCpwgs39Q
লিংক-২ :
https://archive.org/download/kemon_chilen_tara/KemonChilenTara%20-%20SaikhKhalid%20F.pdf
লিংক-৩ : https://kemonchilentara.files.wordpress.com/2023/05/kemonchilentara-saikhkhalid-f.pdf
লিংক-৪ : https://jmp.sh/frKson3b
লিংক-৫ : https://www.mediafire.com/file/z2vouk9fkewqbjg/KemonChilenTara+-+SaikhKhalid+F.pdf/file
লিংক-৬ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dttlu83d036a121734e87b8d435de74f235d2
লিংক-৭ : https://drive.internxt.com/sh/file/98977202-a77b-4580-9d5f-974dbc28bd40/0c088f1dbc4c7d33b699093c45f1ffeb45a8109bc28960a902269162d3d1f05c
লিংক-৮ : https://f005.backblazeb2.com/file/kemonchilentara/KemonChilenTara+-+SaikhKhalid+F.pdf

 

روابط ورد
Word (508 KB)
ওয়ার্ড [৫০৮ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/L3wZHx2zEozgfyX
লিংক-২ :
https://archive.org/download/kemon_chilen_tara/KemonChilenTara%20-%20SaikhKhalid%20F.docx
লিংক-৩ : https://kemonchilentara.files.wordpress.com/2023/05/kemonchilentara-saikhkhalid-f.docx
লিংক-৪ : https://jmp.sh/CFfudWsu
লিংক-৫ : https://www.mediafire.com/file/uqhdo6vb9taftxx/KemonChilenTara+-+SaikhKhalid+F.docx/file
লিংক-৬ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dttlu93fbc688b95c4bbd8e0ef8b0f95348c5
লিংক-৭ : https://drive.internxt.com/sh/file/f24ccbb6-c2e1-4e7b-9d18-78bd1eef91ff/1ca925de3d7773cdcf3fd6d2042306ade90bd2a661c4d54c727e9bf3a4b9d86c
লিংক-৮ : https://f005.backblazeb2.com/file/kemonchilentara/KemonChilenTara+-+SaikhKhalid+F.docx

 

روابط الغلاف- ١
book Banner [900 KB] বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৯০০ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/WtjooGjnG4iNMfc
লিংক-২ :
https://archive.org/download/kemon_chilen_tara/Kemon-chilen-tara%20Cover.jpg
লিংক-৩ : https://kemonchilentara.files.wordpr…tara-cover.jpg
লিংক-৪ : https://jmp.sh/Fq5NwFfM
লিংক-৫ : https://www.mediafire.com/file/blxdw…Cover.jpg/file
লিংক-৬ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dttluce632ca7404842e7a72a241134b8799d
লিংক-৭ : https://drive.internxt.com/sh/file/c24ddfa5-56c0-469c-8546-f486da86fbfd/ecea9ebea366d8718e4d46519a426dbdeeb5b7550448b2532c26ee703c50e10d
লিংক-৮ : https://f005.backblazeb2.com/file/kemonchilentara/Kemon-chilen-tara+Cover.jpg

روابط الغلاف- ٢
Banner [1.5 MB] ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.৫ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/HSk3zqXKD59zj9j
লিংক-২ :
https://archive.org/download/kemon_chilen_tara/Kemon-chilen-tara-Banner-HQ.jpg
লিংক-৩ : https://kemonchilentara.files.wordpr…-banner-hq.jpg
লিংক-৪ : https://jmp.sh/AU6KBye9
লিংক-৫ : https://www.mediafire.com/file/uhnst…er-HQ.jpg/file
লিংক-৬ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dttlua3a9ac9d1b4a4968a2bdf57e73977d8a
লিংক-৭ : https://drive.internxt.com/sh/file/75d9f129-0045-4019-aafe-db893ba8cef5/e47bd846d32418cabb60ffb15744eb17f7cf4829be777b7bf701f101b4049127
লিংক-৮ : https://f005.backblazeb2.com/file/kemonchilentara/Kemon-chilen-tara-Banner-HQ.jpg

 

======

কেমন ছিলেন তারা?!
How were they?!

للشيخ خالد بن عبد الرحمن الحسينان – رحمه الله
শাইখ খালিদ বিন আব্দুর রহমান আল হুসাইনান রহিমাহুল্লাহ

 

 

 

প্রিয় সম্মানিত ভাইয়েরা আমার!
আমরা একটু ভাবি, চিন্তা করি, খানিক হিসাব মিলাই, সেই আল্লাহপ্রেমী প্রজন্মের ব্যাপারে। সে এক অনন্য জাতি। বিস্ময়কর জামাত। ইতিহাস এমন আরেকটি জামাতের জানান দিতে অক্ষম। তাদের প্রকৃত প্রশংসার বিবরণ একমাত্র ঐশী গ্রন্থ কোরআনই দিতে পেরেছে। কোরআনে তাদের রব তাদের ব্যাপারে বলেন-

لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا

“অর্থঃ আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন। (সুরা ফাতাহ ৪৮:১৮)
তিনি জানেন তাদের অন্তরে কি আছে। অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের অন্তরের ইখলাস, আত্মার পবিত্রতা, নিয়তের বিশুদ্ধতা আর ঈমানের পূর্ণতা ব্যাপারে সম্যক অবগত ছিলেন।
তিনি জানেন তাদের অন্তরে কি আছে। ফলে তিনি তাদের উপর নাযিল করলেন- সাকিনা, আর তাদেরকে দান করলেন নিকটতম বিজয়।
রবের প্রশংসার পাশাপাশি রবের মনোনীত রাসূলও তাদের প্রশংসা করেছেন মন খুলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

وَعَن عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أنّه قَالَ خَيْرُكُمْ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ

ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার (সাহাবীদের) যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়ীদের) যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবে-তাবেয়ীনদের) যুগ।” (বুখারী ২৬৫১, মুসলিম ৬৬৩৮)
উত্তম যুগ (তথা জাতি) হলো আমার যুগ। অর্থাৎ এই মানব সভ্যতার মধ্যে সবচে উত্তম প্রজন্ম হলো, আমার সাহাবীদের প্রজন্ম। অন্তরের পবিত্রতা আর আঁকলের স্বচ্ছতায় তারা অনন্য। আমাদের আজকের আলোচনা হচ্ছে সেই পবিত্র প্রজন্মের পবিত্র মানুষগুলো নিয়ে। কেমন ছিলেন তারা? কেমন ছিল তাদের জীবন?
কোরআনের সাথে তারা কেমন ছিলেন?
কোরআনই হলো এই উম্মাহর সংবিধান। এই উম্মাহর উন্নতির সোপান। আল্লাহ তায়ালা এই কোরআনের মাধ্যমেই এই উম্মাহকে সমূহ অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছেন। তাই এই কোরআনের প্রতি সেই পবিত্র মানুষগুলোর গুরুত্ব ও আগ্রহ ছিল ঈর্ষা করার মত।
কোরআন মুখস্থ করা, তিলাওয়াত করা, আয়াত নিয়ে ফিকির করা, কোরআনের উপর আমল করা, সমাজে কোরআন বাস্তবায়ন করা – এ-ই ছিল তাদের জীবনের ব্রত। প্রসিদ্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবাদের কোরআনপ্রীতির বিবরণ দিয়ে বলেন-
‘আমাদের সাহাবাদের কেউ যদি কোরআনের দশটি আয়াত মুখস্থ করতো, তাহলে যতক্ষণ না এই দশ আয়াতের ব্যাখ্যা ও মর্ম না বুঝেছে এবং জীবনে শতভাগ তা বাস্তবায়ন করেছে – ততক্ষণ সামনে যেতো না’।
সুবহানাল্লাহ! একটু চিন্তা করুন। মাত্র দশ আয়াত! তাও আমলে বাস্তবায়ন না করে সামনে যাবেনা। এই হাদিসের নিরিখে আমরা আমাদের বাস্তবতা পরখ করি।
আজ আমরা কোরআন মুখস্থ করছি। পুরো কোরআন মধুর সুরে তিলাওয়াত করছি (যদিও মধুর সুরে তিলাওয়াত করা শরীয়তে প্রশংসনীয় বিষয়)। কিন্তু কোরআন তিলাওয়াত করার দ্বারা আমাদের টার্গেট কি?
আমার মধুর তিলাওয়াত বিভিন্ন চ্যানেলে যাবে, মানুষ শুনবে, বাহবা দিবে। সুনাম হবে। লাইক কমেন্ট হবে। ফলোয়ার বাড়বে। কিন্তু আমরা কি সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি যে, এই কোরআন শতভাগ আমার জীবনে বাস্তবায়ন হবে? কোন আয়াত শতভাগ বাস্তবায়ন না করে আমি সামনে যাবো না – আমরা ক’জন এভাবে ভেবেছি? প্রত্যেকেই নিজের অবস্থা যাচাই করে দেখি!!!
যখনই কোরআনের কোন আয়াত তিলাওয়াত করেন, তখনই ভাবুন। আপনি কি আপনার বাস্তব জীবনে এই আয়াতটি প্রয়োগ করেছেন?
কোরআনের একটি মাত্র আয়াত – সিয়ামের আয়াত। শুধু সুরা বাকারায় এসেছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

“অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা ২:১৮৩)
সুরা বাকারার সিয়াম সংক্রান্ত এই একটি আয়াতের উপর পুরো মুসলিম উম্মাহ আমল করে। এই আয়াতটি সামনে রেখে তারা সিয়াম পালন করে। সিয়াম পালন করা ইসলামের একটি অতীব জরুরী বিধান বলে বিশ্বাস করে। সিয়াম পরিত্যাগকারীকে গুনাহগার মনে করে। সবকিছু মাত্র একটি আয়াতের কারণে। আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু জিহাদ সংক্রান্ত কয়টি আয়াত এসেছে? কতগুলো সুরায় এসেছে?
সুরা বাকারা, সুরা আলে ইমরান, সুরা নিসা, সুরা মায়েদা, সুরা আনফাল, সুরা তাওবা, সুরা সাফ, সুরা কিতাল যার অপর নাম সুরা মুহাম্মদ, সুরা আহযাব। কত অগণিত আয়াতে জিহাদের আলোচনা হলো, জিহাদের তারগীব দেওয়া হলো। জিহাদকে ফরজ ঘোষণা দেওয়া হলো, মুজাহিদদের ফযিলত বলা হলো, জিহাদ পরিত্যাগকারীদের নিন্দা করা হলো। জিহাদ থেকে পিছনে অবস্থানকারীদের মুনাফিক আখ্যা দেওয়া হলো। জিহাদে শাহাদাত বরণকারীদের মর্যাদা শুনানো হলো। আরও কত আলোচনা। কিন্তু আজ উম্মাহর কতজন মানুষ আছে যারা এই আয়াতগুলো জানে এবং নিজের জীবনে বাস্তবায়নের ইচ্ছা রাখে?
হে আল্লাহর প্রিয় বান্দা! এভাবেই আপনি কোরআনের সাথে আপনার সম্পর্কের অবস্থান যাচাই করুন। আসলেই কি আপনার বাস্তব জীবনে কোরআন আছে? কোরআন কি আপনার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে, নাকি আপনি অবস্থান করছেন, কোরআন থেকে দূরে, বহু দূরে?
আপনার চরিত্র, আপনার চালচলন এবং লেনদেনে কি কোরআন আছে?
কত মানুষ এমন আছে সে কোরআন তিলাওয়াত করছে, কিন্তু কোরআন তাকে লা’নত করছে। নাউযুবিল্লাহ!
সে সুদের আয়াত তিলাওয়াত করছে, কিন্তু এখনো সুদের সাথে জড়িত। মুখে তিলাওয়াত করলেও কার্যত সে এই আয়াত অস্বীকার করেছে।
হে আমার প্রিয় দ্বীনি ভাই!
আহলে কোরআনরাই দুনিয়া আখিরাতে অগ্রে থাকবে। দুনিয়ার ব্যাপারে তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেই দিয়েছেন, ‘নামাজের ইমামতি সে-ই করবে, যার কোরআন বেশি জানা আছে’।
তো দুনিয়াতে সে সবার আগে থাকলো। আর আখিরাতেও সে আগে থাকবে। যেমন হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ شِهَابٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ مِنْ قَتْلَى أُحُدٍ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ ثُمَّ يَقُولُ ‏”‏ أَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِلْقُرْآنِ ‏”‏‏.‏ فَإِذَا أُشِيرَ لَهُ إِلَى أَحَدِهِمَا قَدَّمَهُ فِي اللَّحْدِ وَقَالَ ‏”‏ أَنَا شَهِيدٌ عَلَى هَؤُلاَءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏”‏‏.‏ وَأَمَرَ بِدَفْنِهِمْ فِي دِمَائِهِمْ، وَلَمْ يُغَسَّلُوا وَلَمْ يُصَلَّ عَلَيْهِمْ‏.‏

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’ দু’ জনকে একই কাপড়ে (কবরে) একত্র করতেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করতেন, তাঁদের উভয়ের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানত? দু’ জনের মধ্যে এক জনের দিকে ইঙ্গিত করা হলে তাঁকে কবরে পূর্বে রাখতেন এবং বললেন, আমি কিয়ামতের দিন এদের ব্যাপারে সাক্ষী হব। তিনি রক্ত-মাখা অবস্থায় তাঁদের দাফন করার নির্দেশ দিলেন, তাঁদের গোসল দেয়া হয়নি এবং তাঁদের (জানাযার) সালাতও আদায় করা হয়নি”। (বুখারী ১৩৪৩, তিরমিযী ১০২৬, নাসায়ী ১৯৫৫, ২০২১, আবূ দাউদ ৩১২৮, ইবনু মাজাহ ১৫১৪, আহমাদ ১৩৭৭৭)
হে আল্লাহর বান্দা! কবরেও আহলে কোরআন অগ্রে থাকলো। এরপর যখন আখিরাতে জান্নাতে যাবে, তখনও কোরআনওয়ালা আগে আগেই থাকবে। যেমনটা এসেছে জামে তিরমিযীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- কোরআনের ক্বারীকে আল্লাহ তায়ালা বলবেন,

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ سُفْيَانَ، حَدَّثَنِي عَاصِمُ بْنُ بَهْدَلَةَ، عَنْ زِرٍّ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا ‏”‏

আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (কিয়ামতে) কুরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কুরআন পাঠ করতে করতে উপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে সুস্থে পাঠ করতে সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে। (তিরমিযী ২৯১৪, আহমাদ ৬৭৯৯)
আল্লাহু আকবার! কত বড় মর্যাদা।
সুতরাং হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!
আমাদের উচিত, আমরা যখনই কোরআনের কোন আয়াত পড়ি, তা নিয়ে যেন ভাবি এবং ফিকির করি। নিজের জীবনে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেই। যাতে আমরাও সেই পবিত্র প্রজন্মের সাথে মিলতে পারি। কিয়ামতের ময়দানে তাদের সাথে দলবদ্ধ হতে পারি।
কেমন ছিল তাদের ইলম অন্বেষণ?
তারা কোরআন হিফজ করতেন, আর আমল করতেন – শুধু এতটুকুই নয়। বরং তারা ইলম ত্বলব করতেন। এই বিষয়ে তাদের প্রবল আগ্রহ ছিল। কারণ তারা জানতেন যে, মানব জীবনে ইলমের গুরুত্ব অনেক। ইলম ছাড়া মানুষ তার রবের ইবাদত করবে কীভাবে? তাওহীদ ও শিরকের মাঝে পার্থক্য করবে কীভাবে? আনুগত্য ও নাফরমানীর মাঝে পার্থক্য করবে কীভাবে? সুন্নাহ ও বিদআহর মাঝে ফরক্ব করবে কীভাবে?
তাই দ্বীনের অন্যান্য অনুষঙ্গের ন্যায় এ পথেও তারা আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য দৃষ্টান্ত। তাদেরই একজন সদস্য হলেন – হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন,

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ قَالاَ حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ الأَخْنَسِ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُغِيثٍ، عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ كُنْتُ أَكْتُبُ كُلَّ شَىْءٍ أَسْمَعُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أُرِيدُ حِفْظَهُ فَنَهَتْنِي قُرَيْشٌ وَقَالُوا أَتَكْتُبُ كُلَّ شَىْءٍ تَسْمَعُهُ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَشَرٌ يَتَكَلَّمُ فِي الْغَضَبِ وَالرِّضَا فَأَمْسَكْتُ عَنِ الْكِتَابِ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَوْمَأَ بِأُصْبُعِهِ إِلَى فِيهِ فَقَالَ ‏ “‏ اكْتُبْ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا يَخْرُجُ مِنْهُ إِلاَّ حَقٌّ ‏”‏ ‏.‏

আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি যা কিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে শ্রবণ করতাম, তা লিখে রাখতাম। আমি ইচ্ছা করতাম যে, আমি এর সবই সংরক্ষণ করি। কিন্তু কুরাইশরা আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করে এবং বলেঃ তুমি যা কিছু শোন তার সবই লিখে রাখ, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মানুষ, তিনি তো কোন সময় রাগান্বিত অবস্থায় কথাবার্তা বলেন এবং খুশীর অবস্থায়ও বলেন। একথা শুনে আমি লেখা বন্ধ করি এবং বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করি। তখন তিনি তার আঙুল দিয়ে নিজের মুখের প্রতি ইশারা করে বলেনঃ তুমি লিখতে থাক, ঐ যাতের কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন, যা কিছু এ মুখ হতে বের হয়, তা সবই সত্য। (সুনানে আবু দাউদ – ৩৬০৭)
আল্লাহু আকবার! রাসূলের যবান থেকে যা কিছু বের হতো, সবটাই লিখে ফেলতেন। এটা সেই যুগে যখন লিখার উপকরণ এত সহজ ছিলনা। এত সুন্দর কলম আর খাতা ছিলনা। আজকের যুগের মত মানুষ লেখালেখিতে অত অভ্যস্ত ছিলনা। সে যুগে যা শুনতেন তাই লিখে ফেলতেন। ইলমের প্রতি প্রবল স্পৃহা থাকার কারণেই এমনটা করতে পেরেছেন।
দেখুন তার ইলমের আগ্রহ কোন পর্যায়ের ছিল! ইলমের প্রতি তাদের প্রবল আগ্রহের আরেকটি প্রমাণ হলো, তারা সকল বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করতেন। তাইতো আমরা হাদিসের কিতাবাদীতে সাহাবাদের অনেক প্রশ্নের উল্লেখ পাই। এমনকি গ্রাম থেকে যদি কোন বেদুইন আসতো তাহলে তারা অনেক খুশি হতেন। কারণ, সে রাসূলকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে, ফলে তারাও কিছু জানতে পারবেন। তাদের দ্বীনের ইলম ও বুঝ পরিপক্ক হবে।
শুধু তাই নয়, তারা ইলমের জন্য যেকোনো কষ্ট ও মুজাহাদা করতে সদা প্রস্তুত থাকতেন। নির্ঘুম রজনী, ক্ষুধার যন্ত্রণা, দীর্ঘ পথচলা, তীব্ররোদে মরুভূমির সফর সব কিছু তারা সহ্য করতো ইলমের জন্য। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস যাকে এই উম্মাহর ‘হিবর’ বলা হয়। রইসুল মুফাসসিরীন নামে যাকে স্মরণ করা হয়, তিনি বলেন-
‘আমি যদি কারো ব্যাপারে শুনতে পাই যে, তার কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস আছে আমি তার কাছেই ছুটে যাই। সেই হাদিসখানা শুনার জন্য’।
তিনি যদি কারো কাছে দুপুর বেলা যেতেন এবং তাকে গিয়ে বিশ্রামে পেতেন, তাহলে তার দরজার সামনে বসে থাকতেন। রোদের প্রচণ্ড তাপের মধ্যে দরজার সামনে বসে বসে তার জন্য অপেক্ষা করতেন। অথচ তিনি হলেন, ইবনু আম্মি রাসূলিল্লাহ!
একবার এমন হয়েছে, তিনি এক সাহাবীর দরজায় বসে আছেন। সেই সাহাবী বের হয়ে দেখেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো ভাই ইবনে আব্বাস দরজার সামনে বসা। তিনি তাকে দেখে অবাক হলেন। লজ্জিত হলেন। বিনয়ের সাথে বললেন, ‘আপনি এই তীব্র রোদের মাঝে কেন আসলেন? আপনি বললেই তো আমি আপনার কাছে যেতাম। কারণ আপনি তো রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচাতো ভাই’।
তখন ইবনে আব্বাস বললেন, ‘না না, আমিই আপনার কাছে আসার বেশি হক্বদার। কারণ আমি তো ইলমের জন্য এসেছি’। আহলে ইলমের বিনয় দেখুন!
তাদের ইলমের আগ্রহ আমাদের আজকের পড়াশোনার মত ছিলনা। আমরা তো আজ কিতাব জমা করছি, সার্টিফিকেট ভারী করছি, সনদ মোটা করছি, মুতুন মুখস্থ করছি, কবিতা মুখস্থ করছি। মানুষ আমাদের যোগ্যতা সম্পর্কে জানবে এরপর মূল্যায়ন করবে। ভালো কোন পোষ্টে চাকুরী হবে। না, তাদের ইলম অন্বেষণ এ রকম ছিলনা। বরং তাদের ইলম অন্বেষণের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তা আমলে পরিণত করা। আমলকে উন্নত করা। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের মানসিকতা বিশুদ্ধ করার জন্য বলেন- ‘ইলম রেওয়ায়েতের আধিক্যের নাম নয়। অমুকে বর্ণনা করেছে, অমুকে বলেছে, অমুক থেকে শুনেছি, এমন রেওয়ায়েতের আধিক্যের নাম ইলম নয়। বরং ইলম হলো খাশইয়াত। বান্দার হৃদয়ে আল্লাহর ভয়। তার রবের ভীতি’।
ইমাম মালেক, মদিনার ইমাম বলেন- “ইলম এবং হিকমত হলো ‘নূর’। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা যাকে পছন্দ করেন তাকে পথ দেখান। অনেক মাসআলা জানার নাম ইলম নয়”
সুতরাং আল্লাহর বান্দারা! ভালো করে বুঝুন। আজকে আমরা মুখস্থ করছি, সার্টিফিকেট আর সনদ জমা করছি, মানুষের প্রশংসা কুড়াচ্ছি। কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবনে এর কোন প্রভাব নেই। আমাদের আখলাকে, ইখলাসে, তাকওয়ায় যার কোন আছর নেই – সেটা কি ইলম হতে পারে?
ইমাম হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পূর্বসূরিদের কেউ যখন ইলম ত্বলব করতেন, ইলম তখন তাদের নামাজে প্রভাব ফেলতো। তাদের খুশু -খুজু, তাদের দৃষ্টিশক্তি, তাদের ভাষা, তাদের চলা ফেরা সব কিছুতেই প্রভাব ফেলতো’।
ইবাদতে তারা কেমন ছিলেন?
তারা এক্ষেত্রেও আমাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। এটাই ছিল তাদের মূল ব্যস্ততা। তারা সুখে দুখে, দেশে ও সফরে, ঘরে ও মসজিদে, প্রকাশ্যে ও নির্জনে, সর্বদা আল্লাহ তায়ালার ইবাদতেই লিপ্ত থাকতেন। এক্ষেত্রে তাদের আদর্শ ছিলেন তাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য উত্তম আদর্শ ছিলেন।

أَخْبَرَنَا الْفَضْلُ بْنُ الْحُبَابِ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ عِلَاقَةَ قَالَ: سَمِعْتُ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ يَقُولُ: قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذَا تَوَرَّمَتْ قَدَمَاهُ فَقِيلَ لَهُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَفْعَلُ هَذَا وَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ وَمَا تَأَخَّرَ؟ قَالَ: (أَفَلَا أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا)

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে লম্বা লম্বা সময় যাবত দাড়িয়ে থাকতেন, ফলে তার পা ফুলে যেতো। আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি নিজেকে এত কষ্টে ফেলছেন কেন? আল্লাহ তায়ালা তো আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন’। জবাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তবে কি আমি শোকরগোযার বান্দা হবো না?” (সহীহ আল বুখারী – ৪৮৩৬; সহীহ মুসলিম – ২৮১৯)
এই ঘটনাটি শুনুন! সহীহ বুখারীতে এসেছে।

حديث عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: كَانَ الرَّجُلُ، فِي حَيَاةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا رَأَى رؤْيَا قَصَّهَا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَمَنَّيْتُ أَنْ أَرَى رُؤْيَا، فَأَقُصَّهَا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكُنْتُ غُلاَمًا شَابًّا وَكُنْتُ أَنَامُ فِي الْمَسْجِدِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَيْتُ فِي النَّوْمِ كَأَنَّ مَلَكَيْنِ أَخَذَانِي، فَذَهَبَا بِي إِلَى النَّارِ فَإِذَا هِيَ مَطْوِيَّةٌ كَطَيِّ الْبِئْرِ، وَإِذَا لَهَا قَرْنَانِ، وَإِذَا فِيهَا أُنَاسٌ، قَدْ عَرَفْتُهُمْ فَجَعَلْتُ أَقُولُ: أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ النَّارِ قَالَ: فَلَقِيَنَا مَلَكٌ آخَرُ، فَقَالَ لِي: لَمْ تُرَعْ فَقَصَصْتُهَا عَلَى حَفْصَةَ، فَقَصَّتْهَا حَفْصَةُ [ص: 163] عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: نِعْمَ الرَّجُلُ عَبْدُ اللهِ لَوْ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ فَكَانَ، بَعْدُ، لاَ يَنَامُ مِنَ اللَّيْلِ إِلاَّ قَلِيلاً

“হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বড় ইবাদতগুযার সাহাবী। কিয়ামুল্লাইল আর সিয়ামুন নাহার যার নিত্যদিনের আমল। একবার ঘুমিয়ে আছেন। স্বপ্নযোগে তার কাছে দুইজন ফেরেশতা আসলো। এসে তাকে নিয়ে জাহান্নামের কিনারায় চলে গেলো। সেখানে তিনি কিছু পরিচিত মানুষ দেখতে পেলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আউযু বিল্লাহি মিনান্নার। আউযু বিল্লাহি মিনান্নার। আউযু বিল্লাহি মিনান্নার (আমি আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই)।
পরদিন তিনি এই স্বপ্নের কথা আম্মাজান হাফসার কাছে বললেন। তিনি এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

نِعْمَ الرَّجُلُ عَبْدُ اللهِ، لَوْ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيلِ

“অর্থঃ আব্দুল্লাহ অনেক ভালো মানুষ, যদি সে কিয়ামুল্লাইল করতো”। (সহীহুল বুখারী ৪৪০, মুসলিম ২৪৭৮, তিরমিযী ৩২১, নাসায়ী ৭২২, ইবনু মাজাহ ৭৫১)
দেখুন, এই সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছোট্ট এই বাক্যটি দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তার ছেলে সালেম বলেন, আব্বাজান এরপর থেকে রাতে খুব কম সময় ঘুমাতেন। এটা ছিল, তাদের জীবনে রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি কথার প্রভাব। সাথে সাথে প্রভাব। অথচ আমরা?
আমরা প্রতিদিন কত হাদিস শুনি, কত বয়ান শুনি, কত দরস শুনি, কিন্তু এর কতটুকু আমরা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করি?
মুহাম্মদ বিন তালহা, সাহাবাগণ তাকে সাজ্জাদ বলে ডাকতেন। কেন জানেন? প্রচুর সিজদা এবং নামাজের কারণে সবাই তাকে সাজ্জাদ (প্রচুর সিজদাকারী) বলে ডাকতেন।
আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বড় ইবাদতগুযার ছিলেন। দিনের বেলা রোজা, আর রাতের নামাজের বড় পাবন্দ ছিলেন। কিছু মানুষ আছে যারা মানুষের সামনে আল্লাহর ইবাদত করে। মসজিদে এবং উন্মুক্ত যায়গায় আল্লাহর ইবাদত করে। কিংবা বিশেষ কোন মওসুমে যেমন রমজানে ইবাদত করে। কিংবা যখন কোন মুসিবতে পড়ে, মামলায় পড়ে কিংবা অসুস্থ হয়। আল্লাহর কাছে তার কোন প্রয়োজন হয়, তখনই সে আল্লাহর ইবাদত করে। যখন সেই মওসুম চলে যায়, কিংবা সেই মসিবত দূর হয়ে যায়- তখনই আবার সে আল্লাহকে ভুলে যায়। সে বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়।
হযরত নাফে রহিমাহুল্লাহকে আব্দুল্লাহ বিন উমরের ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। ঘরে তিনি কেমন ইবাদত করতেন?
উত্তরে বললেন, ‘তোমাদের দ্বারা তা সম্ভব নয়’। দেখুন কি বললেন! অর্থাৎ তিনি যে পরিমাণ ইবাদত করেন, তা তোমাদের দ্বারা কখনো সম্ভব নয়। নাফে রহিমাহুল্লাহ আরও বলেন, ‘তিনি প্রতি নামাজের জন্য অজু করেন। কোরআন সব সময় তার সামনেই থাকে’। অর্থাৎ তিনি ঘরে, হয়তো নামাজে থাকেন, কিংবা কোরআন তিলাওয়াতে কিংবা অন্য কোন আমলে। তার ঘরের সময় এভাবেই কাটে।
প্রকৃত অর্থে বলতে গেলে সাহাবাদের জীবন হলো- ইবাদতের একটি শিকলের ন্যায়। এক ইবাদত থেকে বের হয়ে, আরেক ইবাদতে লিপ্ত হচ্ছেন। এক যিকির শেষ করে আরেক যিকিরে লিপ্ত হচ্ছেন। এভাবেই তারা চালিয়ে যেতেন আল্লাহর আনুগত্যের নিরবচ্ছিন্ন একটি পরিক্রমা। এটা শুধু নিজ এলাকায় থাকারই চিত্র নয়। সফরেও তারা এই একই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেন। আমরা যদি আমাদের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, নিজ এলাকায় থাকলে আমরা আমল কমবেশি যাই করি, সফরে পুরো উল্টো চিত্র। অলসতা, গাফলতিতে আমরা ডুবে যাই। ধারাবাহিক আমলগুলোও ছুটে যায়। কিন্তু সাহাবাদের দৃশ্য এর পুরো ব্যতিক্রম।
ইবনে আবি মুলাইকা রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আমি একবার ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সঙ্গে মক্কা থেকে মদিনা পর্যন্ত সফর করেছিলাম। পথিমধ্যে রাতের বেলা যখনই কাফেলা বিরতি দিতেন, তখনই তিনি নামাজে দাড়িয়ে যেতেন। অর্ধ রাত পর্যন্ত নামাজ পড়তে থাকতেন’।
একটু চিন্তা করুন! সফরে যখন যাত্রাবিরতি হয়, শরীর কত ক্লান্ত থাকে! ঘুমাতে মন চায়। বিশ্রামের জন্য শরীর কাতর হয়ে আসে। কিন্তু সে সময়ও তারা অর্ধ রাত দাঁড়িয়ে নামাজে কাটিয়ে দিতেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেক সাহাবী হামযা বিন আমর আল আসলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু।

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ حَمْزَةَ بْنَ عَمْرٍو الأَسْلَمِيَّ قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَأَصُومُ فِي السَّفَرِ وَكَانَ كَثِيرَ الصِّيَامِ‏.‏ فَقَالَ ‏ “‏ إِنْ شِئْتَ فَصُمْ، وَإِنْ شِئْتَ فَأَفْطِرْ ‏”‏‏.‏

তিনি একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সফরেও রোজা রাখতে সক্ষম। আমি যদি সফরে রোজা রাখি তাহলে কি আমার গুনা হবে’। আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ তায়ালা তোমাকে ছাড় দিয়েছেন। ইচ্ছে করলে না রাখতে পারো। আর যদি রাখতে চাও তাহলেও সুযোগ আছে কোন গুনাহ হবেনা’। (বুখারী – ১৮১৯)
সুবহানাল্লাহ! ইবাদতের কি আগ্রহ তাদের। ছাড় পাবার পরও আমল করার উদগ্র বাসনা তাকে কিভাবে প্রভাবিত করছে।
সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা! আর গাফেল থাকবেন না। আল্লাহর দয়া আমাদের উপর যে, তিনি আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইবাদতের বিধান দিয়েছেন। তাই যেটা আপনার জন্য সহজ নিজেকে সেই ইবাদতেই লিপ্ত রাখুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রতিটি নেক কাজ সাদাকা’। সুতরাং চেষ্টা করুন যাতে সব ধরনের নেক আমল আপনার আমলনামায় একত্রিত হয়। স্বল্প করে হলেও।
কেমন ছিলো তাদের খোদাভীতি, দুনিয়া বিমুখতা ও তাকওয়া?
এক্ষেত্রেও তারা ছিলেন অনন্য। তাইতো আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রশংসা করে বলেন-

إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَن خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا

যখন তাদের সামনে রহমানের আয়াত সমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা কান্নারত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। [সুরা মারঈয়াম – ১৯:৫৮] অন্তরে ঈমানের বিশালতার কারণে তারা প্রতিটি গুনাহকে অনেক ভয় করতেন। আমাদের মত নয়। আমরা তো আজ গুনাহের বিষয়টিকে হালকা করে ফেলেছি। আমরা বলি এটা সগীরা, এটা কবীরা। এটা ছিলকা, এটা মূল। এটা এক নব আবিষ্কৃত বিষয়, আমরা দ্বীনকে বিভিন্নভাবে ভাগ করে ফেলেছি।
আমরা বলি এটা মূল হুকুম, এটা প্রাসঙ্গিক। এই বিষয়টি আমরা আসলাফদের মাঝে পাইনি। তারা আল্লাহর প্রতিটা বিধানকে মহা গুরুত্বের সাথে দেখতেন। কোনটাকেই কোন দিক থেকে ছোট করে দেখতেন না। তারা আল্লাহর শাআইরকে সম্মান করতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ

আর যে আল্লাহর শাআইরকে সম্মান করে, এটা তার অন্তরে তাকওয়া থাকার প্রমাণ।[সুরা হাজ্জ্ব – ২২:৩২]

وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ

আর যে, আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তার জন্য তার রবের কাছে অনেক উত্তম। [সুরা হাজ্জ্ব – ২২:৩০] ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন- হযরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু তার যুগের মানুষকে সম্বোধন করে কিছু কথা বলেন। খেয়াল করুন, তিনি কাদেরকে সম্বোধন করছেন! তিনি তাবেয়ীদের সম্বোধন করে বলেছেন,

إنكم لتعملون أعمالاً هي أدق في أعينكم من الشعر، كنا نعدها على عهد رسول الله ﷺ من الموبقات

‘তোমরা বহু এমন (পাপ) কাজ করছ, সেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও সূক্ষ্ম (নগণ্য)। কিন্তু আমরা সেগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে “মুবিকাত” বিনাশকারী মহাপাপ বলে গণ্য করতাম।’ (সহীহ বুখারী-৬৪৯২)
আল্লাহু আকবার! তিনি সে যুগের মানুষকে এই কথা বলছেন। তিনি যদি আমাদের এই বর্তমান সময়টা দেখতেন! আমাদের কার্যক্রম দেখতেন!! মুসলিমরা আজ আল্লাহর শরীয়তকে বাস্তব জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। নিজেদেরকে হাকেম বানিয়ে নিয়েছে। পশ্চিমাদের আইন কানুন দ্বারা মুসলিমদের পরিচালিত করছে। যেই কানুন দুর্গন্ধময়, দুর্গন্ধময়, আল্লাহর কসম পচা দুর্গন্ধময়।
কেমন হতো, যদি আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু আজ আসতেন, আর এসে দেখতেন যে – মুসলিমদের উপর ক্রুসেডাররা আক্রমণ করছে, মুসলিম নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করছে। পবিত্র স্থানসমূহের মর্যাদাহানি করছে।
কেমন হতো যদি তিনি এসে দেখতেন যে, পশ্চিমা নোংরা কালচারে মুসলিমদের সমাজ ছেয়ে গেছে। অপবিত্র নাপাক মিডিয়া, অশ্লীল নেট মুসলিমদের ঘরে ঘরে হামলা দিয়েছে। দ্বীনদারী, চরিত্র এবং আকীদা সব বরবাদ করে দিচ্ছে। কি বলতেন, যদি আনাস বিন মালেক আমাদের মাঝে আসতেন আর দেখতেন, সুদি ব্যাংকগুলো গ্রামে গঞ্জে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। যে সকল ব্যাংক আল্লাহ এবং তার রাসূলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত মুসলিমরা সেখানেই ছোটাছুটি করছে। যদি তিনি দেখতেন যে, মুসলিম নারীরা অশ্লীল পোশাক পরিধান করে রাস্তা ঘাট আর বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সর্বত্র অশ্লীলতা, বেহায়াপনা আর নির্লজ্জ ফটোশুটের আয়োজন চলছে। কি বলতেন তিনি যদি এই চিত্র দেখতেন?!
আমি ভাবি, আজ যদি আনাস বিন মালেক ধরাপৃষ্টে আসেন, আর মুসলিমদের জীবনাচরণ, চরিত্র, লেনদেন, আইন-আদালত আর রাস্তাঘাট দেখেন, তাহলে তিনি এক মিনিটও এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবেন না। হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে, শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাবেন।
হে আমার বন্ধুগণ!
আমরা কি আল্লাহর নির্দেশের সম্মান রক্ষা করি? আল্লাহর শরীয়তের মর্যাদা রক্ষা করি?
“হুকুমের সম্মান করার দ্বারাই হাকেমের সম্মান প্রকাশ পায়”।
আমরা যদি আল্লাহর হুকুমের সম্মান রক্ষা করতে পারি, তাহলেই বুঝা যাবে, আমাদের দিলে আল্লাহর আযমত রয়েছে। কিন্তু আসলেই কি আমরা আল্লাহর হুকুম সমূহের সম্মান রক্ষা করতে পারছি?
আল্লাহ তায়ালা বলেন-

مَّا لَكُمْ لَا تَرْجُونَ لِلَّهِ وَقَارًا

কি হলো তোমাদের তোমরা আল্লাহর (শ্রেষ্ঠত্বের পরোয়া করছো না) তথা তাঁর মর্যাদা রক্ষা করছো না। [সুরা নূহ – ৭১:১৩] কেন আপনারা আল্লাহকে ভয় করছেন না? কেন আপনারা আল্লাহর হুকুমের তাযীম করছেন না? বর্তমানে মানুষ অমুক প্রেসিডেন্টের তাযীম করে। অমুক নেতার আযমত জানে এবং তার নির্দেশসমূহের সামনে মাথা নত করে। কিন্তু তারা আল্লাহর আযমত জানে না। গুনাহকে ভারী মনে করা, ভয়াবহ জানা – এটা ইমানের আলামত। এই অনুভূতি থেকেই তাওবার আগ্রহ পয়দা হয়। কান্না আসে। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দারা! আপনারা গুনাহের ভয়াবহতা বুঝার চেষ্টা করুন। রুহের মৃত্যু থেকে পানাহ চান।
কেমন ছিল তাদের জিহাদ?
এক্ষেত্রেও তারা আমাদের জন্য সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ছোট-বড়, প্রসিদ্ধ-অপ্রসিদ্ধ, ধনী-গরীব সকল সাহাবার একটি চিরায়ত বৈশিষ্ট্য ছিল – জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর শাওক। তাদের সকলের হৃদয়ে ছিল জিহাদের তামান্না, শাহাদাতের পিপাসা।
সিরাতের কিতাবাদীতে আমরা পাই প্রতিটা গাযওয়ার শুরুতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের বাছাই করতেন। অল্প বয়সীদের রেখে যেতেন। যারা বালেগ হয়নি কিন্তু জিহাদে যাবার জন্য এসে গেছে তাদেরকে রেখে যেতেন। খেয়াল করুন! বালেগ হয়নি, এখনো ছোট, জিহাদের তামান্নায় ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। খুঁজে খুঁজে তাদের বের করতে হচ্ছে। যাতে তারা যুদ্ধে শরীক হতে না পারে। এই ছিল তাদের অবস্থা। আর আমরা?
আল্লাহু আকবার! আমাদের মাঝে কত বড় বড় ব্যক্তি, বড় বড় ওলামা, মাশায়েখ, দায়ী, তালিবুল ইলম, উস্তাদ। আজ তারা জিহাদে বের হবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। জিহাদের শাওক তাদের হৃদয় থেকে মুছে গেছে। তারা ভুলে গেছে শাহাদাতের তামান্নার কথা। এটা বড়ই পরিতাপের বিষয়।
তো যাদেরকে বয়স অল্প হবার কারণে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এদের মধ্যে ছিলেন- হযরত রাফে বিন খাদিজ, যায়েদ বিন ছাবেত, যায়েদ বিন আরকাম, আব্দুল্লাহ বিন আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ আরও কয়েকজন। এবার এদের ঘটনা শুনুন, তাহলে বুঝতে পারবেন কেমন ছিলেন তারা। কেমন ছিল জিহাদের প্রতি তাদের আগ্রহ। কেমন ছিল তাদের শাহাদাতের স্পৃহা। তাহলেই বুঝা যাবে আসলেই কি আমরা তাদের কাতারে আছি না কি মুতাখাল্লিফীন, মুতাখাযিলীন ও মুতাকাইসীন (পিছনে রয়ে যাওয়া মুনাফিকদের) কাতারে শামিল হয়েছি?
এক যুদ্ধের ঘটনা। বয়স স্বল্পতার কারণে সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ভাই ওমায়ের বিন আবি ওয়াক্কাসকে বাদ দেওয়ার আশংকা ছিল। এই ভয়ে সে বড় পুরুষদের মাঝে লুকিয়ে রইল। ছোট হবার কারণে লুকিয়ে থাকা সহজ ছিল। কিন্তু তার রক্ষা হলো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে ফেললেন। বাদ দিয়ে দিলেন। এতে সে যারপরনাই কান্না করতে লাগল। প্রচুর কান্না।
লক্ষ করুন ভাইয়েরা!
একজন নাবালেগ ছেলে কান্না করছে অঝোর ধারায়, কি জন্য? চকোলেটের জন্য? সাইকেল কিনে দেবার জন্য? চিড়িয়াখানায় বাঘ ভল্লুক দেখতে যাবার জন্য? যাদুঘর ঘুরতে যাবার জন্য? না.. না… কান্না করছে, জিহাদে না যেতে পারার জন্য। আজকে কত মানুষ আছে পরিপূর্ণ উপযুক্ত। কিন্তু জিহাদে না গিয়ে বাঁচতে পেরে আনন্দিত। মুজাহিদ বাহিনীর পিছনে বসে আনন্দের হাসি হাসছে। লা হাওলা…… এটি একটি ভয়ংকর ব্যাপার, জিহাদে না গিয়ে আনন্দিত হওয়া মুনাফিকদের আলামত। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

فَرِحَ الْمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُولِ اللَّهِ وَكَرِهُوا أَنْ يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَالُوا لَا تَنْفِرُوا فِي الْحَرِّ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا لَوْ كَانُوا يَفْقَهُونَ (81)

“অর্থঃ আল্লাহর রাসূলের পিছনে রয়ে যাওয়া মুনাফিকরা তাদের বসে থাকার উপর সন্তুষ্ট। আর তারা অপছন্দ করে তাদের জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে। আর তারা বলে, তোমরা গরমে বের হয়োনা। আপনি বলে দিন, জাহান্নামের আগুন এরচেয়ে বেশি গরম। যদি তারা বুঝতো।” (সুরা তাওবা ৯:৮১)
কিন্তু কখনোই তারা এ বিষয়টি বুঝবে না। তাদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

خْبَرَنَا عَبْدَةُ بْنُ عَبْدِ الرَّحِيمِ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: أَنْبَأَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، قَالَ: أَنْبَأَنَا وُهَيْبٌ يَعْنِي ابْنَ الْوَرْدِ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ سُمَيٍّ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ، وَلَمْ يُحَدِّثْ نَفْسَهُ بِغَزْوٍ، مَاتَ عَلَى شُعْبَةِ نِفَاقٍ»

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ না করে মারা গেল বা তার মনে যুদ্ধের বাসনা জাগলো না, তার মৃত্যু হলো নিফাকের একটি অংশ (জিহাদ বিমুখ হওয়া)-এর উপর। (সুনানে আন-নাসায়ী – ৩০৯৭)
খেয়াল করুন, আপনিও এই বিবরণে পড়ে যান কিনা? যে জিহাদ করলো না এবং মনে মনে জিহাদ করার তামান্না পোষণ করলো না – সে মারা গেল, কিসের উপর? সে কি ঈমানের কোন শাখার উপর মারা গেল? সে কি তাকওয়ার কোন শাখার উপর মারা গেল? না না। সে নিফাকের একটি শাখার উপর মারা গেল।
সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা!
আমার অনেক ইলম, পুরো কোরআন আমার মুখস্থ, অনেক হাদিসের হাফেজ আমি, বড় বড় ভার্সিটি থেকে আমি ডিগ্রি নিয়েছি, ইন্টারনেটে আমি ভাইরাল, সবাই আমাকে স্যালুট দেয়, অনেক পদ পদবীর অধিকারী আমি। কিংবা আমি অনেক বড় শাইখুল হাদিস, উঁচু মাপের বুযুর্গ, প্রসিদ্ধ দায়ী কিন্তু আমার অন্তরে যদি জিহাদের তামান্না না থাকে, তাহলে আমার মাঝে মুনাফিকদের একটি সিফত রয়ে গেছে। এটা পৃথিবীর কোন সাধারণ মানুষের কথা নয়, এটা আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা।
তো এই ছোট্ট সাহাবী যখন কান্না জুড়ে দিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর দয়াপরবশ হয়ে অনুমতি দিলেন। সে আনন্দ চিত্তে জিহাদে শরীক হয়ে গেল।
সাহাবাগণ জিহাদে যেতে পারলে আনন্দিত হতেন। জিহাদে অংশগ্রহণ করাকে তারা গর্বের বিষয় মনে করতেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবী আউফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

وَعَن ابنِ أبي أوْفى قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَ غَزَوَاتٍ كُنَّا نَأْكُلُ مَعَهُ الجرادَ

তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে শরীক ছিলাম। তাঁর সাথে আমরা টিড্ডি খেয়েছি। (বুখারী ৫৪৯৫, মুসলিম (১৯৫২)-৫২, নাসায়ী ৪৩৫৭, তিরমিযী ১৮২২, আবূ দাঊদ ৩৮১২)
এটা তিনি গর্ব করে বলতেন। ইমাম জাহাবী রহিমাহুল্লাহ যখন কোন সাহাবীর জীবনী লিখেন, তখন শুরু করেন এভাবে – তিনি সবগুলো জিহাদে শরীক হয়েছেন কিংবা উহুদে, হুনাইনে, বদরে শরীক হয়েছেন। এভাবে বলেন, কারণ এটা তাদের জন্য বড় গর্বের। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কিতালে যাওয়া সর্বোচ্চ ফখরের বিষয়।
আরেক অল্পবয়সী সাহাবী রাফে বিন খাদিজ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন-
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে পনেরটি যুদ্ধ করেছি।
কয়টি যুদ্ধ? পনেরটি যুদ্ধ। ভেবে দেখুন একবার। আজ আমাদের সামনে কত মানুষ আছে চল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে। ইলম অন্বেষণে ত্রিশ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। কিতাবাদী, দরস, তাদরীস, বয়ান, মুতালা, মুহাযারা ইত্যাদির মাঝে জীবনের কয়েক দশক পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তার কোন গাযওয়ায় শরীক হবার তাওফিক হয়নি। না রাশিয়ার বিরুদ্ধে, না চীনের বিরুদ্ধে, না ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে। কোন মাহাযেই তাকে পাওয়া যায়নি!
সাহাবাগণ জিহাদে অংশগ্রহণ নিয়ে গর্ব করতেন। আর আজ এটাকে দূষণীয় মনে করা হয়। অনেককে বলতে শুনা যায়, ‘সাবধান, সন্ত্রাসী হয়োনা। উগ্রবাদী হয়োনা। উগ্র চিন্তা বর্জন করো’। আজ যারা জিহাদি চিন্তা লালন করে তাদেরকে, বিভিন্ন অপনামে কলুষিত করা হয়। তাদের বলা হয় উগ্রবাদী। বিকৃত চিন্তার অধিকারী। অথচ ইসলামী শরীয়তে যারা জিহাদের তামান্না রাখে না তাদেরকে গণ্য করা হয় মুনাফিক হিসেবে।
তো সাহাবাদের একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য ছিল জিহাদপ্রীতি। জিহাদের তামান্না তাদের রগ রক্তে মিশে গিয়েছিল। তাদের আত্মার খোরাক হয়ে গিয়েছিল। যদি আমরা দাবী করে থাকি যে আমরা সাহাবাদের ভালবাসি, আমরা তাদের পথে চলি, তাহলে মিলিয়ে দেখি এ পথে আমরা কতটুকু তাদের অনুসরণ করি?
কেন জিহাদ ছেড়ে দিয়েছে? জিহাদ পরিত্যাগ করা অনেক বড় মুসিবত। এই উম্মাহর উপর আজ যত মুসিবত আপতিত হয়েছে সব কিছুর কারণ হলো – জিহাদ পরিত্যাগ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
“বিভিন্ন জাতির লোকেরা তোমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য একে অপরকে ডাকাডাকি করবে”।
এই হাদিসের শেষাংশে এর কারণ স্বরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আর তা হলো, তোমাদের মাঝে দুনিয়ার ভালোবাসা আর মৃত্যুর ভয়। যার ফলে তোমরা জিহাদ পরিত্যাগ করে বসবে”।
সুনানে আবু দাউদ এর বর্ণনায় এভাবে এসেছে:
আমাদের আজকের বাস্তবতা হলো, আমরা সম্মিলিতভাবে জিহাদ পরিত্যাগ করে বসেছি। আলইয়াজু বিল্লাহ !
দাওয়াহ ইলাল্লাহর ক্ষেত্রে কেমন ছিলেন তারা?
তাদের ইলম ছিল, ইবাদতের প্রতিযোগিতা ছিল, তাকওয়ার চর্চা ছিল। কিন্তু এসব কিছুর মাঝে শুধু আত্মকেন্দ্রিক জীবন নিয়েই তারা পড়ে থাকতেন না। বরং তারা ছিলেন দাওয়াহ ইলাল্লাহর উজ্জ্বল নক্ষত্র। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ (33)
“অর্থঃ তার চেয়ে আর কার কথা অতি উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে। এবং নিজে নেক আমল করে, আর বলে আমি মুসলিমদের একজন”। (সুরা হা-মীম ৪১:৩৩)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন-
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। (সুরা ইমরান ৩:১১০)
হে আল্লাহ! কেন আমরা শ্রেষ্ঠ জাতি হলাম? আমাদের কাছে বড় বড় ভবন আছে, এই জন্য? নাকি আমরা নামি দামি হোটেলের মালিক? নামি আমাদের কাছে অনেক ডিগ্রি আছে? কিংবা আমরা দামি দামি ব্রান্ডের গাড়িতে চড়তে পারি?
না.. না…. আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত এই জন্য যে, তোমরা সৎকাজে আদেশ প্রদান করো, আর অন্যায় থেকে বারণ করো। হ্যাঁ, এটাই হলো শ্রেষ্ঠ উম্মাহ হবার কারণ। আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকার।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে দাওয়াহর তারবিয়াত করতেন। তাদের হৃদয়ে দাওয়ার আগ্রহের বীজ বপন করতেন। এক সাহাবী হযরত মালেক বিন হুয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার মদিনায় আসলেন, এবং রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরবারে বিশ দিন অবস্থান করলেন। তিনি যুবক ছিলেন। বিশ দিন পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘তুমি নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যাও। তাদেরকে ইলম শিক্ষা দাও। সৎকাজের আদেশ করো’। এ জাতিয় আরও কিছু নির্দেশ দিলেন। আর বললেন, ‘আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখেছো সেভাবে নামাজ পড়ো’।
তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে দাওয়ার তারবিয়াত করতেন। তাদেরকে বলতেন, মানুষদের সাথে মিশে তাদেরকে কল্যাণের পথে আহবান করতে। আজ আমরা যেই পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে আছি তা মেনে নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা – এটার শিক্ষা কখনো তিনি সাহাবাদেরকে দেননি। বর্তমান সময়ের বাস্তবতা হলো, আমরা আজ দাওয়াহ ছেড়ে দিয়েছি, মুখ বুজে সহ্য করা শিখেছি। বেশিরভাগ মানুষ আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকার থেকে দূরে। ইল্লা মার রহিমাল্লাহ। তবে আল্লাহ যাকে রহম করেন, তার কথা ভিন্ন। ফলে আমাদের সমাজ দিন দিন অন্যায়ের দিকেই যাচ্ছে।
সুতরাং হে ভাই তুমি দাওয়ার কাজ চালিয়ে যেতে থাকো। হিকমাহ ও উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে আহবান করতে থাকো। যদিও তা টেপরেকর্ডারের মাধ্যমে হয়। তুমি একটি ক্যাসেট ছড়িয়ে দাও, কিংবা কিতাব লিখে ছেপে দাও। কিংবা ইউটিউব বা ফেসবুকে ছড়িয়ে দাও। হতে পারে এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা কারো হেদায়াতের ব্যবস্থা করবেন।
আমাদের দেখা কত মানুষ আছে যারা একটি ক্যাসেটের কারণে, একটি বয়ানের কারণে হিদায়াতের পথে চলে এসেছে। তারা আজ মাশায়েখ হয়ে গিয়েছে। ওলামা ও মুজাহিদিন হয়ে গিয়েছে। কত ক্যাসেট আছে যদি মানুষের মাঝে ছড়ানো যেতো তাহলে অকল্পনীয় কল্যাণ বয়ে আনতো। “মাফরাকুল জামাআত” শাইখ খালিদ আর রাশিদ এর ক্যাসেট, আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা কত মানুষকে হিদায়াত দিয়েছেন। এমনিভাবে তুমি কোন শাইখের কিতাব বা ক্যাসেট অন্যদের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারো। যাতে তুমিও আল্লাহর পথের দায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারো।
সর্বশেষ কথা!
উত্তম চরিত্রে সাহাবাদের বাস্তবতা কেমন ছিল?
সাহাবাগণ কল্যাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলেছেন। তারা কোরআনের ক্ষেত্রে, ইবাদতের ক্ষেত্রে, জিহাদের ক্ষেত্রে, ত্বলবে ইলমের ক্ষেত্রে, যুহদ ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে, জিহাদের ক্ষেত্রে কেমন ছিলেন? তা নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম।
সবকিছুর ন্যয় উত্তম চরিত্রের ক্ষেত্রেও তারা আমাদের জন্য অনুপম আদর্শ ছিলেন। ওয়াফা, ভ্রাতৃত্ব, সিদক ও সততা, মানবতার প্রতি দয়া, ইত্যাদিতেও তারা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন। তারা কেনই বা এমন হবেন না। তারা তো মুহাম্মাদী মাদরাসা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। যার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেই দিয়েছেন-
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
“অর্থঃ আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। (সুরা কালাম ৬৮:4)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে,
سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ ‏”‏ تَقْوَى اللَّهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ
কোন জিনিসের কারণে বেশি পরিমাণে মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে? বললেন, তাকওয়া এবং উত্তম চরিত্র। (সহীহ বুখারী-২০০৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন-
إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحْسَنَكُمْ أَخْلاَقًا
নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠতম হলো তারা যাদের আখলাক উত্তম।(সহীহ বুখারী-৩৫৫৯)
আমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠতম জন, উত্তম জন, উন্নতজন হলেন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সাহাবাদের জীবনীগ্রন্থগুলো আখলাকের ঘটনাবলী দ্বারা ভরপুর। কোরবানী, আত্মোত্যাগের ঘটনাবলী তাদের জীবনের পরতে পরতে ভাস্বর।
আমাদের উচিত তাদের জীবনী সামনে রেখে আমাদের জীবনকে মিলানো। এতেই আছে আমাদের সকল সংকটের সমাধান।
ওয়ামা তাওফিকী ইল্লা বিল্লাহ।
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

**********

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − thirteen =

Back to top button